সভ্য সমাজে এমনটি কল্পনাও করা যায় না : রফিকুল ইসলাম মিয়া
সারা দেশে নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট বার ভবানে এ সমাবেশ করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন। বক্তব্য রাখেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট শাহ খসরুজ্জামান, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট আশরাফুজ্জামান, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ভূইয়া, অ্যাডভোকেট আরিফা জেসমিন নাহিন, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী। সভা শেষে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে বিক্ষোভ মিছিল করেন আইনজীবীরা।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, গত কয়েকদিনে বহু লোককে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দেখেছি, পুলিশ সম্প্রতি জামায়াত ও শিবিরের লোকদের কাছ থেকে লাল গোলাপ নিয়েছে। তাহলে এখন তারা গুলি চালাচ্ছে কেন? এর জবাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিতে হবে। তিনি বলেন, নবী সা.কে কটাক্ষ করার প্রতিবাদে মানিকগঞ্জের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রতিবাদ জানালে পুলিশ গুলি চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করে। সেখানে আহত এক নারীকে তার ভাসুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি চালায়। কোনো সভ্য সমাজে এমনটি হতে পারে না, এমনটি কল্পনাও করা যায় না।
তিনি বলেন, এই যে সারা দেশে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেই হরতাল পালন করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে হবে। না হলে দেশে গণতন্ত্র থাকবে না, আইনের শাসন থাকবে না। সবদিক দিয়ে ব্যর্থ সরকার সবার দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই শাহবাগ নাটকের সৃষ্টি করেছে। প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কোনো রায়ের ব্যাপারে যদি আমরা বলি- এই রায় মানি না, তাহলে আদালত কি করতো? হাইকোর্টের একজন বিচারপতির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের এখানে একজন বিচারক আছেন, যিনি কথায় কথায় সুয়োমোটো রুল জারি করেন। এখনতো তিনি কোনো রুল জারি করছেন না। শাহবাগি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা কেবল বলছে- ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই। তারা বলছেনা, ন্যায়বিচার চাই, সুবিচার চাই। রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, প্রাধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার অন্য সদ্যস্যরা শাহবাগ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে জুডিশিয়াল ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করেছে, স্বাধীন বিচার বিভাগকে আক্রমণ করেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন বলেন, সরকার তার ব্যর্থতা ঢাকতেই দেশে গণহত্যা চালাচ্ছে। এ গণহত্যার দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। দেশে এখন আর মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘তার (হাসিনা) বাবার মৃত্যুতে নাকি একজন মানুষও কাঁদেনি। সে প্রতিশোধ নিতেও তিনি দেশে গণহত্যা চালাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ব্লগাররা ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করেছে। একথা প্রচার করায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা হয়েছে। এটি কেবল মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আক্রমণ নয়, এ আক্রমণ স্বাধীন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, সরকার দেশে নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে। এসব ঢাকতে আবার পরিকল্পিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা করছে সরকার।
অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, সরকারের সমর্থনেই শাহবাগের আন্দোলন। কোনো প্রতিষ্ঠিত সরকারের সমর্থন নিয়ে কোনোদিন গণজাগরণ হয়না। শেখ মুজিব সিরাজ শিকদারকে হত্যা করেছিল, ৩০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল। আজ কোথায় শেখ মুজিব। তিনি বলেন, হিটলার টিকেনাই, মুসোলিনি টিকেনাই, মুজিব টিকেনাই, শেখ হাসিনাও টিকবেনা। হাসিনার সরকার বঙ্গোপসাগরে ভেসে যাবে।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ফ্যাসিবাদী চারিত্রে বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যখন দেখি, শাহবাগ থেকে বলা হয়- আমার দেশ, নয়া দিগন্ত পত্রিকা বন্ধ করে দিতে হবে, যখন বলা হয়- আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে হবে, তখন সে আন্দোলনকে ফ্যাসিবাদী আন্দোলন ছাড়া কিছু ভাবা যায় না। তিনি দেশব্যাপী চলমান নির্বিচার হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ উল্লেখ করে বলেন, এ গণহত্যার বিচার কার কাছে দেবো- হাসিনা সরকারের কাছে, নাকি ইমরান সরকারের কাছে? বক্তব্য দেয়ার আগে তিনি মন্ত্রীসভার অনেক সদস্যের অদ্যাক্ষর উচ্চারণ করে বিদ্রুপাত্মক স্লোগান দেন।
http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=132235
No comments:
Post a Comment