রোজার
আদব (২)
(১০)
ইফতারি করতে বিলম্ব না করা :
সূর্যাস্তের
সঙ্গে সঙ্গে রাতের আগমন ঘটে ও ইফতার করার সময় হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:—
ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ (البقرة : ১৮৭)
‘অতঃপর
রাত পর্যন্ত সিয়াম পালন করবে।’ সূরা বাকারা : ১৮৭
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
إذا أقبل الليل هاهنا وأدبر النهار هاهنا وغربت الشمس فقد أفطر الصائم. رواه البخاري ومسلم
‘যখন
এখান থেকে রাত্রির আগমন ঘটে ও ওখান থেকে দিন চলে যায় এবং সূর্য অস্ত যায় তখন সিয়াম
পালনকারী ইফতার করবে।’ বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম
তাই ইফতারের
আদব হল সূর্যাস্ত মাত্রই তাড়াতাড়ি ইফতার করা। তাড়াতাড়ি ইফতার করার ব্যাপারে অনেক হাদিসে
উৎসাহ দেয়া হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:—
لا يزال الناس بخير ما عجلوا الفطر .رواه البخاري ومسلم
‘মানুষ
যতদিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন কল্যাণের সাথে থাকবে।’ বর্ণনায় : বোখারি ও
মুসলিম
তিনি
আরো বলেছেন :—
لا يزال الدين ظاهرا ما عجل الناس الفطر، لأن اليهود والنصارى يؤخرونه. رواه أبو داود
‘যতদিন
মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন দ্বীন বিজয়ী থাকবে। কেননা ইহুদি ও খ্রিস্টানরা ইফতারিতে
দেরি করে।’ বর্ণনায় : আবু দাউদ
হাদিসে
আরো এসেছে—
قال أبو الدرداء رضى الله عنه : ثلاث من أخلاق النبوة : تعجيل الإفطار، وتأخير السحور، ووضع اليمين على الشمال في الصلاة. رواه الطبراني
আবু দারদা
রা. বলেন : ‘তিনটি বিষয় নবী চরিত্রের অংশ : তাড়াতাড়ি ইফতার করে ফেলা, দেরি করে সেহরি
খাওয়া ও সালাতে দাঁড়িয়ে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা।’ বর্ণনায় : তাবরানী
আমর ইবনে
মায়মুন আওদী বলেন :—
كان أصحاب محمد صلى الله عليه وسلم أسرع الناس إفطارا وأبطأهم سحورا. رواه عبد الرزاق
‘রাসূলুল্লাহ
স.-এর সাহাবিরা সকলের চেয়ে তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন ও সকলের চেয়ে দেরিতে সেহরি খেতেন।’
বর্ণনায় : মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক
কোন ব্যক্তি
দেখে-শুনে ধারণা করে নিল যে, সূর্য ডুবে গেছে ও সে ইফতার করে নিল অথচ সূর্য তখনও অস্ত
যায়নি এমতাবস্থায় তার সওমের কোন ক্ষতি হবে না। তবে ইফতার শুরু করার পর সে যদি বুঝতে
পারে সূর্য এখনও অস্ত যায়নি তা হলে সাথে সাথে সে পানাহার থেকে বিরত হবে। তার বিষয়টা
যে ভুলে পানাহার করেছে তার মতই।
কেন তাড়াতাড়ি
ইফতার ও দেরিতে সেহরি খাবেন ?
প্রথমত:
ইসলামি জীবনাদর্শের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ধর্মীয়, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ ও লেবাস-পোশাকে
ইহুদি ও খ্রিস্টানদের অনুকরণ প্রত্যাখ্যান করা। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :
وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ. الجاثية :১৮
‘যাদের
জ্ঞান নেই তুমি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবে না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
من تشبه بقوم فهو منهم
‘যে কোন
সম্প্রদায়ের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ এ হাদিস দ্বারা
বুঝে আসে যে কাফেরদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে কাফের হয়ে যাবে। যদি সে কাফের না ও
হয় তবে কাজটি যে হারাম বা নিষিদ্ধ এতে কোন সন্দেহ নেই।
দ্বিতীয়ত:
আল্লাহর রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের প্রতি পরম দয়ালু। তিনি মানুষদের কষ্ট দিতে চান
না কখনো। মানুষের জন্য সব কিছু তিনি সহজ করতে চান। তাই সিয়াম পালনকারীর যাতে অযথা কষ্ট
না হয় সে দিকে লক্ষ্য রেখে দেরি করে সেহরি ও তাড়াতাড়ি ইফতারের নির্দেশ এসেছে। সিয়াম
পালন করা যেমন ইসলামের নির্দেশ তেমনি সিয়ামের সময় শেষে পানাহার করাও ইসলামের নির্দেশ।
এ নির্দেশ পালনে দেরি করা বা গড়িমসি করা কখনো ঠিক নয়।
তৃতীয়ত:
রাসূলে করিম স.-এর সাহাবিগণ তাঁর অনুসরণের ব্যাপারে কত যতœবান ছিলেন সেটা লক্ষণীয়। প্রতি
পদে পদে রাসূলের অনুসরণ করার জন্য আমাদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ রয়েছে।
আল্লাহ
বলেন :—
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ. (آل عمران :৩১)
‘বল
! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’
তিনি আরো বলেন :—
وَمَا آَتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا (الحشر :৭)
‘রাসূল
তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছেন তা ধারণ কর। আর যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো।’
কিন্তু
এ ক্ষেত্রে আমাদের মাঝে কিছু শিথিলতা পরিলক্ষিত হয়। যেমন : অনেকে নিশ্চিত হয়েছেন যে
সূর্যাস্ত হয়েছে তারপরও ইফতার শুরু করার জন্য আজানের অপেক্ষা করেন। আবার অনেকে মনে
করেন সূর্য ডুবে গেছে কিন্তু মাগরিবের আজান না শুনে ইফতার করব কীভাবে ? আবার অনেকে
আজান শোনার পর ইচ্ছে করেই সতর্কতা অবলম্বন করতে যেয়ে কিছুক্ষণ বিলম্ব করেন। অনেক সময়
আজান হয়ে যাওয়ার পর দোয়া-প্রার্থনায় রত থাকতে দেখা যায়। এগুলো পরিহার করা উচিত। রাসূলুল্লাহ
স.-এর সুন্নত অনুযায়ী সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার শুরু করে দেয়া কর্তব্য।
(১১)
যা দ্বারা ইফতার করা মোস্তাহাব :
عن أنس بن مالك رضى الله عنه قال :كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يفطر على رطبات قبل أن يصلي، فإن لم يكن رطبات فتمرات، فإن لم يكن تمرات، حسا حسوات من ماء. رواه أحمد
আনাস
ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সালাতের পূর্বে তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না পাওয়া যেত তবে শুকনো
খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুর না পাওয়া যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা
ইফতার করতেন।’ বর্ণনায় : আহমদ
এ হাদিস
আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ইফতারির আদব হল: মাগরিবের সালাতের পূর্বে ইফতার করা। তাজা খেজুর
বা শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করা। খেজুর দিয়ে ইফতার করার উপকারিতা হল, খেজুর সহজপাচ্য।
দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকার কারণে খাওয়ার পর যে সমস্যা হওয়ার কথা খেজুর খেলে তা হয় না।
উপরন্তু খেজুর হালকা খাবারের একটি। পানি, খেজুর এগুলো দ্বারা ইফতার করলে অলসতা সৃষ্টি
হয় না।
দ্বিতীয়ত:
পেট পুরে পানাহার ইসলাম সমর্থন করে না। রাসূলুল্লাহ স.বলেছেন :—
ما ملأ ابن آدم وعاء بطنه، بحسب ابن آدم لقيمات يقمن صلبه، فإن كان لا محالة فاعلا فثلث لطعامه، وثلث لشرابه، وثلث لنفسه. رواه الترمذي
‘মানুষ
সে সকল পাত্র পূর্ণ করে তার মাঝে মানুষের পেট অপেক্ষা আর কোন খারাপ পাত্র নেই। মানুষের
কোমর সোজা রাখার জন্য কয়েকটি লোকমাই যথেষ্ট। এর থেকেও বেশি যদি প্রয়োজন হয়, তবে পেটের
এক তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাস
চলাচলের জন্য রেখে দেয়া উচিত।’ বর্ণনায় : তিরমিজি
(১২)
ইফতারের সময় দোয়া করা :
সিয়াম
পালনকারীর দোয়া কবুল হয়। বিশেষ করে ইফতারের সময়। কারণ ইফতারের সময়টা হল বিনয় ও আল্লাহর
জন্য ধৈর্য ধারণের চরম মুহূর্ত। এ সময় জাহান্নাম থেকে মুক্তি দানের মুহূর্ত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
إن لله تعالى عند كل فطر عتقاء من النار، وذلك كل ليلة، لكل عبد منهم دعوة مستجابة. رواه أحمد
‘ইফতারের
সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর এটা রমজানের
প্রতি রাতে। সিয়াম পালনকারী প্রত্যেক বান্দার দোয়া কবুল হয়।’ বর্ণনায়: আহমদ
ইফতার
করার পর এ দোয়াটি পাঠ করা সুন্নত—
(ذهب الظمأ وابتلت العروق وثبت الأجر إن شاء الله ) رواه أبو داود عن ابن عمر
অর্থ
: পিপাসা নিবারণ হল, শিরা-উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কার নির্ধারিত হল।
বর্ণনায় : আবু দাউদ
ইফতারির
সময়টা আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার একটা সুযোগ। এ সময়টা যেন বৃথা না যায় এ দিকে খেয়াল রেখে
সময়টাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। ইফতারের সময় অন্তর দিয়ে দোয়া-প্রার্থনা করা এবং যা কিছু
দোয়া কবুলের অন্তরায় তা থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। যেমন হারাম বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত খাদ্য
গ্রহণ। দোয়া কবুলের কত চমৎকার সময় যে, আল্লাহ নিজে যখন দোয়া কবুলের ওয়াদা করেছেন !
