সালাতের হাদিসসমূহ:
১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
صلوا كما رأيتموني أصلي
অর্থ, তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ, সেভাবে সালাত আদায় কর।
২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إذا دخل أحدكم المسجد فليركع ركعتين قبل أن يجلس « وتسمى تحية المسجد» .
তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সে যেন বসার পূর্বে দুই রাকাত সালাত আদায় করে নেয়। [এ দু রাকাত সালাতকে তাহিয়্যাতুল মসজিদ বলা হয়]
৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
لا تجلسوا على القبور ، ولا تصلوا إليها.
তোমরা কবরকে আসন বানাবে না এবং কবরের দিকে মুখ করে সেজদা করবে না।
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
إذا أقيمت الصلاة ، فلا صلاة إلا المكتوبة
যখন সালাতের ইকামত দেয়া হয়, তখন তোমরা ফরয সালাত ছাড়া আর কোন সালাত আদায় করবে না।
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
أقيموا صفوفكم وتراصوا ، قال أنس وكان أحدنا يلزق منكبه بمنكب صاحبه ، وقدمه بقدمه .
অর্থাৎ তোমরা সালাতের কাতার ঠিক কর এবং একে অপরের সাথে মিলে দাড়াও। আনাস রা. বলেন, আমরা সালাতে একে অপরের কাঁধের সাথে ও পায়ের সাথে মিলিয়ে সালাতে দাঁড়াতাম।
৬. রাসূল বলেন,
إذا أقيمت الصلاة فلا تأتوها وأنتم تسعون ، وأتوها وأنتم تمشون ، وعليكم السكينة ، فما أدركتم فصلوا ، وما فاتكم فأتموا .
অর্থ, যখন সালাতের ইকামত দেয়া হয়, তখন তোমরা দৌড়ে দৌড়ে সালাতে উপস্থিত হবে না। তোমরা স্বাভাবিকভাবে হেঁটে সালাতে উপস্থিত হবে। তোমরা নমনীয়তা প্রদর্শন কর। ইমামের সাথে যতটুকু পাবে আদায় করবে, আর যতটুকু ছুটে যাবে, তা পরে তোমরা একা একা সম্পন্ন করবে।
৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
অর্থ, যখন তুমি সেজদা করবে তখন তুমি তোমার উভয় হাত জমিনে রাখবে, আর তোমার দুই বাহুকে উঠিয়ে রাখবে; মাটি হলে আলাদা করে রাখবে। ৮. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إني إمامكم فلا تسبقوني بالركوع والسجود .
“আমি তোমাদের ইমাম, সুতরাং রুকু সেজদায় তোমরা আমার থেকে আগে বাড়বে না।” মুক্তাদি কখনোই ইমামের আগে কিছু করবে না। যদি তা করে তাহলে তার সালাত আদায় হবে না।
৯. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
أول ما يحاسب به العبد يوم القيامة الصلاة فإن صلحت صلح له سائر عمله ، وإن فسدت فسد سائر عمله .
অর্থ, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব করা হবে, যখন সালাত ঠিক থাকে, তখন তার যাবতীয় সব আমলই ঠিক থাকে। আর যখন তার সালাতের অবস্থা খারাপ হয়, তখন তার সমস্ত আমলই নষ্ট হয়ে থাকে।
জুমার সালাত ও জামাত ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে
জুমার সালাত আদায় করা এবং জামাতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব। নিম্নে এর উপর কুরআন ও হাদিসের একাধিক দলীল পেশ করা হল।
১. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾ .
অর্থ, হে মুমিনগণ, যখন জুমুআর দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা করা ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য অতি উত্তম। যদি তোমরা জানতে পারতে।
২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام ، ثم أخالف إلى منازل قوم لا يشهدون الصلاة ، فأحرق عليهم» .
অর্থ, আমার ইচ্ছা হয়, আমি একজনকে সালাতের নির্দেশ দেই, সে সালাত কায়েম করে যাবে, আর আমি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যারা সালাতের জামাতে উপস্থিত হয়নি, তাদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেই।
৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من سمع النداء ، فلم يأته ، فلا صلاة له إلا من عذر » « الخوف أو المرض» .
যে ব্যক্তি কোন প্রকার অপারগতা [ভয়ভীতি ও অসুস্থতা] ছাড়া আযান শোনে সালাতে উপস্থিত হয় না, তার সালাত আদায় হয় না।
৪. হাদিসে বর্ণিত,
أتى رسول الله صلى الله عليه وسلم رجل أعمى ، فقال يا رسول الله ، إنه ليس لي قائد يقودني إلى المسجد ، فسأل رسول الله صلى الله عليه وسلم أن يرخص له ، فرخص له ، فلما ولىّ دعاه فقال هل تسمع النداء «بالصلاة» قال نعم ، قال فأجب» .
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একজন অন্ধ লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন অন্ধ মানুষ আমার এমন কোন লোক নাই যে, আমাকে মসজিদে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। সুতরাং আপনি আমাকে জামাতে অনুপস্থিত ও ঘরে সালাত আদায় করার অনুমতি দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে তাকে অনুমতি দেন। তারপর লোকটি চলে যেতে আরম্ভ করলে তাকে ডেকে পাঠিয়ে বলেন, তুমি কি সালাতের আযান শোনতে পাও? বলল, হ্যাঁ। তাহলে তুমি সালাতের জামাতে উপস্থিত হও।
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من اغتسل ، ثم أتى الجمعة ، فصلى ما قدر له ، ثم أنصت حتى يفرغ الإمام من خطبته ، ثم يصلي معه غفر له ما بينه وبين الجمعة الأخرى ، وفضل ثلاثة أيام» .
যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, তারপর মসজিদে উপস্থিত হল, এবং তার জন্য যা নির্ধারণ করা হল, সে পরিমাণ সালাত আদায় করে ইমামের খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ করে বসে থাকে এবং ইমামের সাথে দুই রাকাত ফরয সালাত আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা এ জুমা হতে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত মাঝখানের গুনাহ গুলো ক্ষমা করে দেবেন এবং আরও অতিরিক্ত তিনি দিনের অপরাধ ক্ষমা করে দেবে।
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من ترك ثلاث جمع تهاوناً بها ، طبع الله على قلبه» .
যে ব্যক্তি অলসতা করে পরপর তিনটি জুমার সালাত আদায় ছেড়ে দিল, আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরের উপর মোহর মেরে দেয়।
সুন্নাত তরীকায় কীভাবে জুমার সালাত আদায় করব?
১. জুমার দিন সকাল বেলা গোসল করবে। হাত পায়ের আঙ্গুল কাটবে এবং ওজু করার পর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করব ও সুগন্ধি ব্যবহার করব।
২. আমরা কাঁচা পেয়াজ ও রসূন খাবো না, ধূমপান করব না এবং আমাদের মুখ ধোবো এবং মিসওয়াক বা ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করব।
৩. মসজিদের প্রবেশের সময় দুই রাকাত সালাত আদায় করব, যদিও খতীব মিম্বারে খুতবার জন্য দাড়িয়ে যায়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই রাকাত সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
« إذا جاء أحدكم الجمعة والإمام يخطب ، فليركع ركعتين وليتجوز فيهما »
অর্থ, তোমাদের কেউ যখন ইমাম সাহেব খুতবা দেয়ার সময় জুমার সালাতে উপস্থিত হয়, তখন সে সংক্ষেপে দু রাকাত সালাত আদায় করে নিবে।
৪. আমরা ইমাম বা খতীবের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনবো, কোন কথা বলব না।
৫. ইমামের সাথে মুক্তাদি হয়ে, জুমার দুই রাকাত ফরয সালাত আদায় করব।
৬. জুমার সালাতের পর চার রাকাত সুন্নত সালাত আদায় করব। অথবা বাসায় গিয়ে দু-রাকাত সালাত আদায় করব। এটি হল, উত্তম।
৭. জুমার দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর বেশি বেশি করে দরুদ পড়বে।
৮. জুমার দিন যে মুহূর্তটি মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়, তা পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إن في الجمعة لساعة لا يوافقها مسلم يسأل الله فيها خيراً إلا أعطاه إياه» .
অর্থ, নিশ্চয় জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, ঐ মুহূর্তটি মধ্যে কোন মুসলিম বান্দা মহান আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণ কামনা করে, মহান আল্লাহ তা‘আলা সে কল্যাণ তাকে অবশ্যই দান করবে।
গান-বাজনার বিধান:-
১. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ﴾ .
অধিকাংশ তাফসীরকারকদের মতে لَهْوَ الْحَدِيثِ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, গান। বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ইবনে মাসউদ রা. বলেন, এখানে উদ্দেশ্য হল, গান। হাসান বসরী রহ. বলেন, আয়াতটি গান-বাজনা ও বাদ্য-যন্ত্র বিষয়ে নাযিল হয়েছে।
২. মহান আল্লাহ তা‘আলা শয়তানকে খেতাব করে বলেন,
﴿وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ﴾
৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ليكونن من أمتي أقوام يستحلون الحر «الزنا» والحرير، والخمر والمعازف» – الموسيقى - .
অর্থ, আমার উম্মতের মধ্যে এমন কতক সম্প্রদায়ের আগমন ঘটবে, যারা ব্যভিচার, রেশমি কাপড় পরিধান, মদ-পান ও গান-বাজনাকে হালাল জানবে।
একই অর্থে অপর একটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, মুসলিম সম্প্রদায় হতে একটি জামাত এমন হবে, যারা ব্যভিচার করা, রেশমি কাপড় পরিধান, মদ্য-পান ও গান-বাজনাকে হালাল বলে বিশ্বাস করবে, অথচ তা হারাম।
হাদীসে বর্ণিত “মায়াযেফ” বলা হয়, যে সব বাদ্য যন্ত্রে সূর রয়েছে। যেমন, বাঁশি, তবলা, ঢোল ইত্যাদি। এমনকি ঘণ্টিও তার অন্তর্ভুক্ত। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, [ الجرس مزامير الشيطان] . অর্থ, ঘণ্টা হল, শয়তানের বাদ্য-যন্ত্র। হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ঘণ্টার আওয়াজও ইসলাম পছন্দ করে নি। জাহিলিয়্যাতের যুগে মুশরিকরা তাদের চতুষ্পদ জন্তুর গলায় এ ধরনের ঘণ্টা ঝুলিয়ে দিত। এছাড়া খ্রিষ্টানরা যে নাকুস ব্যবহার করে, তার সাথে এর সামঞ্জস্য রয়েছে। সুতরাং ঘণ্টা ব্যবহার হতে বিরত থাকতে হবে। যদি একেবারেই প্রয়োজন হয়, তবে তার পরিবর্তে কলিং বেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. ইমাম শাফেয়ী রহ. থেকে কিতাবুল কাযাতে বর্ণিত হয়েছে যে, গান হচ্ছে অনর্থক কাজ ও অপছন্দনীয় কাজ। যে ব্যক্তি গান-বাজনায় ব্যস্ত থাকে সে অবশ্যই নির্বোধ, তার সাক্ষ্য কবুল করা হবে না, প্রত্যাখ্যান করা হবে।
বর্তমান সময়ে গান বাজনা:
১. বর্তমানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিবাহ-শাদি, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদিতে যে সব গান-বাজনা পাওয়া যায়, তার অধিকাংশই অশ্লীল ও অশালীন। এ সব গানে সাধারণত প্রেম, ভালোবাসা, নারীদের আলিঙ্গন, তাদের চেহারার বর্ণনা ইত্যাদি দ্বারা ভরপুর। এগুলো সবই যৌন উত্তেজক, যেগুলি যুবকদের যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি করে, তাদের জেনা-ব্যভিচারের দিকে ধাবিত করে এবং তাদের নৈতিক চরিত্রকে ধ্বংস করে।
২. যখন গান ও বাদ্য এক সাথে চলতে থাকে, তখন তার পরিণতি হয়, খুবই ভয়াবহ। যুব সমাজের চরিত্র অশ্লীল গান-বাজনা ও ফিল্ম দেখা ইত্যাদির কারণে চরম অবনতির দিকে যায়। অধিকাংশ যুবকরা এ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মারাত্মক ধ্বংসের মুখে নিপতিত হয় এবং তারা তখন মহান আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভুলে, দুনিয়ার ভোগ বিলাস ও আনন্দ পূর্তিতে মাতোয়ারা হয়ে পড়ে। এমনকি ১৯৬৭ যখন ইয়াহুদিদের সাথে যুদ্ধ চলছিল, তখন ঘোষণা হল যে, তোমরা সামনের দিকে অগ্রসর হও, কারণ, তোমাদের সাথে অমুক অমুক গায়িকা আছে যারা তোমাদের গানের মাধ্যমে উৎসাহ দিয়ে যাবে। এ ঘোষণার পর ইয়াহুদীদের সাথে মুসলিমদের শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হল। কারণ, তাদের উচিত ছিল এ কথা বলা, তোমরা সামনের দিকে অগ্রসর হও! তোমাদের সাথে মহান আল্লাহর সাহায্য বহাল আছে। তা না করে তারা নারীদের গান-বাজনার প্রতি আহ্বান করল, যা আল্লাহ তা‘আলার পছন্দ হল না।
৩. মনে রাখতে হবে, অনেক সময় এমন হয়, দ্বীনি বা ইসলামের নামে যে সব গান গাওয়া হয় বা বাজারে পাওয়া যায়, সে গুলোও অন্যায় অশ্লীল হতে খালি হয় না। যেমন, বুসীরীর কাব্যগুলো তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। এ ছাড়াও দেখুন কোন এক গায়ক বলেছিল
وقبل كل نبي عند رتبته ويا محمد هذا العرش فاستلم .
এখানের শেষের অংশটি আল্লাহ ও রাসূলের উপর মিথ্যারোপ বৈ কিছুই না, যা বাস্তবতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।গান বাজনা হতে বাঁচার উপায়:
১. রেডিও টেলিভিশন ইত্যাদিতে গান-বাজনা শোনা ও দেখা হতে দূরে থাকতে হবে। বিশেষ করে যৌন উত্তেজক গান, ও বাজনাসহ গান শোনা হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।
২. মহান আল্লাহর জিকির ও কুরআনের তিলাওয়াত গান বাজনা থেকে বাচার সর্বোত্তম পন্থা। বিশেষ করে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করা। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إن الشيطان ينفر من البيت الذي يقرأ فيه سورة البقرة» .
অর্থ, যে ঘরে সূরা বাকারাহ তিলাওয়াত করা হয়, সে ঘর থেকে শয়তান পলায়ন করে। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ﴾ .
হে মানব সকল! তোমাদের নিকট তোমাদের প্রভূর পক্ষ হতে উপদেশ এসেছে এবং এসেছে তোমাদের অন্তরে যে সব ব্যাধি রয়েছে, তার জন্য শিফা। আর মুমিনদের জন্য হেদায়েত ও রহমত।৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সীরfত, তার আখলাক সম্পর্কীয় কিতাবাদি ও সাহাবীদের জীবনী বেশি বেশি করে অধ্যয়ন করা।
যে সব গান গাওয়া বৈধ:
১. ঈদের দিন গান গাওয়া বৈধ। যেমন, আয়েশা রা. এর হাদিসে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« دخل رسول الله صلى الله عليه وسلم عليها ، وعندها جاريتان تضربان بدفين « وفي رواية عندي جاريتان تغنيان» فانتهرهما أبو بكر ، فقال صلى الله عليه وسلم : دعهن فإن لكل قوم عيداً ، وإن عيدنا هذا اليوم» .
একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট প্রবেশ করে, তখন তার নিকট দুইজন বাঁদি ছিল, তারা উভয়ে দুটি ঢোল বাজাচ্ছিল, অপর বর্ণনায় আছে তারা দুইজন গান গাচ্ছিল, তাদের দেখে আবু বকর রা. ধমক দিলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রা. কে বলল, তাদের আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও, কারণ, প্রতিটি সম্প্রদায়ের লোকদের জন্য ঈদ আছে, আর আমাদের ঈদ হল আজকের দিন।২ . বিবাহের অনুষ্ঠানে বিবাহের প্রচার প্রসারের জন্য ঢোল তবলা বাজিয়ে গান করা বৈধ। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«فصل ما بين الحـلال والحرام ، ضرب الدف ، والصوت في النكاح»
অর্থ, হারাম ও হালালের মধ্যে প্রার্থক হল, ঢোল বাজানো ও বিবাহের প্রচার করা।৩. কোন কাজ সম্পাদন করার সময় ইসলামী গান গাওয়া। কারণ, তখন কাজের মধ্যে আনন্দ পাওয়া যায় এবং চাঞ্চল্যটা ফিরে আসে। বিশেষ করে যখন গানে দোয়া বা আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া ইত্যাদি থাকে। এ ধরনের গানের জন্য রাসূল নিজেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন। তিনি খন্দকের যুদ্ধে যখন পরিখা খনন করছিলেন, তখন তিনি তার সঙ্গীদের কর্ম চাঞ্চল্যটা ফিরিয়ে আনতে এ ধরনের কাব্যগুলো পড়েন। যেমন ইবনে মাজাতে বর্ণিত:
اللهم لا عيش إلا عيش الآخرة ** فاغفر للأنصار والمهاجرة
অর্থ: হে আল্লাহ! আখিরাতের জীবনই জীবন। আপনি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দিন।
এ কথার উত্তরে আনসার ও মুহাজিররা বলল:
نحن الذين بايعوا محمداً ** على الجهاد ما بقينا أبدا
আমরা তারাই যারা মুহাম্মদের হাতে জিহাদের অঙ্গীকার করি। যতদিন পর্যন্ত আমরা জমিনে বেচে থাকি।
والله لولا الله ما اهتدينا ** ولا تصدقنا ولا صلينا
মহান আল্লাহ দয়া আমাদের উপর না থাকলে, আমরা হেদায়েত পেতাম না এবং আমরা আল্লাহর রাহে সদকা করতাম না এবং সালাত আদায় করতাম না।
فأنزلن سكينة علينا ** وثبت الأقدام إن لاقينا
আপনি আমাদের উপর শান্তি বর্ষণ করুন। আমরা যখন শত্রুর সাথে যুদ্ধ করব, তখন আমাদের তুমি অটল ও অবিচল রাখুন।
والمشركون قد بغوا علينا ** إذا أرادوا فتنة أبينا
মুশরিকরা আমাদের উপর নির্যাতন করছে। তারা যখন আমাদের শিরক করতে বলে আমরা তা অস্বীকার করি।
তারা أبينا ... أبينا .. [শিরিককে অস্বীকার করি, অস্বীকার করি] বলে চিৎকার করত।৪. যে সব গানে আল্লাহর প্রশংসা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মোহাব্বত ও রাসূলের গুণাগুণ থাকে, ঐ ধরনের গান গাওয়া নি:শন্দেহে বৈধ। অনুরূপভাবে যে সব গানে জিহাদের উপর উদ্বুদ্ধ করা হয়, ঈমানের উপর অবিচল ও অটুট থাকার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয় এবং নৈতিক চরিত্র সংশোধন বিষয়ে উৎসাহ দেয়া হয়, সে সব গান গাওয়াতে কোন প্রকার ক্ষতি নাই। এ ছাড়াও যে সব গানে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের ভালোবাসা জাগ্রত, মুসলিমদের মাঝে সু-সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করে, ইসলামের সৌন্দর্য তূলে ধরা হয়, এ ধরনের গান বৈধ বা প্রশংসিত হওয়াতে কোন সন্দেহ নাই। কারণ, এ ধরনের গানের মাধ্যমে সমাজ উপকৃত হয়, মানুষের নৈতিক চরিত্র ও মন-মানসিকতার উন্নতি হয়।
৫. বাদ্য যন্ত্রের মধ্য হতে ঈদের দিন ও বিবাহ অনুষ্ঠানে ঢোল বাজানোকে বৈধ করা হয়েছে। জিকিরের মজলিশে ঢোল বাজানো সম্পূর্ণ হারাম। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তারপর তার সাহাবীরা কখনোই জিকিরের মজলিসে ঢোল-তবলা বাজায়নি। কিন্তু ছুফিরা ঢোল বাজানোকে হালাল মনে করে এবং জিকিরের মজলিশে ঢোল বাজানোকে সূন্নাত বলে, অথচ তা বিদআত। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إياكم ومحدثات الأمور ، فإن كل محدثة بدعة ، وكل بدعة ضلالة» .
