দর্শক সংখ্যা

Showing posts with label জীবন ও কর্ম পদ্বতি. Show all posts
Showing posts with label জীবন ও কর্ম পদ্বতি. Show all posts

Sunday, March 24, 2013

আল্লাহর দিকে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাওয়াতের বাস্তব কিছু নমুনা-২


দ্বিতীয় অধ্যায়
হিজরতের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর কার্যক্রমের বিবরণ
প্রথম পরিচ্ছেদ

উম্মতের সংশোধন করা ও তাদের মানুষরুপে গড়ে তোলার বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম হিকমত ও বুদ্ধি ভিত্তিক অবস্থান:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনায় পৌঁছে দেখেন যে, মদিনার অধিবাসীরা বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত এবং তারা নানাবিধ বিপরীতমুখী বিশ্বাসে জরজরিত। তারা তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী, তাদের চিন্তা চেতনায় একে অপরের সাথে কোন প্রকার মিল নেই। তাদের মধ্যে নতুন ও পুরাতন বিভিন্ন ধরনের মতানৈক্য ও মতপার্থক্যের কোন অভাব ছিল না। কিছু পার্থক্য ছিল এমন যেগুলো তারা নিজেরা আবিষ্কার করে, আর কিছু ছিল যে গুলো তারা তাদের পূর্বসূরিদের থেকে মিরাসি সূত্রে পায়মদিনার এ দ্বিধা বিভক্ত লোকগুলোকে ইতিহাসের আলোকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
এক. আওস, খাযরাজ ও মুহাজির মুসলিম।
দুই. আওস ও খাযরাজের মুশরিকরা; যারা ইসলামে প্রবেশ করেনি।
তিন. ইয়াহুদি সম্প্রদায়। তারাও আবার একাধিক গোত্রে বিভক্ত ছিল। যেমন, বনী কাইনুকা; যারা ছিল খাজরায গোত্রের সহযোগী। বনী নাজির ও বনী ক্বুরাইজা; এ দুটি গোত্র আওস গোত্রের লোকদের সহযোগী ছিল
এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে, আওস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে দ্বন্ধ ছিল প্রাচীন ও ঐতিহাসিক। জাহিলিয়্যাতের যুগে তারা উভয় গোত্র সব সময় যুদ্ধ বিদ্রোহে লিপ্ত থাকত। যুগ যুগ ধরে তারা সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে যুদ্ধ চালাতো। তারা এতই খারাপ ছিল, তাদের অন্তরে সব সময় যুদ্ধের দাবানল জ্বলতে থাকত এবং যুদ্ধ করা ছিল তাদের নেশা[1]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনায় পৌঁছে প্রথমেই তিনি তার স্বীয় বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান ও কৌশল দিয়ে এ সব সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সে গুলোকে সমাধানের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এসব সমস্যা সমাধান, বাস্তব প্রেক্ষাপটকে নিয়ন্ত্রণ করা ও তাদের সবাইকে একটি ফ্লাট ফর্মে দাড় করানোর জন্য তিনি নিম্ন বর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেন।
এক. মসজিদ নির্মাণ করার কাজে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
প্রথমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম যে কাজটি আরম্ভ করেন, তা হল, মসজিদে নববীর নির্মাণ কাজ। তিনি সবাইকে এ কাজে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ দেন, যার ফলে সমস্ত মুসলিমরা এ কাজে অংশ গ্রহণ করেন। তাদের নেতৃত্বে থাকেন তাদের ইমাম মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। এটি ছিল পরস্পর সহযোগিতামূলক ও সম্মিলিতভাবে সম্পাদিত ইসলামের সর্ব প্রথম কাজ। এ কাজের মাধ্যমে সবার মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব তৈরি হয় এবং মুসলিমদের কাজের জন্য সাধারণ লক্ষ্য নির্ধারণ হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনায় আগমনের পূর্বে মদিনার প্রতিটি গোত্রের জন্য একটি নির্ধারিত স্থান ছিল, তাতে তারা একত্র হয়ে গান, বাজনা, কিচ্ছা, কাহিনী, কবিতা পাঠ ইত্যাদির অনুষ্ঠান করত।

