দর্শক সংখ্যা

Showing posts with label কবর ও শিরক. Show all posts
Showing posts with label কবর ও শিরক. Show all posts

Thursday, March 21, 2013

আল্লাহর শরীয়তের পরিবর্তে অন্য আইন মোতাবেক ফয়সালা করা


 আল্লাহর শরীয়তের পরিবর্তে অন্য আইন মোতাবেক ফয়সালা করা
অনবাদ : মুহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

লেখক : সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান

আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান রাখা ও তাঁর ইবাদত করার দাবী হল তাঁর হুকুম মেনে নেয়া, তাঁর শরীয়তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং কথাবার্তা, মৌলিক নীতিমালা, ঝগড়াÑঝাটি ও জানÑমালসহ সকল অধিকারের ক্ষেত্রে মতানৈক্যের সৃষ্টি হলে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতের দিকে প্রত্যাবর্তন করা। আল্লাহই প্রধান বিচারক এবং প্রত্যেক ফয়সালার সময় তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করা উচিত। অতএব সকল শাসনকর্তার দায়িত্ব কর্তব্য হল আল্লাহর অবতারিত নির্দেশ অনুযায়ী হুকুম পরিচালনা করা। আর প্রজা সাধারণের ও উচিত আল্লাহ স্বীয় গ্রন্থে যে হুকুম অবতীর্ণ করেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতে যা কিছু বর্ণিত আছে, সে অনুযায়ী ফয়সালা মেনে নেয়া। আল্লাহ তাআলা শাসকবর্গের ক্ষেত্রে বলেন:
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ بَصِيرًا ﴿৫৮ سورة النساء
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন আমানতসমূহ প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে করবে।’
আর প্রজাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا ﴿৫৯ سورة النساء
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাদের যারা তোমাদের মধ্যে শাসন ক্ষমতার অধিকারী। তারপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যাবর্তন কর, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। 
এরপর আল্লাহ বর্ণনা করেন যে, তাঁর অবতীর্ণ শরীয়তের পরিবর্তে অন্য আইনের প্রতি বিচার প্রার্থনা করার সাথে ঈমানের কখনো সখ্য স্থাপিত হয় না। তিনি বলেন:
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آَمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا ﴿৬০
‘আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যারা দাবী করে যে, আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তারা ঈমান এনেছে? তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, অথচ একে প্রত্যাখ্যান করার নির্দেশ তাদেরকে দেয়া হয়েছে। আর শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। 
এর একটু পরেই আল্লাহ বলেন:
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ﴿৬৫ سورة النساء
‘কিন্তু না, আপনার রবের কসম! তারা মু’মিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের বিবাদÑ বিসম্বাদদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে। অতঃপর আপনার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে। এবং হৃষ্টচিত্তে তা মেনে নেয়।’
আল্লাহ তাআলা এখানে শপথের দ্বারা দৃঢ় ভাবে ঐ ব্যক্তি থেকে ঈমানের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন, যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে বিচার চায় না এবং তাঁর হুকুমের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে না ও তা মেনেও নেয় না। অনুরূপভাবে তিনি সেই সব শাসকবর্গকেও কুফুরী, জুলুম ও ফাসেকী প্রভৃতিতে ভূষিত করেছেন যারা আল্লাহর শরিয়ত অনুযায়ী হুকুম পরিচালনা করে না। তিনি বলেন:
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ ﴿৪৪﴾سورة النساء
‘আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী যারা হুকুম দেয় না, তারাই কাফির’
 وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ ﴿৪৫﴾سورة النساء
‘আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী যারা হুকুম দেয় না,  তারাই যালিম।’

ভ্রান্ত তাবিজ-কবচ



ভ্রান্ত তাবিজ-কবচ
লেখক : মুহাম্মদ বিন সোলায়মান আল-মুফাদ্দা

অনুবাদ : মতিউল ইসলাম বিন আলী আহমাদ
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি বিশ্ব জগতের ঘটনা প্রবাহের জন্য সঙ্গত কারণ বা মাধ্যম নির্ধারণ করেছেন। আবার কখনো কখনো এ সমস্ত  কারণ ও মাধ্যমকে তিনি পরিহার করেছেন। যাতে করে মানুষ এসব  কিছুকে তাদের রব বা প্রতিপালক মনে না করে। এবং তিনি এ সমস্ত কারণ ও ঘটনা প্রবাহকে এমন এক অমোঘ নিয়মে বেঁধে দিয়েছেন যার ফলে কোন কিছুই বৃথা যাবার নয় । সালাত ও সালাম ঐ রাসূলের উপর যাঁকে তিনি সমস্ত  জগতের জন্য রহমত করে প্রেরণ করেছেন, যাতে করে সকলই তাঁর প্রিয় হতে পারে। অতঃপর, আল্লাহ এ বিশ্ব জগতকে অনস্তিত্ব থেকেই সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি একে তাঁর ইচছা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে যেভাবে চান সেভাবেই পরিচালনা করেন  এবং তিনিই তাঁর সৃষ্টির সকল বস্তুকে একটির উপর অপরটির অস্তিত্ব বিন্যাস করেছেন, আর এ কারণেই একটি বস্তুকে অপরটির জন্য কারণ বা মাধ্যম বানিয়েছেন ।
পূর্বেকার মুশরিকরা আল্লাহকে এই পৃথিবীতে পরিপূর্ণ ক্ষমতা, পরিচালনা, পরিকল্পনা এবং সৃষ্টিকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করত। 
তারা এমন বিশ্বাস পোষণ করতনা যে, তাদের বাতিল উপাস্য বা দেবতাগুলো বিশ্ব জগতের কোন কিছু নিয়ন্ত্রণ করে, অথবা সেগুলো কোন প্রকার কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধনের ক্ষমতা রাখে। বরং তাদের দৃঢ় প্রত্যয় ছিল যে, এসব কিছু একমাত্র আল্লাহই পরিচালনা করে থাকেন, যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُونَ
“অতঃপর যখন তোমাদেরকে অকল্যাণ  ¯পর্শ করে তখন তোমরা তাঁর (আল্লাহর) নিকট বিনয় সহকারে প্রার্থনা কর। ”(সূরা আননাহাল ৫৩)
আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেন :
وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ 
“তুমি যদি তাদের(মুশরিকদের) কে জিজ্ঞাসা কর, কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন? তারা নিশ্চয়ই বলবে ‘আল্লাহ।”
এবং এ জন্যই আল্লাহ তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ করেছেন যে, তিনি যেন মুশরিকদেরকে আল্লাহর বাণীর উত্তর দিতে বাধ্য করেন।
قُلْ أَفَرَأَيْتُم مَّا تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ إِنْ أَرَادَنِيَ اللَّهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِي بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ قُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْمُتَوَكِّلُونَ                         
“বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি যদি আল্লাহ আমার অনিষ্ট করার ইচছা করেন তবে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ডাক তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে  পারে? অথবা তিনি আমার প্রতি রহমত করার ইচছা করলে তারা কি সে রহমত রোধ করতে পারে ? বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, ভরসাকারীরা তাঁর উপরই ভরসা করে ”(সূরা যুমার ৩৮ )

