কেয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর-৬
আব্দুল মালেক আলী আল-কুলাইব
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
হিসাব-নিকাশের প্রকৃতি--
আল্লাহ আহকামুল হাকেমীন সেদিন কম-বেশী, ছোট-বড় সকল কাজ-কর্ম, কথা ও বিশ্বাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُعْرِضُونَ (سورة الأنبياء : 1)
মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে। (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১)
আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّ إِلَيْنَا إِيَابَهُمْ ﴿25﴾ ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ ﴿26﴾ (سورة الغاشية)
নিশ্চয় আমারই নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন। তারপর নিশ্চয় তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্বে। (সূরা আল গাশিয়া, আয়াত ২৫-২৬)
আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَلَنَسْأَلَنَّ الَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْأَلَنَّ الْمُرْسَلِينَ ﴿6﴾ فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِمْ بِعِلْمٍ وَمَا كُنَّا غَائِبِينَ ﴿7﴾ (سورة الأعراف)
সুতরাং আমি অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করব যাদের নিকট রাসূল প্রেরিত হয়েছিল এবং অবশ্যই আমি রাসূলদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। অতঃপর অবশ্যই আমি তাদের নিকট জেনে- শুনে বর্ণনা করব। আর আমি তো অনুপস্থিত ছিলাম না। (সূরা আল আরাফ, আয়াত ৬-৭)
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ ﴿22﴾ إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ ﴿23﴾ وَوُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ بَاسِرَةٌ ﴿24﴾ تَظُنُّ أَنْ يُفْعَلَ بِهَا فَاقِرَةٌ ﴿25﴾ (سورة القيامة)
সেদিন কতক মুখমণ্ডল হবে হাস্যোজ্জল। তাদের রবের প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপকারী। আর সেদিন অনেক মুখমণ্ডল হবে বিবর্ণ-বিষন্ন। তারা ধারণা করবে যে, এক বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত করা হবে। (সূরা আল কিয়ামাহ, আয়াত ২২-২৫)
অনুসারীরা নেতাদের প্রত্যাখ্যান করবে--- দুনিয়াতে যে সকল মানুষ আল্লাহকে বাদ অন্যের ইবাদত বন্দেগী করেছে কেয়ামতের দিন তারা তাদের অনুসারীদের প্রত্যাখ্যান করবে। এমনিভাবে আল্লাহর বিধি-বিধান না মেনে যে সকল নেতাদের নির্দেশ পালন করা হয়েছে তারাও সেদিন তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَاتَّخَذُوا مِنْ دُونِ اللَّهِ آَلِهَةً لِيَكُونُوا لَهُمْ عِزًّا ﴿81﴾ كَلَّا سَيَكْفُرُونَ بِعِبَادَتِهِمْ وَيَكُونُونَ عَلَيْهِمْ ضِدًّا ﴿82﴾ (سورة مريم)
আর তারা আল্লাহ ছাড়া বহু ইলাহ গ্রহণ করেছে, যাতে ওরা তাদের সাহায্যকারী হতে পারে। কখনো নয়, এরা তাদের ইবাদাতের কথা অস্বীকার করবে এবং তাদের বিপক্ষ হয়ে যাবে। (সূরা মারইয়া, আয়াত ৮১-৮২)
وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ نَقُولُ لِلَّذِينَ أَشْرَكُوا مَكَانَكُمْ أَنْتُمْ وَشُرَكَاؤُكُمْ فَزَيَّلْنَا بَيْنَهُمْ وَقَالَ شُرَكَاؤُهُمْ مَا كُنْتُمْ إِيَّانَا تَعْبُدُونَ (سورة يونس)
আর যেদিন আমি তাদের সকলকে একত্র করব, অতঃপর যারা শির্ক করেছে, তাদেরকে বলব, থাম, তোমরা ও তোমাদের শরীকরা। অতঃপর আমি তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাব। আর তাদের শরীকরা বলবে, তোমরা তো আমাদের ইবাদাত করতে না। (সূরা ইউনূস, আয়াত ২৮)
إِذْ تَبَرَّأَ الَّذِينَ اتُّبِعُوا مِنَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا وَرَأَوُا الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الْأَسْبَابُ ﴿166﴾ وَقَالَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا لَوْ أَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَتَبَرَّأَ مِنْهُمْ كَمَا تَبَرَّءُوا مِنَّا كَذَلِكَ يُرِيهِمُ اللَّهُ أَعْمَالَهُمْ حَسَرَاتٍ عَلَيْهِمْ وَمَا هُمْ بِخَارِجِينَ مِنَ النَّارِ ﴿167﴾ (سورة البقرة)
যখন অনুসরনীয় ব্যক্তিরা অনুসারীদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে এবং তারা আযাব দেখতে পাবে। আর তাদের সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। আর যারা অনুসরণ করেছে, তারা বলবে, যদি আমাদের ফিরে যাওয়ার সুযোগ হত, তাহলে আমরা তাদের থেকে আলাদা হয়ে যেতাম, যেভাবে তারা আলাদা হয়ে গিয়েছে। এভাবে আল্লাহ তাদেরকে তাদের আমলসমূহ দেখাবেন তাদের আক্ষেপের জন্য, আর তারা আগুন থেকে বের হতে পারবে না। (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৬৬-১৬৭)
وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ مَوْقُوفُونَ عِنْدَ رَبِّهِمْ يَرْجِعُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ الْقَوْلَ يَقُولُ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا لَوْلَا أَنْتُمْ لَكُنَّا مُؤْمِنِينَ ﴿31﴾ قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا لِلَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا أَنَحْنُ صَدَدْنَاكُمْ عَنِ الْهُدَى بَعْدَ إِذْ جَاءَكُمْ بَلْ كُنْتُمْ مُجْرِمِينَ ﴿32﴾ وَقَالَ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ إِذْ تَأْمُرُونَنَا أَنْ نَكْفُرَ بِاللَّهِ وَنَجْعَلَ لَهُ أَنْدَادًا وَأَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ وَجَعَلْنَا الْأَغْلَالَ فِي أَعْنَاقِ الَّذِينَ كَفَرُوا هَلْ يُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿33﴾ (سورة سبأ)
আর তুমি যদি দেখতে যালিমদেরকে, যখন তাদের রবের কাছে দাঁড় করিয়ে দেয়া হবে তখন তারা পরস্পর বাদানুবাদ করতে থাকবে। যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তারা অহঙ্কারীদেরকে বলবে, তোমরা না থাকলে অবশ্যই আমরা মুমিন হতাম। যারা অহঙ্কারী ছিল তারা, তাদেরকে বলবে, যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল, তোমাদের কাছে হেদায়েত আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে বাধা দিয়েছিলাম? বরং তোমরাই ছিলে অপরাধী। আর যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তারা, যারা অহঙ্কারী ছিল তাদেরকে বলবে, বরং এ ছিল তোমাদের দিন-রাতের চক্রান্ত, যখন তোমরা আমাদেরকে আদেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অস্বীকার করি এবং তাঁর সমকক্ষ স্থির করি। আর তারা যখন আযাব দেখবে তখন তারা অনুতাপ গোপন করবে। আর আমি কাফিরদের গলায় শৃঙ্খল পরিয়ে দিব। তারা যা করত কেবল তারই প্রতিফল তাদেরকে দেয়া হবে। (সূরা সাবা, আয়াত ৩১-৩৩)
এসকল আয়াতে আমরা দেখলাম কিভাবে অনুগত অনুসারীরা কেয়ামতের সময় পরস্পরকে প্রত্যাখ্যান করবে। যারা আল্লাহ তাআলার দীনকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন পীর, দরবেশ, নেতা-নেত্রী, দেব-দেবীর অননুসরণ করেছে তাদের ও যারা অনুসৃত হয়েছে তাদের অবস্থা এমনই হবে কেয়ামতের ময়দানে। তারা সেদিন রাজাধিরাজ আল্লাহ তাআলার সম্মুখে পরস্পরকে প্রত্যাখ্যান করবে। একে অন্যকে দোষারোপ করে ঝগড়ায় লিপ্ত হবে।
ফেরেশতাগণ মুশরিকদের থেকে দায়মুক্তির ঘোষণা দিবে--- আরবের মুশরিকরা ফেরেশতাদের-কে আল্লাহ তাআলার কন্যা বলে জ্ঞান করতো। তাই তারা ফেরেশতাদের পূজা করতো। কেয়ামতের দিনে এ পূজ্য ফেরেশতাগণ মুশরিকদের পুজার সাথে তাদের কোন রকম সম্পর্ক ছিলো না বলে ঘোষণা দেবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ يَقُولُ لِلْمَلَائِكَةِ أَهَؤُلَاءِ إِيَّاكُمْ كَانُوا يَعْبُدُونَ ﴿40﴾ قَالُوا سُبْحَانَكَ أَنْتَ وَلِيُّنَا مِنْ دُونِهِمْ بَلْ كَانُوا يَعْبُدُونَ الْجِنَّ أَكْثَرُهُمْ بِهِمْ مُؤْمِنُونَ ﴿41﴾ (سورة سبأ)
আর স্মরণ কর, যেদিন তিনি তাদের সকলকে সমবেত করবেন তারপর ফেরেশতাদেরকে বলবেন, এরা কি তোমাদেরই পূজা করত? তারা (ফেরেশতারা) বলবে, আপনি পবিত্র মহান, আপনিই আমাদের অভিভাবক, তারা নয়। বরং তারা জিনদের পূজা করত। এদের অধিকাংশই তাদের প্রতি ঈমান রাখত। (সূরা সাবা, আয়াত ৪০-৪১)
