দর্শক সংখ্যা

Thursday, February 7, 2013

কেয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর-৪

কেয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর-৪

যারা সে দিন আল্লাহ তাআলার ছায়াতে আশ্রয় পাবে--
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن الله يقول يوم القيامة : أين المتحابون بجلالي . اليوم أظلهم في ظلي . يوم لا ظل إلا ظلي. (رواه مسلم 1988)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন বলবেন, যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছে আমারই জন্য তারা আজ কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় ছায়া দান করবো। আজ এমন দিন আমার ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া নেই। (বর্ণনায় : মুসলিম ১৯৮৮)
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ- رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ- صَلَّى الله ُعَلَيْهِ وَسَلَّمَ- قَالَ : سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إلَّا ظِلُّهُ: إمَامٌ عَادِلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِيْ عِبَادَةِ اللهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِيْ المَسَاجِدِ، وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِيْ اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتَ مَنْصَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ : إنِّي أخَافُ اللهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ ) متفق عليه(
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামত দিবসে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তার ছায়া ব্যতীত ভিন্ন কোন ছায়া থাকবে না- ন্যায়পরায়ন বাদশা; এমন যুবক যে তার যৌবন ব্যয় করেছে আল্লাহর ইবাদতে; ব্যক্তি যার হৃদয় সর্বদা সংশি­ষ্ট থাকে মসজিদের সাথে ; এমন দু ব্যক্তি, যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবেসেছে, এবং বিচ্ছিন্ন হয়েছে তারই জন্য ; এমন ব্যক্তি, যাকে কোন সুন্দরী নেতৃস্থানীয়া এক রমণী আহ্বান করল অশ্লীল কর্মের প্রতি, কিন্তু প্রত্যাখ্যান করে সে বলল, আমি আল্লাহকে ভয় করি ; এমন ব্যক্তি, যে এরূপ গোপনে দান করে যে, তার বাম হাত ডান হাতের দান সম্পর্কে অবগত হয় না। আর এমন ব্যক্তি, নির্জনে যে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দু-চোখ বেয়ে বয়ে যায় অশ্রুধারা। (বুখারী ও মুসলিম)

عن أبي اليسر كعب بن عمرو رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من أنظر معسرا أو وضع له ، أظله الله يوم القيامة تحت ظل عرشه ، يوم لا ظل إلا ظله. (رواه مسلم 103)
আবু ইয়াসার কাআব ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে কোন ঋণগ্রস্ত বা অভাবী ব্যক্তিকে সুযোগ দেবে অথবা তাকে ঋণ আদায় থেকে অব্যাহতি দেবে আল্লাহ তাআলা তাকে নিজ ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। (মুসলিম ১০৩)

 কেয়ামতের দিন যাকে প্রথম ডাকা হবে, তিনি হলেন আদম আলাইহিস সালাম ---
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: أول من يدعى يوم القيامة آدم ، فتراءى ذريته ، فيقال : هذا أبوكم آدم ، فيقول : لبيك وسعديك ، فيقول : أخرج بعث جهنم من ذريتك ، فيقول : يا رب كم أخرج ، فيقول : أخرج من كل مائة تسعة وتسعين . فقالوا : يا رسول الله ، إذا أخذ منا من كل مائة تسعة وتسعون ، فماذا يبقى منا ؟ قال : إن أمتي في الأمم كالشعرة البيضاء في الثور الأسود
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন যাকে প্রথম ডাকা হবে তিনি হলেন আদম আলাইহিস সালাম। তিনি তার সন্তানদের দেখবেন। বলা হবে এ হল তোমাদের পিতা আদম। তিনি তখন বলবেন, উপস্থিত হয়েছি হে প্রভূ! আপনার কাছেই কল্যাণ। আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, তোমার সন্তানদের মধ্যে জাহান্নাম বাসীদের নিয়ে আসো। আদম বলবেন, হে প্রভূ, কত জনকে নিয়ে আসবো? আল্লাহ বলবেন, শত করা নিরানব্বই জনকে নিয়ে আসো। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যখন আমাদের একশ জনের মধ্য হতে নিরানব্বই জনকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে তাহলে বাকী থাকবে কে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন অন্যান্য উম্মতের সংখ্যার তুলনায় আমার উম্মত হবে এমন অল্প যেমন একটি কালো ষাড়ের গায়ে সাদা পশম থাকে। (বর্ণনায় : বুখারী)
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يقول الله تعالى : يا آدم ، فيقول : لبيك وسعديك ، والخير في يديك، فيقول : أخرج بعث النار ، قال: وما بعث النار ؟ قال : من كل ألف تسعمائة وتسعة وتسعين، فعنده يشيب الصغير، وتضع كل ذات حمل حملها، وترى الناس سكارى وما هم بسكارى، ولكن عذاب الله شديد . قالوا : يا رسول الله ، وأينا ذلك الواحد ؟ ثم قال : والذي نفسي بيده ، إني أرجو أن تكونوا ربع أهل الجنة . فحمدنا الله وكبرنا ، فقال : أرجو أن تكونوا ثلث أهل الجنة . فحمدنا الله وكبرنا ، فقال : أرجو أن تكونوا نصف أهل الجنة . فحمدنا الله وكبرنا ، فقال : ما أنتم في الناس إلا كالشعرة السوداء في جلد ثور أبيض ، أو كشعرة بيضاء في جلد ثور أسود أو كالرقمة في ذراع الحمار. (متفق عليه)
আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ বলবেন হে আদম! তখন আদম বলবেন, হে প্রভূ আমি উপস্থিত। আপনার হাতেই সৌভাগ্য ও সকল কল্যাণ। আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামীদের আমার কাছে উপস্থিত করো। আদম বলবেন, কত জন জাহান্নামী? আল্লাহ বলবেন প্রতি হাজারে নয় শত নিরানব্বই জন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন এটা হল সেই সময় যখন ভয়াবহ অবস্থার কারণে বাচ্চারাও বুড়ো হয়ে যাবে। প্রসব কারীনিরা প্রসব করে দেবে। আর তুমি মানুষকে দেখবে নেশাগ্রস্ত অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়। কিন্তু আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠিন। সাহাবায়ের কেরামের কাছে বিষয়টা কঠিন মনে হল। তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে আমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি সে, যে মুক্তি পাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, আমি আশা করি জান্নাতীদের চার ভাগের একভাগ হবে তোমরা। এ কথা শুনে আমরা আলহামদুলিল্লাহ বললাম ও আল্লাহ আকবর বললাম। তিনি বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, আমি আশা করি জান্নাতীদের তিন ভাগের একভাগ হবে তোমরা। এ কথা শুনে আমরা আলহামদুলিল্লাহ বললাম ও আল্লাহ আকবর বললাম। তিনি বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, আমি আশা করি জান্নাতীদের অর্ধেক হবে তোমরা। এ কথা শুনে আমরা আলহামদুলিল্লাহ বললাম ও আল্লাহ আকবর বললাম। তিনি বললেন, অন্যান্য জাতির তুলনায় তোমাদের সংখ্যা হবে এমন যেন একটি কালো ষাড়ের গায়ে কিছু সাদা লোম থাকে। অথবা গাধার পায়ের গোছার সাদা অংশের মত। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)  
হাদীস দুটো থেকে শিক্ষা, মাসায়েল ও জ্ঞাতব্য :
  এক. দেখা গেল এক হাদীসে শত করা নিরানব্বই জন জাহান্নামী হবে বলা হয়েছে। আবার অন্য হাদীসটিতে এক হাজারে নয় শত নিরা নব্বই জনের কথা বলা হয়েছে। আসলে কোনটি সঠিক। এর উত্তর হলো দুটোই সঠিক। যেখানে একশ জনে নিরানব্বই জনের কথা বলা হয়েছে সেখানে উম্মতে মুহাম্মাদী উদ্দেশ্য হবে। অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমনের পরে যে সকল মানুষ জন্ম গ্রহণ করেছে তাদের একশ জনের একজন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। আর যেখানে এক হাজারে নয় শত নিরানব্বই জনের কথা বলা হয়েছে সেখানে পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত মানুষ জন্ম নিয়েছে তাদের হাজারে একজন মুক্তি পাবে।    
দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতীদের চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ সর্বশেষে অর্ধেক হবে তার অনুসারীদের মধ্য থেকে যে কথা বলেছেন সেটা হল তার আশা-আকাংখা। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার এ আশা পূরণ করবেন বলে হাদীসে এসেছে।
তিন. উম্মতে মুহাম্মাদীর ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল এ হাদীস দিয়ে। মোট জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে তারা জান্নাত বাসীদের মধ্যে সংখ্যায় অনেক বেশী হবে।    
চার. যখন জাহান্নামী আর জান্নাতীদের বাছাই করা হবে তখনকার অবস্থার ভয়াবহতার একটি চিত্র এ হাদীসে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ নিজে এ সম্পর্কে বলেছেন :
وَامْتَازُوا الْيَوْمَ أَيُّهَا الْمُجْرِمُونَ ﴿59﴾أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آَدَمَ أَنْ لَا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ ﴿60﴾ وَأَنِ اعْبُدُونِي هَذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ ﴿61﴾ وَلَقَدْ أَضَلَّ مِنْكُمْ جِبِلًّا كَثِيرًا أَفَلَمْ تَكُونُوا تَعْقِلُونَ ﴿62﴾ هَذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ ﴿63﴾ اصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ ﴿64﴾ (سورة يس)
  আর [বলা হবে] হে অপরাধীরা, আজ তোমরা পৃথক হয়ে যাও। হে বনী আদম, আমি কি তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ? আর আমারই ইবাদাত কর। এটিই সরল পথ। আর অবশ্যই শয়তান তোমাদের বহু দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা অনুধাবন করনি? এটি সেই জাহান্নাম, যার সম্পর্কে তোমরা ওয়াদাপ্রাপ্ত হয়েছিলে। তোমরা যে কুফরী করতে সে কারণে আজ তোমরা এতে প্রবেশ কর। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৫৯-৬৪) পাঁচ. ভাল কোন কিছু শুনলে আলহামদুলিল্লাহ বলা ও আল্লাহু আকবর বলা সুন্নাত।  

