দর্শক সংখ্যা

Sunday, February 10, 2013

কেয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর-৭

কেয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর-৭

আব্দুল মালেক আলী আল-কুলাইব
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে-- পুলসিরাত সম্পর্কিত একটি দীর্ঘ হাদীসের শেষাংশে এসেছে
ويبقى رجل مقبل بوجهه على النار ، فيقول : يا رب ، قد قشبني ريحها ، وأحرقني ذكاؤها ، فاصرف وجهي عن النار ، فلا يزال يدعو الله ، فيقول : لعلك إن أعطيتك أن تسألني غيره ، فيقول : لا وعزتك لا أسألك غيره ، فيصرف وجهه عن النار ، ثم يقول بعد ذلك : يا رب قربني إلى باب الجنة ، فيقول : أليس قد زعمت أن لا تسألني غيره ، ويلك ابن آدم ما أغدرك ، فلا يزال يدعو ، فيقول : لعلي إن أعطيتك ذلك تسألني غيره ، فيقول : لا وعزتك لا أسألك غيره ، فيعطي الله من عهود ومواثيق أن لا يسأله غيره ، فيقربه إلى باب الجنة ، فإذا رأى ما فيها سكت ما شاء الله أن يسكت ، ثم يقول : رب أدخلني الجنة ، ثم يقول : أوليس قد زعمت أن لا تسألني غيره ، ويلك يا ابن آدم ما أغدرك ، فيقول : يا رب لا تجعلني أشقى خلقك ، فلا يزال يدعو حتى يضحك ، فإذا ضحك منه أذن له بالدخول فيها ، فإذا دخل فيها. رواه البخاري ومسلم
এক ব্যক্তি জাহান্নামের দিকে মুখ করা অবস্থায় থাকবে। তখন সে বলবে, হে আমার প্রভূ! জাহান্নামের গরম বায়ু আমাকে শেষ করে দিল। আমার চেহারাটা আপনি জাহান্নাম থেকে অন্য দিকে ফিরিয়ে দিন। সে এভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে বার বার প্রার্থনা করতে থাকবে। আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার এ প্রার্থনা কবুল হলে এরপর তুমি যেন আর কিছু না চাও। সে বলবে, আপনার মর্যাদার কসম করে বলছি, এরপর আপনার কাছে আর কিছু চাবো না। তখন জাহান্নামের দিক থেকে তার চেহারা ফিরিয়ে দেয়া হবে। তারপর সে আবার বলতে শুরু করবে, হে আমার প্রভূ! আমাকে একটু জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করে দেন। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি বলোনি এরপর আর কিছু চাইবে না? ধিক হে মানব সন্তান। তুমি কোন কথা রাখো না। কিন্তু এ ব্যক্তি প্রার্থনা করতই থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার তো মনে হয় তোমার এ দাবী পুরণ করা হলে আবার অন্য কিছু চাইবে। সে বলবে, আপনার মর্যাদার কসম করে বলছি, এরপর আপনার কাছে আর কিছু চাইবো না। সে আর কিছু চাইবে না এ শর্তে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের গেটের নিকটবর্তী করে দিবেন। যখন সে জান্নাতে গেটের দিকে তাকিয়ে জান্নাতের সূখ শান্তি দেখবে তখন কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার প্রার্থনা করতে শুরু করবে, হে আমার প্রভু আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি বলোনি এরপর আর কিছু চাইবে না? ধিক হে মানব সন্তান। তুমি কোন কথা রাখো না। সে বলবে, হে আমার প্রভূ আমাকে আপনার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভাগা করে রাখবেন না। এভাবে সে প্রার্থনা করতে থাকবে। অবশেষে আল্লাহ হাসি দিবেন। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)      


মুমিনদের জাহান্নাম থেকে বের করার জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত– কেয়ামতের পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি শাফাআত হবে সকলের জন্য। আর সেটা বিচার – ফয়সালা শুরু করার আবেদন সম্পর্কে। সকল নবী ও রাসূল এ ব্যাপারে শাফাআত করতে অস্বীকার করবে, নিজেদের অপরাগতা প্রকাশ করবে। শেষে আখেরী নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাফাআত করবেন। এটা হল সাধারণ শাফাআত। সকল মানুষ এ শাফআত দ্বারা উপকৃত হবে। আরেকটি শাফাআত হবে যে সকল মুমিন পাপের কারণে জাহান্নামে গেছে তাদের উদ্ধার ও মুক্তির জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাফাআত করবেন। যেমন হাদীসে এসেছে –
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لكل نبي دعوة مستجابة . فتعجل كل نبي دعوته . وإني اختبأت دعوتي شفاعة لأمتي يوم القيامة . فهي نائلة ، إن شاء الله ، من مات من أمتي لا يشرك بالله شيئا. رواه البخاري ومسلم
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: প্রত্যেক নবীর রয়েছে কিছু দুআ যা অবশ্যই কবুল করা হয়। সকল নবী এ দুআগুলো করার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করেছেন। কিন্তু আমার উম্মতকে কেয়ামতের দিন শাফাআত করার জন্য এ দুআগুলো আমি ব্যবহার করিনি। ইনশা আল্লাহ সেই শাফাআত পাবে আমার অনুসারী ঐ সকল ব্যক্তিবর্গ যারা কখনো আল্লাহ তাআলার সাথে কোন কিছু শরীক করেনি। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম) হাদীসে আরো এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قلت : يا رسول الله ، من أسعد الناس بشفاعتك يوم القيامة ؟ فقال : ( لقد ظننت ، يا أبا هريرة ، أن لا يسألني عن هذا الحديث أحد أول منك ، لما رأيت من حرصك على الحديث ، أسعد الناس بشفاعتي يوم القيامة من قال : لا إله إلا الله ، خالصا من قبل نفسه ) . رواه البخاري
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, কেয়ামতের দিন আপনার শাফাআত দ্বারা কে ভাগ্যবান হবে? তিনি বললেন, হে আবু হুরাইরা আমি জানি তোমার পূর্বে কেহ এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেনি। তোমাকে হাদীসের বিষয়ে বেশী আগ্রহী দেখছি। কেয়ামতের দিন আমার শাফাআত দ্বারা সবচেয়ে ভাগ্যবান হবে ঐ ব্যক্তি যে অন্তর দিয়ে নির্ভেজাল পদ্ধতিতে বলেছে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। (বর্ণনায় : বুখারী) এ দুটো হাদীস পাঠে আমরা জানতে পারলাম কেয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত দ্বারা কারা ধন্য হবে। যারা অন্তর দিয়ে শিরক মুক্ত থেকে আল্লাহ তাআলার তাওহীদে বিশ্বাস করেছে তারাই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত পাবে। তারা যতই পাপী হোক না কেন। আমাদের সমাজে আমরা এমন কিছু লোক দেখি যারা রাসূলের শাফাআত লাভ করার জন্য বিভিন্ন শিরক ও বিদআতী কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। আর বলে এগুলো করে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত লাভ করতে পারবো। তাদের জেনে রাখা উচিত, আল্লাহর সাথে শিরক করে কখনো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাফাআত লাভ করা যাবে না। ঈমান যদি সম্পূর্ণ শিরকমুক্ত থাকে তখন পাপের পাহাড় যত বড়ই হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত লাভ ও আল্লাহ তাআলার বিশেষ ক্ষমায় জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব হবে। কিন্তু ঈমান যদি সম্পূর্ণ শিরকমুক্ত না থাকে তাহলে নেক আমলের পাহাড় নিয়ে উপস্থিত হলেও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের সুযোগ নেই। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত লাভে ধন্য হওয়ারও সম্ভাবনা নেই।  

