ইসলামী
বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান
(প্রথম
খণ্ড)
মো. ওসমান
গনি
মহান
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে সৃষ্টি করে রুহের জগতে সমস্ত রুহ থেকে অঙ্গীকার
নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ
(আমি কি তোমাদের প্রভু নই?) তারা প্রতিউত্তর করেছিলঃ بَلى (অবশ্যই)।
তার পর
ক্রমান্বয়ে মানব জাতির পৃথিবীতে আগমন ঘটে। মানুষ যখন শয়তানের কুমন্ত্রনায় সেই অঙ্গিকারের
কথা ভুলে গিয়ে পথভ্রষ্ট হতে থাকে তখন সৃষ্টিকর্তা স্বীয় দয়া ও করুণায় তাদের হিদায়েতের
জন্য নবী রাসূল প্রেরণ করেন। কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি যখন কোন ব্যক্তি, সম্প্রদায় অথবা
দলের কাছে কোন দূত প্রেরণ করেন তখন এমন কিছু আলামত তার সাথে পাঠান যাতে তারা আশ্বস্ত
হতে পারে যে, সে সত্যিই তার পক্ষ থেকে এসেছে। কোন ব্যক্তি যদি তার সংবাদ বাহকের সত্যতা
ও তার পরিচয়ের জন্য আলামত নির্ধারণ করতে পারে, আর যিনি আহকামুল হাকেমীন তিনি কি তার
স্বীয় রাসূলগণের পরিচয়ের জন্য আলামত নির্ধারণ করবেন না?
এখানে
আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলগণের হাত দিয়ে এমন কিছু আলামত প্রকাশ পায় যা একমাত্র সৃষ্টিকর্তার
বৈশিষ্ট। সৃষ্টি জগতের কেহ অনুরূপ করতে অপারগ। অতঃপর তারা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে জানতে
পারে যে, এটা আল্লাহ ছাড়া কেউ করতে পারে না। এটাই হচ্ছে মু’জিযা, আর মু’জিযা প্রকাশ
পায় আল্লাহর হক নবীগণের মাধ্যমে তাদের সত্যতা এবং তাদের রিসালাত সাব্যস্ত করার জন্য।
ঈসা (আঃ) এর জবানে এরশাদ হচ্ছেঃ
وَرَسُولًا إِلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنِّي قَدْ جِئْتُكُمْ بِآَيَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ أَنِّي أَخْلُقُ لَكُمْ مِنَ الطِّينِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَأَنْفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًا بِإِذْنِ اللَّهِ وَأُبْرِئُ الْأَكْمَهَ وَالْأَبْرَصَ وَأُحْيِي الْمَوْتَى بِإِذْنِ اللَّهِ وَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَةً لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ﴿آل عمران৪৯﴾
অর্থঃ
আর বনী ইসরাইলদের জন্য রাসূল হিসাবে তাকে মনোনীত করলেন। তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি তোমাদের
পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিদর্শন সমূহ নিয়ে এসেছি। আমি তোমাদের জন্য মাটি দ্বারা পাখির
আকৃতি তৈরী করে দেই, তারপর তাতে যখন ফুৎকার প্রদান করি, তখন তা আল্লাহর হুকুমে উড়ন্ত
পাখিতে পরিণত হয়ে যায়। আর আমি সুস্থ করে তুলি জন্মান্ধকে এবং শ্বেতকুষ্ঠ রোগীকে। আমি
আল্লাহর হুকুমে মৃতকে জীবিত করে দেই এবং আমি তোমাদেরকে বলে দেই যা তোমরা খেয়ে আস এবং
যা তোমরা ঘরে রেখে আস। এতে তোমাদের জন্য নির্দশন রয়েছে যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। (সূরা
আলে ইমরান, ৩ঃ ৮৯ আয়াত)।
প্রত্যেক
যুগের নবী রাসূলকে তিনি সে যুগের জনগণের সাধারণ প্রবনতা অনুপাতে মু’জিযা দান করেছেন।
ঈসা (আঃ) এর যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞান চরম শিখরে উপনীত হয়েছিল। তাকে মু’জিযা দেয়া হয়েছিল
জন্মান্ধকে দৃষ্টি সম্পন্ন করে দেয়া এবং কুষ্ট রোগগ্রস্থকে সুস্থ করে তোলা।
وَلَقَدْ آَتَيْنَا مُوسَى تِسْعَ آَيَاتٍ بَيِّنَاتٍ (الإسراء ১০১)
অর্থ
ঃ আমি মূসাকে প্রকাশ্য নয়টি মু’জিযা দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭ঃ ১০১ আয়াত)।
তার মধ্যে
লাঠিকে সাপে পরিণত করা এবং হাতকে বগলের ভিতর থেকে বের করে শুভ্র করা ছিল প্রধান; যেহেতু
সেই যুগে জাদু মন্ত্রের বহুল প্রচলন ও প্রচুর প্রভাব ছিল।
রাসূলে
কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক যুগে আরবে প্রেরিত হয়েছিলেন যে যুগে
আরবী সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল। আল্লাহ তা’আলা তাঁর শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ ও চিরন্তন
মু’জিযা হিসাবে আল-কুরআনকে নির্ধারণ করেছেন যার রয়েছে বর্ণনা নৈপূণ্য, পরিধি নিরূপণ,
অতি অল্পে বিশাল বর্ণনা, অপরূপ প্রকাশ ভঙ্গী, অতি উচ্চাঙ্গের উপমা, ভাবের গাম্ভীর্য,
তথ্যের বিশুদ্ধতা, চিত্তাকর্ষক সুবিশাল সাবলিল গাথুনী। নেই তাতে অসংগতি বা অসামঞ্জস্য।
لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنْزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ ﴿فصلت৪২﴾
অর্থঃ
এতে মিথ্যার কোন প্রভাব নেই; সামনের দিক থেকেও নেই এবং পিছনের দিক থেকেও নেই। এটা প্রাজ্ঞ,
প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। (সূরা ফুসসিলাত, ৪১ঃ ৪২ আয়াত)।
তাই এই কুরআন শুধু আরব জাতির জন্য নয়, বরং সারা দুনিয়ার সর্ব যুগের মানুষের
জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। সেই যুগের ও বড় বড় কবি সাহিত্যিক কুরআনের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায়
নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল। মক্কার কাফিরদের সামনে কুরআন সুস্পষ্ট চ্যালেঞ্জ ঘোষণা
করেছে। এ সম্পর্কে এরশাদ হয়েছেঃ
قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآَنِ لَا يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا ﴿الإسراء৮৮﴾
অর্থঃ
বলুন! যদি মানব ও জিন জাতি এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনায়নের জন্য একত্রিত হয় এবং
তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয় তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না। (সূরা
ইসরা, ১৭ঃ ৮৮ আয়াত)।
وَإِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِنْ مِثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ ﴿২৩﴾ فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا وَلَنْ تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ ﴿البقرة২৪﴾
অর্থঃ
এতদ সম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে, যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি,
তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এসো। এক আল্লাহকে ছাড়া, তোমাদের সেই সব সাহায্যকারীদেরকেও
সঙ্গে নাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। আর যদি তা না পার, অবশ্য তা তোমরা কখনও পারবে
না, তাহলে সেই জাহান্নামের আগুনকে ভয় কর যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত
করা হয়েছে কাফিরদের জন্য। (সূরা বাকারা ২ঃ ২৩ও২৪ আয়াত)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছেঃ
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ ﴿১৩﴾ فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَكُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّمَا أُنْزِلَ بِعِلْمِ اللَّهِ وَأَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَهَلْ أَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ﴿هود১৪﴾
কুরআনী
চ্যালেঞ্জের সামনে সকলে স্তব্দ হয়ে গেল। আরবের কাফির মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের এই দাবী মিথ্যা প্রমাণিত করার এমন কোন প্রচেষ্টা নেই যা অবলম্বন করেনি।
এই পথে তারা তাদের জান মাল সব বিলিয়ে দিয়েছে। প্রিয় এবং নিকটজনদেরকে নিঃসংকোচে ত্যাগ
করেছে। নিজেদের প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছে। তাদের যুদ্ধবাজরা ময়দানে তাবু গেড়েছে।
প্রাণ বাজি রেখে লড়াই করেছে। সম্পদশালীরা তাদের সমস্ত ধন ভান্ডার উজাড় করে দিয়েছে।
কবি, সাহিত্যিক এবং অনল বর্ষী বক্তারা আরবের মরুভূমিকে উত্তপ্ত অনলে পরিণত করেছে। এ
সব কিছুই তারা করেছে। কিন্তু যা পারেনি তা হল পবিত্র কুরআনের ছোট্ট একটি সূরার অনুরূপ
কিছু রচনা করে উক্ত চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে। তারা এক বাক্যে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে
যে, এটা কোন মানুষের তৈরী হতে পারে না।
وَمَا
كَانَ هَذَا الْقُرْآَنُ أَنْ يُفْتَرَى مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَكِنْ تَصْدِيقَ
الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِنْ رَبِّ
الْعَالَمِينَ ﴿يونس৩৭﴾
আর এই
কুরআন এমন কোন জিনিস নয় যা আল্লাহর অহী ও শিক্ষা ব্যতীত রচনা করে লওয়া সম্ভব হতে পারে;
বরং এতো পূর্বে যা এসেছে এর সত্যতার স্বীকৃতি ও আল-কিতাবের বিস্তারিত রূপ। এটা যে বিশ্বনিয়ন্তার
তরফ হতে আসা কিতাব, তাতে কোন সন্দেহ নেই। (সূরা ইউনুস, ১০ঃ ৩৭ আয়াত)।
تَنْزِيلُ
الْكِتَابِ مِنَ اللَّهِ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ ﴿غافر২﴾
অর্থঃ
এই (কুরআন) মহা পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ হতেই অবতীর্ণ গ্রন্থ। (সূরা মূ’মিন,
৪০ঃ আয়াত)।
এই কালজয়ী
গ্রন্থে যেমন রয়েছে জ্ঞানের প্রসার, যুক্তির দৃড়তা ও তথ্যের নির্ভুলতা, তেমনি রয়েছে
সমগ্র সৃষ্টির সর্বকালের প্রয়োজন এবং মানব জীবনের প্রত্যেক দিকের পরিপূর্ণ আলোচনা।
বিশ্ব পরিচালনায় সুন্দরতম নিয়ম এবং ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবন থেকে সমাজ ও রাষ্টীয়
জীবনের নির্ভূল বিধান। এ ছাড়াও জীব-বিজ্ঞান, এমনকি রাজনীতি ও সমাজ নীতির সকল দিকের
নির্ভুল পথ নির্দেশ। এক কথায় বলতে পারি যে, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সকল দিক যা মানুষের
কল্পনায় উদ্ভব হতে পারে, সব কিছুই এ গ্রন্থে রয়েছে।
مَا
فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ (الأنعام ৩৮)
অর্থঃ
আমি কোন কিছু লিখতে বাদ দিইনি। (সূরা আনআম, ৬ঃ ৩৮ আয়াত)।
আল্লাহর
এই বিধানগুলি যখনই গভীর ভাবে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে চিন্তা করা হয় তখনই সুস্পষ্ট ভাবে পরিস্ফুটিত
হয় যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এগুলি একমাত্র মানব জাতির সার্বিক কল্যাণের জন্যই নির্ধারণ
করেছেন, আর সেই মুহূর্তেই আমার মাথা মহান আল্লাহর জন্যই মনের অজান্তে এমনিতেই নুয়ে
আসে।
বিজ্ঞান
শিক্ষা করার প্রতি কুরআনের উৎসাহ
মহান
রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তা’আলাই হচ্ছেন সমগ্র বিশ্বের একমাত্র স্রষ্টা, নিয়ন্ত্রক ও
পরিচালক। আল্লাহই সর্বময় ও সকল ক্ষমতার উৎস। মানবকুলের নিয়ন্ত্রণ ও সার্বক্ষণিক শান্তির
জন্য তিনি তাদেরকে দিয়েছেন বিশ্ব স্বীকৃত কালজয়ী মহান আদর্শ কুরআন, যার মধ্যে রয়েছে
সর্বকালেন মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধান, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ও সার্বজনীন দিক নির্দেশনার পাশাপাশি জ্ঞান বিজ্ঞানের
বিষয় সমূহের অসংখ আলোচনা। বস্তু জগতের জ্ঞানই ‘বিজ্ঞান’। আল কুরআন ধর্মীয় বিষয়াবলির
সাথে সাথে পার্থিব জ্ঞান লাভের জন্য পৃথিবীর বস্তু জগত তথা বিজ্ঞান বিষয়ক বহু আলোচনা
করেছে। এভাবেই কুরআনের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক। আজ বিজ্ঞানের অভুতপূর্ব উন্নতিতে চমকে
উঠা মানুষ কুরআনী জীবন ব্যবস্থাকে বর্তমান যুগের জন্য অনুপযুক্ত বলে মনে করছে। তাই
কুরআনের ব্যাপ্যারে বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনা করা একান্ত প্রয়োজন রয়েছে। আল্লাহ প্রদত্ত
ইসলাম মানুষের কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর আবার যখন মহানবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের কাছে তা জিবরাঈল আ. এর মাধ্যমে কুরআন আকারে নাযিল হতে শুরু করল তখন তার
প্রথম বাক্য ছিল ‘পড়’।
اقْرَأْ
بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ ﴿১﴾ خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ ﴿২﴾ اقْرَأْ
وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ ﴿৩﴾ الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ ﴿৪﴾ عَلَّمَ الْإِنْسَانَ
مَا لَمْ يَعْلَمْ ﴿العلق৫﴾
অর্থঃ
পাঠ করুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট বাধা
রক্ত থেকে। পাঠ করুন, মহা দয়ালু আপনার পালনকর্তার নামে, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা
দিয়েছেন। এমন শিক্ষা দিয়েছেন, মানুষ যা জানত না। (সূরা আলাক, ৯৬ঃ ১-৫ আয়াত)।
ইসলাম
আমাদেরকে যেমন ইলম বা জ্ঞান অর্জন করার জন্য আদেশ ও উৎসাহ প্রদান করেছে তেমনি অনুপ্রেরণা
যুগিয়েছে যাতে আমরা জগত সমূহকে নিয়ে চিন্তা গবেষণা করি। এমন কি আমাদের হৃদয়ে যে সমস্ত
বিষয় নিয়ে ভাবনার উদ্ভব হয় সেই সমস্ত বিষয় নিয়ে আমরা যেন গবেষণা করি। আল্লাহ তাআলা
বলেনঃ
أَوَلَمْ
يَنْظُرُوا فِي مَلَكُوتِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ مِنْ
شَيْءٍ (الأعراف১৮৫)
অর্থঃ
আকাশ ও পৃথিবীতে আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা কি তারা দেখেনি? (সূরা আরাফ, ৭ঃ ১৮৫
আয়াত)।
أَوَلَمْ
يَرَوْا إِلَى مَا خَلَقَ اللَّهُ مِنْ شَيْءٍ (النحل ৪৮)
অর্থঃ
তারা কি আল্লাহ সৃজিত বস্তুসমূহ দেখে না? (সূরা নাহল ১৬ ঃ ৪৮ আয়াত)।
انْظُرُوا
مَاذَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ (يونس ১০১)
অর্থঃ
আসমান সমূহ ও যমীনে কি রয়েছে তোমরা চেয়ে দেখ। (সূরা ইউনুস, ১০ঃ ১০১ আয়াত)।
فَانْظُرْ
إِلَى آَثَارِ رَحْمَةِ اللَّهِ كَيْفَ يُحْيِي الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا (الروم
৫০)
অর্থঃ
অতএব তোমরা আল্লাহর রহমতের নিদর্শন লক্ষ কর, কিভাবে তিনি পৃথিবীর মাটিকে মৃত্যুর পর
জীবিত করেন। (সূরা রুম, ৩০ঃ ৫০ আয়াত)।
فَلْيَنْظُرِ
الْإِنْسَانُ إِلَى طَعَامِهِ ﴿২৪﴾
অর্থঃ
মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক। সূরা আবাসা, ৮০ ঃ ২৪ আয়াত)।
فَلْيَنْظُرِ
الْإِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ ﴿৫﴾
অর্থঃ
মানুষদের খেয়াল করা উচিত, কি বস্তু থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। (সূরা তারিক, ৮৬ঃ
৫ আয়াত)।
উপরে
উল্লেখিত আয়াতগুলিতে জ্ঞানী লোকদেরকে মহান আল্লাহ বিজ্ঞান চর্চার প্রতি উৎসাহ প্রদান
করেছেন এবং আহবান জানিয়েছেন। অপর দিকে যারা চিন্তা ও গবেষণা করে তাদের প্রশংসা করে
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
الَّذِينَ
يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ
فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ(آل عمران ১৯১)
অর্থঃ
যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে
চিন্তা ও গবেষণা করে। (সূরা আলে ইমরান, ৩ঃ ১৯১ আয়াত)। এই আয়াতে জ্ঞানী লোকদের পরিচয়
দেয়া হয়েছে। তারা সৃষ্টি রহস্য সম্বন্ধে চিন্তা ও গবেষণা করেন। আল্লাহর কুদরতের বৈশিষ্টে
মুগ্ধ হয়ে আল্লাহকে সর্বাবস্থায় স্মরণ করেন।
এ ছাড়াও
আল্লাহ মানুষের মধ্যে যারা জ্ঞানী, বিদ্বান ও চিন্তাশীল তাদের নিকট বিভিন্ন বস্তুর
বর্ণনা ও যুক্তি পেশ করে পরিশেষে বলেছেনঃ
إِنَّ
فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُون -১৩-৪
إِنَّ
فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ ১৩-৩
إِنَّ
فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِلْعَالِمِينَ ৩০-২২
إِنَّ
فِي ذَلِكَ لَعِبْرَةً لِأُولِي الْأَبْصَارِ ২৪-৪৪
এতে বুদ্ধিমান
লোকদের জন্য রয়েছে বহু নিদর্শন। আবার কখনও বলেছেন চিন্তাশীল ব্যক্তির জন্য জ্ঞানী সম্প্রদায়ের
জন্য এবং দৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের জন্য ইত্যাদি।
আল্লাহ
তাআলা আরো বলেনঃ
أَلَمْ
تَرَوْا أَنَّ اللَّهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ
وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهُ ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً (لقمان২০)
অর্থঃ
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই তোমাদের কল্যাণের জন্য নিয়োজিত করেছেন এবং
তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত অনুগ্রহ সম্পুর্ণ করেছেন। (সূরা লুকমান, ৩১ঃ
২০ আয়াত)।
سُنَّةَ
اللَّهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلُ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ
تَبْدِيلًا ﴿الفتع২৩﴾
অর্থঃ
পূর্ব হতে আল্লাহর এরূপ বিধান চলে আসছে। তুমি আল্লাহর বিধানের কোন পরিবর্তন দেখতে পাবে
না। (সূরা ফাত্হ, ৪৮ঃ ২৩ আয়াত)।
أَفَغَيْرَ
اللَّهِ أَبْتَغِي حَكَمًا وَهُوَ الَّذِي أَنْزَلَ إِلَيْكُمُ الْكِتَابَ
مُفَصَّلًا وَالَّذِينَ آَتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْلَمُونَ أَنَّهُ مُنَزَّلٌ
مِنْ رَبِّكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ ﴿الانعام১১৪﴾
অর্থঃ
তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন বিচারক অনুসন্ধান করব, অথচ তিনিই তোমাদের প্রতি
বিস্তারিত গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন? আমি যাদেরকে গ্রন্থ প্রদান করেছি তারা নিশ্চিত জানে
যে, এটি আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সত্যসহ অবতীর্ণ হয়েছে। অতএব আপনি সংশয়কারীদের
অন্তর্ভুক্ত হবেন না। (সূরা আনআম, ৬ঃ ১১৪ আয়াত)।
وَتَمَّتْ
كَلِمَةُ رَبِّكَ صِدْقًا وَعَدْلًا لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ وَهُوَ
السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ﴿الانعام১১৫﴾
অর্থঃ
আপনার রবের বাক্য পূর্ণ সত্য ও সুসম। তাঁর বাক্যের কোন পরিবর্তনকারী নেই। তিনিই শ্রবণকারী,
মহাজ্ঞানী। (সূরা আনআম, ৬ঃ ১১৫ আয়াত)।
وَمَنْ
أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ ﴿المائدة ৫০﴾
আল্লাহ
অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্য উত্তম হুকুমদাতা কে রয়েছে? (সূরা মায়িদা, ৫ঃ ৫০ আয়াত)।
কেন ইসলাম
প্রতিটি বস্তু নিয়ে গবেষণার আদেশ করেছে? তা এ জন্য যে, ইসলাম হচ্ছে সঠিক ও সত্য ধর্ম
যা প্রকৃত স্রষ্টার পক্ষ থেকে প্রেরিত। আল্লাহর সমস্ত মাখলুকাতের জ্ঞান তাঁর প্রতি
এবং তাঁর ধর্মের প্রতি ঈমানকে শক্তিশালী করার একটি পন্থা।
সঠিক
ধর্ম অবশ্যই সঠিক জ্ঞানের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। অনুরূপ ভাবে সঠিক জ্ঞান সঠিক ধর্মের
প্রতি উৎসাহ প্রদান করে।
পবিত্রতায়
লাভ কি?