فَالْيَوْمَ لَا يَمْلِكُ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ نَفْعًا وَلَا ضَرًّا وَنَقُولُ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا ذُوقُوا عَذَابَ النَّارِ الَّتِي كُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُونَ (سورة سبأ)
ফলে আজ তোমাদের একে অপরের কোন উপকার কিংবা অপকার করার ক্ষমতা কেউ রাখবে না। আর আমি যালিমদের উদ্দেশ্যে বলব, তোমরা আগুনের আযাব আস্বাদন কর যা তোমরা অস্বীকার করতে। (সূরা সাবা, আয়াত ৪২)
ফেরেশতাগণ বলবেন, ছুবহানাল্লাহ! আমরা তো আপনারই বান্দা। আমরা আপনারই ইবাদত করি। এরা কিভাবে পূজা করলো? আসলে তারা শয়তানের পূজা করেছে। এর সাথে হে আল্লাহ আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। মুল কথা হলো: আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদত-বন্দেগী, পূজা-অর্চনা করা হয় তারা সেদিন কোন উপকারে আসবে না। না পূজাকারী কোন উপকার পাবে আর না পূজিত কোন কাজে আসবে। সবাই সেদিন অসহায় হয়ে থাকবে।
মূর্তিগুলো অক্ষমতা প্রকাশ করবে --- দুনিয়াতে যারা মূর্তি পুজা করেছিল কেয়ামতে সেসকল মূর্তিগুলো তাদের পূজারীদের কোন রকম সাহায্য করতে অক্ষমতা প্রকাশ করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লহ তাআলা বলেন:
وَيَوْمَ يَقُولُ نَادُوا شُرَكَائِيَ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُمْ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمْ مَوْبِقًا (سورة الكهف : 52)
আর যেদিন তিনি বলবেন, তোমরা ডাক আমার শরীকদের, যাদেরকে তোমরা (শরীক) মনে করতে। অতঃপর তারা তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। আর আমি তাদের মধ্যে রেখে দেব ধ্বংসস্থল। (সূরা আল কাহাফ, আয়াত ৫২)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
وَقِيلَ ادْعُوا شُرَكَاءَكُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُمْ وَرَأَوُا الْعَذَابَ لَوْ أَنَّهُمْ كَانُوا يَهْتَدُونَ (سورة القصص : 64)
আর বলা হবে, তোমাদের দেবতাগুলোকে ডাক, অতঃপর তারা তাদেরকে ডাকবে, তখন তারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। আর তারা আযাব দেখতে পাবে। হায়, এরা যদি সৎপথ প্রাপ্ত হত! (সূরা আল কাসাস, আয়াত ৬৪)
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَقَدْ جِئْتُمُونَا فُرَادَى كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَتَرَكْتُمْ مَا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَاءَ ظُهُورِكُمْ وَمَا نَرَى مَعَكُمْ شُفَعَاءَكُمُ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ أَنَّهُمْ فِيكُمْ شُرَكَاءُ لَقَدْ تَقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ عَنْكُمْ مَا كُنْتُمْ تَزْعُمُونَ (سورة الأنعام : 94)
আর নিশ্চয় তোমরা এসেছ আমার কাছে একা একা, যেরূপ সৃষ্টি করেছি আমি তোমাদেরকে প্রথমবার এবং আমি তোমাদেরকে যা দান করেছি, তা তোমরা ছেড়ে রেখেছ তোমাদের পিঠের পেছনে। আর আমি তোমাদের সাথে তোমাদের সুপারিশকারীদের দেখছি না, যাদের তোমরা মনে করেছ যে, নিশ্চয় তারা তোমাদের মধ্যে (আল্লাহর) অংশীদার। অবশ্যই ছিন্ন হয়ে গেছে তোমাদের পরস্পরের সম্পর্ক। আর তোমরা যা ধারণা করতে, তা তোমাদের থেকে হারিয়ে গিয়েছে। (সূরা আল আনআম, আয়াত ৯৪)
কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা শিরককারীদের বলবেন, দুনিয়াতে তোমরা যে সকল দেব-দেবী, মূর্তি, মানুষ, জন্তু-জানোয়ার-কে আমার সাথে শরীক করতে তাদের থেকে আজকে সাহায্য চাও। তাদের-কে বলো তোমাদের উদ্ধার করতে। তখন শিরককারীরা তাদের ডাকবে, কিন্তু তারা কোন উত্তর দেবে না।
যারা ঈসা আলাইহিস সালাম কে আল্লাহর পুত্র বলে গ্রহণ করেছে তিনি তাদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিবেন-
وَإِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَهَيْنِ مِنْ دُونِ اللَّهِ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقٍّ إِنْ كُنْتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ تَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ إِنَّكَ أَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ ﴿116﴾ مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلَّا مَا أَمَرْتَنِي بِهِ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ ﴿117﴾ (سورة المائدة)
আর আল্লাহ যখন বলবেন, হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা, তুমি কি মানুষদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার মাতাকে ইলাহরূপে গ্রহণ কর? সে বলবে, আপনি পবিত্র মহান, যার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার জন্য সম্ভব নয়। যদি আমি তা বলতাম তাহলে অবশ্যই আপনি তা জানতেন। আমার অন্তরে যা আছে তা আপনি জানেন, আর আপনার অন্তরে যা আছে তা আমি জানি না; নিশ্চয় আপনি গায়েবী বিষয়সমূহে সর্বজ্ঞাত। আমি তাদেরকে কেবল তাই বলেছি, যা আপনি আমাকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদাত কর। আর যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের উপর সাক্ষী ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকে উঠিয়ে নিলেন তখন আপনি ছিলেন তাদের পর্যবেক্ষণকারী। আর আপনি সব কিছুর উপর সাক্ষী। (সূরা আল মায়েদা, আয়াত ১১৬-১১৭)
ঈসা আলাইহিস সালাম কেয়ামতের দিন বলবেন, হে আল্লাহ! আমি কিভাবে বলি, আমি আপনার পুত্র আর আমার মাতা মরিয়ম আপনার স্ত্রী। এটা বলার অধিকার আমাকে কে দিয়েছে? আপনি তো জানেন আপনি যা আদেশ করেছেন আমি শুধু সেটাই বলেছি। আমি তাদের বলেছি আল্লাহ তাআলা হলেন, আমার ও তোমাদের প্রভূ। তোমরা তারই ইবাদত করো। আর এটাই সঠিক পথ। যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আপনি দেখেছে আমি কি বলেছি তাদের। যখন আপনি আমাকে নিয়ে আসলেন তখন থেকে তারা যা কিছু করেছে ও বলেছে সে সম্পর্কে আমার কোন দায়িত্ব নেই।
ভাবার বিষয় হল, মারইয়াম আলাইহিস সালাম ও ঈসা আলাইহিস সালাম এর কত মর্যাদা আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। যারা তাদের সম্মানে বাড়াবাড়ি করে আল্লাহর সাথে তাদের শরীক বানালো আল্লাহ তাদের শাস্তি দিবেন। কারণ তারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে। আল্লাহ যা বলেননি ধর্মের ব্যাপারে তারা তা বলেছে। তাই তারা মিথ্যাবাদী। এ জন্য আল্লাহ তাআলা বলবেন:
قَالَ اللَّهُ هَذَا يَوْمُ يَنْفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (سورة المائدة: 119)
আল্লাহ বলবেন, এটা হল সেই দিন যেদিন সত্যবাদীগণকে তাদের সততা উপকার করবে। তাদের জন্য আছে জান্নাতসমূহ যার নীচে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। সেখানে তারা হবে স্থায়ী। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এটা মহাসাফল্য। (সূরা আল মায়েদা, আয়াত ১১৯)
আল্লাহ তার প্রিয় বান্দা ঈসা আলাইহিস সালাম এর বক্তব্য সমর্থ করে এ কথাটি বলবেন।
উম্মতে মুহাম্মদী কেয়ামতের দিন অন্য সকল জাতির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে-- এটা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ মর্যাদা। কেয়ামত দিবসে তারা সকল জাতির মিথ্যাচারের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। কেয়ামতের দিন যখন সকল নবী রাসূল ও তাদের সম্প্রদায়কে একত্র করা হবে তখন ঐ সকল জাতিরা নবী রাসূলদের আহবানের বিষয়টি অস্বীকার করবে। তারা বলবে আমাদের কাছে নূহ আলাইহিস সালাম দাওয়াত পৌছে দেয়নি। আবার কেহ বলবে আপনি আমাদের কাছে হুদ, সালেহ, শুআইব কে পাঠিয়েছিলেন হয়ত কিন্তু তারা আমাদের কাছে আপনার বাণী পৌছে দেয়নি। এভাবে তারা তাদের নবী রাসূলদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে নিজেদের বাঁচার তাগিদে। তখন উম্মতে মুহাম্মাদী সকল নবীদের পক্ষে আর তাদের মিথ্যাবাদী উম্মতদের বিপক্ষে স্বাক্ষী দিবে। হাদীসে এসেছে-
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يجاء بنوح يوم القيامة ، فيقال له : هل بلغت ؟ فيقول : نعم يا رب ، فتسأل أمته : هل بلغكم ، فيقولون : ما جاءنا من نذير ، فيقول : من شهودك ، فيقول : محمد وأمته ، فيجاء بكم فتشهدون ، ثم قرأ رسول الله صلى الله عليه وسلم : { وكذلك جعلناكم أمة وسطا - قال : عدلا - لتكونوا شهداء على الناس ويكون الرسول عليكم شهيدا }. رواه البخاري.
আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন নূহ কে ডাকা হবে। তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি তোমার দায়িত্ব পালন করেছো? সে বলবে, হ্যাঁ, হে প্রভূ। এরপর তার জাতিকে প্রশ্ন করা হবে, সে কি তোমাদের কাছে আমার বাণী পৌছে দিয়েছে? তখন তারা বলবেম না, আমাদের কাছে কোন সতর্ককারী আসেনি। তখন আল্লাহ নূহকে বলবেন, তোমার স্বাক্ষী কারা? সে উত্তর দেবে, মুহাম্মদ ও তার উম্মত। তখন তোমাদের ডাকা হবে আর তোমরা তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করলেন : আর এমনি ভাবে তোমাদের আমি মধ্যবর্তী (ন্যায় পরায়ণ) জাতি হিসাবে সৃষ্টি করেছি। যাতে তোমরা মানুষের উপর স্বাক্ষী হতে পারো আর রাসূল তোমাদের উপর স্বাক্ষী হবেন। (বর্ণনায়: বুখারী)
আর আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে আরেকটি বর্ণনায় এসেছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يجيء النبي يوم القيامة ومعه الرجل ، والنبي ومعه الرجلان ، والنبي ومعه الثلاثة ، وأكثر من ذلك ، فيقال له : هل بلغت قومك ؟ فيقول : نعم ، فيدعى قومه ، فيقال لهم : هل بلغكم هذا ؟ فيقولون : لا ، فيقال له : من يشهد لك ؟ فيقول : محمد وأمته ، فيدعى محمد وأمته فيقال لهم : هل بلغ هذا قومه؟ فيقولون : نعم ، فيقال : وما علمكم بذلك ؟ فيقولون : جاءنا نبينا ، فأخبرنا أن الرسل قد بلغوا فصدقناه ، فذلك قوله : { وكذلك جعلناكم أمة وسطا لتكونوا شهداء على الناس ويكون الرسول عليكم شهيدا }
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন নবীদের ডাকা হবে। কারো সাথে একজন অনুসারী থাকবে কারো সাথে থাকবে দুজন আবার কারো সাথে থাকবে তিন জন বা এর বেশী। তাদের জাতিকে ডাকা হবে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, এ ব্যক্তি কি তোমাদের কাছে আমার বাণী পৌছে দিয়েছিল? তারা উত্তর দেবে, না, আমাদের কাছে আপনার বাণী পৌছে দেয়নি। তখন নবীকে প্রশ্ন করা হবে তুমি কি আমার বাণী পৌছে দিয়েছো? সে বলবে, হ্যা, দিয়েছি। তখন তাকে বলা হবে তোমার পক্ষে কে আছে স্বাক্ষী? তখন নবী বলবেন, আমার পক্ষে স্বাক্ষী আছে মুহাম্মদ ও তার উম্মত। তখন মুহাম্মদ ও তার অনুসারীদের ডাকা হবে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এ ব্যক্তি কি তার জাতির কাছে আমার বানী পৌছে দিয়েছে? তখন তারা বলবে, হ্যা, সে তার জাতির কাছে আপনার বাণী পৌছে দিয়েছে। তখন তাদের প্রশ্ন করা হবে তোমরা এটা কিভাবে জানলে? তারা উত্তর দিবে, আমাদের কাছে আমাদের নবী এসেছিলেন, তিনি আমাদের বলেছেন, এ নবী তার জাতির কাছে আপনার বাণী পৌছে দিয়েছে। এটা হল আল্লাহ তাআলার সেই বাণীর প্রতিফলন: আর এমনি ভাবে তোমাদের আমি মধ্যবর্তী (ন্যায় পরায়ণ) জাতি হিসাবে সৃষ্টি করেছি। যাতে তোমরা মানুষের উপর স্বাক্ষী হতে পারো আর রাসূল তোমাদের উপর স্বাক্ষী হবেন। (বর্ণনায়: আহমাদ, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)
হিসাব নিকাশ যেভাবে শুরু--- এরপর আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের থেকে হিসাব নিতে শুরু করবেন। যার হিসাবে কঠোরতা করবেন সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। হিসাব নিকাশের ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَأَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ (سورة مريم: 39)
আর তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপ দিবস সম্পর্কে যখন সব বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাব, অথচ তারা রয়েছে উদাসীনতায় বিভোর এবং তারা ঈমান আনছে না। (সূরা মারইয়াম, আয়াত ৩৯)
يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِنْ سُوءٍ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بَعِيدًا وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ (سورة آل عمران :30)
যেদিন প্রত্যেকে উপস্থিত পাবে যে ভাল আমল সে করেছে এবং যে মন্দ আমল সে করেছে তা। তখন সে কামনা করবে, যদি মন্দ কাজ ও তার মধ্যে বহুদূর ব্যবধান হত! আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার নিজের ব্যাপারে সাবধান করছেন এবং আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল। (সূরা আলে ইমরান. আয়াত ৩০
হিসাব নিকাশ শুরু সম্পর্কে হাদীসে এসেছে
عن عبد الله بن مسعود عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: لا تزول قدما ابن آدم يوم القيامة من عند ربه حتى يسأل عن خمس : عن عمره فيما أفناه ، وعن شبابه فيما أبلاه ، وعن ماله من أين اكتسبه وفيما أنفقه ، وماذا عمل فيما علم
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত যে নবী কারী, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: পাঁচটি প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার আগে কোন মানব সন্তান কেয়ামতের দিন পা নাড়াতে পারবে না। তাকে প্রশ্ন করা হবে জীবন সম্পর্কে; সে কি কাজে আয়ু শেষ করেছে? প্রশ্ন করা হবে তার যৌবন সম্পর্কে ; কি কাজে সে তাকে বার্ধক্যে পৌছে দিয়েছে? প্রশ্ন করা হবে তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে; কিভাবে সে তা আয় করেছে আর কি কাজে তা ব্যয় করেছে? আর প্রশ্ন করা হবে সে যা জ্ঞান অর্জন করেছে সে মোতাবেক কাজ করেছে কি না? (বর্ণনায়: তিরিমিজী, আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন, দেখুন সহীহ আল জামে)
এমনিভাবে আজ ভুলে যাওয়া হবে-- হাদীসে এসেছে :
عن أبي هريرة قال: قالوا : يا رسول الله ! هل نرى ربنا يوم القيامة ؟ " قال : هل تضارون في رؤية الشمس في الظهيرة ، ليست في سحابة ؟ " قالوا : لا . قال " فهل تضارون في رؤية القمر ليلة البدر ، ليس في سحابة ؟ " قالوا : لا . قال " فوالذي نفسي بيده ! لا تضارون في رؤية ربكم إلا كما تضارون في رؤية أحدهما . قال فيلقى العبد فيقول : أي فل ! ألم أكرمك ، وأسودك ، وأزوجك ، وأسخر لك الخيل والإبل ، وأذرك ترأس وتربع ؟ فيقول : بلى . قال فيقول : أفظننت أنك ملاقي ؟ فيقول : لا . فيقول : فإني أنساك كما نسيتني . ثم يلقى الثاني فيقول : أي فل ! ألم أكرمك ، وأسودك ، وأزوجك ، وأسخر لك الخيل والإبل ، وأذرك ترأس وتربع ؟ فيقول : بلى . أي رب ! فيقول : أفظننت أنك ملاقي ؟ فيقول : لا . فيقول : فإني أنساك كما نسيتني . ثم يلقى الثالث فيقول له مثل ذلك . فيقول : يا رب ! آمنت بك وبكتابك وبرسلك وصليت وصمت وتصدقت . ويثني بخير ما استطاع . فيقول : ههنا إذا . قال ثم يقال له : الآن نبعث شاهدنا عليك . ويتفكر في نفسه : من ذا الذي يشهد علي ؟ فيختم على فيه . ويقال لفخذه ولحمه وعظامه : انطقي . فتنطق فخذه ولحمه وعظامه بعمله . وذلك ليعذر من نفسه . وذلك المنافق . وذلك الذي يسخط الله عليه " . رواه مسلم.
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি কেয়ামত দিবসে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে দেখতে পাবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আচ্ছা দুপুর বেলা যখন মেঘ না থাকে তখন সূর্যকে দেখার জন্য কি তোমাদের ভীর করতে হয়? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন, না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্ন করলেন: পূর্ণিমার রাতে যখন আকাশে মেঘ না থাকে তখন চাঁদ দেখার জন্য কি তোমাদের ভীর করতে হয়? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন: না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ! তোমাদের প্রতিপালককে দেখার জন্য সেদিন তোমাদের কোন কষ্ট করতে হবে না। যেমন সূর্য ও চন্দ্র দেখার জন্য তোমাদের কোন কষ্ট করতে হয় না। আল্লাহ এক বান্দার সাথে সাক্ষাত দিবেন। আল্লাহ বলবেন: হে ব্যক্তি আমি কি তোমাকে সম্মানিত করিনি? আমি কি তোমাকে নেতা বানাইনি? আমি কি তোমাকে বিবাহ করাইনি। আমি কি তোমার জন্য বাহনের ব্যবস্থা করিনি? সে ব্যক্তি উত্তর দেবে অবশ্যই আপনি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি কি আমার সাথে সাক্ষাতের বিশ্বাস রাখতে? সে বলবে, না। আল্লাহ তখন বলবেন: আজ আমি তোমাকে ভুলে গেলাম যেমন তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছিলে।
এরপর দ্বিতীয় এ ব্যক্তিকে আনা হবে। আল্লাহ বলবেন: হে ব্যক্তি আমি কি তোমাকে সম্মানিত করিনি? আমি কি তোমাকে নেতা বানাইনি? আমি কি তোমাকে বিবাহ করাইনি। আমি কি তোমার জন্য বাহনের ব্যবস্থা করিনি? সে ব্যক্তি উত্তর দেবে অবশ্যই আপনি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি কি আমার সাথে সাক্ষাতের বিশ্বাস রাখতে? সে বলবে, না। আল্লাহ তখন বলবেন: আজ আমি তোমাকে ভুলে গেলাম যেমন তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছিলে।
এরপর তৃতীয় এক ব্যক্তিকে সাক্ষাত দিবেন। আল্লাহ তাআলা তাকে অপর দুজনের মত করেই প্রশ্ন করবেন। সে বলবে, আমি আপনার প্রতি বিশ্বাস রেখেছি। আপনার কিতাব, আপনার রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস রেখেছি। নামাজ পড়েছি, রোযা রেখেছি, দান-সদকা করেছি। সাধ্যমত আপনার প্রশংসা করেছি। তার উত্তর শুনে আল্লাহ বলবেন, তাই নাকি? তাহলে এখনই তোমার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী উপস্থিত করি। তারপর (তোমার উত্তর সম্পর্কে) তুমি ভেবে দেখবে। বলা হবে, কে আছে তার সম্পর্কে স্বাক্ষ্য দেবে? এরপর তার মুখ সীল করে দেয়া হবে। তার রান, তার গোশত, তার হাড্ডিকে বলা হবে, তোমরা কথা বলো। এরা তাদের জানা মতে তথ্য দিতে শুরু করবে। এভাবে আল্লাহ নিজে স্বাক্ষ্য দেয়ার দায় থেকে মুক্ত থাকবেন। আসলে এ ব্যক্তিটি ছিল দুনিয়ার জীবনে মুনাফিক। এ জন্য আল্লাহ তাআলা তার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন। (বর্ণনায় : মুসলিম)
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. কেয়ামত দিবসে আল্লাহ তাআলাকে দর্শন করার জন্য সাহাবায়ে কেরামের প্রবল আগ্রহ। আল্লাহর সাক্ষাত লাভের আকাংখা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়।
দুই. আল্লাহকে দেখার বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। যা মুর্খ ও জ্ঞানী সকল মানুষের বোধগম্য। যখন তার একটি সৃষ্টিকে একত্রে সকল মানুষ দেখতে পারে তখন স্রষ্টাকে যে দেখতে কারো কষ্ট হবে না তা সহজেই বুঝা যায়।
তিন. যারা আল্লাহ তাআলার সাথে সাক্ষাতের প্রতি ঈমান রাখতো না তারাও আল্লাহর সাক্ষাত পাবে তবে সেটা তাদের জন্য সুখকর হবে না। চার. যারা সমাজ, রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের নেতা তাদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে বিশেষভাবে প্রশ্ন করা হবে। পাঁচ. মুনাফিকরা দুনিয়ার জীবনে মুনাফিকি করে পার পেয়ে গেলেও আল্লাহ তাআলার সাক্ষাতের সময় ধরা খেয়ে যাবে।
যার হিসাবে জওয়াব চাওয়া হবে তাকে আজাব দেয়া হবে-- হাদীসে এসেছে
عن عائشة أم المؤمنين رضي الله عنها أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ليس أحد يحاسب يوم القيامة إلا هلك . فقلت : يا رسول الله ، أليس قد قال الله تعالى : { فأما من أوتي كتابه بيمينه فسوف يحاسب حسابا يسيرا } . فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إنما ذلك العرض ، وليس أحد يناقش الحساب يوم القيامة إلا عذب.
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন যার হিসাব তলব করা হবে সেই ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি (আয়েশা) তখন বললাম, আল্লাহ তাআলা কি বলেননি : আর যার ডান হাতে আমল নামা দেয়া হবে তার হিসাব নেয়া হবে সহজ ভাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন: এখানে আমলের হিসাব প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। যার হিসাবেই জওয়াব তলব করা হবে তাকে শাস্তি দেয়া হবে। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. কিয়ামতে দিন যার হিসাবে নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে তার রেহাই নেই।
দুই. আমাদের মুমিনদের মাতা আয়েশা রা. ইলম, প্রজ্ঞা, কুরআনের জ্ঞান কতখানি ছিল যে তিনি কুরআনের আয়াত দিয়ে আল্লাহর রাসূলের কথা বিচার করতে চেয়েছন। তাই দীনি ক্ষেত্রে বড়দের সকল কথাই যাচাই বাছাই না করে মেনে নিতে হবে এ ধারনা সঠিক নয়।
তিন. আল কুরআনে যেখানে বলা হয়েছে যাদের ডান হাতে আমল নামা দেয়া হবে তাদের হিসাব সহজ করা হবে, এর অর্থ হল তাদের কাছে সহজে আমল নামা পেশ করা হবে।
চার. কেয়ামতের দিন যার হিসাব পর্যালোচনা করা হবে সে আটকে যাবে। তাই আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বদা বিনা হিসাবে জান্নাত লাভের প্রার্থনা করা উচিত।
সেদিন আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে কোন দোভাষী থাকবে না-- সেদিন আল্লাহ তাআলা তার বান্দার সাথে সরাসরি কথা বলবেন। কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হবে না। হাদীসে এসেছে
عن عدي بن حاتم رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ما منكم من أحد إلا سيكلمه ربه ليس بينه وبينه ترجمان ، فينظر أيمن منه فلا يرى إلا ما قدم من عمله ، وينظر أشأم منه فلا يرى إلا ما قدم ، وينظر بين يديه فلا يرى إلا النار تلقاء وجهه ، فاتقوا النار ولو بشق تمرة ) .
আদী ইবনে হাতেম রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমাদের মধ্যে প্রতিটি ব্যক্তি সেদিন আল্লাহ তাআলার সাথে সরাসরি কথা বলবে। কোন দোভাষী বা মধ্যস্থ থাকবে না। মানুষ তখন তার ডান দিকে তাকাবে দেখতে পাবে শুধু তাদের প্রেরিত কর্ম। আর বাম দিকে তাকাবে দেখবে শুধু নিজ কৃত কর্ম। সামনের দিকে তাকাবে দেখবে শুধু জাহান্নামের আগুন। কাজেই তোমরা আগুন থেকে সাবধান হও নিজেদের বাঁচাও যদি একটি খেজুরের টুকরা দান করার বিনিময়েও হয়। (বর্ণনায়: বুখারী)
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. সামান্য নেক আমলেরও অবজ্ঞা করা উচিত নয়। সুযোগ আসা মাত্রই যে কোন নেক আমল করা উচিত। কেহ যদি একটি খেজুরের অংশ দান করার সুযোগ পায় তাহলে তা দান করে হলেও আল্লাহ তাআলার শাস্তি ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করা উচিত।
সেদিন প্রথম যে বিষয়টির হিসাব নেয়া হবে-- সেদিন প্রথম যে বিষয়টির হিসাব নেয়া হবে তা হল, নামাজ। যদি এটি শুদ্ধভাবে কবুল হয় তবে তার সকল আমল শুদ্ধ বলে ধরা হবে। আর যদি এট বরবাদ হয়ে যায় তখন সকল আমলই বরবাদ হয়ে যাবে। হাদীসে এসেছে : আনাস ইবনে হাকীম আদ-দবী যিনি যিয়াদ অথবা ইবনে যিয়াদের ভয়ে মদীনাতে এসেছিলেন ও আবু হুরাইরা রা. এর সাথে সাক্ষাত করলেন, তিনি বলেন, হে যুবক! আমি কি তোমাকে একটি হাদীস শুনাবো? আমি বললাম, অবশ্যই শুনাবেন। আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন! তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
إن أول ما يحاسب الناس به يوم القيامة من أعمالهم الصلاة قال يقول ربنا جل وعز لملائكته وهو أعلم انظروا في صلاة عبدي أتمها أم نقصها فإن كانت تامة كتبت له تامة وإن كان انتقص منها شيئا قال انظروا هل لعبدي من تطوع فإن كان له تطوع قال أتموا لعبدي فريضته من تطوعه ثم تؤخذ الأعمال على ذاكم . رواه أحمد وأبو داود.
মানুষের আমলের মধ্যে প্রথম যে বিষয়টির হিসাব নেয়া হবে তাহল, নামাজ। আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলা নিজে ভালমত জানা সত্বেও তার ফেরেশতাদের বলবেন: আমার এ বান্দার নামাজের প্রতি তাকাও। সে নামাজ পূর্ণ করেছে তা ত্রুটি করেছে? যদি সে তা পূর্ণ করে থাকে তার ব্যাপারে পূর্ণতা লেখে দাও। আর যদি সে ত্রুটি করে থাকে তাহলে তার নফল নামাজের প্রতি খেয়াল করো। তার নফল থেকে ফরজের অপূর্ণতা পূর্ণ করে দাও। এরপর তার সকল আমলই এভাবে মুল্যায়ন করা হবে। (বর্ণনায়: আহমাদ, আবু দাউদ। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)
সহজ হিসাব-- অনেক ঈমানদার মানুষ যারা পাপাচারে লিপ্ত হয়েছিল আল্লাহ তাদের পাপগুলো স্মরণ করিয়ে দিবেন ও ক্ষমা করে জান্নাত দান করবেন। হাদীসে এসেছে
عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : إن الله يدني المؤمن، فيضع عليه كنفه ويستره، فيقول : أتعرف ذنب كذا : أتعرف ذنب كذا ؟ فيقول : نعم أي رب ، حتى إذا قرره بذنوبه ، ورأى في نفسه أنه هلك ، قال : سترتها عليك في الدنيا ، وأنا أغفرها لك اليوم ، فيعطى كتاب حسناته . وأما الكفار والمنافقون فينادي بهم على رؤس الخلائق ، فيقول الأشهاد : { هؤلاء الذين كذبوا على ربهم ألا لعنة الله على الظالمين } . رواه البخاري ومسلم.
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: আল্লাহ ঈমানদারদের কাছাকাছি হবেন। নিজের উপর একটা পর্দা রেখে দিবেন। আর তাকে বলবেন, তুমি কি সেই পাপটি সম্পর্কে জানো? সেই পাপটির কথা কি তোমার মনে আছে? সে উত্তরে বলবে, হ্যা, প্রভূ। এভাবে সে সকল পাপের কথা স্বীকার করবে। আর ধারনা করবে আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। আল্লাহ তাআলা তখন তাকে বলবেন, আমি দুনিয়াতে তোমার পাপগুলো গোপন রেখেছি আর আজ তা ক্ষমা করে দিলাম। এ কথা বলে তার নেক আমলের দফতর তাকে দেয়া হবে। আর যারা কাফের বা মুনাফিক সকলের সামনে তাদের ডাকা হবে। ফেরেশতারা বলবে, এরাইতো তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে। জালিমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)
কেয়ামতের ভয়াবহতায় আরো গতি সঞ্চয় করবে আল্লাহ তাআলার ক্রোধ। যেমন আমরা উপরের হাদীসগুলোতে দেখলাম। শাফাআত সম্পর্কিত হাদীসে দেখলাম সকল নবীই বলবেন, আজ আমার প্রভূ আমার প্রতি অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হয়েছেন। আমাদের সকলের কর্তব্য হবে আল্লাহ তাআলার ক্রোধ থেকে তাঁর কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করা।প্রথম যে বিষয়ে ফয়সালা হবে-- হাদীসে এসেছে
عن عبد الله بن مسعود رضي الله عن قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أول ما يقضى بين الناس يوم القيامة ، في الدماء. رواه البخاري ومسلم.
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন প্রথম যে বিষয়ে মানুষের মধ্যে ফয়সালা করা হবে তা হবে রক্তপাতের বিচার। (বুখারী ও মুসলিম)
বিশেষ জ্ঞাতব্য : একটি হাদীসে বলা হল, প্রথম ফয়সালা হবে নামাজ সম্পর্কে। এ হাদীসে বলা হল, প্রথম ফয়সালা হবে রক্তপাত ও হত্যার।
এ দু হাদীসের মধ্যে কোন বৈপরিত্য নেই। প্রথম হাদীসে আল্লাহ তাআলার হক বা অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার হক বা অধিকার বিষয়ে প্রথম হিসাব হবে নামাজের। আর মানুষের অধিকার ক্ষুন্নের বিষয়ে প্রথম বিচার হবে রক্তপাত ঘটানো ও হত্যাকান্ডের।
মানুষের অধিকার হরনের প্রতিকার-- পৃথিবীতে বসে এক জন মানুষ অন্যজনের প্রতি যে জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়ন করেছে, অধিকার ক্ষুন্ন করেছে, সম্পদ ও সম্মানের উপর যে আঘাত করেছে তার বিচার হবে কেয়ামতের দিন। এ বিচারের ধরণ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে -
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من كانت له مظلمة لأحد من عرضه أو شيء فليتحلله منه اليوم ، قبل أن لا يكون دينار ولا درهم ، إن كان له عمل صالح أخذ منه بقدر مظلمته ، وإن لم تكن له حسنات أخذ من سيئات صاحبه فحمل عليه. رواه البخاري.
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি কোন অন্যায় করেছে, অথবা তার সম্মানহানী করেছে কিংবা অন্যকোনভাবে তার ক্ষতি করেছে সে যেন যেদিন কোন টাকা-পয়সা কাজে আসবে না সে দিন আসার পূর্বে আজই (দুনিয়াতে থাকাবস্থায়) তার প্রতিকার করে নেয়। কেয়ামতের বিচারে অন্যায়কারীর কোন নেক আমল থাকলে তা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পাওনা আদায় করা হবে। আর যদি অন্যায়কারীর নেক আমল না থাকে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পাপগুলো তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী)
হাদীসে আরো এসেছে -
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: أتدرون ما المفلس ؟ قالوا : المفلس فينا من لا درهم له ولا متاع . فقال : إن المفلس من أمتي ، يأتي يوم القيامة بصلاة وصيام وزكاة ، ويأتي قد شتم هذا ، وقذف هذا ، وأكل مال هذا ، وسفك دم هذا ، وضرب هذا . فيعطى هذا من حسناته وهذا من حسناته . فإن فنيت حسناته ، قبل أن يقضى ما عليه ، أخذ من خطاياهم فطرحت عليه . ثم طرح في النار. رواه مسلم.
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমরা কি জান দরিদ্র অসহায় ব্যক্তি কে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমাদের মধ্যে দরিদ্র অসহায় ব্যক্তিতো সে যার কোন টাকা পয়সা বা সম্পদ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমার উম্মতের মধ্যে সত্যিকার দরিদ্র অসহায় হলো সেই ব্যক্তি যে কেয়ামতের দিন সালাত, সিয়াম ও যাকাতসহ অনেক ভাল কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে, অথচ দুনিয়াতে বসে সে কাউকে গালি দিয়েছিল, কারো প্রতি অপবাদ দিয়েছিল, করো সম্পদ আত্নসাত করেছিল, কারো রক্তপাত ঘটিয়েছিল, কাউকে মারধোর করেছিল ফলে তার নেক আমলগুলো থেকে নিয়ে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করা হবে। এভাবে যখন তার নেক আমলগুলো শেষ হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়ার জন্য আর কিছু থাকবে না তখন তাদের পাপগুলো তাকে দেয়া হবে ফলে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (মুসলিম)
এ হাদীস দুটো থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. গুনাহ, পাপ বা অপরাধ দু প্রকার। প্রথম প্রকার হল যা দ্বারা আল্লাহ তাআলার অধিকার বা হক ক্ষুন্ন হয়, যেমন শিরক করা, নামাজ পরিত্যাগ করা, হজ আদায় না করা ইত্যাদি। আর দ্বিতীয় প্রকার হল যা দ্বারা মানবাধিকার বা হুকুকুল ইবাদ ক্ষুন্ন হয়। যেমন করো সম্পদ দখল করা, গালি দেয়া, মারধোর করা ইত্যাদি। প্রথম প্রকারের পাপগুলো ক্ষমা করা আল্লাহর দায়িত্বে থাকে। আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে এগুলো ক্ষমা করে দিতে পারেন। আর দ্বিতীয় প্রকার পাপগুলো আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন না। যতক্ষণ না ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ক্ষমা না করে।
দুই. দুনিয়াতে বসে মৃত্যুর পূর্বেই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। বা তার কাছ থেকে দাবী ছাড়িয়ে নিতে হবে।
তিন. যার মাধ্যমে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার নেক আমল বা সৎকর্ম থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। এমনি পাওনা পরিশোধ করতে করতে যদি নেক আমলগুলো শেষ হয়ে যায় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পাপগুলো তার উপর চাপিয়ে দিয়ে তার পাওনা পরিশোধ করা হবে।
চার. আলোচিত ব্যক্তি আসলে ধনীই ছিল। তার অনেক নেক আমল ছিল। কিন্তু এগুলো এমনভাবে আর এমন সময়ে নি:শেষ হয়ে গেল যে, তা অর্জন করার আর কোন পথই থাকলো না। এ জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যক্তিকে সত্যিকার অসহায় বলেছেন। কারণ দুনিয়াতে কেহ নি:স্ব হয়ে গেলে সে আবার পরিশ্রম করে সম্পদ অর্জন করতে পারে। কিন্তু বিচার দিবসে কেহ নি:স্ব হয়ে গেলে তার সামনে আর সম্পদ অর্জনের সুযোগ থাকে না।
পাঁচ. রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ হাদীস আমাদেরকে মানুষের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে যত্নবান হতে নির্দেশ দেয়। মানুষের সম্মান, সম্পদ, শরীর সবকিছু আমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। এগুলোর কোনটি ক্ষতিগ্রস্ত করলে মানবাধিকার লংঘিত হয়।
যারা লোক দেখানোর জন্য নেক আমল করতো কেয়ামতে তাদের বিচার-- হাদীসে এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: إن أول الناس يقضى يوم القيامة عليه رجل استشهد فأتي به فعرفه نعمها فعرفها، قال فما عملت فيها، قال : قاتلت فيك حتى استشهدت، قال: كذبت، ولكنك قاتلت لأن يقال جريء فقد قيل، ثم أمر به فسحب على وجهه حتى ألقى في النار. ورجل تعلم العلم وعلمه وقرأ القرآن فأتي به فعرفه نعمه فعرفها، قال: فما عملت فيها، قال: تعلمت العلم وعلمته وقرأت فيك القرآن، قال: كذبت، ولكنك تعلمت العلم ليقال: عالم وقرأت القرآن ليقال هو قارئ فقد قيل، ثم أمر به فسحب على وجهه حتى ألقى في النار. ورجل وسع الله عليه وأعطاه من أصناف المال كله فأتي به فعرفه نعمه فعرفها، قال: فما عملت فيها، قال: ما تركت من سبيل تحب أن ينفق فيها إلا أنفقت فيها لك، قال : كذبت ولكنك فعلت ليقال هو جواد، فقد قيل، ، ثم أمر به فسحب على وجهه حتى ألقى في النار. ( مسلم1905 )