মাযারে প্রচলিত বিদআতসমূহ



মাযারে প্রচলিত বিদআতসমূহ
লেখক : কাউসার বিন খালেদ
স্মরণ রেখ, শর্তহীনভাবে, নির্দিষ্ট দিন-মাস ও সময় ব্যতীত দলবদ্ধ না হয়ে কবর যিয়ারত করা পুরুষের জন্য সুন্নত। কারণ, এর মাধ্যমে তার অন্তরে মৃত্যুর স্মরণ সদা জাগ্রত থাকবে। মগ্ন হবে সে পরকাল চিন্তায়। পার্থিবের ব্যাপারে সৃষ্টি হবে নিরাসক্তি ও নৈরাশ্য। এ উদ্দেশ্য ব্যতীত ভিন্ন কোন কারণে কবর জেয়ারতে গমন অবৈধ সর্বৈবে। কবর জেয়ারতের উদ্দেশ্যে দূর-দূরান্ত হতে ভ্রমণ করা, কিংবা কবর জেয়ারতের জন্য দিন-মাস ও সময় নির্ধারণ করা, কবরকে কেন্দ্র করে উৎসব ও ওরস যাপন, তাতে আলোকসজ্জা, কেবল কবরকে উদ্দেশ্য করে কবরস্থানে মসজিদ নির্মাণ, নারীদের কবর জেয়ারতে গমন, (এ নিষেধাজ্ঞা কেবল এমন নারীর জন্য, যে তথায় গমন করে শরিয়ত বিরোধী কাজে অংশ নেয় ; যার উদ্দেশ্য কবর জেয়ারতের মাধ্যমে মৃত্যুর স্মরণ করা, পরকালের চিন্তা মনে জাগ্রত রাখা, তার জন্য অবৈধ নয়) কবরের উপর চাদর টানান, পাকা করা, কবরস্থান বা কবরের শিয়রে মৃতের মৃত্যু তারিখ, তাদের নাম, কোরআনের আয়াত—ইত্যাদি অঙ্কন করা, কবরের উপর ...নির্মাণ, এক ...চেয়ে উঁচু কবর বানান, পুণ্যের কাজ মনে করে কবরের পাশে সালাত আদায়, কবরের পাশেই আবাস স্থাপন, মসজিদের সাথে যে আচরণ ও সম্মান প্রদর্শন কাম্য, তা কবরের সাথে করা,—এ উদ্দেশ্য করে কবরকে কেন্দ্র করে আনন্দ উদযাপন করা যে, এর মাধ্যমে কবর-বাসীর চিত্ত বিনোদন হবে, এবং সে প্রাপ্ত হবে অশেষ সওয়াব—এসব কিছুই মাকরূহ, হারাম ও চূড়ান্ত বেদআত। যারা এরূপ কাজে অংশ নেয়, তাদের অধিকাংশের উদ্দেশ্য এই থাকে যে, তারা তাদের উক্ত পূর্বসূরিদের মনে করে প্রয়োজন পূরণকারী ও সমস্যার সমাধান দাতা। তারা তাদের কাছে নিজেদের ইচ্ছাগুলো পেশ করে—তাই, তাদের সন্তুষ্ট রাখতে এ কাজগুলোয় অংশ নেয়। বস্তুত: প্রয়োজন পূরণ ও সমস্যার সমাধান এক আল্লাহ ব্যতীত আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। কবর-বাসী এ মহান পূর্বসূরিগণ স্বয়ং ছিলেন আল্লাহ তা‘আলার মুখাপেক্ষী, জীবিতকালে তাদের প্রতি বক্তব্যে, কথায়-আচরণে আল্লাহর মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ পেত। এই কারণে তারা মহান ছিলেন যে, সমস্ত কিছুই তারা প্রার্থনা করতেন একমাত্র আল্লাহর কাছে। আল্লাহ ব্যতীত অপর কাউকে সমাধান দাতা হিসেবে স্বীকার করতেন না। সুতরাং, কীভাবে অন্যের জন্য সমাধান দাতা হতে পারেন তারা ? মুসলমানদের সমাজে এ অপ-সংস্কারের বিস্তৃতি ঘটেছে মূলত: ইহুদি ও খ্রিস্টানদের অনুকরণের ফলশ্র“তিতে। এরা পয়গম্বর ও মহান ব্যক্তিত্বদের মৃত্যুর পর তাদের সমাধিগুলো বাধাই করে এভাবে এবাদত করত।
قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ.
আপনি বলুন, হে আহলে কিতাবিগণ ! আমরা এবং তোমরা একমত—এমন ঐকমত্যে এসো যে, আল্লাহ ব্যতীত আমরা কারো এবাদত করব না, তার সাথে কোন শরিক করব না, আল্লাহ ব্যতীত আমরা একে অপরকে প্রভুর স্বীকৃতি প্রদান করব না। যদি তারা পিছু হটে যায়, তবে তোমরা বলে দাও—সাক্ষী থাক, আমরা মুসলমান।
ইহুদিরা বিশ্বাস করে, উজাইর আ: আল্লাহর পুত্র ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তাই, তারা তার আত্মার পূজা করে, তাদের ইচ্ছাগুলো নিবেদন করে তার কাছে। তাদের সমাজের কোন বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব কিংবা জ্ঞানী মৃত্যুবরণ করলে তার কবরের উপর সমাধি নির্মাণ করে পুজো করতে আরম্ভ করে। তাকে কেন্দ্র করে মসজিদ নির্মাণ করে তাতে নামাজ পড়া ও ধ্যান করাকে উত্তম জ্ঞান করে। খ্রিস্টানরা হজরত ঈসা আ:-কে মনে করে আল্লাহর পুত্র। ইহুদিরা হজরত ঈসা আ:-কে যে স্থানে—তাদের ধারণা মতে—শূলীতে চড়িয়েছিল, সেখানে, এবং আনতাকিয়ায় ঈসা আ:-এর এক সহযোগী ইউহানার সমাধিতে মেলার আয়োজন করে। তাদের কোন বিজ্ঞ ব্যক্তি কিংবা ফকির-বেশধারী কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার জন্য নির্মাণ করা হয় বিশাল ও সুদৃশ্য সমাধি। তাকে কেন্দ্র করে উপাসনালয় নির্মাণ করা হয়। সজ্জিত করা হয় আলো জ্বালিয়ে। পয়গম্বর ও অলিদের সমাধিতে ধ্যানের আয়োজন করা হয়। ইহুদি ও খৃষ্টান—উভয় গোষ্ঠীই তাদের কওমের মহান ব্যক্তিদেরকে আল্লাহর পক্ষ হতে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারপ্রাপ্ত ও প্রয়োজন পূরণকারী সমাধানদাতা হিসেবে জ্ঞান করে। তাদের জ্ঞানীরা যে বক্তব্য প্রদান করে, যাচাই-বাছাই ব্যতীতই তাকে খোদার বিধান হিসেবে সাব্যস্ত করে। আল্লাহ তাআলা তাদের এ বিশ্বাস ও পন্থাকে ঘোষণা করেছেন শিরক হিসেবে, এবং বলেছেন—তোমাদের পয়গম্বর, আলেম ও দরবেশরা ছিলেন তোমাদের মতই নিতান্ত মানুষ, সুতরাং, তোমরা কীভাবে তাদের এবাদতে অংশ গ্রহণ কর ? তাদের আনীত ধর্মগ্রন্থ তাওরাত বা ইঞ্জিলে তাদেরকে প্রভুর স্বীকৃতি প্রদান করতে বলা হয় নি, কিংবা তারাও দাবি করেন নি যে, তোমরা আমার এবাদত কর, প্রভু মান আমাদের—সুতরাং এভাবে শিরকি আক্বীদা প্রসারের কী অর্থ থাকতে পারে ?
পবিত্র কোরআনেও আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, তোমরা আমাকে ব্যতীত কারো পুজো করো না, কিংবা প্রার্থনা জানিয়ো না কারো কাছে। সুতরাং, কোরআন, তাওরাত ও ইঞ্জিল—ইত্যাদি ঐশী গ্রন্থ একই মতবাদ প্রচার করছে। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, ইহুদি ও খ্রিস্টানগণ তাদের ধর্মগ্রন্থ অনুসারে জীবন-যাপন করে না। উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার নবীকে সম্বোধন করে এরশাদ করেছেন—আপনি তাদের জানিয়ে দিন, তোমরা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে গায়রুল্লাহর আত্মা ও সমাধিগুলোর এবাদতে লিপ্ত হয়ো না। এবং আমাদের সকলের ধর্মগ্রন্থ অনুসারে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি একক অবস্থান তৈরি করো যে, আমরা সকলে আল্লাহকে পরিত্যাগ করে অন্ন কোন পীর, পয়গম্বর, সাধুপুরুষ, জিন-পরী, বৃক্ষ, সমাধি—ইত্যাদির পূজা করব না। কোন কিছুকে আল্লাহর সমকক্ষ হিসেবে দাঁড় করাব না। আল্লাহ ব্যতীত আমরা কাউকে প্রভুর স্বীকৃতি প্রদান করব না। ইহুদি ও খ্রিস্টানরা যদি তোমাদের এ বক্তব্য না গ্রহণ করে,—বরং তাদের অলি, বুজুর্গদের আত্মা ও সমাধির পুজোয় নিয়োজিত থাকে, তবে তোমরা তাদের বলে দাও যে, আমরা আল্লাহ পাকের আদেশের খুবই অনুবর্তী—এ ব্যাপারে তোমরাও সাক্ষী থাক।

Saturday, March 2, 2013

শাফা‘আত এবং শাফা‘আতকারীদের বর্ণনা- ২

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাঁর উম্মতের জন্য জান্নাতে প্রবেশের ব্যাপারে সুপারিশ করা এবং তাঁর প্রথম সুপারিশকারী হওয়া
প্রথম হাদিসের মধ্যে পূর্বে আলোচনা হয়েছে যে, তাঁকে বলা হবে:
« يا محمد أدخل من أمتك من لا حساب عليهم من الباب الأيمن من أبواب الجنة وهم شركاء الناس فيما سوى ذلك من الأبواب » .
“হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার উম্মতের মধ্যে যাদের কোন হিসাব-নিকাশ হবে না, তাদেরকে জান্নাতের দরজাসমূহের ডান পার্শ্বের দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। এ দরজা ছাড়া অন্যদের সাথে অন্য দরজা দিয়েও তাদের প্রবেশের অধিকার থাকবে।” আর দ্বিতীয় হাদিসের মধ্যে আলোচনা হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুপারিশ করবেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সুপারিশ গ্রহণ করবেন এবং তাঁর জন্য সীমানা নির্ধারণ করে দিবেন, অতঃপর তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ১৯. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ يَشْفَعُ فِى الْجَنَّةِ , وَأَنَا أَكْثَرُ الأَنْبِيَاءِ تَبَعًا » . (أخرجه مسلم) .
“আমি প্রথম ব্যক্তি, যে জান্নাতের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে শাফা‘আত করব, আর নবীগণের মধ্যে আমার অনুসারীর সংখ্যাই হবে সবচেয়ে বেশি।”[1] ২০. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« أَنَا أَكْثَرُ الأَنْبِيَاءِ تَبَعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ , وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ يَقْرَعُ بَابَ الْجَنَّةِ » . (أخرجه مسلم) .
“কিয়ামতের দিনে নবীগণের মধ্যে আমার অনুসারীর সংখ্যাই হবে সবচেয়ে বেশি এবং আমিই সবার আগে জান্নাতের কড়া নাড়ব।”[2] ২১. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«آتِى بَابَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَسْتَفْتِحُ فَيَقُولُ الْخَازِنُ: مَنْ أَنْتَ ؟ فَأَقُول: مُحَمَّدٌ, فَيَقُولُ: بِكَ أُمِرْتُ لاَ أَفْتَحُ لأَحَدٍ قَبْلَكَ » . (أخرجه مسلم) .
“কিয়ামত দিবসে আমি জান্নাতের গেইটে এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইব। তখন খাজাঞ্চি বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তরে বলব, মুহাম্মদ। খাজাঞ্চি বলবেন: ‘আপনার জন্যই দরজা খুলতে আমি আদিষ্ট হয়েছি। আপনার পূর্বে অন্য কারোর জন্য দরজা খুলব না’।”[3] ২২. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

