পিতা-মাতা ও সন্তানের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপদেশ:-২
১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« كلكم راع وكلكم مسؤول عن رعيته ، فالإمام راع ومسؤول عن رعيته ، والرجل راع في أهله وهو مسؤول عن رعيته ، والمرأة في بيت زوجها راعية ، وهي مسؤولة عن رعيتها ، والخادم في مال سيده راع وهو مسؤول عن رعيته »
অর্থ, “তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল! তোমাদের সকলকে তোমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন ইমাম সে অবশ্যই একজন দায়িত্বশীল, তাকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন পরিবারের কর্তা সে তার পরিবারের দায়িত্বশীল। তাকে অবশ্যই তার পরিবারের যারা তার অধীনস্থ তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন মহিলা সে তার স্বামীর ঘরে দায়িত্বশীল, তাকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। আর একজন চাকর সে তার মালিকের ধন-সম্পদের দায়িত্বশীল! তাকে তার দায়িত্বের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।” [বুখারী, মুসলিম]
২. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ কি? তিনি উত্তরে বললেন,
« أن تجعل لله نداً وهو خلقك ، قلت : ثم أي ؟ قال : أن تقتل ولدك خشية أن يطعم معك ، قلت : ثم أي ، قال : أن تزني بحليلة جارك» .
“আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, যে আল্লাহ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” আমি বললাম, তারপর মারাত্মক অপরাধ কোনটি? তিনি বললেন, “তোমার সন্তান তোমার সাথে খাবে এ ভয়ে তুমি তাকে হত্যা করলে।” আমি বললাম, তারপর মারাত্মক অপরাধ কোনটি? তিনি বললেন, “তুমি তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করলে।” [বুখারী, মুসলিম]
৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, اتقوا الله وأعدلوا في أولادكم “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের বিষয়ে ইনসাফ কর।” [বুখারী, মুসলিম] অর্থাৎ, তোমাদের সন্তানদের বিষয়ে তাদের ধন-সম্পত্তিতে, অনুদানের ক্ষেত্রে ও যাবতীয় সব বিষয়ে তুমি ইনসাফ কর।
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« كل مولود يولد على الفطرة ، فأبوه يهودانه ، أو ينصرانه ، أو يمجسانه كمثل البهيمة تنتج البهيمة ، هل ترى فيها جدعاً» .
“প্রতিটি নবজাত শিশু ফিতরাত তথা ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে, তারপর তার পিতা তাকে ইয়াহুদি বানায়, খ্রিষ্টান বানায়, অথবা অগ্নি-উপাসক বানায়। যেমন, চতুষ্পদ জন্তু সে একটি জন্তু জন্ম দেয়, কিন্তু তার মধ্যে কোনটিকেই তুমি কান কাটা দেখতে পাবে না।” [বুখারী]
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ,
« من الكبائر أن يشتم الرجل والديه ، يسب أبا الرجل فيسب أباه ، ويسب أمه فيسب أمه » .
“কবিরা গুনাহের একটি বড় ধরনের কবিরা গুনাহ হল, কোন লোক তার মাতা-পিতাকে গালি দেওয়া। যেমন, সে কোন লোকের পিতাকে গালি দিল, তখন লোকটিও তার পিতাকে গালি দিল অথবা সে অন্যের মাকে গালি দিল এবং সে লোকও তার মাকে গালি দিল।” [বুখারী, মুসলিম]
৬. এক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে জিজ্ঞাসা করে বলল,
« يا رسول الله ، من أحق الناس بحسن صحابتي ؟ قال : أمك ، قال : ثم من ؟ قال : أمك ، قال : ثم من ؟ قال : أمك ، قال ثم من ؟ قال : أبوك » .
হে আল্লাহর রাসূল! আমি সর্বোত্তম ব্যবহার কার সাথে করব? তিনি বললেন, “তোমার মায়ের সাথে।” সে বলল, তারপর কার সাথে? তিনি বললেন, “তোমার মায়ের সাথে।” তারপর লোকটি বলল, তারপর কার সাথে? তিনি বললেন, “তোমার মায়ের সাথে।” সে বলল, তারপর কার সাথে? তিনি বললেন, “তোমার পিতার সাথে।” [বুখারী, মুসলিম]
মাতা-পিতা ও অভিভাবকদের দায়িত্ব:
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
“হে ঈমানদারগণ তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কর।” একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, পিতা-মাতা, অভিভাবক ও সমাজের দায়িত্বশীলদের নতুন প্রজন্মের শিশু, কিশোর ও যুবকদের শিক্ষা-দীক্ষা বিষয়ে অবশ্যই আল্লাহর সম্মুখে জবাবদিহি করতে হবে। তারা যদি তাদের ভালো শিক্ষা দিয়ে থাকে, তাহলে দুনিয়া ও আখিরাতে তারা নিজেরাও সফল হবে এবং নতুন প্রজন্মও সফল হবে। আর যদি তারা তাদের শিক্ষা দিতে অলসতা করে, তখন তারাও তার পরিণতি ভোগ করবে এবং তাদের অপরাধের শাস্তি তাদেরও ভোগ করতে হবে। কারণ, হাদিসে বলা হয়েছে, كلكم راع ، وكلكم مسئول عن رعيته . তোমরা সবাই দায়িত্বশীল তোমাদের সবাইকে তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
হে অভিভাবক বা শিক্ষক! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী আপনাদের জন্য সুখবর! কারণ, তিনি বলেন,
فوالله لان يهدي الله بك رجلاً واحداً خير لك من حمر النعم
“তোমার দ্বারা যদি একজন মানুষকেও হেদায়েত দেয়া হয়, তা তোমার জন্য আরবের সবচেয়ে মূল্যবান উট লাল উট হতেও উত্তম।”
আর আপনারা যারা মাতা-পিতা হয়েছেন, আপনাদের জন্য সু-সংবাদ হল, রাসূলের বিশুদ্ধ হাদিস.. তিনি বলেন,
« إذا مات الإنسان انقطع عمله إلا من ثلاث : صدقة جارية أو علم ينتفع به ، أو ولد صالح يدعوا له» .
“মানুষ যখন মারা যায় তিনটি আমল ছাড়া আর সব আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তিনটি আমল হল, সদকায়ে জারিয়া, এমন ইলম যার দ্বারা জাতি উপকৃত হয়, অথবা নেক সন্তান যারা তার মৃত্যুর পর তার জন্য দোয়া করে।”
কাজেই হে অভিভাবক! প্রথমে আপনি আপনার নিজের আমলকে সুন্দর করতে চেষ্টা কর। আপনি যা করেন তাই শিশুদের নিকট ভালো কাজ আর আপনি যে সব কাজ করা ছেড়ে দেবেন, তাই হল, শিশুদের নিকট খারাপ কাজ। মাতা-পিতা ও অভিভাবকরা শিশুদের সামনে ভালো কাজ করাটাই হল, তাদের জন্য অতি উত্তম শিক্ষা, এর চেয়ে উত্তম আর কোন শিক্ষা হতে পারে না।
অভিভাবক ও শিক্ষকদের কর্তব্য:
১. শিশুদের لا إله إلا الله ، محمد رسول الله দ্বারা কথা শিখানো। আর শিশুরা যখন বড় হবে তখন তাদের এ কালিমার অর্থ শেখাবে। কালিমার অর্থ হল, “আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নাই, তার কোন শরিক নাই।”
২. শিশুর অন্তরে আল্লাহর মহব্বত ও আল্লাহর প্রতি ঈমানের বীজ জীবনের শুরুতেই বপন করে দিতে হবে। কারণ, আল্লাহই আমাদের স্রষ্টা, রিযিকদাতা ও আমাদের সাহায্যকারী; তিনি একক তার কোন শরীক নাই।
৩. শিশুদের এ কথা শিখানো যে, তারা যেন সব সময় সবকিছু আল্লাহর নিকটই চায় এবং সাহায্যের প্রয়োজন হলে, আল্লাহর নিকটই চায়। কারণ, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে বলেন,
« إذا سألت فاسأل الله ، وإذا استعنت فاستعن بالله» .
“যখন কোন কিছু চাইবে তখন তুমি আল্লাহর নিকট চাইবে, আর যখন কোন সাহায্য চাইবে তখনও আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে।” [তিরমিযী]
নিষিদ্ধ কাজ হতে শিশুদের দূরে রাখা:-
১. শিশুদের কুফর, শিরক, গালি দেয়া, অভিশাপ দেয়া ও অনৈতিক কথা-বার্তা বলা হতে বিরত রাখা। তাদের সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেয়া যে, কুফর হল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ, তা মানুষকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যায় এবং জাহান্নামে প্রবেশের কারণ হয়। আর আমাদের উপর কর্তব্য হল, আমরা তাদের সামনে আমাদের জবানকে হেফাজত করব, তাদের সামনে কখনোই বাজে কথা বলব না, যাতে আমরা তাদের জন্য অনুকরণীয় ও আদর্শ হতে পারি।
২. আল্লাহর সাথে শিরক করা হতে বিরত থাকতে হবে। যেমন, মহান আল্লাহকে বাদ দিয়ে কোন মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা, তাদের নিকট সাহায্য চাওয়া ও আরোগ্য লাভের জন্য তাদের নিকট সাহায্য চাওয়া। অথচ, তারা মহান আল্লাহরই বান্দা, কোন ক্ষতি বা উপকার করতে পারে না। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلاَ تَدْعُ مِن دُونِ اللّهِ مَا لاَ يَنفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ فَإِن فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِينَ﴾
অর্থ, “আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন বস্তুকে ডেকো না; যা তোমার উপকার ও ক্ষতি করতে পারে না। তারপরও যদি তুমি তাই কর, তখন অবশ্যই তুমি যালিমদের অন্তর্ভক্ত হবে।”
৩. তাস, জুয়া, লটারি, বাজি ইত্যাদি হতে শিশুদের দূরে রাখতে হবে, কখনোই তাদের সামনে এগুলো পেশ করা যাবে না, যদিও এগুলো দিয়ে তাদের সান্ত্বনা বা খুশি করার জন্য হয়। কারণ, তা মানুষকে জুয়ার দিকে নিয়ে যায় এবং মানুষের মধ্যে রেষারেষি ও দুশমনি সৃষ্টি করে। এগুলো শিশুদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, এগুলোর কারণে তাদের সময় নষ্ট, মালামাল অপচয়, পড়ালেখার ক্ষতি ও তাদের সালাত নষ্ট করার কারণ হয়। অনেক সময় এসবের মধ্যে মগ্ন হওয়ার কারণে অন্য দিকে আর মনোযোগ দিতে পারে না।
৪. তাদের অশ্লীল পত্র-পত্রিকা, উলঙ্গ ছবি সম্বলিত ম্যাগাজিন, মিথ্যা বানোয়াট গোয়েন্দা উপন্যাস বা গল্পের বই পড়া হতে অবশ্যই বিরত রাখতে হবে। অশ্লীল সিনেমা, টেলিভিশন ও সিডি, বি-সিডি যাতে না দেখে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ, এ গুলো সবই তাদের আখলাক-চরিত্র ও নীতি-নৈতিকতার জন্য হুমকি ও ভবিষ্যতের অত্যন্ত ক্ষতিকর।
৫. শিশুদের ধুমপান হতে দূরে রাখতে হবে। আর তাদের এ কথা বুঝাতে হবে, সমস্ত ডাক্তাররা এ কথার উপর ঐকমত্য পোষণ করে যে, ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ধুমপানে ক্যানসার হয়, রক্তকে দূষিত করে, দাঁত নষ্ট করে, দুর্গন্ধ ছড়ায় ও ধুমপান মানুষের হার্ডের জন্য ক্ষতিকর। ধুমপান মানব দেহের কোন উপকারে আসে না। সুতরাং, ধুমপানের বেচা-কেনা ও পান করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শিশুদের ধুমপানের বিকল্প হিসেবে ফল-মূল ইত্যাদি খেতে উপদেশ দেবেন।
৬. সত্য কথা বলা ও সত্য পথে চলার জন্য তাদের অভ্যস্ত করবেন। আমরা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে হলেও তাদের সামনে মিথ্যা কথা বলবো না। আর আমরা যখন তাদের কোন ওয়াদা দেবো তা পূরণ করবো। হাদিসে বর্ণিত আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ,
« آية المنافق ثلاث : إذا حدث كذب ، وإذا وعد أخلف ، وإذا أؤتمن خان» .
অর্থ, “মুনাফেকের আলামত তিনটি: যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, আর যখন ওয়াদা করে খেলাফ করে, আর যখন তার নিকট আমানত রাখা হয়, তখন সে তার খেয়ানত করে।” [বুখারী, মুসলিম]
৭. আমরা আমাদের শিশুদের হারাম খাদ্য হতে খাওয়াবো না। যেমন, সুদ, ঘুষ ও চুরি ডাকাতি ইত্যাদির পয়সা দ্বারা তাদের বড় করবো না। কাউকে ধোঁকা দিয়ে উপার্জিত সম্পদ হতে তাদের কিছু কিনে দেবো না। কারণ, এ সব হল, সন্তান অবাধ্য, অসভ্য ও বেআদব হওয়ার কারণ।
৮. শিশুদের আদর যত্ন ও স্নেহ মমতা দিয়ে লালন-পালন করবে। তাদের সাথে কখনো কোন প্রকার খারাপ ব্যবহার করা উচিত না। তাদের ধ্বংসের জন্য অভিশাপ দেয়া হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। কারণ, ভালো দোয়া ও খারাপ দোয়া সবই গ্রহণ করা হতে পারে। এতে কোন কোন সময় তাদের গোমরাহি আরও বৃদ্ধি পায়। তবে উত্তম হল, আমরা শিশুদের বলব, মহান আল্লাহ তোমার সংশোধন করুক।সালাত কীভাবে আদায় করতে হয় তা শিক্ষা দেয়া:-
১. শিশু ছেলে-মেয়েদের ছোট বেলাতেই সালাত কীভাবে আদায় করতে হয়— তা শিক্ষা দেবেন, যাতে বড় হলে সালাত আদায় করতে অভ্যস্ত হয়। যেমন, বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,
«علموا أولادكم الصلاة إذا بلغوا سبعاً ، واضربوهم عليها إذا بلغوا عشرا ، وفرقوا بينهم في المضاجع» .