Friday, March 22, 2013

ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান-২



 অর্থ : তারা (স্ত্রী) তোমাদের পোশাক স্বরূপ এবং তোমরা তাদের পোশাক স্বরূপ। (সূরা বাকারা, ২: ১৮৭ আয়াত)।
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু যৌন মিলন নয়, বরং সেই সম্পর্ক প্রেম ভালবাসার। তারা একে অপরের সুখ দুঃখের অংশীদার। তাদের মধ্যে এমন সহচার্য ও সংযোগ / সংস্পর্শ হবে যেমন হয় শরীর এবং পরিধেয় বস্ত্রের মধ্যে। উভয়ের মধ্যে এমন সম্পর্ক ইসলামী সমাজের ভিত্তি প্রস্তরের মত। বিবাহিতা নারী যেমন স্বামীর অধীন, ঠিক তেমনি অবিবাহিতা নারী পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তির অধীন। কিন্তু এ অধীনতার অর্থ এই নয় যে, তার ইচ্ছা এবং কাজের কোন স্বাধীনতা নেই, অথবা তার নিজের ব্যাপারে তার কোন স্বাধীনতা নেই। এর আসল মর্ম হচ্ছে সামাজিক ব্যবস্থাকে ফাটল ও বিশৃংখলা হতে রক্ষা করা। পরিবারের চরিত্র ও কার্যকলাপকে ভিতর ও বাহিরের বিপদ হতে রক্ষা করার দায়িত্ব পুরুষের। এই শৃংখলা রক্ষার জন্যই নারীর অপরিহার্য কর্তব্য হল, এই শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব যার সে তার আনুগত্য করবে। তা সে তার স্বামী হোক, পিতা হোক অথবা ভাই হোক।
আর নারী তার উন্নতি ও সাফল্যের উচ্চ শিখরে আরোহণ করবে। তবে তার উন্নতি ও সাফল্য যা কিছুই হবে তা নারী হিসাবে হতে হবে। তার পুরুষ সাজার কোন অধিকার নেই এবং পুরুষোচিত জীবন যাপনের জন্য তাকে গড়ে তোলা তার জন্য কিংবা সমাজের জন্য মঙ্গল নেই।
 কোন সন্দেহ নেই যে, মুসলিম রমণী ইসলামী শরীয়ত থেকে প্রচুর সম্মান লাভ করেছে যা তার সতীত্ব এবং সম্ভ্রম রক্ষার জন্য যথেষ্ট এবং যা তাকে উচ্চ মর্যাদা ও শীর্ষস্থান দান করে ধন্য করেছে।
 ইসলামে অশ্লীল কাজ হারাম কেন এবং যিনা করায় দোষ কি?
 ইসলাম হলো সার্বিক সুস্থতার পথ প্রর্দশক। সুস্থ উপায়ে বাঁচার গ্যারান্টিসহ সমস্ত জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা আছে একমাত্র ইসলামের কল্যাণকর জীবন বিধানে। কারণ ইসলাম মানব জাতির কল্যাণের জন্য যত প্রকার আদেশ নির্দেশ প্রদান করেছে তা যেমন মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে বাস্তবে প্রমাণ করেছে, চিরস্থায়ী সাফল্যের যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তেমনটি কোন ধর্ম বা মতবাদ সফলতা অর্জন করতে পারেনি। ইসলামের এই পরিপূর্ণ সাফল্যের কারণেই পবিত্র কুরআনকে মানব জীবনের পরিপূর্ণ জীবন বিধান বলা হয়।
ইসলাম শব্দটির মানেই হচ্ছে শান্তি। অর্থাৎ এর আইন কানূন, আদেশ, নিষেধ, অনূসরণ ও অনুকরণ মানব জীবনের ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় এবং জাতীয় সর্বক্ষেত্রে শান্তি এবং শৃংখলা বয়ে আনে যা আধুনিক যুগের বৈজ্ঞানিক যুক্তি-তর্ক, বিচার বিশ্লেষণসহ একটি পরীক্ষিত সত্য হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। কারণ পৃথিবীর সকল ধর্ম, মতবাদ, চিন্তা-চেতনা, যুক্তি-তর্ক যখন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল, সমগ্র পৃথিবীর মানব সমাজ যখন বিশৃংখলতায় নিপতিত হয়ে অনিবার্য ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছিল ঠিক তখনই ইসলাম ধর্মের আগমন ঘটে এবং কি ভাবে সমাজে শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা যায় তার নিয়ম কানূন শিক্ষা দিয়ে ইসলাম পৃথিবীতে শান্তি-শৃংখলা পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করেছে, ইতিহাস তার জলন্ত স্বাক্ষী।
