সালাতের আহকাম ও পদ্ধতি (১)
মূল : গবেষণা পরিষদ, আল-মুনতাদা আল-ইসলামী
অনুবাদ : জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সালাতের শর্তাবলি
সালাতের শর্ত নয়টি :
এক : মুসলমান হওয়া :
সালাত ছাড়াও অন্যান্য যে কোন ইবাদতের ক্ষেত্রেই মুসলমান হওয়া পূর্বশর্ত। মুসলমান বলতে উদ্দেশ্য হল, যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব হিসেবে বিশ্বাস করে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে রাসূল বলে স্বীকৃতি প্রদান, আর ইসলামকে একমাত্র দ্বীন বলে মনে-প্রাণে গ্রহণ করে। অবিশ্বাসীর যাবতীয় ইবাদত প্রত্যাখ্যাত । অবিশ্বাসীদের কোন ইবাদতই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়, যদিও তারা জমিনভর স্বর্ণ কল্যাণকর কাজে ব্যয় করে।
আল্ল¬াহ তাআলা বলেন :
وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا. (الفرقان :২৩)
‘আমি তাদের কৃতকর্মগুলো বিবেচনা করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলি-কণায় পরিণত করব।’ (সূরা আল-ফুরকান : ২৩)
দুই : বুঝার বয়সে উপনীত হওয়া :
বুঝার মত বয়সে উপনীত হওয়া হল শরীয়তের বিধানাবলী উপলব্ধি ও গ্রহণ করার একমাত্র উপায়। জ্ঞানহীন ব্যক্তির উপর শরীয়তের কোন বিধানই ওয়াজিব নয়।
প্রমাণ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
رفع القلم عن ثلاثة: النائم حتى يستيقظ، والمجنون حتى يفيق، والصغير حتى يكبر.
(رواه الترمذي:১৩৪৩)
তিন ব্যক্তি দায়মুক্ত, তাদের কোন গুনাহ লিখা হয় না।
ক-ঘুমন্ত ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত।
খ-পাগল সুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।
গ-ছোট বাচ্চা বড় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। (তিরমিযি:১৩৪৩)
তিন : ভাল মন্দের বিচার করা :
ভাল মন্দ বিচারের উপযুক্ত বয়সে উপনীত হওয়া। অবুঝ বা ছোট শিশু, যে নিজের জন্য কোন রূপ ভাল মন্দ চিিহ্নত করতে সক্ষম নয়, তার উপর সালাত ওয়াজিব নয়। শিশু যখন ভাল মন্দের পার্থক্য করতে পারে এবং সুন্দর ও অসুন্দর চিনতে পারে, তখন বুঝতে হবে যে, সে বিচার বিশ্লে¬ষণ বা তাময়ীয করার মত বয়সে পৌঁছে গেছে। সাধারণত সাত বছর বয়সে বাচ্চারা ভাল-মন্দ বুঝতে পারে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
مروا أبناءكم بالصلاة لسبع، واضربوهم عليها لعشر، وفرقوا بينهم في المضاجع. )رواه أحمد:৬৪৬৭)
‘তোমর সাত বছর বয়সে তোমাদের বাচ্চাদের সালাতের আদেশ দাও। আর সালাত না পড়লে দশ বছর বয়সে তাদের হালকা মার-ধর কর। আর তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।’ (আহমাদ:৬৪৬৭)
চার : পবিত্রতা :
নির্দিষ্ট বিধান অনুযায়ী ওযু দ্বারা পবিত্রতা অর্জন হয়।
অ¬াল্লাহ বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ .(مائدة:৬)
‘হে মুমিনগণ ! যখন তোমরা সালাতের উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হও তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ধৌত কর এবং হাতগুলোকে কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মাসেহ কর এবং পা-গুলোকে টাখনু অবধি ধুয়ে ফেল।’(মায়েদাহ:৬)
হে ঈমানদার সকল ! তোমরা যখন সালাতের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমণ্ডল ধৌত কর, তোমাদের হাত-দ্বয় ধৌত কর, মাথা মাছেহ কর এবং উভয় পায়ের গোড়ালিসহ ধৌত কর।
পাঁচ : না-পাকী দূর করা:
তিনটি স্থান হতে সালাতের পূর্বে না-পাকী দূর করতে হবে।
—শরীর পাক হতে হবে।
—পোশাক পাক হতে হবে।
আল্লাহ বলেন :
وثيابك فطهر.
‘তুমি তোমার কাপড় পাক কর’।
—সালাতের স্থান পাক হতে হবে।
রাসূল বলেন :
إن هذه المساجد لا تصلح لشيء من هذا البول والعذر. (رواه مسلم:৪২৯)
‘নিশ্চয় মসজিদ গুলোতে পেশাব পায়খানা করা কোন ক্রমেই সঙ্গত নয়।’ ( মুসলিম:৪২৯)
ছয় : সতর ঢাকা :
পুরুষের সতর নাভি হতে হাটুর নীচ পর্যন্ত।
আর মেয়েদের ক্ষেত্রে শুধু চেহারা ও দু-হাতের কবজি ছাড়া সবই সতর। তবে অপরিচিত লোকের সামনে পড়লে চেহারা ও হাতের কবজিও ঢেকে রাখতে হবে।
আল্ল¬হ বলেন :
يَا بَنِي آَدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ. (الأعراف:৩১)
‘হে আদম সন্তান ! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছেদ গ্রহণ কর কর।’ (আ’রাফ:৩১)
সাত : সময় হওয়া:
দিবারাত্রের মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় নির্ধারিত আছে। এবং সময়ের শুরু আছে এবং শেষও আছে।
সময়ের বিস্তারিত আলোচনা নিম্নরূপ :
ফযরের সালাতের সময় : সুবহে সাদেক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত।
যোহরের ওয়াক্ত : সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলা থেকে আরম্ভ করে প্রতিটি বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত।
আছরের সালাতের সময় : প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া থেকে আরম্ভ করে দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত।
মাগরিবের সময় : সূর্যাস্ত থেকে আরম্ভ করে পশ্চিম আকাশের লালিমা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত।
এশার সালাতের সময় : লালিমা অদৃশ্য হওয়ার পর অর্ধরাত্রি পর্যন্ত।
ওয়াক্ত শর্ত হওয়ার প্রমাণ, আল্ল¬াহ বলেন :
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا. (النساء:১০৩)
‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত’।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করার প্রমাণ : হাদিসে এসেছে -
حديث جبريل أنه أم النبي صلي الله عليه وسلم يوماً في أول وقت كل صلاة ويوماً في آخروقت كل صلاة ثم قال (يا محمد الصلاة بين هذين الوقتين ). )رواه مسلم:৯৭১)
জিব্রাঈল আঃ-এর হাদীস, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে প্রথম দিন সালাত পড়ান প্রত্যেক সালাতের শুরু ওয়াক্তে আর পরের দিন সালাত পড়ান প্রত্যেক সালাতের শেষ ওয়াক্তে।
তারপর তিনি বলেন : হে মুহাম্মদ ! এ সময়ের মধ্যবর্তী সময়ই হল সালাতের সময়। (মুসলিম:৯৭১)
আট : কিবলামুখী হওয়া :
ক্বিবলা বা কাবা শরীফকে সামনে রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা একজন নামাযির উপর ওয়াজিব। কাবা শরীফ যদি সরাসরি সামনে হয় তবে তাকে অবশ্যই পুরো শরীর দ্বারা কিবলা-মুখ হতে হবে। আর যদি দূরে হয় তবে ক্বিবলার দিককে সামনে রাখা তার উপর ওয়াজিব। বিভিন্নভাবেই ক্বিবলা চেনা যেতে পারে।
ক্স সূর্য উদয় হওয়ার দিক।
ক্স রাত্রের বেলা সূর্য অস্ত যাওয়ার দিক। রাত্রে ধ্রুবতারা দ্বারা, মসজিদের মেহরাব, কম্পাস দ্বারা অথবা কাউকে জিজ্ঞাসা করার দ্বারা। ক্বিবলা নির্ধারণের চেষ্টা করা নামাযির উপর ওয়াজিব।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ. (البقرة:১৪৪)
‘নিশ্চয় আমি আকাশের দিকে তোমার মুখমণ্ডল উত্তোলন অবলোকন করছি। তাই আমি তোমাকে ঐ ক্বিবলামুখীই করব যা তুমি কামনা করছ। অতএব তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নাও। এবং তোমরা যেখানেই আছ তোমাদের মুখ সে দিকেই প্রত্যাবর্তিত কর।’
নয় : নিয়্যত:
নিয়ত হল, কোন কাজ করার উদ্দেশ্যে দৃঢ় প্রত্যয়ী হওয়া, মুখে কোন কথা না বলা। ফরজ সালাত আদায়ের ইচ্ছা করলে তার মন ও অন্তর উপস্থিত থাকবে।
প্রমাণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
إنما الأعمال بالنيات، وإنما لكل امرئ ما نوى ...( رواه البخاري:০১)
‘বান্দার সমস্ত আমল নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক মানুষ তার নিয়্যত অনুসারেই তার বিনিময় পাবে।’ (বুখারী:০১)
সালাতের বিধানাবলী
আল্ল¬হ তা‘আলা কুরানে করীমে সালাতের আদেশ দিলেও এর পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেননি। তবে হাদীসে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আল্লাহ বলেন :
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ. (النحل:৪৪)
‘আর তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি মানুষকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য।’
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
صلوا كما رأيتموني أصلي. (رواه البخاري:৫৯৫)
‘তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত পড়তে দেখ ঠিক সেভাবে সালাত আদায় কর।’ (বুখারী:৫৯৫ )
একজন মুসলমান যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন তার অন্তরে এমন একটি অনুভূতি থাকা উচিত যে, সে এখন মহান আল্ল¬হর সম্মুখে দণ্ডায়মান, তিনি তার চোখের ইশারা অন্তরের অন্ত¯থলের বিরাজমান সব কিছুই জানেন। মনের চিন্তা চেতনা আকুতি-মিনতি সবই তার জ্ঞাত। যদি মানুষের মধ্যে এ ধরনের অনুভূতি জাগ্রত থাকে তবেই তার অন্তর সালাতে একমাত্র আল্ল¬াহর দিকেই নিমগ্ন থাকবে। যেমনিভাবে তার দেহ-শরীর ক্বিবলার দিকে থাকে অনুরূপভাবে তার মনও ক্বিবলামুখী থাকবে। একজন নামাযির কর্তব্য হল, যখনই সে সালাতে দাঁড়াবে, তাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, সে এখন আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত, আর যখন সালাত আরম্ভ করে তখন বিশ্বাস করবে যে, এখন সে আল্ল¬াহর সাথেই কথোপকথন করছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