পরিস্কার
পরিচ্ছন্নতা হলো ইসলামের এমন একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আমল যা অন্য কোন ধর্মে পরিলক্ষিত
হয় না। ইসলামে পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃالطهور شَطْرُ الاِيْمَانِ (مسلم) পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। (মুসলিম)।
অপর এক হাদীসে বর্ণিতঃ لاََ تُقْبَلُ صَلاةٌ بغَيْرِ طَهُوْرٍ (مسلم) পবিত্রতা ছাড়া
নামায গৃহিত হবে না। (মুসলিম)
আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেনঃ
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا
وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ
وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ(المائدة ৬)
অর্থঃ
ওহে যারা ঈমান এনেছ! যখন তোমরা নামাযের জন্য দন্ডায়মান হও তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হস্তসমূহ
কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং তোমাদের মাথা মাছেহ কর এবং তোমাদের পা’গুলি গিরা পর্যন্ত ধৌত
কর। (সূরা মায়েদা, ৫: ৬ আয়াত)।
এই পদ্ধতি
পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এক দিকে যেমন এর মাধ্যমে ইবাদত করা হচ্ছে, সাওয়াব অর্জন
হচ্ছে এবং গুনাহ মাফ হচ্ছে অপর দিকে রয়েছে সুস্থতাসহ সার্বিক কল্যাণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
أَلَا
أَدُلُّكُمْ عَلى مَا يَمْحُو اللَّهَ بِهِ الْخَطَايَا, وَيَرْفَعُ بِهِ
الدَّرَجَاتِ؟ قَالُوا: بَلى يَا رَسُولَ اللّه, قَالَ إسْبَاغُ الوَضوُءِ على
الْمَكَارِهِ, وَكَثْرَةُ الْخُطَا إلى الْمَسَاجِدِ, وَانْتِظَارُ الصَّلاةِ
بَعْدَ الصَّلاةِ فَذلِكُمْ الرِّبَاطُ فَذلِكُمْ الرِّبَاطُ (مسلم)
অর্থঃ
আমি কি তোমাদেরকে এমন এক জিনিসের সন্ধান দিব না যার দ্বারা আল্লাহ গুনাহ মুছে দিবেন
এবং সম্মান বৃদ্ধি করে দিবেন? তারা বললেনঃ হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ সুন্দর
ও ভালভাবে অযূ করা, বেশী বেশী মসজিদে গমন করা এবং এক সালাতের পর অন্য সালাতের জন্য
অপেক্ষায় থাকা। এগুলি অবশ্যই তোমরা নিয়মিতভাবে পালন করবে। (মুসলিম) অপর এক হাদীসে বর্ণিত
হয়েছে:
اذا
تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ أَوِ الْمُؤْمِنُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ
وَجْهِهِ كُلُّ خطِيْئةٍ نظَرَ إلَيْهَا بِعَيْنهِ مَعَ الْمَاءِ أوْ مَعَ آخِرِ
قَطْرِ الْمَاءِ حَتّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنَ الذُّنُوْبِ (رواه مالك)
অর্থঃ
যখন কোন মুসলিম অথবা মু’মিন বান্দা অযূ করে, অতঃপর তার মুখ মণ্ডল ধৌত করে, পানির সাথে
তার চক্ষু দিয়ে যে গুনাহ সংঘঠিত হয়েছে সেই সকল গুনাহ চেহারা থেকে বের হয়; এমন কি সে
গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে যায়। ( মুয়াত্তা ইমাম মালিক)
বিজ্ঞান
প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যাচ্ছে ইসলামী বিধি বিধান ততই নির্ভুল, সত্য ও সার্বিক কল্যাণকর
হিসাবে পরিগনিত হচ্ছে। আধুনিক বিজ্ঞানে প্রকাশ যে, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও অন্যান্য
এমন সব ক্ষুদ্র জীবনু আকাশে বাতাসে বিচরণ করছে যা সব সময় মানুষের মুখ, চোখ, নাক, কান,
এমনকি লোমকুপসহ বিভিন্ন পথ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে।
ডাঃ মুহাম্মদ
তারেক মাহমুদ বর্ণনা করেছেনঃ অযূর দ্বারা শরীরের ঐ অংশ পরিস্কার হয় যে অংশ শরীরে রোগ
বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের প্রধান মাধ্যম। রোগ
ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ পদ্ধতি এটাই যে, ঐ অঙ্গগুলির সংরক্ষণ করতে হবে। অযূ দেহে
রোগ ব্যাধি প্রবেশের রাস্তা সমূহের অতন্ত্র প্রহরী।
অযূর
পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে উসমান বিন আফ্ফান রা. এর হাদীসঃ
إنه
دعا بوضوءٍ فَتَوَضَّأ: فَغَسَلَ كَفَّيْهِ ثَلاثَ مرّاتٍ, ثمَّ مَضْمَضَ
واستَنْثَرَ ثمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاثَ مَرَّاتٍ, ثمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُمْنى
إلى الْمَرَافِقِ ثَلاثَ مَرَّاتٍ, ثمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُسْرى مِثْلَ ذلك,
ثُمَّ مَسَحَ رأسَهُ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ الْيُمْنى إلى الْكَعْبَيْنِ ثَلاثَ
مَرَّاتٍ ثُمَّ غَسَلَ الْيُسْرى مِثْلَ ذلك, ثمَّ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ
صلى اللهُ عَلَيْه وَسَلَمَ تَوَضأَ نحْوَ وَضُوْئى هذا (رواه مسلم)
অর্থ:
তিনি অযূর পানি আনতে বললেন। অতঃপর অযূ করলেন। তিনি দুই হাতের কবজি তিনবার করে ধৌত করলেন।
তারপর তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করলেন। তারপর ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করলেন। এমনি
ভাবে বাম হাত ধৌত করলেন। অতঃপর তার মাথা মাছেহ করলেন । তারপর তার ডান পা টাখনু পর্যন্ত
তিনবার ধৌত করলেন তারপর এমনি ভাবে বাম পা ধৌত করলেন। অতঃপর বললেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমার এই অযূর ন্যায় অযূ করতে দেখেছি। (মুসলিম)।
উপরোল্লিখিত
হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষা অনুযায়ী মুখে পানি দিবার পূর্বে
দুই হাতের কবজি ভাল করে ধৌত করতে হয়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বর্ণনা করছে যে, হাতে সাধারণতঃ
ময়লা ও জীবানু থাকে। মুখে পানি দিবার পূর্বে তা যদি ভাল করে পরিস্কার না করা হয় তাহলে
সেই জীবানু মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞান
আরও বর্ণনা করেছে যে, বেশী বেশী কুলি করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। মানুষ যখন খাদ্য
খায় তখন খাদ্যাংশ দাঁতের ফাঁকে অবশিষ্ট থাকে। এ দিকে ব্যাকটরিয়া নামক ধ্বংসাত্মক ক্ষুদ্র
জীবানু বাতাসের সাথে ঐ সমস্ত খাদ্য কনায় প্রবেশ করে প্রভাব বিস্তার করে। জীবানুর বংশ
বিস্তার এত বেশী যে, এক একটি জীবানু প্রতি ত্রিশ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে দুইটি করে বাচ্চা
জন্ম দিতে পারে। এমনকি সেই নবজাত বাচ্চাটিও আবার ৩০ সেকেন্ড পর বাচ্চা দেয়ার ক্ষমতা
রাখে। অথচ এই সব ক্ষুদ্র জীবানু অনুবিক্ষন যন্ত্র ছাড়া খালী চোখে দেখা যায় না। দন্ত
রোগের ডাক্তারগণ বলেন, দন্ত রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যাংশ।
এর মাধ্যমে জীবানু তার বংশ বিস্তার করে দাঁত ও দাঁতের মাড়ীর চরম ক্ষতি সাধন করে। শুধু
তাই নয়, বরং থুতুর সাহায্যে পাকস্থলীতে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগ ব্যাধির সৃষ্টি করে।
আমরা মুসলিম, আমাদের কাছে রয়েছে চৌদ্দশত বছর পূর্বে মহানবীর শিক্ষা, যার মধ্যে রয়েছে
দ্বীন, দুনিয়ার কামিয়াবী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের পূর্বে অযূর
সময় ঘুম থেকে উঠে, বাড়ীতে প্রবেশের সময়, দিনের প্রথম ও শেষ ভাগে, আহারের আগে ও পরে
মেসওয়াক ব্যবহার করতেন। যেমনঃ
عن
أَبي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللَه عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلُ اللَهِ صَلَّى اللَهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لأَمَرْتُهُمْ
بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلاةٍ (متفق عليه) وفي رواية عِنْدَ كُلِّ وضُوءٍ
অর্থঃ
আবু হুরায়ইরা রা. হতে বর্ণিতঃ নিশ্চয়ই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
আমার উম্মতের যদি কষ্ট না হতো তাহলে অবশ্যই আমি তাদেরকে প্রত্যেক নামাজের পূর্বে মেসওয়াক
করার হুকুম করতাম। (বুখারী ও মুসলিম) অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘প্রত্যেক অযূর পূর্বে’।
عَنْ
عَائِشَةَ رَضِىَ اللَه عَنْهَا أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللَهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ, كَانَ إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ بَدَأَ بِالسِّوَاكِ (رواه مسلم)
অর্থঃ
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন স্বীয়
বাড়ীতে প্রবেশ করতেন তখন তিনি মেসওয়াক করতেন। (মুসলিম)।
عَنْ
حُذَيْفَةَ كَانَ رَسُوْلُ اللَهِ صَلَّى اللَهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إذَا قَامَ
لِيَتَهَجَّدَ يَشُوْصُ أَى يٌدْلِكُ فَاهُ بِالسِّواكِ (متفق عليه)
অর্থঃ
হুজাইফা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাহাজ্জুদ
নামাজের জন্য জাগতেন তখন মেসওয়াক ব্যবহার করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)।
عَنْ
عَائِشَةَ رَضِىَ اللَه عَنْهَا أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللَهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ, قَالَ: السِّواكُ مُطَهِّرَةٌ للفَمِ, مَرْضَاةٌ للرَّبِّ (رواه
النسائى والبيهقى)
আয়েশা
রাঃ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মেসওয়াক মুখকে পবিত্র
রাখে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি আনায়ন করে। (নাসাঈ, বাইহাকী)।
عَنْ
أبى مُوسى الأشْعَرى قَالَ: دَخَلْتُ عَلى النَّبى صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
وطرفُ السواك على لسانه (رواه مسلم)
অর্থঃ
আবু মূসা আল-আশয়ারী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের কাছে প্রবেশ করলাম, তখন তার মুখে মেসওয়াক ছিল। (মুসলিম)। এমন আরও অনেক
হাদীস পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে মহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ অনুসন্ধান
করলে দেখা যাবে যে, মানব জাতির সার্বিক সুস্থতার জন্য সদা সর্বদা তিনি মিসওয়াক করার
প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। সাথে সাথে অযূর সময় ও খাওয়ার পরেও কুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন।
عَنْ
أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِى اللهُ عَنْهُ أَمَرَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وَسَلَّمَ بالمْضْمَضَةِ والاسْتنْشَاقِ (رواه الدار قطنى)
অর্থঃ
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুলি করা ও নাকে
পানি দিতে আদেশ করেছেন। (দারু কুতনী)
বর্তমানে
চিকিৎসা বিজ্ঞান বর্ণনা করছে যে, গড়গড়া করে কুলি করার মাধ্যমে টনসিলসহ গলার অসংখ্য
রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এমনকি বার বার গলায় পানি পৌঁছানোয় গলাকে ক্যানসার থেকে
রক্ষা করে।
উপরোক্ত
হাদীসে কুলি করার সাথে সাথে নাকে পানি দেয়ার আদেশ করেছেন। অন্যত্র তিনি বলেছেনঃ
عَنْ
أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِى اللهُ عَنْهُ أنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وَسَلَّمَ
قَال: إذا توضَّأَ أحدكُم فليجعلْ فى أنفه مَاءً ثُمَّ لِيَنْثُرْ (متفق عليه)
অর্থ:
তোমাদের কেহ যখন অযূ করবে সে যেন অবশ্যই তার নাকে পানি দেয়, তারপর তা বের করে ফেলে।
(বুখারী ও মুসলিম)।
وعَنْ
ابنِ عبَّاسٍ رَضِى اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبى صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
اِسْتَنْثَرُوا مَرَّتينِ باَلِغَتَيْنِ أوْ ثَلاثًا (رواه أحمد وأبو داود)
অর্থঃ
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা
করেছেনঃ তোমরা ভাল ভাবে দুইবার অথবা তিনবার নাকে পানি দিবে। (আবূ দাউদ, আহমদ)।
নাক মানুষের
একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই নাকের মধ্যে এমন একটি যন্ত্র সৃষ্টি
করে রেখেছেন যার মাধ্যমে মানব দেহের চির শত্র“ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও অন্যান্য ক্ষুদ্র
জীবানু যখন শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশের চেষ্টা করে তখন সেগুলোকে আটকে দেয়।
হামলা প্রতিহত করে ও ধ্বংস করে দেয়। এদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
শিক্ষা অনুযায়ী মুসল্লী ব্যক্তি কম পক্ষে দৈনিক পাঁচ বার উক্ত নাক পরিস্কার করে। এর
ফলে মুসল্লী ব্যক্তিদের স্থায়ী সর্দি, কাশী কিংবা নাকে মারাত্মক ব্যাধি পরিলক্ষিত হয়
না।
শায়খ
আব্দুল মজীদ ঝান্দানী উল্লেখকরেনঃ জনৈক মিসরী মহিলা ডাক্তার মিসরের একটি এলাকার জরিপ
চালিয়ে তথ্য প্রকাশ করেন যে, মুসল্লী ব্যক্তিদের মাঝে নাকে মারাত্মক ব্যধি পরিলক্ষিত
হয় না।
অসবৎরপধহ
পড়ঁহপরষ ভড়ৎ নবধঁঃু সংস্থার সম্মানিত সদস্য
লেডী হীচার বলেনঃ মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন প্রকার রসায়নিক লোশন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই,
তারা ইসলামী পন্থায় অযূ দ্বারা চেহারার যাবতীয় রোগ থেকে রক্ষা পায়। জনৈক ইউরোপীয় ডাক্তার
একটি প্রবন্ধ লিখেছেন, যার শিরোনাম ছিল “চক্ষু-পানি-সুস্থতা” (ঊুব- ধিঃবৎ- ঐবধষঃয)।
উক্ত প্রবন্ধে তিনি এ কথার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন যে, নিজের চক্ষুকে দিনে কয়েকবার
পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে, নতুবা মারাত্মক
ব্যাধিতে আক্রান্ত হকে পারে। অথচ চৌদ্দশত বছর পূর্বে থেকে আল কুরআন এমন সব বিধি বিধান
নির্ধারণ করেছে যার মধ্যে রয়েছে সর্ব যুগের মানব জাতির সুস্থতাসহ সার্বিক কল্যাণ।
নামাজের
বিধানে বান্দার কি কল্যাণ রয়েছে?
আল্লাহর
অশেষ করুনা আমাদের উপর বর্ষিত হচ্ছে এবং আমরা আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামত উপভোগ করছি। তিনি
আমাদেরকে উত্তম রিয্ক দিয়েছেন, সুস্থতা দান করেছেন, সন্তান ও পরিবার পরিজন দান করেছেন,
হায়াত দান করেছেন। তাঁর এই করুণা ও নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় দুই পদ্ধতির সমন্বয়ে হয়ে
থাকে।
তার প্রভুত্বকে
স্বীকার করে প্রথমতঃ ভাল কাজ ও করুণার স্বীকৃতি মৌখিক নয়, বরং অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে
করা এবং উহার প্রমাণ স্বরুপ নম্র ও বিনয়ের সাথে তাঁর জন্য সিজদায় মাথা অবনত করা।
দিতীয়তঃ
এই নি’আমতগুলিকে সংরক্ষণ করা এবং উহা ঐ ভাবে ব্যবহার করা যেভাবে তিনি পছন্দ করেন।
তাই সালাত
আদায় করা হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার হুকুমের বাস্তবায়নে অন্তরের নির্মলতা প্রকাশ, তাঁর মহব্বত
ও মর্যাদার বহিঃপ্রকাশ। এই সালাত হচ্ছে পরিণামদর্শী সুদৃঢ় কাজ, যার রয়েছে নির্দিষ্ট
সময়, বিশেষ এক অবস্থা এবং উন্নত পদ্ধতি। সালাত হচ্ছে ইবাদত সমূহের মধ্যে মূল এবং সর্বোত্তম
আনুগত্য। এই সালাত আদায়ে হৃদয় শান্ত হয়, অন্তর সুস্থির হয়, শরীর আরাম বোধ করে, রাগ
নিস্তেজ হয়, কু-প্রবৃত্তি দমন হয়। মুসলিমদের মাঝে সম্পর্ক সুদৃঢ় করা, মানুষের মাঝে
সমতা ও সমবেদনা আনায়ন করা, আইন শৃংখলা রক্ষা, বিনয়ী শিষ্টাচার ও হক পালনের ব্যাপারে
সালাত হচ্ছে আসল হাতিয়ার।
এই সালাতের
মাধ্যমে বান্দা তার সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য ও শক্তি প্রার্থনা করে, ভাল কাজে তাঁর
কাছে মদদ চায়। কঠোর দৃষ্টি অথবা কটু বাক্য অথবা নির্দয়ভাবে শক্তি প্রয়োগে যদি সৃষ্টির
কারও প্রতি অনিষ্ট করে থাকে তাহলে ক্ষমা চায়।
মানব
জীবনে সালাত অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, যেমন প্রয়োজন খাদ্য ও পানীয় বস্তু। কেননা খাদ্য ও পানীয়
শরীর গঠনের মূল বা প্রধান উপকরণ এবং বেঁচে থাকার উপাদান। আর সালাত হচ্ছে আত্মার প্রকৃত
উপকরণ ও শান্তনা পাবার উপাদান। সালাত মানুষের চরিত্রকে সংশোধন করে, জন্মগত অভ্যাসকে
পরিবর্তন করে এবং সন্দেহ ও বিশৃংখলাপূর্ণ আদি অভ্যাসের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি
করে এবং তাকে অশ্লীল, নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ
করেনঃ
إِنَّ
الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ(العنكبوت ৪৫)
অর্থঃ
নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীল ও ঘৃণিত কাজ থেকে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবুত, ২৯ঃ ৪৫ আয়াত)।
বিজ্ঞানের
দৃষ্টিতে স্বাস্থ্যগত দিক দিয়েও সালাতের অনেক উপকার রয়েছে যা পবিত্রতা, অযূ, মেসওয়াক,
দাঁড়ানো, রুকু, সিজদাহ ও বৈঠক থেকে আমরা পেয়ে থাকি। ডাঃ মোহাম্মদ তারেক মাহমুদ উল্লেখ
করেন
নামাজ
হল এক উত্তম শরীর চর্চা। অলসতা, বিষন্নতা ও বে-আমলের এই যুগ সন্ধিক্ষণে শুধুমাত্র নামাজই
এমন এক ব্যয়াম, যদি একে সার্বিক পদ্ধতিতে আদায় করা হয় তাহলে এর দ্বারা ইহকালীন সকল
ব্যথার উপসম সম্ভব। নামাজের ব্যয়াম যেমনভাবে বাহ্যিক অঙ্গ প্রতঙ্গের সৌন্দর্য বৃদ্ধি
করে তেমনি আভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রতঙ্গ যেমন হৃৎপিন্ড, যকৃত, মূত্রাশয়, ফুসফুস, মস্তিস্ক,
নাড়িভুড়ি, পাকস্থলী, মেরুদন্ড, গর্দান, সীনা ও সর্ব প্রকার এষধহফং ( দেহের রসগ্রন্থি) আবর্তিত করে শরীরকে সুঠাম
ও সৌন্দর্যবান করে তোলে। আর এই ব্যয়ামগুলি এমন যার দ্বারা হায়াত বৃদ্ধি পায়। বৃদ্ধিপায়
এক অসাধারণ শক্তি।
জনৈক
ব্যক্তি (এ, আর কমর) তার ইউরোপ ভ্রমণ কাহিনীতে লিখেছেনঃ একদিন আমি নামাজ আদায় করছিলাম।
আমার নামাজ শেষ হলে এক অমুসলিম বিশেষজ্ঞ আমাকে বলতে লাগলঃ ব্যয়ামের এই পদ্ধতি আমার
বইয়ে লিখেছি এবং উল্লেখ করেছি, যে ব্যক্তি এ পদ্ধতিতে ব্যয়াম করবে সে কখনো দীর্ঘ মেয়াদী
মারাত্মক ও জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে না। অতঃপর এর ব্যাখ্যা এভাবে দিল যে, দন্ডায়মান
ব্যক্তি যদি তৎক্ষণাৎ ব্যয়ামে গমন করে তাহলে তার স্নায়ু ও হৃদপিন্ডের উপর এর প্রভাব
মঙ্গল জনক হয় না। তাই আমি স্বীয় পুস্তকে এ কথা বিশেষ ভাবে তুলে ধরেছি যে, প্রথমে দাঁড়িয়ে
ব্যয়াম করবে তখন হাত বাঁধা বাঞ্ছনীয় (অর্থাৎ কিয়াম) অতঃপর মাথা মাটিতে ঠেকিয়ে ব্যয়াম
করতে হবে। এ ব্যয়াম কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞগণই করতে পারবে। তার মন্তব্য শুনে মুসল্লী ব্যক্তি
বলতে লাগলঃ আরে! আমি আপনার পুস্তক এখনও পড়িনি; আমি একজন মুসলিম, আমার ইসলাম আমাকে এরূপ
করার নির্দেশ দিয়েছে। আমি প্রত্যহ কমপক্ষে পাঁচবার এ রকম করে থাকি। এ কথা শুনতেই সেই
ইংরেজ ব্যক্তি কিংকর্তব্য বিমুড় হয়ে তার কাছ থেকে ইসলামী জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা নিতে
লাগল।
পাকিস্তানের
একজন হৃদপিন্ডের রোগী স্বীয় রোগের চিকিৎসা করাতে অবশেষে যখন অষ্ট্রেলিয়া গিয়ে পৌছলেন
তখন সেখানকার একজন হৃদপিন্ড বিশেষজ্ঞ তাকে পূর্ণ পরিদর্শনের পর তার জন্য কিছ্ ু ঔষধ
ও একটি ব্যয়াম নির্ধারণ করে দিয়ে বললেনঃ আপনি আমার ফিজিও ওয়ার্ডে আমারই তত্বাবধানে
আট দিন পর্যন্ত উক্ত ব্যয়াম করবেন। তাকে ব্যয়াম করানোর পর দেখা গেল তা ছিল খুশু খুযু
ও সন্তোষজনক এক পূর্ণাঙ্গ নামায। এবার পাকিস্তানী রোগী সেই ব্যয়ামটাকে পরিপূর্ণ ও সঠিক
পদ্ধতিতে সহজেই আদায় করতে লাগল। এতদ্দর্শনে ডাক্তার বললেনঃ আপনি আমার প্রথম রোগী যে
এত দ্রুত আমার এই ব্যয়ামটা শিখে উত্তমভাবে তা আদায় করতে পারলেন। বস্তুতঃ এখানে আট দিনে
রোগী শুধূ এ পদ্ধতিটা শিখে। এ কথা শুনে রোগী বলল, আমি হচ্ছি একজন মুসলিম, আর এ পদ্ধতি
হল আমাদের পূর্ণাঙ্গ নামায। তাই এটা শিখতে আমার মোটেই বেগ পেতে হয়নি। অতঃপর দ্বিতীয়
দিনেই ডাক্তার তাকে ঔষধ ও ব্যয়াম সম্পর্কে বিশেষ কিছু দিক নির্দেশনা দিয়ে বিদায় দিয়ে
দিলেন।
রোযার
বিধান কেন? রোযা কি শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
ইসলাম
শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম। ইসলাম যেখানে স্বীয় অনুসারীদেরকে কিছু বিধি নিষেধ দিয়ে থাকে
সেখানে হেফাযতের বিষয়ও সরবরাহ করে থাকে। ইসলাম যেমন ভাবে আমাদেরকে নামাযের নির্দেশ
দিয়েছে তেমনি সাথে সাথে তাতে রেখে দিয়েছে এক সুন্দর জিন্দেগী, যেখানে রয়েছে আল্লাহর
নির্দেশ তেমনি তার মধ্যে রয়েছে অসংখ, অগণিত পার্থিব কল্যাণ।
রমযান
মাসের সীয়াম সধনাকে আল্লাহ তা’আলা মুসলিম বান্দাদের জন্য ফরয করেছেন। তিনি বলেনঃ
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى
الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴿سورة البقرة১৮৩﴾
অর্থঃ
ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তিদের উপর
ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমরা পরহেযগার হতে পার। (সূরা বাকারা, ২ঃ ১৮৩ আয়াত)।
সুবহে
সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে এই রোযা
পালিত হয়ে থাকে। এই রোযা পালন একটি ইবাদত। তবে প্রশ্ন হল, মানুষ রোযা থেকে কি উপকার
লাভ করে? যে উহা ছেড়ে দেয় সেইবা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্থ হয়? তাহলে আল্লাহ কি স্বীয় বান্দাদেরকে
কষ্ট দিতে ইচ্ছা করেন? অথবা আল্লাহ কি আমাদের রোযার মুক্ষাপেক্ষী? আল্লাহ বলেনঃ
َأَنْ
تَصُومُوا خَيْرٌ لَكُمْ (سورة البقرة ১৮৪)
অর্থঃ
তোমাদের রোযা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। (সূরা বাকারা, ২ ঃ ১৮৪ আয়াত)।
أ
َلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ﴿سورة الملك১৪﴾
অর্থঃ
তিনি কি জানেন না যিনি সৃষ্টি করেছেন? তিনি সূক্ষ্ম জ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত। (সূরা মুলক,
৬৭ঃ ১৪ আয়াত)।
আল্লাহ
তা’আলা একমাত্র নিখুঁত ভাবে অবগত আছেন যে, কোন জিনিসে মানব জাতির কল্যাণ রয়েছে এবং
কোন জিনিসে অকল্যাণ রয়েছে। কোন জিনিসে তার সুস্থতা রয়েছে এবং কোন জিনিসে রয়েছে তার
অসুস্থতা।
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ঃالصَّوْمُ جُنَّةٌ (فتح الباري ج ৪ ص ১০৪)
অর্থঃ
রোযা ঢাল স্বরূপ। (ফাতহুল বারী, ১০৪)। অর্থাৎ ঢাল যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে যোদ্ধাকে সার্বিক
আঘাত থেকে রক্ষা করে, রোযাও তেমনি রোযাদারকে শারীরিক ও মানুসিক ব্যাধি থেকে রক্ষা করে।
অজ্ঞ শ্রেণীর অনেকেই ধারণা করে যে, রোযা রেখে সারাদিন উপবাস থাকলে শরীর অতিকায় ক্ষীণ
ও জীবনীশক্তি দুর্বল হয়ে যায় এবং বিভিন্ন রোগ মানুষকে আক্রমণ করে। ঘনঘন খাদ্য গ্রহণ
করলে স্বাস্থ্য অটুট ও সবল থাকার ধারণাও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে নিতান্ত
ভুল ও অবান্তর বলে প্রমাণিত।
মানব
জীবনে খাদ্য ও পানীয় বস্তু অত্যান্ত প্রয়োজনীয়। কেননা খাদ্য ও পানীয় শরীর গঠনের মূল
বা প্রধান উপকরণ এবং বেঁচে থাকারও উপাদান।
মানুষ
তার শরীর ও আত্মা নিয়ে গঠিত। পৃথিবীর যে সকল উপাদান রয়েছে (পানি, মাটি ও হাওয়া) তার
পরিমানু দিয়ে মানুষের শরীর গঠিত। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
مِنْهَا
خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى
﴿سورةطه৫৫)
অর্থ
ঃ আমি তোমাদেরকে এ মাটি থেকেই সৃষ্টি করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব। এবং পুনরায়
এ থেকেই তোমাদেরকে উত্থিত করব। (সূরা ত্বা-হা, ২০ঃ৫৫ আয়াত)।
পক্ষন্তরে
আমরা যে খাদ্য খাই তার মধ্যেও রয়েছে হাওয়া, পানি ও মাটি। বাতাসে পাওয়া যায় অক্সিজেন,
নাইট্রোজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সসাইড। পানিতে রয়েছে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন। এবং মাটিতে
পাওয়া যায় লৌহ ধাতু, দস্তা, আয়োডিন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, মেগনেসিয়াম, ফসফরাস, সালফার
ইত্যাদি। এই সমস্ত উপাদানের পরমানু সমন্বয়ে গঠিত হচ্ছে প্রোটিন, চর্বি, ভিটামিন ইত্যাদি।
মানুষের
খাদ্য তার শরীরে প্রধান দুইটি কাজ করে (১) শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি যোগান দেয় এবং তাপমাত্রা
রক্ষা করে (২) কোষের কার্যক্রম রক্ষা করে এবং কোষ বিভাজনে সহায়তা করে। খাদ্য শরীরের
মাঝে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে দেহকে শক্তি যোগান দিয়ে থাকে। দেহের মধ্যে সজীব উপাদানের
যে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে তাকে বলা হয় Metabolism। এই বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে
শক্তি সঞ্চয় হয় তা কোষের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এবং খাদ্য উপাদানগুলি সূক্ষ্ম পদক্ষেপ
ও ধারাবাহিকভাবে উত্তাপের মাধ্যমে তৈরী হয় ভিটামিন, চর্বি ও সার্বিক শক্তি। সেখানে
রয়েছে এমাইনো এসিড, আলোক শক্তি ও বিদ্যুৎ শক্তি। এই সমস্ত শক্তির মাধ্যমে শরীর তার
বিভিন্ন যন্ত্র পরিচালনা করে যেমন হৃদপিন্ড, ফুসফুস, রক্ত পরিচালনা, পাকস্থলী ইত্যাদি।
জীবন পরিচালনায় সার্বিক কাজকর্ম ও নড়াচড়ায় যথোপযোগী এই শক্তি ব্যবহার হয়ে থাকে এবং
প্রয়োজনের অতিরিক্ত উৎপাদিত শক্তি বিশেষ ভান্ডারে সঞ্চিত ও সংরক্ষিত থাকে। সেখান থেকে
প্রয়োজনের সময় ব্যবহার হয়ে থাকে এই সংরক্ষিত শক্তি।
মানুষ
যদি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকে তাহলে কত দিন পর্যন্ত এই সঞ্চিত শক্তি উক্ত মানুষের
প্রয়োজন মিটাতে পারে? চিকিৎসা বিজ্ঞান বর্ণনা করছেঃ মানুষ যদি খাবার খাওয়া থেকে বিরত
থাকে সম্পূর্ণ রুপে নিজকে বিরত রাখে তা হলে তার শক্তি ভান্ডার থেকে তার চাহিদা ও প্রয়োজন
অনুযায়ী কাজের পরিপ্রেক্ষিতে কম পক্ষে একমাস এবং উর্ধ্বে তিন মাস শক্তি সরবরাহ করতে
পারে।
অথচ ইসলাম
মুসলিমকে দৈনিক মাত্র ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা পানাহার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে, এই
সামান্য সময় পানাহার থেকে বিরত থাকা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও সম্পূর্ণ নিরাপদ তাই তার শরীরে
এই রোযার মাধ্যমে কোন ধরনের ক্ষতি হয় না, বরং এই রোযার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য উপকার। এই
ইবাদতটির মধ্যে শুধু নৈতিক উন্নতি ও গুণাবলী অর্জনের ক্ষমতাই নেই, বরং এগুলির সাথে
রয়েছে মানব দেহের সুস্থতার সম্পর্ক।
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
ঃ
صُوْمُوا
تَصِحُّوْا (رواه الطبرانى)
অর্থ
ঃ রোযা রাখ, তাহলে (সওয়াব ছাড়াও) স্বাস্থ্য লাভ করবে। (তাবারানী)।
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ছোট্ট
হাদীসটিতে লুকায়িত রয়েছে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের এক বিরাট রহস্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের যুগে মানুষের কাছে যে বৈজ্ঞানিক তথ্য ছিল অজানা, আজ বিজ্ঞান সীয়ামের
উপকারিতা বর্ণনা করে মানুষকে সীয়াম সাধনার জন্য উৎসাহিত করছে। উম্মতের বিজ্ঞান মনস্কতার
উৎসাহের জন্য এ হাদীস প্রচুর ভূমিকা রাখে।
আধুনিক
বিজ্ঞান বলছে ঃ কলেস্টেরল (Cholesterol) মানব শরীরের একটি প্রয়োজনীয় লিপিড (
lipid)
এটি দেহ কোষের পাতলা আবরণ গঠনের ও হজমের পিত্তরসে ব্যবহৃত হয়। এটি স্নায়ু কোষকে সুস্থ
ও নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মানব দেহের ইষ্ট্রজেন ও এন্ড্রোজেন নামক প্রজনন
হরমোন তৈরীতে এর ভূমিকা প্রধান। এটি সকল প্রকার ষ্টেরয়েড (Steroid) সংশোধনের মূখ্য
ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এর পরিমান প্রয়োজনের অতিরিক্ত হলে উচ্চ রক্ত চাপ ও হৃদপিন্ড
রোগ প্রভৃতি সৃষ্টি হয়ে মানুষকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান বলছে
শরীরে কলেষ্টেরল মাত্রা সীমিত রাখতে রোযা ও রোযার মাসের পরিমিত খাদ্য গ্রহণ এবং অতিরিক্ত
নামাজ যথেষ্ট সহায়ক।
সীয়াম
মানুষকে ডায়াবেটিস, স্থুলকায়ত্ব ও বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। মানব দেহের
অগ্নাশয়ে উৎপন্ন ইনসুলিন নামক হরমোন রক্তে মিশে রক্তের শর্করাকে জীবকোষে প্রবেশ ও কার্যকরী
করতে সাহায্য করে। ইনসুলিনের অভাব হলে শরীরে শর্করা কাজে লাগতে পারে না। এর ফলে চর্বি
ও প্রোটিন থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি সংগ্রহ করে। ফলে ডায়বেটিস রোগী দুর্বল ও ক্লান্ত হয়
এবং বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। বর্তমান বিজ্ঞান বলে যে, রমজানের একমাস সীয়াম পালন এবং বছরের
অন্যান্য সময় অতিরিক্ত রোযা ডায়বেটিস রোগীর রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসু। একমাস সীয়াম সাধনার কারণে
অগ্নাশয় পূর্ণ বিশ্রাম পায় এবং দিনের বেলায় অগ্নাশয় থেকে ইনসুলিন নির্গত কম হয় বিধায়
তা বিশেষ উপকারিতা লাভ করে। এছাড়া স্থুলকায়ত্ব (obesity) যা মানব দেহের বিভিন্ন রোগের
কারণ তা থেকে মুক্ত করতে পারে রমযানের রোযা ও বছরের অন্যান্য রোযা। এভাবেই বিজ্ঞানীরা
খুজে পেয়েছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী রোযা রাখার মধ্যে স্বাস্থ্য
লাভের প্রকৃত রহস্য ।
মানুষের
শরীরে ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদানের জন্ম হয় যার অধিকাংশ খাদ্য ও পরিবেশ দুষিত হওয়ার কারণে
হয়ে থাকে। বিশেষ করে বর্তমান যুগে যন্ত্র চালিত যানবাহনের কারণে পরিবেশ দূষিত হওয়ার
ফলে মানুষ বিভিন্ন ধরণের নতুন নতুন রোগে আক্রান্ত হয়। তন্মধ্যে ক্যান্সার, ব্ল¬াড প্রেসার,
ফুসফুস, হার্ট ও ব্রেন টিউমার ইত্যাদি। দার্শনিক ও চিকিৎসাবিদগণ মুক্ত কন্ঠে স্বীকার
করেছেন যে, সীয়াম সাধনা শরীর ও মন উভয়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রখ্যাত গ্রন্থ Science calls For fasting- এ বলা হয়েছে ঃ সঠিকভাবে রোযা রাখলে মনে হবে যেন দেহ নব জন্ম লাভ
করেছে (After a fast properly taken, the body is literally born afresh)। চিকিৎসা
বিজ্ঞানী ম্যাক ফ্যাডেন বলেছেন ঃ সীয়াম সাধনা করলে বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষ সাধিত হয়।
(The longer one fasts the greter becomes his intellectual power and the
clearer his intellectual vision).