 যাকাত পরিত্যাগকারীর শাস্তি--- আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آَتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ (سورة آل عمران)
আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। আর আসমানসমূহ ও যমীনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই জন্য। আর তোমরা যা আমল কর সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮০)
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ ﴿34﴾ يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ ﴿35﴾
এবং যারা সোনা ও রূপা (টাকা-পয়সা) পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর। (সূরা আত তাওবা, আয়াত ৩৪-৩৫)  

 আয়াত দুটো থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
 এক. কৃপণতা একটি নিন্দনীয় কাজ।
দুই. কৃপণতা কখনো কল্যাণ বয়ে আনে না।
 তিন. ধন-সম্পদ আল্লাহ তাআলারই দান।
 চার. কৃপণতা করে সঞ্চিত ধন-সম্পদ কেয়ামতে শাস্তির কারণ হবে।
 পাঁচ. টাকা পয়সা ধন-সম্পদে গরিবদের যে অধিকার আছে তা যাকাত দানের মাধ্যমে আদায় না করলে কেয়ামতে এগুলো শাস্তির মাধ্যম হবে।
 ছয়. এ অপরাধে কি ধরনের শাস্তি দেয়া হবে তা বর্ণনা করা হয়েছে। হাদীসে এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من آتاه الله مالا فلم يؤد زكاته مثل له ماله شجاعا أقرع ، له زبيبتان ، يطوقه يوم القيامة ، يأخذ بلهزمتيه - يعني بشدقيه - يقول : أنا مالك أنا كنزك . ثم تلا هذه الآية : { ولا يحسبن الذين يبخلون بما آتاهم الله من فضله } . إلى آخر الآية .
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যাকে আল্লাহ তাআলা সম্পদ দিলেন কিন্তু সে যাকাত আদায় করলো না তার সম্পদকে বিষধর চুলওয়ালা সাপে পরিণত করা হবে। যার শিংয়ের মত দুটো বিষাক্ত দাঁত থাকবে। কেয়ামতের দিন এ সাপ তার গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। এ দিয়ে সে তাকে দংশন করতে থাকবে আল বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চয়। এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন :
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آَتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। বর্ণনায় : বুখারী হাদীসে এসেছে :
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ما من صاحب ذهب ولا فضة ، لا يؤدي منها حقها ، إلا إذا كان يوم القيامة ، صفحت له صفائح من نار ، فأحمي عليها في نار جهنم . فيكوى بها جنبه وجبينه وظهره . كلما بردت أعيدت له . في يوم كان مقداره خمسين ألف سنة . حتى يقضى بين العباد . فيرى سبيله . إما إلى الجنة وإما إلى النار .
আবু হুরাইরা রা. থেকে একটি দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে সকল স্বর্ণ রৌপ্য (টাকা পয়সা) সঞ্চয়কারী সম্পদের হক (যাকাত) আদায় করেনি, সেগুলোকে কেয়ামতের দিন আগুনে দিয়ে পাত বানানো হবে। জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে। অত:পর তা দিয়ে তার পার্শদেশ, কপাল ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। যখনই তা ঠান্ডা হবে আবার গরম করা হবে। সে দিনটির সময়ের পরিমাণ হবে হাজার। এ শাস্তি হবে মানুষের মধ্যে বিচার ফয়সালার পূর্বে। এরপর জান্নাতীরা জান্নাতে যাবে আর জাহান্নামীরা যাবে জাহান্নামে। (বর্ণনায় :মুসলিম)      
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. দরিদ্র মানুষের অধিকার যাকাত আদায় না করে সম্পদ সঞ্চয় করে রাখা অন্যায়
 দুই. সঞ্চয়কৃত সম্পদ দিয়েই সম্পদের মালিককে শাস্তি দেয়া হবে।
 তিন. হিসাব নিকাশ ও জান্নাত জাহান্নামের ফয়সালা হওয়ার পূর্বে এ শাস্তি দেয়া হবে।  
চার. পৃথিবীর সময়ের হিসাবে কেয়ামত দিবসের সময়ের পরিমাণ হবে হাজার বছর। হাদীসে এসেছে
عن جابر رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ما من صاحب كنز لا يفعل فيه حقه ، إلا جاء كنزه يوم القيامة شجاعا أقرع يتبعه ، فاغرا فاه فإذا أتاه فر منه ، فيناديه ربه عز وجل : خذ كنزك الذي خبأته ، فأنا أغنى منك ، فإذا رأى أنه لا بد له منه ، سلك يده في فيه ، فيقضمها قضم الفحل.
জাবের রা. থেকে একটি দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে সঞ্চিত সম্পদের মালিক তার পাওনা (যাকাত) আদায় করেনি, কেয়ামতের দিন সেই সম্পদ একটি বিষধর সাপ হয়ে আসবে। সাপটি মুখ হা করে তাকে ধাওয়া করতে থাকবে আর সে পালাতে চেষ্টা করবে। আল্লাহ তাআলা তাকে ডাক দিয়ে বলবেন, তোমার সম্পদ গ্রহণ করো, যা তুমি সঞ্চয় করেছিলে। আমি তোমার সম্পদের মুখাপেক্ষী নই। যখন সে দেখবে যে সাপটি থেকে বাঁচা সম্ভব নয় তখন সে নিজেই তার মুখে হাত ডুকিয়ে দেবে। সাপটি এমনভাবে তার হাত গ্রাস করবে যেমন উট ঘাস মুখে নেয়। (বর্ণনায় : মুসলিম)

No comments:

Post a Comment