إذا قام أحدكم يصلي فإنه يناجي ربه. )رواه البخاري:৩৯০ )
‘যখন কেউ সালাতে দাড়ায় সে আল্ল¬াহর সাথেই নিভৃতে আলাপ করে।’ (বুখারী:৩৯০)
অতঃপর সালাতে যখন বলে, ‘আল্ল¬াহু আকবর’ তখন সে বিশ্বাস করে যে আল্ল¬াহই সব বড়র বড়, তার উপর আর কোন বড় নেই।
আর জাগতিক সবকিছুই তার নিকট তুচ্ছ। কারণ, সে দুনিয়াকে পশ্চাতে ফেলে সালাতে নিমগ্ন হয়। তাকবীর বলার সাথে সাথে দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠায়, ডান হাতকে বাম হাতের বাহুর উপর রাখে, মাথাকে অবনত করে, উপরের দিকে চক্ষু উঠায় না এবং ডানে বামে তাকায় না। অতঃপর সে সালাত শুরুর দ‘ুআ পড়বে আর বলবে সুবহানাকা আল্ল¬াহুম্মা
)سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالي جدك ولاإله غيرك(
এছাড়া ও আরো যে সব দ‘ুআ বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমানিত, সেগুলোও পাঠ করা যেতে পারে।
তারপর আউজু বিল্ল¬াহ (أعوذ بالله من الشيطان الرجيم) ও বিছমিল্ল¬াহ (بسم الله الرحمن الرحيم ) পড়বে।
তারপর সুরা ফাতেহা পড়বে আর সুরা ফাতেহার অর্থের মধ্যে গভীরভাবে চিন্তা করবে।
হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আল্ল¬াহ তাআ‘লা বলেন, আমি সালাতকে আমার ও বান্দার মাঝে দুই ভাগ করি, এক অর্ধেক আমার জন্য, আর অর্ধেক আমার বান্দার, আর বান্দা আমার নিকট যা চায় তাই সে পায়। যখন সে বলে, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ আল্ল¬াহ বলেন : (আমার বান্দা আমার প্রশংসা করছে। আর যখন বলে ‘আররাহমানিররাহীম’الرحمن) الرحيم ) আল্ল¬াহ বলেন আমার বান্দা আমার গুনগান করছে এবং আমার মহত্বের র্বণনা দিচ্ছে। আর যখন বলবে,مالك يوم الدين) ) আল্ল¬াহ বলেন : مجدني عبدي অর্থাৎ আমার বান্দা আমার মহত্বের বর্ণনা দিচ্ছে। আর যখন বলে إياك نعبد وإياك نستعين )) আল্লাহ বলেন : ইহা আমার এবং আমার বান্দার মাঝে সীমাবদ্ধ আর বান্দা লাভ করে যা সে প্রার্থনা করে। আবার যখন সে বলে إهدنا الصراط المستقيم )) আল্লাহ বলেন: এ শুধু আমার বান্দার এবং সে লাভ করে যা সে প্রার্থনা করে। (মুসলিম:৫৮৯ )
আর সুরা ফাতেহা শেষ করে সে آمين) ) বলবে। অর্থাৎ, হে আল্লাহ ! আপনি আমার দু‘আ কবুল করুন।
সুরা ফাতেহা শেষ করার পর কুরআনের যে কোন অংশ থেকে সহজ কয়েকটি আয়াত তিলাওয়াত করবে। তারপর দু’হাত তুলে আল্লাহ আকবর বলে রুকু করবে। রুকুতে দু’হাত হাঁটুর উপর রাখবে। আঙ্গুলগুলো খোলা থাকবে আর দুই বাহুকে দুই পার্শ্ব থেকে দূরে রাখবে। মাথা ও পিঠ সমান রাখবে, বাঁকা করবেনা। রুকুতে গিয়ে কমপক্ষে তিনবার سبحان ربي العظيم বলবে। এবং বেশী বেশী করে আল্লাহর মহত্ব বর্ণনা করবে।যেমন, বলবে—
( سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفرلي) (বুখারী)
অতঃপর ‘আল্লাহু আকবর’ বলে মাথা উঁচু করবে এবং দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত অথবা দু কানের লতী পর্যন্ত উঠাবে, ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর রাখবে এবং বলবে, ربنا ولك الحمد অথবা ربنا لك الحمد অথবা اللهم ربنا لك الحمد উল্লে¬খিত দ‘ুআগুলি এক এক সময় এক একটি করে পড়া উত্তম। আর যদি নামাযি মুক্তাদি হয় তবে তাকে سمع الله لمن حمده বলতে হবে না, বরং সে উঠার সময় শুধু উল্লে¬খিত দু‘আগুলি পড়বে। এছাড়া সে এ দু‘আও পড়তে পারে ربنا ولك الحمد (বুখারী )
তারপর সেজদায় যাওয়ার জন্য তাকবীর বলবে। সেজদায় যাওয়ার সময় দুই হাত উঠানোর কোন প্রয়োজন নেই। সেজদায় যাওয়ার সময় হাত উঠানো বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। প্রথমে দু হাঁটু জমিনে রাখবে তারপর দুই হাত তারপর কপাল তারপর নাক। মোটকথা, সাতটি অঙ্গের উপর সেজদা করবে কপাল নাক দুই ক্ববজি দুই হাঁটু দুই পায়ের আঙ্গুলি। আর বাহুদ্বয়কে খাড়া করে রাখবে, মাটির সাথে মেশাবে না এবং হাঁটুর উপরেও রাখবে না, আর দুই বাহুকে দুই পার্শ্ব হতে এবং পেটকে দুই উরু হতে আলাদা রাখবে। পিঠ উঁচু করে রাখবে, বিছিয়ে দিবে না। সেজদারত অবস্থায় তিনবার বলবে : سبحان ربي الأعلي এবং سبوح قدوس বলারও বিধান রয়েছে। (মুসলিম:৭৫২ )
আর সেজদায় বেশী বেশী করে আল্লাহর নিকট র্প্রাথনা করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন :
أقرب ما يكون العبد من ربه وهو ساجد، فأكثروا الدعاء ( رواه مسلم:৫৭৯)
‘বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্য লাভ করে যখন সে সেজদারত থাকে। সুতরাং, তোমরা সেজদারত অবস্থায় বেশী বেশী প্রার্থনা কর।’ (মুসলিম:৫৭৯)
কিন্ত মুক্তাদির জন্য দীর্ঘ দু‘আ করার অজুহাতে ইমামের চেয়ে বেশী দেরী করা : কোন ক্রমেই তা ঠিক নয়। কারণ, ইমামের অনুকরণ করা করা ওয়াজিব ও অধিক গুরুত্বর্পূণ বিষয়। তারপর তাকবীর বলে সেজদা হতে উঠবে এবং দুই সেজাদার মাঝে ‘মুফতারেশ’ বসবে।
এর নিয়ম হল, বাম পা বিছিয়ে দিবে আর ডান পা ডান পার্শ্বে খাড়া করে রাখবে। আর দুই হাতের মধ্যে ডান হাত ডান উরুর উপর অথবা হাঁটুর মাথায় এবং বাম হাত বাম উরুর উপর অথবা হাঁটুকে মুষ্টি করে আঁকড়ে ধরবে। ডান হাতের কনিষ্ট, অনামিকা ও মধ্যমা অঙ্গুলীগুলো মিলিয়ে রাখবে। তর্জণী খোলা রাখবে শুধু দ‘ুআর সময় নড়া চড়া করতে থাকবে যেমন, رب اغفرلي বলার সময় উঠাবে এবং وارحمني বলার সময় উঠাবে। দুই সেজদার মাঝে বসা অবস্থায় এ দু‘আ পড়বে
رب اغفرلي وارحمني واجبرني وارفعني واهدني وعافني وارزقني.
তারপর প্রথম সেজদার মতই দ্বিতীয় সেজদা করবে এবং প্রথম সেজদায় যা যা পড়েছে দ্বিতীয় সেজদাতেও তাই পড়বে। তারপর দুই হাঁটুর উপর ভর করে দ্বিতীয় রাকা‘আতের জন্য দাঁড়াবে।
প্রথম রাকাতে যা যা করেছে দ্বিতীয় রাকা‘আতেও তাই করবে। তবে দ্বিতীয় রাকতে دعاء الاستفتاح পড়তে হবে না। দ্বিতীয় রাকা‘আত আদায় করা শেষ হলে তাশাহুদ পড়ার জন্য দুই সেজদার মাঝে যেভাবে দুই হাত ও পা রেখেছিল ঠিক একইভাবে হাত পা রেখে বসবে। তার পর তাশাহুদ পড়বে
(التحيات لله والصلوات والطيبات السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمداً عبده ورسوله)
(বুখারী:৭৮৮)
তাশাহুদের অর্থ :যাবতীয ইবাদত ও অর্চনা মৌখিক শারীরিক ও আর্থিক সমস্তই আল্লাহর জন্য হে নবী আপনার উপর আল্লাহর শান্তি রহমত ও বরকত অবর্তীণ হোক আমাদের উপর এবং নেক বান্দাদের উপর শান্তি অবর্তীণ হোক আমি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।
আর যদি সালাত তিন রাকা‘আত অথবা চার রাকা‘আত বিশিষ্ট হয় তা’হলে তাশাহুদ পড়ার পর তাকবীরে এহরামের সময় যেভাবে হাত ইঠায় সে ভাবে হাত উঠিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে এবং বাকী সালাত আদায় করবে। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকা‘আতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়বে।
তারপর তিন রাকা‘আত অথবা চার রাকা‘আতের পর শেষ তাশাহুদের জন্য বসবে। এবং ‘তাওয়াররুক’ করে বসবে। অর্থাৎ ডান পা খাড়া করে রাখবে এবং বাম পা নলার নিচ দিয়ে বের দিবে এবং নিতম্ভদ্বয় জমিনে বিছিয়ে দিবে। অতঃপর শেষ তাশাহুদ পড়বে এবং দুরূদ শরীফ পড়বে
اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد. (رواه البخاري:৬১৩)
হে আল্লাহ তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার বংশধরদের প্রতি রহমত নাযিল কর যেমনটি করেছিলে ইব্রাহীম আলাইহিসসালাম ও তার বংশধরদের প্রতি নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানী
এ দুরূদ শরীফকে শেষ তাশাহুদের সাথে যোগ করবে। (বুখরী মুসলিম )
এছাড়াও যে কোন দুরূদ, যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত, পড়তে পারবে।
তারপর এ দু‘আটি পড়বে :
اللهم إني ظلمت نفسي ظلماً كثيراً، ولا يغفر الذنوب إلا أنت، فاغفرلي مغفرة من عندك، وارحمني، إنك أنت التواب الرحيم. (رواه البخاري:৫৮৫১)
অর্থ ঃ হে আল্লাহ আমি আমার নিজের উপর অনেক বেশী যুলুম করেছি আর তুমি ছাড়া কেহই আমার গুনাহসমূহ আর কেহই মাফ করতে পারেনা সুতরাং তুমি তোমার নিজ গুনে আমাকে মার্জনা করে দাও এবং আমার প্রতি রহম কর তুমিতো র্মাজনা কারী ও দয়ালু।
এ দুআটিও পড়বে :
اللهم إني أعوذ بك من عذاب جهنم، ومن عذاب القبر، ومن فتنة المحيا والممات، ومن شر فتنة المسيح الدجال. رواه مسلم :৫৮৯০
অর্থ ঃ হে আল্লাহ ! আমি তোমার আশ্রয় চাচ্ছি জাহান্নাম থেকে, আশ্রয় চাচ্ছি কবর আযাব থেকে, আশ্রয় চাচ্ছি জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেতে এবং মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে
(মুসলিম :৫৮৯০)
এর পর দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যানের জন্য দু‘আ করবে।
যেমন, হাদীসে বর্ণিত :
ثم يدعوا لنفسه بما بدا له. (رواه مسلم:১২৯৩)
‘তার পর তার কল্যানের জন্য যে কোন দু‘আ করবে।’ (মুসলিম:১২৯৩)
সালামের পূর্বে বেশী বেশী করে দু‘আ করা উচিত। বিশেষ করে পুর্বোক্ত হাদীসে উল্লে¬খিত চারটি বিষয়ে আল্ল¬াহর নিকট বেশী করে প্রার্থনা করবে। তার পর তার হাদীসে উল্লেখিত অন্যান্য দুআ করতে পারে। অতঃপর السلام عليكم বলে ডানে ও বামে সালাম ফিরাবে।
উল্লে¬খিত র্কাযাবলী সুন্নাতানুসারে সম্পাদনের পর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অন্তরকে হাজির রাখা। এবং শয়তানের প্রবঞ্চণা, যা দ্বারা ছাওয়াব বিনষ্ট হয়, তা হতে অন্তরকে মুক্ত রাখা। কারণ, শয়তানের সাথে তার যুদ্ধ ততক্ষণ পর্যন্ত শেষ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না। আল্ল¬াহর নিকট আমরা আমাদের সুন্দর পরিণতি কামনা করি।
সমাপ্ত
মূল : গবেষণা পরিষদ, আল-মুনতাদা আল-ইসলামী
অনুবাদ : জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সালাতের শর্তাবলি
সালাতের শর্ত নয়টি :
এক : মুসলমান হওয়া :
সালাত ছাড়াও অন্যান্য যে কোন ইবাদতের ক্ষেত্রেই মুসলমান হওয়া পূর্বশর্ত। মুসলমান বলতে উদ্দেশ্য হল, যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব হিসেবে বিশ্বাস করে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে রাসূল বলে স্বীকৃতি প্রদান, আর ইসলামকে একমাত্র দ্বীন বলে মনে-প্রাণে গ্রহণ করে। অবিশ্বাসীর যাবতীয় ইবাদত প্রত্যাখ্যাত । অবিশ্বাসীদের কোন ইবাদতই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়, যদিও তারা জমিনভর স্বর্ণ কল্যাণকর কাজে ব্যয় করে।
আল্ল¬াহ তাআলা বলেন :
وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا. (الفرقان :২৩)
‘আমি তাদের কৃতকর্মগুলো বিবেচনা করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলি-কণায় পরিণত করব।’ (সূরা আল-ফুরকান : ২৩)
দুই : বুঝার বয়সে উপনীত হওয়া :
বুঝার মত বয়সে উপনীত হওয়া হল শরীয়তের বিধানাবলী উপলব্ধি ও গ্রহণ করার একমাত্র উপায়। জ্ঞানহীন ব্যক্তির উপর শরীয়তের কোন বিধানই ওয়াজিব নয়।
প্রমাণ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
رفع القلم عن ثلاثة: النائم حتى يستيقظ، والمجنون حتى يفيق، والصغير حتى يكبر.
