দর্শক সংখ্যা

Friday, March 22, 2013

আল্লাহর দিকে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাওয়াতের বাস্তব কিছু নমুনা-১



সাঈদ বিন আলী বিন ওহাফ আল-কাহতানী
প্রথম অধ্যায়:
হিজরতের পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াতি কার্যক্রম
প্রথম অধ্যায়কে কয়েকটি পরিচ্ছেদে ভাগ করা হয়েছে
প্রথম পরিচ্ছেদ:
গোপনে দাওয়াত দেওয়ার সময়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাওয়াতি কার্যক্রম:
 এ কথা অজানা নয় যে, মক্কা ছিল, আরবদের ধর্ম পালনের প্রাণ কেন্দ্র ও উপযোগী ভূমি। এখানে ছিল আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবার অবস্থান। আরবের সমগ্র মূর্তিপূজক ও পৌত্তলিকদের আবাসভূমি ও যাবতীয় কর্মের ঘাটিও ছিল, এ মক্কা নগরী। এ কথা আমাদের সবারই মনে রাখতে হবে, পাহাড় আর মরুভূমিতে ঘেরা পবিত্র এ মক্কা নগরীতে আল্লাহর দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয়ার মিশনটিকে তার মনজিলে মকসুদে পৌঁছানো, ততটা সহজ ছিল না। বরং বলতে গেলে এটা ছিল অনেকটাই দুর্বোধ্য ও দু:সাধ্য। একজন সাধারণ মানবের দ্বারা এ অসাধ্য কাজকে সাধ্য করা এবং সফলতায় পৌঁছানো কোন ক্রমেই সম্ভব ছিল না। যদি দাওয়াতের জন্য নির্বাচিত ভূমি মক্কা না হয়ে অন্য কোন ভূমি হত, বা তা মক্কা থেকে অনেক দূরে হত, তাহলে এতটা কষ্টকর হয়তো হত না। এ কারণেই বলা বাহুল্য, এ অনুপযোগী ও অনুর্বর ভূমিতে দাওয়াতি কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন ছিল, এমন একজন মহা মানবের, যার দৃঢ়ত, আত্মপ্রত্যয় ও অবিচলতা হবে বিশ্বসেরা; যাতে কোন ধরনের বিপদ-আপদ ও মুসিবত তাকে ও তার দাওয়াতের মিশনটিকে কোন-রকম দুর্বল করতে না পারে। আরও প্রয়োজন ছিল, এমন সব হিকমত ও কৌশল অবলম্বন করা, যেসব বুদ্ধিমত্তা, হিকমত ও কৌশল দিয়ে, সে তার বিরুদ্ধে গৃহীত যাবতীয় ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে পারে এবং সব ধরনের বাধা বিঘ্ন দূর করে দাওয়াতের মিশনটিকে সফলতার ধার প্রান্তে পৌছাতে পারে। নি:সন্দেহে বলা যায়, অনুগ্রহ ও দয়া মহান আল্লাহরই যিনি হলেন, আহাকামুল হাকেমীন; তিনি যাকে চান হিকমত দান করেন, যাকে চান না তাকে হিকমত দান করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يُؤۡتِي ٱلۡحِكۡمَةَ مَن يَشَآءُۚ وَمَن يُؤۡتَ ٱلۡحِكۡمَةَ فَقَدۡ أُوتِيَ خَيۡرٗا كَثِيرٗاۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّآ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ [البقرة: 269]
অর্থ, তিনি যাকে চান প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে প্রজ্ঞা দেয়া হয়, তাকে অনেক কল্যাণ দেয়া হয়। আর বিবেক সম্পন্নগণই উপদেশ গ্রহণ করে[1]
আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রিসালাতের দায়িত্ব দেয়ার মাধ্যমে হিকমত ও জ্ঞান দান করেছেন, ভালো কাজের তাওফিক দিয়েছেন এবং আল্লাহ তাকে তার যাবতীয় কর্মে সাহায্য করেছেন।
এ কারণে, আল্লাহর পক্ষ হতে যখন তার স্বজাতিদের ইসলামের দাওয়াত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়, তখন তিনি তাদের দাওয়াত দেয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল ও হিকমত অবলম্বন করেন। তিন প্রথমেই সবাইকে ডেকে একত্র করে ইসলামের দাওয়াত দেয়া শুরু করেননি। প্রথমে দু একজনকে গোপনে গোপনে ইসলামের দাওয়াত দিতে আরম্ভ করেন; তারা যে সব শিরক, কুফর ও ফিতনা-ফ্যাসাদে নিমগ্ন, তার পরিণতি সম্পর্কে তাদের সতর্ক ও ভয় পদর্শন করেন। শুরুতেই তাদের যাবতীয় অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা আরম্ভ করেননি বরং প্রথমে তিনি তাদের তাওহীদের দাওয়াত দেয়া আরম্ভ করেন। তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেয়ার মাধ্যমেই তিনি তার মিশনটি আরম্ভ করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُدَّثِّرُ ١ قُمۡ فَأَنذِرۡ ٢ وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ ٣ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ ٤ وَٱلرُّجۡزَ فَٱهۡجُرۡ ٥ وَلَا تَمۡنُن تَسۡتَكۡثِرُ ٦ وَلِرَبِّكَ فَٱصۡبِرۡ ٧ [المدثر: 1-7]
হে বস্ত্রাবৃত! উঠ অত:পর সতর্ক কর। আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। আর তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র কর। আর অপবিত্রতা বর্জন কর। আর অধিক পাওয়ার আশায় দান করো না। আর তোমার রবের জন্যই ধৈর্যধারণ কর[2]

এখান থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের পক্ষ থেকে যে নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, তার সমাধানের লক্ষে হিকমত ও কৌশলের পথ চলা আরম্ভ করেন। তিনি এমন এক বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের পরিচয় দেন, যা এ যাবত-কাল পর্যন্ত দুনিয়াতে যত বড় বড় জ্ঞানীদের আবির্ভাব হয়েছে, তাদের সকলের জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তাকে হার মানিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, বরং সমগ্র মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি এ যায়গায় এসে অক্ষম হয়ে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে তার সবচেয়ে কাছের লোক ও আত্মীয় স্বজনদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন। পরিবার- পরিজন, বন্ধু-বান্ধব এবং যাদের তিনি ভালো বলে জানতেন এবং তারাও তাকে ভালো জানত, তাদের দিয়েই তিনি তার দাওয়াতের কাজ শুরু করেন। এছাড়াও যাদের মধ্যে সততা, ন্যায়-পরায়ণতা, কল্যাণ ও সংশোধন হওয়ার মত যোগ্যতা ও গুণাগুণ লক্ষ্য করতেন, তাদের তিনি তার দাওয়াতের আওতায় নিয়ে আসতেন এবং তাদের ইসলামের দাওয়াত দিতেন। এভাবে অত্যন্ত সংগোপনে ও অত্যধিক বুদ্ধিমত্তা ও সাবধানতার সাথে তিনি দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। তার প্রাণপণ চেষ্টার ফসল হিসেবে দেখা গেল, অতি অল্প সময়ে তাদের মধ্য হতে একটি ক্ষুদ্র জামাত ইসলামের ডাকে সাড়া দিল এবং তারা ইসলাম গ্রহণ করল। ইসলামের ইতিহাসে এদের সাবেকীনে আওয়ালীন বলা হয়ে থাকে। নারীদের মধ্যে সর্ব প্রথম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী খাদিজা বিনতে খুয়াইলদ রা. ইসলাম গ্রহণ করেন। আর পুরুষদের মধ্যে আলী ইবনে আবু তালিব রা. তারপর তার গোলাম যায়েদ ইবনে হারেসা রা. তারপর আবু বকর সিদ্দিক রা. প্রমুখ ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হন। আবু বকর সিদ্দিক রা. নিজে ইসলাম গ্রহণ করার পর, নিজ উদ্যোগে আরও কতককে ইসলামের দাওয়াত দেন, তার দাওয়াতের ফলে এমন কিছু লোক ইসলাম গ্রহণ করে, যাদের অবদান ও ভূমিকা ইসলামের ইতিহাসে কিয়ামত অবধি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আর এসব মহা মনীষীরা হল, ওসমান ইবনে আফ্ফান রা. যুবাইর ইবনুল আওয়াম রা. আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রা. সায়াদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. ও তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ। এরা সবাই আবু বকর সিদ্দিক রা. এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করে। আলী রা., যায়েদ ইবনে হারেসা ও আবু বকর রা. সহ মোট আটজন ছাহাবী, যারা হলেন ইসলামের অগ্রপথিক ও প্রথম অতন্দ্র প্রহরী। এরা তারাই যারা সমস্ত মানুষের পূর্বে ইসলামের সুশীতল পতাকা তলে সমবেত হয়। সারা দুনিয়ার সমগ্র মানুষের বিরোধিতা স্বত্বেও তার কোন প্রকার পরোয়া না করে আল্লাহর নবীর আনিত দ্বীনের দাওয়াতে সাড়া দেন। তাদের ইসলাম গ্রহণের পর আরব জাহানে ঈমানের আলোড়ন সৃষ্টি হয়, এক এক করে মানুষ ইসলামে প্রবেশ করতে আরম্ভ করে এবং ঈমানের পতাকা তলে তারা সমবেত হতে থাকে। রাসূল ও তার সঙ্গীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও বিরামহীন দাওয়াতের ফলে ধীরে ধীরে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগল এবং মক্কায় ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ল। সমগ্র মক্কায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়া ও আল্লাহর তাওহীদের বিষয়টি তাদের আলোচনার প্রথম শিরোনামে পরিণত হল। একমাত্র দাওয়াতের আলোচনা ছাড়া আর কোন আলোচনা তাদের মধ্যে স্থান পেল না। এভাবেই দাওয়াতের প্রসার ঘটে এবং মুসলিমদের সংখ্যা দিন দিন আরও বাড়তে থাকে। যারা ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিয়ে গোপনে বৈঠক করতেন, গোপনে তাদের তালীম- তরবিয়ত ও গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিতেন; যাতে তারা আল্লাহর দ্বীনের মহান গুরু দায়িত্ব পালনে সক্ষম একটি জামাতে পরিণত হয় এবং কোন প্রকার জুলুম নির্যাতন তাদের মনোবলকে দুর্বল করতে না পারে।
মোট কথা, দাওয়াতের কাজটি ছিল তখনো ব্যক্তি পর্যায়ে ও গোপনে; প্রকাশ্যে দাওয়াত দেয়ার পরিবেশ তখনো তৈরি হয়নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের মাঝে এখনো প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিতে আরম্ভ করেননি। তিনি তার দাওয়াতের কাজটি গোপনে চালিয়ে যেতেন এবং যারা ইসলাম গ্রহণ করে তারা তাদের ইবাদত বন্দেগী ও ইসলামের বিধানাবলী গোপনে পালন করত। ইসলামের প্রথম যুগে কুরাইশদের ভয়ে মুসলিমরা ইসলামকে প্রকাশ করা ও প্রকাশ্যে ইবাদত বন্দেগী করার সাহস পেত না; ফলে তারা গোপনে ইবাদত বন্দেগী করত।[3]
এ ভাবে দাওয়াতের কাজ চলতে থাকলে ধীরে ধীরে মুসলিমদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে লাগল এবং ক্রমপর্যায়ে মুসলিমদের সংখ্যা চল্লিশে উন্নীত হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের মাঝে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিতে আরম্ভ করেননি। তিনি গোপনেই তাদের দাওয়াত দিতে থাকেন। কারণ, বিজ্ঞ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা ভালো ভাবেই জানতেন, মুসলিমদের এ ক্ষুদ্র জামাত কুরাইশদের তুলনায় এখনো নগণ্য। এ ক্ষুদ্র জামাতকে কুরাইশদের পক্ষ থেকে যে সব বাধা-বিপত্তি, জুলম নির্যাতন ও প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হবে, তা প্রতিহত করা সম্ভব হবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দাওয়াতে সাড়া দেয়া মুসলিমদের নিয়ে তাদের দিক নির্দেশনা ও তালীম দেয়ার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করেন। এ জন্য তিনি তাদের নিয়ে একত্রে এক জায়গায় বসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন; যাতে তাওহীদের ডাকে সাড়া দানকারী ঈমানদারদের মধ্যে পারস্পরিক সু-সম্পর্ক তৈরি হয় এবং তাদের মাধ্যমে আরও যারা তাওহীদের বাহিরে আছে, তাদের নিকট তাওহীদের দাওয়াত পৌঁছে যায়। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি নিরাপদ স্থান খুঁজতে থাকেনসর্বশেষ তিনি এর জন্য সৌভাগ্যবান সাহাবী আবী আরকাম আল মাখযুমীর ঘরকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে মুসলিমদের একই পরিবারের সদস্যদের মত করে একত্র করেন এবং এ ঘরের মধ্যে বসেই তিনি তাদের দ্বীন শেখান, তালীম-তরবিয়ত দেন এবং জীবন যাপনের যাবতীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেনআপাতত এ ঘরকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের প্রধান কার্যালয় হিসেবে নির্ধারণ করেন। তবে এর পাশাপাশি আরও কিছু শাখা কার্যালয় ছিল, যে গুলোতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝে মাঝে গিয়ে সমবেত লোকদের তালীম দিতেন অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার ঘরকে পছন্দ করতেন, সেখানে গিয়ে লোকজনদের একত্র করে তাদের তালীম দিতেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও যাদের ঘরকে পছন্দ করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হল, সাঈদ ইবনে যায়েদ রা.। তবে দাওয়াতের শুরু লগ্নে যখন মুসলিমরা দুর্বল ও সংখ্যালঘু ছিল; তারা তাদের ঈমান প্রকাশ করার কোন ক্ষমতা রাখত না এবং গোপনে গোপনে তারা ইবাদত বন্দেগী করত এবং মানুষদের ইসলামের দিকে আহ্বান করতেন; তখন দারে আরকামই ছিল ইসলাম ও মুসলিমদের প্রথম প্রাণ কেন্দ্র ও সুদৃঢ় দুর্গ। এখান থেকে ইসলামের দাওয়াত পরিচালিত হত। একটি কথা মনে রাখতে হবে, তখন ইসলামের দাওয়াত ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছিল।[4]
 এভাবে তিন বছর পর্যন্ত ইসলামের দাওয়াত অত্যন্ত সংগোপন ও ব্যক্তি পর্যায়ে একেবারেই সীমিত আকারে চলছিল। ইসলামের দাওয়াতকে প্রকাশ করার কোন সুযোগ মুসলিমদের ছিল না। লোক চক্ষুর অন্তরালে ও অতি সংগোপনে পরিচালিত দাওয়াতের কাজ ধীরে ধীরে গতি-লাভ করে এবং মুসলিমরা একটা জামাতে পরিণত হয়। ইসলামের মত নেয়ামতের ফলে মুসলিমরা পরস্পর ভাই ভাই পরিণত হয়, তারা একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে এবং তারা একে অপরকে ইসলামের সুশীতল ছায়া তলে সমবেত হওয়ার দাওয়াত দেয়।
তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচা হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিবা রা. ও আরও কতক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ যেমন, ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. ইসলাম গ্রহণ করে। তাদের ইসলাম গ্রহণের ফলে মুসলিম জামাত অনেকটা শক্তিশালী হয় এবং তাদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়। তারপর আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন,
﴿فَٱصۡدَعۡ بِمَا تُؤۡمَرُ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٩٤ إِنَّا كَفَيۡنَٰكَ ٱلۡمُسۡتَهۡزِءِينَ ٩٥ ٱلَّذِينَ يَجۡعَلُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَۚ فَسَوۡفَ يَعۡلَمُونَ ٩٦ [الحجر: 94- 96]
অর্থ, যে আদেশ দেয়া হয়েছে, তা ব্যাপকভাবে প্রচার কর এবং মুশরিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও নিশ্চয় আমি তোমার জন্য উপহাসকারীদেরে বিপক্ষে যথেষ্ট যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ নির্ধারণ করেঅতএব তারা অচিরেই জানতে পারবে[5]
এতে এ কথা স্পষ্ট হয়, আল্লাহ তা‘আলা তার নবীকে প্রজ্ঞা ও হিকমতে পরিপূর্ণতা দান করেই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াতের ক্ষেত্রে যে উন্নত পদ্ধতি, হিকমত ও অভিজ্ঞতার সাক্ষর রাখেন, আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী একজন দা‘ঈর জন্য তা কিয়ামত পর্যন্ত অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবে। আর যে আহ্বানকারী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাওয়াতের পদ্ধতি ও হিকমত অবলম্বন করবে প্রকৃত পক্ষে সেই আল্লাহর রাসূলের অনুসৃত পথের অনুকরণকারী বলে গণ্য হবে। বিশেষ করে পৌত্তলিক কাফেরদের দাওয়াতের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শের বাইরে যাওয়ার কোন অবকাশ নাই। কারণ, এ ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উন্নত আদর্শ ও হিকমতের অনুকরণ করতে হবে। তবে বর্তমানে কোন মুসলিম দেশে ইসলামের দাওয়াতকে গোপনে দেয়ার কোন অবকাশ নাই। কারণ, এখন ইসলামের দাওয়াত সারা দুনিয়ার আনাচে কানাচে পৌঁছে গেছে; ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেনি এমন দুর্গম এলাকা বর্তমান দুনিয়াতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রথম যুগে গোপনে দাওয়াত দেন; কারণ, তখন ইসলামের দাওয়াত ছিল অংকুর সমতুল্য। যারা ইসলাম গ্রহণ করে তারা তাদের ইসলাম প্রকাশ করার মত কোন পরিবেশ ছিল না। অবস্থা এমন ছিল যে, ইসলামের প্রথম যুগে রাসূল ও তার সাথী-সঙ্গীরা প্রকাশ্যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই) কথাটি বলতে পারত না, প্রকাশ্যে আযান দিতে ও সালাত আদায় করতে পারত না। তারপর যখন মুসলিমদের শক্তি, সামর্থ্য ও সাহস বৃদ্ধি পেল, আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূলকে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার আদেশ দেন। চেল্লাহর আদেশ পেয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিতে আরম্ভ করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে মুসলিমদের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। কিন্তু মুসলিমদের বৃদ্ধি পাওয়া কাফেরদের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়াল। কাফেররা মুসলিমদের কোনক্রমেই সহ্য করতে পারল না। তাই কাফেরদের পক্ষ হতে মুসলিমদের এমন নির্মম ও অমানবিক অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হল, যার ইতিহাস আমাদের কারো অজানা নয়।[6]
দ্বিতীয় পরিচ্ছদ:
মক্কায় প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত:
প্রথমে আল্লাহ তা‘আলা তার নবীকে নিকটাত্মীয়দের ইসলামের দাওয়াত দিতে নির্দেশ দেন। নিকটাত্মীয়দের মধ্যে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেয়া আরম্ভ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَنذِرۡ عَشِيرَتَكَ ٱلۡأَقۡرَبِينَ ٢١٤ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥ فَإِنۡ عَصَوۡكَ فَقُلۡ إِنِّي بَرِيٓءٞ مِّمَّا تَعۡمَلُونَ [الشعراء:214-216]
আর তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক কর। আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তুমি তোমার বাহুকে অবনত কর
তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত[7]
আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মধ্যে প্রকাশ্যে দাওয়াত দেয়ার সূচনা করেন। প্রথমে তিনি তার সগোত্রের লোকদের দাওয়াত দিতে আরম্ভ করেন। এ ক্ষেত্রেও তিনি যথেষ্ট প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন, যার ফলে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের মধ্যে দ্রুত ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দেন এবং প্রসার ঘটান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সবর, ইখলাস ও সাহসের ফলে তার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা শিরকের মূলোৎপাটন ঘটায়। কিয়ামত পর্যন্ত মুশরিকদের অপমানিত ও অপদস্থ জাতি হিসেবে চিহ্নিত করেন।
প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব হিকমত অবলম্বন করেছিলেন তা ছিল নিম্ন রূপ:
এক:
সাফা পাহাড়ের উপর আরোহণ করে সমগ্র লোকদের একত্র করে আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দেয়া। এ বিষয়ে হাদিসে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে একটি ঘটনা বর্ণিত,
عن ابن عبا س قال: لما نزلت ﴿وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الأَقْرَبِينَ﴾ صعد النبي صلى الله عليه وسلم على الصفا فجعل ينادي: ((يا بني فهر، يا بني عدي)) لبطون قريش حتى اجتمعوا، فجعل الرجل إذا لم يستطع أن يخرج أرسل رسولاً لينظر ما هو، فجاء أبو لهب، وقريش، فقال: ((أرأيتكم لو أخبرتكم أن خيلاً بالوادي تريد أن تغير عليكم، أكنتم مصدقي))؟ قالوا: نعم، ما جربنا عليك إلا صدقاً. قال: ((فإني نذير لكم بين يدي عذاب شديد)). فقال أبو لهب: تبًّا لك سائر اليوم ألهذا جمعتنا؟ فنزلت: ﴿تَبَّتۡ يَدَآ أَبِي لَهَبٖ وَتَبَّ ١ مَآ أَغۡنَىٰ عَنۡهُ مَالُهُۥ وَمَا كَسَبَ »
 অর্থ, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন এ আয়াত নাযিল করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড়ের উপর আরোহণ করে, প্রতিটি গোত্রের নাম উচ্চারণ করে, তাদেরকে পাহাড়ের পাদদেশে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান। কুরাইশদের চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ডাকে সাড়া দিল এবং কুরাইশের সমগ্র মানুষ পাহাড়ের পাশে একত্র হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আহ্বানের পর তাদের মধ্যে মক্কায় তার ডাকে সাড়া দেয়ার একটি হিড়িক পড়ে যায়। এমনকি যদি কোন লোক কোন কারণে উপস্থিত হতে পারেনি, সে তার একজন প্রতিনিধি পাঠাত, যাতে মুহাম্মদ কি বলে, তা তার মাধ্যমে জানতে পারে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আবু জাহেল সহ বড় বড় কুরাইশ নেতা ও বিভিন্ন বংশের লোকেরা উপস্থিত হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমবেত লোকদের সম্বোধন করে বললেন, আমি যদি তোমাদের খবর দেই যে, এ উপত্যকার অপর প্রান্তে একটি সশস্র সৈন্যদল তোমাদের উপর আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাহলে তোমরা কি আমাকে বিশ্বাস করবে? তারা সবাই এক বাক্যে উত্তর দিল হ্যাঁ! আমরা অবশ্যই তোমাকে বিশ্বাস করব। কারণ, তোমাকে আমরা কখনোই মিথ্যা বলতে দেখিনি। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বলল, তোমরা মনে রাখ! আমি তোমাদের ভয়াবহ আজাবের পরিণতি সম্পর্কে ভয় দেখাচ্ছি। এ কথা শোনে কমবখত আবু লাহাব সাথে সাথে বলল, তোমার জন্য ধ্বংস! তুমি আমাদের পুরো দিনটি নষ্ট করলে। এ জন্যই তুমি আমাদের ডেকে একত্র করছ ! তার কথার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন।[8]
অপর একটি বর্ণনায় আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশ বংশের লোকদের একটি একটি করে প্রতিটি গোত্রের লোকদের ডাকেন এবং প্রতিটি গোত্রের লোকদের সম্বোধন করে তিনি বলেন,
((أنقذوا أنفسكم من النار...))، ثم قال: ((يا فاطمة أنقذي نفسك من النار؛ فإني لا أملك لكم من اللَّه شيئاً، غير أن لكم رحماًَ سأبلها ببلاها))
[তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাচাও..] তারপর তিনি তার প্রাণাধিক প্রিয় একমাত্র কন্যা ফাতেমা কে সম্বোধন করে বলেন, [হে ফাতেমা! তুমি তোমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাচাও! কারণ, আমি আল্লাহর থেকে তোমাদের কল্যাণে কোন কিছুই করার ক্ষমতা রাখি না। তবে তোমাদের সাথে আমার রয়েছে আত্মীয়তা। আমি তার দ্বারা তোমাদের সাথে কেবল আমার সম্পর্কেই সিক্ত করব।[9]] এ আহ্বান ছিল, দাওয়াতের সর্বচ্চো সোপান। তিনি সমবেত লোকদের সবোর্চ্চ ভয় দেখান এবং সর্বচ্চো সতর্ক করেন। কারণ, তিনি প্রথমে তার একদম কাছের লোকদের এ কথা স্পষ্ট করেন যে, তাদের সাথে সম্পর্কের মানদণ্ড হল, এক আল্লাহর উপর ঈমান আনা ও রিসালাতের উপর বিশ্বাস করা। যারা এ দুটি বিষয়ের উপর বিশ্বাস করবে তারাই হল, তার নিকট সবচেয়ে আপন লোক। তিনি আরবদের আরও জানিয়ে দেন যে, জাতিগত, বর্ণগত ও বংশগত যে সব বিবাধ ও বৈষম্য আরবরা দীর্ঘকাল ধরে লালন করে আসছে, আজকের এ আহ্বানের মাধ্যমে তার একটি পরিসমাপ্তি ও ইতি ঘটল। এ সব বিষয় নিয়ে কোন প্রকার বিবাধ বৈষম্য অর্থহীন। এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে সমবেত লোকদের ইসলামের দিকে আহ্বান করেন এবং মূর্তি পূজা হতে তাদের বারণ করেন। যারা তার আহ্বানে সাড়া দেবে তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেন, আরা যারা তার এ দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করবে তাদের তিনি জাহান্নামের ভয় দেখান।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুরুত্বপূর্ণ দাওয়াতের পর মক্কাবাসী তা সাথে সাথে প্রত্যাখ্যান করে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে শক্ত হাতে মোকাবেলা ও প্রতিহত করার অঙ্গীকার করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাওয়াত ছিল, তাদের পুরনো অভ্যাস, অন্ধানুকরণ ও জাহিলিয়্যাতের রীতিনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ফলে তারা এ দাওয়াতকে অংকুরে গুটিয়ে দেয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরোধিতা, গর্জন ও হুংকারে কোন প্রকার কর্ণপাত করেননি, বিচলিত কিংবা দুর্বল হননি। তিনি তার উপর অর্পিত রিসালাতের গুরু দায়িত্ব অত্যন্ত সাহসিকতা ও প্রত্যয়ের সাথে চালিয়ে যেতে থাকেন। কারণ, তিনি-তো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত একজন রাসূল; যদি সারা পৃথিবীও তার বিরোধিতা করে এবং তাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়, তাহলেও আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তা পালন করাই হল তার একমাত্র কাজ। তিনি-তো কোন ক্রমেই তা হতে পিছপা হতে পারেন না। তার উপর যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সারা দুনিয়ার সমগ্র মানুষও যদি একত্র হয়ে তার বিরোধিতা করে, তারপরও তিনি তা থেকে এক চুল পরিমাণও পিছু হটবে না।[10]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকাশ্যে দাওয়াতের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে রাত-দিন,- চব্বিশ ঘণ্টা- তিনি মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিতে থাকেন। প্রকাশ্যে ও গোপনে, ব্যক্তি ও সামগ্রিক পর্যায়ে মানুষকে আল্লাহর দিকে বিরামহীনভাবে আহ্বান করতে থাকেন। কোন প্রকার বাধা-বিপত্তি তাকে তার দাওয়াত থেকে ধময়ে কিংবা ফিরিয়ে রাখতে পারেনি। কোন বিরোধিতা-কারীর বিরোধিতা তার দাওয়াতের চলন্ত মিশনের গতিরোধ কিংবা বিঘ্ন ঘটাতে পারেনি। তাকে দাওয়াত হতে বিরত রাখার জন্য কাফেরদের হাজারো চেষ্টা ও কৌশল কোন কাজে আসেনি; তারা তাকে তার মিশন থেকে বিরত রাখতে পারেনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময় মানুষকে দাওয়াত-আল্লাহর দিকে আহ্বান- করার কাজে লেগেই থাকতেন। তিনি তাদেরকে তাদের কোন মজলিশ হোক বা মাহফিল, সব জায়গায় তাদের দাওয়াত দিতে থাকত। এ ছাড়াও বিভিন্ন মৌসুমে তিনি তাদের আল্লাহর দিকে আহ্বান করতেই থাকেন। বিশেষ করে হজের মৌসুমে যখন লোকেরা বাইতুল্লাহর উদ্দেশ্যে একত্র হত, তখন তিনি এ সময়টাকে দাওয়াতের জন্য গণিমত মনে করতেন। এ সময়ে যার সাথে দেখা হত, তাকেই তিনি আল্লাহর দিকে আহ্বান করতেন; চাই সে গোলাম হোক বা স্বাধীন, ধনী হোক বা গরীব তার নিকট সবাই সমান; কারো প্রতি তিনি কোন প্রকার বৈষম্য প-দর্শন করতেন নাকে দুর্বল আর কে সবল তা তার নিকট বিবেচ্য নয়। তিনি সবাইকে তার দাওয়াতের আওতায় নিয়ে আসতেন এবং আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতেন। একজন দা‘ঈর জন্য এসব গুণাগুণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কোনভাবে ক্ষান্ত করতে না পেরে, মক্কার মুশরিকরা ক্ষোভে বিক্ষোভে অগ্নি-শর্মা হয়ে পড়ল। তারা তাদের করনীয় হিসেবে জুলুম নির্যাতনের পথকেই বেচে নিলো। ফলে তারা রাসূল ও তার অনুসারীদের উপর বিভিন্ন ধরনের জুলুম নির্যাতন করতে আরম্ভ করল এবং তাদের বিরুদ্ধে নানাবিধ অপপ্রচার চালানো শুরু করলকারণ, তারা কোন ক্রমেই আল্লাহর তাওহীদে বিশ্বাস করা ও মূর্তি পূজাকে ছাড়তে রাজি হল না।[11]
কাফেরদের বিরোধিতা, অপপ্রচার ও জুলুম-নির্যাতনের পরও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দাওয়াতি কাজে একটুও দুর্বল হননি। তার দাওয়াতের মাধ্যমে যারা ইসলামে প্রবেশ করছে, তাদের তালীম-তারবীয়ত দেয়া ও দ্বীনের সুযোগ্য সৈনিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি কোন প্রকার কার্পণ্য ও নমনীয়তা প্রদর্শন করেননি। কুরাইশদের চোখকে ফাকি দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের নিয়ে পরিবারের বিভিন্ন ঘরে একত্র হত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তালীম ও তরবীয়তের ফলে ধীরে ধীরে তার অনুসারীরা এমন একটি সাহসী ও ত্যাগী জাতিতে পরিণত হল, পৃথিবীর ইতিহাসে তাদের দৃষ্টান্ত দুর্লভ। তারা ইসলামকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যাবতীয় সব ধরনের- দৈহিক ও মানসিক- নির্যাতন সইতে প্রস্তুত ছিল; যত প্রকার জুলুম নির্যাতনই আসুক না কেন, তারা তাদের আদর্শ হতে একটুও পিছপা হবে না বলে ছিল প্রত্যয়ী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তালীম তরবিয়ত ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিশেষ একটি জামাত তৈরি হল, যারা তাদের ঈমানে ছিল দৃঢ়, বিশ্বাসে ছিল অটুট, দায়িত্ব সম্পর্কে ছিল সচেতন, তাদের প্রভুর নির্দেশ পালনে তারা ছিল একনিষ্ঠ, রাসূলের নেতৃত্বর উপর ছিল তারা আস্থাভাজান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোন নির্দেশ দিতেন, তা পালনে তারা ছিল অতীব আন্তরিক ও উৎসাহী। তার মুখের থেকে কোন কথা বের হতে দেরী হত, কিন্তু তারা তা লোপয়ে নিতে একটুও সময় ক্ষেপণ করত না। তারা তার নেতৃত্বের প্রতি এতই অনুগত ছিল, পৃথিবীর ইতিহাসে এর দ্বিতীয় কোন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা তাকে এত বেশি মুহাব্বত করত ও ভালোবাসতো যার কোন তুলনা আজ পর্যন্ত কোন জাতি উপস্থাপন করতে পারেনি।
এভাবেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, সঠিক দিক নির্দেশনা ও অটুট-অবিচল নীতি আদর্শের কারণে রিসালাতের গুরু দায়িত্ব আদায়, আমানতের সংরক্ষণ ও উম্মতের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সক্ষম হন। তিনি আজীবন আল্লাহর রাহে সত্যিকার সংগ্রাম চালিয়ে যান। তিনি মানবজাতির জন্য এমন এক পথ ও পদ্ধতি বাতিয়ে দেন, যা আমাদের দাওয়াত, কর্ম ও চলার পথের জন্য চিরন্তন আদর্শ।
 মোট কথা, তিনিই আমাদের আদর্শ, আমাদের ইমাম; আমরা তার আদর্শের অনুসারী ও তার হিকমত ও জ্ঞানের আলোয় আলোকিত।
তিনি অতীব পছন্দনীয়, সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতি ও উন্নত মূলনীতি দিয়ে মানুষকে আল্লাহর দ্বীনের প্রতি দাওয়াত দেয়া আরম্ভ করেন; যার ফলে মানুষ তার দাওয়াতে সাড়া দিয়ে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে এবং তার রিসালাতের উপর বিশ্বাস করে। একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তার দাওয়াত কোন শ্রেণী বা গোষ্ঠীর জন্য খাস ছিল না, তার দাওয়াত ছিল ব্যাপক, সমগ্র মানুষের জন্য আর তিনি ছিলেন সমগ্র মাখলুকের জন্য রহমত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তার দাওয়াতি ময়দানে কাজ করছিলেন, তখন তিনি এমন কতক লোকদের চিহ্নিত করেন, যাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের যোগ্যতা ও প্রতিভা ছিল বিদ্যমান। এছাড়াও যাদের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী ছিলেন যে, তারা তার দাওয়াত কবুল করবে এবং তার রিসালাতে বিশ্বাস করবে, তাদেরকেই তার দাওয়াতের জন্য প্রাথমিকভাবে চয়ন করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কৌশল ও হিকমতের কারণে এমন একটি ভিত রচনা করতে সক্ষম হন, যার উপর স্থাপিত হয় দাওয়াতের ভিত্তি। এমন কতক খুঁটি তৈরি করেন, যাদের উপর নির্ভর করে দাওয়াতের রোকনসমূহ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।[12]
আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াতের জন্য রাসূলের প্রচেষ্টায় কোন প্রকার ঘাটতি ছিল না। তিনি অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যান এবং প্রতিদিনই নতুন নতুন কৌশল ও হিকমত আবিষ্কার করেন। কিন্তু এত চেষ্টা সত্ত্বেও একটি কথা স্পষ্ট যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই কাউকে হত্যা বা গুপ্ত হত্যা করার নির্দেশ দেননি। ইসলামের বিরোধিতা-কারী হিসেবে সে যত বড় দুশমনই হোক না কেন, তাকে তিনি নিজে বা তার সাহাবীদের কেউ গোপনে হত্যা করেনি। অথচ তখন গোপনে হত্যা করা সহজ ও সম্ভব ছিল; ইচ্ছা করলে তা করতে পারতেন। তা সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কাফের বা ইসলামের দুশমনকে গোপনে হত্যা করে, তার উপর পরিচালিত জুলুম নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে চাননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি ইশারা করতেন, তাহলে এ কাজটি করার জন্য প্রস্তুত সাহাবীর অভাব ছিল না। তিনি সাহাবীদেরকে বড় বড় কাফের নেতা ও ইসলামের দুশমনদের গোপনে হত্যা করার নির্দেশ দিলে, তারা তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিত। যেমন, ওলীদ ইবনে মুগীরা আল মাখযুমী, আস ইবনে ওয়ায়েল আসসাহমী, আবু জাহেল আমর ইবনে হেশাম, আবু লাহাব, আব্দুল উজ্জা ইবনে আব্দুল মুত্তালেব, নজর ইবনে হারেস, উকবা ইবনে আবু মুয়িত, উবাই ইবনে খলফ ও উমাইয়া ইবনে খলফ প্রমুখ। এরা সবাই ইসলামের ঘোর বিরোধী ও বড় বড় শত্রু ছিল। এরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অবর্ণনীয় ও সীমাহীন কষ্ট দিত। তারপরও রাসূল এদের কাউকে বা এরা ছাড়াও ইসলামের অন্য কোন দুশমনকে গোপনে হত্যা করেননি এবং হত্যার নির্দেশ দেননি। কারণ, এ ধরনের কাণ্ড-জ্ঞানহীন কাজ ইসলামের অগ্রযাত্রার জন্য ক্ষতিকর। যারা এ ধরনের কাজ করে ইসলামের দুশমনরা তাদের একেবারে নি:শেষ করে দেয় অথবা তাদের অগ্রসর হওয়ার পথকে রুদ্ধ করে দেয়। যেমনটি আজ আমরা সমগ্র দুনিয়া ব্যাপী বিষয় ভালোভাবেই প্রত্যক্ষ করি। ইসলামের দুশমন যারা ইসলামকে নির্মূল করতে চায়, তাদের দ্বারা আজ আমরা আক্রান্ত ও ভুক্তভোগী। আল্লাহর পক্ষ হতেও তার নবীকে এ ধরনের গোপনীয় কোন কিছু করার নির্দেশ দেয়া হয়নি। কারণ, তিনি-তো আহকামুল হাকেমীন- মহা জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ; তিনি যাবতীয় কর্মের বিদারক ও পরিণতি সম্পর্কে সম্যক অবগত।
একটি কথা মনে রাখতে হবে, জমিনের উপর ও আসমানের নিচে যত দা‘ঈ আছে, তাদের সবাইকে কিয়ামত পর্যন্ত ঐ পথেরই অনুসরণ করতে হবে, যে পথ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য তার হিজরতের পূর্বে ও পরে দেখিয়ে গেছেন। সুতরাং, মনে রাখতে হবে, বিশুদ্ধ দাওয়াতের পদ্ধতি হল, রাসূলের শিক্ষা ও আদর্শকে আঁকড়িয়ে ধরা, তার আখলাক ও চরিত্রের অনুসরণ করা; তিনি যেভাবে দাওয়াতের কাজ করেছেন, সেভাবে দাওয়াতি কাজকে আঞ্জাম দেয়া।[13]
দুই.
কুরাইশ প্রতিনিধিদের প্রস্তাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসম্মতি এবং আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াতের উপর তার অটুট ও অবিচল নীতি কুরাইশদের হতাশা বৃদ্ধি করে।
কুরাইশরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার দাওয়াতি কার্যক্রম হতে কোন ভাবেই বিরত রাখতে পারছিল না। তাদের জুলুম, নির্যাতন ও নির্মম অত্যাচার কোনটাই কাজে আসতে ছিল না। নিরুপায় হয়ে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে থামানো ও ধময়ে রাখার আরেকটি নতুন কৌশল অবলম্বন করল; যে কৌশলের মূল থিম হল, তারা রাসূলকে একদিকে প্রলোভন দিবে অপরদিকে তারা তাকে ভয় দেখাবে। তাদের কৌশল হল, তারা উভয়টিকে একত্র করে তাকে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করবে। একদিকে তারা রাসূল সা. কে পার্থিব জগতের যত চাহিদা আছে সব কিছুই তারা তাকে দিতে প্রস্তুত আর অপরদিকে তার চাচা-আবু তালিব- যিনি তাকে দেখা-শোনা ও সাহায্য সহযোগিতা করে, তাকে সতর্ক করবে, যাতে তিনি মুহাম্মদকে তার দ্বীনের প্রচার হতে বিরত রাখে।[14]
কুরাইশদের কৌশল ছিল নিম্নরূপ:
এক.
কুরাইশ নেতারা আবু তালেবের নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আবু তালেব! তুমি বয়সে আমাদের জ্যৈষ্ঠ, আমাদের মধ্যে তোমার যথেষ্ট ইজ্জত ও সম্মান রয়েছে। তুমি জান! আমরা তোমার ভাতিজাকে আল্লাহর দ্বীন ও তাওহীদের দাওয়াত দেয়া হতে বিরত থাকতে বার বার বলছি, কিন্তু সে আমাদের কথায় কোন প্রকার কর্ণপাত করেনি এবং তাওহীদের দাওয়াত দেয়া হতে বিরত থাকেনি। আমরা আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমরা তার এ অবস্থার উপর আর বেশিদিন ধৈর্য ধারণ করতে পারছিনা। সে আমাদের বাপ-দাদার সমালোচনা করে, আমাদের উপাস্যদের বদনাম করে এবং আমাদের চিন্তা চেতনার উপর কুঠার আঘাত করে। তুমি হয়তো তাকে বিরত রাখবে অন্যথায় তার সাথে ও তোমার সাথে আমরা যুদ্ধে অবতীর্ণ হব; হয় তোমরা ধ্বংস হবে অথবা আমরা ধ্বংস হব।
আবু তালেবের নিকট কুরাইশদের এ ধরনের কঠিন হুমকি, সগোত্রীয় লোকদের বিরোধিতা ও তাদের সাথে সম্পর্কের টানা-পোড়ন, একটি দু:শ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াল। কুরাইশ নেতাদের এ ধরনের কথার কারণে সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের প্রতি যে দাওয়াত দিচ্ছে, তাতে তিনি খুশি হতে পারলেন না, আবার অন্যদিকে তারা মুহাম্মদকে অপমান করবে তাতেও তিনি সন্তুষ্ট নয়। তাই নিরুপায় হয়ে আবু তালেব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, হে ভাতিজা! তোমার গোত্রের লোকেরা আমার নিকট এসেছিল, তারা আমাকে এসব কথা বলেছে, আমি আমার ও তোমার উভয়ের বিষয়ে আশংকা করছি। তুমি আমার উপর এমন কোন দায়িত্ব চাপাবে না, যা বহন করতে আমি বা তুমি অক্ষম। সুতরাং তোমার যে কথা তারা অপছন্দ করে তা বলা হতে তুমি নিজেকে বিরত রাখ!
আবু তালেবের এ প্রস্তাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন প্রকার ভ্রুক্ষেপ না করে, তিনি তার দাওয়াতের উপর অটল ও অবিচল রইলেন। তিনি আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত দেয়া হতে বিন্দু পরিমাণও পিছ-পা হলেন না। যারা তার সমালোচনা এ বিরোধিতা করল তাদের বিরোধিতা ও সমালোচনাকে তিনি কোন প্রকার ভয় করলেন না। কারণ, তিনি জানেন, তিনি সত্যের উপর আছেন, আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তার দ্বীনকে বিজয় করবে এবং তার বাণীকে সমুন্নত রাখবে। আবু তালেব যখন রাসূলের দৃঢ়টা ও অবিচলতা দেখতে পেল এবং তার কথায় তার ভাতিজা তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেয়া ছেড়ে দেবে, এ ধরনের আশা ছেড়ে দিল, সে তাকে বলল,
واللَّه لن يصلوا إليك بجمعهم
حتى أُوسَّد في التراب دفينا
فاصدع بأمرك ما عليك غضاضة
وأبشر وقر بذاك منك عيونا
অর্থ, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তারা সবাই একত্র হয়েও তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। যদি তারা তোমার কোন ক্ষতি করে, আমি তাদেরকে মাটিতে দাফন করে ফেলব। তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও! তোমার কোন ভয় নাই। আর তুমি আমার পক্ষ হতে সু-সংবাদ গ্রহণ কর এবং তুমি তোমার চক্ষুকে শীতল কর[15]
দুই
ওমর ইবনুল খাত্তাবের ইসলাম ও হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামের কালো আকাশ হতে মেঘ সরে যেতে আরম্ভ করল। ইসলাম ও মুসলিমদের যে অবস্থান তৈরি হল, তা দেখে মক্কার কাফের মুশরিকদের ঘুম হারাম হয়ে গেল। মুসলিমদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়া, তারা প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দেয়া ও মুশরিকদের বিরোধিতার কোন প্রকার তওক্কা না করা, তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করল ও রীতিমত তারা আতংকিত হয়ে পড়ল।
কোন প্রকার উপায় না দেখে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কুরাইশরা তাদের নেতাদের আবারো পাঠালেন, যাতে তারা তাকে এমন কিছু পার্থিব বিষয়ে লোভ দেখায়, যেগুলোর প্রতি প্রলুব্ধ হয়ে, সে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত দেয়া ছেড়ে দেয়। তারা ঠিক করল, যদি মুহাম্মাদ তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়, তাহলে তাকে দুনিয়াবি ও পার্থিব জগতের অসংখ্য অগণিত সুযোগ-সুবিধা দেবে। তার যত প্রকার চাহিদা আছে তা সবই তারা পূরণ করবে।
তাদের চিন্তা চেতনা অনুযায়ী কুরাইশ নেতা উতবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে তার নিকট বসল এবং বলল, হে আমার ভাতিজা! তুমি আমাদের মধ্যে কতটুকু আদর ও সম্মানের তা তোমার অজানা নয়, তোমার বংশ মর্যাদার কোন তুলনা হয় না। কিন্তু তুমি গোত্রের লোকদের নিকট এমন একটি বিষয় উপস্থাপন করছ, যা তাদের ঐক্যে পাটল ধরিয়েছ, চিন্তা চেতনায় আঘাত হানছে, দীর্ঘদিন থেকে লালিত স্বপ্নকে তুমি ভঙ্গুর করে দিয়েছ। এ ছাড়াও তুমি তাদের ইলাহ ও ধর্মকে তুমি কটাক্ষ করছ এবং তাদের বাপ-দাদাদের রীতিনীতিকে অস্বীকার করছ। আমি তোমার নিকট কিছু প্রস্তাব নিয়ে এসেছি তুমি মনোযোগ দিয়ে শোন এবং গভীরভাবে চিন্তা করে দেখ, হয়তো, বিষয়গুলো তোমার নিকট ভালো লাগবে এবং তুমি তার কিছু হলেও গ্রহণ করবে। তার কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ((قل أبا الوليد أسمع)) হে আবুল ওয়ালিদ! তুমি তোমার কথা বল, আমি তোমার কথা শুনবো! তখন সে বলল, হে ভাতিজা! যদি তোমার এ দাওয়াতের দ্বারা ধন-সম্পদ উপার্জন করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে তুমি বল, আমরা তোমার চাহিদা অনুযায়ী ধন-সম্পদ তোমার জন্য একত্র করব। ফলে তুমি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক সম্পদের অধিকারী হবে। আর যদি তুমি আমাদের নেতৃত্ব দিতে চাও, তাহলে আমরা তোমাকে আমাদের নেতা নির্বাচিত করব এবং আমরা তোমাদের নেতৃত্বকে মেনে নেব। আমরা তোমার সিদ্ধান্ত ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব না। তুমি আমাদের যখন যা করতে বল, আমরা তাই করব এবং তোমার অনুগত হয়ে চলব। আর যদি তুমি আমাদের রাজত্ব চাও, তাতেও আমরা রাজি। আমরা তোমাকে আমাদের রাজা বানিয়ে দেব।
আর তুমি যা করছ ও বলছ, তা যদি কোন রোগের কারণে হয়, তবে আমরা তোমার জন্য কবিরাজ বা ডাক্তারের সন্ধান করব এবং তোমার যত ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন তার সবই আমরা করব। তোমার চিকিৎসার জন্য যত টাকা প্রয়োজন আমরা খরচ করব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উতবার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। তারপর যখন উতবা তার কথা শেষ করল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
((أفرغت أبا الوليد؟)) قال نعم، قال: ((فاستمع مني)) قال: افعل، فقال: ﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيم * حم * تَنزِيلٌ مِّنَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ * كِتَابٌ فُصِّلَتْ آيَاتُهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِّقَوْمٍ يَعْلَمُونَ * بَشِيرًا وَنَذِيرًا فَأَعْرَضَ أَكْثَرُهُمْ فَهُمْ لا يَسْمَعُونَ * وَقَالُوا قُلُوبُنَا فِي أَكِنَّةٍ مِّمَّا تَدْعُونَا إِلَيْهِ ...
হে আবুল ওয়ালিদ! তুমি তোমার কথা শেষ করছ? বলল, হ্যাঁ। তাহলে এবার তুমি আমার থেকে কিছু কথা মনোযোগ দিয়ে শোন। তখন সে বলল, আচ্ছা এবার তুমি বল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলল, তুমি আমার থেকে কুরআনের আয়াত শোন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করছিল। উতবা চুপ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তিলাওয়াত শুনছিল। উতবা দুই হাত পিছনের দিক দিয়ে হেলান দিয়ে বসে কুরআনের তিলাওয়াত শুনছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করতে করতে যখন সেজদার আয়াত পর্যন্ত পৌঁছল, তখন সে সেজদায় পড়ে গেল[16]তারপর রাসূল তাকে বলল, হে আবুল ওলিদ! তুমি আমার কাছ থেকে যা শুনলে, এটাই হল আমার মিশন। এখন তুমি চিন্তা করে দেখ কি করবে?
অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছল,
﴿فَإِنۡ أَعۡرَضُواْ فَقُلۡ أَنذَرۡتُكُمۡ صَٰعِقَةٗ مِّثۡلَ صَٰعِقَةِ عَادٖ وَثَمُودَ [فصلت: 13]
অর্থ, অত:পর যদি তারা প্রত্যাখ্যান করে তুমি তাদের বল, আমি তোমাদের আদ ও সামুদ সম্প্রদায়ের লোকদের বিকট শব্দের মত শব্দের ভয় দেখাচ্ছি! উতবা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ চেপে ধরল এবং বলল, আমি তোমাকে আল্লাহর শপথ ও আত্মীয়তার শপথ করে বলছি, আর তিলাওয়াত করো না! তুমি তোমার তেলাওয়াত বন্ধ কর। তারপর সে তার বংশের লোকদের নিকট এমনভাবে দৌড়ে আসল যেন বজ্র বা বিদ্যুৎ তাকে তাড়া করছে। আর কুরাইশদের সে বলল, তোমরা মুহাম্মদকে তার আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও; তার সাথে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। সে তাদের বিষয়টি বুঝাতে আরম্ভ করেন[17]
লক্ষণীয় বিষয় হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর মেহেরবানী, স্বীয় বুদ্ধিমত্তা ও হিকমতের মাধ্যমে এমন একটি আয়াত নির্বাচন করেন, যে আয়াতে আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত রাসূল ও রিসালাতের মর্মবাণী উপস্থাপিত ছিল এবং তাতে এ কথা স্পষ্ট করা হল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে মাখলুকের নিকট এমন একটি কিতাব নিয়ে এসেছেন, যে কিতাব তাদের গোমরাহি থেকে হেদায়েতের দিকে ডাকে এবং তাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখায়। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হল, এ কিতাবের উপর বিশ্বাস করা, তদনুযায়ী আমল করা ও তার আহ্কাম সম্পর্কে অবগত হওয়া বিষয়ে সর্বাগ্রে দায়িত্বশীল। যদি আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে অবিচল থাকার নির্দেশ দেন, সে বিষয়ে মুহাম্মদই সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই হল সর্বাধিক উপযুক্ত ব্যক্তি। তিনি কোন রাজত্ব চান না, ধন-সম্পদ চান না এবং ইজ্জত সম্মান লাভের প্রতি তার কোন অভিলাষ নাই। আল্লাহ তা‘আলা তাকে এগুলো সবই দিয়েছেন; যার ফলে তিনি ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার পচা-গন্ধ জিনিষের প্রতি হাত বাড়ানো থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকেন। কারণ, তিনি তার দাওয়াতে একজন সত্যবাদী আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া দায়িত্ব পালনে একনিষ্ঠ।[18]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত যে হিকমত অবলম্বন করেন, তা যে কত মহান ছিল তার বর্ণনা কখনো শেষ করা যাবে না। তিনি তার দাওয়াতে ছিল সবচেয়ে সত্যবাদী। তার মধ্যে ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা, ইজ্জত-সম্মান, নারী-বাড়ী, গাড়ী কোন কিছুর প্রতি তার কোন লোভ ছিল না। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়ালিদকে সময় উপযোগী কথা শোনান যার উপর সে অভিভূত হয়ে পড়ে এবং তার নিকট তার গ্রহণ যোগ্যতা বেড়ে যায়। এটাই হল, প্রকৃত হিকমত ও বুদ্ধিমত্তা।
তিন:
মুশরিকরা সিদ্ধান্ত নিলো যে, ইসলাম ও মুসলিম বিরুদ্ধে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কষ্ট দেয়ার ক্ষেত্রে যা যা করা দরকার আমরা তাই করব। যে দিন থেকে রাসূল প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেয়া ও জাহিলিয়্যাতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আরম্ভ করেন, সেদিন থেকে মক্কাবাসীদের ক্রোধের আর অন্ত রইল না। তারা ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। মুসলিমরা তাদের নিকট একটি নিকৃষ্ট ও অপরাধী জাতিতে পরিণত হল। তারা বুঝতে পারল যে, তাদের পায়ের নিচ থেকে ধীরে ধীরে মাটি সরে যাচ্ছে। নিরাপত্তা বেষ্টিত হেরম এলাকায় তাদের ধন-সম্পদ, ইজ্জত সম্মান ও জীবনের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে। ফলে তারা মুসলিমদের সাথে ঠাট্টা বিদ্রূপ, তাদের উপর মিথ্যা-রোপ, ইসলামী শিক্ষার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, ইসলামের বিষয়ে সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি, মিথ্যা অপবাদ দেয়াসহ হাজারো ষড়যন্ত্র শুরু করে। কুরআনের অবমাননা, কুরআন সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি- কুরআন হল পূর্বেকার লোকদের বানানো ও বানোয়াট কাহিনী- করে। এ ছাড়া তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাদের ইলাহগুলোর ইবাদত ও আল্লাহর ইবাদত এক সাথে চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাধ্য করে।
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাগল, যাদুকর, মিথ্যুক গণক ইত্যাদি বলে, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালায়। কিন্তু এত কিছুর পরও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিন্দু পরিমাণ ও পিছপা হননি; তিনি ধৈর্য ধারণ করেন এবং আল্লাহর পক্ষ হতে দ্বীনের বিষয়ে তাকে সাহায্য করা হবে এ আশায় কাজ চালিয়ে যান।[19]
মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এমন এমন অমানবিক নির্যাতন চালাতে আরম্ভ করে, যা অনেক সময় একজন সাধারণ মুসলমানের উপরও চালাত না। এমনকি আবু জাহেল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ধুলায় মিটিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাকে আবু জাহেলের হাত থেকে হেফাজত করে এবং তার ষড়যন্ত্রকে বানচাল করে দেয়। যেমন, আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আবু জাহেল বলল, মুহাম্মদ কি তোমাদের সামনে মাটিতে মাথা ঝুঁকায়? তাকে উত্তর দেয়া হল, হ্যাঁ! তখন সে বলল, লাত ও উজ্জার নামে কসম করে বলছি, আমি যদি তাকে মাটিতে মাথা ঝুঁকাতে দেখি, আমি তার ঘাড়ে পারাবো অথবা তার চেহারাকে মাটিতে মিশিয়ে দেব ! তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত আদায় করতে ছিল, ঠিক তখন সে উপস্থিত হল, তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সেজদায় যায়, তখন সে তার ঘাড়ে পা রাখার জন্য অগ্রসর হচ্ছিল; কিন্তু সে পারলো না। যখন সে সামনের দিক যাইতেছিল তখন সে সামনের দিক যাইতে পারল না বরং সে আরও পিছচ্ছিল এবং দু হাত দিয়ে নিজেকে আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করছিল। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কি ব্যাপার তোমার কি হয়েছে? তখন সে বলল, আমি দেখতে পেলাম আমার ও তার মাঝে আগুনের একটি পরিখা, মহা প্রলয় ও শক্তিশালী বাহু! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি সে আমার কাছে আসত, তাহলে ফেরেশতারা তাকে টুকরা টুকরা করে চিনিয়ে নিত। তিনি বলেন, তারপর আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন। [20]
আল্লাহ তা‘আলা রাসূলকে এত বড় জালেমের হাত থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের হাজারো জুলুম নির্যাতন সহ্য করেন এবং তিনি তার জান-মাল ও সময় তার রাহে ব্যয় করেন।
চার:
ইসলামের শত্রু আবু জাহেলের লেলিয়ে দেয়ার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে নির্যাতনের স্বীকার হন তার বিবরণ:
ما رواه ابن مسعود رضي الله عنه قال: بينما رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم يصلي عند البيت، وأبو جهل وأصحاب لـه جلوس، وقد نحرت جزور بالأمس، فقال أبو جهل: أيكم يقوم إلى سلا جزور بني فلان، فيأخذه فيضعه على ظهر محمد إذا سجد، فانبعث أشقى القوم فأخذه، فلما سجد النبي صلى الله عليه وسلم وضعه بين كتفيه، قال: فاستضحكوا، وجعل بعضهم يميل على بعض، وأنا أنظر، لو كانت لي منعة طرحته عن ظهر رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم، والنبي صلى الله عليه وسلم ساجد ما يرفع رأسه، حتى انطلق إنسان فأخبر فاطمة،
فجاءت وهي جويرية، فطرحته عنه، ثم أقبلت عليهم تشتمهم، فلما قضى النبي صلى الله عليه وسلم صلاته، رفع صوته، ثم دعا عليهم، وكان إذا دعا دعا ثلاثاً، وإذا سأل سأل ثلاثاً، ثم قال: ((اللَّهم عليك بقريش)) ثلاث مرات، فلما سمعوا صوته ذهب عنهم الضحك، وخافوا دعوته، ثم قال: ((اللَّهم عليك بأبي جهل بن هشام، وعتبة بن ربيعة، وشيبة بن ربيعة، والوليد بن عتبة، وأمية بن خلف، وعقبة بن أبي معيط))، وذكر السابع ولم أحفظه، فوالذي بعث محمداً صلى الله عليه وسلم بالحق لقد رأيت الذي سمى صرعى يوم بدر، ثم سحبوا إلى القليب، قليب بدر. »
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার পাশে সালাত আদায় করছিল। আবু জাহেল তার সাথী সঙ্গীদের নিয়ে একটি মজলিশে বসা ছিল। বিগত দিনের জবেহ-কৃত একটি উটের ভূরি পড়ে আছে দেখে, আবু জাহেল বলল, তোমাদের মধ্যে কে আছে যে অমুক গোত্রের ভুঁড়িটি নিয়ে মুহাম্মদ যখন সেজদা করে তখন তার মাথার উপর রেখে দিবে? তার একথা শোনে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ- উকবা ইবনে আবি মুইত- উঠে দাঁড়ালো এবং সে দৌড়ে গিয়ে ভুঁড়িটি নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদায় গেলে তার দুই কাঁধের উপর রেখে দেয় বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তারা হাসাহাসি করতে আরম্ভ করে। হাসতে হাসতে তারা একে অপরের উপর ঢলে পড়ল। আমি নীরবে এ দৃশ্য দেখতে ছিলাম, আমার কিছুই করার ছিল না। সেদিন আমার যদি ক্ষমতা থাকত, তাহলে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘাড় থেকে তা সরিয়ে দিতাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদায় পড়ে আছেন, কোন ক্রমেই মাথা উঠাতে পারছিল না। একজন পথিক এ দৃশ্য দেখে ফাতেমা রা. কে খবর দিলেন, খবর পেয়ে সে দৌড়ে আসল এবং তার ঘাড়ের উপর থেকে ভুঁড়িটি সরাল। অসহ্য হয়ে সে কাফেরদের সামনে এসে তাদের কিছুক্ষণ গালি-গালাজ করল। তারপর যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় সম্পন্ন করেন, তিনি উচ্চস্বরে তাদের জন্য বদদোয়া করলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন দোয়া করতেন তিনবার দোয়া করতেন আবার যখন কোন কিছু চাইতেন তখনও তিন বার চাইতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুহাত তুলে তিনবার বললেন, হে আল্লাহ! তুমি কুরাইশদের পাকড়াও কর! কাফেররা তার বদদোয়ার আওয়াজ শোনে, আতংকিত হয় এবং তাদের মুখের হাসি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আবু জাহেল ইবনে হিশাম, উতবা ইবনে রাবিয়াহ, ওয়ালিদ ইবনে উতবা, উমাইয়া ইবনে খলফ ও উকবা ইবনে আবি মুইত প্রমুখ ধ্বংস কর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতজন ব্যক্তির নাম নেন, কিন্তু সপ্তম ব্যক্তির নামটি আমি ভুলে যাই। বর্ণনাকারী বলেন, যে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সত্যের বাণী নিয়ে দুনিয়াতে পাঠান, তার শপথ করে বলছি, রাসূল যাদের নাম নিয়েছে তাদেরকে বদরের দিন বদর প্রান্তে চিত হয়ে পড়ে থাকতে দেখি। তারপর গলায় রশি লাগিয়ে তাদের বদর প্রান্তের কুপের দিকে টেনে হেঁচড়ে নেয়া হয়।[21]
পাঁচ:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মুশরেকদের সবচেয়ে জঘন্য ও খারাপ দুর্ব্যবহারের বর্ণনা:
عن عروة بن الزبير، قال: قلت لعبد اللَّه بن عمرو بن العاص: أخبرني بأشد ما صنع المشركون برسول اللَّه صلى الله عليه وسلم؟ قال: بينما رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم يصلي في حجر الكعبة، إذ أقبل عقبة بن أبي معيط، فأخذ بمنكب رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم ولوى ثوبه في عنقه، فخنقه خنقاً شديداً، فأقبل أبو بكر، فأخذ بمنكبه، ودفعه عن رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم وقال: ﴿أَتَقْتُلُونَ رَجُلا أَن يَقُولَ رَبِّيَ اللَّهُ وَقَدْ جَاءَكُم بِالْبَيِّنَاتِ مِن رَّبِّكُمْ».
উরওয়া ইবনে যুবাইর রা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. বলি, মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সবচেয়ে খারাপ যে ব্যবহার করে, তুমি আমাকে তার বিবরণ দাও! তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবা গৃহের পাশে সালাত আদায় করছিল ঠিক ঐ মুহূর্তে উকবা ইবনে আবি মুয়াইত এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গলা চেপে ধরল এবং কাপড় দিয়ে তার গলা পেঁচালো। তারপর খুব জোরে তার গল চেপে টানাটানি করে তাকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করে। এ অবস্থা দেখে আবু বকর রা. দৌড়ে এসে তার দিকে অগ্রসর হল এবং তার ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে দূরে সরাল। তারপর বলল,
﴿أَتَقۡتُلُونَ رَجُلًا أَن يَقُولَ رَبِّيَ ٱللَّهُ وَقَدۡ جَآءَكُم بِٱلۡبَيِّنَٰتِ مِن رَّبِّكُمۡۖ [غافر:28]
অর্থ, তোমরা এমন একজন লোককে হত্যা করবে যে বলে আমার রব আল্লাহ! অথচ সে তোমাদের রবের পক্ষ হতে স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়েই তোমাদের নিকট এসেছে।[22]
 এভাবে মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছে, সে সব মুসলিমদের উপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন চালাত। তার সাথীরা তাদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করল। তার নিকট দোয়া চাইল এবং আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়ার জন্য আবেদন জানাল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে আল্লাহর সাহায্য লাভ ও তাদের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিলেন এবং বললেন, শেষ পরিণতি কেবলই মুত্তাকীদের জন্য।
 খাব্বাব ইবনে আরত রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবা ঘরের ছায়াতলে একটি চাদরকে বালিশ বানিয়ে শুয়ে ছিল। আমরা তাকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবেন না? আমাদের জন্য দোয়া করবেন না? তখন রাসূল আমাদের বললেন,
((قد كان من قبلكم يؤخذ الرجل فيحفر لـه في الأرض، فيجعل فيها، فيجاء بالمنشار فيوضع على رأسه فيجعل نصفين، ويمشط بأمشاط الحديد [ما دون عظامه من لحم وعصب]، فما يصده ذلك عن دينه، واللَّه ليُتَمَّنَّ هذا الأمر، حتى يسير الراكب من صنعاء إلى حضرموت لا يخاف إلا اللَّه والذئب على غنمه، ولكنكم تستعجلون».
তোমাদের পূর্বের উম্মতদের অবস্থা ছিল, তাদের একজন লোককে ধরে আনা হত, তারপর জমিনে তার জন্য গর্ত খনন করা হত এবং তাতে তাকে নিক্ষেপ করততারপর তার জন্য করাত আনা হত, আর সে করাত দ্বারা তার মাথাকে দ্বি-খণ্ড করে তাকে হত্যা করা হত। আবার কোন কোন সময় কাউকে কাউকে লোহার চিরুনি দিয়ে আচড় দিয়ে তার হাড় থেকে মাংস ও চামড়া তুলে নিয়ে আলাদা করা হত। এত বড় নির্যাতন সহ্য করা সত্ত্বেও তাদেরকে দ্বীন থেকে এক চুল পরিমাণও এদিক সেদিক করতে পারত না। [রাসূল বলেন] আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই এ দ্বীনকে পরিপূর্ণ করবে। এমনকি একজন সফরকারী সুনায়া থেকে হাজরা-মওত পর্যন্ত নিরাপদে ভ্রমণ করবে, সে তার নিরাপত্তার জন্য একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করবে না। তবে তোমরা হলে এমন জাতি, যারা তাড়াহুড়াকে পছন্দ কর। [23]
নিরপরাধ মুসলিমদের উপর মুশরিকদের নির্যাতন দিন দিন আরও মারাত্মক আকার ধারণ করছিল। আল্লাহর উপর ঈমান আনা, হক গ্রহণ করা, আল্লাহর দ্বীনের উপর অবিচল থাকা এবং নিরেট তাওহীদের প্রতি দাওয়াত ও মূর্তি পূজাকে প্রত্যাখ্যান করাই ছিল তাদের একমাত্র অপরাধ।



[1] সূরা বাকারা আয়াত: ২৬৯
[2] সূরা মুদ্দাচ্ছের আয়াত: ১-৭

[3] সীরাতে ইবনে হিশাম: ২৬৪/১, ইমাম শামছুদ্দিন আয-যাহবী রহ. এর তারিখুল ইসলাম সীরাত অধ্যায়: পৃ: ১২৭, বিদায়া নিহায়া: ২৪-৩৭, যাদুল মাদ: ১৯/৩, মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব রহ. এর মুখতাছার সীরাত: পৃষ্ঠা ৫৯, মাহমুদ শাকের রহ. এর তারিখে ইসলামী: ৫৭/২, এবং হাযাল হাবীবু ইয়া মুহিব্ব: পৃ:৯১

[4] আল- বিদায়া ওয়ান-নিহায়া: ৩১/৩, মাহমুদ শাকের রহ. এর তারিখে ইসলামী ৬২/২, এবং হাযাল হাবীবু ইয়া মুহিব্ব: পৃ: ৯৭

[5] সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯৪-৯৬
[6] রাহীকুল মাখতুম: পৃ: ৭৫, মাহমুদ শাকের রহ. এর তারিখে ইসলামী: ৬২/২ এবং হাযাল হাবীবু ইয়া মুহিব্ব: পৃ: ৯৯
[7] সূরা শুয়ারা, আয়াত: ২১৪-২১৬

[8] বুখারি কিতাবুত তাফসীর: পরিচ্ছেদ: ﴿ وَأَنذِرۡ عَشِيرَتَكَ ٱلۡأَقۡرَبِينَ ৫০১/৮ হাদীস নং (৪৭৭০) মুসলিম কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ: ﴿ وَأَنذِرۡ عَشِيرَتَكَ ٱلۡأَقۡرَبِينَ ১৯৪/১ হাদীস নং (২০৮) আয়াত: ( ১-২ ) সূরা মাসাদ হতে
[9] বুখারি কিতাবুত তাফসীর, পরিচ্ছেদ: ﴿ وَأَنذِرۡ عَشِيرَتَكَ ٱلۡأَقۡرَبِينَ পৃ: ৫০১/৮ হাদীস নং (৪৭৭০) মুসলিম কিতাবুল ঈমান পরিচ্ছেদ: ﴿ وَأَنذِرۡ عَشِيرَتَكَ ٱلۡأَقۡرَبِينَ ১৯৪/১ হাদীস নং (২০৮) আয়াত: (১-২) সূরা মাসাদ হতে
[10] দেখুন! রাহীকুল মাখতুম: পৃ: ৭৮, ইমাম গাযালী রহ. এর সীরাত গ্রন্থ পৃ: ১০১, মুস্তাফা আস-সাবায়ী রহ. এর সীরাতুন নববী ও শিক্ষনীয় বিষয় পৃ: ৪৭

[11] আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৪০/৩

[12] মাহমুদ সাকের রহ. এর তারিখে ইসলামী: ৬৫/২
[13] মাহমুদ সাকের রহ. এর তারিখে ইসলামী: ৬৫/২

[14] আল বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ৪১/৩ মুহাম্মাদ আল গাযালী রহ. এর সীরাত গ্রন্থ পৃ: ১১২
[15] দেখুন! সীরাতে ইবনে হিশাম ২৭৮/২, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৪২/৩, ৩ মুহাম্মাদ আল গাযালী রহ. এর সীরাত: পৃ: ১১৪ রাহীকুল মাখতুম: পৃ: ৯৪

[16] সূরা ফুস্সিলাত, আয়াত: ১৩
[17] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৬২/৩, তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৬২/৪, ইমাম শামছুদ্দিন আয-যাহাবী রহ. সীরাত গ্রন্থ: পৃ: ১৫৮ মুহাম্মাদ আল গাযালী রহ. এর সীরাত: পৃ: ১১৪ এবং হাযাল হাবীবু ইয়া মুহিব্ব: পৃ: ১০২
[18] মুহাম্মাদ আল গাযালী রহ. এর সীরাত: পৃ: ১১৩

[19] দেখুন: ইমাম গাযালী রহ. এর ফিকহুস সীরাহ: পৃ: ১০৬, রাহীকুল মাখতুম পৃ: ৮০, ৮২ মাহমুদ শাকেরের তারিখে ইসলামী: ৮৫/২ এবং হাযাল হাবীবু ইয়া মুহিব্ব: ১১০

[20] ইমাম মুসলিম মুনাফিক অধ্যায়; পরিচ্ছেদ: আল্লাহ তাআলার বাণীর তাফসীরে ﴿كَلا إِنَّ الإِنسَانَ لَيَطْغَى، أَن رَّآهُ اسْتَغْنَى হাদীস নং ২১৪৫/৪, ২৭৯৭, আরো দেখুন শরহে নববী ১৪০/১৭
[21] বুখারি ওজু অধ্যায়: পরিচ্ছেদ কোন মুসল্লির উপর সালাত রত অবস্থায় কোন মরা বস্তু বা নাপাকি নিক্ষেপ করা হয়, তাহলে তার সালাত বাতিল হবে না হাদীস ২৪০, ৩৪৯/১ এবং মুসলিম কিতাবুল জিহাদ পরিচ্ছেদ: মুশরিক ও মুনাফিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব নির্যাতন করে তার বিবরণ হাদীস নং ১৭৯৪, ১৪১৮/২

[22] সূরা গাফের, আয়াত: ২৮
[23] বুখারী, কিতাবুল মানাকেব পরিচ্ছেদ: ইসলামে নবুওয়তের আলামত ৬১৯/৬, (৩৬১২) আনছারীদের মানাকেব অধ্যায় পরিচ্ছেদ: মক্কায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার ছাহাবীরা মক্কায় মুশরিকদের পক্ষ হতে যে সব নির্যাতনের সম্মূখীন হন, তার বর্ণনা কিতাবুল ইকরাহ


No comments:

Post a Comment