জনৈক
ডাক্তার বলেনঃ প্রতিটি মানুষ রোযার মুখাপেক্ষী, যদি সে রুগী না হয়। কেননা খাদ্যের বিষাক্ত
অংশ শরীরের মধ্যে জমা হতে থাকে এবং তাকে আস্তে আস্তে রুগী বানিয়ে দেয় এবং তার ওজন বাড়িয়ে
দেয়, এর ফলে তার কাজের আগ্রহ উদ্দীপনা লোপ পায়। অতঃপর উক্ত মানুষটি যদি রোযা থাকে তাহলে
এই সমস্ত বিষাক্ত উপাদান থেকে মুক্ত হয়ে আবার সে শক্তি ও উদ্দীপনা অনুভব করে। স্বাস্থ্য
বিজ্ঞানী এ কে এম আবদুর রহীম লিখেছেনঃ সমস্ত শরীরে সারা বছর যে জৈব বিষ দেহের স্নায়ু
ও অপারপর জীব কোষকে দুর্বল করে দেয়। রোযা সমস্ত রক্ত প্রবাহকে পরিশোধন করে সমগ্র প্রবাহ
প্রনালীকে নবরূপ দান করে। রোযা উর্ধ্ব রক্তচাপ জনিত ব্যাধিসমূহ দূর করতে সাহায্য করে।
সবার
কাছে সুস্পষ্ট যে, বিভিন্ন মেশিন দীর্ঘ দিন কাজ করার ফলে তার মাঝে ময়লা জমার কারণে
শক্তি কিছুটা কমে যায়। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে বিভিন্ন অসুবিধা দেখা দেয়। তাই সার্ভিসিং
এর মাধ্যমে উক্ত ময়লাগুলো পরিস্কার করলেই পূর্বের শক্তি আবার ফিরে পায়। আর যদি তা না
করা হয় তাহলে পরিশেষে উক্ত মেশিনটি অকেজো হয়ে যায়। মানুষের শরীরটাও আল্লাহর সৃষ্টি
এবং তাঁর হুকুমে পরিচালিত একটা অলৌকিক মেশিন। এই মেশিন যেহেতু আলাদা করে সার্ভিসিং
করা যায় না, যিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তিনিই ভাল জানেন যে, এই অলৌকিক মেশিনটি
সুস্থ রাখতে হলে কি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। সেই সৃষ্টিকর্তা এই রোযার পদ্ধতি অবলম্বনের
মাধ্যমে সার্বিক সুস্থ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ডাঃ জুয়েলস, ডাঃ ডিউই, ডাঃ এলেক্স হিউ
প্রমুখ প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ স্বীকার করেছেন যে, রোযা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে। এর ফলে দেহের জীবানুবর্ধক অন্ত্রগুলি ধ্বংস হয়, ইউরিক এসিড বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত
হয়। রোযা চর্মরোগ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাষ্ট্রিক আলসার ইত্যাদির জন্য
অত্যন্ত উপকারী বিবেচিত হয়েছে। মেদ ও কোলেষ্টরেল কমানোয় রোযার জুড়ি নেই। সর্বোপরি
রোযা মনে শান্তি আনে, কুপ্রবৃত্তি প্রশমিত করে, দীর্ঘ জীবন দান করে। আজ উন্নত বিশ্বে
বিভিন্ন জটিল রোগের প্রশমনের ব্যবস্থা পত্রে চিকিৎকগণ রোযা রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।
চৌদ্দশত বছর আগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আমাদের জন্য যে কি রহমত, বরকত, ফযীলাত ও মাগফিরাতের পথ দেখিয়ে গেছেন, দিন দিন আমরা
তার যর্থাতার অজস্র প্রমাণ পাচ্ছি। আমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যই ইসলামের মধ্যেই নিহিত
রয়েছে মানব জাতির সার্বিক কল্যাণ ও মুক্তি।
মৃত প্রাণীর
গোশ্ত হারাম কেন?
আল্লাহ
তা’আলা সমগ্র মানুষের সৃষ্টিকর্তা। তিনি মানুষকে এত অমুল্য নিয়ামত দান করেছেন যার কোন
হিসাব নিকাশ করা সম্ভব নয়। তাই স্বভাবতই তার অধিকার রয়েছে, মানুষের জন্য কোন কিছুকে
হারাম বা হালাল ঘোষণা করার। এ ব্যাপারে কারো কোন প্রশ্ন করার বা আপত্তি জানাবার কোন
অধিকার থাকতে পারে না। তিনি রব, এ হিসাবেই তাঁর এ অধিকার। মানুষ তাঁরই বান্দা। বান্দা
হিসাবেই মানুষ তাঁর এ অধিকার মেনে চলতে বাধ্য। ঠিক যেমন রব হিসাবেই তিনি মানুষকে নিজের
বান্দা বানিয়েছেন এবং পালন করে চলার জন্য দিয়েছেন জিবন বিধান ও নিয়ম নীতি। তবে আল্লাহ
যেহেতু তাঁর বান্দাদের প্রতি অপরিসীম দয়াবান এ কারণে তিনি এ ব্যাপারে কোন জবরদস্তিও
যেমন করেননি তেমনি অযৌক্তিক বা বিবেকবুদ্ধি পরিপন্থী কোন বিধানও দেননি। তিনি অত্যন্ত
যুক্তি সঙ্গত ভাবেই এক বিরাট জিনিসকে হালাল বা হারাম ঘোষণা করেছেন। সার্বিক ভাবে সমগ্র
মানবতার মৌলিক কল্যাণ সাধনই এর মূল লক্ষ্য। এ কারণেই তিনি মানুষের জন্য কেবল পাক-পবিত্র,
উত্তম-উৎকৃষ্ট জিনিসই হালাল করেছেন এবং হারাম করেছেন যাবতীয় নিকৃষ্ট,খারাপ, ক্ষতিকর
দ্রব্যাদি।
জাহিলিয়াত
যুগে আরবরা মৃত প্রাণী আহার করত এবং জবাইকৃত প্রাণীর চেয়ে মৃত প্রাণীর আহার করতে প্রাধান্য
দিত। মৃত প্রাণীর এ ভাবেই প্রশংসা করত যে, আমরা যা মেরে ফেলেছি অর্থাৎ জবাই করেছি তার
চেয়ে উত্তম আল্লাহ যা নিজ হাতে মেরেছেন। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ
حُرِّمَتْ
عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ (سورة المائدة ৩)
অর্থঃ
তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণী, রক্ত ও শুকরের মাংস। (সূরা মায়েদা, ৫ঃ ৩ আয়াত)।
এ হচ্ছে
কুরআনের হুকুম ও আয়াত। জ্ঞান বিজ্ঞানের যত অগ্রগতি হচ্ছে, ইসলামের মান তত বাড়ছে। অত্যাধুনিক
যন্ত্রপাতির আবিস্কার হচ্ছে আর সৃষ্টি জগত সম্পর্কে সুক্ষ্ম তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে।
প্রশ্ন
হচ্ছে, কেন আল্লাহ মৃত প্রাণী আহার করতে নিষেধ বা হারাম করলেন? বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে,
প্রাণীর শরীর হলো একটা দুর্গ। যতক্ষণ জীবন থাকে ততক্ষণ জীবনী শক্তি ক্ষুদ্র জীবানুর
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকে এবং জীবানুর প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারা এ ধরনের
যে কোন শত্র“কে প্রতিহত করে পরাজিত করতে থাকে। তাই ভিতরে তার গোস্ত ভাল, তার রক্ত ভাল,
সে ভাল অবস্থায় থাকে। কিন্তু যদি মারা যায়, শুধুমাত্র এ জীবন শেষ হওয়ার কারণে পাঁচ
ছয় ঘন্টা পরই এই মৃত প্রাণীটির শরীর ক্ষুদ্র জীবানুর একটা গুদামে পরিণত হয়। কেন এমন
হয়? কারণ হলো শরীরে প্রাচীর রয়েছে, যা দেহকে সংরক্ষণ করে। একটা প্রাচীর নয়, বরং অনেক
প্রাচীর পাকস্থলীতে ক্ষুদ্র জীবানুর হামলা থেকে শরীরকে হিফাযত করতে থাকে। সেখানে কিভাবে
এই সব ক্ষুদ্র জীবানু থেকে শরীরকে রক্ষা করে?
প্রাণীর
শরীরে বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু জীবানু রয়েছে। বৃহৎ অস্ত্রনালী, এমন কি প্রাণী থেকে
যে মল বের হয়ে আসে সেগুলোও এই ব্যাকটেরিয়া বা ক্ষুদ্র জীবানুর বড় গুদাম। প্রাণী হতে
যে মল বের হয় তা যদি পরীক্ষা করা হয় তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, এই মলগুলো ক্ষুদ্র জীবানু
দিয়ে ভরপুর, যেন এগুলো ক্ষুদ্র জীবানুর এক একটা বড় গুদাম। অতএব এটা প্রতীয়মান হয়, এই
মল যে স্থান হতে বের হয়ে এসেছে সেই স্থানেও এই সব ক্ষুদ্র জীবানু বিদ্যমান। কিস্তু
এই সব জীবানু সেখানে থাকা সত্ত্বেও তারা এই পাকস্থলীর পর্দা ছেদ করে অতিক্রম করতে সক্ষম
নয়।
এর কারণ
হচ্ছে, সেখানে এই প্রাচীর এমন শক্তিশালী যা ক্ষুদ্র জীবানুকে শরীরে প্রবেশ করতে বাধা
প্রদান করছে। এর প্রতিরোধ শক্তি প্রবল। তাই তারা অতিক্রম করতে সক্ষম হচ্ছে না। এই প্রতিরোধ
শক্তি প্রাণীর মধ্যে সৃষ্টি করল কে? অবশ্যই বলতে হবে, সেই মহান করুণাময় আল্লাহ। যখন
কোন প্রাণী মারা যায়, তার আর জীবন থাকে না, তখন তার এই প্রাচীরের প্রতিরোধ শক্তি হারিয়ে
যায়। ফলে এই ধংসাত্মক ক্ষুদ্র জীবানু শরীরের অভ্যন্তর থেকে সেই সব পর্দা ও প্রাচীর
ভেদ করে শরীরের সর্বস্থলে প্রবেশ করে। রক্তের স্থানে মিলিত হয়, সব শরীর দখল করে। অসংখ্য
জীবানুর জন্ম দেয় যা মানুষের স্বাস্থ্যের বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে। রগ ও রক্তের অপর
একটি প্রাচীর রয়েছে যা রক্তের মধ্যে এক ধরণের জীবানু রয়েছে তা গোস্তে প্রবেশ করতে বাধার
সৃষ্টি করে। প্রতিটি মাংশপেশীতে প্রবেশ করতে প্রতিরোধ করছে। প্রাণী যখন মারা যায়, এই
প্রাচীর ও দুর্গ ভেঙ্গে পড়ে এবং জীবানু সর্ব শরীর দখল করে ফেলে। এমনকি শরীরের যে ত্বক
জীবানু প্রবেশে বাধা প্রদান করত, কিন্তু প্রাণী মারা যাওয়ার সাথে সাথে সেই পথ জীবানুর
জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। এমনি ভাবে নাক, কান ও মুখ দিয়ে প্রবেশ করে মরা প্রাণী জীবানুর
গুদামে পরিণত হয়ে মানুয়ের স্বাস্থের ক্ষতির কারণ হয়ে যায়।
জনৈক
ইউরোপীয় ডাক্তার জন হানফার লারছোন বলেনঃ বর্তমানে আমাদের ইউরোপীয় আইনে সর্ব প্রকার
মরা প্রাণীর গোস্ত খাওয়া নিষেধ, তাই কেউ খায় না। কখন তারা এটা জানতে পেরেছে? হ্যাঁ
তারা জানতে পেরেছে তখনই, যখন এই জীবানুর পরিচয় লাভ করেছে।
রক্ত
পান করা নিষেধ কেন?
মহান
ধর্ম ইসলামের সকল বিধিনিষেধ যে বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য সম্মত এবং কল্যাণকর তা যতই দিন
যাচ্ছে ততই স্পষ্টতর হচ্ছে। এখানে রক্ত পান করার কথা আলোচনা করা যাক। আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন রক্ত পান করা হারাম করলেন কেন? জবাইকৃত প্রাণীর গোস্ত খাওয়া বৈধ, আর রক্ত অবৈধ
কেন? জবাইকৃত একই প্রাণী থেকে যদি একটু গোস্ত ও রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করা হয় তাহলে আমাদের
কাছে সুস্পষ্ট হবে যে, রক্তে অতি সহজে ও দ্রুত উৎপন্ন হতে পারে জীবানু। রক্ত হচ্ছে
জীবানু উৎপাদনের উর্বর ক্ষেত্র। অল্প সময়ের ব্যাবধানে সম্পূর্ণ রক্ত দখল করে এই সব
ক্ষুদ্র জীবানু মাত্র পাঁচ-ছয় ঘন্টার মধ্যে জীবানুর গুদামে পরিণত হয়। অপর দিকে গোস্তটি
এমন হতে পারে না, কারণ কি?
কারণ
হল, গোস্তের উপর পর্দা রয়েছে। মাংসপেশীতেও পর্দা রয়েছে। এই পর্দাগুলি কঠিন ও শক্ত।
সহজে জীবানু তা ভেদ করতে পারে না। অপর দিকে জীবানুগুলোর খাদ্য থাকে না বিধায় জীবানু
বৃদ্ধি পায় না। অতএব “গোস্ত” স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতির কারণ নয়। কিন্তু রক্ত পান করা
স্বাস্থের জন্য বিপদজনক, অথচ উক্ত রক্ত ও গোস্ত একই প্রাণীর। অতএব গোস্ত হালাল, আর
রক্ত হারাম।
কলিজা
আহার করা হালাল কেন?
রক্ত
খাওয়া যদি হারাম হয় তাহলে প্রশ্ন হলোঃ কলিজা কেন হালাল? কলিজার বেশির ভাগই তো রক্ত?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
أََُحِلَّتْ
لَنَا مَيْتَتَانِ وَ دَمَانِ فَأَمّا الْمَيْتَتانِ فَالْحُوْتُ وَالْجَرَادُ
وَأمَّا الدَّمَانِ فَالْكَبِدُ وَالطَِحَالُ (رواه أحمد)
অর্থঃ
আমাদের জন্য দু’টি মৃত প্রাণী এবং দুই প্রকার রক্ত হালাল করা হয়েছে। দুটি মৃত প্রাণী
হচ্ছে মাছ ও পঙ্গপাল, আর দুই প্রকার রক্ত হচ্ছে কলিজা ও প্লীহা। (আহমাদ)। এই হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
দুই প্রকার রক্ত বৈধ করেছেন। কলিজা ও প্লীহা। কারণ হলো, কলিজার মাঝে যে রক্ত রয়েছে
তা জীবানুমুক্ত, অনুরূপ ভাবে প্লীহাতে যে রক্ত রয়েছে তাও জীবানুমুক্ত। এই দু’টি যন্ত্রের
মধ্যে এমন যন্ত্র রয়েছে যার দায়িত্ব হচ্ছে রক্ত বিশুদ্ধ করণ, জীবানুমুক্ত করা ও পরিস্কার
রাখা। এখানে যে রক্ত রয়েছে তা জীবানুমুক্ত ও বিশুদ্ধ।
মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কে শিক্ষা দিলেন এবং কে তাঁকে এই তত্ত্ব জানিয়ে
দিলেন?
ইসলামে
যবেহ করার পদ্ধতি কি নিষ্ঠুরতা?
ব্রাহ্মণ
মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং কোন কোন দার্শনিক মতালম্বীদের দৃষ্টিতে পশু যবাই করা ও খাওয়া
তাদের নিজেদের জন্য হারাম। উদ্ভিদ বা শাক সবজিই তাদের একমাত্র খাদ্য। কেননা তাদের মতে
পশু যবাই করা নিতান্তই মর্মান্তিক ও নির্দয়তার কাজ। ওদের বাঁচার অধিকার আছে এবং সে
অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যেতে পারে না।
কিন্তু
বিশ্ব প্রকৃতির উপর দৃষ্টিপাত করলে ও সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে বিবেচনা করলে স্পষ্টই বুঝতে
পারা যায় যে, পশু যবাই করা একান্তই নির্দোষ কাজ। কেননা দুনিয়ার এসব জন্তু জানোয়ার
কোন নিজস্ব স্বতন্ত্র উদ্দেশ্য মূলক সৃষ্টি নয়। ওদের বুদ্ধি বিবেক ও নিজেস্ব ইচ্ছা
ও বাছাই করার শক্তি বলতে কিছুই নেই। ওরা মূলতঃ মানুষের খিদমতের কাজ সুসম্পন্ন করার
উদ্দেশ্যেই সৃষ্ট ও নিয়োজিত। মানুষ ওগুলোকে নিয়ন্ত্রণে এনে অনেক কার্য সম্পাদন করে।
অনুরুপভাবে ওদেরকে যবাই করে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করা হলে তাতে আপত্তির কিছুই থাকতে পারে
না। সৃষ্টিলোকে সদা কার্যকর আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম হচ্ছে নিকৃষ্ট ও নীচ সৃষ্টি জীব উত্তম
ও উচ্চতর সৃষ্টির জন্য আত্মহুতি দিচ্ছে। সবুজ উদ্ভিতাদি জন্তু জানোয়ারের খাদ্য হিসাবে
ব্যবহৃত হচ্ছে নিরন্তন। অনুরূপই জন্তু জানোয়ার মানুষের খাদ্যে পরিণত হচ্ছে। শুধু তাই
নয়, মানব সমষ্টির নিরাপত্তার জন্য ব্যক্তিকে হত্যা করা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে
রয়েছে। মানুষের জন্য পশু যবাই করা না হলে ওরা মৃত্যু ও ধ্বংস থেকে রক্ষা পেতে পারছে
এমন তো নয়। অন্যান্য অধিক শক্তিশালী হিংস্র জন্তু জানোয়ার কতৃক ছিন্ন ভিন্ন হয়ে ওদের
খাদ্যে পরিণত হওয়া তো অবধারিত। অথবা ওরা স্বভাবিক মৃত্যু বরণ করতে বাধ্য হবে। আর তা
ওদের গলদেশে শানিত অস্ত্র চালিয়ে যবেহ করার তুলনায় অধিক কষ্টদায়ক হওয়া নিশ্চিত।
ইসলাম
প্রাণী সমূহকে খাওয়ার উপযোগী বানানোর জন্য যে মৌলিক শর্ত দিয়েছে তা হচ্ছে শরীরের সমস্ত
রক্ত বের হয়ে যাওয়া। এ জন্য স্বাভাবিকভাবে ঘাড়ের সামনের দিকটার রক্ত প্রবাহের চারটির
প্রধান রগ (লঁমঁষধহাপরহং ঈধৎড়ঃরফ অৎঃবৎরবং)
এর সঙ্গে কন্ঠনালীও কাটতে হবে। উক্ত প্রাণীর গলা, সামনের অৎঃবৎু/ ধমণী/রগগুলি
কেটে ফেলার কারণে রক্তের সাথে জীবানুসহ সকল প্রকার বর্জ পদার্থ ইত্যাদি মাংশপেশীসহ
অন্যান্য ড়ৎমধহ অঙ্গ প্রতঙ্গে স্থানান্তরিত হওয়ার সুযোগ পায় না। আর এ কারণেই যবেহকৃত
প্রণীর চর্বি, গোশত ও অস্থি মজ্জা তথা অন্যান্য অঙ্গ জীবানুমুক্ত থেকে যায়।
এক সময়
ব্রিটেনে প্রণীদের প্রতি সদয় কমিটি মুসলিমদের বিরুদ্ধে আদালতে এই অভিযোগে মামলা দায়ের
করে যে, মুসলিমগণ নিষ্ঠুর। কেননা, তারা জন্তুকে জবাই করে তাদেরকে কষ্ট দেয়। এ জবাইকে
জুলুম আখ্যা দিয়েছিল। কোর্ট মুসলিমদেরকে জবাই করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। মুসলিমগণ
এর কারণে যুলম নির্যাতন ভোগ করতে বাধ্য হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে মুসলিমদেরকে বর্তমানেও
এমন দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। আমাদের উলামা ও চিন্তাবিদদের উচিৎ বিজ্ঞানের যুক্তির মাধ্যমে
উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা।
একজন
মানুষ যদি তার দুই হাত দিয়ে অন্য একজনের গর্দান চেপে ধরে এবং গর্দানের দু’টি ‘ওদজা’
নামক রগের উপর কয়েক সেকেন্ড চাপ সৃষ্টি করে রাখে তাহলে দেখা যাবে, উক্ত লোকটি অজ্ঞান
হয়ে গেছে তার অনুভূতি শক্তি হারিয়ে যাবে।
প্রশ্ন
হলো কেন এমন হয়?
কারণ
হলো, মগজ সব সময় অক্সিজেনের ধরাবাহিক সাহায্য নিয়ে থাকে। মগজে রক্ত প্রবেশে যখন বাধার
সৃষ্টি করা হয়, মাত্র কয়েক সেকেন্ড যদি রক্ত সরবরাহ বন্ধ থাকে, সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে
যায়।
যদি কেহ
কোন প্রাণীর যে সমস্ত রগের মাধ্যমে মগজে সাহায্য পৌঁছে থাকে ঐ সমস্ত রগগুলো চেপে ধরে
তাহলে সে প্রাণীরও অনুভুতি হারিয়ে যায়। আর যদি যবেহ করার মাধ্যমে হুলকুমসহ তার আশেপাশে
ওদাজা নামক রগগুলো হঠাৎ কেটে ফেলা হয় তাহলে সাথে সাথে জ্ঞান ও অনুভুতি শক্তি হারিয়ে
যায়। যেহেতু সামান্য সময় চাপ সৃষ্টি করলেই জ্ঞানহারা হয়ে যায়, তাই যবেহ করার সাথে সাথে
জ্ঞান ও অনুভুতি যে হারিয়ে যায় তাতে কোন সন্দেহ নেই। তারপর যদি উক্ত জন্তুকে কেটে টুকরা
টুকরা করা হয় তাহলে উহা কি কোন ব্যাথা অনুভব করে? না, কোন ধরনের ব্যাথা অনুভব সে করে
না। কারণ উক্ত রগগুলো কাটা ও রক্ত বন্ধের মাধ্যমে অনুভূতির যে কেন্দ্র রয়েছে তার বিলুপ্তি
ঘটে। তা হলে প্রশ্ন থেকে যায়, কেন প্রাণীটি জবেহ করার পর অনেক সময় পর্যন্ত নড়া চড়া
ও পাঁ দিয়ে জোরে জোরে নাড়া দিতে থাকে? তার জবাব হচ্ছে ঃ মগজ যখন রক্তশুন্য হয়ে পড়ে
তখন মগজ থেকে হৃদপিন্ডে বার্তা পাঠিয়ে দেয় যে, আমি মহা বিপদে আছি, আমার রক্ত কম হয়েছে,
তোমরা রক্ত পাঠাও। এমনি ভাবে নাড়ী ভূড়ি অঙ্গ প্রতঙ্গ ও সমস্ত শরীরে বার্তা পাঠিয়ে রক্ত
পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এ খবর পাঠায় যে, রক্তের অভাবে মগজের কার্যক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে,
তোমরা রক্ত পাঠাও। অতঃপর উক্ত প্রাণীটি নড়াচড়া করতে থাকে এবং যে সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গে
রক্ত রয়েছে তা এই হরকত ও নড়া চড়ার মাধ্যমে হৃদপিন্ড উক্ত রক্তগুলো পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু
তা সেখানে পৌঁছতে পারে না বরং সেই কাটা রগ দিয়ে বাহিরে বের হয়ে আসে। এমনি ভাবে শরীরের
সমস্ত রক্ত বাইরে বের হয়ে গোস্ত রক্তমুক্ত হয়ে যায়। এবং পরিস্কার ও পবিত্র হয়ে যায়,
যা ভিতরে থাকলে মানুষের স্বাস্থের ক্ষতির কারণ হতো। এই রক্ত ভিতরে থাকলে জীবানু সম্প্রসারণে
সাহায্য করতো।
আর মহান
সৃষ্টিকর্তা মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি ও বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য এই পদ্ধতির ব্যবস্থা
করেছেন। সুবহানাকা ইয়া রব!
এই নিয়মের
খেলাফ যে কোন নিয়মে যবেহ করলে, উক্ত প্রাণীর দেহাভ্যন্তরে জীবানু এবং অন্যান্য আবর্জনা
থেকে যায়, যার গোসত চর্বি ইত্যাদির সাথে ভক্ষণের ফলে জটিল রোগ হতে পারে। ভারত উপমহাদেশে
হিন্দুরা প্রাণীকে দাঁড় করিয়ে তার ঘাড়ের উপর তরবারীর আঘাত করে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন
করে ফেলত। তাদের ভাষায় একে ঝটকা বলা হয়। এরূপ গোস্তকে মহাপ্রসাদ বলা হয়। ঝটকাকালে প্রাণীর
মেরুদন্ড কেটে যাওয়ার দরুন মস্তিস্কের সাথে শরীরের সম্পর্ক নিঃশেষ হয়ে যায়, ফলে তার
কাটা স্থান থেকে ঐ পরিমাণ রক্তই বের হয় যা কাটা স্থানের আশেপাশে থাকে। প্রাণীর শরীরের
ভিতর যথেষ্ট পরিমাণ রক্ত থেকে যায়।
ইউরোপের
দেশগুলোতে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঝটকা পদ্ধতিতে প্রাণী বধ করা হয়। অতঃপর তারা একে নতুন আকৃতি
প্রদান করে এড়রষধঃরস বানাল। অর্থাৎ প্রাণীকে কাঠের ফ্রেমে দাঁড় করিয়ে উপর থেকে একটি
ভারী ছোরা ফেলে শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলত। বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা জানা গেছে যে,
এভাবে মেশিনে কাটা গোস্ত খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, যেহেতু তার ভিতরে রক্ত থেকে যায়।
তারপর তারা পশু জবায়ের আধুনিক পদ্ধতি আবিস্কার করেছে। পশুটির মাথায় বিদ্যুতের শর্ট
দেয়া হয় এবং পশুটি যখন বেহুশ হয়ে যায় তখন তার পায়ে শিকল লাগিয়ে উল্টে করে লটকে দেয়া
হয়। অতঃপর ঐ বেহুশ প্রাণীর গলায় ধারাল মেশিন চালিয়ে জবাই করা হয়। এই আধুনিক পদ্ধতিতে
জবাই করার ক্ষেত্রে পশুকে বেহুশ করার জন্য বিদ্যুৎশর্ট লাগানো হয়। এর কারণে হিষ্টামিনের
সৃষ্টি হয় যা ভক্ষণে মানব শরীরের ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। তাই জবাই করা ইসলামী পদ্ধতি
প্রাণীর জন্য আরামদায়ক এবং আহারকারীদের জন্য অধিক নিরাপদ।
শুকরের
মাংস হারাম কেন?
আল্লাহর
মনোনীত ধর্ম ইসলামের সুশৃংখল নিয়ম নীতি, বিধি নিষেধ, পৃথিবীর সমাজ ব্যবস্থা ও মানব
জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে চরম ও পরম শান্তি দিতে পারে।
আল্লাহ
তা’আলা মানব জাতির জন্য শুকরের মাংস খাওয়াকে সম্পূর্ণ নিষেধ ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কুরআনে
এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও কিছু নির্দেশের সাথে শুকুরের মাংস খাওয়াকে হারাম
ঘোষণা করে বলেনঃ
إِنَّمَا
حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ (سورة البقرة ১৭৩)
তিনি
তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত প্রাণী, রক্ত ও শুকরের মাংস। ( সুরা বাকারা, ২ঃ ১৭৩ আয়াত)।
إِلَّا
أَنْ يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيرٍ فَإِنَّهُ
رِجْسٌ (سورة الانعام ১৪৫)
অর্থঃ
মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস অপবিত্র। (সুরা আনআম, ৬ঃ ১৪৫ আয়াত)।
এখানে
প্রশ্ন হলো, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কেন শুকরের মাংস হারাম করলেন? কারণ হলো, জগতে যত
প্রকার ক্ষতিকর জীবানু রয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে খারাপ জীবানু ভান্ডার হলো শুকরের মাংস।
তাতে রয়েছে এক প্রকার ধ্বংসাত্মক এবং মানব হত্যাকারী বিষাক্ত ও সর্বাপেক্ষা ক্ষতিকারক
ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস। শুকরের মাংসটাই মানুষের স্বাস্থের জন্য চরম ক্ষতিকর। সম্প্রতি
পরীক্ষা নিরীক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, শুকরের মাংস শরীরে
ক্যান্সার সৃষ্টিতে সহায়ক। তাই চিকিৎসকগণ এই ক্ষতিকর প্রাণীটির মাংস খাওয়ার ব্যাপারে
মানুষকে জোরালোভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন। বর্তমানে ইউরোপেও শুকরের মাংস আহার করা থেকে
বিরত থাকার জন্য শক্তিশালী দাবী উঠেছে। তারা বৈজ্ঞানিক তথ্য ও ব্যাখ্যা সাপেক্ষে শুকরের
মাংস থেকে ট্রিচিনিয়াসিস (ঞৎরপযরহবড়ংরং) নামক এক প্রকার কৃমির জন্ম দেয়, যার কারণে
কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষের মৃত্যুও ঘটে।
ট্রিচিনেলা
স্পাইরালিস ঞৎরপযরহবষষধ ংঢ়রৎধষরং নামক সূতার মত এক প্রকার কৃমির মুককীট (খধৎাধ) রোগাক্রান্ত
শুকরের মাংসে অবস্থান করে।
শুকরের
মাংসের মাধ্যমে (ঞধবহরধ ঝড়ষরঁস) টিনিয়া সোলিয়াম নামক অন্য এক ধরনের কৃমিও সহজে মানুষের
মধ্যে বিস্তার লাভ করে। কয়েক ফুট লম্বা এই ফিতা কৃমি শুকরের মাংসের ভিতরে অবস্থান করে।
শুকরের মাংস ভক্ষণকারী ব্যক্তি শুকরের মাংস খাওয়ার সময় এই কৃমি সহজেই মানুষের পেটে
প্রবেশ করে। কারণ এই কৃমির শুককীট (খধৎাধ) এই মাংসে পাওয়া যায়। যথেষ্ট সাবধানতা ও সতর্কতা
অবলম্বন করা সত্তেও এই রোগে আক্রান্ত লোকের সংখা পাশ্চাত্য দেশসমূহে সর্বাধিক। এ ছাড়া
এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোন কোন পন্ডিত ব্যক্তি অভিমত প্রকাশ করেন যে, শুকরের মাংস আহারকারী
লজ্জা শরম হারিয়ে ফেলে। শুকরের মাংস অবৈধ হওয়ার কারণ সমূহের মধ্যে এটাও হতে পারে যা
জীব বিজ্ঞানীগণ বর্ণনা করেছেন। যে প্রণীর মাংস খাওয়া হয় সেই প্রাণীর স্বভাব, যে তার
মাংস খায়, তার মধ্যেও সেই স্বভাবের কিছুটা প্রতিফলন ঘটে। শুকরের স্বভাবের মধ্যে নিকৃষ্টতর
স্বভাব হচ্ছে সংগম পদ্ধতি। শুকরের যখন সংগমের প্রয়োজন হয় তখন সেই দলে যতটি পুরুষ শুকর
রয়েছে সবগুলোই একের পর এক ধারাবাহিক ভাবে শুকরণীকে ব্যবহার করতে থাকে। এমনকি উক্ত দলে
যদি দশটি শুকরও থাকে তাহলে একটার পর আর একটা অপেক্ষা করতে থাকে। সে চলে যাবার পর, আর
একটি আসে, এমনি ভাবে সবার যৌন চাহিদা মিটিয়ে নেয়। গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা ও
নিরীক্ষা করলে দেখা যায়, যারা শুকরের মাংস আহার করে তাদের মাঝেও এমন স্বভাব প্রতীয়মান
ও প্রতিফলিত হতে দেখা যায়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে
আমরা বিশেষ ভাবে উল্লেখকরতে পারি আমেরিকা ও ইউরোপ দেশগুলোর কথা। সেখানে শুকরের মাংস
আহার করা বৈধ। তাদের অধিকাংশ লোক শুকরের মাংস খায়। আমার মনে হয়, সে কারণেই সেই দেশগুলো
যৌন-স্বাধীন দেশে পরিণত হয়েছে। একজন যুবতী একাধিক বয় ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরছে। যখন ইচ্ছা
তখন তাদের যৌন চাহিদা মিটিয়ে নিচ্ছে। লজ্জা শরম ও ধর্মীয় কোন অনুভূতি তাদের নেই। নাইট
ক্লাব, বিবাহপূর্ব যৌন মিলন, নর-নারীর অবাধ যৌন মেলামেশা এবং উলঙ্গ ক্লাব ইত্যাদি আধুনিক
সৃষ্ট সভ্যতার যৌন অশ্লীলতার উজ্জল জঘন্য নিদর্শন। বিবাহের পূর্বে একজন বালিকা অন্য