(رواه الترمذي:১৩৪৩)
তিন ব্যক্তি দায়মুক্ত, তাদের কোন গুনাহ লিখা হয় না।
ক-ঘুমন্ত ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত।
খ-পাগল সুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।
গ-ছোট বাচ্চা বড় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। (তিরমিযি:১৩৪৩)
তিন : ভাল মন্দের বিচার করা :
ভাল মন্দ বিচারের উপযুক্ত বয়সে উপনীত হওয়া। অবুঝ বা ছোট শিশু, যে নিজের জন্য কোন রূপ ভাল মন্দ চিিহ্নত করতে সক্ষম নয়, তার উপর সালাত ওয়াজিব নয়। শিশু যখন ভাল মন্দের পার্থক্য করতে পারে এবং সুন্দর ও অসুন্দর চিনতে পারে, তখন বুঝতে হবে যে, সে বিচার বিশ্লে¬ষণ বা তাময়ীয করার মত বয়সে পৌঁছে গেছে। সাধারণত সাত বছর বয়সে বাচ্চারা ভাল-মন্দ বুঝতে পারে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
مروا أبناءكم بالصلاة لسبع، واضربوهم عليها لعشر، وفرقوا بينهم في المضاجع. )رواه أحمد:৬৪৬৭)
‘তোমর সাত বছর বয়সে তোমাদের বাচ্চাদের সালাতের আদেশ দাও। আর সালাত না পড়লে দশ বছর বয়সে তাদের হালকা মার-ধর কর। আর তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।’ (আহমাদ:৬৪৬৭)
চার : পবিত্রতা :
নির্দিষ্ট বিধান অনুযায়ী ওযু দ্বারা পবিত্রতা অর্জন হয়।
অ¬াল্লাহ বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ .(مائدة:৬)
‘হে মুমিনগণ ! যখন তোমরা সালাতের উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হও তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ধৌত কর এবং হাতগুলোকে কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মাসেহ কর এবং পা-গুলোকে টাখনু অবধি ধুয়ে ফেল।’(মায়েদাহ:৬)
হে ঈমানদার সকল ! তোমরা যখন সালাতের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমণ্ডল ধৌত কর, তোমাদের হাত-দ্বয় ধৌত কর, মাথা মাছেহ কর এবং উভয় পায়ের গোড়ালিসহ ধৌত কর।
পাঁচ : না-পাকী দূর করা:
তিনটি স্থান হতে সালাতের পূর্বে না-পাকী দূর করতে হবে।
—শরীর পাক হতে হবে।
—পোশাক পাক হতে হবে।
আল্লাহ বলেন :
وثيابك فطهر.
