রোযাদারের
কতিপয় ভুল-ত্র“টি
লেখক
: আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-জিবরীন
অনুবাদ
:আব্দুন নূর বিন আব্দুল জাব্বার
সমস্ত প্রশংসা সারা বিশ্বের মালিক ও পালনকর্তার জন্য এবং
দরূদ ও ছালাম বর্ষিত হোক সর্বশ্রেষ্ঠ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ , তাঁর আল ও আওলাদ এবং
সাহাবীগণের প্রতি।
১। ফরজ
রোযার জন্য রাত বা ফজরের পূর্বে নিয়্যত না করা, যদিও পূর্ণ রমজান মাসের জন্য প্রথমে একবার
নিয়্যত করাই যথেষ্ট।
২। ফজরের
আযানের সময় অথবা আযানের পরে পানাহার করা। যদিও কোন কোন মুয়াযযিন কখনও সতর্কতামূলক ভাবে
কিছু সময় পূর্বেই আযান দিয়ে থাকেন।
৩। ফজরের
এক বা দু’ঘন্টা পূর্বেই সাহরী খাওয়া। অথচ ইফতার
দ্রুত এবং সাহরী দেরীতে করার বিষয়ে হাদীসে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
৪। এ
মাসে অধিকাংশ মানুষ খাদ্য ও পানীয়তে অপচয় এবং বাড়াবাড়ি করে থাকে, অথচ রোযাকে ক্ষুধা
অনুভব করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত সম্মত করা হয়েছে, এ অপব্যয় সে মহান উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।
৫। জামাআতের
সাথে নামায আদায়ের বিষয়ে অবহেলা ও শিথিলতা, যেমন জোহর ও আসরের নামাযে অলসতা, ঘুমের
ওজর বা কৈফিয়াতে জামাআতে অনুপস্থিত থাকা অথবা অযথা কোন মূল্যহীন কাজে নিজেকে ব্যস্ত
রেখে জামাআতে হাজির না হওয়া।
৬। রোযার
দিন ও রাতে জিহবাকে মিথ্যা বলা, প্রতারণা,
গীবত, পরনিন্দা এবং অপবাদ ও চুগলখুরী করা থেকে হেফাজত বা সংরক্ষণ না করা।
৭। মূল্যবান
সময়কে খেলা-ধুলায়, আমোদ-প্রমোদে, তামাশা ও কৌতুকে এবং ফিল্ম, চলচিত্র এবং বিনোদনমূলক
অনুষ্ঠান দেখে অপচয় করা। এবং হেঁয়ালিপনায়, তর্ক ও বাদানুবাদে এবং রাস্তায় রাস্তায় অনর্থক
ঘুরে বেড়িয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করা।
৮। রামাজান
মাসে বিভিন্ন আমলকে বৃদ্ধির বিষয়ে অবহেলা করা, যেমনঃ দু‘আ, যিকির-আযকার এবং কুরআন পাঠ
ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাযে শৈথিল্য ও অবহেলা করা।
৯। জামাআতের
সাথে তারাবীর নামায ত্যাগ করা, অথচ এ বিষয়ে হাদীসে যথেষ্ট উৎসাহ দেয়া হয়েছে যে, ‘যে
ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত কিয়ামুল লাইলের (তারাবীর) নামায আদায় করে তার জন্য
সমস্ত রাতের ইবাদত সম্পাদন করার সওয়াব লিখে দেয়া হয়।’
১০। লক্ষ্য
করা যায় যে, রামাজান মাসের প্রথমে নামাজী ও কুরআন তেলাওয়াতকারীর সংখ্যা অনেক থাকে,
এরপর মাসের শেষে অপারগতা ও এর কমতি লক্ষ্য করা যায়। অথচ রমজানের প্রথম দশক থেকে শেষ
দশকের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে ।
১১। রমজানের
শেষ দশকের কিয়ামুল লাইল ছেড়ে দেয়া, যা শেষ দশকের বিশেষ বৈশিষ্ট। ‘রমজানের শেষ দশক উপস্থিত
হলে নবী কারীম নিজে রাত্রি জাগতেন এবং পরিবারের
সদস্যদেরকেও রাত্রি জাগাতেন এবং নিজের লুঙ্গি শক্ত করে বেধে নতুন ভাবে ইবাদতে আত্মনিয়োগ
করতেন ।”
১২। রোযার
মাসে রাত্রি জাগরণ করা, অতঃপর ফজরের নামায না পড়ে ঘুমিয়ে যাওয়া। কেউ কেউ সকালের সূর্যকিরণের
পর ছাড়া নামায পড়েন না। এটা ফরজ নামাযে অবহেলা ও শৈথিল্যতার শামিল।
১৩। ধন-সম্পদে
কার্পণ্যতা করা এবং রমজান মাসে অভাবী ও দরিদ্রদের সংখ্যা অধিক থাকার পরেও তাদেরকে দান-খয়রাত
করা থেকে বিরত থাকা। অথচ এই সমস্ত বরকতময় সময়ে দান-খয়রাত করার সওয়াব বহুগুণ থাকা সত্বেও
তারা সে সুযোগ গ্রহণ করে না।
১৪। অনেকে
মালের যাকাত আদায় করার ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে অমনোযোগী ও বেখেয়ালী, অথচ যাকাত হলো নামায
ও রোযার সমমর্যাদা সম্পন্ন। যদিও যাকাত আদায় করা শুধু রমজানের সাথেই নির্দিষ্ট নয়।
১৫। রোযা
থাকা অবস্থায় দু‘আ করা থেকে গাফিল বা অন্যমনস্ক হওয়া। বিশেষ করে যখন খাদ্য ও পানীয়র
মাধ্যমে ইফতার করার সময়। অথচ উক্ত বিষয়ে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রোযাদারের ইফতারের
সময়ের দু‘আ রদ করা হয় না।
১৬। রমজান
মাসে ই’তেকাফ করা সুন্নাত এর অবহেলা করা, বিশেষ করে শেষের দশকে। আর শেষ দশকের ফজিলত
কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
১৭। অনেক
মহিলা সৌন্দর্য, সুগন্ধযুক্ত এবং সুবাসিত পোশাক পরিচ্ছদে মসজিদে হাজির হয়ে থাকেন, অথচ
এ সমস্ত ফেতনা বা অন্যকে প্রলুব্ধ ও আকৃষ্ট
করার শামিল।
১৮। রমজানের
রাতে মহিলাদের সহজে মার্কেটে বের হওয়ার জন্য ব্যবস্থা করে দেয়া। অধিকাংশ সময় বিনা প্রয়োজনে
বিদেশী ড্রাইভারের সাথে এবং সঙ্গে কোন মাহরাম ছাড়া বাইরে বের হওয়া।
১৯। ঈদের
রাতে এবং ঈদের দিন সকালে নামাযের পূর্ব পর্যন্ত
তাকবীর বলা পরিত্যাগ করা। এবং একই ভাবে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে তাকবীর
বলা পরিহার করা। অথচ পবিত্র কুরআনে এ দিনগুলিতে
তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে।
২০। যাকাতুল
ফিতর আদায় করতে দেরী করা, অথচ সুন্নাত হল, যে ঈদের দিন নামাযের পূর্বেই তা আদায় করা।
ঈদের এক অথবা দুু’দিন পূর্বেও যাকাতুল ফিতর আদায় করা জায়েয আছে।
আমাদের
প্রিয়নবী, তাঁর পরিবার ও পরিজন এবং তাঁর সাহাবাগণের প্রতি দরূদ ও ছালাম বর্ষিত হোক।
এই মূল্যবান
উপদেশগুলি যিনি লিখেছেন তিনি তাঁর প্রতিপালকের কাছে করুনা ও ক্ষমার ভিখারি।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment