কুরআন দীনি ইলম শিক্ষার বিনিময় পারিশ্রমিক নেওয়া

লেখক: প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ ইবন মুবারক আলে সাইফ

আল্লাহর নৈকট্য অর্জনমূলক কাজ যেমন কুরআন দীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া



এবং
জাতীয় কোন কাজ সম্পাদনের মূল উদ্দেশ্য হলো সাওয়াবের নিয়াতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের প্রত্যাশায় কার্য সম্পাদন করা এর দ্বারা দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্য লাভের প্রত্যাশা না করা নি:সন্দেহে ধরণের নিয়াত করা উত্তম সাহাবী তাবেয়ীগণ এটিই করেছেন

ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী উম্মতের বিখ্যাত আলেমগণ পারিশ্রমিক ছাড়াই কুরআন, হাদীস ফিকহ শিক্ষা দিতেন তাদের কেউ বেতনের বিনিময়ে কখনও কাউকে শিক্ষা দিতেন না[1]

কুরআন দীনি ইলম শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণে মতানৈক্যস্থান:

এখানে আলোচনা হচ্ছে বিশেষ করে শর ইলমের ব্যাপারে যা শিক্ষা দিয়ে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য তথা সাওয়াব অর্জন করে; জাতীয় ইলম ব্যতীত অন্য সব ইলমের ব্যাপারে আলোচনা নয়[2]

ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. এর অগ্রাধিকার:

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. প্রয়োজনের তাগিদে দীনি ইলম শিক্ষা দিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করাকে জায়েয বলেছেন; যদিও তার মত হাম্বলী মাযহাবের অধিকাংশের মতের বিপরীত[3]

মতানৈক্যের বিস্তারিত ব্যাখ্যা:

1-    ফিকহবিদগণ ব্যাপারে একমত যে, প্রয়োজনীয় উপকারী শর ইলম শিক্ষার বিনিময়ে বাইতুল মাল (ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগার) থেকে জীবিকা নির্বাহের খরচাদি গ্রহণ করা জায়েয এমনিভাবে মতানৈক্যস্থল রয়েছে সেসব ইলম শিক্ষা দিয়ে বিনিময় গ্রহণের ব্যাপারে বিশেষ করে যে ইলম শিক্ষা দিয়ে ব্যক্তি সাওয়াবের অধিকারী হয়[4]

2-    উপরোক্ত প্রকারের শর ইলম শিক্ষা দিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণের ব্যাপারে তিনটি মতামত বয়েছে

মাসআলার ব্যাপারে আলেমদের অভিমতসমূহ:

প্রথম অভিমত: কুরআন দীনি ইলম শিক্ষা দিয়ে পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয নেই এটি হানাফী মাযহাবের অভিমত[5] কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয নেই- এটি হাম্বলী মাযহাবেরও মতামত আর তাদের মতে হাদীস ফিকহ শিক্ষা দিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ না জায়েয হওয়া আরো অধিক স্পষ্ট এটিই তাদের মাশহুর মত[6]

দ্বিতীয় অভিমত: পুরোপুরিভাবে জায়েয আর এটি পরবর্তী যুগের হানাফী মাযহাবের আলেমদের অভিমত[7], এটি কতিপয় মালেকী[8], ইমাম শাফেঈর স্পষ্ট বক্তব্য[9], ইমাম আহমদের থেকে একটি বর্ণনা[10] এবং ইবন হাযাম রহ.[11] অভিমত ব্যক্ত করেছেন

তৃতীয় অভিমত: কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয; তবে ফিকহ, হাদীস ধরণের অন্যান্য ইলম শিক্ষা দিয়ে বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নেই এটি শাফে মাযহাবের অভিমত[12]

চতুর্থ অভিমত: কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয; ফিকহ, হাদীস ধরণের শর অন্যান্য ইলম শিক্ষা দিয়ে পারিশ্রমিক নেওয়া মাকরূহ এটি মালেকী মাযহাবের অভিমত[13]

পঞ্চম অভিমত: প্রয়োজন থাকলে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয; তবে প্রয়োজন না থাকলে পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয নেই এটি হাম্বলী মাযহাবের তৃতীয় অভিমত[14] এবং ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. অভিমতটি অগ্রাধিকার দিয়েছেন পছন্দ করেছেন

প্রথম অভিমত পোষণকারীদের দলিল: তারা কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পুরোপুরিভাবে নিষেধ করেছেন

প্রথমত: কুরআনের দলিল:

1-    আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

﴿وَلَا تَشۡتَرُواْ بِ‍َٔايَٰتِي ثَمَنٗا قَلِيلٗا وَإِيَّٰيَ فَٱتَّقُونِ ٤١ ﴾ [البقرة: ٤١] 

“আর তোমরা আমার আয়াতসমূহ সামান্যমূল্যে বিক্রি করো না এবং কেবল আমাকেই ভয় কর।”[15]

দলিলের যৌক্তিকতা: এ আয়াতটি প্রমাণ করে যে, আল্লাহর আয়াতসমূহ যেমন কুরআন এবং যা কুরআনের অর্থে অন্যান্য শর‘ঈ ইলমের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হারাম।[16]

এ দলিলের জবাবে বলা যায়,

(ক) আয়াতে বনী ইসরাঈলদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। আর এ বিধান আমাদের পূর্ববর্তী শরী‘আতের বিধান, যা আমাদের জন্য প্রযোজ্য হওয়া বা না হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে রয়েছে মতানৈক্য।

তবে এ যুক্তি খণ্ডনে বলা যায় যে:

পূর্ববর্তী শরী‘আতের সেসব বিধান আমাদের শরী‘আতে প্রযোজ্য হবে যতক্ষণ না আমাদের শরী‘আতে উক্ত বিধানের বিপরীত কিছু নাযিল না হয়।

তাছাড়া আয়াতের খিতাব তথা যাদেরকে উদ্দেশ্য করে নাযিল হয়েছে তা ‘আম তথা ব্যাপকতর। আর উসূলে ফিকহের কায়েদা হলো, ‘শব্দের ব্যাপকতার দ্বারা উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়, নির্দিষ্ট কারণের দ্বারা নয়।’

(খ) আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য যারা কুরআন শিক্ষা দিতে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে নেয়, পারিশ্রমিক ব্যতীত তারা শিক্ষা প্রদান করে না। কিন্তু যারা এভাবে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে না তাদের জন্য বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয।[17]

(গ) কারো অভাব না থাকা অবস্থায় এ বিধান প্রযোজ্য। পক্ষান্তরে সাধারণভাবে প্রয়োজন থাকলে তা প্রয়োজন অনুযায়ী বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয।

2-    আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡتُمُونَ مَآ أَنزَلۡنَا مِنَ ٱلۡبَيِّنَٰتِ وَٱلۡهُدَىٰ مِنۢ بَعۡدِ مَا بَيَّنَّٰهُ لِلنَّاسِ فِي ٱلۡكِتَٰبِ أُوْلَٰٓئِكَ يَلۡعَنُهُمُ ٱللَّهُ وَيَلۡعَنُهُمُ ٱللَّٰعِنُونَ ١٥٩ ﴾ [البقرة: ١٥٩] 

“নিশ্চয় যারা গোপন করে সু-স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ ও হিদায়াত যা আমি নাযিল করেছি, কিতাবে মানুষের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার পর, তাদেরকে আল্লাহ লানত করেন এবং লানতকারীগণও তাদেরকে লানত করে।”[18]

দলিলের যৌক্তিকতা: এ আয়াত প্রমাণ করে যে, দীনি ইলম অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া ও তা বর্ণনা করা ফরয এবং তা গোপন করা হারাম। ব্যক্তির ওপর যে কাজ করা ফরয তা আদায় করলে সে উক্ত কাজের পারিশ্রমিক প্রাপ্ত হয় না, যেমন সালাত ও হজ আদায় করলে পারিশ্রমিক প্রাপ্ত হয় না।[19]

এ দলিলের প্রত্যুত্তরে বলা যায়:

(ক) এ আয়াতের উদ্দেশ্য হলো যখন কাউকে কোন ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে তখন তাৎক্ষণিকভাবে তা বর্ণনা করা ফরয। যেমন কাউকে কোন ইলম বা ফাতওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে যা সে জানে, অতপর তা গোপন করল। কিন্তু সকাল-সন্ধ্যা তথা সার্বক্ষণিক ইলমের জন্য নিবেদিত থাকা আলোচ্য মাস‘আলার অন্তর্ভুক্ত নয়।

(খ) মানুষের কাছে ইলম পৌঁছানো নির্দিষ্ট কারো ওপর নির্ধারিত নয়; তবে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ না থাকলে উক্ত ব্যক্তির ওপর দীনি ইলম পৌঁছানো ফরয। উক্ত ব্যক্তি এ কাজের জন্য নিয়োজিত হলে এমতাবস্থায় তার জীবিকা নির্বাহের জন্য দীনি ইলম শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয।

3- আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَيَٰقَوۡمِ لَآ أَسۡ‍َٔلُكُمۡ عَلَيۡهِ مَالًاۖ إِنۡ أَجۡرِيَ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِۚ ٢٩ ﴾ [هود: ٢٩] 

“আর হে আমার জাতি, এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোন সম্পদ চাই না। আমার প্রতিদান শুধু আল্লাহর কাছে।”[20]

এ আয়াতের সমার্থবোধক দশটিরও বেশি আয়াত কুরআনে রয়েছে।[21]

কুরআন ও দীনি ইলম শিক্ষার বিনিময় গ্রহণ করা যাবে না বলে অভিমত প্রদানকারীগণ বলেন, এ সমস্ত আয়াতে কারীমা দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলগণের অনুসারী (উম্মত) আলেম ও অন্যদের ওপর ফরয হলো তাদের কাছে যে ইলম রয়েছে তা বিনা পারিশ্রমিকে লোকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।[22]  

এ দলিলের প্রত্যুত্তরে বলা যায়: এ আদেশ ছিলো নবী-রাসূলগণের জন্য যা তাদের নবুওয়াতের মর্যাদা সংরক্ষণ করে। কুরআনের এসব নস খাস হিসেবে গণ্য করলে অন্যদের জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয বলে প্রমাণিত

দ্বিতীয়ত: হাদীস থেকে দলিল:

4-    আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

"مَنْ أَخَذَ قَوْسًا عَلَى تَعْلِيمِ الْقُرْآنِ قَلَّدَهُ اللهُ قَوْسًا مِنْ نَارٍ".

যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে তীরের ধনুকও (সামান্য জিনিসও) যদি গ্রহণ করে তবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জাহান্নামের ধনুক গলায় পড়িয়ে দিবেনবায়হাকী [23]

হাদীসের প্রত্যুত্তরে বলা যায়:

(ক) বায়হাকী রহ. হাদীসের সনদের একজনকে দ‘ঈফ বলেছেন। তিনি হাদীসটি দ‘ঈফ হওয়া হাফেযে হাদীসের থেকে বর্ণনা করেছেন।

তবে এ সমালোচনার প্রত্যুত্তরে বলা যায়: ইমাম আবূ হাতিম রহ. বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীর দ্বারা দলিল পেশ করেছেন। তাছাড়া কতিপয় আলেম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।[24]

(খ) এটি নির্দিষ্ট কোন ঘটনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যা অনেক কিছুই বুঝানোর সম্ভাবনা রয়েছে। পক্ষান্তরে এ হাদীসটি কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ জায়েয হওয়ার অসংখ্য প্রমাণের সাথে সাংঘর্ষিক।[25] হাদীসটির উদ্দেশ্য এও হতে পারে যে, নির্ধারিত করে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা নিষেধ করা হয়েছে।   

5-    উবাদা ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত,

قَالَ: عَلَّمْتُ نَاسًا مِنْ أَهْلِ الصُّفَّةِ الْكِتَابَ، وَالْقُرْآنَ فَأَهْدَى إِلَيَّ رَجُلٌ مِنْهُمْ قَوْسًا فَقُلْتُ: لَيْسَتْ بِمَالٍ وَأَرْمِي عَنْهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، لَآتِيَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَأَسْأَلَنَّهُ فَأَتَيْتُهُ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، رَجُلٌ أَهْدَى إِلَيَّ قَوْسًا مِمَّنْ كُنْتُ أُعَلِّمُهُ الْكِتَابَ وَالْقُرْآنَ، وَلَيْسَتْ بِمَالٍ وَأَرْمِي عَنْهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ، قَالَ: «إِنْ كُنْتَ تُحِبُّ أَنْ تُطَوَّقَ طَوْقًا مِنْ نَارٍ فَاقْبَلْهَا»

তিনি বলেন, আমি আহলে-সুফফার কিছু লোককে লেখা এবং কুরআন পড়া শিখাতাম। তখন তাদের একজন আমার জন্য একটি ধনুক হাদিয়া হিসাবে প্রেরণ করেনতখন আমি ধারণা করি যে, এ তো কোন মাল নয়, আমি এ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় তীরন্দাযী করবো। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যাদের লেখা ও কুরআন পড়া শেখাই তাদের একজন আমাকে হাদিয়া হিসাবে একটি ধনুক প্রদান করেছে, যা কোন মালই নয়আমি এ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় তীরন্দাযী করব। তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি যদি তোমার গলায় জাহান্নামের কোন বেড়ী পরাতে চাও, তবে তুমি তা গ্রহণ করআহমদ, আবূ দাউদ ও ইবন মাজাহ।[26]

এ হাদীসের জবাবে বলা যায়:

(ক) এ হাদীসের সনদে মুগীরাহ ইবন যিয়াদ[27] রয়েছেন যার ব্যাপারে ইমাম আহমদ, বুখারী ও আবূ হাতিম সমালোচনা করেছেন। তিনি একাকী হাদীস বর্ণনা করলে তার হাদীস দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে এ সমালোচনার প্রত্যুত্তরে বলা যায়: ইবন মাঈন ইজলীসহ অনেকেই তাকে (মুগীরাহ ইবন যিয়াদ) সিকাহ বলেছেন[28]

() সনদে আল-আসওয়াদ ইবন সালাবাহ[29] রয়েছেন, যিনি মাজহুলুল হাল (যার পরিচিতি অজ্ঞাত)

তবে এর প্রত্যুত্তরে বলা যায়: হাদীসটি অন্যান্য সনদেও বর্ণিত আছে, সেগুলোকে কতিপয় আলেম সহীহ সনদ বলেছেন।[30]

(গ) তাছাড়াও এটি নির্দিষ্ট ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত যা আরো অনেক সম্ভাবনা ও নির্দেশনা উদ্দেশ্য হতে পারে। সুতরাং যেসব দলিল দ্বারা জায়েয সাব্যস্ত হয় সেগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক নয়।[31] হাদীস দ্বারা একথাও উদ্দেশ্য হতে পারে যে, ব্যক্তি শুরুতে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একনিষ্ঠভাবে কাজ শুরু করেছে। সুতরাং সে তার নিয়াত পরিবর্তন করতে পারে না। আবার এও সম্ভাবনা রয়েছে যে, শিক্ষক আহলে সুফফার অধিবাসী গরিব ছিলেন।

(ঘ) হতে পারে উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ধনী ছিলেন, তিনি অভাবী ছিলেন না। সুতরাং তার জন্য এ ধরণের হাদীয় গ্রহণ জায়েয ছিলো না। পক্ষান্তরে অন্যান্য অভাবী লোকদের কথা ভিন্ন; তাদের জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয।

6-    উবাই ইবন কাব রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত,

قَالَ: عَلَّمْتُ رَجُلًا الْقُرْآنَ، فَأَهْدَى إِلَيَّ قَوْسًا، فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «إِنْ أَخَذْتَهَا أَخَذْتَ قَوْسًا مِنْ نَارٍ» ، فَرَدَدْتُهَا

তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে কুরআন শিক্ষা দিলে সে আমাকে একটি ধনুক উপহার দেয়। আমি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেন, “তুমি এটি গ্রহণ করলে তুমি জাহান্নামের একটি ধনুক গ্রহণ করেছো।” অতএব আমি তা ফেরত দিলাম। ইবন মাজাহ[32]

এ হাদীসে হাদীয় গ্রহণ করাকে হারাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং শর্তসাপেক্ষে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা আরো অধিক হারাম বলে প্রমাণিত।

এ হাদীসের জবাবে বলা যায়:

() এ হাদীসটি নির্দিষ্ট কোন ঘটনা প্রসঙ্গে, যা অনেক কিছুই সম্ভাবনা রয়েছে যেভাবে উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহুআনহুর হাদীসে ব্যাখ্যা করা হয়েছে

() হাদীসটি দঈফ কতিপয় হাদীস বিশারদ হাদীসটিকে মুদতারিব ও ইরসাল হিসেবে হুকুম দিয়েছনে ইবন আব্দুল বার ও বায়হাকী রহ. ‘ইনকিতা‘ (সনদের ধারাবাহিতার বিচ্ছিন্নতা) এর হুকুম দিয়েছেন ইবন কাত্তান রহ. বর্ণনাকারীদের একজনকে জাহালাহর (বর্ণনাকারীর পরিচয় অজানা) দোষে দোষারোপ করেছেন হাদীসটি উবাই ইবন কাব রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে অন্যান্য সনদেও বর্ণিত হয়েছে ইবন কাত্তান রহ. বলেন, সেসব বর্ণনার কোনটিই (সহীহ সনদে) সাব্যস্ত নয়[33]

7-    সাহল ইবন সাদ আস-সাইদী রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত,

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ، قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا وَنَحْنُ نَقْتَرِئُ، فَقَالَ: «الْحَمْدُ لِلَّهِ كِتَابُ اللَّهِ وَاحِدٌ، وَفِيكُمُ الْأَحْمَرُ وَفِيكُمُ الْأَبْيَضُ وَفِيكُمْا لْأَسْوَدُ، اقْرَءُوهُ قَبْلَ أَنْ يَقْرَأَهُ أَقْوَامٌ يُقِيمُونَهُ كَمَا يُقَوَّمُ السَّهْمُ يُتَعَجَّلُ أَجْرُهُ وَلَا يُتَأَجَّلُهُ»

তিনি বলেন, এক দিন আমরা কিরাত পাঠ করাকালীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হয়ে বলেন, “সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর, আল্লাহর কিতাব একই এবং তোমাদের কেউ লাল, কেউ সাদা এবং কেউ কালো রঙের। তোমরা ঐ সম্প্রদায়ের আবির্ভাবের পূর্বে কিরাত পাঠ করো যারা কুরআনকে তীরের ন্যায় দৃঢ় করবে। তারা কুরআন পাঠের (বিনিময় দুনিয়াতে পেতে) তাড়াহুড়া করবে এবং (আখিরাতের) অপেক্ষা করবে না।” আবূ দাউদ।[34] জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে।[35]

হাদীস দু’টি দ্বারা দলিলের যৌক্তিকতা: হাদীস দু’টি দ্বারা প্রমাণিত যে, যারা কুরআন শিক্ষার বিনিময় দুনিয়াতে গ্রহণ করবে তারা আখিরাতে এর বিনিময় থেকে বঞ্চিত হবেন। তাছাড়া এটি একটি বড় ধরণের শাস্তির হুমকি যা হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া ব্যতীত কেউ প্রাপ্য হয় না।

তবে এ যুক্তি খণ্ডনে বলা যায়:

(ক) ইসলামের প্রাথমিক যুগে কুরআন শিক্ষার বিনিময় পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হারাম ছিলো। কেননা দীনের প্রচার-প্রসারে তখন কুরআন শিক্ষা দেওয়া ফরযে আইন ছিলো। পরবর্তীতে ইসলাম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচার-প্রসার হওয়ায় কুরআন শিক্ষা করার ফরয হুকুমটি রহিত হয়ে যায়। এরপরে ফরযে আইনের বিধানটি আর অবশিষ্ট রইল না।[36]

তবে এ দলিলের উত্তরে বলা যায় যে, কোন বিধান নসখ বা রহিত হওয়া দাবী করলে সে দাবীর স্বপক্ষে দলিল থাকতে হবে।

কেউ কেউ আবার উপরোক্ত জবাবের প্রতিবাদ করেছেন এ মর্মে যে, উপরোক্ত দাবীটি নসখ ছিলো না; বরং সময়ের পরিবর্তনের সাথে অবস্থার পরিবর্তন হয়, সে ভিত্তিতে হুকুমেরও পরিবর্তন হয়। 

(খ) হাদীসে নিষেধাজ্ঞার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যারা প্রয়োজন ছাড়া কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। অথবা তিলাওয়াতের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করে; শিক্ষার বিনিময় নয়।

8-    ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,

«مَنْ قَرَأَ القُرْآنَ فَلْيَسْأَلِ اللَّهَ بِهِ، فَإِنَّهُ سَيَجِيءُ أَقْوَامٌ يَقْرَءُونَ القُرْآنَ يَسْأَلُونَ بِهِ النَّاسَ»

“যে ব্যক্তি কুরআন পড়বে সে যেন আল্লাহর কাছেই কেবল যাচ্ঞা করে (এর বিনিময় প্রার্থনা করে)অচিরেই এমন একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে যারা কুরআন পড়বে এবং এর অসীলা দিয়ে মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইবে।” আহমদ ও তিরমিযী।[37] আব্দুর রহমান ইবন শিবল রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে[38] তাছাড়াও হাদীসে অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস রয়েছে[39]

দলিলের পর্যালোচনা:

() ইমাম তিরমিযী রহ. ইমরান রাদিয়াল্লাহুআনহু বর্ণিত হাদীসের সম্পর্কে বলেছেন, হাদীসটি হাসান তবে হাদীসের সনদ অনুরূপ (হাসান) নয় তিনি এর দ্বারা সনদের দূর্বলতাকে বুঝিয়েছেন[40]

() তাছাড়া পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিলাওয়াত করার ব্যাপারে আদেশটি প্রযোজ্য; শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়[41]

9-    আব্দুল্লাহ ইবনআমর ইবনআস রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً، وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ»

“আমার নিকট থেকে একটি আয়াত হলেও তা প্রচার করবে। বনী ইসরাঈলের বরাতে কথা বর্ণনা করতে পার, এতে কোন দোষ নেই।” বুখারী।[42]

এ হাদীস দ্বারা দলিল প্রদানের যৌক্তিকতা: উপরোক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, কুরআন ও সুন্নাহ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া ফরয। আর ফরয আদায়ের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয নেই।

এ দলিলের প্রত্যুত্তরে বলা যায়:

(ক) যুদ্ধের সময় যোদ্ধাদের উপর জিহাদ করা ফরয; অথচ জিহাদের গনীমত গ্রহণ করা জায়েয।

(খ) নিষেধাজ্ঞা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যারা দুনিয়াবী উদ্দেশ্য হাসিল করতে কুরআন শিক্ষা দেয়। অন্যদিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা দিয়ে ইবাদতে নিজেকে নিবেদিত করতে হাদীয় গ্রহণ করবে তাতে কোন অসুবিধে নেই।

10-  আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে মারফুসূত্রে বর্ণিত,

«مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ لَا يَتَعَلَّمُهُ إِلَّا لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا، لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» يَعْنِي رِيحَهَا

“যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের ইলমকে দুনিয়া লাভের আশায় অর্জন করলো, সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবে না। আবূ দাউদ।[43]

দলিলের যৌক্তিকতা: হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, দীনি ইলম শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া উভয়-ই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইখলাসের সাথে হতে হবে। এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা উদ্দেশ্য পরিপন্থী কাজ।[44]

এ দলিলের পর্যালোচনায় বলা যায়:

() পারিশ্রমিক গ্রহণ করা ইখলাসের পরিপন্থী নয়; যেমন জিহাদে গনীমত গ্রহণ করা হয়

() নিষেধাজ্ঞা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে নিছক দুনিয়ার উদ্দেশ্যে ইলম অর্জন করে পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আখিরাতের উদ্দেশ্যে ইলম অর্জন করবে এবং পারিশ্রমিকের দ্বারা নিজেকে অন্য কাজ থেকে বিরত থেকে দীনি ইলমী কাজে নিয়োজিত রাখবে ও জীবিকা নির্বাহ করবে তাতে কোন দোষ নেই[45]

 

তৃতীয়ত: আসার থেকে দলিল:

অসংখ্য সাহাবী থেকে বর্ণিত আছে যে তারা কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতেন, নিজেরা এ ধরণের পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে অপছন্দ করতেন এবং অন্যকে তা থেকে বিরত রাখতেন যেমন উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহুআনহু ও অন্যান্য সাহাবীদের থেকে বর্ণিত হয়েছে

আব্দুল্লাহ ইবন শাক্বীক আল-আনসারী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “শিক্ষকের শিক্ষার বিনিময় গ্রহণ করা মাকরূহ কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ ধরণের পারিশ্রমিক গ্রহণ করা অপছন্দ করতেন এবং তারা এটাকে অত্যন্ত জঘন্য মনে করতেনইবন আবী শাইরাহ[46] ইবন হাযাম রহ. ব্যাপারে অনেক আসার বর্ণনা করেছেন[47]

দলিলের পর্যালোচনায় বলা যায়:

() কুরআন শিক্ষার বিনিময় পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয মর্মে অনেক আসার বর্ণিত আছে আর সাহাবীদের বাণী যখন পরস্পর বিরোধী হয় তখন তা দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়

() তাছাড়া আসারগুলো সেসব লোকদের ব্যাপারে বলা যায় যারা দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে কুরআন শিক্ষা দেয় এবং এর বিনিময় আল্লাহর কাছে সাওয়াবের প্রত্যাশা করে না

চতুর্থত: যৌক্তিক দলিল:

() কুরআন শিক্ষা করা ফরযে আইন আর সালাত সাওমের ন্যায় ফরযে আইনের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয নেই[48]

তাদের যুক্তির জবাবে বলা যায়:

() কুরআন শিক্ষাকে সালাতের সাথে কিয়াস করা জিহাদের সাথে কিয়াস করার চেয়ে উত্তম নয়; বরং জিহাদের সাথে কিয়াস করা উত্তম কেননা কুরআন শিক্ষার ন্যায় জিহাদও ফরযে কিফায়া অন্যদিকে সালাত আদায় করা ফরযে আইন[49]

() সালাতের সাথে কিয়াস করা হলো কিয়াসে ফাসিদ। অন্যদিকে কুরআন ও হাদীসের নস পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয সাব্যস্ত করে- যা শীঘ্রই আলোচনা হবে।

() তাছাড়া কুরআন শিক্ষা করা ফরযে আইন- এটি আমরা সাব্যস্ত করি না; বরং কুরআন শিক্ষা করা ফরযে কিফায়া

() যদিও আমরা তর্কের খাতিরে না পারিশ্রমিক নেওয়া মেনে নেই; তথাপি সর্বসাধারণের প্রয়োজনীতা বিবেচনায় নিতে হবে কতিপয় শিক্ষক যদি সার্বক্ষণিক কুরআন শিক্ষায় আত্মনিয়োগ না করেন তাহলে কুরআনের শিক্ষার্থী কমে যাবে এবং শিক্ষাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে

2- কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ করলে লোকজন তা শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাবে কেননা পারিশ্রমিকের বোঝা মানুষের ওপর চাপিয়ে দিলে তারা কুরআন শিক্ষা থেকে বিরত থাকবে যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

﴿ أَمۡ تَسۡ‍َٔلُهُمۡ أَجۡرٗا فَهُم مِّن مَّغۡرَمٖ مُّثۡقَلُونَ ٤٦ ﴾ [القلم: ٤٦] 

“তুমি কি তাদের কাছে পারিশ্রমিক চাচ্ছ? ফলে তারা ঋণের কারণে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে।”[50]

এ যুক্তি খণ্ডনে বলা যায়: এটি সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ততা, যা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। কিন্তু এ ক্ষতির চেয়ে আরো বড় ক্ষতি হবে যদি কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা না হয়কেননা তখন শিক্ষক কমে যাবে, ফলে সমাজে অজ্ঞতা ছড়িয়ে পড়বে। আর এটি পূর্বোক্ত ক্ষতির চেয়ে আরো মারাত্মক।[51]

3- বেতনভুক কর্মচারীকে ভাড়া করা জায়েয নয়। কুরআন ও দীনি ইলম শিক্ষা দানকারী শিক্ষক তার ইলমের দ্বারা সাওয়াব তথা প্রতিদান প্রাপ্ত হন। আর তিনি প্রতিদান পান স্বয়ং মহান আল্লাহর থেকে। সে তো একাজ নিজের জন্যই করেছে। সুতরাং সে অন্য কোন পারিশ্রমিক প্রাপ্ত হবে না।

এ যুক্তি খণ্ডনে বলা যায়:

(ক) তাদের এ যুক্তি জিহাদের দ্বারা কিয়াস করে প্রত্যাখান করা হবে। যেহেতু মুজাহিদ সাওয়াব ও গনীমত উভয়ই প্রাপ্ত হয়।

(খ) ব্যক্তির নিয়াত অনুসারে সে আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাবে। আর সে যেহেতু তার জীবিকা নির্বাহের কাজ থেকে বিরত থেকে নিজেকে কুরআন শিক্ষার কাজে নিয়োজিত রেখেছে সে কারণে সে পারিশ্রমিক পাবে।[52]

4- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষক ও দা‘ঈ প্রেরণ করেছেন। কিন্তু তিনি তাদেরকে এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক প্রদান করতেন না। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলের জন্য ছিলেন মহান আদর্শ।

এ যুক্তি খণ্ডনে বলা যায়:

(ক) এটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের সাথে কিয়াস। কেননা পার্থিব বিষয়াদি ও প্রলোভনের অপবাদ থেকে নবুয়াতের মর্যাদা হিফাযতে দীনি দাওয়াতী কাজে পারিশ্রমিক গ্রহণ থেকে নিষেধ করা হয়েছে; কিন্তু অন্যদের বেলায় এটি প্রযোজ্য নয়।

(খ) তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ঝাড়ফুঁকের পারিশ্রমিক থেকে হাদীয়া গ্রহণ করেছেন, যা শীঘ্রই আলোচনা হবে।[53]

 

দ্বিতীয় অভিমত ব্যক্তকারীদের দলিল: (পারিশ্রমিক নেওয়া পুরোপুরিভাবে জায়েয।)

প্রথমত: হাদীস থেকে দলিল:

1-      ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ نَفَرًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرُّوا بِمَاءٍ، فِيهِمْ لَدِيغٌ أَوْ سَلِيمٌ، فَعَرَضَ لَهُمْ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ المَاءِ، فَقَالَ: هَلْ فِيكُمْ مِنْ رَاقٍ، إِنَّ فِي المَاءِ رَجُلًا لَدِيغًا أَوْ سَلِيمًا، فَانْطَلَقَ رَجُلٌ مِنْهُمْ، فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الكِتَابِ عَلَى شَاءٍ، فَبَرَأَ، فَجَاءَ بِالشَّاءِ إِلَى أَصْحَابِهِ، فَكَرِهُوا ذَلِكَ وَقَالُوا: أَخَذْتَ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ أَجْرًا، حَتَّى قَدِمُوا المَدِينَةَ، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَخَذَ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ أَجْرًا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَحَقَّ مَا أَخَذْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا كِتَابُ اللَّهِ»

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের একটি দল একটি কুপের পাশে বসবাসকারীদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। কুপের পাশে অবস্থানকারীদের মধ্যে ছিল সাপে কাটা এক ব্যক্তি কিংবা তিনি বলেছেন, দংশিত এক ব্যক্তি। তখন কুপের কাছে বসবাসকারীদের একজন এসে তাদের বলল, আপনাদের মধ্যে কি কোন ঝাঁড়-ফুকারী আছেন? কুপ এলাকায় একজন সাপ বা বিচ্ছু দংশিত লোক আছে। তখন সাহাবীগণের মধ্যে একজন সেখানে গেলেন। এরপর কিছু বকরী দানের বিনিময়ে তিনি সূরা ফাতিহা পড়লেন (এবং ফুঁক দিলেন)। ফলে লোকটি আরোগ্য লাভ করলো। এরপর তিনি বকরীগুলো নিয়ে তার সাথীদের নিকট আসলেন; কিন্তু তারা কাজটি পছন্দ করলেন না। তারা বললেন, আপনি আল্লাহর কিতাবের দ্বারা বিনিময় গ্রহণ করেছেন। অবশেষে তারা মদীনায় পৌঁছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইনি আল্লাহর কিতাবের দ্বারা বিনিময় গ্রহণ করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে সকল জিনিসের উপর তোমরা বিনিময় গ্রহণ করে থাক, তন্মধ্যে সব চেয়ে বড় হল আল্লাহর কিতাব।” বুখারী[54]

2-    ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত হাদীস। এতে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«وَمَا أَدْرَاكَ أَنَّهَا رُقْيَةٌ، خُذُوهَا وَاضْرِبُوا لِي بِسَهْمٍ»

“তোমরা কিভাবে জানলে যে, এটি (সূরা আল-ফাতিহা) রোগ নিরাময়কারী (ঝাড়-ফুকারী)? ঠিক আছে বকরীগুলো নিয়ে যাও এবং তাতে আমার জন্যও এক অংশ রেখে দিও।” বুখারী।[55]

3-    অনুরূপ খারিজা ইবন সালত্ আত-তামীমী[56] রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«كُلْ فَلَعَمْرِي مَنْ أَكَلَ بِرُقْيَةِ بَاطِلٍ لَقَدْ أَكَلْتَ بِرُقْيَةِ حَقٍّ»

 তুমি এগুলো খেতে পারো আমার জীবনের কসম! লোকজন তো বাতিল মন্ত্র দিয়ে রোজগার করে তুমি তো সত্য ঝাড়ফুঁক দ্বারা রোজগার করেছেআহমদ, আবূ দাউদ[57]

উপরোক্ত হাদীসসমূহের জবাব:

() হাদীসে প্রতিদান দ্বারা সাওয়াব বুঝানো হয়েছে

তাদের সমালোচনার জবাবে বলা যায় যে, হাদীসে বর্ণিত ঘটনার দ্বারা এরূপ বুঝায় না কেননা তারা ঝাড়ফুঁক করে বিনিময় গ্রহণ করেছে আর হাদীসের শব্দ এখানেআম তথা ব্যাপক অর্থে

() পারিশ্রমিক গ্রহণ করার ব্যাপারে শাস্তির হুমকি প্রদান করে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর দ্বারা উপরোক্ত হাদীসসমূহ মানসূখ হয়ে গেছে

তাদের সমালোচনার প্রত্যুত্তরে বলা যায়, নসখের দাবী করলে তার স্বপক্ষে দলিল-প্রমাণ থাকতে হবে আর নসের মূল বিধান হলো নসখ না হওয়া; বিশেষ করে যদি সবগুলো একত্রিত করা সম্ভব হয়[58]

() সাহাবীগণ যাদের থেকে বিনিময় গ্রহণ করেছেন তারা কাফির ছিলেন ফলে তাদের সম্পদ গ্রহণ করা জায়েয ছিলো যেমনিভাবে ফায়ী গ্রহণ করা জায়েয

তাদের দলিল খণ্ডনে বলা যায়, তাদের থেকে যে সম্পদ গ্রহণ করা হয়েছে তা ঝাড়ফুঁকের বিনিময়ে, জোরপূর্বক নেওয়া হয় নি

() সাহাবীগণ যে এলাকায় গিয়েছিলেন তাদেরকে মেহমানদারী করা ওয়াজিব ছিলো; কিন্তু তারা তা করে নি ফলে তাদের থেকে বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয ছিলো

তাদের যুক্তির পর্যালোচনায় বলা যায়, অমুসলিমগণ শরীআতের শাখা মাসআলার ব্যাপারে মুখাতিব (মুকাল্লিফ) নয়; যদিও তাদেরকে মুখাতিব করা হয় তবে তা শর্ত ব্যতিত শুদ্ধ নয়, আর তা হলো নিয়াত আর তাদের মুখাতিব হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো ইসলাম গ্রহণ করা

() সাহাবীগণ তাদের প্রয়োজন থাকায় বিনিময় গ্রহণ করেছেন; যেহেতু তারা সফরে ছিলেন তাই তাদের জন্য বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ ছিলো

দলিলের জবাবে বলা যায়, ব্যাপারটি যদি এমনই হতো তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলতেন না যে, আমার জন্যও তা থেকে একটি ভাগ রাখিও।

(চ) ঝাড়ফুক করা একধরণের চিকিৎসা। আর এটি বৈধ কাজ। এটি কুরআন শিক্ষার মতো নয়। কেননা কুরআন শিক্ষা দেওয়া ইবাদত। সুতরাং ঝাড়ফুঁকের সাথে কুরআন শিক্ষার বিনিময় গ্রহণের কিয়াস করা সঠিক নয়।

তাদের এ যুক্তির উত্তরে বলা যায়, উসূলের কায়েদা হলো: শব্দের ‘আম তথা ব্যাপকতর অর্থ ধর্তব্য; নির্দিষ্ট কারণ উদ্দিষ্ট নয়।    

() এটি মূলত জাআলাহ ছিলো অর্থাৎ কাউকে কোন কাজের বিনিময়ে কিছু প্রদান করা (চাই তা পারিশ্রমিক হোক বা হাদীয়া ইত্যাদি) আর জাআলাহ ইজারা তথা ভাড়ার থেকে ব্যাপক অধ্যয়

যুক্তির জবাবে বলা যায়, হাদীসে ইজারা তথা ভাড়া শব্দ স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে সুতরাং উসূলের নিয়মানুসারে শব্দের ব্যাপকতাই উদ্দিষ্টি[59]

4-    সাহাল ইবন সা রায়িাল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস,

جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: إِنِّي وَهَبْتُ مِنْ نَفْسِي، فَقَامَتْ طَوِيلًا، فَقَالَ رَجُلٌ: زَوِّجْنِيهَا إِنْ لَمْ تَكُنْ لَكَ بِهَا حَاجَةٌ، قَالَ: «هَلْ عِنْدَكَ مِنْ شَيْءٍ تُصْدِقُهَا؟» قَالَ: مَا عِنْدِي إِلَّا إِزَارِي، فَقَالَ: «إِنْ أَعْطَيْتَهَا إِيَّاهُ جَلَسْتَ لاَ إِزَارَ لَكَ، فَالْتَمِسْ شَيْئًا» فَقَالَ: مَا أَجِدُ شَيْئًا، فَقَالَ: «التَمِسْ وَلَوْ خَاتَمًا مِنْ حَدِيدٍ» فَلَمْ يَجِدْ، فَقَالَ: «أَمَعَكَ مِنَ القُرْآنِ شَيْءٌ؟» قَالَ: نَعَمْ، سُورَةُ كَذَا، وَسُورَةُ كَذَا، لِسُوَرٍ سَمَّاهَا، فَقَالَ: «قَدْ زَوَّجْنَاكَهَا بِمَا مَعَكَ مِنَ القُرْآنِ»

কোন এক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, আমি আমার জীবনকে আপনার কাছে পেশ করলাম। এরপর সে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল তখন একজন লোক দাঁড়িয়ে বলল, আপনার প্রয়োজন না থাকলে আমার সঙ্গে এর বিয়ে দিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কাছে মোহরানা দেয়ার মতো কি কিছু আছে?” লোকটি বলল, আমার এ লুঙ্গি কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যদি তুমি লুঙ্গিখানা তাকে দিয়ে দাও, তাহলে তোমার কিছু থাকবে না। সুতরাং তুমি অন্য কিছু তালাশ কর।” লোকটি বলল, আমি কোন কিছুই পেলাম না। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তালাশ কর, যদি একটি লোহার আংটিও পাও।” সে কিছুই পেল না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কুরআনের কিছু অংশ তোমার জানা (মুখস্ত) আছে? লোকটি বলল, হ্যাঁ! অমুক অমুক সূরা আমার জানা আছে এবং সে সূরাগুলোর নাম একে একে উল্লেখ করল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “কুরআনের যে যে অংশ তোমার জানা আছে, তার বিনিময়ে আমি তাকে তোমার নিকট বিয়ে দিলাম।” বুখারী ও মুসলিম।[60]

হাদীসটি দ্বারা দলিল পেশের যৌক্তিকতা: এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, কুরআন শিক্ষার বিনিময় মূল্য দ্বারা কোন কিছুর বিনিময় প্রদান করা জায়েয।[61]

এ দলিলের যুক্তি খণ্ডনে বলা যায়:

() হাদীসে বর্ণিত, কুরআনের যে যে অংশ তোমার জানা আছে, তার বিনিময়ে আমি তাকে তোমার নিকট বিয়ে দিলাম।” এর অর্থ হবে, তুমি যেহেতু আহলে কুরআন, সে কারণে তোমার কাছে (এ নারীকে) বিয়ে দিলাম। যেমনটি ঘটেছিলো উম্মে সুলাইমকে আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার সাথে বিয়ে দেওয়ার সময়, যেহেতু উম্মে সুলাইম তাকে ইসলাম গ্রহণের কারণে বিয়ে করেছেন। সেখানে মোহরানার কথা উহ্য ছিলো। কেননা মোহরানার বিষয়টি সকলের কাছেই জানা ছিলো যে এটি প্রদেয়। আর সম্পদ তথা মোহরানা ব্যতিত স্ত্রীর যৌনাঙ্গ হালাল নয়, এ কথা সকলেরই জানা।

তাদের এ যুক্তির জবাবে বলা যায় যে, তাদের এ ধরণের অর্থ করা অন্য বর্ণনা দ্বারা প্রত্যাখানকৃত। যেহেতু অন্য বর্ণনায় রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “ তুমি যাও, আমি তোমার সাথে একে বিবাহ দিলাম । তুমি তাকে কুরআন শিক্ষা দাও।” তাছাড়া হাদীসে বর্ণিত “আল-বা” অব্যয়টি বিনিময়ে অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আবূ দাউদের বর্ণনায় রয়েছে, তুমি যাও, তাকে বিশটি আয়াত শিখিয়ে দাও[62] 

(খ) মহিলাটি তার মোহরানা দান করে দিয়েছিলো। কেননা লোকটি আহলে কুরআন ছিলো।

এ দলিল খণ্ডনে বলা যায়, হাদীসের বর্ণনা ভঙ্গিতে প্রমাণ করে যে, লোকটি মোহরানা তালাশ করেছিলো; কিন্তু সে কুরআন শিক্ষা দেওয়া ব্যতীত অন্য কোন মোহরানা পায়নি।[63]

দ্বিতীয়ত: আসার থেকে দলিল পেশ:

1-    সাহাবী, তাবে তাবে-তাবেঈদের থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা কুরআন তিলাওয়াতের বিনিময়ে পারিশ্রমিক প্রদান করেছেন এবং ব্যাপারে ফাতওয়া দিয়েছেন[64]

দলিলের পর্যালোচনায় বলা যায়, এসব আসার নিষেধ হওয়া দলিলের সাথে বিরোধপূর্ণ সুতরাং দুধরণের দলিলের মধ্যে তারজীহ তথা অগ্রাধিকার প্রদান করা দরকার

2-    শিক্ষকদের পারিশ্রমিক প্রদান করা জায়েয হওয়ার ব্যাপারে মদীনাবাসীর ইজামারয়েছে[65]

দলিলের প্রত্যুত্তরে বলা হবে, মদীনাবাসীর ইজমামূলত দলিল নয়; কেননা ইজমা‘-এর শর্ত হলো সকলের ঐক্যমত হওয়া

তবে তাদের সমালোচনার জবাবে বলা যায়, এটি মদীনাবাসীর ব্যবহারিক (ইজমাআমালী) ইজমাযা কোন কাজ ব্যাপকভাবে করার দ্বারা উক্ত কাজটি জায়েয হওয়ার উপর সাহাবীদের থেকে মুতাওয়াতির হওয়ার সাদৃশ

তৃতীয়ত: ‘আকলী যুক্তি:

1-    কুরআন শর ইলম শিক্ষা দেওয়া কোন শিক্ষকের উপর ফরয নয় এবং তার কাজ শুরু করাও অত্যাবশ্যকীয় নয় সুতরাং শিক্ষার জন্য বসা কাজে নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রাখার বিনিময়ে তার জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয[66]

2-    কাজের বিনিময়ে তার নিজের জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনীয় রিযিক গ্রহণ করা জায়েয সুতরাং কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করাও জায়েয আর দুয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই

3-    মসজিদ নির্মাণ জাতীয় কাজ করে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয এমনিভাবে দীনি ইলম শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করাও জায়েয[67]

4-    এটি এক ধরণের উপকার যা পারিশ্রমিক প্রদানকারীর কাছে পৌঁছে সুতরাং অন্যান্য উপকারের মতো কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করাও জায়েয[68]

5-    যারা কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ মনে করেন না, তারা কিন্তু জাআলাহ অর্থাৎ কাউকে কোন কাজের বিনিময়ে কিছু প্রদান করা (চাই তা পারিশ্রমিক হোক বা হাদীয়া ইত্যাদি) হিসেবে জায়েয মনে করেন সুতরাং তাদের উচিত জাআলাহর উপর কিয়াস করে কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণকেও জায়েয বলা[69]

 

তৃতীয় অভিমত প্রদানকারীদের দলিল:

তাদের মতে কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয; তবে অন্যান্য দীনি ইলম শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয নেই তাদের দলিল হলো:

1-    উপরে বর্ণিত আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহুআনহুর হাদীস সেখানে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ أَحَقَّ مَا أَخَذْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا كِتَابُ اللَّهِ»

“যে সকল জিনিসের উপর তোমরা বিনিময় গ্রহণ করে থাক, তন্মধ্যে সব চেয়ে বড় হল আল্লাহর কিতাব।” বুখারী[70]

এ দলিলের প্রত্যুত্তরে বলা যায়, ঝাড়ফুঁকের উপর কিয়াস করে সমস্ত শরঈ ইলমের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয সাব্যস্ত হওয়ার দলিল।

2-    কুরআন শিক্ষা হলো নিয়মতান্ত্রিক অন্যান্য ইলম্ ধরণের নিয়মতান্ত্রিক নয় কেননা মাসায়িল ইলম অসংখ্য তবে সেগুলো যদি নিয়মতান্ত্রিক শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় এবং তা শিক্ষার জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা হয় তবে তা জায়েয[71]

 

চতুর্থ অভিমত ব্যক্তকারীদের দলিল:

(কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয; ফিকহ, হাদীস ধরণের শর অন্যান্য ইলম্ শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেওয়া মাকরূহ)

1-    শর ইলম শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেওয়া মদীনাবাসীদের আমল ছিলো না[72]

তাদের দলিলের প্রত্যুত্তরে বলা যায়,

মদীনাবাসী পারিশ্রমিক গ্রহণ না করলে সে কাজটি করা হারাম হওয়া অত্যাবশ্যকীয় নয় তাছাড়া তাদের দলিল বাস্তবতা বিরোধী; বরং মদীনাবাসীদের মধ্যে পারিশ্রমিক গ্রহণ করার প্রচলন রয়েছে[73]

2-    দীনি ইলমের ব্যাপারে পারিশ্রমিক গ্রহণ করলে দীনি ইলমের শিক্ষার্থী কমে যাওয়া শরীআত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে; কিন্তু কুরআনের ব্যাপারে এরূপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না[74]

তাদের আশংকার প্রত্যুত্তরে বলা যায়, ধরণের ক্ষতিগ্রস্ততার চেয়ে বড় ক্ষতির আশংকা রয়েছে দীনি ইলম শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক না নিলে কেননা তখন শিক্ষক কমে যাবে এবং কাজে সার্বক্ষণিক নিবেদিত লোক পাওয়া যাবে না যেহেতু প্রত্যেক মানুষেরই জীবিকা নির্বাহের জন্য কোন না কোন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় ফলে সমাজে অজ্ঞতা ছড়িয়ে পড়বে এবং দীনি ইলম বিলুপ্ত হয়ে যাবে

3-    কুরআন পুরোটাই সত্য, এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই সুতরাং কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ, যা অন্যান্য ইলমের ব্যাপারে বৈধ নয়; যেহেতু তাতে সত্য মিথ্যা উভয় ধরণের ব্যাপার মিশ্রিত[75]

তাদের যুক্তি খণ্ডনে বলা যায়: তাদের যুক্তি অনুসারে দীনি ইলমের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয না হলে অন্যান্য মুবাহ তথা বৈধ ইলম যেমন গণিত, বীজ গণিত ইত্যাদির ব্যাপারেও পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয নেই যেহেতু এসব ইলমে সত্য মিথ্যা মিশ্রিত রয়েছে

পঞ্চম অভিমত ব্যক্তকারীদের দলিল:

তারা প্রয়োজন থাকলে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয; তবে প্রয়োজন না থাকলে পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয নেই বলেছেন

1-    তারা জায়েয না জায়েয মত ব্যক্তকারীদের দলিল পেশ করে উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করেছেন সুতরাং প্রয়োজন থাকলে জায়েয বলেছেন আর প্রয়োজন না থাকলে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা না জায়েয বলেছেন

2-    তারা উসূলে ফিকহের কায়েদা থেকে দলিল পেশ করেছেন যে, জনসাধারণের প্রয়োজন জরুরী পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত[76] আর দীনি শিক্ষার প্রয়োজনীতা ছোট-বড় সকলের অত্যাবশ্যকীয় সাধারণ জরুরী বিষয় আর ধরণের প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে অধিক সংখ্যক শিক্ষক শিক্ষাদান কার্যক্রমে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত না থাকলে সকল মানুষের উপকার সাধিত হবে না তাছাড়া শিক্ষকদের দিক বিবেচনা করলেও তাদের পারিশ্রমিক নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কেননা তারা জীবিকা নির্বাহের কাজ ত্যাগ করে সার্বক্ষণিক শিক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকলে তাদের নিজেদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহে বিরাট সমস্যা দেখা দিবে এবং তারা অভাব-অনটনে পতিত হবে

3-    বাইতুল মাল (রাষ্ট্রীয় কোষাগার) থেকে শিক্ষকদের জন্য জীবিকা নির্বাহের সামান্য খরচ যথেষ্ট নয়, ফলে তাদের পারিশ্রমিক নেওয়া প্রয়োজন হয় কিন্তু বাইতুল মাল থেকে জীবিকা নির্বাহের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খরচ বহন করলে তাদের জন্য আলাদা পারিশ্রমিক গ্রহণ করার দরকার পড়ে না পরবর্তী যুগের হানাফী আলেমগণ যখন মানুষের মধ্যে দীনি ব্যাপারে অবহেলা মন্দাভাব অনুধাবন এবং শিক্ষকদের জীবিকা নির্বাহের ব্যয়ভার বহনে শৈথিল্য দেখল তখন তারা মাযহাবের পূর্ববর্তী আলেমদের ফাতওয়া থেকে সরে এসে ইসতিহসান হিসেবে পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয ফাতওয়া দিয়েছেন যেহেতু বিষয়টিতে সর্বসাধারণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং তারা এটিকেউমূমে বালওয়া তথা সকলের প্রয়োজনীয়তার বিবেচনায় জায়েযের অন্তর্ভুক্ত করেছেন[77]

4-    ইয়াতীমের অভিভাবকের ওপর কিয়াস করে এটিকে জায়েয বলা যায় যেহেতু অভাব থাকলে ইয়াতীমের দেখভালকারীর জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে তার সম্পদ থেকে গ্রহণ করা জায়েয কিন্তু অভাবী না হলে তার সম্পদ খাবে না যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

﴿وَمَن كَانَ غَنِيّٗا فَلۡيَسۡتَعۡفِفۡۖ وَمَن كَانَ فَقِيرٗا فَلۡيَأۡكُلۡ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ ٦ ﴾ [النساء : ٦] 

“আর যে ধনী সে যেন সংযত থাকে, আর যে দরিদ্র সে যেন ন্যায়সঙ্গতভাবে খায়।”[78]

ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, দরিদ্র হলে ইয়াতীমের অভিভাবককে যেমন তার সম্পদ থেকে নেওয়ার অনুমতি মহান আল্লাহ দিয়েছেন, ধনী হলে সংযত থাকতে বলেছেন, তেমনিভাবে দীনি ইলমের শিক্ষকদের অভাব থাকলে পারিশ্রমিক গ্রহণ করবে, আর অভাব না থাকলে গ্রহণ করবে না।[79]

5-    পারিশ্রমিক গ্রহণ করা ইখলাসের পরিপন্থী নয় সে কাজটি একমাত্র মহান আল্লাহ উদ্দেশ্যে করছে বলে নিয়াত করবে আর স্বীয় প্রয়োজন মেটাতে বিনিময় গ্রহণ করবে

ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, “অভাবী ব্যক্তি যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এ ধরণের কাজ করবে এবং তার প্রয়োজন মেটাতে পারিশ্রমিক গ্রহণ করবে ও সে পারিশ্রমিক দ্বারা আল্লাহর আনুগত্যের কাজে সাহায্য করবে তবে সে তার নিয়াত অনুসারে আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাবে।”[80]

“তাছাড়া পরিবার পরিজনের জীবিকা নির্বাহে ব্যয় করা ফরয সুতরাং যে ব্যক্তি শিক্ষা কাজে নিয়োজিত থাকায় জীবিকা নির্বাহের ব্যয় কামাই করতে অক্ষম হয় তখন তার জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয, যেহেতু তার পরিবারের ব্যয়ভার করা তার জন্য ফরয; যদিও এখানে পারিশ্রমিক গ্রহণ করাকে ফরয বলা হয় নি।”[81]

ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, “অভাবী ব্যক্তি যদি কুরআন ও দীনি শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করে, তার পক্ষে এ কাজটি আল্লাহর জন্য করার নিয়াত করা সম্ভব এবং এ কাজের বিনিময় গ্রহণ করে তা দ্বারা ইবাদতের কাজে সহযোগিতা নিতে পারে কেননা পরিবারের জন্য ব্যয়ভার বহন করা তার ওপর ফরয সুতরাং এর দ্বারা সে তার ফরয আদায় করতে পারবে কিন্তু ধনীর ব্যাপার আলাদা কেননা তার জীবিকা নির্বাহে ব্যয়ভারের প্রয়োজনীয় তা নেই সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য উদ্দেশ্যে তার এ কাজ করার দরকার পড়ে না বরং আল্লাহ যেহেতু তাকে ধনবান করেছেন, সুতরাং সে এ দায়িত্ব আদায়ে দায়িত্বশীল (মুখাতিব) হওয়ায় তার উপর এ কাজ করা ফরযে কিফায়া সে ব্যতীত এ কাজ করার কেউ না থাকলে তার উপর এ কাজ করা ফরযে আইন হয়ে যায়।”[82]

6-    ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, ইসলামী শরীআতের সব উসূল এ মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত যে, নিষিদ্ধ বিষয়সমূহের ব্যাপারে অভাবী ও সামর্থবানদের মধ্যে পার্থক্য বিধান করেছে, যেমনিভাবে আদিষ্ট বিষয়ের ব্যাপারে পার্থক্য করে থাকে এ কারণে প্রয়োজনে হারাম জিনিসকে হালাল করা হয়েছে বিশেষ করে এর দ্বারা যখন তাকে মানুষের কাছে প্রার্থনা করা থেকে মুখাপেক্ষীহীন করে কেননা মানুষের কাছে চাওয়া অত্যন্ত ঘৃণিত হারাম কাজ এ কারণে আলেমগণ বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় জিনিস তাকে দেওয়া ওয়াজিব কিন্তু সে যদি হালাল জিনিস থেকে তা না পায় তবে সন্দেহজনক কামাই থেকে তা পূর্ণ করা বৈধ

তিনি আরো বলেছেন, এ কারণে আলেমগণ ঐক্যমত হয়েছেন যে, বিচারক ও তাদের ন্যায় অন্যান্যদেরকে প্রয়োজনে জীবিকা নির্বাহের ব্যয়ভার দেওয়া জায়েয তবে তারা ধনী বিচারকদের ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন এ মাসআলার মূলনীতি হলো আলকুরআনে ইয়াতীমদের ব্যাপারে মহান আল্লাহর বাণী, 

﴿وَمَن كَانَ غَنِيّٗا فَلۡيَسۡتَعۡفِفۡۖ وَمَن كَانَ فَقِيرٗا فَلۡيَأۡكُلۡ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ ٦ ﴾ [النساء : ٦] 

“আর যে ধনী সে যেন সংযত থাকে, আর যে দরিদ্র সে যেন ন্যায়সঙ্গতভাবে খায়।”[83] এরূপ সব মাস’আলার ক্ষেত্রে বলা হবে। যেহেতু শরী‘আতের মূলনীতি হলো কল্যাণ সাধন করা ও তা পরিপূর্ণ করা এবং অকল্যাণ দূরীভুত করা ও তা যথাসাধ্য কমিয়ে আনা। আর আল্লাহভীতি হলো দু’টি উত্তম কাজের তুলনামূলক নিম্ন কাজটি ছেড়ে সর্বাধিক উত্তমটি অগ্রাধিকার দেওয়া আর দুটি মন্দ কাজের সবচেয়ে মন্দ কাজটি প্রতিহত করা, যদিও তুলনামূলক কম মন্দটি অর্জিত হয়ে যায়[84]

অগ্রাধিকার:

উপরোক্ত আলোচনার আলোকে পঞ্চম অভিমত ব্যক্তকারীদের মতটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত- আল্লাহই অধিক জ্ঞাত- এর কারণ হলো:

1-    অভিমত ব্যক্তকারীদের শক্তিশালী দলিল দলিলের যৌক্তিকতা

2-    মতটিতে সকল অভিমত ব্যক্তকারীদের দলিল একত্রিত করা হয়েছে এবং কোন মতকে বাদ দেওয়া হয় নি

3-    কুরআন দীনি শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ নিষিদ্ধ অভিমতের চেয়ে শর্তসাপেক্ষে জায়েয অভিমতে শরীআতের সর্বাধিক কল্যাণ সাধিত হয়

4-    মতটি কুরআনে ইয়াতীমদের অভিভাবকদের ব্যাপারে বর্ণিত মূলনীতির সাথে ঐক্যমত, যে মূলনীতি প্রমাণ করে যে, শরীআতে ধরণের উপমা আরো রয়েছে

5-    বর্তমান যুগে মানুষের দীনদারীতা ঈমানী শক্তি কমে যাওয়ায় মতানুসারে ফাতওয়া প্রদান না করে কোন উপায় নেই যদি পারিশ্রমিক গ্রহণ হারাম করা হয় তবে অজ্ঞতা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে এবং দীনদারীতা বিলুপ্ত হবে আবার শর্তহীনভাবে জায়েয বলাও বিতর্কিত; যেহেতু না জায়েযের পক্ষে শক্তিশালী দলিল রয়েছে সুতরাং দুটি মতকে একত্রিত করে সমতা বিধান করা হয়েছে

6-    এটি এমন একটি বিষয় যা উমূমে বালওয়া হিসেবে দাঁড়িয়েছে এবং এটি সকলেরই অত্যন্ত প্রয়োজন [85]

মতানৈক্যের কারণ:

আলেমদের মধ্যে মাসআলার ব্যাপারে মতানৈক্যের কারণ হলো, যেসব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা শর্ত সেসব কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয নাকি জায়েয নেই? যেমন ইমামতি করা, আযান দেওয়া ইত্যাদি[86]

মতানৈক্যের ফলাফল:

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, নিষেধকারীদের মতে পারিশ্রমিক বা পারিশ্রমিকের অনুরূপ অন্য কিছু গ্রহণ করা যাবে না আর জায়েযকারীদের মতে পারিশ্রমিক নেওয়া যাবে[87]



[1] মুখতাসারুল ফাতাওয়া আলমিসরিয়্যাহ, পৃ. 481; মাজমুউল ফাতাওয়া, (30/204)

[2] শারহুল মুনতাহা, (2/366)

[3] মাজমুউল ফাতাওয়া, (23/367), (24/316), (30/204-208, 192-193, 202); আলফাতাওয়া আলকুবরা, (3/33); আলফুরু‘, (4/435); আলমুবদি‘, (5/90); আলইখতিয়ারাত, পৃ. 152; আলমুসতাদরাক, (4/51)

[4] আলমুগনী, (8/138); আলফাতাওয়া আলকুবরা, (30/206); আততাজ ওয়াল ইকলীল, (2/117); মাওয়াহিবুল জালীল, (1/456); আলমাউসূআহ আলফিকহিয়্যাহ, (33/101); হাশিয়াতু ইবন কাসিম, (5/321); আহকামুত তাসাররুফ ফিল মানাফি, পৃ. 135; আহকামুত তাসাররুফ ফিল কাসবিল হারাম, পৃ. 438

[5] আলমাবসূত, (16/37); বাদায়িউস সানাই‘,  (4/191-194); তাবয়ীনুল হাকায়িক, (5/124); আলজাওহারাতুন নাইয়্যেরাহ, (1/269); আলবাহরুর রায়িক, (8/22); মাজমাউল আনহার, (2/384); শারহুলইনাআহ, (9/97-98); দুরারুল হুককাম, (2/233); হাশিয়াতু ইবনআবিদীন, (6/58)

[6] আলমুহাররার, (1/357); রুঊসুল মাসায়িলিল খিলাফিয়্যাহ লিলআবারী, (3/1003); আলমাযহাব আলআহমদ, ইবনুল জাওযী, পৃ. 108; আলমুগনী, (8/138); আশশাহুল কাবীর, (3/332); আলফুরু‘, (4/435); আলআদাবুশ শারঈয়্যাহ, (1/74); আলমুবদি‘, (5/90); তাসহীহুল ফুরু‘, (4/435); আলইনসাফ, (6/46); কাশশাফুল কিনা‘, (4/12); শরহুল মুনতাহা, (2/360); আররাওদুল মুরবি‘, (5/321); মাতালিবু উলিন নুহা, (3/637); মাসায়িলুল ইমাম আহমদ আলফিকহিয়্যাহ আলমানকূলাতুনআনহু ফি তাবাকাতিল হানাবিলাহ লিআবী আলাহ ফি গাইরিল ইবাদাত, পৃ. 215

[7] শরহুলইনাআহ, (9/97-98); শরহু ফাতহিল কাদীর, (9/97); হাশিয়াতু ইবন আবিদীন, (6/58); আলবিনায়াহ, (9/342)

[8] আত-তাজ ওয়াল ইকলীল, (7/537-539); হাশিয়াতুদ দুসূকী, (4/18)

[9] আল-উম্ম, (2/140)

[10] আলমুহাররার, (1/357); আলমুগনী, (8/138); আশশারহুল কাবীর, (3/332); আলআদাবুশ শারঈয়্যাহ, (1/44); আলফুরু‘, (4/435); আলইনসাফ, (6/46); তাসহীহুল ফুরু‘, (4/435); আলমুবদি‘, (5/90); মাতালিবু ঊলিন নুহা, (3/637)

[11] আলমুহাললা, (7/4)

[12] রাওদাতুত তালিবীন, (5/188); আসনাল মাতালিব, (2/41); নিহায়াতুল মুহতাজ, (5/293); শারহুল গুরারুল বাহিয়্যাহ, (3/318-321); হাশিয়াতু কালয়ূবী ওয়াউমাইরাহ, (3/76); তুহফাতুল মুহতাজ, (6/157); হাশিয়াতুল জামাল, (3/540); আততাজরীদু লিনাফইলউবাইদ, (3/171)

[13] আলমুদাওয়ানাহ, (1/160); আলকাফী, (2/755); আলযাখীরাহ, (5/405); আততাজ ওয়াল ইকলীল, (7/534); মাওয়াহিতুল জালীল, (5/418); হাশিয়াতুল খারাশী, (7/17); আলফাওয়াকিহুদ দাওয়ানী, (2/115); হাশিয়াতুলআদবীআলা শারহি কিফায়াতুত তালিবর রাব্বানী, (2/197); হাশিয়াতুদ দুসূকী, (4/16); মিনহুল জালীল, (7/476)

[14] মাজমুউল ফাতাওয়া: (23/367), (24/316); আলফুরু‘, (4/435); আলইনসাফ, (6/46); আলমুবদি‘, (5/90); আলইখতিয়ারাত, পৃ. 152

[15] সূরা আলবাকারা, আয়াত: 41।

[16] আলজামে লিআহকামিল কুরআন, (1/334)

[17] আলজামে লিআহকামিল কুরআন, (1/336); জামেউল আহকমিল ফিকহিয়্যাহ, (2/96)

[18] সূরা আলবাকারা, আয়াত: 159।

[19] আলজামে লিআহকামিল কুরআন, (2/185); আলআদাবুশ শারঈয়্যাহ, (2/151)

[20] সূরা হূদ, আয়াত: 29।

[21] অনুরূপ সূরা হুদের আয়াত নং 51; সূরা আলআনআমের আয়াত নং 90; সূরা আলফুরকানের আয়াত নং 57; সূরা সোয়াদের আয়াত নং 86; সূরা আততূরের আয়াত নং 40; সূরা আশশুআরার আয়াত নং 109, 127, 145, 164, 180; সূরা ইয়াসিনের আয়াত নং 20 21 তাছাড়া দেখুন আলআহকামুল ফিকহিয়্যাহ আলখাসসাহ বিলকুরআনিল কারীম, (2/20)

[22] আদওয়াউল বায়ান, (3/20)

[23] সুনান বায়হাকী আলকুবরা, হাদীস নং 11685, (6/126), কিতাবুল ইজারা, বাব, যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষার বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিতে অপছন্দ করেন, আলবানী রহ. সিলসিলাতুস সাহীহাতে (1/113) হাদীস নং 256 হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন

[24] নাসবুর রায়াহ, (4/138); আলসিলসিলাতুস সাহীহাহ, (1/113)

[25] নাইলুল আওতার, (5/322)

[26] আলমুসনাদ, (5/315); সুনান আবূ দাউদ, (3/264), কিতাবুল ইজারাহ, বাবু ফি কাসবিল মুআল্লিম, হাদীস নং 3416; সুনান ইবন মাজাহ, (2/729), কিতাবুত তিজারাত (12), বাব নং (8) হাদীস নং 2157, হাকিম আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন দেখুন সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাহ, (1/115)