তাওহীদবাদী গুনাহগারদের জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা-- হাদীসে এসেছে-
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أما أهل النار الذين هم أهلها ، فإنهم لا يموتون فيها ولا يحيون . ولكن ناس أصابتهم النار بذنوبهم ( أو قال بخطاياهم ) فأماتهم إماتة . حتى إذا كانوا فحما ، أذن بالشفاعة . فجيء بهم ضبائر ضبائر . فبثوا على أنهار الجنة . ثم قيل : يا أهل الجنة أفيضوا عليهم . فينبتون نبات الحبة تكون في حميل السيل. رواه مسلم
আবু সায়ীদ আল খুদরী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যারা জাহান্নামবাসী তারা মরবেও না আবার বাঁচবেও না। কিন্তু যে সকল (ঈমানদার) মানুষ পাপের কারণে জাহান্নামে যাবে তাদের এক ধরনের মৃত্যু ঘটানো হবে। তারা পুরে কয়লা হয়ে যাবে। তখন তাদের ব্যাপারে শুপারিশ করার অনুমতি দেয়া হবে। তাদেরকে এক এক দল করে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। অত:পর জান্নাতের নদীতে রাখা হবে। এরপর বলা হবে হে জান্নাতবাসীরা! তোমরা তাদের উপর পানি ঢালো। ফলে তারা উদ্ভিদের মত জীবন লাভ করবে যেমন বন্যার পানির পলি পেয়ে উদ্ভিদ জন্ম লাভ করে থাকে। (বর্ণনায় : মুসলিম) এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন: কুফরী করার কারণে যারা জাহান্নামে যাবে তারা চিরকাল সেখানে অবস্থান করবে। তাদের কখনো মৃত্যু হবে না। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَالَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِنْ عَذَابِهَا كَذَلِكَ نَجْزِي كُلَّ كَفُورٍ. سورة الفاطر : 36)
আর যারা কুফরী করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের প্রতি এমন কোন ফয়সালা দেয়া হবে না যে, তারা মারা যাবে, এবং তাদের থেকে জাহান্নামের আযাবও লাঘব করা হবে না। এভাবেই আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। (সূরা আল ফাতির, আয়াত ৩৬) এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা বলেন:
ثُمَّ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَا (سورة الأعلى : 13)
তারপর সে সেখানে মরবেও না আর বাঁচবেও না। (সূরা আল আলা, আয়াত ১৩) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা এটাই যে জান্নাতের সুখ আর জাহান্নামের শাস্তি চিরস্থায়ী। তবে এ হাদীসে বর্ণিত মৃত্যু হল আল্লাহ তাআলার তাওহীদ বা একত্ববাদে বিশ্বাসী জাহান্নামীদের জন্য। তাদের শাস্তির অনুভূতি লোপ করে মৃত্যুর মত এক ধরনের অনুভুতিহীনতা দান করা হবে। তাদের নিজ পাপ অনুযায়ী শাস্তি ভোগ করানো হবে। তাদের এক ধরনের অনুভূতিহীনতা প্রদান করা হবে। এটাকে বলা হয়েছে তারা কয়লা হয়ে যাবে। এরপর তাদের নতুন জীবন দান করা হবে। কাজেই মৃত্যু দেয়া হবে না বলে যে বাণী এসেছে সেটা কাফেরদের জন্য প্রযোজ্য। (শরহে মুসলিম)      

