হে যুবক! তোমাকেই বলছি……
যুগে যুগে সত্যে সুন্দর ও ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম করে যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছে। যারা নব জীবনের সঙ্গীত রচনার ভার নিজেদের কাধে তুলে নেয়। অসাধারণ সুন্দরের স্রষ্টা, অকল্পনীয় অসহনীয় ভাঙ্গনের প্রমিথিউস, অসাধ্য সাধনের কারিগর যারা, তারাই হলো আমাদের যুবক। যেখানে সবাই হতবাক হয়ে চেয়ে থাকে সেখানেই সে মিছিলের ভাষায় গর্জে ওঠে। যেখানে প্রতিকারহীন মানবতা বার বার অশ্রু ঝরিয়ে বোবা কান্নায় মুষড়ে পড়ে সেখানেই সে রূপান্তরিত হয় বীর যোদ্ধা পুরুষে। যে বয়সে নবীন, মন যার বিশ্বাসে ভরপুর, যে অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে জানেনা, যে গুনেধরা সমাজকে ভেঙ্গে চুরে জাতিকে সুন্দর আগামী উপহার দেয়ার স্বপ্ন দেখে, আজ সেই যুবককেই নিয়ে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস হে যুবক! তোমাকেই বলছি……।
“স্বপ্ন দেখে মানুষ, স্বপ্ন দেখে যায়
স্বপ্ন গড়ে মানুষ, স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়।’’
কিন্তু না! আমরা কোন ভঙ্গুর স্বপ্ন দেখবো না হে যুবক! দেখতেও চাই না। আমরা দেখবো অজেয় স্বপ্ন, বেঁচে থাকার স্বপ্ন। সন্ত্রাস, হত্যা, গুম, ধর্ষণ, ধূমপান, মাদক, দূর্নীতি, অশ্লীলতা, বেহায়াপনাসহ সমাজবিরোধী সকল কর্মকান্ডমুক্ত একটি নির্মল আগামী পৃথিবীর স্বপ্ন। আমাদের এ স্বপ্নগুলো কল্পনার রাজ্যে প্রজাপতির মত ডানা মেলে ছুটে বেড়ায়। এসব কল্পনার স্বপ্নরাই কখনও কখনও বাস্তবে রূপ নেয়। হ্যাঁ, সেই সব স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দান করতে হলে আমাদের যুব সমাজকে শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সত্যের মশাল নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই দেখবে তোমাদের চতুর্পাশ থেকে ছোটে আসতে থাকবে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, আবাল বৃদ্ধ-বনিতার শত শত মিছিলের স্রোত। যে মিছিল থামবেনা ততক্ষন পর্যন্ত, যতক্ষন না তোমাকে পৌছে দিতে পারবে তোমার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের মঞ্জীলে মকসুদে।
“তুমি তো অক্ষম নও তবে কেন আছ নীরবে?
তোমার শরীরে এখন গরম রক্ত আছে প্রবাহমান।
তবে কেন দেখি সকল কাজে তোমার পিছুটান।’’
যে কোন জাতির উত্থান-পতন, জাতীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি-সভ্যতা, শিক্ষা-দীক্ষা, উন্নতি-অগ্রগতি ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে যুব সমাজই হচ্ছে মূল চালিকা শক্তি। কিন্তু আজ যখন আমার দেশের জাতীয় ঐতিহ্য মুছে ফেলার অপচেষ্টা চলছে, পশ্চিমা সংস্কৃতির কাছে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে, সমগ্র বিশ্ব যখন শিক্ষা-দীক্ষা, উন্নতি-অগ্রগতিতে রকেটের বেগে সামনের দিকে ছুটে চলেছে তখন আমাদের কথিপয় রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিহিংসার রাজনিতিতে লিপ্ত হয়ে দেশটাকে পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সর্বোপরি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব যখন পার্শবর্তী দেশের কাটাঁতারে ঝুলছে তখনও কেন তুমি নিরব? আজও কি তোমার শরীরে তারিক বিন যিয়াদ, খালিদ বিন ওয়ালিদ কিংবা মাহমুদ গজনবীর মতো টগবগে যুবকের উষ্ণ রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে না? তাহলে কিসে তোমার এত পিছুটান? তোমাকে জাগতে হবে, জাগাতে হবে এই ঘুমন্ত জাতিকে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে নেতৃত্বের ভার তোমাকেই কাধে তুলে নিতে হবে হে যুবক। নয়তো তোমার স্বপ্নগুলো স্বপ্নের রাজ্যেই থেকে যাবে।
