সদকা-খয়রাত
মোস্তাফিজুর রহমান ইবন
আব্দুল আযীয আল-মাদানী
|
ক্রম |
বিষয় |
পৃষ্ঠা |
|
1.
|
ভূমিকা |
|
|
2.
|
লেখকের কথা |
|
|
3.
|
অবতরণিকা |
|
|
4.
|
সর্বদা সদকা-খয়রাত করা
মানে এ সংক্রান্ত আল্লাহর নির্দেশ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বাস্তবায়ন করা |
|
|
5.
|
আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত করলে তা
বহুগুণে পাওয়া যায় |
|
|
6.
|
আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য সদকা-খয়রাত
করলে তা কখনোই বৃথা যায় না |
|
|
7.
|
সদকা-খয়রাত এমন এক ব্যবসা যার কোনো ক্ষয়-ক্ষতি নেই |
|
|
8.
|
কিয়ামতের দিন আল্লাহ
তা‘আলার
পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত দানকারীর কোনো ভয়-ভীতি থাকবে না |
|
|
9.
|
আল্লাহ তা‘আলার পথে নিজের পছন্দনীয় বস্তু সদকা
করা মানে সমূহ কল্যাণের নাগাল পাওয়া |
|
|
10. |
শুধু সদকা করার মধ্যেই
নয় বরং কাউকে সদকা দেওয়ার আদেশের মধ্যেও মহা কল্যাণ ও উত্তম প্রতিদান রয়েছে |
|
|
11. |
আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত তাঁর ক্ষমা ও
জান্নাত পাওয়ার একটি বিরাট মাধ্যম এবং তা একজন আল্লাহভীরুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য |
|
|
12. |
যাঁরা আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত করেন
তাঁরা প্রকৃত ঈমানদার |
|
|
13. |
আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত সদকাকারীকে সকল
প্রকারের গুনাহ্ ও পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত ও পবিত্র করে |
|
|
14. |
আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত
সদকাকারীর সঠিক বিচার-বুদ্ধির পরিচয় বহন করে |
|
|
15. |
যাঁরা আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত করেন
সত্যিকারার্থে তাঁরাই কুরআনুল কারীম ও আল্লাহ তা‘আলার
নিদর্শনাবলীতে দৃঢ় বিশ্বাসী |
|
|
16. |
যাঁরা আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত করেন তাঁরা সত্যিকারার্থেই বিনয়ী |
|
|
17. |
সদকা-খয়রাত
পূণ্য তথা জান্নাতের পথ এবং কার্পণ্য অনিষ্ট তথা জাহান্নামের পথকে সহজ করে দেয় |
|
|
18. |
কার্পণ্যকে ঝেড়ে-মুছে সর্বদা সদকা-খয়রাত করতে
থাকা সফলতারই সোপান |
|
|
19. |
আল্লাহ
তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত তাঁর
নৈকট্য লাভের একটি বিরাট মাধ্যম |
|
|
20. |
আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি বিরাট মাধ্যম |
|
|
21. |
সদকাকারীর জন্য প্রতিদিন একজন ফিরিশতা বরকতের দো‘আ করেন |
|
|
22. |
লুকিয়ে সদকা-খয়রাত করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার আরশের নিচে ছায়া পাওয়া যাবে |
|
|
23. |
লুকায়িত
সদকা আল্লাহ তা‘আলার
রাগ ও ক্রোধ নিঃশেষ করে দেয় |
|
|
24. |
সদকা-খায়রাতের হাত হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ হাত |
|
|
25. |
সদকা-খয়রাত
রুগ্ন ব্যক্তির জন্য এক মহৌষধ |
|
|
26. |
সদকা-খয়রাত কিয়ামতের দিন সদকাকারীকে সূর্যের
ভীষণ তাপ থেকে ছায়া দেবে |
|
|
27. |
সদকা-খয়রাত সদকাকারীকে কবরের উত্তাপ থেকে রক্ষা করবে |
|
|
28. |
সদকা-খয়রাত সদকাকারীকে
সমূহ বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে |
|
|
29. |
দীর্ঘস্থায়ী
সদকার সাওয়াব মৃত্যুর পরেও পাওয়া যায় |
|
|
30. |
সদকা-খয়রাত হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আমল |
|
|
31. |
সদকা-খায়রাতের
পাল্লা হচ্ছে সবচাইতে বেশি ভারী |
|
|
32. |
সদকা সম্পর্কে সালফে সালিহীনদের কিছু কথা |
|
|
33.
|
সদকা
সংক্রান্ত কিছু কথা |
|
|
34. |
যে ধনী সদকা-খয়রাত করে না সে নিশ্চয়
ক্ষতিগ্রস্ত |
|
|
35. |
সময়
থাকতেই সদকা করুন |
|
|
36.
|
ঈমান ও কার্পণ্য আল্লাহর কোনো বান্দাহ্’র অন্তরে কখনো একত্রিত হতে পারে না |
|
|
37. |
সম্পদের
বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে এমন মুহূর্তে সামান্যটুকু সদকা করলেও অনেক বেশি সাওয়াব
পাওয়া যায় প্রয়োজনাতিরিক্ত অধিক সম্পদ সদকা করার চাইতে |
|
|
38.
|
আপনি নিজে সদকা দিতে সুযোগ পাচ্ছেন না; তাই অন্যকে বলে রাখবেন আপনার পক্ষ
থেকে সদকা দিতে, তাতে আপনার সাওয়াবের এতটুকুও ঘাটতি হবে
না |
|
|
39. |
নিজের
কাছে সদকা দেওয়ার মতো কোনো কিছু না থাকলেও অন্যের সদকা বন্টনের দায়িত্ব পালন
করলে তাতে সদকার সাওয়াব পাওয়া যায় |
|
|
40. |
আত্মীয়-স্বজনকে সদকা-খয়রাত
করলে দু’টি
সাওয়াব পাওয়া যায় |
|
|
41. |
আত্মীয়-স্বজনদের
মধ্যে যে আবার আপনার প্রতি অধিক শত্রুভাবাপন্ন তাকে সদকা-খয়রাত করা আরো বেশি
সাওয়াবের কাজ |
|
|
42. |
কোনো ব্যক্তি তার কোনো আত্মীয়-স্বজন বা মনিবের
নিকট কোনো কিছু চাইলে সে যদি তাকে তা না দেয় তা হলে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জাহান্নামের একটি
বিষধর সাপ নির্ধারিত করবেন যা তাকে লাগাতার দংশন করবে |
|
|
43. |
এ
পর্যন্ত কতো টাকা সদকা করেছেন অথবা এখন আপনি কতো টাকা সদকা করতে যাচ্ছেন তার
হিসেব রাখা ঠিক নয় |
|
|
44. |
যা পারেন সদকা করুন; টাকা-পয়সা সর্বদা পকেটে পুরে
রাখবেন না |
|
|
45. |
সদকা-খয়রাত শরীয়তসম্মত একটি ঈর্ষণীয় বিষয় |
|
|
46. |
সদকা লুকায়িতভাবে এবং ডান হাতে দেওয়াই বেশী
ইসলামসম্মত |
|
|
47. |
কোনো
কিছু আল্লাহ তা‘আলার
পথে সদকা করতে মনে চাইলেই সাথে সাথে তা সদকা করুন; এতটুকুও
দেরি করবেন না |
|
|
48. |
সদকাকারী ও কৃপণের একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত |
|
|
49. |
প্রত্যেক
মুসলিমেরই একান্ত কর্তব্য, নিজের পক্ষ থেকে কিছু না কিছু সদকা করা তা যেভাবেই হোক না কেন;
তবে সদকা দেওয়ার মতো তার কাছে কোনো কিছু না থাকলে সে যেন কোনো
না কোনো ভালো কাজ করে দেয় তাও তার জন্য সদকা হয়ে যাবে |
|
|
50. |
কেউ সদকা করলে তার জন্য দো‘আ করতে হয় |
|
|
51. |
কেউ
আপনার নিকট সদকা নিতে আসলে আপনি তাকে যথাসাধ্য সন্তুষ্ট রাখতে চেষ্টা করবেন |
|
|
52. |
যারা দুনিয়াতে অঢেল সম্পদের মালিক তারা
কিয়ামতের দিন অত্যন্ত গরিব হবেন যতক্ষণ না তারা আল্লাহ তা‘আলার পথে বিপুলভাবে সদকা-খয়রাত করেন |
|
|
53. |
একমাত্র
হালাল, পবিত্র এবং উত্তম বস্তুই আল্লাহ
তা‘আলার পথে সদকা করতে হয় |
|
|
54. |
হারাম বস্তু সদকা করলে কোনো সাওয়াব পাওয়া যায়
না |
|
|
55. |
সদকা
করলে মানুষ গরিব হয়ে যায় এ কথা একমাত্র শয়তানেরই প্রবঞ্ছনা |
|
|
56. |
কোনো জায়গায় সদকার আলোচনা চললে যে ব্যক্তি
সর্বপ্রথম সদকা করবে সে তৎপরবর্তী সকল সদকার
সাওয়াব একাই পাবে |
|
|
57. |
সদকাকারীদেরকে
তিরস্কার করা মুনাফিকের আলামত |
|
|
58. |
কোনো জিনিস অতি সামান্য হলেও তা সদকা করতে
অবহেলা করবেন না |
|
|
59. |
যে
ব্যক্তি অত্যন্ত গরিব; অথচ
সে এতদসত্ত্বেও কারোর কাছে কোনো কিছু চায় না তাকেই সদকা করা উচিত |
|
|
60. |
মুত্তাকি ব্যক্তিকে সদকা দেওয়া অনেক ভালো; তবে কেউ যদি অভাবে পড়ে ঈমান
হারানোর ভয় থাকে তা হলে তাকেও সদকা করা প্রয়োজন |
|
|
61. |
কৃপণতা সমূহ ধ্বংসের মূল |
|
|
62. |
কোনো দুধেল পশু অথবা যা থেকে সদকা গ্রহণকারী
সর্বদা বা সুদীর্ঘ কাল লাভবান হতে পারে এমন বস্তু সদকা করা বা ধার দেওয়া অত্যধিক
সাওয়াবের কাজ |
|
|
63.
|
কোনো মৃত ব্যক্তির জন্য সদকা করলে তা অবশ্যই
তার আমলনামায় পৌঁছায় |
|
|
64. |
নিজ স্ত্রী-সন্তানের প্রয়োজনীয় খরচ চালানোর
মধ্যেও সদকার সাওয়াব রয়েছে |
|
|
65. |
কাউকে কোনো কিছু ঋণ দেওয়া মানে তাকে তা সদকা
করা |
|
|
66.
|
যার খাদ্য নেই আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছে করলেই তাকে খাদ্য দিতে
পারেন তা হলে আমরা কেন তাকে খাদ্য দেবো এ চিন্তা কাফিরদেরই চিন্তা |
|
|
67. |
সময় থাকতেই সদকা-খয়রাত করুন; যাতে মৃত্যুর সময় আফসোস করে বলতে
না হয়, আহ্! আর একটু সময় পেলে তো সবগুলো সম্পদ সদকা করে
ফেলতাম |
|
|
68.
|
যারা কুরআন-হাদীস ও মাদ্রাসা-মক্তব নিয়ে ব্যস্ত
তাদেরকে যারা সদকা দিতে নিষেধ করে তারা মুনাফিক |
|
|
69. |
কৃপণতা একমাত্র মুনাফিকেরই
পরিচয় এবং তারাই অন্যদেরকে আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত করতে নিষেধ করে |
|
|
70. |
যারা আল্লাহ তা‘আলার নিকট এ মর্মে দো‘আ করছে
যে, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যথেষ্ট সম্পদ দিলে আপনার পথে
অবশ্যই ব্যয় করবো; অথচ সম্পদ পেলে আর তাঁর পথে কিছুই
ব্যয় করে না তারা খাঁটি মুনাফিক |
|
|
71. |
সদকা দিতে গিয়ে হঠকারিতা দেখানো অথবা
আক্রমণাত্মক আচরণ করা সদকা না দেওয়ারই শামিল |
|
|
72. |
সাধারণত নিজের সচ্ছলতা বজায়
রেখেই সদকা করা অধিক শ্রেয় |
|
|
73. |
তবে
কারোর ঈমান সবল হলে তার সামান্য আয় থেকেও কিছু সদকা করা তার জন্য অনেক ভালো |
|
|
74. |
যা সদকা-খয়রাত করা হয় তাই আসল সম্পদ |
|
|
75. |
কারোর দেওয়া দান-সদকা ওয়ারিশি সূত্রে পুনরায় আবার তার
নিকট ফেরত আসলে তা গ্রহণ করতে তার কোনো অসুবিধে নেই |
|
|
76. |
কোনো কিছু সদকা দেওয়ার পর তা কোনো ভাবেই নিজের
কাছে ফেরত আনা ঠিক নয় |
|
|
77. |
একমাত্র
আল্লাহ তা‘আলার
সন্তুষ্টির জন্য সঠিক পন্থায় সদকা উসুলকারী আল্লাহ তা‘আলার
পথে যুদ্ধ করার সাওয়াব পাবে যতক্ষণ না সে ঘরে ফিরে আসে |
|
|
78. |
সদকাকারীর জন্য এটা বাধ্যতামূলক নয় যে, সে যথাস্থানে গিয়ে তার সদকা
পৌঁছিয়ে দিবে। বরং সদকা উসুলকারীর উচিত তার কাছে গিয়ে সদকা উসুল করা |
|
|
79. |
সদকা
বা ব্যয়ের স্তর বিন্যাস |
|
|
80. |
সদকা দেওয়ার কিছু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র |
|
|
81. |
জনকল্যাণে
পাড়ায় পাড়ায় পানি সরবরাহের জন্য পুকুর বা নলকূপ খনন করা |
|
|
82. |
কাউকে কোনো দুধেল পশু ধার দেওয়া |
|
|
83.
|
কোনো
ঋণগ্রস্তকে তার ঋণ পরিশোধে সহযোগিতার জন্য যথাসাধ্য সদকা দেওয়া |
|
|
84. |
সুযোগ পেলেই কাউকে খানা খাওয়ানো |
|
|
85. |
মানুষের মাঝে যে কোনো ধরনের বিশুদ্ধ ধর্মীয় বই-পুস্তক, কুরআন মাজীদ,
তাফসীর, সহীহ হাদীস, ওয়ায-নসীহতের বিশুদ্ধ অডিও-ভিডিও কিংবা সিডি ক্যাসেট ও লিফলেট
ইত্যাদি বিতরণ করা |
|
|
86.
|
কুরআন মাজীদ, তাফসীর, সহীহ হাদীস কিংবা যে
কোনো বিশুদ্ধ ধর্মীয় বই-পুস্তক, লিফলেট, দেওয়ালিকা ইত্যাদি মানুষের মাঝে ফ্রি বিতরণের জন্য দেশে দেশে
অত্যাধুনিক প্রিন্টিং প্রেস অথবা আধুনিক রুচি ও উচ্চ মানসম্পন্ন ইসলামী পুস্তক
প্রকাশনী প্রতিষ্ঠা করা |
|
|
87. |
জায়গায় জায়গায়
মসজিদ-মাদ্রাসা ও ধর্মীয় সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা |
|
|
88.
|
সর্বসাধারণের জ্ঞান আহরণের সুবিধার জন্য জায়গায়
জায়গায় পাঠাগার বা গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা |
|
|
89. |
মানুষের সুবিধার জন্য
জায়গায় জায়গায় ফলদার বৃক্ষ রোপণ করা |
|
|
90. |
মুসাফিরদের রাত্রি যাপনের সুবিধার জন্য ট্রেন
বা বাস স্টেশনগুলোর আশে-পাশে খাবারের ব্যবস্থাসহ সম্পূর্ণ আবাসিক হোটেল তৈরি করা |
|
|
91. |
কোনো এতিমের ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণ করা |
|
|
92. |
বিধবা ও মিসকীনের ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণ
করা |
|
|
93. |
যে কোনো সাওম পালনকারীকে ইফতার করানো |
|
|
94. |
পূর্ব যুগের নিষ্ঠাবান সদকাকারীদের কিছু ঘটনা |
|
ভূমিকা
সমাজ নিয়ে যারা গবেষণা করেন এবং সমাজ-জমির বুক থেকে যারা
আগাছা তুলে ফেলার চেষ্টা করেন, তাঁদের মধ্যে লেখক মুস্তাফিযুর রহমান মাদানী সাহেব
একজন। হক জেনে ও মেনে নিয়ে তার প্রচার করার গুরুদায়িত্ব এবং তার পথে তাঁর অদম্য
প্রয়াস ও প্রচেষ্টা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
সমাজ-সংস্কারের কাজে তাঁর এ পুস্তিকাটিও একটি ভালো
প্রচেষ্টা। সমাজে এত পাপ ও পাপীর
দাপট যে, অনেকের
সাপ থেকে বাঁচা সম্ভব, কিন্তু পাপ থেকে বাঁচা সহজ নয়।
বিশ্বায়নের যুগে দীন-বিমুখ সমাজ বহুবিধ পাপের বন্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে। তা
দেখে-শুনে প্রত্যেক দায়িত্বশীলের যে কর্তব্য হওয়া উচিত, তার
কিঞ্চিৎ বহিঃপ্রকাশ এই পুস্তিকার প্রণয়ন।
মহান আল্লাহর কাছে আকুল মিনতি, তিনি যেন আমাদেরকে ও লেখককে
কলমের জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার তাওফীক দিন। দেশে-বিদেশে ইসলামী পরিবেশ গড়ার মহান
লক্ষ্যে পুস্তক রচনার কাজ চালিয়ে যাওয়ার তাওফীক দিন এবং পাঠক-পাঠিকাকে পুস্তিকার
নির্দেশানুযায়ী আমল করার প্রেরণা এবং মুসলিম ঘর ও সমাজ গড়ার চেতনা দান করুন। আমীন।
বিনীত-
আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী
আল-মাজমাআহ, সঊদী আরব/৩০/১১/১১ইং
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ
লেখকের কথা
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ بِحَمْدِهِ تَدُوْمُ
النِّعَمُ، وَالشُّكْرُ لِلَّهِ الَّذِيْ بِشُكْرِهِ تَزْدَادُ النِّعَمُ،
وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى خَيْرِ خَلْقِهِ أَجْمَعِيْنَ، نَبِيِّنَا
مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِهِ وَصَحْبِـهِ أَجْمَعِيْنَ، وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ
إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ.
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যাঁর প্রশংসা করলে নি‘আমত স্থিতিশীল হয় এবং সকল কৃতজ্ঞতাও তাঁরই যাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে নি‘আমত ক্রমাগত বেড়ে যায়। সকল সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহ তা‘আলার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির উপর যিনি হচ্ছেন আমাদের নবী মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও
সকল সাহাবীয়ে কিরামের উপর। আরো বর্ষিত হোক ওঁদের উপর যারা কিয়ামত পর্যন্ত তাঁদের
নিষ্ঠাবান অনুসারী।
যখন কাউকে ধর্মীয় কোনো কাজে দান বা সদকা করতে বলা হয় তখন
সে মনে করে, আরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে পয়সা-কড়ি আমি দীর্ঘ দিন যাবত অর্জন করেছি
কারোর সামান্য কথায় এমনিতেই আমি তা দিয়ে দেবো তা কি করে হয়? এ কষ্টের পয়সা বিনিয়োগের আগে সর্বপ্রথম আমাকে যে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে
হবে তা হচ্ছে, এতে আমার কি লাভ? এর
বিনিময়ে দুনিয়া বা আখিরাতে আমি কি পাবো? ইত্যাদি ইত্যাদি।
উক্ত মানসিকতার দ্বিধা নিরসনের জন্যই অত্র পুস্তিকাটির
অবতারণা।
পুস্তিকাটিতে সদকার কিছু ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য উল্লিখিত হয়েছে।
অত্যন্ত
আনন্দের বিষয় হচ্ছে এই যে,
এ পুস্তিকাটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পৃক্ত যতগুলো হাদীস উল্লিখিত হয়েছে সাধ্যমত তার
বিশুদ্ধতার প্রতি সযত্ন দায়িত্বশীল দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিদেনপক্ষে
সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা নাসেরুদ্দীন আলবানী রহ. এর হাদীস
শুদ্ধাশুদ্ধ নির্ণয়ননীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও সকল যোগ্য গবেষকদের
পুনর্বিবেচনার সুবিধার্থে প্রতিটি হাদীসের সাথে তার প্রাপ্তিস্থাননির্দেশ সংযোজন
করা হয়েছে। তবুও সম্পূর্ণরূপে নির্ভুল হওয়ার জোর দাবি করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি না।
শব্দ
ও ভাষাগত প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি বিজ্ঞ পাঠকবর্গের চক্ষুগোচরে আসা অস্বাভাবিক কিছু
নয়। তবে ভুল যত সামান্যই হোক না কেন লেখকের দৃষ্টিগোচর করলে চরম কৃতজ্ঞতাপাশে
আবদ্ধ থাকবো। যে কোনো কল্যাণকর পরামর্শ দিয়ে দাওয়াতী স্পৃহাকে আরো বর্ধিতকরণে
সর্বসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আল্লাহ তা‘আলা সবার সহায় হোন।
এ
পুস্তিকা প্রকাশে যে কোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য সবার সমুচিত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। ইহপরকালে আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেককে কামিয়াব করুন তাই
হচ্ছে আমার সর্বোচ্চ আশা। আমীন, সুম্মা আমীন ইয়া রব্বাল ‘আলামীন।
সর্বশেষে
জনাব শাইখ আব্দুল হামীদ ফায়যী সাহেবের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছি না
যিনি অনেক ব্যস্ততার মাঝেও আমার আবেদনক্রমে পান্ডুলিপিটি আদ্যপান্ত অত্যন্ত
গুরুত্বের সাথে দেখেছেন এবং তাঁর অতীব মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে এর উত্তম প্রতিদান
দিন এবং তাঁর জ্ঞান আরো বাড়িয়ে দিন এ আশা রেখে এখানেই শেষ করলাম।
লেখক
بِسْمِ اللهِ
الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ
অবতরণিকা
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ،
وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى سَيِّدِ الـْمُرْسَلِيْنَ، نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ
وَّعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ، وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى
يَوْمِ الدِّيْنِ.
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি সর্ব জাহানের
প্রতিপালক। সকল দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূলদের নেতা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ ও সকল সাহাবায়ে কিরাম এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁদের
নিষ্ঠাবান সকল অনুসারীদের উপর।
গরিব ও দুস্থ মানুষের সহযোগিতা, তাদের মুখে হাসি ফুটানো,
সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ এবং পবিত্র ইসলামের প্রচার ও
প্রসারে সদকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সত্যিই অনস্বীকার্য। তাই তো আল্লাহ তা‘আলা ইসলাম প্রচারে নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করাকে তাঁর পথে জিহাদ বলে
আখ্যায়িত করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ
ثُمَّ لَمۡ يَرۡتَابُواْ وَجَٰهَدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ
أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ ١٥ ﴾ [الحجرات: ١٥]
“সত্যিকার মু’মিন
ওরা যারা আল্লাহ তা‘আলা ও তদীয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ঈমান আনার পর আর কোনো সন্দেহ পোষণ
করেনি এবং নিজ সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহ তা‘আলার পথে
জিহাদ করেছে, তারাই সত্যনিষ্ঠ”। [সূরা
আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৫]
বরং আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে যখনই জিহাদের কথা
উল্লেখ করেছেন তখনই মালের জিহাদকে জানের জিহাদের আগেই উল্লেখ করেছেন। উপরোক্ত আয়াত
এরই প্রমাণ বহন করে। তবে কুরআনের একটিমাত্র জায়গায় আল্লাহ তা‘আলা জানের জিহাদকে মালের জিহাদের আগেই উল্লেখ করেন। যা নিম্নরূপ,
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ ٱشۡتَرَىٰ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَنفُسَهُمۡ وَأَمۡوَٰلَهُم
بِأَنَّ لَهُمُ ٱلۡجَنَّةَۚ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيَقۡتُلُونَ وَيُقۡتَلُونَۖ
﴾ [التوبة: ١١١]
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে
নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে। তারা আল্লাহ তা‘আলার পথে
যুদ্ধ করবে। তারা অন্যকে হত্যা করবে এবং পরিশেষে তারা নিজেরাও নিহত হয়ে যাবে।
[সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১১১]
তাই নিম্নে সদকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফযীলত বর্ণনা করা
হলো। আশা করি মুসলিম জনসাধারণ এতে নিশ্চয় উদ্বুদ্ধ হবেন।
১. সর্বদা সদকা-খয়রাত
করা মানে এ সংক্রান্ত আল্লাহর নির্দেশ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বাস্তবায়ন করা:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ قُل لِّعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ يُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُنفِقُواْ
مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ يَوۡمٞ لَّا بَيۡعٞ
فِيهِ وَلَا خِلَٰلٌ ٣١ ﴾ [ابراهيم: ٣١]
“(হে রাসূল!) তুমি আমার মু’মিন বান্দাহদেরকে বলে দাও, যেন তারা সালাত
কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে (একমাত্র আল্লাহর
সন্তুষ্টির জন্য তাঁরই পথে) ব্যয় করে, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন ক্রয়-বিক্রয় এবং
বন্ধুত্ব বলতে কিছুই থাকবে না”। [সূরা
ইবরাহীম, আয়াত: ৩১]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ ءَامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَأَنفِقُواْ مِمَّا جَعَلَكُم مُّسۡتَخۡلَفِينَ
فِيهِۖ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وأَنفَقُواْ لَهُمۡ أَجۡرٞ كَبِيرٞ ٧ ﴾ [الحديد: ٧]
“তোমরা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনো এবং আল্লাহ তা‘আলা
তোমাদেরকে যা কিছুর উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন তা থেকে কিছু (তাঁর রাস্তায়) ব্যয় করো।
অতএব তোমাদের মধ্য থেকে যারা (আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর) ঈমান এনেছে এবং
(তাঁর রাস্তায় নিজেদের ধন-সম্পদ) ব্যয় করেছে তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার”। [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ৭]
২. আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত করলে তা বহু গুণে
পাওয়া যায়:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ مَّن ذَا ٱلَّذِي يُقۡرِضُ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا فَيُضَٰعِفَهُۥ لَهُۥٓ
أَضۡعَافٗا كَثِيرَةٗۚ وَٱللَّهُ يَقۡبِضُ وَيَبۡصُۜطُ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ ٢٤٥
﴾ [البقرة: ٢٤٥]
“তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে আল্লাহ তা‘আলাকে উত্তম ঋণ দিবে তথা আল্লাহ
তা‘আলার পথে সদকা করবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে তা বহু বহু গুণে বাড়িয়ে দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলাই কাউকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল করেন এবং তাঁর দিকেই
তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তিত হতে হবে”। [সূরা
আল-বাকারা, আয়াত: ২৪৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ مَّثَلُ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ كَمَثَلِ
حَبَّةٍ أَنۢبَتَتۡ سَبۡعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنۢبُلَةٖ مِّاْئَةُ حَبَّةٖۗ وَٱللَّهُ
يُضَٰعِفُ لِمَن يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ ٢٦١ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمۡ
فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ ثُمَّ لَا يُتۡبِعُونَ مَآ أَنفَقُواْ مَنّٗا وَلَآ أَذٗى لَّهُمۡ
أَجۡرُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ وَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٢٦٢ ﴾ [البقرة: ٢٦١، ٢٦٢]
“যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে নিজেদের ধন-সম্পদগুলো ব্যয় করে তাদের উপমা যেমন একটি শস্য
বীজ। যা থেকে উৎপন্ন হয়েছে সাতটি শীষ। প্রত্যেক শীষে রয়েছে শত শস্য। আর আল্লাহ তা‘আলা যার জন্য ইচ্ছে করবেন তাকে আরো বাড়িয়ে দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা হচ্ছেন মহান দাতা ও মহাজ্ঞানী। যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে নিজেদের ধন-সম্পদগুলো ব্যয় করে এবং সে জন্য কাউকে খোঁটাও দেয়
না, না দেয় কষ্ট। তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রভুর পক্ষ
থেকে বিশেষ পুরস্কার। বস্তুতঃ তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা কখনো চিন্তাগ্রস্তও হবে
না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৬১-২৬২]
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِن تُقۡرِضُواْ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا يُضَٰعِفۡهُ لَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ
لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ شَكُورٌ حَلِيمٌ ١٧ ﴾ [التغابن: ١٧]
“তোমরা যদি আল্লাহ তা‘আলাকে উত্তম ঋণ দান করো তথা তাঁর পথে সদকা-খয়রাত করো তা হলে তিনি
তোমাদেরকে তা বহু গুণে বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা মহা গুণগ্রাহী ও অত্যন্ত সহনশীল”। [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৭]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلۡمُصَّدِّقِينَ وَٱلۡمُصَّدِّقَٰتِ وَأَقۡرَضُواْ ٱللَّهَ قَرۡضًا
حَسَنٗا يُضَٰعَفُ لَهُمۡ وَلَهُمۡ أَجۡرٞ كَرِيمٞ ١٨ ﴾ [الحديد: ١٨]
“নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীলা নারী এবং যারা
আল্লাহ তা‘আলাকে উত্তম ঋণ দান করে তাদেরকে দেওয়া হবে
বহুগুণ বেশী সাওয়াব এবং তাদের জন্য রয়েছে অত্যন্ত সম্মানজনক মহা পুরস্কার”। [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ১৮]
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَمۡحَقُ ٱللَّهُ ٱلرِّبَوٰاْ وَيُرۡبِي ٱلصَّدَقَٰتِۗ وَٱللَّهُ لَا
يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ ٢٧٦ ﴾ [البقرة: ٢٧٦]
“আল্লাহ তা‘আলা
সুদের বরকত উঠিয়ে নেন এবং সদকা বর্ধিত করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা অতি কৃতঘ্ন তথা কাফির পাপাচারীদেরকে ভালোবাসেন না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৬]
কোনো সদকায় সাতটি গুণ পাওয়া গেলে তা বহুগুণে বেড়ে যায়।
যা নিম্নরূপঃ
ক. সদকা হালাল হওয়া।
খ. নিজের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও সদকা করা।
গ. দ্রুত সদকা করা।
ঘ. পছন্দনীয় বস্তু সদকা করা।
ঙ. লুকিয়ে সদকা করা।
চ. সদকা দিয়ে তুলনা না দেওয়া।
ছ. সদকাগ্রহীতাকে কোনোভাবে কষ্ট না দেওয়া।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
«مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلاَ
يَقْبَلُ اللَّهُ إِلَّا الطَّيِّبَ، وَإِنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ،
ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ، كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ، حَتَّى
تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ»
“যে ব্যক্তি হালাল কামাই থেকে একটি খেজুর সমপরিমাণ সদকা করবে (আর আল্লাহ
তা‘আলা তো একমাত্র হালাল বস্তুই গ্রহণ করে থাকেন) আল্লাহ
তা‘আলা তা ডান হাতে গ্রহণ করবেন। অতঃপর তা তার কল্যাণেই
বর্ধিত করবেন যেমনিভাবে তোমাদের কেউ একটি ঘোড়ার বাচ্চাকে সুন্দরভাবে লালন-পালন করে
বর্ধিত করে। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা পরিশেষে সে খেজুর
সমপরিমাণ বস্তুটিকে একটি পাহাড় সমপরিমাণ বানিয়ে দেন”।[1]
৩. একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য সদকা-খয়রাত
করলে তা কখনোই বৃথা যায় না:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَثَلُ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمُ ٱبۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِ
ٱللَّهِ وَتَثۡبِيتٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ كَمَثَلِ جَنَّةِۢ بِرَبۡوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٞ
فََٔاتَتۡ أُكُلَهَا ضِعۡفَيۡنِ فَإِن لَّمۡ يُصِبۡهَا وَابِلٞ فَطَلّٞۗ وَٱللَّهُ
بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٌ ٢٦٥ ﴾ [البقرة: ٢٦٥]
“যারা পরকালের প্রতিদানে দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই তাঁর পথে দান করে তাদের উপমা যেমন উঁচু জমিনে
অবস্থিত একটি উদ্যান। তাতে প্রবল বৃষ্টি হলে ফসল হয় দ্বিগুণ। আর তা না হলে শিশিরই
সে জমিনের জন্য যথেষ্ট। তোমরা যাই করছো আল্লাহ তা‘আলা তা
সবই দেখছেন”। [আল-বাকারা, আয়াত: ২৬৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ ۞لَّيۡسَ عَلَيۡكَ هُدَىٰهُمۡ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يَهۡدِي مَن يَشَآءُۗ
وَمَا تُنفِقُواْ مِنۡ خَيۡرٖ فَلِأَنفُسِكُمۡۚ وَمَا تُنفِقُونَ إِلَّا ٱبۡتِغَآءَ
وَجۡهِ ٱللَّهِۚ وَمَا تُنفِقُواْ مِنۡ خَيۡرٖ يُوَفَّ إِلَيۡكُمۡ وَأَنتُمۡ لَا تُظۡلَمُونَ
٢٧٢ ﴾ [البقرة: ٢٧٢]
“তোমরা যে ধন-সম্পদগুলো আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করো তা তো তোমাদের নিজেদের জন্যই। তবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নিজেদের ধন-সম্পদগুলো ব্যয়
করো না। যা কিছুই তোমরা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করবে তা
তোমাদেরকে পূর্ণভাবেই দেওয়া হবে। এতটুকুও তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে না। [সূরা
আল-বাকারা, আয়াত: ২৭২]
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَلَا يُنفِقُونَ نَفَقَةٗ صَغِيرَةٗ وَلَا كَبِيرَةٗ وَلَا يَقۡطَعُونَ
وَادِيًا إِلَّا كُتِبَ لَهُمۡ لِيَجۡزِيَهُمُ ٱللَّهُ أَحۡسَنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ
١٢١ ﴾ [التوبة: ١٢١]
“তেমনিভাবে তারা ছোট-বড় যা কিছুই (আল্লাহ তা‘আলার পথে) ব্যয় করুক না কেন এবং যে প্রান্তরই তারা অতিক্রম করুক না কেন
তা সবই তাদের নামে লেখা হবে যেন আল্লাহ তা‘আলা তাদের
কৃতকর্ম সমূহের অতি উত্তম বিনিময় দিতে পারেন”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১২১]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَهُوَ يُخۡلِفُهُۥۖ وَهُوَ خَيۡرُ ٱلرَّٰزِقِينَ
٣٩ ﴾ [سبا: ٣٩]
“তোমরা যা কিছু দান করবে আল্লাহ তা‘আলা তার
প্রতিদান অবশ্যই দিবেন। তিনি তো হলেন উত্তম রিযিকদাতা”। [সূরা সাবা, আয়াত: ৩৯]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ أَنْفِقْ
أُنْفِقْ عَلَيْكَ» ب: 4684، م: 399
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে বনী আদম! তুমি দান
করো। আমিও তোমাকে দান করবো”।[2]
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا اسْتُوْدِعَ شَيْئًا حَفِظَهُ»
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার নিকট কোনো কিছু আমানত
রাখা হলে তিনি তা হিফাযত করেন”।[3]
অনেকেই একটি টাকা সদকা করতে এক হাজার বার ভাবেন, এ টাকাটা কি কাজে লাগবে?