আরাফবাসীদের পরিচয়-- আরাফ হল, জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে একটি প্রাচীর। জান্নাতে প্রবেশের প্রতীক্ষায় কিছু সময়ের জন্য যারা সেখানে অবস্থান করবেন তাদের-কে বলা হয় আরাফবাসী। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَنَادَى أَصْحَابُ الْجَنَّةِ أَصْحَابَ النَّارِ أَنْ قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا قَالُوا نَعَمْ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنٌ بَيْنَهُمْ أَنْ لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ ﴿44﴾ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا وَهُمْ بِالْآَخِرَةِ كَافِرُونَ ﴿45﴾ وَبَيْنَهُمَا حِجَابٌ وَعَلَى الْأَعْرَافِ رِجَالٌ يَعْرِفُونَ كُلًّا بِسِيمَاهُمْ وَنَادَوْا أَصْحَابَ الْجَنَّةِ أَنْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَمْ يَدْخُلُوهَا وَهُمْ يَطْمَعُونَ ﴿46﴾ وَإِذَا صُرِفَتْ أَبْصَارُهُمْ تِلْقَاءَ أَصْحَابِ النَّارِ قَالُوا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ ﴿47﴾ وَنَادَى أَصْحَابُ الْأَعْرَافِ رِجَالًا يَعْرِفُونَهُمْ بِسِيمَاهُمْ قَالُوا مَا أَغْنَى عَنْكُمْ جَمْعُكُمْ وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ ﴿48﴾ أَهَؤُلَاءِ الَّذِينَ أَقْسَمْتُمْ لَا يَنَالُهُمُ اللَّهُ بِرَحْمَةٍ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمْ وَلَا أَنْتُمْ تَحْزَنُونَ ﴿49﴾ (سورة الأعراف)
আর জান্নাতের অধিবাসীগণ আগুনের অধিবাসীদেরকে ডাকবে যে, আমাদের রব আমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছেন তা আমরা সত্য পেয়েছি। সুতরাং তোমাদের রব তোমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছেন, তা কি তোমরা সত্যই পেয়েছ? তারা বলবে হ্যাঁ, অতঃপর এক ঘোষক তাদের মধ্যে ঘোষণা দেবে যে, আল্লাহর লানত যালিমদের উপর। যারা আল্লাহর পথে বাধা প্রদান করত এবং তাতে বক্রতা সন্ধান করত এবং তারা ছিল আখিরাতকে অস্বীকারকারী আর তাদের মধ্যে থাকবে পর্দা এবং আরাফের উপর থাকবে কিছু লোক, যারা প্রত্যেককে তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনবে। আর তারা জান্নাতের অধিবাসীদেরকে ডাকবে যে, তোমাদের উপর সালাম। তারা (এখনো) তাতে প্রবেশ করেনি তবে তারা আশা করবে। আর যখন তাদের দৃষ্টিকে আগুনের অধিবাসীদের প্রতি ফেরানো হবে, তারা বলবে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে যালিম কওমের অন্তর্ভুক্ত করবেন না। আর আরাফের অধিবাসীরা এমন লোকদেরকে ডাকবে, যাদেরকে তারা চিনবে তাদের চিহ্নের মাধ্যমে, তারা বলবে, তোমাদের দল এবং যে বড়াই তোমরা করতে তা তোমাদের উপকারে আসেনি। এরাই কি তারা যাদের ব্যাপারে তোমরা কসম করতে যে, আল্লাহ তাদেরকে রহমতে শামিল করবেন না? তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমাদের উপর কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিত হবে না। (সূরা আল আরাফ, আয়াত ৪৪-৪৯) আরাফবাসীদের পরিচয় সম্পর্কে হাদীসে এসেছে হুযাইফা রা. বলেন: আরাফবাসী হল এমন এক দল, যাদের সৎকর্ম এত পরিমাণ যে তা তাদের জাহান্নামে যেতে দেয় না আবার পাপাচার এত পরিমাণ যে তা জান্নাতে প্রবেশ করতে দেয় না। (অর্থাৎ পাপ ও পুণ্য সমানে সমান) যখন তাদের মুখ জাহান্নামবাসীদের দিকে ফেরানো হবে তখন তারা বলবে, হে আমাদের প্রভূ! আমাদেরকে যালিম কওমের অন্তর্ভুক্ত করবেন না। তারা এমনি অবস্থায় থাকবে। তখন তোমার প্রতিপালক বলবেন, যাও, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো। তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম। (বর্ণনায়: হাকেম, তিনি বলেছেন, হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। ইমাম জাহাবী এ কথার সাথে একমত পোষণ করেছেন।) ইবনে কাসীর রহ. আরাফ ও আরাফবাসীদের পরিচয় প্রসঙ্গে বলেন: সূরা আরাফে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কথা দ্বারা বুঝা গেল জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে একটি প্রাচীর আছে। যার কারণে জাহান্নামীরা জান্নাতের কাছে যেতে পারবে না। ইবনে জরীর রহ. বলেন, এই প্রাচীর সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
فَضُرِبَ بَيْنَهُمْ بِسُورٍ لَهُ بَابٌ بَاطِنُهُ فِيهِ الرَّحْمَةُ وَظَاهِرُهُ مِنْ قِبَلِهِ الْعَذَابُ (سورة الحديد: 13)
তারপর তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর স্থাপন করে দেয়া হবে, যাতে একটি দরজা থাকবে। তার ভিতরভাগে থাকবে রহমত এবং তার বহির্ভাগে থাকবে আযাব। (সূরা আল হাদীদ, আয়াত ১৩) আর সূরা আরাফে আল্লাহ এ প্রাচীরের কাছে অবস্থানকারীদের সম্পর্কে বলেছেন : এবং আরাফের উপর থাকবে কিছু লোক। আরবী ভাষায় উঁচু স্থানকে আরাফ বলা হয়। আরাফবাসী কারা হবে এ সম্পর্কে তাফসীরবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে সকলের মতামত একত্র করলে যে ফলাফল বের হয়ে আসে তা হল, যাদের সৎকর্ম ও পাপাচারের পরিমাণ সমানে সমান হবে তারাই হবে আরাফবাসী। সাহাবী হুযাইফা, ইবনে আব্বাস, ইবনে মাসউদ রা. প্রমূখের মতামত এ রকমই। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)      

পুলসিরাত ও জান্নাতের মধ্যে একটি প্রতিবন্ধক গেট-- যখন মুমিনগণ পুলসিরাত অতিক্রম করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবেন আর আল্লাহ তাআলা শাফাআতের অনুমতি দিয়ে বহু সংখ্যক লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন তখন যে সকল মানুষ দ্বারা অন্যেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা পুলসিরাতের প্রতিবন্ধক গেটে আটকা পড়ে যাবে। তাদের আটকে দেয়া হবে এ জন্য, যে সকল মানুষের অধিকার সে ক্ষুন্ন করেছে তাদের প্রতিকার আদায় করা হবে তার থেকে। এ প্রসঙ্গে হাদীসে এসেছে :
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يخلص المؤمنون من النار ، فيحبسون على قنطرة بين الجنة والنار ، فيقتص لبعضهم من بعض مظالم كانت بينهم في الدنيا ، حتى إذا هذبوا ونقوا أذن لهم في دخول الجنة. رواه البخاري
আবু সায়ীদ আল খুদরী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে কিন্তু তারা জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি গেটে আটকে যাবে। তখন দুনিয়াতে তারা একজন অপর জনের প্রতি যে জুলুম ও অন্যায় আচরণ করেছে তার প্রতিকার ও বিচার করা হবে। যখন দায়মুক্ত হবে ও তারা পবিত্র হবে তখন জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি পাবে। (বর্ণনায়: বুখারী) হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেছেন : সম্ভবত এরাই হবে আরাফবাসী। যারা অন্য লোকের অধিকার হরণ বা তাদের উপর জুলুম-অত্যাচার করার কারণে জান্নাতে প্রবেশের পথে আটকে যাবে।

জাহান্নামে প্রবেশ করবে প্রতাপশালীরা আর জান্নাতে যাবে দুর্বল অসহায় মানুষগুলো-- হাদীসে এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: تحاجت الجنة والنار ، فقالت النار : أوثرت بالمتكبرين والمتجبرين ، وقالت الجنة : ما لي لا يدخلني إلا ضعفاء الناس وسقطهم . قال الله تبارك وتعالى للجنة : أنت رحمتي أرحم بك من أشاء من عبادي ، وقال للنار : إنما أنت عذابي أعذب بك من أشاء من عبادي ، رواه البخاري ومسلم
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জান্নাত ও জাহান্নাম পরস্পর বিতর্ক করবে। জাহান্নাম বলবে, আমাকে প্রতাপশালী, শক্তিধর, স্বৈরাচারদের দেয়া হয়েছে। আর জান্নাত বলবে, আমার যে কী হলো? শুধু আমার এখানে দুর্বল আর সমাজের পতিত মানুষগুলো আসছে। তখন আল্লাহ জান্নাতকে বলবেন: তুমি হলে আমার রহমত ও করুনা। আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা আমার রহমত দ্বারা অনুগ্রহ করি। আর তিনি জাহান্নাম-কে বলবেন: আর তুমি হলে আমার আযাব। বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা আমি আমার আযাব দিয়ে শাস্তি দিয়ে থাকি। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)      