পবিত্র কুরআনের মহান শিক্ষা তথা ইসলামী জীবন বিধান ও চিন্তা চেতনা থেকে মানুষ বহু দূরে সরে যাওয়ার কারণেই মানব সভ্যতার আজ এ অধঃপতন। তাই আজ তারা (মানবতা) লাঞ্ছিত, অপমানিত, পদদলিত হচ্ছে পদে পদে। বৈজ্ঞানিক উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি পাশ্চাত্য তথা উন্নত বিশ্বকে ঐশ্বর্য দান করেছে, প্রচুর বিত্তশালী করেছে, কিন্তু ঐ সমস্ত ঐশ্বর্য সুখ সামগ্রী তাদেরকে শারীরিক এবং মানসিক শান্তি থেকে বঞ্চিত করেছে। আজ বড়ই প্রয়োজন কুরআনকে গভীর ভাবে উপলদ্ধি করা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র বাণীকে বুদ্ধি ও বিজ্ঞানের নিরপেক্ষ উজ্জ্বল আলোকে বিশ্লেষণ করে নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতির জন্য অশ্লীলতা হারাম করেছেন। যিনা ও অশ্লীলতার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে তিনি বলেন :
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا ﴿৩২الاسراء﴾
 তোমরা যিনা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ কাজ এবং খুবই খারাপ পথ। (সূরা আল ইসরা, ১৭ : ৩২ আয়াত)।
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে :
وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ(الانعام ১৫১)
অর্থ : লজ্জাহীনতার যত পন্থা আছে, উহার নিকটেও যাবে না, তা প্রকাশ্যেই হোক অথবা গোপনীয় হোক। (সুরা আনআম, ৬: ১৫১ আয়াত)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
خمسٌ إذا ابتُلِيتُم بِهِنَّ وَ اعُوذُ بالله أنْ تُدْرِكوْهُنَّ لمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فى قَوْمٍ قَطُّ حتّى يعْلِنُوْا بِهَا الاّ فَشَا فِيهِم الطًّاعُونُ والاوجاعُ الّتى لم تَكُنْ مَضَتْ فى أسلافِهِم الذين مَضَوا (رواه ابن ماجه)
অর্থ : পাঁচটি জিনিস দিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হবে। সেই জিনিসগুলোর সম্মুখিন হওয়া থেকে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। যখন কোন জাতির মাঝে ব্যভিচার ও অশ্লীলতা প্রকাশ পায় এমনকি তা তারা ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্যে করতে থাকে তখন তাদের মঝে মহামারি, প্লে¬গ ও জনপদ বিধ্বংসী ব্যাধি দেখা দিবে যা তাদের পূর্ব পুরুষদের মাঝে ছিল না। অর্থাৎ যিনা যদি কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে বহুল প্রচলিত হয়ে পড়ে তাহলে তাদের মধ্যে এমন রোগ দেখা দিবে যা আগে ছিল না। (বাইহাকী, ইবনে মাজাহ)
যদি কোন শহরে যিনা ও সুদের লেনদেন সাধারণ ভাবে প্রচলিত হতে থাকে তখন ঐ শহরবাসীর উপর আল্লাহর বিবিধ প্রকার আযাব গযব নাযিল করা হালাল হয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম) যখন কোন সমাজে ব্যাপক ভাবে ব্যভিচার প্রকাশ পাবে তখন তাদের মাঝে চিকিৎসার অনুপযোগী ব্যাধিসহ মহামারী আকারে রোগ ব্যাধি দেখা দিবে। ( মুয়াত্তা)।

ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান-১

ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান
(প্রথম খণ্ড)

মো. ওসমান গনি
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে সৃষ্টি করে রুহের জগতে সমস্ত রুহ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন।  তিনি বলেছিলেনঃ  أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ (আমি কি তোমাদের প্রভু নই?) তারা প্রতিউত্তর করেছিলঃ بَلى (অবশ্যই)।
তার পর ক্রমান্বয়ে মানব জাতির পৃথিবীতে আগমন ঘটে। মানুষ যখন শয়তানের কুমন্ত্রনায় সেই অঙ্গিকারের কথা ভুলে গিয়ে পথভ্রষ্ট হতে থাকে তখন সৃষ্টিকর্তা স্বীয় দয়া ও করুণায় তাদের হিদায়েতের জন্য নবী রাসূল প্রেরণ করেন। কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি যখন কোন ব্যক্তি, সম্প্রদায় অথবা দলের কাছে কোন দূত প্রেরণ করেন তখন এমন কিছু আলামত তার সাথে পাঠান যাতে তারা আশ্বস্ত হতে পারে যে, সে সত্যিই তার পক্ষ থেকে এসেছে। কোন ব্যক্তি যদি তার সংবাদ বাহকের সত্যতা ও তার পরিচয়ের জন্য আলামত নির্ধারণ করতে পারে, আর যিনি আহকামুল হাকেমীন তিনি কি তার স্বীয় রাসূলগণের পরিচয়ের জন্য আলামত নির্ধারণ করবেন না?
এখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলগণের হাত দিয়ে এমন কিছু আলামত প্রকাশ পায় যা একমাত্র সৃষ্টিকর্তার বৈশিষ্ট। সৃষ্টি জগতের কেহ অনুরূপ করতে অপারগ। অতঃপর তারা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে জানতে পারে যে, এটা আল্লাহ ছাড়া কেউ করতে পারে না। এটাই হচ্ছে মু’জিযা, আর মু’জিযা প্রকাশ পায় আল্লাহর হক নবীগণের মাধ্যমে তাদের সত্যতা এবং তাদের রিসালাত সাব্যস্ত করার জন্য। ঈসা (আঃ) এর জবানে এরশাদ হচ্ছেঃ
وَرَسُولًا إِلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنِّي قَدْ جِئْتُكُمْ بِآَيَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ أَنِّي أَخْلُقُ لَكُمْ مِنَ الطِّينِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَأَنْفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًا بِإِذْنِ اللَّهِ وَأُبْرِئُ الْأَكْمَهَ وَالْأَبْرَصَ وَأُحْيِي الْمَوْتَى بِإِذْنِ اللَّهِ وَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَةً لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ﴿آل عمران৪৯
অর্থঃ আর বনী ইসরাইলদের জন্য রাসূল হিসাবে তাকে মনোনীত করলেন। তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিদর্শন সমূহ নিয়ে এসেছি। আমি তোমাদের জন্য মাটি দ্বারা পাখির আকৃতি তৈরী করে দেই, তারপর তাতে যখন ফুৎকার প্রদান করি, তখন তা আল্লাহর হুকুমে উড়ন্ত পাখিতে পরিণত হয়ে যায়। আর আমি সুস্থ করে তুলি জন্মান্ধকে এবং শ্বেতকুষ্ঠ রোগীকে। আমি আল্লাহর হুকুমে মৃতকে জীবিত করে দেই এবং আমি তোমাদেরকে বলে দেই যা তোমরা খেয়ে আস এবং যা তোমরা ঘরে রেখে আস। এতে তোমাদের জন্য নির্দশন রয়েছে যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। (সূরা আলে ইমরান, ৩ঃ ৮৯ আয়াত)।
প্রত্যেক যুগের নবী রাসূলকে তিনি সে যুগের জনগণের সাধারণ প্রবনতা অনুপাতে মু’জিযা দান করেছেন। ঈসা (আঃ) এর যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞান চরম শিখরে উপনীত হয়েছিল। তাকে মু’জিযা দেয়া হয়েছিল জন্মান্ধকে দৃষ্টি সম্পন্ন করে দেয়া এবং কুষ্ট রোগগ্রস্থকে সুস্থ করে তোলা।
وَلَقَدْ آَتَيْنَا مُوسَى تِسْعَ آَيَاتٍ بَيِّنَاتٍ (الإسراء ১০১)
অর্থ ঃ আমি মূসাকে প্রকাশ্য নয়টি মু’জিযা দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭ঃ ১০১ আয়াত)।
তার মধ্যে লাঠিকে সাপে পরিণত করা এবং হাতকে বগলের ভিতর থেকে বের করে শুভ্র করা ছিল প্রধান; যেহেতু সেই যুগে জাদু মন্ত্রের বহুল প্রচলন ও প্রচুর প্রভাব ছিল।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক যুগে আরবে প্রেরিত হয়েছিলেন যে যুগে আরবী সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল। আল্লাহ তা’আলা তাঁর শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ ও চিরন্তন মু’জিযা হিসাবে আল-কুরআনকে নির্ধারণ করেছেন যার রয়েছে বর্ণনা নৈপূণ্য, পরিধি নিরূপণ, অতি অল্পে বিশাল বর্ণনা, অপরূপ প্রকাশ ভঙ্গী, অতি উচ্চাঙ্গের উপমা, ভাবের গাম্ভীর্য, তথ্যের বিশুদ্ধতা, চিত্তাকর্ষক সুবিশাল সাবলিল গাথুনী। নেই তাতে অসংগতি বা অসামঞ্জস্য।
لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنْزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ ﴿فصلت৪২
অর্থঃ এতে মিথ্যার কোন প্রভাব নেই; সামনের দিক থেকেও নেই এবং পিছনের দিক থেকেও নেই। এটা প্রাজ্ঞ, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। (সূরা ফুসসিলাত, ৪১ঃ ৪২ আয়াত)।                                                        তাই এই কুরআন শুধু আরব জাতির জন্য নয়, বরং সারা দুনিয়ার সর্ব যুগের মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। সেই যুগের ও বড় বড় কবি সাহিত্যিক কুরআনের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল। মক্কার কাফিরদের সামনে কুরআন সুস্পষ্ট চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেছে। এ সম্পর্কে এরশাদ হয়েছেঃ
قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآَنِ لَا يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا ﴿الإسراء৮৮
অর্থঃ বলুন! যদি মানব ও জিন জাতি এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনায়নের জন্য একত্রিত হয় এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয় তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না। (সূরা ইসরা, ১৭ঃ ৮৮ আয়াত)।
وَإِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِنْ مِثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ ﴿২৩ فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا وَلَنْ تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ ﴿البقرة২৪
অর্থঃ এতদ সম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে, যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এসো। এক আল্লাহকে ছাড়া, তোমাদের সেই সব সাহায্যকারীদেরকেও সঙ্গে নাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। আর যদি তা না পার, অবশ্য তা তোমরা কখনও পারবে না, তাহলে সেই জাহান্নামের আগুনকে ভয় কর যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য। (সূরা বাকারা ২ঃ ২৩ও২৪ আয়াত)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছেঃ
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ ﴿১৩ فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَكُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّمَا أُنْزِلَ بِعِلْمِ اللَّهِ وَأَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَهَلْ أَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ﴿هود১৪

আল্লাহ তাআলার দশ অসিয়ত


আল্লাহ তাআলার দশ অসিয়ত
লেখক : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
প্রথম কথা: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর পবিত্র কুরআনের সূরা আনআমে দশটি নির্দেশ উল্লেখ করেছেন মানুষের জন্য। এ দশটি নির্দেশ তিনি তিনটি আয়াতে উল্লেখ করেছেন। প্রত্যেকটি আয়াতের শেষে তিনি বলেছেন, ‘এর মাধ্যমে তিনি তোমাদের অসিয়ত করেছেন’। এ কারণেই এ নির্দেশগুলোকে ইমাম ও  মুফাসসিরগন এক কথায় ‘দশ অসিয়ত’ বলে অভিহিত করেছেন। আসলে এ দশটি বিষয় এমন যার মধ্যে মুসলমানদের দীন-ধর্ম, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নির্ভর করে। শুধু আল-কুরআনেই নয় অন্যান্য আসমানী কিতাবেও এ দশটি অসিয়তের কথা উল্লেখ রয়েছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ مِنْ إِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ﴿১৫১ وَلَا تَقْرَبُوا مَالَ الْيَتِيمِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّى يَبْلُغَ أَشُدَّهُ وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا وَإِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَى وَبِعَهْدِ اللَّهِ أَوْفُوا ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ ﴿১৫২ وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴿১৫৩
‘বল, ‘আস, তোমাদের প্রভূ তোমাদের জন্য যা হারাম করেছেন তোমাদেরকে তা পাঠ করে শুনাই। তা এই যে, তোমরা তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না, পিতা-মাতার প্রতি সদাচার করবে, দারিদ্র্যতার কারণে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে জীবিকা দিয়ে থাকি। প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে অশ্লীল নিকটবর্তী হবে না। আল্লাহ যাকে  হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতীত তোমরা তাকে হত্যা করবে না। তোমাদেরকে তিনি এ অসিয়ত করলেন, যেন তোমরা অনুধাবন কর’। (১৫১)
‘ইয়াতীম বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উত্তম ব্যবস্থা ব্যতীত তোমরা তার সম্পত্তির কাছে যাবে না এবং পরিমাণ ও মাপে ন্যায্যভাবে পুরোপুরি দেবে। আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত ভার অর্পন করি না। যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায় পরায়ণতা অবলম্বন করবে, স্বজনদের সম্পর্কে হলেও। আর আল্লাহর সাথে প্রদত্ত অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। তোমাদেরকে তিনি অসিয়ত করলেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর’। (১৫২)
‘আর এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এর অনুসরণ করবে এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করবে। তিনি তোমাদের অসিয়ত করলেন, যেন তোমরা সাবধান হও’। (১৫৩)
(সূরা আল-আনআম : আয়াত -১৫১-১৫৩)
এ আয়াতগুলো হল সূরা আনআমের ১৫১, ১৫২ ও ১৫৩ নং আয়াত। এ তিনটি আয়াত সম্পর্কে প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন:
من أراد أن يقرأ صحيفة رسول الله صلى الله عليه وسلم التي عليها خاتمه فليقرأ هؤلاء الآيات. رواه الترمذي.
‘ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহীফা পাঠ করতে চায় যার উপর তাঁর মোহর রয়েছে। সে যেন এ আয়াতগুলোকে পাঠ করে।’ বর্ণনায় : তিরমিজী
‘যার উপর তাঁর মোহর রয়েছে’ এর অর্থ হল:  এ আয়াতগুলো হল মুহকাম বা স্পষ্ট এবং  তার নির্দেশগুলো কোন অবস্থাতেই রহিত হবার  নয়।
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আল-কুরআনের ব্যাখ্যায় খুবই খ্যাতিমান ছিলেন তিনি এ আয়াতগুলো সম্পর্কে বলেন:
في الأنعام آيات محكمات هن أم الكتاب ثم قرأ- قُلْ تَعَالَوْا .. . . أخرجه الحاكم
“সূরা আল-আনআমে কতগুলো মুহকাম আয়াত রয়েছে। এগুলো  আল-কুরআনের মূল বিষয়’। এ কথা বলে তিনি এ আয়াতগুলো পাঠ করতেন। বর্ণনায় : হাকেম
তাফসীরবিদগণ বলেন, দশটি অসিয়ত-সংবলিত এ তিনটি আয়াত ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস, পরিবার ও সমাজকে রক্ষা করে, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
প্রথম আয়াতটিতে পাঁচটি অসিয়ত রয়েছে। দ্বিতীয়টিতে চারটি এবং তৃতীয়টিতে একটি। আর এর প্রতিটি আয়াত একটি অভিন্ন বাক্য দিয়ে শেষ করা হয়েছে। তাহলো:

আল-কোরআন : একটি মহা মুজিযা


আল-কোরআন : একটি মহা মুজিযা
ড: সাইদ বিন আলি বিন ওয়াফ

অনুবাদ: মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামা

আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ ও সালামের পর।
হে আল্লাহর বান্দাবৃন্দ, মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- কে সত্যায়ন ও সমর্থনকারী অসংখ্য মুজিযা দান করেছেন। সেগুলো তাঁর নবুওয়তকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে।
আরবি পরিভাষায় মুজিযা বলা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও চ্যালেঞ্জের সময় প্রতিপক্ষ যার উত্তর দিতে অপারগ হয়ে যায়।(কামূসুল মুহিত)।
মুজিযা এমন এক আশ্চর্যজনক জিনিস, যা সকল মানুষ সম্মিলিতভাবে কিংবা আলাদা আলাদাভাবে চেষ্টা করলেও তার মত আরেকটি জিনিস বানাতে সক্ষম নয়, আল্লাহ তাআলা নবুওয়তের জন্য যাকে নির্বাচন করেন কেবল তাকেই তা দান করেন। যাতে সেটি তাঁর নবুওয়তের দলিল হয় এবং রিসালাতের সঠিকত্ব প্রমাণিত হয়।
মহা গ্রন্থ আল-কোরআন নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর আল্লাহ তাআলার নাযিলকৃত কালাম। এটিই তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ মুজিযা যা সদা সর্বত্র বিদ্যমান, পূর্বের এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত পরের সব সময়ের জন্য মুজিযা।(মানাহিলুল ইরফান ফি উলুমিল কোরআন ২২/১)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ما من الأنبياء نبيّ إلا أعطي من الآيات على ما مثله آمن البشر، وإنما كان الذي أوتيته وحياً أوحاه الله إليّ، فأرجو أن أكون أكثرهم تابعاً يوم القيامة»([1]).
প্রত্যেক নবীকেই তার মত করে কোন না কোন মুজিযা দেয়া হয়েছে, তার উপর লোকেরা ঈমান এনেছে। আর আমাকে যা দেয়া হয়েছে তা হল ওহী, আল্লাহ তাআলা আমার উপর প্রত্যাদেশ দিয়েছেন। আমি আশা করি কেয়ামতের দিন তাদের চেয়ে আমার অনুসারী বেশি হবে।(বুখারি)
এই হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য এই নয় যে কোরআনের মধ্যেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুজিযা সীমাবদ্ধ।
এটাও উদ্দেশ্য নয় যে, তাকে এমন কোন মুজিযা দেয়া হয়নি যা র্স্পস করা যায়।
বরং উদ্দেশ্য হল কোরআনুল কারিম এমন এক অভিনব মুজিযা যা কেবল তাকেই দেয়া হয়েছে আর কাউকে দেয়া হয়নি। কেননা প্রত্যেক নবীকে এমন মুজিযা দেয়া হয়েছিল যা শুধু তার সাথেই খাছ ছিল, তার মাধ্যমে যাদের নিকট তাকে পাঠানো হয়েছিল তাদেরকেই শুধু চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল।  প্রত্যেক নবীর মুজিযা তার জাতির অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। এ কারণে মূসা আ.-এর কওমের মধ্যে যখন যাদু বিদ্যা ছড়িয়ে পড়েছিল তখন তিনি তাদের নিকট লাঠি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলেন এবং লাঠির মাধ্যমে তাই বানাতে লাগলেন, তারা যাদু দিয়ে যা বানাত। কিন্তু মূসা আ.-এর যাদু তারা যা বানাল তা খেয়ে ফেলল। অর্থাৎ তার যাদু হুবহু তাদের যাদুর মত হল না।
যখন চিকিৎসা বিদ্যা খুবই উন্নতি লাভ করল, তখন ঈসা আ. আবির্ভূত হলেন এমন চিকিৎসা বিদ্যা নিয়ে যা দেখে সে সময়ের সকল চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা হতভম্ব হয়ে গেল। কারণ তিনি দেখালেন তার বিদ্য দিয়ে তিনি মৃতকে জীবিত করতে পরছেন, কুষ্ঠ ও বধির রুগীকে সুস্থ করেত পারছেন।
আর কাজগুলোর ধরন তাদের কাজের মতই ছিল কিন্তু তাদের ক্ষমতা ঈসার আ.-এর ক্ষমতার মত শক্তিশালী ও কার্যকর ছিল না।
আরবের লোকেরা যখন ভাষার অলংকারের উচ্চ শিখরে পৌঁছে গেল তখন আল্লাহ তাআলা আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুজেযাস্বরূপ এমন কোরআন দিলেন, যার প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ বলছেন,

Thursday, March 21, 2013

নেতৃত্ব এক মহান দায়িত্ব



নেতৃত্ব এক মহান দায়িত্ব
কামাল উদ্দিন মোল্লা
মানুষের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলীর পরিপূর্ণতা আসে স্বভাবজাত গুণাবলী ও অর্জিত গুণাবলীর সংমিশ্রণের ফলেসমাজের নেতা হন কম সংখক ব্যক্তি কিন্তু তাদের অনুসারী হন অনেক বেশিনেতা যেদিকে চলেন সাধারণ মানুষ পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই তাদেরকে অনুসরণ করে থাকেনেতার একটি ভুল বিরাট জনতাকে ধ্বংসের অতল তলে নিক্ষেপ করে থাকেতাই ইহলৌকিক ও পারলৌকিক উভয় জগতের সাফল্যের জন্য সঠিক নেতৃত্বের অনুসরণ করা প্রয়োজনপাশাপাশি নেতাদের দায়িত্ব সাধারণ মানুষদেরকে বিপথে পরিচালিত না করে সঠিক পথে পরিচালিত করানয়ত বিচার দিনে তারা সাধারণ মানুষের অভিযোগের মুখোমুখি হবেন এবং কঠিন শাস্তির জন্য বিবেচিত হবেনএ কথাটি কোরআন পাকে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছেসূরা আহযাবে এরশাদ হচ্ছে--
يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُولُونَ يَا لَيْتَنَا أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولَا ﴿66﴾ وَقَالُوا رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا ﴿67﴾ رَبَّنَا آَتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا ﴿68﴾  
যেদিন অগ্নিতে তাদের মুখমন্ডল ওলট পালট করা হবে, সেদিন তারা বলবে হায়! আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রসূলের আনুগত্য করতামতারা আরো বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আমাদের নেতা ও বড়তের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলহে আমাদের পালনকর্তা! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদেরকে মহা অভিসম্পাত করুন(সূরা আহযাব : ৬৬ - ৬৮)
আল্লাহর প্রতি আনুগত্যহীন নেতৃত্ব সমাজের নৈতিক কাঠামো ও আধ্যাত্মিক শক্তিকে বিনষ্ট করে দেয়এ অবস্থা থেকে বাঁচা তখনই সম্ভব যখন সমাজের ঐসব লোক, যারা সমাজের গণ্যমান্য এবং ইহার রাজনৈতিক ও চিন্তার ক্ষেত্রে দিকনির্দেশ করে থাকে, তারা কোন বিশেষ বিশ্বাস ও নীতিবোধ দ্বারা পরিচালিত হয় এবং কোন মূল্যের বিনিময়েই উহাকে পরিত্যাগ করতে রাজি থাকে নাএসব আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধাচারী নেতাদেরকে তাদের ধন সম্পদ ও পার্থিব উন্নতি আল্লাহর ক্রোধানল হতে  বাঁচবার নিশ্চয়তা দেয়না। অসৎ নেতৃত্বের অনুসারীরা আল্লাহর রোষানল থেকে বেঁচে যাবে এমন ধারণা ঠিক নয়উভয় দলই পাপিষ্টএরশাদ হচ্ছে :
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَنْ نُؤْمِنَ بِهَذَا الْقُرْآَنِ وَلَا بِالَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ مَوْقُوفُونَ عِنْدَ رَبِّهِمْ يَرْجِعُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ الْقَوْلَ يَقُولُ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا لَوْلَا أَنْتُمْ لَكُنَّا مُؤْمِنِينَ ﴿31﴾ قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا لِلَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا أَنَحْنُ صَدَدْنَاكُمْ عَنِ الْهُدَى بَعْدَ إِذْ جَاءَكُمْ بَلْ كُنْتُمْ مُجْرِمِينَ ﴿32﴾ وَقَالَ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ إِذْ تَأْمُرُونَنَا أَنْ نَكْفُرَ بِاللَّهِ وَنَجْعَلَ لَهُ أَنْدَادًا وَأَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ وَجَعَلْنَا الْأَغْلَالَ فِي أَعْنَاقِ الَّذِينَ كَفَرُوا هَلْ يُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿33﴾
আপনি যদি পাপিষ্টদেরকে দেখতেন, যখন তাদেরকে তাদের পালনকর্তার সামনে দাঁড় করানো হবে, তখন তারা পরস্পর কথা কাটাকাটি করবেযাদেরকে দুর্বল মনে করা হত, তারা অহংকারীদেরকে বলবে, তোমরা না থাকলে আমরা মুমিন হতামঅহংকারীরা দুর্বলকে বলবে, তোমাদের কাছে হেদায়েত আসার পর আমরা কি তোমাদের বাধা দিয়েছিলাম? বরং তোমরাই তো ছিলে অপরাধী দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, বরং তোমরাই তো চক্রান্ত করে আমাদেরকে নির্দেশ দিতে যেন আমরা আল্লাহকে না মানি এবং তার অংশীদার সাব্যস্ত করিতারা যখন শাস্তি দেখবে, তখন মনের অনুতাপ মনেই রাখবে। (সূরা সাবা : ৩১-৩৩) তবে কোরআনের প্রতি গভীর ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে সমাজের বিপর্যয় ও অন্যায় অনাচারের জন্য অধিকতর দায়ী সমাজের বিত্তবান ও নেতারাযেমন এরশাদ হচ্ছে :