দ্বিতীয় অধ্যায়
হিজরতের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর কার্যক্রমের বিবরণ
প্রথম পরিচ্ছেদ

উম্মতের সংশোধন করা ও তাদের মানুষরুপে গড়ে তোলার বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম হিকমত ও বুদ্ধি ভিত্তিক অবস্থান:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনায় পৌঁছে দেখেন যে, মদিনার অধিবাসীরা বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত এবং তারা নানাবিধ বিপরীতমুখী বিশ্বাসে জরজরিত। তারা তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী, তাদের চিন্তা চেতনায় একে অপরের সাথে কোন প্রকার মিল নেই। তাদের মধ্যে নতুন ও পুরাতন বিভিন্ন ধরনের মতানৈক্য ও মতপার্থক্যের কোন অভাব ছিল না। কিছু পার্থক্য ছিল এমন যেগুলো তারা নিজেরা আবিষ্কার করে, আর কিছু ছিল যে গুলো তারা তাদের পূর্বসূরিদের থেকে মিরাসি সূত্রে পায়মদিনার এ দ্বিধা বিভক্ত লোকগুলোকে ইতিহাসের আলোকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
এক. আওস, খাযরাজ ও মুহাজির মুসলিম।
দুই. আওস ও খাযরাজের মুশরিকরা; যারা ইসলামে প্রবেশ করেনি।
তিন. ইয়াহুদি সম্প্রদায়। তারাও আবার একাধিক গোত্রে বিভক্ত ছিল। যেমন, বনী কাইনুকা; যারা ছিল খাজরায গোত্রের সহযোগী। বনী নাজির ও বনী ক্বুরাইজা; এ দুটি গোত্র আওস গোত্রের লোকদের সহযোগী ছিল
এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে, আওস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে দ্বন্ধ ছিল প্রাচীন ও ঐতিহাসিক। জাহিলিয়্যাতের যুগে তারা উভয় গোত্র সব সময় যুদ্ধ বিদ্রোহে লিপ্ত থাকত। যুগ যুগ ধরে তারা সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে যুদ্ধ চালাতো। তারা এতই খারাপ ছিল, তাদের অন্তরে সব সময় যুদ্ধের দাবানল জ্বলতে থাকত এবং যুদ্ধ করা ছিল তাদের নেশা[1]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনায় পৌঁছে প্রথমেই তিনি তার স্বীয় বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান ও কৌশল দিয়ে এ সব সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সে গুলোকে সমাধানের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এসব সমস্যা সমাধান, বাস্তব প্রেক্ষাপটকে নিয়ন্ত্রণ করা ও তাদের সবাইকে একটি ফ্লাট ফর্মে দাড় করানোর জন্য তিনি নিম্ন বর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেন।
এক. মসজিদ নির্মাণ করার কাজে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
প্রথমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম যে কাজটি আরম্ভ করেন, তা হল, মসজিদে নববীর নির্মাণ কাজ। তিনি সবাইকে এ কাজে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ দেন, যার ফলে সমস্ত মুসলিমরা এ কাজে অংশ গ্রহণ করেন। তাদের নেতৃত্বে থাকেন তাদের ইমাম মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। এটি ছিল পরস্পর সহযোগিতামূলক ও সম্মিলিতভাবে সম্পাদিত ইসলামের সর্ব প্রথম কাজ। এ কাজের মাধ্যমে সবার মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব তৈরি হয় এবং মুসলিমদের কাজের জন্য সাধারণ লক্ষ্য নির্ধারণ হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনায় আগমনের পূর্বে মদিনার প্রতিটি গোত্রের জন্য একটি নির্ধারিত স্থান ছিল, তাতে তারা একত্র হয়ে গান, বাজনা, কিচ্ছা, কাহিনী, কবিতা পাঠ ইত্যাদির অনুষ্ঠান করত।



সাঈদ বিন আলী বিন ওহাফ আল-কাহতানী
প্রথম অধ্যায়:
হিজরতের পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াতি কার্যক্রম
প্রথম অধ্যায়কে কয়েকটি পরিচ্ছেদে ভাগ করা হয়েছে
প্রথম পরিচ্ছেদ:
গোপনে দাওয়াত দেওয়ার সময়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাওয়াতি কার্যক্রম:
 এ কথা অজানা নয় যে, মক্কা ছিল, আরবদের ধর্ম পালনের প্রাণ কেন্দ্র ও উপযোগী ভূমি। এখানে ছিল আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবার অবস্থান। 


 অর্থ : তারা (স্ত্রী) তোমাদের পোশাক স্বরূপ এবং তোমরা তাদের পোশাক স্বরূপ। (সূরা বাকারা, ২: ১৮৭ আয়াত)।

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু যৌন মিলন নয়, বরং সেই সম্পর্ক প্রেম ভালবাসার। তারা একে অপরের সুখ দুঃখের অংশীদার। তাদের মধ্যে এমন সহচার্য ও সংযোগ / সংস্পর্শ হবে যেমন হয় শরীর এবং পরিধেয় বস্ত্রের মধ্যে। উভয়ের মধ্যে এমন সম্পর্ক ইসলামী সমাজের ভিত্তি প্রস্তরের মত।

ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান
(প্রথম খণ্ড)

মো. ওসমান গনি
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে সৃষ্টি করে রুহের জগতে সমস্ত রুহ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন।  তিনি বলেছিলেনঃ  أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ (আমি কি তোমাদের প্রভু নই?) তারা প্রতিউত্তর করেছিলঃ بَلى (অবশ্যই)।


আল্লাহ তাআলার দশ অসিয়ত
লেখক : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
প্রথম কথা: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর পবিত্র কুরআনের সূরা আনআমে দশটি নির্দেশ উল্লেখ করেছেন মানুষের জন্য। এ দশটি নির্দেশ তিনি তিনটি আয়াতে উল্লেখ করেছেন। 
প্রত্যেকটি আয়াতের শেষে তিনি বলেছেন, ‘এর মাধ্যমে তিনি তোমাদের অসিয়ত করেছেন’। এ কারণেই এ নির্দেশগুলোকে ইমাম ও  মুফাসসিরগন এক কথায় ‘দশ অসিয়ত’ বলে অভিহিত করেছেন। আসলে এ দশটি বিষয় এমন যার মধ্যে মুসলমানদের দীন-ধর্ম, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নির্ভর করে। শুধু আল-কুরআনেই নয় অন্যান্য আসমানী কিতাবেও এ দশটি অসিয়তের কথা উল্লেখ রয়েছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ مِنْ إِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ﴿১৫১ وَلَا تَقْرَبُوا مَالَ الْيَتِيمِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّى يَبْلُغَ أَشُدَّهُ وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا وَإِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَى وَبِعَهْدِ اللَّهِ أَوْفُوا ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ ﴿১৫২ وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴿১৫৩
‘বল, ‘আস, তোমাদের প্রভূ তোমাদের জন্য যা হারাম করেছেন তোমাদেরকে তা পাঠ করে শুনাই। তা এই যে, তোমরা তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না, পিতা-মাতার প্রতি সদাচার করবে, দারিদ্র্যতার কারণে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে জীবিকা দিয়ে থাকি। প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে অশ্লীল নিকটবর্তী হবে না। আল্লাহ যাকে  হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতীত তোমরা তাকে হত্যা করবে না। তোমাদেরকে তিনি এ অসিয়ত করলেন, যেন তোমরা অনুধাবন কর’। (১৫১)
‘ইয়াতীম বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উত্তম ব্যবস্থা ব্যতীত তোমরা তার সম্পত্তির কাছে যাবে না এবং পরিমাণ ও মাপে ন্যায্যভাবে পুরোপুরি দেবে। আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত ভার অর্পন করি না। যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায় পরায়ণতা অবলম্বন করবে, স্বজনদের সম্পর্কে হলেও। আর আল্লাহর সাথে প্রদত্ত অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। তোমাদেরকে তিনি অসিয়ত করলেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর’। (১৫২)
‘আর এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এর অনুসরণ করবে এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করবে। তিনি তোমাদের অসিয়ত করলেন, যেন তোমরা সাবধান হও’। (১৫৩)
(সূরা আল-আনআম : আয়াত -১৫১-১৫৩)
এ আয়াতগুলো হল সূরা আনআমের ১৫১, ১৫২ ও ১৫৩ নং আয়াত। এ তিনটি আয়াত সম্পর্কে প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন:
من أراد أن يقرأ صحيفة رسول الله صلى الله عليه وسلم التي عليها خاتمه فليقرأ هؤلاء الآيات. رواه الترمذي.
‘ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহীফা পাঠ করতে চায় যার উপর তাঁর মোহর রয়েছে। সে যেন এ আয়াতগুলোকে পাঠ করে।’ বর্ণনায় : তিরমিজী
‘যার উপর তাঁর মোহর রয়েছে’ এর অর্থ হল:  এ আয়াতগুলো হল মুহকাম বা স্পষ্ট এবং  তার নির্দেশগুলো কোন অবস্থাতেই রহিত হবার  নয়।
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আল-কুরআনের ব্যাখ্যায় খুবই খ্যাতিমান ছিলেন তিনি এ আয়াতগুলো সম্পর্কে বলেন:
في الأنعام آيات محكمات هن أم الكتاب ثم قرأ- قُلْ تَعَالَوْا .. . . أخرجه الحاكم
“সূরা আল-আনআমে কতগুলো মুহকাম আয়াত রয়েছে। এগুলো  আল-কুরআনের মূল বিষয়’। এ কথা বলে তিনি এ আয়াতগুলো পাঠ করতেন। বর্ণনায় : হাকেম
তাফসীরবিদগণ বলেন, দশটি অসিয়ত-সংবলিত এ তিনটি আয়াত ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস, পরিবার ও সমাজকে রক্ষা করে, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
প্রথম আয়াতটিতে পাঁচটি অসিয়ত রয়েছে। দ্বিতীয়টিতে চারটি এবং তৃতীয়টিতে একটি। আর এর প্রতিটি আয়াত একটি অভিন্ন বাক্য দিয়ে শেষ করা হয়েছে। তাহলো:

আল-কোরআন : একটি মহা মুজিযা
ড: সাইদ বিন আলি বিন ওয়াফ

অনুবাদ: মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামা

আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ ও সালামের পর।



নেতৃত্ব এক মহান দায়িত্ব
কামাল উদ্দিন মোল্লা
মানুষের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলীর পরিপূর্ণতা আসে স্বভাবজাত গুণাবলী ও অর্জিত গুণাবলীর সংমিশ্রণের ফলেসমাজের নেতা হন কম সংখক ব্যক্তি কিন্তু তাদের অনুসারী হন অনেক বেশি



যে সকল মহিলাকে বিবাহ করা হারাম
ইসমাঈল যাবিহুল্লাহ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বংশ পরম্পরায় মানব প্রজন্মকে দুনিয়ায় টিকিয়ে রেখে দুনিয়াকে আবাদ রাখার জন্য বিবাহ বন্ধনকে বৈধ করেছেন। এটাকে আল্লাহ তালার একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও সিস্টেম।

মুরাকাবা
আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
মুরাকাবা কাকে বলে
মুরাকাবা অর্থ হল : এমনভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদাত-বন্দেগী করা যেন আপনি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছেন। যদি এ অবস্থা আপনার অর্জিত না হয়, তা হলে এমন ভাব নিয়ে তাঁর ইবাদত করা যে, তিনি অবশ্যই আপনাকে দেখতে পাচ্ছেন। ইসলামী পরিভাষায় এটাকে বলা হয় মুরাকাবা।

মুরাকাবার আভিধানিক অর্থ হল পর্যবেক্ষণ করা।
আল্লাহ তাআলা বলেন ঃ
الَّذِي يَرَاكَ حِينَ تَقُومُ ﴿২১৮ وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ ﴿২১৯
“তুমি যখন সালাতে দাড়াও তিনি তোমাকে দেখেন। আর সিজদাকারীদের মধ্যে আপনার নড়াচড়াও দেখেন।”
(সূরা আশ-শুআরা, আয়াত : ২১৮-২১৯)
তিনি আরো বলেন ঃ
وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ
“তোমরা যেখানেই থাকো তিনি তোমাদের সাথে আছেন।”
(সূরা আল হাদীদ, আয়াত : ৪)
তিনি আরো বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَخْفَى عَلَيْهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ
“আল্লাহর কাছে আকাশ ও পৃথিবীর কোন কিছুই গোপন থাকে না।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৫)
তিনি আরো বলেনঃ
إِنَّ رَبَّكَ لَبِالْمِرْصَادِ
“নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক কড়া দৃষ্টি রাখছেন।” (সূরা আল ফাজর, আয়াত ১৪)
তিনি আরো বলেন ঃ
يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ
“তিনি জানেন চক্ষুসমূহের খেয়ানত ও অন্তরসমূহ যা গোপন রাখে।”
(সূরা আল মুমিন, আয়াত ১৯)
এ আয়াতসমূহ থেকে আমরা যা শিখতে পারি ঃ
আলোচিত পাঁচটি আয়াতই মুরাকাবা সম্পর্কিত।
প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ এমন এক সত্তা তুমি সালাতে দাড়ালে যিনি তা প্রত্যক্ষ করেন। সেজদা অবস্থায় তোমার নড়াচড়াগুলোও তাঁর দৃষ্টি এড়ায় না।
দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা যেখানেই থাক তিনি তোমাদের সাথে আছেন।” এর অর্থ হল, তিনি সর্বক্ষণ, সর্বাবস্থায় ও সর্বত্র তোমাদের পর্যবেক্ষণ করেন। তার জ্ঞান, দর্শন, শ্রবন থেকে তোমরা কেহ বাহিরে নও।
এ আয়াতের অর্থ এ নয় যে, মহান আল্লাহর জাত বা সত্তা তোমাদের সাথে সাথে থাকেন। নাউজুবিল্লাহ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সত্তা আরশের উপর সমাসীন। এ সম্পর্কে আল কুরআনে বহু আয়াত রয়েছে। তিনি সর্বত্র বিরাজমান নন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, দর্শন, শ্রবন সর্বত্র বিরাজমান। জগতসমূহের কোথাও সামান্য অনু পরিমাণ বস্তু তার পর্যবেক্ষণের বাহিরে নয়। ‘আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান’ বলে যে আকীদা শিক্ষা দেয়া হয় তা সঠিক নয়। সঠিক আকীদা-বিশ্বাস হল, আল্লাহ তাঁর আরশে সমাসীন। আর সারা জগতের সব কিছুই তার জ্ঞান, দর্শন শ্রবনের আওতাভুক্ত। তাই ইমাম নববী রহ. এ আয়াতটিকে মুরাকাবা বা আল্লাহ তাআলার পর্যবেক্ষণ বিষয়ে এখানে উল্লেখ করেছেন।
তৃতীয় আয়াতের শিক্ষা হল, আসমানসমূহ ও জমীনের কোন বস্তু ও বিষয় তাঁর কাছে গোপন নয়।
চতুর্থ আয়াতের শিক্ষা হল, যুদ্ধের সময় যুদ্ধের ঘাঁটিতে প্রহরীরা ওঁৎ পেতে বসে কড়া দৃষ্টিতে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে। আল্লাহও কড়া দৃষ্টিতে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে থাকেন।
পঞ্চম আয়াতে বলা হয়েছে, এমন অনেক বিষয় আছে যা মানুষ সতর্ক থাকার পরেও তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। আবার কোন কোন বিষয় আছে যা পর্যবেক্ষণ করা তাদের সাধ্যের বাহিরে থাকে। এমন সব বিষয়ও আল্লাহর পর্যবেক্ষণের বাহিরে নয়। মানুষ কোথায় চুপে চাপে তাকায়, সে কখন কি কল্পনা করে, নিয়্যত করে ও গোপন রাখে এগুলো অন্য মানুষ জানতে না পারলেও আল্লাহ তাআলা ভালভাবে জানেন।


রসিকতা
লেখক : আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান

সৃষ্টির শুরু থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মানুষের জীবনাচারের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে তাদের জীবনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে মিশে আছে হাসি-তামাশা ও আনন্দ-রসিকতা। 

আল-কোরআনুল কারীম :
মর্যাদা, শিক্ষা ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা : পর্ব-১
অনুবাদ : ইকবাল হুসাইন মাসুম
মানব অন্তর কালিমাযুক্ত হয়ে কঠিন হয়ে যায়দুনিয়ার প্রাচুর্যের মোহ ও প্রবৃত্তির চাহিদা নফ্‌সকে দুর্বল ও অসাড় করে ফেলেমানুষকে এ পৃথিবীতে নফস, প্রবৃত্তি, ও শয়তানের সাথে যুদ্ধ ও সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়একজন যোদ্ধাকে যদি অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় প্রকার অস্ত্রের মুখাপেক্ষী হতে হয় তাহলে চিরন্তন সফলতা যে যুদ্ধে বিজয় লাভের উপর নির্ভরশীল এমন যুদ্ধের যোদ্ধাকে অবশ্যই সক্রিয় ও কার্যকর অস্ত্রে সজ্জিত হতে হবে


পূত চরিত্র অলম্বনের উপায়-উপকারিতা
আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান
মানুষের উত্তম আখলাকের অন্যতম পূত-চরিত্র বা নিষ্কলুষ স্বভাব। পূত চরিত্র অবলম্বন ছাড়া কেউ পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারে না। তাই দেখা যায় প্রতিটি মহা-মানবের মধ্যেই এ গুণ ছিল অবধারিতভাবে। 






ইসলাম পৃথিবীর সমধিক অগ্রসরমান ধর্ম, বিশেষ করে ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর
ইউসুফ ইস্টস
অনুবাদক : আবু শুআইব মুহাম্মদ সিদ্দীক
ইসলামের দিকে প্রতিটি মানুষের প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে আপনার প্রশ্নটি ভাল। আপনি আমাকে এমন একটি বিষয়ে অনুপ্রবেশের সুযোগ কর দিলেন যা বহুদিন ধরে আমার আগ্রহকে লালন করে আসছে। 

ইসলাম, বিজ্ঞান ও জেন্ডার সমতা প্রসঙ্গ

লেখক : মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক
মহাবিশ্বের প্রতিটি বিষয় জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট, কথাটা কোন মিথ বা কল্পকাহিনি নয়। তা বরং  সদর্পে স্থান করে আছে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের লিস্টে। পৃথিবী বক্ষে সৃষ্ট প্রতিটি বিষিয়েরই রয়েছে একটি প্রতি-বিষয় ইংরেজিতে যাকে ঢ়ধরৎং এবং সরল বাংলায় জোড়া বলা যায়। 


 আল্লাহর শরীয়তের পরিবর্তে অন্য আইন মোতাবেক ফয়সালা করা
অনবাদ : মুহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

লেখক : সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান

আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান রাখা ও তাঁর ইবাদত করার দাবী হল তাঁর হুকুম মেনে নেয়া, তাঁর শরীয়তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং কথাবার্তা, মৌলিক নীতিমালা, ঝগড়াÑঝাটি ও জানÑমালসহ সকল অধিকারের ক্ষেত্রে মতানৈক্যের সৃষ্টি হলে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতের দিকে প্রত্যাবর্তন করা। আল্লাহই প্রধান বিচারক এবং প্রত্যেক ফয়সালার সময় তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করা উচিত। অতএব সকল শাসনকর্তার দায়িত্ব কর্তব্য হল আল্লাহর অবতারিত নির্দেশ অনুযায়ী হুকুম পরিচালনা করা। আর প্রজা সাধারণের ও উচিত আল্লাহ স্বীয় গ্রন্থে যে হুকুম অবতীর্ণ করেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতে যা কিছু বর্ণিত আছে, সে অনুযায়ী ফয়সালা মেনে নেয়া। আল্লাহ তাআলা শাসকবর্গের ক্ষেত্রে বলেন:
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ بَصِيرًا ﴿৫৮ سورة النساء
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন আমানতসমূহ প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে করবে।’
আর প্রজাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا ﴿৫৯ سورة النساء
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাদের যারা তোমাদের মধ্যে শাসন ক্ষমতার অধিকারী। তারপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যাবর্তন কর, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। 
এরপর আল্লাহ বর্ণনা করেন যে, তাঁর অবতীর্ণ শরীয়তের পরিবর্তে অন্য আইনের প্রতি বিচার প্রার্থনা করার সাথে ঈমানের কখনো সখ্য স্থাপিত হয় না। তিনি বলেন:
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آَمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا ﴿৬০
‘আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যারা দাবী করে যে, আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তারা ঈমান এনেছে? তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, অথচ একে প্রত্যাখ্যান করার নির্দেশ তাদেরকে দেয়া হয়েছে। আর শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। 
এর একটু পরেই আল্লাহ বলেন:
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ﴿৬৫ سورة النساء
‘কিন্তু না, আপনার রবের কসম! তারা মু’মিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের বিবাদÑ বিসম্বাদদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে। অতঃপর আপনার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে। এবং হৃষ্টচিত্তে তা মেনে নেয়।’
আল্লাহ তাআলা এখানে শপথের দ্বারা দৃঢ় ভাবে ঐ ব্যক্তি থেকে ঈমানের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন, যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে বিচার চায় না এবং তাঁর হুকুমের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে না ও তা মেনেও নেয় না। অনুরূপভাবে তিনি সেই সব শাসকবর্গকেও কুফুরী, জুলুম ও ফাসেকী প্রভৃতিতে ভূষিত করেছেন যারা আল্লাহর শরিয়ত অনুযায়ী হুকুম পরিচালনা করে না। তিনি বলেন:
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ ﴿৪৪﴾سورة النساء
‘আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী যারা হুকুম দেয় না, তারাই কাফির’
 وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ ﴿৪৫﴾سورة النساء
‘আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী যারা হুকুম দেয় না,  তারাই যালিম।’