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’’
যুবকরাই আমাদের সুন্দর আগামীর প্রতিশ্রুতি। এ সুন্দর আগামী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে কোন যুদ্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারে একমাত্র তারাই। তাই কবি হেলাল হাফিজের এ কবিতার ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে যুবসমাজকে নেমে পড়তে হবে যুদ্ধের ময়দানে। হোক না সে যুদ্ধ খাতা-কলমে, ফেইসবুকে, টুইটারে কিংবা তীর--ধনুক আর তলোয়ারে। আমাদের হতে হবে মুহাম্মদ বিন কাসিমের মত যুবক। যে যুবক মাত্র ১৯ বছর বয়সে সিন্ধু এবং পাঞ্জাবের মত বিশাল সাম্রাজ্য জয় করে বিশ্ববাসীকে একটি সুখি সম্রৃদ্ধশালী সমাজ উপহার দিয়েছিলেন। আর এ সুন্দর আগামীর লক্ষ্যে সংগ্রাম করতে গিয়ে যদি রক্ত ঝরে, ঝরুক! মরণ আসে, আসুক! কিংবা কাঁদলে কাঁদুক আমাদের গর্ভধারিনী মা, নির্বাক হোক বাবা। তবুও আমরা থমকে দাড়াবো না। কেননা এ মৃত্যু কোন সাধারণ মৃত্যু নয়। এ মৃত্যু শাহাদাতের। এ মৃত্যুই একদিন তাদের সাথে সাক্ষাত করিয়ে দেবে জান্নাতের সিঁড়িতে, ইনশাআল্লাহ।
‘‘ছিড়বো পর্দা যত মিশকালো আঁধিয়ার
ছিনিয়ে আনবো যত বাকি আছে অধিকার।’’
যেখানে চঞ্চল কিশোরের কৌতুহল থমকে দাঁড়ায়, বয়োবৃদ্ধ আবেগে স্তব্ধ হয়ে পরে, পৌঢ় ভাবনার কাছে বন্দী হয়ে যায় সেখানেই যৌবন বিদ্রোহ করে ওঠে তার অধিকারের বলে। তাই আমাদের যুব সমাজকে তাদের নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। বুঝতে হবে অধিকার কেউ কাউকে দেয় না বরং অধিকার আদায় করে নিতে হয়। জীবন চলার পথে কখনও যদি আমাদের নুন্যতম অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মনে হয় তাহলে সে অধিকার আমাদেরকেই ছিনিয়ে আনতে হবে। আমাদের চতুর্দিকে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। সেই অন্ধকার থেকে আমাদের শত্রুরা আমাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তাদের এ ষড়যন্ত্রের কালো হাত ভেঙ্গে দিয়ে উদ্ধার করতে হবে আমাদের সোনালী ঐতিহ্য ও আদর্শ; যাতে আমাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হয়, দূরীভুত হয় যুব সমাজে উপর থেকে কলংকের ছাপ। আর প্রতিষ্ঠিত হয় আমাদের স্বপ্নের সুন্দর আগামী পৃথিবী।
“যাত্রা তব শুরু হোক, কর হানি দ্বারে
নব যুগ ডাকিছে তোমারে।’’
হ্যাঁ, ডাক এসেছে নতুন যামানার। সেই ডাকের প্রথম দিনেই খুলে দিতে হবে যৌবনের বদ্ধ দুয়ার। খুলে দিতে হবে সবকটি বদ্ধ জানালা। ছোড়ে ফেলতে হবে সব পিছু টান। শামিল হতে হবে সুন্দর আগামীর মিছিলে। তবেই নতুন দিনের সূর্যালোকে আলোকিত হবে আমাদের নিজস্ব সত্তা, সমগ্র জীবন। এভাবেই একদিন আমাদের আশা, আমাদের স্বপ্ন, আমাদের ভালবাসা আর আমাদের প্রচেষ্টার সম্মিলনে ফুলের সৌরভ আর মনকাড়া রঙ নিয়ে ভরে উঠবে আমাদের সুন্দর আগামী পৃথিবী, আমাদের স্বপ্নের পৃথিবী। সমগ্র আসমান ও যমিনের মালিক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে একটাই আমার প্রার্থনা তিনি যেন আমিসহ আমাদের সকল যুবকদেরকে সেই সুন্দর আগামীর মিছিলে শামিল হওয়ার তৌফিক দান করেন। আমীন, ছুম্মা আমীন।
নিজাম উদ্দিন
শিক্ষক, আল জালাল মাসজিদ মাদ্রাসা, লুটন
শিক্ষক, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, সেন্ট আলবান্স
তারবিয়্যাহ ও লাইব্রেরী সেক্রেটারী, ইসলামিক ফোরাম ইউরোপ, লুটন সিটি।
No comments:
Post a Comment