বন্ধু বান্ধবের সহচর্য লাভ করে এবং বিবাহরে সময় তার বিগত জীবনের ঘটনাবলী ঘটকের নিকট
অপ্রকাশ রাখার প্রয়োজন বোধ করে না। তার স্বজনগণও তার অন্য সঙ্গ লাভের জন্য কিছুই মনে
করে না। বিবাহের সময় স্বামী যে শুধু স্ত্রীর বিগত জীবন সম্পর্কেই অবহিত হয় তাই নয়,
বরং যে সমস্ত বন্ধুবর্গ তার দেহ উপভোগ করেছে, তাও স্বামী জানতে পারে। এবং এমন কার্য
কলাপের প্রতি তার কোন রূপ আপত্তি থাকে না।
এমন কি
তারা বিয়ে ছাড়া একত্রে বসবাস করা উত্তম মনে করে। উভয়ের মনের সাধ পরিপূর্ণ হওয়ার পর
একে অপর হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্যত্র কোথাও প্রেম নিবেদন করার পূর্ণ অধিকার তাদের থাকে।
এমনকি মা ছেলের সাথে, পিতা মেয়ের সাথে, বোন ভাইয়ের সাথে যৌন চাহিদা মিটাতে তাদের কোন
দ্বিধা দ্বন্দ নেই। যখন আমি মক্কায় অধ্যায়নরত ছিলাম তখন এক মাসিক পত্রিকায় দেখলাম,
জনৈক বৃটিশ সাংবাদিক লিখেছেনঃ এক যুবতী এক যুবকের সাথে সমস্ত রাত এক রুমে অবস্থান করার
পর সকাল বেলা বিদায়ের সময় যুবতী তাকে বলছেঃ ভাই! তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ, তুমি আজকে যে
আনন্দ আমাকে দিলে এমন আনন্দ বাবাও আমাকে দিতে পারে না। উত্তরে সে বললঃ বোন! তুমি ঠিকই
বলেছ! মাও আমাকে তাই বলে।
আমাদের
দেশে সাওতাল উপজাতিরা সাধারণতঃ শুকরের মাংস খেয়ে থাকে। তাদের মেয়েদেরকে কেউ যদি ধর্ষন
করে এবং তা প্রকাশ পায় তাহলে কিছু জরিমানা স্বরুপ টাকা দিয়ে একটা খাওয়ার ব্যবস্থা করে।
এরপর আর কোন অসুবিধা কেউ অনুভব করে না।
অন্য
দিকে যদি আমরা একটু আলোচনা করি তাহলে দেখতে পাই মুসলিমরা গরুর গোস্ত খায়। সৃষ্টিকর্তা
তাদের জন্য হালাল বা বৈধ করেছেন।
যখন কোন
গাভীর সংগমের ইচ্ছা জাগে তখন পুরুষ গরু বিভিন্ন আলামতের মাধ্যমে বুঝতে পারে এবং গাভীর
কাছে ছুটে আসে। সেখানে যদি মাত্র দুইটি পুরুষ গরুর উপস্থিতি ঘটে তখন আমরা কি দেখতে
পাই? আমরা দেখতে পাই সেখানে গাভীকে ব্যবহার করা বাদ দিয়ে উভয়ই পরস্পরে যেন যুদ্ধ ঘোষণা
করে। উভয়ের একটি পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত এমন চলতেই থাকে। একটি গরু একটি গাভী ব্যবহার
করবে, আর অপরটি তাতে অংশ গ্রহণ করা তো দূরের কথা, চোখ দিয়ে দেখবে এটাও গরু সহ্য করতে
পারে না। এ হচ্ছে গরুর স্বভাব।
যারা
প্রকৃত মুসলিম তাদের জীবন বেঁচে থাকতে স্বীয় স্ত্রী অথবা মা অথবা বোনের প্রতি অপর পুরুষ
স্পর্শ করা তো দূরের কথা, বরং কুদৃষ্টি নিক্ষেপ করুক এটাও তারা সহ্য করতে পারে না।
ধর্মীয় বিধিবিধান তো বটেই। স্বভাবগত দিক দিয়েও এটাই সত্য।
হ্যাঁ,
নামে মুসলাম অনেক রয়েছে। হালাল হারাম বিচার নেই, ধর্মীয় বিধিবিধান নেই, তাদের স্বভাব
মুসলিম স্বভাবের ব্যতিক্রম হওয়াই স্বাভাবিক।
এ প্রসঙ্গে
কুকুরের স্বভাবের একটি বর্ণনা তুলে ধরতে চাই। আমার এক উস্তাদ ইতিহাস থেকে একটি গল্প
বলেছিলেন। আরবের জাহিলিয়াত যুগে এমন লোক ছিল যারা পূর্ববর্তী ধর্মের অনুসরন করত। এক
ব্যক্তির চারজন ছেলে ছিল। মৃত্যুর সময় চারজনকে ডেকে বললঃ আমি মারা যাওয়ার পর তোমাদের
মাঝে যদি সম্পদ নিয়ে ঝগড়া সৃষ্টি হয় তাহলে নিজেদের মাঝে ঝগড়া না করে অমুক স্থানে জনৈক
ধর্ম জাযক রয়েছে, তার কাছে গিয়ে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী তোমরা কে কতটুকু পাবে তা জেনে
নিবে। তাদের পিতার মৃত্যুর পর চারজন পরামর্শ করে সেই ধর্মজাযকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল।
পথিমধ্যে যখন রাত হল তখন তারা তাবু খাটিয়ে রাত্রি যাপন করল। ভোরের দিকে কতকগুলি লোক
দৌড়ে আসতে দেখে তারা তাদেরকে জিজ্ঞেস করলঃ তোমাদের কি হয়েছে, তোমরা দৌড়াচ্ছ কেন? তারা
বললঃ আমাদের একটি উট ছুটে গেছে, মনে হয় এই পথে চলে গেছে। তখন লোকগুলি জিজ্ঞেস করলঃ
তোমরা কারা, কোথা থেকে এসেছ এবং কি জন্য ও কোথায়ই বা যাচ্ছ? তারা জবাব দিলঃ আমরা পথিক,
আরব থেকে এসেছি, অমুক ধর্মজাযকের কাছে যাব। লোকগুলি জিজ্ঞেস করলঃ তোমরা কি আমাদের উটটিকে
দেখেছ? তাদের একজন বলল ঃ না আমরা দেখিনি; আচ্ছা তোমাদের উটের একটি পায়ের খুর কি ভংাগা
? তাদের উটটির একটি পায়ের খুর আসলেই ভাংগা ছিল। তাই তারা ভাবল, এরাই উটটি জবাই করে
খেয়েছে। আর খুর ভাংগার কথা তাই তো তারা জানে।
তারা
বললঃ হ্যাঁ, আমাদের সেই উটটির খুর ভাংগা ছিল। তোমরাই জবাই করে খেয়েছ, তোমাদেরকে অবশ্যই
জরিমানা দিতে হবে।
তাদের
অন্য ভাই বললঃ আল্লাহর কসম! আমরা তোমাদের উট দেখিনি। আচ্ছা, তোমাদের উটের একটি চোখ
কি কানা?
আসলেই
তাদের উটের একটি চক্ষু কানা ছিল। এবার তাদের বিশ্বাস আরো বেড়ে গেল যে, এরাই উটটি জবাই
করে খেয়েছে তা না হলে কি করে তারা জানতে পারল যে, তাদের উটের এক চোখ কানা।
তারা
বললঃ হ্যাঁ, আমাদের উটের এক চোখ কানা। অতএব তোমরাই উটটিকে জবাই করে খেয়েছ তাতে কোন
সন্দেহ নেই।
তাদের
আর এক ভাই বলল ঃ আল্লাহর কসম করে বলছি! আমরা তোমাদের উট জবাই করে খাইনি। এমন কি তা
আমরা আমাদের চোখেও কোন দিন দেখিনি। আচ্ছা তোমাদের উটটির মনে হয় লেজ নেই তাই না?
এবার
তাদের বিশ্বাস আরও একটু গাঢ় হলো যে, তারাই আসলে উটটি জবাই করে খেয়েছে। কিন্তু জরিমানার
ভয়ে স্বীকার করছে না। কারণ না দেখে উটের এমন সূক্ষ্ম ত্র“টির কথা কি করে জানলো?
তারা
বললঃ হ্যাঁ, আমাদের উটের লেজ নেই, আমরা তোমাদের কসম বুঝি না, এখন বাপু তোমরা আমাদের
উট কোথায় লুকিয়ে রেখেছ, তাড়াতাড়ি বের করে দাও। নতুবা তোমাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।
তাদের
সবার বড় ভাই বললঃ আল্লাহর কসম করে আমরা বলছি যে, আমরা তোমাদের উটটি দেখিনি। কোথাও লুকিয়ে
রাখিনি। আর না জবাই করে খেয়েছি। আচ্ছা তোমাদের উটটি দ্রুত গতিতে ছুটতে ছিল? আসলেই তাদের
উটটি দ্রুত গতিতেই পালিয়ে গেছে। এবার তারা তাদেরকে বললঃ আমরা তোমাদেরকে আমাদের উট না
দেয়া পর্যন্ত কোন ক্রমেই ছাড়তে পারি না। আর
না হয় অমুক জায়গায় একজন ধর্মগুরু রয়েছে, তার কাছে চলো। তিনি যা ফায়সালা করে দেন তাই
হবে।
এবার
সবাই সেই ধর্মগুরুর কাছে গিয়ে অভিযোগ করলো। আরবের মেহমানদারী প্রবণতা সেই যুগেও ছিল।
তাই তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত শোনার আগে তাদের জন্য মেহমানদারীর ব্যবস্থা করলেন। তাদের
জন্য কিছু আঙ্গুর, দুধ, রুটির ব্যবস্থা করলো।
তারা
আঙ্গুর মুখে দিয়েই বললঃ আহ! এই আঙ্গুরগুলো যদি কবরস্থানের না হত, তাহলে কতই না ভাল
হত!
রুটি
খাওয়ার সময় তারা বললঃ রুটি কতই-না ভাল হত যদি সেগুলো হায়েজওয়ালী রমণী তৈরী না করত!
দুধ পান
করে তারা বললঃ দুধের সম্পর্ক যদি কুকুরের সাথে না থাকত তাহলে কতই না সুস্বাদু হত! এদিকে
ধর্মগুরু পার্শ্ব থেকে তাদের কথাগুলো শুনে তার চাকরকে গিয়ে গোপনে জিজ্ঞেস করলঃ তুমি
কোথা থেকে, কোন গাছের আঙ্গুর এনেছ? সে বললঃ আমি বাগানের পার্শ্বে একটি আঙ্গুরের গাছ
আছে যা একটি কবর থেকে উঠেছে, সেখান থেকে এনেছি।
এবার
তিনি রাখালের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ আচ্ছা তুমি কোন বকরীর দুধ মেহমানদেরকে দিয়েছ?
সে বললঃ ঐ সেই বকরী যা জন্মের পর তার মা মারা যায়। তাই তাকে কুকুরের দুধ পান করিয়ে
পালন করা হয়েছিল। এবার ধর্মগুরু আশ্চর্য হয়ে যে মহিলা রুটি বানিয়েছে তার কাছে গিয়ে
জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি বর্তমানে মাসিক অবস্থায় আছ? সে উত্তর দিলোঃ হ্যাঁ, আমি হায়েজ
অবস্থায় আছি। এগুলো জানার পর ধর্মগুরু মেহমানদের খাওয়া শেষ হলে অভিযোগকারীদেরকে নিয়ে
আলোচনায় বসলেন।
অভীযোগকারীরা
তাদের সমস্ত ঘটনা বর্ণনা দিয়ে বললঃ আমাদের উট যদি তারা না দেখে থাকে তাহলে কিভাবে তরা
আমাদের উটের ত্র“টিগুলি জানতে পারলো?
ধর্মগুরু
তাদের জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা যদি তাদের উট না দেখে থাক তাহলে কি করে বলেল যে, তাদের
উটের ডান পায়ের একটি খুর ভাংগা? তাদের এক ভাই বললঃ জনাব! তারা যখন আমাদেরকে তাদের উটের
কথা জিজ্ঞেস করছিল তখন আসে পাশে নজর করলাম। কোন উট এ পথে গেছে কিনা? আমি দেখতে পেলাম
যে, একটি উট গমনের পায়ের চিহ্ন রয়েছে। তবে ডান পায়ের খুরটি ভাঙার চিহ্ন রয়েছে। তাই
আমি জিজ্ঞেস করেছি যে, তাদের উটটির ডান পায়ের খুর ভাংগা কি না?
তিনি
বললেনঃ এটা বুঝলাম, কিন্তু কিভাবে এটা বুঝতে পেরেছ যে, উটটি কানা?
তাদের
একজন বললঃ আমি লক্ষ্য করলাম যে, সেখানে কিছু ঘাস রয়েছে। এক পাশে খেয়েছে আর অন্য পাশে
খায়নি। তাই তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, তাদের উটটি কানা কিনা?
তিনি
বললেনঃ এটাও না হয় বুঝলাম কিন্তু কিভাবে এটা জানতে পেরেছ যে, যে তাদের উটের লেজ নেই?
একজন
বললঃ জনাব! উটের একটা স্বভাব আছে যে, মল ত্যাগ করার সময় লেজ নাড়াচাড়া করে। এর ফলে তার
মল এক জায়গায় থাকে না। আমি দেখলাম যে, উটের মল এক জায়গায় রয়েছে। তাই তাদের বললাম, আমার
মনে হয় তাদের উটের লেজ নেই।
তাদের
উট যে দ্রুত গিয়েছে তোমরা যদি না দেখে থাক তা হলে কি করে জানলে? তাদের একজন বললঃ তারা
যখন কথাবার্তা বলছিল আমি দেখলাম যে, রাস্তার ঘাসগুলো এখানে একটু খাওয়া ওখানে একটু খাওয়া।
তাই তাদেরকে বলছিলাম যে, তাদের উটটি মনে হয় দ্রুত পালিয়ে গেছে।
এবার
ধর্মযাজক অভিযোগকারীদের বললঃ আসলে তারা তোমাদের উট দেখেনি, বরং বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে
তারা এমন কথা বলেছে; তোমরা এখন চলে যেতে পার। অভিযোগকারী চলে যাবার পর ধর্মগুরু তাদেরকে
প্রশ্ন করলেনঃ তোমরা কি করে জানতে পারলে যে, রুটিগুলো হায়েজওয়ালী মহিলা তৈরী করেছে?
আংগুরগুলো কবরস্থান থেকে আনা হয়েছে এবং দুধের সম্পর্ক কুকুরের সাথে রয়েছে? তারা বললঃ
জনাব! মহিলারা যখন পবিত্র থাকে তখন তারা ঠিকভাবে বসতে পারে এবং তাদের কাজগুলো নিপুণতার
সাথে করতে পারে। আর যদি মাসিক হয় তখন ভালভাবে বসতে পারে না এবং কাজে মনোনিবেশ ঠিকভাবে
দিতে পারে না। তাই রুটির অবস্থা দেখে আমরা এ কথা বলেছি।
আর সাধারণ
মাটি থেকে যে আংগুর হয় সেই আংগুর হয় মিষ্টি। কবর বা কবরস্থান থেকে যে গাছ হয় তার আংগুর
হয় টক। আর দুধ খেয়ে আমাদের মধ্যে এমন ভাব সৃষ্টি হয়েছিল যে, আপনার আদর ও মেহমানদারী
পেয়ে আপনাকে জিহ্বা দিয়ে চেটে তার বদলা দেই। এই অনুভূতি জাগার কারণে আমরা মনে করেছিলাম
যে, এটাতো কুকুরের স্বভাব। হয়তো আমরা যে দুধ খেয়েছি সেই দুধের সম্পর্ক কোন কুকুরের
সাথে রয়েছে। তাই জীব বিজ্ঞানীগণ বলেন, যে প্রণীর গোস্ত অথবা দুধ খাওয়া হয় সেই প্রাণীর
স্বভাব কিছুটা তাদের উপর প্রতিফলিত হয়।
মুনখানিকা
কি এবং হারাম কেন?
সূরা
মায়েদার তিন নং আয়াতে মুনখানিকা আহার করা হারাম বলা হয়েছে। মুনখানিকা ঐ প্রাণীকে বলা
হয় যাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে অথবা শ্বাস রুদ্ধ হয়ে মারা গেছে। প্রশ্ন হলোঃ কেন
এ ধরনের প্রাণীর মাংস আহার করা হারাম করা হয়েছে?
আধুনিক
চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরে যাওয়া প্রাণী মৃত প্রাণীর ন্যায়। এটা
যেন একটা বিরাট জীবানু ভান্ডারে পরিণত হয়। কেননা শ্বাস রুদ্ধ অবস্থায় যখন মৃত্যু হয়
তখন শরীরে রোগ জীবানু প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যায়, প্রতিরোধ শক্তি থাকে না। তাই
রোগ জীবানুর সহায়ক হয় এবং শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গে প্রবেশ করে। পরিশেষে এ প্রাণীটি আহারকারীর
জন্য মহা বিপদজনক হয়ে থাকে।
মাওকুদাহ
কি ও হরাম কেন?
মাওকুদাহ
ঐ জন্তুকে বলা হয়, যা লাঠি অথবা পাথরের প্রচন্ড আঘাতে নিহত হয়। এ ধরণের আঘাতজনিত মৃত
প্রাণীর মাংস আহার করা ইসলামে হারাম করা হয়েছে।
এর কারণ
হলঃ প্রচন্ড আঘাতে রগগুলি ফেটে যায়। রক্ত মাংসের সাথে মিশে বিষাক্ত বস্তুতে পরিণত হয়।
এই বিষাক্ত বস্তু ফুলে যাওয়া স্থানে পাওয়া যায়। আমরা দেখতে পাই যে, শক্ত আঘাতের কারণেই
ঐ স্থান ফুলে যায়। রগ ফেটে যাওয়ার ফলেই এই ব্যাথা মাংস রক্তের সাথে মিশে অবস্থার সৃষ্টি
হয়। বর্তমানে প্রকাশ পেয়েছে যে, শক্ত আঘাতজনিত কারণে প্রাণীর মৃত্যু ঘটলে জীবানু প্রতিরোধ
শক্তি লোপ পায়, অপর দিকে তার শরীরে রক্তগুলি থেকে যায়। ফলে জীবানুর উর্বর ক্ষেত্রে
পরিণত হয়ে যায় এই শরীর এবং সর্ব শরীর দখল করে এই জীবানু।
মুতারাদ্দিয়া
ঐ প্রাণীকে বলে যা কোন পাহাড়, টিলা, উচু স্থান অথবা কুপে পড়ে মরে যায়।
নাতীহা
ঐ প্রাণীকে বলে যা কোন প্রাণীর শিং এর আঘাতে মরে যায়। উভয় প্রকার প্রাণী ইসলামে হারাম
করেছে এ কারণে যে, দেহের ভিতরে রক্ত থাকার ফলে জীবানু প্রসারের উর্বর ভূমিতে পরিণত
হয় এবং জীবানু সহজে সমস্ত দেহ দখল করায় এটি একটা জীবানুর ভান্ডারে পরিণত হয়, যা ভক্ষণে
মানব স্বাস্থের চরম ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। আল্লাহই ভাল জানেন।
মদ ও
নেশাগ্রস্থ বস্তু হারাম কেন?
আল্লাহ
তা’আলার প্রেরিত ধর্ম সমূহের মধ্যে একমাত্র ইসলামের এ বৈশিষ্ট রয়েছে যে, মানুষের স্বাস্থ্য
ও সুস্থতার প্রতি লক্ষ্য করে খাওয়া দাওয়ার জিনিসকে হালাল অথবা হারামে বিভক্ত করে বিশ্ব
মানবতার প্রতি এক বিরাট অনুগ্রহ করেছেন।
কোন সন্দেহ নেই যে, ধর্ম, ইয্যত, জান, মাল ও আকল
এই পাঁচটি মৌলিক বিষয়ের নিরাপত্তাই হচ্ছে প্রকৃত নিরাপত্তা। মানব রচিত আইনে এই পাঁচটি
বিষয়ে নিরাপত্তার কোন নিশ্চয়তা দিতে পারে না।
আকলকে
সংরক্ষণ করা শরীয়তের হিকমত। এ কথাটি স্পষ্টভাবে পরিস্ফুটিত হয় নেশাগ্রস্থ বস্তুুগুলো
হারাম করা ও নেশাখোর ব্যক্তির শাস্তির ব্যবস্থার মাধ্যমে। সবার কাছে সুপ্রতিষ্ঠিত যে,
মানব জাতির কাছে ইসলামের পর সব চেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হচ্ছে আকল যার মাধ্যমে মানুষ
পার্থক্য করতে পারে ভাল ও মন্দ এবং উপকারী ও অপকারী বস্তুর মাঝে।
ইসলামে
হারাম দ্রব্যগুলির উপর যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে,
এর মধ্যে ধ্বংসাত্মক পরিণতি ছাড়া মানব জাতির কল্যাণকর কোন কিছুই নেই। যাও বা সামান্য
পরিমানে রয়েছে তা পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হওয়ার পূর্ব লক্ষণ। যে দ্রব্য জ্ঞান বুদ্ধি লোপ
করে দেয়, নেশা সৃষ্টি করে, ধ্বংস করে মানবীয় গুণাবলী এবং ধ্বংস করে দেয় সমাজ ও সভ্যতাকে
সেটি হচ্ছে মদ। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইুহ ওয়া সাল্লাম এই জাতীয় সব জিনিস
চিরদিনের জন্য হারাম করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেনঃ
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ
وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ
تُفْلِحُونَ ﴿৯০﴾ إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ
الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ
ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ ﴿المائدة৯১﴾
অর্থঃ
ওহে যারা ঈমান এনেছ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের
অপবিত্র কাজ। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাক যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পার। শয়তান চায়
মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্র“তা ও বিদ্ধেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং
আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখনও কি নিবৃত হবে না?
(সূরা মায়েদা, ৫ঃ ৯০ ও ৯১ আয়াত)।
অন্য
আয়াতে বলেনঃ
وَلَا
تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ (سورة النساء ২৯)
তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করনা। (সূরা নিসা, ৪ঃ ২৯ আয়াত)।
وَلَا
تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ (سورة البقرة ১৯৫)
অর্থঃ
তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করবে না। (সূরা বাকারা, ২ঃ ১৯৫
আয়াত)।
আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে সমস্ত সৃষ্টি জগতের মধ্যে সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
আল্লাহ বলেনঃ
وَلَقَدْ
كَرَّمْنَا بَنِي آَدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ
وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقْنَا
تَفْضِيلًا ﴿الإسراء৭০﴾
অর্থঃ
নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। আমি তাদেরকে স্থলে ও পানিতে চলাচলের বাহন
দান করেছি এবং তাদেরকে উত্তম রিয্ক দান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব
দান করেছি। (সূরা আল ইসরা, ১৭ঃ ৭০ আয়াত)।
لَعَنَ
رَسُوْلُ اللّهِ فِي الْخَمْرِ عَشَرَة: عَاصِرَهَا وَمُعْتَصِرِهَا وَ شَارِبِهَا
وحًامِلِهَاوَالْمَحْمُوْلَةِ إلَيْهِ وَسَقِيَهاوَبَائِعَهَا وَأكِلَ ثَمَنِهَا
وَالْمُشْتَرِيَ لَهَا وَالْمُشْتَرَاةَ لَهُ (رواه ابن ماجه)
অর্থঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাদকাশক্ত ১০ ধরণের ব্যক্তির উপর লানত
করেছেন। যথা (১) যে ব্যক্তি মদ জাতীয় বস্তুর নির্যাস বের করে, (২) যে ব্যক্তি মদ প্রস্তুত
করে, (৩) যে ব্যক্তি মদ পান করে, (৪) যে ব্যক্তি মদ পান করায়, (৫) যে ব্যক্তি মদ আমদানী
করে, (৬) যার জন্য মদ আমদানী করা হয়, (৭) মদ বিক্রেতা, (৮) মদ ক্রেতা, (৯) অন্যকে সরবরাহকারী
এবং (১০) মদের লাভের অংশ ভোগকারী। (ইবনে মাজাহ)।
ইসলামের
মাদক বিরোধীতা উপহাসের ব্যাপার ছিল পাশ্চাত্যের অন্যান্য জাতিগুলির কাছে। তারা নেশায়
বুঁদ হয়ে তুলে ধরেছে তাদের বেহায়াপনা নোংরামী এবং নানা ধরনের সভ্যতা বিবর্জিত অমানুসিক
আচরণ এবং অশালীন কর্মকান্ড। তারা ইসলামের কল্যাণকর মহান বাণীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে
চেয়েছিল। কিন্তু আজ যখন সমাজ সভ্যতা সব কিছুকে ধ্বংস ও গ্রাস করার জন্য মুখ ব্যাদান
করে অগ্রসর হয়েছে, মাদক রাক্ষস তখন মহা আতংকে উৎকন্ঠিত হয়ে পড়েছে সারা বিশ্ব। আর এখন
একে ঠেকাবার জন্য বিশ্ব ব্যাপী চলছে ব্যাপক অভিযান। একে প্রতিহত করার লড়াইয়ে ব্যয় করা
হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার, এর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করার প্রচারনায়।
মদের
ক্ষতিকর দিকগুলি সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে প্রথমে জানতে হবে শরীরের কোন কোন অঙ্গের
উপর এর প্রভাব এবং কেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব শরীরে এ নব যন্ত্র সৃষ্টি করেছেন
এবং সেগুলির কাজ কি?
বিভিন্ন
অঙ্গ প্রতঙ্গে মদের প্রতিক্রিয়া
আসুন,
তা হলে প্রথমেই লক্ষ্য করা যাক স্নায়ু যন্ত্রটির প্রতি। স্নায়ু যন্ত্রটি মানব জাতির
জন্য আল্লাহর নিয়ামতের মধ্যে একটি বড় মূল্যবান নিয়ামত যার দ্বারা মানুষ চিন্তা গবেষণা
করে দেখে ও শ্রবণ করে এবং তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গের উপর শাসন করে। এই অনুভূতি
যন্ত্রটি আল্লাহ একটি নিরাপদ সিন্দুকে সংরক্ষণ করেছেন। এই যন্ত্রটির রয়েছে ১৩০০ কোটি
কন্ট্রোল রুম এবং সেই কন্ট্রোল রুম বা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে গোটা দেহের কোটি কোটি সেনা
ও প্রহরীকে নিয়ন্ত্রণ করে।
هَذَا
خَلْقُ اللَّهِ فَأَرُونِي مَاذَا خَلَقَ الَّذِينَ مِنْ دُونِهِ (سورة لقمان ১১)
অর্থঃ
এই হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহ ছাড়া যারা রয়েছে তারা কি সৃষ্টি করেছে আমাকে দেখাও।
(সূরা লুকমান, ৩১ঃ ১১ আয়াত)।
পৃথিবীর
সর্ব শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার কম্পিউটারের চেয়ে হাজার কোটি গুন জটিল এই ছোট্ট মেশিনটি। এর
প্রতিটি কর্মতৎপর সেলের নাম হচ্ছে নিউরণ। প্রতি সেকেন্ডে শত শত নিউরণ এসে ব্রেইনের
প্রাথমিক স্তরে জমা হতে থাকে। এগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে,
যাকে বলা হয় যোগাযোগ মন্ত্রনালয়। মূল নিয়ন্ত্রকের আদেশ পাওয়ার সাথে সাথে হাজার কোটি
সেলে ছড়িয়ে দেয়। আর মদের প্রভাব সর্ব প্রথম এই যন্ত্রের স্নায়ু কোষের উপর পতিত হয়ে
থাকে। স্নায়ু কোষের সংখা হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার মিলিয়ন। এই স্নায়ুকোষগুলোর বৈশিষ্ট্য
হচ্ছে একবার নষ্ট হয়ে গেলে আর ঠিক হয় না বা নতুন করে তৈরী হয় না, যার ফলে মানুষ অতীতের
ঘটনা স্মরণ রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং কোন কাজে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। মদ
ব্রেনের টিসু সেলগুলির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে বিধায় মদ্যপায়ী ব্যক্তির বুদ্ধিবৃত্তি,
হিতাহিত জ্ঞান পর্যায়ক্রমে লোপ পেতে দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের
ক্যারোলিনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডঃ মালকিন কিন্সলী এবং তার সহকর্মী প্রমাণ করেছেন
যে, এক গ্লাস এ্যালকোহল মগজের কিছু কোষ ধ্বংস করে বা মেরে ফেলে। মানুষ যতবার এই এ্যালকোহল
পান করে ততবারই এই সর্বনাশ / ক্ষতি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
* আমেরিকার
ইন্ডিয়ানা পুলিশের সংবাদ সংস্থা ইন্ডিয়ানা ইউনির্ভাসিটি মেডিকেল প্রফেসর ডাক্তার লোহর
জয়ের একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে যে, মদের নেশার প্রভাব সবচেয়ে বেশী
ব্রেনের উপর পড়ে। উহা পান করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রক্তের সাথে মিশে মস্তিস্ক পর্যন্ত
পৌঁছে যায়। পরিমাণে অল্প সেবন করলেও কু-প্রভাব থেকে রেহাই পাওয়া যায় না।
প্রত্যেক
মানুষের মধ্যে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় শক্তি উৎপাদন যন্ত্র যার নাম কালব বা হার্ট। মানব দেহের
বাম পাশে সামনের দিকে পেটের একটু উপরে এই ছোট্ট অংশটি হচ্ছে মানব দেহের সর্বাধিক জরুরী
অংশ।
* কালবের
দৈর্ঘ হচ্ছে ১২.৫ সেন্টি মিটার, প্রস্থ হচ্ছে ৮.৫ সেন্টি মিটার।
* জন্মের
সময় এর ওজন থাকে ২০-২৫ গ্রাম। পুরুষের যৌবন বা বালেগ হওয়ার সময় ওজন হয় ৩১০ গ্রাম এবং
মহিলার হয় ২২৫ গ্রাম।
* হৃদযন্ত্রটি
প্রতি মিনিটে প্রায় ৭০টি স্পন্দনের মাধ্যমে ৫ লিটার রক্ত চালিত করে। তাতে দেখা যায়,
প্রতিদিন একলক্ষ স্পন্দনের মাধ্যমে সাত হাজার দুইশত লিটার রক্ত চালিত করে। আল্লাহু
আকবার!
* হৃদপিন্ডের
স্পন্দনের মাধ্যমে রক্ত শিরার মধ্য দিয়ে যে দুরত্ব অতিক্রম করে তা দৈনিক একলক্ষ কিলো
মিটার সম পরিমাণ।
হৃদপিন্ড
থেকে ফুসফুস, তারপর ফুসফুস থেকে হৃদপিন্ড রক্ত আসা যাওয়ার সময় লাগে ছয় সেকেন্ড। হৃদপিন্ড
থেকে ব্রেইন, তারপর আবার ব্রেইন থেকে হৃদপিন্ডে আসতে সময় লাগে আট সেকেন্ড। হৃদপিন্ড
থেকে পায়ের আঙ্গুল দিয়ে আবার হৃদপিন্ডে ফিরে আসতে সময় লাগে আঠারো সেকেন্ড। এ সংখা ও
সময় নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট। হৃদপিন্ডের চালিকা শক্তি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিরতিহীন
ভাবে চলছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّا
كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ ﴿القمر৪৯﴾
অর্থঃ
আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিত রূপে সৃষ্টি করেছি। (সূরা কামার, ৫৪ঃ ৪৯ আয়াত)।
صُنْعَ
اللَّهِ الَّذِي أَتْقَنَ كُلَّ شَيْءٍ (سورة النمل ৮৮)
অর্থঃ
এটা আল্লাহর কারিগরী, যিনি সব কিছুকে সুসংহত করেছেন। (সূরা নামল, ২৭ঃ ৮৮ আয়াত)।
সেই মহান সৃষ্টি কুশলী আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ সমস্ত
অভিনব মেশিন মানুষের মাঝে স্থাপন করে প্রতিটির দায়িত্ব দিয়েছেন। আর মদ ঐ যন্ত্রের দায়িত্ব
পালনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। ডাঃ মুহাম্মদ তারেক মাহমুদ স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেনঃ মদ
পানের ফলে হৃদপিন্ড সর্বশেষ মুল্যবান অনুভূতি যন্ত্রের মিলিত (ঠধষধহপপ) হওয়ার স্থানে
ছাকনির কাজ দেয়। কিন্তু শরাব বা এ্যালকোহল এ নাজুক কাজটিকেও ব্যাহত করে। মাদক দ্রব্য
অধিদপ্তরের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, মাদকাশক্তির ফলে মারাত্বক স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়
দেখা দেয়। নেশার মাত্রার তারতম্য হলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে নেশাগ্রস্ত
ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। হৃৎপিন্ড যখন অচল হয়ে যায় তখন দেহের অন্যান্য সব কটি যন্ত্র চালু
থাকলেও মূল মানুষটিকে আর জীবন্ত বলা যায় না।
মদের
ক্ষতিকর প্রভাব কলিজার উপর পতিত হয়। মানুষের কলিজা ঐ অনুভূতি গবেষণা কেন্দ্র যা শরীরের
প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দুকেও বিষের ন্যায় অনুভূতি প্রবন করে তোলে। উভয় অঙ্গ পরস্পর
একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত এবং উক্ত অঙ্গদ্বয় নেহায়েত কঠিন কাজ সম্পাদন করে।
উক্ত
অঙ্গ দুটির উপর অনুভূতিশীল বিশেষ এক ধরনের আবরন থাকে। এ্যালকোহল পান করার কারণে উক্ত
আবরনটির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে অঙ্গদ্বয় ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকে। অঙ্গদ্বয়ের
মধ্যে ক্যান্সার সৃষ্টির মূল কারণ হিসাবে মদ বা এ্যালকোহলের ব্যবহারকেই ধরে নেয়া হয়েছে।
শরাব পানের কারণে কলিজা সংকুচিত হয়। রক্ত উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যায়। তাছাড়া কলিজার
ঐ শক্তি যার মাধ্যমে দেহ রক্ষাকারী অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হিসাবে বিভিন্ন প্রকার গ্লোবিন তৈরী,
বিশেষ করে ওসসঁহড় এষড়নঁষরহ তৈরী হয়। উক্ত মদ্যপায়ীদের দেহে তা ভয়াবহ ভাবে হ্রাস পায়।
ফলে এরূপ হয় যে, মদ্যপায়ীদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খর্ব হয়ে পড়ে। ফলে বর্তমান
বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টিকারী মরণ ব্যাধি এইডস, মদ পান করার কারণেও থাকে।
চিকিৎসা
বিজ্ঞান আরও প্রকাশ, যে মদ পান করে তার পাকস্থলীতে ধ্বংসাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি হয়। এমন
কি তার পাকস্থলী প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে।
ফলে তার
ক্ষুধা লাগে অত্যন্ত কম। সে জন্য তাকে অল্প আহারে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তাই দিন দিন পুষ্টিহীনতায়
ভুগতে হয়। শরীর শুকিয়ে যায়, ওযন কমে যায়, যক্ষ্মা রোগের সৃষ্টি হয়। কিডনীর মারাত্মক
ক্ষতি হয়। বার্ধক্য ত্বরান্বিত করে, যৌনশক্তি লোপ পাওয়াসহ যত ধরনের দূরারোগ্য ব্যাধি
আছে তা মদের কারণে হয়ে থাকে বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বর্তমান
বিশ্বে শুধু মুসলিম দেশগুলি নয়, বরং অমুসলিম দেশগুলিও এই নেশাগ্রস্থ ধ্বংসাত্মক বস্তুর
বিরুদ্ধে ভবিষ্যত বংশধরদেরকে বাঁচানোর লক্ষ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করছে। আমরা মুসলিম জাতি।
আল্লাহর নির্দেশে দেশ ও দেশবাসীকে নেশার বিষপান থেকে বিরত রেখে ভয়াবহ রোগসমূহ থেকে
রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
পর্দার
বিধান কেন?
ইসলাম
একটি বাস্তব জীবন দর্শনের নাম। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে প্রতিটি বিষয়ের জন্য রয়েছে এর
সুস্পষ্ট বিধি নিষেধ। আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই সবচেয়ে বেশী জানেন কোনটি
আমাদের জন্য কল্যাণকর ও কোনটি কল্যাণকর নয়।
আল্লাহ
সুবহানাহু তা’আলা রমণীকে পর্দা করা ও তার শরীরের যে সব অঙ্গ প্রকাশ করা একান্ত জরুরী
নয় তা ঢেকে রাখার যখন হুকুম করেছেন তখন এতে কোনই সন্দেহ নেই যে, এই কাজে রমণীর কল্যাণ
ও মঙ্গল রয়েছে। আর এর সাথে সাথে মঙ্গল রয়েছে সমগ্র সমাজের। ইসলামে আনুগত্যের ভিত্তি
পরিপূর্ণ রূপে ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
উপর ঈমান রাখে, শরীয়তের আদেশ নিষেধ তারই জন্য।
একজন
নারী যখন জানতে পারে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমাজের
মধ্যে তার জন্য কি স্থান নির্ধারন করেছেন তখন তার ঈমানের দাবী এই হয় যে, সে নারী যেন
সন্তষ্ট চিত্তে ও আগ্রহ সহকারে সেই স্থান মেনে নেয় এবং নিজের নির্ধারিত সীমা লংঘন না
করে।
যারা
পথভ্রষ্ট ও ইসলাম ধর্ম থেকে বহির্ভূত এবং কাফিরদের চিন্তা ধারায় প্রতিপালিত, তারা সদা
সর্বদা ‘আধুনিক সভ্যতা থেকে মুসলিমরা পিছ পা’ এ রকম ইঙ্গিত করছে। আর এমনটাই ইসলামের
প্রতি তাদের ধারণা। তারা এ সমস্ত নিকৃষ্ট কথা ও কাজ দ্বারা ইসলামের রূপকে বিকৃত করছে
এবং ইতিহাসের প্রকৃত সত্যকে মুছে দিতে চাচ্ছে। মুসলিমরা যতদিন তাদের দীনকে আঁকড়ে ধরেছিল
ততদিন পর্যন্ত তাদের সভ্যতা, মান, সম্মান ও নেতৃত্ব সম্পর্কে স্বাক্ষ্য বহন করে ইতিহাস।
যতদিন ইসলামী দেশগুলি জ্ঞান বিজ্ঞানের বিদ্যাপিঠ ছিল ততদিন তারা প্রকৃত পক্ষে মুসলিমই
ছিল।
আইয়ামে
জাহিলিয়াতের অন্ধকার যুগে যখন নারীর অধিকার বলতে কিছুই ছিল না, তখন একমাত্র ইসলামই
তাকে দিয়েছিল অতুলনীয় সম্মান ও ঈর্ষনীয় অধিকার। সমাজ জীবনকে সুন্দর, কুলষমুক্ত রাখার
স্বার্থে, সামাজিক জীব হিসাবে মানুষের নৈতিক চরিত্র উন্নত করার স্বার্থে আল্লাহ পাকের
পক্ষ থেকে বিধি নিষেধ এসেছে। সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধের জন্য প্রদত্ত হয়েছে পর্দার
আদেশ যা নারী পুরুষ সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। নারী নির্যাতনের সর্বোচ্চ ধ্বজাধারী
বর্তমান সময়ে পৃথিবীর চিন্তাশীল জ্ঞানী ব্যক্তি মাত্রই মুক্ত কন্ঠে স্বীকার করতে বাধ্য
যে, নারী নির্যাতন রোধে ও নারীর সামাজিক সম্মান প্রতিষ্ঠায় পর্দা প্রথার বিকল্প নেই।
মানব
প্রকৃতির মধ্যে লজ্জা প্রবনতা এক অতি স্বাভাবিক প্রবনতা। তাদের শরীরে এমন কিছু অংশ
আছে যা ঢেকে রাখার ইচ্ছা আল্লাহ তা‘আলা তার শারীরিক উপদানের মধ্যে সৃষ্টি করে দিয়েছেন।
এ শারীরিক সংগঠনিক ইচ্ছাই মানুষকে আদিকাল হতে কোন না কোন প্রকারের বস্ত্র পরিধান করতে
বাধ্য করেছে। কুরআনে উল্লেখ আছে, মানব শরীরের যে সকল অংশ নারী পুরুষের জন্য যৌন আকর্ষন
আছে, তা প্রকাশে লজ্জা বোধ করা এবং আচ্ছাদিত রাখার চেষ্টা করা মানব প্রকৃতির স্বাভাবিক
চাহিদা। অবশ্য শয়তানের ইচ্ছা, যেন মানুষ এ সমস্ত খোলা রাখে।
فَوَسْوَسَ
لَهُمَا الشَّيْطَانُ لِيُبْدِيَ لَهُمَا مَا وُورِيَ عَنْهُمَا مِنْ
سَوْآَتِهِمَا )سورة الأعراف ২০)
অর্থঃ
অতঃপর শয়তান আদম ও তার স্ত্রীকে প্ররোচিত করলো, যেন তাদের যে অংশ আচ্ছাদিত ছিল তা তারা
উন্মুক্ত করে। (সূরা আরাফ, ৭ঃ ২০ আয়াত)।
ইসলামের
সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এই যে, যখন কোন কাজকে হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয় তখন
সেই হারাম কাজের সব ছিদ্রপথ, যা মানুষকে হারাম কাজে পৌঁছে দেয়, তা সবই বন্ধ করে দেয়া
এবং সমস্ত কাজগুলোর ফলাফল বা পরিণাম বক্তিগত বা সমষ্টিগত ভাবে মানব সমাজে কেন এবং কি
ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে তা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিয়ে হারাম ঘোষণা করে দেয়া।
অতএব যে সব কাজ যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি করে, নারী বা পুরুষকে নৈতিক অধঃপতনের দিকে নিয়ে
যায়, নির্লজ্জ কাজে উদ্বুদ্ধ করে কিংবা তার কাছে পৌঁছে দেয় বা সে কাজ সহজতর করে দেয়,
ইসলাম সেই সবই কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, সম্পূর্ণ হারাম করে দিয়েছে এবং কঠোর
শাস্তি বিধানের ব্যবস্থা করেছে। কেননা হারামের পথ থেকে রক্ষা পাওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব
হয় না এবং কোন ক্রমেই বিপর্যয় রোধ করা যায় না। অর্থাৎ ধ্বংস অনিবার্য, তা রোধ করা সম্পূর্ণ
অসম্ভব হয়ে পড়ে।
বর্তমান
বিশ্ব নারীদেরকে পণ্য হিসাবে পরিগণিত করেছে। তথাকথিত সুশিক্ষিত সুসভ্য জাতির দাবিদার
এবং অগ্রগতি ও প্রগতির ধ্বজাধারীরা ইসলামে নারীদেরকে দেয়া মান সম্মান ধুলোয় লুটিয়ে
দিয়ে তাদেরকে শুধু ভোগের সামগ্রী হিসাবে বিশ্ব সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর ফলে নানা
ধরনের নারী ঘটিত অপরাধ প্রবণতা বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিঘিœত হচ্ছে নারী জাতির নিরাপত্তা।
নারীদেরকে
সিনেমা, টেলিভিশন, থিয়েটার, বিজ্ঞাপন, পত্র-পত্রিকায় নগ্ন, অর্ধনগ্ন অবস্থায় উপস্থাপন
করা হচ্ছে। নায়ক নায়িকাদের যৌন আবেদন মূলক অশ্লীল, অশোভন অভিনয়, নাচ-গান, বেহায়াপনা,
স্পর্শকাতর গোপন অঙ্গ প্রত্যঙ্গসহ উত্তেজনা সৃষ্টিকারী দেহ প্রদর্শন করার ফলে সমাজের
সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে কুৎসিত চিন্তা চেতনা জাগ্রত করার মাধ্যমে কামোদ্দীপনা সৃষ্টি
করে নারীঘটিত অপরাধ বহু গুণে বাড়িয়ে তুলেছে। নারী জাতির এ বেহাল অবস্থা দর্শন করে সর্বস্তরের
জনসাধারণ হারিয়ে ফেলেছে নারীদেরকে মা বোনদের মত সম্মান করার মন মানসিকতা, তারা হারাতে
বাধ্য হয়েছে তাদের হৃদয়ের পবিত্রতা।
ভাবতে
আবাক লাগে, যারা নারী জাতির বারোটা বাঁজিয়ে ছেড়েছে তারাই আবার নারী মুক্তি আন্দোলনের
জন্য সভা-সমিতি করে আকাশ বাতাশ প্রকম্পিত করে তুলছে নানা রকম ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক বক্তব্য
দিয়ে। নারীর আর কি মুক্তি চায় তারা? তারা তো তাদের দেশের নারীদেরকে মুক্ত ভাবে ছেড়ে
দিয়ে শর্বনাশের শেষ সীমায় নামিয়ে দিয়েছে।
পাশ্চাত্য
সমাজে সাম্যের এমন বর্ণনা করা হল, যে নারী ও পুরুষ নৈতিক মর্যাদা এবং মানবীয় অধিকারের
দিক দিয়ে শুধু সমান নয়, বরং পুরুষ যে কাজ করে নারীও তাই করবে। সাম্যের ভ্রান্ত ধারণার
জন্য অফিস, আদালত কল কারখানার চাকরী, ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে পুরুষের সাথে
প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অংশ গ্রহণ করে তাদের দাম্পত্য জীবনের গুরুদায়িত্ব, সন্তান প্রতিপালন
ও গৃহের সু-ব্যবস্থা প্রভৃতি যাবতীয় করণীয় বিষয়গুলো নারীর কর্মসূচী হতে বাদ পড়ল। তাদের
প্রকৃতিগত কাজকর্মের প্রতি ঘৃণা জন্মে গেল। সংসার জীবনের সুখ শান্তি ধ্বংস হয়ে গেল।
কেনই বা হবে না? যে নারী নিজে উপার্জন করে যাবতীয়
প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম, সাহায্যের প্রয়োজন হয় না, সে শুধু যৌন সম্ভোগের জন্য পুরুষের
অধীন থাকবে কেন? এর ফলে পারিবারিক শান্তি না থাকায় তাদের জীবন তিক্ত হতে তিক্ততর হচ্ছে
এবং একটি চিরন্তন দুর্ভাবনা তাদেরকে এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি দিতে পারছে না। এটাই
ইহলৌকিক জাহান্নাম যা লোকেরা তাদের নির্বূদ্ধিতা ও লোভ লালসার উন্মাদনায় ক্রয় করে নেয়।
জার্মান
স্যোসাল ডেমোক্রেটিক পর্টির নেতা ইধনবষ স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন “নারী এবং পুরুষ তো পশুই।
পশু দম্পত্তির মধ্যে কি কখনো স্থায়ী বিবাহের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়?”
উৎ উৎুংফধষু
বলেন, এমন ব্যবস্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন যার দ্বারা বিবাহ ছাড়া প্রেম করাকে সম্মানজনক
মনে করা যায়। ইহা আনন্দের বিষয় যে, তালাকের পন্থা শিথিল হওয়ায় বিবাহের পথ বন্ধ হয়ে
আসছে। কারণ এখন বিবাহটা মিলিত জীবন যাপন করার জন্য দুই ব্যক্তির মধ্যে একটি চুক্তি
এবং উভয় পক্ষ যখন ইচ্ছা তখন এ চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারে। যৌন মিলনের এটাই একমাত্র
সুষ্ঠু পন্থা।
চধঁষ
জড়নরহ লিখেছেন, বিগত পঁচিশ বছরে আমরা এতখানি সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি যে, অবৈধ
সন্তানকে আমরা প্রায় বৈধ সন্তানের পর্যায়ে এনে ফেলেছি। এখন এতটুকু করার আছে যাতে এখন
হতে শুধু অবৈধ সন্তান জন্ম লাভ করতে পারে।
অজ্ঞ
অশিক্ষিত দূরের কথা, শিক্ষিত সমাজ এবং ধর্মীয় নেতাগণও বহু দিন পর্যন্ত এ দ্বন্দের সম্মুখীন
ছিল যে, নারী প্রকৃত মানুষ কিনা, আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যে কোন আত্মা দিয়েছেন কি না?
হিন্দু ধর্মমতে বেদ নারীর জন্য নিষিদ্ধ। বৌদ্ধ ধর্ম মতে নারীর সংগে সম্পর্ক স্থাপনকারীর
জন্য নির্বাণের কোন পন্থা নেই। খ্রিষ্টান ও ইহুদী ধর্ম মতে একমাত্র নারীই মানবীয় পাপের
জন্য দায়ী। গ্রীসে গৃহিণীদের শিক্ষাদীক্ষা, সভ্যতা সংস্কৃতির অধিকার ছিল না।
এ রূপ
অবস্থায় আইনের দিক দিয়ে এবং মানসিক দিক দিয়ে ইসলাম একটি বিপ্লব সাধন করেছে। বিশ্ববাসীকে
জানিয়ে দিয়েছে, একজন নারী ঠিক ঐ রূপ একটি মানুষ যেমন একজন পুরুষ। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
الَّذِي
خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا (سورة النساء ১)
অর্থ
ঃ তোমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা একটি মানুষ হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার জোড়া সৃষ্টি
করেছেন। (সূরা নিসা, ৪ঃ ১ আয়াত)।
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোন ব্যক্তি তার দুটি কন্যাকে প্রাপ্ত
বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত প্রতিপালন করে তাহলে সে ব্যক্তি এবং আমি কিয়ামতের দিন এমন ভাবে
একত্রে আগমন করব যেমন আমার দুটি আঙ্গুল একত্রে আছে।
মানুষের
মধ্যে যৌন বোধ সীমাহীন, অপ্রতিহত এবং অন্যান্য প্রাণী অপেক্ষা অতি মাত্রায় বেশী। তার
যৌন ক্রিয়ায় সময়ের কোন বাধা নিষেধ নৈই। তার স্বভাবের মধ্যে এমন কোন শক্তি নেই যে, তাকে
কোন এক বিশেষ সীমারেখায় বন্ধ করে রাখতে পারে।
নিয়ন্ত্রণ
ও বাধা নিষেধের দ্বারা যৌন উচ্ছৃংখলতার সকল পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, চাহিদা, বাসনা
বিবাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে পূরণ করার জন্য বলা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে,
প্রকাশ্য ঘোষণার দ্বারা।
সামাজিক
নির্দেশের মধ্যে ইসলামের প্রথম কাজ নগ্নতার মূলোচ্ছেদ করা এবং নারী পুরুষের জন্য সতরের
সীমারেখা নির্ধারণ করা। এ ব্যাপারে আরব জাহিলিয়াতের যে অবস্থা ছিল বর্তমান জাতিগুলোর
অবস্থা প্রায় অনুরূপ। তারা একে অপরের সম্মুখে বিনা দ্বিধায় উলংগ হত, গোসল ও মল ত্যাগের
সময় পর্দা করা তারা নি¯প্রয়োজন মনে করত। সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে কাবা ঘরের তাওয়াফ করত এবং
একে তারা উৎকৃষ্ট ইবাদত মনে করত। নারীরাও তাওয়াফের সময় উলঙ্গ হয়ে যেত। তাদের স্ত্রীলোকদের
পোশাক এমন হত যে, বুকের কিছু অংশ, বাহু, কোমর এবং হাটুর নীচের কিছু অংশ অনাবৃত থাকত।
এ অবস্থা ইউরোপ আমেরিকা এবং জাপানে দেখা যায়। শরীরের কোন অংশ অনাবৃত ও কোন অংশ আবৃত
থাকবে তা নির্ধারণকারী সমাজ ব্যবস্থা পাশ্চাত্য দেশ সমূহে নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
يَا
بَنِي آَدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآَتِكُمْ
وَرِيشًا(الأعراف ২৬
অর্থ
ঃ হে মানব সন্তান! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের শরীর আবৃত করার জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছেন
এবং ইহা তোমাদের শোভাবর্ধক। ( সূরা আরাফ, ৭ঃ ২৬ আয়াত)।
আল্লাহ
তা‘আলা আরও বলেন ঃ
يَا
أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ
يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا
يُؤْذَيْنَ (الأحزاب ৫৯)
অর্থ
ঃ হে নবী! আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ এবং মুসলিম নারীগণকে বলে দিন, তারা যেন আপন চাদর
দ্বারা নিজের ঘোমটা টেনে দেয়। এ ব্যবস্থার দ্বারা আশা করা যায় যে, তাদেরকে চিনতে পারা
যাবে, অতঃপর তাদেরকে বিরক্ত করা হবে না। (সূরা আহযাব, ৩৩ঃ ৫৯ আয়াত)।
আল্লাহ
তা‘আলা শরীয়তের সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছেন যাতে মানুষের কার্যাবলী একটা নিয়ম শৃঙখলার
অধীন হয়। আর এর মাধ্যমে নারীর সঠিক মর্যাদা নির্ধারণ করা হয়েছে; একটু কমও নয়, বেশীও
নয়।
সমাজ
সংস্কার ও উন্নতি বিধানের জন্য উভয়ের মানবিক উন্নতি, মস্তিস্ক চর্চা, বিবেক ও চিন্তাশক্তির
বিকাশ সমভাবে প্রয়োজন যাতে সমাজ সেবায় প্রত্যেকে আপন আপন ভূমিকা পূর্ণভাবে গ্রহণ করতে
পারে।
নারী
পুরুষের কাজ করবে এটা আল্লাহ পছন্দ করেন না। এতে মানবতার মঙ্গল হতে পারেনা। আল্লাহ
তা‘আলা উভয় শ্রেণীর মধ্যে কর্ম বন্টন করে দিয়েছেন। যে সমাজ এ কর্ম বন্টনকে মেনে নিবে
না, সে সাময়িক ভাবে বৈষয়িক উন্নতি ও জাকজমকের মহড়া প্রর্দশন করতে পারে; কিন্তু পরিণামে
ধ্বংস অনিবার্য। কারণ পুরুষের সকল আর্থিক ও সামাজিক দায়িত্ব যখন নারীর উপর ন্যাস্ত
করা হবে তখন সে নিজের উপর ন্যস্ত দায়িত্বের বোঝা দূরে নিক্ষেপ করবে। ফলে এর দ্বারা
শুধু সমাজই ধ্বংস হবে না, মানবতাও ধ্বংস হয়ে যাবে। একটি সাধারণ মেশিনের অংশগুলি দ্বারা
যদি কেহ উহাদের প্রকৃত কাজ না করায়ে এমন কাজে লাগায় যার জন্য উহাদেরকে তৈরী করা হয়নি
তাহলে সেই ব্যক্তিকে নির্বোধ ও অনভিজ্ঞ বলা হবে। এর ফলে প্রথমতঃ এ চেষ্টা নিস্ফল হবে
এবং নির্মাণ কাজ সম্ভব হবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেনঃ
نِسَاؤُكُمْ
حَرْثٌ لَكُمْ (سورة البقرة ২২৩)
অর্থঃ
তোমাদের নারী তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র স্বরূপ। (সুরা বাকারা, ২ঃ ২২৩ আয়াত)।
এ আয়াতে
কৃষক এবং শস্য ক্ষেত্রের সঙ্গে নারী পুরুষের উপমা দেয়া হয়েছে। একজন কৃষক ও তার শস্য
ক্ষেত্রের মধ্যে যে সম্পর্ক থাকে তাদের উভয়ের মধ্যেও সেই সম্পর্ক থাকা দরকার।
কৃষকের
কাজ শুধুমাত্র তার ভূমিতে বীজ বপন করাই নয়। এতে পানি দেয়া, তদারক করা, রক্ষণাবেক্ষণ
করারও প্রয়োজন আছে। নারী এমন শস্য ক্ষেত্র যে, কোন মানুষ পথ চলতে চলতে তাতে কোন বীজ
বপন করলো, তারপর তা হতে আপনা আপনি গাছ উৎপন্ন হয়ে গেল। আসলেই যখন সেই নারী গর্ভধারণ
করে তখন সে প্রকৃত পক্ষে কৃষকের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে যাতে সে তার প্রতিপালন, রক্ষণাবেক্ষণ
করে এবং সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত রয়েছেঃ
خَلَقَ
لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ
مَوَدَّةً وَرَحْمَةً (الروم ২১)
No comments:
Post a Comment