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন: কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে শহীদ হয়েছিল। তাকে হাজির করা হবে এবং আল্লাহ তার নিয়ামতের কথা তাকে বলবেন। এবং সে তার প্রতি সকল নিয়ামত চিনতে পারবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন তুমি কি কাজ করে এসেছ? সে বলবে, আমি তোমার পথে যুদ্ধ করেছি, শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। আল্লাহ বলবেন : তুমি মিথ্যা বলেছ, তুমি তো যুদ্ধ করেছ লোকে তোমাকে বীর বলবে এ উদ্দেশ্যে। আর তা বলা হয়েছে। অত:পর নির্দেশ দেয়া হবে, এবং তাকে টেনে উপুর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর এমন ব্যক্তির বিচার করা হবে, যে নিজে জ্ঞান অর্জন করেছে ও অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন তেলাওয়াত করেছে। তাকে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তার নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। সে স্বীকার করবে। তাকে জিজ্ঞেস করবেন কি কাজ করে এসেছ? সে বলবে আমি জ্ঞান অর্জন করেছি, অন্যকে শিখিয়েছি এবং আপনার জন্য কুরআন তেলাওয়াত করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি জ্ঞান অর্জন করেছ এ জন্য যে লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলবে। কুরআন তেলাওয়াত করেছ এ উদ্দেশ্যে যে, লোকে তোমাকে কারী বলবে। আর তা বলা হয়েছে। এরপর নির্দেশ দেয়া হবে তাকে উপুর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্য।
তারপর বিচার করা হবে এমন ব্যক্তির, যাকে আল্লাহ দুনিয়াতে সকল ধরণের সম্পদ দান করেছিলেন। তাকে হাজির করে আল্লাহ নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। সে সকল নেয়ামত স্মরণ করবে। আল্লাহ বলবেন, কি করে এসেছ? সে বলবে, আপনি যে সকল খাতে খরচ করা পছন্দ করেন আমি তার সকল খাতে সম্পদ ব্যয় করেছি, কেবল আপনারই জন্য। আল্লাহ বলবেন তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি সম্পদ এ উদ্দেশ্যে খরচ করেছ যে, লোকে তোমাকে দানশীল বলবে। আর তা বলা হয়েছে। এরপর নির্দেশ দেয়া হবে, এবং তাকে উপুর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (বর্ণনায় : মুসলিম)
হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম তুমি আমার সেবা করোনি--
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الله عز وجل يقول ، يوم القيامة : يا ابن آدم ! مرضت فلم تعدني . قال : يا رب ! كيف أعودك ؟ وأنت رب العالمين . قال : أما علمت أن عبدي فلانا مرض فلم تعده . أما علمت أنك لو عدته لوجدتني عنده ؟ يا ابن آدم ! استطعمتك فلم تطعمني . قال : يا رب ! وكيف أطعمك ؟ وأنت رب العالمين . قال : أما علمت أنه استطعمك عبدي فلان فلم تطعمه ؟ أما علمت أنك لو أطعمته لوجدت ذلك عندي ؟ يا ابن آدم ! استسقيتك فلم تسقني . قال : يا رب ! كيف أسقيك ؟ وأنت رب العالمين . قال : استسقاك عبدي فلان فلم تسقه . أما أنك لو سقيته وجدت ذلك عندي
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে মানব সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তুমি আমার সেবা করোনি। মানব সন্তান বলবে, হে আমার প্রভূ! কিভাবে আমি আপনার সেবা করব, আপনিতো সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক? আল্লাহ বলবেন: তুমি কি জানতে না যে আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো? তুমি তো তাকে সেবা করোনি। তুমি কি জানতে না, যদি তার সেবা করতে তাহলে তার কাছে আমাকে পেতে?
হে মানব সন্তান! আমি খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাদ্য দাওনি। মানব সন্তান বলবে, হে আমার প্রভূ! কিভাবে আমি আপনাকে খাদ্য দেব, আপনিতো সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক? আল্লাহ বলবেন: তুমি কি জানতে না যে আমার অমুক বান্দা খাবার চেয়েছিলো? তুমি তো খাবার দাওনি। তুমি কি জানতে না, যদি তাকে খাবার দিতে তাহলে তা আমার কাছে পেতে?
হে মানব সন্তান! আমি পানি পান করতে চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। মানব সন্তান বলবে, হে আমার প্রভূ! কিভাবে আমি আপনাকে পানী পান করাবো, আপনিতো সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক? আল্লাহ বলবেন: তুমি কি জানতে না যে আমার অমুক বান্দা পিপাসিত ছিল? তুমি তো তাকে পানী পান করাওনি। তুমি কি জানতে না, যদি তাকে পানী পান করাতে তাহলে তা আমার কাছে পেতে? (মুসলিম)
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম, কেহ অসুস্থ হয়ে পড়লে, ক্ষুধা-পিপাসায় কষ্ট পেলে সেবা ও সাহায্য পাওয়া তার একটি অধিকার। সামর্থ থাকা সত্বেও এ অধিকার আদায় না করলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জওয়াব দিতে হবে।
জান্নাত ও জাহান্নামে এক মুহুর্তের অনুভূতি--
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يؤتى بأنعم أهل الدنيا ، من أهل النار ، يوم القيامة . فيصبغ في النار صبغة . ثم يقال : يا ابن آدم ! هل رأيت خيرا قط ؟ هل مر بك نعيم قط ؟ فيقول : لا . والله ! يا رب ! ويؤتى بأشد الناس بؤسا في الدنيا ، من أهل الجنة . فيصبغ صبغة في الجنة . فيقال له : يا ابن آدم ! هل رأيت بؤسا قط ؟ هل مر بك شدة قط ؟ فيقول : لا . والله ! يا رب ! ما مر بي بؤس قط . ولا رأيت شدة قط. رواه مسلم.
আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনবান সূখী ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে। তাকে জাহান্নামে একটি চোবানি দিয়ে উঠানো হবে। অত:পর তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি কখনো কল্যাণ দেখেছো? তুমি কি কখনো সুখ-শান্তি পেয়েছো? সে উত্তরে বলবে, না আল্লাহর শপথ! হে প্রভূ।
এরপর পৃথিবীর সবচেয়ে হতভ্যাগ্য ও দরিদ্র লোকটিকে উপস্থিত করা হবে। যে জান্নাত লাভ করেছে। তাকে জান্নাতে একটি চুবানি দেয়া হবে। অত:পর তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি কখনো অভাব দেখেছো? তুমি কি কখনো কষ্টে পতিত হয়েছিলে? সে উত্তরে বলবে, না, আল্লাহর শপথ হে প্রভূ! আমি পৃথিবীতে কখনো কষ্ট দেখেনি। কখনো বিপদে পড়িনি। (বর্ণনায় মুসলিম)
এ হাদীসে দু ব্যক্তির দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম ব্যক্তি জাহান্নামের আজাবের একটু ছোয়া পেয়ে পৃথিবীর সকল সূখের কথা একেবারে ভুলে যাবে। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি জান্নাতের একটু ছোয়া পেয়ে পৃথিবীর সকল দু:খ কষ্টের কথা ভুলে যাবে।
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يؤتى بالرجل يوم القيامة من أهل الجنة ، فيقول له : يا ابن آدم ! كيف وجدت منزلك ؟ فيقول : أي رب ! خير منزل ، فيقول : سل وتمن ، فيقول : يا رب ما أسأل ولا أتمنى إلا أن تردني إلى الدنيا ، فأقتل في سبيلك عشر مرار، لما يرى من فضل الشهادة ، ويؤتى بالرجل من أهل النار، فيقول له : يا ابن آدم ! كيف وجدت منزلك ؟ فيقول : أي رب ! شر منزل، فيقول له : أتفتدي منه بطلاع الأرض ذهبا ؟ فيقول : أي رب ! نعم، فيقول : كذبت قد سألتك أقل من ذلك وأيسر ، فلم تفعل فيرد إلى النار
আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন জান্নাত লাভকারী এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে। তাকে বলা হবে, হে মানব সন্তান! তুমি তোমার ঘর কেমন পেয়েছো? সে উত্তরে বলবে, হে প্রভূ! সর্বোৎকৃষ্ট ঘর পেয়েছি। আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, কিছু চাও, কিছু আকাংখা করো। সে উত্তরে বলবে আমি কিছু চাই না, কিছুই আকাংখা করি না। শুধু আকাংখা করি যদি আমাকে পৃথিবীতে ফেরৎ পাঠিয়ে দিতেন আর আমি আপনার পথে দশবার নিহত (শহীদ) হতে পারতাম। সে এ কথা বলবে যখন জান্নাতে শহীদের মর্যাদা দেখতে পাবে।