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي
قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي
وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ (البقرة : ১৮৬)
‘আমার
বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই। প্রার্থনাকারী যখন আমার
কাছে প্রার্থনা করে আমি তার প্রার্থনায় সাড়া দেই। সুতরাং তারা আমার ডাকে সাড়া দিক এবং
আমার প্রতি ঈমান আনুক যাতে তারা ঠিক পথে চলতে পারে।’ সূরা আল-বাকারা : ১৮৬
ইফতারের
সময় যখন আজান হয় তখন আজানের পরের সময়টাও দোয়া কবুলের সময়। হাদিসে এসেছে প্রতি আজান
ও একামতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া কবুল হয়।
(১৩)
বেশি করে ভাল ও কল্যাণ মূলক কাজ করা এবং কোরআন পাঠ করা:
রমজান
হল কোরআন নাজিলের মাস। কোরআন নাজিলের কারণে রমজান মাসের এত মর্যাদা। এ মাসে অবশ্যই
অন্য সকল সময়ের চেয়ে বেশি করে কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত। হাদিসে এসেছে—
عن
عبد الله بن عمرو أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: (الصيام والقرآن يشفعان للعبد
يوم القيامة، يقول الصيام أي رب: منعته الطعام والشهوات بالنهار، فشفعني فيه.
ويقول القرآن : منعته النوم بالليل، فشفعني فيه. قال فيشفعان. رواه أحمد
আব্দুল্লাহ
বিন আমর থেকে বর্ণিত যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘সিয়াম
ও কোরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে প্রতিপালক
! আমি দিনের বেলা তাকে পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার
সুপারিশ কবুল কর। কোরআন বলবে হে প্রতিপালক ! আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি
তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন, অতপর উভয়ের সুপারিশই কবুল
করা হবে। বর্ণনায় : আহমদ
(১৪)
ইবাদত-বন্দেগিতে তওফিক দানের ব্যাপারে আল্লাহর অনুগ্রহ অনুধাবন করা :
একটু
চিন্তা করে দেখা যেতে পারে যে, কত মানুষ রয়েছে যাদেরকে আল্লাহর তার ইবাদত-বন্দেগি করতে
সামর্থ্য দেননি কিন্তু আমাকে দিয়েছেন। এটা আমার প্রতি তাঁর এক মহা-অনুগ্রহ। এরপর তিনি
যদি আমার এ ভাল কাজগুলো কবুল করে আমাকে প্রতিদান দেন তাহলে এটা হবে তাঁর পক্ষ থেকে
আরেকটি অনুগ্রহ। কত মানুষ ভাল কাজ করে কিন্তু সকলের ভাল কাজতো কবুল করা হয় না।
إِنَّمَا
يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ (المائدة : ২৭)
‘আল্লাহ
মুত্তাকীদের কাজ কবুল করেন।’
এ ধরনের
অনুভূতি থাকলে নেক-আমল করে আত্ম-তৃপ্তি ও অহংকার নামক ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়।
কেননা অহংকার ও আত্ম-তৃপ্তি ভাল কাজের প্রতিদান নষ্ট করে দেয়। তখন ভাল কাজগুলো মরীচিকার
মত হয়ে যায়।
(১৫)
দরিদ্র ও সহায় সম্বলহীনদের প্রতি মমতা ও তাদের সেবা করা :
সিয়াম
পালনের মাধ্যমে অসহায় সম্বলহীন, অভুক্ত মানুষের প্রতি দয়া ও মমতা সৃষ্টি হয়। তাদের
অসহায়ত্ব অনুভব করা যায়। তাই এ দান-প্রতিদানের পবিত্র মাসে তাদের জন্য বেশি করে কল্যাণকর
কাজ করা উচিত। ইফতার করানো, সদকাতুল ফিতর, জাকাত আদায় করার সাথে সাথে ব্যাপকভাবে দান-সদকা
করা যেতে পারে। হাদিসে এসেছে—
كان
رسول الله صلى الله عليه وسلم أجود الناس بالخير وكان أجود ما يكون في شهر رمضان.
رواه مسلم
নবী করিম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে
তার দানশীলতা আরো বেড়ে যেত। বর্ণনায় : মুসলিম
(১৬)
সুন্দর চরিত্র, ধৈর্য ও উত্তম আচরণ দ্বারা নিজেকে সজ্জিত করুন:
রমজান
হল ধৈর্যের মাস আর সিয়াম হল একটি বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয় থাকাকালীন অবশ্যই সদাচরণ, ধৈর্য,
সুন্দর চরিত্রের অনুশীলন করতে হবে। যেমন বলেছেন রাসূলে করিম স.—
فإذا
كان يوم صوم أحدكم فلا يرفث يومئذ ولا يصخب، فإن سابه أحد أو قاتله فليقل إني امرأ
صائم. رواه مسلم
‘সুতরাং
তোমাদের মাঝে যে সিয়াম পালন করবে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। যদি
তার সাথে কেউ ঝগড়া-বিবাদ কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হতে চায় তবে তাকে বলে দেবে আমি সিয়াম
পালনকারী।’ বর্ণনায় : মুসলিম
(১৭)
অপচয় ও অযথা খরচ থেকে বিরত থাকুন :
অপচয়
তা যে কোন বিষয়েই হোক ইসলামি শরিয়তে নিষিদ্ধ। পবিত্র মাসে যখন আমাদের বেশি করে সৎকাজ
করা উচিত তখন আমরা খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোন ধরনের অপচয় করে যেন পাপ অর্জন
না করি। রমজান মাসে দেখা যায় অনেকে খেতে পারব মনে করে অনেক কিছু আয়োজন করে। অবশেষে
খেতে না পেরে তা নষ্ট করে ফেলে। এটা সত্যিই অন্যায়।
(১৮)
রুটিন করে সময়টাকে কাজে লাগান :
রমজানের
সময়টা অন্য সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সংক্ষিপ্ত মনে হয়। তাই আপনি রুটিন করে সময়টাকে
কি কি কাজে ব্যয় করবেন তা যদি ঠিক করে না নেন তাহলে দেখবেন অনেক কাজই অসমাপ্ত রয়ে গেছে।
অনর্থক কথা-বার্তা, আড্ডা বাজি, গল্পগুজব, নিষ্ফল বিতর্ক ইত্যাদি পরিহার করুন। কোন
কথা বা কাজ করার আগে ভেবে দেখুন কথা বা কাজটা আপনার জন্য কতটুকু কল্যাণ বয়ে আনবে।
‘আমার পাশে বসে অন্য লোক একটি বিষয় আলোচনা করছে তাই আমাকে অংশ নিতেই হয়—তাই একটু বললাম’
এমন যেন না হয়। অযথা কথা ও কাজ পরিহার করা সিয়ামের একটি শিক্ষা ও দাবি।
(১৯)
দুনিয়াবি ব্যস্ততা কমিয়ে দিন :
রমজান
মাসে নিজের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের জন্য দুনিয়াদারির
ব্যস্ততা
কমিয়ে দিয়ে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি করুন। অনেকেই রমজান মাসকে অর্থ উপার্জন, ব্যবসা-বাণিজ্য
ও মুনাফা লাভের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন। এ দিকেই বেশি সময় ব্যয় করেন। দুনিয়াদারি যতটুকু
না করলেই নয় ততটুকুতো অবশ্যই করবেন। আর বাকি সময়টা আখেরাতের মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যয়
করবেন।
(২০)
খাওয়া ও নিদ্রায় ভারসাম্য বজায় রাখুন :
আমাদের
মাঝে অনেকে রমজান মাসে যেমন খাওয়া দাওয়া বেশি করেন তেমনি আবার বেশি সময় ঘুমিয়ে কাটান।
তারাবীহ ও সেহরির কারণে যদি রাতে দু ঘণ্টা নিদ্রা কম হয় তবে দিনে তার কাফফারা আদায়
করেন চার ঘণ্টা ঘুমিয়ে। খাবার ব্যাপারে অনেকে একই নীতি অনুসরণ করেন। যদি এরকমই আমাদের
অবস্থা হয় তবে আমরা রমজানের জন্য কি কুরবানি করলাম ? বিষয়টা গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment