কেয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর-২
আব্দুল মালেক আলী আল-কুলাইব
দ্বিতীয় অধ্যায়:
কেয়ামত সংঘটন---
যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্ধারিত সময় চলে আসবে তখন কেয়ামত সংঘটিত হবে। তিনি কেয়ামত সংঘটনের দায়িত্বশীল ফেরেশতাকে শিংগায় ফুৎকার দিতে নির্দেশ দিবেন। সে একটি ফুৎকার দেবে। ফলে যমীন ও পর্বতমালা সরিয়ে নেয়া হবে। এক আঘাতে সব চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। আর আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে। গ্রহ-নক্ষত্র খসে পড়বে। আলো চলে যাবে। সমুদ্রগুলো অগ্নিউত্তাল হয়ে যাবে। দুষ্ট মানুষগুলো তখন মরে যাবে। কেয়ামত যখন কায়েম হবে তখন পৃথিবীতে শুধু খারাপ মানুষের বসবাস থাকবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ ﴿1﴾ يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ ﴿2﴾ (سورة الحج)
হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা দেখবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্য দানকারিনী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আযাবই কঠিন। (সূরা হজ, আয়াত ১-২
فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّورِ نَفْخَةٌ وَاحِدَةٌ ﴿13﴾ وَحُمِلَتِ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَاحِدَةً ﴿14﴾ فَيَوْمَئِذٍ وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ ﴿15﴾ وَانْشَقَّتِ السَّمَاءُ فَهِيَ يَوْمَئِذٍ وَاهِيَةٌ ﴿16﴾ وَالْمَلَكُ عَلَى أَرْجَائِهَا وَيَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ يَوْمَئِذٍ ثَمَانِيَةٌ ﴿17﴾ يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُونَ لَا تَخْفَى مِنْكُمْ
خَافِيَةٌ ﴿18﴾ (سورة الحاقة).
অতঃপর যখন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে- একটি মাত্র ফুঁক। আর যমীন ও পর্বতমালাকে সরিয়ে নেয়া হবে এবং মাত্র একটি আঘাতে এগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সে দিন মহাঘটনা সংঘটিত হবে। আর আসমান বিদীর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সেদিন তা হয়ে যাবে দুর্বল বিক্ষিপ্ত। ফেরেশতাগণ আসমানের বিভিন্ন প্রান্তে থাকবে। সেদিন তোমার রবের আরশকে আটজন ফেরেশতা তাদের উর্ধ্বে বহন করবে। সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোন গোপনীয়তাই গোপন থাকবে না। (সূরা আল হাক্কাহ, আয়াত ১৩-১৮)
خَافِيَةٌ ﴿18﴾ (سورة الحاقة).
إِذَا السَّمَاءُ انْفَطَرَتْ ﴿1﴾ وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انْتَثَرَتْ ﴿2﴾ وَإِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ ﴿3﴾ وَإِذَا الْقُبُورُ بُعْثِرَتْ ﴿4﴾ عَلِمَتْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ وَأَخَّرَتْ ﴿5﴾ (سورة الانفطار)
যখন আসমান বিদীর্ণ হবে। আর যখন নক্ষত্রগুলো ঝরে পড়বে। আর যখন সমুদ্রগুলোকে একাকার করা হবে। আর যখন কবরগুলো উন্মোচিত হবে। তখন প্রত্যেকে জানতে পারবে, সে যা আগে পাঠিয়েছে এবং যা পিছনে রেখে গেছে। (সূরা ইনফিতার, আয়াত ১-৫)