এরপর জাহান্নামীদের থেকে এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে। তাকে বলা হবে হে মানব সন্তান! তোমার ঠিকানা কেমন পেয়েছো? সে বলবে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান পেয়েছি। তাকে প্রশ্ন করা হবে পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণ খরচ করে হলও তুমি কি এ অবস্থান মুক্তি কামনা করবে? সে বলবে, হ্যাঁ, হে প্রভূ! আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিনিময়ে তোমার কাছে এর চেয়ে অনেক কম ও অনেক সহজ বিষয় চাওয়া হয়েছিলো তা-ই তুমি পারোনি। এরপর তাকে আবার জাহান্নামে ফেরত পাঠানো হবে। (আহমাদ, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ জামে কিতাবে সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন, হাদীস নং ৩১১/৬)
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম, একজন জান্নাতী ব্যক্তি পৃথিবীর কোন কিছু আকাংখা করবে না। শুধু আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে নিহত হওয়া কামনা করবে। কারণ সে যখন কেয়ামতের দিন শহীদদের অভাবনীয় মর্যাদা দেখবে তখন এটা ছাড়া আর কিছু কামনা করবে না। এ হাদীস দ্বারা আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে শহীদ হওয়ার ফজীলত ও মর্যাদা জানতে পারলাম।
জাহান্নাম মুক্তি ও জান্নাত লাভ করার জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা খুব কঠিন কাজ নয়।
তাওহীদের মূল্যায়ন-- তাওহীদ বা আল্লাহ তাআলার একত্ববাদে অবিচল বিশ্বাস ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার তাওহীদি আকীদা-বিশ্বাসে সমস্যা আছে তার কোন নেক আমল কাজে আসবে না। দুনিয়া পরিমাণ সম্পদ ছদকা বা আল্লাহর পথে নিজের প্রাণ ও সম্পদ সবকিছু কুরবানী দিলেও নয়। অপরপক্ষে যারা তাওহীদি আকীদা বিশ্বাস নির্ভেজাল হবে ও এর উপর অবিচল থাকবে তার অন্য কোন নেক আমল না থাকলেও তাওহীদের কারণে সে একদিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। কেয়ামত পরবর্তী বিচারেও তাওহীদের মূল্যায়ন করা হবে গুরুত্বের সাথে। হাদীসেেএর দৃষ্টান্ত এভাবে এসেছে
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: إن الله سيخلص رجلا من أمتي على رؤوس الخلائق يوم القيامة فينشر عليه تسعة وتسعين سجلا ، كل سجل مثل مد البصر ثم يقول : أتنكر من هذا شيئا ؟ أظلمك كتبتي الحافظون ؟ يقول : لا يا رب . فيقول : أفلك عذر ؟ فيقول : لا يا رب ، فيقول : بلى إن لك عندنا حسنة وإنه لا ظلم عليك اليوم ، فيخرج بطاقة فيها أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا عبده ورسوله ، فيقول : احضر وزنك ، فيقول : يا رب ما هذه البطاقة مع هذه السجلات ؟ فقال فإنك لا تظلم . قال : فتوضع السجلات في كفة والبطاقة في كفة فطاشت السجلات وثقلت البطاقة ، ولا يثقل مع اسم الله شيء
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা সকল মানুষের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে মুক্তি দিবেন এভাবে যে তার সামনে নিরানব্বইটি পাপের দফতর উপস্থিত করা হবে। প্রতিটি দফতরের পরিধি হবে চোখের নজরের পরিধির মত বিশাল। আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, তুমি কি এর কোনটি অস্বীকার করো? আমার লেখক ফেরেশতারা কি তোমার প্রতি অন্যায় করে এসব লিখেছে? সে উত্তরে বলবে, না, হে আমার প্রভূ! আল্লাহ বলবেন এসব পাপের ব্যাপারে তোমার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ বা বক্তব্য আছে? সে উত্তরে বলবে, না, হে আমার প্রভূ! আল্লাহ তাআলা বলবেন, তাহলে শোন, তোমার জন্য আমার কাছে একটি মাত্র নেক আমল আছে। আর আজ তোমার প্রতি কোন জুলুম করা হবে না। এরপর আল্লাহ একটি টিকেট বের করবেন। তাতে লেখা আছে, আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আরো স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ আল্লাহ তাআলার বান্দা ও রাসূল। এরপর আল্লাহ বলবেন, আমি এ টিকেটটির ওযন দেব। লোকটি বলবে, হে আমার প্রভূ! এ টিকেটটির সাথে এতগুলো বিশাল দফতরের ওযন দিলে কী লাভ হবে? আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার উপর কোন জুলুম করা হবে না।
এই টিকেটটি এক পাল্লায় রাখা হবে আর পাপের দফতরগুলো রাখা হবে অন্য পাল্লায়। টিকেটটির পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। আসলে আল্লাহ তাআলার নামের সামনে কোন কিছু কি ভারী হতে পারে?
(বর্ণনায় : আহমাদ, তিরমিজী, হাকেম, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন সিলসিলাতুল আহাদীস আস সহীহা নং ১৩৫)
এ হাদীসে আমরা দেখলাম আলোচ্য ব্যক্তি পাহাড়সম পাপ করেছিলো। কিন্তু আল্লাহর একত্ববাদে তার বিশ্বাস ছিল নির্ভেজাল। তার বিশ্বাস ছিল শিরকমুক্ত। সে বিশ্বাসী ছিল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রেসালাতের প্রতিও। এ কারণে সে মুক্তি পেয়ে গেছে। আমরা কি পেরেছি আমাদের তাওহীদ-কে নির্ভেজাল করতে? আমরা কি পেরেছি ছোট-বড় সকল শিরক থেকে সর্বদা নিজেকে পবিত্র রাখতে? আসলে আমরা পারিনি। কখনো জেনে কখনো না জেনে বুঝে আমরা বিভিন্ন শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ছি। আল্লাহকে ভালবাসতে যেয়ে, তার রাসূলের প্রতি মুহাব্বাতের প্রকাশ করতে যেয়েও আমরা অহরহ শিরকে লিপ্ত হচ্ছি। তাই আমাদের সকলের উচিত বার বার নিজের তাওহীদি বিশ্বাসকে যাচাই করে নেয়া। শিরকের ধারে কাছেও না যাওয়া। যদি কখনো কেহ বলে, এটা শিরক। ব্যস, সাথে সাথে তা পরিহার করা।
আলোচ্য ব্যক্তি শুধু মুখে মুখে কালেমায়ে শাহাদত উচ্চারণ করেছে বলে মুক্তি পায়নি। মুখে মুখে তো কোটি কোটি লোক উচ্চারণ করে।
পুলসিরাত সম্পর্কে হাদীস--
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال: قلنا : يا رسول الله ، هل نرى ربنا يوم القيامة ؟ قال : ( هل تضارون في رؤية الشمس والقمر إذا كانت صحوا ) . قلنا : لا ، قال : ( فإنكم لا تضارون في رؤية ربكم يومئذ إلا كما تضارون في رؤيتهما ) . ثم قال : ( ينادي مناد : ليذهب كل قوم إلى ما كانوا يعبدون ، فيذهب أصحاب الصليب مع صليبهم ، وأصحاب الأوثان مع أوثانهم ، وأصحاب كل آلهة مع آلهتهم ، حتى يبقى من كان يعبد الله ، من بر أو فاجر ، وغبرات من أهل الكتاب ، ثم يؤتى بجهنم تعرض كأنها سراب ، فيقال لليهود : ما كنتم تعبدون ؟ قالوا : كنا نعبد عزير ابن الله ، فيقال : كذبتم ، لم يكن لله صاحبة ولا ولد ، فما تريدون ؟ قالوا : نريد أن تسقينا ، فيقال : اشربوا ، فيتساقطون في جهنم . ثم يقال للنصارى : ما كنتم تعبدون ؟ فيقولون : كنا نعبد المسيح ابن الله ، فيقال : كذبتم ، لم يكن لله صاحبة ولا ولد ، فما تريدون ؟ فيقولون : نريد أن تسقينا ، فيقال : اشربوا ، فيتساقطون ، حتى يبقى من كان يعبد الله ، من بر أو فاجر ، فيقال لهم : ما يحبسكم وقد ذهب الناس؟ فيقولون : فارقناهم ونحن أحوج منا إليه اليوم ، وإنا سمعنا مناديا ينادي : ليلحق كل قوم بما كانوا يعبدون ، وإنما ننتظر ربنا ، قال : فيأتيهم الجبار في صورة غير صورته التي رأوه فيها أول مرة ، فيقول : أنا ربكم ، فيقولون : أنت ربنا ، فلا يكلمه إلا الأنبياء ، فيقول : هل بينكم وبينه آية تعرفونه ، فيقولون : الساق ، فيكشف عن ساقه ، فيسجد له كل مؤمن ، ويبقى من كان يسجد لله رياء وسمعة ، فيذهب كيما يسجد فيعود ظهره طبقا واحدا ، ثم يؤتى بالجسر فيجعل بين ظهري جهنم ) . قلنا : يا رسول الله ، وما الجسر ؟ قال : ( مدحضة مزلة ، عليه خطاطيف وكلاليب ، وحسكة مفلطحة لها شوكة عقيفة ، تكون بنجد ، يقال لها : السعدان ، المؤمن عليها كالطرف وكالبرق وكالريح ، وكأجاويد الخيل والركاب ، فناج مسلم وناج مخدوش ، ومكدوس في نار جهنم ، حتى يمر آخرهم يسحب سحبا ، فما أنتم بأشد لي مناشدة في الحق قد تبين لكم من المؤمن يومئذ للجبار ، وإذا رأوا أنهم قد نجوا ، في إخوانهم ، يقولون : ربنا إخواننا ، كانوا يصلون معنا ، ويصومون معنا ، ويعملون معنا ، فيقول الله تعالى : اذهبوا فمن وجدتم في قلبه مثقال دينار من إيمان فأخرجوه ، ويحرم الله صورهم على النار ، فيأتونهم وبعضهم قد غاب في النار إلى قدمه ، وإلى أنصاف ساقيه ، فيخرجون من عرفوا ، ثم يعودون ، فيقول : اذهبوا فمن وجدتم في قلبه مثقال نصف دينار فأخرجوه ، فيخرجون من عرفوا ثم يعودون ، فيقول : اذهبوا فمن وجدتم في قلبه مثقال ذرة من إيمان فأخرجوه ، فيخرجون من عرفوا ) . قال أبو سعيد : فإن لم تصدقوني فاقرؤوا : { إن الله لا يظلم مثقال ذرة وإن تك حسنة يضاعفها } . ( فيشفع النبيون والملائكة والمؤمنون ، فيقول الجبار : بقيت شفاعتي ، فيقبض قبضة من النار ، فيخرج أقواما قد امتحشوا ، فليقون في نهر بأفواه الجنة يقال له : ماء الحياة ، فينبتون في حافتيه كما تنبت الحبة في حميل السيل ، قد رأيتموها إلى جانب الصخرة ، إلى جانب الشجرة ، فما كان إلى الشمس منها كان أخضر ، وما كان منها إلى الظل كان أبيض ، فيخرجون كأنهم اللؤلؤ ، فيجعل في رقابهم الخواتيم ، فيدخلون الجنة ، فيقول أهل الجنة : هؤلاء عتقاء الرحمن ، أدخلهم الجنة بغير عمل عملوه ، ولا خير قدموه ، فيقال لهم : لكم ما رأيتم ومثله معه. رواه البخاري ومسلم