এ টাকাটা কোথায় যাবে? এ লোকটার উপর তো
আস্থা রাখা যায় না? মনে হয় সে খেয়ে ফেলবে। ইত্যাদি
ইত্যাদি।
আরে আপনাকে এতো কিছু চিন্তা করতে হবে না। আপনি শুধু এতটুকুই
দেখবেন যে, যদি লোকটি নিজের জন্যেই আপনার কাছে সদকা চেয়ে থাকে তা হলে লোকটি কি
ব্যক্তিগতভাবে সদকা খাওয়ার উপযুক্ত? না কি নয়? তবে এ ব্যাপারটা তার বাহ্যিক রূপ দেখলেই সাধারণত অনুমান করা যায়। তার
সম্পর্কে প্রচুর খোঁজাখুঁজির কোনো প্রয়োজন নেই। বেশি খোঁজাখুঁজি করা মানে সদকা না
দেওয়ারই ভান করা।
একদা দু’ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিদায়ী হজে তাঁর নিকট সদকা প্রার্থনা করে।
তখন তিনি মানুষদের মাঝে সদকা বন্টন করছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার নিজ চক্ষু নিম্নগামী
করে নেন। তাদেরকে সুঠাম ও শক্তিশালীই মনে হচ্ছিলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
«إِنَّ شِئْتُمَا أَعْطَيْتُكُمَا، وَلَا حَظَّ فِيهَا لِغَنِيٍّ،
وَلَا لِقَوِيٍّ مُكْتَسِبٍ»
“যদি তোমরা চাও তা হলে আমি তোমাদেরকে সদকা দিতে পারি। তবে মনে রাখবে,
কোনো ধনী ও শক্তিশালী কর্মক্ষম ব্যক্তি সদকা খেতে পারে না তথা সদকায়
তার কোনো অধিকার নেই”।[4]
আর যদি লোকটি নিজের জন্য সদকা না চেয়ে বরং তিনি অন্য কোনো
ধর্মীয় কাজের জন্য সদকা চান তখন আপনার দেখার বিষয় হবে, লোকটি কি নিজেই কাজটি করতে
যাচ্ছেন, না কি অন্য জন। যদি তিনি নিজেই কাজটি করতে
যাচ্ছেন বলে দাবি করেন তা হলে দেখবেন, লোকটি কি উক্ত কাজ
করার উপযুক্ততা রাখেন, না কি রাখেন না? যদি তিনি সত্যিই উক্ত কাজ সম্পাদনের উপযুক্ততা রেখে থাকেন এবং এ
সম্পর্কে তাঁর পূর্ণ অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে আপনার ধারণা হয় তা হলে তাঁর দিকে
সহযোগিতার হাত যথাসাধ্য বাড়াবেন। আর যদি তিনি অথবা তিনি যাঁর প্রতিনিধি কেউই উক্ত
কাজের পূর্ণ অভিজ্ঞতা রাখেন না। আর কাজটি উক্ত সমাজে সম্পাদিত হওয়া খুবই প্রয়োজন
তা হলে আপনার কাজ হবে, তাঁকে সহযোগিতা না করে এ কাজের
যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে তাঁর হাতে উক্ত কাজের দায়িত্ব অর্পণ করে তাঁর যথাসাধ্য
সহযোগিতা করা। উপরন্তু তিনি টাকাটি কাজে লাগাবেন, না কি
খেয়ে ফেলবেন এ জাতীয় চিন্তা অমূলক। কারণ, এ জাতীয় চিন্তা
করা মানে কাজটি না করার ভান করা। তবে লোকটির অর্থ আত্মসাতের পূর্ব রেকর্ড থাকলে তা
অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে এবং তাঁর বিকল্প খুঁজতে হবে।
এতটুকু বিশ্বাসের উপর আপনি যদি কাউকে কোনো
সহযোগিতা করলেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি উক্ত কাজের অনুপযুক্ত প্রমাণিত হলেন অথবা
তাঁর দ্বারা আত্মসাতের ন্যায় ঘৃণ্য কাজটি সংঘটিত হলো অথবা তিনি নিজেই সদকা খাওয়ার
অনুপযুক্ত প্রমাণিত হলো তা হলে আপনার দান এতটুকুও বৃথা যাবে না। বরং তা আপনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট পূর্ণভাবেই পেয়ে যাবেন।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
«قَالَ رَجُلٌ: لَأَتَصَدَّقَنَّ اللَّيْلَةَ بِصَدَقَةٍ، فَخَرَجَ
بِصَدَقَتِهِ فَوَضَعَهَا فِيْ يَدِ زَانِيَةٍ، فَأَصْبَحُوْا يَتَحَدَّثُوْنَ:
تُصُدِّقَ اللَّيْلَةَ عَلَى زَانِيَةٍ، قَالَ: اللَّهُمَّ! لَكَ الْـحَمْدُ عَلَى
زَانِيَةٍ، لَأَتَصَدَّقَنَّ بِصَدَقَةٍ، فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِ فَوَضَعَهَا فِيْ
يَدِ غَنِيٍّ، فَأَصْبَحُوْا يَتَحَدَّثُوْنَ: تُصُدِّقَ عَلَى غَنِيٍّ، قَالَ:
اللَّهُمَّ! لَكَ الْـحَمْدُ عَلَى غَنِيٍّ، لَأَتَصَدَّقَنَّ بِصَدَقَةٍ،
فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِ فَوَضَعَهَا فِيْ يَدِ سَارِقٍ، فَأَصْبَحُوْا يَتَحَدَّثُوْنَ:
تُصُدِّقَ عَلَى سَارِقٍ، فَقَالَ: اللَّهُمَّ! لَكَ الْـحَمْدُ عَلَى زَانِيَةٍ
وَعَلَى غَنِيٍّ وَعَلَى سَارِقٍ، فَأُتِيَ فَقِيْلَ لَهُ: أَمَّا صَدَقَتُكَ
فَقَدْ قُبِلَتْ، أَمَّا الزَّانِيَةُ فَلَعَلَّهَا تَسْتَعِفُّ بِهَا عَنْ
زِنَاهَا، وَلَعَلَّ الْغَنِيَّ يَعْتَبِرُ فَيُنْفِقُ مِمَّا أَعْطَاهُ اللهُ عَزَّ
وَجَلَّ، وَلَعَلَّ السَّارِقَ يَسْتَعِفُّ بِهَا عَنْ سَرِقَتِهِ»
“জনৈক ব্যক্তি মনে মনে বললো, আজ রাত আমি সদকা দেবো। যখন রাত হলো তখন সে সদকা নিয়ে বের হলো এবং
জনৈকা ব্যভিচারিণীকে তা দিয়ে দিলো। সকাল বেলায় লোকেরা বলতে শুরু করলে, আজ রাত জনৈকা ব্যভিচারিণীকে সদকা দেওয়া হয়েছে। তখন সে বললো, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা একমাত্র তোমারই জন্য। আমার সদকাটা তো পড়ে গেলো
জনৈকা ব্যভিচারিণীর হাতে। আমি আবারো সদকা দেবো। যখন রাত হলো তখন সে সদকা নিয়ে আবারো বের হলো এবং জনৈক ধনী ব্যক্তিকে
তা দিয়ে দিলো। সকাল বেলায় লোকেরা বলতে শুরু করলে, আজ রাত জনৈক ধনীকে সদকা দেওয়া হয়েছে।
তখন সে বললো, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা একমাত্র তোমারই
জন্য। আমার সদকাটা তো পড়ে গেলো জনৈক ধনীর হাতে। আমি আবারো সদকা দেবো। যখন রাত হলো
তখন সে আবারো সদকা নিয়ে বের হলো এবং জনৈক চোরকে তা দিয়ে দিলো। সকাল বেলায় লোকেরা
বলতে শুরু করলে, আজ রাত জনৈক চোরকে সদকা দেওয়া হয়েছে। তখন
সে বললো, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা একমাত্র তোমারই জন্য।
আমার সদকাটা তো পড়ে গেলো জনৈকা ব্যভিচারিণী, জনৈক ধনী এবং
জনৈক চোরের হাতে। তখন তাকে স্বপ্নযোগে বলা হলোঃ তোমার সকল সদকাই গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
হয়তো বা তোমার সদকার কারণে ব্যভিচারিণী ব্যভিচার ছেড়ে দেবে, ধনী ব্যক্তি এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সেও আল্লাহর পথে সদকা দেওয়া শুরু করবে
এবং চোরটিও চুরি করা ছেড়ে দেবে”।[5]
৪. সর্বদা সদকা-খয়রাত আল্লাহ তা‘আলার সাথে এমন এক ব্যবসা যার কোনো
ক্ষয়-ক্ষতি নেই:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتۡلُونَ كِتَٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ
وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ يَرۡجُونَ تِجَٰرَةٗ لَّن
تَبُورَ ٢٩ لِيُوَفِّيَهُمۡ أُجُورَهُمۡ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّهُۥ غَفُورٞ
شَكُورٞ ٣٠ ﴾ [فاطر: ٢٩، ٣٠]
“নিশ্চয় যারা আল্লাহ তা‘আলার কিতাব তিলাওয়াত
করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা
থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে (একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁরই পথে) ব্যয় করে, বস্তুতঃ
তারাই আশা করছে এমন এক ব্যবসার যার কোনো ক্ষয়-ক্ষতি নেই। যেন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে নিজ কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দিতে পারেন। এমনকি তিনি নিজ
অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বেশী করে দিবেন। তিনি তো অত্যন্ত ক্ষমাশীল সুকৃতজ্ঞ”। [সূরা ফাত্বির, আয়াত: ২৯-৩০]
৫. কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাতকারীর
কোনো ভয়-ভীতি থাকবে না:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُم بِٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ
فَلَهُمۡ أَجۡرُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ وَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ
٢٧٤ ﴾ [البقرة: ٢٧٤]
“যারা নিজেদের ধন-সম্পদগুলো আল্লাহ তা‘আলার
পথেই রাত-দিন প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে দান করবে তাদের প্রতিদান সমূহ তাদের প্রভুর
নিকটই রক্ষিত থাকবে। কিয়ামতের দিন তাদের কোনো ভয়-ভীতি থাকবে না এবং তারা কখনো
চিন্তাগ্রস্তও হবে না”। [সূরা
আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৪)
৬. আল্লাহ তা‘আলার পথে নিজের পছন্দনীয় বস্তু সদকা
করা মানে সমূহ কল্যাণের নাগাল পাওয়া:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ لَن تَنَالُواْ ٱلۡبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَۚ وَمَا
تُنفِقُواْ مِن شَيۡءٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٞ ٩٢ ﴾ [ال عمران: ٩٢]
“তোমরা কখনোই কল্যাণের নাগাল পাবে না যতক্ষণ না
তোমরা নিজের পছন্দনীয় বস্তু সদকা করো। তোমরা যা কিছুই আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করো তা সবই তিনি ভালোভাবে জানেন”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯২]
৭. শুধু সদকা করার মধ্যেই নয় বরং কাউকে সদকা দেওয়ার
আদেশের মধ্যেও মহা কল্যাণ এবং উত্তম প্রতিদান রয়েছে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ لَّا خَيۡرَ فِي كَثِيرٖ مِّن نَّجۡوَىٰهُمۡ إِلَّا مَنۡ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ
أَوۡ مَعۡرُوفٍ أَوۡ إِصۡلَٰحِۢ بَيۡنَ ٱلنَّاسِۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ ٱبۡتِغَآءَ
مَرۡضَاتِ ٱللَّهِ فَسَوۡفَ نُؤۡتِيهِ أَجۡرًا عَظِيمٗا ١١٤ ﴾ [النساء: ١١٤]
“তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই। তবে যে ব্যক্তি সদকা-খয়রাত,
সৎ কাজ ও মানুষের মাঝে শান্তি স্থাপনের নির্দেশ দেয় তাতে অবশ্যই
কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি পাওয়ার আশায় যে
ব্যক্তি এমন করবে তাকে আমি অচিরেই মহা পুরস্কার দেবো”।
[সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৪]
৮. আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত
তাঁর ক্ষমা ও জান্নাত পাওয়ার একটি বিরাট মাধ্যম এবং তা একজন আল্লাহভীরুর বিশেষ
বৈশিষ্ট্যও বটে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا
ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي
ٱلسَّرَّآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَٱلۡكَٰظِمِينَ ٱلۡغَيۡظَ وَٱلۡعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِۗ
وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١٣٤ ﴾ [ال عمران: ١٣٣، ١٣٤]
“তোমরা নিজ প্রভুর ক্ষমা ও জান্নাতের প্রতি দ্রুত ধাবিত হও। যার
প্রসারতা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সদৃশ। যা তৈরি করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য। যারা
স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছলাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার পথে দান করে,
ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন”।
[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ١٥ ءَاخِذِينَ مَآ ءَاتَىٰهُمۡ
رَبُّهُمۡۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَبۡلَ ذَٰلِكَ مُحۡسِنِينَ ١٦ كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ
ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨ وَفِيٓ أَمۡوَٰلِهِمۡ
حَقّٞ لِّلسَّآئِلِ وَٱلۡمَحۡرُومِ ١٩ ﴾ [الذاريات: ١٥، ١٩]
“সে দিন মুত্তাকীরা থাকবেন প্রস্রবণ বিশিষ্ট
জান্নাতে। তাঁরা সেখানে উপভোগ করবেন যা তাঁদের প্রভু তখন তাঁদেরকে দিবেন। কারণ,
তাঁরা ছিলেন ইতোপূর্বে দুনিয়ার বুকে সৎকর্মপরায়ণ। তাঁরা রাত্রি
বেলায় কম ঘুমাতো এবং শেষ রাতে আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা
প্রার্থনা করতো। তাদের সম্পদে রয়েছে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতের অধিকার”। [সূরা আয-যারিয়াত,
আয়াত: ১৫-১৯]
৯. যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত
করেন তাঁরা প্রকৃত ঈমানদার:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتۡ قُلُوبُهُمۡ
وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ
يَتَوَكَّلُونَ ٢ ٱلَّذِينَ يُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ
٣ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ حَقّٗاۚ لَّهُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ رَبِّهِمۡ وَمَغۡفِرَةٞ
وَرِزۡقٞ كَرِيمٞ ٤ ﴾ [الانفال: ٢، ٤]
“সত্যিকারের মু’মিন ওরাই
যাদের সামনে আল্লাহ তা‘আলার কথা স্মরণ করা হলে তাদের
অন্তরগুলো ভয়ে কেঁপে উঠে, তাঁর আয়াত সমূহ পাঠ করা হলে
তাদের ঈমান আরো বেড়ে যায়, উপরন্তু তারা সর্বদা নিজ প্রভুর
উপর নির্ভরশীল থাকে। যারা সালাত কায়েম করে এবং তাঁর দেওয়া সম্পদ থেকে তাঁর পথে সদকা
করে। তারাই হচ্ছে প্রকৃত ঈমানদার। তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রভুর নিকট সুউচ্চ আসন,
ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা”।
[সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২-৪]
১০. আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত সদকাকারীকে
সকল প্রকারের গুনাহ্ ও পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত ও পবিত্র করে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا
وَصَلِّ عَلَيۡهِمۡۖ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٞ لَّهُمۡۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ١٠٣
أَلَمۡ يَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ هُوَ يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَأۡخُذُ
ٱلصَّدَقَٰتِ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١٠٤ ﴾ [التوبة: ١٠٣، ١٠٤]
“(হে নবী!) তুমি তাদের সম্পদ থেকে সদকা-খয়রাত
নিয়ে তাদেরকে পাক ও পবিত্র করো এবং তাদের জন্য দো‘আ করো।
নিশ্চয় তোমার দো‘আ তাদের জন্য শান্তিস্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা তো সবই শোনেন এবং সবই জানেন। তারা কি এ ব্যাপারে অবগত নয় যে,
নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের
তাওবা কবুল করেন এবং তাদের দান-খয়রাত গ্রহণ করেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাওবা কবুলকারী অতীব দয়ালু”। সূরা
আত-তাওবা,
আয়াত: ১০৩-১০৪]
জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’ব ইবন ‘উজরাহ্ রা. কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
«وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ المَاءُ
النَّارَ»
“সদকা-খয়রাত গুনাহসমূহ মুছিয়ে দেয় যেমনিভাবে নিভিয়ে দেয় পানি আগুনকে”।[6]
১১. আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত সদকাকারীর
সঠিক বিচার-বুদ্ধির পরিচয় বহন করে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞أَفَمَن يَعۡلَمُ أَنَّمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَ ٱلۡحَقُّ
كَمَنۡ هُوَ أَعۡمَىٰٓۚ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ١٩ ٱلَّذِينَ
يُوفُونَ بِعَهۡدِ ٱللَّهِ وَلَا يَنقُضُونَ ٱلۡمِيثَٰقَ ٢٠ وَٱلَّذِينَ يَصِلُونَ
مَآ أَمَرَ ٱللَّهُ بِهِۦٓ أَن يُوصَلَ وَيَخۡشَوۡنَ رَبَّهُمۡ وَيَخَافُونَ سُوٓءَ
ٱلۡحِسَابِ ٢١ وَٱلَّذِينَ صَبَرُواْ ٱبۡتِغَآءَ وَجۡهِ رَبِّهِمۡ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ
وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ وَيَدۡرَءُونَ بِٱلۡحَسَنَةِ
ٱلسَّيِّئَةَ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عُقۡبَى ٱلدَّارِ ٢٢ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا
وَمَن صَلَحَ مِنۡ ءَابَآئِهِمۡ وَأَزۡوَٰجِهِمۡ وَذُرِّيَّٰتِهِمۡۖ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ
يَدۡخُلُونَ عَلَيۡهِم مِّن كُلِّ بَابٖ ٢٣ سَلَٰمٌ عَلَيۡكُم بِمَا صَبَرۡتُمۡۚ فَنِعۡمَ
عُقۡبَى ٱلدَّارِ ٢٤ ﴾ [الرعد: ١٩، ٢٤]
“তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যে ব্যক্তি সত্য বলে
বিশ্বাস করে সে আর অন্ধ কি সমান? বস্তুতঃ সত্যিকার
বিবেকবানরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। যারা আল্লাহ তা‘আলাকে
দেওয়া অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং কোনো প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে না। যারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশিত সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখে এবং তাঁকে ভয় পায়। আরো ভয় পায়
কিয়ামতের কঠিন হিসাবকে। যারা তাদের প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ধৈর্য ধারণ করে,
সালাত কায়েম করে, তাঁর দেওয়া সম্পদ
তাঁরই পথে গোপনে ও প্রকাশ্যে অকাতরে ব্যয় করে এবং ভালো দ্বারা মন্দ দূরীভূত করে।
তাদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম স্থায়ী জান্নাত। যাতে তারা, তাদের সৎকর্মশীল পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও
সন্তান-সন্ততি প্রবেশ করবে। ফিরিশতাগণ হাজির হবে তাদের সম্মানার্থে প্রত্যেক দরজা
দিয়ে। তারা বলবে, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। কারণ,
তোমরা (দুনিয়াতে বহু) ধৈর্য ধারণ করেছিলে। কতোই না চমৎকার এ শুভ
পরিণাম”। [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ১৯-২৪]
১২. যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত
করেন সত্যিকারার্থে তাঁরাই কুরআনুল কারীম ও আল্লাহ তা‘আলার
নিদর্শনাবলীতে দৃঢ় বিশ্বাসী:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّمَا يُؤۡمِنُ بَِٔايَٰتِنَا ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُواْ بِهَا
خَرُّواْۤ سُجَّدٗاۤ وَسَبَّحُواْ بِحَمۡدِ رَبِّهِمۡ وَهُمۡ لَا يَسۡتَكۡبِرُونَ۩
١٥ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا
وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ١٦ ﴾ [السجدة: ١٥، ١٦]
“শুধুমাত্র তারাই আমার আয়াত ও নিদর্শনাবলীতে
বিশ্বাস করে যাদেরকে এ ব্যাপারে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলে তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং
তাদের প্রভুর সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে। উপরন্তু তারা এ ব্যাপারে এতটুকুও
অহংকার দেখায় না। তারা (রাত্রিবেলায়) আরামের শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রভুকে ডাকে
আশা ও আশঙ্কায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক
দিয়েছি তা থেকে আমার পথে সদকা-খয়রাত করে”। [সূরা আস-সাজদা, আয়াত:
১৫-১৬]
১৩. যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত করেন
তাঁরা সত্যিকারার্থেই বিনয়ী:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلِكُلِّ أُمَّةٖ جَعَلۡنَا مَنسَكٗا لِّيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ
عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۗ فَإِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞ
فَلَهُۥٓ أَسۡلِمُواْۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُخۡبِتِينَ ٣٤ ﴾ [الحج: ٣٤]
“(হে রাসূল!) তুমি সুসংবাদ দাও বিনয়ীদেরকে। যাদের
সামনে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে তাদের অন্তর ভয়ে কেঁপে উঠে এবং যারা বিপদাপদে ধৈর্যধারণ
করে ও সালাত কায়েম করে এবং তাদেরকে আমি যা রিয্ক দিয়েছি তা থেকে (তাঁর পথে) ব্যয়
করে”। [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৩৪-৩৫]
১৪. সর্বদা সদকা-খয়রাত পুণ্য তথা জান্নাতের পথ এবং
কার্পণ্য অনিষ্ট তথা জাহান্নামের পথকে সহজ করে দেয়:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَأَمَّا مَنۡ أَعۡطَىٰ وَٱتَّقَىٰ ٥ وَصَدَّقَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٦ فَسَنُيَسِّرُهُۥ
لِلۡيُسۡرَىٰ ٧ وَأَمَّا مَنۢ بَخِلَ وَٱسۡتَغۡنَىٰ ٨ وَكَذَّبَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٩ فَسَنُيَسِّرُهُۥ
لِلۡعُسۡرَىٰ ١٠ ﴾ [الليل: ٥، ١٠]
“সুতরাং যে ব্যক্তি (একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য তাঁরই পথে) দান করলো, আল্লাহভীরু
হলো এবং পুণ্যের প্রতিদান তথা জান্নাতকে সত্য বলে জ্ঞান করলো অচিরেই আমি তার জন্য
পুণ্য তথা জান্নাতের পথকে সহজ করে দেবো। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কার্পণ্য করলো ও
নিজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলো এবং পুণ্যের প্রতিদান তথা জান্নাতকে মিথ্যা বলে
জ্ঞান করলো অচিরেই আমি তার জন্য কঠিন পরিণাম তথা জাহান্নামের পথকে সহজ করে দেবো”। [সূরা আল-লাইল, আয়াত: ৫-১০]
১৫. কার্পণ্যকে ঝেড়ে-মুছে সর্বদা সদকা-খয়রাত করতে থাকা
সফলতারই সোপান:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّمَآ أَمۡوَٰلُكُمۡ وَأَوۡلَٰدُكُمۡ فِتۡنَةٞۚ وَٱللَّهُ عِندَهُۥٓ
أَجۡرٌ عَظِيمٞ ١٥ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ وَٱسۡمَعُواْ وَأَطِيعُواْ
وَأَنفِقُواْ خَيۡرٗا لِّأَنفُسِكُمۡۗ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفۡسِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ
هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٦ ﴾ [التغابن: ١٥، ١٦]
“তোমার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য একটি পরীক্ষার বিষয়। তবে
(এ পরীক্ষায় পাশ করতে পারলে) তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহ তা‘আলার নিকট মহা পুরস্কার। তাই তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে
যথাসাধ্য ভয় করো, তাঁর কথা শুনো, তাঁর আনুগত্য করো এবং তাঁরই পথে ব্যয় করো যা তোমাদের জন্য সত্যিই
কল্যাণকর। বস্তুতঃ যারা হৃদয়ের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই সফলকাম”। [সূরা আত-তাগাবুন,
আয়াত ১৫-১৬]
১৬. আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত তাঁর নৈকট্য
লাভের বিরাট একটি মাধ্যম:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمِنَ ٱلۡأَعۡرَابِ مَن يَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ مَغۡرَمٗا وَيَتَرَبَّصُ
بِكُمُ ٱلدَّوَآئِرَۚ عَلَيۡهِمۡ دَآئِرَةُ ٱلسَّوۡءِۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٞ
٩٨ وَمِنَ ٱلۡأَعۡرَابِ مَن يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَيَتَّخِذُ
مَا يُنفِقُ قُرُبَٰتٍ عِندَ ٱللَّهِ وَصَلَوَٰتِ ٱلرَّسُولِۚ أَلَآ إِنَّهَا قُرۡبَةٞ
لَّهُمۡۚ سَيُدۡخِلُهُمُ ٱللَّهُ فِي رَحۡمَتِهِۦٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ
٩٩ ﴾ [التوبة: ٩٨، ٩٩]
“মরুবাসীদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা (আল্লাহ
তা‘আলার পথে) ব্যয় করাকে জরিমানা মনে করে এবং তোমাদের
প্রতি কালের আবর্তন তথা বিপদাপদের অপেক্ষায় থাকে। বস্তুতঃ কালের অশুভ আবর্তন তথা
বিপদাপদ তাদের উপরই বর্তাবে। আল্লাহ তা‘আলা তো সবই শোনেন
এবং সবই জানেন। পক্ষান্তরে মরুবাসীদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালের প্রতি পূর্ণ ঈমান রাখে এবং তারা (আল্লাহ তা‘আলার পথে) ব্যয় করাকে তাঁর সান্নিধ্য ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দো‘আ লাভের উপকরণ
বলে মনে করে। জেনে রাখো, তাদের উক্ত ব্যয় নিঃসন্দেহে
তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের বিরাট একটি কারণ। অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে নিজ রহমতে প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু”। [সূরা আত-তাওবা,
আয়াত: ৯৮-৯৯]
১৭. আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত জাহান্নাম থেকে
রক্ষা পাওয়ার বিরাট একটি মাধ্যম:
আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত করা জাহান্নাম
থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি বিরাট মাধ্যম।
‘আদি’ ইবন হাতিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اتَّقُوْا
النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ»
“তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো। এমনকি একটি খেজুরের একাংশ সদকা করে হলেও”।[7]
‘আদি ইবন হাতিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরো
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تَقُوْمُ
السَّاعَةُ حَتَّى يَطُوْفَ أَحَدُكُمْ بِصَدَقَتِهِ، لاَ يَجِـدُ مَنْ
يَّقْبَلُهَا مِنْهُ، ثُمَّ لَيَقِفَنَّ أَحَدُكُمْ بَيْنَ يَدَيِ اللهِ، لَيْسَ
بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ حِجَابٌ، وَلاَ تَرْجُمَانٌ يُتَرْجِمُ لَهُ، ثُمَّ
لَيَقُوْلَنَّ لَهُ: أَلَمْ أُؤْْتِكَ مَالاً ؟ فَلَيَقُوْلَنَّ: بَلَى، ثُمَّ
لَيَقُوْلَنَّ: أَلَمْ أُرْسِلْ إِلَيْكَ رَسُوْلاً ؟ فَلَيَقُوْلَنَّ: بَلَى،
فَيَنْظُرُ عَنْ يَمِيْنِهِ فَلاَ يَرَى إِلاَّ النَّارَ، ثُمَّ يَنْظُرُ عَنْ
شِمَالِهِ فَلاَ يَرَى إِلاَّ النَّارَ، فَلْيَتَّقِيَنَّ أَحَدُكُمْ النَّارَ
وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ، فَإِنْ لَمْ يَجِدْ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ»
“কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষণ না তোমাদের কেউ সদকা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। সে
এমন লোক খুঁজে পাবে না যে তা গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যেককেই কিয়ামতের দিন আল্লাহ
তা‘আলার সামনে উপস্থিত হতে হবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা ও তার মাঝে কোনো পর্দা থাকবে না। না থাকবে কোনো অনুবাদক। অতঃপর আল্লাহ
তা‘আলা তাকে বলবেন, আমি কি তোমাকে
সম্পদ দেইনি? তখন সে বলবে,
অবশ্যই দিয়েছেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে আরো বলবেন, আমি কি তোমার নিকট কোনো রাসূলুল্লাহ পাঠাইনি? তখন সে বলবে, অবশ্যই পাঠিয়েছেন। তখন সে তার
ডানে তাকাবে এবং আগুন ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। অতঃপর সে তার বামে তাকাবে এবং
আগুন ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। অতএব তোমাদের প্রত্যেকেরই জাহান্নাম থেকে
বাঁচতে চেষ্টা করা অবশ্যই কর্তব্য। এমনকি একটি খেজুরের অর্ধাংশ সদকা করে হলেও। আর
যদি তা না পাও তা হলে একটি সুন্দর উপদেশ মূলক কথা বলে হয়েও”।[8]
’হারিস আশ্‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللهَ
أَوْحَى إِلَى يَحْيَى بْنِ زَكَرِيَّا بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ يَعْمَلَ بِهِنَّ،
وَيَأْمُرَ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ أَنْ يَعْمَلُوْا بِهِنَّ – فَذَكَرَ الْـحَدِيْثَ إِلَى أَنْ
قَالَ فِيْهِ -: وَآمُرُكُمْ بِالصَّدَقَةِ، وَمَثَلُ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ
أَسَرَهُ الْعَدُوُّ، فَأَوْثَقُوْا يَدَهُ إِلَى عُنُقِهِ، وَقَرَّبُـوْهُ
لِيَضْرِبُوْا عُنُقَهُ، فَجَعَلَ يَقُوْلُ: هَلْ لَكُمْ أَنْ أَفْدِيَ نَفْسِيْ
مِنْكُمْ؟ وَجَعَلَ يُعْطِيْ الْقَلِيْلَ وَالْكَثِيْرَ حَتَّى فَدَى نَفْسَهُ»
“আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহ্ইয়া ইবন যাকারিয়া ‘আলাইহিস
সালামের নিকট পাঁচটি বাক্য প্রত্যাদেশ হিসেবে পাঠান; যাতে
তিনি সেগুলোর উপর আমল করেন এবং সকল বনী ইস্রাঈলকে আদেশ করেন সেগুলোর উপর আমল করার
জন্য। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, আমি তোমাদেরকে সদকার আদেশ
করছি। সদকার দৃষ্টান্ত এমন এক ব্যক্তির ন্যায় যাকে শত্রু পক্ষ বন্দী করেছে। এমনকি
তারা তার হাত-পা শক্ত করে বেঁধে তাকে হত্যা করার জন্য যথাস্থানে উপস্থিত করেছে। তখন সে বললো, তোমরা কি আমাকে সম্পদের বিনিময়ে ছেড়ে দেবে? এ বলে সে কম-বেশি যা পেরেছে
দিয়ে তাদের হাত থেকে নিজকে মুক্ত করেছে”।[9]
১৮. সদকাকারীর জন্য প্রতিদিন একজন ফিরিশতা বরকতের দো‘আ করেন,
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ
الْعِبَادُ فِيْهِ إِلاَّ مَلَكَانُ يَنْزِلاَنِ، فَيَقُوْلُ أَحَدُهُمَا:
اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُوْلُ الْآخَرُ: اللَّهُمْ أَعْطِ
مُمْسِكًا تَلَفًا»
“প্রতিদিন সকাল বেলায় দু’ জন ফিরিশতা অবতীর্ণ
হন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! আপনি দানকারীর সম্পদ আরো
বাড়িয়ে দিন। অন্য জন বলেন, হে আল্লাহ! আপনি কৃপণের সম্পদ
ধ্বংস করে দিন”।[10]
১৯. লুকিয়ে সদকা-খয়রাত করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার আরশের নিচে ছায়া পাওয়া
যাবে:
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سَبْعَةٌ
يُظِلُّهُمْ اللهُ تَعَالَى فِيْ ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ:
إِمَامٌ عَدْلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِيْ عِبَادَةِ اللهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ
مُعَلَّقٌ فِيْ الـْمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابَّا فِيْ اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ
وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ
فَقَالَ: إِنِّيْ أَخَافُ اللهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا
حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ
خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ»
“সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন
আরশের নিচে ছায়া দিবেন যে দিন আর কোনো ছায়া থাকবে না। প্রথম শ্রেণী হচ্ছে এমন
রাষ্ট্রপতি যিনি সর্বদা ইনসাফের উপরই প্রতিষ্ঠিত। দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে এমন যুবক
যে ছোট থেকেই আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের উপর বেড়ে উঠেছে।
তৃতীয় শ্রেণী হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথেই লাগানো। চতুর্থ
শ্রেণী হচ্ছে এমন দু’ ব্যক্তি যারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে ভালোবেসেছে। আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই তারা পরস্পর একত্রিত হয় এবং তাঁরই সন্তুষ্টির
জন্য তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়। পঞ্চম শ্রেণী হচ্ছে এমন পুরুষ যাকে কোনো
প্রভাবশালী সুন্দরী মহিলা ব্যভিচারের জন্য ডাকছে; অথচ সে
বলছেঃ আমি তা করতে পারবো না। নিশ্চয় আমি আল্লাহ তা‘আলাকে
ভয় পাচ্ছি। ষষ্ঠ শ্রেণী হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে এরূপ লুকিয়ে সদকা করেছে যে, তার বাম হাত জানছে না তার ডান হাত কি সদকা করছে। সপ্তম শ্রেণী হচ্ছে
এমন ব্যক্তি যে একাকীভাবে আল্লাহ তা‘আলার কথা স্মরণ করে
দু’ চোখের পানি প্রবাহিত করছে”।[11]
২০. লুকায়িত সদকা আল্লাহ তা‘আলার রাগ ও ক্রোধ নিঃশেষ করে দেয়:
মু‘আবিয়া ইবন হায়দাহ্ রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ صَدَقَةَ
السِّرِّ تُطْفِئُ غَضَبَ الرَّبِّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى»
“লুকায়িত সদকা আল্লাহ তা‘আলার রাগ নিঃশেষ করে
দেয়”।[12]
২১. সদকা-খায়রাতের হাত হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ হাত:
আব্দুল্লাহ
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মিম্বরের উপর
দাঁড়িয়ে বলেন,
«الْيَدُ
الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ الْيَدِ السُّفْلَى، فَالْيَدُ الْعُلْيَا هِيَ الْـمُنْفِقَةُ
وَالسُّفْلَى هِيَ السَّائِلَـةُ»
“উপরের হাত অনেক ভালো নিচের হাতের চাইতে। বর্ণনাকারী বলেন, উপরের হাত বলতে দানের হাতকেই বুঝানো হচ্ছে এবং নিচের হাত বলতে
ভিক্ষুকের হাত”।[13]
২২. সদকা-খয়রাত রুগ্ন ব্যক্তির জন্য এক মহৌষধঃ
হাসান
রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«دَاوُوْا
مَرْضَاكُمْ بِالصَّدَقَةِ»
“তোমরা রুগ্নদের চিকিৎসা করো সদকা দিয়ে”।[14]
২৩. সদকা-খয়রাত কিয়ামতের দিন সদকাকারীকে সূর্যের ভীষণ তাপ থেকে ছায়া দিবে:
উকবাহ্
ইবন ‘আমির রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كُلُّ امْرِئٍ
فِيْ ظِلِّ صَدَقَتِهِ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ»
“প্রত্যেক ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) তার সদকার ছায়ার নিচেই অবস্থান করবে
যতক্ষণ না সকল মানুষের মাঝে ফায়সালা করা হয়”।[15]
২৪. সদকা-খয়রাত সদকাকারীকে কবরের উত্তাপ থেকে রক্ষা করবে:
‘উকবাহ্ ইবন ‘আমির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ
الصَّدَقَةَ لَتُطْفِئُ عَنْ أَهْلِهَا حَرَّ الْقُبُوْرِ، وَإِنَّمَا يَسْتَظِلُّ
الْـمُؤْمِنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْ ظِلِّ صَدَقَتِهِ»
“নিশ্চয় সদকা সদকাকারীকে কবরের উত্তাপ থেকে রক্ষা করবে এবং নিশ্চয়
কিয়ামতের দিন একজন মু’মিন তার সদকার ছায়ার নিচেই অবস্থান
করবে”।[16]
২৫. সদকা-খয়রাত সদকাকারীকে সমূহ বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে:
আবু
উমামাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صَنَائِعُ الـْمَعْرُوْفِ
تَقِيْ مَصَارِعَ السُّوْءِ»
“ভালো কাজ তথা সদকা-খয়রাত সদকাকারীকে সমূহ বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে”।[17]
২৬. দীর্ঘস্থায়ী সদকার সাওয়াব মৃত্যুর পরেও পাওয়া যায়:
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا مَاتَ
الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ،
وَعِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، وَوَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ»
“কোনো মানুষ মারা গেলে তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল তার
মৃত্যুর পরও চালু থাকে, দীর্ঘস্থায়ী সদকা, এমন জ্ঞান যা
দিয়ে মানুষ তার মৃত্যুর পরও লাভবান হয়, এমন নেককার সন্তান
যে তার মৃত্যুর পর তার জন্য দো‘আ করে”।[18]
২৭. সদকা-খয়রাত হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আমল:
উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ذُكِرَ لِيْ:
أَنَّ الْأَعْمَالَ تَبَاهَى، فَتَقُوْلُ الصَّدَقَةُ: أَنَا أَفْضَلُكُمْ»
“আমাকে বলা হয়েছে যে, আমলগুলো পরস্পর গর্ব করবে।
তখন সদকা বলবে, আমি তোমাদের সবার চাইতে শ্রেষ্ঠ”।[19]
২৮. সদকা-খায়রাতের পাল্লা হচ্ছে সবচাইতে বেশি ভারীঃ
আব্দুল্লাহ্
ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«إِنَّ رَاهِبًا
عَبَدَ اللهَ فِيْ صَوْمَعَتِهِ سِتِّيْنَ سَنَةً، فَجَاءَتْ امْرَأَةٌ فَنَزَلَتْ
إِلَى جَنْبِهِ، فَنَزَلَ إِلَيْهَا، فَوَاقَعَهَا سِتَّ لَيَالٍ، ثُمَّ سُقِطَ
فِيْ يَدِهِ، فَهَرَبَ، فَأَتَى مَسْجِدًا فَأَوَى فِيْهِ ثَلاَثًا، لاَ يَطْعَمُ
فِيْهِ شَيْئًا، فَأُتِيَ بِرَغِيْفٍ، فَكَسَرَهُ، فَأَعْطَى رَجُـلاً عَنْ
يَمِيْنِهِ نِصْفَهُ، وَأَعْطَى آخَرَ عَنْ يَسَارِهِ نِصْفَهُ، فَبَعَثَ اللهُ
إِلَيْهِ مَلَكَ الْمَوْتِ، فَقَبَضَ رُوْحَـهُ، فَوُضِعَتِ السِّتُّـوْنَ فِيْ
كِفَّةٍ، وَوُضِعَتِ السِّتُّ فِيْ كِفَّةٍ، فَرَجَحَتِ السِّتُّ، ثُمَّ وُضِعَ
الرَّغِيْفُ، فَرَجَحَ الرَّغِيْفُ»
“জনৈক খ্রিস্টান ধর্মযাজক ষাট বছর যাবত কোনো এক গির্জায় আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাত করছিলো। ইতোমধ্যে জনৈকা মহিলা তার পাশেই অবস্থান নিচ্ছিলো।
এ সুযোগে সে তার সাথে ছয় রাত্রি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। অতঃপর তার হুঁশ ফিরে আসলে সে
সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরিশেষে এক মসজিদে সে তিন দিনের জন্য অবস্থান নেয়। এ তিন
দিন যাবত সে কিছুই খায়নি। ইতোমধ্যে তাকে একটি রুটি দেওয়া হলে সে তা দু’ ভাগ করে এক ভাগ তার ডান পার্শ্বের লোকটিকে এবং আরেকটি টুকরো তার বাম
পার্শ্বের লোকটিকে দেয়। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তার কাছে
মৃত্যুর ফিরিশতা পাঠিয়ে তার মৃত্যু ঘটান। এরপর তার ষাট বছরের আমল এক পাল্লায় রাখা হয়
এবং অন্য পাল্লায় রাখা হয় তার সে ছয় রাত্রির বদ্ আমল। এতে তার বদ্ আমলের পাল্লা
ভারী হয়ে যায়। অতঃপর অন্য পাল্লায় তার সদকার রুটিটি রাখা হলে তা ভারী হয়ে যায়”।[20]
সদকা সম্পর্কে সালফে সালিহীনদের কিছু কথা:
আব্দুল্লাহ্
ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«إِنْ اسْتَطَعْتَ
أَنْ تَجْعَلَ كَنْزَكَ حَيْثُ لاَ يَأْكُلُهُ السُّوْسُ، وَلاَ تَنَالُهُ
اللُّصُوْصُ فَافْعَلْ بِالصَّدَقَةِ»
“তোমার পক্ষে যদি সম্ভব হয় যে, তুমি তোমার ধন-ভান্ডারটুকু
এমন এক জায়গায় রাখবে যেখান থেকে কোনো পোকা খেয়ে তা কমিয়ে দিবে না এবং কোনো চোর তার
নাগাল পাবে না তা হলে তা আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা করে দাও”।[21]
আবু
যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«الصَّلاَةُ
عِمَادُ الْإِسْلاَمِ، وَالْـجِهَادُ سَنَامُ الْعَمَـلِ، وَالصَّدَقَةُ شَيْءٌ
عَجِيْبٌ، وَالصَّدَقَةُ شَيْءٌ عَجِيْبٌ، وَالصَّدَقَةُ شَيْءٌ عَجِيْبٌ»
“সালাত হচ্ছে ইসলামের খুঁটি। জিহাদ হচ্ছে একটি উন্নত আমল। আর সদকা তো
একটি অত্যাশ্চর্য বস্তু। আর সদকা তো একটি
অত্যাশ্চর্য বস্তু। আর সদকা তো একটি অত্যাশ্চর্য
বস্তু”।
জাবির
ইবন আব্দুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমার হাতে গোস্ত দেখে বললেন, হে জাবির! তোমার হাতে এটি কি? আমি বললাম,
গোস্ত খেতে ইচ্ছে হয়েছিলো তাই একটু খরিদ করলাম। তখন উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, যখনই
তোমার কিছু খেতে ইচ্ছে হয় তখনই তা খরিদ করো? হে জাবির!
তুমি কি নিম্নোক্ত আয়াতকে ভয় পাও না?
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿ أَذۡهَبۡتُمۡ طَيِّبَٰتِكُمۡ
فِي حَيَاتِكُمُ ٱلدُّنۡيَا وَٱسۡتَمۡتَعۡتُم بِهَا ﴾ [الاحقاف: ٢٠]
“(কাফিরদেরকে কিয়ামতের দিন বলা হবে) তোমরা তো পার্থিব জীবনের সকল
সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করে শেষ করেছো”।
[সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ২০]
ইয়াহয়া
ইবন মু‘আয রহ.
বলেন,
«مَا أَعْرِفُ حَبَّةً تَزِنُ جِبَالَ
الدُّنْيَا إِلاَّ الْـحَبَّةَ مِنَ الصَّدَقَةِ»
“আমি জানি না, দুনিয়াতে এমন কোনো দানা আছে যা
বিশ্বের সকল পাহাড় সমপরিমাণ ওজন রাখে একমাত্র সদকার দানা ছাড়া”।[22]
আবু
সুলাইমান আদ-দারানী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি রিযিকের ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার উপর নির্ভরশীল তাঁর চরিত্র অবশ্যই ভালো হবে, তিনি অত্যন্ত ধৈর্যশীল হবেন, আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত করতে তিনি কখনো দ্বিধা করবেন না এবং তাঁর সালাতে
শয়তানের কুমন্ত্রণা অবশ্যই কমে যাবে।
ফক্বীহ্
আবুল-লাইস আস-সামারকান্দী রহ. বলেন, তুমি কম-বেশি যা পারো সদকা করো। কারণ,
তাতে দশটি ফায়েদা রয়েছে। যার পাঁচটি দুনিয়াতে আর পাঁচটি আখিরাতে।
দুনিয়ার পাঁচটি হচ্ছে, তোমার ধন-সম্পদ পবিত্র হবে। তুমি
গুনাহ্ থেকে নিষ্কৃতি পাবে। তোমার রোগ-ব্যাধি ও বালা-মুসীবত দূর হয়ে যাবে। গরিবরা
খুশি হবে যা সর্বোত্তম ইবাদাত। রিযিক বেড়ে যাবে
এবং সম্পদে বরকত আসবে। পরকালের পাঁচটি হচ্ছে, কিয়ামতের দিন রোদের তাপ থেকে ছায়া
মিলবে। হিসাব সহজ হবে। নেকের পাল্লা ভারী হবে। পুলসিরাত পার হওয়া যাবে এবং
জান্নাতে উচ্চাসন মিলবে।
তিনি
আরো বলেন, সদকার
মধ্যে যদি গরীবদের দো‘আ ছাড়া আর কোনো ফযীলত নাই থাকতো
এরপরও একজন বুদ্ধিমানের কর্তব্য হতো সদকা দেওয়া; অথচ সদকার
মধ্যে এ ছাড়াও রয়েছে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি এবং
শয়তানের অসন্তুষ্টি। তাতে আরো রয়েছে নেককারদের অনুসরণ।[23]
ইমাম
শা’বী রহ.
বলেন, ফকির সদকার প্রতি যতটুকু মুখাপেক্ষী কেউ যদি নিজকে সদকার
সাওয়াবের প্রতি এর চাইতেও বেশি মুখাপেক্ষী মনে না করলো তা হলে তার সদকা নিস্ফল
হবে।
আব্দুল
আজীজ ইবন উমাইর রহ. বলেন,
সালাত তোমাকে অর্ধেক রাস্তায় পৌঁছিয়ে দিবে। সাওম পৌঁছাবে প্রভুর দরজায়।
আর সদকা পৌঁছাবে তাঁরই সন্নিকটে।
উবাইদ
ইবন উমাইর রহ. বলেন,
কিয়ামতের দিন সবাইকে উঠানো হবে অত্যন্ত ক্ষুধা ও পিপাসার্ত
অবস্থায়। সুতরাং কেউ দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির
জন্য কাউকে খাওয়ালে আল্লাহ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন
খাওয়াবেন। কাউকে পান করালে আল্লাহ তা‘আলা তাকে পান করাবেন। কাউকে
পরালে আল্লাহ তা‘আলা তাকে পরাবেন।[24]
একদা
হাসান বসরী রহ. এর পাশ দিয়ে জনৈক গোলাম বিক্রেতা যাচ্ছিলো। তার সাথে ছিলো একজন বান্দি। তিনি লোকটিকে বললেন, তুমি কি বান্দিটিকে এক দিরহাম বা দু’ দিরহাম দিয়ে বিক্রি করবে?
লোকটি বললো, না। তখন হাসান বসরী রহ.
বলেন, আল্লাহ তা‘আলা একটি পয়সা
বা একটি নেওলার পরিবর্তে জান্নাতের হূর দিয়ে দিবেন। আর তুমি এক দিরহাম বা দু’
দিরহামের পরিবর্তে একে বিক্রি করতে রাজি হচ্ছো না।[25]
‘আল্লামাহ্ ইব্নুল-ক্বায়্যিম রহ. বলেন, যে কোনো
বালা-মুসীবত দূরীকরণে সদকার আশ্চর্যজনক এক প্রভাব রয়েছে। দানশীল ব্যক্তি ফাসিক,
যালিম, কাফির যেই হোক না কেন। আল্লাহ তা‘আলা সদকার কারণে সদকাকারীর হরেক রকমের বালা-মুসীবত দূর করে দেন। এটা
সবারই জানা এবং বিশ্বের সকলেই এ ব্যাপারটি স্বীকার করেছেন। কারণ, তাঁরা পরীক্ষা করে তা সত্য পেয়েছেন।
সদকা সংক্রান্ত কিছু কথা:
যে ধনী সদকা-খয়রাত করে না সে নিশ্চয় ক্ষতিগ্রস্ত:
আবু
যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাতে গেলাম। তখন
তিনি কা’বা শরীফের ছায়ায় বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি
আমাকে দেখে বললেন,
«هُمُ الْأَخْسَرُوْنَ وَرَبِّ
الْكَعْبَةِ ! هُمُ الْأَخْسَرُوْنَ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ ! قُلْتُ: مَا شَأْنِيْ،
أَيُرَى فِيَّ شَيْءٌ، مَا شَأْنِيْ ؟ فَجَلَسْتُ إِلَيْهِ وَهُوَ يَقُوْلُ: فَمَا
اسْتَطَعْتُ أَنْ أَسْكُتَ، وَتَغَشَّانِيْ مَا شَاءَ اللهُ، فَقُلْتُ: مَنْ هُمْ
بِأَبِيْ أَنْتَ وَأُمِّيْ يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: الْأَكْثَرُوْنَ أَمْوَالاً
إِلاَّ مَنْ قَالَ هَكَذَا، وَهَكَذَا، وَهَكَذَا، وَفِيْ رِوَايَةٍ: مِنْ بَيْنِ
يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ وَعَنْ يَمِيْنِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ، وَقَلِيْلٌ مَا
هُمْ»
“আল্লাহর কসম! ওরাই ক্ষতিগ্রস্ত। আল্লাহর কসম! ওরাই
ক্ষতিগ্রস্ত। আবু যর বলেন, আমি মনে মনে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমার মধ্যে ব্যতিক্রম কিছু দেখে ফেললেন কি? হায়! আমার কি
হলো। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর পার্শ্বেই বসলাম; অথচ তিনি সে কথাই বার বার
বলছেন। তখন আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। আমাকে যেন কোনো কিছু ছেয়ে গেছে। আমি বললাম,
কারা ওরা? হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য
আমার মাতা-পিতা উৎসর্গ হোক! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা হলো ধনী-সম্পদশালী। তবে ওরা
ক্ষতিগ্রস্ত নয় যারা এদিক ওদিক তথা সর্বদিকে সদকা-খয়রাত করলো। অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
সামনে করলো, পেছনে করলো। ডানে করলো,
বামে করলো। তথা সর্বদিকে সদকা-খয়রাত করলো এবং তাঁরা খুবই কম”।[26]
সময় থাকতেই সদকা করুন:
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿ وَأَنفِقُواْ مِن
مَّا رَزَقۡنَٰكُم مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ أَحَدَكُمُ ٱلۡمَوۡتُ فَيَقُولَ رَبِّ
لَوۡلَآ أَخَّرۡتَنِيٓ إِلَىٰٓ أَجَلٖ قَرِيبٖ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ
١٠ ﴾ [المنافقون: ١٠]
“আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার পথে এখনই ব্যয় করো তোমাদের কারোর মৃত্যু আসার পূর্বেই; যাতে মৃত্যুর সময় আর বলতে না হয়, হে আমার প্রভু! তুমি যদি আমাকে আরো
কিছুকাল সময় দিতে তা হলে আমি বেশি বেশি সদকা করতাম এবং সৎকর্মশীল হয়ে যেতাম”। [সূরা আল-মুনাফিকুন,
আয়াত: ১০]
আল্লাহ
তা‘আলা
আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ
ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰكُم مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ يَوۡمٞ لَّا
بَيۡعٞ فِيهِ وَلَا خُلَّةٞ وَلَا شَفَٰعَةٞۗ وَٱلۡكَٰفِرُونَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٢٥٤
﴾ [البقرة: ٢٥٤]
“হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা হতে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় খরচ করো এমন দিন আসার পূর্বে যে দিন কোনো ক্রয়-বিক্রয়
চলবে না, না কোনো বন্ধুত্ব কাজে আসবে, না কারোর সুপারিশ ফায়দা দিবে। কাফিররা তো সত্যিই যালিম”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৪]
সময়
থাকতেই সদকা করুন। কারণ,
অচিরেই এমন একটি সময় আসবে। যখন সদকা গ্রহণ করার আর কেউই থাকবে
না।
’হারিসা ইবন ওয়াহাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«تَصَدَّقُوْا، فَإِنَّهُ يَأْتِيْ
عَلَيْكُمْ زَمَانٌ يَمْشِيْ الرَّجُلُ بِصَدَقَتِهِ فَلاَ يَجِدُ مَنْ
يَّقْبَلُهَا، يَقُوْلُ الرَّجُلُ: لَوْ جِئْتَ بِهَا بِالْأَمْسِ لَقَبِلْتُهَا،
فَأَمَّا الْيَوْمَ فَلاَ حَاجَةَ لِيْ بِهَا»
“তোমরা সময় থাকতে সদকা করো। কারণ, অচিরেই এমন
একটি সময় আসবে যখন ধনী ব্যক্তি সদকা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে; অথচ সদকা নেয়ার মতো তখন সে আর কাউকে খুঁজে পাবে না। কারোর কাছে সদকা নিয়ে
গেলে সে বলবে, গতকাল আসলে তা অবশ্যই গ্রহণ করতাম। কিন্তু
আজ আমার কোনো প্রয়োজন নেই”।[27]
আবু
মূসা আশ্‘আরী রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ
يَطُوْفُ الرَّجُلُ فِيْهِ بِالصَّدَقَةِ مِنَ الذَّهَبِ ثُمَّ لاَ يَجِدُ أَحَدًا
يَأْخُذُهَا مِنْهُ، وَيُرَى الرَّجُلُ الْوَاحِدُ يَتْبَعُهُ أَرْبَعُوْنَ
امْرَأَةً يَلُذْنَ بِهِ، مِنْ قِلَّةِ الرِّجَالِ وَكَثْرَةِ النِّسَاءِ»
“মানুষের মাঝে এমন একটি সময় আসবে যখন ধনী ব্যক্তি স্বর্ণের সদকা হাতে
নিয়ে ঘুরে বেড়াবে; অথচ সদকা নেয়ার মতো তখন সে আর কাউকে
খুঁজে পাবে না। তখন আরো দেখা যাবে যে, একজন পুরুষের অধীনে
রয়েছে চল্লিশ জন মহিলা। যারা সরাসরি তারই আশ্রয় গ্রহণ করছে। কারণ, তখন পুরুষ থাকবে খুবই কম এবং মহিলা থাকবে অনেক বেশি”।[28]
ঈমান ও কার্পণ্য আল্লাহ তা‘আলার কোনো বান্দাহ্’র
অন্তরে কখনো একত্রিত হতে পারে না:
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِيْ سَبِيْلِ
اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ فِيْ جَوْفِ عَبْدٍ أَبَدًا، وَلاَ يَجْتَمِعُ شُحٌّ
وَإِيْمَانٌ فِيْ قَلْبِ عَبْدٍ أَبَدًا»
“যুদ্ধক্ষেত্রের ধুলো ও জাহান্নামের ধোঁয়া কোনো বান্দাহ্’র পেটে কখনো একত্রিত হতে পারে না।
তেমনিভাবে কার্পণ্য ও ঈমান কোনো বান্দাহ্’র অন্তরে কখনো একত্রিত
হতে পারে না”।[29]
সম্পদের বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে এমন মুহূর্তে সামান্যটুকু সদকা করলেও অনেক
বেশি সাওয়াব পাওয়া যায় প্রয়োজনাতিরিক্ত অধিক সম্পদ সদকা করার চাইতে:
আবু
হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى
النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّ
الصَّدَقَةِ أَعْظَمُ أَجْرًا؟ قَالَ: «أَنْ تَصَدَّقَ وَأَنْتَ صَحِيحٌ شَحِيحٌ
تَخْشَى الفَقْرَ، وَتَأْمُلُ الغِنَى، وَلاَ تُمْهِلُ حَتَّى إِذَا بَلَغَتِ
الحُلْقُومَ، قُلْتَ لِفُلاَنٍ كَذَا، وَلِفُلاَنٍ كَذَا وَقَدْ كَانَ لِفُلاَنٍ»
“জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোন্ সদকাতে বেশি
সাওয়াব? তিনি বললেন, তুমি যখন
এমতাবস্থায় সদকা করবে যে, তুমি তখন সুস্থ, সদকা করতে মন চায় না, গরিব হয়ে যাওয়ার ভীষণ ভয়
পাচ্ছো এবং আরো বড়ো ধনী হওয়ার তোমার খুবই আশা। তবে সদকা করতে দেরি করো না। যাতে
এমন অবস্থার সৃষ্টি না হয় যে, তোমার প্রাণ বের হয়ে যাওয়ার
উপক্রম; অথচ তুমি বলছো, অমুকের জন্য এতো। আর অমুকের জন্য অতো। যখন সবই অন্যের জন্য। তোমার জন্য আর
কিছুই নেই”।[30]
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سَبَقَ دِرْهَمٌ مِئَةَ أَلْفِ
دِرْهَمٍ، فَقَالَ رَجُـلٌ: وَكَيْفَ ذَاكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ قَالَ: رَجُلٌ
لَهُ مَالٌ كَثِيْرٌ، أَخَذَ مِنْ عُرْضِهِ مِئَةَ أَلْفِ دِرْهَـمٍ تَصَدَّقَ
بِهَا، وَرَجُلٌ لَيْسَ لَهُ إِلاَّ دِرْهَمَانِ، فَأَخَذَ أَحَدَهُمَا
فَتَصَدَّقَ بِهِ»
“একটি দিরহাম কখনো কখনো (সাওয়াবের দিক দিয়ে) এক লক্ষ দিরহামকে অতিক্রম
করে যায়। জনৈক ব্যক্তি বললো, সেটা আবার কিভাবে হে আল্লাহর
রাসূল! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
জনৈক ব্যক্তির রয়েছে অনেক অনেক সম্পদ। সে তার অনেক সম্পদের এক সাইড
থেকে এক লক্ষ দিরহাম সদকা করে দিলো। অপর দিকে আরেক জনের শুধুমাত্র দু’টি দিরহামই আছে। সে তার একটিই আল্লাহর পথে সদকা করে দিলো”।[31]
আপনি নিজে সদকা দিতে সুযোগ পাচ্ছেন না; তাই অন্যকে বলে রাখবেন আপনার
পক্ষ থেকে সদকা দিতে, তাতে আপনার সাওয়াবের এতটুকুও ঘাটতি