“তোমরা তোমাদের শিশুদের সাত বছর বয়সে সালাতের তালীম দাও। আর যখন দশ বছর হয়, তখন তোমরা তাদের সালাত আদায় না করার কারণে প্রহার কর। আর তোমরা তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।” [আল-জামে‘ আস-সহীহ] তাদের ওজু করে দেখাবে, তাদের সামনে সালাত আদায় করে, তাদের দেখাবে। তাদের নিয়ে মসজিদে যাবে। যে বই পুস্তকে সালাতের নিয়মাবলী আছে, তা তাদের পড়তে দেবে, যাতে তাদের উসিলায় পরিবারের সবাই শিখতে পারে। তাদের সালাত আদায়ের নিয়ম শিখানো, মাতা-পিতা ও অভিভাবকের নৈতিক দায়িত্ব। তারা যদি দায়িত্ব পালনে অলসতা করে, মহান আল্লাহ তাদের অবশ্যই জিজ্ঞাসা করবে।২. শিশুদের কুরআন শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমে সূরা ফাতেহা শিক্ষা দিবেন। তারপর ছোট ছোট সূরা গুলো শিক্ষা দিবেন। সালাতে পড়ার জন্য আত্-তাহিয়্যাতু শেখাতে হবে। আর যদি মাতা-পিতা সময় না পায়, তবে তাদের জন্য বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষা, কুরআন হিফয করা ও হাদিস মুখস্থ করা ইত্যাদির জন্য একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা করবে, যিনি তাদের বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত ও সালাতের তালীম দেবে।
৩. শিশুদের জুমার সালাতে উপস্থিত হতে অনুমতি দেবেন, মসজিদের সালাতের জামাতে উপস্থিত হতে উৎসাহ প্রদান করবেন। তারা মসজিদের গিয়ে বড়দের পিছনে দাঁড়াবে। তারা যদি কোন ভুল করে, তবে তাদের খুব যত্ন সহকারে বুঝিয়ে বলবেন। তাদের কোন প্রকার ধমক দেবে না এবং তাদের সাথে চেঁচামেচি করবেন না। কারণ, যদি এ কারণে সালাত ছেড়ে দেয়, মসজিদে আসা বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমরা গুনাহগার হবো। ৫. ছোট শিশুরা যখন সাত বছর হবে, তখন তাদের রোজা রাখার জন্য তালিম দেবেন, যাতে বড় হলে তাদের রোজা রাখতে কোন প্রকার কষ্ট না হয়।
পর্দা করার জন্য উৎসাহ দেয়া:
১. ছোট ছেলে মেয়েদের ছোট বেলা থেকেই পর্দা করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করবে, যাতে তারা বড় হলে পর্দাকে অপরিহার্য মনে করে। তাদের কখনোই ছোট বা পাতলা কাপড় পরিধান করাবে না এবং মেয়েদের পুরুষদের মত এক কাপড় পরিধান করাবে না। কারণ, এ হল কাফের-বেদ্বীনদের স্বভাব, এতে যুব সমাজ ফিতনার মুখোমুখি হয় এবং এ ধরনের পোশাক পরিধান করা তাদের চারিত্রিক অধঃ:পতনের কারণ হয়। আমাদের কর্তব্য হল, আমরা আমাদের মেয়েদের বয়স যখন সাত বছর হবে, তখন থেকে বাধ্য করব, তারা যাতে তাদের মাথাকে ওড়না দিয়ে ডেকে রাখে। আর যখন সে প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখন তাকে অবশ্যই চেহারাও ডেকে রাখতে হবে। কালো পোশাক বা বোরকা পরার জন্য তাদের নির্দেশ দিতে হবে। কুরআন সব নারীদের পর্দা করার প্রতি উদাত্ত আহ্বান করে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا﴾ ،
“হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে কন্যাদেরকে ও মুমিনদেরকে বল, তারা যেন তাদের জিল-বাবের কিছু অংশ নিজদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে।ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” [সূরা আল-আহযাব: ৫৯]
মহান আল্লাহ তা‘আলা নারীদের জাহিলিয়্যাতের যুগের মত সাজ-সজ্জা অবলম্বন করতে এবং ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى ﴾ .
অর্থ, “আর তোমরা তোমাদের নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।” [সূরা আল-আহযাব: 32-33]
২. শিশুদের এমন কাপড় পরাতে হবে, যাতে মেয়েদের পোশাক তাদের ছেলেদের পোশাক হতে সম্পূর্ণ আলাদা হয়। আর তারা যেন অশালীন ও বেমানান পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকে। একেবারে চিপা, সংকীর্ণ ও পাতলা কাপড় যাতে শরীর দেখা যায়, এ ধরনের পোশাক পরিধান হতে বিরত থাকবে। বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের থেকে যারা পুরুষদের সাথে সাদৃশ্য রাখে তাদের এবং পুরুষদের থেকে যারা নারীদের সাথে সাদৃশ্য রাখে তাদের অভিশাপ করেছেন। আর তিনি পুরুষদের থেকে যারা নারীদের ভেশ-ভুসা অবলম্বন করে এবং নারীদের থেকে যারা পুরুষদের ভেশ-ভুসা অবলম্বন করে তাদের অভিশাপ করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من تشبه بقوم فهو منهم» .
“যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের লোকের সাথে সাদৃশ্য রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” [আবু দাউদ]
আদব আখলাক শিক্ষা দেয়া:১. শিশুদের উত্তম আচার-ব্যবহার শেখাবে। তাদের খানা-পিনা, দেওয়া-নেওয়া ইত্যাদিতে ডান হাত ব্যবহার করার অভ্যাস করাবে। খাওয়া-দাওয়া যাতে দাঁড়িয়ে না করে বসে করে, সে জন্য তাকে তার জীবনের শুরু থেকেই শিক্ষা দেবে। যে কোন কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়তে বলবে, আর শেষে ‘আলহামদু-লিল্লাহ’ বলতে তালীম দেবে।
২. শিশুদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। তাদের হাত পায়ের নখগুলো কেটে দিতে হবে। মিসওয়াক করার ব্যাপারে তাদের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধোয়ার নিয়ম শিখিয়ে দিবে। পাক-পবিত্রতা কীভাবে অর্জন করতে হয়, তা শিখাতে হবে। পেশাব পায়খানার পর টিলা কুলুখ বা টিসু পেপার ব্যবহারের পদ্ধতি শেখাবে। তারা যাতে তাদের পোশাক পরিচ্ছদ নাপাক করে না ফেলে, সে বিষয়ে বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
৩. যদি তাদের থেকে কোন ভুল প্রকাশ পায়, তাহলে আমরা গোপনে তাদের উপদেশ দেবো, মানুষের সামনে কোন প্রকার লজ্জা দেবো না। তারপরও যদি তারা তাদের অন্যায়ের উপর অটল থাকে, তাহলে তার সাথে তিন দিন পর্যন্ত কথা-বার্তা বলা ছেড়ে দেবো, তিন দিনের বেশি নয়।
৪. আযানের সময় শিশুদের চুপ থাকতে বলব এবং তাদেরকে মুয়াজ্জিনের সাথে আযানের বাক্যগুলো শিখিয়ে দিবে। আযান শেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাত আদায় করবে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলার নিকট ওসিলা কামনা করবে।
« اللهم رب هذه الدعوة التامة ، والصلاة القائمة ، آت محمد الوسيلة والفضيلة ، وأبعثه مقاماً محموداً الذي وعدته» .