অর্থ: তোমরা কুসংস্কার হতে বেচে থাক, কারণ, সব কুসংস্কারই হল, বিদআত। আর প্রতিটি বিদআত হল, গোমরাহি।
ছবি ও মূর্তির বিধান:
ইসলাম মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান করে এবং আল্লাহর সাথে অন্য মাখলুক যেমন, আল্লাহর অলি, নেককার বান্দা, মূর্তি, কবর, মাজার, ছবি ইত্যাদির পূজা করা বা কোন কিছুকে তার সাথে শরীক করা হতে নিষেধ করে। মহান আল্লাহ তা‘আলা যেদিন থেকে মানুষের হেদায়েতের জন্য নবী রাসূলদের দুনিয়াতে পাঠান, সেদিন থেকেই তারা মানুষদের তাওহীদের দাওয়াত দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ﴾
অর্থ, আর আমি প্রতিটি সম্প্রদায়ের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করি, তিনি দাওয়াত দেন যে, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে দূরে থাক।
তাগুত: আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব কিছুর ইবাদত করা হয়, তাদের তাগুত বলা হয়। মুশরিকরা যে সব মূর্তির পূজা করত, সূরা নূহতে মহান আল্লাহ তা‘আলা তাদের আলোচনা করেন। যেমন, বুখারী শরীফে বর্ণিত, ইবনে আব্বাস রা. আল্লাহর তা‘আলার বাণী-
﴿وَقَالُوا لَا تَذَرُنَّ آلِهَتَكُمْ وَلَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَلَا سُوَاعًا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْرًا وَقَدْ أَضَلُّوا كَثِيرًا وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا ضَلَالًا﴾
আর তারা বলে, তোমরা তোমাদের উপাস্যদের বর্জন করো না; বর্জন করো না ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক, ও নাসরকে। বস্তুত তারা অনেককে পতভ্রষ্ট করেছে, আর (হে আল্লাহ) আপনি যালিমদেরকে ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছুই বাড়াবেন না।
এর ব্যাখ্যায় বলেন, আয়াতে উল্লেখিত নাম গুলো হল, নূহ আ. এর সম্প্রদায়ের নেককার লোক ও মহৎ ব্যক্তিবর্গ। এরা মারা গেলে শয়তান তাদের সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট ওহী পাঠান যে, তোমরা তাদের বসার স্থানে তাদের আকৃতিতে মূর্তি তৈরি কর এবং তাদের নামেই মূর্তিগুলোর নাম করণ কর। তখন তারা তাই করল। তখন পর্যন্ত তারা তাদের কোন ইবাদত করত না। তারপর যখন এ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে গেল, পরবর্তী প্রজন্ম এসে তাদের পূর্বসূরিদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে না জেনে মূর্তিগুলোর ইবাদত করতে আরম্ভ করে। এ ঘটনাটি দ্বারা একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, মানবজাতির মধ্যে শিরকের বিস্তার লাভের প্রধান কারণ হল, ছবি বা মূর্তি। কিন্তু বর্তমানে দু:খের বিষয় হল, অনেকেই মনে করে, এ ধরনের ছবি হালাল। কারণ, এখন এ ধরনের লোক পাওয়া যায় না, যারা ছবির ইবাদত করে। তাদের এ দাবি সঠিক নয়। কারণ, ছবি হল, শিরক এর প্রবেশের দরজা।১. একটি কথা মনে রাখতে হবে, বর্তমানেও ছবি ও মূর্তির পূজা করা হয়ে থাকে। যেমন, ঈসা আ. ও তার মাতা মারিয়াম আ. মারা যাওয়ার পর, মহান আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের আকৃতির ইবাদত, এখনো করা হয়। ঈসা আ. এর ছবি সম্বলিত অনেক বড় বড় পোষ্টার বাজারে চড়া মূল্যে বিক্রি করা হয়। এ গুলোকে ইবাদতের লক্ষ্যে ঘরে ঝুলিয়ে রাখা হয়, এ গুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
২. বর্তমান যুগেও বড় বড় নেতাদের ছবির প্রতি মানুষের মাথা নত করা হয়। মানুষ যখন তাদের মূর্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, তখন তারা তাদের সম্মানে দাড়িয়ে যায়, কোমর বাঁকা করে পিঠ ঝুলিয়ে দেয়। যেমন, আমেরিকাতে জর্জ ওয়াশিংটন, ফ্রান্সে নেপোলিয়ন ও রাশিয়াতে লেনিনের ছবিকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যারা তাদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে তাদের সম্মানে মাথা ঝুঁকায়। বর্তমানে প্রতিকৃতি নির্মাণের এ ধারণাটি আরব জাহান ও মুসলিম দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। তারা কাফেরদের অন্ধ অনুকরণ করে যাচ্ছে, তারা তাদের নেতাদের প্রতিকৃতি রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্থাপন করে। এভাবে অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহেও মূর্তির বিস্তার হচ্ছে। যে সব টাকা দিয়ে প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়ে থাকে, সে সব দিয়ে মসজিদ মাদ্রাসা, হাসপাতাল, জন-কল্যাণমূলক ট্রাস্ট তৈরি করে তাদের নামে নাম করণ করা যেতে পারে; তাতে কোন সমস্যা নাই। তাতে মানুষের উপকার আরও বেশি হবে। আর তাদের নামে নাম করণ করার মধ্যে কোন ক্ষতি নাই।
৩. কালের বিবর্তনে দেখা যাবে, যারা বর্তমানে প্রতিকৃতি গুলোর সেজদা করছে না, তারাও এক সময় এসে এগুলোর সেজদা করতে আরম্ভ করবে এবং ইবাদত করতে শুরু করবে। যেমনটি ইউরোপ, তুরস্ক ও অন্যান্য দেশে এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। আর এ বিষয়ে নূহ আ. এর সম্প্রদায়ের লোকেরাই হল ইতিহাসের সূচনা। কারণ, তারাই প্রথমে তাদের নেতাদের প্রতিকৃতি স্থাপন করে, তারপর তাদের সম্মান ও ইবাদত করে।
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবনে আবু তালিব রা. কে এ বলে নির্দেশ দেন যে, তুমি কোন মূর্তিকে দেখা মাত্র নিষ্পেষিত করে দেবে এবং কোন উঁচা কবর দেখলে তাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেবে।
যে সব বস্তুর ছবি বা প্রতিকৃতি বৈধ:
১. সব বস্তুর রুহ নাই, সে সব বস্তুর ছবি তোলা হালাল বা বৈধ। যেমন- গাছ-পালা, চন্দ্র, সূর্য, পাহাড়, পাথর, নদ-নদী, সমুদ্র, পবিত্র স্থান, মসজিদ, মদিনার মসজিদ, বাইতুল্লাহ ইত্যাদির ছবি বৈধ। এর প্রমাণ হল, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর উক্তি: তিনি বলেন, যদি তোমাকে ছবি নির্মাণ করতেই হয়, তবে তুমি গাছ-পালা প্রাকৃতিক দৃশ্য ও যে সব বস্তুর জীবন নাই সে সবের ছবিই অংকন কর।
২. প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারের জন্য ছবি তোলা বৈধ। যেমন- পাসপোর্ট, ন্যাশনাল আইডি কার্ড, গাড়ির লাইসেন্স ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাজে ছবি তোলার অনুমতি আছে।
৩. চোর, ডাকাত, অপরাধীদের ধরার জন্য তাদের ছবি টানিয়ে দেয়া বৈধ, যাতে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা যেতে পারে।
৪. মেয়েদের জন্য টুকরা কাপড় দিয়ে পুতুল বানিয়ে সেগুলো দ্বারা খেলা-ধুলা করা বৈধ। যখন তারা ছোট থাকে, তখন তারা এ ধরনের খেলা-ধুলা করতে পারে; যাতে তারা যখন মা হয়, তখন শিশুদের কীভাবে লালন-পালন করতে হয়, তা শিখে। আয়েশা রা. এর কথা তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ, তিনি বলেন, كنت ألعب بالبنات عند النبي صلى الله عليه وسلم আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে খেলা-ধুলা করতাম। আর শিশুদের জন্য অশ্লীল কোন খেলা-ধুলা ক্রয় করা উচিত নয়; বিশেষ করে উলঙ্গ মেয়েদের ছবি। কারণ, এ সব দেখে তারাও নিজেরা শিখবে এবং তাদের অনুকরণ করবে। ফলে সমাজকে কলুষিত করবে। এ ছাড়াও এ সব ক্রয় করার মাধ্যমে টাকাগুলো দ্বারা ইয়াহুদী, নাছারা ও ইসলামের শত্রুদের সহযোগিতা করা হয়; যাতে তারা মুসলিমদের বিপক্ষে শক্তি অর্জন করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।
ধূমপানের বিধান:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে বিড়ি, সিগারেট তামাক ইত্যাদি ছিল না। তবে ইসলামের সাধারণ মূলনীতি হল, মানুষের জন্য ক্ষতিকর, প্রতিবেশীর জন্য কষ্টকর অথবা সম্পদের অপচয় এমন সবকিছুই হারাম। নীচে ধূমপান হারাম হওয়ার উপর বিশেষ কয়েকটি প্রমাণ পেশ করা হল:১. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ﴾
আর তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তুকে হালাল করেছেন এবং অপবিত্র বস্তুকে তাদের উপর হারাম করেছেন।
আর বিড়ি-সিগারেট অপবিত্র বস্তুর অন্তর্ভুক্ত ও দুর্গন্ধময় বস্তু।২. মহান আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَلاَ تُلْقُواْ بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ﴾
তোমরা তোমাদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।
ধূমপান মানুষের জন্য মারাত্মক ব্যাধির কারণ হয়, যেমন ধূমপানের কারণে ক্যান্সার, রক্তচাপ, যক্ষ্মা, বক্ষ ব্যাধি ইত্যাদি আরও নানান ধরনের ব্যাধি হয়ে থাকে।৩. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,{وَلاَ تَقْتُلُواْ أَنفُسَكُمْ } [ তোমরা তোমাদের নিজেদের হত্যা করো না।] ধূমপানের কারণে মানুষের আয়ু কমে আসে এবং অকাল মৃত্যুর কারণ হয়।
৪. মহান আল্লাহ তা‘আলা মদের ক্ষতি সম্পর্কে বলেন,
﴿وَإِثْمُهُمَآ أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا﴾ .
আর এ দুটির গুণাহ উপকারের চেয়ে অধিক মারাত্মক।
অনুরূপভাবে ধূমপানের ক্ষতি উপকারের তুলনায় মারাত্মক। বরং ধূমপানে ক্ষতি ছাড়া কোন উপকার নাই।৫. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُواْ إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا﴾ .
নিশ্চয় অপচয়কারী হল, শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রভূকে অস্বীকারকারী।
ধূমপান হল, অর্থের অপচয়। আর সম্পদের অপচয় করা হল, শয়তানের কাজ।৬. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا ضرر ولا ضرار»
ইসলামে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বা ক্ষতি করার কোন অবকাশ নাই। আর ধূমপান মানুষের জন্য ক্ষতিকারক, প্রতিবেশীর কষ্টের কারণ এবং সম্পদের অপচয়।৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, وكره الله لكم إضاعة المال মহান আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য সম্পদের অপচয় করাকে অপছন্দ করেছেন।
৮. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
« كل أمتي معافى إلا المجاهرين»
আমার উম্মতের সব অপরাধীকে ক্ষমা করা হবে। তবে মুহাজিরকে ক্ষমা করা হবে না। অর্থাৎ যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে অপরাধ করে এবং কোন অপরাধ করে তা মানুষের সামনে প্রকাশ করে। ধূমপানকারী প্রকাশ্যে ধূমপান করে, অন্যদের ধূমপানের মত অপরাধকে উৎসাহ দেয়।৯. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فلا يؤذ جاره»
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয়া হারাম। আর ধূমপানকারী তার মুখের দুর্গন্ধ দ্বারা তার স্ত্রী, সন্তান ও প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয়। বিশেষ করে ফেরেশতা ও মুসল্লিরা তার মুখের দূর্গগন্ধের কারণে কষ্ট পায়।
দাড়ি বড় করার বিধান:
১. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللّهِ﴾
আর দাড়ি মুণ্ডন আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করার সামিল এবং শয়তানের অনুকরণ বৈ কিছুই না। [সূরা আন-নিসা: ১১৯]২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« جزوا الشوارب وأرخوا اللحى ، خالفوا المجوس» .
তোমরা গোপকে খাট কর, দাড়িকে বড় কর এবং অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা কর। অর্থাৎ দাড়ি যদি তোমাদের ঠোটের উপর বর্ধিত হয়, তখন বর্ধিতাংশ তোমরা কেটে ফেল। আর কাফেরদের বিরোধিতা স্বরূপ তোমরা তোমাদের দাড়িকে লম্বা কর।৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عشر من الفطرة ، قص الشارب ، وإعفاء اللحية ، والسواك واستنشاق الماء ، وقص الأظافر ....»
দশটি জিনিষ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। আর তা হল, গোপকে খাট করা দাড়িকে লম্বা করা, মিসওয়াক করা, পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা এবং হাত-পায়ের নখ কাটা....।৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব পুরুষরা নারীদের সাথে সাদৃশ্য রাখে, তাদের অভিশাপ করেন। আর দাড়ি মুণ্ডন নারীদের সাথে সাদৃশ্য রাখারই নামান্তর এবং আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হওয়ার কারণ।
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لكني أمرني ربي عز وجل أن أعفي لحيتي وأن أقص شاربي» .
তবে আমার রব আমাকে আদেশ দেন যে, আমি যেন আমার দাড়িকে বড় করি এবং গোপকে খাট করি। মনে রাখতে হবে, দাড়িকে বড় করা আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ, যা পালন করা অবশ্যই কর্তব্য বা ওয়াজিব।
মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা:
তুমি যদি দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ চাও তাহলে নিম্নে বর্ণিত উপদেশগুলো পালন কর।১. মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করবে। তাদের কখনোই কষ্ট দেবে না এবং তাদের ধমক দিয়ে কথা বলবে না। তাদের সাথে সুন্দর ও মনোরম ব্যবহার করবে।
২. তারা যদি কোন অন্যায়ের আদেশ না দেয়, তখন তাদের আদেশের আনুগত্য করবে। আর তারা যদি কোন অন্যায় কাজ করতে বলে, তাহলে তাদের অনুকরণ হতে বিরত থাকবে। কারণ, আল্লাহর নাফরমানিতে কোন মাখলুকের আনুগত্য নাই।
৩. মাতা-পিতার সাথে নম্র ব্যবহার করবে, তাদের সাথে মুখ কালাকালি করবে না এবং তাদের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাবে না।
৪. মাতা-পিতার সুনাম, মান-মর্যাদা ও তাদের ধন-সম্পত্তির সংরক্ষণ করবে। তাদের অনুমতি ছাড়া তাদের কোন কিছু ধরবে না।
৫. যে কাজ করলে তারা খুশি হয়, তা করা। যেমন, তাদের খেদমত করা, পড়া লেখা করা ও তাদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কিনে দেয়া।
৬. তোমার যাবতীয় কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করবে। যখন বাধ্য হয়ে তাদের কোন বিরোধিতা কর, তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও।
৭. তারা যদি তোমাকে ডাকে তাহলে, হাসি মুখে তাদের কথার উত্তর দিবে।
৮. তাদের মৃত্যুর পর তাদের জীবিত আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান প্রদর্শন করবে।
৯. তাদের সাথে ঝগড়া করবে না। তাদের কোন ভুল দেখলে, সঠিকটি সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেবে।
১০. তাদের সাথে কোন প্রকার হৎকারীতা করবে না। তাদের উপর তোমার আওয়াজকে উঁচা করবে না। তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে।
১১. মাতা-পিতা যখন তোমার নিকট প্রবেশ করবে তখন তাদের তুমি দাড়িয়ে সম্মান দিবে। তাদের মাথায় চুমু দিবে।
১২. ঘরের কাজ কর্মে মা সহযোগিতা করবে এবং বাহিরের কাজে পিতাকে সাহায্য করবে।
১৩. যত বড় গুরুত্বপূর্ণ কাজই হোক না কেন, তাদের অনুমতি ছাড়া বাহিরে কোথাও সফরে যাবে না। তারপরও যদি তুমি বাধ্য হও, তাহলে তুমি তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবে।
১৪. তাদের কামরায় তাদের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করবে না, বিশেষ করে তাদের ঘুম ও বিশ্রামের সময়।
১৫. তুমি যদি ধূমপানে অভ্যস্ত হও, তাহলে তাদের সামনে ধূমপান করবে না।
১৬. তাদের পূর্বেই খেতে বসবে না, খাওয়ার সময় তাদের সম্মান রক্ষা করে খাবে।
১৭. তাদের বিপক্ষে কোন মিথ্যা কথা বলবে না। আর তারা যদি তোমার অপছন্দ কোন কাজ করে, তুমি তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করো না।
১৮. তুমি স্ত্রী সন্তানদের মাতা-পিতার সন্তুষ্টির উপর প্রাধান্য দিবে না। সবকিছুর পূর্বে তুমি তাদের সন্তুষ্টি কামনা করবে। কারণ, আল্লাহর সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টি মাতা-পিতা সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির উপরই নির্ভর করে।
১৯. তাদরে আসন থেকে উঁচা কোন আসনে তুমি বসবে না। অহংকারী করে তাদের দিকে পা বিছিয়ে দিয়ে বসবে না।
২০. তুমি যত বড় নেতা বা চাকুরীজীবী হও, তাদের পরিচয় তুলে ধরতে তুমি কখনোই ভুল করবে না। তাদের পরিচয়কে অস্বীকার করতে এবং কোন কথার মাধ্যমে তাকে কষ্ট দেয়া হতে সম্পূর্ণ সতর্ক থাকবে।
২১. মাতা-পিতার জন্য খরচ করতে তুমি কখনোই কৃপণতা করবে না। এটি অবশ্যই স্ববিরোধী কাজ। কারণ, তোমার সন্তানও তোমার সাথে তাই করবে তুমি যা করে থাক।
২২. বেশি বেশি করে মাতা-পিতাকে দেখতে যাবে, তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের হাদিয়া নিয়ে যাবে। আর তারা ছোট বেলায় তোমাকে যে, লালন-পালন করছে, তার জন্য তাদের কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। তুমি তোমার সন্তানদের সাথে তোমার বিষয়টি তুলনা করে দেখবে।
২৪. সর্বাধিক সম্মানের হকদার তোমার মা তারপর তোমার পিতা। আর মনে রাখবে মাতা-পিতার পায়ের তলে সন্তানের বেহেস্ত।
২৫. মাতা-পিতার নাফরমানি করা হতে বিরত থাকবে। অন্যথায় দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত হবে। আর তোমার শিশুরা সে রকম আচরণ করবে, যেমনটি তুমি তাদের সাথে করেছিলে।
২৬. যখন মাতা-পিতা হতে কোন কিছু চাইবে, তখন নরম ভাবে চাইবে। যখন তোমাকে দিবে তখন তুমি তাদের শুকরিয়া আদায় করবে, আর যখন নিষেধ করবে, তখন তুমি ক্ষমা চাইবে। তাদের নিকট কোন কিছু পাওয়ার জন্য বাড়াবাড়ি করবে না।
২৭. যখন তুমি কামাই-রুজি করতে সক্ষম হবে, তখন তুমি তাই করবে এবং মাতা-পিতার সাহায্য করবে।
২৮. মনে রাখবে তোমার উপর তোমার মাতা-পিতার অধিকার রয়েছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার রয়েছে। সুতরাং, প্রত্যেক পাওনাদারকে তার পাওনা আদায় করবে। উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখবে এবং উভয়ের জন্য গোপনে হাদিয়া পাঠাবে।
২৯. যখন তোমার মাতা-পিতার তোমার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে, তখন তোমাকে অবশ্যই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে। তুমি তোমার স্ত্রীকে বোঝাবে যে, যদি সত্য তাদের সাথে হয়, তবে তুমি তাদের পক্ষের লোক এবং তাদের সন্তুষ্টি অর্জনে তুমি বাধ্য।
৩০. বিবাহের ব্যাপারে মাতা-পিতার সাথে যদি মতবিরোধ দেখা দেয়, তখন তোমরা শরীয়তের বিধানকে বিচারক মানবে। কারণ, তোমাদের জন্য উত্তম সহযোগী।
৩১. মাতা-পিতার দোয়া ও বদদোয়া উভয়ই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য। সুতরাং তুমি তাদের বদদোয়া বা অভিশাপ হতে বেচে থাকবে। ৩২. মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার কর, মানুষকে গালি দেবে না, কারণ, যে মানুষকে গালি দেয় মানুষও তাকে গালি দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من الكبائر شتم الرجل والديه ، يسب أبا الرجل فيسب أباه ويسب أمه فيسب أمه » .
৩৩. তাদের জীবদ্দশায় তাদের বেশি বেশি দেখতে যাবে। আর তাদের মৃত্যুর পর তাদের পক্ষ হতে তাদের নামে দান-খয়রাত কর। তাদের জন্য এ বলে বেশি বেশি দোয়া করবে-
[ رب اغفر لي ولوالدي] হে প্রভূ তুমি আমাকে এবং আমার মাতা-পিতাকে ক্ষমা কর। [ رب ارحمهما كما ربياني صغيرا ] . হে প্রভূ তুমি আমার মাতা-পিতার প্রতি অনুরুপ দয়া কর, যেমনটি তারা আমাকে ছোট বেলা লালন-পালন করেছিল।
No comments:
Post a Comment