সর্বপ্রথম আমি আল্লাহর প্রশংসা আদায় করছি, যিনি আমাকে সঠিক পথ দিয়েছেন,
সাথে সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দুরূদ পেশ করছি, যার অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ।ক্র | শিরোনাম | পৃষ্ঠা |
১ | ভূমিকা | |
২ | তিনটি মূলনীতি, যা জানা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর একান্ত কর্তব্য |
|
৩ | দীন-এর বুনিয়াদ বা ভিত্তি | |
৪ | লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (কালেমা তাইয়্যেবা) মেনে চলার শর্তাবলী | |
৫ | ইসলাম বিনষ্টকারী বস্তুসমূহ | |
৬ | তাওহীদ বা একত্ববাদ-এর তিন অংশ | |
৭ | তাওহীদের বিপরীত হলো শির্ক | |
৮ | কুফুরীর প্রকারভেদ |
|
৯ | মুনাফেকীর প্রকারভেদ |
|
১০ | তাগুত-এর অর্থ এবং এর প্রধান প্রধান অংশ |
|
আল্লাহ তা‘আলার খাস রহমত যে তিনি তাঁর এ বান্দাকে দীনি ইলম শিক্ষা
করার তাওফীক দিয়েছেন তার জন্য বলি আলহামদুলিল্লাহ। দীনি জ্ঞান অর্জনের তাওফীক হওয়া যেমনি
সৌভাগ্যের ব্যাপার তেমনি তা দায়িত্বও বটে। আমার জাতি যারা বাংলা ভাষাভাষী তারাই
আমার গুরুত্বের বেশি হকদার। তাদের হিদায়াতের জন্য কিছু করা উচিৎ। পৃথিবীর এক
বৃহত্তম জনগোষ্ঠী এ ভাষায় কথা বলে। তাদের সংখ্যা একশত নব্বই মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। তাদের মধ্যে রয়েছে সঠিক আকীদা
চর্চার অভাব। তাই এ বইটি তাদের সামনে তুলে ধরার প্রচেষ্টা। যা আয়তনে ছোট হলেও
আকীদার মৌলিক বিষয়সমূহে সমৃদ্ধ।
হিজরি ১৪১৪ সালেই প্রথম এর
অনুবাদ করি এবং নিজস্ব প্রচেষ্টায় আমার শ্রদ্ধেয় আব্বাজানের লাইব্রেরি থেকে ছাপানো
এবং বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করি।
ইতোমধ্যে এর সমস্ত কপি নিঃশেষ হওয়ায়
দ্বিতীয়বারের মত ছাপানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি এবং উদ্যোগ গ্রহণ করি। পূর্বের
সংস্করণের চেয়ে বর্ধিতভাবে বর্তমান সংস্করণে এর মধ্যকার আয়াতসমূহকে সূরার দিকে
নির্দেশ করি, আর হাদীসসমূহকে যে সমস্ত
মুল গ্রন্থ থেকে তা নেওয়া হয়েছে তার দিকে নির্দিষ্ট করি। আর কিছু বানানগত
ভুল-ত্রুটি শুদ্ধ করি।
আল্লাহ তা‘আলা আমার এ প্রচেষ্টা কবুল করুন এবং হাশরের মাঠে আমার
জন্য নাজাতের ওসীলা বানান। আমীন॥
ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
তিনটি মূলনীতি
যা জানা প্রত্যেকমুসলিম
নর-নারীর ওপর একান্ত কর্তব্য
মূলনীতিগুলো হলো : প্রত্যেকে
১। রব বা
পালন কর্তা সম্পর্কে জানা।
২। দীন সম্পর্কে জানা।
৩। নবী
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জানা।
রবকে জানার পদ্ধতি :
যদি প্রশ্ন করা হয়, তোমার রব বা পালনকর্তা কে?
তখন উত্তরে বলবে: আমার রব
হলেন আল্লাহ, যিনি আমাকে এবং সমস্ত সৃষ্টি জগতকে
তার অনুগ্রহে লালন করছেন, তিনিই আমার একমাত্র উপাস্য,
তিনি ব্যতীত আমার অপর কোনো মা‘বুদ বা উপাস্য নেই।
দীন জানার পদ্ধতি:
যদি তোমাকে প্রশ্ন করা হয়, তোমার দীন কী?
উত্তরে বল: আমার দীন হলো
ইসলাম, যার মানে- আল্লাহর
একত্ববাদকে মেনে নিয়ে সম্পূর্ণভাবে তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করা, তাঁর নির্দেশ অনুসরণের মাধ্যমে স্বীকার করা এবং আল্লাহর ইবাদতে অন্য
কিছুর অংশীদারিত্ব করা থেকে মুক্ত থাকা এবং যারা তা করে, তাদের
সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানার পদ্ধতি:
যদি তোমাকে প্রশ্ন করা হয় তোমার
নবী কে?
উত্তরে বল, তিনি মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যার পিতার নাম আবদুল্লাহ
এবং দাদার নাম আবদুল মোত্তালিব, প্রপিতামহের নাম হাশিম।
আর হাশিম কুরাইশ গোত্রের, কুরাইশগণ আরব-
যারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বংশধর।
দীন-এর বুনিয়াদ বা ভিত্তি
দীন-এর বুনিয়াদ বা ভিত্তি দুটি বিষয়ের ওপর :
এক: আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে
একমাত্র তাঁরই ইবাদতের নির্দেশ দেওয়া, এ ব্যাপারে
মানুষকে উৎসাহিত করা, যারা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে তাদের
সাথে বন্ধুত্ব রাখা এবং যারা তা ত্যাগ করে তাদেরকে কাফির মনে করা।
দুই: আল্লাহর ইবাদাতে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা থেকে সাবধান করা, এ ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করা এবং যারা তাঁর সাথে শির্ক করে তাদের
সাথে শত্রুতা পোষণ করা এবং যারা শির্ক করবে তাদেরকে কাফির মনে করা।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (কালেমা তাইয়্যেবা) মেনে চলার শর্তাবলী
এক: কালেমা
তাইয়্যেবার অর্থ জানা। অর্থাৎ এ কালেমার দুটো অংশ রয়েছে তা পরিপূর্ণভাবে জানা।
সে দুটো অংশ হলো:
১. কোনো হক মা‘বুদ নেই
২. আল্লাহ ছাড়া (অর্থাৎ তিনিই শুধু মা‘বুদ)
দুই: কালেমা
তাইয়্যেবার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। অর্থাৎ সর্ব-প্রকার সন্দেহ ও সংশয়মুক্ত পরিপূর্ণ বিশ্বাস
থাকা।
তিন: কালেমার
ওপর এমন একাগ্রতা ও নিষ্ঠা রাখা, যা সর্বপ্রকার শিরকের
পরিপন্থী।
চার:
কালেমাকে মনে প্রাণে সত্য বলে জানা, যাতে কোনো
প্রকার মিথ্যা বা কপটতা না থাকে।
পাঁচ: এ
কালেমার প্রতি ভালোবাসা পোষণ এবং কালেমার অর্থকে মনে
প্রাণে মেনে নেওয়া ও তাতে খুশী হওয়া।
ছয়: এই
কালেমার অর্পিত দায়িত্বসমূহ মেনে নেওয়া অর্থাৎ এই কালেমা কর্তৃক আরোপিত ওয়াজিব
কাজসমূহ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য এবং তাঁরই সন্তুষ্টির নিমিত্তে সমাধা করা।
সাত :
মনে-প্রাণে এই কালেমাকে গ্রহণ করা যাতে কখনো বিরোধিতা করা না হয়।
কালেমা তাইয়েবার যে সমস্ত শর্ত
বর্ণিত হলো, তার সমর্থনে কুরআন ও হাদীস থেকে দলীল প্রমাণাদি:
প্রথম শর্ত: কালেমার অর্থ
জানা। এর দলীল:
আল্লাহ
তা‘আলার বাণী:
﴿فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ
لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ﴾ [محمد: ١٩]
“জেনে রাখুন
নিশ্চয় আল্লাহ ছাড়া কোনো হক মা‘বুদ নেই।” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৯]
আল্লাহ আরও বলেন:
﴿إِلَّا مَن شَهِدَ
بِٱلۡحَقِّ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ﴾ [الزخرف: ٨٦]
“তবে যারা হক
(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু)-এর
সাক্ষ্য দিবে এমনভাবে যে, তারা তা জেনে শুনেই দিচ্ছে অর্থাৎ
তারা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।” [সূরা আয-যুখরুফ,
আয়াত: ৮৬]
এখানে জেনে শুনে সাক্ষ্য
দেওয়ার অর্থ হলো তারা মুখে যা উচ্চারণ করছে তাদের অন্তর তা সম্যকভাবে জানে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ مَاتَ وَهُوَ
يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“যে ব্যক্তি
এমতাবস্থায় মারা যায় যে সে জানে আল্লাহ ছাড়া কোনো সঠিক উপাস্য নেই সে জান্নাতে
যাবে।”[1]
দ্বিতীয় শর্ত: কালেমার ওপর
বিশ্বাসী হওয়া। এর প্রমাণাদি:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ
ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمۡ يَرۡتَابُواْ وَجَٰهَدُواْ
بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ
١٥﴾ [الحجرات: ١٥]
“নিশ্চয় মুমিন
ওরাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান এনেছে, অতঃপর
এতে কোনো সন্দেহ-সংশয়ে পড়ে নি এবং তাদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ
করেছে। তারাই তো সত্যবাদী।” [সুরা আল-হুজুরাত,
আয়াত: ১৫]
এ আয়াতে আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলের ওপর ঈমান যথাযথভাবে হওয়ার জন্য সন্দেহ-সংশয়মুক্ত হওয়ার শর্ত আরোপ করা
হয়েছে, অর্থাৎ তারা সন্দেহ করে নি। কিন্তু যে সন্দেহ করবে সে
মুনাফিক, ভণ্ড (কপট বিশ্বাসী)।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ
ছাড়া কোনো সঠিক মা‘বুদ বা উপাস্য নেই, আর আমি আল্লাহর
রাসূল। যে বান্দা এ দুটো বিষয়ে সন্দেহ-সংশয়মুক্ত অবস্থায় আল্লাহর সাক্ষাতে হাযির হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”[2]
আর এক বর্ণনায় এসেছে:
«لا يلقى
الله بهما عبد غير شاك فيهما فيحجب عن الجنة».