‘তুমি তোমার কাপড় পাক কর’।
—সালাতের স্থান পাক হতে হবে।
রাসূল বলেন :
إن هذه المساجد لا تصلح لشيء من هذا البول والعذر. (رواه مسلم:৪২৯)
‘নিশ্চয় মসজিদ গুলোতে পেশাব পায়খানা করা কোন ক্রমেই সঙ্গত নয়।’ ( মুসলিম:৪২৯)
ছয় : সতর ঢাকা :
পুরুষের সতর নাভি হতে হাটুর নীচ পর্যন্ত।
আর মেয়েদের ক্ষেত্রে শুধু চেহারা ও দু-হাতের কবজি ছাড়া সবই সতর। তবে অপরিচিত লোকের সামনে পড়লে চেহারা ও হাতের কবজিও ঢেকে রাখতে হবে।
আল্ল¬হ বলেন :
يَا بَنِي آَدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ. (الأعراف:৩১)
‘হে আদম সন্তান ! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছেদ গ্রহণ কর কর।’ (আ’রাফ:৩১)
সাত : সময় হওয়া:
দিবারাত্রের মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় নির্ধারিত আছে। এবং সময়ের শুরু আছে এবং শেষও আছে।
সময়ের বিস্তারিত আলোচনা নিম্নরূপ :
ফযরের সালাতের সময় : সুবহে সাদেক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত।
যোহরের ওয়াক্ত : সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলা থেকে আরম্ভ করে প্রতিটি বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত।
আছরের সালাতের সময় : প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া থেকে আরম্ভ করে দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত।
মাগরিবের সময় : সূর্যাস্ত থেকে আরম্ভ করে পশ্চিম আকাশের লালিমা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত।
এশার সালাতের সময় : লালিমা অদৃশ্য হওয়ার পর অর্ধরাত্রি পর্যন্ত।
ওয়াক্ত শর্ত হওয়ার প্রমাণ, আল্ল¬াহ বলেন :
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا. (النساء:১০৩)
‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত’।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করার প্রমাণ : হাদিসে এসেছে -
حديث جبريل أنه أم النبي صلي الله عليه وسلم يوماً في أول وقت كل صلاة ويوماً في آخروقت كل صلاة ثم قال (يا محمد الصلاة بين هذين الوقتين ). )رواه مسلم:৯৭১)
জিব্রাঈল আঃ-এর হাদীস, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে প্রথম দিন সালাত পড়ান প্রত্যেক সালাতের শুরু ওয়াক্তে আর পরের দিন সালাত পড়ান প্রত্যেক সালাতের শেষ ওয়াক্তে।
তারপর তিনি বলেন : হে মুহাম্মদ ! এ সময়ের মধ্যবর্তী সময়ই হল সালাতের সময়। (মুসলিম:৯৭১)
আট : কিবলামুখী হওয়া :
ক্বিবলা বা কাবা শরীফকে সামনে রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা একজন নামাযির উপর ওয়াজিব। কাবা শরীফ যদি সরাসরি সামনে হয় তবে তাকে অবশ্যই পুরো শরীর দ্বারা কিবলা-মুখ হতে হবে। আর যদি দূরে হয় তবে ক্বিবলার দিককে সামনে রাখা তার উপর ওয়াজিব। বিভিন্নভাবেই ক্বিবলা চেনা যেতে পারে।
ক্স সূর্য উদয় হওয়ার দিক।
ক্স রাত্রের বেলা সূর্য অস্ত যাওয়ার দিক। রাত্রে ধ্রুবতারা দ্বারা, মসজিদের মেহরাব, কম্পাস দ্বারা অথবা কাউকে জিজ্ঞাসা করার দ্বারা। ক্বিবলা নির্ধারণের চেষ্টা করা নামাযির উপর ওয়াজিব।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ. (البقرة:১৪৪)
‘নিশ্চয় আমি আকাশের দিকে তোমার মুখমণ্ডল উত্তোলন অবলোকন করছি। তাই আমি তোমাকে ঐ ক্বিবলামুখীই করব যা তুমি কামনা করছ। অতএব তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নাও। এবং তোমরা যেখানেই আছ তোমাদের মুখ সে দিকেই প্রত্যাবর্তিত কর।’
নয় : নিয়্যত:
নিয়ত হল, কোন কাজ করার উদ্দেশ্যে দৃঢ় প্রত্যয়ী হওয়া, মুখে কোন কথা না বলা। ফরজ সালাত আদায়ের ইচ্ছা করলে তার মন ও অন্তর উপস্থিত থাকবে।
প্রমাণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
إنما الأعمال بالنيات، وإنما لكل امرئ ما نوى ...( رواه البخاري:০১)
‘বান্দার সমস্ত আমল নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক মানুষ তার নিয়্যত অনুসারেই তার বিনিময় পাবে।’ (বুখারী:০১)
সালাতের বিধানাবলী
আল্ল¬হ তা‘আলা কুরানে করীমে সালাতের আদেশ দিলেও এর পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেননি। তবে হাদীসে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আল্লাহ বলেন :
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ. (النحل:৪৪)
‘আর তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি মানুষকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য।’
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
صلوا كما رأيتموني أصلي. (رواه البخاري:৫৯৫)
‘তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত পড়তে দেখ ঠিক সেভাবে সালাত আদায় কর।’ (বুখারী:৫৯৫ )
একজন মুসলমান যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন তার অন্তরে এমন একটি অনুভূতি থাকা উচিত যে, সে এখন মহান আল্ল¬হর সম্মুখে দণ্ডায়মান, তিনি তার চোখের ইশারা অন্তরের অন্ত¯থলের বিরাজমান সব কিছুই জানেন। মনের চিন্তা চেতনা আকুতি-মিনতি সবই তার জ্ঞাত। যদি মানুষের মধ্যে এ ধরনের অনুভূতি জাগ্রত থাকে তবেই তার অন্তর সালাতে একমাত্র আল্ল¬াহর দিকেই নিমগ্ন থাকবে। যেমনিভাবে তার দেহ-শরীর ক্বিবলার দিকে থাকে অনুরূপভাবে তার মনও ক্বিবলামুখী থাকবে। একজন নামাযির কর্তব্য হল, যখনই সে সালাতে দাঁড়াবে, তাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, সে এখন আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত, আর যখন সালাত আরম্ভ করে তখন বিশ্বাস করবে যে, এখন সে আল্ল¬াহর সাথেই কথোপকথন করছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