চতুর্থ অধ্যায়  
জাহান্নাম ও তার অধিবাসীদের বিবরণ--
 কাফের ও মুশরিকদের যখন জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে তখন তারা জাহান্নামে বসে তাদের এ দুর্গতির জন্য একে অপরকে দোষারোপ করবে। একদল তাদের পূর্বসূরীদের দুষবে। আরেক দল তাদের নেতাদের দোষ দেবে। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অনেক কথা বলেছেন তার কিছু এখানে তুলে ধরলাম।
قَالَ ادْخُلُوا فِي أُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِكُمْ مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ فِي النَّارِ كُلَّمَا دَخَلَتْ أُمَّةٌ لَعَنَتْ أُخْتَهَا حَتَّى إِذَا ادَّارَكُوا فِيهَا جَمِيعًا قَالَتْ أُخْرَاهُمْ لِأُولَاهُمْ رَبَّنَا هَؤُلَاءِ أَضَلُّونَا فَآَتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِنَ النَّارِ قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَكِنْ لَا تَعْلَمُونَ ﴿38﴾ وَقَالَتْ أُولَاهُمْ لِأُخْرَاهُمْ فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْسِبُونَ ﴿39﴾ (سورة الأعراف)
তিনি বলবেন, আগুনে প্রবেশ কর জিন ও মানুষের দলগুলোর সাথে, যারা তোমাদের পূর্বে গত হয়েছে। যখনই একটি দল প্রবেশ করবে, তখন পূর্বের দলকে তারা লানত করবে। অবশেষে যখন তারা সবাই তাতে একত্রিত হবে তখন তাদের পরবর্তী দলটি পূর্বের দল সম্পর্কে বলবে, হে আমাদের রব, এরা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। তাই আপনি তাদেরকে আগুনের দ্বিগুণ আযাব দিন। তিনি বলবেন, সবার জন্য দ্বিগুণ, কিন্তু তোমরা জান না। আর তাদের পূর্ববর্তী দল পরবর্তী দলকে বলবে, তাহলে আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। অতএব তোমরা যা অর্জন করেছিলে, তার কারণে তোমরা আযাব আস্বাদন কর। (সূরা আল আরাফ, আয়াত ৩৮-৩৯)
وَإِذْ يَتَحَاجُّونَ فِي النَّارِ فَيَقُولُ الضُّعَفَاءُ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنْتُمْ مُغْنُونَ عَنَّا نَصِيبًا مِنَ النَّارِ ﴿47﴾ قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُلٌّ فِيهَا إِنَّ اللَّهَ قَدْ حَكَمَ بَيْنَ الْعِبَادِ ﴿48﴾ وَقَالَ الَّذِينَ فِي النَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ادْعُوا رَبَّكُمْ يُخَفِّفْ عَنَّا يَوْمًا مِنَ الْعَذَابِ ﴿49﴾ قَالُوا أَوَ لَمْ تَكُ تَأْتِيكُمْ رُسُلُكُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا بَلَى قَالُوا فَادْعُوا وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ ﴿50﴾ (سورة المؤمن)
আর জাহান্নামে তারা যখন বানানুবাদে লিপ্ত হবে তখন দুর্বলরা, যারা অহঙ্কার করেছিল, তাদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম, অতএব তোমরা কি আমাদের থেকে আগুনের কিয়দংশ বহন করবে? অহঙ্কারীরা বলবে, আমরা সবাই এতে আছি; নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করে ফেলেছেন। আর যারা আগুনে থাকবে তারা আগুনের দারোয়ানদেরকে বলবে, তোমাদের রবকে একটু ডাকো না! তিনি যেন একটি দিন আমাদের আযাব লাঘব করে দেন। তারা বলবে, তোমাদের কাছে কি সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তোমাদের রাসূলগণ আসেনি? জাহান্নামীরা বলবে, হ্যাঁ অবশ্যই। দারোয়ানরা বলবে, তবে তোমরাই দুআ কর। আর কাফিরদের দুআ কেবল নিষ্ফলই হয়।’(সূরা আল মুমিন ৪৭-৫০)
وَبَرَزُوا لِلَّهِ جَمِيعًا فَقَالَ الضُّعَفَاءُ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنْتُمْ مُغْنُونَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ قَالُوا لَوْ هَدَانَا اللَّهُ لَهَدَيْنَاكُمْ سَوَاءٌ عَلَيْنَا أَجَزِعْنَا أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِنْ مَحِيصٍ ﴿21﴾ (سورة إبراهيم )
আর তারা সবাই আল্লাহর সামনে হাজির হবে, অতঃপর যারা অহঙ্কার করেছে দুর্বলরা তাদেরকে বলবে, নিশ্চয় আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম। সুতরাং তোমরা কি আল্লাহর আযাবের মোকাবেলায় আমাদের কোন উপকারে আসবে? তারা বলবে, যদি আল্লাহ আমাদের হেদায়েত করতেন, তাহলে আমরাও তোমাদের হেদায়েত করতাম। এখন আমরা অস্থির হই কিংবা ধৈর্য ধারন করি, উভয় অবস্থাই আমাদের জন্য সমান। আমাদের পালানোর কোন জায়গা নেই। (সূরা ইবরাহীম, আয়াত ২১)
إِنَّ اللَّهَ لَعَنَ الْكَافِرِينَ وَأَعَدَّ لَهُمْ سَعِيرًا ﴿64﴾ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا لَا يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا ﴿65﴾ يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُولُونَ يَا لَيْتَنَا أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولَا ﴿66﴾ وَقَالُوا رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا ﴿67﴾ رَبَّنَا آَتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا ﴿68﴾ (سورة الأحزاب )
নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে লানত করেছেন এবং তাদের জন্য জ্বলন্ত আগুন প্রস্তুত রেখেছেন। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। তারা না পাবে কোন অভিভাবক এবং না কোন সাহায্যকারী। যেদিন তাদের চেহারাগুলো আগুনে উপুড় করে দেয়া হবে, তারা বলবে, হায়, আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রাসূলের আনুগত্য করতাম, তারা আরো বলবে, হে আমাদের রব, আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও বিশিষ্ট লোকদের আনুগত্য করেছিলাম, তখন তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের রব, আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ আযাব দিন এবং তাদেরকে বেশী করে লানত করুন। (সূরা আল আহযাব, ৬৪-৬৮)
وَبُرِّزَتِ الْجَحِيمُ لِلْغَاوِينَ ﴿91﴾ وَقِيلَ لَهُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ تَعْبُدُونَ ﴿92﴾ مِنْ دُونِ اللَّهِ هَلْ يَنْصُرُونَكُمْ أَوْ يَنْتَصِرُونَ ﴿93﴾ فَكُبْكِبُوا فِيهَا هُمْ وَالْغَاوُونَ ﴿94﴾ وَجُنُودُ إِبْلِيسَ أَجْمَعُونَ ﴿95﴾ قَالُوا وَهُمْ فِيهَا يَخْتَصِمُونَ ﴿96﴾ تَاللَّهِ إِنْ كُنَّا لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ ﴿97﴾ إِذْ نُسَوِّيكُمْ بِرَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿98﴾ وَمَا أَضَلَّنَا إِلَّا الْمُجْرِمُونَ ﴿99﴾ فَمَا لَنَا مِنْ شَافِعِينَ ﴿100﴾ وَلَا صَدِيقٍ حَمِيمٍ ﴿101﴾ فَلَوْ أَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ ﴿102﴾ (سورة الشعراء)
এবং পথভ্রষ্টকারীদের জন্য জাহান্নাম উন্মোচিত করা হবে। আর তাদেরকে বলা হবে, তারা কোথায় যাদের তোমরা ইবাদাত করতে আল্লাহ ছাড়া? তারা কি তোমাদেরকে সাহায্য করছে, না নিজেদের সাহায্য করতে পারছে; অতঃপর তাদেরকে এবং পথভ্রষ্টকারীদেরকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, আর ইবলিসের সকল সৈন্যবাহিনীকেও। সেখানে পরস্পর ঝগড়া করতে গিয়ে তারা বলবে, আল্লাহর কসম! আমরা তো সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত ছিলাম। যখন আমরা তোমাদেরকে সকল সৃষ্টির রবের সমকক্ষ বানাতাম। আর অপরাধীরাই শুধু আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। অতএব, আমাদের কোন সুপারিশকারী নেই এবং কোন অন্তরঙ্গ বন্ধুও নেই। হায়, আমাদের যদি আরেকটি সুযোগ হত, তবে আমরা মুমিনদের অর্ন্তভুক্ত হতাম। (সূরা আশ শুআরা, আয়াত ৯১-১০২)    

অনুসারীদের থেকে শয়তানের দায়মুক্তির চেষ্টা-- যখন শয়তানের অনুগত কাফের মুশরিকদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে তখন শয়তানকে ডাকা হবে। শয়তান বলবে এদের কূফরী ও শিরকে আমিও মোটেও যুক্ত ছিলাম না। সে আরো বলবে আমি যে এদের কুফরী ও শিরক করতে উদ্বুদ্ধ করেছি এমন কোন প্রমাণ তাদের কাছে নেই। এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْأَمْرُ إِنَّ اللَّهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدْتُكُمْ فَأَخْلَفْتُكُمْ وَمَا كَانَ لِي عَلَيْكُمْ مِنْ سُلْطَانٍ إِلَّا أَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِي فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوا أَنْفُسَكُمْ مَا أَنَا بِمُصْرِخِكُمْ وَمَا أَنْتُمْ بِمُصْرِخِيَّ إِنِّي كَفَرْتُ بِمَا أَشْرَكْتُمُونِ مِنْ قَبْلُ إِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ. (سورة إبراهيم : 22)
আর যখন যাবতীয় বিষয়ের ফয়সালা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলেন সত্য ওয়াদা। আর তোমাদের উপর আমার কোন আধিপত্য ছিল না, তবে আমিও তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলাম, এখন আমি তা ভঙ্গ করলাম। তোমাদেরকে দাওয়াত দিয়েছি, আর তোমরা আমার দাওয়াতে সাড়া দিয়েছ। সুতরাং তোমরা আমাকে তিরস্কার করো না, বরং নিজদেরকেই তিরস্কার কর। আমি তোমাদের উদ্ধারকারী নই, আর তোমরাও আমার উদ্ধারকারী নও। ইতঃপূর্বে তোমরা আমাকে যার সাথে শরীক করেছ, নিশ্চয় আমি তা অস্বীকার করছি। নিশ্চয় যালিমদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। (সূরা ইবরাহীম, আয়াত ২২)

   জাহান্নামবাসীদের আফসোস ও অনুতাপ-- জাহান্নাবাসীরা জাহান্নামে গিয়ে যে আফসোস ও অনুতাপ করবে তার কিছু আলোচনা আল - কুরআনে এভাবে এসেছে
وَأَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ وَجَعَلْنَا الْأَغْلَالَ فِي أَعْنَاقِ الَّذِينَ كَفَرُوا هَلْ يُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ. (سورة سبأ : 33)
আর তারা যখন আযাব দেখবে তখন তারা অনুতাপ গোপন করবে। আর আমি কাফিরদের গলায় শৃঙ্খল পরিয়ে দেব। তারা যা করত কেবল তারই প্রতিফল তাদেরকে দেয়া হবে। (সূরা সাবা আয়াত ৩৩)
وَلَوْ أَنَّ لِكُلِّ نَفْسٍ ظَلَمَتْ مَا فِي الْأَرْضِ لَافْتَدَتْ بِهِ وَأَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ. (سورة يونس : 54)
আর যমীনে যা রয়েছে, তা যদি যুলম করেছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির হয়ে যায়, তবে তা সে মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে দেবে এবং তারা লজ্জা গোপন করবে, যখন তারা আযাব দেখবে। আর তাদের মধ্যে ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করা হবে এবং তাদেরকে যুলম করা হবে না। (সূরা ইউনূস, আয়াত ৫৪)
وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَا لَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا ﴿27﴾ يَا وَيْلَتَى لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا ﴿28﴾ لَقَدْ أَضَلَّنِي عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءَنِي وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنْسَانِ خَذُولًا ﴿29﴾ (سورة الفرقان)
আর সেদিন যালিম (অনুতাপে) নিজের হাত দুটো কামড়িয়ে বলবে, হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে কোন পথ অবলম্বন করতাম। হায় আমার দুর্ভোগ, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। অবশ্যই সে তো আমাকে উপদেশবাণী থেকে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে তা আসার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য চরম প্রতারক। (সূরা আল ফোরকান, আয়াত ২৭-২৯) হাদীসে এসেছে-
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: لا يدخل أحد الجنة إلا أري مقعده من النار لو أساء ، ليزداد شكرا ، ولا يدخل النار أحد إلا أري مقعده من الجنة لو أحسن ، ليكون عليه حسرة. رواه البخاري
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: প্রত্যেক জান্নাতীকে, যদি তার কর্ম খারাপ হতো তাহলে জাহান্নামে তার অবস্থান কোথায় হত তা দেখানো হবে। তখন সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। আর প্রত্যেক জাহান্নামীকে, যদি তার কর্ম ভালো হতো তাহলে জান্নাতে তার অবস্থান কোথায় হতো তা দেখানো হবে। তখন সে অনুতাপ করবে। (বর্ণনায়: বুখারী)
عن عبد الله بن عمر رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا صار أهل الجنة إلى الجنة ، وأهل النار إلى النار ، جيء بالموت حتى يجعل بين الجنة والنار ، ثم يذبح ، ثم ينادي مناد : يا أهل الجنة لا موت ، ويا أهل النار لا موت ، فيزداد أهل الجنة فرحا إلى فرحهم ، ويزداد أهل النار حزنا إلى حزنهم. (متفق عليه) وزاد مسلم عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال: ثم قرأ رسول الله صلى الله عليه وسلم: وَأَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ وأشار بيده إلى الدنيا. (مسلم 2188)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যখন জান্নাতীরা জান্নাতে যাবে আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে যাবে তখন মুত্যুকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থানে জবেহ করে দেয়া হবে। অত:পর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দেবে, হে জান্নাতবাসীরা! আর কোন মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামবাসীরা! আর কোন মৃত্যু নেই। এ ঘোষণা শুনে জান্নাতীদের আনন্দ-ফুর্তি আরো বেড়ে যাবে। আর জাহান্নামীদের দু:খ- অনুতাপ আরো বেড়ে যাবে। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম) আবু সায়ীদ আল খুদরী বর্ণিত মুসলিমের বর্ণনায় একটি বাক্য বেশী আছে। তা হল: একথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করেছেন যে,
وَأَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ. سورة مريم: 39
আর তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপ দিবস সম্পর্কে যখন সব বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে, অথচ তারা রয়েছে উদাসীনতায় বিভোর এবং তারা ঈমান আনছে না। (সূরা মারইয়াম, আয়াত ৩৯) উদাসীনতায় বিভোর কথাটি বলার সময় তিনি দুনিয়ার দিকে হাত দ্বারা ইশারা করেছেন। (বর্ণনায় : মুসলিম)      

জাহান্নামের শাস্তি হবে চিরস্থায়ী-- আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّ الْمُجْرِمِينَ فِي عَذَابِ جَهَنَّمَ خَالِدُونَ ﴿74﴾ لَا يُفَتَّرُ عَنْهُمْ وَهُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ ﴿75﴾ وَمَا ظَلَمْنَاهُمْ وَلَكِنْ كَانُوا هُمُ الظَّالِمِينَ ﴿76﴾ وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ قَالَ إِنَّكُمْ مَاكِثُونَ ﴿77﴾ لَقَدْ جِئْنَاكُمْ بِالْحَقِّ وَلَكِنَّ أَكْثَرَكُمْ لِلْحَقِّ كَارِهُونَ ﴿78﴾(سورة الزخرف)
নিশ্চয় অপরাধীরা জাহান্নামের আযাবে স্থায়ী হবে; তাদের থেকে আযাব কমানো হবে না এবং তাতে তারা হতাশ হয়ে পড়বে। আর আমি তাদের উপর যুলম করিনি; কিন্তু তারাই ছিল যালিম। তারা চিৎকার করে বলবে, হে মালিক, তোমার রব যেন আমাদেরকে শেষ করে দেন। সে বলবে, নিশ্চয় তোমরা অবস্থানকারী। অবশ্যই তোমাদের কাছে আমি সত্য নিয়ে এসেছিলাম; কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই ছিলে সত্য অপছন্দকারী। (সূরা যুখরুফ, আয়াত ৭৪-৭৮) তিনি আরো বলেন:
وَالَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِنْ عَذَابِهَا كَذَلِكَ نَجْزِي كُلَّ كَفُورٍ ﴿36﴾ وَهُمْ يَصْطَرِخُونَ فِيهَا رَبَّنَا أَخْرِجْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا غَيْرَ الَّذِي كُنَّا نَعْمَلُ أَوَلَمْ نُعَمِّرْكُمْ مَا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَنْ تَذَكَّرَ وَجَاءَكُمُ النَّذِيرُ فَذُوقُوا فَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ نَصِيرٍ ﴿37﴾ (سورة الفاطر )
আর যারা কুফরী করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের প্রতি এমন কোন ফয়সালা দেয়া হবে না যে, তারা মারা যাবে, এবং তাদের থেকে জাহান্নামের আযাবও লাঘব করা হবে না। এভাবেই আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। আর সেখানে তারা আর্তনাদ করে বলবে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করে দিন, আমরা পূর্বে যে আমল করতাম, তার পরিবর্তে আমরা নেক আমল করব। (আল্লাহ বলবেন) আমি কি তোমাদেরকে এতটা বয়স দেইনি যে, তখন কেউ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারত? আর তোমাদের কাছে তো সতর্ককারী এসেছিল। কাজেই তোমরা আযাব আস্বাদন কর, আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা আল ফাতির, আয়াত ৩৬-৩৭)      

জাহান্নামের শিকল ও আলকাতরা-- আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَتَرَى الْمُجْرِمِينَ يَوْمَئِذٍ مُقَرَّنِينَ فِي الْأَصْفَادِ ﴿49﴾ سَرَابِيلُهُمْ مِنْ قَطِرَانٍ وَتَغْشَى وُجُوهَهُمُ النَّارُ ﴿50﴾ (سورة إبراهيم)
আর সে দিন তুমি অপরাধীদের দেখবে তারা শিকলে বাঁধা। তাদের পোশাক হবে আলকাতরার এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে। (সূরা ইবরাহীম, আয়াত ৪৯-৫০)
وَإِنْ تَعْجَبْ فَعَجَبٌ قَوْلُهُمْ أَئِذَا كُنَّا تُرَابًا أَئِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ أُولَئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ وَأُولَئِكَ الْأَغْلَالُ فِي أَعْنَاقِهِمْ وَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ. (سورة الرعد : 5)
আর যদি তুমি আশ্চর্য বোধ কর, তাহলে আশ্চর্যজনক হল তাদের বক্তব্য, আমরা যখন মাটি হয়ে যাব, তখন কি আমরা নতুন সৃষ্টিতে পরিণত হব? এরাই তারা, যারা তাদের রবের সাথে কুফরী করেছে,আর ওদের গলায় থাকবে শিকল এবং ওরা অগ্নিবাসী, তারা সেখানে স্থায়ী হবে। (সূরা আর রাদ, আয়াত ৫)  

 জাহান্নামের যাক্কুম বৃক্ষ-- আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে বলেন:
إِنَّ شَجَرَةَ الزَّقُّومِ ﴿43﴾ طَعَامُ الْأَثِيمِ ﴿44﴾ كَالْمُهْلِ يَغْلِي فِي الْبُطُونِ ﴿45﴾ كَغَلْيِ الْحَمِيمِ ﴿46﴾ خُذُوهُ فَاعْتِلُوهُ إِلَى سَوَاءِ الْجَحِيمِ ﴿47﴾ ثُمَّ صُبُّوا فَوْقَ رَأْسِهِ مِنْ عَذَابِ الْحَمِيمِ ﴿48﴾ ذُقْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْكَرِيمُ ﴿49﴾ إِنَّ هَذَا مَا كُنْتُمْ بِهِ تَمْتَرُونَ ﴿50﴾ (سورة الدخان)
নিশ্চয় যাক্কুম বৃক্ষ পাপীর খাদ্য ; গলিত তামার মত, উদরসমূহে ফুটতে থাকবে। ফুটন্ত পানির মত (বলা হবে) ওকে ধর, অতঃপর তাকে জাহান্নামের মধ্যস্থলে টেনে নিয়ে যাও। তারপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানির আযাব ঢেলে দাও। (বলা হবে) তুমি আস্বাদন কর, নিশ্চয় তুমিই সম্মানিত, অভিজাত। নিশ্চয় এটা তা-ই যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ করতে। (সূরা আদ দুখান, আয়াত ৪৩-৫০)
أَذَلِكَ خَيْرٌ نُزُلًا أَمْ شَجَرَةُ الزَّقُّومِ ﴿62﴾ إِنَّا جَعَلْنَاهَا فِتْنَةً لِلظَّالِمِينَ ﴿63﴾ إِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِي أَصْلِ الْجَحِيمِ ﴿64﴾ طَلْعُهَا كَأَنَّهُ رُءُوسُ الشَّيَاطِينِ ﴿65﴾ فَإِنَّهُمْ لَآَكِلُونَ مِنْهَا فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ ﴿66﴾ ثُمَّ إِنَّ لَهُمْ عَلَيْهَا لَشَوْبًا مِنْ حَمِيمٍ ﴿67﴾ ثُمَّ إِنَّ مَرْجِعَهُمْ لَإِلَى الْجَحِيمِ ﴿68﴾ إِنَّهُمْ أَلْفَوْا آَبَاءَهُمْ ضَالِّينَ ﴿69﴾ فَهُمْ عَلَى آَثَارِهِمْ يُهْرَعُونَ ﴿70﴾ (سورة الصافات)
আপ্যায়নের জন্য এগুলো উত্তম না যাক্কুম বৃক্ষ, নিশ্চয় আমি তাকে যালিমদের জন্য করে দিয়েছি পরীক্ষা। নিশ্চয় এ গাছটি জাহান্নামের তলদেশ থেকে বের হয়। এর ফল যেন শয়তানের মাথা, নিশ্চয় তারা তা থেকে খাবে এবং তা দিয়ে পেট ভর্তি করবে। তদুপরি তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ। তারপর তাদের প্রত্যাবর্তন হবে জাহান্নামের আগুনে। নিশ্চয় এরা নিজদের পিতৃপুরুষদেরকে পথভ্রষ্ট পেয়েছিল, ফলে তারাও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে দ্রুত ছুটেছে। (সূরা আস সাফফাত, আয়াত ৬২-৭০) এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে
عن عبد الله بن عباس رضي الله عنهما قال: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قرأ هذه الآية: (اتقوا الله حق تقاته ولا تموتن إلا وأنتم مسلمون ) قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : لو أن قطرة من الزقوم قطرت في دار الدنيا لأفسدت على أهل الدنيا معايشهم ، فكيف بمن يكون طعامه. رواه الترمذي.
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করলেন: তোমরা আল্লাহ-কে যথাযথ ভয় করো আর মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। এরপর তিনি বললেন: যদি যাক্কুম বৃক্ষ থেকে একটি ফোটা পৃথিবীতে পতিত হয়, তাহলে তা পৃথিবীবাসীর সব জীবনোপকরণ নষ্ট করে দেবে। অতএব যে তা খাবে তার অবস্থা কী হবে? (বর্ণনায়: তিরমিজী। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)      

গলিত পুঁজ হবে জাহান্নামীদের খাদ্য-- এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَاسْتَفْتَحُوا وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ ﴿15﴾ مِنْ وَرَائِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَى مِنْ مَاءٍ صَدِيدٍ ﴿16﴾ يَتَجَرَّعُهُ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُ وَيَأْتِيهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ وَمِنْ وَرَائِهِ عَذَابٌ غَلِيظٌ ﴿17﴾ (سورة إبراهيم : 15-17)
আর তারা বিজয় কামনা করল, আর ব্যর্থ হল সকল স্বৈরাচারী হঠকারী। এর সামনে রয়েছে জাহান্নাম, আর তাদের পান করানো হবে গলিত পুঁজ থেকে। সে তা গিলতে চাইবে এবং প্রায় সহজে সে তা গিলতে পারবে না। আর তার কাছে সকল স্থান থেকে মৃত্যু ধেঁয়ে আসবে, অথচ সে মরবে না। আর এর পরেও রয়েছে কঠিন আযাব । (সূরা ইবরাহীম, আয়াত ১৫-১৭)
هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِنْ نَارٍ يُصَبُّ مِنْ فَوْقِ رُءُوسِهِمُ الْحَمِيمُ ﴿19﴾ يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ ﴿20﴾ وَلَهُمْ مَقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ ﴿21﴾ كُلَّمَا أَرَادُوا أَنْ يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ ﴿22﴾ (سورة الحج : 19-22)
এরা দুটি বিবাদমান পক্ষ, যারা তাদের রব সম্পর্কে বিতর্ক করে। তবে যারা কুফরী করে তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর থেকে ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। যার দ্বারা তাদের পেটের অভ্যন্তরে যা কিছু রয়েছে তা ও তাদের চামড়াসমূহ বিগলিত করা হবে। আর তাদের জন্য থাকবে লোহার হাতুড়ী। যখনই তারা যন্ত্রণাকাতর হয়ে তা থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং বলা হবে, দহন-যন্ত্রণা আস্বাদন কর। (সূরা আল হজ, আয়াত ১৯-২২)  

সৎকাজে আদেশ করে ও অন্যায় থেকে নিষেধ করে অথচ নিজে তা থেকে দূরে থাকে না এমন ব্যক্তির শাস্তি-- আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা অন্যকে ভাল কাজের আদেশ দেয় কিন্তু নিজে করে না। আবার অন্যকে অন্যায় ও পাপাচার থেকে ফিরে থাকতে বলে অথচ সে নিজে তাতে লিপ্ত হয়। এমন ব্যক্তি জাহান্নামে এক বিশেষ ধরনের শাস্তি ভোগ করবে। হাদীসে এসেছে
عن أسامة بن زيد رضي الله عنهما قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول " يؤتى بالرجل يوم القيامة . فيلقى في النار . فتندلق أقتاب بطنه . فيدور بها كما يدور الحمار بالرحى . فيجتمع إليه أهل النار . فيقولون : يا فلان ! مالك ؟ ألم تكن تأمر بالمعروف وتنهى عن المنكر ؟ فيقول : بلى . قد كنت آمر بالمعروف ولا آتيه ، وأنهى عن المنكر وآتيه " رواه البخاري ومسلم.
উসামা ইবনে যায়েদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে, তার পেটের নাড়িভুরিগুলো ঘুরপাক খেতে থাকবে। ফলে সে গাধার মত ঘুরতে থাকবে। গাধা যেমন চরকার পাশে ঘুরে থাকে। জাহান্নামের অধিবাসীরা তাকে দেখার জন্য জড়ো হবে। তারা তাকে বলবে, এই! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি কি সৎ কাজের আদেশ করতে না আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করতে না? সে বলবে: হ্যা, আমি সৎ কাজের আদেশ করতাম কিন্তু তা নিজে করতাম না। আর অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত থাকতে বলতাম কিন্তু নিজে তাতে লিপ্ত হতাম। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)      

জাহান্নামে সবচেয়ে নিম্নমানের শাস্তির ধরন-- হাদীসে এসেছে
عن النعمان بن بشير رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن أهون أهل النار عذابا من له نعلان وشراكان من نار . يغلي منهما دماغه . كما يغلي المرجل ما يرى أن أحدا أشد منه عذابا . وإنه لأهونهم عذابا. رواه مسلم.
সাহাবী নুমান ইবনে বশীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জাহান্নামীদের মধ্যে যার সবচেয়ে হাল্কা শাস্তি হবে তার শাস্তির ধরনটা এমন হবে যে, তার পায়ে আগুনের দুটো জুতা থাকবে ও আগুনের দুটো ফিতা থাকবে। এর আগুনের তাপে তার মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকবে যেমন ডেগের মধ্যে পানি ফুটতে থাকে। লোকেরা তার অবস্থা দেখে মনে করবে এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কিছু নেই। অথচ এ শাস্তিটা হল সবচেয়ে হাল্কা শাস্তি। (বর্ণনায় : মুসলিম)      

জাহান্নামে শাস্তির বিভিন্ন স্তর-- হাদীসে এসেছে-
عن سمرة بن جندب رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: منهم من تأخذه النار إلى كعبيه . ومنهم من تأخذه النار إلى ركبتيه . ومنهم من تأخذه النار إلى حجزته . ومنهم من تأخذه النار إلى ترقوته. رواه مسلم.
সামুরা ইবনে জুনদাব রা. থেকে বর্ণিত যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জাহান্নামীদের কারো পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত আগুনে স্পর্ষ করবে। করো হাটু পর্যন্ত আগুনে স্পর্ষ করবে। কারো কোমর পর্যন্ত আবার কারো কণ্ঠ পর্যন্ত আগুন স্পর্ষ করবে। (বর্ণনায় : মুসলিম)

   নারীরা অধিকহারে জাহান্নামে যাবে-- হাদীসে এসেছে-
عن أسامة بن زيد رضي الله عنهما عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: قمت على باب الجنة ، فكان عامة من دخلها المساكين ، وأصحاب الجد محبوسون ، غير أن أصحاب النار قد أمر بهم إلى النار ، وقمت على باب النار فإذا عامة من دخلها النساء.
উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমি জান্নাতের গেটে দাড়ালাম, দেখলাম যারা তাতে প্রবেশ করেছে তারা অধিকাংশ ছিল দুনিয়াতে দরিদ্র অসহায়। আর ধনী ও প্রভাবশালীদের আটকে দেয়া হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে যাদের জাহান্নামে যাওয়ার ফয়সালা হয়ে গেছে তাদের কথা আলাদা। আর আমি জাহান্নামের প্রবেশ পথে দাড়ালাম। দেখলাম, যারা প্রবেশ করছে তাদের অধিকাংশ নারী। (বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

 কেন নারীরা পুরুষদের তুলনায় অধিকহারে জাহান্নামে যাবে?-- অন্য একটি হাদীসে এ সম্পর্কে এসেছে-
عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يا معشر النساء ! تصدقن وأكثرن الاستغفار . فإني رأيتكن أكثر أهل النار . فقالت امرأة منهن ، جزلة : وما لنا يا رسول الله أكثر أهل النار . قال : تكثرن اللعن . وتكفرن العشير . رواه مسلم.
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : হে নারীগণ! তোমরা দান-সদাক করো। বেশী বেশী করে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। কেননা আমি জাহান্নামে তোমাদের অধিকহারে দেখেছি। এ কথা শোনার পর উপস্থিত মহিলাদের মধ্য থেকে একজন -যার নাম ছিল জাযলা- প্রশ্ন করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কেন এ অবস্থা? কেন জাহান্নামে আমরা বেশী সংখ্যায় যাবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমরা স্বামীর প্রতি বেশী অকৃতজ্ঞ ও অভিশাপ দাও বেশী। (বর্ণনায় : মুসলিম) বলতে খারাপ শুনালেও আসলে আমাদের সমাজের নারীদের বাস্তব চিত্র এ রকমই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন। আমি দাম্পত্য জীবনে অনেক সুখী নারীকে দেখেছি তারা স্বামীর প্রতি অনেক সময় চরম অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে। অনেক সময় সামান্য বিরক্ত হলে নিজ সন্তানদেরও অভিশাপ দেয়। নারীদের জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য এ দুটো স্বভাব পরিহার করতে হবে অবশ্যই। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বলার উদ্দেশ্য এটাই। তিনি নারীদের স্বভাব সংশোধন করার জন্যই এ কথা বলেছেন। নারীদের খাটো করা বা তাদের ভূমিকা অবমুল্যায়নের জন্য বলেননি।      

পঞ্চম অধ্যায়

জান্নাত ও তার অধিবাসীদের বিবরণ-- যারা জান্নাতে যাবেন তারা হলেন, নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও ঈমানদার সৎকর্মশীল মানুষ। জান্নাত এমন একটি স্থান যার পাশ দিয়ে বয়ে যায় নদী। যার প্রাসাদসমূহ তৈরী হয়েছে স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইট দিয়ে। এ প্রাসাদের অন্যান্য উপকরণসমূহের মধ্যে আছে মনি-মুক্তা, মৃগনাভী, হিরা-মানিক্য ইত্যাদি। সেখানে আছে নারী-পুরুষ সকলের জন্য পবিত্র সঙ্গী-সাথী। আছে সব ধরনের ফল-মুল। সেখানের অধিবাসীরা খাওয়া-দাওয়া আর আমোদ-ফুর্তিতে মত্ত থাকবে। থাকবে না কোন ধরনের দু:চিন্তা ও ভয়-ভীতি। সেখানে থাকে হাসি ও আনন্দ। থাকবে না কোন কান্না। মৃত্যু থাকবে না। থাকবে না মৃত্যুর দু:চিন্তা। সবচেয়ে বড় নেআমাত হল আমাদের মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাক্ষাত লাভ ও তার সন্তুষ্টি। মোট কথা হল, সেখানের সুখ শান্তি, আনন্দ-ফুর্তির কোন দৃষ্টান্ত কোন চোখ এখনো দেখেনি। কোন কান কখনো শুনেনি। তার সত্যিকার ধরণ সম্পর্কে কোন হৃদয় কখনো কল্পনা করেনি।      
সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-- হাদীসে এসেছে-
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: آتي باب الجنة يوم القيامة . فأستفتح . فيقول الخازن : من أنت ؟ فأقول : محمد . فيقول : بك أمرت لا أفتح لأحد قبلك. رواه مسلم.
আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমি কেয়ামতের দিন জান্নাতের গেটে এসে জান্নাত খুলে দিতে বলবো। তখন দারোয়ান প্রশ্ন করবে, আপনি কে? আমি বলবো, আমি মুহাম্মদ। তখন সে বলবে, আমাকে নির্দেশ দেয়া আছে যে, আপনার পূর্বে আমি যেন কারো জন্য জান্নাতের দরজা খুলে না দেই। (বর্ণনায়: মুসলিম)  

No comments:

Post a Comment