“কোনো ব্যক্তি এ দু’টি নিয়ে সন্দেহহীন অবস্থায়
আল্লাহর সাক্ষাতে হাযির হবে জান্নাতে যাওয়ার পথে
তার কোনো বাধা থাকবে না।”[3]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে অপর এক হাদীসের বর্ণনায়
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন:
«من لقيت من
وراء هذا الحائط يشهد أن لا إله إلا الله مستيقنًا بها قلبه فبشره بالجنة».
“তুমি এ বাগানের
পিছনে এমন যাকেই পাও, যে মনের পরিপূর্ণ বিশ্বাস এর সাথে
এ-সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সঠিক মা‘বুদ নেই-
তাকেই জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করবে।”[4]
তৃতীয় শর্ত: এ কালেমাকে
ইখলাস বা নিষ্ঠা সহকারে স্বীকার করা। এর দলীল:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ
ٱلۡخَالِصُ﴾ [الزمر: ٣]
“তবে জেনে রাখ
দীন খালেস সহকারে বা নিষ্ঠা সহকারে কেবল আল্লাহর জন্যই।”
[সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩]
আল্লাহ আরও বলেন:
﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ
إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ﴾ [البينة: ٥]
“তাদেরকে এ
নির্দেশই শুধু প্রদান করা হয়েছে যে, তারা নিজেদের দীনকে
আল্লাহর জন্যই খালেস করে সম্পূর্ণরূপে একনিষ্ঠ ও একমুখী হয়ে তাঁরই ইবাদাত করবে।” [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ,
আয়াত: ৫]
হাদীসে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أسعد الناس
بشفاعتي من قال لا إله إلا الله خالصًا من قلبه أو نفسه».
“আমার সুপারিশ
দ্বারা ঐ ব্যক্তিই বেশি সৌভাগ্যবান হবে যে অন্তর থেকে একনিষ্ঠভাবে বলেছে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকার উপাস্য নেই।”[5]
অপর এক সহীহ হাদীসে সাহাবী উতবান ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن الله حرم
على النار من قال: لا إله إلا الله يبتغي بذلك وجه الله عز وجل».
“যে ব্যক্তি
কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে لا إله إلا الله বা আল্লাহ
ছাড়া হক কোনো মা‘বুদ নেই বলেছে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম
হারাম করেছেন।”[6]
ইমাম নাসাঈ রহ. তার বিখ্যাত “দিন-রাত্রির যিকির” নামক গ্রন্থে বর্ণনা
করেছেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من قال لا
إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير مخلصًا
بها قلبه، يصدق بها لسانه، إلا فتق الله لها السماء فتقًا حتى ينظر إلى قائلها من
أهل الأرض، وحق لعبد نظر الله إليه أن يعطيه سؤاله».
“যে ব্যক্তি
মনের নিষ্ঠা সহকারে এবং মুখে সত্য জেনে নিম্নোক্ত কলেমাসমূাহ বলবে আল্লাহ সেগুলোর
জন্য আকাশকে বিদীর্ণ করবেন যাতে তার দ্বারা জমিনের মাঝে কে এই কালেমাগুলো বলেছে তার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। আর যার দিকে আল্লাহর নজর পড়বে তার
প্রার্থিত ও কাঙ্ক্ষিত বস্তু তাকে দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব। সে কালেমাগুলো হলো:
لا إله إلا
الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير
“শুধুমাত্র
আল্লাহ ছাড়া হক কোনো মা‘বুদ নেই, তার কোনো শরীক বা অংশীদার নেই, তার জন্যই সমস্ত রাজত্ব বা একচ্ছত্র
মালিকানা, তার জন্যই সমস্ত প্রশংসা আর তিনি প্রত্যেক
বস্তুর ওপর ক্ষমতাবান”।[7]
চতুর্থ শর্ত: কলেমাকে মনে
প্রাণে সত্য বলে জানা। এর দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿الٓمٓ ١ أَحَسِبَ
ٱلنَّاسُ أَن يُتۡرَكُوٓاْ أَن يَقُولُوٓاْ ءَامَنَّا وَهُمۡ لَا يُفۡتَنُونَ ٢ وَلَقَدۡ
فَتَنَّا ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡۖ فَلَيَعۡلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْ وَلَيَعۡلَمَنَّ
ٱلۡكَٰذِبِينَ ٣﴾ [العنكبوت: ١، ٣]
“আলিফ-লাম-মীম,
মানুষ কি ধারণা করেছে যে, ঈমান এনেছি
বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি যাতে আল্লাহর সাথে যারা সত্য
বলেছে তাদেরকে স্পষ্ট করে দেন এবং যারা মিথ্যা বলেছে তাদেরকেও স্পষ্ট করে দেন।” [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ১-৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ
مَن يَقُولُ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَمَا هُم بِمُؤۡمِنِينَ
٨ يُخَٰدِعُونَ ٱللَّهَ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَمَا يَخۡدَعُونَ إِلَّآ أَنفُسَهُمۡ
وَمَا يَشۡعُرُونَ ٩ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٞ فَزَادَهُمُ ٱللَّهُ مَرَضٗاۖ وَلَهُمۡ
عَذَابٌ أَلِيمُۢ بِمَا كَانُواْ يَكۡذِبُونَ ١٠ ﴾ [البقرة: ٨، ١٠]
“মানুষের মাঝে
কেউ কেউ বলে আমরা আল্লাহ এবং পরকালের ওপর ঈমান এনেছি, অথচ
তারা ইমানদার নয়। তারা (তাদের ধারণামতে) আল্লাহ ও ইমানদারদের সাথে প্রতারণা করছে,
অথচ (তারা জানে না) তারা কেবল তাদের আত্মাকেই প্রতারিত করছে
কিন্তু তারা তা বুঝতেই পারছে না। তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি, ফলে আল্লাহ সে ব্যাধিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর
মিথ্যা বলার কারণে তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি।”
[সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৮-১০]
তেমনিভাবে হাদীসে মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ما من أحد
يشهد أن لا إله إلا الله وأن محمدًا عبده ورسوله صدقًا من قلبه إلا حرمه الله على
النار».
“যেকোনো লোক মন
থেকে সত্য জেনে এ-সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ব্যতীত হক কোনো
মা‘বুদ নেই আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল,
আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করেছেন।”[8]
পঞ্চম শর্ত : এ কালেমাকে
মনে প্রাণে ভালোবাসা। এর দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ
مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ
ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ﴾ [البقرة: ١٦٥]
“কোনো কোনো লোক
আল্লাহ ছাড়া তার অনেক সমকক্ষ ও অংশীদার গ্রহণ করে তাদেরকে আল্লাহর মত ভালোবাসে, আর যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে
অত্যন্ত বেশি ভালোবাসে”। [সূরা
আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৫]
আল্লাহ আরও বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ
ءَامَنُواْ مَن يَرۡتَدَّ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَسَوۡفَ يَأۡتِي ٱللَّهُ بِقَوۡمٖ
يُحِبُّهُمۡ وَيُحِبُّونَهُۥٓ أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ
يُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوۡمَةَ لَآئِمٖۚ﴾ [المائدة: ٥٤]
“হে ইমানদারগণ
তোমাদের থেকে যদি কেহ তার দীনকে পরিত্যাগ করে তবে আল্লাহ এমন এক গোষ্ঠীকে তোমাদের
স্থলাভিষিক্ত করে আনবেন, যাদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন এবং তারাও
আল্লাহকে ভালোবাসেন, যারা মুমিনদের প্রতি নরম-
দয়াপরবশ, কাফিরদের ওপর কঠোরতা অবলম্বনকারী; তারা আল্লাহর
রাস্তায় জিহাদ করবে, কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করে না।” [সূরা আল-মায়েদা,
আয়াত: ৫৪]
তেমনিভাবে হাদীস শরীফে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ثلاث من كن
فيه وجد حلاوة الإيمان: أن يكون الله ورسوله أحب إليه مما سواهما، وأن يحب المرء
لا يحبه إلا لله، وأن يكره أن يعود في الكفر بعد إذ أنقذه الله منه كما يكره أن
يقذف في النار».
“যার মধ্যে
তিনটি বস্তুর সমাহার ঘটেছে সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে: (এক) তার কাছে আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলের মহব্বত বা ভালোবাসা অন্য সব-কিছু থেকে বেশি হবে। (দুই) কোনো লোককে
শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসবে। (তিন) কুফুরী থেকে আল্লাহ তাকে মুক্তি
দেওয়ার পর সে কুফুরীর দিকে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করবে।”[9]
ষষ্ঠ শর্ত: কালেমার হকসমূহ
মনে প্রাণে মেনে নেওয়া। এর দলীল: আল্লাহর বাণী:
﴿وَأَنِيبُوٓاْ إِلَىٰ
رَبِّكُمۡ وَأَسۡلِمُواْ لَهُ﴾ [الزمر: ٥٤]
“আর তোমরা
তোমাদের প্রভুর দিকে ফিরে যাও এবং তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করো।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫৪]
আল্লাহ আরও বলেন:
﴿وَمَنۡ أَحۡسَنُ
دِينٗا مِّمَّنۡ أَسۡلَمَ وَجۡهَهُۥ لِلَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ﴾ [النساء: ١٢٥]
“আর তারচেয়ে কার
দীন বেশি সুন্দর যে আল্লাহর জন্য নিজেকে সমর্পণ করেছে, এমতাবস্থায়
যে, সে মুহসিন”, [সূরা আন-নিসা,
আয়াত: ১২৫] মুহসিন অর্থ: নেককার, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুযায়ী আমল করেছে।
তিনি আরও
বলেন:
﴿وَمَن يُسۡلِمۡ
وَجۡهَهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰۗ﴾ [لقمان: ٢٢]
“আর যে নিজেকে
শুধুমাত্র আল্লাহর দিকেই নিবদ্ধ করে আত্মসমর্পণ করেছে আর সে মুহসিন” অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুযায়ী আমল করেছে,
“সে মজবুত রশিকে আঁকড়ে ধরেছে”। [সূরা লুকমান, আয়াত: ২২] অর্থাৎ: لا إله إلا الله বা আল্লাহ ছাড়া কোনো হক মা‘বুদ নেই
এ কালেমাকেই সে গ্রহণ করেছে।
তিনি আরও বলেন,
﴿فَلَا وَرَبِّكَ
لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ
فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [النساء: ٦٥]
“তারা যা বলছে
তা নয়, তোমার প্রভুর শপথ করে বলছি, তারা কখনো
ইমানদার হবে না যতক্ষণ আপনাকে তাদের মধ্যকার ঝগড়ার নিষ্পত্তিকারক (বিচারক) হিসাবে
না মানবে, অতঃপর আপনার বিচার-ফয়সালা গ্রহণ করে নিতে তাদের অন্তরে
কোনো প্রকার অভিযোগ থাকবে না এবং তারা তা সম্পূর্ণ কায়মনোবাক্যে নির্দ্বিধায় মেনে
নিবে।” [সূরা আন-নিসা,
আয়াত: ৬৫]
অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يؤمن
أحدكم حتى يكون هواه تبعًا لما جئت به»
“তোমাদের মাঝে
কেউই ঐ পর্যন্ত ইমানদার হতে পারবেনা যতক্ষণ তার প্রবৃত্তি আমি যা নিয়ে এসেছি তার
অনুসারী হবে।”[10]
আর এটাই পূর্ণ আনুগত্য ও তার শেষ সীমা।
সপ্তম শর্ত: কালেমাকে
গ্রহণ করা। এর দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَكَذَٰلِكَ مَآ
أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ فِي قَرۡيَةٖ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتۡرَفُوهَآ إِنَّا
وَجَدۡنَآ ءَابَآءَنَا عَلَىٰٓ أُمَّةٖ وَإِنَّا عَلَىٰٓ ءَاثَٰرِهِم مُّقۡتَدُونَ
٢٣ ۞قَٰلَ أَوَلَوۡ جِئۡتُكُم بِأَهۡدَىٰ مِمَّا وَجَدتُّمۡ عَلَيۡهِ ءَابَآءَكُمۡۖ
قَالُوٓاْ إِنَّا بِمَآ أُرۡسِلۡتُم بِهِۦ كَٰفِرُونَ ٢٤ فَٱنتَقَمۡنَا مِنۡهُمۡۖ
فَٱنظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُكَذِّبِينَ ٢٥﴾ [الزخرف: ٢٣، ٢٥]
“আর এমনিভাবে
যখনই আপনার পূর্বে আমি কোনো জনপদে ভয় প্রদর্শনকারী (রাসূল বা নবী) প্রেরণ করেছি
তখনি তাদের মধ্যকার আয়েশি বিত্তশালী লোকেরা বলেছে: আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে একটি
ব্যবস্থায় পেয়েছি, আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করবো। (ভয়
প্রদর্শনকারী) বলল: আমি যদি তোমাদের কাছে বাপ-দাদাদেরকে যার ওপর পেয়েছ তার থেকে
অধিক সঠিক বা বেশি হিদায়াত নিয়ে এসে থাকি তারপরও (তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার অনুকরণ করবে)? তারা বলল: তোমরা যা নিয়ে এসেছ আমরা তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছি,
ফলে আমি (আল্লাহ) তাদের থেকে (এ কুফুরীর) প্রতিশোধ নেই, সুতরাং আপনি মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের পরিণাম-ফল কেমন হয়েছে দেখে নিন।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ২৩-২৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿إِنَّهُمۡ كَانُوٓاْ
إِذَا قِيلَ لَهُمۡ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ يَسۡتَكۡبِرُونَ ٣٥ وَيَقُولُونَ أَئِنَّا
لَتَارِكُوٓاْ ءَالِهَتِنَا لِشَاعِرٖ مَّجۡنُونِۢ ٣٦ بَلۡ جَآءَ بِٱلۡحَقِّ وَصَدَّقَ
ٱلۡمُرۡسَلِينَ ٣٧﴾ [الصافات: ٣٥، ٣٧]
“নিশ্চয় তারা
অযথা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত যখন তাদেরকে বলা হত যে, আল্লাহ
ছাড়া কোনো হক মা‘বুদ নেই এবং বলতো: আমরা কি পাগল কবির কথা শুনে আমাদের উপাস্য
দেবতাগুলোকে ত্যাগ করবো?” [সূরা আস-সাফফাত,
আয়াত: ৩৫-৩৭]
অনুরূপভাবে হাদীসে শরীফে আবু মুসা আশ‘আরি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مثل ما
بعثني الله به من الهدى والعلم كمثل الغيث الكثير أصاب أرضًا، فكان منها نقية قبلت
الماء فأنبتت الكلأ والعشب الكثير، وكانت منها أجادب أمسكت الماء فنفع الله بها
الناس فشربوا وسقوا وزرعوا، وأصاب منها طائفة أخرى إنما هي قيعان لا تمسك ماء ولا
تنبت كلأ، فذلك مثل من فقه في دين الله ونفعه ما بعثني الله به فعلم وعلم ومثل من
لم يرفع بذلك رأسًا ولم يقبل هدى الله الذي أرسلت به».
