দর্শক সংখ্যা

Sunday, March 24, 2013

আল্লাহর দিকে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাওয়াতের বাস্তব কিছু নমুনা-২


দ্বিতীয় অধ্যায়
হিজরতের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর কার্যক্রমের বিবরণ
প্রথম পরিচ্ছেদ

উম্মতের সংশোধন করা ও তাদের মানুষরুপে গড়ে তোলার বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম হিকমত ও বুদ্ধি ভিত্তিক অবস্থান:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনায় পৌঁছে দেখেন যে, মদিনার অধিবাসীরা বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত এবং তারা নানাবিধ বিপরীতমুখী বিশ্বাসে জরজরিত। তারা তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী, তাদের চিন্তা চেতনায় একে অপরের সাথে কোন প্রকার মিল নেই। তাদের মধ্যে নতুন ও পুরাতন বিভিন্ন ধরনের মতানৈক্য ও মতপার্থক্যের কোন অভাব ছিল না। কিছু পার্থক্য ছিল এমন যেগুলো তারা নিজেরা আবিষ্কার করে, আর কিছু ছিল যে গুলো তারা তাদের পূর্বসূরিদের থেকে মিরাসি সূত্রে পায়মদিনার এ দ্বিধা বিভক্ত লোকগুলোকে ইতিহাসের আলোকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
এক. আওস, খাযরাজ ও মুহাজির মুসলিম।
দুই. আওস ও খাযরাজের মুশরিকরা; যারা ইসলামে প্রবেশ করেনি।
তিন. ইয়াহুদি সম্প্রদায়। তারাও আবার একাধিক গোত্রে বিভক্ত ছিল। যেমন, বনী কাইনুকা; যারা ছিল খাজরায গোত্রের সহযোগী। বনী নাজির ও বনী ক্বুরাইজা; এ দুটি গোত্র আওস গোত্রের লোকদের সহযোগী ছিল
এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে, আওস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে দ্বন্ধ ছিল প্রাচীন ও ঐতিহাসিক। জাহিলিয়্যাতের যুগে তারা উভয় গোত্র সব সময় যুদ্ধ বিদ্রোহে লিপ্ত থাকত। যুগ যুগ ধরে তারা সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে যুদ্ধ চালাতো। তারা এতই খারাপ ছিল, তাদের অন্তরে সব সময় যুদ্ধের দাবানল জ্বলতে থাকত এবং যুদ্ধ করা ছিল তাদের নেশা[1]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনায় পৌঁছে প্রথমেই তিনি তার স্বীয় বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান ও কৌশল দিয়ে এ সব সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সে গুলোকে সমাধানের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এসব সমস্যা সমাধান, বাস্তব প্রেক্ষাপটকে নিয়ন্ত্রণ করা ও তাদের সবাইকে একটি ফ্লাট ফর্মে দাড় করানোর জন্য তিনি নিম্ন বর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেন।
এক. মসজিদ নির্মাণ করার কাজে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
প্রথমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম যে কাজটি আরম্ভ করেন, তা হল, মসজিদে নববীর নির্মাণ কাজ। তিনি সবাইকে এ কাজে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ দেন, যার ফলে সমস্ত মুসলিমরা এ কাজে অংশ গ্রহণ করেন। তাদের নেতৃত্বে থাকেন তাদের ইমাম মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। এটি ছিল পরস্পর সহযোগিতামূলক ও সম্মিলিতভাবে সম্পাদিত ইসলামের সর্ব প্রথম কাজ। এ কাজের মাধ্যমে সবার মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব তৈরি হয় এবং মুসলিমদের কাজের জন্য সাধারণ লক্ষ্য নির্ধারণ হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনায় আগমনের পূর্বে মদিনার প্রতিটি গোত্রের জন্য একটি নির্ধারিত স্থান ছিল, তাতে তারা একত্র হয়ে গান, বাজনা, কিচ্ছা, কাহিনী, কবিতা পাঠ ইত্যাদির অনুষ্ঠান করত।
তাদের এক গোত্র অপর গোত্রের লোকদের নিকট গিয়ে বসত না এবং তাদের অনুষ্ঠানে যোগ দিত না। এতে স্পষ্ট হয় যে, তাদের মধ্যে মত পার্থক্য ও দ্বন্ধ কতই না তীব্র ছিল। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম যখন মসজিদ বানালেন, তা সমগ্র মুসলিমদের জন্য একটি মিলন কেন্দ্রে পরিণত হল। তারা সবাই সব ধরনের মত পার্থক্য ভুলে গিয়ে একই সময়ে এক সাথে মসজিদে একত্র হত। এ মসজিদেই তারা কোন কিছু জানার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর নিকট জিজ্ঞাসা করত; তাদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান এখান থেকেই সমাধান করতে চেষ্টা করত। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তাদের সবাইকে মসজিদে একত্র করে ইসলাম ও ঈমানের তালিম দিতেন, সঠিক পথ দেখাতেন এবং সময় উপযোগি দিক নির্দেশনা দিয়ে তাদের ধন্য করতেন।([2])
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ধীরে ধীরে মদিনাবাসী একটি ফ্লাট ফর্মে আসতে আরম্ভ করে, তাদের মধ্যে মিল, মহব্বত ও ভালোবাসার সু-বাতাস বইতে শুরু করে এবং তারা ঐক্যের বন্ধনে একত্র হতে থাকে। বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা তাদের মধ্যে সুদীর্ঘ কালের জট বাধা ভেদাভেদ ও শত্রুতা ভুলতে থাকে, তৈরি হয় তাদের মধ্যে মিল-মহব্বত ও মৈত্রী। আর তারা অতীতকে ভুলে চলে আসে একে অপরের কাছাকাছি। তাদের শত্রুতা পরিণত হয় বন্ধুত্বে, তাদের অনৈক্য ও বিবাদ রূপ নেয় ঐক্য ও মমতায়রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মদিনায় কোন প্রকার বিভক্তি ও দলাদলি আর অবশিষ্ট থাকল না। জাহিলিয়্যাতের সব অন্ধকার আলোর সন্ধান পেতে আরম্ভ করল। বরং তারা সবাই অতীতকে পিছনে রেখে এখন ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হল। তারা আর কোন উপদলে বিভক্ত না থেকে একজনের নেতৃত্বে একত্রিত হল। আর তিনি হলেন, মানবতার অগ্রদূত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম, যিনি তার প্রভুর পক্ষ হতে আদেশ নিষেধ গ্রহণ করে উম্মতদের শিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব লাভ করেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর তা‘লীম-তরবিয়ত ও শিক্ষা-দীক্ষা দ্বারা মুসলিমগণ এখন একই কাতারে অবস্থান করছে; তাদের মধ্যে এখন আর কোন দলাদলি ও রেশারেশি নেইরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর তালীমের বদৌলতে তাদের অন্তরে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সহযোগিতার মানসিকতা তৈরি হয়। তাদের মধ্যে কোন প্রকার হিংসা-বিদ্বেষে ও পরশ্রিকাতরতা অবশিষ্ট রইল না, তাদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হল, ঐক্য মজবুত হল এবং তারা একে অপরের সহযোগী ও হিতাকাংক্ষি হিসেবে পরিণত হল।([3])
মসজিদ শুধু মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের স্থান ছিল না, বরং মসজিদ হল, মুসলিম উম্মাহর যাবতীয় সমস্যা সমাধানের মূল কেন্দ্র। শিক্ষা, দীক্ষাসহ সবকিছুই এখান থেকেই পরিচালিত হত। সবাই এখানে এসে একত্র হত, যাতে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের পুরনো যত ধরনের বিভেদ ছিল, তা আর না থাকে, এখানে এসে তারা তাদের অতীতের সব কিছু ভুলে যায় এবং দীর্ঘকাল থেকে লালিত জাহিলি যুগে তাদের সব ধরনের বিরোধ এখানে আসলে ধূলিসাৎ হয়ে যায়। মসজিদই হল, সমস্ত কার্যক্রম চালানোর প্রশাসনিক ভবন এবং সব ধরনের ফরমান জারির একমাত্র প্রাণ কেন্দ্র। এখানেই সব ধরনের বুদ্ধি পরামর্শ করা হত, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হত এবং এখান থেকেই তা প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করা হত।
এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম যেখানেই অবস্থান করতেন, তার প্রথম কাজ ছিল মসজিদ নির্মাণ করা; যাতে মুমিনরা এক জায়গায় একত্র হতে পারে। হিজরতের প্রাক্কালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম যেখানে প্রথম অবস্থান করেন, সেখানেও একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যে মসজিদটি বর্তমানে মসজিদে কুবা নামে পরিচিত। তারপর কুবা ও মদিনার মাঝামাঝি বনী সালেম ইবনে আওফে তিনি অবস্থান করেন। সেখানে তিনি জুমার সালাত আদায় করে মসজিদের সূচনা করেন। মদিনায় পৌঁছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম কোন প্রকার কালক্ষেপন না করে অতি তাড়াতাড়ি সর্ব প্রথম মসজিদ নির্মাণের কাজে হাত দেন[4])
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনায় প্রবেশের পর একটি উন্নত জাতি গঠন ও তাদের সংশোধনের লক্ষে আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের মাধ্যমে ইয়াহুদীদের সাথে যোগাযোগ কায়েম করেন এবং তাদের ইসলামের দিকে দা‘ওয়াত দিতে আরম্ভ করেন। এ কারণে ইসলামের ইতিহাসে আব্দুল্লাহ ইবন সালামের ইসলাম গ্রহণ ইসলামের অগ্রযাত্রা ও মুসলিমদের উন্নতির একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক। তার ইসলামের মাধ্যমে ইয়াহুদীদের মধ্যে ইসলামের প্রতি দূর্বলতা তৈরি হয় এবং মদীনার অন্যান্য লোকদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হয়। কারণ, আব্দুল্লাহ ইবন সালাম ছিল ইয়াহুদীদের মধ্যে বড় আলেম। আগেকার আসমানী কিতাবসমুহে আখেরী নবী সম্পর্কে যে সব ভবিষ্যৎ বাণী ছিল তা সবই তার জানা ছিল। তাই তার মত এমন একজন লোকের ইসলাম গ্রহণ নি:সন্দেহে ইসলামের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে এটাই ছিল স্বাভাবিক। আব্দুল্লাহ ইবন সালামের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা নিম্নরূপ।
আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«فعن أنس قال: بلغ عبد اللَّه بن سلام مقدم النبي صلى الله عليه وسلم إلى المدينة، فأتاه، فقال: إني سائلك عن ثلاث لا يعلمهن إلا نبي، قال: ما أول أشراط الساعة؟ وما أول طعام يأكله أهل الجنة، وما بال الولد ينزع إلى أبيه أو إلى أمه؟ فقال رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم: [خبرني بهن آنفاً جبريل[ قال ابن سلام: ذاك عدو اليهود من الملائكة، فقال رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم: [أما أول أشراط الساعة فنار تحشر الناس من المشرق إلى المغرب، وأما أول طعام يأكله أهل الجنة فزيادة كبد حوت، وأما الشبه في الولد فإن الرجل إذا غشي المرأة فسبقها ماؤه كان الشبه له، وإذا سبق ماؤها كان الشبه لها[قال: أشهد أن لا إله إلا اللَّه، وأنك رسول اللَّه]، قال: يا رسول اللَّه، إن اليهود قوم بُهْتٌ، إن علموا بإسلامي قبل أن تسألهم بَهَتُوني عندك، [فأرسل نبي اللَّه صلى الله عليه وسلم فأقبلوا فدخلوا عليه، فقال لهم رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم: [يا معشر اليهود، ويلكم اتقوا اللَّه فواللَّه الذي لا إله إلا هو إنكم لتعلمون أني رسول اللَّه حقاً، وأني جئتكم بحق، فأسلموا[، قالوا: ما نعلمه، قالوا للنبي صلى الله عليه وسلم -قالها ثلاث مرات فقال رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم: [فأي رجل فيكم عبد اللَّه بن سلام؟[ قالوا: سيدنا وابن سيدنا، وأعلمنا وابن أعلمنا، قال: [أفرأيتم إن أسلم؟[ قالوا: حاشا للَّه ما كان ليسلم، قال: [أفرأيتم إن أسلم؟[ قالوا: حاشا للَّه ما كان ليسلم، قال: [أفرأيتم إن أسلم؟[ قالوا: حاشا للَّه ما كان ليسلم، قال: [يا ابن سلام اخرج عليهم[، فخرج فقال: يا معشر اليهود، اتقوا اللَّه فواللَّه الذي لا إله إلا هو إنكم لتعلمون أنه رسول اللَّه، وأنه جاء بحق، فقالوا: كذبت، [شرنا، وابن شرنا]، ووقعوا فيه»
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর মদিনায় আগমনের খবর আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের নিকট পৌছলে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর দরবারে এসে বলে আমি তোমাকে তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করব যে তিনটি বিষয়ের উত্তর একমাত্র নবী ছাড়া আর কেউ দিতে পারবে না। এক- কিয়ামতের প্রথম আলামত কি? দুই-জান্নাতীদের প্রথম খাবার কি হবে যা তারা জান্নাতে খাবে? তিন- সন্তান কখনো মায়ের মত আবার কখনো পিতার মত হয় এর কারণ কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তাকে বললেন, জিবরিল আ. একটু আগে আমাকে তোমারা প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানালেন, এ কথা শোনে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম বলল, জিবরিল হল, ফেরেশতাদের মধ্য হতে ইহুদীদের বড় শত্রু। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বললেন, তোমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর হল, প্রথম কিয়ামতের আলামত আগুন যা পশ্চিম থেকে পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত সমগ্র মানুষকে এক জায়গায় একত্র করবে। আর জান্নাতিদের প্রথম খাবার হবে মাছের কলিজা। আর বাচ্চাদের মাতা পিতার সাদৃশ্য হওয়ার বিষয়টি নারী পরুষের মিলনের সময় যদি পুরুষের বীর্য নারীদের বীর্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে, তখন বাচ্চা পুরুষের মত হয়, অন্যথায় নারীদের মত হয়। রাসূল সা,. উত্তর শোনার পর আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, অবশ্যই আপনি আল্লাহর রাসূল। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল ইহুদীরা হল, অকৃতজ্ঞ জাতি। আপনি তাদের আমার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার পূর্বে তারা যদি আমার ইসলাম বিষয়ে জানে, তবে তারা আমাকে হেয় করবে। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তাদের সংবাদ দিয়ে একত্র করলেন এবং তাদের বললেন, হে ইহুদী সম্প্রদায়! সাবধান তোমরা আল্লাহকে ভয় কর! আমি ঐ আল্লাহর শপথ করে বলছি, যিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নাই, তোমরা অবশ্যই জান আমি আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত রাসূল। আমি তোমাদের নিকট সত্যের পয়গাম নিয়ে এসেছি। তোমরা আমার আনুগত্য কর এবং ইসলাম গ্রহণ করতারা সবাই বলল, আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তাদের তিনবার জিজ্ঞাসা করেন এবং তারাও তিনবার একই উত্তর দেন। তারপর রাসূল তাদের জিজ্ঞাসা করেন, আবদুল্লাহ ইবনে সালাম তোমাদের মধ্যে কেমন লোক? তারা সবাই এক বাক্যে বলল, তিনি আমাদের সরদার এবং সরদারের ছেলে সরদার। আর তিনি আমাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী লোক এবং সর্বাধিক জ্ঞানী লোকের ছেলে। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বললেন, সে যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তোমরা তাকে কীভাবে দেখবে? তারা বলল, আল্লাহ তাকে হেফাযত করুক! সে কখনই ইসলাম গ্রহণ করার নয়! তিনি বললেন, হে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম তুমি ইহুদীদের নিকট বের হয়ে আস! তারপর তিনি বের হয়ে বললেন, হে ইহুদী সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর! যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্যিকার ইলাহ নাই, আমি তার শপথ করে বলছি, তোমরা ভালো করেই জান অবশ্যই তিনি আল্লাহর রাসূল। তিনি আমাদের নিকট সত্যের পয়গাম নিয়ে আসছেনতার কথা শোনে তারা সবাই বলল, তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি আমাদের মধ্যে সর্বাধিক নিকৃষ্ট ব্যক্তি এবং সর্বাধিক নিকৃষ্ট ব্যক্তির ছেলে। তারা তার সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের অপবাদ দেয়া আরম্ভ করে।([5])
মদীনায় প্রবেশের পর এ ঘটনা ছিল ইহুদীদের সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর প্রথম অভিজ্ঞতা। ([6])
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর বুদ্ধিমত্তা ও কৌশল হল, তিনি প্রথমে আব্দুল্লাহ ইবনে সালামকে লুকিয়ে থাকতে বলেন, যাতে তার সম্পর্কে সংবাদ দেয়ার পূর্বেই তাদের থেকে তার মান মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে স্বীকারোক্তি আদায় করেন। তারপর যখন তারা প্রশংসা করল, তার মান-মর্যাদা তুলে ধরল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তাকে বের হয়ে আসতে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর নির্দেশে সে ভিতর থেকে বের হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম রিসালাতের সাক্ষ্য দিল এবং ইহুদীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের আগমনের সত্যতা সম্পর্কে যা গোপন করত, তা প্রকাশ করে দেন।
তিন. মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব
মদিনায় হিজরতের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম যেভাবে মসজিদ নির্মাণ ও ইয়াহুদীদের ইসলামের দিকে ডাকতে আরম্ভ করেন, অনুরূপভাবে আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে সুসম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছিল সঠিক সমাধান, নবুওয়তের পরিপূর্ণতা, সুক্ষ্ম কৌশল এবং মুহাম্মদী হিকমত।([7])
মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম আনাস ইবনে মালিকের গৃহে আনসার ও মুহাজিরদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব কায়েম করেন। নব্বই জন সাহাবী তার ঘরে একত্রিত হয়; অর্ধেক আনসার আর বাকী অর্ধেক মুহাজির। তাদের সম্পর্ক বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এতই নিবিড় ছিল, একজন মারা গেল তার সম্পত্তিতে অপরজন অংশ পেতঅথচ তার সাথে রক্তের কোন সম্পর্ক ছিল না। তারপর যখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেন, তখন উত্তরাধিকার শুধু মাত্র রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
﴿وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنۢ بَعۡدُ وَهَاجَرُواْ وَجَٰهَدُواْ مَعَكُمۡ فَأُوْلَٰٓئِكَ مِنكُمۡۚ وَأُوْلُواْ ٱلۡأَرۡحَامِ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلَىٰ بِبَعۡضٖ فِي كِتَٰبِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمُۢ ﴾ [الأنفال:75]

অর্থ, আর যারা পরে ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবঙ তোমাদের সাথে জিহাদ করেছে, তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত, আর আত্মীয়-স্বজনরা একে অপরের তুলনায় অগ্রগণ্য, আল্লাহর কিতাবে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে মহাজ্ঞানী।[8]
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তাদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেন, তা শুধু কাগজের লেখা বা মুখের কথা ছিল না। বরং তাদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেছিল তা ছিল তাদের অন্তরের গাথা একটি চিরন্তণ বন্ধন, তা ছিল তাদের জান মালের সাথে একাকার ও অভিন্নতাদের কথা ও কাজে ছিল একটি চিরন্তন ও স্থায়ী সম্পর্কের বহি:প্রকাশ। বিপদে আপদে তারা ছিলেন একে অপরের হিতাকাংক্ষি ও সহযোগীবুখারিতে এ বিষয়ে একটি উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হয়-
«آخى رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم بين عبد الرحمن بن عوف، وسعد بن الربيع، فقال سعد: قد علمت الأنصار أني من أكثرها مالاً، فأقسم مالي بيني وبينك نصفين، ولي امرأتان، فانظر أعجبهما إليك فسمها لي أطلقها، فإذا انقضت عدتها فتزوجها، فقال عبد الرحمن: بارك اللَّه لك في أهلك ومالك، أين سوقكم؟ فدلوه على سوق بني قينقاع فما انقلب إلا ومعه فضل من أقط وسمن، ثم تابع الغدوة ثم جاء يوماً وبه أثر صُفرة، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: [مَهْيَم؟[، قال: تزوجت امرأة من الأنصار، فقال: [ما سقت فيها؟[ قال: وزن نواة من ذهب، أو نواة من ذهب، فقال: [أولِم ولو بشاة»
অর্থ, আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রা. ও সায়াদ ইবনে রবি রা. উভয়ের মাঝে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম সুসম্পর্ক কায়েম ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেন। তখন সায়াদ রা. তার সাথীকে বলল, আনসারীরা জানে আমি সম্পদের দিক দিয়ে তাদের চেয়ে অধিক সম্পদের অধিকারিসুতরাং, তুমি আমার যাবতীয় সম্পদকে তোমার মধ্যে ও আমার মধ্যে দুই ভাগ করে নাও; অর্ধেক তোমার আর বাকী অর্ধেক আমার। আর আমার দুটি স্ত্রী আছে তাদের মধ্যে তোমার নিকট যাকে পছন্দ হয়, তার নাম নিয়ে বল, আমি তাকে তালাক দিয়ে দিব তারপর যখন তার ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে, তখন তুমি তাকে বিবাহ করবে। এ সব কথা শোনে আব্দুর রহমান তার সাথীকে বলল, আল্লাহ তা‘আলা তোমার পরিবার ও জান- মালের মধ্যে বরকত দান করুন। তোমাদের বাজার কোথায়? তারা বনী কায়নুকা নামক বাজারের সন্ধান দিলে, সেখান থেকে সে সামান্য পণীর ও ঘি নিয়ে ফিরে আসে। তারপর তারা দুপুরের খাওয়া খায়। এরপর সে একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর নিকট আসে তার দেহে লাল রং এর আলামত পরিলক্ষিত দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তাকে বলল, তোমার কি অবস্থা? উত্তরে সে বলল, আমি একজন আনসারী নারীকে বিবাহ করেছি। তখন রাসূল তাকে বলল, এ বিষয়ে তুমি কি খরচ করেছ? সে বলল, একটি খেজুরের আটি পরিমাণ স্বর্ণ। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তাকে বললেন, তুমি ওলিমা খাওয়াও! যদি না পার তাহলে কমপক্ষে একটি ছাগল হলেও খাওয়াও।([9])
চার. হিকমতপূর্ণ তালীম:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনায় মুসলিমদের তা‘লীম, তরবিয়াত, আত্মার পরিশুদ্ধি ও উত্তম আখলাক শেখানোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি অত্যন্ত মহব্বত ও ভালোবাসার সাথে তাদের ইসলামী শিষ্টাচার ও ইবাদত বন্দেগীর তা‘লীম দিতেন। [10]
«يا أيها الناس: أفشوا السلام، وأطعموا الطعام، وصلوا بالليل والناس نيام، تدخلوا الجنة بسلام»
অর্থ, হে মানুষ! তোমরা সালামের প্রসার কর, মেহমানের মেহমানদারী কর, মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন তোমরা সালাত আদায় কর, আর নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ কর। ([11])
তিনি আরও বলেন,
«لا يدخل الجنة من لا يأمن جاره بوائقه»
অর্থ, যার অত্যাচার থেকে প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজন নিরাপদ থাকতে পারে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। ([12])
« المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده. »
অর্থ, সত্যিকার মুসলিম সে ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদে থাকে।([13]) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম আরও বলেন,
«لا يؤمن أحدكم حتى يحب لأخيه ما يحب لنفسه»
অর্থ, যে ব্যক্তি নিজের জন্য যা পছন্দ করে, তা তার অপর ভাইয়ের জন্য পছন্দ না করা পর্যন্ত সে প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। ([14])
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেন,
«المؤمن للمؤمن كالبنيان يشد بعضه بعضا، وشبك بين أصابعه»
অর্থ, একজন মুমিন অপর মুমিনের জন্য প্রাচীরের ন্যায়, তার একটি অংশ অপর অংশকে শক্তি যোগায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এ কথা বলে আঙ্গুল গুলোকে জড়ো করে দেখান। ([15]) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম আরও বলেন,
 «لا تحاسدوا، ولا تناجشوا، ولا تباغضوا، ولا تدابروا، ولا يبع بعضكم على بيع بعض، وكونوا عباد اللَّه إخواناً، المسلم أخو المسلم، لا يظلمه، ولا يخذله، ولا يحقره، التقوى هاهنا[ ويشير إلى صدره ثلاث مرات [بحسب امرئ من الشر أن يحقر أخاه المسلم، كل المسلم على المسلم حرام: دمه، وماله وعرضه»
অর্থ, তোমরা পরস্পর বিদ্বেষ করো না ধোঁকা দেবে না, হিংসা করবে না এবং দুর্নাম করবে না। আর কারো বেচা-কেনার উপর হস্তক্ষেপ করবে না। আর তোমরা আল্লাহর বান্দা ও ভাইয়ে পরিণত হও। একজন মুসলিম অপর মুসলিের ভাই। সে কাউকে অপমান করে না। কাউকে ঠকায় না এবং কারো উপর অত্যাচার করে না। আর তাকওয়া এখানে। এ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম স্বীয় বক্ষের দিকে তিনবার ইশারা করে। একজন মানুষ নিকৃষ্ট হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার একজন ভাইকে অপমান করা। প্রতিটি মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের রক্তপাত, ধন-সম্পদ আত্মসাৎ ও ইজ্জত সম্মানহানী করা হারাম করা হয়েছে।([16])
«وقال لا يحل لمسلم أن يهجر أخاه فوق ثلاث ليال، يلتقيان فيعرض هذا، ويعرض هذا، وخيرهما الذي يبدأ بالسلام»
অর্থ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম আরও বলেন, একজন মুসলিম তার অপর ভাইকে তিন রাতের বেশি ছেড়ে রাখতে পারে না। তারা একে অপরের সাথে মিলিত হলে একজন এদিক আরেকজন অন্যদিক ফিরে থাকে। তাদের উভয়ের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে আগে সালাম দেয়।([17]) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম আরও বলেন,
« وقال: تفتح أبواب الجنة يوم الإثنين، ويوم الخميس، فيغفر لكل عبد لا يشرك باللَّه شيئاً إلا رجلاً كانت بينه وبين أخيه شحناء، فيقال: انظِروا هذين حتى يصطلحا، انظِروا هذين حتى يصطلحا، انظِروا هذين حتى يصطلحا»
অর্থ, সোমবার ও বৃহ:বারে জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা হয়ে থাকে। তখন আল্লাহ তা‘আলা যেসব বান্দাগণ আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরিক করে না তাদের ক্ষমা করে দেন। তবে কোন ব্যক্তি যদি এমন হয়, তার মধ্যে ও তার ভাইয়ের মধ্যে দুশমনি থাকে তবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করেন না। আল্লাহ তার ফেরেশতাদের বলেন, তোমরা এ দুজনকে সুযোগ দাও, যাতে তারা আপোষ করে ফেলে। তোমরা এ দুজনকে সুযোগ দাও যাতে তারা আপোষ করে ফেলে। তোমরা এ দুজনকে সুযোগ দাও যাতে তারা আপোষ করে ফেলে। ([18])

«وقال: ]تعرض الأعمال في كل يوم خميس وإثنين فيغفر اللَّه في ذلك اليوم لكل امرئٍ لا يُشرك باللَّه شيئاً إلا امرأ كانت بينه وبين أخيه شحناء، فيقال: اركوا هذين حتى يصطلحا، اركوا هذين حتى يصطلحا»
অর্থ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম আরও বলেন আল্লাহ তা‘আলার নিকট সোমবার ও বৃহস্পতিবারে বান্দার আমলসমূহ পেশ করা হয়ে থাকে, তখন আল্লাহ তা‘আলা যারা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করে তাদের ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। তবে কোন ব্যক্তি যদি এমন হয়, তার মধ্যে ও তার ভাইয়ের মধ্যে দুশমনি থাকে, তবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করেন না। তার বিষয়ে বলা হয়, তাকে তোমরা সুযোগ দাও! যাতে তারা আপোষ করে নেয়।[19])

« وقال صلى الله عليه وسلم: [انصر أخاك ظالماً أو مظلوماً[ قيل: يا رسول اللَّه، هذا نصرته مظلوماً، فكيف أنصره إذا كان ظالماً؟ قال: [تحجزه أو تمنعه من الظلم فذلك نصره»
অর্থ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেন, তোমরা তোমার জালেম অথবা মাজলুম ভাই উভয়কে সহযোগিতা কর। একজন জিজ্ঞাসা করে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল মজলুমের সাহায্য করা আমরা বুঝতে পারলাম, কিন্তু যদি জালেম হয়, তাকে কিভাবে সাহায্য করব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বললেন, তাকে তোমরা বিরত রাখবে অথবা তাকে জুলুম করতে বাধা দিবে। ([20])

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেন, একজন মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের উপর ছয়টি দায়িত্ব রয়েছে। জিজ্ঞাসা করা হল, সে গুলো কি হে আল্লাহর রাসূল!? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম উত্তর দেন, যখন তুমি তার সাথে সাক্ষাত করবে তাকে সালাম দেবে। যখন তোমাকে দা‘ওয়াত দিবে, তখন তুমি তার দা‘ওয়াতে সাড়া দেবে। যখন তোমার নিকট কোন উপদেশ চাইবে তখন তুমি তাকে উপদেশ দেবে। আর হাচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে, তুমি তার উত্তর দিবে। আর যখন অসুস্থ হবে, তুমি তাকে দেখতে যাবে। আর যখন মারা যাবে, তার জানাজায় শরিক হবে। ([21])

« وعن البراء بن عازب قال: أمرنا رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم بسبع ونهانا عن سبع: [أمرنا بعيادة المريض، واتباع الجنازة، وتشميت العاطس، وإجابة الداعي, وإفشاء السلام، ونصر المظلوم، وإبرار المقسم، ونهانا عن خواتيم الذهب، وعن الشرب في الفضة[ أو قال: [في آنية الفضة وعن المياثر، والقسي)، وعن لبس الحرير، والديباج، والإستبرق».
বারা ইবনে আযেব রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম আমাদের সাতটি আদেশ দেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম আমাদের রুগীদের দেখতে যাওয়া, জানাজায় শরিক হওয়া, হাঁচির উত্তর দেওয়া, সালামের প্রসার করা, মজলুমের সাহায্য করা, দা‘ওয়াতে সাড়া দেওয়া এবং শপথকারীকে দায়মুক্ত করার নির্দেশ দেন। আর তিনি আমাদের স্বর্ণের আংটি পরা, রুপার পাত্রে পান করা, রেশমের পোশাক পরিধান করা, রেশমের নির্মিত বিছানা, রেশমের দ্বারা খচিত কাপড়, দিবাজ ও ইসতাবরাক পরিধান করা হতে নিষেধ করেন। ([22])

« وقال: [لا تدخلون الجنة حتى تؤمنوا، ولا تؤمنوا حتى تحابوا، أَوَلا أدلكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم، أفشوا السلام بينكم [».
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেন, তোমারা পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না, তোমরা একে অপরকে মহব্বত করবে। আমি কি তোমাদের এমন একটি বিষয়ের সন্ধান দেব, যা পালন করলে তোমরা একে অপরকে মুহব্বাত করবে? তোমরা তোমাদের নিজেদের মধ্যে সালামের ব্যাপকতা বৃদ্ধি কর! ([23])
« وسئل صلى الله عليه وسلم: أي الإسلام خير؟ فقال: [تطعم الطعام، وتقرأ السلام على من عرفت ومن لم تعرف»
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল, ইসলামে সর্বোত্তম আমল কোনটি? তখন রাসূল উত্তর দেন, মেহমানের মেহমানদারী করা, তুমি যাকে চিন বা যাকে চিন না সবাইকে সালাম দেয়া। ([24])
« ويقول: [مَثَل المؤمنين في توادهم وتراحمهم وتعاطفهم، كمثل الجسد إذا اشتكى منه عضو تداعى له سائر الجسد بالسهر والحمى. »
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেন, মুমিনদের দৃষ্টান্ত পরস্পরের প্রতি দয়া, নম্রতা ও আন্তরিকতার দিক দিয়ে একটি দেহের মত। তাদের দেহের একটি অংশ আক্রান্ত হলে, তার সমগ্র অঙ্গ ব্যথা, যন্ত্রণা ও অনিদ্রায় আক্রান্ত হয়। ([25])
« وقال صلى الله عليه وسلم: [من لا يرحَم لا يُرحم. »
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম আরও বলেন, যে ব্যক্তি রহম করে না তাকে রহম করা হবে না। ([26])
« وقال: [من لا يرحم الناس لا يرحمه اللَّه تعالى. »
আরও বলেন, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দয়া করবে না। ([27])
« وقال صلى الله عليه وسلم: [سُباب المسلم فسوقٌ، وقتاله كفر. »
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম আরও বলেন, মুসলিমদের গালি দেয়া ফাসেকী আর কোন মুসলিমকে হত্যা করা হল, কুফরী। ([28])

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর উল্লেখিত বাণীসমূহ আনসারীদের নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম হতে সরাসরি পৌঁছুক বা তারা মুহাজিরদের মাধ্যমে পৌঁছুক যারা হিজরতের পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম থেকে শুনেছে, সবই হল, তাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর পক্ষ হতে বিশেষ তালিম ও শিক্ষা। এ ছাড়া কিয়ামত পর্যন্ত অনাগত উম্মতের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম চিরন্তন বাণীসমূহ বিশেষ তালীম যা তারা তাদের জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারে।
এ ছাড়াও আরও অনেক হাদিস ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর বাণী রয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি তার সাহাবীদের তালীম দিতেন, তাদের দান খয়রাত করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন এবং দান করার ফজিলত বর্ণনা করতেন; যাতে তাদের অন্তর বিগলিত ও উৎসাহী হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তাদের ভিক্ষা করা হতে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করেন। তাদের জন্য ধৈর্য ধারণ ও কানায়াত করার গুরুত্ব আলোচনা করতেন। যেসব ইবাদতে অধিক সাওয়াব ও বিনিময় রয়েছে, তার প্রতি তাদের যত্নবান হওয়ার তালীম দেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম আসমান থেকে অবতীর্ণ ওহীর সাথে সম্পৃক্ত করতেন। তিনি নিজে তাদের পড়ে শোনাতেন এবং তাদের থেকে তিনি শুনতেন। যাতে এ শিক্ষার মাধ্যমে তাদের উপর দা‘ওয়াতের যে দায়িত্ব রয়েছে, তার অনুভূতি জাগ্রত হয়।
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এভাবেই ধীরে ধীরে তাদের চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধন করেন এবং তাদের একটি মান-সম্পন্ন জাতিতে পরিণত করেন। যার ফলে তারা কিয়ামত অবধি মানবতার জন্য একটি আদর্শে পরিণত হন। এভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে ইতিহাসে একটি আদর্শবান ও উন্নত মানের মুসলিম সমাজ বিনির্মাণ করতে তিনি সক্ষম হন। সাথে সাথে জাহিলি সমাজের যাবতীয় সমস্যার বিজ্ঞান সম্মত সমাধান তিনি জাতির সামনে পেশ করেন এবং তা বাস্তবায়ন করে দেখান। ফলে অন্ধকারাচ্ছন্ন জাহিলি সমাজ ব্যবস্থা মানবতার জন্য একটি উন্নত আদর্শের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী পরিণত হয়। এগুলো সবই হল, আল্লাহ তা‘আলার অপার অনুগ্রহ তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর আন্তরিক প্রচেষ্টার সুফল। যারা আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করবে তাদের উচিত হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর সুন্নতের অনুসরণ করা এবং তার অনুসৃত পথে চলা। ([29])
পাঁচ. মুহাজির ও আনছারদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন ও ইহুদীদের সাথে সম্পর্ক চিহ্ন করা:
আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করার পর, তিনি তাদের সাথে এমন একটি চুক্তি সম্পন্ন করেন, াদ্বারা জাহিলিয়্যাতের সব ধরনের কু-সংস্কার, জাতিগত বৈষম্য, আঞ্চলিকতা, বর্ণ বৈষম্য, ভাষাগত বৈষম্য ও পারস্পরিক বিভেদ দূর হয়ে যায়। জাহিলিয়্যাতের অন্ধানুকরণের দরুন যে সব বিশৃংখলা, অন্যায় ও অনাচার সমাজে সংঘটিত হত, এ ধরনের সব অবকাশ দূর হয়ে যায়। এ চুক্তিতে মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে পরস্পরিক বন্ধন স্থাপন করার সাথে সাথে ইহুদীদের সাথে যাবতীয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন ও মদিনায় তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। উম্মতের সংশোধন ও তাদের ভিত্তি মজবুত করার জন্য এটি ছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর প্রচেষ্টার স্পষ্ট ফলাফলরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম আনসার ও মুহাজিরদের মাঝে একটি লিপিবদ্ধ চুক্তি করেন, তাতে তিনি ইহুদীদের সাথে সম্পর্ক চিহ্ন করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তাদের সাথে যে চুক্তি করেন, তাতে তিনি তাদেরকে তাদের সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করেন এবং তাদের পক্ষে ও বিপক্ষে কিছু শর্তারোপ করেন।[30])
এ চুক্তি ছিল অত্যন্ত সূক্ষ্ম, সু-চিন্তিত, সু-কৌশল ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর পক্ষ হতে বিশেষ একটি কৌশলিক বার্তা ও পরিপূর্ণ হিকমত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনার সব মুসলিমদের এবং ইহুদীদের মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপন করে দেন। যার ফলে তারা একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত হল এবং একটি শক্তিতে পরিণত হল, ইচ্ছা করলে কেউ এখন আর মদিনায় আক্রমণ চালাতে পারবে না। কেউ মদিনার উপর আক্রমণ চালাতে চাইলে, এখন তারা তা প্রতিহত করতে সক্ষম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম যে পাঁচটি পদক্ষেপ নেন তা দ্বারা আল্লাহর অনুগ্রহে মদিনার অধিবাসীদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং তাদের মধ্যে দীর্ঘ কালের যে মত পার্থক্য ছিল তা দূর করতে সক্ষম হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনা যে পাঁচটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা হল, মসজিদ নির্মাণ, ইহুদীদের ইসলামের দিকে আহ্বান করা, মুমিনদের মধ্যে সু-সম্পর্ক কায়েম করা ও তাদের তালীম তরবিয়ত দেয়া এবং অমুসলিমদের সাতে চুক্তি সম্পাদক করা।
এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর ঐতিহাসিক এ পাচটি পদেক্ষপ ছিল যুগান্তকারী ও সময় উপযোগি। এ সব পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর রাজনৈতিক দূরদর্শিতারই বহি: প্রকাশ ঘটে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাদের অতীতের সমস্ত কু-সংস্কার দূর করে দেন, মুসলিমদের অন্তরসমূহকে এক জায়গায় একত্র করে এবং মদিনার অভ্যন্তরে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অগ্রণি ভূমিকা পালন করেএ ছাড়েও বহি:শত্রুর আক্রমণ ও তাদের হাত থেকে মদিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। এ কারণে এ সনদটি পৃথিবীর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সনদে পরিণত হয়। এ সনদের কারণেই আল্লাহর দিকে মানুষকে ডাকার বিষয়টি মদিনা থেকে সমগ্র দুনিয়াতে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ চুক্তি ছিল অত্যন্ত সূক্ষ্ম, সু-চিন্তিত, সু-কৌশল ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর পক্ষ হতে বিশেষ একটি পরিপূর্ণ হিকমত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মদিনার সব মুসলিমদের এবং ইহুদীদের মধ্যে এ সনদের মাধ্যমে একটি সম্পর্ক স্থাপন করে দেন। যার ফলে তারা একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত হয় এবং একটি শক্তিতে পরিণত হয়। অবস্থা এখন এ পর্যায়ে পৌছে যে, ইচ্ছা করলে কেউ এখন আর মদিনায় আক্রমণ চালাতে পারবে না; মদীনায় আক্রমণ চালাতে হলে তাকে ভেবে চিন্তে এগুতে হবে। কেউ মদীনার উপর আক্রমণ করতে চাইলে, এখন তারা তা প্রতিহত করতে সক্ষম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম যে পাঁচটি পদক্ষেপ নেন তা দ্বারা আল্লাহর অনুগ্রহে মদিনার অধিবাসীদের মধ্যে ঐতিহাসিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তাদের মধ্যে দীর্ঘ কালের যে মত পার্থক্য ছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ ঐতিহাসিক সনদের মাধ্যমে তা দূর করতে সক্ষম হন ([31])

যুদ্ধের ময়দানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর সুন্দর প্রস্তুতি, সাহসিকতা ও বীরত্বের হিকমত সংক্রান্ত আলোচনা:
মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর প্রচেষ্টায় একটি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার পর তা মুসলিমদের জন্য একটি শক্তিশালী ঘাটিতে পরিণত হল। এ ছাড়াও মদিনা এখন মুসলিমদের জন্য একটি প্রাণ কেন্দ্র ও রাজধানীতে রূপান্তরিত হলআর আতঙ্ক হল তাদের জন্য যারা ইসলামের অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করতে চায় এবং ইসলামী রাজধানীর ক্ষতি চায়। তাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও মদিনা মুসলিমদের জন্য আশ্রয়স্থল ও মিলন কেন্দ্র পরিণত হয়; এখান থেকে ইসলামের শত্রুদের প্রতিহত করার একটি সুযোগ মুসলিমদের তৈরি হয়। এ ধরনের অর্জনের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম আল্লাহর রাহে অন্তর দিয়ে ও মুখ দিয়ে কাফের মুশরিকদের সাথে যুদ্ধের ঘোষণা দেন। দা‘ওয়াত, বয়ান, তলোয়ার, ও অস্র দিয়ে যুদ্ধ করতে তার নিকট এখন আর কোন বাধা রইল না। তাই তিনি কাফেরদের বিরুদ্ধে সব ধরনের যুদ্ধ বিদ্রোহ পরিচালনা আরম্ভ করেন। তিনি ৫৬টি সৈন্যদল শত্রুর বিরুদ্ধে পাঠান এবং তিনি নিজেই সাতাশটি যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দেন। ([32])
যুদ্ধের ময়দানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম কয়েকটি হিকমতপূর্ণ আচরণ:
এক. বদর যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর আচরণ:
বদরের যুদ্ধ ছিল ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণের এ যুদ্ধের ভূমিকা অপরিসীম। এ যুদ্ধ ছিল নিরস্র মুষ্টিময় মুসলিমদের অস্র সস্রে সজ্জিত একটি সংখ্যাগরিষ্ট জামাতের বিরুদ্ধে লড়াই করা। এ কারণে এ যুদ্ধে মুসলিমদের সাথে বুদ্ধি পরামর্শ করা তাদের মতামত নিয়ে যুদ্ধে নামার গুরুত্ব ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর নিকট অনিবার্য বাস্তবতা। তাই এ যুদ্ধে প্রথমেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম আনসারীদের মতামত জানার জন্য মুসলিমদের নিকট পরামর্শ চান। কারণ, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম কে মদিনা অভ্যন্তরে জান-মাল ও সন্তানদের নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেনকিন্তু মদিনার বাইরে তারা তাদের দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে কোন প্রতিশ্রুতি ইতিপূর্বে দেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম প্রথমে মুসলিমদের সবাইকে একত্র করে তাদের সবার মতামত জানতে চান। একারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামতাদের সকলকে একত্র করলে, প্রথমে আবুবকর ও উমর রা. অত্যন্ত সুন্দরভাবে তাদের নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শোনেন। কিন্তু শুধু তাদের কথার উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম সন্তুষ্ট থাকতে না পারায় তিনি আবারো সবার পরামর্শ চাইলেন। তারপর মিকদাদ রা. দাড়িয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে আল্লাহ তা‘আলা যা করার নির্দেশ দিয়েছে, তা চালিয়ে যান, আমরা আপনার সাথে আছি। আর আমরা বনী ইসরাইল মুসা আ. কে যা বলছে, যাও তুমি ও তোমার রব যুদ্ধ কর, আমরা এখানে বসে থাকব, এ ধরনের কথা আমরা বলব না। আমরা বলব, যাও তুমি ও তোমার রব যুদ্ধ কর, আমরাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করব। আমরা তোমার ডান, বাম, সামনে, পিছনে সবদিক দিয়ে তোমার সাথে যুদ্ধ করব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম আবারো পরামর্শ চাইলে সা‘য়াদ ইবনে মুয়ায তাড়াতাড়ি দাড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি মনে হয় আমাদের থেকে শুনতে চান এবং আমাদের মতামত জানতে চানমূলত: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তাদের থেকেই শোনতে চাইতে ছিলেন। সা‘য়াদ রা. তাকে বলল, আপনি আশংকা করছেন আমরা শুধু মদিনার ভিতরে আপনার সহযোগিতা করবো এবং মদীনার ভিতরেই আপনাদের থেকে প্রতিহত করবেআমি আনসারীদের পক্ষ থেকে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি যে, আপনি যেখানে চান সৈন্য পাঠান, যাকে কাটতে চান বা জোড়া লাগাতে চান আমাদের কোন আপত্তি নাই। আমাদের সম্পদ থেকে আপনি যা চান নেন, আর যা চান আমাদের দেন। আপনি আমাদের থেকে যা নিলেন, তা আমাদেরকে যা দিলেন তার থেকে অধিক পছন্দনীয়। আপনি আমাদের কোন সিদ্ধান্ত দিলে আমাদের সিদ্ধান্ত আপনার সিদ্ধান্তের অনুসারী। আল্লাহর শপথ করে বলছি! যদি আপনি আমাদের নিয়ে গামদান যান আমরা আপনার সাথে থাকবো। আরও শপথ করে বলছি! আপনি যদি আমাদের এ সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেন, আমরা আপনার সাথে তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ব। আমাদের থেকে একজন লোককেও পিছু হটতে পাবেন না। আগামী দিন আমরা দুশমনের মোকাবেলা করাকে কোন ক্রমেই অপছন্দ করছি না। আমরা যুদ্ধে ধৈর্যশীল, দুশমনের সাথে মোকাবেলা করতে বিশ্বাসী। হতে পারে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের থেকে আপনাকে এমন কিছু দেখাবে, যা আপনার চোখকে শীতল করবে। আপনি আমাদের সাথে নিয়ে আল্লাহর নামের বরকতে আরম্ভ করেন। এ কথা শোনার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর চেহারা হাস্যজ্জল হয়ে যায়, তার অন্তর খুশি হয়ে যায় এবং কর্ম উদ্যম আরও বেড়ে যায়। তারপর তিনি বলেন,
«سيروا وأبشروا، فإن اللَّه قد وعدني إحدى الطائفتين، ولكأني الآن أنظر إلى مصارع القوم»
অর্থ, তোমরা চল, আর সুসংবাদ গ্রহণ কর। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে একটি জামাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে আমি কওমের বড় বড় লোকদের পড়ে থাকার স্থানগুলো দেখে নিচ্ছি। ([33])
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর হিকমত হল, তিনি শুধু আসবাব বা মাধ্যমের উপর তাওয়াক্কুল করেননি, তিনি আল্লাহর উপরই তাওয়াক্কুল করেন, তবে আসবাব ও মাধ্যমকেও তিনি একেবারে ছেড়ে না দিয়ে তাও অবলম্বন করেন।
ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, বদর যুদ্ধের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মুশরিকদের দিকে দেখেন তখন তাদের সংখ্যা ছিল এক হাজার আর তার সাথীদের সংখ্যা ছিল মাত্র তিনশত তের জন। এ অবস্থা দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম কেবলা মুখ হয়ে দু হাত তুলে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে থাকেন। তিনি আল্লাহর নিকট কেদে কেদে বলেন, «اللَّهم أنجز لي ما وعدتني، اللَّهم إن تهلك هذه العصابة من أهل الإسلام لا تعبد في الأرض» হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছে, তা পূরণ কর। হে আল্লাহ ! মুসলিমদের এ ক্ষুদ্র জামাতটিকে যদি তুমি ধ্বংস কর, তাহলে জমিনে তোমার নাম নেয়ার মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। এভাবে তিনি কিবলামুখি হয়ে আল্লাহর দরবারে দু হাত তুলে কান্নাকাটি করতে ছিলেন কান্নাকাটি করতে করতে তার ঘাড় হতে চাদর পড়ে গেলে, আবু বকর রা. এসে তার ঘাড়ের উপর চাদরটি উঠিয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর সাথে আপনার মুনাজাত যথেষ্ট হয়েছে! তিনি অবশ্যই আপনাকে যে ওয়াদা দিয়েছে তা পূরণ করবে। তারপর আল্লাহর এ আয়াত নাযিল হয়
﴿إِذۡ تَسۡتَغِيثُونَ رَبَّكُمۡ فَٱسۡتَجَابَ لَكُمۡ أَنِّي مُمِدُّكُم بِأَلۡفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُرۡدِفِينَ[الأنفال:9]
অর্থ, আর স্মরণ কর, যখন তোমরা তোমাদের রবের নিকট ফরিয়াদ করছিলে, তখন তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন যে, নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পর পর আগমনকারী এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করছি।[34]
আল্লাহ তা‘আলা এ যুদ্ধে ফেরেশতাদের মাধ্যমে মুসলিমদের সাহায্য করেন। ([35])
তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম হুজরা থেকে এ কথা বলতে বলতে বের হন,
﴿سَيُهۡزَمُ ٱلۡجَمۡعُ وَيُوَلُّونَ ٱلدُّبُرَ [القمر:45 ]
অর্থ, সংঘবদ্ধ দলটি শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পিঠ দেখিয়ে পালাবে।[36]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম শুধু দোয়া করেই ক্ষান্ত ছিলেন না তিনি বীরত্বের সাথে কাফেরদের মোকাবেলা করেন। যেভাবে তিনি দোয়া করতে গিয়ে না ছোঁড় বান্দা ছিলেন যুদ্ধেও তার অবস্থা ছিল তাই। তার সাথে আবু বকর রা. ছিলেন, তারা উভয়ে একদিকে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটিতে সবার চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন অনুরুপভাবে তারা উভয়ে যুদ্ধের ময়দানেও ছিলেন সবার অগ্রভাগে। তারা উভয়ে যুদ্ধের ময়দানে মুসলিমদের সাহস যোগাতে থাকেন তাদের যুদ্ধের ময়দানে উৎসাহ প্রদান করতে থাকেন। তারা তাদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে স্বশরীরে যুদ্ধ করতে থাকেন।
« فعن علي بن أبي طالب قال: <لقد رأَيْتُنَا يوم بدر، ونحن نلوذ برسول اللَّه صلى الله عليه وسلم وهو أقربنا إلى العدو، وكان من أشد الناس يومئذ بأساً ([37])».
অর্থ, আলী ইবনে আবী তালেব রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, বদরের দিন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর নিকট আসতাম তখন আমরা তাকে দেখতে পেতাম সে আমাদের চেয়েও দুশমনের মোকাবেলায় অধিক অগ্রসর। আর তিনি সেদিন আমাদের মধ্য হতে সর্বাধিক আঘাত প্রাপ্ত ছিলেন।
« وعنه قال: كنا إذا حمي البأس، ولقي القومُ القومَ اتقينا برسول اللَّه صلى الله عليه وسلم فلا يكون أحدنا أدنى إلى القوم منه»
অর্থ, আলী রা. হতে আরও বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা যখন আঘাত প্রাপ্ত হতাম এবং উভয় সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলত, তখন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর নিকট আসতাম বাচার জন্য তখন আমরা দেখতে তিনি আমাদের চাইতে আরও বেশি আক্রান্ত। ([38])

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম ওহুদের যুদ্ধেও অত্যন্ত সাহসিকতা ও ধৈর্যের পরিচয় দেন। এ যুদ্ধে তার স্বজাতি লোকেরা তাকে যে কষ্ট দেয় তার উপর তিনি ধৈর্য ধারণ করেন এবং তিনি কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠিন যুদ্ধ করেন। এ যুদ্ধে প্রথমে বিজয় মুসলিমদের হাতে ছিল, মুশরিকরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। এমনকি তারা পালাতে পালাতে তাদের নারীদের নিকট পৌছে যায়। এ দিকে মুসলিম তীরান্দাজরা যখন তাদের পরাজয় দেখতে পেল তারা- মুসলিমরা- মনে করছিল, কাফেররা আর ফেরত আসবে না। তাই তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামযে স্থানের হেফাজত করার নির্দেশ দিয়েছিন তা রক্ষার করার চিন্তা বাদ দিয়ে স্থান ত্যাগ করে। তারা মনে করছিল মুশরিকরা আর ফিরে আসবে না। তাই তারা গণিমতের মালামাল একত্র করার জন্য যুদ্ধের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং পাহাড়ের পাহারা ছেড়ে দেয়। মুশরিকরা যখন দেখতে পেল, মুসলিমদের নিরাপত্তা বেষ্টনী এখন আর নাই এবং তীরান্দাজ যোদ্ধারা পাহাড় থেকে গিয়ে গণিমতের মালামাল একত্র করতে ময়দানে নেমে গেছেতাই তারা কোন প্রকার কাল ক্ষেপন না করে, ফিরে এসে মুসলিমদের ঘেরাও করে ফেলল এবং তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়ফলে এ যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের সত্তর জন সাহাবীকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করলেন। মুশরিকরা আক্রমণ করতে করতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম পর্যন্ত পৌঁছে গেল, তারা তার চেহারাকে আঘাত করল, তার চারটি দাঁত ভেঙ্গে ফেলল, তার মাথার উপর আঘাত হানল। কতক সাহাবী জীবনবাজি রেখে তার থেকে দুশমনের আঘাত প্রতিহত করল। ([39])
« من يردهم عنا وله الجنة، أو هو رفيقي في الجنة[، فتقدم رجل من الأنصار فقاتل حتى قتل، ثم رهقوه أيضاً فقال: ]من يردهم عنا وله الجنة،[ فتقدم رجل من الأنصار فقاتل حتى قتل، فلم يزل كذلك حتى قتل السبعة، فقال رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم لصاحبيه: [ما أنصفنا أصحابنا»
অর্থ, যে আমার থেকে তাদের প্রতিহত করবে তার জন্য অবশ্যই জান্নাত অথবা জান্নাতে সে আমার সাথী হয়ে থাকবে। এ কথা শোনে একজন আনছারী সাহাবী সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হন। তারপর তারা আবারো তীর নিক্ষেপ করতে থাকলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেন, যে আমার থেকে তাদের প্রতিহত করবে তার জন্য অবশ্যই জান্নাত অথবা জান্নাতে সে আমার সাথী হবেএ কথা শোনে অপর একজন আনসারী সাহাবী সামনে অগ্রসর হয়ে যুদ্ধ করতে থাকে অবশেষে সেও শহীদ হয়। তারপর তারা আবারো তীর নিক্ষেপ করতে থাকলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেন, যে আমার থেকে তাদের প্রতিহত করবে তার জন্য অবশ্যই জান্নাত অথবা জান্নাতে সে আমার সাথী হবে ([40])এ কথা শোনে একজন আনসারী সামনে অগ্রসর হয়ে যুদ্ধ করতে করতে সেও শহীদ হয়তারপর তারা আবারো তীর নিক্ষেপ করতে থাকলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেন, যে আমার থেকে তাদের প্রতিহত করবে সে অবশ্যই জান্নাতি অথবা জান্নাতে সে আমার সাথী হবেএভাবে চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সাতজন সাহাবী শহীদ হয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তার দুই সাথীকে বলল, আমাদের সাথীরা আমাদের সাথে যে কাজটি করেছে তা মোটেই ঠিক করেনি।
আর যখন মুসলিমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম কে ঘিরে একটি দুর্গে একত্র হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম উবাই ইবনে খলফ তার একটি ঘোড়ার আরোহণ অবস্থায় পাহাড়ের প্রান্তে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামকে দেখতে পেয়ে বলল, মুহাম্মাদ কোথায় ? সে যদি নাজাত পায়, তা হলে আমার কোন নাজাত নাই। তার কথা শোনে লোকেরা বলল, আমাদের কেউ তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বললেন, না তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দাও। তারপর যখন সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর আক্রমণের জন্য সামনের দিক অগ্রসর হচ্ছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম হারেস ইবনে সাম্মাহ রা. হতে একটি লাটি নিয়ে তার দিকে ছুড়ে মারল। এতেই উবাই ইবনে খলফের অবস্থা খারাব হয়ে গেল। সে যখন তার স্বজাতির নিকট ফিরে যায় তখন সে বলে আল্লাহর শপথ! আমাকে মুহাম্মদ হত্যা করে ফেলছে। তখন তারা তাকে বলল, তুমি খামাখা ভয় পাচ্ছ! আমরা তোমার মধ্যে কোন আঘাতই দেখতে পাচ্ছি না। তখন সে বলে, মুহাম্মদ মক্কা থাকা অবস্থায় একদিন আমাকে হত্যা করবে বলছিল, আল্লাহর কসম করে বলছি, সে যদি আমার দিকে একটু থু থু ও নিক্ষেপ করে আমার মৃত্যুর জন্য তাই যথেষ্ট হবে। তারপর আল্লাহ এ দুশমনটি মক্কা থেকে ফেরার পথে সারাফ নামক স্থানে মারা যায়। ([41])
« وعن سهل بن سعد أنه سُئلَ عن جرح النبي صلى الله عليه وسلم يوم أحد فقال: جُرحَ وجه النبي صلى الله عليه وسلم وكُسرَت رباعيته، وهُشِمَت البيضة على رأسه، فكانت فاطمة عليها السلام تغسل الدم، وعليٌّ يمسك، فلما رأت أن الدم لا يرتد إلا كثرة أخذت حصيراً فأحرقته حتى صار رماداً، ثم ألزقته فاستمسك الدم. »
সাহাল ইবনে সাদ রা. হতে বর্ণিত তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর আঘাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে, ওহুদের যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর চেহারা মোবারক জখম হয়, তার রুবায়ী দাঁত ভেঙে যায় এবং তার মাথায় তীর আঘাত হানে। ফাতেমা রা. তার মাথা থেকে প্রবহমান রক্ত ধুইতেছিল আর আলী রা. রক্ত বন্ধ করতে চেষ্টা করছিল; তিনি যখন দেখতে পেলেন কোনোভাবেই রক্ত বন্ধ করা যাচ্ছে না তখন সে একটি চাটাই নিয়ে তাতে আগুন জালিয়ে ছাই বানায় এবং সেগুলোকে ক্ষত স্থানে মালিশ করার পর তার রক্ত বন্ধ হয়। ([42])
এভাবেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম কে দ্বীনের জন্য কাফের মুশরিকদের পক্ষ থেকে কষ্ট, নির্যাতন ও জুলুম সইতে হয়। তারপরও তিনি তার স্বজাতির বিরুদ্ধে কোন দিন বদ-দোয়া করেননি বরং তাদের জন্য তিনি আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কারণ, তারাতো জানে না।
« فعن عبد اللَّه بن مسعود قال: كأني أنظر إلى رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم يحكي نبياً من الأنبياء ضربه قومه وهو يمسح الدم عن وجهه، ويقول: ]اللَّهم اغفر لقومي فإنهم لا يعلمون».
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসূদ রা. হতে বর্ণিত, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর দিকে তাকিয়ে থাকলে তাকে দেখি তিনি আগেকার আমলের একজন নবীর বর্ণনা দেন যে, তার গোত্রের লোকেরা তাকে মেরে রক্তাক্ত করছে, আর সে তার চেহারা হতে রক্ত মুছতেছে। [এত নির্যাতন সত্বেও সে তার জাতির বিপক্ষে কোন বদ দোয়া করেনি।] সে বলতেছে হে আল্লাহ আপনি আমার কওমের লোকদের ক্ষমা করে দেন! কারণ, তারা বুঝেনা।([43])
নবীরা তাদের উম্মতদের দা‘ওয়াত দিতে গিয়ে তাদের থেকে যেসব জুলুম নির্যাতনের স্বীকার হন তার উপর ধৈর্য ধারণ করা এবং সহনশীলতার পরিচয় দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের কোন দৃষ্টান্ত খুজে পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে সমগ্র নবীদের সরদার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি যে ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তারা শুধু ধৈর্য ধারনই করেননি, বরং তারা তাদের ক্ষমা করে দিতেন তাদের জন্য হিদায়েত ও মাগফিরাতের দোয়া করতেন। তাদের অপরাধকে এ বলে ক্ষমা করে দিতেন যে তারা জানে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলেন,
« اشتد غضب اللَّه على قوم فعلوا هذا برسول اللَّه صلى الله عليه وسلم، [وهو حينئذ يشير إلى رباعيته، ]اشتد غضب اللَّه على رجل يقتله رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم في سبيل اللَّه تعالى »
অর্থ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রুবায়ী দাতের দিকে ইশারা করে বলেন, যে জাতি তাদের নবীর সাথে এ ধরনের আচরণ করে, তাদের উপর আল্লাহর আযাব অবধারিত। আর যাকে আল্লাহর রাহে কোন নবী বা রাসূল হত্যা করে তার উপর আল্লাহর আযাব অবধারিত।([44])
ওহুদের যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আঘাত পেয়েছেন এবং জুলুম নির্যাতনের উপর যেভাবে ধৈর্য ধারণ করেছেন, আল্লাহর পথের দাঈদের জন্য তা আজীবন আদর্শ হয়ে থাকবে। যারা আল্লাহর পথে দা‘ওয়াত দিতে গিয়ে জেল জুলুম, দৈহিক নির্যাতন, দেশান্তর হওয়া এবং সর্বশেষ তাদের জীবন কেড়ে নেয়া ইত্যাদির স্বীকার হয়ে থাকে তাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হল উত্তম আদর্শ। কারণ, তাকে অনুরুপ অনেক কষ্টই দেয়া হয়েছে। আর তিনি তাতে ধৈর্য ধরেছেন।
তিন. হুনাইনের যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর হিকমত ও সাহসিকতা:
হুনাইনের যুদ্ধ ছিল মুসলিমদের জন্য একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধ। এ যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বীরত্ব ও সাহসিকতা ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর বীরত্ব ও সাহসিকতার বদৌলতে এ যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় নিশ্চিত হয়। অন্যথায় মুসলিমরা এ যুদ্ধে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ফিরে আসতে হত।
হুনাইনের যুদ্ধে মুসলিম ও কাফেরদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ আরম্ভ হলে মুসলিমরা প্রথম অবস্থায় পিছু হটে পড়ে এবং দুর্বল ও কতক নতুন ইসলাম গ্রহণকারী কিছু নও মুসলিম পলায়ন করতে শুরু করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম ঐ মুহূর্তে কোন প্রকার ভয় না করে তিনি তার গাধাটিকে নিয়ে কাফেরদের মোকাবেলায় সামনের দিক অগ্রসর হতে থাকে। তারপর তিনি তার চাচা আব্বাসকে বলেন,
 « أي عباس، ناد أصحاب السمرة[ فقال عباس: - وكان رجلاً صيتاً فقلت بأعلى صوتي: أين أصحاب السمرة؟ قال: فواللَّه لكأن عَطْفَتهم حين سمعوا صوتي عَطْفَة البقر على أولادها، فقالوا: يا لبيك، يا لبيك، قال: فاقتتلوا والكفار... فنظر رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم وهو على بغلته كالمتطاول عليها إلى قتالهم، فقال صلى الله عليه وسلم: [الآن حمي الوطيس» ([45]).
হে আব্বাস! তুমি সামুরাবাসীদের উচ্চ স্বরে ডাক দাও! আব্বাস রা. ঐ যুগে সবচেয়ে অধিক কন্ঠস্বরী ছিলেন। আবব্বাস রা. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর নির্দেশ মোতাবেক উচ্চ আওয়াজে বললাম, হে আসহাবে সামুরা! তোমরা কোথায়? আব্বাস রা. বলেন, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমার আওয়াজ শোনার পর গরুর বাছুর যেমন দড়ি ছেড়ে দিলে তার মায়ের নিকট দৌড়ে আসে ঠিক অনুরূপ يا لبيك، يا لبيك বলে সমগ্র সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম দিকে দৌড়ে আসে। তারপর তারা কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম তার স্বীয় গাধায় আরোহণ অবস্থায় একজন বীর পুরুষের মত তাদের যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বললেন,الآن حمي الوطيس হুনাইনের যুদ্ধের নাজুক পরিস্থিতিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম যে সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এর দৃষ্টান্ত বিরল। আজ পর্যন্ত এ ধরনের বীরত্ব ও সাহসিকতা কোন সেনাপতি, নেতা ও বীর বাহাদুর দেখাতে পারেনি।[46]
বারা ইবনে আযেব রা. কে এক লোক জিজ্ঞাসা করে বলল, হে আবু উমারা তুমি হুনাইনের যুদ্ধের দিন পলায়ন করেছিলে? উত্তরে তিনি বলেন, না, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি! আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম সেদিন পিছু হটেননি এবং কোন মুসলিম সেদিন পলায়ন করেননি। তবে যুবক ও তাড়াহুড়াকারী কিছু মুসলিম তাদের নিকট কোন অস্র না থাকাতে বা অস্রের পরিমাণ কম হওয়াতে তারা কিছুটা পিছু হটে। তারপর তারা একটি তীরন্দাজ সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে মোকাবেলা করে, তারা তাদের তীর নিক্ষেপ করতে থাকলে অবস্থা এমন দাঁড়ালো তাদের তীর যেন নিশানা ভুল করছিল না। পরে তাদের নিকট অবস্থা প্রকাশ পেলে, সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর নিকট এসে জড়ো হয়ে থাকেতখন আবু সুফিয়ান ইবনুল হারেস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর গাধার রশি টেনে ধরে থাকে, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলতে থাকে










অর্থ, আমি সত্যিকার নবী তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই। আমি আব্দুল মুত্তালিবের উত্তরসূরি। হে আল্লাহ ! তুমি তোমার সাহায্য নাযিল কর।[47]
« وفي رواية لمسلم عن سلمة قال: مررت على رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم منهزماً، وهو على بغلته الشهباء، فقال رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم: [لقد رأى ابن الأكوع فزعاً[. فلما غشوا رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم نزل عن البغلة، ثم قبض قبضة من تراب من الأرض، ثم استقبل به وجوههم، فقال: [شاهت الوجوه[، فما خلق اللَّه منهم إنساناً إلا ملأ عينيه تراباً بتلك القبضة، فولوا مدبرين، فهزمهم اللَّه ، وقسم رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم غنائمهم بين المسلمين. »
অর্থ, মুসলিম শরীফে সালমা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম কে পরাভূত অবস্থায় অতিক্রম করি। তখন তিনি তার ‘শাহবাহ‘ গাধাটির উপর ছিল। আমাকে দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলল, আজ ইবনুল আকওয়া ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছে। তারপর যখন সাহাবীরা তাকে ঘেরাও করে ফেলল, তখন তিনি তার গাধা থেকে নেমে জমিন থেকে এক মুষ্টি মাটি নিলো। তারপর তা কাফেরদের দিকে নিক্ষেপ করে বলে, তোমাদের চেহারা আক্রান্ত হোক। তারপর আল্লাহ এমন কোন চেহারা সৃষ্টি করেননি যার চেহারা মাটির কারণে আক্রান্ত হয়নি। তারপর কাফেররা গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পরাজিত হয়ে পলায়ন করল। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মুসলিমদের মধ্যে গণিমতের মালামাল বণ্টন করেন। ([48])
ওলামাগণ বলেন, যুদ্ধের ময়দানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের গাধার উপর আরোহণ করা ছিল তার বীরত্ব ও সাহসিকতার বহি:প্রকাশ। এ ছাড়াও তিনি ঐ সময় মানুষের জন্য আশ্রয়স্থল ছিলেন। যার কারণে সবাই দৌড়ে তার দিকেই ছুটে আসে। তার সাহসিকতা ও বীরত্বের আরও প্রমাণ হল, তিনি এ নাজুক পরিস্থিতিতে দুশমনদের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। অথচ তখন লোকেরা তাকে ছেড়ে পলায়ন করতেছিল। আর যখন তারা তাকে বেষ্টন করে ফেলল, তখন তিনি তার আরোহণ থেকে নেমে আসা তার অধিক সাহসিকতারই দৃষ্টান্তকেউ কেউ বলেন, তিনি তখন জমিনে নেমে আসে যে মুসলিম জমিনে ছিল তাদের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করার জন্য ছিল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম প্রতিটি ক্ষেত্রে যে সাহসিকতা ও বীরত্বের প্রমাণ রেখেছেন; ইতিহাসে এর আর কোন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া কঠিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সাহাবীরা তার বীরত্বের বিভিন্ন বর্ণনা তুলে ধরেন।[49]


[1]আল বিদায়া নেহায়া: ২১৪/৩, সীরাতে ইবনে হিশাম: ১১৪/২, যাদুল মায়াদ ১৫৩/২, রাহীকুল মাখতুম ১৭১, হাযাল হাবীবু ইয়া মুহিব্ব: ১৭৪ তারিখে ইসলামী মাহমুদ শাকের ৬২/৩, বুখারি ৪২৮, মুসলিম কিতাবুল মাসাজেদ, পরিচ্ছেদ: মসিজদ নির্মাণ প্রসঙ্গ হাদীস নং ৫২৪
([2]) দেখুন: বুখারি ,কিতাবু মানাকিবিল আনছার পরিচ্ছেদ: রাসূল সা. ও তার সাহাবীদের হিজরত , হাদিস নং ৩৯০৬, ২৪০, ২৩৯/৭
([3]) দেখুন: মাহমুদ শাকেরের তারিখুল ইসলাম ১৬২/২, রাহীকুল মাখতুম, ১৭৯
([4]) দেখুন: সীরাতে নববীয়াহ শিক্ষা ও উপদেশ পৃ: ৭৪, ফিকহুসসীরাহ ১৮৯, হাযাল হাবীবু ইয়া মুহিব্ব: ১৮০
([5]) বুখারি, কিতাব নবীদের বর্ণনা হাদীস নং ৩৯১১, এবং মানাকিবুল আনসার হাদীস- ৩৯১১, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২১০/৩
([6])আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ; ২১৪/৩, সীরাতে ইবনে হিশাম: ১১৪/২, যাদুল মায়াদ ১৫৩/২, রাহীকুল মাখতুম ১৭৫, হাযাল হাবীবু ইয়া মুহিব্ব: ১৭৫, মাহমুদ শাকেরের তারিখে ইসলামী ১৭৩/২ইমাম গাজালির ফিকহুস-সীরাহ পৃ: ১৯৮।
([7]) দেখুন: আবু বকর আল জাযায়েরির হাযাল হাবীব ইয়া মুহিব্ব পৃ: ১৭৮ ।
([8]) সুরা আনফাল: আয়াত: ৭৫
([9]) বুখারি, কিতাবু মানাকিবিল আনসার পরিচ্ছেদ: মুহাজির ও আনসারিদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন বিষয়, হাদীস নং ৩৭৮০, ৩৭৮১
([10]) আর রাহীকুল মাখতুম ১৭৯, ২০৮,১৮১ মাহমুদ শাকের এর তারিখে ইসলামী ১৬৫/২।
([11]) তিরমিযি, কিতাব কিয়ামতের বর্ণনা ২৪৮৫ ইমাম তিরমিযি হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। আর ইবনে মাযা কিতাবুল আতয়েমাহ পরিচ্ছেদ: হাদীস নং ১০৮৩/২, ৩২৫১, দারামী ১৫৬/১ এবং আহমদ ১৬৫/১।
([12]) মুসলিম কিতাবুল ঈমান পরিচ্ছেদ: প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয়া বিষয়ে, হাদীস নং ৪৬
([13]) বুখারি কিতাবুল ঈমান পরিচ্ছেদ: কোন ইসলাম উত্তম? ৫৪/১ মুসলিম কিতাবুল ঈমান পরিচ্ছেদ: بيان تفاضل الإسلام وأي الأمور أفضل হাদীস নং ৪১
([14]) বুখারি কিতাবুল ঈমান পরিচ্ছেদ: নিজের জন্য যা ভালো বাসে অপরের জন্য তা ভালো বাসা বিষয়ে হাদীস নং ১৩, ৫৬/১, মুসলিম কিতাবুল ঈমান: باب الدليل على أن من خصال الإيمان أن يحب لأخيه ما يحب لنفسه، ৬৭/১
([15]) বুখারি, কিতাবুস সালাত পরিচ্ছেদ মসজিদে আঙ্গুল ফুটানো বিষয়ে ৪৮১ মুসলিম কিতাবুল বির ওয়াস সিলাহ পরিচ্ছেদ: মুমিনদের পরস্পর ভালোবাসা, সহযোগিতা করা ও দয়া করা ২৫৮৫
([16])মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াস সিলাহ পরিচ্ছেদ: কোন মুসলিমের উপর জুলুম করা, তাকে অপমান করা, তাকে ছোট করে দেখা এবং কোন মুসলিমের জান মাল ও ইজ্জত সম্মান হনন করা হারাম হওয়া বিষয়ে; হাদীস ২৫৬৪
([17]) বুখারি, কিতাবুল আদব পরিচ্ছেদ ছেড়ে দেয়া ও রাসূল সা. এর বাণী لا يحل لرجل أن يهجر أخاه فوق ثلاث بلا عذر شرعي، অর্থাৎ শরয়ী কোন ওজর ব্যতিত কোন লোকের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক না রাখা হারাম হওয়া প্রসঙ্গে ২৫৬০
([18]) বুখারি ৫৬/১ মুসলিম ২৫৬৫, ১৯৮৭/৪
([19]) মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াস সিলাহ পরিচ্ছেদ: হিংস বিদ্বেষ ও সম্পর্কচ্ছেদ করা নিষেধ হওয়া প্রসংঙ্গে ক১৯৮৭/৪, ৩৬/২৫৬৫।
([20]) বুখারি, কিতাবুল মাজালেম পরিচ্ছেদ: তোমার ভাই জালেম ও মাজলুকে সাহায্য কর। হাদীস নং ২৪৪৪, ২৪৪১, কিতাবুল ইকরাহ হাদীস ৬৯৫২, মুসলিম তোমার ভাই জালেম ও মজলুম কে সাহায্য কর হাদীস নং ২৫৮৫
([21]) বুখারি, কিতাবুল জানায়েয, পরিচ্ছে: জানাযায় অংশগ্রহণ করার নির্দেশ প্রসঙ্গে হাদীস নং ১২৪০ মুসলিম, কিতাবুস সালাম পরিচ্ছেদ এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের হক হল, সালামের উত্তর দেয়া বিষয় হাদীস নয ১৭০৫/৪
([22]) বুখারি কিতাবুল জানায়েয, পরিচ্ছে: জানাযায় অংশগ্রহণ করার নির্দেশ প্রসঙ্গে হাদীস নং ১২৩৯, ১১২/৩,৯৯/৫
([23]) মুসলিম, কিতাবুল ঈমান পরিচ্ছেদ: জান্নাতে শুধু মুমিনরাই প্রবেশ করবে বিষয়ে ৭৪/১ হাদীস নং ৫৪
([24]) বুখারি, কিতাবুল ঈমান পরিচ্ছেদ খানা খাওয়ানো ইসলাম হওয়া বিষয়ে ৫৫/১,১২ মুসলিম কিতাবুল ঈমান ৩৯
([25]) বুখারি: কিতাবুল আদব পরিচ্ছেদ: মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তুর উপর দয়া করা বিষয়ে ৪৩৮/১০, ৬০১১ ৫৫/১, ১২ মুসলিম কিতাবুল বির ওয়াসসিলাহ পরিচ্ছেদ মুমিনদের প্রতি দয়া ও নমনীয়তা বিষয়ে ২০০০/৪, ২৫৮৬
([26]) বুখারি, কিতাবুল আদব পরিচ্ছেদ: মানুষের প্রতি দয়া ও নমনীয়তা বিষয়ে ৪৩৮/১০, ৬০১৩ মুসলিম, কিতাবুল ফাযায়েল باب رحمته الصبيان والعيال وتواضعه وفضل ذلك، হাদীস নং ২৩১৯
([27]) মুসলিম ১৮০৯/৪, ২৩১৯
([28]) বুখারি, কিতাবুল ঈমান পরিচ্ছেদ: خوف المؤمن من أن يحبط عمله وهو لا يشعر হাদীস ৪৮ মুসলিম কিতাবুল ঈমান পরিচ্ছেদ রাসূল সা এর বাণী ((سباب المسلم فسوق وقتاله كفر)) হাদীস ৬৪।
([29]) দেখুন: রাহীকুল মাখতুম ১৮৩।
([30]) আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ ২২৪-২২৬/২, যাদুল মায়াদ ৬৫/৩, সীরাতে ইবনে হিশাম ১২৩-১১৯/২
([31]) আর রাহীকুল মাখতুম ১৭৮, ১৭১,১৮৫ হাযাল হাবীবু ইয়া মুহিব্ব: ১৭৪, ১৭৬ তারিখে ইসলামী ১৭৩/২ তারিখে ইসলামী ১৬৬/২
([32]) বুখারি ,কিতাবুল মাগাযি:৩৯৪৯, মুসলিম কিতাবুল জিহাদ ওয়াসসিয়ার: ১২৫৪, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২৪১/৩, যাদুল মা‘য়াদ ৫/৩
([33])আল বিদায়া নেহায়া: ২১৪/৩, সীরাতে ইবনে হিশাম: ২৫৩/২, যাদুল মায়াদ ১৭৩/২, রাহীকুল মাখতুম ২০০, হাযাল হাবীবু ইয়া মুহিব্ব: ১৭৫ তারিখে ইসলামী ১৯৪/২
([34]) সূরা আনফাল আয়াত: ৯
([35]) বুখারি ৩৯৫২ মুসলিম কিতাবুল জিহাদ ১৭৬৩, রাহিকুল মাখতুম ২০৮
([36]) সুরাতুল কামার আয়াত ৪৫ বুখারি হাদীস নং ৩৯৫৩
([37]) আহমাদ ৮৬/১ হাকিম ১৪৩/২
([38]) হাকিম ১৪৩/২, বিদায়া নিহায়াতে ২৭৯/২ আল্লামা ইবনে কাসীর নাসায়ীর দিক নিসবত করেন
([39]) দেখুন: যাদুল মা`য়াদ ১৯৬/৩, রাহীকুল মাখতুম ২৫৫।
([40]) মুসলিম কিতাবুল জিহাদ হাদীস নং ১৭৮৯
([41]) বিদায়া নেহায়া: ৩২/৪, , যাদুল মায়াদ ১৯৯/৩, রাহীকুল মাখতুম ২৬৩, তাবারী ৬৭/২ ফিকহুস সীরাহ ২২৬
([42]) বুখারি, কিতাবুল জিহাদ ২৯১১ মুসলিম কিতাবুল জিহাদ ১৭৯০।
([43]) বুখারি, কিতাবুল আম্বিয়া হাদিস নং ৩৪৭৭, মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ হাদীস নং ১৭৯২
([44]) বুখারি, কিতাবুল মাগাযি, হাদীস নং ৪০৭৩, মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ ১৭৩৯
([45]) মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ ১৭৭৫।
[46] দেখুন:আর রাহিকুল মাখতুম ৪০১, হাযাল হাবীবু ইয়া মুহিব্ব ৪০৮
([47]) মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ ১৭৭৬, বুখারি, কিতাবুল জিহাদ ২৯৩০।
([48]) মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ ১৭৭৭।
[49] দেখুন : নববীর শরহে মুসলিম ১১৪/১২।

No comments:

Post a Comment