[27] তিনি মুগীরাহ ইবন যিয়াদ আলবাজালী, আবূ হিশাম অথবা হাশিম, তিনি 6ষ্ঠ তবাকার বর্ণনাকারী, 152 হি. মারা যান দেখুন, আততাকরীব, (543); তাহযীবুত তাহযীব, (10/258)

[28] নাসবুর রায়াহ, (4/137); তাহযীবুত তাহযীব, (10/258) এবং অন্যান্য

[29] আলআসওয়াদ ইবন সাআলাবাহ আলকিনদী আশশামী, তিনি তৃতীয় তাবাকার রাবী ছিলেন তিনি মাজহুলুল হাল তথা তার পরিচয় অজ্ঞাত দেখুন, আততাকরীব, (পৃ.111)

[30] নাসবুর রায়াহ, (4/137)

[31] নাইলুল আওতার, (5/322)

[32] সুনান ইবন মাজাহ, (2/730), কিতাবুত তিজারাত (12), বাব নং 8, হাদীস নং 2158, মিসবাহুয যুজাজাহর গ্রন্থকার বলেন, হাদীসটি মুদতারিব, সনদটি মুরসাল এতদসত্ত্বেও আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ সুনান ইবন মাজাহতে উল্লেখ করেছেন, (2/8), হাদীস নং 1751 

[33] সুনান ইবন মাজাহ, (2/730); মিসবাহুয যুজাজাহ, (3/12); নাইলুল আওতার, (5/322); মীযানুল তিদাল, আব্দুর রহমান ইবন আসলাম রহ. এর জীবনী, (3/278); আদওয়াউল বায়ান, (3/21)

[34] সুনান আবূ দাউদ, (1/220), কিতাবুস সালাহ, বাবু মা ইয়াজরীল উম্মী ওয়াল জামী মিনাল কিরাআহ, হাদীস নং 831, আলবানী রহ. সহীহ সুনান আবূ দাউদে সহীহ বলেছেন, (1/157), হাদীস নং 741

[35] আহমদ, (3/357); আবূ দাউদ, (1/220), কিতাবুস সালাহ, বাবু মা ইয়াজরীল উম্মী ওয়াল আজামী মিনাল কিরা‘আহ, হাদীস নং 831, আলবানী রহ. সহীহ সুনান আবূ দাউদে সহীহ বলেছেন, (1/156), হাদীস নং 740

[36] হাশিয়াতুর রুহুনী, (7/14); আলইসতিজার আলা ফিলীল কুরবাতিশ শারঈয়্যাহ, পৃ. 128

[37] আলমুসনাদ, (4/437-445); সুনান তিরমিযী, (5/179), কিতাব নং 46, বাব নং 20, হাদীস নং 2917, আলবানী রহ. সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাতে (1/117), হাদীস নং 257, সহীহ বলেছেন

[38] তিনি আব্দুর রহমান ইবন শিবল আলআনসারী আলআওসী, একজন বিশিষ্ট সাহাবী, হামসে অবস্থান করেছেন মুআবিয়াহ রাদিয়াল্লাহুআনহুর জামানায় মারা যান দেখুন, আততাকরীব, পৃ. 342, তাহযীবুত তাহযীব, (6/193); আসইতসিআব, (2/395); আলইসাবাহ, (4/315)

[39] মুসনাদ আহমদ, (3/428, 444); শারহু মাআনিল আসার, (3/18), কিতাবন নিকাহ, বাবু আততাজওয়ীজুআলা সূরাতিন মিনাল কুরআন, ইমাম যাইলা রহ. বলেছেন, সনদের রাবীগণ সিকাহ; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, (4/98); আলবানী রহ. সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাতে (1/121), হাদীস নং 260, সহীহ বলেছেন; নাসবুর রায়াহ, (4/136)

[40] প্রাগুক্ত।

[41] নাইলুল আওতার, (5/322)

[42] সহীহ বুখারী, (6/496), কিতাবুল আম্বিয়া, অধ্যয় নং 60, বাব নং 50, হাদীস নং 3461

[43] সুনান আবূ দাউদ, (3/323), কিতাবুল ইলম, বাবু ফি তালাবিল ইলম লিগাইরিল্লাহ তাআলা, হাদীস নং 3664, আলবানী রহ. সহীহ সুনান আবূ দাউদে (2/697), হাদীস নং 3112 হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন

[44] নাইলুল আওতার, (5/322)

[45] মাজমুউল ফাতাওয়া, (30/206-207)

[46] আলমুসান্নাফ, (6/223), কিতাবুল বুয়ূওয়াল আকদিয়্যা, বাবু মান কারিহা আজরাল মুআল্লিম, হাদীস নং 884; আলমুহাল্লা, (7/20), মাসআলা নং 1307

[47] আলমুহাল্লা, (7/20), মাসআলা নং 1307

[48] বাদাইউস সানা, (4/191)

[49] আলজামি লিআহকামিল কুরআন, (1/335)

[50] সূরা আলকালাম, আয়াত: 46।

[51] বাদাইউস সানা, (4/191)

[52] আলমাবসূত, (16/37); বাদাইউস সানা, (4/192)

[53] আলমাবসূত, (16/37)

[54] সহীহ আলবুখারী, (10/198), কিতাবুত তিব, অধ্যয় নং 76, বাব নং 33-34, হাদীস নং 5736 5737

[55] প্রাগুক্ত

[56] খারিজাহ ইবন আসসালত আলবারজামী আলকূফী, তৃতীয় তাবাকার মাকবূল, তিনি ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণনা করেছেন তার থেকে আশশাবী রহ. বর্ণনা করেছেন দেখুন, আততাকরীব, (পৃ. 186); আলখুলাসাহ, (1/273), তাহযীবুত তাহযীব, (3/75)

[57] আলমুসনাদ, (5/211); সুনান আবূ দাউদ, (4/14), কিতাবুত তিব, বাবু কাইফার রুকা? হাদীস নং 3901, আলবানী রহ. সহীহ সুনান আবূ দাউদে (2/738), হাদীস নং 3301 হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন তাছাড়াও ইমাম হাকিম ইবন হিব্বান রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন দেখুন, নাইলুল আওতার, (5/322)

[58]উমদাতুল কারী, (12/96)

[59] নাইলুল আওতার, (5/322); আলবিনায়াহ, (9/340); আলমাবসূত, (4/159); ইসারুল ইনসাফ, (পৃ. 338); লাউস সুনান, (16/172)

[60] সহীহ আলবুখারী, (9/175), কিতাবুন নিকাহ, অধ্যয় নং 67, বাব নং 32, হাদীস নং 5121; সহীহ মুসলিম, (2/1040), কিতাবুন নিকাহ, অধ্যয় নং 16, বাব নং 13, হাদীস নং 1425

[61] শারহুন নাওয়াবীআলা সহীহিল মুসলিম, (9/215); আলইসতিযকার, (16/85)

[62] সুনান আবূ দাউদ, (2/237), হাদীস নং 2112

[63] আলইসতিযকার, (16/81-82); আলবিনায়াহ, (9/340)

[64] আলআসার ফিল মুহাল্লা, (7/20); আলমুসান্নাফ, ইবন আবূ শাইবাহ, (6/220), কিতাবুল বুয়ূওয়ালআকদিয়্যাহ, বাবু আজরুল মুআল্লিাম

[65] আলবায়ান ওয়াততাহসীল, (8/452); হাশিয়াতুর রাহুনী, (7/14)

[66] আলবায়ান ওয়াততাহসীল, (8/453- 454)

[67] আলমুগনী, (8/138- 139)

[68] মাজমুউল ফাতাওয়া, (30/207)

[69] শারহুল মুনতাহা, (2/366)

[70] হাদীসের তাখরীজ ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে

[71] আলউম্ম, (2/140); আসনাল মাতালিব, (2/41); শারহুল গুরারিল বাহিয়্যাহ, (3/318)

[72] আলবায়ান ওয়াততাহসীল, (8/452- 454); হাশিয়াতুদ দুসূকী, (4/18); হাশিয়াতুলআদায়ীআলা শারহি কিফায়াতুল তালিবির রাব্বানী, (2/197)

[73] আলবায়ান ওয়াততাহসীল, (8/452); হাশিয়াতুর রাহুনী, (7/14)

[74] হাশিয়াতুদ দুসূকী, (4/18)

[75] হাশিয়াতুল খারশী, (7/17); ফাওয়াকিহুদ দাওয়ানী, (2/115)

[76] আলমানসূর, (2/24); আলআশবাহ ওয়ান নাযায়ির, (পৃ. 88); গামযুউয়ূনিল বাসায়ির, (1/293); দুরারুল হুক্কাম, (1/42)

[77] শারহুলইনায়াহ, (9/98); আলবিনায়াহ, (9/342); হাশিয়াতু ইবন আবিদীন, (6/58); গামযুউয়ূনিল বাসায়ির, (1/287); ‘উমূমুল বালওয়া, পৃ, 373 -415

[78] সূরা আন-নিসা, আয়াত: 6।

[79] মাজমূউল ফাতাওয়া, (24/316), (30/206)

[80] মাজমূউল ফাতাওয়া, (24/316), (30/206)

[81] মাজমূউল ফাতাওয়া, (30/206)

[82] মাজমূউল ফাতাওয়া, (30/207)

[83] সূরা আন-নিসা, আয়াত: 6।

[84] মাজমূউল ফাতাওয়া, (30/193)

[85]উমূমুল বালওয়া, (পৃ. 373 415)

[86] মাজমূউল ফাতাওয়া, (30/206)

[87] ইসারুল ইনসাফ ফি আসারিল খিলাফ, (পৃ. 336)

Leave a Reply