إذا قام أحدكم يصلي فإنه يناجي ربه. )رواه البخاري:৩৯০ )
‘যখন কেউ সালাতে দাড়ায় সে আল্ল¬াহর সাথেই নিভৃতে আলাপ করে।’ (বুখারী:৩৯০)
অতঃপর সালাতে যখন বলে, ‘আল্ল¬াহু আকবর’ তখন সে বিশ্বাস করে যে আল্ল¬াহই সব বড়র বড়, তার উপর আর কোন বড় নেই।
আর জাগতিক সবকিছুই তার নিকট তুচ্ছ। কারণ, সে দুনিয়াকে পশ্চাতে ফেলে সালাতে নিমগ্ন হয়। তাকবীর বলার সাথে সাথে দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠায়, ডান হাতকে বাম হাতের বাহুর উপর রাখে, মাথাকে অবনত করে, উপরের দিকে চক্ষু উঠায় না এবং ডানে বামে তাকায় না। অতঃপর সে সালাত শুরুর দ‘ুআ পড়বে আর বলবে সুবহানাকা আল্ল¬াহুম্মা
)سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالي جدك ولاإله غيرك(
এছাড়া ও আরো যে সব দ‘ুআ বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমানিত, সেগুলোও পাঠ করা যেতে পারে।
তারপর আউজু বিল্ল¬াহ (أعوذ بالله من الشيطان الرجيم) ও বিছমিল্ল¬াহ (بسم الله الرحمن الرحيم ) পড়বে।
তারপর সুরা ফাতেহা পড়বে আর সুরা ফাতেহার অর্থের মধ্যে গভীরভাবে চিন্তা করবে।
হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আল্ল¬াহ তাআ‘লা বলেন, আমি সালাতকে আমার ও বান্দার মাঝে দুই ভাগ করি, এক অর্ধেক আমার জন্য, আর অর্ধেক আমার বান্দার, আর বান্দা আমার নিকট যা চায় তাই সে পায়। যখন সে বলে, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ আল্ল¬াহ বলেন : (আমার বান্দা আমার প্রশংসা করছে। আর যখন বলে ‘আররাহমানিররাহীম’الرحمن) الرحيم ) আল্ল¬াহ বলেন আমার বান্দা আমার গুনগান করছে এবং আমার মহত্বের র্বণনা দিচ্ছে। আর যখন বলবে,مالك يوم الدين) ) আল্ল¬াহ বলেন : مجدني عبدي অর্থাৎ আমার বান্দা আমার মহত্বের বর্ণনা দিচ্ছে। আর যখন বলে إياك نعبد وإياك نستعين )) আল্লাহ বলেন : ইহা আমার এবং আমার বান্দার মাঝে সীমাবদ্ধ আর বান্দা লাভ করে যা সে প্রার্থনা করে। আবার যখন সে বলে إهدنا الصراط المستقيم )) আল্লাহ বলেন: এ শুধু আমার বান্দার এবং সে লাভ করে যা সে প্রার্থনা করে। (মুসলিম:৫৮৯ )
আর সুরা ফাতেহা শেষ করে সে آمين) ) বলবে। অর্থাৎ, হে আল্লাহ ! আপনি আমার দু‘আ কবুল করুন।
সুরা ফাতেহা শেষ করার পর কুরআনের যে কোন অংশ থেকে সহজ কয়েকটি আয়াত তিলাওয়াত করবে। তারপর দু’হাত তুলে আল্লাহ আকবর বলে রুকু করবে। রুকুতে দু’হাত হাঁটুর উপর রাখবে। আঙ্গুলগুলো খোলা থাকবে আর দুই বাহুকে দুই পার্শ্ব থেকে দূরে রাখবে। মাথা ও পিঠ সমান রাখবে, বাঁকা করবেনা। রুকুতে গিয়ে কমপক্ষে তিনবার سبحان ربي العظيم বলবে। এবং বেশী বেশী করে আল্লাহর মহত্ব বর্ণনা করবে।যেমন, বলবে—
( سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفرلي) (বুখারী)
অতঃপর ‘আল্লাহু আকবর’ বলে মাথা উঁচু করবে এবং দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত অথবা দু কানের লতী পর্যন্ত উঠাবে, ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর রাখবে এবং বলবে, ربنا ولك الحمد অথবা ربنا لك الحمد অথবা اللهم ربنا لك الحمد উল্লে¬খিত দ‘ুআগুলি এক এক সময় এক একটি করে পড়া উত্তম। আর যদি নামাযি মুক্তাদি হয় তবে তাকে سمع الله لمن حمده বলতে হবে না, বরং সে উঠার সময় শুধু উল্লে¬খিত দু‘আগুলি পড়বে। এছাড়া সে এ দু‘আও পড়তে পারে ربنا ولك الحمد (বুখারী )
তারপর সেজদায় যাওয়ার জন্য তাকবীর বলবে। সেজদায় যাওয়ার সময় দুই হাত উঠানোর কোন প্রয়োজন নেই। সেজদায় যাওয়ার সময় হাত উঠানো বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। প্রথমে দু হাঁটু জমিনে রাখবে তারপর দুই হাত তারপর কপাল তারপর নাক। মোটকথা, সাতটি অঙ্গের উপর সেজদা করবে কপাল নাক দুই ক্ববজি দুই হাঁটু দুই পায়ের আঙ্গুলি। আর বাহুদ্বয়কে খাড়া করে রাখবে, মাটির সাথে মেশাবে না এবং হাঁটুর উপরেও রাখবে না, আর দুই বাহুকে দুই পার্শ্ব হতে এবং পেটকে দুই উরু হতে আলাদা রাখবে। পিঠ উঁচু করে রাখবে, বিছিয়ে দিবে না। সেজদারত অবস্থায় তিনবার বলবে : سبحان ربي الأعلي এবং سبوح قدوس বলারও বিধান রয়েছে। (মুসলিম:৭৫২ )
আর সেজদায় বেশী বেশী করে আল্লাহর নিকট র্প্রাথনা করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন :
أقرب ما يكون العبد من ربه وهو ساجد، فأكثروا الدعاء ( رواه مسلم:৫৭৯)
‘বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্য লাভ করে যখন সে সেজদারত থাকে। সুতরাং, তোমরা সেজদারত অবস্থায় বেশী বেশী প্রার্থনা কর।’ (মুসলিম:৫৭৯)
কিন্ত মুক্তাদির জন্য দীর্ঘ দু‘আ করার অজুহাতে ইমামের চেয়ে বেশী দেরী করা : কোন ক্রমেই তা ঠিক নয়। কারণ, ইমামের অনুকরণ করা করা ওয়াজিব ও অধিক গুরুত্বর্পূণ বিষয়। তারপর তাকবীর বলে সেজদা হতে উঠবে এবং দুই সেজাদার মাঝে ‘মুফতারেশ’ বসবে।
এর নিয়ম হল, বাম পা বিছিয়ে দিবে আর ডান পা ডান পার্শ্বে খাড়া করে রাখবে। আর দুই হাতের মধ্যে ডান হাত ডান উরুর উপর অথবা হাঁটুর মাথায় এবং বাম হাত বাম উরুর উপর অথবা হাঁটুকে মুষ্টি করে আঁকড়ে ধরবে। ডান হাতের কনিষ্ট, অনামিকা ও মধ্যমা অঙ্গুলীগুলো মিলিয়ে রাখবে। তর্জণী খোলা রাখবে শুধু দ‘ুআর সময় নড়া চড়া করতে থাকবে যেমন, رب اغفرلي বলার সময় উঠাবে এবং وارحمني বলার সময় উঠাবে। দুই সেজদার মাঝে বসা অবস্থায় এ দু‘আ পড়বে
رب اغفرلي وارحمني واجبرني وارفعني واهدني وعافني وارزقني.
তারপর প্রথম সেজদার মতই দ্বিতীয় সেজদা করবে এবং প্রথম সেজদায় যা যা পড়েছে দ্বিতীয় সেজদাতেও তাই পড়বে। তারপর দুই হাঁটুর উপর ভর করে দ্বিতীয় রাকা‘আতের জন্য দাঁড়াবে।
প্রথম রাকাতে যা যা করেছে দ্বিতীয় রাকা‘আতেও তাই করবে। তবে দ্বিতীয় রাকতে دعاء الاستفتاح পড়তে হবে না। দ্বিতীয় রাকা‘আত আদায় করা শেষ হলে তাশাহুদ পড়ার জন্য দুই সেজদার মাঝে যেভাবে দুই হাত ও পা রেখেছিল ঠিক একইভাবে হাত পা রেখে বসবে। তার পর তাশাহুদ পড়বে
(التحيات لله والصلوات والطيبات السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمداً عبده ورسوله)
(বুখারী:৭৮৮)
তাশাহুদের অর্থ :যাবতীয ইবাদত ও অর্চনা মৌখিক শারীরিক ও আর্থিক সমস্তই আল্লাহর জন্য হে নবী আপনার উপর আল্লাহর শান্তি রহমত ও বরকত অবর্তীণ হোক আমাদের উপর এবং নেক বান্দাদের উপর শান্তি অবর্তীণ হোক আমি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।
আর যদি সালাত তিন রাকা‘আত অথবা চার রাকা‘আত বিশিষ্ট হয় তা’হলে তাশাহুদ পড়ার পর তাকবীরে এহরামের সময় যেভাবে হাত ইঠায় সে ভাবে হাত উঠিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে এবং বাকী সালাত আদায় করবে। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকা‘আতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়বে।
তারপর তিন রাকা‘আত অথবা চার রাকা‘আতের পর শেষ তাশাহুদের জন্য বসবে। এবং ‘তাওয়াররুক’ করে বসবে। অর্থাৎ ডান পা খাড়া করে রাখবে এবং বাম পা নলার নিচ দিয়ে বের দিবে এবং নিতম্ভদ্বয় জমিনে বিছিয়ে দিবে। অতঃপর শেষ তাশাহুদ পড়বে এবং দুরূদ শরীফ পড়বে
اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد. (رواه البخاري:৬১৩)
হে আল্লাহ তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার বংশধরদের প্রতি রহমত নাযিল কর যেমনটি করেছিলে ইব্রাহীম আলাইহিসসালাম ও তার বংশধরদের প্রতি নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানী
এ দুরূদ শরীফকে শেষ তাশাহুদের সাথে যোগ করবে। (বুখরী মুসলিম )
এছাড়াও যে কোন দুরূদ, যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত, পড়তে পারবে।
তারপর এ দু‘আটি পড়বে :
اللهم إني ظلمت نفسي ظلماً كثيراً، ولا يغفر الذنوب إلا أنت، فاغفرلي مغفرة من عندك، وارحمني، إنك أنت التواب الرحيم. (رواه البخاري:৫৮৫১)
অর্থ ঃ হে আল্লাহ আমি আমার নিজের উপর অনেক বেশী যুলুম করেছি আর তুমি ছাড়া কেহই আমার গুনাহসমূহ আর কেহই মাফ করতে পারেনা সুতরাং তুমি তোমার নিজ গুনে আমাকে মার্জনা করে দাও এবং আমার প্রতি রহম কর তুমিতো র্মাজনা কারী ও দয়ালু।
এ দুআটিও পড়বে :
اللهم إني أعوذ بك من عذاب جهنم، ومن عذاب القبر، ومن فتنة المحيا والممات، ومن شر فتنة المسيح الدجال. رواه مسلم :৫৮৯০
অর্থ ঃ হে আল্লাহ ! আমি তোমার আশ্রয় চাচ্ছি জাহান্নাম থেকে, আশ্রয় চাচ্ছি কবর আযাব থেকে, আশ্রয় চাচ্ছি জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেতে এবং মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে
(মুসলিম :৫৮৯০)
এর পর দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যানের জন্য দু‘আ করবে।
যেমন, হাদীসে বর্ণিত :
ثم يدعوا لنفسه بما بدا له. (رواه مسلم:১২৯৩)
‘তার পর তার কল্যানের জন্য যে কোন দু‘আ করবে।’ (মুসলিম:১২৯৩)
সালামের পূর্বে বেশী বেশী করে দু‘আ করা উচিত। বিশেষ করে পুর্বোক্ত হাদীসে উল্লে¬খিত চারটি বিষয়ে আল্ল¬াহর নিকট বেশী করে প্রার্থনা করবে। তার পর তার হাদীসে উল্লেখিত অন্যান্য দুআ করতে পারে। অতঃপর السلام عليكم বলে ডানে ও বামে সালাম ফিরাবে।
উল্লে¬খিত র্কাযাবলী সুন্নাতানুসারে সম্পাদনের পর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অন্তরকে হাজির রাখা। এবং শয়তানের প্রবঞ্চণা, যা দ্বারা ছাওয়াব বিনষ্ট হয়, তা হতে অন্তরকে মুক্ত রাখা। কারণ, শয়তানের সাথে তার যুদ্ধ ততক্ষণ পর্যন্ত শেষ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না। আল্ল¬াহর নিকট আমরা আমাদের সুন্দর পরিণতি কামনা করি।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment