দর্শক সংখ্যা

Showing posts with label সুন্নাহ. Show all posts
Showing posts with label সুন্নাহ. Show all posts

Sunday, March 24, 2013

আল্লাহর দিকে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাওয়াতের বাস্তব কিছু নমুনা-২


দ্বিতীয় অধ্যায়
হিজরতের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর কার্যক্রমের বিবরণ
প্রথম পরিচ্ছেদ

উম্মতের সংশোধন করা ও তাদের মানুষরুপে গড়ে তোলার বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম হিকমত ও বুদ্ধি ভিত্তিক অবস্থান:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনায় পৌঁছে দেখেন যে, মদিনার অধিবাসীরা বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত এবং তারা নানাবিধ বিপরীতমুখী বিশ্বাসে জরজরিত। তারা তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী, তাদের চিন্তা চেতনায় একে অপরের সাথে কোন প্রকার মিল নেই। তাদের মধ্যে নতুন ও পুরাতন বিভিন্ন ধরনের মতানৈক্য ও মতপার্থক্যের কোন অভাব ছিল না। কিছু পার্থক্য ছিল এমন যেগুলো তারা নিজেরা আবিষ্কার করে, আর কিছু ছিল যে গুলো তারা তাদের পূর্বসূরিদের থেকে মিরাসি সূত্রে পায়মদিনার এ দ্বিধা বিভক্ত লোকগুলোকে ইতিহাসের আলোকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
এক. আওস, খাযরাজ ও মুহাজির মুসলিম।
দুই. আওস ও খাযরাজের মুশরিকরা; যারা ইসলামে প্রবেশ করেনি।
তিন. ইয়াহুদি সম্প্রদায়। তারাও আবার একাধিক গোত্রে বিভক্ত ছিল। যেমন, বনী কাইনুকা; যারা ছিল খাজরায গোত্রের সহযোগী। বনী নাজির ও বনী ক্বুরাইজা; এ দুটি গোত্র আওস গোত্রের লোকদের সহযোগী ছিল
এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে, আওস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে দ্বন্ধ ছিল প্রাচীন ও ঐতিহাসিক। জাহিলিয়্যাতের যুগে তারা উভয় গোত্র সব সময় যুদ্ধ বিদ্রোহে লিপ্ত থাকত। যুগ যুগ ধরে তারা সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে যুদ্ধ চালাতো। তারা এতই খারাপ ছিল, তাদের অন্তরে সব সময় যুদ্ধের দাবানল জ্বলতে থাকত এবং যুদ্ধ করা ছিল তাদের নেশা[1]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনায় পৌঁছে প্রথমেই তিনি তার স্বীয় বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান ও কৌশল দিয়ে এ সব সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সে গুলোকে সমাধানের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এসব সমস্যা সমাধান, বাস্তব প্রেক্ষাপটকে নিয়ন্ত্রণ করা ও তাদের সবাইকে একটি ফ্লাট ফর্মে দাড় করানোর জন্য তিনি নিম্ন বর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেন।
এক. মসজিদ নির্মাণ করার কাজে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
প্রথমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম যে কাজটি আরম্ভ করেন, তা হল, মসজিদে নববীর নির্মাণ কাজ। তিনি সবাইকে এ কাজে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ দেন, যার ফলে সমস্ত মুসলিমরা এ কাজে অংশ গ্রহণ করেন। তাদের নেতৃত্বে থাকেন তাদের ইমাম মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। এটি ছিল পরস্পর সহযোগিতামূলক ও সম্মিলিতভাবে সম্পাদিত ইসলামের সর্ব প্রথম কাজ। এ কাজের মাধ্যমে সবার মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব তৈরি হয় এবং মুসলিমদের কাজের জন্য সাধারণ লক্ষ্য নির্ধারণ হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনায় আগমনের পূর্বে মদিনার প্রতিটি গোত্রের জন্য একটি নির্ধারিত স্থান ছিল, তাতে তারা একত্র হয়ে গান, বাজনা, কিচ্ছা, কাহিনী, কবিতা পাঠ ইত্যাদির অনুষ্ঠান করত।

Friday, March 22, 2013

আল্লাহর দিকে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাওয়াতের বাস্তব কিছু নমুনা-১



সাঈদ বিন আলী বিন ওহাফ আল-কাহতানী
প্রথম অধ্যায়:
হিজরতের পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াতি কার্যক্রম
প্রথম অধ্যায়কে কয়েকটি পরিচ্ছেদে ভাগ করা হয়েছে
প্রথম পরিচ্ছেদ:
গোপনে দাওয়াত দেওয়ার সময়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাওয়াতি কার্যক্রম:
 এ কথা অজানা নয় যে, মক্কা ছিল, আরবদের ধর্ম পালনের প্রাণ কেন্দ্র ও উপযোগী ভূমি। এখানে ছিল আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবার অবস্থান। আরবের সমগ্র মূর্তিপূজক ও পৌত্তলিকদের আবাসভূমি ও যাবতীয় কর্মের ঘাটিও ছিল, এ মক্কা নগরী। এ কথা আমাদের সবারই মনে রাখতে হবে, পাহাড় আর মরুভূমিতে ঘেরা পবিত্র এ মক্কা নগরীতে আল্লাহর দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয়ার মিশনটিকে তার মনজিলে মকসুদে পৌঁছানো, ততটা সহজ ছিল না। বরং বলতে গেলে এটা ছিল অনেকটাই দুর্বোধ্য ও দু:সাধ্য। একজন সাধারণ মানবের দ্বারা এ অসাধ্য কাজকে সাধ্য করা এবং সফলতায় পৌঁছানো কোন ক্রমেই সম্ভব ছিল না। যদি দাওয়াতের জন্য নির্বাচিত ভূমি মক্কা না হয়ে অন্য কোন ভূমি হত, বা তা মক্কা থেকে অনেক দূরে হত, তাহলে এতটা কষ্টকর হয়তো হত না। এ কারণেই বলা বাহুল্য, এ অনুপযোগী ও অনুর্বর ভূমিতে দাওয়াতি কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন ছিল, এমন একজন মহা মানবের, যার দৃঢ়ত, আত্মপ্রত্যয় ও অবিচলতা হবে বিশ্বসেরা; যাতে কোন ধরনের বিপদ-আপদ ও মুসিবত তাকে ও তার দাওয়াতের মিশনটিকে কোন-রকম দুর্বল করতে না পারে। আরও প্রয়োজন ছিল, এমন সব হিকমত ও কৌশল অবলম্বন করা, যেসব বুদ্ধিমত্তা, হিকমত ও কৌশল দিয়ে, সে তার বিরুদ্ধে গৃহীত যাবতীয় ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে পারে এবং সব ধরনের বাধা বিঘ্ন দূর করে দাওয়াতের মিশনটিকে সফলতার ধার প্রান্তে পৌছাতে পারে। নি:সন্দেহে বলা যায়, অনুগ্রহ ও দয়া মহান আল্লাহরই যিনি হলেন, আহাকামুল হাকেমীন; তিনি যাকে চান হিকমত দান করেন, যাকে চান না তাকে হিকমত দান করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يُؤۡتِي ٱلۡحِكۡمَةَ مَن يَشَآءُۚ وَمَن يُؤۡتَ ٱلۡحِكۡمَةَ فَقَدۡ أُوتِيَ خَيۡرٗا كَثِيرٗاۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّآ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ [البقرة: 269]
অর্থ, তিনি যাকে চান প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে প্রজ্ঞা দেয়া হয়, তাকে অনেক কল্যাণ দেয়া হয়। আর বিবেক সম্পন্নগণই উপদেশ গ্রহণ করে[1]
আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রিসালাতের দায়িত্ব দেয়ার মাধ্যমে হিকমত ও জ্ঞান দান করেছেন, ভালো কাজের তাওফিক দিয়েছেন এবং আল্লাহ তাকে তার যাবতীয় কর্মে সাহায্য করেছেন।
এ কারণে, আল্লাহর পক্ষ হতে যখন তার স্বজাতিদের ইসলামের দাওয়াত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়, তখন তিনি তাদের দাওয়াত দেয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল ও হিকমত অবলম্বন করেন। তিন প্রথমেই সবাইকে ডেকে একত্র করে ইসলামের দাওয়াত দেয়া শুরু করেননি। প্রথমে দু একজনকে গোপনে গোপনে ইসলামের দাওয়াত দিতে আরম্ভ করেন; তারা যে সব শিরক, কুফর ও ফিতনা-ফ্যাসাদে নিমগ্ন, তার পরিণতি সম্পর্কে তাদের সতর্ক ও ভয় পদর্শন করেন। শুরুতেই তাদের যাবতীয় অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা আরম্ভ করেননি বরং প্রথমে তিনি তাদের তাওহীদের দাওয়াত দেয়া আরম্ভ করেন। তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেয়ার মাধ্যমেই তিনি তার মিশনটি আরম্ভ করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُدَّثِّرُ ١ قُمۡ فَأَنذِرۡ ٢ وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ ٣ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ ٤ وَٱلرُّجۡزَ فَٱهۡجُرۡ ٥ وَلَا تَمۡنُن تَسۡتَكۡثِرُ ٦ وَلِرَبِّكَ فَٱصۡبِرۡ ٧ [المدثر: 1-7]
হে বস্ত্রাবৃত! উঠ অত:পর সতর্ক কর। আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। আর তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র কর। আর অপবিত্রতা বর্জন কর। আর অধিক পাওয়ার আশায় দান করো না। আর তোমার রবের জন্যই ধৈর্যধারণ কর[2]

ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান-২



 অর্থ : তারা (স্ত্রী) তোমাদের পোশাক স্বরূপ এবং তোমরা তাদের পোশাক স্বরূপ। (সূরা বাকারা, ২: ১৮৭ আয়াত)।
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু যৌন মিলন নয়, বরং সেই সম্পর্ক প্রেম ভালবাসার। তারা একে অপরের সুখ দুঃখের অংশীদার। তাদের মধ্যে এমন সহচার্য ও সংযোগ / সংস্পর্শ হবে যেমন হয় শরীর এবং পরিধেয় বস্ত্রের মধ্যে। উভয়ের মধ্যে এমন সম্পর্ক ইসলামী সমাজের ভিত্তি প্রস্তরের মত। বিবাহিতা নারী যেমন স্বামীর অধীন, ঠিক তেমনি অবিবাহিতা নারী পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তির অধীন। কিন্তু এ অধীনতার অর্থ এই নয় যে, তার ইচ্ছা এবং কাজের কোন স্বাধীনতা নেই, অথবা তার নিজের ব্যাপারে তার কোন স্বাধীনতা নেই। এর আসল মর্ম হচ্ছে সামাজিক ব্যবস্থাকে ফাটল ও বিশৃংখলা হতে রক্ষা করা। পরিবারের চরিত্র ও কার্যকলাপকে ভিতর ও বাহিরের বিপদ হতে রক্ষা করার দায়িত্ব পুরুষের। এই শৃংখলা রক্ষার জন্যই নারীর অপরিহার্য কর্তব্য হল, এই শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব যার সে তার আনুগত্য করবে। তা সে তার স্বামী হোক, পিতা হোক অথবা ভাই হোক।
আর নারী তার উন্নতি ও সাফল্যের উচ্চ শিখরে আরোহণ করবে। তবে তার উন্নতি ও সাফল্য যা কিছুই হবে তা নারী হিসাবে হতে হবে। তার পুরুষ সাজার কোন অধিকার নেই এবং পুরুষোচিত জীবন যাপনের জন্য তাকে গড়ে তোলা তার জন্য কিংবা সমাজের জন্য মঙ্গল নেই।
 কোন সন্দেহ নেই যে, মুসলিম রমণী ইসলামী শরীয়ত থেকে প্রচুর সম্মান লাভ করেছে যা তার সতীত্ব এবং সম্ভ্রম রক্ষার জন্য যথেষ্ট এবং যা তাকে উচ্চ মর্যাদা ও শীর্ষস্থান দান করে ধন্য করেছে।
 ইসলামে অশ্লীল কাজ হারাম কেন এবং যিনা করায় দোষ কি?
 ইসলাম হলো সার্বিক সুস্থতার পথ প্রর্দশক। সুস্থ উপায়ে বাঁচার গ্যারান্টিসহ সমস্ত জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা আছে একমাত্র ইসলামের কল্যাণকর জীবন বিধানে। কারণ ইসলাম মানব জাতির কল্যাণের জন্য যত প্রকার আদেশ নির্দেশ প্রদান করেছে তা যেমন মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে বাস্তবে প্রমাণ করেছে, চিরস্থায়ী সাফল্যের যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তেমনটি কোন ধর্ম বা মতবাদ সফলতা অর্জন করতে পারেনি। ইসলামের এই পরিপূর্ণ সাফল্যের কারণেই পবিত্র কুরআনকে মানব জীবনের পরিপূর্ণ জীবন বিধান বলা হয়।
ইসলাম শব্দটির মানেই হচ্ছে শান্তি। অর্থাৎ এর আইন কানূন, আদেশ, নিষেধ, অনূসরণ ও অনুকরণ মানব জীবনের ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় এবং জাতীয় সর্বক্ষেত্রে শান্তি এবং শৃংখলা বয়ে আনে যা আধুনিক যুগের বৈজ্ঞানিক যুক্তি-তর্ক, বিচার বিশ্লেষণসহ একটি পরীক্ষিত সত্য হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। কারণ পৃথিবীর সকল ধর্ম, মতবাদ, চিন্তা-চেতনা, যুক্তি-তর্ক যখন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল, সমগ্র পৃথিবীর মানব সমাজ যখন বিশৃংখলতায় নিপতিত হয়ে অনিবার্য ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছিল ঠিক তখনই ইসলাম ধর্মের আগমন ঘটে এবং কি ভাবে সমাজে শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা যায় তার নিয়ম কানূন শিক্ষা দিয়ে ইসলাম পৃথিবীতে শান্তি-শৃংখলা পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করেছে, ইতিহাস তার জলন্ত স্বাক্ষী।
পবিত্র কুরআনের মহান শিক্ষা তথা ইসলামী জীবন বিধান ও চিন্তা চেতনা থেকে মানুষ বহু দূরে সরে যাওয়ার কারণেই মানব সভ্যতার আজ এ অধঃপতন। তাই আজ তারা (মানবতা) লাঞ্ছিত, অপমানিত, পদদলিত হচ্ছে পদে পদে। বৈজ্ঞানিক উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি পাশ্চাত্য তথা উন্নত বিশ্বকে ঐশ্বর্য দান করেছে, প্রচুর বিত্তশালী করেছে, কিন্তু ঐ সমস্ত ঐশ্বর্য সুখ সামগ্রী তাদেরকে শারীরিক এবং মানসিক শান্তি থেকে বঞ্চিত করেছে। আজ বড়ই প্রয়োজন কুরআনকে গভীর ভাবে উপলদ্ধি করা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র বাণীকে বুদ্ধি ও বিজ্ঞানের নিরপেক্ষ উজ্জ্বল আলোকে বিশ্লেষণ করে নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতির জন্য অশ্লীলতা হারাম করেছেন। যিনা ও অশ্লীলতার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে তিনি বলেন :
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا ﴿৩২الاسراء﴾
 তোমরা যিনা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ কাজ এবং খুবই খারাপ পথ। (সূরা আল ইসরা, ১৭ : ৩২ আয়াত)।
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে :
وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ(الانعام ১৫১)
অর্থ : লজ্জাহীনতার যত পন্থা আছে, উহার নিকটেও যাবে না, তা প্রকাশ্যেই হোক অথবা গোপনীয় হোক। (সুরা আনআম, ৬: ১৫১ আয়াত)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
خمسٌ إذا ابتُلِيتُم بِهِنَّ وَ اعُوذُ بالله أنْ تُدْرِكوْهُنَّ لمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فى قَوْمٍ قَطُّ حتّى يعْلِنُوْا بِهَا الاّ فَشَا فِيهِم الطًّاعُونُ والاوجاعُ الّتى لم تَكُنْ مَضَتْ فى أسلافِهِم الذين مَضَوا (رواه ابن ماجه)
অর্থ : পাঁচটি জিনিস দিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হবে। সেই জিনিসগুলোর সম্মুখিন হওয়া থেকে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। যখন কোন জাতির মাঝে ব্যভিচার ও অশ্লীলতা প্রকাশ পায় এমনকি তা তারা ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্যে করতে থাকে তখন তাদের মঝে মহামারি, প্লে¬গ ও জনপদ বিধ্বংসী ব্যাধি দেখা দিবে যা তাদের পূর্ব পুরুষদের মাঝে ছিল না। অর্থাৎ যিনা যদি কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে বহুল প্রচলিত হয়ে পড়ে তাহলে তাদের মধ্যে এমন রোগ দেখা দিবে যা আগে ছিল না। (বাইহাকী, ইবনে মাজাহ)
যদি কোন শহরে যিনা ও সুদের লেনদেন সাধারণ ভাবে প্রচলিত হতে থাকে তখন ঐ শহরবাসীর উপর আল্লাহর বিবিধ প্রকার আযাব গযব নাযিল করা হালাল হয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম) যখন কোন সমাজে ব্যাপক ভাবে ব্যভিচার প্রকাশ পাবে তখন তাদের মাঝে চিকিৎসার অনুপযোগী ব্যাধিসহ মহামারী আকারে রোগ ব্যাধি দেখা দিবে। ( মুয়াত্তা)।

ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান-১

ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান
(প্রথম খণ্ড)

মো. ওসমান গনি
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে সৃষ্টি করে রুহের জগতে সমস্ত রুহ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন।  তিনি বলেছিলেনঃ  أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ (আমি কি তোমাদের প্রভু নই?) তারা প্রতিউত্তর করেছিলঃ بَلى (অবশ্যই)।
তার পর ক্রমান্বয়ে মানব জাতির পৃথিবীতে আগমন ঘটে। মানুষ যখন শয়তানের কুমন্ত্রনায় সেই অঙ্গিকারের কথা ভুলে গিয়ে পথভ্রষ্ট হতে থাকে তখন সৃষ্টিকর্তা স্বীয় দয়া ও করুণায় তাদের হিদায়েতের জন্য নবী রাসূল প্রেরণ করেন। কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি যখন কোন ব্যক্তি, সম্প্রদায় অথবা দলের কাছে কোন দূত প্রেরণ করেন তখন এমন কিছু আলামত তার সাথে পাঠান যাতে তারা আশ্বস্ত হতে পারে যে, সে সত্যিই তার পক্ষ থেকে এসেছে। কোন ব্যক্তি যদি তার সংবাদ বাহকের সত্যতা ও তার পরিচয়ের জন্য আলামত নির্ধারণ করতে পারে, আর যিনি আহকামুল হাকেমীন তিনি কি তার স্বীয় রাসূলগণের পরিচয়ের জন্য আলামত নির্ধারণ করবেন না?
এখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলগণের হাত দিয়ে এমন কিছু আলামত প্রকাশ পায় যা একমাত্র সৃষ্টিকর্তার বৈশিষ্ট। সৃষ্টি জগতের কেহ অনুরূপ করতে অপারগ। অতঃপর তারা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে জানতে পারে যে, এটা আল্লাহ ছাড়া কেউ করতে পারে না। এটাই হচ্ছে মু’জিযা, আর মু’জিযা প্রকাশ পায় আল্লাহর হক নবীগণের মাধ্যমে তাদের সত্যতা এবং তাদের রিসালাত সাব্যস্ত করার জন্য। ঈসা (আঃ) এর জবানে এরশাদ হচ্ছেঃ
وَرَسُولًا إِلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنِّي قَدْ جِئْتُكُمْ بِآَيَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ أَنِّي أَخْلُقُ لَكُمْ مِنَ الطِّينِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَأَنْفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًا بِإِذْنِ اللَّهِ وَأُبْرِئُ الْأَكْمَهَ وَالْأَبْرَصَ وَأُحْيِي الْمَوْتَى بِإِذْنِ اللَّهِ وَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَةً لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ﴿آل عمران৪৯
অর্থঃ আর বনী ইসরাইলদের জন্য রাসূল হিসাবে তাকে মনোনীত করলেন। তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিদর্শন সমূহ নিয়ে এসেছি। আমি তোমাদের জন্য মাটি দ্বারা পাখির আকৃতি তৈরী করে দেই, তারপর তাতে যখন ফুৎকার প্রদান করি, তখন তা আল্লাহর হুকুমে উড়ন্ত পাখিতে পরিণত হয়ে যায়। আর আমি সুস্থ করে তুলি জন্মান্ধকে এবং শ্বেতকুষ্ঠ রোগীকে। আমি আল্লাহর হুকুমে মৃতকে জীবিত করে দেই এবং আমি তোমাদেরকে বলে দেই যা তোমরা খেয়ে আস এবং যা তোমরা ঘরে রেখে আস। এতে তোমাদের জন্য নির্দশন রয়েছে যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। (সূরা আলে ইমরান, ৩ঃ ৮৯ আয়াত)।
প্রত্যেক যুগের নবী রাসূলকে তিনি সে যুগের জনগণের সাধারণ প্রবনতা অনুপাতে মু’জিযা দান করেছেন। ঈসা (আঃ) এর যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞান চরম শিখরে উপনীত হয়েছিল। তাকে মু’জিযা দেয়া হয়েছিল জন্মান্ধকে দৃষ্টি সম্পন্ন করে দেয়া এবং কুষ্ট রোগগ্রস্থকে সুস্থ করে তোলা।
وَلَقَدْ آَتَيْنَا مُوسَى تِسْعَ آَيَاتٍ بَيِّنَاتٍ (الإسراء ১০১)
অর্থ ঃ আমি মূসাকে প্রকাশ্য নয়টি মু’জিযা দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭ঃ ১০১ আয়াত)।
তার মধ্যে লাঠিকে সাপে পরিণত করা এবং হাতকে বগলের ভিতর থেকে বের করে শুভ্র করা ছিল প্রধান; যেহেতু সেই যুগে জাদু মন্ত্রের বহুল প্রচলন ও প্রচুর প্রভাব ছিল।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক যুগে আরবে প্রেরিত হয়েছিলেন যে যুগে আরবী সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল। আল্লাহ তা’আলা তাঁর শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ ও চিরন্তন মু’জিযা হিসাবে আল-কুরআনকে নির্ধারণ করেছেন যার রয়েছে বর্ণনা নৈপূণ্য, পরিধি নিরূপণ, অতি অল্পে বিশাল বর্ণনা, অপরূপ প্রকাশ ভঙ্গী, অতি উচ্চাঙ্গের উপমা, ভাবের গাম্ভীর্য, তথ্যের বিশুদ্ধতা, চিত্তাকর্ষক সুবিশাল সাবলিল গাথুনী। নেই তাতে অসংগতি বা অসামঞ্জস্য।
لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنْزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ ﴿فصلت৪২
অর্থঃ এতে মিথ্যার কোন প্রভাব নেই; সামনের দিক থেকেও নেই এবং পিছনের দিক থেকেও নেই। এটা প্রাজ্ঞ, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। (সূরা ফুসসিলাত, ৪১ঃ ৪২ আয়াত)।                                                        তাই এই কুরআন শুধু আরব জাতির জন্য নয়, বরং সারা দুনিয়ার সর্ব যুগের মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। সেই যুগের ও বড় বড় কবি সাহিত্যিক কুরআনের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল। মক্কার কাফিরদের সামনে কুরআন সুস্পষ্ট চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেছে। এ সম্পর্কে এরশাদ হয়েছেঃ
قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآَنِ لَا يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا ﴿الإسراء৮৮
অর্থঃ বলুন! যদি মানব ও জিন জাতি এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনায়নের জন্য একত্রিত হয় এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয় তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না। (সূরা ইসরা, ১৭ঃ ৮৮ আয়াত)।
وَإِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِنْ مِثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ ﴿২৩ فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا وَلَنْ تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ ﴿البقرة২৪
অর্থঃ এতদ সম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে, যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এসো। এক আল্লাহকে ছাড়া, তোমাদের সেই সব সাহায্যকারীদেরকেও সঙ্গে নাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। আর যদি তা না পার, অবশ্য তা তোমরা কখনও পারবে না, তাহলে সেই জাহান্নামের আগুনকে ভয় কর যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য। (সূরা বাকারা ২ঃ ২৩ও২৪ আয়াত)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছেঃ
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ ﴿১৩ فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَكُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّمَا أُنْزِلَ بِعِلْمِ اللَّهِ وَأَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَهَلْ أَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ﴿هود১৪

Thursday, March 21, 2013

হজ পালন অবস্থায় রাসূলুল্লাহ এর নান্দনিক আচরণ -২



ক. সর্বোত্তম আদর্শিক নমুনা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন
প্রয়োগে না গিয়ে কেবল কথার গোলাপ ছড়ানোর দোষে যারা দুষ্ট তাদের বিষয়ে আল্লাহ পাক বলেছেন:
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ وَأَنْتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
“ তোমরা কি মানুষকে ভালো কাজের নির্দেশ দাও, আর নিজেদের ব্যাপারে হও স্মৃতিভ্রষ্ট ! অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন কর, তবে কি তোমরা বুঝ না?” 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ ﴿ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ
“ হে মুমিনগণ তোমরা যা করো না তা কেন বল, তোমরা যা করনা তা বলা আল্লাহর কাছে অতিশয় অসন্তোষজনক”   আর যেহেতু কোরআনই ছিল রাসূলুল্লাহর ৎ চরিত্র, তাই রাসূলুল্লাহ ৎ তাদেরকে কোনো নির্দেশ দিতেন না যতক্ষণ না অন্য সবার পূর্বেই তা তিনি বাস্তবায়ন করে নেন। একইরূপে কোনো কিছু থেকে নিষেধ করতেন না যতক্ষণ না নিজে তা থেকে অবস্থান নিতেন বহু দূরে। হজ্বে নবীচরিত্রের এই উজ্জ্বল দিকগুলো বিচিত্র ধারায় প্রকাশ পেয়েছে, তন্মধ্যে নিম্নবর্ণিত কয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

* বিদায় হজ্বের খোতবায় তিনি বলেছেন, “ জেনে রাখো! জাহেলী যুগের সকল বিষয় আমার এ দু’পায়ের নীচে রাখা ।  আর আমাদের হত্যাসমূহের মধ্যে প্রথম হত্যা যা রহিত করছি ইবনে রাবিয়া ইবনে হারেসের হত্যা, সে বনু সা’দ গোত্রে দুগ্ধপায়ী থাকা অবস্থায় হোযাইল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে। জাহিলীযুগের সুদ রহিত  হলো । আর প্রথম সুদ যা রহিত করছি আমাদের সুদ; আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালেবের সুদ, এটা রহিত হলো।” 

* রাসূলুল্লাহ ৎ যখন তাঁর সাহাবাদের উৎসাহ দিচ্ছিলেন হজ্বে কল্যাণকর কাজের বিষয়ে, ইবাদত বন্দেগী , আল্লাহর সামনে খুশু খুজু বিনয় ও নম্রতা প্রকাশের জন্য, তখন তিনি ছিলেন ভয়ে-ত্রস্তে আল্লাহর সবচেয়ে কাছাকাছি. বিনয় ও নম্রতায় সর্বাগ্রে, আকুতি ব্যাকুলতা ও স্রষ্টার সামনে দীনতা প্রকাশে সর্বোর্ধ্বে। 

* তিনি যখন তার সাহাবাদেরকে দুনিয়ার প্রতি নিলের্ِাভ ও পরকালের প্রতি আগ্রহী হতে উৎসাহ দিচ্ছিলেন  তখন তিনি একটি জীর্ণ গদি ও চার দিরহাম মূল্যেরও হবে না এমন একটি চাদরের ওপর ছিলেন। 

* তিনি যখন ধাক্কাধাক্কি বর্জন করে ধীরে-সুস্থে হজ্বকর্ম পালনের নির্দেশ দেন সে-সময় তাঁকে দেখা গেলো অত্যন্ত গুরুগম্ভীর ও শান্ত হয়ে আরাফা থেকে প্রস্থান করতে , তাঁর চলার গতিও ছিল মন্থর। 

* তিনি যখন চুল কর্তন ও মাথামুণ্ডন উভয়টার  বৈধতা প্রকাশ করলেন, এবং মাথামুণ্ডন ব্যাপারে বেশি উৎসাহ দিলেন ও মুণ্ডনকারীদের জন্য দোয়া করলেন তখন তিনি রীতিমতো মুণ্ডনকৃত অবস্থায় ছিলেন । 

* তিনি যখন ধর্মে বাড়াবাড়ি থেকে সাহাবাদেরকে বারণ করলেন এবং আঙুল দিয়ে নিক্ষেপ করা যায় এমন কঙ্কর নিক্ষেপ করতে বললেন, তখন তিনি একই রকম কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন।  

      এটা অনুধাবন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে কাকতালীয়ভাবে নয় বরং রাসূলুল্লাহ ৎ স্বেচ্ছায় সাগ্রহে নিজেকে উত্তম আদর্শের নমুনা বানিয়ে উপস্থাপন  করেছেন। এর ইঙ্গিত পাওয়া যায় যখন তিনি পানি পান করানোর কাজে নিয়োজিতদেরকে বললেন, “মানুষ তোমাদের ওপর অতি মাত্রায় ভির করবে এ-ভয় না হলে আমি তোমাদের সাথে পানি উঠতাম।”  
      এ-জাতীয় বিষয়ই মানুষের ভালোবাসা কুড়িয়ে এনেছে, এবং তাঁর ব্যক্তিত্বে তাদেরকে প্রভাবিত করেছে। কেননা এটা হলো ঐকান্তিকতা ও নেতৃত্বের উৎকর্ষতার আলামত, এবং যা  অন্যদেরকে করতে বলা হচ্ছে তাতে দৃঢ় বিশ্বাস ও বাস্তবায়নে একনিষ্ঠতার পরিচয়।
      কতই না সুন্দর হবে যদি দ্বীনের পথে আহ্বায়কগণ (দাঈ) এ মহিমান্বিত চরিত্র মাধুরী আত্মস্থ করে নেয়, তাদের নিজস্ব জীবনে এর যথাযথ অভিব্যক্তি ঘটায়, অন্যদের জন্য উত্তম আদর্শ স্থাপন করতে সমর্থ হয়  সকল কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ করে হজ্ব -মৌসুমে। অতঃপর  ভালো কাজ- যার নির্দেশ তারা অন্যদেরকে দেয় -- সম্পাদনে তারা হয়ে যায় সর্বাগ্রে।  আর  অন্যায় কাজ - যা থেকে অন্যদেরকে বারণ করছে -তা থেকে তারা অবস্থান নেয় বহু দূরে ।

খ. সৎ কাজের নির্দেশ ও অসৎ কাজ থেকে বারণ
সৎকাজের নির্দেশ ও অসৎ কাজ থেকে বারণ ও সতর্ক করা ধর্মের মূল বিষয়সমূহের একটি। এটি অত্যন্ত মহৎ কাজ যা পালন করার উদ্দেশেই প্রেরণ ঘটেছে নবী রাসূলদের। এটা কল্যাণমুখী জীবনের নিরাপদ ঢাকনা,পরকালে ব্যক্তির পরিত্রাণের পথ। এর দ্বারা লাভ হয় মর্যাদা, প্রতিষ্ঠা। যা ছেড়ে দিলে সজীবতা হারায় ধর্মকর্ম, ছড়িয়ে যায় মূর্খতা, ব্যাপকতা পায় গোমরাহী। 
       যে ক্ষমতা রাখে তারই এ-কাজটি করা উচিত যদিও মনে হতে লাগে যে এ কাজে লাভ হচ্ছে থোরাই। কেননা  দাঈর কাজ দায়িত্ব পালন করে যাওয়া। মানুষেরা গ্রহণ করছে কি করছে না সেটা তার মূল গুরুত্বের বিষয় নয়। আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন  :
مَا عَلَى الرَّسُولِ إِلَّا الْبَلَاغُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا تَكْتُمُونَ

“রাসূলের দায়িত্ব কেবল পোঁছিয়ে দেয়া।”   তিনি তাঁর নবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন :
إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ
 “আপনি যাকে ভালোবাসেন তাকে পথ দেখাতে পারবেন না, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন পথ দেখান।”  তিনি আরো বলেন :
وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ
“ আপনি সৎকাজের নির্দেশ দিন।”  সাথে সাথে আল্লাহ পাক এজাতীয় বিশেষণেই তাঁকে বিশেষিত করেছেন, এরশাদ হয়েছে :