“আল্লাহ আমাকে
যে জ্ঞান বিজ্ঞান ও হিদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হচ্ছে এমন মুষলধারার
বৃষ্টির মতো যা ভূমিতে এসে পড়েছে, ফলে এর কিছু অংশ এমন
উর্বর পরিষ্কার ভূমিতে পড়েছে যে ভূমি পানি চুষে নিতে সক্ষম, ফলে তা পানি গ্রহণ করেছে এবং তা দ্বারা ফসল ও তৃণলতার উৎপত্তি হয়েছে।
আবার তার কিছু অংশ পড়েছে গর্তওয়ালা ভূমিতে (যা পানি আটকে রাখতে সক্ষম) সুতরাং তা
পানি সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে, ফলে আল্লাহ এর দ্বারা
মানুষের উপকার করেছেন তারা তা পান করেছে, ভূমি সিক্ত
করিয়েছে এবং ফসলাদি উৎপন্ন করতে পেরেছে। আবার তার কিছু অংশ পড়েছে এমন অনুর্বর সমতল
ভূমিতে যাতে পানি আটকে থাকে না, ফলে তাতে পানি আটকা পড়ে
নি, ফসলও হয় নি। ঠিক এটাই হলো ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে
আল্লাহর দীনকে বুঝতে পেরেছে এবং আমাকে যা দিয়ে পাঠিয়েছেন তা থেকে উপকৃত হতে পেরেছে,
ফলে সে নিজে জেনেছে এবং অপরকে জানিয়েছে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির
ভূমি) এবং ঐ ব্যক্তির উদাহরণ যে এই হিদায়াত এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের দিকে মাথা উঁচু করে তাকায় নি, ফলে আল্লাহ যে হিদায়েত নিয়ে আমাকে প্রেরণ করেছেন তা গ্রহণ করেনি।
(তৃতীয় শ্রেণির ভূমি)।”[11]
ইসলাম বিনষ্টকারী বস্তুসমূহ
ইসলামকে বিনষ্ট করে এমন
বস্তু দশটি :
এক: আল্লাহর ইবাদাতে কাউকে শরীক বা অংশীদার করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا
يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ﴾ [النساء: ١١٦]
“নিশ্চয় আল্লাহ
ইবাদাতে তার সাথে কাউকে শরীক বা অংশীদার মানাকে ক্ষমা করবেন না, এতদ্ব্যতীত যা কিছু আছে তা যাকে ইচ্ছা করেন ক্ষমা করবেন”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৬]
তিনি আরও বলেন,
﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ
بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا
لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ﴾ [المائدة: ٧٢]
“নিশ্চয় যে
ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে তার ওপর আল্লাহ তা‘আলা
জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন, তার আবাস হবে জাহান্নামে,
আর অত্যাচারী (শির্ককারী)-দের কোনো সাহায্যকারী নেই”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২]
আর এই শির্ক হিসেবে গণ্য
হবে কবর অথবা মূর্তির জন্য কোনো কিছু জবেহ করা।
দুই: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার মধ্যে কোনো মাধ্যম নির্ধারণ করে তাদের কাছে কিছু
চাইবে ও তাদের সুপারিশ প্রার্থনা করবে এবং তাদের ওপর ভরসা করবে, সে ব্যক্তি উম্মতের সর্বসম্মত মতে কাফির হয়ে যাবে।
তিন: যে কেউ মুশরিকদের (যারা আল্লাহর ইবাদতে এবং তার সৃষ্টিগত সার্বভৌমত্বে
অন্য কাউকে অংশীদার মনে করে তাদেরকে) কাফির বলবে না বা তাদের কাফির হওয়া সম্পর্কে
সন্দেহ পোষণ করবে অথবা তাদের দীনকে সঠিক মনে করবে, সে
উম্মতের ঐক্যমত্যে কাফির বলে
বিবেচিত হবে।
চার : যে ব্যক্তি মনে করবে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের
প্রদর্শিত পথের চেয়ে অন্য কারো প্রদর্শিত পথ বেশি পূর্ণাঙ্গ অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাসন-প্রণালীর চেয়ে অন্য কারো শাসন
প্রণালী বেশি ভালো; যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিচার-পদ্ধতির ওপর তাগুতি-শক্তির (আল্লাহদ্রোহী শক্তির) বিচার-ব্যবস্থাকে
প্রাধান্য দেয় তাহলে সে কাফিরদের মধ্যে গণ্য হবে।
পাঁচ : রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যে আদর্শ নিয়ে এসেছেন এর সামান্য কিছুও যদি কেউ অপছন্দ করে তবে সে কাফির হয়ে যাবে, যদিও সে (অপছন্দ করার পাশাপাশি) তার ওপর আমল করে থাকে।[12]
ছয় : রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণিত দীনের (জীবন
বিধানের) সামান্যতম কিছু নিয়ে যদি কেউ ঠাট্টা করে বা দীনের কোনো পুণ্য বা শাস্তি
নিয়ে ‘ইয়ার্কি’ করে তবে সেও কাফির হয়ে
যাবে।
তার প্রমাণ: আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿قُلۡ أَبِٱللَّهِ
وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم
بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ ٦٦﴾ [التوبة: ٦٥، ٦٦]
“বলুন: তোমরা কি
আল্লাহ ও তাঁর আয়াত (শরঈ বা
প্রাকৃতিক নিদর্শনাবলি) এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা
করছ? তোমরা কোনো প্রকার ওযর পেশ করো না, কারণ তোমরা ঈমান আনার পরে কাফির হয়ে
গিয়েছ”। [সূরা আত-তাওবাহ,
আয়াত: ৬৫-৬৬]
সাত : যাদু, বান, টোনা
এর দ্বারা সম্পর্ক বিচ্যুতি ঘটানো বা সম্পর্ক স্থাপন করানো-
যদি কেউ এগুলো করে বা করতে রাজি হয় তবে সে কাফির হয়ে
যাবে।
এর প্রমাণ কুরআনের বাণী:
﴿وَمَا يُعَلِّمَانِ
مِنۡ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَآ إِنَّمَا نَحۡنُ فِتۡنَةٞ فَلَا تَكۡفُرۡۖ﴾ [البقرة: ١٠٢]
“তারা দু’জন (হারুত মারুত) কাউকে তা (যাদু) শিক্ষা দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই বলে যে,
আমরা তো কেবল ফিতনা বা পরীক্ষা স্বরূপ। সুতরাং তোমরা কুফরই করো
না”। [সূরা আল-বাকারা,
আয়াত: ১০২]
আট: মুশরিকদের (যারা আল্লাহর ইবাদতে বা সার্বভৌমত্বে কাউকে অংশীদার বানায়
তাদের)-কে মুসলমানদের ওপর সাহায্য-সহযোগিতা করা।
এর দলীল আল্লাহর বাণী:
﴿وَمَن يَتَوَلَّهُم
مِّنكُمۡ فَإِنَّهُۥ مِنۡهُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ﴾ [المائدة: ٥١]
“তোমাদের থেকে
যারা তাদের (মুশরিকদের)-কে মুরুব্বি বা বন্ধু মনে করবে তারা তাদের দলের
অন্তর্ভুক্ত হবে। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা অত্যাচারী কোনো
জাতিকে সঠিক পথের দিশা দেন না বা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছান না”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৫১]
নয়: যে এ-কথা বিশ্বাস করবে যে, যেমনিভাবে খিদির আলাইহিস সালামের জন্য মুসা আলাইহিস সালামের শরী‘আতের বাইরে থাকা সম্ভব হয়েছিল
তেমনিভাবে কারো কারো জন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
প্রবর্তিত শরী‘আত থেকে বাইরে থাকা সম্ভব, সেও কাফির বলে
গণ্য হবে।
দশ: আল্লাহর দীন থেকে বিমুখ হওয়া, দীন শিখতে বা
দীনের আদেশ নিষেধ অনুসারে কাজ করার ব্যাপারে গুরুত্বহীন থাকে।
এর দলীল আল্লাহর বাণী:
﴿وَمَنۡ أَظۡلَمُ
مِمَّن ذُكِّرَ بَِٔايَٰتِ رَبِّهِۦ ثُمَّ أَعۡرَضَ عَنۡهَآۚ إِنَّا مِنَ ٱلۡمُجۡرِمِينَ
مُنتَقِمُونَ ٢٢ ﴾ [السجدة: ٢٢]
“তার চেয়ে কে
বেশি অত্যাচারী যাকে আল্লাহর আয়াতসমূহ
স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর সে তা এড়িয়ে গেল, নিশ্চয় আমি
পাপিষ্ঠদের থেকে প্রতিশোধ নেব”। [সূরা
আস-সাজদাহ, আয়াত: ২২]
এসমস্ত ঈমান বিনষ্টকারী
বস্তু, ঠাট্টা করেই বলুক আর মন থেকে বলুক অথবা ভয়ে ভীত হয়েই
বলুক, যেকোনো লোক এ-সমস্ত কাজের কোনো একটি করলে কাফির বলে
বিবেচিত হবে। তবে যাকে জোর করে এ রকম কোনো কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে তার হুকুম
আলাদা।
এ সবগুলোই অত্যন্ত
বিপজ্জনক ও অত্যধিক হারে সংগঠিত হয়ে থাকে। সুতরাং মুসলিম মাত্রই এগুলো থেকে
সাবধানতা অবলম্বন করা ও এগুলো থেকে বেঁচে থাকা বাঞ্ছনীয়।
আমরা আল্লাহর কাছে তার
আযাব-গজবে পড়া ও তাঁর কঠিন শাস্তিতে নিপতিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।
তাওহীদ বা একত্ববাদ এর তিন অংশ