আবু সায়ীদ আল খুদরী রা. বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কেয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবো? তিনি বললেন, তোমরা কি সূর্য বা চাঁদকে দেখতে ভীড় করো যখন আকাশ পরিস্কার থাকে? আমরা বললাম, না, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, তাহলে তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে কষ্ট করতে হবে না যে রকম সূর্য বা চন্দ্রকে দেখতে তোমাদের কষ্ট করতে হয় না। অত:পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে, প্রত্যেক জাতি যেন যার যার উপাস্য নিয়ে উপস্থিত হয়। তখন ক্রুশ পুজারীরা তাদের ক্রুশ নিয়ে উপস্থিত হবে। মূর্তিপুজারীরা তাদের মূর্তি নিয়ে উপস্থিত হবে। এভাবে প্রত্যেক জাতি তাদের উপাস্যগুলো নিয়ে উপস্থিত হবে। কিন্তু যারা একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদত করতো -সৎকর্মশীল ও পাপী- তারা আর ইসলামপূর্ব ইহুদী খৃষ্টানদের মধ্যে যারা খাটি একত্বাবাদী ছিল তারা অবশিষ্ট থাকবে। এরপর তাদের জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে। সংখ্যায় মনে হবে বন্যার ঢলের মত। ইহুদীদের প্রশ্ন করা হবে, তোমরা কার উপাসনা করতে? তারা বলবে আমরা আল্লাহর পুত্র উযাইরের উপাসনা করতাম। তাদের বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলেছো। আল্লাহর কোন স্ত্রী পুত্র নেই। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, এখন তোমরা কি চাও? তারা বলবে, আমরা পানি পান করতে চাই। তাদের বলা হবে, ঠিক আছে পান করো। তারপর তারা জাহান্নামে পতিত হবে।
এরপর খৃষ্টানদের জিজ্ঞাসা করা হবে তোমরা কার উপাসনা করতে? তারা বলবে আমরা আল্লাহর পুত্র মসীহ এর উপাসনা করতাম। তাদের বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলেছো। আল্লাহর কোন স্ত্রী পুত্র নেই। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, এখন তোমরা কি চাও? তারা বলবে, আমরা পানি পান করতে চাই। তাদের বলা হবে, ঠিক আছে পান করো। তারপর তারা জাহান্নামে পতিত হবে।
এরপর যারা আল্লাহ তাআলার উপাসনা করতো - তাদের মধ্যে থাকবে পাপী ও নেককার সকলেই - তাদের বলা হবে লোকেরা চলে গেছে তোমরা গেলে না কেন? কিসে তোমাদের আটকে রেখেছে? তারা বলবে আমরা তাদের থেকে আলাদা ছিলাম। তাদের থেকে আলাদা থাকাটাই আমাদের জন্য প্রয়োজন ছিল এটা আজ বুঝে এসেছে। আমরা একজন ঘোষকের ঘোষণা শুনেছি সে ঘোষণা করেছে প্রত্যেক জাতি যার যার উপাস্য নিয়ে হাজির হোক। এ ঘোষণা শুনে আমরা আমাদের প্রতিপালকের অপেক্ষায় থাকলাম। এরপর তাদের কাছে আসবেন মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ। তিনি আগের দেখা আকৃতি থেকে ভিন্ন আকৃতিতে আসবেন। তিনি বলবেন, আমি তোমাদের প্রতিপালক। তারা বলবে, আপনি আমাদের প্রতিপালক। বুখারীর বর্ণনায় এসেছে তারা বলবে, এটা আমাদের অবস্থান। যতক্ষণ না আমাদের প্রতিপালক আমাদের কাছে আসেন। আমাদের প্রতিপালক যখন আসবেন আমরা তাকে চিনতে পারবো। আল্লাহ তাদের কাছে এমন আকৃতিতে আসবেন যে তারা দেখে চিনতে পারবে। নবীগণই তাঁর সাথে কথা বলবেন। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদের আর তোমাদের প্রভূর মধ্যে এমন কোন আলামত আছে যা দেখে তোমরা তাকে চিনতে পারো? তখন তারা বলবে, তাঁর পায়ের গোছা আমরা চিনি। তখন তিনি তাঁর পায়ের গোছা উম্মুক্ত করবেন। প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তি তাকে সেজদা করবে। কিন্তু যারা মানুষকে দেখানো বা শুনানোর জন্য নামাজ পড়তো তারা সেজদা করতে পারবে না। তারা চেষ্টা করবে সেজদা দিতে কিন্তু তাদের পিঠ একটি সোজা কাঠের তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে। অত:পর জাহান্নামের উপর একটি পুল স্থাপন করা হবে। এ কথা শুনে সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলো ইয়া রাসূলাল্লাহ! পুলটি কি ধরনের হবে? তিনি বললেন, পুলটি হবে পিচ্ছিল, লোহার কাটা ওয়ালা, দীর্ঘ, তাতে থাকবে আরো এমন কাটা যা দেখতে নজদ এলাকার সাদান কাটার মত। ঈমানদার ব্যক্তিরা কেহ পার হবে চোখের পলকের গতিতে, কেহ পার হবে বিজলীর গতিতে, কেহ পার হবে বাতাসের গতিতে, কেহ পার হবে ঘোড়া বা যানবাহনের গতিতে। এভাবে একদল সহি সালামতে পার হয়ে যাবে। একদল পার হবে অনেক কষ্টে। আর একদল পার হতে গিয়ে পতিত হবে জাহান্নামে। এমনকি সর্বশেষ ব্যক্তি সাতার দেয়ার মত হামাগুরি দিয়ে করে পুল পার হবে। সেদিনটি হবে এমনি একটি কঠিন ও ভয়াবহ দিন। সেদিন মহাপরাক্রমশালীর কাছে সত্যিকার ঈমানদারগণ প্রকাশ হয়ে পড়বেন। যখন ঈমানদারগণ দেখবে যে তারা নিজেরা মুক্তি পেয়েছে কিন্তু নিজেদের অনেক সঙ্গী সাথী জাহান্নামে পতিত হয়েছে তখন তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ ভাইয়েরা তো আমাদের সাথে নামাজ পড়েছে, আমাদের সাথে রোযা রেখেছে, আমাদের সাথে অন্যান্য নেক আমল করেছে। আল্লাহ তাআলা তখন বলবেন, তোমরা যাও। যার মধ্যে তোমরা একটি দীনার পরিমাণ ঈমান পাবে তাকে বের করে আনো। আল্লাহ তাদের শরীরকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দিবেন। তাদের নিয়ে আসা হবে। কারো শরীর পা পর্যন্ত, কারো শরীর অর্ধ গোছা পর্যন্ত জাহান্নামের আগুন স্পর্ষ করেছে। এভাবে পরিচিত জনকে বের করে আনা হবে। এরপর আল্লাহ তাআলা আবার বলবেন, এবার যাও। যাদের মধ্যে অর্ধেক দীনার পরিমাণ ঈমান পাবে তাদের বের করে আনো। তারা যাবে ও যাদের চিনতে পারবে তাদের বের করে আনবে। এরপর আল্লাহ বলবেন, আবার যাও যাদের অন্তরে অনু পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসো। তারা যাদের চিনবে তাদের বের করে আনবে। হাদীসটির বর্ণনাকারী আবু সায়ীদ রা. বলেন, যদি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস না করো তবে আল্লাহ তাআলার এ বাণীটি পড়ে দেখ : আল্লাহ কারো প্রতি অনু পরিমাণ জুলুম করেন না। যদি কোন ভাল থাকে তাকে তিনি অনেক গুণে বাড়িয়ে দেন।
নবীগণ, ফেরেশতাগণ ও ঈমানদারগণ শুপারিশ করবেন। এরপর মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার শুপারিশ বাকী আছে। তিনি জাহান্নাম থেকে অগ্নিদগ্ধ এক মুষ্ঠিকে বের করে আনবেন। তাদের জান্নাতের সম্মুখে একটি নদীতে ছেড়ে দিবেন। সেই নদীটির নাম মা-উল হায়াত (জীবন নদী) সেখানে তারা নতুনভাবে গঠিত হবে যেমন ভাবে নতুন পলি পেয়ে উদ্ভিদ অংকুরিত হয়। যেমনটি তোমরা দেখে থাকো যে রোদ লাগা বৃক্ষটি সবুজ হয় আর রোদের আড়ালে থাকা বৃক্ষটি সাদা হয়ে যায়। তারা এ নদী থেকে বের হয়ে আসবে হীরার মত উজ্জল হয়ে। তাদের গল দেশে সীলমোহর করে দেয়া হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন জান্নাতবাসীরা বলবে, এরা হল দয়াময় আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত। আল্লাহ তাআলা তাদের জান্নাতে প্রবেশ করালেন কিন্তু তারা দুনিয়াতে কোন সৎকর্ম করেনি ও কোন কল্যাণকর কিছু সংগ্রহও করেনি। তখন তাদের বলা হবে, যা তোমরা পেলে তা তো তোমাদের জন্য আছেই, সাথে সাথে তাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করা হয়েছে তার অনুরূপ অনুগ্রহ তোমরা লাভ করবে। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
No comments:
Post a Comment