অর্থ : তারা (স্ত্রী) তোমাদের পোশাক স্বরূপ এবং তোমরা
তাদের পোশাক স্বরূপ। (সূরা বাকারা, ২: ১৮৭ আয়াত)।
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু যৌন মিলন নয়, বরং সেই
সম্পর্ক প্রেম ভালবাসার। তারা একে অপরের সুখ দুঃখের অংশীদার। তাদের মধ্যে এমন
সহচার্য ও সংযোগ / সংস্পর্শ হবে যেমন হয় শরীর এবং পরিধেয় বস্ত্রের মধ্যে। উভয়ের
মধ্যে এমন সম্পর্ক ইসলামী সমাজের ভিত্তি প্রস্তরের মত। বিবাহিতা নারী যেমন স্বামীর
অধীন, ঠিক তেমনি অবিবাহিতা নারী পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তির অধীন। কিন্তু এ
অধীনতার অর্থ এই নয় যে, তার ইচ্ছা এবং কাজের কোন স্বাধীনতা নেই, অথবা তার নিজের
ব্যাপারে তার কোন স্বাধীনতা নেই। এর আসল মর্ম হচ্ছে সামাজিক ব্যবস্থাকে ফাটল ও
বিশৃংখলা হতে রক্ষা করা। পরিবারের চরিত্র ও কার্যকলাপকে ভিতর ও বাহিরের বিপদ হতে
রক্ষা করার দায়িত্ব পুরুষের। এই শৃংখলা রক্ষার জন্যই নারীর অপরিহার্য কর্তব্য হল,
এই শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব যার সে তার আনুগত্য করবে। তা সে তার স্বামী হোক, পিতা
হোক অথবা ভাই হোক।
আর নারী তার উন্নতি ও সাফল্যের উচ্চ শিখরে আরোহণ করবে।
তবে তার উন্নতি ও সাফল্য যা কিছুই হবে তা নারী হিসাবে হতে হবে। তার পুরুষ সাজার
কোন অধিকার নেই এবং পুরুষোচিত জীবন যাপনের জন্য তাকে গড়ে তোলা তার জন্য কিংবা
সমাজের জন্য মঙ্গল নেই।
কোন সন্দেহ নেই
যে, মুসলিম রমণী ইসলামী শরীয়ত থেকে প্রচুর সম্মান লাভ করেছে যা তার সতীত্ব এবং
সম্ভ্রম রক্ষার জন্য যথেষ্ট এবং যা তাকে উচ্চ মর্যাদা ও শীর্ষস্থান দান করে ধন্য
করেছে।
ইসলামে অশ্লীল কাজ হারাম কেন এবং যিনা করায় দোষ কি?
ইসলাম হলো সার্বিক সুস্থতার পথ প্রর্দশক। সুস্থ উপায়ে
বাঁচার গ্যারান্টিসহ সমস্ত জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা আছে একমাত্র ইসলামের
কল্যাণকর জীবন বিধানে। কারণ ইসলাম মানব জাতির কল্যাণের জন্য যত প্রকার আদেশ
নির্দেশ প্রদান করেছে তা যেমন মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে বাস্তবে প্রমাণ করেছে,
চিরস্থায়ী সাফল্যের যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তেমনটি কোন ধর্ম বা মতবাদ
সফলতা অর্জন করতে পারেনি। ইসলামের এই পরিপূর্ণ সাফল্যের কারণেই পবিত্র কুরআনকে
মানব জীবনের পরিপূর্ণ জীবন বিধান বলা হয়।
ইসলাম শব্দটির মানেই হচ্ছে শান্তি। অর্থাৎ এর আইন
কানূন, আদেশ, নিষেধ, অনূসরণ ও অনুকরণ মানব জীবনের ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত, পারিবারিক,
রাষ্ট্রীয় এবং জাতীয় সর্বক্ষেত্রে শান্তি এবং শৃংখলা বয়ে আনে যা আধুনিক যুগের
বৈজ্ঞানিক যুক্তি-তর্ক, বিচার বিশ্লেষণসহ একটি পরীক্ষিত সত্য হিসাবে প্রমাণিত
হয়েছে। কারণ পৃথিবীর সকল ধর্ম, মতবাদ, চিন্তা-চেতনা, যুক্তি-তর্ক যখন ব্যর্থতায়
পর্যবসিত হয়েছিল, সমগ্র পৃথিবীর মানব সমাজ যখন বিশৃংখলতায় নিপতিত হয়ে অনিবার্য
ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছিল ঠিক তখনই ইসলাম ধর্মের আগমন ঘটে এবং কি ভাবে সমাজে
শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা যায় তার নিয়ম কানূন শিক্ষা দিয়ে ইসলাম পৃথিবীতে
শান্তি-শৃংখলা পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করেছে, ইতিহাস তার জলন্ত স্বাক্ষী।
পবিত্র কুরআনের মহান শিক্ষা তথা ইসলামী জীবন বিধান ও
চিন্তা চেতনা থেকে মানুষ বহু দূরে সরে যাওয়ার কারণেই মানব সভ্যতার আজ এ অধঃপতন। তাই
আজ তারা (মানবতা) লাঞ্ছিত, অপমানিত, পদদলিত হচ্ছে পদে পদে। বৈজ্ঞানিক উন্নতি,
অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি পাশ্চাত্য তথা উন্নত বিশ্বকে ঐশ্বর্য দান করেছে, প্রচুর
বিত্তশালী করেছে, কিন্তু ঐ সমস্ত ঐশ্বর্য সুখ সামগ্রী তাদেরকে শারীরিক এবং মানসিক
শান্তি থেকে বঞ্চিত করেছে। আজ বড়ই প্রয়োজন কুরআনকে গভীর ভাবে উপলদ্ধি করা ও রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র বাণীকে বুদ্ধি ও বিজ্ঞানের নিরপেক্ষ
উজ্জ্বল আলোকে বিশ্লেষণ করে নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
মানব জাতির জন্য অশ্লীলতা হারাম করেছেন। যিনা ও অশ্লীলতার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে
তিনি বলেন :
وَلَا تَقْرَبُوا
الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا ﴿৩২الاسراء﴾
তোমরা যিনা
ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ কাজ এবং খুবই খারাপ পথ।
(সূরা আল ইসরা, ১৭ : ৩২ আয়াত)।
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে :
وَلَا تَقْرَبُوا
الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ(الانعام ১৫১)
অর্থ : লজ্জাহীনতার যত পন্থা আছে, উহার নিকটেও যাবে না,
তা প্রকাশ্যেই হোক অথবা গোপনীয় হোক। (সুরা আনআম, ৬: ১৫১ আয়াত)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
خمسٌ إذا
ابتُلِيتُم بِهِنَّ وَ اعُوذُ بالله أنْ تُدْرِكوْهُنَّ لمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فى قَوْمٍ قَطُّ حتّى يعْلِنُوْا بِهَا الاّ فَشَا فِيهِم الطًّاعُونُ والاوجاعُ الّتى لم تَكُنْ مَضَتْ فى أسلافِهِم الذين مَضَوا (رواه ابن ماجه)
অর্থ : পাঁচটি জিনিস দিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হবে।
সেই জিনিসগুলোর সম্মুখিন হওয়া থেকে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। যখন
কোন জাতির মাঝে ব্যভিচার ও অশ্লীলতা প্রকাশ পায় এমনকি তা তারা ঘোষণা দিয়ে
প্রকাশ্যে করতে থাকে তখন তাদের মঝে মহামারি, প্লে¬গ ও জনপদ বিধ্বংসী ব্যাধি দেখা দিবে যা তাদের পূর্ব
পুরুষদের মাঝে ছিল না। অর্থাৎ যিনা যদি কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে বহুল প্রচলিত হয়ে
পড়ে তাহলে তাদের মধ্যে এমন রোগ দেখা দিবে যা আগে ছিল না। (বাইহাকী, ইবনে মাজাহ)
যদি কোন শহরে যিনা ও সুদের লেনদেন সাধারণ ভাবে প্রচলিত
হতে থাকে তখন ঐ শহরবাসীর উপর আল্লাহর বিবিধ প্রকার আযাব গযব নাযিল করা হালাল হয়ে
যায়। (বুখারী ও মুসলিম) যখন কোন সমাজে ব্যাপক ভাবে ব্যভিচার প্রকাশ পাবে তখন তাদের
মাঝে চিকিৎসার অনুপযোগী ব্যাধিসহ মহামারী আকারে রোগ ব্যাধি দেখা দিবে। (
মুয়াত্তা)।
সমকামিতার ভয়াবহ পরিণতি কি?
আমার উম্মতের মধ্যে যখন পাঁচটি জিনিস আরম্ভ হবে তখন
তাদেরকে নানা প্রকার রোগ ব্যাধি ও আযাবের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়া হবে। তন্মধ্যে
একটি হল নর নারীর মধ্যে সমমৈথুন প্রচলিত হওয়া। (আহমদ)।
একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একাধিকক্রমে তিন বার বলেছেন, যে ব্যক্তি কওমে লুতের মত সমকামী কাজ করে আল্লাহ তার
প্রতি লানত বর্ষণ করেন। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
এই আয়াত ও হাদীসগুলোর মাধ্যমে চৌদ্দ শত বছর আগে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বাণী প্রচার করে গেছেন, আজ একবিংশ শতাব্দীর
প্রথম প্রান্তে এসে পবিত্র ধর্মের বিধানের মাঝে বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন সত্যের সন্ধান
ও আশ্রয়। বর্তমান বিশ্বের প্রতি আমরা যদি নজর দেই তাহলে দেখতে পাই যে, আমেরিকা,
ইউরোপ ও অন্যান্য দেশে মাত্র কয়েক বছর পূর্বে এমন রোগ দেখা দিয়েছে এবং তারপর তা
বিভিন্ন দেশে দ্রুত প্রসার লাভ করে অল্প সময়ে হাজার হাজার মানুষকে মৃত্যুর দিকে
ঠেলে দিচ্ছে। এই ভয়ঙ্কর রোগটির সংক্ষিপ্ত নাম (AIDS) ইংরেজীতে AIDS এর পুরা বাক্য
হচ্ছে Accrued
Immune Deficiency Syndrome (একোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি
সিন্ড্রম) আরবীতে বলা হয় انهيار وسائل الدفاع الطبيعية فى الجسم
অর্থঃ শরীরের অর্জন করা সুরক্ষিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার
অব্যহতি বা বিলুপ্ত হওয়া।
বর্তমান বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টিকারী
মরণ ব্যাধি এই এইডস, যার পরিণাম নিশ্চিত মৃত্যু। ১৯৮১ সালের দিকে বিজ্ঞানীরা এ
রোগের খবর পেলেন। বিজ্ঞানীরা এ রোগের কারণ নির্ণয় করতে গিয়ে বলেন যে, এটি একটি
বদমায়েশী রোগ যা শুধু মাত্র বদমায়েশদেরকে আক্রমণ করে।
ডাঃ রবার্ট রেডিফিল্ড বলেন,AIDS
is a sexully transmitted disease. অর্থাৎ এইডস হচ্ছে যৌন অনাচার থেকে সৃষ্ট রোগ।
রেডফিল্ড বলেনঃ
আমাদের সমাজের (মার্কিন সমাজের) অধিকাংশ নারী-পুরুষের নৈতিক চরিত্র বলতে কিছুই
নেই। কম বেশী আমরা সকলেই ইতর রতিঃপ্রবণ মানুষ হয়ে গেছি। এইডস হচ্ছে স্রষ্টার তরফ
থেকে আমাদের উপর শাস্তি ও অন্যদের জন্য শিক্ষাও বটে।
আমেরিকার প্রখ্যাত গবেষক চিকিৎসক ডনডেস সারলাইস বলেনঃ
বিভিন্ন ধরনের পতিতা আর তাদের পুরুষ সঙ্গীরা এইডস রোগ সৃষ্টি, লালন পালন করে এবং
ছড়ায়। ডাঃ জেমস চীন বলেন, দু’হাজার সালের আগেই শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ইতর
রতিঃপ্রবণতা প্রাধান্য লাভ করবে। পেশাদার পতিতা ও সৌখিন পতিতাদের সংস্পর্শে যারা
যায় এবং ড্রাগ গ্রহণ করে তারাই এইডস জীবানু সৃষ্টি করে এবং তা ছড়ায়। এক কথায় অবাধ
যৌনাচার, পতিতাদের সংস্পর্শ, সমকামিতার কু-অভ্যাস ও ড্রাগ গ্রহণকেই এইডসের জন্য
দায়ী করা হয়।
ডঃ নজরুল ইসলাম বলেনঃ এইডস সংক্রমণের প্রধান পন্থা যৌন
মিলন। শতকরা ৭০-৭৫ ভাগ আক্রান্ত ব্যক্তিই এ পদ্ধতিতে আক্রান্ত হয়েছে। সারা বিশ্বের
সমাজ বিজ্ঞানীসহ বিশ্বে মানবাধিকারের প্রবর্তকরা ঐ সমস্ত ভয়াবহ যৌন সংক্রামক
ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়া এবং তা দ্রুত ছড়াবার প্রধান কারণ হিসাবে সমকামিতা,
বহুগামিতা এবং অবাধ যৌনচারকে চিিহ্নত করেছেন। যৌন সংক্রামক রোগগুলি যেমন এইডস,
সিফিসিল, গনোরিয়া, শ্যাংক্রয়েড, লিম্ফোগ্র্যানুলোমা, ভেনেরিয়াম, ডানোভেনোসিস ও
অন্যান্য। এর মধ্যে এইডস সবচেয়ে ভয়াবহ। এই রোগগুলিতে আক্রান্ত রোগীর সাথে মেলামেশা
বা যৌন মিলনের মাধ্যমে সুস্থ লোক আক্রান্ত হয়। অত্যন্ত আতঙ্ক ও হতাশা সৃষ্টিকারী
মরণ ব্যাধি এইডস আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে ১৯৭৯ ইং সালে সমকামী এক ব্যক্তির কাছে
প্রকাশ পায়। তারপর এই ভয়াবহ রোগে যারা আক্রান্ত হতে থাকে তাদের অধিকাংশ লোকই
সমকামী।
ডাঃ মুহাম্মাদ মনসুর আলী বলেন, বর্তমান কালের সবচেয়ে
ভয়াবহ ব্যাধি এইচ, আই, ভি। এইডস এমনই এক সময়ে সমগ্র বিশ্বে চরম আতঙ্ক এবং নিরতিশয়
হতাশা সৃষ্টি করেছে যখন চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নতির অত্যুঙ্গ শিখরে অবস্থান করছে। এই
মরণ ব্যাধির উৎপত্তি এবং বিস্তারের কারণ হিসাবে দেখা গেছে চরম অশ্লীলতা, যৌন
বিকৃতি ও কুরুচিপূর্ণ সমকাম ও বহুগামীতার মত পশু সুলভ যৌন আচরণের উপস্থিতি। শতকরা
প্রায় ৯৫ ভাগ সমকামী এবং বহুগামী পুরুষ ও মহিলাদের মাধ্যমে এইডস সমগ্র বিশ্বে
দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে এবং দিন দিন এইচ, আই, ভি/ এইডস এ আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে
যাচ্ছে। জাপানের বাৎসরিক বিশ্ব প্রচার সংস্থা উল্লেখ করেছে যে, সেখানে অনেকের
অভিমত, বিশ্বে এইডস রোগ ছড়ানোর পিছনে রয়েছে আমেরিকা।
তারা আরও উল্লেখ করেছে যে, বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ায়
এইডস রোগ বিস্তার করেছে আমেরিকাবাসী। সদা সর্বদা দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪০ হাজার আমেরিকান
সৈন্য রয়েছে। রদবদল ও তাদের সাথে সাক্ষাত করার জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার
আমেরিকান ওখানে গমন করে।
আল উম্মাহ মাসিক পত্রিকায় প্রকাশ, এই রোগ বহনকারী লোকের
সংখ্যা ১৪০৬ হিজরীর পরিসংখান অনুযায়ীঃ *যুক্তরাষ্ট্রে ছিল প্রায় ১০,০০,০০০ (দশ
লক্ষ)।
* পশ্চিম জার্মানে ছিল এক লক্ষ, আর শতকারা ৯৮% জন এই
রোগে আক্রান্ত রোগী অজানা অবস্থায় ছিল।
এই এইডস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর শতকরা ৪৮ জন রোগী
সাধারণতঃ ১ বছরের মধ্যে মারা যায়।
বিশ্বব্যাপী এই ব্যাধি শুরু থেকে ব্যাপক আকারে দেখা
দেয়া পর্যন্ত প্রায় ১৩ মিলিয়ন নারী, পুরুষ ও শিশু এইচ, আই, ভি, তে আক্রান্ত হয়েছে
যা এইডস রোগের কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী ২০০০ সালের
মধ্যে এই সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ মিলিয়ন এবং এইডস রোগীর সংখ্যা ১২ থেকে ১৮ মিলিয়ন হতে
পারে। প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার লোক এইচ আই ভি, তে আক্রান্ত হচ্ছে।
এই ভয়ংকর ব্যাধি আল্লাহর দেয়া বিধি নিষেধ অমান্যকারীদের
উপর গযব হিসাবে দেখা দিয়েছে। বর্তমান বিশ্বে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ১ কোটি ৭০ লাখের
বেশী লোক এইডস এ আক্রান্ত হয়েছে বলে বিশ্ব সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশী বিদেশী
পত্র পত্রিকায় খবর পাওয়া গেছে। জুন ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দুই কোটি পঞ্চাশ লক্ষ প্রাপ্ত
বয়স্ক লোক এইচ, আই, ভি, সংক্রমিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের দুই কোটি
দশ লক্ষ এ পর্যন্ত এইচ, আই, ভি, সংক্রমিত রয়েছে এবং ৪৫ লক্ষ লোক এইডস রোগে
আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ
فَأَصَابَهُمْ سَيِّئَاتُ مَا كَسَبُوا وَالَّذِينَ
ظَلَمُوا مِنْ هَؤُلَاءِ سَيُصِيبُهُمْ سَيِّئَاتُ مَا كَسَبُوا وَمَا هُمْ
بِمُعْجِزِينَ ﴿الزمر৫১﴾
অর্থঃ তাদের দুস্কর্ম তাদেরকে বিপদে ফেলেছে, এদের মধ্যে
যারা পাপী তাদেরকেও অতি সত্ত্বর তাদের দুস্কর্ম বিপদে ফেলবে। তারা তা প্রতিহত করতে
সক্ষম হবে না। (সূরা জুমার, ৩৯: ৫১ আয়াত)।
قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلَى أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ
عَذَابًا مِنْ فَوْقِكُمْ أَوْ مِنْ تَحْتِ أَرْجُلِكُمْ (الانعام ৬৫)
অর্থঃ আপনি বলুন, তিনি (আল্লাহ) তোমাদের উপর দিক থেকে
এবং তোমাদের পদতল থেকে তোমাদের উপর আজাব পাঠিয়ে দিতে সক্ষম। (সূরা আনআম, ৬ :
৬৫ আয়াত)।
নিশ্চয়ই এই এইডস নামক শাস্তি যা বর্তমান বিশ্বকে ঘিরে
রেখেছে তাতে শারীরিক ও মানসিক যে শাস্তি ও বেদনা রয়েছে তা আক্রান্ত ব্যক্তিকে
মৃত্যুর পূর্বেই হাজার বার হত্যা করে থাকে। জিম শ্যালী এইডস রোগে আক্রান্ত হয়ে
১৯৮৭ সালে ৭ই মার্চ মারা যায়। মৃত্যুর পূর্বে সে বলেছেঃ আমার শরীরে একটা ভাইরাস
আছে, সেটা আমার সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ খেয়ে ফেলছে। মাঝে মাঝে আমি জেগে উঠি। তখন আমি ওর
অস্তিত্ব টের পাই, আমাকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলেছে।
এমন কি পূরো সমাজই সব সময় ভীত সন্ত্রস্ত, অশান্তি ও
অস্থিরতার মধ্যে অবস্থান করছে। কি জানি কোন সময় এই এইডস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়।
আল্লাহপাক বলেন :
وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً
ضَنْكًا (سورة طه ১২৪)
অর্থঃ যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে তার জীবিকা
সংকীর্ণ হবে। (সূরা ত্বায়া-হা, ২০: ১২৪ আয়াত)।
لَعَمْرُكَ إِنَّهُمْ لَفِي سَكْرَتِهِمْ يَعْمَهُونَ
﴿الحجر৭২﴾
অর্থঃ আপনার বয়সের কসম! নিশ্চয়ই তারা আপন নেশায় হয়রান ও
পেরেশান। (সূরা হিজর, ১৫: ৭২ আয়াত)। অন্যত্র তিনি বলেনঃ
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا
كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ
يَرْجِعُونَ ﴿الروم৪১﴾
অর্থঃ স্থলে ও পানিতে মানুষের কৃতকর্মের জন্য বিপর্যয়
ছড়িয়ে পড়েছে, আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান যাতে তারা ফিরে
আসে। (সূরা রুম, ৩০: ৪১ আয়াত)।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
اذَا ظَهَرَ السُّوءُ فى الارْضِ أنْزَلَ اللهُ بأْسَهُ
بِأهْلِ الْاَرضِ (رواه الطبرانى)
অর্থঃ পৃথিবীতে যখন অশ্লীল কাজ প্রকাশ পায় তখন আল্লাহ
দুনিয়ার অধিবাসীর প্রতি দুঃখ দুর্দশা ও হতাশা নাযিল করেন। (তাবরানী)।
১৯৮৫ ইংরেজী অপর এক পরিসংখানে বলা হয়েছে : ১৪,৭৩৯ জন
এইডস রোগে আক্রান্ত রুগীর মধ্যে ১০৬৫৩ জন রুগীই পুরুষ সমকামী অর্থাৎ লূত আঃ এর
সম্প্রদায় যে ব্যভিচার করেছিল, মহিলা বাদ দিয়ে পুরুষে-পুরুষে অপকর্মে লিপ্ত
হয়েছিল। সে সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُونَ
الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِنَ الْعَالَمِينَ ﴿৮০﴾ إِنَّكُمْ
لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِنْ دُونِ النِّسَاءِ بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ
مُسْرِفُونَ ﴿الأعراف৮১﴾
অর্থ : আমি লূতকে প্রেরণ করেছি, যখন সে স্বীয়
সম্প্রদায়কে বললঃ তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বের কেউ
করেনি। তোমরা তো নারীদের ছেড়ে কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন কর। বরং তোমরা সীমা
অতিক্রম করেছ। (সূরা আরাফ, ৭ : ৮০-৮১ আয়াত)।
অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে :
أَتَأْتُونَ الذُّكْرَانَ مِنَ الْعَالَمِينَ ﴿১৬৫﴾
وَتَذَرُونَ مَا خَلَقَ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ
عَادُونَ ﴿الشعراء১৬৬﴾
অর্থঃ সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরুষদের
সাথে কুকর্ম কর? আর তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য যে স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন
তাদেরকে বর্জন কর। বরং তোমরা সীমা লংঘনকারী সম্প্রদায়। (সূরা আশশুয়ারা, ২৬ :
১৬৫-১৬৬ আয়াত)।
এমনি ভাবে অন্যান্য আয়াতে তাদের সম্পর্কে উল্লেখ করা
হয়েছে যে, তারা বর্বর সম্প্রদায়, সীমা অতিক্রমকারী, ফাছাদ সৃষ্টিকারী, পাপিষ্ঠ ও
অত্যাচারী সম্প্রদায়। এগুলোর যে কোন একটি বৈশিষ্ট্যই একটি সমাজ ধ্বংসের জন্য
যথেষ্ট।
আমেরিকার মত উচ্চ শিক্ষিত সূসভ্য এবং সর্বদিক থেকে
শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার হয়ে সমকামীতার মত নিকৃষ্ট ঘৃণিত মানবতা বিরোধী অশ্লীলতাকে
যদি আইন করে বৈধ করে তাহলে কি ভাবে সম্ভব অশ্লীলতাসহ মানব সভ্যতা ধ্বংসের সকল
ধরণের কর্মকান্ডগুলো প্রতিরোধ প্রতিহত করে বিশ্ব সমাজে মানব সভ্যতা পুনঃ প্রতিষ্ঠা
করা? কাম প্রবৃত্তি ও লোভ-লালসার জালে আবদ্ধ হয়ে লজ্জা-শরম ও ভাল-মন্দের স্বভাবজাত
পার্থক্য বিসর্জন দিয়ে পার্লামেন্টে সমকামিতা বিল পাশ করে রাষ্ট্রীয় ভাবে
প্রকাশ্যে বৈধ ঘোষণা করেছে। ব্যভিচার যখন পার্লামেন্টে বৈধ ঘোষণা করা হয় তখন
স্বাভাবিক ভাবেই তা সমাজে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। আর তখনই সেই সমাজ আল্লাহর গজবের
উপযুক্ত হয়ে যায়। তারা এমন প্রকৃতির বিরুদ্ধে নির্লজ্জতায় লিপ্ত হয় যা হারাম ও
গোনাহ তো বটেই, সুস্থ স্বভাবের কাছে ঘৃণ্য হওয়ার কারণে সাধারণ জন্তু জানোয়ারও এর
নিকটবর্তী হয় না। মানুষের পাশবিক ও লজ্জাকর অশোভন আচরণ যে কত দ্রুত সমাজ সভ্যতাকে
ধ্বংসের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়, আধুনিক শিক্ষিত পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্থা কিভাবে ভয়াবহ
ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে তা সমস্ত বিশ্ববাসী আজ হাড়ে হাড়ে উপলদ্ধি করতে
পারছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَالَّذِينَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَاءُ سَيِّئَةٍ
بِمِثْلِهَا وَتَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ مَا لَهُمْ مِنَ اللَّهِ مِنْ عَاصِمٍ (يونس
২৭)
অর্থঃ যারা নিকৃষ্ট বস্তু অর্জন করেছে তার বদলাও সেই
পরিমাণ নিকৃষ্ট এবং অপমান তাদের চেহারাকে আবৃত করে ফেলবে। তাদেরকে আল্লাহর হাত থেকে
বাঁচাতে পারবে এমন কেউ নেই। (সূরা ইউনুস, ১০ : ২৭ আয়াত)।
আজ এইডস আতংকে সমগ্র বিশ্ব প্রকম্পিত, সমস্ত চিকিৎসা
ব্যবস্থা বিপর্যস্ত, সারা বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ এই ভয়াবহ মরণব্যধি ঠেকাতে
ব্যর্থ হয়েছে। এই মহামারী এইডস থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন
ডলার ব্যয় করেছে এবং করছে। কিন্তু সকল প্রচেষ্টা সমূলে ব্যর্থ হয়েছে এবং তারা
বলছে, এইডস রোগের কোন চিকিৎসা নেই। কুরআনে বর্ণিত রয়েছে :
اسْتَجِيبُوا لِرَبِّكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ
يَوْمٌ لَا مَرَدَّ لَهُ مِنَ اللَّهِ مَا لَكُمْ مِنْ مَلْجَأٍ يَوْمَئِذٍ وَمَا
لَكُمْ مِنْ نَكِيرٍ ﴿الشوري৪৭﴾
অর্থঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে অবশ্যম্ভাবী দিবস আসার পূর্বে
তোমরা তেমাদের পালনকর্তার আদেশ মান্য কর। সেদিন তোমাদের কোন আশ্রয় স্থল থাকবে না
এবং তা নিরোধকারী কেউ থাকবে না। (সূরা শুরা, ৪২: ৪৭ আয়াত)।
বর্তমান দুনিয়ায় পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয়, এমন কি
আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে যে অশান্তি বিরাজমান রয়েছে তার কারণ হলো পবিত্র কুরআনের
শিক্ষা মেনে না চলা এবং প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহান আদর্শ
অনুসরণ না করা। তাই আজকের অশাস্ত পৃথিবীতে শান্তি এবং বিভিন্ন জটিল, দুরারোগ্য ও
ধ্বংসাত্মক ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভের একমাত্র উপায় হল পবিত্র কুরআনের মহান শিক্ষা
গ্রহণ এবং যাবতীয় বিধি নিষেধ যথাযথ ভাবে পালন। আর শান্তির দূত রাসূলে কারীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহান আর্দশের বাস্তবায়ন।
বিশ্বের এই মহা দূর্যোগের সময় ইসলামের এই ধ্র“ব সত্য ও
হুশিয়ারী বাণী উপলদ্ধি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এইডস প্রতিরোধে ধর্মীয়
অনুশাসনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে বাধ্য হয়েছে। তাই WHO এ মর্মে ঘোষণা করেছে :
Nothing can
be more helful in this preventive effort than religious teachings and the
adoption of proper and decent behavior as advocated and urged by all divine
religions (The role of Religion and ethics in the prevention and control of
AIDS. ( Page 3, Para 9, Published by WHO)
অর্থঃ “এইডস প্রতিরোধ প্রচেষ্টায় ধর্মীয় শিক্ষাদান এবং
যথাযথ নির্মল আচরণ প্রবর্তনের চেয়ে আর কোন কিছুই অধিক সহায়ক হতে পারে না যার প্রতি
সকল ঐশ্বরিক ধর্মে সমর্থন প্রদান ও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।” (বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত দি রোল অফ রিলিজিয়ন এন্ড এথিক্স ইন দ্যা প্রিভেনশন এন্ড
কন্ট্রোল অফ এইডস নামক পুস্তিকার তৃতীয় পৃষ্ঠার নবম অনুচ্ছেদে উদ্ধৃত)।
ডাঃ মোঃ মনসুর আলী বলেনঃ “এখন পর্যন্ত এইডস ভাইরাস
প্রতিরোধ বা প্রতিহত করার কোন ওষধ বা টিকা আবিস্কৃত হয়নি। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির
নিরাময়েরও কোন সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ এইডস এর পরিণাম নিশ্চিত মৃত্যু। এই ভয়াবহ মরণ
ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে হলে, বাঁচতে হলে অবশ্যই পরিচ্ছন্ন এবং পবিত্র বৈবাহিক
জীবন যাপন করাই একমাত্র উপায়। এর জন্য সত্যিকার ভাবে যা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ তা
হল ধর্মীয় অনুশাসন কড়াকড়ি ভাবে মেনে চলা।”
জনাব কবির উদ্দীন আহমদ এর লেখা “ভয়ঙ্কর মৃত্যু এইডস”
থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় শীর্ষক গ্রন্থতে তিনি উল্লেখ করেছেনঃ “সর্ব যুগের
শ্রেষ্ঠতম এবং সর্বাধুনিক বিজ্ঞান সম্মত ধর্ম ইসলামের অনুশাসন, আচার আচরণ,
বিধিনিষেধ মেনে চলার দরুন মানব জাতির ধ্যান-ধারণা, চিন্তা চেতনা, দৈনন্দিন কার্য
প্রণালী ও মানবিক গুণাবলীর এমনই উৎকর্ষ সাধন করে যা জাতি, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যে
কোন ব্যক্তির মধ্যে একটা প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস ও আত্মশক্তি সৃষ্টি করে নৈতিক
মূল্যবোধের জন্ম দেয়, যার বলে বলীয়ান হয়ে সে সকল প্রকার লোভ লালসা, প্রলোভন, যৌন
অপরাধ মূলক নানা ধরনের রিপুর তাড়না, বিভিন্ন রকমের পাশবিক আচার আচরণসহ সকল প্রকার
অন্যায়, অবিচার, অনুরাগ বা বিরাগের উর্ধ্বে উঠতে পারে, হতে পারে আত্ম সচেতন ও দৃঢ়
সংযমী। মরণ ব্যাধি এইডস যেহেতু সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিকার ও প্রতিরোধ বিহীন এবং
যেহেতু দৃঢ় আত্ম সংযমই এখন পর্যন্ত এ রোগ থেকে পরিত্রানের একমাত্র রক্ষা কবচ,
সেহেতু ইসলাম-সম্মত জীবন যাপন ব্যতীত এ ধ্বংসাত্মক সংক্রমণ ঠেকাবার আর কোন উপায়
নেই।”
এ থেকে মুক্তি পাবার জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা
জাগিয়ে অবাধ যৌনাচার থেকে বিরত রাখার মধ্যেই রয়েছে প্রতিবিধান। চরিত্রের উত্তম
গুণাবলী দিয়ে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে এইডস প্রতিরোধ করার আজকের দাবী প্রকৃত পক্ষে
আল্লাহর বাণী ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের প্রতিধ্বনি
মাত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
الَّذِينَ آَمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ
بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ ﴿الانعام৮২﴾
অর্থঃ যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শিরকের সাথে
মিশ্রিত করেনা, তাদের জন্যই শান্তি ও নিরাপত্তা এবং তারাই সুপথগামী। (সূরা আনআম, ৬
: ৮২ আয়াত)।
হায়েয অবস্থায় স্ত্রী গমণ নিষেধ কেন?
আল্লাহর বিধানে প্রত্যেকটি বস্তুর জন্য নির্ধারিত রয়েছে
এক আনুপাতিক পরিমাপ। তার সকল বিধান আমাদের জ্ঞাতে অজ্ঞাতে কল্যাণ সাধন করে যাচ্ছে
এবং আমাদের ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবনের সকল সমস্যার সমাধান দিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ
তা‘আলা বলেনঃ
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى
فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ
فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ
يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ ﴿البقرة২২২﴾
অর্থঃ তারা তোমার কাছে হায়েয সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে
দাও, এটা এক প্রকার অসুস্থতা। অতএব তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী গমণ থেকে বিরত থাক।
ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। অতঃপর যখন
তারা পবিত্রতা লাভ করে তখন তোমরা তাদের কাছে গমণ কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে
হুকুম করেছেন। নিশ্চয়ই যারা তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাকে তাদেরকে
আল্লাহ পছন্দ করেন। (সূরা বাকারা, ২ : ২২২ আয়াত)।
আল্লাহর বিধান অনুযায়ী একজন মুসলিম পুরুষ ও একজন মুসলিম
মহিলা বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে পরস্পর হালাল হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যখন সেই রমনীর
হায়েয (ঋতু) শুরু হয়, এমতাবস্থায় স্বামী ব্যবহার হারাম হয়ে যায়। তবে প্রশ্ন হল
হায়েয অবস্থায় কেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্ত্রী সহবাস হারাম করলেন? এতে উপকার বা
ক্ষতি কি? তাহলে আসুন এ ব্যাপারে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাক।
এ নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে আমাদের সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে।
অতএব এতে যে মানব জাতির কল্যাণ নিহিত রয়েছে তাতে কোনই সন্দেহ নেই।
বান্দা যখন দাম্পত্য জীবনে মধুর মিলনে মশগুল হয়ে যাবে
তখন আল্লাহর কথা স্মরণ থাকে কি না সে জন্যই এই নিষেধের ব্যবস্থা। আল্লাহ চান না
যে, এক মুহূর্তের জন্যও বান্দা তাঁকে ভুলে থাকুক। রাস্তায় রেড সিগনালের ব্যবস্থা
রেখেছেন যাতে চলন্ত গাড়ীর চালক সেগুলো দেখে তার গাড়ী থামিয়ে দেয়।
আল্লাহ তা‘আলা শুধু দাম্পত্য জীবনেই নয়, বরং প্রতিটি
ক্ষেত্রেই বিধি নিষেধের ব্যবস্থা রেখেছেন। যেমন পানাহারের মধ্যে হালাল হারাম
রেখেছেন তেমনি রেখেছেন ইবাদতের মধ্যে। একজন বান্দা আল্লাহর দেয়া নিয়ামত পরিতৃপ্তি
সহকারে আহার করবে। কিন্তু স্বীয় সৃষ্টিকর্তার কথা যাতে ভুলে না যায়, বরং প্রতি
মুহূর্তে সর্বাবস্থায় তাঁকে স্মরণ করে সেজন্য খাদ্যের মধ্যে হালাল হারামের
ব্যবস্থা রেখেছেন। আবার হালাল কাজগুলির কিছু কিছু রমযান মাসে দিনের বেলায় হারাম
করে দিয়েছেন। নামাজ আদায় করা আল্লাহর হুকুম। আবার এমন কিছু সময় রয়েছে যে সময় নামাজ
পড়া হারাম। এ মুহূর্তেও বান্দা বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহকেই স্মরণ করবে।
পূর্ণ বয়স্কা প্রত্যেক সুস্থ রমণী প্রতি চার সপ্তাহে
একবার হায়েয অবস্থায় থাকে। কুরআন মেয়েদের হায়েয অবস্থাকে অসুস্থতা বলেছে এবং হায়েয
অবস্থায় সহবাস থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। কিছুদিন পূর্বেও চিকিৎসা বিজ্ঞানে
এটাকে স্বাভাবিক ও সম্পূর্ণ নিরাপদ মনে করা হতো। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বর্ণনা
করছে যে, এটা সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়।
ডাঃ যোয়ান গ্রাহাম লিখেছেন : ঋতুর সময় রোগ ছড়াবার ও
রোগাক্রান্ত হবার আশঙ্কা থাকে। কাজেই একে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও শরীর বিদ্যা সম্মত
(Physiological) বলা চলে না। শরীর তত্ববিদগণের পর্যবেক্ষণের দ্বারা জানা যায় যে,
মাসিক ঋতুকালে নারীদের মধ্যে নিম্ন লিখিত শারীরিক পরিবর্তন ঘটতে দেখা যায়ঃ
১। শরীরে তাপ সংরক্ষণ শক্তি কমে যায়। ফলে অধিক মাত্রায়
শারীরিক তাপ নির্গত হয়ে তাপমাত্রা কমে যায়।
২। নাড়ী ক্ষীণ হয়ে পড়ে, রক্তের চাপ কমে যায়, শ্বাস
গ্রহণের পার্থক্য দেখা যায়।
৩। ম্বরণ শক্তি কমে যায় এবং কোন বিষয়ে একাগ্রতা থাকে
না।
৪। স্নায়ুমণ্ডলী অবসন্ন ও অনুভূতি শক্তি শিথিল হয়।
শরীর বিজ্ঞানের ডাক্তার এমিল নুডিক বলেনঃ ঋতুবতী
স্ত্রীলোকের মধ্যে সাধারণতঃ যে পরিবর্তন দেখা যায় তা নিম্নরূপঃ
মাথা ব্যাথা, অবসাদ, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ব্যথা, স্নায়ুবিক
দুর্বল, স্বভাবের রুক্ষতা, মুত্রণালিতে যন্ত্রণা, হযমশক্তি হ্রাস পাওয়া, কোন কোন
অবস্থায় কোষ্ঠ কাঠিন্য, সময় সময় বমির ভাব এবং কোন কোন নারীর এ সময় কন্ঠস্বর ভারী
হয়ে যায়।
আবার কখনো হযম শক্তি নষ্ট হয়ে যায়, শ্বাস গ্রহণে কষ্ট
হয়।
ডাঃ মোহাম্মদ গোল্লাম মুয়াযযাম স্বীয় কিতাবে উল্লেখ
করেছেন, ঋতুর সময় স্ত্রী মিলন নিষিদ্ধ হওয়া সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য নীতি সম্মত ও
যুক্তি ভিত্তিক। ঋতুর সময় জরায়ুর নিম্নমুখ স্বাভাবিক বন্ধ অবস্থায় থাকে না। তখন এর
মুখ খোলা থাকে, ফলে রক্ত বের হতে পারে। ঋতুর রক্ত জরায়ুর গা থেকে ঝরে, কাজেই
সেখানেও স্বাভাবিক অবরণ বা ঝিলি¬ (Endometreum) অটুট থাকে না। ফলে এ সময় জরায়ু বা
যোনী নালীতে কোন রোগ জীবানু থাকলে তাও সহজেই ভিতরে প্রবেশ করে এবং Endometritis
(জরায়ু ঝিলি¬ প্রদাহ) Salpingites (জরায়ুর নালীর প্রদাহ),Peritonitis (অন্ত্র
আবরনী প্রদাহ) ও
Pelivic Cellulite (তলপেটের প্রদাহ) ইত্যাদি কঠিন রোগ হওয়ার আশংকা
থাকে। এ সময় স্ত্রী সহবাস করলে এসব রোগের সম্ভাবনা বেশী। আবার স্ত্রীর গনেরিয়া,
সিফিলিস, সিসটাইটিল (মূত্রনালী প্রদাহ), স্বেত প্রদাহ (Leucorrhoea) ইত্যাদি রোগ
থাকলে স্বামীর যৌন অঙ্গে রোগ জীবানু প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং স্বাস্থ্যগত
কারণেই ঋতুর সময় সহবাস নিষিদ্ধ।
তা ছাড়া যৌন মিলন নেহায়েতই উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা, সে সময়
সব রকম স্বাস্থ্য বিধি পালন সম্ভব নয়। সুতরাং যখন জরায়ুর ঝিলি¬ অটুট নয়, তখন
পুরুষদের মাধ্যমে রোগ জীবানু প্রবেশের সম্ভাবনা বেশী। যদি কেউ যথেষ্ট সাবধানতা
অমলম্বন করে তবুও মেয়েদের রক্তস্রাবের সময় সহবাস করা জঘন্য খুন খারাবীর মত নিকৃষ্ট
মানসিক অবস্থার প্রমাণ দিবে। তাই ডাঃ গ্রাহাম বলেন যে, ঋতুর সময় মিলনে নিষেধ করার
কারণ মানসিক নয়, বরং স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সম্মত।
তালাকপ্রাপ্তা নারীকে তিন হায়েযকাল অপেক্ষা করতে হবে
কেন?
ইসলাম ধর্মে নরীদেরকে তালাকপ্রাপ্তা হওয়ার পর তিন হায়েয
(ঋতু) পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমে ইদ্দত পালন করতে হয়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ
ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ (سورة البقرة ২২৮)
অর্থ : তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন
হায়েয (বা তিন তহুর) পর্যন্ত। (সূরা বাকারা, ২ : ২২৮ আয়াত) অর্থাৎ তালাকপ্রাপ্তা
মহিলা অন্যত্র বিয়ে করতে ইচ্ছা করলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পূর্বে তিন হায়েয
পর্যন্ত অপেক্ষা করা মহান সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ। ফ্রান্সের আইনে রয়েছে যে, বিধবা
অথবা তালাকপ্রাপ্তা মহিলা যদি বিয়ের ইচ্ছা করে তাহলে তালাক অথবা স্বামীর মৃত্যুর
সময় থেকে তিন শত দিন অপেক্ষা করা অত্যাবশ্যক। তবে হ্যাঁ, এর কম সময়ে যদি সন্তান
ভূমিষ্ট হয় তাহলে তা আলাদা কথা। এ সময়টি প্রায় নয় মাসেরও অধিক।
অনেকেই প্রশ্ন করেঃ কেন তিন হায়েয পর্যন্ত অপেক্ষা করতে
হবে? এক হায়েয অথবা দুই হায়েয পর্যন্ত অপেক্ষা করলেই কি যথেষ্ট নয়?
এ প্রশ্নের জবাব দিতে হলে আমাদেরকে নজর দিতে হবে আধুনিক
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দিকে। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, নারীদের গর্ভবতী হওয়ার
সাথে সাথে হায়েয বন্ধ হয়ে যায়। তবে কোন কোন মহিলার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও লক্ষ্য
করা যায়। তা হচ্ছে গর্ভবতী হওয়ার পরও একবার অথবা দুবার হায়েয হতে পারে, কিন্তু
গর্ভাবস্থায় কোন ক্রমেই পর পর তিনবার হায়েয হতে পারে না।
অতএব আমাদের কাছে এটা সুষ্পষ্ট যে, আল্লাহর নির্দেশে
নারীদেরকে তিন হায়েয বা তিন তহুর পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান ভিত্তিক
এবং যুক্তি সঙ্গত। এই বিধানের প্রধান উদ্দেশ্য পরবর্তী কালে সন্তানের পিতৃত্বের
ব্যাপারে মতভেদ দেখা দেয়ার আশংকা দূর করা। কেননা যদি তালাকের সময় স্ত্রী গর্ভবতী
থাকে এবং তা প্রাথমিক অবস্থায় থাকে তাহলে তা ঋতু বন্ধ হয়ে গেলেই বুঝা যাবে। কিন্তু
যদি পর পর তিন মাসে ঋতুস্রাব হয় তাহলে নিশ্চয়ই গর্ভে কোন সন্তান ছিল না। অতএব
মানুষ এই ইদ্দতের মাধ্যমে সঠিকভাবে জানতে সক্ষম হবে যে, তার গর্ভ বাচ্চা থেকে
মুক্ত।
ডাঃ মুহাম্মদ গোল্লাম মুয়াযযাম স্বীয় কিতাবে লিখেছেন :
তিন ঋতুর উদ্দেশ্য গর্ভ সম্বন্ধে সকল সন্দেহ দূর করা। কারণ গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে
একবার কিংবা দু‘বার স্রাব হতে পারে, কিন্তু তৃতীয় স্রাবের পর আর কোন সংশয় সন্দেহ
থাকে না। ইহা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য বিদ্যা অনুযায়ী যুক্তি সংগত।
আধুনিক বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক আবিস্কারগুলির কথা কি করে
এত নিখুঁতভাবে অনেক আগেই বলে দিল আল কুরআন? এর দ্বারা এ কথাই প্রমাণ করে যে, এ
গ্রন্থটি সমগ্র বিশ্ব নিয়ন্ত্রণকারী, সর্বময় ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিকারী মহান রবের
পক্ষ থেকে এই নির্দেশ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে অবতীর্ণ।
ছেলেরা মেয়েদের দ্বিগুন অংশ পায় কেন?
ইসলাম শ্বাশত সত্য ও শান্তির ধর্ম। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
إِنَّ
الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
(سورة آل عمران ১৯)
অর্থ : ইসলাম আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম। আর বিশ্ব
মানবতা ও বিশ্ব নারী সমাজকে একমাত্র ইসলামই পারে শান্তি দিতে এবং তাদের অধিকার
ফিরিয়ে দিতে। আল্লাহর কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতই
পারে বিশ্বের নির্যাতিত, লাঞ্ছিত ও অবহেলিত নারী সমাজকে পূনঃ প্রাতিষ্ঠা করতে।
ইসলাম যেহেতু শান্তি ও ন্যায় বিচারের ধর্ম সেহেতু ইসলাম নারী পুরুষ কারোরই অমঙ্গল
কামনা করতে পারে না। কারও অধিকার হরণ এবং কাউকে অবমাননা করা ইসলাম-বিরোধী।
বর্তমান যুগে কিছু ভ্রান্ত পথভ্রষ্ট ব্যক্তি রয়েছে,
তারা বলে : ইসলাম মেয়েদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে, যেহেতু উত্তরাধিকারের
ব্যাপারে ইসলাম ধর্ম মেয়েদেরকে ছেলেদের সমান অধিকার দেয়নি।
আসলে মানুষের মাঝে কিছু চালাক চতুর লোক রয়েছে যারা
মেয়েদেরকে নিয়ে সদা সর্বদা তাদের কু-প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য চক্রান্ত করছে
এবং তাদেরকে ধোকা দিচ্ছে।
আসুন তাহলে দেখা যাক মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে দুর্বল ও
সম্পদের বেশী মুখাপেক্ষী হওয়া সত্ত্বেও কেন ইসলাম ছেলেদের জন্য মেয়েদের দ্বিগুন
অংশ নির্ধারণ করলো? ইসলাম শ্বাশত সত্য ও শান্তির ধর্ম। আল্লাহ রাব্বুল ইয্যত ইরশাদ
করেন :
يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ
مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ (سورة النساء ১১)
অর্থ : আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে
আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর অংশের সমান। (সুরা নিসা, ৪ : ১১ আয়াত)।
এই আয়াতের শেষ অংশে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্পষ্ট করে
আমাদের জ্ঞানের স্বল্পতা উল্লেখ করে বলেন :
آَبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ
أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا
حَكِيمًا ﴿النساء১১﴾
অর্থঃ তোমরা তো জানো না যে, তোমাদের পিতা ও পুত্রের
মধ্যে কে তোমাদের জন্য অধিক উপকারী। এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত অংশ। নিশ্চয়ই
আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ। (সুরা নিসা, ৪ : ১১ আয়াত)।
ইসলামের সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে তৎকালীন আরব সমাজ ছিল
বর্বর জাহিলিয়াতের সমাজ। সেই সময় নারীরা ছিল সবচেয়ে বেশী অবহেলিত, লাঞ্ছিত ও
পদদলিত। নারী সমাজকে সামাজিক ভাবে মূল্যায়ন করা হতো না। কোন পরিবারে কন্যা সন্তান
জন্ম গ্রহণ করলে লজ্জা ও দুর্ভাগ্যের কারণ মনে করা হতো। দরিদ্র ও অভাবের ভয়ে
ভূমিষ্ট শিশুকে মেরে ফেলা হত। জন্মদাতা যালিম পিতা শিশু সন্তানের হৃদয় বিদারক
চিৎকার উপেক্ষা করে তাকে মাটিতে পুঁতে রাখত। অনেক পিতা দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে
কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দিত। সেই যুগে এমন কি মেয়েদেরকে কিছুই দেয়া হতো না এই
বলে যে, তারা যুদ্ধ করত না, তারা তলোয়ার ধারণ করত না এবং শত্র“র মোকাবিলা করত না।
এই সূত্র ধরে তারা পিতা মাতার ধন সম্পদেরও মালিক হতো না। আর না হতো তাদের স্বামীর
অংশীদার। মেয়েরা এ ভাবেই যুলুম ও নির্যাতনের শিকার হতো।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিশ্ববাসীর হিদায়েতের লক্ষ্যে
চির শ্বাশত ও শান্তিপূর্ণ নির্ভেজাল বিধান দিয়ে বিশ্ব মানবের মুক্তির দূত ও আলোর
দিশারী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পৃথিবীতে পাঠালেন। তিনি
চৌদ্দ শত বছর পূর্বে আল্লাহর নির্দেশে নারীর হক নির্ধারণ করলেন যাতে তারা ইযযতের
সাথে স্বসম্মানে তা গ্রহণ করতে পারে। করুণা কিংবা দানের ভিত্তিতে নয়, বরং আল্লাহর
পক্ষ থেকে নির্ধারিত।
وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ
وَالْأَقْرَبُونَ (سورة النساء৭)
অর্থঃ রমণীদের পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজন যা রেখে গেছে
তার মধ্যে তাদের জন্য অংশ রয়েছে। (সূরা নিসা, ৪: ৭ আয়াত)।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়, যার দ্বারা
সমাজে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যার দ্বারা সে তার মর্যাদা অক্ষুন্ন
রাখতে পারে তা হলো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠা। ইসলাম ছাড়া অন্য সকল আইন কানুন নারীকে
অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দুর্বল করে রেখেছে এবং সমাজে নারীর দাসত্বের কারণই হলো তার এ
আর্থিক দুর্গতি। ইউরোপ এ অবস্থার অবসান চাইল এবং তার জন্য নারীকে উপার্জনশীল
হিসাবে তৈরী করলো। উত্তরাধিকার সে লাভ করলো। ইসলাম নারীকে উত্তরাধিকারের বিরাট
অধিকার দান করলো। পিতা, স্বামী, সন্তান ও অন্যান্য নিকট-আত্মীয়ের উত্তরাধিকার সে
লাভ করলো। উত্তরাধিকার আইনে নারীকে পুরুষের অর্ধেক অংশ দেয়া হয়েছে। নারী তার
স্বামীর নিকট হতে মোহর ও ভরণ পোষণ পায়। পুরুষ এ সকল হতে বঞ্চিত। নারীর ভরণ পোষণ
শুধু স্বামীর উপর ওয়াজিবই নয়, বরং স্বামীর অবর্তমানে পিতা, ভাই, সন্তান অথবা
অন্যান্য আত্মীয় তার ভরণ পোষণ করতে বাধ্য। মেয়েদের সম্পদ লাভ করার মাধ্যমে তার উপর
পূর্ণ মালিকানা ও সত্ত্ব কায়েম হয় এবং তা ব্যয় করার পূর্ণ অধিকার তার, পিতা,
স্বামী কিংবা অন্য কারও নেই। কোন ব্যবসায়ে মূলধন বিনিয়োগ করলে, অথবা নিজ শ্রম
দ্বারা কোন অর্থ উপার্জন করলে তারও সে মালিক হবে। এ ছাড়াও তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব
সম্পূর্ণ স্বামীর। স্ত্রী যত ধনশালী হোক না কেন, তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব হতে
স্বামী মুক্ত হতে পারবে না। এভাবে ইসলাম ধর্মে নারীর আর্থিক অবস্থাকে এত সুদৃঢ় করে
দেয়া হয়েছে যে, অনেক সময় নারী পুরুষ অপেক্ষা বেশী ভাল অবস্থায় থাকে।
ছেলেরা মেয়েদের দ্বিগুন অংশ পাওয়ার কারণ হলো :
* মেয়েদের ভরণ পোষণ ইত্যাদি খরচের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে
তাদের স্বামী, ছেলেদের উপর অথবা তাদের পিতার উপর অথবা তাদের ভাইয়ের উপর অথবা তাদের
অন্য কোন আত্মীয়ের উপর।
* মেয়েদের উপর অন্য কারো ভরণ পোষণের দায়িত্ব অর্পিত হয়নি।
অথচ ছেলেদের উপর তার আত্মীয় স্বজন ও পরিবার পরিজনের খরচের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে।
* ছেলেদের খরচের দায়িত্ব সর্বাধিক। অতএব মেয়েদের
প্রয়োজনের তুলনায় ছেলেদের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী।
* ছেলেদের স্ত্রীকে মহর দিতে হয়। স্ত্রী ও সন্তানের
বাসস্থান, খাদ্য ও পোষাকের খরচের দায়িত্ব পুরুষের উপরই নাস্ত।
* সন্তানের লেখা পড়ার খরচ এবং স্বীয় স্ত্রী ও সন্তানের
চিকিৎসার ব্যয় ভার পুরুষদেরকেই বহন করতে হয়।
মহান করুণাময় আল্লাহ আদেশ করছেনঃ
لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ
عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آَتَاهُ اللَّهُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ
نَفْسًا إِلَّا مَا آَتَاهَا (سورة الطلاق ৭)
অর্থ : বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে।
যে ব্যক্তি সীমিত পরিমানে রিযক প্রাপ্ত সে আল্লাহ যা দিয়েছেন তদপেক্ষা বেশী ব্যয়
করার আদেশ কাউকে করেন না। (সূরা তালাক, ৬৫: ৭ আয়াত)।
অথচ নারীরা যতই মাল ও সম্পদের অধিকারিনী হোক না কেন,
তার পরও তাদের মাল থেকে খরচ করা ওয়াজিব করা হয়নি; না তাদের নিজেদের উপর, আর না
তাদের সস্তানের উপর যতক্ষন পর্যন্ত তার স্বামী বেঁচে থাকবে। কেননা তার স্বামীর
উপরই তার ও তার সকল সন্তানের যাবতীয় খরচের দায় দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। আল্লাহ ইরশাদ
করেন :
وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ
بِالْمَعْرُوفِ لَا تُكَلَّفُ نَفْسٌ إِلَّا وُسْعَهَا (سورة البقرة২৩৩)
অর্থ : নিয়মানুযায়ী মাতার খাওয়া পরা ইত্যাদির ব্যবস্থা
করা সন্তানের পিতার দায়িত্ব। কাউকেও সামর্থের উর্ধ্বে কোন দায়িত্ব দেয়া হয় না।
(সূরা বাকারা, ২ : ২৩৩ আয়াত)।
এমন কি মেয়েদের ছোট থেকে বিবাহ পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার
তাদের পিতার। তাদের যখন বিবাহ হয় তখন থেকে তাদের দায়িত্ব স্বামীর উপর অর্পিত হয়
এবং যখন বার্ধক্যে উপনিত হয় তখন তাদের সন্তানদের উপর তা ন্যস্ত হয়। এমনি ভাবে জন্ম
থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ইসলাম তাদের জন্য সার্বিক ব্যয়ের ব্যবস্থা করেছেন। অপর দিকে
উত্তরাধিকার সূত্রে বিভিন্ন দিক থেকে তাদের অংশ নির্ধারণ করেছে।
রমনী তার পিতা মাতা থেকে পেয়ে থাকে। যেমন :
وَإِنْ كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ ( سورة
النساء ১১)
অর্থ : যদি একা হয় তাহলে অর্ধেক সে পাবে। (সূরা নিসা, ৪
: ১১ আয়াত)।
রমনী তার স্বামী থেকে পেয়ে থাকে। যেমন :
وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِنْ لَمْ
يَكُنْ لَكُمْ وَلَدٌ (سورة النساء ১২)
অর্থ : তোমাদের (স্বামীর) যদি সন্তান না থাকে
তাহলে তোমরা যা রেখে গেছে তার এক
চতুর্থাংশ পাবে তারা (স্ত্রীরা)। (সূরা নিসা, ৪ : ১২ আয়াত)।
রমনী তার সন্তান থেকে পেয়ে থাকে। যেমন :
فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ
فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ فَإِنْ كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ السُّدُسُ ( سورة
النساء ১১)
অর্থ : যদি তার সন্তান না থাকে তাহলে পিতা মাতা তার
ওয়ারিস হবে। মাতা পাবে এক তৃতীয়ংশ, আর যদি তার ভাই থাকে তাহলে মাতা পাবে ছয় ভাগের
এক ভাগ। ( সূরা নিসা, ৪ : ১১ আয়াত)।
রমণী তার ভাই থেকে পেয়ে থাকে। যেমন :
وَلَهُ أُخْتٌ فَلَهَا نِصْفُ مَا تَرَكَ ( سورة النساء
১৭৬)
অর্থ : মৃত ব্যক্তির যদি কোন বোন থাকে তাহলে সে পাবে
পরিত্যক্ত সম্পদের অর্ধেক। (সূরা নিসা, ৪ : ১৭৬ আয়াত)।
বিবাহের সময় নারীরা মোহর পেয়ে থাকে। যেমন :
وَآَتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ (سورة النساء ৪)
অর্থ : তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও। (সূরা
নিসা, ৪ : ৪ আয়াত)।
ইসলাম মেয়েদেরকে তাদের কল্পনার উর্ধ্বে নিয়ামত, ফযিলাত
ও সম্মান দিয়েছে। সে সম্পদ গ্রহণ করবে, কিন্তু খরচের ব্যাপারে তাকে বাধ্য করা
হয়নি, কোন দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তার লাভ আছে, ক্ষতি নেই। আয় আছে, ব্যয় নেই। জমা আছে,
খরচ নেই। অতএব আদল ও ইনসাফের কষ্টি পাথরে যদি যাচাই করা হয় তাহলে সবার কাছে
দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হবে যে, পুরুষদের সাথে নারীদের অংশ পার্থক্য করা হয়েছে
সার্বিক যুক্তিসংগত, ন্যায়ানুগ ও বিজ্ঞান ভিত্তিক।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটি আরও স্পষ্ট করা যায়।
মনে করি, এক ব্যক্তির দুই সন্তান। এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে সে মৃত্যু বরণ করেছে। সে
তাদের জন্য রেখে গেছে ৩০,০০০/= ত্রিশ হাজার টাকা। শরীয়াতের আলোকে মেয়েটি পাবে
১০,০০০/= দশ হাজার টাকা এবং ছেলেটি পাবে ২০, ০০০/= বিশ হাজার টাকা। বিয়ের সময়
এসেছে, যুবকটি বিয়ে করতে ইচ্ছুক। তার স্ত্রীকে মহর দিতে হবে। মনে করি তার বিয়ের
মহর ২০,০০০/= বিশ হাজার টাকা মাত্র। এবার সে তার পিতার উত্তরাধিকার সূত্রে যা
পেয়েছিল তা তার স্ত্রীকে মহর হিসাবে সম্পূর্ণ প্রদান করলো। অতঃপর তার কাছে কিছুই
অবশিষ্ট থাকলো না। বিয়ের পর বাসস্থান ও খাওয়া থাকার সার্বিক ব্যয়ের দায়িত্ব তারই।
আর মেয়েটি যখন বিয়ে করার ইচ্ছা করবে তখন তার স্বামীর কাছ থেকে মোহর পাবে। মনে করি
তার মোহর ২০,০০০/= বিশ হাজার টাকা। সে তার পিতার সম্পদ থেকে পেয়েছে ১০,০০০/= দশ
হাজার টাকা এবং স্বামীর কাছ থেকে মোহর বাবদ পেয়েছে বিশ হাজার টাকা। তার কাছে মোট
জমা হয়েছে ৩০,০০০/= ত্রিশ হাজার টাকা। সে মালদার হওয়ার পরও তার মাল থেকে খরচ করার
জন্য ইসলাম তাকে কোন দায়িত্ব দেয়নি। এমন কি তার নিজের খরচের জন্যও না। কেননা তার
নফছের খরচ যোগাবে তার স্বামী। বেঁচে থাকা অবস্থায় যতদিন তার দায়িত্বে থাকবে ততদিন
তার উক্ত মাল বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। আর ছেলেটির মাল কমতেই থাকবে। মেয়েটি যা তার
পিতার কাছ থেকে পেয়েছে তা চলে গেছে এবং ব্যয় হয়েছে।
এখন দেখুন, অর্থের দিক দিয়ে কে বেশী সৌভাগ্যের অধিকারী?
ছেলেটি, না মেয়েটি? সম্পদের দিক দিয়ে কে বেশী সৌভাগ্যের অধকারী? ছেলেটি, না
মেয়েটি? সম্পদের দিক দিয়ে কে বেশী মালের অধিকারী? যুবকটি, না যুবতীটি? অথচ একবিংশ
শতাব্দীতে এসে নারী অধিকার আদায়ের জন্য বিশ্ব নারী দিবস, নারী স্বাধীনতা আন্দোলন,
বিশ্ব নারী সম্মেলন ইত্যাদি সেমিনার সিম্পোজিয়াম করে মাঠে নামা সম্পূর্ণ অবান্তর
মাত্র। এসব করে নারী জাতি তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত, নির্যাতিত, লাঞ্ছিত,
অবহেলিত ও ধর্ষিত হওয়া ব্যতীত আর কিছুই পাচ্ছে না।
ইসলামে কিসাসের হুকুম ( জানের বদলে জান) কেন?
শরীয়তে কিসাসের মাধ্যমে নিরীহ নিস্পাপ প্রণগুলো নিরাপদ,
সংরক্ষণ ও হিফাযতে থাকে। আর সেটাই স্পষ্ট ভাবে পরিস্ফুটিত হয় হত্যাকারীর কিসাসের
মাধ্যমে। অন্যায় ভাবে খুন করলে, খুনের বদলে খুন করার বিধান দিয়েছেন আল্লাহ। আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন কিসাসকে ব্যক্তি ও সমাজের জীবন বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেনঃ
وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَا أُولِي
الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴿البقرة১৭৯﴾
অর্থ : হে জ্ঞানী ব্যক্তিগণ! কিসাসের মধ্যে তোমাদের
জন্য রয়েছে জীবন, যাতে তোমরা ভয় কর (সূরা বাকারা, ২ : ১৭৯ আয়াত)।
পৃথিবীর বেশীর দেশেই মৃত্যুর বদলে মৃত্যুর আইন প্রচলিত
আছে। তবে এর প্রয়োগ পদ্ধতি ভিন্ন।
একজন দোষী ব্যক্তিকে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দিলে অন্যরা
আর সে ধরনের কাজ করতে সাহস পায় না। অর্থাৎ হত্যাকারী যদি জানতে পারে যে, সে যদি
অপরকে হত্যা করে তাহলে তাকেও হত্যা করা হবে, এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সে এই ঘৃণিত অপরাধ
থেকে নিজেকে বিরত রাখবে। তাই এই বিরত থাকা তার যেমন জীবন, অপরের জন্যও তেমনি জীবন।
আর এটাই হচ্ছে আল্লাহর বিধানের মহান উদ্দেশ্য। ইসলাম এই কিসাসের মাধ্যমে হিংসা
প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে প্রতিশোধ নিতে চায় এমন নয়, বরং এই কিসাস জীবনকে রক্ষার
জন্যই।
কোন হত্যাকারী এই হুকুম জানার পরও যদি অপরকে হত্যা করে
তাহলে তার অর্থ এই যে, তার দ্বারা শত শত হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়াই স্বাভাবিক। অতএব
এই হত্যকারীর উপর ইসলামী আইন যদি জনসম্মুখে প্রয়োগ করা হয় তাহলে নিঃসন্দেহে বলা
যাবে যে, শত শত জীবন রক্ষা পেয়েছে এই আইনের কারণেই। তাই আল্লাহর ভাষায় :
وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ﴿البقرة১৭৯﴾
অর্থ : কিসাসের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য জীবন। (সূরা
বাকারা, ২ : ১৭৯ আয়াত)।
এর মাধ্যমে আল্লাহ-ভীতির শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কুরআন
পাকের এ পদ্ধতি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে মানবিক বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। মানব রচিত
দন্ডবিধির মত কুরআনপাক শুধু অপরাধ ও শাস্তি বর্ণনা করেই ক্ষান্ত হয় না, বরং
প্রত্যেক অপরাধ ও শাস্তির সাথে আল্লাহ-ভীতি ও পরকালে বিশ্বাস উপস্থাপন করে মানুষের
ধ্যান ধারণাকে এমন এক জগতের দিকে ঘুরিয়ে দেয় যা মানুষকে যাবতীয় অপরাধ ও গোনাহ থেকে
পবিত্র করে দেয়। গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, জনমনে আল্লাহ তা’আলা ও আখিরাতের
ভয় সৃষ্টি করা ছাড়া জগতের কোন আইন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীই অপরাধ দমনের নিশ্চয়তা দিতে
পারে না। কুরআন পাকের এই অদ্বিতীয় পদ্ধতিই জগতে অভূতপূর্ব বিপ্লব এনেছে। সমাজ থেকে
চিরতরে নির্মূল হয়েছে খুন ও সন্ত্রাস।
অপরাধীর কিসাসের মাধ্যমে পরস্পরের যুদ্ধ বিগ্রহ,
রক্তপাত, মারামারি হানাহানি বন্ধ হয়, যেমন বন্ধ হয়েছিল জাহিলিয়াত যুগের যুদ্ধ।
বর্তমান আধুনিক যুগেও যে রক্তপাত, মারামারি, কাটাকাটি ও যুদ্ধ চলছে তা সেই র্ববর
যুগের ঘটনাকেও অতিক্রম করে চলছে। দুই দল, দুই গোত্র, দুই সম্প্রদায় এবং পাশাপাশি
দুই দেশের মাঝে যে হিংসাত্মক যুদ্ধ, সন্ত্রাসী যুলুম ও নির্যাতন চলছে তা একমাত্র
কুরআনী আইন তথা ইসলামী শাসনের অভাবেই। সীমা লংঘনকারী ও অপরাধীর সঠিক বিচার হচ্ছে
না বিধায় এ পরিণাম।
আজকে যদি আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও
তাঁর সাহাবাগণের যুগের কথা স্মরণ করি তাহলে দেখতে পাই যে, ঐ সময় মাত্র গুটি কয়েক
স্বেচ্ছা স্বীকৃত অপরাধের হদ প্রয়োগের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেজন্য
ছিল না সেখানে কোন সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী। এমনকি যুগ যুগ ধরে চলে আসা রক্তক্ষয়ী
যুদ্ধও বন্ধ হয়ে সমস্ত পৃথিবীতে শান্তি বিরাজ করছিল। শত্র“ পরিণত হয়েছিল মিত্রে।
কোথাও কোন ভয় ভীতি ছিল না। নিরাপত্তা ছিল সর্বত্র।
বর্তমান যুগেও যদি আমরা সৌদী আরবের কথা চিন্তা করি,
সেখানে এই শরীয়তী কিসাসের হুকুম জারী আছে বলেই হত্যা নামের অপরাধটি নেই বললেই চলে।
যা সংঘটিত হচ্ছে তাও হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র। অপর দিকে যদি আমরা বিশ্বের অন্যান্য
দেশের প্রতি নজর করি, তা মুসলিম অধ্যুসিত দেশ হোক অথবা অমুসলিম দেশ হোক, সেখানে
আমরা দেখতে পাই যে, তাদের কাছে হত্যা যেন সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। অথচ ইসলাম
বলছেঃ
مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ كَتَبْنَا عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ
أَنَّهُ مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ
فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا
النَّاسَ جَمِيعًا ( المائدة৩২)
অর্থ : এ কারণেই আমি বণী ইসরাঈলের প্রতি লিখে দিয়েছি
যে, যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে
হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে এবং যে কারো জীবন রক্ষা করে সে যেন সবার
জীবন রক্ষা করে। ( সূরা মায়েদা, ৫ : ৩২ আয়াত)।
যে দেশগুলোতে
শত শত হত্যাকাণ্ড ঘটছে অথচ সেই সমস্ত দেশ থেকেই উস্কানী দেয়া হচ্ছে যে, ইসলামে
হত্যার বদলে হত্যা আইনটি বর্বরতা। আমাদের দেশেও মুসলিম নামধারী কিছু লোক তাদের
ছত্র ছায়ায় তাদের এজেন্ট হিসাবে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে। হত্যাকারী যালেম, অপরাধী,
লম্পট, বদমাইশদের পক্ষ অবলম্বন করে মেকী দরদ দেখাচ্ছে। অথচ এমন অপরাধীর দ্বারা যে
শত শত নিস্পাপ নিরীহ প্রাণ অন্যায় ভাবে কঠিন যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে ছিনিয়ে নিচ্ছে
সেই মাযলুমদের পক্ষে একবারও রহম বা দরদ দেখাচ্ছে না। তাদের কর্ণকুহরে তাদের সন্তান
ও বিধবাদের অর্তনাদ, আহাজারী ও চিৎকার পৌঁছে না, যারা তাদের অভিভাবককে হারিয়ে
ফেলায় এক মুঠো খাদ্য পাচ্ছে না, তাদের দেখা শুনার কেউ নেই। তাদের জীবন যাপন কতই না
কষ্ট সাধ্যে পরিণত হয়েছে সেই চিন্তা কি তারা কখনও করেছে? অপরাধী ছাড়া কেউ অপরাধীর
পক্ষ অবলম্বন করে না।
একটি অন্যায়কারী অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে শত শত
জীবন রক্ষায় ইসলাম যেমন নফছের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করছে, তেমনি সকল সমাজে প্রকৃত
শান্তি প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা দিচ্ছে, যেহেতু এই আইন সৃষ্টিকর্তা রাব্বুল আলামীনের
পক্ষ থেকে।
চোরের হাত কাটার আইন কেন?
ইসলাম মুসলিমদের সম্পদের নিরাপত্তা দিয়েছে। প্রত্যেকেই
তার জীবনের প্রয়োজন নিটানোর উদ্দেশ্যে বৈধ পন্থায় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। আল
কুরআনের ভাষায় :
وَابْتَغِ فِيمَا آَتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآَخِرَةَ
وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ
إِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ
الْمُفْسِدِينَ ﴿القصص৭৭﴾
অর্থঃ আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তার মাধ্যমে পরকালের
গৃহ অনুসন্ধান কর। দুনিয়াতে তোমার অংশ ভুলে যেও না। আল্লাহ যেমন তোমার প্রতি
অনুগ্রহ করেছেন তেমনি তুমি অনুগ্রহ কর। পৃথিবীতে ফাছাদ সৃষ্টি করতে প্রয়সী হয়ো না।
নিশ্চয়ই আল্লাহ ফাছাদ সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা কাছাছ, ২৮ : ৭৭ আয়াত)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন :
هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُولًا
فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا مِنْ رِزْقِهِ وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
﴿الملك১৫﴾
অর্থ : তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন। অতএব
তোমরা তাতে বিচরণ কর এবং তাঁর দেয়া রিযক আহার কর এবং তাঁরই কাছে পুনরুজ্জীবিত হবে।
(সূরা মুলক, ৬৭ : ১৫ আয়াত)।
অতএব প্রত্যেক মুসলিমের উচিত এমন পন্থা অবলম্বন করা যা
দুনিয়া ও আখিরাতে তাকে ফায়দা দিবে। যদি কারো আর্থিক ক্ষমতা হারিয়ে যায়, তার কোন
সাহায্যকারী না থাকে এবং পরিবার পরিজন আত্মীয় স্বজনের মধ্যে এমন কেউ না থাকে যে,
তার খরচের ভার বহন করবে, এমতাবস্থায় তার প্রয়োজন মিটানোর জন্য আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন ধনীদের মালের জাকাত থেকে গ্রহণ করা ফরয করে দিয়েছেন। অর্থাৎ ধনীরা তাদের
ফরয দায়িত্ব পালন করতে এসব অভাবগ্রস্থকে দান করবে।
ইসলাম ব্যক্তি মালিকানাকে যথার্থ মূল্যায়ন করে। তাই
প্রত্যেক ব্যক্তিকে যে কোন কাজের প্রতি ও বৈধ উপার্জনে উৎসাহ প্রদান করে যাতে
মানুষের জিন্দেগী সুন্দর হয়, শান্তিময় হয়, প্রত্যেক মানুষ স্বসম্মানে জীবন যাপন
করতে পারে, অন্যায় ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করতে না পারে। অন্যের সম্পদ সার্বিক
সংরক্ষণের জন্যই আল্লাহ চোরের হাত কাটার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রকৃত পক্ষে চোর কষ্ট ছাড়াই ধন সম্পদের মালিক হতে
চেষ্টা করে। বৈধ পন্থা বাদ দিয়ে অবৈধ পন্থায় অন্যের কষ্টে অর্জিত সম্পদ চুরি করে
বলে ইসলামী বিধানে এই পাপিষ্ঠদের হাত কেটে ফেলার আইন প্রণীত হয়েছে, যাতে চোর এই
গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকে এবং মানুষ তাদের সম্পদের ব্যাপারে নিরাপদ থাকতে পারে।
মানব রচিত বিধানে জেলখানায় আবদ্ধ রাখার যে আইন রয়েছে তাতে পরিস্ফুটিত হয় যে, সে
জেল থেকে বেরিয়ে এসে আবার পূর্বের ন্যায় চুরির কাজে লিপ্ত হয়। কথিত আছে যে, চোর
জেল থেকে ডাকাত হয়ে বেরিয়ে আসে। কারণ সেখানে সে বড় বড় ডাকাতের সাক্ষাৎ পায় এবং
তাদের থেকে ট্রেনিং পায়। এই আইনে ব্যক্তির প্রতি নজর দেয়া হয়, কিন্তু দেশ ও সমাজের
স্বার্থের দিক চিন্তা না করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অথচ সমাজের মধ্যেই
ব্যক্তির উপস্থিতি রয়েছে।
ইসলামের শত্র“রা বলে থাকে, শরীয়তী আইনে দিনারের এক
চতুর্থাংশ চুরি করার জন্য চোরের হাত কাটা হয়, অথচ হাত কতই না মুল্যবান সম্পদ!
মুসলিমদের জ্ঞানবান ব্যক্তিগণ এর উত্তর এভাবেই দিয়েছেন :
* আমানতের গৌরব সব চেয়ে দামী, খিয়ানতের অপমান সবচেয়ে
মূল্যহীন। আল্লাহর বিধানে এটাই পরিস্ফুটিত।
وَمَنْ يُهِنِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ مُكْرِمٍ إِنَّ
اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ ۩﴿الحج১৮﴾
অর্থ : আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন তাকে কেউ সম্মান দিতে
পারে না। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। (সূরা আল হাজ্জ, ২২ : ১৮ আয়াত)।
لَمَّا كَانتْ آمِنَةً كَنَتْ ثَمِيْنَةً وَلَمَّا
خَانَتْ هَانَتْ
হাত যখন আমানত রক্ষাকারী ছিল তখন তা ছিল দামী, আর যখন
তা খিয়ানত করেছে তখন তা অপমানিত হয়েছে।
* মানুষ যাতে অন্যের সম্পদ চুরি করতে দ্রুত ধাবিত না হয়
সে জন্যই চুরির সর্ব নিম্ন পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে দিনারের এক চতুর্থাংশ।
* চোরের স্বভাব নম্রতা ও ক্ষমা দিয়ে ঠিক করা যায় না,
বরং প্রয়োজন হয় উপযুক্ত শাস্তির। আল্লাহ তা’আলা বলেন :
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا
جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
﴿المائدة৩৮﴾
অর্থ : যে নর-নারী চুরি করে তাদের কৃতকর্মের সাজা
হিসাবে তাদের হাত কেটে দাও। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুশিয়ারী! আল্লাহ পরাক্রান্ত,
জ্ঞানময়। (সূরা মায়েদা, ৫ : ৩৮ আয়াত )।
আল্লাহর আইন কারও জন্য খাস নয়, বরং সবার জন্য প্রযোজ্য।
রাজা হোক, প্রজা হোক; ধনী হোক কিংবা গরীব হোক, এ ব্যাপারে কারও জন্য ভিন্ন কোন
সুপারিশ নেই। কেউ জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন :
لَوْ أنَّ
فَطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا
অর্থ : যদি মুহাম্মাদের মেয়ে ফাতিমাও চুরি করতো তাহলে
অবশ্যই আমি তার হাতও কেটে দিতাম।
কোন অঙ্গে
ক্যান্সার হলে ডাক্তারগণ অপারেশনের মাধ্যমে তা কেটে ফেলে দেন। আধুনিক চিকিৎসা
বিজ্ঞান বলে, শরীর থেকে ক্যান্সারযুক্ত অঙ্গটি সম্পূর্ণ আলাদা করতে হয়। অন্যথায়,
তা ভবিষ্যতে অন্যান্য অঙ্গ প্রতঙ্গে বিস্তার লাভ করে পরিশেষে জীবন নাশের কারণ হতে
পারে। অথচ এই অপারেশনের কারণে কাউকে ডাক্তারগণের সমালোচনা করতে দেখা যায় না।
মানুষের কি হলো? সর্বজ্ঞানী আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হুকুমের সমালোচনা করছে! আসলেই
হত্যাকারী, অপরাধী, চোর, ডাকাত, হাইজাকার ও সন্ত্রাসী সমাজের ক্যানসার। এদেরকে
আল্লাহর আইনের মাধ্যমে যেখানে যে অপারেশন প্রয়োজন তা যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজে
শান্তি ও নিরাপত্তা আনয়ন করাই হবে প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ। আর যদি এই
ক্যান্সারযুক্ত অঙ্গ অপারেশন না করে সমাজে রেখে দেয়া হয় তাহলে সেই সমাজ অশান্তি ও
নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেই থাকবে। পরিশেষে সেই সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ
নেই।
وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ ﴿فصلت৪৬﴾
অর্থ : আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি কখনই যুলুম
করেন না। (সূরা ফুসসিলাত, ৪১ : ৪৬ আয়াত)।
প্লেগ রোগে আক্রান্ত এলাকা থেকে বের হওয়া নিষেধ কেন?
প্লেগ রোগে
আক্রান্ত এলাকায় প্রবেশ করতে অথবা সেই এলাকা থেকে বের হতে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করলেন কেন? বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত রয়েছে, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
إذا سَمِعْتُمْ باِالطَّاعُوْنِ بِأرْضٍ فَلا
تَدْخُلُوْهَا وَإذَا كُنْتُمْ فِيْهَا فَلا تَخْرُجُوْا مِنْهَا (رواه البخاري)
অর্থঃ যদি কোন এলাকায় তোমরা প্লেগ রোগের খবর শোন তাহলে সেই এলাকায় তোমরা
প্রবেশ করবে না এবং তোমরা যদি সেই এলাকায় থেকে থাক তাহলে সেখান থেকে বের হবে না।
(বুখারী)।
কোন এলাকা বা
শহর যদি প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়, আর এ খবর যদি কেউ পায় তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে উক্ত শহরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। কারণ সেও সেই রোগে
আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু প্লেগ রোগে আক্রান্ত যে শহরটিতে শত শত মানুষ মারা
যাচ্ছে এমতাবস্থায় সেই শহরের সুস্থ ব্যক্তিরা কেন সেই শহর থেকে বের হবে না? কেন
তারা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিবে না? কেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন
ধ্বংস ও ক্ষতির কারণ থেকে মুক্ত হতে ও রক্ষা পেতে নিষেধ করলেন? তা হলে ইসলাম মানুষকে
কখনও ক্ষতি ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে চায়? না, ইসলাম মানুষকে কখনও ক্ষতি ও ধ্বংসের
দিকে ঠেলে দেয় না, বরং ইসলাম মানুষের সার্বিক কল্যাণ চায়। ইসলামে রয়েছে সর্বস্তরে,
সর্বাবস্থায় চিরন্তন সফলতা।
ডেনমার্কের জনৈক ডাক্তারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল : আপনি
যদি এমন শহরের শাসক হয়ে থাকেন যে শহর প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়েছে তখন আপনি কি
করবেন? তিনি উত্তরে বললেন : আমি ঐ শহরের দরজা জানালা সব বন্ধ করে দিব এবং সেই
শহরের সীমান্তে পুলিশ নেয়োগের মাধ্যমে যারা ঐ শহরে প্রবেশ করতে চায় তাদেরকে নিশেধ
করব এবং যারা উক্ত শহর থেকে বের হতে চায় তাদেরকেও নিষেধ করব। প্রশ্ন করা হলো : কেন
এমন করবেন? প্রবেশকারীকে প্রবেশ করতে না দেয়াটা সবার কাছে স্পষ্ট। কিন্তু যে বের
হতে চায় তাকে কেন আপনি বাধা দিবেন? তিনি জবাব দিলেন : বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে
প্রকাশ, প্লেগ রোগের জীবানুর নাম ইয়ারসিনা পেষ্টি। যে এলাকায় এই প্লেগ রোগ দেখা
দেয় সেই এলাকায় এতো ব্যাপক ভাবে অল্প সময়ে এই জীবানু বিস্তার লাভ করে যে, কোন কোন
সময় এই রোগ শতকরা ৯৫% ভাগ মানুষের শরীরে পৌঁছে যায়। কিন্তু কিছু মানুষ রয়েছে
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল। তাই তাদের শরীরে এই রোগ প্রাধান্য লাভ করে
তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়, তারা মৃত্যুর কোলে পতিত হয়। আর কিছু লোক রয়েছে যাদের শরীরে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে এই জীবানু যুদ্ধ করতে থাকে। তাদের শরীরে কিছুটা জ্বর
অনুভূত হয়। এর অর্থ হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটি উক্ত জীবানুর উপর প্রাধান্য লাভ
করেছে।
আরও কিছু ব্যক্তি রয়েছে যাদের শরীরে রোগের কোন চিহ্ন বা
আলামত প্রকাশ পায় না। এর অর্থ হচ্ছে, উক্ত মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ যন্ত্রটি
শরীরের মধ্যে এমন জিনিস উৎপন্ন করতে থাকে যা উক্ত জীবানুগুলোকে ধ্বংস করতে থাকে।
অতএব এই ধরনের ব্যক্তির প্লেগ আক্রান্ত এলাকায় অবস্থান করায় ভয়ের কোন কারণ নেই।
জীবানু শরীরে প্রবেশের পরও যে সুস্থ রয়েছে আসলেই তার ভয়ের কিছুই নেই। কেননা তার
শরীর জীবানুনাশক শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম। ইনশাআল্লাহ সেখানেও সে সুস্থ থাকবেই।
কিন্তু এই সমস্ত সুস্থ ব্যক্তিদের মাঝে কাউকে যদি বের
হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। হ্যাঁ, আমাদের খালি চোখে সে রোগী না, বরং সুস্থ। কিন্তু
প্রকৃত পক্ষে সে এই জীবানু বহন করছে। তার শরীর এই জীবানুর উপর প্রধান্য বিস্তার
করছে। যদি উক্ত ব্যক্তিকে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয় তাহলে সে নতুন শহরে গমন
করবে। অতঃপর এই জীবানু দুর্বল শরীরে স্থানান্তরিত হবে। তারপর বৃদ্ধি পাবে এবং
দুর্বল শরীর কে নিঃশেষ করবে। তারপর ব্যাপক ভাবে রোগ বিস্তার লাভ করবে। মাত্র একটি
মানুষের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ধ্বংস হবে।
উল্লেখ থাকে যে, ছয়/সাত বছর পূর্বে ভারতে প্লেগ রোগ
দেখা দিয়েছিল। তাই আন্তর্জাতিক ভাবে সকল ফ্লাইট বন্ধ করা হয়েছিল এ জন্য যে, সেখানে
যাতে কোন লোক প্রবেশ করতে না পারে এবং সেখান থেকেও কোন লোক বাহিরে আসতে না পারে।
শুধু তাই নয়, এমনকি জিনিস পত্র আদান প্রদান পর্যন্ত বন্ধ ছিল। ডাক্তারী পরিভাষায়
এটাকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা বলা হয়। অথচ ১৪০০ চৌদ্দ শত বছর পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিলেন :
إذا سَمِعْتُمْ باِالطَّاعُوْنِ بِأرْضٍ فَلا
تَدْخُلُوْهَا وَإذَا كُنْتُمْ فِيْهَا فَلا تَخْرُجُوْا مِنْهَا (رواه البخاري)
যদি কোন এলাকায় তোমরা প্লেগ রোগের খবর শোন তাহলে সেই
এলাকায় তোমরা প্রবেশ করবে না এবং তোমরা যদি সেই এলাকায় থেকে থাক তাহলে সেখান থেকে
বের হবে না। (বুখারী)।
কে মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে এই খবর দিলেন? অথচ তিনি লেখা পড়া জানতেন না। সে সময় অনুবীক্ষণ যন্ত্রের
আবিস্কার হয়নি না, হয়েছিল দূরবীক্ষণ যন্ত্রের আবিস্কার। বস্তু সম্পর্কে সূক্ষ্ম ও
বিশেষ জ্ঞান ছাড়া কেউ এ বিষয়ে জানতে পারে না। মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণনা এটাই প্রমাণ করে যে, তিনি সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে
চিরন্তন শাশ্বত শান্তির বাণী নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন মানব জাতির সার্বিক কল্যাণের জন্য।
তাই তার পদাংক অনুসরণেই রয়েছে সফলতা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন মাছিকে
সম্পূর্ণ ডুবাতে বলেছেন? মাছির ডানায় কি রোগনাশক ঔষধ রয়েছে?
বুখারী ও ইবনে মাজাহ হাদীসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
إذا وَقَعَ الذُّبابُ فِي إنَاءِ أَحَدِكُمْ
فَلْيَغْمِسْهُ فَإنَّ فِى أحَدِ جِنَاحيْهِ دَاءً وَفى الْأخَرِ شِفاء (رواه
البخاري)
অর্থ : যদি তোমাদের কারো পাত্রে মাছি পতিত হয় সে যেন
উক্ত মাছিটিকে ডুবিয়ে দেয়। কেননা তার একটি ডানায় রোগ জীবানু রয়েছে, আর অপরটিতে
রয়েছে রোগনাশক ঔষধ। (বুখারী)
আমাদের মাঝে এমন কি কেউ আছে যে উক্ত রোগের জীবানুগুলো
দেখেছে? আমাদের কেউ কি উক্ত রোগ নাশক ঔষধ অবলোকন করেছে? অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : নিশ্চয়ই তা রয়েছে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। সেখানে রোগ
রয়েছে মানুষ তা জানতো না। তারা দেখতে পায়, মাছি তার দুই ডানা দিয়ে উড়ে যায়। কিন্তু
এ বিষয়ে তারা কিছুই জানতো না যে, তার ভিতরে কল্যাণ রয়েছে, না অকল্যাণ রয়েছে।
জ্ঞান বিজ্ঞানের যখন অগ্রগতি হলো, যখন ব্যাকটেরিয়া ও
ভাইরাস জীবানু সম্পর্কে জ্ঞানের অগ্রগতির মাধ্যমে বর্ণিত হচ্ছে যে, মাছি মানুষের
শত্র“, সে রোগ জীবানু বহন করে এবং স্থানান্তরিত করে। মাছির ডানায় রোগ জীবানু রয়েছে
তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই যদি হয় তাহলে কিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম রোগ জীবানু বহনকারী মাছিকে ডুবিয়ে নেয়ার আদেশ করলেন?
কিং আব্দুল আজীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উস্তাদ ডক্টর ওয়াজিহ
বায়েশরী এই হাদীসের আলোকে মাছিকে নিয়ে কয়েকটি পরীক্ষা চালান। জীবানুমুক্ত কিছু
পাত্রের মাধ্যমে মাছের বাজার থেকে কয়েকটি মাছি ধরে নিয়ে জীবানুমুক্ত টেষ্ট টিউবের
মধ্যে আবদ্ধ করে রাখেন। তারপর নলটি একটি পানির গ্লাসে উপুড় করেন। মাছিগুলো পানিতে
পতিত হওয়ার পর উক্ত পানি থেকে কয়েক ফোটা পানি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন যে, সেই
পানিতে অসংখ জীবানু রয়েছে। তারপর জীবানুমুক্ত একটি সূঁচ দিয়ে মাছিকে ঐ পানিতেই
ডুবিয়ে দেন। তারপর কয়েক ফোটা পানি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন যে, সেই পানিতে আগের মত
আর জীবানু নেই, বরং কম। তারপর আবার ডুবিয়ে দেন। তারপর কয়েক ফোটা পানি নিয়ে আবার
পরীক্ষা করেন। এমনি ভাবে কয়েকবার পরীক্ষা করে দেখেন যে, যত বার মাছিকে ডুবিয়ে
পরীক্ষা চালিয়েছেন ততই জীবানু কমেছে অর্থাৎ ডক্টর ওয়াজীহ এটা প্রমাণ করে দিখিয়েছেন
যে, মাছির একটি ডানায় রোগ জীবানু রয়েছে এবং অপরটিতে রোগনাশক ঔষধ রয়েছে। সৌদী আরবের
রিয়াদে অনুষ্ঠিত অষ্টম চিকিৎসা সম্মেলনে কানাডা থেকে দু’টি গবেষণা-রিপোর্ট
পাঠিয়েছিল যাতে বর্ণিত ছিল, মাছিতে এমন কোন বস্তু রয়েছে যা জীবানুকে ধ্বংস করে
দেয়। শাইখ মোস্তকা এবং শাইখ খালীল মোল্লা এই বিষয়ে জার্মান ও ব্রিটেন থেকে
রিসার্চগুলো ধারাবাহিক সংগ্রহের মাধ্যমে একটি বই বের করেছেন যার মূল বিষয় ছিল :
فإن فى أحد جناحيه داءً وَفى الْآخر شفاء (رواه
البخاري)
অর্থঃ নিশ্চয়ই মাছির একটি ডানায় রয়েছে রোগ, আর অপরটিতে
রয়েছে রোগ নাশক ঔষধ। (বুখারী)
মাছি যখন কোন খাদ্যে বসে তখন যে ডানায় জীবানু থাকে সে
ডানাটি খাদ্যে ডুবিয়ে দেয়। অথচ তার অপর ডানায় থাকে প্রতিরোধক ভাইরাস। যদি মাছিকে
ডুবিয়ে দেয়া হয় তাহলে প্রতিরোধক ভাইরাস খাদ্যের সঙ্গে মিশে মারাত্মক জীবানুগুলিকে
ধ্বংস করে দেয় এবং খাদ্য স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য অনুকুল থাকে। নতুবা এই খাদ্যই
জীবানুযুক্ত হয়ে মানব ধ্বংসের কারণ হতে পারে। সেই চৌদ্দশত বছর পূর্বে এই ক্ষুদ্র
জীবানু দেখার শক্তি মানুষের ছিল না। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সেগুলোর দিকে ইঙ্গিত করেছেন এবং সে সম্পর্কে কথা বলেছেন এবং ঐ বিপদজনক দিক বর্ণনা
করেছেন যা আমাদের স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক। কে তাঁকে জানিয়ে দিলেন?
গরম পাত্রে ফুঁক দেয়া নিষেধ কেন?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে কেন
পাত্রে ফুঁক দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন :
إذا شَرِبَ أحَدُكُمْ فَلا يَتَنَفَّسْ فى الْانَاءِ
(رواه البخاري)
অর্থ : যখন তোমাদের কেউ পান করবে তখন সে যেন পাত্রটিতে
ফুঁক না দেয়। (বুখারী)।
কেন রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গরম খাদ্য খাওয়ার সময় অথবা পান করার সময় সেই
খাদ্য অথবা পানীয় বস্তুতে ফুঁক দিতে নিষেধ করলেন? কি রয়েছে এই ফুৎকারে? এমনিই অযথা
এবং অযৌক্তিক কি এই নিষেধাজ্ঞা? না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ
অথবা নিষেধ কখনই অবান্তর বা অযৌক্তিক নয়, বরং তাঁর প্রতিটি নির্দেশ ও নিষেধে রয়েছে
মানব জাতির সার্বিক কল্যাণ ও সফলতা।
অবশ্যই যে হাওয়া মানুষের শরীর থেকে বের হয় তাতে এমন
পদার্থ রয়েছে যা মানব জাতির চরম ক্ষতি আনয়ন করে। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রকাশ
যে, যক্ষ্মা রোগ যে সকল মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে সেই মাধ্যমগুলোর প্রধান পন্থা
বা মাধ্যম হচ্ছে কোন পাত্রে ফুঁক দেয়া। বিশেষ করে গরমের কারণে মানুষ পাত্রে ফুঁক
দেয়। যক্ষ্মার জীবানুগুলো যত বেশী গরম পায় তত বৃদ্ধি পায়। আর যত গরম কম হয় তাতে এই
জীবানু মরে যায়। সুদানের অধিকাংশ অধিবাসী এই যক্ষা রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসাকগণ এ
ব্যাপারে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে এটা জানতে পেরেছেন যে, সুদান
অধিবাসীরা অত্যাধিক গরম পানীয় পান করে সীমালংঘন করত এবং পান করার সময় তাতে ফুঁক
দিয়ে পান করত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশের বিপরীত কাজ করার
কারণেই সুদানে যক্ষ্মা রোগের বিস্তার এতো বেশী।
বদ্ধ পানিতে প্রসাব করার কু-ফল কি?
لا يَبُوْلَنََّ أحَدُكُمْ فى الْمَاء الدَّائمِ
الَّذِي لا يَجْرى ثُمَّ لا يَغْتَسِلْ فيه (رواه البخاري ومسلم وابو داود
والترمذى)
অর্থ : অবশ্যই তোমাদের কেউ সেই বদ্ধ পানিতে (যা
প্রবাহমান নয়) প্রসাব করবে না, যে পানিতে কিছুক্ষণ পর গোসল করবে। (বুখারী, মুসলিম,
আবূ দাউদ, তিরমিযী)।
চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রকাশ করছে যে, বেলহারজিয়া জীবানু
বদ্ধ পানিতে জন্ম ও বিস্তার লাভ করে এবং তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষ তখনই
আক্রান্ত হয় যখন এই পানি দিয়ে অযূ বা গোসল করা হয়।
কুকুরের লালাযুক্ত পাত্র মাটি দিয়ে পরিস্কার করতে হবে
কেন?
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
إذا وَلَغَ الكَلْبُ فى إنَاء أحَدِكُمْ
فَلْيَغْتَسِلْهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ وَ إحْديهُنَّ بِالتُّرابِ (رواه ابن ماجة)
অর্থ : যদি তোমাদের কারো পাত্রে কুকুর মুখ দেয় সে যেন
উক্ত পাত্রটি সাতবার ধৌত করে, তার মধ্যে একবার মাটি দিয়ে। (ইবনে মাজাহ)।
প্রশ্ন হচ্ছে : কেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম কুকুরের লালাযুক্ত পাত্র পরিস্কার করার জন্য মাটির শর্ত সংযুক্ত
করলেন? এই হাদীসকে সামনে রেখে লন্ডনের এক ব্যক্তি কিছু দিন পূর্বে পরীক্ষা
চালিয়েছেন। তার কল্পনা ছিল, এই হাদীস থেকে কিছু ত্র“টি বের করবেন। বর্তমান যুগ
আধুনিক যুগ। এ যুগে অত্যাধুনিক কিছু কিছু জিনিস রয়েছে যা দিয়ে পরিস্কার করলে হয়ত
মাটির প্রয়োজন হবে না। তিনি একটি পাত্রে কিছু খাদ্য রেখে তা কুকুরকে দিলেন।
কুকুরটি তা খাওয়ার পর অনুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়ে তা পরীক্ষা করে দেখেন যে, উক্ত
পাত্রটির মধ্যে অসংখ্য বিষাক্ত জীবানু রয়েছে। তারপর সাবানসহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে
ভাল করে পরিস্কার করার পর আবার উক্ত যন্ত্র দিয়ে দেখেন যে, তাতে জীবানু রয়েই গেছে।
এমনি ভাবে বহু বার পরিস্কার করার পরও উক্ত পাত্রটি জীবানু মুক্ত হয়নি। অবশেষে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাতলে দেয়া পদ্ধতি অনুযায়ী মাটি দিয়ে
পরিস্কার করার পর দেখেন যে, উক্ত পাত্রটি সম্পূর্ণ ভাবে জীবানু মুক্ত হয়েছে। সঙ্গে
সঙ্গে তার হৃদয় প্রশস্ত হয়ে গেল। তিনি বললেনঃ এই তত্ত্ব একজন লেখা পড়া না জানা
ব্যক্তি থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে প্রকাশ পাওয়া এটাই প্রমাণ করে যে, তিনি তার নিজের
জ্ঞানলব্ধ বিবেক থেকে বর্ণনা করেননি, বরং মহান করুণাময় সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে
অহীর মাধ্যমে তাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এই দ্বীন সত্য দ্বীন, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
তিনি স্বপরিবারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন।
প্রকাশ থাকে যে, মাটির মাঝে এমন একটি পদার্থ রয়েছে যা
কুকুরের লালার বিষাক্ত ক্ষুদ্র জীবানুকে সমূলে ধ্বংস করতে পারে। কুকুরের লালায়
মানব জাতির জন্য ক্ষতিকারক জীবানু রয়েছে। এই মাটি সেই জীবানুও ধ্বংস করতে সক্ষম।
তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিলেনঃ
فَلْيَغْتَسِلْهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ وَ إحْديهُنَّ
بِالتُّرابِ
অর্থ : যে পাত্রে কুকুর মুখ দিয়েছে অথবা খেয়েছে অথবা
লালা লেগেছে সেই পাত্রটি যেন মাটি দিয়ে একবারসহ সর্বমোট সাতবার পরিস্কার করা হয়।
কুকুর মানুষের মাঝে সব চেয়ে বেশী রোগ জীবানু ছড়ায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন :
لا تُدْخِلُوْا الْكِلابَ الْبُيُوْتَ
অর্থ : তোমরা কুকুরকে বাড়ীতে প্রবেশ করাবে না।
এমন ধরনের নিষেধ থকা সত্বেও অনেক লোককে আমরা দেখতে পাই,
যারা পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রেমে অন্ধ হয়ে নিজেদের দয়াশীল মনে করে এই বলে যে, এমন
বুদ্ধিমান বন্ধুসুলভ ও বিশ্বস্ত জন্তু থেকে বিরত থাকতে বলা হলো কি করে? এ ধরনের
লোকদের গোচরে আমরা এক জার্মান মনীষীর লিখিত ও জার্মান এক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি
রচনা পেশ করতে চাই এই রচনায় কুকুর পালন করা ও কুকুরের সংস্পর্শে আসার কারণে যে
সমস্ত বিপদ অবশ্যম্ভাবী তা ব্যক্ত করা হয়েছে। রচনাটি এইঃ
বিগত কয়েক বছরে লোকদের কুকুর পালনের আগ্রহ খুব বেশী
বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে এর পরিণামে কি বিপদ ঘটতে পারে সেদিকে আলোকপাত করছি। লোকেরা
শুধু কুকুর পালন করেই ক্ষান্ত হয় না। তার সাথে খেলা করে, তাকে চুম্বন করে। উপরন্তু
কুকুরকে এমন ভাবে মুক্ত করে দেয়া হয় যে, ছোট বড় সকলেরই হাত চাটে। অনেক সময়
উদ্বৃত্ত খাবার নিজেদের পাত্রে বা থালায় করেই কুকুরের সামনে তুলে দেয়া হয়। এ
অভ্যাস এতই খারাপ যে, সুস্থ বিবেক ও সুরুচি সম্পন্ন ব্যক্তি তা গ্রহণ করতে
প্রস্তুত হয় না। তা পরিচ্ছন্নতার নিয়ম কানুনেরও পরিপন্থী। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের
দৃষ্টিতে বিচার করলে কুকুর পালন করা এবং তার সাথে খেলাধুলার কারণে যে বিপদ মানুষের
স্বাস্থ্য ও জীবনের উপর ঘনীভূত হয়ে আসতে পারে তাকে সামান্য ও নগন্য মনে করা
কিছুতেই উচিত হতে পারে না। অনেক লোক নিজের অজ্ঞতার জন্য চরম মাশুল দিতে বাধ্য হয়।
তার কারণ এই যে, কুকুরের দেহে এমন জীবানু রয়েছে যা এমন রোগ সৃষ্টি করতে পারে, যা
স্থায়ী এবং যা চিকিৎসা করে নিরাময় করা যায় না। কত লোক যে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে
জীবন দিতে বাধ্য হয় তা গণনা করে শেষ করা যায় না। এক ধরনের জীবানুর আকৃতি ফিতার
ন্যায়। তা মানব দেহে খোঁস পাঁচড়ার ন্যায় রোগ সৃষ্টি করে। এ ধরনের জীবানু গৃহপালিত
পশু ও বিশেষ করে শুকরের দেহেও পাওয়া যায়। কিন্তু লালিত পালিত হয়ে বড় হওয়ার প্রবণতা
কেবল কুকুরের দেহের জীবানুর মধ্যেই রয়েছে।
এসব জীবানু মানুষের কলিজায় প্রবেশ করে। আর তথায় নানা
ভাবে আত্মপ্রকাশ করে। তা অনেক সময় ফুসফুস, ডিম্ব, গুর্দা ও মস্তকে প্রবেশ করে। তখন
সেগুলোর আকৃতি অনেকটা পরিবর্তিত হয়ে যায়। এমন অবস্থা দেখা দেয় যে, বিশেষজ্ঞগণও তা
চিিহ্নত করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। সে যাই হোক, এ জীবানুর কারণে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়
তা দেহের যে কোন অংশেই হোক না কেন স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর ও মারাত্মক। এ
সব জীবানুর কোন চিকিৎসা আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। জার্মান চিকিৎসাবিদ নুল্লর বলেছেন :
কুকুরের জীবানুর কারণে মানব দেহে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয় তার সংখা শতকরা একের কম নয়।
আর কোন কোন দেশে শতকরা বারো পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগ প্রতিরোধ
করার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে, এ জীবানুগুলোকে কুকুরের দেহ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ করে
রাখা, তাকে ছড়িয়ে পড়তে না দেয়া।
বিধর্মী চিন্তাবিদদের গবেষণামূলক বর্ণনা সম্মুখে রেখে
বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে যে, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে
কুকুরের সাথে ঘনিষ্ট মেলামেশা করতে নিষেধ করেছেন তা বাস্তব ও যুক্তি ভিত্তিক এবং
একান্তই বিজ্ঞান সম্মত। এ বিধানে বিশ্ব মানবতার জন্য যে কি বিরাট কল্যাণ নিহিত
রয়েছে তা স্পষ্ট অনুধাবন করা যায়।
বস্তুত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন
একজন উম্মী। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর উপস্থাপিত শিক্ষা বর্তমানে এই চৌদ্দ শত বছর
পরের অতি আধুনিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্যের সাথে যে কতখানি সামঞ্জস্যপূর্ণ তা
দেখলে বিস্ময়াভিভূত হতে হয়। এ সত্য দেখার সাথে সাথে আমাদের কন্ঠে স্বতঃস্ফূর্ত
ভাবে কুরআন মাজীদের এ ঘোষণা ধ্বনিত হয়ে উঠেঃ
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى ﴿৩﴾ إِنْ هُوَ إِلَّا
وَحْيٌ يُوحَى ﴿سورة النجم৪﴾
অর্থ : রাসূল নিজের ইচ্ছামত কিছুই বলেন না, যা বলেন তা
অহী ভিন্ন আর কিছু নয়। (সূরা নজম, ৫৩ : ৩ ও ৪ আয়াত)।
কিভাবে মধুতে রোগের প্রতিকার রয়েছে?
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস এবং
তাঁর কাজকর্ম থেকে উপলদ্ধি করা যায় যে, তিনি যেমন রোগের বর্ণনা দিয়েছেন তেমনি
সেগুলির চিকিৎসার বর্ণনা দিয়েছেন যা ‘তিব্বে নববী’ নামে প্রসিদ্ধ। পূর্ববর্তী চিকিৎসকগণ
এর উপরেই নির্ভর করে চিকিৎসা সংক্রান্ত অনেক পুস্তক রচনা করেছেন।
রোগ বা ব্যাধি
দুই প্রকার। হৃদয়ের ব্যাধি ও শরীরের ব্যাধি। অতএব চিকিৎসাও দুই ভাবে হয়ে থাকে।
হৃদয়ের চিকিৎসা ও শরীরের চিকিৎসা। হৃদয়ের ব্যাধির চিকিৎসা কুরআন তেলাওয়াত ও নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত দোয়া সমূহের মাধ্যমে হয়ে থাকে,
আর শরীরের ব্যাধির চিকিৎসা হল ওষধ, পথ্য
যা খাদ্যদ্রব্য থেকে তৈরী করা হয়েছে। প্রাকৃতিক ওষধের মধ্যে বিশেষ ভাবে উলে¬খযোগ্য
কালজিরা, পিয়াজ, রসুন ও মধু।
মধু হচ্ছে সুস্বাদু গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য নির্যাস। মধু
যেমন বলকারক খাদ্য এবং রসনার জন্য আনন্দ ও তৃপ্তিদায়ক তেমনি শরীরের জন্যও অত্যন্ত
উপকারী। রোগ ব্যাধি নিরাময়ে ব্যবস্থাপত্র হিসাবে প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন
ব্যাধিতে মধু ব্যবহার হয়ে আসছে। কুরআন ও হাদীসে প্রমাণীত যে, মধু একটি
গুরুত্বপূর্ণ ওষধ; এতে কোনই সন্দেহ নেই এবং বিভিন্ন চিকিৎসার ক্ষেত্রে মধুর বিশেষ
বৈশিষ্ট রয়েছে। মধুর নিরাময় শক্তি বিরাট ও স্বতন্ত্র ধরনের। আল্লাহর হুকুম, রহমত ও
কুদরতে মধু প্রত্যেক রোগের ওষধ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
وَأَوْحَى رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنِ اتَّخِذِي مِنَ
الْجِبَالِ بُيُوتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ ﴿৬৮﴾ ثُمَّ كُلِي مِنْ
كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا يَخْرُجُ مِنْ بُطُونِهَا
شَرَابٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ إِنَّ فِي ذَلِكَ
لَآَيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ ﴿النحل৬৯﴾
অর্থ : আপনার পালনকর্তা মধু মক্ষিকাকে আদেশ দিলেন :
পর্বত গাত্রে, বৃক্ষে এবং ডালে গৃহ তৈরী কর। এরপর সর্ব প্রকার ফল থেকে আহার করা
এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রংয়ের পানীয়
নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল
সম্প্রদায়ের জন্য নির্দশন রয়েছে। (সূরা নাহল, ১৬: ৬৮ ও ৬৯ আয়াত)।
এই পবিত্র আয়াতে আমরা দেখতে পাই যে, আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন মধু ও মধুমক্ষিকাকে বিেেশষ মর্যাদা দিয়েছেন এবং মধুতে মানুষের জন্য রোগের
প্রতিকার রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে
প্রমাণিত যে, অনেক রোগ নিরাময়ে মধু অতি আশ্চর্যজনক ফলকারক। অপর দিকে নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসসমূহ মধু ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
عَلَيْكُمْ بِالشِّفَاءَيْنِ العَسَلِ وَالْقُرْآنٍِ
অর্থ : তোমরা কুরআন ও মধু দিয়ে ব্যাধি নিরাময়ের
ব্যবস্থা করবে। বুখারী ও মুসলিম শরীফে আবু সাঈদ আল খুদরী রাঃ হতে বর্ণিত রয়েছে :
إنَّ رجُلاً أتى إلى النَّبىِّ صلى الله عليه وسلّمَ
فقَالَ إنَّ أخِى يَِشْتَكي بَطْنَهُ فَقَالَ صلى الله عليه وسلّمَ اسْقِهِ
عَسَلاً فَذَهَبَ ثُمَّ رَجَعَ فقَال : قَدْ سَقَيتُهُ فَلَمْ يُغْنِ عَنْهُ
شَيئاً مَرَّتًينِ أوْ ثًلاثًا كلُّ ذلك يقُوْل له اسقه عَسَلا فقال له في الثالثة
أو الرابعة صدق الله وكذب بطن أخيكَ (رواه البخاري ومسلم)
অর্থ : এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের নিকট এসে বলল : আমার ভাইয়ের পেটের অসুখ হয়েছে। তিনি বললেন : তুমি তাকে
মধু পান করাও। সে চলে গেল। তারপর ফিরে এসে বলল : আমি তাকে মধু পান করিয়েছি, তাতে
তার কোন উপকার হয়নি। এবারও তিনি বললেনঃ তুমি তাকে মধু পান করাও। এভাবে দুইবার অথবা
তিনবার বলা হল। প্রত্যেকবারেই তিনি মধু পান করানোর কথা বললেন। অতঃপর তৃতীয় অথবা
চতুর্থ বারে তিনি তাকে বললেন :
صدق الله وكذب بطن أخيكَ
অর্থ : আল্লাহ সত্য বলেছেন, আর তোমার ভাইয়ের পেট
মিথ্যা। আল্লাহ বলেন :
فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ
তাতে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার রয়েছে। (সূরা নাহল,
১৬ : ৬৯ আয়াত)। এরপর রোগীকে আবার মধু পান করানো হলে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
لكلِّ داءٍ دواءٌ فاذا أصابَ دَواء الداء برئ بإذن الله
عزّ وجَلَّ
অর্থ : প্রত্যেক রোগের ঔষধ রয়েছে। যখন কেহ নির্দিষ্ট
রোগের সঠিক ঔষধ পেয়ে যায় তখন আল্লাহর হুকুমে সে রোগ থেকে মুক্তি লাভ করে।
বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে, মধুর
মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী জীবানু নাশক ক্ষমতা। এই ক্ষমতার নাম “ইনহিবিন”। মধুর সাথে
কোন তরল পদার্থ মিশ্রিত হলে তা তরলীভূত হয়ে পড়ে। গ্লুকোজ অক্সিডেজ নামক বিজারকের
সাথে মধুর বিক্রিয়া ঘটলে গ্লুকোনা ল্যাকটোন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডে পরিণত হয়। এই
বিক্রিয়ায় জীবানু ধ্বংস হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, রোগ সৃষ্টিকারী ব্যকটেরিয়া মধুতে
ডুবিয়ে দিলে মারা যায়। মধু ইষ্টের (ণবধং:) বংশ বৃদ্ধি ঘটতে দেয় না। এ কারণে খাঁটি
মধু বোতলজাত করে অনেকদিন রাখা যায়। মধু একটি উৎকৃষ্ট প্রিজার্ভেটিভ বা সংরক্ষক।
চিকিৎসা শাস্ত্রের এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদীতে ঔষধী গুণ বেশী দিন ধরে
রাখার জন্য ঔষধের সাথে এলকোহল বা রেক্টিফাইড স্পিরিট মিশানো হয়। ইউনানীতে
তৎপরিবর্তে মিশানো হয় মধু। বার্মার বৌদ্ধ সন্ন্যাসীগণ শবদাহ করার পূর্বে মধুতে
ডুবিয়ে রেখে সংরক্ষণ করতেন। মিসরে গিজেহ পিরামিডের গহ্বর মধু দ্বারা পূর্ণ করা
ছিল। সারা পৃথিবীতে কাশির ঔষধ ও অন্যান্য মিষ্টি দ্রব্য তৈরী করতে প্রতিবছর কম
পক্ষে ২০০ টন মধু ব্যবহৃত হয়। খুসখুসে কাশিতে মধুর সাথে লেবুর রস উপশমদায়ক। মাতাল
রোগীদেরকে স্থিরাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মধু কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
গ্লুকোজের ঘাটতিতে হৃদপেশীর শক্তি কমে যায়। মধুর
ব্যবহারে এ ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম। ধমনী সম্প্রসারণ, করোনারী শিরার রক্ত চলাচল
স্বাভাবিক করতে মধুর ভূমিকা অপরিসীম। নিয়মিত মধু পান করলে রক্ত কণিকার সংখ্যা ২৫
থেকে ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। কাজেই এনিমিয়া আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে মধু উত্তম পানীয়।
হাঁপানী রোগে মধুর স্থান সবার উপরে। প্যারিসের “ইনিষ্টিটিউট অফ বী কালচার” এর
পরিচালক রিমে কুভেন বলেন : রক্তক্ষরণ, রিকেট, ক্যান্সার এবং শারীরিক দুর্বলতায়
মধুর অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। চিনির পরিবর্তে শিশুদেরকে মধু খেতে দেয়া হয়। চিনি
দন্তক্ষয় ঘটায়, কিন্তু মধু তা করে না। মধু ব্যবহারে নবজাতক স্বাস্থ্যবান ও সবল হয়ে
ওঠে।
এক চামচ বাদাম তেলের সাথে দুই চামচ মধু মিশিয়ে কাটা বা
পোড়ার ক্ষতে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। ইনফেকশন, সাধারণ ঘা, ত্বকের আলসার,
পচা-গলা ঘা মধু ব্যবহারে দ্রুত আরোগ্য লাভ হয়। নারীদের গোপন অঙ্গের অসহনীয়
চুলকানীতে মধুর ব্যবহার অতীব কার্যকরী।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
﴿النحل৬৯﴾
অর্থ : এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।
(সূরা নাহল, ১৬ : ৬৯ আয়াত)।
বিজ্ঞান আমাদেরকে আরও জানতে সাহায্য করে যে, ফুলের
পুস্পমঞ্জরী থেকে মৌমাছিরা মধু আরোহন করে। মাত্র ১০০ গ্রাম মধু আরোহন করতে
মৌমাছিকে প্রায় দশ লক্ষ ফুলে ভ্রমণ করতে হয়। ফুল থেকেই ফলের জন্ম হয়। মৌমাছিরা
ফুলের পরাগায়নে সহায়তা করে। ফুলে ভ্রমন করলেও পক্ষান্তরে ফলায়নেই সহায়তা করে থাকে।
একটি পূর্ণ বয়স্ক মৌমাছি তার দেহের ওজনের পরিমাণের এক চতুর্থাংশ থেকে দুই
চতুর্থাংশ পর্যন্ত পুস্পরস সংগ্রহ করে পাকস্থলীতে ধারণ করে এবং ১২০ থেকে ১৪০ বার
উদগীরণ ও গলধঃকরণ করে। ফলে পাকস্থলীতে জটিল প্রক্রিয়ায় মধু তৈরী হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
يَخْرُجُ مِنْ بُطُونِهَا شَرَابٌ مُخْتَلِفٌ
أَلْوَانُهُ ﴿النحل৬৯﴾
বিজ্ঞানীরাও পরীক্ষা করে দেখেছেন, মধুর রং ও উৎপাদনে
পার্থক্য থাকে। স্বাদ, সৌরভ এবং ঘ্রানও হয় ভিন্ন। মধুর রং পানির মত বা সোনালী ঘন লাল।
কোন কোন ক্ষেত্রে মধুর রং হালকা ধরণের। মধুর মূল উপাদনগুলি হচ্ছে পানি, শর্করা বা
চিনি, এসিড, খনিজ, আমিষ এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। শর্করাগুলোর মধ্যে থাকে
লেকটোলেজ, ডেকট্রোজ, মালটোজ, ডাইম্যাকারাইড এবং কিছু উচ্চ মানের চিনি। মধুতে যে সব
এসিড পাওয়া যায় সেগুলোর নাম সাইট্রিক, ম্যালিক, বুটানিক, গ¬ুটামিক, স্যাক্সিনিক,
ফরমিক, এসিটিক, পাইরোগ¬ুটামিক এবং এমাইনো এসিড।
মধুতে মিশ্রিত খনিজ দ্রব্যগুলো হচ্ছে পটাসিয়াম,
সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, সিলিকা ম্যাগনেসিয়াম, ক্লোরাইড, সালফেট, ফসফেট, কপার, আয়রন,
ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি। থায়ামিন, রিভোফ্লোবিন, ভিটামিন কে এবং ফলিক এসিড নামক
ভিটামিন মধুতে বিদ্যমান থাকে।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মধু খাদ্য হিসাবেও গুরুত্বপূর্ণ।
দুধের পরেই আদর্শ খাদ্য হিসাবে মধুর স্থান। মধু সহজেই পরিপাক হয়। শর্করা থাকায় তা
সহজেই শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। মধুর ক্যালরী উৎপাদন ক্ষমতা অত্যন্ত বেশী। প্রতি
কেজী মধুতে ৩১৫৪ থেকে ৩৩৫০ ক্যালরী পরিমাণ শক্তি থাকে।
মধু শক্তি যোগানোর পাশাপাশী ভিটামিন, খনিজ ও এনজাইম
সরবরাহ করে। মধু থেকে প্রসাধনীও তৈরী হয়। ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধুর ভূমিকা খাট
করে দেখার অবকাশ নেই। যে সমস্ত ভিটামিন মানুষের শরীরে প্রয়োজন, মধুতে সেই সমস্ত
ভিটামিন রয়েছে। যেমন ভিটামিন এ, বি, সি ইত্যাদি। মধু নিঃসন্দেহে উত্তম ও উপকারী
পানীয়। মধু ও মধুমক্ষিকা আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। আল্লাহর আদেশে বিশেষ কৌশলে মধু
উৎপাদনকারী মৌমাছিও তাই আল্লাহর এক প্রিয় সৃষ্টি। আমরা যদি মধুর মূল উপাদানগুলোর
প্রতি লক্ষ্য করি যার জন্য আল্লাহ এটা খাস করেছেন এবং যার জন্য আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন মধুকে মানুষের শেফা হিসাবে নির্ধারণ করেছেন তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, মধুতে
রয়েছে সুগার যার মিষ্টত্ব তৈরীকৃত সুগারের চেয়ে অনেক গুন বেশী। মধুতে প্রায় পনের
প্রকার সুগার রয়েছে। যেমন গ্লুকোজ, সাকরোজ, ফ্রকটজ, মালটোজ ইত্যাদি। এগুলো
প্রতিটিই দ্রুত রক্তের সাথে মিয়ে যায় এবং সহজেই পরিপাক হয়। অতএব এক কথায় আমরা
স্বীকার করতে বাধ্য যে, মধুতে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার রয়েছে।
অতিরিক্ত আহার করা নিষেধ কেন?
ইসলামে মানব জীবনের সকল দিকের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে যা
মানব জাতির সার্বিক কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে। শরীরের জন্য খাদ্য প্রয়োজন। তাই আমরা
সকলেই খাদ্য গ্রহণ করি। উত্তম সুস্বাদু খাদ্য পরিমাণ মত আহার করার ব্যাপারে ইসলামে
কোন নিষেধ নেই। নিষেধ শুধু অতিরিক্ত আহার ও অপচয়ের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা বলেন :
كُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا
يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ ﴿الأعراف৩১﴾
অর্থ : পানাহার কর, কিন্তু অপচয় কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ
অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আরাফ, ৭ : ৩১ আয়াত)।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
مَا مَلأَ ادَمِىٌّ وعَاءً شَرًّا مِنْ بَطْنِهِ
بِحَسَبِ ابن آدمَ لُقَيمَتٌ يقمْنَ صُلْبَه فانْ لَمْ يَفْعَلْ فَثُلُثٌ
للطَّعامِ وَثُلُثٌ للشَّرابِ وَثُلُثٌ للتَنَفُّسِ (رواه ابن ماجه)
অর্থ : মানুষ তার পেটের ন্যায় খারাপ অন্য কোন
পাত্রপূর্ণ করেনি। অথচ আদম সন্তানের কোমর সোজা রাখার জন্য কয়েক লোকমা খাদ্যই
যথেষ্ট। আর যদি তা না করতে পারে তাহলে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক
তৃতীয়াংশ পানির জন্য, আর বাকী এক তৃতীয়াংশ শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে।
(ইবনে মাজাহ)।
তিনি আরও বলেছেন : কাফির সাত আঁতে আহার করে অর্থাৎ বেশী
পরিমাণ খায়, আর মু’মিন এক আঁতে আহার করে অর্থাৎ কম খায়। (মিশকাত)।
আরও বর্ণিত আছে :
نحن قَوْمٌ لا نأكُلُ حَتّى نَجُوْعَ وإذا أكَلْنا لا
نَشْبَعُ
অর্থঃ আমরা এমন এক জাতি; ক্ষুধা না লাগা পর্যন্ত খাই
না, আর যখন খাই তখন পরিতৃপ্ত ভাবে নয় অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাই না।
কেন নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেতে নিষেধ করলেন এবং
অতিরিক্ত আহারে ক্ষতিই বা কি? খাদ্য বিশেষজ্ঞগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন যে,
৮০% রোগ ব্যাধি খাবারের কারণেই হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি প্রয়োজনের অতিরিক্ত আহার করে
সেই খাদ্য যেমন হজম করতে বড় ধরণের শক্তি অপচয় হয় অর্থাৎ অতিরিক্ত আহার হজম শক্তিকে
ক্লান্ত করে ফেলে এবং ক্লান্ত হয়ে যায় সেগুলো বের করতেও। এমন কি পায়খানা ও
প্রস্রাবের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়।
ডাঃ এ এইচ এম আজহারুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন : অধিক
ভোজনের প্রাথমিক ফল হল ডায়াবেটিস। কেননা বেশী খাওয়ার কারণে লালগ্রন্থিকে বেশী কাজ
করতে হয়। এ কারণে আভ্যন্তরিণ আদ্রতা রস (রহংঁষরহ) কমে যায় এবং রক্তে চিনির (ংঁমবৎ)
পরিমাণ বেড়ে যায়। অধিক ভোজন রক্তের চাপ বৃদ্ধির আর একটি অত্যাবশ্যকীয় কারণ। কেননা
ডায়াবেটিস এবং ব্লাড প্রেসার পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। অধিক ভোজনের কারণে প্যারালাইসিস
হয়ে থাকে। এতে রক্তবাহী শিরাগুলি সংকীর্ণ হয়ে যায়। ফলে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়।
এ ভাবে যখন শিরাগুলি সংকীর্ণ হয়ে পড়ে তখন সংশি¬ষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অনুভূতিহীন হয়ে
যায়। আর এ অবস্থাটি মস্তিস্কের কোন অংশে হঠাৎ প্রকাশ পেলে মানুষ প্যারালাইসিসে
আক্রান্ত হয়।
শিরার সংকীর্ণতা হৃদরোগের অন্যতম কারণ। কেননা শিরার
চুড়ান্ত সংকীর্ণতা হৃদপিন্ডের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়। এমতাবস্থায় হৃদপিন্ডের
বিবর্তন হওয়া অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। অধিক ভোজনের ফলেই অসময়ে বার্ধক্যে পতিত হয়ে
থাকে। কেননা বেশী খেলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি যথাযথভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে মানুষ
নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই দুর্বল বা শক্তিহীন হয়ে যায় এবং তাকে অতি অল্প বয়সেই
বৃদ্ধ বলে মনে হয়।
অধিক ভোজনের কারণে শরীর মোটা বা স্থুল হয়ে থাকে। এই
অবস্থায় বহুবিধ রোগ ব্যাধি হয়ে থাকে। ইড়হব গধৎৎড়ি ঢ়ধরহ বা অস্থি মজ্জার ব্যাথা,
লড়রহঃ ঢ়ধরহ ইত্যাদি হয়ে থাকে।
সাধারণতঃ শহরবাসীদের মধ্যে যারা অধিক ভোজন করে অপচয় করে
তাদের শেষ বয়সে এ ধরনের কঠিন ব্যাধি পরিলক্ষিত হয়। অপর দিকে গ্রামবাসীদের মধ্যে
যারা অল্প ও স্বাভাবিক আহারে তুষ্ট থাকে এবং এটা অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছে তারা এ সমস্ত
রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকে। কেননা তাতে কোলেষ্টরেলের আধিক্য থাকে না এবং ঐ সমস্ত
অতিরিক্ত বস্তুও থাকে না যা শরীরকে ক্লান্ত করে থাকে। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে,
মানুষের জন্য কোমর সোজা রাখার জন্য কয়েক লোকমা খাদ্যই যথেষ্ট। আর একান্তই যদি বেশী
খাওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে তাহলে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্য, এক তৃতীয়াংশ পানি দ্বারা
পূর্ণ করে বাকী এক ভাগ শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখতে হবে যা একমাত্র রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরই নির্দেশ ছিল। প্রফেসর রিচার্ড বার্ড গবেষণার
পর প্রকাশ করেছেন যে, বেশী খাদ্য খেলে নিম্ন লিখিত রোগ ব্যাধির সৃষ্টি হয়ঃ
১। মস্তিস্কের ব্যাধি।
২। চক্ষুরোগ।
৩। জিহবা ও গলার।
৪। বক্ষ ও ফুসফুসের ব্যাধি।
৫। হৃদ রোগ।
৬। যকৃত ও পিত্তের রোগ।
৭। ডায়াবেটিস।
৮। উচ্চ রক্ত চাপ।
৯। মস্তিস্কের শিরা ফেটে যাওয়া।
্১০। দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা
১১। অর্ধাঙ্গ রোগ।
১২। মনস্তাত্তিক রোগ।
১৩। দেহের নিম্নাংশ অবশ হয়ে যাওয়া।
তাই বর্তমানে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বার বার এ কথার উপর জোর
দিচ্ছে যে, কম আহার করুণ, বেশী দিন বাঁচুন।
ইসলাম সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের ধর্ম
সত্য সুন্দর ও কল্যাণের ধর্ম ইসলাম। কেননা ইসলামের
পুরোটাই সত্য, সুন্দর ও কল্যাণ। তার মধ্যে কোন অসত্য নেই। নেই কোন অসুন্দর। নেই
তাতে কোন ক্ষতি। আর ইসলাম ছাড়া প্রত্যেকটাই হক বাতিলের দ্বারা, ভাল ক্ষতি দ্বারা,
সুন্দর খারাপ দ্বারা সংমিশ্রিত।
ইসলাম সত্য সুন্দর ও কল্যাণের ধর্ম। কেননা মাবুদ যিনি
আমাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করছেন তিনি হচ্ছেন প্রত্যেক ভাল কাজের কর্তা। তিনি
হচ্ছেন সুন্দর, তাই তিনি সুন্দরকে ভালবাসেন। তিনিই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা, তিনি
আমাদের রব / প্রতিপালক, তাঁর থেকে সমস্ত কল্যাণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম, যাকে আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে, তিনি সত্য। সমস্ত ভাল কাজের
বৈশিষ্ট্যমন্ডিত তিনি। এমনকি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর সম্পর্কে বলেনঃ
وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ ﴿৪القلم﴾
অর্থ : আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা কলাম,
৬৮: ৪ আয়াত)।
তাঁর সম্পর্কে তাঁর সহধর্মিনী যিনি তাঁর ভিতর বাহির
অবগত আছেন, তিনি বলেন :
كَانَ خُلُقُهُ القُرآن (رواه أحمد ২৩৪৬০)
অর্থ : তাঁর চরিত্র ছিল আল কুরআন। (আহমাদ, ২৩৪৬০)
তিনি ছিলেন সত্যবাদী বিশ্বস্ত নম্র, ভদ্র, সাহসী,
ধৈর্যশীল। তিনি সত্যের ব্যাপারে ভৎর্সনাকারীর ভৎর্সনার পরওয়া করতেন না। তার চেহারা
ছিল সুন্দর। আত্মাও ছিল পবিত্র, কথা ছিল মাধুর্যপূর্ণ।
পবিত্র কুরআন যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এটা এমন একটি
কিতাব যা সত্য বলে সত্যের দিকে পথ প্রদর্শন করে। কল্যাণ কাজে আদেশ করে এবং অকল্যাণ
কাজ থেকে নিষেধ করে। আর এতে বর্ণিত হয়েছে প্রতিটি কাজ সুন্দর ভাবে।
وَبِالْحَقِّ أَنْزَلْنَاهُ وَبِالْحَقِّ نَزَلَ
(الاسراء ১০৫)
অর্থ : আমি সত্যসহ এ কুরআন নাযিল করেছি এবং সত্যসহ এটা
নাযিল হয়েছে। (সূরা ইসরা, ১৭ : ১০৫ আয়াত)।
لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا
مِنْ خَلْفِهِ تَنْزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ ﴿৪২فصلت﴾
অর্থ : এতে মিথ্যার প্রভাব নেই। সামনের দিক থেকেও নেই
এবং পিছনের দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত, আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।
(সূরা ফুসসিলাত, ৪১ : ৪২ আয়াত)।
ذَلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى
لِلْمُتَّقِينَ ﴿البقرة২﴾
অর্থ : এই সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকিনের
জন্য পথ প্রদর্শনকারী। (সুরা বাকারা, ২: ২আয়াত)।
إِنَّ هَذَا الْقُرْآَنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ
أَقْوَمُ (الاسراء ৯)
অর্থ : এই কুরআন এমন পথ প্রদর্শন করে যা সর্বাধিক সরল ।
(সূরা ইসরা, ১৭: ৯ আয়াত)।
وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ صِدْقًا وَعَدْلًا (الانعام
১১৫)
অর্থ : আপনার প্রতিপালকের বাক্য পূর্ণ সত্য ও সুষম।
(সূরা আনআম, ৬: ১১৫ আয়াত)।
আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী, তিনি মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান
করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন :
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آَدَمَ (الاسراء ৭০)
অর্থ : আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। (সূরা
ইসরা, ১৭ : ৭০ আয়াত)।
তাই শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন স্বরুপ সকল সৃষ্টির কল্যাণ
সাধনের জন্য মানুষকে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। কারণ শুধুমাত্র শক্তি অর্জন করলেই
শ্রেষ্ঠত্ব অর্জিত হয় না। বরং অর্জিত শুভ শক্তিকে সত্য, সুন্দর কল্যাণ ও শান্তি
প্রতিষ্ঠার পথে সঠিক ভাবে ব্যবহার করলেই কেবল প্রকৃত শ্রেষ্ঠত্ব অর্জিত হতে পারে।
আল্লাহ তা’আলা মানুষকে ভালমন্দ বিচারের ক্ষমতা অর্থাৎ বিবেক দান করেছেন এবং সেই
সাথে সত্য ও শান্তির পথে সঠিক ভাবে চলার জন্য যুগের চাহিদা অনুযায়ী নবী ও তার
রাসূলদের মাধ্যমে তার ঐশী বাণী সমূহকে সরাসরি মানব জাতির সামনে পেশ করেছেন। বুদ্ধি
ও বিবেকের সহায়তায় ঐশী বাণী সমূহের মর্মার্থ অনুধাবন এবং সেই অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন
করতে পারলেই একজন মানব সন্তান প্রকৃত মানব হিসাবে গড়ে উঠতে সক্ষম হয়। আর এ সক্ষমতা
অর্জনের মাধ্যমে কেবল বিভ্রান্তির নাগপাশ থেকে বেরিয়ে এসে ইহকালিন ও পরকালীন চুড়ান্ত
লক্ষ্যে উপনীত হওয়া সম্ভব। স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর
নাযিলকৃত আল কুরআন হল চিরন্তনভাবে একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ ও সর্বোত্তম জীবন বিধান।
ইহকালীন ও পরকালীন শান্তি ও চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য আল কুরআন ও সুন্নাতের
অনুসরণ ও বাস্তবায়ন ব্যতীত আর কোন বিকল্প নেই।
পরিশেষে ঘোষণা করছি, সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি
আমাদেরকে স্বীয় সত্য সুন্দর ও কল্যাণের ধর্ম ইসলামে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আমরা কখনও
এ পথে পেতাম না, যদি তিনি আমাদেরকে পথ প্রদর্শন না করতেন।
বাঁচতে হলে জানতে হবে(সুস্থ থাকার উপায় জানুন)
ReplyDeletehttps://www.facebook.com/groups/1740333946192244/