إِنَّمَا تُوعَدُونَ لَوَاقِعٌ ﴿7﴾ فَإِذَا النُّجُومُ طُمِسَتْ ﴿8﴾ وَإِذَا السَّمَاءُ فُرِجَتْ ﴿9﴾ وَإِذَا الْجِبَالُ نُسِفَتْ ﴿10﴾ وَإِذَا الرُّسُلُ أُقِّتَتْ ﴿11﴾ لِأَيِّ يَوْمٍ أُجِّلَتْ ﴿12﴾ لِيَوْمِ الْفَصْلِ ﴿13﴾ وَمَا أَدْرَاكَ مَا يَوْمُ الْفَصْلِ ﴿14﴾ وَيْلٌ يَوْمَئِذٍ لِلْمُكَذِّبِينَ ﴿15﴾ (سورة المرسلات)
তোমাদেরকে যা কিছুর ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই ঘটবে। যখন তারকারাজি আলোহীন হবে, আর আকাশ বিদীর্ণ হবে, আর যখন পাহাড়গুলি চূর্ণবিচূর্ণ হবে, আর যখন রাসূলদেরকে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত করা হবে; কান দিনের জন্য এসব স্থগিত করা হয়েছিল? বিচার দিনের জন্য। আর কিসে তোমাকে জানাবে বিচার দিবস কি? মিথ্যারোপকারীদের জন্য সেদিনের দুর্ভোগ! (সূরা আল মুরসালাত, আয়াত ৭-১৫)
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنْسِفُهَا رَبِّي نَسْفًا ﴿105﴾ فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا ﴿106﴾ لَا تَرَى فِيهَا عِوَجًا وَلَا أَمْتًا ﴿107﴾ يَوْمَئِذٍ يَتَّبِعُونَ الدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهُ وَخَشَعَتِ الْأَصْوَاتُ لِلرَّحْمَنِ فَلَا تَسْمَعُ إِلَّا هَمْسًا ﴿108﴾ (سورة طه)
يَوْمَ تَرْجُفُ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ وَكَانَتِ الْجِبَالُ كَثِيبًا مَهِيلًا. (سورة المزّمّل: 14)
যেদিন যমীন ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পাহাড়গুলো চলমান বালুকারাশিতে পরিণত হবে। (সূরা মুযযাম্মমিল, আয়াত ১৪)
وَيَوْمَ نُسَيِّرُ الْجِبَالَ وَتَرَى الْأَرْضَ بَارِزَةً وَحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا ﴿47﴾ وَعُرِضُوا عَلَى رَبِّكَ صَفًّا لَقَدْ جِئْتُمُونَا كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ بَلْ زَعَمْتُمْ أَلَّنْ نَجْعَلَ لَكُمْ مَوْعِدًا ﴿48﴾ وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا ﴿49﴾ (سورة الأحقاف)
আর যেদিন আমি পাহাড়কে চলমান করব এবং তুমি যমীনকে দেখতে পাবে দৃশ্যমান, আর আমি তাদেরকে একত্র করব। অতঃপর তাদের কাউকেই ছাড়ব না। আর তাদেরকে তোমার রবের সামনে উপস্থিত করা হবে কাতারবদ্ধ করে। (আল্লাহ তাআলা বলবেন) তোমরা আমার কাছে এসেছ তেমনভাবে, যেমন আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম; বরং তোমরা তো ভেবেছিলে আমি তোমাদের জন্য কোন প্রতিশ্রুত মুহূর্ত রাখিনি। আর আমলনামা রাখা হবে। তখন তুমি অপরাধীদেরকে দেখতে পাবে ভীত, তাতে যা রয়েছে তার কারণে। আর তারা বলবে, হায় ধ্বংস আমাদের! কী হল এ কিতাবের! তা ছোট-বড় কিছুই ছাড়ে না, শুধু সংরক্ষণ করে এবং তারা যা করেছে, তা হাজির পাবে। আর তোমার রব কারো প্রতি যুলম করেন না। (সূরা আল কাহাফ, আয়াত ৪৭-৪৯)
হাদীসে এসেছে
عن عبدالله بن عمرو قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم " يخرج الدجال في أمتي فيمكث أربعين (لا أدري : أربعين يوما ، أو أربعين شهرا، أو أربعين عاما) . فيبعث الله عيسى بن مريم كأنه عروة بن مسعود . فيطلبه فيهلكه . ثم يمكث الناس سبع سنين . ليس بين اثنين عداوة . ثم يرسل الله ريحا باردة من قبل الشأم . فلا يبقى على وجه الأرض أحد في قلبه مثقال ذرة من خير أو إيمان إلا قبضته . حتى لو أن أحدكم دخل في كبد جبل لدخلته عليه ، حتى تقبضه" . قال : سمعتها من رسول الله صلى الله عليه وسلم . قال " فيبقى شرار الناس في خفة الطير وأحلام السباع . لا يعرفون معروفا ولا ينكرون منكرا . فيتمثل لهم الشيطان فيقول : ألا تستجيبون ؟ فيقولون : فما تأمرنا ؟ فيأمرهم بعبادة الأوثان . وهم في ذلك دار رزقهم ، حسن عيشهم . ثم ينفخ في الصور . ثم يرسل الله - أو قال ينزل الله - مطرا كأنه الطل أو الظل ( نعمان الشاك ) فتنبت منه أجساد الناس . ثم ينفخ فيه أخرى فإذا هم قيام ينظرون . ثم يقال : يا أيها الناس ! هلم إلى ربكم . وقفوهم إنهم مسؤلون . قال ثم يقال : أخرجوا بعث النار . فيقال : من كم ؟ فيقال : من كل ألف ، تسعمائة وتسعة وتسعين . قال فذاك يوم يجعل الولدان شيبا . وذلك يوم يكشف عن ساق " .
হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম :
১- কেয়ামতের বড় আলামতের একটি হল দাজ্জালের আভির্ভাব।
২- কেয়ামতের বড় আলামতের একটি হল ঈসা আলাইহিস সালাম এর আগমন।
৩- ঈসা আলাইহিস সালাম দাজ্জালকে শেষ করে দিবেন। এরপর সুখ শান্তির রাজত্ব কায়েম হবে যা সাত বছর স্থায়ী হবে।
৪-রহমতের বায়ু প্রেরণ করে কেয়ামতের পূর্বে আল্লাহ ঈমানদারদের মৃত্যু ঘটাবেন। এটিও কেয়ামতের একটি বড় আলামত।
৫- কেয়ামতের পূর্বক্ষণে পৃথিবীতে কোন ভাল মানুষ থাকবে না। হিংস্র, দুর্বিত্ত, দূরাচার ব্যক্তিদের উপর কেয়ামত সংঘটিত হবে।
৬- কেয়ামতের পূর্বে সর্বত্র শয়তানের তৎপরতায় পৌত্তলিকতা বা মুর্তি পুজার ব্যাপক প্রচলন ঘটবে। তখন মানুষ সচ্ছলতার সাথে সুন্দর জীবনোপকরণসহ জীবন যাপন করবে।
৭- মানুষের উন্নত জীবন-যাপন দেখে বিভ্রান্ত হওয়ার অবকাশ নেই। এটা তাদের সত্যতা, সত্যবাদিতা বা গ্রহণযোগ্যতার আলামত নয়।
৮- প্রথম শিংগায় ফুঁৎকারে পৃথিবীর সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। আর দ্বিতীয় ফুঁৎকারে মানুষ জীবন ফিরে পাবে।
৯- মুষলধারে বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে পূনর্জীবিত করবেন।
১০- জাহান্নামীদের সংখ্যা অনেক বেশী হবে। প্রতি হাজার মানুষে একজন বাদে সকলে জাহান্নামে যাবে। ১১- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কেয়ামতের পর নিজের পায়ের গোছা উম্মুক্ত করবেন। যেমন তিনি বলেন:
يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ (سورة القلم:42)
সে দিন পায়ের গোছা উম্মুক্ত করা হবে। আর তাদেকে সিজদা করার জন্য আহবান জানানো হবে, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না। (সূরা আল কলম, আয়াত ৪২)
১২- আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পা রয়েছে, তবে তা তাঁর মহান সত্ত্বার জন্য যেমন উপযোগী তেমনই।
No comments:
Post a Comment