হবে না:
‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا أَنْفَقَتِ الـْمَرْأَةُ مِنْ
طَعَامِ بَيْتِهَا غَيْرَ مُفْسِدَةٍ كَانَ لَهَا أَجْرُهَا بِمَا أَنْفَقَتْ،
وَلِزَوْجِهَا أَجْرُهُ بِمَا كَسَبَ، وَلِلْخَازِنِ مِثْلُ ذَلِكَ، لاَ يَنْقُصُ
بَعْضُهُمْ أَجْرَ بَعْضٍ شَيْئًا»
“কোনো মহিলা নিজ ঘরের কোনো খাদ্য সামগ্রী সদকা করলে (যাতে সংসারের কোনো
ক্ষতি হয় না) সে সদকা করার সাওয়াব পাবে। তার স্বামী উপার্জনের সাওয়াব পাবে এবং
সংরক্ষণকারী সংরক্ষণের সাওয়াব পাবে। কেউ কারোর সাওয়াব এতটুকুও কমিয়ে দিবে না”।[32]
নিজের কাছে সদকা দেওয়ার মতো কোনো কিছু না থাকলেও অন্যের সদকা বন্টনের
দায়িত্ব পালন করলে তাতে সদকার সাওয়াব পাওয়া যায়:
আবু
মূসা আশ্‘আরী রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الْـخَازِنُ الْـمُسْلِمُ الْأَمِيْنُ
الَّذِيْ يُنْفِذُ مَا أُمِرَ بِهِ كَامِلاً مُوَفَّرًا طَيِّبًا بِهِ نَفْسُهُ
فَيَدْفَعُهُ إِلَى الَّذِيْ أُمِرَ لَهُ بِهِ أَحَدُ الْـمُتَصَدِّقِيْنَ»
“কোনো আমানতদার অন্যের সম্পদ সংরক্ষণকারী মুসলিম ব্যক্তি যদি তাকে যা
দিতে বলা হয়েছে তা পরিপূর্ণভাবে সন্তুষ্ট চিত্তে যাকে দিতে বলা হয়েছে তাকে দিয়ে
দেয় তা হলে তাকেও একজন সদকাকারী হিসেবে গণ্য করা হবে”।[33]
নিজের কাছে সদকা দেওয়ার মতো কোনো কিছু না থাকলেও অন্যকে সদকা দেওয়ার
পরামর্শ দিলে তাতে সদকার সাওয়াব পাওয়া যায়:
আবু
মূসা আশ্‘আরী রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا جَاءَهُ السَّائِلُ أَوْ طُلِبَتْ إِلَيْهِ
حَاجَةٌ قَالَ: «اشْفَعُوا تُؤْجَرُوا، وَيَقْضِي اللَّهُ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا شَاءَ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কোনো ভিক্ষুক আসলে অথবা তাঁর নিকট কিছু
চাওয়া হলে তিনি বলতেন, তোমরা এর জন্য সুপারিশ করো। সাওয়াব
পাবে। আল্লাহ তা‘আলা তো তাঁর নবীর মুখ দিয়ে যা ইচ্ছে তা
ফায়সালা করবেনই”।[34]
আত্মীয়-স্বজনকে সদকা-খয়রাত করলে দু’টি সাওয়াব পাওয়া যায়:
সাল্মান
ইবন ‘আমির রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الصَّدَقَةُ عَلَى الْـمِسْكِيْنِ
صَدَقَةٌ، وَعَلَى ذِيْ الرَّحِمِ اثْنَتَانِ: صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ»
“গরিব-দুঃখীকে সদকা-খয়রাত করলে শুধু একটি সাওয়াব পাওয়া যায় যা হচ্ছে সদকার
সাওয়াব। আর আত্মীয়-স্বজনকে সদকা-খয়রাত করলে দু’টি সাওয়াব
পাওয়া যায়ঃ একটি সদকার সাওয়াব আর অন্যটি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার সাওয়াব”।[35]
আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যে আবার আপনার প্রতি অধিক
শত্রুভাবাপন্ন তাকে সদকা-খয়রাত করা আরো বেশি সাওয়াবের কাজ:
উম্মে
কুলসূম বিনত উকবাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَفْضَلُ الصَّدَقَةِ الصَّدَقَةُ
عَلَى ذِيْ الرَّحِمِ الْكَاشِحِ»
“সর্বোত্তম সদকা হচ্ছে শত্রুভাবাপন্ন আত্মীয়-স্বজনকে
সদকা করা”।[36]
কোনো ব্যক্তি তার কোনো আত্মীয়-স্বজন বা মনিবের নিকট কোনো কিছু চাইলে সে যদি
তাকে তা না দেয় তা হলে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জাহান্নামের একটি বিষধর
সাপ নির্ধারিত করবেন যা তাকে লাগাতার দংশন করবে:
জারীর
ইবন আব্দুল্লাহ্ বাজালী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ ذِيْ رَحِمٍ يَأْتِيْ ذَا
رَحِمِهِ، فَيَسْأَلُهُ فَضْلاً أَعْطَاهُ اللهُ إِيَّاهُ، فَيَبْخَلُ عَلَيْهِ
إِلاَّ أَخْرَجَ اللهُ لَهُ مِنْ جَهَنَّمَ حَيَّةً يُقَالُ لَهَا: شُجَاعٌ
يَتَلَمَّظُ فَيُطَوَّقُ بِهِ»
“কোনো আত্মীয় তার অন্য আত্মীয়ের নিকট আল্লাহ তা‘আলার দেওয়া কোনো সম্পদ চাইলে সে যদি তাকে তা দিতে কার্পণ্য করে তা হলে
আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জাহান্নাম থেকে “শুজা”’ নামক একটি সর্প বের করে আনবেন যা তার
গলা পেঁচিয়ে ধরে তার মুখ দংশন করবে”।[37]
বাহয
ইবনু হাকীম তার পিতা থেকে এবং তার পিতা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَسْأَلُ رَجُلٌ مَوْلاَهُ مِنْ
فَضْلٍ هُوَ عِنْدَهُ، فَيَمْنَعُهُ إِيَّاهُ إِلاَّ دُعِيَ لَهُ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ فَضْلُهُ الَّذِيْ مَنَعَهُ شُجَاعًا أَقْرَعَ»
“কোনো ব্যক্তি তার মনিবের নিকট এমন কিছু চাইলে যা তার নিকট আছে যদি সে
তাকে তা না দেয় তা হলে কিয়ামতের দিন তার এ সম্পদটুকুকে মারাত্মক বিষধর সাপের রূপ
নিয়ে তাকে দংশন করার জন্য ডাকা হবে”।[38]
এ পর্যন্ত কতো টাকা সদকা করেছেন অথবা এখন আপনি কতো টাকা সদকা করতে যাচ্ছেন
তা হিসেব রাখা ঠিক নয়:
আসমা’ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تُحْصِيْ فَيُحْصِيَ اللهُ
عَلَيْكِ»
“তুমি হিসেব করে সদকা দিও না। তা হলে আল্লাহ তা‘আলাও তোমাকে হিসেব করে সাওয়াব দিবেন”।[39]
যা পারেন সদকা করুন; টাকা-পয়সা সর্বদা পকেটে পুরে রাখবেন
না:
আসমা’ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
»لاَ تُوْعِيْ فَيُوْعِيَ اللهُ عَلَيْكِ، ارْضَخِيْ مَا
اسْتَطَعْتِ»
“টাকা-পয়সা ধরে রেখো না তা হলে আল্লাহ তা‘আলাও
তাঁর নি‘আমতসমূহ ধরে রাখবেন। যা পারো দান করতে থাকো”।[40]
সদকা-খয়রাত শরীয়তসম্মত একটি ঈর্ষণীয় বিষয়:
আব্দুল্লাহ্
ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
«لاَ حَسَدَ إِلاَّ فِيْ اثْنَتَيْنِ:
رَجُلٍ آتَاهُ اللهُ مَالاً فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ فِيْ الْـحَقِّ،
وَرَجُلٍ آتَاهُ اللهُ حِكْمَةً فَهُوَ يَقْضِيْ بِهَا وَيُعَلِّمُهَا»
“শুধুমাত্র দু’টি বিষয়েই শরীয়ত সম্মতভাবে কারোর
সাথে ঈর্ষা করা যায়ঃ তার মধ্যে একটি হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলা কাউকে প্রচুর সম্পদ দিয়েছেন এবং সে তা সঠিক খাতে ব্যয় করছে তথা
আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত করছে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে,
আল্লাহ তা‘আলা কাউকে শরীয়তের প্রচুর জ্ঞান
দিয়েছেন এবং সে তারই আলোকে মানুষের মাঝে বিচার-ফায়সালা করছে ও মানুষকে তা শিক্ষা
দিচ্ছে”।[41]
সদকা লুকিয়ে ও ডান হাতে দিতে হয়:
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللهُ تَعَالَى
فِيْ ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ: إِمَامٌ عَدْلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ
فِيْ عِبَادَةِ اللهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِيْ الـْمَسَاجِدِ،
وَرَجُلاَنِ تَحَابَّا فِيْ اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ،
وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ: إِنِّيْ أَخَافُ
اللهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ
مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ»
“সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন
আরশের নিচে ছায়া দিবেন যে দিন আর কোনো ছায়া থাকবে না। প্রথম শ্রেণী হচ্ছে এমন
রাষ্ট্রপতি যিনি সর্বদা ইনসাফের উপরই প্রতিষ্ঠিত। দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে এমন যুবক
যে ছোট থেকেই আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের উপর বেড়ে উঠেছে।
তৃতীয় শ্রেণী হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথেই লাগানো। চতুর্থ
শ্রেণী হচ্ছে এমন দু’ ব্যক্তি যারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে ভালোবেসেছে। আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই তারা পরস্পর একত্রিত হয় এবং তাঁরই সন্তুষ্টির
জন্য তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়। পঞ্চম শ্রেণী হচ্ছে এমন পুরুষ যাকে কোনো
প্রভাবশালী সুন্দরী মহিলা ব্যভিচারের জন্য ডাকছে; অথচ সে
বলছে, আমি তা করতে পারবো না। নিশ্চয় আমি আল্লাহ তা‘আলাকে
ভয় পাচ্ছি। ষষ্ঠ শ্রেণী হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে এরূপ লুকায়িতভাবে সদকা করেছে যে,
তার বাম হাত জানছে না তার ডান হাত কি সদকা করছে। সপ্তম শ্রেণী
হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে একাকীভাবে আল্লাহ তা‘আলার কথা স্মরণ
করে দু’ চোখের পানি প্রবাহিত করছে”।[42]
কোনো কিছু আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা করতে মনে চাইলেই সাথে
সাথে তা সদকা করুন; তাতে এতটুকুও দেরি করবেন না:
’উকবাহ্ ইবন হারিস্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে আসরের সালাত পড়েই ঘর অভিমুখে
খুব দ্রুত রওয়ানা করলেন। ঘরে ঢুকেই একটু পর আবার বেরিয়ে আসলেন। আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা
করলে তিনি বলেন,
«كُنْتُ خَلَّفْتُ فِيْ الْبَيْتِ
تِبْرًا مِّنَ الصَّدَقَةِ فَكِرِهْتُ أَنْ أُبَيِّتَهُ فَقَسَمْتُهُ»
“আমি সদকা দেওয়ার জন্য কিছু স্বর্ণ বা রূপার
টুকরো ঘরে রেখে এসেছিলাম। আমি চাচ্ছিলাম না যে, একটি রাতও
এগুলো আমার নিকট থাকুক। তাই আমি সেগুলো গরিবদের মাঝে বন্টন করে দিলাম”।[43]
সদকাকারী ও কৃপণের একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত:
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَثَلُ الْبَخِيْلِ وَالْـمُنْفِقِ كَمَثَلِ رَجُلَيْنِ
عَلَيْهِمَا جُبَّتَانِ مِنْ حَدِيْدٍ مِنْ ثُدِيِّهِمَا إِلَى تَرَاقِيْهِمَا،
فَأَمَّا الْـمُنْفِقُ فَلاَ يُنْفِقُ إِلاَّ سَبَغَتْ عَلَى جِلْدِهِ حَتَّى
تُخْفِيَ بَنَانَهُ وَتَعْفُـوَ أَثَرَهُ، وَأَمَّا الْبَخِيْلُ فَلاَ يُرِيْدُ
أَنْ يُّنْفِقَ شَيْئًا إِلاَّ لَزِقَتْ كُلُّ حَلْقَةٍ مَكَانَهَا فَهُوَ
يُوَسِّعُهَا وَلاَ تَتَّسِعُ»
“কৃপণ ও দানশীলের দৃষ্টান্ত এমন দু’ ব্যক্তির ন্যায় যাদের গায়ে রয়েছে দু’টি লৌহবর্ম।
যা বুক থেকে গলা পর্যন্ত ভালোভাবে জড়ানো। দানশীল ব্যক্তি যখন দান করে তখন তার
বর্মটি অত্যন্ত প্রশস্ত হয়ে তার পুরো শরীর ঢেকে ফেলে। এমনকি তা তার আঙ্গুলাগ্র
ঢেকে তার পায়ের দাগও মুছে ফেলে। অন্য দিকে কৃপণ ব্যক্তি যখন দান করতে চায় তখন তার
বর্মের প্রতিটি কড়া নিজ নিজ জায়গায় গেঁথে যায়। অতঃপর সে বর্মটি প্রশস্ত করতে চায়। কিন্তু
তা আর প্রশস্ত হয় না”।[44]
প্রত্যেক মুসলিমেরই একান্ত কর্তব্য, নিজের পক্ষ থেকে কিছু না কিছু সদকা
করা তা যেভাবেই হোক না কেন; তবে সদকা দেওয়ার মতো তার কাছে
কোনো কিছু না থাকলে সে যেন কোনো না কোনো ভালো কাজ করে দেয় তাও তার জন্য সদকা হয়ে
যাবে:
আবু
যর গিফারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা কিছু
সংখ্যক গরিব সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সম্পদশালীরা তো সব সাওয়াব নিয়ে গেলো। তারা
নামায পড়ে যেমনিভাবে আমরা পড়ছি। তারা সাওম রাখে যেমনিভাবে আমরা রাখছি। তারা তাদের
প্রয়োজনাতিরিক্ত সকল সম্পদ আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা করছে।
যা আমরা করতে পারছি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন,
«أَوَ لَيْسَ قَدْ جَعَلَ اللهُ لَكُمْ
مَا تَصَّدَّقُوْنَ: إِنَّ بِكُلِّ تَسْبِيْحَةٍ صَدَقَةً، وَكُلُّ تَكْبِيْرَةٍ
صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحْمِيْدَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَهْلِيْلَةٍ صَدَقَةٌ،
وَأَمْرٌ بِالْـمَعْرُوْفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنْ مُنْكَرٍ صَدَقَةٌ، وَفِيْ
بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَيَأْتِيْ أَحَدُنَا
شَهْوَتَهُ وَيَكُوْنُ لَهُ فِيْهَا أَجْرٌ ؟ قَالَ: أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا
فِيْ حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ وِزْرٌ ؟ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِيْ الْـحَلاَلِ
كَانَ لَهُ أَجْرٌ»
“তোমাদের জন্য কি আল্লাহ তা‘আলা সদকা দেওয়ার মতো
কিছুই রাখেননি? অবশ্যই রেখেছেন। প্রতিবার সুবহানাল্লাহ্,
আল্লাহু আকবার, আলহামদুলিল্লাহ্ এবং
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বললে এক একটি করে সদকার সাওয়াব মিলবে। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ
কাজ থেকে নিষেধের মধ্যেও সদকার সাওয়াব রয়েছে। তেমনিভাবে স্ত্রী সহবাসেও সদকার
সাওয়াব রয়েছে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটা
কিভাবে হয় যে, আমরা যৌন তৃপ্তি অর্জন করবো। আর তাতে
সাওয়াবও রয়েছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা বলো তো দেখি,
যদি কেউ ব্যভিচার করে তা হলে তার কি গুনাহ্ হবে না? অতএব সে যদি তা না করে হালালভাবে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তা হলে
তার অবশ্যই সাওয়াব হবে”।[45]
আবু
বুর্দাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ صَدَقَةٌ،
فَقَالُوْا: يَا نَبِيَّ اللهِ! فَمَنْ لَمْ يَجِدْ ؟ قَالَ: يَعْمَلُ بِيَدِهِ
فَيَنْفَعُ نَفْسَهُ وَيَتَصَدَّقُ، قَالُوْا: فَإِنْ لَمْ يَجِدْ؟ قَالَ:
يُعِيْنَ ذَا الْحَاجَةِ الْـمَلْهُوْفَ، قَالُوْا: فَإِنْ لَمْ يَجِدْ ؟ قَالَ:
فَلْيَعْمَلْ بِالـْمَعْرُوْفِ وَلْيُمْسِكْ عَنِ الشَّرِّ، فَإِنَّهَا لَهُ
صَدَقَةٌ»
“প্রত্যেক মুসলিমকেই নিজ পক্ষ থেকে সদকা দিতে হবে। সাহাবীগণ বললেন,
হে আল্লাহর নবী! যদি কেউ সদকা দেওয়ার মতো কিছু না পায়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
সে নিজ হাতে কাজ করে নিজকে লাভবান করবে এবং সদকা দিবে। সাহাবীগণ
বললেন, যদি সে তাও করতে না পারে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তখন সে একজন দুর্দশাগ্রস্ত গরিবকে সহযোগিতা করবে। সাহাবীগণ
বললেন, যদি সে তাও করতে না পারে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তখন সে ভালো কাজ করবে এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত
থাকবে। সেটাও তার জন্য সদকা হবে”।[46]
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كُلُّ سُلاَمَى مِنَ النَّاسِ
عَلَيْهِ صَدَقَةٌ كُلَّ يَوْمٍ تَطْلُعُ فِيْهِ الشَّمْسُ، تَعْدِلُ بَيْنَ
الاِثْنَيْنِ صَدَقَةٌ، وَتُعِيْنُ الرَّجُلَ فِيْ دَابَّتِهِ فَتَحْمِلُهُ
عَلَيْهَا أَوْ تَرْفَعُ لَهُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَةٌ، وَالْكَلِمَةُ
الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ خُطْوَةٍ تَمْشِيْهَا إِلَى الصَّلاَةِ صَدَقَةٌ،
وَتُمِيْطُ الْأَذَى عَنِ الطَّرِيْقِ صَدَقَةٌ»
“মানব শরীরের প্রত্যেকটি জোড়ার জন্য প্রত্যেক দিন একটি করে সদকা দিতে
হবে। দু’ জনের মাঝে ইনসাফপূর্ণ ফায়সালা করে দিবে তাতেও সদকার
সাওয়াব। কোনো মানুষ অথবা তার আসবাবপত্র তার আরোহণে উঠিয়ে দিতে সহযোগিতা করবে তাতেও
সদকার সাওয়াব। ভালো কথা তথা কুরআন-হাদীসের কথা কাউকে শুনাবে তাতেও সদকার সাওয়াব।
সালাত পড়ার জন্য মসজিদ অভিমুখে কদম ফেলবে তাতেও সদকার সাওয়াব। রাস্তা থেকে
কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলবে তাতেও সদকার সাওয়াব”।[47]
কেউ সদকা করলে তার জন্য দো‘আ করতে হয়:
আব্দুল্লাহ্
ইবন আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কেউ সদকা নিয়ে আসলে তিনি বলতেন, হে আল্লাহ, আপনি অমুক বংশের উপর রহমত বর্ষণ করুন। বর্ণনাকারী বলেন,
একদা আমার পিতা তাঁর নিকট সদকা নিয়ে আসলে তিনি বলেন,
«اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى آلِ أَبِيْ
أَوْفَى»
“হে আল্লাহ, আপনি আবু আওফার বংশের উপর রহমত বর্ষণ করুন”।[48]
কেউ আপনার নিকট সদকা নিতে আসলে আপনি তাকে যথাসাধ্য সন্তুষ্ট রাখতে চেষ্টা
করবেন:
জারীর
ইবন আব্দুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা কিছু গ্রাম্য লোক রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো: হে আল্লাহর
রাসূল! কিছু সংখ্যক সদকা উসুলকারী আমাদের উপর যুলুম করছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বলেন: তোমরা সদকা উসুলকারীদেরকে সন্তুষ্ট
রাখবে। তারা বললো: হে আল্লাহর রাসূল! যদিও তারা আমাদের উপর যুলুম করে তারপরও আমরা
তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«أَرْضُوْا مُصَدِّقِيْكُمْ وَفِيْ
رِوَايَةٍ: وَإِنْ ظُلِمْتُمْ»
“তোমরা সদকা উসুলকারীদেরকে সন্তুষ্ট রাখবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যদিও তোমাদের উপর যুলুম করা হয়”।[49]
অন্য
বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا أَتَاكُمُ الـْمُصَدِّقُ فَلْيَصْدُرْ عَنْكُمْ وَهُوَ
عَنْكُمْ رَاضٍ»
“যখন তোমাদের নিকট কোনো সদকা উসুলকারী আসে তখন সে যেন তোমাদের কাছ থেকে সন্তুষ্ট
চিত্তেই বিদায় নেয়”।[50]
জারীর
ইবন আব্দুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উক্ত হাদীস শোনার পর কোনো সদকা উসুলকারী আমার উপর
সন্তুষ্ট না হয়ে বিদায় নেয়নি।
যারা দুনিয়াতে অঢেল সম্পদের মালিক তারা কিয়ামতের দিন অত্যন্ত গরিব হবেন
যতক্ষণ না তারা আল্লাহ তা‘আলার পথে বিপুলভাবে সদকা-খয়রাত করেন,
আবু
যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ الْمُكْثِرِيْنَ هُمُ الْـمُقِلُّوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
إِلاَّ مَنْ أَعْطَاهُ اللهُ خَيْرًا فَنَفَحَ فِيْهِ يَمِيْنَهُ وَشِمَالَهُ، وَبَيْنَ يَدَيْهِ
وَوَرَاءَهُ، وَعَمِلَ فِيْهِ خَيْرًا»
“নিশ্চয় দুনিয়ার বড় ধনীরা কিয়ামতের দিন বড় গরিব হবে। তবে সে ব্যক্তি
গরিব হবে না যাকে আল্লাহ তা‘আলা অঢেল সম্পদ দিয়েছেন এবং
সে তা আল্লাহ তা‘আলার পথে ডানে-বাঁয়ে, সামনে-পেছনে তথা সর্বদিকেই সদকা করেছে। উপরন্তু সর্বদা সে তাঁর
সম্পদগুলো কল্যাণকর কাজেই খরচ করেছে”।[51]
একমাত্র হালাল, পবিত্র এবং উত্তম বস্তুই আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা করতে হয়:
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ
ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا كَسَبۡتُمۡ وَمِمَّآ أَخۡرَجۡنَا لَكُم
مِّنَ ٱلۡأَرۡضِۖ وَلَا تَيَمَّمُواْ ٱلۡخَبِيثَ مِنۡهُ تُنفِقُونَ وَلَسۡتُم بَِٔاخِذِيهِ
إِلَّآ أَن تُغۡمِضُواْ فِيهِۚ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ ٢٦٧ ﴾ [البقرة: ٢٦٧]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছো এবং যা আমি তোমাদের জন্য জমিন
থেকে উৎপন্ন করেছি তা থেকে শুধু পবিত্র ও উন্নত বস্তুই আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা করো। কোনো অপবিত্র বা অনুন্নত বস্তু তাঁর পথে সদকা করো
না যা তোমরা নিজেও গ্রহণ করবে না চোখ বন্ধ করা ছাড়া। জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা (এ জাতীয় সদকা থেকে) অমুখাপেক্ষী
এবং সুপ্রশংসিত।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৬৭]
বারা’ ইবন ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, উক্ত আয়াত আনসারীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। তাঁরা
খেজুর কাটার সময় হলে কাঁচা-পাকা খেজুরের থোকাসমূহ মসজিদে নববীর দু’পিলারের মাঝখানে রশি টাঙ্গিয়ে তাতে ঝুলিয়ে রাখতেন। এতে করে গরিব
মুহাজিরগণ তা থেকে কিছু খেজুর আহার করে খাদ্যের কাজ সেরে নিতেন। একদা জনৈক আনসারী
সাহাবী নিম্ন মানের একটি খেজুর থোকা সে রশিতে টাঙ্গিয়ে রাখলেন। তখনই উক্ত আয়াত
নাযিল হয়।[52]
হারাম বস্তু সদকা করলে কোনো সাওয়াব পাওয়া যায় না:
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا أَدَّيْتَ الزَّكَاةَ فَقَدْ
قَضَيْتَ مَا عَلَيْكَ، وَمَنْ جَمَعَ مَالاً حَرَامًا ثُمَّ تَصَدَّقَ بِهِ ؛
لَمْ يَكُنْ لَهُ فِيْهِ أَجْرٌ، وَكَانَ إِصْرُهُ عَلَيْهِ»
“যখন তুমি সম্পদের যাকাত দিলে তখনই তোমার দায়িত্ব আদায় হলো। যে ব্যক্তি
হারাম সম্পদ সঞ্চয় করে তা থেকে সদকা দেয় তাতে তার কোনো সাওয়াবই হয় না। বরং তার উপর
পূর্বের হারাম সম্পদ সঞ্চয়ের গুনাহ্’র বোঝা অবিকলই থেকে
যায়”।[53]
সদকা করলে মানুষ গরিব হয়ে যায় এ কথা একমাত্র শয়তানেরই প্রবঞ্চনা:
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلشَّيۡطَٰنُ يَعِدُكُمُ
ٱلۡفَقۡرَ وَيَأۡمُرُكُم بِٱلۡفَحۡشَآءِۖ وَٱللَّهُ يَعِدُكُم مَّغۡفِرَةٗ مِّنۡهُ
وَفَضۡلٗاۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ ٢٦٨ ﴾ [البقرة: ٢٦٨]
“শয়তান তো তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল
কাজের আদেশ করে। এ দিকে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে ক্ষমা ও
দয়ার ওয়াদা দিচ্ছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা হচ্ছেন বিপুল দাতা
ও সর্বজ্ঞ”।
[সূরা আল-বাকারা,
আয়াত: ২৬৮]
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ»
“সদকা-খয়রাত ধন-সম্পদ কমিয়ে দেয় না”।[54]
কোনো জায়গায় সদকার আলোচনা চললে যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম সদকা করবে সে
তৎপরবর্তী সকল সদকার সাওয়াব একাই পাবে:
জারীর
ইবন আব্দুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা
এক দুপুরবেলায় আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসা ছিলাম।
এমতাবস্থায় অর্ধ উলঙ্গ,
পায়ে জুতোবিহীন, তলোয়ার কাঁধে ঝুলানো,
সাদা-কালো ডোরাবিশিষ্ট চাদর পরা কিছু লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখে উপস্থিত হলো। তাদের অধিকাংশ বা
সবাই মুযার গোত্রের। তাদের দুরবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায়। তিনি ঘরে ঢুকলেন আবার
বেরুলেন। অতঃপর বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কে আদেশ করলে
তিনি আযান ও ইকামত দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করে বক্তব্য দিতে শুরু করেন।
তিনি
বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে মানব সকল! তোমরা নিজ প্রভুকে ভয়
করো যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁরই থেকে সৃষ্টি করেন
তাঁর সহধর্মিণীকে। তাঁদের উভয় থেকে আরো সৃষ্টি করেন বহু নর-নারী। যারা পুরো
দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করো যাঁর
দোহাই দিয়ে তোমরা একে অপরের নিকট কিছু চাও এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করাকে ভয়
করো। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের তত্ত্বাবধানকারী। [সূরা
আন-নিসা’, আয়াদ: ১]
আল্লাহ
তা‘আলা
আরো বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করো এবং প্রত্যেকেরই এ কথা ভাবা আবশ্যক যে, সে আগামীকাল তথা কিয়ামতের দিনের জন্য কি তৈরি করেছে। তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের
কর্মকান্ড সম্পর্কে সম্যক অবগত। হাশ্র: ১৮
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেকেই যেন দীনার,
দিরহাম, কাপড়, গম,
খেজুর এমনকি একটি খেজুরের একাংশ হলেও সদকা করে। এ কথা শুনে জনৈক আনসারী
বড়ো এক থলে খেজুর নিয়ে আসলো। যা সে অনেক কষ্ট করেই বহন করছিলো। এরপর আরো অনেকেই
অনেক কিছু নিয়ে আসলো। এমনকি দেখতে দেখতে খাদ্য ও কাপড়ের দু’টি স্তূপ জমে গেলো। তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা স্বর্ণের মতো জ্বলজ্বল করছিলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«مَنْ سَنَّ فِيْ الْإِسْلاَمِ سُنَّةً
حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، مِنْ غَيْرِ أَنْ
يَنْقُصَ مِنْ أُجُوْرِهِمْ شَيْءٌ، وَمَنْ سَنَّ فِيْ الْإِسْلاَمِ سُنَّةً
سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ،
مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ»
“যে ব্যক্তি কোনো সমাজে ইসলামের কোনো একটি ভালো কাজ চালু করলো যা ইতোপূর্বে
ওই সমাজে চালু ছিলো না তা হলে তার আমলনামায় সে ভালো কাজটির সাওয়াব লেখা হবে এবং
আরো লেখা হবে ওই সকল আমলের সাওয়াবও যা তার পরবর্তীতে তারই অনুকরণে করা হয়েছে। তবে
ওদের সাওয়াব এতটুকুও কম করা হবে না। ঠিক এরই বিপরীতে যে ব্যক্তি কোনো সমাজে
ইসলামের কোনো একটি খারাপ কাজ চালু করলো যা ইতোপূর্বে ওই সমাজে চালু ছিলো না তা হলে
তার আমলনামায় সে খারাপ কাজটির গুনাহ্ লেখা হবে এবং আরো লেখা হবে ওই সকল আমলের
গুনাহ্ও যা তার পরবর্তীতে তারই অনুকরণে করা হয়েছে। তবে ওদের গুনাহ্ এতটুকুও কম করা
হবে না”।[55]
সদকাকারীদেরকে তিরস্কার করা মুনাফিকের আলামতঃ
আবু
মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাদেরকে সদকা
করার আদেশ করা হলে আমরা তা করতে উঠে-পড়ে লেগে যাই। তখন আবু ‘আক্বীল নামক জনৈক সাহাবী অর্ধ সা’ তথা দেড়-দু’
কিলো পরিমাণ সদকা করলো। আর অন্য জন সদকা করলো আরো অনেক বেশি। তখন
মুনাফিকরা বলতে শুরু করলে, আল্লাহ তা‘আলা এর এ সামান্যটুকুর মুখাপেক্ষী নন। আর ওই ব্যক্তি তো এতো বেশি সদকা
করলো অন্যকে দেখানোর জন্য। তখন আল্লাহ তা‘আলা নিম্নোক্ত
আয়াতটি নাযিল করেন,
﴿ ٱلَّذِينَ يَلۡمِزُونَ
ٱلۡمُطَّوِّعِينَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ فِي ٱلصَّدَقَٰتِ وَٱلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ
إِلَّا جُهۡدَهُمۡ فَيَسۡخَرُونَ مِنۡهُمۡ سَخِرَ ٱللَّهُ مِنۡهُمۡ وَلَهُمۡ عَذَابٌ
أَلِيمٌ ٧٩ ﴾ [التوبة: ٧٩]
“যারা সদকাকারী মু’মিনদেরকে সদকার ব্যাপারে
তিরস্কার করে বিশেষ করে যাদের নিকট এতটুকুই সম্বল আছে এবং সে তা আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা করেছে এরপরও তাদেরকে নিয়ে যারা ঠাট্টা করে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে নিয়ে ঠাট্টা করবেন এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তি”। [সূরা আত-তাওবাহ্, আয়াত: ৭৯]
কোনো জিনিস অতি সামান্য হলেও তা সদকা করতে অবহেলা করবেন না:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম প্রায়ই বলতেন,
«يَا نِسَاءَ الْـمُسْلِمَاتِ! لاَ تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ
فِرْسِنَ شَاةٍ»
“হে মুসলিম মহিলাগণ! কোনো প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীকে কোনো কিছু তা যদিও
অতি সামান্য হয় তুচ্ছ মনে করে দেওয়া থেকে বিরত থাকবে না এমনকি তা ছাগলের খুরই বা
হোক না কেন”।[56]
উম্মে বুজাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! অনেক সময় গরিব
লোক এসে আমার দরজায় ধন্না দেয়; অথচ আমার কাছে তখন দেওয়ার
মতো কিছুই থাকে না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন,
«انْ لَمْ تَجِدِيْ إِلاَّ ظِلْفًا مُحَرَّقًا فَادْفَعِيْهِ إِلَيْهِ فِيْ
يَدِهِ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: لاَ تَرُدِّيْ سَائِلَكِ وَلَوْ بِظِلْفٍ»
“যদি তুমি ছাগলের একটি পোড়া খুরও পাও তাই তুমি তার হাতে তুলে দিবে। অন্য
বর্ণনায় রয়েছে, তুমি ভিক্ষুককে ফিরিয়ে দেবে না। একটি খুর
দিয়ে হলেও তাকে বিদায় দেবে”।[57]
যে
ব্যক্তি অত্যন্ত গরিব;
অথচ সে এতদসত্ত্বেও কারোর কাছে কোনো কিছু চায় না তাকেই সদকা করা
উচিত:
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَيْسَ الـْمِسْكِيْنُ بِهَذَا
الطَّوَّافِ الَّذِيْ يَطُوْفُ عَلَى النَّاسِ، فَتَرُدُّهُ اللُّقْمَةُ
وَاللُّقْمَتَانِ، وَالتَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ، قَالُوْا: فَمَا الْـمِسْكِيْنُ
يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ قَالَ: الَّذِيْ لاَ يَجِدُ غِنًى يُغْنِيْهِ وَلاَ يُفْطَنُ
لَهُ، فَيُتَصَدَّقَ عَلَيْهِ، وَلاَ يَسْأَلُ النَّاسَ شَيْئًا»
“সত্যিকারের গরিব সে নয় যে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায়। অতঃপর
এক-দু’ গ্রাস অথবা এক-দু’টা
খেজুর পেলে সে চলে যায়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর
রাসূল! তা হলে সত্যিকারের গরিব কে? তিনি বললেন, সত্যিকারের গরিব সে ব্যক্তি যে ধনী নয় ঠিকই। তবে তাকে দেখলে তা সহজেই বুঝা
যায় না। যার দরুন কেউ তাকে সদকা দেয় না এবং সেও কারোর কাছে কিছু চায় না”।[58]
মুত্তাকি ব্যক্তিকে সদকা দেওয়া অনেক ভালো; তবে কেউ যদি অভাবে পড়ে ঈমান
হারানোর ভয় থাকে তা হলে তাকেও সদকা করা প্রয়োজন:
সা’দ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু সংখ্যক লোককে সদকা
দিলেন। যাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। তবে তিনি তাদের মধ্যকার একজনকে কিছুই দেননি;
অথচ তাকে আমার খুবই ভালো লেগেছিলো। তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চুপে চুপে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি একে কিছুই দেননি কেন? আল্লাহর
কসম খেয়ে বলছি, আমি তো তাকে মু’মিনই
মনে করছি। তিনি বললেন, না কি তুমি তাকে মুসলিমই মনে করছো।
তখন আমি একটুখানি চুপ করে গেলাম। কিন্তু আমার মন তো আর চুপ থাকতে দেয়নি। আমি বললাম,
হে আল্লাহর রাসূল! আপনি একে কিছুই দেননি কেন? আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, আমি তো তাকে মু’মিনই মনে করছি। তিনি বললেন, না কি তুমি তাকে
মুসলিমই মনে করছো। তখন আমি একটুখানি চুপ করে
গেলাম। কিন্তু আমার মন তো আর চুপ থাকতে দেয়নি। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি একে কিছুই
দেননি কেন? আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, আমি তো তাকে মু’মিনই মনে করছি। তিনি বললেন,
না কি তুমি তাকে মুসলিমই মনে করছো। অতঃপর তিনি বলেন,
«إِنِّيْ لَأُعْطِيْ الرَّجُلَ
وَغَيْرُهُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْهُ، خَشْيَةَ أَنْ يُكَبَّ فِيْ النَّارِ عَلَى
وَجْهِهِ»
“আমি কাউকে কোনো কিছু দিয়ে থাকি; অথচ অন্যজনই
আমার কাছে অধিক প্রিয় তার চাইতে। তা এ কারণেই যে, আমি তার
ব্যাপারে ভয় পাচ্ছি তাকে বঞ্চিত করলে সে ঈমানহারা হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে”।[59]
কৃপণতা সমূহ ধ্বংসের মূলঃ
আব্দুল্লাহ্
ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু
আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা খুতবা দিতে গিয়ে বলেন,
«إِيَّاكُمْ وَالشُّحَّ ؛ فَإِنَّمَا
هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِالشُّحِّ، أَمَرَهُمْ بِالْبُخْلِ فَبَخِلُوْا،
وَأَمَرَهُمْ بِالْقَطِيْعَةِ فَقَطَعُوْا، وَأَمَرَهُمْ بِالْفُجُوْرِ
فَفَجَرُوْا»
“তোমরা কার্পণ্যের মানসিকতা পরিহার করো। কারণ, তা
কৃপণতার আদেশ করে তখন মানুষ কৃপণ হয়ে যায়। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতে বলে তখন মানুষ
তা ছিন্ন করে। গুনাহ্ করতে আদেশ করে তখন মানুষ গুনাহ্ করে বসে”।[60]
কোনো দুধেল পশু অথবা যা থেকে সদকা গ্রহণকারী সর্বদা বা সুদীর্ঘ কাল লাভবান
হতে পারে এমন বস্তু সদকা করা বা ধার দেওয়া অত্যধিক সাওয়াবের কাজ:
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَلاَ رَجُلٌ يَمْنَحُ أَهْلَ بَيْتٍ
نَاقَةً تَغْدُوْ بِعُسٍّ، وَتَرُوْحُ بِعُسٍّ، إِنَّ أَجْرَهَا لَعَظِيْمٌ»
“এমন কোনো পুরুষ আছে কি? যে কোনো পরিবারকে এমন
একটি দুধেল উষ্ট্রী ধার দিবে যা সকালে এক বাটি দুধ দিবে এবং বিকালেও আরেক বাটি। এর
সাওয়াব অনেক বেশি”।[61]
কোনো মৃত ব্যক্তির জন্য সদকা করলে তা অবশ্যই তার আমলনামায় পৌঁছে:
‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলে,
«يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنَّ أُمِّيْ
افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا وَلَمْ تُوْصِ، وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ،
أَفَلَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا؟ قَالَ: نَعَمْ»
“হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম! আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন; অথচ তিনি অসিয়ত
করার কোনো সুযোগই পাননি। আমার মনে হয়, তিনি কথা বলতে
পারলে অবশ্যই সদকা করতেন। অতএব আমি তাঁর পক্ষ থেকে কোনো কিছু সদকা করলে এতে তাঁর
কোনো সাওয়াব হবে কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই”।[62]
নিজ স্ত্রী-সন্তানের প্রয়োজনীয় খরচ চালানোর মধ্যেও সদকার সাওয়াব রয়েছে:
আবু
মাসউদ বাদ্রী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ الْـمُسْلِمَ إِذَا أَنْفَقَ
عَلَى أَهْلِهِ نَفَقَةً وَهُوَ يَحْتَسِبُهَا كَانَتْ لَهُ صَدَقَةٌ»
“কোনো মুসলিম যদি সাওয়াবের নিয়্যাতে তার পরিবারের প্রয়োজনীয় খরচাদি
চালিয়ে যায় তাতেও তার সদকার সাওয়াব রয়েছে”।[63]
উম্মু
সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলাম,
হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
আমি তো আবু সালামাহ্’র সন্তানগুলোকে এমন অবহেলায় ছেড়ে
দিতে পারি না। কারণ, তারা তো আমারও সন্তান। অতএব আমি
তাদের খরচাদি চালিয়ে গেলে তাতে আমার কোনো সাওয়াব হবে কি? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«نَعَمْ، لَكِ فِيْهِمْ أَجْرٌ مَا
أَنْفَقْتِ عَلَيْهِمْ»
“হ্যাঁ, তুমি তাদের জন্য যাই খরচ করবে তাতে সদকার
সাওয়াব পাবে”।[64]
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«دِيْنَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِيْ سَبِيْلِ
اللهِ، وَدِيْنَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِيْ رَقَبَةٍ، وَدِيْنَارٌ تَصَدَّقْتَ بِهِ
عَلَى مِسْكِيْنٍ، وَدِيْنَارٌ أَنْفَقْتَهُ عَلَى أَهْلِكَ، أَعْظَمُهَا أَجْرًا
الَّذِيْ أَنْفَقْتَهُ عَلَى أَهْلِكَ»
“যে (দীনার) টাকাটি তুমি আল্লাহ তা‘আলার পথে
খরচ করলে এবং যে (দীনার) টাকাটি তুমি গোলাম-বান্দির উপর খরচ করলে এবং যে (দীনার) টাকাটি
তুমি কোনো দরিদ্রকে সদকা হিসেবে দিলে এবং যে (দীনার) টাকাটি তুমি নিজ পরিবারের
জন্য খরচ করলে তার মধ্যে সব চাইতে বেশি সাওয়াবের হচ্ছে সে (দীনার) টাকাটি যা তুমি
নিজ পরিবারের জন্য খরচ করলে”।[65]
কাউকে কোনো কিছু ঋণ দেওয়া মানে তাকে তা সদকা করা:
আব্দুল্লাহ্
ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كُلُّ قَرْضٍ صَدَقَةٌ»
“প্রতিটি ঋণই সদকা”।[66]
বুরাইদাহ্
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا ؛ فَلَهُ
كُلَّ يَوْمٍ صَدَقَةٌ قَبْلَ أَنْ يَحِلَّ الدَّيْنُ، فَإِذَا حَلَّ الدَّيْنُ
فَأَنْظَرَهُ بَعْدَ ذَلِكَ ؛ فَلَهُ كُلَّ يَوْمٍ مِثْلَيْهِ صَدَقَةٌ»
“কেউ যদি কোনো দরিদ্র ঋণগ্রহীতাকে ঋণ আদায়ের ব্যাপারে কিছু সময় দেয় তা
হলে সে প্রতিদিন ততটুকু অর্থ একটিবার সদকা করার সাওয়াব পাবে যতক্ষণ না ঋণ আদায়ের
সে নির্ধারিত দিন এসে যায়। উক্ত নির্ধারিত দিন এসে যাওয়ার পর আবারো যদি সে তাকে
দ্বিতীয়বারের মতো আরো কিছু সময় বাড়িয়ে দেয় তা হলে সে প্রতিদিন ততটুকু অর্থ দু’
বার সদকা করার সাওয়াব পাবে”।[67]
আবু
উমামাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«دَخَلَ رَجُلٌ الْجَنَّةَ، فَرَأَى
مَكْتُوْبًا عَلَى بَابِهَا: الصَّدَقَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، وَالْقَرْضُ
بِثَمَانِيَةَ عَشْرَ»
“জনৈক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করার পর দেখতে পায় জান্নাতের গেটে লেখা,
সদকায় দশ গুণ সাওয়াব এবং ঋণে আঠারো গুণ”।[68]
যার খাদ্য নেই আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছে করলেই তাকে খাদ্য দিতে
পারেন তা হলে আমরা কেন তাকে খাদ্য দেবো এ চিন্তা কাফিরদেরই চিন্তা:
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿ وَإِذَا قِيلَ
لَهُمۡ أَنفِقُواْ مِمَّا رَزَقَكُمُ ٱللَّهُ قَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لِلَّذِينَ
ءَامَنُوٓاْ أَنُطۡعِمُ مَن لَّوۡ يَشَآءُ ٱللَّهُ أَطۡعَمَهُۥٓ إِنۡ أَنتُمۡ إِلَّا
فِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٖ ٤٧ ﴾ [يس: ٤٧]
“যখন তাদেরকে বলা হয়ঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে
যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে দান করো তখন কাফিররা মু’মিনদেরকে
বলেঃ আল্লাহতা‘আলা ইচ্ছে করলেই তো তাদেরকে খাওয়াতে পারেন।
অতএব আমরা কেন তাদেরকে খাওয়াতে যাবো? তোমরা তো সুস্পষ্ট
বিভ্রান্তিতেই রয়েছো”। [সূরা ইয়াসিন, আয়াত: ৪৭]
সময় থাকতেই সদকা-খয়রাত করুন; যাতে মৃত্যুর সময় আপসোস করে বলতে না
হয়, আহ্! আর একটু সময় পেলে তো সবগুলো সম্পদ সদকা করে
ফেলতাম:
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿ وَأَنفِقُواْ مِن
مَّا رَزَقۡنَٰكُم مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ أَحَدَكُمُ ٱلۡمَوۡتُ فَيَقُولَ رَبِّ
لَوۡلَآ أَخَّرۡتَنِيٓ إِلَىٰٓ أَجَلٖ قَرِيبٖ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ
١٠ ﴾ [المنافقون: ١٠]
“আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তোমরা আল্লাহ তা‘আলার পথে এখনই ব্যয় করো তোমাদের কারোর মৃত্যু আসার পূর্বেই; যাতে মৃত্যুর সময় আর বলতে না হয়ঃ হে আমার প্রভু! তুমি যদি আমাকে আরো
কিছু কাল সময় দিতে তা হলে আমি বেশি বেশি সদকা করতাম এবং সৎকর্মশীল হয়ে যেতাম”। [সূরা আল-মুনাফিকূন, আয়াত: ১০]
যারা কুরআন-হাদীস ও মাদ্রাসা-মক্তব নিয়ে ব্যস্ত তাদেরকে যারা সদকা দিতে
নিষেধ করে তারা মুনাফিক:
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿ هُمُ ٱلَّذِينَ
يَقُولُونَ لَا تُنفِقُواْ عَلَىٰ مَنۡ عِندَ رَسُولِ ٱللَّهِ حَتَّىٰ يَنفَضُّواْۗ
وَلِلَّهِ خَزَآئِنُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَلَٰكِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ لَا يَفۡقَهُونَ
٧ ﴾ [المنافقون: ٧]
“তারাই (মুনাফিকরাই) বলেঃ যারা রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আশেপাশে থাকে তথা তাঁর থেকে ধর্মীয় জ্ঞান অন্বেষণ
করে তাদেরকে সদকা দিও না তা হলে তারা তাঁর নিকট থেকে চলে যাবে তথা কুরআন-হাদীসের
শিক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে; অথচ আকাশ ও পৃথিবীর সকল
ধন-ভান্ডারের মালিক একমাত্র আল্লাহই। কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না”। [সূরা আল-মুনাফিকূন,
আয়াত: 7]
কৃপণতা একমাত্র মুনাফিকেরই পরিচয় এবং তারাই অন্যদেরকে আল্লাহ
তা‘আলার পথে সদকা-খয়রাত করতে নিষেধ করে:
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلۡمُنَٰفِقُونَ
وَٱلۡمُنَٰفِقَٰتُ بَعۡضُهُم مِّنۢ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمُنكَرِ وَيَنۡهَوۡنَ
عَنِ ٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَقۡبِضُونَ أَيۡدِيَهُمۡۚ نَسُواْ ٱللَّهَ فَنَسِيَهُمۡۚ إِنَّ
ٱلۡمُنَٰفِقِينَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٦٧ ﴾ [التوبة: ٦٧]
“মুনাফিক পুরুষ ও মহিলারা সবাই একই রকম। তারা অসৎ কাজের নির্দেশ দেয় এবং
সৎ কাজে বাধা প্রদান করে। নিজেদের হাতসমূহ সদকা-খয়রাত থেকে গুটিয়ে নেয়। তারা আল্লাহ
তা‘আলাকে ভুলে গিয়েছে। সুতরাং তিনিও তাদেরকে ভুলে
গিয়েছেন। নিশ্চয় মুনাফিকরা অতি অবাধ্য”। [সূরা আত-তাওবাহ্, আয়াত: ৬৭]
যারা আল্লাহ তা‘আলার নিকট এ মর্মে দো‘আ করছে যে,
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যথেষ্ট সম্পদ দিলে আপনার পথে তা অবশ্যই
ব্যয় করবো; অথচ সম্পদ পেলে আর তাঁর পথে কিছুই ব্যয় করে না
তারা খাঁটি মুনাফিক:
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞وَمِنۡهُم مَّنۡ
عَٰهَدَ ٱللَّهَ لَئِنۡ ءَاتَىٰنَا مِن فَضۡلِهِۦ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُونَنَّ مِنَ
ٱلصَّٰلِحِينَ ٧٥ فَلَمَّآ ءَاتَىٰهُم مِّن فَضۡلِهِۦ بَخِلُواْ بِهِۦ وَتَوَلَّواْ
وَّهُم مُّعۡرِضُونَ ٧٦ فَأَعۡقَبَهُمۡ نِفَاقٗا فِي قُلُوبِهِمۡ إِلَىٰ يَوۡمِ يَلۡقَوۡنَهُۥ
بِمَآ أَخۡلَفُواْ ٱللَّهَ مَا وَعَدُوهُ وَبِمَا كَانُواْ يَكۡذِبُونَ ٧٧ ﴾ [التوبة: ٧٥، ٧٧]
“তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে এমন কতিপয় লোকও রয়েছে যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে এ মর্মে অঙ্গীকার করে যে, আল্লাহ তা‘আলা যদি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে প্রচুর সম্পদ দান করেন তা হলে আমরা তাঁর
পথে খুব দান-সদকা করবো এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো। কার্যতঃ যখন আল্লাহ
তা‘আলা তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে প্রচুর সম্পদ দান করলেন তখন
তারা তাতে কার্পণ্য করতে লাগলো এবং তাঁর আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। আর তারা তো
মুখ ফিরিয়ে নিতেই অভ্যস্ত। অতএব আল্লাহ তা‘আলা শাস্তিস্বরূপ
তাদের অন্তর সমূহে মুনাফিকী অবতীর্ণ করলেন যা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ তথা কিয়ামত
পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে। আর তা এ কারণেই যে, তারা আল্লাহ
তা‘আলাকে দেওয়া অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে এবং সর্বদা মিথ্যা
কথা বলছে”। [সূরা আত-তাওবাহ্, আয়াত: ৭৫-৭৭]
সদকা দিতে গিয়ে হঠকারিতা দেখানো অথবা আক্রমণাত্মক আচরণ করা সদকা না দেওয়ারই
শামিল:
আনাস্
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الْـمُعْتَدِيْ الْـمُتَعَدِّيْ فِيْ
الصَّدَقَةِ كَمَانِعِهَا»
“সদকার ব্যাপারে হঠকারী ও আক্রমণাত্মক আচরণকারী যেন সদকাই দেয়নি”।[69]
সাধারণত নিজের সচ্ছলতা বজায় রেখেই সদকা করা অধিক শ্রেয়:
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ خَيْرَ الصَّدَقَةِ مَا تَرَكَ
غِنًى، أَوْ تُصُدِّقَ بِهِ عَنْ ظَهْرِ غِنًى، وَابْدَأْ بِمَنْ تَعُوْلُ»
“সর্বোত্তম সদকা হচ্ছে তা যার পরও সচ্ছলতা অবশিষ্ট থাকে অথবা সচ্ছলতা
বজায় রেখেই যা সদকা করা হয়। তবে ব্যয় সর্বপ্রথম নিজ
অধীনস্থ থেকেই শুরু করতে হবে যাদের ব্যয়ভার তুমিই বহন করছো”।[70]
আবু
উমামাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَا ابْنَ آدَمَ! إِنَّكَ أَنْ
تَبْذُلَ الْفَضْلَ خَيْرٌ لَكَ، وَأَنْ تُمْسِكَهُ شَرٌّ لَكَ، وَلاَ تُلاَمُ
عَلَى كَفَافٍ»
“হে আদম সন্তান! তুমি যদি তোমার নিতান্ত প্রয়োজনাতিরিক্ত সকল ধন-সম্পদ আল্লাহ
তা‘আলার পথে খরচ করে দাও তা হলে তা হবে তোমার জন্য
সর্বোত্তম কাজ। আর যদি তা আল্লাহ তা‘আলার পথে খরচ না করে নিজের
জন্য সঞ্চয় করে রাখো তা হবে তোমার জন্য সর্বনিকৃষ্ট কাজ। তবে তুমি তোমার নিতান্ত
প্রয়োজনীয় বস্তু থেকে সদকা না করলে তাতে তুমি নিন্দনীয় নও”।[71]
তবে কারো ঈমান সবল হলে তার সামান্য আয় থেকেও কিছু সদকা করা তার জন্য অনেক
ভালোঃ
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে আল্লাহর
রাসূল! কোন্ সদকা বেশি ভালো? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«جُهْدُ الـْمُقِلِّ، وَابْدَأْ بِمَنْ
تَعُوْلُ»
“ভালো সদকা হচ্ছে গরীবের সদকা। তবে ব্যয় সর্বপ্রথম নিজ অধীনস্থ থেকেই শুরু করতে হবে যাদের
ব্যয়ভার তুমিই বহন করছো”।[72]
উমার
ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা করতে আদেশ করেন। সে সময় আমার নিকট প্রচুর সম্পদও ছিলো।
তখন আমি মনে মনে বললাম, আজ আমি বেশি সদকা করে আবু বকরকে
হারিয়ে দিতে চাইলে হারিয়ে দিতে পারবো। তাই আমি আমার সম্পদের অর্ধেক নিয়ে আসলাম।
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«مَا أَبْقَيْتَ لِأَهْلِكَ ؟ قُلْتُ
مِثْلَهُ، قَالَ: وَأَتَى أَبُوْ بَكْرٍ بِكُلِّ مَا عِنْـدَهُ، فَقَالَ لَهُ
رَسُوْلُ اللهِ: مَا أَبْقَيْتَ لِأَهْلِكَ ؟ قَالَ: أَبْقَيْتُ لَهُمُ اللهَ
وَرَسُوْلَهُ، قُلْتُ: لاَ أُسَابِقُكَ إِلَى شَيْءٍ أَبَدًا»
“তুমি তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে আসলে? আমি বললাম,
এর সমপরিমাণ রেখে আসলাম। উমার বলেন, অতঃপর
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর সবটুকু সম্পদই নিয়ে
আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁকে বললেন, তুমি তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে আসলে?
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন,
আমি আমার পরিবারের জন্য আল্লাহ তা‘আলা ও
তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রেখে
আসলাম। তখন আমি মনে মনে বললাম, আজ থেকে আর কোনো ব্যাপারেই
তোমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে যাবো না”।[73]
যা সদকা-খয়রাত করা হয় তাই আসল সম্পদ:
‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা একটি ছাগল যবেহ করা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا بَقِيَ مِنْهَا ؟ قَالَتْ: مَا
بَقِيَ مِنْهَا إِلاَّ كَتِفُهَا، قَالَ: بَقِيَ كُلُّهَا غَيْرَ كَتِفِهَا»
“ছাগলের আর কতটুকু বাকি আছে? ‘আয়িশা বললেন,
শুধু সামনের রানটিই বাকি আছে। আর অন্য সবগুলো সদকা করা হয়েছে।
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
আরে শুধু রানটি ছাড়াই তো আর সব কিছুই বাকি আছে”।[74]
আব্দুল্লাহ্
ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَيُّكُمْ مَالُ وَارِثِهِ أَحبُّ
إِلَيْهِ مِنْ مَالِهِ؟ قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! مَا مِنَّا أَحَدٌ إِلاَّ
مَالُهُ أَحَبُّ إِلَيْهِ، قَالَ: فَإِنَّ مَالَهُ مَا قَدَّمَ، وَمَالُ وَارِثِهِ
مَا أَخَّرَ»
“তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যার ওয়ারিশের সম্পদ তার নিকট অধিক প্রিয় তার
সম্পদের চাইতেও? সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সবার নিকটই তো তার নিজের সম্পদই বেশি
পছন্দনীয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, আরে তার সম্পদ তো শুধু তাইই যা সে সদকা-খয়রাত
করে পরকালের জন্য আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে। আর সে যা রেখে যাচ্ছে তা সবই তো তার
ওয়ারিশের সম্পদ”।[75]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَقُوْلُ الْعَبْدُ: مَالِيْ مَالِيْ،
وَإِنَّمَا لَهُ مِنْ مَالِهِ ثَلاَثٌ: مَا أَكَـلَ فَأَفْنَى، أَوْ لَبِسَ
فَأَبْلَى، أَوْ أَعْطَى فَاقْتَنَى، وَمَا سِوَى ذَلِكَ فَهُوَ ذَاهِبٌ
وَتَارِكُهُ لِلنَّاسِ»
“প্রতিটি আল্লাহর বান্দাহ্ই বলেঃ আমার সম্পদ, আমার
সম্পদ; অথচ সকল সম্পদই তার নয়। তার সম্পদ শুধু তিন ধরনের।
যা খেয়ে সে নিঃশেষ করেছে। যা পরে সে পুরাতন করে ফেলেছে এবং যা সে আল্লাহর পথে দান
করে পরকালের জন্য সংগ্রহ করেছে। এ ছাড়া আর বাকি যা রয়েছে তা সবই তার মৃত্যুর পর সে
অন্য মানুষের জন্যই রেখে যাবে”।[76]
কারোর দেওয়া দান-সদকা ওয়ারিশি সূত্রে পুনরায় আবার তার নিকট ফেরত আসলে তা
গ্রহণ করতে তার কোনো অসুবিধে নেই:
বুরাইদাহ্
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর নিকট বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললো, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম! একদা আমি আমার মাকে একটি বান্দি সদকা করেছিলাম। অতঃপর তিনি মৃত্যুবরণ
করেন। এখন আমি কি করবো? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«وَجَبَ أَجْرُكِ، وَرَدَّهَا عَلَيْكِ
الْـمِيْرَاثُ»
“তুমি সদকার সাওয়াব পেয়ে গেছো। তবে মিরাস হিসেবে তা তোমার নিকট আবারো ফেরত এসেছে। তাতে তোমার কোনো
অসুবিধে নেই”।[77]
কোনো কিছু সদকা দেওয়ার পর তা কোনোভাবেই নিজের কাছে ফেরত আনা ঠিক নয়:
একদা
উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আল্লাহ তা‘আলার পথে যুদ্ধ করার জন্য জনৈক
ব্যক্তিকে একটি ঘোড়া সদকা করলেন। অতঃপর তিনি দেখলেন, উক্ত
ঘোড়াটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তখন তিনি তা খরিদ করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন,
«لاَ تَعُدْ فِيْ صَدَقَتِكَ»
“তুমি তোমার সদকায় ফিরে যেও না।”[78]
একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য সঠিক পন্থায় সদকা উসুলকারী আল্লাহ
তা‘আলার পথে যুদ্ধ করার সাওয়াব পাবে যতক্ষণ না সে ঘরে
ফিরে আসে:
রাফি’ ইবন খাদীজ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الْعَامِلُ عَلَى الصَّدَقَةِ بِالْـحَقِّ،
وَفِيْ رِوَايَةٍ: لِوَجْهِ اللهِ كَالْغَازِيْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ حَتَّى
يَرْجِعَ إِلَى بَيْتِهِ»
“একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য সঠিক
পন্থায় সদকা উসুলকারী আল্লাহ তা‘আলার পথে যুদ্ধ করার
সাওয়াব পাবে যতক্ষণ না সে নিজ ঘরে ফিরে আসে।”[79]
সদকাকারীর জন্য এটা বাধ্যতামূলক নয় যে, সে যথাস্থানে গিয়ে তার সদকা
পৌঁছিয়ে দিবে। বরং সদকা উসুলকারীর উচিত তার কাছে গিয়ে সদকা উসুল করা:
আব্দুল্লাহ
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«تُؤْخَذُ صَدَقَاتُ الْـمُسْلِمِيْنَ عَلَى مِيَاهِهِمْ»
“মুসলিমদের সদকাসমূহ তাদের কর্মস্থলে গিয়ে উসুল
করা হবে।”[80]
সদকা বা ব্যয়ের স্তরবিন্যাস:
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা সদকার আদেশ করলে জনৈক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে যদি শুধুমাত্র একটি দীনার বা টাকাই থাকে?
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«تَصَدَّقْ بِهِ عَلَى نَفْسِكَ،
قَالَ: عِنْدِيْ آخَرُ ؟ قَالَ: تَصَدَّقْ بِهِ عَلَى وَلَدِكَ، قَالَ: عِنْدِيْ
آخَرُ؟ قَالَ: تَصَدَّقْ بِهِ عَلَى زَوْجَتِكَ، قَالَ: عِنْدِيْ آخَرُ ؟ قَالَ:
تَصَدَّقْ بِهِ عَلَى خَادِمِكَ، قَالَ: عِنْدِيْ آخَرُ ؟ قَالَ: أَنْتَ أَبْصَرُ»
“তা হলে তুমি তা নিজের জন্য খরচ করবে। তাতেও তুমি সদকার সাওয়াব পাবে। সে বললো, যদি আমার কাছে আরেকটি থাকে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তা হলে তুমি তা তোমার সন্তানের জন্য খরচ করবে।
তাতেও তুমি সদকার সাওয়াব পাবে। সে বললো, যদি আমার কাছে
আরেকটি থাকে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হলে তুমি তা
তোমার স্ত্রীর জন্য খরচ করবে। তাতেও তুমি সদকার সাওয়াব পাবে। সে বললো, যদি আমার কাছে আরেকটি থাকে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা
হলে তুমি তা তোমার কাজের লোকের জন্য খরচ করবে। তাতেও তুমি সদকার সাওয়াব পাবে। সে বললো, যদি আমার কাছে আরেকটি থাকে? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হলে তুমি সে সম্পর্কে আমার চাইতেও ভালো জানো”।[81]
দায়িত্ব
ও প্রয়োজনের ভিত্তিতেই ব্যয়ের এ ক্রমবিন্যাস। তাই এ সম্পর্কে তদসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই
অন্যের চাইতে বেশি ভালো জানেন।
সদকা দেওয়ার কিছু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র:
১. জনকল্যাণে পাড়ায় পাড়ায় পানি সরবরাহের জন্য পুকুর বা নলকূপ খনন করা:
সা’দ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোনো সদকা আপনার নিকট অধিক
পছন্দনীয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«الْـمَاءُ»
“জনকল্যাণে পানি সরবরাহ করা”।[82]
অন্য
বর্ণনায় এসেছে, সা’দ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
একদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সা'দের মা তথা আমার মা তো
মরে গেলো। অতএব তাঁর জন্য কোন্ সদকা করলে বেশি ভালো হবে? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«الْـمَاءُ»
“জনকল্যাণে পানি সরবরাহ করা”।[83]
তখন
সা’দ্ রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু একটি কূপ খনন করলেন এবং বললেন, এটি সা'দের মার জন্য।
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَيْسَ صَدَقَةٌ أَعْظَمَ أَجْرًا مِنْ مَاءٍ»
“পানি সরবরাহের চাইতে আরো বেশি সাওয়াবের সদকা আর
নেই”।[84]
জাবির
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ حَفَرَ مَاءً لَمْ يَشْرَبْ
مِنْهُ كَبِدٌ حَرَّى مِنْ جِنٍّ وَلاَ إِنْسٍ وَلاَ طَائِرٍ إِلاَّ آجَرَهُ اللهُ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
“কেউ কোনো কুয়া খনন করলে তা থেকে মানুষ, জিন,
পাখি তথা যে কোনো পিপাসার্ত প্রাণীই পান করুক না কেন আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাকে এর সাওয়াব দিবেন”।[85]
জনৈক
ব্যক্তি কোনো মানুষকে নয় বরং একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়ে জান্নাতে
প্রবেশ করলেন।
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِيْ بِطَرِيْقٍ،
اشْتَدَّ عَلَيْهِ الْعَطَشُ، فَوَجَـدَ بِئْرًا فَنَزَلَ فِيْهَا، فَشَرِبَ ثُمَّ
خَرَجَ، فَإِذَا كَلْبٌ يَلْهَثُ، يَأْكُلُ الثَّرَى مِنَ الْعَطَشِ، فَقَالَ
الرَّجُلُ: لَقَدْ بَلَغَ هَذَا الْكَلْبَ مِنَ الْعَطَشِ مِثْلُ الَّذِيْ كَانَ
بَلَغَ بِيْ، فَنَزَلَ الْبِئْرَ فَمَلَأَ خُفَّهُ ثُمَّ أَمْسَكَهُ بِفِيْهِ
فَسَقَى الْكَلْبَ، فَشَكَرَ اللهُ لَهُ، فَغَفَرَ لَهُ، وَفِيْ رِوَايَةٍ:
فَأَدْخَلَهُ الْـجَنَّةَ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَإِنَّ لَنَا فِيْ
الْبَهَائِمِ أَجْرًا؟ فَقَالَ: فِيْ كُلِّ ذَاتِ كَبِدٍ رَطْبَةٍ أَجْرٌ»
“একদা জনৈক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলো। এমতাবস্থায় হঠাৎ তার কঠিন
পিপাসা লেগে গেলো। পথিমধ্যে সে একটি কুয়া দেখতে পেয়ে তাতে নেমে পানি পান করে
বেরিয়ে আসলো। উপরে উঠে সে দেখতে পেলো একটি কুকুর হাঁপাচ্ছে। পিপাসায় সে কাঁচা মাটি
খাচ্ছে। তখন লোকটি মনে মনে বললো, আমার যেমন পিপাসা
লেগেছিলো তেমনি তো এ কুকুরটিরও পিপাসা লেগেছে। তখন সে আবারো কুয়ায় নেমে নিজের
(চামড়ার) মোজায় পানি ভর্তি করে উপরে উঠলো এবং কুকুরটিকে পানি পান করালো। আল্লাহ তা‘আলা এর প্রতিদানস্বরূপ তাকে ক্ষমা
করে দিলেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তাকে জান্নাত দিয়ে দিলেন।
সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! চতুষ্পদ জন্তুর
পরিচর্যা করলেও কি আমরা সাওয়াব পাবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, প্রতিটি প্রাণীর পরিচর্যায়ই সাওয়াব রয়েছে”।[86]
২. কাউকে কোনো দুধেল পশু ধার দেওয়া:
আব্দুল্লাহ্
ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু
আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَرْبَعُوْنَ خَصْلَةً أَعْلاَهُنَّ
مَنِيْحَةُ الْعَنْزِ، مَا يَعْمَلُ رَجُلٌ بِخَصْلَةٍ مِنْهَا رَجَاءَ
ثَوَابِهَا، وَتَصْدِيْقَ مَوْعُوْدِهَا، إِلاَّ أَدْخَلَهُ اللهُ بِهَا الْـجَنَّةَ»
“চল্লিশটি কাজ এমন রয়েছে যার কোনো একটিও কেউ সাওয়াবের আশায় এবং পরকালের
প্রাপ্তির উপর বিশ্বাস করে সম্পাদন করলে আল্লাহ তা‘আলা এর
বিপরীতে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তবে তার মধ্যে সর্বোচ্চ হচ্ছে কোনো দুধেল
ছাগী কাউকে ধার দেওয়া”।[87]
৩. কোনো ঋণগ্রস্তকে তার ঋণ পরিশোধে সহযোগিতার জন্য যথাসাধ্য সদকা দেওয়া:
আবু
সা’ঈদ
খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর যুগে জনৈক ব্যক্তি কিছু ফসল খরিদ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতঃপর তার উপর
ঋণের বোঝা খুব বেড়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«تَصَدَّقُوْا عَلَيْهِ، فَتَصَدَّقَ
النَّاسُ عَلَيْهِ، فَلَمْ يَبْلُغْ ذَلِكَ وَفَاءَ دَيْنِهِ، فَقَالَ رَسُوْلُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِغُرَمَائِهِ: خُذُوْا مَا
وَجَدْتُمْ، وَلَيْسَ لَكُمْ إِلاَّ ذَلِكَ»
“তোমরা তাকে সদকা দাও। অতঃপর সবাই তাকে সদকা দিলো। কিন্তু তা তার ঋণ
সমপরিমাণ হলো না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার ঋণদাতাদেরকে বললেন, তোমরা যা পাচ্ছো তাই
নিয়ে যাও। এর চাইতে বেশি আর তোমরা পাচ্ছো না”।[88]
৪. সুযোগ পেলেই কাউকে খানা খাওয়ানো:
আল্লাহ
তা‘আলা
সৎকর্মশীল বান্দাহদের গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿ يُوفُونَ بِٱلنَّذۡرِ
وَيَخَافُونَ يَوۡمٗا كَانَ شَرُّهُۥ مُسۡتَطِيرٗا ٧ وَيُطۡعِمُونَ ٱلطَّعَامَ عَلَىٰ
حُبِّهِۦ مِسۡكِينٗا وَيَتِيمٗا وَأَسِيرًا ٨ إِنَّمَا نُطۡعِمُكُمۡ لِوَجۡهِ ٱللَّهِ
لَا نُرِيدُ مِنكُمۡ جَزَآءٗ وَلَا شُكُورًا ٩ إِنَّا نَخَافُ مِن رَّبِّنَا يَوۡمًا
عَبُوسٗا قَمۡطَرِيرٗا ١٠ فَوَقَىٰهُمُ ٱللَّهُ شَرَّ ذَٰلِكَ ٱلۡيَوۡمِ وَلَقَّىٰهُمۡ
نَضۡرَةٗ وَسُرُورٗا ١١ وَجَزَىٰهُم بِمَا صَبَرُواْ جَنَّةٗ وَحَرِيرٗا ١٢ ﴾ [الانسان: ٧، ١٢]
“তারা মানত পুরা করে এবং সে দিনকে ভয় করে যে দিনের বিপদ হবে অত্যন্ত
ব্যাপক। তারা খাবারের প্রতি নিজেদের প্রচন্ড আসক্তি থাকা সত্ত্বেও (তা নিজেরা না
খেয়ে) অভাবী, এতিম ও বন্দীকে খাওয়ায়। তারা বলেঃ আমরা তো
তোমাদেরকে খাওয়াচ্ছি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির
জন্য। আমরা তোমাদের নিকট থেকে এর কোনো প্রতিদান চাই না; না
চাই কোনো ধরনের কৃতজ্ঞতা। আমরা তো আমাদের প্রভুর কাছ থেকে এক চরম ভয়ঙ্কর দিনের ভয়
পাচ্ছি। তাই তো আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সে দিনের কঠিন বিপদ
থেকে রক্ষা করবেন এবং তাদেরকে দিবেন অধিক আনন্দ ও উৎফুল্লতা। উপরন্তু তাদের
ধৈর্যশীলতার দরুন তাদেরকে দিবেন জান্নাত ও রেশমী কাপড়”। [সূরা আল-ইনসান (দাহর), আয়াত: ৭-১২]
সাধারণত
কাফির ও জাহান্নামীরাই কাউকে খানা খাওয়ায় না এবং খাওয়াতে উৎসাহও দেয় না।
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿ كُلُّ نَفۡسِۢ
بِمَا كَسَبَتۡ رَهِينَةٌ ٣٨ إِلَّآ أَصۡحَٰبَ ٱلۡيَمِينِ ٣٩ فِي جَنَّٰتٖ يَتَسَآءَلُونَ
٤٠ عَنِ ٱلۡمُجۡرِمِينَ ٤١ مَا سَلَكَكُمۡ فِي سَقَرَ ٤٢ قَالُواْ لَمۡ نَكُ مِنَ ٱلۡمُصَلِّينَ
٤٣ وَلَمۡ نَكُ نُطۡعِمُ ٱلۡمِسۡكِينَ ٤٤ وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ ٱلۡخَآئِضِينَ ٤٥
وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤٦ ﴾ [المدثر: ٣٨، ٤٦]
“প্রতিটি ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ। তবে ডান হাতে
আমলনামাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নয়। তারা তো থাকবে জান্নাতে। বরং তারা অপরাধীদেরকে
জিজ্ঞাসা করবেঃ তোমরা কেন সাক্বার জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হলে? তখন তারা বলবে, আমরা তো সালাতীই ছিলাম না।
অভাবীদেরকে খানাও খাওয়াতাম না। বরং আমরা সমালোচনাকারীদের সাথেই (ইসলাম ও মুসলিম
বিরোধী) সমালোচনায় অংশ গ্রহণ করতাম। উপরন্তু আমরা ছিলাম কর্মফল দিবসে অবিশ্বাসী”। [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৩৮-৪৬]
আল্লাহ
তা‘আলা
আরো বলেন,
﴿ أَرَءَيۡتَ ٱلَّذِي
يُكَذِّبُ بِٱلدِّينِ ١ فَذَٰلِكَ ٱلَّذِي يَدُعُّ ٱلۡيَتِيمَ ٢ وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ
طَعَامِ ٱلۡمِسۡكِينِ ٣ ﴾ [الماعون: ١، ٣]
“তুমি কি দেখেছো তাকে যে কর্মফলকে মিথ্যা বলে। সেই তো ওই ব্যক্তি যে
এতিমকে (ঘৃণাভরে) তাড়িয়ে দেয়। এমনকি সে কোনো অভাবীকে খানা খাওয়াতেও কাউকে উৎসাহ
দেয় না”। [সূরা আল-মাঊন, আয়াত: ১-৩]
আব্দুল্লাহ্
ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَيُّهَا النَّاسُ! أَفْشُوْا
السَّلاَمَ، وَأَطْعِمُوْا الطَّعَامَ، وَصَلُّوْا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ
نِيَامٌ؛ تَدْخُلُوْا الْـجَنَّةَ بِسَلاَمٍ»
“হে মানবসকল! তোমরা একে অপরকে সালাম দাও। মানুষকে খানা খাওয়াও।
রাত্রিবেলায় তাহাজ্জুদের সালাত পড়ো যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তা হলে তোমরা চরম নিরাপত্তার মাধ্যমেই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে”।[89]
আব্দুল্লাহ্
ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু
আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اُعْبُدُوْا الرَّحْمَنَ،
وَأَطْعِمُوْا الطَّعَامَ، وَأَفْشُوْا السَّلاَمَ ؛ تَدْخُلُوْا الْـجَنَّةَ
بِسَلاَمٍ»
“তোমরা দয়াময় প্রভুর ইবাদাত করো। মানুষকে খানা খাওয়াও। একে অপরকে সালাম
দাও তা হলে তোমরা চরম নিরাপত্তার মাধ্যমেই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে”।[90]
৫. মানুষের মাঝে যে কোনো ধরনের বিশুদ্ধ ধর্মীয় বই-
পুস্তক, কুরআন মাজীদ, তাফসীর, সহীহ হাদীস, ওয়ায-নসীহতের বিশুদ্ধ অডিও-ভিডিও
কিংবা সিডি ক্যাসেট ও লিফলেট ইত্যাদি বিতরণ করা:
মানুষ
মৃত্যুর পরও যে আমলগুলোর সর্বদা সাওয়াব পেতে থাকবে তার মধ্যে মানুষের মাঝে যে কোনো
ধরনের বিশুদ্ধ ধর্মীয় বই-পুস্তক, কুরআন মাজীদ, তাফসীর, সহীহ হাদীস, ওয়ায-নসীহতের বিশুদ্ধ অডিও-ভিডিও
কিংবা সিডি ক্যাসেট ও লিফলেট ইত্যাদি বিতরণ করা অন্যতম।
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ
عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، وَعِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ،
وَوَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ»
“কোনো মানুষ মারা গেলে তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল তার
মৃত্যুর পরও চালু থাকেঃ দীর্ঘস্থায়ী সদকা, এমন জ্ঞান যা
দিয়ে মানুষ তার মৃত্যুর পরও লাভবান হয়, এমন নেককার সন্তান
যে তার মৃত্যুর পর তার জন্য দো‘আ করে”।[91]
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ مِمَّا يَلْحَقُ الـْمُؤْمِنَ
مِنْ عَمَلِهِ وَحَسَنَاتِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ عِلْمًا عَلَّمَهُ وَنَشَـرَهُ،
وَوَلَدًا صَالِحًا تَرَكَهُ، وَمُصْحَفًا وَرَّثَهُ، أَوْ مَسْجِدًا بَنَاهُ،
أَوْ بَيْتًا لابْنِ السَّبِيْلِ بَنَاهُ، أَوْ نَهْرًا أَجْرَاهُ، أَوْ صَدَقَةً
أَخْرَجَهَا مِنْ مَالِهِ فِيْ صِحَّتِهِ وَحَيَاتِهِ تَلْحَقُهُ مِنْ بَعْدِ
مَوْتِهِ»
“একজন মু’মিন ব্যক্তি মৃত্যুর পরও যে আমলগুলোর
সাওয়াব পেতে থাকবে তা হচ্ছে, এমন লাভজনক জ্ঞান যা সে কাউকে
সরাসরি শিখিয়েছে এবং প্রচার করেছে (তা যেভাবেই হোক না কেন)। এমন নেককার সন্তান যা
সে মৃত্যুর সময় রেখে গেছে। এমন কুরআন যা সে মিরাস রেখে গেছে। এমন মসজিদ যা সে
বানিয়েছে। এমন ঘর যা সে মুসাফিরের জন্য বানিয়েছে। এমন খাল যা সে খনন করেছে। এমন সদকা
যা সে সুস্থ ও জীবিত থাকাবস্থায় নিজ সম্পদ থেকে দিয়েছে এবং যার সাওয়াব তার মৃত্যুর
পরও তার নিকট পৌঁছবে”।[92]
৬. কুরআন মাজীদ, তাফসীর, সহীহ হাদীস কিংবা যে কোনো
বিশুদ্ধ ধর্মীয় বই-পুস্তক, লিফলেট, দেওয়ালিকা ইত্যাদি মানুষের মাঝে ফ্রি বিতরণের জন্য দেশে দেশে
অত্যাধুনিক প্রিন্টিং প্রেস অথবা আধুনিক রুচি ও উচ্চ মানসম্পন্ন ইসলামী পুস্তক
প্রকাশনী প্রতিষ্ঠা করা:
মানুষ
মৃত্যুর পরও যে আমলগুলোর সর্বদা সাওয়াব পেতে থাকবে তার মধ্যে মানুষের মাঝে কুরআন
মাজীদ, তাফসীর,
সহীহ হাদীস কিংবা যে কোনো বিশুদ্ধ ধর্মীয় বই-পুস্তক, লিফলেট, দেওয়ালিকা ইত্যাদি ফ্রি বিতরণের জন্য
দেশে দেশে অত্যাধুনিক প্রিন্টিং প্রেস অথবা আধুনিক রুচি ও উচ্চ মান সম্পন্ন ইসলামী
পুস্তক প্রকাশনী প্রতিষ্ঠা করা অন্যতম। যা উপরোল্লিখিত হাদীসগুলো থেকে সহজেই বুঝা
যায়।
প্রাচীন
যুগে ইসলাম প্রচারের কাজগুলো একমাত্র আলিমগণই করতেন। কিন্তু বর্তমান যুগে বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উৎকর্ষতার সুবাদে এ কাজ আর তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রইলো না।
এখন যে কোনো আগ্রহী ব্যক্তি উক্ত কাফেলায় খুব সহজেই শামিল হতে পারছেন। কেউ নিজে
লিখতে বা বলতে না পারলেও কারোর লেখা কোনো গুরুত্বপূর্ণ পান্ডুলিপি ছাপানোর কাজে যে
কোনো ধরনের সহযোগিতা করে কিংবা কারোর লেখা বই বা ওয়াযের ক্যাসেট মানুষের মাঝে বিতরণ
করে এ মহান প্রচার কাজে অংশগ্রহণ করা যায়। আশা করি কোনো বুদ্ধিমান মানুষ এ সুবর্ণ
সুযোগ কাজে লাগাতে অবহেলা করবেন না।
৭. জায়গায় জায়গায় মসজিদ-মাদ্রাসা ও ধর্মীয় সেন্টার প্রতিষ্ঠা করাঃ
আনাস্
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سَبْعٌ يَجْرِيْ لِلْعَبْدِ
أَجْرُهُنَّ وَهُوَ فِيْ قَبْرِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ: مَنْ عَلَّمَ عِلْمًا، أَوْ
كَـرَى نَهْرًا، أَوْ حَفَرَ بِئْرًا، أَوْ غَرَسَ نَخْلاً، أَوْ بَنَى مَسْجِدًا،
أَوْ وَرَّثَ مُصْحَفًا، أَوْ تَرَكَ وَلَدًا يَسْتَغْفِرُ لَهُ بَعْدَ مَوْتِهِ»
“সাতটা কাজ এমন রয়েছে যার সাওয়াব বান্দাহ্’র
জন্য দীর্ঘকাল চালু থাকবে; অথচ সে মৃত্যুর পর তার কবরেই
শায়িতঃ যে ব্যক্তি কাউকে লাভজনক কোনো জ্ঞান শিক্ষা দিলো। (জনগণের পানির সঙ্কট দূর
করণার্থে) কোথাও খাল বা কূপ খনন করলো। কোথাও বা খেজুর গাছ লাগালো। আবার কোথাও বা
মসজিদ ঘর তৈরি করে দিলো। কোনো কুরআন মাজীদ মিরাস রেখে গেলো। কোনো (নেককার) সন্তান
মৃত্যুর সময় রেখে গেলো যে তার জন্য তার মৃত্যুর পর আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে”।[93]
‘উসমান ইবন ‘আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ بَنَى مَسْجِدًا - يَبْتَغِيْ بِهِ وَجْهَ اللهِ – بَنَى
اللهُ لَهُ مِثْلَهُ فِيْ الْـجَنَّةِ»
“যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির
জন্য কোনো একটি মসজিদ বানালো আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য
জান্নাতে সেরূপ একটি ঘর বানাবেন”।[94]
উক্ত
সাওয়াব পাওয়ার জন্য জুমার মসজিদ কিংবা বড় শাহী মসজিদই বানাতে হবে এমন কোনো শর্ত
নেই। বরং মসজিদ যত ছোটই হোক না কেন মসজিদ নির্মাণকারী উক্ত সাওয়াব থেকে কখনো
বঞ্চিত হবেন না।
উমার
ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ بَنَى مَسْجِدًا يُذْكَرُ فِيْهِ اسْمُ اللهِ بَنَى اللهُ
لَهُ بَيْتًا فِيْ الْـجَنَّةِ»
“যে ব্যক্তি এমন একটি মসজিদ বানালো যাতে আল্লাহ তা‘আলার নাম উচ্চারিত হয় আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য
জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন”।[95]
জাবির
ইবন আব্দুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ كَمَفْحَصِ قَطَاةٍ أَوْ أَصْغَرَ
بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِيْ الْـجَنَّةِ»
“যে ব্যক্তি কবুতরের বাসা সমপরিমাণ অথবা এর চাইতেও আরো ছোট একটি মসজিদ
তৈরি করলো আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি
করবেন”।[96]
৮. সর্ব সাধারণের জ্ঞান আহরণের সুবিধার জন্য জায়গায় জায়গায় পাঠাগার বা
গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা:
মানুষ
মৃত্যুর পরও যে আমলগুলোর সাওয়াব পেতে থাকবে তার মধ্যে সর্ব সাধারণের জ্ঞান আহরণের
সুবিধার জন্য জায়গায় জায়গায় গ্রন্থাগার কিংবা পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করাও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ
কাজ। যা পূর্বের আনাস ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এর হাদীসদ্বয় থেকেই বুঝা
যায়।
৯. মানুষের সুবিধার জন্য জায়গায় জায়গায় ফলদার বৃক্ষ রোপণ করা:
মানুষ
মৃত্যুর পরও যে আমলগুলোর সাওয়াব পেতে থাকবে তার মধ্যে জায়গায় জায়গায় ফলদার বৃক্ষ
রোপণ করাও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যা পূর্বের হাদীস থেকেই বুঝা যায়।
আনাস্
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا
أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا فَيَأْكُلُ مِنْهُ طَيْرٌ أَوْ إِنْسَانٌ أَوْ بَهِيْمَةٌ
إِلاَّ كَانَ لَهُ بِهِ صَدَقَةٌ»
“যে কোনো মুসলিম কোনো ফলদার বৃক্ষ রোপণ করলে অথবা কোনো ফসল বপন করলে তা
থেকে যদি কোনো পাখী, মানুষ কিংবা পশু খায় তা হলে তা তার
জন্য সদকা হয়ে যাবে”।[97]
জাবির
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا
إِلاَّ كَانَ مَا أُكِـلَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةً، وَمَا سُرِقَ مِنْهُ لَهُ
صَدَقَةٌ، وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ مِنْهُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ، وَمَا أَكَلَتِ
الطَّيْرُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ، وَلاَ يَزْرَؤُهُ أَحَدٌ إِلاَّ كَانَ لَهُ
صَدَقَةٌ»
“যে কোনো মুসলিম কোনো ফলদার বৃক্ষ রোপণ করলে তা থেকে যা খাওয়া হয় তা তার
জন্য সদকা হয়ে যাবে। যা চুরি করা হয় তাও তার জন্য সদকা হয়ে যাবে। যা কোনো হিংস্র
পশু খায় তাও তার জন্য সদকা হয়ে যাবে। যা কোনো পাখী খায় তাও তার জন্য সদকা হয়ে যাবে
এবং যা কোনো মানুষ নিয়ে যায় তাও তার জন্য সদকা হয়ে যাবে”।[98]
১০. মুসাফিরদের রাত্রি যাপনের সুবিধার জন্য ট্রেন বা বাস স্টেশনগুলোর
আশে-পাশে খাবারের ব্যবস্থাসহ সম্পূর্ণ আবাসিক হোটেল তৈরি করাঃ
মানুষ
মৃত্যুর পরও যে আমলগুলোর সাওয়াব পেতে থাকবে তার মধ্যে মুসাফিরদের রাত্রি যাপনের
সুবিধার জন্য ট্রেন বা বাস স্টেশনগুলোর আশে-পাশে খাবারের ব্যবস্থা সহ সম্পূর্ণ
আবাসিক হোটেল তৈরি করাও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যা পূর্বের আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু এর
হাদীস থেকেই বুঝা যায়।
১১. কোনো এতিমের ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণ করাঃ
কোনো
এতিমের ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণ করা জান্নাতে যাওয়ার একটি বিরাট মাধ্যম।
সাহল
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيْمِ فِيْ الْـجَنَّةِ هَكَذَا، وَأَشَارَ
بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى، وَفَرَّجَ بَيْنَهُمَا شَيْئً»
“আমি ও এতিমের ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণকারী এতো পাশাপাশি থাকবো
যতটুকু পাশাপাশি থাকে তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলীদ্বয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত ব্যাপারটি অঙ্গুলীদ্বয়ের ইশারার মাধ্যমে
বুঝিয়েছেন এবং উভয় অঙ্গুলীর মাঝে তিনি সামান্যটুকু ফাঁকও রাখেন”।[99]
১২. বিধবা ও মিসকীনের ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণ করা:
বিধবা
ও মিসকীনের ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণ করা আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদ করা এবং নিরলস
নফল সালাত ও নফল সাওম আদায় করার সমতুল্য।
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«السَّاعِيْ عَلَى الْأَرْمَلَةِ وَالـْمِسْكِيْنِ
كَالْـمُجَاهِدِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، وَأَحْسِبُهُ قَالَ: وَكَالْقَائِمِ لاَ
يَفْتُرُ، وَكَالصَّائِمِ لاَ يُفْطِرُ»
“বিধবা ও মিসকীনের ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণকারী আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদকারী এবং নিরলস নফল সালাত ও নফল সাওম আদায়কারীর সমতুল্য”।[100]
১৩. যে কোনো সাওমদারকে ইফতার করানো:
যে
কোনো সাওমদারকে ইফতার করালে তার সাওমর সমপরিমাণ সাওয়াব ইফতার আয়োজনকারী পাবে।
যায়েদ
ইবন খালিদ জুহানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا؛ كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ؛ غَيْرَ
أَنَّهُ لاَ يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْئًا»
“যে ব্যক্তি কোনো সাওমদারকে ইফতার করালো তার সাওমর সমপরিমাণ সাওয়াব
ইফতার আয়োজনকারী পাবে। তবে এতে সাওমদারের সাওয়াব এতটুকুও কমানো হবে না”।[101]
পূর্ব যুগের নিষ্ঠাবান সদকাকারীদের কিছু ঘটনা:
১.
আনাস্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু আনসারীদের মধ্যে বেশি সম্পদশালী ছিলেন এবং তাঁর
সম্পদের মধ্যে বায়রা’হা নামক বাগানবাড়িটিই ছিলো তাঁর নিকট
অধিক প্রিয়। তা ছিলো মসজিদে নববীর সামনাসামনিই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে ঢুকে মিষ্টি পানি পান করতেন। আনাস্ রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু বলেন, যখন নিম্নোক্ত আয়াত
নাযিল হয়,
﴿ لَن تَنَالُواْ ٱلۡبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَۚ وَمَا
تُنفِقُواْ مِن شَيۡءٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٞ ٩٢ ﴾ [ال عمران: ٩٢]
“তোমরা কখনোই কল্যাণের নাগাল পাবে না যতক্ষণ না তোমরা নিজের পছন্দনীয়
বস্তু সদকা করো। তোমরা যা কিছুই আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয়
করো তা সবই তিনি ভালোভাবে জানেন”। [সূরা
আলে ‘ইমরান, আয়াত: ৯২]
যখন
উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয় তখন আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তো উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন। আর
আমার নিকট সবচাইতে প্রিয় সম্পদই হচ্ছে বায়রা’হা নামক
বাগানবাড়িটি। সুতরাং এটি আমি আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা করে
দিলাম। আমি আল্লাহ তা‘আলার নিকট এর সাওয়াব আশা করি।
সুতরাং হে রাসূল! আপনি তা যেখানে ব্যয় করতে চান ব্যয় করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সাবাস! এতো
খুব লাভজনক সম্পদ। এতো খুব লাভজনক সম্পদ। আমি তোমার কথা শুনেছি। তবে আমি চাই যে
তুমি তা তোমার আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বন্টন করে দিবে। তখন আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাই করলেন।[102]
২. সু’দা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা আমার স্বামী তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ্’র সামনে উপস্থিত হলে তাঁকে ভারী ভারী মনে হলো। যেন তিনি আমার উপর রাগ
করে আছেন। আমি বললাম, আপনার কি হলো? হয়তো আপনি আমার কোনো কর্মকান্ডে অসন্তুষ্ট হয়েছেন তাই আমি আপনার নিকট
ক্ষমা চাচ্ছি। তিনি বললেন, না। একজন মুসলিম পুরুষের জন্য
তুমি কতোই না উত্তমা স্ত্রী! তবে একটি ঘটনা ঘটেছে। তা এই যে, আমার নিকট অনেকগুলো সম্পদ একত্রিত হয়েছে। আমি ভেবে পাচ্ছি না তা কিভাবে
খরচ করবো? আমি বললাম, আপনার
কিসের চিন্তা! আপনার বংশের লোকদেরকে ডাক দিয়ে তা তাদের মধ্যে বন্টন করে দিন। তখন
তিনি নিজ গোলামকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে গোলাম! আমার
বংশের লোকদেরকে ডেকে নিয়ে আসো। বর্ণনাকারিণী বলেন, আমি
হিসাব রক্ষককে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি ইতোমধ্যে কতো টাকা বন্টন
করলেন? সে বললো, চার লাখ।[103]
৩. একদা
তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর
নিকট সাত লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে একটি বাগানবাড়ি বিক্রি করে দিলেন। ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন দিরহামগুলো নিয়ে
আসলেন তখন তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, যে ব্যক্তির নিকট এতগুলো দিরহাম; অথচ সে জানে
না তার মৃত্যু কখন হবে এরপরও সে এতগুলো দিরহাম নিয়ে রাত্রি যাপন করলো সে নিশ্চয়
আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। অতঃপর তিনি লোক
পাঠিয়ে দিলেন এগুলো মদীনার গলিতে গলিতে বিলি করতে। ফজরের সময় দেখা গেলো, তাঁর নিকট আর একটি দিরহামও নেই।[104]
৪. একদা
উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু চার শত দিনার একটি থলিতে ভরে নিজ গোলামকে দিয়ে বললেন,
এগুলো আবু উবাইদাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কে
দিয়ে আসো। তবে কোনো একটা ব্যস্ততা দেখিয়ে তাঁর ঘরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে। তা হলে
দেখতে পাবে সে দিনারগুলো কোন খাতে খরচ করে। গোলাম দিনারগুলো নিয়ে তাঁর কাছে পৌঁছে বললো, আমীরুল মু’মিনীন বলছেন, দিনারগুলো আপনার কোনো ব্যক্তিগত কাজে লাগাতে। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে তাঁর খাঁটি বান্দাহসুলভ
সুসম্পর্ক অটুট রাখুক এবং তাঁকে দয়া করুক। অতঃপর বললেন, হে
বান্দি! এ সাতটি দিনার অমুককে দিয়ে আসো, এ পাঁচটি অমুককে,
আর এ পাঁচটি অমুককে। এমনকি তা কিছুক্ষণের মধ্যে বন্টন করা শেষ
হয়ে গেলো। গোলামটি উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর নিকট এসে
তা বিস্তারিত জানালেন। ইতোমধ্যে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আরো
চার শত দিনার মু‘আয্ ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর জন্য প্রস্তুত করে রাখলেন। তিনি বললেন, এগুলো মু‘আয্ ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কে দিয়ে আসো। তবে কোনো একটা ব্যস্ততা দেখিয়ে তাঁর ঘরে কিছুক্ষণ
অপেক্ষা করবে। তা হলে দেখতে পাবে সে দিনারগুলো কোনো খাতে খরচ করে। গোলাম দিনারগুলো
নিয়ে তাঁর কাছে পৌঁছে বললো, আমীরুল মু’মিনীন বলছেন, দিনারগুলো আপনার কোনো ব্যক্তিগত
কাজে লাগাতে। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে তাঁর খাঁটি বান্দাহসুলভ সুসম্পর্ক অটুট রাখুক এবং তাঁকে
দয়া করুক। অতঃপর বললেন, হে বান্দি! এ কয়েকটি দিনার অমুকের
ঘরে দিয়ে আসো, এগুলো অমুকের ঘরে, আরো এগুলো অমুকের ঘরে। ইতোমধ্যে মু‘আয্ রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু এর স্ত্রী তাঁর দিকে উঁকি মেরে বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা একান্ত দরিদ্র। সুতরাং আমাদেরকেও কিছু দিন। তখন তাঁর
নিকট শুধুমাত্র দু’টি দিনারই অবশিষ্ট ছিলো এবং তাই তিনি
তাঁর স্ত্রীর দিকে নিক্ষেপ করলেন। গোলামটি উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর নিকট এসে তা বিস্তারিত জানালেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাতে খুবই সন্তুষ্ট হলেন এবং বললেন, এরা
সবাই ভাই ভাই। তাই আচরণে সবাই একই।[105]
৫.’উরওয়াহ্ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে দেখেছি সত্তর হাজার দীনার বা দিরহাম সদকা
করে দিতে; অথচ তিনি তাঁর পরনের কাপড় তালি লাগিয়ে পরছিলেন।[106]
৬.
আসমা বিনত আবী বকর আগামীকালের জন্য কিছুই রাখতেন না। তিনি সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় সদকা করে দিতেন।[107]
৭. উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জনৈক
সাহাবীকে একটি ছাগলের মাথা হাদিয়া দেওয়া হলো। তিনি মনে মনে ভাবলেন, আমার অমুক ভাই এ মাথাটির প্রতি আমার চাইতেও বেশি মুখাপেক্ষী। তাই তিনি
মাথাটি তাঁর কাছেই পাঠিয়ে দিলেন। এমনিভাবে অপরজন অন্যের কাছে। পরিশেষে সাত ঘর ঘুরে
মাথাটি প্রথম ঘরেই ফিরে আসলো।[108]
৮.আব্দুল্লাহ
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এর নিকট যখনই তাঁর কোনো সম্পদ ভালো বা পছন্দনীয় মনে হতো তখনই
তিনি তা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় সদকা করে দিতেন।[109]
৯.আব্দুল্লাহ
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুমা কখনো কখনো একই মজলিশে ত্রিশ হাজার দীনার বা দিরহাম সদকা
করে দিতেন; অথচ তিনি কোনো কোনো মাসে এক টুকরো গোস্ত
খাওয়ার পয়সাও নিজের কাছে খুঁজে পেতেন না।[110]
১০. একদা উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর যুগে মদীনায় দুর্ভিক্ষ লেগে
যায়। ইতোমধ্যে সিরিয়া থেকে উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর
মালিকানাধীন এক হাজার উটের একটি বাণিজ্য কাফেলা মদীনায় পৌঁছে যায়। তাতে ছিলো হরেক
রকমের খাদ্য সামগ্রী ও মূল্যবান পোশাক-পরিচ্ছদ। সে কঠিন সময়ে যার মূল্য ছিলো
বর্ণনাতীত। ইতোমধ্যে সকল ব্যবসায়ীরা পণ্যসামগ্রীর জন্য তাঁর নিকট উপস্থিত। তিনি
তাদেরকে বললেন, তোমরা আমাকে কতটুকু লাভ দিবে? তারা বললো, শতকরা পাঁচ ভাগ। তিনি বললেন,
অন্যজন (আল্লাহ তা‘আলা) আরো বেশি দিতে
প্রস্তুত। তারা বললো, আমরা আরো বাড়িয়ে দেবো। এমনকি তারা
শতকরা দশ ভাগ লাভ দিতে প্রস্তুত হয়ে গেলো। তিনি বললেন, অন্যজন
(আল্লাহ তা‘আলা) আরো বেশি দিতে প্রস্তুত। অতঃপর তিনি পুরো ব্যবসাটুকুই আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য মানুষের মাঝে
বন্টন করে দেন।[111]
১১. একদা জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি চারটি দিয়্যাতের দায়িত্বভার নিয়ে মদীনায় উপস্থিত
হলো। সে এ ব্যাপারে মদীনাবাসীদের সাহায্য কামনা করছিলো। জনৈক ব্যক্তি তাকে বললো, তুমি এ ব্যাপারে চার জনের যে কোনো
এক জনের নিকট যেতে পারো। তাঁরা হচ্ছেন, হাসান ইবন ‘আলী, আব্দুল্লাহ্ ইবন জা’ফর, সা’ঈদ ইবনুল ‘আস এবং আব্দুল্লাহ্ ইবন ‘আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম। লোকটি মসজিদে গিয়ে দেখলো সা’ঈদ ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মসজিদে প্রবেশ করছেন।
লোকটি তাঁর কাছে ব্যাপারটি খুলে বলতেই তিনি নিজ ঘর থেকে ঘুরে এসে বললেন, তুমি আরেকজনকে নিয়ে আসো তোমার সহযোগিতা করতে। লোকটি বললো, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে দয়া করুন! আমি তো এতো
সম্পদ চাইনি? তিনি বললেন, আমি
জানি। তুমি আরেকজনকে নিয়ে আসো তোমার সহযোগিতা করতে। অতঃপর তিনি তাকে চল্লিশ হাজার
দীনার বা দিরহাম দিয়ে দিলেন। এরপর লোকটির আর কারোর কাছে যেতে হলো না।[112]
১২. মাইমূন ইবন মিহরান থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
একদা আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এর স্ত্রীকে বলা হলো, তুমি তোমার স্বামীর প্রতি কেন দয়া করো না?
তিনি বললেন, আমি কি করবো?! তাঁর জন্য খানা তৈরি করলে তিনি অন্যদেরকে সাথে নিয়ে বসে যান। তখন আর
তাঁর খাওয়া হয় না। অতঃপর তাঁর স্ত্রী একদা সকল মিসকিনদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ালেন
যারা সর্বদা ইবন উমারের মসজিদ থেকে বের হওয়ার পথে বসে থাকে। এরপর তাদেরকে বিনয়ের
সাথে বললেন, তোমরা ইবন উমারের পথে বসে থেকো না। অতঃপর ইবন
উমার ঘরে এসে বললেন, অমুককে ডাকো, অমুককে ডাকো; অথচ তাঁর স্ত্রী তাদের নিকট খানা
পাঠিয়ে বললেন, তোমাদেরকে ডাকলে তোমরা কেউ আর এসো না। তখন
ইবন উমার বললেন, তোমরা চাচ্ছো, আমি
যেন আজ রাত্রের খাবার না খাই। তাই তিনি আর
রাত্রের খাবার খেলেন না।[113]
১৩. মুহাম্মাদ ইবন মুনকাদির রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা উম্মে দুররাহ
রাদিয়াল্লাহু আনহা [যিনি ছিলেন ‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা
এর খাদিমা] তাঁকে বলেন, একদা মু‘আবিয়া
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ‘আয়িশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা এর নিকট এক লক্ষ আশি হাজার দিরহাম পাঠান। তিনি দিরহামগুলো পেয়ে
তার সবটুকুই মানুষের মাঝে বিলি করে দিলেন। যখন সন্ধ্যা হলো তখন তিনি নিজ খাদিমাকে বললেন,
ইফতার নিয়ে আসো। অতঃপর তাঁর জন্য রুটি ও তেল নিয়ে আসা হলো। উম্মে
দুররাহ বলেন, আজ একটি দিরহাম দিয়ে আমাদের ইফতারের জন্য
এতটুকু গোস্তও কিনতে পারলেন না? ‘আয়িশা বলেন, আমাকে ইতোপূর্বে ব্যাপারটি স্মরণ করিয়ে দিলে না কেন?[114]
১৪. সা’দ ইবন উবাদাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু প্রতি
রাত্রে আশি জন সুফ্ফাবাসীকে খানা খাওয়াতেন।[115]
১৫. মদীনাবাসীরা আব্দুর রহমান ইবন ‘আউফ রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু এর সম্পদের উপর বেশির ভাগই নির্ভরশীল ছিলো। কারণ,
তিনি নিজ মালের এক তৃতীয়াংশ মানুষকে ঋণ দিতেন। আরেক তৃতীয়াংশ
মানুষের ঋণ পরিশোধে ব্যয় করতেন। অন্য তৃতীয়াংশ আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষায় ব্যয় করতেন।[116]
১৬. একদা জনৈক ব্যক্তি হাসান ইবন ‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এর দিকে একটি
চিরকুট তুলে ধরলেন। তখন তিনি তা দেখার পূর্বেই বললেন, তোমার
প্রয়োজন মিটিয়ে দেওয়া হবে। জনৈক ব্যক্তি তাঁকে বললেন, হে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তান! আপনি
চিরকুটটি দেখেই উত্তর দিতেন তাই তো ভালো ছিলো। তিনি বললেন, আমি চিরকুটটি পড়া পর্যন্ত সে যতটুকু লাঞ্ছনা ভোগ করবে সে জন্য কিয়ামতের
দিন আল্লাহ তা‘আলা আমাকে জবাবদিহি করবেন।[117]
১৭. যুবাইর ইবন ‘আউওয়াম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর এক হাজার গোলাম
ছিলো যারা তাঁকে প্রতিদিনই নিজেদের উপার্জনগুলো দিয়ে দিতো। প্রতি রাত্রে তিনি
সেগুলো সম্পূর্ণরূপে গরীবদের মাঝে বন্টন না করে কখনো ঘরে ফিরতেন না।[118]
১৮. আহমাদ ইবন হাম্বাল রহ. আববাদ ইবন আববাদ সম্পর্কে বলেন, তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত দীনদার।
যিনি নিজকে আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে তিন বা চার বার খরিদ
করে নিয়েছেন। তিনি নিজকে ওজন করে সে পরিমাণ রূপা আল্লাহর রাস্তায় সদকা করেন।[119]
১৯. ‘আমর ইবন দীনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা
আলী ইবন হুসাইন ইবন আলী রহ. মুহাম্মাদ ইবন উসামাহ্ ইবন যায়েদের সাক্ষাতে গেলে
দেখলেন তিনি কাঁদছেন। আলী বললেন, তোমার কি হয়েছে। কাঁদছো
কেন? তিনি বললেন, আমার উপর কিছু
ঋণ রয়েছে তাই কাঁদছি। আলী বললেন, কতগুলো? তিনি বললেন, পনেরো হাজার দীনার। আলী বললেন,
ঠিক আছে, তা আমিই দিয়ে দেবো।[120]
২০. আলী ইবন হাসান ইবন আলী রহ. এর নিকট কোনো ভিক্ষুক আসলে তিনি তাকে ধন্যবাদ
দিয়ে বলতেন, তোমাকে ধন্যবাদ! কারণ, তুমি আমার ধন-সম্পদ
আখিরাতের দিকে বয়ে নিয়ে যাবে।
২১. উমার ইবন সাবিত রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আলী ইবন হুসাইন ইবন আলী রহ.
মৃত্যুবরণ করলেন তখন তাঁকে ধোয়ানোর সময় তাঁর পিঠে অনেকগুলো কালো দাগ পরিলক্ষিত হয়।
এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলেন, তিনি
রাত্রি বেলায় আটার বস্তা পিঠে নিয়ে মদীনার ফকিদের ঘরে ঘরে পৌঁছিয়ে দিতেন।[121]
২২. আবুল হুসাইন নূরী রহ. বিশ বছর যাবত নিজ ঘর থেকে দু’টি রুটি নিয়ে বাজারের দিকে
রওয়ানা করতেন তা সদকা করার জন্য। পথিমধ্যে তিনি মসজিদে ঢুকে নফল সালাতে ব্যস্ত হয়ে
যেতেন যতক্ষণ না বাজারের সময় হতো। অতঃপর বাজারের সময় হলে তিনি সেখানে গিয়ে রুটি দু’টি সদকা করে দিতেন। সবাই মনে করতো, তিনি ঘর
থেকে খানা খেয়ে বের হয়েছেন। আর ঘরের লোকেরা মনে করতো, তিনি
তো দুপুরের খানা নিয়ে বের হয়েছেন; অথচ তিনি সাওম রয়েছেন।[122]
২৩. ইমাম শা’বী বলেন, আমার এমন কোনো আত্মীয় মরেনি যার উপর
কিছু না কিছু ঋণ আছে; অথচ আমি তা তার পক্ষ থেকে আদায় করিনি।[123]
২৪. আবু ইসহাক আত্ব-ত্বাবারী রহ. বলেন, নাজাদ নামক জনৈক ব্যক্তি সর্বদা সাওম
রাখতো। একটি রুটি দিয়ে ইফতার করার সময় তিনি তা থেকে সামান্যটুকু ছিঁড়ে রাখতেন।
শুক্রবার তিনি সে টুকরোগুলো খেয়ে সে দিনের রুটিটি সদকা করে দিতেন।[124]
২৫. দাউদ আত্ব-ত্বায়ির একটি বান্দি ছিলো। সে একদা তাঁকে বললো, আপনার জন্য কি কিছু চর্বি
পাকাবো? তিনি বললেন, ঠিক আছে,
পাকাও। তা পাকিয়ে যখন তাঁর কাছে আনা হলো তখন তিনি বললেন, অমুক ঘরের এতিমগুলোর কি অবস্থা? বান্দি বললো, আগের মতোই। তিনি বললেন, এগুলো তাদের কাছে
নিয়ে যাও। বান্দি বললো, আপনি তো অনেক দিন থেকে রুটির সাথে
কিছু খাননি। তিনি বললেন, তারা খেলে তো আল্লাহ তা‘আলার নিকট তা সংরক্ষিত থাকবে। আর আমি খেলে তা বাথরুমে যাবে।[125]
২৬. শু’বাহ্ ইবন হাজ্জাজ একদা একটি গাধার উপর চড়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে
সুলাইমান ইবন মুগীরাহ্ নামক জনৈক ব্যক্তি তাঁর নিকট নিজ দীনতার কথা বর্ণনা করছিলো।
তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি এখন শুধু এ গাধাটিরই
মালিক। অন্য কিছুর নয়। এরপরও তিনি গাধা থেকে নেমে গাধাটি সুলাইমানকে সদকা করে
দিলেন।[126]
২৭. রাবী’ নামক জনৈক বুযুর্গ একদা অর্ধাঙ্গ রোগে ভোগছিলেন। দীর্ঘ দিন যাবত তিনি
পুরো শরীরে খুব ব্যথা অনুভব করছিলেন। হঠাৎ তাঁর মুরগীর গোস্ত খাওয়ার ইচ্ছে হলো।
চল্লিশ দিন যাবত এ ইচ্ছা তিনি কারোর কাছে ব্যক্ত করেননি। একদা তাঁর স্ত্রীর নিকট
উক্ত ইচ্ছা ব্যক্ত করলে তিনি এক দিরহাম দু’ দানিক দিয়ে
তাঁর জন্য একটি মুরগী খরিদ করে তা রান্না করলেন। সাথে কিছু রুটি এবং হালুয়াও তৈরি
করা হলো। এ সব তাঁর নিকট উপস্থিত করা হলে যখন তিনি তা খেতে যাবেন তখনই জনৈক
ভিক্ষুক এসে বললো, আমাকে কিছু সদকা দিন। তখন তিনি তা না
খেয়ে তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ভিক্ষুককে এগুলো দিয়ে দাও।
তাঁর স্ত্রী বললেন, আমি ভিক্ষুককে এমন কিছু দেবো যাতে সে
আরো বেশি খুশি হয়ে যায়। তিনি বলেলন তা কি? তাঁর স্ত্রী বললেন,
আমি তাকে এগুলোর পয়সা দিয়ে দেবো। আর আপনি এগুলো খাবেন। তিনি
বললেন, ভালোই বলেছো। তা হলে পয়সাগুলো নিয়ে আসো। পয়সাগুলো
নিয়ে আসা হলে তিনি বললেন, পয়সা এবং খাবার সবই তাকে দিয়ে
দাও।[127]
২৮. ‘আমির ইবন আব্দুল্লাহ্ ইবন যুবাইর রহ. দীনার ও দিরহামের থলি নিয়ে মসজিদে
মসজিদে ঘুরে বেড়াতেন। কোনো নেককার বান্দাহকে সিজদারত অবস্থায় দেখলে তার জুতার
পার্শ্বে থলিটি রেখে দিতেন। যাতে লোকটি তাঁকে চিনতে না পারে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা
হলোঃ থলিটি এদের বাড়িতে পাঠান না কেন? তখন তিনি বলেন,
থলিটি তাদেরকে সরাসরি দিলে সময় সময় তারা আমাকে বা আমার
প্রতিনিধিকে দেখে লজ্জা পাবে।[128]
২৯. ‘আমির ইবন আব্দুল্লাহ্ ইবন যুবাইর রহ. ছয়বার নিজের দিয়্যাত সমপরিমাণ
সদকা করে আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে নিজকে কিনে নিয়েছেন।
তেমনিভাবে হাবীব আল-‘আজমীও চল্লিশ হাজার দিরহাম সদকা করে
নিজকে আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন।[129]
৩০. মুওয়াররিক আল-ইজলী ব্যবসা করে যা লাভ হতো তার সবটুকুই গরীব-দুঃখীর মাঝে
বন্টন করে দিতেন। তিনি বলতেন, গরীব-দুঃখী না থাকলে আমি কখনো ব্যবসাই করতাম না।[130]
৩১. রাক্বিদী রহ. বলেন,
রাষ্ট্রপতি আমাকে ছয় লক্ষ দিরহাম দিয়েছেন; অথচ এগুলোর উপর কখনো যাকাত আসেনি। অর্থাৎ বছর ফুরানোর আগেই তিনি তা সব
সদকা করে দিয়েছেন।[131]
৩২. লাইস ইবন সা’দ রহ.-এর বার্ষিক আয় ছিলো আশি হাজার দিনার; অথচ
তাঁর উপর কখনো যাকাত ওয়াজিব হয়নি। অর্থাৎ বছর ফুরানোর আগেই তিনি তা সব সদকা করে
দিয়েছেন।[132]
৩৩. একদা মা’রূফ কার্খী রহ. অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাঁকে বলা হলোঃ আপনি ওসিয়ত করুন।
তিনি বললেন, আমি মরে গেলে আমার গায়ের জামাটি তোমরা সদকা
করে দিবে। কারণ, আমি চাই, দুনিয়াতে
আমি যেভাবে খালি এসেছি সেভাবেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেবো।[133]
৩৪. খলীফা আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ান একদা আসমা বিনত খারিজাকে ডেকে বললেন, তোমার কয়েকটি গুণ আমার কানে
এসেছে তা এখন সরাসরি আমাকে খুলে বলবে কি? তিনি বললেন,
এ ব্যাপারটি অন্যের থেকে শোনাই ভালো। খলীফা বললেন, না, তুমি আমাকে সেগুলো বলতেই হবে। তখন তিনি বললেন,
হে আমীরুল-মু’মিনীন! গুণগুলো হচ্ছে এই
যে, আমি কখনো কারোর সামনে পা ছড়িয়ে বসি না। আমি কখনো
কাউকে খাবারের দাওয়াত করলে সেই আমাকে খোঁটা দেয় যা আমি দেই না। কেউ আমার নিকট কোনো
কিছু চাইলে যা কিছুই আমি তাকে দেই তা বেশি মনে করি না।[134]
৩৫. একদা জনৈক সিরিয়াবাসী মদীনায়
এসে বললো, সাফ্ওয়ান
ইবন সুলাইম কে? আমি তাকে জান্নাতে দেখেছি। তিনি জান্নাতে
প্রবেশ করেছেন একটি জামার পরিবর্তে। যা একদা তিনি জনৈক ব্যক্তিকে পরিয়েছেন। তিনি একদা
এক প্রচন্ড শীতের রাত্রিতে মসজিদ থেকে ঘরে রওয়ানা করছিলেন। পথিমধ্যে দেখছেন জনৈক
ব্যক্তি উলঙ্গ। তখন তিনি জামাটি খুলে তাকে পরিয়ে দিলেন।[135]
৩৬. সা’লিম ইবন আবুল-জা’দ রহ. বলেন, একদা জনৈকা মহিলা নিজ সন্তানকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। পথিমধ্যে একটি বাঘ
তার সন্তানটি ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। তখন মহিলাটি তার পিছু নেয়। তার সাথে একটি রুটি
ছিলো। পথিমধ্যে সে রুটিটি একজন ভিক্ষুককে দিয়ে দেয়। তখন বাঘটি তার সন্তানটিকে ফেরত
দেয়। তখন তার কানে একটি আওয়াজ
আসে, এক
নেওলার পরিবর্তে আরেকটি নেওলা।[136]
৩৭. ইবরাহীম ইবন বাশশার বলেন, একদা আমি ইবরাহীম ইবন আদমের সঙ্গে ত্রিপলী (বর্তমান
লিবিয়ার রাজধানী) এলাকায় হাঁটছিলাম। আমার সাথে ছিলো শুধু দু’টি শুকনো রুটি। পথিমধ্যে জনৈক ভিক্ষুক কিছু চাইলে তিনি আমাকে বলেন,
তোমার সাথে যা আছে তা একে দিয়ে দাও। আমি রুটি দু’টো দিতে একটু দেরি করলে তিনি বললেন, তুমি ওকে
দিয়ে দাও। অতঃপর আমি রুটি দু’টো দিয়ে দিলাম। আমি তাঁর এ
রকম কান্ড দেখে আশ্চর্য হলে তিনি আমাকে বলেন, হে আবু ইসহাক!
তুমি কিয়ামতের দিন এমন বিপদাপদের সম্মুখীন হবে যা ইতোপূর্বে কখনো হওনি। তুমি তখন
তাই পাবে যা তুমি এ দুনিয়া থেকে পরকালের জন্য এখন পাঠাচ্ছো। যা রেখে যাবে তা কখনোই
পাবে না। সুতরাং তুমি এখন থেকেই প্রস্তুতি নাও। কারণ, তুমি
জানো না কখন তোমার মৃত্যু হবে। তাঁর কথায় আমি কেঁদে ফেললাম। দুনিয়া আমার কাছে তখন কিছুই
মনে হলো না। আমার দিকে তাকিয়ে তিনিও
কেঁদে কেঁদে বললেন, এমনই হওয়া চাই।[137]
৩৮. জরীর ইবন আব্দুল-’হামীদ বলেন, সুলাইমান আত-তাইমী যখনই হাতের
নাগালে যাই পেতেন সদকা করে দিতেন। আর কোনো কিছু না পেলে দু’ রাক‘আত সালাত পড়তেন।[138]
৩৯. একদা জনৈক ব্যক্তি তার বন্ধুর দরজায় আঘাত করলে সে ঘর থেকে বের হয়ে বললো, তুমি কি জন্য আসলে? সে বললো, আমি চারশত দিরহাম ঋণী যা এখনো আদায়
করতে পারছি না। বন্ধুটি সাথে সাথে চারশত দিরহাম গুণে তার হাতে তুলে দিলো। অতঃপর
ঘরে এসে সে কাঁদতে লাগলো। তার স্ত্রী বললো, এতো কষ্ট
লাগলে দিলে কেন? সে বললো, দেওয়ার
জন্য কাঁদছি না। কাঁদছি এ জন্য যে, আমি তার বন্ধু হয়ে
এতোদিন কেন তার কোনো খোঁজখবর রাখিনি। যার দরুন তাকে আজ আমার নিকট আসতে হলো।[139]
৪০. সুফইয়ান ইবন উয়াইনাহ্ রহ. একদা রাস্তা দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় জনৈক ভিক্ষুক তাঁর কাছে কিছু ভিক্ষা চাইলে
তিনি তাকে কিছুই দিতে পারলেন না। তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন। জনৈক ব্যক্তি বললো, হে আবু মুহাম্মাদ! আপনি
কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, এর
চাইতে আর বড় বিপদ কি হতে পারে যে, কেউ তোমার নিকট কিছু
চাইলো আর তুমি তাকে কিছুই দিতে পারলে না।[140]
৪১. জনৈকা মহিলা হাসসান ইবন আবু সিনান রহ. এর নিকট কিছু ভিক্ষা চাইলে তিনি তাঁর
শরীককে দু’টি অঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করেন। তাঁর শরীক মহিলাটিকে দু’টি দিরহাম দিতে গেলে তিনি নিজে উঠে গিয়ে মহিলাটিকে দু’শত দিরহাম দিলেন। জিজ্ঞাসা করা হলোঃ হে আবু আব্দুল্লাহ্! আপনি তো এ দু’শত দিরহাম দিয়ে অনেকগুলো ভিক্ষুককে সন্তুষ্ট করতে পারতেন। তিনি বললেন,
আমি যা ভাবছি তোমরা তা ভাবোনি। আমি ভাবলাম, মহিলাটি তো এখনো যুবতী। তাই আমি চাই না মহিলাটি প্রয়োজনের তাড়নায়
ব্যভিচার করে বসুক।[141]
৪২. ‘আলী ইবন ঈসা আল-ওয়াযীর রহ. বলেন, আমি এ যাবত
সাত লাখ দীনার কামিয়েছি। তার মধ্য থেকে ছয় লাখ আশি হাজার দিরহামই আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় খরচ করে দিয়েছি।[142]
৪৩. সুফইয়ান ইবন উয়াইনাহ্ রহ. বলেন, আমার পিতা পঞ্চাশ হাজার দিরহাম মিরাস
পেয়েছেন। অতঃপর তিনি তা থলে ভরে ভাইদের নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং বললেন, আমি আমার নফল সালাতগুলোতে আমার ভাইদের জন্য জান্নাতের দো‘আ করি। সুতরাং তাদের সাথে আমার সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করবো কেন?
৪৪. শফিক ইবন ইবরাহীম বলেন, একদা আমরা ইবরাহীম ইবন আদহামের নিকট ছিলাম। এমতাবস্থায়
জনৈক ব্যক্তি তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। তিনি বললেন, এ কি
অমুক ব্যক্তি নয়? বলা হলোঃ হ্যাঁ। তখন তিনি জনৈক
ব্যক্তিকে বললেন, তুমি ওর কাছে গিয়ে বলোঃ ইবরাহীম ইবন
আদহাম বলছেন, কেন তুমি তাঁকে সালাম করোনি? সে বললো, আল্লাহর কসম! আমি এখন পাগলের ন্যায়।
আমার স্ত্রী সন্তান প্রসব করেছে; অথচ আমার নিকট কিছুই
নেই। ইবরাহীম ইবন আদহামকে ব্যাপারটি বলা হলে তিনি বললেন, ইন্নালিল্লাহ্!
আমাদের কি হলো! লোকটির কোনো খবরই নিলাম না; অথচ লোকটি
সমস্যাগ্রস্ত। অতঃপর তিনি জনৈক ব্যক্তিকে বললেন, এ
বাগানের মালিকের কাছ থেকে দু’টি দীনার ধার নিয়ে একটি
দীনার দিয়ে তার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র খরিদ করো। অতঃপর জিনিসগুলো এবং বাকি দীনারটি
তাকে দিয়ে আসবে। লোকটি বললো, আমি বাজার থেকে জিনিসপত্র
কিনে যখন তার দরজায় গিয়ে আঘাত করি তখন তার স্ত্রী বললো,
কে? আমি বললাম, আমি অমুককে চাই।
তার স্ত্রী বললো, সে তো ঘরে নেই। আমি বললাম, দরজাটি খুলে একটু সরে দাঁড়াও। মহিলাটি দরজা খুললে আমি আসবাবপত্রগুলো
ঘরের মেঝে রেখে বাকি দীনারটি তার হাতে তুলে দিলে সে বললো,
এগুলো কে পাঠালো। আমি বললাম, তোমার স্বামীকে বলবে, এগুলো ইবরাহীম ইবন আদহাম পাঠিয়েছে। মহিলাটি বললো, হে আল্লাহ! আপনি ইবরাহীম ইবন আদহামকে এ দিনের প্রতিদান দিন।[143]
৪৫. বায়ান মিসরী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি মক্কায় বসা ছিলাম। আমার
সামনে ছিলো জনৈক যুবক। জনৈক ব্যক্তি যুবকটিকে দিরহাম ভর্তি একটি থলি দিলে সে বললো, এতে আমার কোনো প্রয়োজন নেই। লোকটি বললো,
তোমার কোনো প্রয়োজন না থাকলে মিসকিনদেরকে দিয়ে দিবে। অতঃপর যুবকটি সবগুলো দিরহাম
মিসকিনদেরকে দিয়ে দিলো। যখন রাত্রের খাবারের সময় হলো তখন আমি যুবকটিকে দেখতে পেলাম মাঠে পরিত্যক্ত
কোনো খাবার যেন সে খুঁজছে। আমি বললাম, এ সময়ের জন্য কয়েকটি দিরহাম রেখে
দিলে না কেন? সে বললো, এ পর্যন্ত
বাঁচবো বলে আমি এতটুকুও নিশ্চিত ছিলাম না।
৪৬. জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি সা’ঈদ ইবন ‘আস-এর নিকট কোনো কিছু
চাইলে তিনি তাঁর খাদিমকে বললেন, একে পাঁচশত দিয়ে দাও।
খাদিম বললো, পাঁচশত দীনার দেবো না দিরহাম? তিনি বললেন, আমি পাঁচশত দিরহাম দিতেই
বলেছিলাম। তবে যখন তোমার অন্তরে দীনারের কথাই আসলো তা হলে তাকে পাঁচশত দীনারই দিয়ে
দাও। গ্রাম্য ব্যক্তিটি তা গ্রহণ করে কাঁদতে লাগলো। তিনি বললেন, কাঁদো কেন? তুমি যা চাইলে তা তো পেয়ে গেলে?
সে বললো, অবশ্যই। তবে আমি কাঁদছি এ জন্য
যে, মৃত্যুর পর আপনার মতো মানুষকে জমিন কিভাবে খেয়ে ফেলবে?[144]
৪৭. রাবী’ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জনৈক
ভিক্ষুক ইমাম শাফি’য়ী রহ. এর ঘোড়ার লাগাম ধরলে তিনি আমাকে
বললেন, লোকটিকে চারটি দীনার দিয়ে দাও। আর আমার পক্ষ থেকে
তার নিকট এ বলে ক্ষমা চাও যে, সময়ের অভাবে আমি তার কোনো
খবরাখবর রাখতে পারি নি।[145]
৪৮. হাকীম ইবন হিযাম রহ. কোনো দিন কোনো ভিক্ষুককে না দেখলে তিনি খুব মন খারাপ
করে বলতেন, আমি কোনো দিন সকালে যদি আমার ঘরের দরজায় কোনো ভিক্ষুককে না পাই তা হলে
আমি সে দিনকে বড়ো বিপদের দিন মনে করি।
৪৯. ইবন শুবরুমাহ্ রহ. একদা জনৈক ব্যক্তির একটি বড় প্রয়োজন মিটিয়ে দিলেন। অতঃপর
লোকটি তাঁর নিকট কিছু হাদিয়া নিয়ে আসলে তিনি বললেন, এটি কি? সে
বললো, আপনি যে অমুক দিন আমার বড় একটি উপকার করেছেন তাই
আপনার জন্য কিছু হাদিয়া নিয়ে আসলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ
তা‘আলা তোমাকে সুস্থ রাখুন! এটি নিয়ে যাও। মনে রাখবে,
তুমি কারোর নিকট কোনো প্রয়োজন উপস্থাপন করলে সে যদি তা মেটানোর
যথাসাধ্য চেষ্টা না করে তা হলে তুমি ভালোভাবে ওযু করে তার জানাযার সালাতটুকু পড়ে
দিবে। কারণ, সে মৃত সমতুল্য।[146]
৫০. মালিক ইবন দীনার রহ. একদা বসা ছিলেন।
এমতাবস্থায় জনৈক ভিক্ষুক তাঁর নিকট কিছু চাইলে তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, খেজুরের পাত্রটি নিয়ে আসো।
অতঃপর তিনি সেখান থেকে অর্ধেক খেজুর ভিক্ষুকটিকে দিয়ে দিলেন। তাঁর স্ত্রী বললো, তোমার মতো মানুষকে যাহিদ বলা হয়?! তোমার নাকি
দুনিয়ার প্রতি কোনো লোভ নেই। তুমি কি কখনো দেখেছো কোনো রাষ্ট্রপতিকে অর্ধেক হাদিয়া
দিতে। অতঃপর তিনি ভিক্ষুকটিকে সবই দিয়ে দিলেন। এরপর তাঁর স্ত্রীকে বললেন, তুমি ভালোই করেছো। আরো করতে চেষ্টা করো। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ خُذُوهُ فَغُلُّوهُ
٣٠ ثُمَّ ٱلۡجَحِيمَ صَلُّوهُ ٣١ ثُمَّ فِي سِلۡسِلَةٖ ذَرۡعُهَا سَبۡعُونَ ذِرَاعٗا
فَٱسۡلُكُوهُ ٣٢ إِنَّهُۥ كَانَ لَا يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ ٱلۡعَظِيمِ ٣٣ وَلَا يَحُضُّ
عَلَىٰ طَعَامِ ٱلۡمِسۡكِينِ ٣٤ ﴾ [الحاقة: ٣٠، ٣٤]
“(ফিরিশতাদেরকে বলা হবেঃ) তাকে ধরো। অতঃপর তার গলোদেশে বেড়ি পরিয়ে দাও।
এরপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করো। পুনরায় তাকে শৃঙ্খলিত করো সত্তর হাত দীর্ঘ এক
শৃঙ্খলে। কারণ, সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিলো না এবং
অভাবগ্রস্তকে অন্নদানে উৎসাহিত করতো না”। [সূরা আল-হা-ক্কাহ্, আয়াত: ৩০-৩৪]
মালিক
ইবন দীনার তাঁর স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা এ কঠিন পরিস্থিতির অর্ধেক এড়াতে
আল্লাহ তা‘আলার উপর ঈমান এনেছি। বাকি অর্ধেক এড়াবো
সদকা-খয়রাত করে।[147]
৫১. আব্দুল্লাহ্ ইবন জা’ফর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা এক
হারানো জিনিসের খোঁজে বের হলাম। পথিমধ্যে একটি খেজুর বাগানে ঢুকে দেখি, তাতে একটি কালো গোলাম কাজ করছে। তার খাবার উপস্থিত করা হলে কিছুক্ষণের
মধ্যেই তাতে একটি কুকুর ঢুকে পড়লো। কুকুরটি গোলামের নিকটবর্তী হতেই সে তাকে এক
টুকরো রুটি ছিঁড়ে দিলো। অতঃপর আরেক টুকরো। এরপর আরেক টুকরো। এমনকি কুকুরটি তার
পুরো খাবারই খেয়ে ফেলে। অতঃপর আমি বললাম, হে গোলাম!
প্রতিদিন তুমি কতটুকু খাবার পাও। সে বললো, এতটুকুই যা
আপনি ইতোপূর্বে দেখেছেন। আমি বললাম, তা হলে কুকুরটিকে
খাওয়ালে কেন? সে বললো, এ এলাকাতে
কুকুর নেই। অতএব কুকুরটি ক্ষিধার জ্বালায় নিশ্চয় অনেক দূর থেকেই এসেছে। আর আমি চাই
না যে, আমি খাবো আর কুকুরটি উপবাস থাকবে। আমি বললাম,
তা হলে তুমি আজ খাবে কি? সে বললো, আমি আজ আর কিছুই খাবো না। উপবাস থাকবো। তখন আমি মনে মনে বললাম,
আমাকে মানুষ দানশীলতার জন্য তিরস্কার করে। এতো বেশি দান করি কেন?
অথচ এ গোলামটি আমার চাইতেও অধিক দানশীল। অতঃপর আমি বাগানবাড়িটি
গোলাম ও সকল আসবাবপত্রসহ খরিদ করলাম এবং গোলামটিকে স্বাধীন করে বাগানবাড়িটি তাকে
দিয়ে দিলাম।[148]
৫২. আনাস্ ইবন সীরীন রহ. রমযানের প্রতিটি সন্ধ্যায় পাঁচশত মানুষকে ইফতার
খাওয়াতেন।[149]
৫৩. জা’ফর ইবন মুহাম্মাদ ইবন ‘আলী রহ. মানুষদেরকে এতো
বেশি খাওয়াতেন যে, পরিশেষে তাঁর পরিবারের জন্য খাবারের
কিছুই থাকতো না।[150]
৫৪. মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক রহ. বলেন, মদীনাবাসীরা অত্যন্ত সুন্দরভাবে জীবন
যাপন করে যাচ্ছিলো। তারা কখনো জানতো না রাতের অন্ধকারে তাদের খাবার-দাবার কোথায়
থেকে আসে। যখন ‘আলী ইবন হাসান রহ. মারা গেলেন তখন
ব্যাপারটি সুস্পষ্ট হয়ে যায়। কারণ, রাতের অন্ধকারে
তাদেরকে আর কেউ খাবার-দাবার দিয়ে যায় না।[151]
৫৫. একদা জনৈকা মহিলা লাইস ইবন সা’দ রহ. এর নিকট এসে বললো, হে আবুল-হারিস! আমার সন্তানটি রোগাক্রান্ত। সে মধু খেতে চায়। তখন লাইস
তাঁর গোলামকে বললেন, মহিলাটিকে একশত বিশ লিটারের একটি
মধুর ভান্ড দিয়ে দাও।
৫৬. আহমাদ ইবন্ ইবরাহীম বেশি বেশি সদকা
করতেন। একদা
জনৈক ভিক্ষুক তাঁর নিকট কিছু চাইলে তিনি তাকে দু’টি দিরহাম দান করেন। ভিক্ষুকটি বললো, আল-’হামদুলিল্লাহ্। তখন তিনি আরো তিনটি
দিরহাম দিলেন। ভিক্ষুকটি বললো, আল-’হামদুলিল্লাহ্। তখন তিনি আরো পাঁচটি দিরহাম দিলেন। এভাবে তিনি বাড়িয়ে
দিচ্ছেন। আর ভিক্ষুকটি শুধু আল-’হামদুলিল্লাহ্ বলছে।
এমনকি তিনি ভিক্ষুকটিকে একশতটি দিরহাম দিয়ে দিলেন। তখন ভিক্ষুকটি বললো, আল্লাহ তা‘আলা আপনার সম্পদকে বিপদাপদ থেকে
রক্ষা করুন এবং তা দীর্ঘস্থায়ী করুন। তখন তিনি ভিক্ষুকটিকে বললেন, আল্লাহর কসম! তুমি যদি আরো আল-’হামদুলিল্লাহ্
বলতে আমি তোমাকে আরো বাড়িয়ে দিতাম। যদিও তা দশ হাজার দিরহাম হোক না কেন।[152]
৫৭. হাসান ইবন সাহল রহ. কে যখন তিরস্কার করে বলা হলো, সীমাতিরিক্ত দানে কোনো
সাওয়াব নেই। তিনি বললেন,
দানের মধ্যে সীমাতিরিক্ত বলতে কিছুই নেই।[153]
৫৮. খালিদ আত্ব-ত্বাহ্হান রহ. নিজকে আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে চার বার খরিদ করেছেন।
নিজকে ওজন করে নিজ ওজন সমপরিমাণ রূপা তিনি আল্লাহ তা‘আলার
রাস্তায় সদকা করেন।
৫৯. ইয়াযীদ ইবন আবু হাবীব রহ. বর্ণনা করেন, মিসরের মারসাদ ইবন আবু আব্দুল্লাহ্
আল-ইয়াযানী রহ. সবার আগে মসজিদে যেতেন। যখনই তিনি মসজিদে আসতেন তখনই তাঁর সাথে
কিছু না কিছু সদকা নিয়ে আসতেন। তা পয়সা, রুটি, গম যাই হোক না কেন। একদা তিনি পিঁয়াজ নিয়ে মসজিদে আসলেন। ইয়াযীদ বলেন,
একদা আমি তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললাম, হে
কল্যাণকামী মহান ব্যক্তিত্ব! এ পিঁয়াজ তো আপনার পোশাক-পরিচ্ছদ গন্ধময় করে দিবে।
তখন তিনি বলেন, হে আবু হাবীবের ছেলে! আমি তো এ পিঁয়াজ
ছাড়া ঘরে সদকা দেওয়ার মতো আর কিছুই পেলাম না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈক সাহাবী আমাকে বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ظِلُّ الْـمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَدَقَتُهُ»
“কিয়ামতের দিন একজন মু’মিনের জন্য তার সদকাই
হবে তার জন্য ছায়া”।[154]
আপনি
যতো বড়ো ধনীই হোন না কেনো তবুও আপনি এ ব্যাপারে কখনো নিশ্চিত নন যে, আপনি অন্ততপক্ষে কাফনের
কাপড়টুকু নিয়ে হলেও কবরে যেতে পারবেন।
বনী
বুওয়াই রাষ্ট্রপতি ফখরুদ-দাউলাহ্ ‘আলী ইবন রুকন সর্বদা বলে বেড়াতেন, আমি
এতোগুলো সম্পদের মালিক যা আমার সন্তান ও সেনা বাহিনী সবাই মিলে পনেরো বছর খেলেও তা
শেষ হবে না। কিন্তু যখন তিনি রায় নামক
এলাকার সুপ্রসিদ্ধ কেল্লাতে মারা যান তখন তার ধন-ভান্ডারের চাবি ছিলো তাঁর ছেলের
কাছে। তাঁর ছেলেটি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলো না। যার দরুন তাঁর কাফনের কাপড়টুকুরও
ব্যবস্থা হয়নি। পরিশেষে তাঁর কাফনের জন্য কেল্লাটির নিচে অবস্থিত জামে’ মসজিদের জনৈক দায়িত্বশীল থেকে
এক টুকরো কাপড় কেনা হলো যা তিনি নিজেই একদা মসজিদের জন্য রেখে গিয়েছিলেন। তাঁর
সেনারা উক্ত কাফনের ব্যাপারে মতানৈক্য করলে তাঁকে এভাবেই দীর্ঘ সময় রাখা হয়। ইতোমধ্যে
তাঁর শরীরে পঁচন ধরে যায়। তখন তাঁর নিকটবর্তী হওয়াই কারোর পক্ষে সম্ভব ছিলো না।
অতএব তাঁর লাশে রশি বেঁধে কেল্লার সিঁড়ি দিয়ে দূর থেকে টেনে নিচে নামানো হয়। তাতে
করে তাঁর লাশটি ছিঁড়ে খন্ড খন্ড হয়ে যায়; অথচ তিনি আটাশ
লক্ষ ছাপ্পান্ন হাজার দীনার নগদ অর্থ, চৌদ্দ হাজার পাঁচ
শত হীরা-জাওয়াহির মণি-মুক্তা যার মূল্য দশ লক্ষ দীনার, ত্রিশ
লক্ষ দীনারের বাসন-কোসন, তিন হাজার উটের বোঝাই ঘরের
আসবাবপত্র, এক হাজার উটের বোঝাই যুদ্ধাস্ত্র এবং দু’
হাজার পাঁচ শত উটের বোঝাই বিছানাপত্র রেখে যান।[155]
সদকা
সম্পর্কে এতো কিছু শোনার পরও এমন হবেন না যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ هَٰٓأَنتُمۡ هَٰٓؤُلَآءِ
تُدۡعَوۡنَ لِتُنفِقُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَمِنكُم مَّن يَبۡخَلُۖ وَمَن يَبۡخَلۡ
فَإِنَّمَا يَبۡخَلُ عَن نَّفۡسِهِۦۚ وَٱللَّهُ ٱلۡغَنِيُّ وَأَنتُمُ ٱلۡفُقَرَآءُۚ
وَإِن تَتَوَلَّوۡاْ يَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَيۡرَكُمۡ ثُمَّ لَا يَكُونُوٓاْ أَمۡثَٰلَكُم
٣٨ ﴾ [محمد: ٣٨]
“হ্যাঁ, তোমরাই তো ওরা যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা করতে বলা হয়েছে; অথচ তোমাদের
অনেকেই এ ব্যাপারে কৃপণতা দেখাচ্ছে। মূলতঃ যারা কার্পণ্য করে তারা তো নিজেদের
ব্যাপারেই কার্পণ্য করে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তো ধনী-অভাবমুক্ত। তাঁর কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই। বরং তোমরাই গরীব। যদি তোমরা আল্লাহ তা‘আলার পথে খরচ করতে বিমুখ হও তা হলে
আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে বাদ দিয়ে অন্য আরেক জাতিকে
তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন যারা কখনোই তোমাদের মতো হবে না”। [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৮]
ওদের
মতোও হবেন না যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلَّذِينَ يَبۡخَلُونَ
وَيَأۡمُرُونَ ٱلنَّاسَ بِٱلۡبُخۡلِ وَيَكۡتُمُونَ مَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ
وَأَعۡتَدۡنَا لِلۡكَٰفِرِينَ عَذَابٗا مُّهِينٗا ٣٧ ﴾ [النساء: ٣٧]
“যারা কৃপণতা করে এবং লোকদেরকে কার্পণ্য শিক্ষা দেয়। উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত সম্পদসমূহ লুকিয়ে রাখে (তারা তো বস্তুতঃ কাফির) আর আল্লাহ
তা‘আলা তো এমন কাফিরদের জন্য অপমানজনক শাস্তির ব্যবস্থাই
রেখেছেন”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৭]
কখনো
এমন মনে করবেন না যে,
আপনি নিজেই আপনার মেধা ও বাহুবলে আপনার সম্পদগুলো কামিয়েছেন। বরং
তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার একান্ত মেহেরবানিতেই সম্ভবপর
হয়েছে। অভিশপ্ত কারূন তো নিজের সম্পদের ব্যাপারে এমন ধারণাই পোষণ করতো। তার কথাই
তো আল্লাহ তা‘আলা নিজ কুরআন মাজীদে উল্লেখ করেন।
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿ قَالَ إِنَّمَآ
أُوتِيتُهُۥ عَلَىٰ عِلۡمٍ عِندِيٓۚ أَوَ لَمۡ يَعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ قَدۡ أَهۡلَكَ
مِن قَبۡلِهِۦ مِنَ ٱلۡقُرُونِ مَنۡ هُوَ أَشَدُّ مِنۡهُ قُوَّةٗ وَأَكۡثَرُ جَمۡعٗاۚ
وَلَا يُسَۡٔلُ عَن ذُنُوبِهِمُ ٱلۡمُجۡرِمُونَ ٧٨ ﴾ [القصص: ٧٨]
“সে বললো, এ সম্পদ তো শুধু আমি আমার মেধার বলেই
লাভ করেছি। সে কি জানে না যে, আল্লাহ তা‘আলা ইতোপূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকেই ধ্বংস করে দিয়েছেন। যারা ছিলো তার
চাইতেও অনেক বেশি শক্তিশালী এবং প্রচুর সম্পদের মালিক। অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধ
সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করার তো কোনো প্রয়োজনই নেই। (কারণ, সবই তো আল্লাহ তা‘আলা তাদের আমলনামায় লিপিবদ্ধ করে
রেখেছেন”। [সূরা আল-কাসাসা, আয়াত: ৭৮]
সুতরাং
আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যে সম্পদ দিয়েছেন সে জন্য একমাত্র তাঁরই প্রশংসা করুন। তা
নিজেও খান। অপরকেও খাওয়ান। আল্লাহর রাস্তায় যথাসাধ্য খরচ করুন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে সদকা দেওয়ার উপযুক্ত
বানিয়েছেন। খাওয়ার নয়। সর্বদা নিম্নোক্ত আয়াত স্মরণ করুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ
ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰكُم مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ يَوۡمٞ لَّا
بَيۡعٞ فِيهِ وَلَا خُلَّةٞ وَلَا شَفَٰعَةٞۗ وَٱلۡكَٰفِرُونَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٢٥٤
﴾ [البقرة: ٢٥٤]
“হে ঈমানদাররা! আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা হতে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় খরচ করো এমন দিন আসার পূর্বে যে দিন কোনো ক্রয়-বিক্রয়
চলবে না, না কোনো বন্ধুত্ব কাজে আসবে, না কারোর সুপারিশ ফায়দা দিবে। কাফিররা তো সত্যিই যালিম”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৪]
আল্লাহ
তা‘আলা
আমাদেরকে তাঁরই দীন প্রতিষ্ঠা এবং মানবতার কল্যাণে যথাসাধ্য ব্যয় করার তাওফীক দান
করুন। আমীন, সুম্মা আমীন। ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
وَصَلَّى اللهُ
عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ
এ প্রবন্ধে লিখক আল-কুরআন
ও সুন্নাহের আলোকে সদকা-খয়রাতের গুরুত্ব,
মর্যাদা ও উপকারিতা আলোচনা করেছেন এবং তারপর ইসলামী গ্রন্থাদী থেকে
সালফে-সালেহীনের বিভিন্ন আমল উদাহরণস্বরূপ নিয়ে এসেছেন।
![]()
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪১০
[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৯৩
[3] সহীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ৮৭৪
[4] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬৩৩
[5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস
নং ১০২২
[6] সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৪১৪; সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪২১০
[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১৬
[8] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪১৩, ৩৫৯৫
[9] সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ২৮৬৩
[10] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১০
[11] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪২৩
[12] সহীহুত তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ৮৮৮
[13] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪২৯
[14] সহীহুত তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ৭৪৪
[15] সহীহুত-তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ৮৭২
[16] সহীহুত-তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ৮৭৩
[17] সহীহুত-তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ৮৮৯
[18] সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ১৩৭৬
[19] সহীহুত-তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ৮৭৮
[20] সহীহুত-তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ৮৮৫
[21]. তাম্বীহুল গাফিলীন পৃ.
২৪৭
[22]. এহইয়া‘ 1/267
[23] তাম্বীহুল-গাফিলীন পৃ. ২৪৭
[24] হিলয়াতুল আউলিয়া ১/১৩৫; সিফাতুস-সাফওয়াহ ১/৪২০
[25] এহইয়া’ ১/২৬৮
[26] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৬৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৯০
[27] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪১১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১১
[28] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪১৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১২
[29] সুনান নাসায়ী, হাদীস নং ৩১১২; সহীহুত-তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ২৬০৬
[30] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৩২
[31] সুনান নাসায়ী, হাদীস নং ২৫২৯; সহীহুত-তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ৮৭৩
[32] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০২৪
[33] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০২৩
[34] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৩২
[35] সহীহুত-তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ৮৯২
[36] সহীহুত-তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ৮৯৪
[37] সহীহুত-তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ৮৯৬
[38] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৫১৩৯
[39] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৩৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০২৯
[40] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০২৯
[41] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪০৯
[42] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪২৩
[43] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৩০
[44] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৪৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস
নং ১০২১
[45] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০৬
[46] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০৮
[47] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০৯
[48] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৯৭; মুসলিম, হাদীস নং ১০৭৮; সুনান আবু দাউদ, হাদীস
নং ১৫৯০
[49] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৮৯; সুনান আবু
দাউদ, হাদীস নং ১৫৮৯
[50] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৮৯
[51] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪
[52] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৮৪৯
[53] সহীহুত-তারগীবি ওয়াত-তারহীব, হাদীস নং ৭৫২, ৮৮০
[54] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৮৮; সুনান
তিরমিযী, হাদীস নং ২০২৯
[55] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১৭
[56] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০১৭; সহীহ মুসলিম,
হাদীস নং ১০৩০
[57] সহীহ তিরমিযী, হাদীস নং ৬৬৫; সহীহুত তারগীবি ওয়াত-তারহীব,
হাদীস নং ৮৮৪; সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬৬৭
[58] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৩৯
[59] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৩৯
[60] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬৯৮
[61] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১৯
[62] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০৪
[63] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০২
[64] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০১
[65] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৯৫
[66] সহীহুত-তারগীবি ওয়াত্-তারহীব, হাদীস নং ৮৯৯
[67] সহীহুত-তারগীবি ওয়াত্-তারহীব, হাদীস নং ৯০৭
[68] সহীহুত-তারগীবি ওয়াত্-তারহীব, হাদীস নং ৮৯৯
[69] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৮৫; সুনান তিরমিযী, হাদীস ৬৪৬
[70] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬৭৬
[71] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৩৬
[72] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬৭৭
[73] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬৭৮
[74] সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ২৪৭০
[75] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৪২
[76] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৫৯
[77] সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৬৬৭
[78] সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৬৬৮
[79] সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৬৪৫; সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৮৩৬
[80] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৮৩৩
[81] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬৯১
[82] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬৭৯
[83] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬৮১
[84] সহীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ৯৬০
[85] সহীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ৯৬৩
[86] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০০৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৪৪
[87] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬৮৩
[88] সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৬৫৫
[89] সহীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ৯৪৯
[90] সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ১৮৫৫
[91] সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ১৩৭৬
[92] সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৪২; সহীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ৯৪৯
[93] সহীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ৭৩
[94] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৫০; সহীহ মুসলিম,
হাদীস নং ৫৩৩
[95] সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৭৪২
[96] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৭৪৫
[97] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩২০ সহীহ মুসলিম, হাদীস
নং ১৫৫৩
[98] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৫২
[99] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৩০৪
[100] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৮২
[101] সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৭; সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৭৭৩
[102] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৬১; সহীহ মুসলিম,
হাদীস নং ৯৯৮
[103] সহীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ৯২৫
[104] সিফাতুস-সাফওয়াহ ১/৩৪০
[105] সহীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ৯২৬
[106] সিফাতুস সাফওয়াহ ২/৩০
[107] আস-সিয়ার ৩/৩৮০
[108] এহইয়া ৩/২৭৩
[109] ওয়াফায়াতুল-আ’ইয়ান ৩/৩০
[110] আস-সিয়ার ৩/২১৮
[111] আখলাকুনাল-ইজতিমা’ইয়্যাহ: ২১
[112] আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ৮/৯৩
[113] হিল্য়াতুল-আউলিয়া’ ৭/২৯৮
[114] এহইয়া’ ৩/২৬২
[115] আস-সিয়ার ১/২১৬
[116] তারীখে বাগদাদ ১২/৪৯১
[117] এহইয়া ৩/৯৭
[118] হিল্য়াতুল-আউলিয়া’ ১/৯০
[119] তাযকিরাতুল-’হুফ্ফায ১/২১০
[120] তাযকিরাতুল-হুফ্ফায ১/৮১
[121] আস-সিয়ার ৪/১৩৯
[122] মিন্হাজুল-কাসিদীন পৃ: ৪১
[123] তাযকিরাতুল-হুফ্ফায ১/৮১
[124] তায্কিরাতুল-হুফ্ফায ৩/৮৬৮
[125] তারিখে বাগদাদ ৮/৩৫৩
[126] হিল্য়াতুল-আউলিয়া’ ৭/১৪৬
[127] আহসানুল মাহাসিন, পৃ. ২৮৯
[128] মিনহাজুল-ক্বাস্বিদীন, পৃ. ৪১
[129] হিল্য়াতুল-আউলিয়া ৩/১৬৬
[130] আয-যুহদ, পৃ. ৪৪
[131] আস-সিয়ার ৯/৪৬৭
[132] ওয়াফায়াতুল-আইয়ান ৪/১৩০
[133] ওয়াফায়াতুল-আইয়ান ৫/২৩২
[134] এহইয়া’ ৩/২৬৫
[135] সিফাতুস সফওয়াহ ২/১৫৪
[136] তাম্বীহুল-গাফিলীন পৃ. ৫২১
[137] আয-যুহ্দ/বায়হাক্বী ২৫১ স্বিফাতুস্ব-স্বাফওয়াহ ২/১৫৪
[138] আস-সিয়ার ৬/১৯৯
[139] এহইয়া’ ৩/৯৭
[140] ওয়াফায়াতুল-আইয়ান ২/২৯৩
[141] সিফাতুস সফওয়াহ ৩/৩৩৮
[142] আস-সিয়ার ১৫/৩০০
[143] সিফাতুস সফওয়াহ ৪/১৫৫
[144] আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ৮/৯৩
[145] আস-সিয়ার ১০/৩৭
[146] এহইয়া’ ২/১৫৯
[147] তাম্বীহুল-গাফিলীন, পৃ. ২৫২
[148] এহইয়া’ ৩/৩৭৩
[149] শাযারাতুয-যাহাব ১/১৫৭
[150] সিফাতুস সফওয়াহ ২/১৬৯
[151] আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ৯/১১৭
[152] আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ১১/১৩১
[153] ওয়াফায়াতুল-আ’ইয়ান ২/১২১
[154] সহীহুত তারগীবি ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ৮৭২
[155] শাযারাতুয-যাহাব ৩/১২৪