Friday, March 1, 2013

শাফা‘আত এবং শাফা‘আতকারীদের বর্ণনা

শাফা‘আত এবং শাফা‘আতকারীদের বর্ণনা

[যেভাবে আল-কুরআন ও সহীহ সুন্নায় বর্ণিত হয়েছে]
শাইখ ইবরাহীম ইবন আবদিল্লাহ আল-হাযেমী
অনুবাদ : মোঃ আমিনুল ইসলাম
নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাঁর নিকট তাওবা করি; আর আমাদের নফসের জন্য ক্ষতিকর এমন সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। সুতরাং আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই; আর যাকে তিনি পথহারা করেন, তাকে পথ প্রদর্শনকারীও কেউ নেই। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাঁর প্রতি ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন।
শাফা‘আত (شفاعة) শব্দের শাব্দিক অর্থ
ইবনুল আছীর ‘আন-নিহায়া’ ( النهاية ) গ্রন্থে বলেন: হাদিসের মধ্যে দুনিয়া ও আখিরাত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে " الشفاعة " (শাফা‘আত) শব্দটি বারবার আলোচিত হয়েছে; আর তার অর্থ হল তাদের মধ্যকার সংঘটিত অন্যায় ও অপরাধ থেকে পরিত্রাণের ব্যাপারে আবেদন-নিবেদন করা; বলা হয়:
شفع يشفع شفاعة فهو شافع و شفيع .
সুপারিশকারীকে আরবিতে شافع ও شفيع বলা হয়; আর যিনি শাফা‘আত তথা সুপারিশ গ্রহণ করেন, তাকে আরবিতে " المشفِّع " বলা হয়; পক্ষান্তরে যার সুপারিশ গ্রহণ করা হয়, তাকে আরবিতে " المشفَّع " বলা হয়। ‘আল-কামূস’ ( القاموس ) ও ‘তাজুল ‘আরূস’ ( تاج العروس ) –এর মধ্যে আছে: الشفيع মানে: শাফা‘আতের অধিকারী তথা সুপারিশকারী, তার বহুবচন হল: شفعاء ; আর সুপারিশকারী হল অন্যের জন্য প্রার্থনাকারী, যাকে সেই ব্যক্তি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করার জন্য সুপারিশকারীরূপে গ্রহণ করল। উপরোক্ত অভিধানদ্বয়ের মধ্যে আরও আছে: বলা হয়ে থাকে, "وشفّعته فيه تشفيعا حين شفع" [আর আমি

Monday, February 25, 2013

বিদআত (পর্ব ২)

বিদআত (পর্ব ২)

বিদআতের ক্ষতিকর দিক:— বেদআতের অভ্যুদয় ও ব্যাপ্তিতে নানাবিধ ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যার উপর ভিত্তি করে অনেক মারাত্মক অপরাধ সংঘটিত হয়ে যায়। নিম্নে কিছু নমুনা পেশ করা হল। (১) মহান আল্লাহ তাআলা এ দ্বীনকে পূর্ণতা দিয়েছেন মর্মে ঘোষণা করে বলছেন الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا (المائدة:৩) ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম, এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে ইসলামকে মনোনীত করলাম।’
বেদআত সংঘটিত করার মাধ্যমে আল্লাহর উপরোক্ত বাণীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়। কারণ একজন বেদআতি যখন একটি নতুন বেদআত প্রচলন ঘটায় তখন সে সেটিকে দ্বীন বলেই বিশ্বাস করে। আর এর অর্থই হচ্ছে, দ্বীন পূর্ব হতে পূর্ণাঙ্গ নয়। তাতে সংযোজনের সুযোগ আছে।
(২) বেদআতের প্রচলন দ্বারা শরিয়তে ইসলামিয়া অসম্পূর্ণ ও ত্র“টি যুক্ত ছিল—প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। বেদআত প্রচলনকারী এর ত্র“টি দূর করে পূর্ণতা দান করেছেন মর্মে বিশ্বাস করাকে বাধ্য করে।
(৩) বেদআত—যে সকল মুসলমান তাকে গ্রহণ করেনি—তাদের ব্যাপারে অপবাদ দেয়াকে আবশ্যক করে যে, তাদের দ্বীন অসম্পূর্ণ, সাথে সাথে যারা এ বেদআত আত্মপ্রকাশ করার পূর্বেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন তাদের ধর্মও অপূর্ণ ছিল মর্মে বিশ্বাস করাকে জরুরি করে তুলে। অথচ এ ব্যাপারটি কত মারাত্মক।
(৪) বেদআত সুন্নত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, কেননা সাধারণত: দেখা যায় যারা বেদআত লিপ্ত হয়ে পড়ে তারা সুন্নত থেকে দূরে সরে যান। এ প্রসঙ্গে কতিপয় সালাফ থেকে বর্ণিত তারা বলেছেন : ما أحدث قوم بدعة إلا هدموا مثلها من السنة. ‘যখনই কোন সম্প্রদায় বেদআতের প্রচলন ঘটায় তখন উক্ত বেদআতের কারণে সে স্থানের সুন্নতের বিলুপ্তি ঘটে।’

Sunday, February 24, 2013

বিদআত (পর্ব ১)

বিদআত (পর্ব ১)

বিদআতের সংজ্ঞা শাব্দিক অর্থে বেদআত البدع থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ হচ্ছে, الاختراع على غير مثال سابق. অর্থাৎ অতীত দৃষ্টান্ত ব্যতীত নতুন আবিষ্কার। এ থেকেই আল্লাহ তাআলার বাণী : بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ. البقرة:(১১৭) অর্থাৎ ‘অতীত দৃষ্টান্ত ব্যতীত আকাশ জমিনের সৃষ্টিকর্তা। এবং قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِنَ الرُّسُلِ (الأحقاف:৯) অর্থাৎ ‘আমিই প্রথম ব্যক্তি নই যে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের নিকট রিসালতের দায়িত্ব নিয়ে এসেছি।’ বরং আমার পূর্বে বহু রাসূল অতীত হয়েছেন। প্রচলন আছে : ابتدع فلان بدعة অর্থাৎ এমন পদ্ধতি শুরু করেছে যা ইতিপূর্বে কেউ করেনি। শরয়ি পরিভাষায় বেদআত বলা হয়— ما أحدث فى الدين على خلاف ماكان عليه النبي صلى الله عليه وسلم وأصحابه من عقيدة وعمل. ‘দ্বীনের মধ্যে রাসূল সা. ও সাহাবা কর্তৃক প্রবর্তিত আক্বিদা ও আমল পরিপন্থী নতুন আক্বিদা ও আমলের প্রচলন ঘটানো।’
আবিস্কার দুই প্রকার : (১) অভ্যাস (ও জাগতিক প্রয়োজনের) ক্ষেত্রে আবিষ্কার—যথা বর্তমানে প্রচলিত ও নিত্য নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসমূহ। এগুলো মুবাহ (অনুআেদিত)। কারণ আদত ও অভ্যাসের ক্ষেত্রে আসল হচ্ছে ইবাহাহ الإباحة বা বৈধ হওয়া। (২) দ্বীনের (ইসলাম ধর্মের) ক্ষেত্রে আবিষ্কার। এটি হারাম। কারণ দ্বীনের ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে توقيف বা শরিয়তের সিদ্ধান্তের উপর অবস্থান করা। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:— من أحدث فى أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد. ‘যে আমাদের দ্বীনে নতুন কিছু সংযোজন ও সৃষ্টি করবে যা মূলত তাতে নেই সেটি পরিত্যাজ্য।’ এ হাদিস প্রমাণ করছে যে, দ্বীনের মধ্যে প্রত্যেক নতুন সৃষ্ট বিষয়ই বেদআত আর প্রত্যেক বেদআতই গোমরাহি ও পরিত্যাজ্য।

Saturday, February 23, 2013

অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ : ইসলামি দৃষ্টিকোণ

بسم الله الرحمن الرحيم
অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ : ইসলামি দৃষ্টিকোণ
শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহর জন্য। সালাত ও সালাম নিবেদন করছি আমাদের সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সকল সাহাবীগণের প্রতি। বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইসলাম সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকার কারণে বা ইসলাম সম্পর্কে উদাসীনতার কারণে ইসলাম ধর্মের নামে অনেক অনাচার, কুসংস্কৃতি, শিরক ও বিদআত প্রচলিত আছে ও প্রচলন ঘটছে। এর মধ্যে একটি হল, অলী আওলিয়াদের অসীলা দিয়ে দুআ-প্রার্থনা করা, তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া, তারা ভাল-মন্দ কিছু করতে পারে বলে বিশ্বাস রাখা, তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যাবে বলে বিশ্বাস করা। এ উদ্দেশ্যে তাদের কবর যিয়ারত করা, তাদের কবর তওয়াফ করা, কবরে উরস উৎসব আয়োজন করা ইত্যাদি। অনেক মুসলিম এ সকল কাজ এ ধারনার ভিত্তিতেই করে যে, এই কবরে শায়িত অলী আওলিয়ারা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলে আল্লাহর রহমত লাভ করা যাবে। অথবা তাদেরকে অসীলা বা মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করলে আল্লাহ আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন। তাদেরকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করতে যেয়ে তারা তার মাধ্যমে বা তার নামে বিপদ থেকে মুক্তি কামনা করে আল্লাহর কাছে। অনেকে সরাসরি তাদের কাছেই নিজেদের প্রয়োজন ও অভাব পুরণের জন্য প্রার্থনা করে। বিপদ থেকে উদ্ধার কামনা করে। তারা মনে করে এ ধরণের অসীলা গ্রহণ করতে ইসলামে নিষেধ নয়। বরং এদের অনেকে মনে করে এ ধরনের অসীলা গ্রহণ ইসলামে একটি ভাল কাজ।
 কিন্তু আসলে অসীলা গ্রহণ কী? এর বৈধতা কতটুকু? বইটিতে এ বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ। সত্যিকার অসীলা হল, আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণের মাধ্যমে সৎকর্ম করা আর নিষিদ্ধ ও হারাম কথা-কর্ম থেকে বেঁচে থাকা। আর নেক আমল সম্পাদন করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা হল সত্যিকার অসীলা। তা ছাড়া আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও গুণাবলির মাধ্যমে অসীলা গ্রহণের কথা আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন। কিন্তু মৃত অলী আওলিয়াদের কবরের কাছে যাওয়া, কবর তওয়াফ করা, কবরে-মাজারে মানত করা, কবরে শায়িত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা, তার কাছে নিজের অভাব অভিযোগের কথা বলা ইত্যাদি কাজ-কর্মের মাধ্যমে অসীলা গ্রহণ শুধু নিষিদ্ধই নয় বরং এগুলো শিরক ও কুফরী। এগুলোতে কেহ লিপ্ত হলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। নাউজুবিল্লাহ! এ গেল মৃত অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ সম্পর্কে। আবার অনেকে জীবিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে নাজায়েয অসীলা গ্রহণ করে থাকে। তাদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে থাকে। যেমন গরু, ছাগল, মুরগী জবেহ করার সময় বলে থাকে: আমাদের পীর সাবের নামে বা আমার বাবার নামে জবেহ করলাম। অথবা নিজের পীর বা পীরের পরিবারের লোকদের সম্মানের জন্য সেজদা করে থাকে। এগুলো সবই শিরক এবং শিরকে আকবর বা বড় শিরক। অনেকে নিজের জীবিত পীর ফকীরদের সম্পর্কে ধারনা করে থাকে যে, আল্লাহ তাআলার সাথে তার বিশেষ যোগাযোগ বা সম্পর্ক আছে, তাই তার মাধ্যমে আল্লাহকে পাওয়া যাবে, এটাও শিরক। যারা একদিন লাত উজ্জা প্রভৃতি দেব-দেবীর পূজা করতো, তারা কিন্তু এ বিশ্বাস করতো না যে এগুলো হল তাদের প্রভূ বা সৃষ্টিকর্তা। বরং তারা বিশ্বাস করতো এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে বা তাদেরকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে তারা আল্লাহ নৈকট্য অর্জন করবে। তারা এটাও বিশ্বাস করতো না যে, এ সকল দেব-দেবী বৃষ্টি দান করে বা রিযক দান করে। তারা বলতো :
مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى. (الزمر : 3)
আমরা তো তাদের ইবাদত করি এ জন্য যে তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। (সূরা যুমার, আয়াত ৩) তারা এ সম্পর্কে আরো বলতো :
هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ . (يونس : 18)
এরা (দেব-দেবী) আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শুপারিশ করবে। (সূরা ইউনূস, আয়াত ১৮)
 দেখা গেল তারা এ অসীলা গ্রহণের কারণেই শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়লো। আর এ শিরকের বিরুদ্ধে তাওহীদের দাওয়াতের জন্যই আল্লাহ তাআলা রাসূলগণকে পাঠালেন যুগে যুগে, প্রতিটি জনপদে। এ সকল দেব-দেবীর কাছে যেমন প্রার্থনামূলক দুআ করা শিরক তেমনি সাহায্য প্রার্থনা করে দুআ করাও শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেন:
قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِهِ فَلَا يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنْكُمْ وَلَا تَحْوِيلًا. (الإسراء : 56)
বল, তাদেরকে ডাক, আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে (উপাস্য) মনে কর। তারা তো তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার ও পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না। (সূরা ইসরা, আয়াত ৫৬)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ ﴿22﴾ وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ. (سبأ : 22-23)
বল, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে করতে তাদেরকে আহবান কর। তারা আসমানসমূহ ও যমীনের মধ্যে অণু পরিমাণ কোন কিছুর মালিক নয়। আর এ দুয়ের মধ্যে তাদের কোন অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নয়। আর আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া তাঁর কাছে কোন সুপারিশ কোন কাজে আসবে না। (সূরা সাবা, আয়াত ২২-২৩)
এ সকল আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বললেন: আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয়, যাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করা হয় তারা অনু পরিমাণ বস্তু সৃষ্টি করতে পারে না। তারা কোন সৃষ্টি জীবের সামান্য কল্যাণ করার ক্ষমতা রাখে না। তারা আশ্রয় প্রার্থনাকারীকে কোন আশ্রয় দেয়ার সামর্থ রাখে না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরকে মসজিদ বানাতে নিষেধ করেছেন। কবরের কাছে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। কবরকে সেজদা দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি ওফাতের সময়ও বলেছেন: আল্লাহ তাআলা ইহুদী ও খৃষ্টানদের অভিসম্পাত করুন। তারা নবীদের কবরকে ইবাদতের স্থান হিসাবে গ্রহণ করেছে। আর ইবাদত-বন্দেগীর দ্বারা কবরকে সম্মান করা হল শিরকে লিপ্ত হওয়ার একটি রাস্তা। এভাবে কবরকে পূজা করার মাধ্যমেই মানুষ মূর্তি পূজার দিকে ধাবিত হয়। ওমর রা. দুআর সময় আব্বাস রা. কে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন, এ বিষয়টি দিয়ে অনেকে মৃত ব্যক্তির অসীলা গ্রহণ করার বৈধতা দেয়ার প্রয়াস পান। কিন্তু ওমর রা. আব্বাস রা. এর দুআকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছেন তার ব্যক্তিত্বকে নয়। আর আব্বাস রা. তখন জীবিত ছিলেন। যে কোন জীবিত ব্যক্তির দুআকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করা যায়। ওমর রা. তা-ই করেছেন। তিনি বলেছেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত থাকাকালে আমরা তার অসীলা দিয়ে দুআ করতাম। এখন তিনি নেই তাই আমরা তার চাচা আব্বাসকে দুআ করার ক্ষেত্রে অসীলা হিসাবে নিলাম। ওমর রা. এর এ বক্তব্যে স্পষ্ট হল যে, তিনি কোন মৃত ব্যক্তিকে দুআর সময় অসীলা হিসাবে গ্রহণ বৈধ মনে করতেন না। তিনি নবী হলেও না। বিষয়টা এমন, যেমন আমরা কোন সৎ-নেককার ব্যক্তিকে বলে থাকি, আমার জন্য দুআ করবেন। কোন আলেম বা বুযুর্গ ব্যক্তির মাধ্যমে আমরা নিজেদের জন্য দুআ করিয়ে থাকি। এটাও এক ধরণের অসীলা গ্রহণ। এটা বৈধ। কিন্তু কোন বুযুর্গ ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তাকে অসীলা করে দুআ করা, দুআর সময় তার রূহের প্রতি মনোনিবেশ করা (যেমন অনেকে বলে থাকে আমি আমার দাদাপীর অমুকের দিকে মুতাওয়াজ্জুহ হলাম), তার থেকে ফয়েজ-বরকত লাভের ধারনা করা, এগুলো নিষিদ্ধ ও শিরক। মৃত ব্যক্তি যত মর্যাদাবান বুযুর্গ হোক সে কারো ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা রাখে না। যখন সে মৃত্যুর পর নিজের জন্য ভাল মন্দ কিছু করতে পারে না, তখন অন্যের জন্য কিছু করতে পারার প্রশ্নই আসে না। সে কারো দুআ কবুলের ব্যাপারে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। কাউকে উপকার করার বা বিপদ থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা তার থাকে না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে বলেছেন : মৃত ব্যক্তি নিজের কোন উপকার করতে পারে না। তিনি বলেছেন :
إذا مات الإنسان انقطع عنه عمله إلا من ثلاث : إلا من صدقة جارية أو علم ينتفع به أو ولد صالح يدعو له . رواه مسلم
মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু তিনটি কাজের ফল সে পেতে থাকে।
১. ছদকায়ে জারিয়াহ (এমন দান যা থেকে মানুষ অব্যাহতভাবে উপকৃত হয়ে থাকে)
২. মানুষের উপকারে আসে এমন ইলম (বিদ্যা) ৩. সৎ সন্তান যে তাঁর জন্য দুআ করে। বর্ণনায়: মুসলিম হাদীসটির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানা গেল মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তিদের দুআ, ক্ষমা প্রার্থনার ফলে উপকার পেতে পারে। কিন্তু জীবিত ব্যক্তিরা মৃতদের থেকে এরূপ কিছু আশা করতে পারেনা। যখন হাদীস থেকে প্রমাণিত হল যে, কোন আদম সন্তান যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। তার আমল দিয়ে সে কোন উপকার লাভ করতে পারে না, তখন আমরা কিভাবে বিশ্বাস করি যে, অমুক ব্যক্তি কবরে জীবিত আছেন? তার সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়? তিনি আমাদের উপকার করতে পারেন? আমাদের প্রার্থনা শুনেন ও আল্লাহর কাছে শুপারিশ করেন? এগুলো সব অসার বিশ্বাস। এগুলো যে শিরক তাতে কোন সন্দেহ নেই। মৃত ব্যক্তিরা যে কবরে শুনতে পায় না, কেহ তাদেরকে কিছু শুনাতে পারে না এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন। তিনি নবীকে সম্বোধন করে বলেছেন:
إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ. (النمل : 80)
নিশ্চয় তুমি মৃতকে শোনাতে পারবে না, আর তুমি বধিরকে আহবান শোনাতে পারবে না। (সূরা নামল, আয়াত ৮০)
 যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মৃতকে কিছু শোনাতে পারেন না, তখন সাধারণ মানুষ কিভাবে এ অসাধ্য সাধন করতে পারে? কাজেই আমরা মৃতদের কবরে যেয়ে যা কিছু বলি, যা কিছু প্রার্থনা করি তা তারা কিছুই শুনতে পায় না। যখন তারা শুনতেই পায় না, তখন তারা প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কিভাবে কবুল করবে? কিভাবে তাদের হাজত-আকাংখা পূরণ করবে? আল্লাহ তাআলা ব্যতীত যা কিছুর উপাসনা করা হয়, তা সবই বাতিল। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ ﴿106﴾ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ﴿107﴾ (يونس)
আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না, যা তোমার উপকার করতে পারে না এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে না। অতএব তুমি যদি কর, তাহলে নিশ্চয় তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন ক্ষতি পৌঁছান, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহের কোন প্রতিরোধকারী নেই। তিনি তার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে তা দেন। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু (সূরা ইউনূস, আয়াত ১০৬-১০৭) এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয়, যাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করা হয় তা সবই বাতিল। আরো স্পষ্ট হল যে, এগুলো কাউকে উপকার করতে পারে না বা ক্ষতি করতে পারে না। যখন তারা সবই বাতিল, তাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করলে যখন কোন উপকার হয় না তখন কেন তাদের স্মরণাপন্ন হবে? কেন তাদেরকে অসীলা গ্রহণ করা হবে? কেন তাদের কবরে যেয়ে দুআ করা হবে? অনেক বিভ্রান্ত লোককে বলতে শুনা যায়, অমুক অলীর মাজার যিয়ারত করতে গিয়েছিলাম। সেখানে যেয়ে এই দুআ করেছিলাম। দুআ কবুল হয়েছে, যা চেয়েছিলাম তা পেয়ে গেছি ইত্যাদি। এ ধরনের কথা-বার্তা আল্লাহ তাআলার প্রতি মিথ্যারোপের শামিল। হ্যা, হতে পারে অলী আওলিয়াদের মাজারে গিয়ে কিছু চাইলে তা যেন অর্জন হবে না এ কথা বলা যায় না। তবে অর্জন হলে সেটা দু কারণে হতে পারে:
 এক. অলীর মাজারে যেয়ে যা চাওয়া হয়েছে তা পুরণ করা কোন সৃষ্টিজীবের পক্ষে সম্ভব হবে অথবা হবে না। যদি সম্ভব হয়, তাহলে হতে পারে শয়তান প্রার্থীত বিষয়গুলোকে অর্জন করিয়ে দিয়েছে। যাতে শিরকের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়। যা চেয়েছে শয়তান সেগুলো তাকে দিয়েছে। কেননা যে সকল স্থানে আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা হয় সে সকল স্থানে শয়তান বিচরণ করে। যখন শয়তান দেখল কোন ব্যক্তি কবর পূজা করছে, তখন সে তাকে সাহায্য করে থাকে। যেমন সে সাহায্য করে মূর্তিপূজারীদের। সে তাদের এ সকল শিরকি কাজগুলোকে তাদের কাছে সুশোভিত করে উপস্থাপন করে থাকে বলে আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে বহু স্থানে উল্লেখ করেছেন। এমনিভাবে শয়তান গণক ও জোতিষিদের সাহায্য করে থাকে তাদের কাজ-কর্মে। তাই অনেক সময় এ সকল গণকদের কথা ও ভবিষ্যতবাণী সত্যে পরিণত হতে দেখা যায়। এমনিভাবে শয়তান মানুষের আকৃতি ধারণ করে বিপদগ্রস্ত মানুষকে বলে থাকে অমুক মাজারে যাও, তাহলে কাজ হবে। পরে সে যখন মাজারে যায় তখন শয়তান মানুষের রূপ ধারণ করে তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। ফলে বিপদে পড়া মানুষটি মনে করে মাজারে শায়িত অলী তাকে সাহায্য করেছে। এমনিভাবে শয়তান মানব সমাজে শিরকের প্রচলন ঘটিয়েছে ও শিরকের প্রসার করে যাচ্ছে।  
দুই. আর যদি প্রার্থীত বিষয়টি এমন হয় যা পুরণ করা শুধু আল্লাহ তাআলার পক্ষেই সম্ভব, তাহলে বুঝতে হবে এ বিষয়টি অর্জনের কথা তাকদীরে আগেই লেখা ছিল। কবরে শায়িত ব্যক্তির বরকতে এটির অর্জন হয়নি। তাই সকল বিবেকসম্পন্ন মানুষকে বুঝতে হবে যে মাজারে যেয়ে দুআ করলে কবুল হয় বলে বিশ্বাস করা সর্বাবস্থায়ই কুসংস্কার। কেহ যদি মাজারে যেয়ে দুআ প্রার্থনা করে, মাজার পূজা করে মানুষ থেকে ফেরেশতাতে পরিণত হয় তাহলেও বিশ্বাস করা যাবে না যে, এটা মাজারে শায়িত অলীর কারণে হয়েছে। এর নামই হল ঈমান। এর নামই হল নির্ভেজাল তাওহীদ। তাওহীদের বিশ্বাস যদি শিরকমিশ্রিত হয়, কু সংস্কারাচ্ছন্ন হয় তা হলে ব্যক্তির মুক্তি নেই।  
কাল্পনিক কারামত অনেক মানুষই মুজিযা আর কারামতের পার্থক্য জানে না। মুজিযা আর কারামত কি তা বুঝে না। মুজিযা হল এমন অলৌকিক বিষয় যা নবীদের থেকে প্রকাশ পায়। আর কারামত হল এমন অলৌকিক বিষয় যা আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাদের থেকে প্রকাশ পায়। মুজিযা প্রকাশের শর্ত হল নবী বা রাসূল হওয়া। আর কারামত প্রকাশের শর্ত হল নেককার ও মুত্তাকী হওয়া। অতএব যদি কোন বিদআতী পীর-ফকির বা শিরকে লিপ্ত ব্যক্তিদের থেকে অলৌকিক কিছু প্রকাশ পায় সেটা মুজিযাও নয়, কারামতও নয়। সেটা হল দাজ্জালী ধোকা-বাজি বা প্রতারণা। অনেক অজ্ঞ লোক ধারনা করে থাকে মুজিযা বা কারামত, সাধনা বা চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে অর্জন করা যায়। বা মানুষ ইচ্ছা করলেই তা করতে পারে। তাই এ সকল অজ্ঞ লোকেরা ধারনা করে অলী আউলিয়াগণ ইচ্ছা করলে কারামতের মাধ্যমে অনেক কিছু ঘটাতে পারেন, বিপদ থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন। কিন্তু আসল ব্যাপার হল, কারামত কোন ব্যক্তির ইচ্ছাধীন নয়। এটি একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাধীন। মানুষ ইচ্ছা করলে কখনো কারামত সংঘটিত করতে পারে না, সে যত বড় অলী বা পীর হোক না কেন। কোন বিবেকমান মানুষ বিশ্বাস করে না যে, একজন মানুষের প্রাণ চলে যাওয়ার পর তার কিছু করার ক্ষমতা থাকে। আবার যদি সে কবরে চলে যায় তাহলে কিভাবে সে কিছু করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে? এ ধরনের কথা তারাই বিশ্বাস করতে পারে অজ্ঞতার ক্ষেত্রে যাদের কোন নজীর নেই। অলী তো দূরের কথা কোন নবীর কবরও পূজা করা জায়েয নেই। নবীর কবরতো পরের কথা, জীবিত থাকা কালে কোন নবীর ইবাদত করা, বা তাকে দেবতা জ্ঞান করে পূজা করা যায় না। এটা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন :
مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُؤْتِيَهُ اللَّهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُوا عِبَادًا لِي مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَكِنْ كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُونَ ﴿79﴾ وَلَا يَأْمُرَكُمْ أَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلَائِكَةَ وَالنَّبِيِّينَ أَرْبَابًا أَيَأْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ﴿80﴾. (آل عمران)
কোন মানুষের জন্য সংগত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার ইবাদতকারী হয়ে যাও। বরং সে বলবে, তোমরা রব্বানী(আল্লাহ ভক্ত) হও। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে। আর তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ করেন না যে, তোমরা ফেরেশতা ও নবীদেরকে প্রভূ রূপে গ্রহণ কর। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ দেবেন? (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৭৯-৮০)  