এক: তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ: “সৃষ্টি জগতের সৃষ্টিতে,
নিয়ন্ত্রণে, লালন পালনে, রিজিক প্রদানে, জীবিত করণে, মৃত্যু প্রদানে, সার্বভৌমত্বে, আইন প্রদানে আল্লাহকেই এককভাবে মেনে নেওয়া।” এ প্রকার তাওহীদ বা একত্ববাদকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সময়কার কাফিরগণ স্বীকার করে নিয়েছিল, কিন্তু
শুধু এগুলোতে ঈমান থাকার পরেও তারা ইসলামে প্রবেশ করতে পারে নি, বরং এগুলোর স্বীকৃতি থাকার পরও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এবং তাদের জান-মালকে হালাল বা বৈধ করে দিয়েছিলেন। এই প্রকারের তাওহীদ বা একত্ববাদ বলতে
বুঝায় আল্লাহর কার্যসমূহে আল্লাহকেই একক কার্য সম্পাদনকারী হিসাবে মেনে নেওয়া। তাওহীদ
এর এ অংশ মক্কার কাফিরগণও যে স্বীকার করত তার প্রমাণ কুরআনের বাণী:
﴿قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم
مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أَمَّن يَمۡلِكُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَمَن يُخۡرِجُ
ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۚ
فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُۚ فَقُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٣١﴾ [يونس: ٣١]
“বলুন: আসমান ও
জমিনের কে তোমাদেরকে রিযিক বা
খাদ্য যোগান দেয়? অথবা কে তোমাদের শ্রবণেন্দ্রিয় ও
দৃষ্টিশক্তির সার্বভৌমত্বের অধিকারী? আর কে মৃত থেকে
জীবিতকে বের করে? ও জীবিতকে মৃত থেকে বের করে? এবং কে কার্যাদির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে? তারা অবশ্যই বলবে: আল্লাহ। সুতরাং বলুন: তোমরা কি তাকে ভয় পাও না?” [সূরা ইউনুস, আয়ত: ৩১] কুরআনের আরও বহু আয়াতে এ কথার প্রমাণ রয়েছে।
দুই: তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ: অর্থাৎ “সর্বপ্রকার
ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য সম্পাদন করা। আর ইবাদতের প্রকার সমূহের মধ্যে রয়েছে
: (১) দো‘আ (২) সাহায্য চাওয়া (৩) আশ্রয়
চাওয়া (৪) বিপদমুক্তি প্রার্থনা করা (৫) জবেহ করা (৬) মান্নত করা (৭) আশা করা (৮)
ভয় করা (১০) ভালোবাসা (১১) আগ্রহ ও (১২) প্রত্যাবর্তন করা, ইত্যাদি।” তাওহীদের এ অংশেই যত বিভেদ পূর্বকাল
থেকে শুরু করে বর্তমানেও চলছে। এই অংশের অর্থ হলো, বান্দার
ইবাদত কার্যাদিতে এককভাবে আল্লাহকেই নির্দিষ্ট করা। যেমন, দো‘আ মান্নত, পশু যবেহ, আশা, ভরসা, ভীতি,
আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাবর্তন ইত্যাদিতে
তাঁকেই উদ্দেশ্য করা।
আর এ সবগুলোই যে আল্লাহর
ইবাদত তার দলীল পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।
তিন: তাওহীদুয-যাত ওয়াল আসমা ওয়াস সিফাত: “আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস এবং তার নাম ও গুণাবলীসমূহে তাকে একক
স্বত্বাধিকারী মনে করা।”
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ
أَحَدٌ ١ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ٢ لَمۡ يَلِدۡ وَلَمۡ يُولَدۡ ٣ وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا
أَحَدُۢ ٤﴾ [الاخلاص: ١، ٤]
“বলুন: তিনি
আল্লাহ একক স্বত্বা, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি জন্ম দেন নি, আবার তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়
নি, আর কেহ তাঁর সমকক্ষ হতে পারে না”। [সূরা আল-ইখলাস, আয়াত: ১-৩]
তিনি আরও বলেন:
﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ
ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ وَذَرُواْ ٱلَّذِينَ يُلۡحِدُونَ فِيٓ أَسۡمَٰٓئِهِۦۚ
سَيُجۡزَوۡنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٨٠﴾ [الاعراف: ١٨٠]
“আর সুন্দর
যাবতীয় নামগুলো আল্লাহরই। সুতরাং তোমরা তাকে সেগুলো দ্বারা আহবান করো, আর
যারা তার নামসমূহকে বিকৃত করে তোমরা তাদের ছেড়ে দাও, অচিরেই
তাদেরকে তাদের কার্যাদির পরিণাম-ফল দেওয়া হবে”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৮০]
তিনি আরও বলেন:
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ
شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ﴾ [الشورا: ١١]
“তাঁর মতো কোনো কিছু নেই, তিনি সর্ব শ্রোতা দর্শক।” [সূরা আশ-শূরা,
আয়াত: ১১]
তাওহীদের বিপরীত হলো শির্ক
(একত্ববাদের
বিপরীতে অংশীদারিত্ব)
শির্ক তিন প্রকার: ১। বড় শির্ক, ২। ছোট শির্ক, ৩। গোপন শির্ক।
১। বড় শির্ক: যা আল্লাহ কখনো ক্ষমা
করবেন না। এ শির্ক এর সাথে অনুষ্ঠিত কোনো সৎকাজ আল্লাহ তা‘আলা কবুল করেন না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا
يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ
بِٱللَّهِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلَۢا بَعِيدًا ١١٦﴾ [النساء: ١١٦]
“নিশ্চয় আল্লাহ
তা‘আলা তাঁর সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করবেন না, তবে শির্ক ব্যতীত (শির্কের চেয়ে নিচু পর্যায়ের) যত গুনাহ আছে তা তিনি
যাকে ইচ্ছা করেন ক্ষমা করে দেবেন। আর যে আল্লাহর সাথে শির্ক করলো সে পথভ্রষ্টতায়
অনেকদূর এগিয়ে গেল (বেশী বিপথগামী হলো)।” [সূরা আন-নিসা,
আয়াত: ১১৬]
তিনি আরও বলেন:
﴿لَقَدۡ كَفَرَ ٱلَّذِينَ
قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡمَسِيحُ ٱبۡنُ مَرۡيَمَۖ وَقَالَ ٱلۡمَسِيحُ يَٰبَنِيٓ
إِسۡرَٰٓءِيلَ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمۡۖ إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ
فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ
مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [المائدة: ٧٢]
“অথচ মসীহ (ঈসা
আলাইহিস সালাম) বলেছেন: হে ইসরাঈলের বংশধরগণ! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, যিনি আমার
প্রভু, তোমাদের প্রভু, নিশ্চয়
যদি কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করে পরিণামে আল্লাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন,
তার আস্তানা হবে জাহান্নাম, আর
অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই”। [সূরা
আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২]
তিনি আরও বলেন:
﴿وَقَدِمۡنَآ إِلَىٰ
مَا عَمِلُواْ مِنۡ عَمَلٖ فَجَعَلۡنَٰهُ هَبَآءٗ مَّنثُورًا ٢٣﴾ [الفرقان: ٢٢]
“আর আমি তারা যা
আমল করেছে সেগুলোর দিকে ধাবিত হয়ে সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় রূপান্তরিত করে
দিয়েছি”। [সূরা আল-ফুরকান,
আয়াত: ২৩]
তিনি আরও
বলেন:
﴿لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ
لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ﴾ [الزمر: ٦٥]
“আপনি যদি শির্ক
করেন তবে অবশ্যই আপনার আমলকে নষ্ট করে দেব এবং নিশ্চয় আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের
অন্তর্ভুক্ত হবেন।” [সূরা আয-যুমার,
আয়াত: ৬৫]
তিনি আরও বলেন,
﴿وَلَوۡ أَشۡرَكُواْ
لَحَبِطَ عَنۡهُم مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ﴾ [الانعام: ٨٨]
“যদি তারা শির্ক
করে তবে অবশ্যই তারা যা আমল করেছে তা নষ্ট হয়ে যাবে।”
[সূরা আল-আন‘আম, আয়াত:
৮৮]
বড় শির্ক-এর প্রকারাদি
বড় শির্ক চার প্রকার:
এক: দো‘আয় শির্ক করা: এর দলীল আল্লাহর বাণী:
﴿فَإِذَا رَكِبُواْ
فِي ٱلۡفُلۡكِ دَعَوُاْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ فَلَمَّا نَجَّىٰهُمۡ إِلَى
ٱلۡبَرِّ إِذَا هُمۡ يُشۡرِكُونَ ٦٥﴾ [العنكبوت: ٦٥]
“অতঃপর যখন তারা
নৌকায় চড়ে তখন দীনকে নিষ্ঠা সহকারে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করে তাঁকে
ডাকতে থাকে কিন্তু যখন তিনি তাদেরকে ডাঙ্গায় নিয়ে পরিত্রাণ দেন তখনই তারা তার সাথে
শির্ক (অংশীদার) করে।” [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৬৫]
দুই: নিয়্যাত ও সংকল্পে
শির্ক করা : এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী:
﴿مَن كَانَ يُرِيدُ
ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيۡهِمۡ أَعۡمَٰلَهُمۡ فِيهَا وَهُمۡ
فِيهَا لَا يُبۡخَسُونَ ١٥ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَيۡسَ لَهُمۡ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ إِلَّا
ٱلنَّارُۖ وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيهَا وَبَٰطِلٞ مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٦﴾ [هود: ١٥، ١٦]
“যারা পার্থিব
জীবন ও তার চাকচিক্য পেতে চায় আমি তাদেরকে তাদের কার্যাদির প্রতিফল তাতেই (পার্থিব
জীবনেই) পরিপূর্ণভাবে দিয়ে দেব, তাদের এতে কম দেওয়া হবেনা,
তাদের জন্য পরকালে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই থাকবে না, তারা দুনিয়ায় যা করেছে তা নষ্ট হয়ে গেছে, আর
যে সমস্ত (নেক) কার্যাদি তারা করেছে তা বাতিল হয়ে যাবে।”
[সূরা হূদ, আয়াত: ১৫-১৬]
তিন: আদেশ, নিষেধ প্রতিপালন বা বশ্যতায় শির্ক করা: এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী:
﴿ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ
وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ وَٱلۡمَسِيحَ ٱبۡنَ مَرۡيَمَ وَمَآ
أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُوٓاْ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗاۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۚ سُبۡحَٰنَهُۥ
عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٣١﴾ [التوبة: ٣١]
“তারা আল্লাহ
ছাড়া তাদের ‘আরবাব’ তথা আলিম, ‘আহবার’ তথা আবিদদের (পীর-দরবেশদের)-কে তাদের জন্য হালাল হারামকারী বানিয়ে নিয়েছে এবং মারইয়াম পুত্র মসীহকেও, অথচ তাদেরকে শুধু এক মা‘বুদ-এর ইবাদত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তিনি ব্যতীত
আর কোনো হক মা‘বুদ নেই। তার সাথে যাদের শরীক করছে তাদের থেকে তিনি কতইনা পবিত্র!” [সূরা আত-তাওবাহ,
আয়াত: ৩১]
“আরবাব” শব্দের তাফসীর বা ব্যাখ্যা হলো আলেমদেরকে পাপ কাজে অনুসরণ করা,
এর অর্থ তাদেরকে ডাকা নয়।
কারণ,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রখ্যাত সাহাবী ‘আদি ইবন হাতিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর প্রশ্নের
উত্তরে এ প্রকার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। কারণ, তিনি যখন বললেন: আমরা তাদের ইবাদত (উপাসনা) করি
না, উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন: “তাদের উপাসনা হলো পাপ কাজে তাদের আদেশ নিষেধ
মান্য করা।”[13]
চার: ভালোবাসায় শির্ক করা: এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী:
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ
مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ﴾ [البقرة: ١٦٥]
“আর মানুষের
মাঝে এমনও আছে যারা আল্লাহ ছাড়া তার অনেক সমকক্ষ (সমপর্যায়ের ভালোবাসা পাওয়ার
অধিকারী, ভালোবাসার পাত্র) নির্ধারণ করে সেগুলোকে আল্লাহর
ন্যায় ভালোবাসে, অথচ যারা ইমানদার তারা আল্লাহকে সর্বাধিক
ভালোবাসে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৫]
২। ছোট শির্ক: আর তা
হলো (সামান্য) লোক দেখানোর নিয়তে নেক কাজ করা।
এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী:
﴿فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ
لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ
أَحَدَۢا﴾ [الكهف: ١١٠]
“সুতরাং যে
আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে সে যেন নেক কাজ করে এবং তাঁর প্রভুর ইবাদতের সাথে
অন্য কাউকে শরীক না করে।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ১১০]
৩। গোপন (সূক্ষ্ম) শির্ক: এর প্রমাণ হলো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের বাণী:
«الشرك
في هذه الأمة أخفى من دبيب النملة السوداء على صفاة سوداء في ظلمة الليل».
“এ (মুসলিম) জাতির মধ্যে শির্ক অন্ধকার রাত্রিতে কালো পাথরের উপর কালো পিপড়ার বেয়ে উঠার মতোই
সূক্ষ্ম বা গোপন।”[14]
শির্ক থেকে বাঁচার দো‘আ:
নিম্নের দো‘আ (অর্থ বুঝে বিশ্বাস-সহকারে) পাঠ করলে শির্ক গুনাহের কাফফারা হয়ে থাকে।
«اللَّهُمَّ إنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ شَيْئاً
وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ مِنَ الذَّنْبِ الَّذِيْ لا أَعْلَمُ».
“হে আল্লাহ আমি জেনে-শুনে
তোমার সাথে কোনো কিছুকে শরীক করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আর আমার অজ্ঞাত গুনাহরাজি থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।”[15]
কুফুরীর প্রকারভেদ
কুফুরী দু’প্রকার:
এক: যা করলে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়।
নিম্নলিখিত পাঁচটি কারণে এ
প্রকার কুফুরী হয়ে থাকে:
১। মিথ্যা প্রতিপন্ন করার
কারণে কুফুরী : এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী:
﴿وَمَنۡ أَظۡلَمُ
مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوۡ كَذَّبَ بِٱلۡحَقِّ لَمَّا جَآءَهُۥٓۚ
أَلَيۡسَ فِي جَهَنَّمَ مَثۡوٗى لِّلۡكَٰفِرِينَ ٦٨﴾ [العنكبوت: ٦٨]
“আর তার চেয়ে কে
বেশি অত্যাচারী যে আল্লাহর ওপর মিথ্যার সম্বন্ধ আরোপ করেছে, অথবা তার কাছে হক (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা আল্লাহ ছাড়া সঠিক কোনো
উপাস্য নেই এ কালেমা) আসার পর তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, জাহান্নাম কি কাফিরদেরই বাসস্থান নয়?” [সূরা
আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ৬৮]
২। সত্য জেনেও অহংকার ও অস্বীকার
করার কারণে কুফুরী : এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী :
﴿وَإِذۡ قُلۡنَا
لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ ٱسۡجُدُواْ لِأٓدَمَ فَسَجَدُوٓاْ إِلَّآ إِبۡلِيسَ أَبَىٰ وَٱسۡتَكۡبَرَ
وَكَانَ مِنَ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٣٤﴾ [البقرة: ٣٤]
“আর স্মরণ করুন
যখন আপনার প্রভু আদমকে সাজদাহ করার জন্য ফিরিশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তখন ইবলিস ব্যতীত সবাই সাজদাহ করেছিল, সে অস্বীকার করেছিল এবং অহংকার বোধে গর্ব করেছিল আর কাফিরদের
অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৩৪]
৩। সন্দেহ করার দ্বারা
কুফুরী করা- আর তা হলো অসার ধারণার বশবর্তী হয়ে কুফুরী করা : এর প্রমাণ কুরআনের বাণী:
﴿وَدَخَلَ جَنَّتَهُۥ
وَهُوَ ظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِۦ قَالَ مَآ أَظُنُّ أَن تَبِيدَ هَٰذِهِۦٓ أَبَدٗا ٣٥
وَمَآ أَظُنُّ ٱلسَّاعَةَ قَآئِمَةٗ وَلَئِن رُّدِدتُّ إِلَىٰ رَبِّي لَأَجِدَنَّ
خَيۡرٗا مِّنۡهَا مُنقَلَبٗا ٣٦ قَالَ لَهُۥ صَاحِبُهُۥ وَهُوَ يُحَاوِرُهُۥٓ أَكَفَرۡتَ
بِٱلَّذِي خَلَقَكَ مِن تُرَابٖ ثُمَّ مِن نُّطۡفَةٖ ثُمَّ سَوَّىٰكَ رَجُلٗا ٣٧ لَّٰكِنَّا۠
هُوَ ٱللَّهُ رَبِّي وَلَآ أُشۡرِكُ بِرَبِّيٓ أَحَدٗا ٣٨﴾ [الكهف: ٣٥، ٣٨]
“আর সে তার
বাগানে প্রবেশ করল এমতাবস্থায় যে সে তার আত্মার ওপর অত্যাচার করছে, এ-কথা বলে যে, আমি মনে করি না যে, এটা (বাগান) কখনো ধ্বংস হয়ে যাবে এবং কোনোদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে বলেও
মনে করি না। আর যদি তা হয়েও যায় এবং আমাকে আমার প্রভুর কাছে ফিরে নেওয়াও হয় তথাপি
আমি তার কাছে ফিরে এর (বাগানের) চেয়ে আরও ভালো (বাগান) পেয়ে যাব। তার সাথী তাকে
বলল: তুমি কি সেই স্বত্বার সাথে কুফুরী করছ যিনি তোমাকে প্রথমে মাটি ও পরে বীর্য
থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং এরপর পূর্ণ মানুষরূপে তোমাকে অবয়ব দান করেছেন? কিন্তু আমি (বলছি) সেই আল্লাহই আমার রব ও পালনকর্তা, তার সাথে কাউকে শরীক করি না।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৩৫-৩৮]
৪। এড়িয়ে যাওয়ার (বিমুখ
হওয়ার) কারণে কুফুরী : এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী:
﴿وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ
عَمَّآ أُنذِرُواْ مُعۡرِضُونَ﴾ [الاحقاف: ٣]
“আর যারা কুফুরী
করেছে তারা যে সমস্ত বস্তুর ভয় তাদেরকে দেখান হয়েছে সেগুলো থেকে বিমুখ হয়েছে
(এড়িয়ে গেছে)।” [সূরা আল-আহকাফ,
আয়াত: ৩]
৫। মুনাফেকী করার কারণে কুফুরী : এর প্রমাণ আল্লাহর পবিত্র কালামে
এসেছে:
﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ
ءَامَنُواْ ثُمَّ كَفَرُواْ فَطُبِعَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ فَهُمۡ لَا يَفۡقَهُونَ ٣﴾ [المنافقون: ٣]
“এটা এ জন্য যে,
তারা ঈমান এনেছে অতঃপর কুফুরী করেছে; ফলে
তাদের অন্তরের ওপর সিল মেরে দেওয়া হয়েছে সুতরাং তারা বুঝছে না, বুঝবেনা।” [সূরা আল মুনাফিকূন, আয়াত: ৩]
দুই : দ্বিতীয় প্রকার
কুফুরী
আর তা হলো ছোট কুফুরী, যা করলে গুনাহ হলেও ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেনা, আর তা’ হলো আল্লাহর নি‘আমতের সাথে কুফুরী করা।
এর প্রমাণ: কুরআনের বাণী:
﴿وَضَرَبَ ٱللَّهُ
مَثَلٗا قَرۡيَةٗ كَانَتۡ ءَامِنَةٗ مُّطۡمَئِنَّةٗ يَأۡتِيهَا رِزۡقُهَا رَغَدٗا مِّن
كُلِّ مَكَانٖ فَكَفَرَتۡ بِأَنۡعُمِ ٱللَّهِ فَأَذَٰقَهَا ٱللَّهُ لِبَاسَ ٱلۡجُوعِ
وَٱلۡخَوۡفِ بِمَا كَانُواْ يَصۡنَعُونَ ١١٢﴾ [النحل: ١١٢]
“আল্লাহ তা‘আলা উদাহরণ দিচ্ছেন কোনো নিরাপদ, শান্ত-স্থির
জনপদের, যার জীবিকা চতুর্দিক থেকে
অনায়াসে আসছিল, তখন তারা আল্লাহর নি‘আমতের সাথে কুফুরী করলো, ফলে আল্লাহ তা‘আলা সে জনপদকে তাদের কার্যাদির শাস্তি স্বরূপ ক্ষুধা ও ভয়ে নিপতিত রাখল”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১১২]
মুনাফেকীর প্রকারভেদ
মুনাফেকী দু’প্রকার:
১। বিশ্বাসগত মুনাফেকী।
২। আমলগত (কার্যগত)
মুনাফেকী।
এক : বিশ্বাসগত মুনাফেকী
এ প্রকার মুনাফেকী ছয় প্রকার, এর যে কোনো
একটা কারো মধ্যে পাওয়া গেলে সে জাহান্নামের সর্বশেষ স্তরে নিক্ষিপ্ত হবে।
১।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।
২।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তার সামান্যতম অংশকে
মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।
৩।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘৃণা বা অপছন্দ করা।
৪।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তার সামান্যতম অংশকে
ঘৃণা বা অপছন্দ করা।
৫। রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীনের অবনতিতে খুশী হওয়া।
৬। রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীনের জয়ে অসন্তুষ্ট হওয়া।
দুই: কার্যগত মুনাফেকী
এ ধরণের মুনাফেকী পাঁচ
ভাবে হয়ে থাকে: এর প্রমাণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: তিনি বলেছেন:
«آية المنافق
ثلاثة: إذا حدث كذب، وإذا وعد أخلف وإذا اؤتمن خان» وفي رواية: «وإذا خاصم فجر،
وإذا عاهد غدر».
“মুনাফিকের
নিদর্শন হলো তিনটি:
১। কথা বললে মিথ্যা বলা।
২। ওয়াদা করলে ভঙ্গ করা।
৩। আমানত রাখলে খিয়ানত
করা।[16]
অপর বর্ণনায় এসেছে :
৪। ঝগড়া করলে অকথ্য গালি
দেওয়া।
৫। চুক্তিতে উপনীত হলে তার
বিপরীত কাজ করা।”[17]
তাগুত-এর অর্থ এবং এর প্রধান প্রধান অংশ
এ-কথা জানা প্রয়োজন যে, আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির ওপর সর্ব প্রথম যা
ফরজ করেছেন তা হচ্ছে তাগুতের সাথে কুফুরী এবং আল্লাহর ওপর ঈমান।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا
فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ﴾ [النحل: ٣٦]
“আর নিশ্চয় আমি
প্রত্যেক জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি এ কথা বলে যে, তোমরা
শুধু আল্লাহর উপাসনা কর এবং তাগুতকে পরিত্যাগ কর।” [সূরা
আন-নাহল, আয়াত: ৩৬]
তাগুতের সাথে কুফুরীর ধরণ
হলো : আল্লাহ ছাড়া অন্য সবকিছুর উপাসনা (ইবাদত) বাতিল বলে
বিশ্বাস করা, তা ত্যাগ করা, ঘৃণা ও অপছন্দ করা এবং যারা তা করবে তাদের অস্বীকার করা, তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা।
আর আল্লাহর ওপর ঈমানের
অর্থ হলো : আল্লাহ তা‘আলাই কেবলমাত্র
হক উপাস্য ইলাহ, অন্য কেউ নয়- একথা বিশ্বাস করা, আর সব রকম ইবাদতকে নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট করা
যাতে এর কোনো অংশ অন্য কোনো উপাস্যের জন্য নির্দিষ্ট না হয়; আর মুখলিস বা নিষ্ঠাবানদের ভালোবাসা, তাদের
মাঝে আনুগত্যের সম্পর্ক স্থাপন করা, মুশরিকদের ঘৃণা ও
অপছন্দ করা, তাদের শত্রুতা করা।
আর এটাই ইবরাহীম আলাইহিস সালামের
প্রতিষ্ঠিত দীন বা মিল্লাত, যে ব্যক্তি তার থেকে বিমুখ হবে সে
নিজ আত্মাকে বোকা বানাবে, আর এটাই হলো সে আদর্শ (أسوة) বা (Model) যার
কথা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বাণীতে বলেছেন:
﴿قَدۡ كَانَتۡ لَكُمۡ
أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ فِيٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ إِذۡ قَالُواْ لِقَوۡمِهِمۡ
إِنَّا بُرَءَٰٓؤُاْ مِنكُمۡ وَمِمَّا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ كَفَرۡنَا بِكُمۡ
وَبَدَا بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةُ وَٱلۡبَغۡضَآءُ أَبَدًا حَتَّىٰ تُؤۡمِنُواْ
بِٱللَّهِ وَحۡدَهُ﴾ [الممتحنة: ٤]
“অবশ্যই তোমাদের
জন্য রয়েছে ইবরাহীম ও তার সাথীদের মাঝে সুন্দর আদর্শ, যখন
তারা তাদের জাতিকে বলেছিল: আমরা তোমাদের এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের অপরাপর উপাস্য
দেবতাদের থেকে সম্পূর্ণ সম্পর্কমুক্ত, আমরা তোমাদের সাথে
সম্পর্ক স্থাপনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলাম, আর আমাদের ও
তোমাদের মাঝে চিরদিনের জন্য শত্রুতা ও ঘৃণার সম্পর্ক প্রকাশ হয়ে পড়ল, যে পর্যন্ত তোমরা শুধু এক আল্লাহর ওপর ঈমান স্থাপন না করছ।” [সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত: ৪]
তাগুত: শব্দটি ব্যাপক, এর দ্বারা
আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যা কিছুর ইবাদত বা উপাসনা করা হয়
এবং উপাস্য সে উপাসনায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এমন সবকিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে,
চাই কি তা দেবতা, বা নেতা, বা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণের বাইরে অন্য কারো অনুসরণই হোক,
ঐসবগুলোকেই তাগুত বলা হবে।
আর এ তাগুত -এর সংখ্যা
অত্যধিক; তবে প্রধান-প্রধান তাগুত হলো পাঁচটি
:
এক: শয়তান: যে আল্লাহর ইবাদত থেকে মানুষকে অন্য কিছুর ইবাদতের দিকে
আহ্বান করে।
এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী:
﴿أَلَمۡ أَعۡهَدۡ
إِلَيۡكُمۡ يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ أَن لَّا تَعۡبُدُواْ ٱلشَّيۡطَٰنَۖ إِنَّهُۥ لَكُمۡ
عَدُوّٞ مُّبِينٞ ٦٠﴾ [يس: ٦٠]
“হে আদম-সন্তান,
আমি কি তোমাদের থেকে শয়তানের ইবাদত না করার অঙ্গিকার নিই নি? নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” [সূরা
ইয়াসীন, আয়াত: ৬০]
দুই: আল্লাহর আইন (হুকুম)
পরিবর্তনকারী অত্যাচারী শাসক: এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿أَلَمۡ تَرَ إِلَى
ٱلَّذِينَ يَزۡعُمُونَ أَنَّهُمۡ ءَامَنُواْ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ
مِن قَبۡلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓاْ إِلَى ٱلطَّٰغُوتِ وَقَدۡ أُمِرُوٓاْ
أَن يَكۡفُرُواْ بِهِۦۖ وَيُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُضِلَّهُمۡ ضَلَٰلَۢا بَعِيدٗا
٦٠﴾ [النساء: ٦٠]
“আপনি কি তাদের
দেখেন নি যারা মনে করে আপনার কাছে এবং আপনার পূর্ববর্তীদের কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে
তার ওপর ঈমান এনেছে, তারা তাগুতকে বিচারক হিসাবে পেতে
আকাঙ্ক্ষা করে অথচ তাদেরকে এর (তাগুতের) সাথে কুফুরীর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আর
শয়তান তাদেরকে সহজ সরল পথ থেকে অনেক দুর নিয়ে যেতে চায়।”
[সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬০]
তিন: আল্লাহ কর্তৃক
অবতীর্ণ (আইনের) হুকুমের বিপরীত হুকুম প্রদানকারী: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم
بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ﴾ [المائدة: ٤٤]
“আর যারা
আল্লাহর অবতীর্ণ আইন অনুসারে বিচার করে না তারা কাফির।” [সূরা আল-মায়েদা,
আয়াত: ৪৪]
চার: আল্লাহ ছাড়া অন্য
কোনো গায়েবের খবর রাখার দাবিদার: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿عَٰلِمُ ٱلۡغَيۡبِ
فَلَا يُظۡهِرُ عَلَىٰ غَيۡبِهِۦٓ أَحَدًا ٢٦ إِلَّا مَنِ ٱرۡتَضَىٰ مِن رَّسُولٖ فَإِنَّهُۥ
يَسۡلُكُ مِنۢ بَيۡنِ يَدَيۡهِ وَمِنۡ خَلۡفِهِۦ رَصَدٗا ٢٧﴾ [الجن: ٢٦، ٢٧]
“তিনি গায়েবের
জ্ঞানে জ্ঞানী। সুতরাং
তার অদৃশ্য জ্ঞানকে কারও জন্য প্রকাশ করেন না, তবে যে রাসূল
এর ব্যাপারে তিনি সন্তুষ্ট তিনি তাকে তার সম্মুখ ও পশ্চাৎ থেকে হিফাজত করেন।” [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ২৬-২৭]
অন্য আয়াতে বলেন,
﴿وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ
ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۚ
وَمَا تَسۡقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعۡلَمُهَا وَلَا حَبَّةٖ فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡأَرۡضِ
وَلَا رَطۡبٖ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٥٩﴾ [الانعام: ٥٩]
“আর তার কাছেই
সমস্ত অদৃষ্ট বস্তুর চাবিকাঠি, এগুলো তিনি ছাড়া আর কেউ
জানে না, তিনি জানেন যা ডাঙ্গায় আছে আর যা সমুদ্রে আছে।
যে কোনো (গাছের) পাতাই পতিত হয় তিনি তা জানেন, জমিনের
অন্ধকারের কোনো শস্য বা কোনো শুষ্ক বা আর্দ্র বস্তু সবই এক প্রকাশ্য গ্রন্থে
সন্নিবেশিত আছে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫৯]
পাঁচ: আল্লাহ ছাড়া যার
ইবাদত করা হয় এবং সে এই ইবাদতে সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَن يَقُلۡ مِنۡهُمۡ
إِنِّيٓ إِلَٰهٞ مِّن دُونِهِۦ فَذَٰلِكَ نَجۡزِيهِ جَهَنَّمَۚ كَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلظَّٰلِمِينَ
٢٩﴾ [الانبياء: ٢٩]
“আর তাদের থেকে
যে বলবে- আল্লাহ ব্যতীত আমি উপাস্য, তাকে আমি জাহান্নাম
দ্বারা পরিণাম ফল প্রদান করব, এভাবেই আমি অত্যাচারীদের
পরিণাম ফল প্রদান করে থাকি”। [সূরা
আল-আন্বিয়া, আয়াত: ২৯]
মনে রাখা দরকার
যে, কোনো মানুষ তাগুতের ওপর কুফুরী ছাড়া ইমানদার হতে পারে না, আল্লাহ বলেন,
﴿فَمَن يَكۡفُرۡ
بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰ
لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾ [البقرة: ٢٥٦]
“সুতরাং যে
তাগুতের সাথে কুফুরী করে এবং আল্লাহর ওপর ঈমান আনে সে এমন মজবুত রজ্জুকে ধারণ করতে
সক্ষম হয়েছে যার কোনো বিভক্তি বা চিড় নেই, আর আল্লাহ সর্ব
শ্রোতা ও সর্ব জ্ঞানী।” [সূরা আল-বাকারা,
আয়াত: ২৫৬]
এ আয়াতের পূর্বাংশে আল্লাহ
বলেছেন যে, “বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন পথ, ভ্রষ্ট-পথ
থেকে স্পষ্ট হয়েছে”। ‘বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন পথ’ বলতে রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীনকে, আর ‘ভ্রান্ত-পথ’ বলতে আবু জাহলের দীন, আর এর পরবর্তী আয়াতের ‘মজবুত রশি বা রজ্জু’ দ্বারা লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ (বা আল্লাহ ছাড়া হক কোনো উপাস্য নেই) এ সাক্ষ্য প্রদানকে বুঝিয়েছেন।
‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’ এ কলেমা কিছু জিনিসকে নিষেধ করে এবং কিছু
বস্তুকে সাব্যস্ত করে, সকল প্রকার ইবাদতকে আল্লাহর ছাড়া
অন্যের জন্য হওয়া নিষেধ করে। শুধুমাত্র লা-শরীক আল্লাহর জন্য সকল প্রকার ইবাদতকে নির্দিষ্ট করে।
والحمد لله الذي بنعمته تتم الصالحات.
“আল্লাহর জন্যই সমস্ত শোকর,
যার নি‘আমত ও
অনুগ্রহেই যাবতীয় ভালো কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে।”
সমাপ্ত
এটি একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু মূল্যবান পুস্তক, যা জানা একান্ত কর্তব্য।
এ পুস্তকে বর্ণিত মূলনীতিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: বান্দার
জন্য তার রব সম্পর্ক জ্ঞান, তার রব তাকে কী রকম ইবাদাত পালনের নির্দেশ দিয়েছেন- সে জ্ঞান, দীন সম্পর্কে জ্ঞান, লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ-এর শর্তাবলি, ইসলাম বিনষ্টকারী বেশ কিছু বিষয়াবলি, তাওহীদ ও এর প্রকারভেদ, তাওহীদের বিপরীতে শির্ক
ও এর প্রকারভেদ ইত্যাদি।

[1] সহীহ মুসলিম: (১/৫৫), হাদীস নং ২৬।
[2] সহীহ মুসলিম: (১/৫৬), হাদীস
নং ২৭০।
[3] সহীহ মুসলিম (১/৫৬), হাদীস
নং ২৭০।
[4] সহীহ মুসলিম (১/৫৯)।
[5] সহীহ বুখারী, হাদীস
নং ৯৯।
[6] সহীহ বুখারী, হাদীস
নং ৪২৫; সহীহ মুসলিম (১/৪৫৬), হাদীস নং ২৬৩।
[7] নাসাঈ, আমালুল
ইয়াওমে ওয়াল্লাইলা, হাদীস নং ২৮।
[8] সহীহ বুখারী, হাদীস
নং ১২৮; সহীহ মুসলিম: (১/৬১)।
[9] সহীহ বুখারী, হাদীস
নং ৪৩; সহীহ মুসলিম: (১/৬৬)।
[10] হাদীসটি খতীব বাগদাদী তার তারিখে
বাগদাদের ৪/৩৬৯ এবং বাগাভী তার শারহুস্সুন্নাহ-এর ১০৪ নং -এ বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সনদ শুদ্ধ
হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ আছে।
[11] সহীহ বুখারী (১/১৭৫) হাদীস নং
৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৮২।
[12] এর প্রমাণ কুআনের বাণী:
﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ كَرِهُواْ مَآ أَنزَلَ
ٱللَّهُ فَأَحۡبَطَ أَعۡمَٰلَهُمۡ ٩﴾ [محمد: ٩]
“আর এটা (জাহান্নামে যাওয়া) এ-জন্যই যে,
তারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা অপছন্দ করেছে, ফলে তিনি তাদের কর্মকাণ্ড নষ্ট করে দিয়েছেন”। [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৯]
[13] সুনান তিরমিযি, হাদীস নং ৩০৯৪। হাদীসটি হাসান।
[14] হাদীসটি ইবন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে। সনদটি হাসান।
[15] হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার
মুসনাদে (১/৭৬) বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেছেন।
[16] সহীহ বুখারী (১/৮৩); মহীহ মুসলিম (১/৭৮), হাদীস
নং ৫৯।
[17] সহীহ বুখারী (১/৮৪); সহীহ মুসলিম (১/৭৮), হাদীস
নং ৫৮।