অর্থ, “হে আল্লাহ! তুমিই এ পরিপূর্ণ আহ্বান ও শাশ্বত সালাতের প্রকৃত মালিক। তুমি দাও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্মানিত স্থান ও মহা মর্যাদা। আর তাকে তুমি পৌঁছে দাও প্রশংসিত স্থান যার ওয়াদা তুমি তাকে দিয়েছ।”৫. প্রতিটি শিশুর জন্য বিছানা আলাদা করে দিতে যথা সম্ভব চেষ্টা করবে। আর তা যদি সম্ভব না হয়, কমপক্ষে প্রত্যেকের জন্য আলাদা খাতা কম্বল ও লেপের ব্যবস্থা করতে। আর উত্তম হল, মেয়েদের জন্য একটি কামরা আর ছেলেদের জন্য একটি কামরা নির্ধারণ করে দেয়া, যাতে তাদের চরিত্র ভালো ও কলঙ্কমুক্ত থাকে।
৬. তারা যাতে ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলে, সে জন্য তাদের বোঝাতে হবে। আর রাস্তা থেকে যে কোন ধরনের কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে রাখার ব্যাপারে তাদের উৎসাহ দিতে হবে।
৭. খারাপ ছেলেদের সাথে যাতে না মিশে, এ বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে।
৮. শিশুদের সালাম দেয়ার বিষয়ে তালীম দিতে হবে। ঘরে প্রবেশের সময়, রাস্তায় চলাচলের সময়, মানুষের সাথে দেখা হলে السلام عليكم ورحمة الله وبركاته বলে সালাম দেবে।
৯. প্রতিবেশীদের সাথে ভালো ব্যবহার করার প্রতি তাদের উপদেশ দেবে এবং তাদের যাতে কোন প্রকার কষ্ট না দেয় তার জন্য বিশেষ সতর্ক করবে।
১০.শিশুদের মেহমানের মেহমানদারি করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মেহমানের সম্মান প্রদর্শন, মেহমানের জন্য মেহমানদারি পেশ করার অভ্যাস গড়ে তুলবে।
জিহাদ ও সাহসিকতা:
১. পরিবারের লোকদের মিলিয়ে একটি মজলিশের আয়োজন করবে। তাতে পরিবারের সদস্যদের ও ছাত্রদের নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীদের জীবনী পড়ে শোনাবে। যাতে তারা জানতে পারে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন একজন সত্যিকার সাহসী নেতা আর তার সাহাবী আবু বকর রা., ওমর রা., ওসমান রা., আলী রা. ও মুয়াবিয়া রা. -সহ আরও অন্যান্য সাহাবীর ইসলামী দুনিয়াকে মুসলিমদের জন্য বিজয়ী করেন। আর তারাই ছিল আমাদের হেদায়েত ও মুক্তিলাভের অন্যতম কারণ। তারা তাদের ঈমান, কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন, উন্নত চরিত্র ও সাহসিকতার কারণে সারা দুনিয়াতে বিজয় লাভ করে।
২. শিশুদের সাহসের অনুশীলন করাতে হবে। ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ ব্যাপারে তাদের উৎসাহ দিতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে যে, তারা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় না পায়। তবে তাদের মিথ্যা, ভ্রান্ত কথা-বার্তা ও অন্ধকার দিয়ে ভয় দেখানো বৈধ হবে না। ৩. আমাদের শিশুদের অন্তরের ইয়াহুদী ও জালিমদের থেকে প্রতিশোধ নেয়ার স্পৃহা জাগ্রত করবে। আমাদের জওয়ানরা যখন ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হবে তখন আল্লাহর রাহে জিহাদের মাধ্যমে অবশ্যই ফিলিস্তিন ও বাইতুল মুকাদ্দাসকে ইয়াহুদীদের হাত থেকে মুক্ত করবে। মহান আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাদের সাহায্য করবে এবং বিজয়দান করবে।
৪. তাদের জন্য শিক্ষণীয় ও উপদেশমূলক বই ক্রয় করবে। যাতে তারা তা থেকে কিছু শিখতে পারে। যেমন, আল-কুরআনের কাহিনী সমগ্র, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী, সাহাবীদের জীবনী, সালাহ উদ্দিন আইউবীর জীবনী, কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আক্বীদা ইত্যাদি।
শিশুদের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করা
১. নোমান ইবনে বাশীর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« تصدق عليَ أبي ببعض ماله ، فقالت أمي - عمرة بنت رواحة - لا أرضى حتى تشهد رسول الله صلى الله عليه وسلم ليشهده على صدقتي ، فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم أفعلت هذا بولدك كلهم ؟ قال لا ، قال اتقوا الله ، واعدلوا بين أولادكم» .
“আমার পিতা তার সম্পত্তির কিছু অংশ আমাকে দান করে দেন, তখন আমার মা উমরা বিনতে রাওয়াহা বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানানো ছাড়া আমি আমার সদকার উপর রাজি হব না। তারপর বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হল। তিনি জানার পর বললেন, তুমি তোমার সব সন্তানদের কি এভাবে দান করেছ? সে বলল, না, তারপর তিনি বললেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং সন্তানদের মাঝে ইনসাফ কর।” [বুখারী, মুসলিম]
অপর এক বর্ণনাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, فلا تشهدوني إذاً ، فإني لا أشهد على جور অর্থাৎ, “তাহলে তুমি আমাকে এ বিষয়ে সাক্ষী বানাবে না, কারণ, আমি অন্যায় কাজের উপর সাক্ষী হতে পারি না।” [মুসলিম, নাসায়ী]২. হে মুসলিম ভাইয়েরা! তোমরা কখনোই সন্তানদের বিষয়ে বে-ইনসাফ করবে না। তাদের বিষয়ে যদি তোমরা কোন কিছু দান করা অথবা তাদের কারো বিষয়ে যদি তোমরা ওসিয়াত কর, তাহলে তা তোমরা ইনসাফের ভিত্তিতে কর। সন্তানদের থেকে কাউকে বঞ্চিত করো না। বরং, সবচেয়ে ভালো হয়, আল্লাহ তা‘আলা যা নির্ধারণ ও বণ্টন করেছে, তার উপর কোন প্রকার হস্তক্ষেপ না করা। মনে চাইলে কোন সন্তানকে অন্যদের উপর অধিক প্রাধান্য দেয়া যাবে না। এ ধরনের কোন কাজ করলে মনে রাখবে, তুমি তোমাকে আগুনে পেশ করলে। এ ধরনের অনেক ঘটনা পাওয়া যায়, পিতা তার কোন সন্তানের জন্য ধন-সম্পত্তি লিখে দেয়ার ফলে তাদের মধ্যে বিরোধ, মারামারি ও হানাহানি চরম পর্যায়ে পৌঁছে। ফলে একে অপরে মামলা-মুকাদ্দিমা করতে তাদের মূল ধন ও আর অবশিষ্ট থাকে না।
যুব-সমাজের সমস্যার সমাধান
যুবকদের সমস্যার সর্বোত্তম সমাধান হল, যদি তারা স্ত্রীদের ভরণ পোষণ ও মোহরানা আদায়ে সক্ষম হয়, তাহলে তাদের বিবাহ দিয়ে দেয়া। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يا معشر الشباب من استطاع منكم الباءة فليتزوج ، فإنه أغض للبصر ، وأحصن للفرج ، ومن لم يستطع فعليه بالصوم فإنه له وجاء» .
“হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্য হতে যাদের সামর্থ্য আছে, তারা যেন বিবাহ করে। কারণ, তা চক্ষুর জন্য শীতলতা ও লজ্জা স্থানের সংরক্ষণ। আর যে সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা রাখে, কারণ, রোজা রাখা তার জন্য প্রবৃত্তি-নিরোধক।” [বুখারী, মুসলিম]
পড়ালেখা শেষ না করা বিবাহের জন্য কখনোই প্রতিবন্ধক নয়। বিশেষ করে, যখন সে কোন ধনী পরিবারের সন্তান হয়ে থাকে অথবা তার পিতা তার প্রয়োজনীয় খরচ বহন করার সামর্থ্য রাখে অথবা ছেলের নিকট সম্পদ থাকে বা তার চাকুরীর ব্যবস্থা থাকে, তখন বিবাহ করতে কোন বাধা নাই। বরং বিবাহ করে ঘর সংসার করাই তার জন্য মহৎ কাজ।
পিতার দায়িত্ব হল, ছেলে যখন বিবাহের বয়স হবে, তখন তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবাহ দিয়ে দেয়া। বিশেষ করে, যখন পিতা ধনী হয়, তখন সে তার ছেলেকে বিবাহ করাতে কোন প্রকার কালক্ষেপণ করবে না। আর একটি কথা অবশ্যই মনে রাখবে, যুবক ছেলে কোন প্রকার অশ্লীল কাজে জড়িত হওয়ার চেয়ে, তাকে বিবাহ দিয়ে দেয়া অধিক উত্তম। কারণ, যদি কোন অশ্লীল কাজে জড়িত হয়, তখন সমাজে সে অপমানিত হবে। আর ছেলেও যখন ধনী হয়, তখন সে নমনীয়তার সাথে তার পিতাকে বিবাহ দিয়ে দেয়ার জন্য আবেদন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে মাতা-পিতার পছন্দ ও তাদের সন্তুষ্টিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত।
একটি কথা প্রতিটি মানুষের মনে রাখেতে হবে, মহান আল্লাহ তা‘আলা যে কোন কিছুকে হারাম করেছে, তবে তার জায়গায় উত্তম একটি জিনিস হালাল করেছে। যেমন, মহান আল্লাহ তা‘আলা সুদকে হারাম করছে, তার বিপরীতে ব্যবসাকে হালাল করেছেন, আর জিনাকে হারাম করছেন, তার বিপরীতে তিনি বিবাহকে হালাল করছেন। মোটকথা, যুবকদের সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায় হল, বিবাহ।
আর যখন অভাবী হয়, মোহরানা, বা খরচা বহন করতে অক্ষম হওয়ার কারণে যুবকের জন্য বিবাহ করা সম্ভব না হয়, তখন তার জন্য উত্তম চিকিৎসা নিম্নরূপ:১. রোজা রাখা: কারণ হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ومن لم يستطع فعليه بالصوم ، فإنه له وجاء» .
“যে অক্ষম হয়, সে যেন রোজা রাখে।কারণ, রোজা রাখা তার জন্য প্রবৃত্তি-নিরোধক।” আর যে ব্যক্তি বিবাহ করতে অক্ষম, তার উপর রোজা রাখা আবশ্যক। কারণ, রোজা মানুষের যৌবনকে দমিয়ে রাখে এবং তাদের জন্য সাময়িক উপশম হয়। রোজা যুবকদের প্রবৃত্তিকে দুর্বল করে দেয়। তবে রোজা শুধু খানা-পিনা থেকে বিরত থাকার নাম নয় বরং, রোজা হল, নিষিদ্ধ বস্তুর দিকে তাকানো, মেয়েদের সাথে উঠবস করা, অশ্লীল সিনেমা, নাচ-গান শোনা ও নাটক দেখা এবং অশ্লীল উপন্যাস ও গল্পের বই পড়া হতে বিরত থাকা সহ যাবতীয় অন্যায় কাজ হতে বিরত থাকা হল রোজা। আর যুবকদের উচিত হল, তারা তাদের চক্ষুর হেফাজত করবে, কানের হেফাজত করবে এবং মাথা-বনত করে রাস্তায় চলাফেরা করবে। কারণ, মহান আল্লাহ তা‘আলা সংযমের মধ্যেই সমাধান রেখেছেন। প্রবৃত্তির পূজা করার মধ্যে তিনি কোন সমাধান রাখেন নি, বরং তাতে তিনি রেখেছেন বিপদ ও সমস্যা ।
২. উন্নত হওয়া ও উত্তম আদর্শ গ্রহণ করা: মনোবিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেন যে, মানুষের মধ্যে সুপ্ত যৌননাভূতি বা মানুষের যৌন প্রকৃতিকে উন্নীত ও নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের ক্ষমতার ঊর্ধ্বে নয়, বরং তা মানুষের ক্ষমতার আওতাধীন ও মানুষের দ্বারা তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদি তোমার বিয়ে করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে তার অর্থ এ নয় যে, তোমাকে বিপথে যেতে হবে। বরং তুমি ইচ্ছা করলে উত্তম আদর্শ আঁকড়ে ধরতে পার। তুমি কখনো অশ্লীলতার কাছেও না গিয়ে থাকতে পার, তুমি সবকিছুর ঊর্ধ্বে থেকে উন্নত চরিত্রকেই অবলম্বন করতে পার। আর তা হল, তুমি আত্মিক সাধনার প্রতি অধিক চেষ্টা কর। এ ছাড়াও সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত. জিকির, হাদিস অধ্যয়ন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী, মহা-মনীষীদের জীবনী পাঠ ইত্যাদির প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করবে, তাতে তোমার মন আর খারাপ কাজের দিকে ধাবিত হবে না। অথবা কাজে মনোযোগ দেয়া, লেখালেখি ও গবেষণা করা, চিত্রাঙ্কন, ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত থাকার মাধ্যমেও নিজেকে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ হতে হেফাজত করা যায়। বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, দৈহিক ব্যায়াম, হাস্যরস, রসিকতা ইত্যাদি মানুষকে খারাপ চিন্তা থেকে হেফাজত করে এবং অন্যায় ও অশ্লীল কাজ হতে বিরত রাখে।
৩. দৈহিক ব্যায়াম: এটি হল, মানুষের দৈহিক পরিশ্রম। মানুষ যখন দৈহিক পরিশ্রম তথা ব্যায়াম করে, বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা ও অন্যায়-অনাচার মুক্ত সংস্কৃতি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে, তখন মানুষের মধ্যে খারাপ কোন চিন্তা স্থান পায় না। তখন সে ব্যভিচার যা একজন যুবকের জন্য দৈহিক ও নৈতিক উভয়ের জন্য মারাত্মক পরিণতি ভয়ে আনে, থেকে নিজেকে হেফাজত করবে। একজন যুবক যখনই তার প্রবৃত্তির চাপ অনুভব করবে, তখন সে যখন দৈহিক পরিশ্রম করবে, তাতে তার যে অতিরিক্ত চাহিদাটি ছিল, তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। দীর্ঘ লম্বা দৌড়, ভারি বোঝা বহন, কুস্তি, প্রতিযোগিতা, যুদ্ধের ট্রেনিং, সাতার, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা ইত্যাদি মানুষের প্রবৃত্তির চাহিদা কমিয়ে দেয়।
৪. ইসলাম বিষয়ে বই-পুস্তক অধ্যয়ন করা: সবচেয়ে উত্তম হল, কুরআন তিলাওয়াত করা, হাদিস ও তাফসীর পড়া, কুরআনের কিছু অংশ হেফজ করা ও হাদিস মুখস্থ করা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সীরাত সম্পর্কে জানা, খুলাফায়ে রাশেদীন, চিন্তাবিদ ও বড় বড় মনীষীদের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানা। দ্বীনি মজলিশে অংশগ্রহণ করা, ইলমের আলোচনায় শরিক হওয়া, কুরআন তিলাওতের সিডি-ভিসিডি/রেডিও ইত্যাদি শোনা । মোট কথা, একজন যুবকের জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা হল, বিবাহ। আর তা যদি কোন কারণে সম্ভব না হয়, তাহলে উপর কর্তব্য হল, রোজা রাখা, দৈহিক পরিশ্রম করা, জ্ঞান অর্জন করা। আর জ্ঞান অর্জন হল শক্তিশালী ঠিকানা যা মানুষের উপকার করে; কষ্ট দেয় না। তারপর সর্বোত্তম চিকিৎসা হল, যে সবের প্রতি দেখতে মহান আল্লাহ তা‘আলা নিষেধ করেছেন, তা হতে চোখের হেফাজত করা। মহান আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করা যে, যাতে মহান আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য বিবাহকে সহজ করে দেয়।
গ্রহণযোগ্য দোয়া:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর সময় এ দোয়াটি পড়ে,
لا اله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شئ قدير سبحان الله والحمد لله ولا اله إلا الله والله أكبر ولا حول ولا قوة إلا بالله
অর্থ ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোন হক ইলাহ নাই, তিনি একক তারা কোন শরীক নাই। রাজত্ব তারই প্রশংসা ও তার। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতা রাখেন। আল্লাহ পবিত্র, সব প্রশংসা আল্লাহর, তিনি ছাড়া আর কোন হক ইলাহ নাই, তিনি সবচাইতে বড়। আল্লাহর তাওফিক ছাড়া কেউ কোন ভালো কাজ করতে পারে না। আর আল্লাহ যাকে তাওফিক দেয় তাকে বিরত রাখার কেউ নাই।’ তারপর সে বলে اللهم أغفر لي মহান আল্লাহ তা‘আলা তার দুয়া কবুল করেন। আর যদি সে ওযু করে এবং সালাত আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা তার সালাতকে কবুল করে।”
জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষতি:
১. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, {الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا} “সম্পদ ও সন্তান দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য।” ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি মহান আল্লাহ তা‘আলার বহুত বড় নেয়ামত, যার প্রতি মানুষ স্বভাবতই ধাবিত ও আকৃষ্ট হয়ে থাকে। এ দুটি হল, মানুষের জন্য তাদের দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য, গৌরব ও সম্মান। তবে বর্তমানে শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে কিছু মানুষ শুধু তাদের সন্তানের হার কমিয়ে আনার প্রবণতা অবলম্বন করছে। স্বভাবতই তারা তাদের সম্পদকে কমানোর চেষ্টা কখনোই করে না। অথচ মাল ও সন্তান-সন্ততি হল, মানুষের দুনিয়া ও পরকালের জীবনের অমূল্য সম্পদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا مات الإنسان انقطع عمله إلا من ثلاث : صدقة جارية ، أو علم ينتفع به ، أو ولد صالح يدعو له» .
অর্থাৎ, মানুষ যখন মারা যায়, তিনটি আমল ছাড়া তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, এক- ছদকা জারিয়া, দুই-উপকারী ইলম, তিন-নেক সন্তান যে তার মৃত্যুর পর তার জন্য দোয়া করে।২. ইসলাম মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের অধিকারী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« تزوجوا الودود الولود ، فإني مكاثر بكم الأمم يوم القيامة» .
“তোমরা অধিক সন্তানের অধিকারী ও স্বামীদের অধিক ভালোবাসে এ ধরনের মেয়েদের বিবাহ কর, কারণ, কিয়ামতের দিন আমি আমার উম্মত বেশি হওয়ার কারণে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব।”৩. মনে রাখতে হবে, ইসলাম শুধু মাত্র স্ত্রী রোগী হওয়ার কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার অনুমতি দিয়েছে। যদি কোনো মুসলিম ডাক্তার বলে যে, এ মহিলা সন্তান নিলে তার জীবনের জন্য তা হুমকি হবে, তখন তার জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা বৈধ হতে পারে। এ ছাড়া অন্য যে সব কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা হয় যেমন, অভাব, লালন-পালন করতে না পারা, পড়া-লেখা করাতে অক্ষম হওয়া, নারীদের জন্য ক্ষতিকর ইত্যাদি— এ ধরনের কোন কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, {الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ} . “শয়তান তোমাদের অভাবের ওয়াদা দেয়।” [সূরা আল-বাক্বারা] ৪. ইসলামের শত্রুরা মুসলিমদের সংখ্যা কমানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অথচ, তারা নিজেরা তাদের সংখ্যা বাড়ানো এবং তাদের অধিবাসীদের সংখ্যা যাতে সর্বোচ্চ হয়, তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। তাদের সংখ্যা মুসলিমদের সংখ্যা হতে অধিক হয় এবং মুসলিমদের সংখ্যা কমে যায় এ কারণে তারা মুসলিমদের মধ্যে জন সংখ্যা বৃদ্ধিটাকে সমস্যা হিসেবে তুলে ধরে। যেমনটি মিশর এবং আরও অন্যান্য মুসলিম দেশে বিষয়টি স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত। তারা এটিকে পরিবার পরিকল্পনা করে নামকরণ করে থাকে, বাস্তবে তা পরিকল্পনা নয় বরং মুসলিম নিধন বলা যেতে পারে। তারা আমাদের দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণের টেবলেটগুলো বিনা মূল্যে বিতরণ করে অথচ আমাদের দেশের অভাবী ও গরীবদের জন্য খাদ্য বিতরণ করে না। অভাবীদের অভাব দূরীকরণের কোন চেষ্টা না করে মুসলিমদের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করে। প্রশ্ন হল, মুসলিমরা কি এ ধরনের শরীয়ত বিরোধী কাজের পরিণাম সম্পর্কে একবারও ভেবে দেখছে?
সালাতের ফজিলত এবং যারা সালাত ছেড়ে দেয় তাদের শাস্তি:
১. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ أُوْلَئِكَ فِي جَنَّاتٍ مُّكْرَمُونَ﴾
“আর যারা নিজেদের সালাতের হিফাজত করে, তারাই জান্নাতসমূহে সম্মানিত হবে।” [সূরা আল-মা‘আরিজ: ৩৪-৩৫]
২. মহান আল্লাহ আরও বলেন,
﴿اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ﴾
অর্থ, “তোমার নিকট কিতাবের যে ওহী প্রেরণ করা হয়েছে, তা হতে তিলাওয়াত কর, সালাত কায়েম কর, নিশ্চয় সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ হতে বিরত রাখে। আর আল্লাহর জিকিরই সবচেয়ে বড়। আর আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।” [সূরা আল-আনকাবুত: ৪৫]
৩. মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ﴾
অর্থ, “অতএব সেই সালাত আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজদের সালাতে অমনোযোগী। অর্থাৎ, তারা সালাত আদায় হতে গাফেল, সালাতকে সময়মত আদায় করে না।” [সূরা আল-মা‘ঊন : ১-২]
৫. মহান আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ﴾
অর্থ, “অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে, যারা তাদের নিজেদের সালাতে বিনয়াবনত।” [সূরা আল-মুমিনুন: ১-২]
৬. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا ﴾ .
অর্থ, “তাদের পরে আসল, এক অসৎ বংশধর যারা সালাত বিনষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং শীঘ্রই তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।” [সূরা মারইয়াম]
৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের প্রশ্ন করে বললেন,
« أرأيتم لو أن نهراً بباب أحدكم يغتسل فيه كل يوم خمس مرات ، هل يبقى من درنه شئ ؟ قالوا لا يبقى من درنه شئ ، قال فذلك مثل الصلوات الخمس يمحو الله بهن الخطايا» .
অর্থ, “তোমাদের বাড়ির সামনে একটি নদী আছে, তাতে যদি তোমাদের কেউ দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কি কোন ময়লা থাকতে পারে?” সাহাবীরা উত্তরে বললেন, না। তখন রাসূল সা. বললেন, “এ হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্ত। আল্লাহ তা‘আলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ সমূহ মুছে দেন।” [বুখারী, মুসলিম]
৮. রাসূল সা. আরও বলেন,
« العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة ، فمن تركها فقد كفر» .
আমাদের মাঝে আর অমুসলিমদের মাঝে চুক্তি হল, সালাত। যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দিল, সে কুফরী করল। [সহীহ, মুসনাদ আহমদ]
৯. রাসূল সা. আরও বলেন,
« بين الرجل وبين الشرك والكفر ترك الصلاة» .
একজন মানুষ ও শিরক-কুফরের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারিত হয়, সালাত ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমে। [মুসলিম]
শিশুদের ওযু ও সালাতের শিক্ষা দেয়া
ওযুর নিয়ম হল, প্রথমে বিসমিল্লাহ বলবে।১. দুই হাতের কব্জি তিনবার ধোয়া, তারপর তিনবার করে নাকে পানি দেয়া ও তিনবার কুলি করা। ২. সমস্ত চেহারা তিনবার ধোয়া।
৩. প্রথমে ডান হাত তারপর বাম হাতের কনুই সহ তিনবার ধোয়া।
৪. সমস্ত মাথা কানসহ মাসেহ একবার করা।
৫. দুই পায়ের টাখনু সহ তিনবার ধোয়া। আর যদি কোন ব্যক্তি ওযু করতে সক্ষম না হয়, তাকে অবশ্যই তায়াম্মুম করতে হবে। তায়াম্মুমের পদ্ধতি হল, প্রথমে পবিত্রতার নিয়ত করবে, তারপর তুমি তোমার চেহারাকে পাক মাটি দ্বারা মাসেহ করবে, এবং দুই হাতের কব্জীদ্বয় মাটি দ্বার মাসেহ করবে। ওযু করতে অক্ষম হওয়ার কারণ: হয়তো পানি ব্যবহার দ্বারা ক্ষতি হতে পারে বা পানি না পাওয়া যাওয়া হতে পারে, অথবা সফরে তার সাথে পানি একবারেই কম; যদি ঐ পানি দিয়ে ওযু করে তবে খাওয়ারের পানি থাকবে না। এসব কারণে তার জন্য তায়াম্মম করা বৈধ ও শরিয়ত সম্মত। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সময় মত আদায় করতে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কীভাবে আদায় করতে হয়, তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেয়া হল, যাতে শিশুরা তাদের জীবনের শুরুতেই সালাত আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে অবগত হতে পারে।
ফজরের সালাত যেভাবে আদায় করবে
ফজরের সালাত দুই রাকাত; নিয়ত করা ফরয, তবে নিয়তের স্থান হল, অন্তর মুখে কোন নিয়ত পড়া বা উচ্চারণ করার কোন প্রয়োজন নাই।১. সালাত আদায়ের সময় প্রথমে কেবলামুখী হয়ে দাড়াতে হবে। তারপর দু হাত কান পর্যন্ত উঠাবে এবং আল্লাহু আকবর বলে হাত বাধবে।
২. হাত বাধার নিয়ম হল, ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে বক্ষের উপর ছেড়ে দেবে। তারপর সানা পড়বে।
« سبحانك اللهم وبحمدك ، وتبارك اسمـك وتعالى جدك ، ولا اله غيرك»
অর্থ, “হে আল্লাহ আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তোমার প্রশংসা করছি। তোমার নাম কত-না বরকতময়! আর তোমার মর্যাদা কতই না ঊর্ধ্বে! তুমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নাই।”
এ দোয়াটি ছাড়াও হাদিসে বর্ণিত অন্য যে কোন দুয়া এ দোয়ার পরিবর্তে পড়তে পারবে।
প্রথম রাকাত যেভাবে আদায় করবে -
أعوذ بالله من الشيطان الرجيم [আ‘উযু বিল্লাহি মিনাশশাইতানির রাজীম] পড়বে। অর্থ, “হে আল্লাহ আমি বিতাড়িত শয়তান হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” তারপর بسم الله الرحمن الرحيم [বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম] অর্থ, “আমি পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।” নিম্ন আওয়াজে পড়বে। তারপর সূরা ফাতেহা পড়বে।
﴿الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ * الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ * مَلِكِ يَوْمِ الدِّينِ * إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ * اهدِنَا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ * صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ * غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ﴾ .
অর্থ: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব। দয়াময়, পরম দয়ালু বিচার দিবসের মালিক। আপনারই আমরা ইবাদত করি। এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাই। আমাদেরকে সরল পথ দেখান। তাদের পথ যাদের উপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন। যাদের উপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্ট ও নয়।”
তারপর আবার বিসমিল্লাহ পড়ে, যে কোন একটি সূরা পড়বে। যেমন-
﴿قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ * اللَّهُ الصَّمَدُ * لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ * وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ﴾
“বল, তিনিই আল্লাহ এক অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। আর তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয় নি। আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই।”১. সূরা শেষে তুমি দুই হাত উঠাবে এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবর) বলে রুকু করবে, রুকুতে তোমার দুই হাতকে তোমার দুই টাখনুর উপর রাখবে এবং রুকুতে তিনবার سبحان ربي العظيم বলবে।
২. তারপর দুই হাত ও মাথা উঠিয়ে বলবে— سمع الله لمن حمده ، اللهم ربنا لك الحمد অর্থ, “আল্লাহ শোনেন যে তার প্রশংসা করে। হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা তোমারই।”
৩. তারপর তাকবীর (আল্লাহু আকবর) বলে সেজদা করবে, দুই হাত, হাঁটু, কপাল, নাক, দু পায়ের অঙ্গুলি কেবলা মুখ করে মাটিতে রাখবে। আর সেজদায় গিয়ে سبحان ربي الأعلى “সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” তিনবার বলবে।
৪. তারপর সেজদা থেকে মাথা উঠাবে এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবর) বলবে। সেজদা হতে উঠে দুই হাত হাঁটুর উপর রেখে বসবে। তারপর বসা অবস্থায় বলবে, رب اغفر لي وارحمني واهدني وعافني وارزقني “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, আমার প্রতি দয়া কর, তুমি আমাকে হেদায়েত দাও, মাপ কর এবং রিজিক দাও।”
৫. তারপর তাকবীর বলে জমিনে দ্বিতীয় সেজদা করবে। এবং সেজদায় سبحان ربي الأعلى তিনবার বলবে। এভাবে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করবে। দ্বিতীয় রাকাত যেভাবে আদায় করতে হবে:
১. তারপর দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে এবং “আ‘উযু বিল্লাহ”, “বিসমিল্লাহ”, “সূরা ফাতেহা” সাথে অন্য একটি সূরা বা কুরআনের যে কোন স্থান থেকে কিছু অংশ তিলাওয়াত করবে।
২. তারপর পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী রুকু-সেজদা করার পর, দ্বিতীয় সেজদা শেষে বসবে। ডান হাতের আঙ্গুলগুলোকে গুছিয়ে রেখে, শাহাদত আঙ্গুলটি উঁচা করে রাখবে এবং আত্তাহিয়াতু পড়বে।
« التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ * اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ »
অর্থ: “যাবতীয় সম্মান আল্লাহর জন্য, আর যাবতীয় সালাত ও সমূদয় পবিত্র প্রসংসা সবই তাঁর জন্য। হে নবী আপনার উপর সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক, অনুরূপভাবে আল্লাহর রহমত ও বরকত। আর সালাম বর্ষিত হোক আমাদের উপর এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের উপর, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই, আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।”
হে আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদের উপর সালাত পেশ করুন এং তাঁর পরিবারভুক্তদের উপরও, যেমনিভাবে সালাত পেশ করেছেন ইবরাহীমের উপর এবং তার পরিবারের উপর। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও অতিশয় সম্মানিত। হে আল্লাহ আপনি বরকত প্রদান করুন মুহাম্মাদের উপর এবং মুহাম্মাদের পারিবারভুক্তদের উপরও। যেমনি আপনি বরকত প্রদান করেছেন ইবরাহীমের উপর এবং ইবরাহীমের পরিবারের উপর। নিশ্চয় আপনি অতিশয় প্রশংসিত ও খুবই মর্যাদাবান। [বুখারী]
৩. তারপর দুয়ায়ে মাসূরা পড়বে— যেমন,
اللهم إني أعوذ بك من عذاب جهنم ومن عذاب القبر ، ومن فتنة المحيا والممات ، ومن فتنة المسح الدجال .
অর্থ, “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট জাহান্নামের শাস্তি ও কবরের আযাব হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং আরও আশ্রয় প্রার্থনা করছি, হায়াত ও মওতের ফিতনা হতে এবং মাসীহ-দাজ্জালের ফিতনা হতে।”
৪. ডনে বামে সালাম ফিরাবে। আর উভয় দিকে সালাম ফিরানোর সময় বলবে,
« السلام عليكم ورحمة الله » .
অর্থ, “তোমাদের উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।”
সালাতের রাকাতের সংখ্যার চার্ট:
সালাত
|
পূর্বের সুন্নাত
|
ফরয
|
পরের সুন্নাত
|
ফজর
|
২
|
২
|
০
|
যোহর
|
২ এবং ২
|
৪
|
২
|
আসর
|
২ এবং ২
|
৪
|
০
|
মাগরিব
|
২
|
৩
|
২
|
এশা
|
২
|
৪
|
২ এবং ৩ (বিতর)
|
জুমা
|
২ (তাহিয়্যাতুল মসজিদ)
|
২
|
২ (ঘরে পড়লে) অথবা
২ এবং ২ (মসজিদে পড়লে)
|
সালাতের কিছু বিধি-বিধান
১. ফরয সালাতের পূর্বে ও পরে কিছু সুন্নাত সালাত আছে সেগুলো পাবন্দির সাথে আদায় করতে হবে।
২. সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় তোমার দৃষ্টি থাকবে সেজদার স্থানের দিকে। এদিক সেদিক তাকাবে না। অনেকে আছে সালাতে এদিক সেদিক তাকিয়ে থাকে, যা সালাতের মধ্যে একাগ্রতার পরিপন্থী।
৩. আর যখন তুমি জামাতে সালাত আদায় করবে, তখন ইমাম যদি কিরাত নিম্ন স্বরে পড়ে, তখন তুমিও তোমার সালাতে কিরাত পড়বে। আর যখন কিরাত উচ্চস্বরে পড়ে, তখন ওয়াকফের ফাকে ফাকে সূরা ফাতেহা পড়ে নিবে।
৪. জুমার সালাতের ফরয হল, দুই রাকাত। জুমার সালাত কেবল শুধু মসজিদে গিয়ে জুমার খুতবার পরে ইমামের সাথে দুই রাকাত সালাত আদায় করে নিবে।
৫. মাগরিবের সালাত তিন রাকাত। ফজরের সালাতের মত দুই রাকাত সালাত আদায় করবে। তারপর যখন দ্বিতীয় রাকাত শেষে আত্তাহিয়্যাতু পড়া শেষ হবে, সালাম ফিরাবে না, তৃতীয় রাকাতের জন্য দুহাত কাঁদ পর্যন্ত উঁচা করে তাকবীর-আল্লাহু আকবর- বলে উঠে দাঁড়াবে। তারপর সূরা ফাতেহা পড়ে, উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী সালাত সম্পন্ন করবে। তারপর ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে বলবে,
« السلام عليكم ورحمة الله» .
অর্থ, তোমাদের উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।৬. যোহর, আছর ও এশার সালাত চার রাকাত। ফজরের সালাত যেভাবে আদায় করতে হয়, সেভাবে প্রথম দুই রাকাত সালাত আদায় সম্পন্ন করে বৈঠক শেষে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে সালাম না ফিরিয়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে। তৃতীয় রাকাত শেষে চতুর্থ রাকাত পড়বে এবং পরবর্তী দুই রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়বে। তারপর সালাতকে সম্পন্ন করার পর ডামে বামে সালাম ফিরাবে।
৭. ভিতিরের সালাত তিন রাকাত। প্রথমে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবে। তারপর এক রাকাত পড়বে এবং সালাম ফিরাবে। উত্তম হল, রুকুর আগে বা পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত দুয়াসমূহ দ্বারা দোয়া করবে। রাসূল হতে বর্ণিত দোয়া যেমন-
اللهم اهدني فيمن هديت ، وعافني فيمن عافيت ، وبارك لي فيما أعطيت ، وقني شر ما قضيت ، إنك تقضى ولا يقضى عليك ، إنه لا يذل من واليت ، ولا يعز من عاديت ، تباركت ربنا وتعاليت .
অর্থ, হে আল্লাহ! তুমি যাদের হেদায়েত দিয়েছ এবং যাদের তুমি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছ, আমাকে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত কর। তুমি আমাকে যা দান করছ, তাতে তুমি বরকত দাও। তুমি যে সব খারাপ কাজের ফায়সালা করেছ, তা থেকে তুমি আমাকে বাচাও। নিশ্চয় তুমিই ফায়সালা দিয়ে থাক, তোমার বিরুদ্ধে কেউ ফায়সালা দেয় না। তুমি যাকে সম্মান দাও তাকে আর কেউ অপমান করতে পারে না। আর তুমি যাকে অপমান কর, তাকে কেউ ইজ্জত দিতে পারে না। হে প্রভু! তুমি বরকতময় ও মহান।৮. যখন ইমামের সাথে সালাত আদায় করবে, তখন তুমিও তার সাথে সালাতে দাঁড়াবে এবং তাকবীর -আল্লাহু আকবর- বলবে। ইমামকে যে অবস্থায় পাবে, সে অবস্থায় ইমামের সাথে শরীক হয়ে যাবে। যদি ইমাম রুকু-রত হয়ে থাকে, তখন তুমি রুকুতে শরীক হয়ে, ইমামের অনুকরণ করবে, যদি তুমি ইমামের সাথে পুরোপুরি রুকু পাও, তাহলে তুমি সে রাকাত পেলে। আর যদি রুকু না পাও তাহলে, সে রাকাত পেয়েছ, বলে হিসাব করা যাবে না। ঐ রাকাত তোমাকে পরবর্তীতে আবার আদায় করতে হবে।
৯. আর যখন তোমার রাকাত ছুটে যাবে, তখন তা ইমামের সালাম ফিরানোর পর আদায় করবে। ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে না। বাকী সালাত আদায়ের জন্য তুমি একা দাড়িয়ে যাবে।
১০. মনে রাখবে সালাতে তাড়াহুড়া করবে না। কারণ, তা সালাত বাতিল করে দেয়। হাদিসে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে সালাতে তাড়াহুড়া করতে দেখে বলল, [ إرجع فصل فإنك لم تصل] তুমি ফেরৎ যাও এবং পুনরায় সালাত আদায় কর। তখন লোকটি ফেরত গিয়ে আবার সালাত আদায় করল, রাসূল তাকে আবার বলল, তুমি ফেরত যাও, পুনরায় সালাত আদায় কর, এভাবে তিনবার রাসূল লোকটিকে ফেরত পাঠাল। লোকটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তৃতীয়বারে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সালাতের নিয়ম শিখিয়ে দিন, তখন সে বলল,
« اركع حتى تطمئن راكعاً ، ثم ارفع حتى تستوي قائماً ، ثم اسجد حتى تضمئن ساجداً ، ثم ارفع حتى تضمئن جالساً » .
অর্থ, তুমি রুকু কর, এমনভাবে যাতে রুকুতে তুমি স্বস্তি লাভ কর। তারপর রুকু হতে সোজা হয়ে দাড়াও, তারপর সেজদা কর, যাতে সেজদায় তুমি স্বস্তি লাভ কর। তারপর তুমি মাথা উঠাও যাতে বসা অবস্থায় তুমি স্বস্তি পাও।১১. যখন সালাতের ওয়াজিবসমূহ হতে কোন ওয়াজিব ছুটে যাবে, যেমন- তোমরা প্রথম বৈঠক ছুটে গেল, অথবা তুমি কত রাকাত পড়ছ, তা ভুলে গেছ, তখন তুমি নিশ্চিত সংখ্যা অনুযায়ী সালাত আদায় করে নিবে এবং সালাতের শেষাংশে দুই সেজদা করবে এবং সালাম ফিরাবে। এ সেজদাকে সেজদায়ে সাহু বলে।
১২. সালাতে অধিক নড়াচড়া করবে না। কারণ, অধিক নড়া-চড়া করা সালাতে একাগ্রতা ও খুশুর পরিপন্থী। অনেক সময় বিনা প্রয়োজনে অধিক নড়া-চড়া সালাত নষ্টেরও কারণ হয়।
১৩. এশার সালাতের সময় অর্ধ রাত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে। এ সময়ের মধ্যে সালাত আদায় করে নিতে হবে, সুতরাং প্রয়োজন ছাড়া এশার সালাতকে দেরি করা ঠিক হবে না। আর বিতর সালাতের সময় সুবহে সাদিক উদয় হওয়া পর্যন্ত। বিতর সালাত হল রাতের সর্বশেষ সালাত।
No comments:
Post a Comment