পশু হত্যা : ধমীর্য় ও পুষ্টিবিজ্ঞান সমাচার
এক আড্ডায় আমার স্কুল বন্ধু অনিমেষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিল-"পশু হত্যা অত্যন্ত র্ববর । কেন মানুষ পশু হত্যা করে? বিভিন্ন ধর্মে গোশত খাওয়া অনুমতি দিয়েছে এটা কতটুকু যুক্তিপূর্ন? আপনি যা খাবেন তা আপনার চরিত্রে ফুটে উঠবে পশু যদি খান পশুর মতো চরিত্র হবে, সব্জী খান চরিত্র বা মেজাজ ঠান্ডা থাকবে , পশুর মতো উগ্র হবনো।" তার উত্তর ছিল আপাতঃদৃষ্টিতে গ্রহনযোগ্য। কিন্তু ...বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ ও পুষ্টিবিজ্ঞান কি বলে আসুন একটু Bitdefender দিয়ে কঠিন একটা Scan করি, দেখি infection আছে কিনা, কারন ভাইরাস সুস্থ ব্রেনেরে জন্য ক্ষতিকর।:) মুসলমানদের গোশত খাওয়ার অনুমতি আছে? আল্লাহ বলেন সুরা মুমিনুন -২৩,আয়াত ২১-“আর নিঃসন্দেহে গবাদী পশুতে তোমাদের জন্য রয়েছে শিক্ষনীয় বিষয়। আমরা তোমাদের পান করতে দেই তাদের পেটের মধ্যে যা আছে তা থেকে, আর তাদের মধ্যে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর উপকারিতা আর তাদের থেকে তোমরা খাও।”
ইসলাম ধর্মের মত অন্যান্য ধর্মে ও গোশত খাওযার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কোন মুসলমানের যদি গোশতের প্রতি অনিহা থাকে তবে অন্য ব্যপার, কারন গোশত খাওয়া ফরজ নয়। গোশত না খেলে উত্তম মুসলিম হওয়া যাবেনা এমন ভাবনা অযৌক্তিক কিন্তু কেউ যদি বলেন গোশত খাওয়া অবৈজ্ঞানিক তবে বর্তমান বিজ্ঞান বলে -গোশত প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং বলবর্ধক। বেশ কয়েক বছর আগে পৃথিবীর মধ্যে ১০০০ জন টপ বডি বিল্ডারদের লিষ্ট করা হয়ছিল ও সেসাথে তাদের দৈনন্দিন খাবার তালিকাও প্রকাশ করা হয়ছেলি , এর মধ্যে ৯৯৮ জনের খাবার তালিকায় ছিল গোশত। পুষ্টিবিদগন বলেন
সব্জীতে মাত্র ৯ টি amino-acid আছে কিন্তু আরো ৭টি amino-acid অনুপস্থিত যা শরীররে জন্য অতীব প্রয়োজন , তা পাওয়া যাবে শুধুমাত্র গোশতত, এতে রয়ছে মোট ১৬ টি amino-acid- এর সমাহার। উল্লেখ যে সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম সহ অনেক হাদিসে রাসুল (সাঃ) হিংস্র প্রানীদের খেতে নিষেধ করেছেন (সহিহ মুসলিম-৪৭৫২ ও সুন্নাহ ইবনে মাজা-৩২৩২) । যদি আপনি গরু, ছাগল অথবা মহিষের দাতেঁর গঠন দেখেন তাদের দাঁত সমান সে কারনে তারা সবজী এবং ঘাস খায়। যদি আপনি বাঘ, সিংহ অথবা নেকড়ের দাঁত দেখেন তবে সুচাঁলো দাঁতই পাওয়া যাবে এবং এর দ্বারা তারা পশু শিকার করে গোশত ভক্ষন করে জীবন ধারন করে। এখন প্রশ্ন হলো যদি সৃষ্টিকর্তা চাইতেন আমরা শুধু সবজী খাবো তাহলে তিনি আমাদের চোখা দাঁত কেন দিযেছেন? অধিকন্তু আপনি যদি গরুও বা ছাগলের পরিপাকতন্ত্র লক্ষ্য করেন তাদের পরিপাকতন্ত্র শুধু ঘাস, লতা পরিপাক করতে পারে। যদি তাদের মাংস খেতে দেয়া হয় তারা তা হজম করতে বা খেতে পারবেনা । একইভাবে হিংস্র পশুরা ঘাস বা লতাপাতার প্রতি আগ্রহ দেখাবেনা। USA- তে বেশ কয়েক বছর আগে জোর করে গৃহপালিত পশুকে গোশত খাওয়ানোর চেষ্টা করছিল ফলশ্রুতিতে mad cow নামে ভয়ংকর রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল । এটা সিঃসন্দেহে প্রমানিত সত্য যে -পৃথিবীর কোন বাঘ বা সিংহ কখনো ঘাস ,লতা খেতে পারবেনা কারন তাদের পরিপাকতন্ত্র সেভাবে সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু মানুষের দু ধরনে খাবার হজম করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে । যার ফলে গোশত বা সবজি দুটো খেতে মানুষ স্বাচ্ছন্দবোধ করে । অনেকেরেই ভুল ধারনা যে গো- হত্যা মহাপাপ। এই ধারনা হতে তারা পশুর গোশত খাননা ভাবেন সবজী খাওয়াই উত্তম, জীব হত্যা হয়না। কিন্তু এক্ষত্রে বিজ্ঞান কি বলে? র্বতমান বিজ্ঞানের জয়যাত্রার ফলে আমরা জানতে পারি গাছেরও প্রান ও অনুভুতি আছে ,তারা খুশি হয় এবং কান্না করে। অনেকে বলে ঠিক আছে মানলাম গাছ ব্যথা বুঝতে পারে কিন্তু গাছের অনুভুতির স্নায়ু মাত্র ২টি ,পশুর ৫টি ,যার ফলে প্রানী হত্যা করলে পাপ বেশি হয়। কিন্তু আমি বলি- ধরুন আপনার ভাই বা বোন যে জন্মান্ধ এবং বোবা তাকে হঠাৎ করে কেউ খুন করল ,যখন খুনিকে বিচারকের সামনে নেয়া হবে আপনি কি বলবেন বিচারক সাহেব খুনিকে শাস্তি কম দিন কারন আমার ভাই বোবা এবং অন্ধ ছিল? কখনই না, আপনি বলবেন আমার ভাই নিষ্পাপ অপরাধিকে আপনি দ্বিগুন শাস্তি দিন। অনেক হিন্দু ভাইদের ভুল ধারনা যে গোশত খাওয়া হিন্দুদের পুরোপুরি নিষিদ্ধ। হিন্দুধর্মে বলা হয়েছে মনুসমৃতি-৫, শ্লোকা-৩০-
“সৃষ্টিকর্তা কিছু প্রানীকে খাওয়ার জন্য সৃষ্টি করেছেন”
৩১ নং শ্লোকায় উল্লেখ রয়েছে-
“ খাদ্যযোগ্য প্রানী উৎসর্গের জন্য উত্তম, এই সৃষ্টিকর্তার ঐতিহ্যগত বিধান।” মনুসমৃতি-৫, শ্লোকা -৩৯-৪০-
“যদি তুমি সৃষ্টিকর্তার খুশির জন্য পশু উৎসর্গ করতে চাও তবে পাপ হবেনা কারন সৃষ্টিকর্তা কিছু প্রানীকে সৃষ্টি করছেন তাঁর নিকট উৎসর্গের জন্য ও খাওয়ার জন্য।” মহাভারতে অনুশাসন পর্ব - ৮৮-তে রয়েছে-
“যদি তুমি লতা-গুল্ম উৎসর্গ কর তোমার পূর্বপুরুষ ১ মাসের জন্য খুশি হবেন, মাছ উৎসর্গ করলে হন-২মাস, মেষ মাংস -৩মাস, ভেড়া -৪মাস ,ছাগলের গোশত -৫মাস ,পাখি-৭মাস, হরিন -৮মাস ,ষাড়-১১মাস, গোশত -১২মাস এবং গন্ডার -পুরোপুরি সন্তুষ্ট”।
অনেকে বলেন পশু জবাই করার সময় অনেক কষ্ট পায়, বর্তমান বিজ্ঞান বলে-গলার ধমনী মস্তিষ্ক হতে কেটে ফেলার পর পশু কোন ব্যাথা অনুভব করেনা। পশু পা ও শরীর ছোড়াছুড়ি করে দেহের রক্তস্বল্পতার জন্য যা মস্তিষ্কে পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছেনা, ব্যথার জন্য নয়। অতএব গোশত খাওয়া পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মত, ধর্মীয় দৃষ্টিতে যুক্তিপূর্ন এবং প্রত্যকেরই গোশত খাওয়ার পূর্ন অধিকার রয়েছে, এটা স্বাস্হ্যকর ও শরীরের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় সুস্বাদু এবং উপাদেয় খাদ্য। আজ খাবার লিষ্টে গোশত আছে তো? :)
No comments:
Post a Comment