মুশরিকদের অবস্থা : অতীত ও বর্তমান যারা কবর মাযার পূজা করে তারা বলে থাকে যে, মুশরিকরা মূর্তি পূজা করত। আমরাতো মূর্তি পূজা করি না। আমরা আমাদের পীর দরবেশদের মাজার জিয়ারত করি। এগুলোর ইবাদত বা পূজা করি না। তাদের অসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ-প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ তাদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে আমাদের দুআ-প্রার্থনা কবুল করেন। এটাতো কোন ইবাদত নয়। এদের উদ্দেশ্যে আমরা বলব, মৃত ব্যক্তির কাছে সাহায্য ও বরকত কামনা করা সত্যিকারার্থে তার কাছে দুআ করার শামিল। যেমন ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগে পৌত্তলিকরা মূর্তির কাছে দুআ-প্রার্থনা করত। তাই জাহেলী যুগের মূর্তি পূজা আর বর্তমান যুগের কবর পূজার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এ দুটো কাজই লক্ষ্য উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে এক ও অভিন্ন। যখন জাহেলী যুগের মুশরিকদের বলা হল তোমরা কেন মূর্তিগুলোর ইবাদত করো? তারাতো কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। তখন তারা ইবাদতের বিষয়টি অস্বীকার করত এবং বলত:
مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى. (الزمر : 3)
আমরা তো তাদের ইবাদত করি না, তবে এ জন্য যে তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। (সূরা যুমার, আয়াত ৩) এমনিভাবে আমাদের সমাজের কবরপূজারীরাও বলে থাকে যে, আমরা তো কবরে শায়িত অলীর ইবাদত করি না। তার কাছে দুআ করি না। আমাদের উদ্দেশ্য শুধু এই যে, তারা আল্লাহর কাছে প্রিয়। তাদের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জন করা যাবে। এ সকল অলীগণকে আমরা আমাদের ও আল্লাহ তাআলার মধ্যে মাধ্যম মনে করে থাকি। কাজেই পরিণতির দিক দিয়ে জাহেলী যুগের মুশরিকদের মূর্তি পূজা আর বর্তমান যুগের মুসলমানদের কবর পূজা এক ও অভিন্ন। দুটো একই ধরনের শিরক।
 মুহাব্বাত ভালোবাসার ক্ষেত্রে শিরক অন্তরের একাগ্র ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আল্লাহ ব্যতীত আর কোন সৃষ্টি পেতে পারে না। এই নির্ভেজাল শ্রদ্ধাপূর্ণ ভালোবাসা হল একটি ইবাদত। যারা মনে করে আমরা এই কবরের অলী ও বুযুর্গদের অত্যাধিক ভালোবাসি, তাদের শ্রদ্ধা করি, তাদের সম্মান করি তাহলে এটিও একটি শিরক। আর এই মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার কারণেই তারা অলী-বুযুর্গদের কবরে মানত করে, কবর প্রদক্ষিণ করে, কবর সজ্জিত করে, কবরে ওরস অনুষ্ঠান করে। কবরবাসীর কাছে তারা সাহায্য চায়, উদ্ধার কামনা করে। যদি কবরওয়ালার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত সম্মান ও ভালোবাসা না থাকতো, তাহলে তারা এগুলোর কিছুই করত না। আর এ ধরনের ভালোবাসা শুধু আল্লাহর তাআলার জন্যই নিবেদন করতে হয়। আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ. (البقرة : 165)
আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, আল্লাহকে ভালবাসার মত তাদেরকে ভালবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালবাসায় দৃঢ়তর। (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৬৫)
 দৃঢ়তর, সত্যিকার ও সার্বক্ষণিক ভালোবাসা একমাত্র তাআলার প্রাপ্য। এটা অন্যকে নিবেদন করলে শিরক হয়ে যাবে। মুশরিক পৌত্তলিকরা তাদের দেব-দেবীর জন্য এ রকম ভালোবাসা পোষণ করে থাকে। আল্লাহ মানুষের খুবই কাছে। মানুষ আল্লাহর কাছে তার প্রার্থনা পৌছে দিতে মাধ্যম বা অসীলা খোঁজে। কিন্তু কেন? আল্লাহ তাআলা কি মানুষ থেকে অনেক দূরে? আর মাজারে শায়িত সে সকল পীর অলীগণ মানুষের কাছে কি আল্লাহর চেয়েও নিকটে? কখনো নয়। একজন মানুষ যখন প্রার্থনা করে তখন সকলের আগেই তারা সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা নিজে বলেছেন:
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ. (البقرة : 186)
আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)
মানুষ সরাসরি আল্লাহ তাআলার কাছে তার সকল প্রার্থনা নিবেদন করবে কোন মাধ্যম ব্যতীত। এটাই ইসলামের একটি বৈশিষ্ট ও মহান শিক্ষা। আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ-প্রার্থনায় কোন মাধ্যম গ্রহণ করার দরকার নেই মোটেই। দুআ-প্রার্থনায় মাধ্যম বা অসীলা গ্রহণ একটি বিজাতীয় বিষয়। হিন্দু, বৌদ্ধ খৃষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মের লোকেরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে মূর্তি, পাদ্রী ও ধর্মযাজকদের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। এ দিকের বিবেচনায় এটি একটি কুফরী সংস্কৃতি, যা কোন মুসলমান অনুসরণ করতে পারে না। দুআ-প্রার্থনায় আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য সৎকর্মসমূহকে অসীলা হিসাবে নেয়া যায়। তেমনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নামসমূহ অসীলা হিসাবে নেয়ার জন্য আল-কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ. (الأعراف : 180)
আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আল আরাফ, আয়াত ১৮০)
সর্বশেষে বলতে চাই, যারা এ ধরনের অন্যায় অসীলা গ্রহণের মাধ্যমে শিরকে লিপ্ত হচ্ছেন তারা এর থেকে ফিরে আসুন। আমাদের দায়িত্ব কেবল সত্য বিষয়টি আপনাদের কাছে পৌঁছে দেয়া। এ সকল অসীলা নি:সন্দেহে শিরক। আর শিরক এমন এক মহা-পাপ যা আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। যে এ শিরকে লিপ্ত হবে জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা। আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ. (المائدة : 72)
নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা, আয়াত ৭২)
তাই আমাদের জন্য একান্ত কর্তব্য হল, আমাদের সকল ইবাদত-বন্দেগী, দুআ-প্রার্থনা নির্ভেজালভাবে একমাত্র এক আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদন করা। তিনি যা করতে বলেছেন আমরা তাই করবো। নিজেরা কিছু উদ্ভাবন করবো না। তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের যেভাবে প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন আমরা সেভাবেই প্রার্থনা করবো। তিনি যেভাবে অসীলা গ্রহণ অনুমোদন করেছেন, আমরা সেভাবে অসীলা গ্রহণ করবো। এর ব্যতিক্রম হলে আমরা ইসলাম থেকে দূরে চলে যাবো। কাজেই সর্বক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য হবে কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরণ করা। যদি আমরা এভাবে চলতে পারি তবে দুনিয়াতে কল্যাণ আর আখেরাতে চিরন্তন সুখ ও সফলতা লাভ করতে পারবো। অন্যথা, উভয় জগতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে শিরক থেকে হেফাজত করুন। আ-মীন!
সমাপ্ত