এক প্রতিভাময়ী নিউরো-সাইন্টিষ্টের মৃত্যু ও জিহাদ বিশ্লেষন
জিহাদ সর্ম্পকে শুধু অমুসলিমই নয় মুসলমানদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে প্রচুর। বেশিরভাগ মুসলিম অমুসলিমদের ধারনা কোন যুদ্ধ যদি কোন মুসলমান দ্বারা হয় ব্যক্তি, জাতিগত, রাজনীতিক বা যে কোন কারনই হোক তা হলো ‘জিহাদ’। জিহাদ শব্দের উৎপত্তি ‘জাহাদা’ হতে যার অর্থ ‘চেষ্টা করা, সংগ্রাম করা’ শয়তানের কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে নিজেদের সাথে যুদ্ধ করার অর্থই জিহাদ। অন্যার্থে সামাজকে উন্নত করতে চেষ্টা করা, আর্তরক্ষার্থে যুদ্ধ করা। অন্যায়, অবিচার, অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা যুদ্ধ করা। যদি কোন ছাত্র পাস করার জন্য চেষ্টা করে তাহলে আরবী অর্থে সে পাস করার জন্য জিহাদ করেছেন। যদি একজন শ্রমিকতাঁর মালিককে সন্তুষ্ট করার জন্য পরিশ্রম করে তা ভালো বা মন্দ হোক সে জিহাদ করেছে। যদি কোন রাজনীতিক ভোটের জন্য পরিশ্রম করে তা সে ভালো বা খারাপ পর্যায় হোক সে জিহাদ করেছে ভোটের জন্য।
একটি ভূল প্রচারনা 1ম বিশ্বযুদ্ধের পর হতে 1935 সাল থেকে 1985 সাল পযর্ন্ত একটি পরিসংখানে দেখা গেছে রাসুল (সাঃ)এর সম্পর্কে 20 হাজারের উর্দ্ধে নেতিবাচক বই রচিত হয়েছে, অর্থাৎ প্রতিদিনই তারঁ বিরুদ্ধে 1 টা করে পুন্তক ছাপা হয়েছে যার মধ্যে প্রাচ্যবিদগনের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানহীনতা ও যথেচ্ছাচারের পরিচয় বহন করে। যা ইউরোপিয়ান সহ বহু দেশের অমুসলিমদের হ্রদয়ে ইসলাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনার সুত্রপাত ঘটে ধীরে ধীরে তা ইসলাম বিদ্বেষী দানবরুপে আত্নপ্রকাশ করে। যার ফলাফল এখনো চরমভাবে বিদ্যমান। অনেক বিভ্রান্তিকর মন্তব্য শোনা যায় বা বিভিন্ন ওয়েব পেজে কটাক্ষ ও উপহাস করা হয় ইসলামকে নিয়ে যার কোনটাই কুরআন বা হাদীসে নেই অথবা out of context- থেকে উদ্ধৃতি করা। বর্তমান সময়ে মুসলিম সহ অমুসলিমগনের মধ্যে “জিহাদ” বিষয়ে বহু অগ্রহনযোগ্য ধারনা রয়েছে যা আমাদের প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ এ বিষয়ে অলীক প্রচারনার প্রত্যুত্তর দিতে এগিয়ে আসা, সেটা ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট চ্যানেল, ম্যাগজিন যত প্রকারের
গনমাধ্যম রয়েছে এই বিষাক্ত উক্তির প্রতিবাদ করা। কারন এর ফলে বহু নিরপরাধ মানুষকে হেনস্থা হতে হচ্ছে, বহু প্রতিভা অকালে হারিয়ে যাচ্ছে যারা দেশ তথা সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারতো। হাজারো মানুষ আছে যারা এই “জিহাদের” বলিরপাঠা হয়েছে শোষক আমেরিকার কাছে, উদাহরন স্বরুপ- একজনের কথা মনে পড়ছে সৃতির আঙ্গিনায় পৃথিবীর সর্বপ্রথম মহিলা নিউরো সাইন্টিষ্ট সুফিয়া (USA-তে বসবাসরত ,পাকিস্তানী বংশব্ভুত ) যিনি অসাধারন এক প্রতিভাময়ী নারী নিউরোলজীক্যাল সাইন্স গবেষনায় অগ্রপথিক ছিলেন, জিহাদী লেভেল লাগিয়ে FBI তাকেঁ আবু গারিব কারাগারে নিয়ে অকথ্য নিরযাতন করে , ধর্ষন করে, অভুক্ত রাখে ধুকেধুকে তিলতিল করে তাকেঁ মারা হয়। USA Media ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করে বিফল হয়, কিছু মিডিয়ায় সাময়িকভাবে প্রকাশ হলেও পরবর্তীতে কিন্তু মিডিয়ার মুখ বন্ধ করা হয় , কেউ এরপর এব্যাপারে রা করেনি, এবং এখনো নয়, তাকে আমরা ভুলে গেছি। জিহাদ অর্থ ধর্মযুদ্ধ নয়। ‘ধর্মযুদ্ধ’ বা ‘হারবুমমুকাদ্দাসা’ বলতে কোন শব্দ কুরআন বা হাদীসে নেই। প্রতিটি ধর্মেই অপরাধী রয়েছে। বতর্মানে কোন মুললিম নামধারী লোক অপকর্ম করলেই তাকে highlight করা হয়, এবং দেখানো হয় মুসলিম সন্ত্রাসী হিসেবে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় পৃথিবীর ১ নং সন্ত্রাসী হিটলার সে একাই ৬০ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে। সে কি ছিল? খ্রীষ্টান। মুসোলিনি সে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে সেও খ্রীষ্টান ছিল। পৃথিবীর সমস্ত সন্ত্রাসী হত্যাকর্ম একসাথে করলেও হিটলারের হত্যাকান্ডের সমান কেউ হতে পারবেনা। এর জন্য খ্রীষ্টান ধর্মকে দায়ী করা অনুচিৎ। কিন্তু প্রশ্ন হলো কিছু মুসলিম কেন অহেতুক বোমাবাজি করছে, নিরপরাধ মানুষ মারছে?- অনেক কারনের মধ্যে অন্য কারন হল - -কোন কোন মুসলিম হয়তো ভুল পথে রয়েছে, তারা হয়তো কুরআন ও হাদীস অনুসরন করছেনা। -এমনও হতে পারে তাদের অহেতুক হয়রানি বা অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে বা অবিচার করা হয়েছে। আপনি যদি প্যালেস্টাইন , আফগানিস্তান, চেচনিয়া, নাইজেরিয়া বা পৃথিবীর অন্য দেশ দেখেন এবং ইতিহাস বলে তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছে, সন্তান-সন্ততিকে হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে অথবা তারা অনাচারের সম্মুখীন। তাদের অধিকার কেউ ফিরিয়ে দিচ্ছেনা, কেউ সাহায্য করছেনা। আমরা প্রায়ই টিভিতে দেখি তারা ট্যাংক,ফাইটার প্লেন, মেশিনগানের বিরুদ্ধে ছোট ছোট শিশু-কিশোররা হাতে তুলে নিয়েছে পাথর বা যা সম্বল। তাহলে দোষ কাদের? দোষ আমাদের। যদি কোন সন্ত্রাসী দল বা সংগঠন থেকেই থাকে তাহলে আমাদের উচিৎ তার শিকড় খুঁজে বের করা এবং কেন তারা এসব কর্মকান্ড করছে তার যথাযথ কারন খুজেঁ বের করা। শুধু তথাকথিত সন্ত্রাসীদের হত্যা করলে হবেনা আপনি একজন খুন করবেন ১০ জন তার পরিবর্তে আসবে। ঘটনার গোড়ায় গিয়ে সত্যিকারের কারন খুজেঁ বের করতে হবে, কেন এসব সংগঠিত হচ্ছে ও সে অনুযায়ী সমাধান করতে হবে। যেমন- হিটলার যখন ইহুদিদের দেশ হতে বের করে দিল তারা আশ্রয় গ্রহন করলো ফিলিস্তিনে স্বভাবতই ফিলিস্তিনের মুসলমানরা তাদের আহলান-সাহলান জানিয়ে থাকতে দিল ভায়ের মতো। কিন্তু তারাই ফিলিস্তিনিদের ঘর হতে বের করে দিল আর যখন ফিলিস্তিনিরা নিজেদের ঘর ফিরে পাবার জন্য সংগ্রাম শুরু করলে তাদের বলা হলো-- সন্ত্রাসী। আত্নঘাতী বোমা হামলার ঘটনা প্রায়ই শোনা যায় ফিলিস্তিনে, আফগানিস্তানে। কে নিজের দেহে বোমা বেঁধে নিশ্চিন্তে মরতে চায়? মনো-বিজ্ঞানীগন বলেন আসল কারন খুজেঁ বের করা উচিৎ কেন তারা এসব করছে। অবশ্যই কোথাওনা কোথাও গন্ডগোল আছে, কেউ বোমাবাজি করছে টাকার জন্য, কেউবা ক্ষমতার জন্য, কেউবা রাজনৈতিক কুশ্রি অভিলাষ পুরনের প্রত্যাশায়॥ তবে আমি মনে করি সে হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান যেই হোক নিশ্চই সে অবিচার অথবা হয়রানির স্বীকার। অনেক সময় মিথ্যার রঙ্গিন কর্মকান্ডের পেছনে সত্য লুকিয়ে থাকে। তাই মিথ্যাকে হটিয়ে সত্যকে খুজেঁ বের করা উচিৎ। মনো-বিজ্ঞানীগন বলেন যখন কারো উপর অনাকাঙ্খিত অবিচার বা শোষন করা হয় তখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সে তা ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। অতএব প্রকৃত সত্যকে খুঁজে বের করে সমস্যার সমাধান করা উচিৎ ফলে সমগ্র মানবজাতি শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। অবিচার বা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া চলবেনা তা সে হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান যেই হোক। আমরা চাই শান্তি আল্লাহ বলেন সুরা মায়েদা 5:32-
”মানবহত্যা অথবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা ছাড়া অন্য কোন কারণে যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করলো সে যেন দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে হত্যা করলো৷ আর যে ব্যক্তি কারো জীবন রক্ষা করলো সে যেন দুনিয়ার সমস্ত মানুষের জীবন রক্ষা করলো।”
No comments:
Post a Comment