ক.
সর্বোত্তম আদর্শিক নমুনা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ وَأَنْتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
“
তোমরা কি মানুষকে ভালো কাজের নির্দেশ দাও, আর নিজেদের ব্যাপারে হও স্মৃতিভ্রষ্ট !
অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন কর, তবে কি তোমরা বুঝ না?”
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ ﴿২﴾ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ
“ হে
মুমিনগণ তোমরা যা করো না তা কেন বল, তোমরা যা করনা তা বলা আল্লাহর কাছে অতিশয়
অসন্তোষজনক” আর যেহেতু কোরআনই ছিল
রাসূলুল্লাহর ৎ চরিত্র, তাই রাসূলুল্লাহ ৎ তাদেরকে কোনো নির্দেশ দিতেন না যতক্ষণ
না অন্য সবার পূর্বেই তা তিনি বাস্তবায়ন করে নেন। একইরূপে কোনো কিছু থেকে নিষেধ
করতেন না যতক্ষণ না নিজে তা থেকে অবস্থান নিতেন বহু দূরে। হজ্বে নবীচরিত্রের এই
উজ্জ্বল দিকগুলো বিচিত্র ধারায় প্রকাশ পেয়েছে, তন্মধ্যে নিম্নবর্ণিত কয়টি
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
*
বিদায় হজ্বের খোতবায় তিনি বলেছেন, “ জেনে রাখো! জাহেলী যুগের সকল বিষয় আমার এ
দু’পায়ের নীচে রাখা । আর আমাদের
হত্যাসমূহের মধ্যে প্রথম হত্যা যা রহিত করছি ইবনে রাবিয়া ইবনে হারেসের হত্যা, সে
বনু সা’দ গোত্রে দুগ্ধপায়ী থাকা অবস্থায় হোযাইল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে।
জাহিলীযুগের সুদ রহিত হলো । আর প্রথম সুদ
যা রহিত করছি আমাদের সুদ; আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালেবের সুদ, এটা রহিত
হলো।”
*
রাসূলুল্লাহ ৎ যখন তাঁর সাহাবাদের উৎসাহ দিচ্ছিলেন হজ্বে কল্যাণকর কাজের বিষয়ে,
ইবাদত বন্দেগী , আল্লাহর সামনে খুশু খুজু বিনয় ও নম্রতা প্রকাশের জন্য, তখন তিনি
ছিলেন ভয়ে-ত্রস্তে আল্লাহর সবচেয়ে কাছাকাছি. বিনয় ও নম্রতায় সর্বাগ্রে, আকুতি
ব্যাকুলতা ও স্রষ্টার সামনে দীনতা প্রকাশে সর্বোর্ধ্বে।
*
তিনি যখন তার সাহাবাদেরকে দুনিয়ার প্রতি নিলের্ِাভ ও পরকালের প্রতি আগ্রহী হতে উৎসাহ দিচ্ছিলেন তখন তিনি একটি জীর্ণ গদি ও চার দিরহাম মূল্যেরও
হবে না এমন একটি চাদরের ওপর ছিলেন।
*
তিনি যখন ধাক্কাধাক্কি বর্জন করে ধীরে-সুস্থে হজ্বকর্ম পালনের নির্দেশ দেন সে-সময়
তাঁকে দেখা গেলো অত্যন্ত গুরুগম্ভীর ও শান্ত হয়ে আরাফা থেকে প্রস্থান করতে , তাঁর
চলার গতিও ছিল মন্থর।
*
তিনি যখন চুল কর্তন ও মাথামুণ্ডন উভয়টার
বৈধতা প্রকাশ করলেন, এবং মাথামুণ্ডন ব্যাপারে বেশি উৎসাহ দিলেন ও
মুণ্ডনকারীদের জন্য দোয়া করলেন তখন তিনি রীতিমতো মুণ্ডনকৃত অবস্থায় ছিলেন ।
*
তিনি যখন ধর্মে বাড়াবাড়ি থেকে সাহাবাদেরকে বারণ করলেন এবং আঙুল দিয়ে নিক্ষেপ করা
যায় এমন কঙ্কর নিক্ষেপ করতে বললেন, তখন তিনি একই রকম কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন।
এটা অনুধাবন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে
কাকতালীয়ভাবে নয় বরং রাসূলুল্লাহ ৎ স্বেচ্ছায় সাগ্রহে নিজেকে উত্তম আদর্শের নমুনা
বানিয়ে উপস্থাপন করেছেন। এর ইঙ্গিত পাওয়া
যায় যখন তিনি পানি পান করানোর কাজে নিয়োজিতদেরকে বললেন, “মানুষ তোমাদের ওপর অতি
মাত্রায় ভির করবে এ-ভয় না হলে আমি তোমাদের সাথে পানি উঠতাম।”
এ-জাতীয় বিষয়ই মানুষের ভালোবাসা কুড়িয়ে
এনেছে, এবং তাঁর ব্যক্তিত্বে তাদেরকে প্রভাবিত করেছে। কেননা এটা হলো ঐকান্তিকতা ও
নেতৃত্বের উৎকর্ষতার আলামত, এবং যা
অন্যদেরকে করতে বলা হচ্ছে তাতে দৃঢ় বিশ্বাস ও বাস্তবায়নে একনিষ্ঠতার পরিচয়।
কতই না সুন্দর হবে যদি দ্বীনের পথে
আহ্বায়কগণ (দাঈ) এ মহিমান্বিত চরিত্র মাধুরী আত্মস্থ করে নেয়, তাদের নিজস্ব জীবনে
এর যথাযথ অভিব্যক্তি ঘটায়, অন্যদের জন্য উত্তম আদর্শ স্থাপন করতে সমর্থ হয় সকল কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ করে হজ্ব -মৌসুমে।
অতঃপর ভালো কাজ- যার নির্দেশ তারা
অন্যদেরকে দেয় -- সম্পাদনে তারা হয়ে যায় সর্বাগ্রে। আর
অন্যায় কাজ - যা থেকে অন্যদেরকে বারণ করছে -তা থেকে তারা অবস্থান নেয় বহু
দূরে ।
খ.
সৎ কাজের নির্দেশ ও অসৎ কাজ থেকে বারণ
সৎকাজের
নির্দেশ ও অসৎ কাজ থেকে বারণ ও সতর্ক করা ধর্মের মূল বিষয়সমূহের একটি। এটি অত্যন্ত
মহৎ কাজ যা পালন করার উদ্দেশেই প্রেরণ ঘটেছে নবী রাসূলদের। এটা কল্যাণমুখী জীবনের
নিরাপদ ঢাকনা,পরকালে ব্যক্তির পরিত্রাণের পথ। এর দ্বারা লাভ হয় মর্যাদা,
প্রতিষ্ঠা। যা ছেড়ে দিলে সজীবতা হারায় ধর্মকর্ম, ছড়িয়ে যায় মূর্খতা, ব্যাপকতা পায়
গোমরাহী।
যে ক্ষমতা রাখে তারই এ-কাজটি করা উচিত
যদিও মনে হতে লাগে যে এ কাজে লাভ হচ্ছে থোরাই। কেননা দাঈর কাজ দায়িত্ব পালন করে যাওয়া। মানুষেরা
গ্রহণ করছে কি করছে না সেটা তার মূল গুরুত্বের বিষয় নয়। আল্লাহ পাক এরশাদ
করেছেন :
مَا عَلَى الرَّسُولِ إِلَّا الْبَلَاغُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا تَكْتُمُونَ
“রাসূলের
দায়িত্ব কেবল পোঁছিয়ে দেয়া।” তিনি তাঁর
নবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন :
إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ
“আপনি যাকে ভালোবাসেন তাকে পথ দেখাতে পারবেন না,
তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন পথ দেখান।”
তিনি আরো বলেন :
وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ
“
আপনি সৎকাজের নির্দেশ দিন।” সাথে সাথে
আল্লাহ পাক এজাতীয় বিশেষণেই তাঁকে বিশেষিত করেছেন, এরশাদ হয়েছে :
مَكْتُوبًا عِنْدَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ
“তাদের
কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা আছে তিনি তাদেরকে সৎকাজের আদেশ দিবেন ও অসৎ কাজ থেকে
বারণ করবেন।”
রাসূলুল্লাহ ৎএর জীবন নিয়ে ভেবে দেখলে
স্পষ্টভাবে মূর্ত হবে যে তিনি যা কিছু ভালো তার বর্ণনাতেই সারাটি জীবন কাটিয়েছেন।
যা পরিত্রাণ দেয় সে-ব্যাপারে উৎসাহ দিতে, অসত্যকে উন্মোচিত করতে, যা কিছু অন্যায়ের
দিকে ঠেলে দেয় তা থেকে হুঁশিয়ার করতেই কেটেছে
তাঁর গোটা জীবন। হজ্ব-মৌসুমে তাঁর অবস্থা, এর থেকে ভিন্ন ছিল না। কীভাবে
হজ্বকর্ম যথার্থভাবে পালিত হবে সে-বিষয়ে তিনি হাজীদেরকে দিয়েছেন সকলপ্রকার
দিকনির্দেশনা। তাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সব বিষয়েই তাদেরকে বলেছেন । যা কিছু
অকল্যাণকর তা থেকে সতর্ক করেছেন।
রাসূলুল্লাহ ৎ এর আমরে বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকারের উজ্জ্বলতম কয়েকটি উদাহরণ
নিরূপ :
ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত:,‘
রাসূলুল্লাহ ৎ এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন: আমি শুবরামার পক্ষ থেকে হজ্বের নিয়ত
করলাম, তিনি বললেন শুবরামা কে? বললেন :
আমার এক ভাই, অথবা নিকট-আত্মীয়। তিনি
বললেন : নিজের হজ্ব করেছ? বললেন: না, রাসূলুল্লাহ ৎ বললেন : প্রথমে নিজের হজ্ব করো
পরে শুবরামার হজ্ব ।
সাহাবাদের যারা কোরবানির পশু সঙ্গে আনেন নি
হালাল হয়ে যাওয়ার অনুমতির পর তাদের মধ্যে যারা
দেরি করলেন তাদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহৎ এর অস্বীকৃতি এবং রাগও এ পর্যায়ের
একটি বিষয়। অতঃপর তিনি তাদেরকে এই বলে নির্দেশ দিলেন “ হালাল হও!” ; তাঁরা
রাসূলুল্লাহ ৎ এর নির্দেশে সাড়া দিলেন ও আনুগত্য স্বীকার করে হালাল হয়ে গেলেন।
“রাসূলুল্লাহ ৎ পবিত্র কাবা তোওয়াফের সময়
এমন এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে গেলেন যে তার হাত অন্য ব্যক্তির সাথে সূতো অথবা অন্য
কিছু দিয়ে বেঁধে রেখেছে , তিনি তা কেটে দিলেন এবং বললেন, হাত দিয়ে চালিয়ে নিয়ে যাও।”
ফযল ইবনে আব্বাস (রা) কে রাসূলুল্লাহ ৎ
স্বহস্তে বারণ করলেন যিনি পাশ দিয়ে যাওয়া
নারীদের প্রতি দৃষ্টি দিচ্ছিলেন : হযরত জাবেরের (রা) হাদীসে এসেছে : “ ফযল ইবনে
আব্বাস (রা) কে তিনি সহ-আরোহী করে নিলেন যিনি ছিলেন দৃষ্টিনন্দন-কেশী, শুভ্র ও
সুদর্শন। রাসূলুল্লাহ ৎ যখন এগিয়ে চললেন য়াজরিনের মহিলারা পাশ দিয়ে গেলো, ফযল ইবনে
আব্বাস তাদের প্রতি তাকাতে লাগলেন, রাসূলুল্লাহ ৎ তাঁর পবিত্র হাত ফযলের (রা)
চেহারার ওপর রাখলেন, ফযল (রা) পার্শ্ব বদলিয়ে দেখতে শুরু করলেন। রাসূলুল্লাহ ৎ ও
তাঁর হাত সেদিকে ফিরালেন ফযলের (রা)
চেহারা ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য।” খাসআমিয়া গোত্রের মহিলার প্রতি যখন তাকালেন
তখনো তিনি ফযল (রা) কে বারণ করলেন, হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন : “ ফযল
রাসূলুল্লাহ ৎ এর সহ-আরোহী ছিলেন, খাসআমের এক মহিলা এলো, ফযল তার দিকে তাকাতে
লাগলেন, সেও ফযলের (রা) দিকে তাকাতে লাগল, অতঃপর রাসূলুল্লাহ ৎ তার চেহারাকে
অন্যদিকে ফিরাতে লাগলেন...।”
বর্তমান
যুগে হাজ্বীদের মাঝে শরীয়তগর্হিত কাজ অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে ছড়িয়ে আছে। দুষ্কর্ম
বাসা বেঁধেছে সু-বিস্তর পরিসরে। আর এর অধিকাংশেরই উৎস হলো অজ্ঞতা ও জ্ঞানের
স্বল্পতা। দুষ্ট মনোবৃত্তি, কুটিল মানসিকতা এর উৎস নয় বলেই বিশ্বাস। তাই এ
প্রকৃতির মানুষকে হেকমত ও নরমপদ্ধতিতে
আহ্বান করবেন, দিনের হুকুম আহকাম শিখাবেন,
এহসান ও কোমলতাসহ তাদেরকে সত্য গ্রহণে
উদ্বুদ্ধ করবেন, সুকৌশলে ভালো কাজের প্রতি তাদের
আগ্রহ সৃষ্টি করবে , এবং মমত্বপূর্ণ ভাষায় অসত্য ও অকল্যাণ থেকে তাদেরকে
বিরত রাখতে সচেষ্ট হবে।
ওলামা ও ইসলাম প্রচারকদের প্রচেষ্টা
এক্ষেত্রে যতই উল্লেখযোগ্য হোক না কেন
প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। কেননা
মুনকার ও অবৈধ কর্ম এতই ব্যাপকতা পেয়েছে
যে খণ্ডিত চেষ্টায় তা রহিত করা কিছুতেই সম্ভব নয়। আসলে এ-কাজটি প্রতিটি
হজ্বকারী ব্যক্তিরই করা উচিত। যখনই কেউ কাউকে
অবশ্যকরণীয় কাজ ছেড়ে দিতে, অথবা কোনো হারাম কাজ করতে দেখবে সাথে সাথে তা
প্রতিরোধ করতে উদ্যোগ নেবে; কেননা
রাসূলুল্লাহ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে-ব্যক্তি কোনো অবৈধ কর্ম দেখবে সে যেন তা হাত দিয়ে
পরিবর্তন করে দেয়। যদি না পারে তাহলে
জিহ্বা দিয়ে, যদি তাও না পারে তাহলে হৃদয় দিয়ে, আর এটাই হলো ঈমানের
দুর্বলতম পর্যায়।”
আল্লাহর সীমানা লঙ্ঘিত হলে যারা উত্তপ্ত
হয়, সত্য ও ন্যায় প্রচারের দায়িত্ব পালনে
যারা সচেষ্ট হয় আপনিও তাদের দলভুক্ত হন।
কেননা যে ইসলামে একটি ভালো নিয়ম চালু করল
সে তাদের আমলেরও ছোঁয়াব পেলো যারা
তার কথামতো কাজ করল। অথচ তাদের নিজেদের ছোঁয়াব কিঞ্চিৎ পরিমাণও কমবে না।
আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো খারাপ নিয়ম চালু করল সে তার পাপ বহন করল এবং যারা সে
অনুসারে আমল করল তাদের পাপের বোঝাও বহন
করল, আর তাদের পাপ কোনো অংশেই কমানো হবে না।
গ.রাসূলুল্লাহর
নম্রতা
তাওয়াযু
ও নম্রতা নিঃসন্দেহে একটি সেরা চরিত্রগুণ, মহত্ত্বের শিকারযন্ত্র, আল্লাহর কাছে
বান্দার মর্যাদা বেড়ে যাওয়ার কারণ। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে মারফু হাদীসে
এসেছে, রাসূলুল্লাহ ৎ বলেছেন : “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয়ী হলো আল্লাহ তাকে
মর্যাদাপূর্ণ করলেন।” আল্লাহ তাঁর নবীকে
নির্দেশ দিয়ে বলেছেন :
وَاخْفِضْ
جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
“আর
যারা আপনার অনুসরণ করে তাদের প্রতি বিনয়ী
হন।” রাসূলুল্লাহ ৎ তাঁর প্রতিপালকের
নির্দেশ মানলেন ও এমন পর্যায়ে পৌঁছোলেন যে কেউ আর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে
না। তিনি নিজেই নিজের সেবা করতেন, বাড়িতে তিনি তাঁর পরিজনের সেবায় নিয়োজিত হতেন,
জুতো ঠিক করতেন, কাপড় সেলাই করতেন, বকরির দুধ দোহন করতেন, নিজের প্রয়োজনীয় বস্তু
সামগ্রী বহন করতেন, বাচ্চাদেরকে ছালাম দিতেন ও তাদেরকে আদর করতেন, তাঁর সঙ্গীদের
থেকে বেশভূষা থেকে শুরু করে কোনো কিছুতেই স্বতন্ত্র হতেন না। যে কোনো মানুষের ডাকে
তিনি সাড়া দিতেন হোক সে শ্বেতাঙ্গ অথবা লাল বর্ণের। তিনি বলতেন : “আমি আহার করি
যেভাবে কৃতদাস আহার করে, আমি বসি যেভাবে কৃতদাস বসে।” অন্যদিকে তিনি প্রচণ্ডভাবে নিষেধ করেছেন তাঁকে
যেন অতিরঞ্জিত আকারে প্রশংসা না করা হয়, প্রতিপালক তাঁর যে অবস্থান নির্ধারিত
করেছেন তা থেকে ঊর্ধ্বে উঠানো না হয়। হাদীসে এসেছে : আমাকে অতিরঞ্জিত করে প্রশংসা
করো না যেমন করেছে নাসারারা ইসা ইবনে মারয়াম এর ক্ষেত্রে। আমি তো নিছক তার দাস
অতঃপর বলো আল্লাহর দাস ও রাসূল।”
হজ্বে
মানুষদের পরিচালনা ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহর তাওয়াজু ও নম্রতার বহু
উদাহরণ রয়েছে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নীচের কয়টি:
*
জীর্ণ গদি ও চার দিরহাম মূল্যেরও হবে না এমন চাদরে হজ্ব সম্পাদন।
*
সর্বসাধারণ থেকে স্বতন্ত্র অবস্থান
অবলম্বন করতে অস্বীকার করা রাসূলূল্লাহর বিনম্র আচরণের একটি বিমূর্ত
উদাহরণ। এর বড়ো প্রমাণ- যে পানিতে হাত
লাগেনি, ভিন্ন ব্যবস্থাপনায় সে ধরনের পানি পান করানোর প্রস্তাব দিলে
রাসূলুল্লাহ ৎ তা নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, “ ওটার কোনো প্রয়োজন নেই, মানুষ
যেখান থেকে পান করছে সেখান থেকে আমাকে পান করাও।”
*
উসামা ইবনে যায়েদ (রা) কে আরাফা থেকে মুজদালিফা পর্যন্ত সহ-আরোহী করে নেয়া যদিও
তিনি মাওয়ালীদের মধ্যে একজন ছিলেন ।
সবাইকে
তাঁর কাছে আসতে দেয়া এবং কাউকে বঞ্চিত না করা। আর রাসূলুল্লাহ ৎএর তো কোনো দারোয়ান
ছিল না যারা মানুষকে ফিরিয়ে দিবে, রাসূলুল্লাহ ৎ এর সাথে সাক্ষাৎ করতে ও কথা বলতে
নিষেধ করবে ।
*
শুধু মাত্র একজন মহিলার কথা শুনতে দাঁড়িয়ে যাওয়া রাসূলুল্লাহৎ এর বিনম্র আচরণেরই
অকাট প্রমাণ।
* কোরবানি
জবাই করার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র বড়োত্ব না
দেখানো বরং এক্ষেত্রে অন্যদের
প্রতিনিধিত্ব বৈধ হওয়া সত্ত্বেও , নিজ হাতে ৬৩টি
কোরবানি জবাই করা। নিঃসন্দেহে নম্রতার এ এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
রাসূলুল্লাহ
ৎ তাঁর এই তাওয়াজু ও নম্রতা দিয়ে মানুষের
হৃদয় কেড়েছেন, ভক্তির পাত্র হয়েছেন, তাদের ভালোবাসা পেয়েছেন। তাই যারা হজ্বে দাওয়াতি কাজে জড়িত রয়েছেন, তাদের উচিত এই
সর্বোত্তম চরিত্রের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহর অনুসরণ করা যাতে তারা মানুষের সাথে আরো
বিনয় ও নম্রতার পরিচয় দিতে পারেন; বিশেষ করে যারা দুর্বল ও প্রয়োজনগ্রস্ত তাদের ও যারা
দুনিয়ার ধনসম্পদের আপনার থেকে নীচে তাদের সাথে। ইবনুল মুবারক বলেছেন : “বড়ো
তাওয়াজু হলো আপনি নিজেকে এমন ব্যক্তির পর্যায়ে নিয়ে রাখবেন দুনিয়ার ধনসম্পদ আপনার
থেকে যার কম, যাতে সে আঁচ করতে পারে ধনরতেœর কারণে আপনি তার থেকে উত্তম নন ।”
সাথে সাথে এই তাওয়াজু ও নম্রতা হাজ্বীদের ভালোবাসা লাভের ও তাদের কাছে
বিশ্বস্ত হওয়ার একটি প্রবেশদ্বার। এ বিনয় ও নম্রতার মাধ্যমেই
তাদেরকে পরিণত করতে পারেন উত্তম শ্রোতায়।
ঘ.
মানুষের প্রতি রাসূলুল্লাহর দয়া ও করুণা
ইসলাম
দয়া ও করুণার ধর্ম। এ ধর্মের শরীয়ত পুরোটাই-মূল ও শাখা উভয় ক্ষেত্রেই-
স্নেহ-মায়া-মমতা ও করুণার ওপর দাঁড়িয়ে। এ-কারণে এটাই স্বাভাবিক যে রাসূলুল্লাহ ৎ
কেবলই রহমতস্বরূপ প্রেরিত হবেন। এরশাদ হয়েছে
وَمَا
أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
“আমি আপনাকে কেবলই রহমতস্বরূপ প্রেরণ
করেছি।” রাসূল ৎ নিজেও তাঁর পরিচয় দিতে
গিয়ে বলেছেন :“ আমি তো নিছক রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছি।” তিনি আরো বলেছেন :“ আমি মুহাম্মদ,... আমি তাওবা
ও রহমতের নবী।” তাই তো রাসূলুল্লাহ ৎ
মানুষের সাথে - প্রতিপালক তাঁর সম্পর্কে যেমন বলেছেন “ দয়াময় করুণাশীল।” - সে
রকমই আচরণ করেছেন। আর এভাবেই তাঁর রহমত পেয়েছে ব্যাপকতা,দয়া পেয়েছে বিস্তৃতি,
ব্যাপ্তি পেয়েছে মায়ামমতা সকল কিছুতে। তাই মানুষের প্রতি দয়ায় তিনি সর্বোত্তম বলে
ভূষিত হলেন। বরং তাঁর ব্যাপারে এরূপ
সাক্ষীও এসেছে যে - মানুষ তার নিজের ওপর যতটুকু দয়াশীল তিনি তাদের ওপর তার থেকেও
বেশি দয়াশীল। যেমন উমায়মা (রা) এর হাদীসে এসেছে, আমি কিছু মহিলার সাথে
রাসূলুল্লাহর কাছে বাইয়াত নিলাম। তিনি আমাদেরকে বললেন : তোমরা যতটুকু পার ও ক্ষমতা
রাখ । আমি বললাম : আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের প্রতি আমাদের নিজেদের থেকেও বেশি
দয়াময়”। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর গুণ
বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন :“ রাসূলুল্লাহ ৎ দয়াময় ছিলেন ”। আর এক ব্যক্তি বললেন : “ পরিবার পরিজনের প্রতি
রাসূলুল্লাহ ৎ থেকে অধিক দয়াবান আর কাউকে
দেখিনি।” অন্য এক বর্ণনায় ‘বান্দাদের
প্রতি’ শব্দ এসেছে। এ-সর্বব্যাপী দয়ার
ফলেই মানুষ তাঁর ভালোবাসায় আত্মোৎসর্গ করেছে, তাঁর আনুগত্যে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
অন্য পক্ষে মানুষকেও নির্দেশনা দেয়া তার পক্ষে সহজ হয়েছে, তাদেরকে পরিচালনা হয়েছে
অকঠিন। হজ্বে রাসূলুল্লাহৎএর এ দয়া ও করুণার বহু উদাহরণ দেখতে পাই। যেমন :
-
যারা সঙ্গে করে কোরবানীর পশু আনেন নি তাদেরকে ইহরাম থেকে পুরোপুরি হালাল হতে বাধ্য করা, যার মধ্যে
স্ত্রীদের সংশ্রবে যাওয়া, স্বাভাবিক কাপড় পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার শামিল
রয়েছে। এটা মানুষের প্রতি করুণা-বসতই তিনি করেছেন।
-
আরাফায় জোহর ও আসর একসাথে জমা করা, মুযদালিফায় যাওয়ার সময় মাগরিব দেরি করে পড়া
যাতে বার বার যাত্রাবিরতির ফলে মানুষের কষ্ট না হয়, এবং হাজ্বী তার উট ও আসবাবপত্র
ঠিক ওই জায়গায় রাখতে পারে যেখানে সে রাত্রি যাপন করবে।
-
রাতের বেলায় চাঁদ ডুবে গেলে মানুষদের পূর্বেই মুযদালিফা থেকে দুর্বলদেরকে
প্রস্থানের অনুমতি দেয়া। যাতে তারা ১০
যিলহজ্বের কাজগুলো অন্যদের আগেই সেরে নিতে
পারে ।
-
রাসূলুল্লাহ ৎ ১০ যিলহজের কাজগুলো সহজ করে দিয়েছেন ; এগুলো আগে পিছে হয়ে গেলে কোনো
সমস্যা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন এবং যারা এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছেন তাদেরকে বলেছেন,
“ কোনো সমস্যা নেই। ”
-
প্রয়োজনগ্রস্তদের জন্য তিনি সহজ করে দিয়েছেন, যেমন আব্বাস (রা) কে মিনার
রাত্রিগুলো মককায় যাপনের অনুমতি দিয়েছেন হাজ্বীদেরকে পানি পান করানোর
উদ্দেশ্যে। উটের রাখালদেরকেও অনুমতি
দিয়েছেন য়াউমুননাহরের পরের দু’দিনের কঙ্কর নিক্ষেপ যে কোনো একদিন একসাথে করে
ফেলার।
-
হজ্ব যার ওপর ফরজ হয়েছে, যদি নিজে আদায় করতে অক্ষম হয় তাহলে প্রতিনিধি দিয়ে আদায়
করাকে তিনি বৈধ করে দিয়েছেন
-
মানুষের প্রতি সহজ করার উদ্দেশে কখনো তিনি অতি উত্তমটা ছেড়ে দিয়েছেন, যেমন আরোহিত
অবস্থায় তোওয়াফ ও সাঈ করা, হজরে আসওয়াদ লাঠি দিয়ে স্পর্শ করা, এবং তা চুমু খাওয়া ও
হাত দিয়ে স্পর্শ করা ছেড়ে দেয়া; পক্ষান্তরে তোওয়াফ ও সাঈ’র সময় হেঁটে চলাই উত্তম।
তিনি এরূপ এজন্য করেছেন যাতে লোকদেরকে তাঁর নিকট থেকে সরিয়ে না দেয়া হয়, অথবা
ভির-মুক্ত করার জন্য তাদের মারধর না করা হয় ।
-
অসুস্থের প্রতি দয়া পরবশ হওয়া। তাদেরকে
দেখতে যাওয়া এবং তাদের জন্য যা সহজ হবে সে-বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া এ পর্যায়েরই
উদাহরণ।
তাই যদি আপনি এই রহমতের মৌসুমে আল্লাহর অনুকম্পা পেতে চান, তাহলে
দুর্বলদের প্রতি দয়া দেখান, তাদের প্রতি করুণা প্রদর্শন করেন, কারণ “করুণকারীদেরকে
আল্লাহ করুণা করেন” আর “ যে ব্যক্তি করুণা
করে না তার প্রতি করুণা করা হয় না,” “ আল্লাহ রহম করেন না যে মানুষকে রহম করে না,” “ বান্দাদের মধ্যে যারা রহমকারী কেবল তাদেরকেই
আল্লাহ রহম করেন,” আর সতর্ক থাকুন, যদি
পরিত্রাণ পেতে চান, দয়া রহমত ও করুণা যেন কখনো আপনার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া না হয়,
“যেহেতু রহমত কেবল হতভাগ্য ব্যক্তি হতেই ছিনিয়ে নেয়া হয়” আল্লাহ
আমাদের সবাইকে এ-ধরনের পরিণতি থেকে হিফাযত করুন।
ঙ.
মানুষের প্রতি রাসূলুল্লাহ ৎ এর এহসান
দুনিয়ার
ধনসম্পদ আরাম-আয়েশ ও চাকচিক্যের প্রতি যার
হৃদয় নির্মোহ সে মানুষের প্রতি এহসান
করতে আদৌ কষ্ট পায় না। আর যখন কোনো
ব্যক্তি তার আচরণে এহসানের প্রমাণ দেয়, সমাজের অন্যান্য সদস্যদের সাথে শত্র“তা ও
দ্বন্দ্ব-কলহের, তখন, অবসান ঘটে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়। কেননা মানুষের অন্তর্জগৎ এভাবেই সৃষ্টি করা
হয়েছে যে এহসানকে সে পছন্দ করে,
এহসানকারীর সম্মান শ্রদ্ধা করে, উপকারকারীর সামনে বিনয়াবনত হয়। এই মর্মে পবিত্র
কোরআনে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে :
ادْفَعْ
بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ
وَلِيٌّ حَمِيمٌ
“ যা
অধিক ভালো তা দিয়ে দমন করো , তাহলে তোমার
ও যাদের মাঝে শত্র“তা রয়েছে তাদেরকে
এ-অবস্থায় পাবে যে তারা যেন অন্তরঙ্গ বন্ধ ু। ”
রাসূলুল্লাহ ৎ এর জীবনধারা ভেবে দেখলে
অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে প্রতীয়মান হয় যে তিনি চূড়ান্ত পর্যায়ের দুনিয়া-বিমুখতা ও
গভীরতম এহসান একত্রে জমা করেছেন। দীর্ঘ তিন মাসের মতো চলে যেতো অথচ তাঁর বাড়িতে
আগুন জ্বলতো না। খেজুর ও পানি এ’দুটোই হত এ সময়ে
তাঁর ও তাঁর পরিবারের ভোজ্য।
তিনি সবার থেকে বেশি দানশীল ছিলেন,
আর তাঁর দান ছিল ওই ব্যক্তির মতো
দারিদ্র্যকে ভয় পাওয়া যার স্বভাববিরুদ্ধ।
রাসূলুল্লাহ ৎ বলতেন : “ ওহুদ পাহাড় পরিমাণ আমার যদি স্বর্ণ হতো তবে আমার
আনন্দ এতে হতো যে তিন দিন পর তার কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না , কেবল সামান্য অংশ ব্যতীত যা ঋণের জন্য ধরে রাখব। এরকম তিনি এজন্যই করতে
পারতেন যেহেতু তার হৃদয় আল্লাহর সাথে বাঁধা; তাঁর সমস্ত ভাবজগৎ জুড়ে রয়েছে
আখেরাতের চিন্তা । আর দুনিয়ার ব্যাপারে তিনি তো একেবারেই ছিলেন নির্মোহ , বিমুখ। এমনকী দুনিয়ার মূল্য তাঁর
কাছে মাছির ডানার সমানও ছিল না।
হজ্বে মানুষের প্রতি রাসূলুল্লাহ ৎ এর এহসান
গুণে শেষ করা যাবে না। হজ্বের যেকোনো দিক নিয়ে চিন্তা করলে রাসূলুল্লাহ ৎ এর এহসান অত্যন্ত মূর্ত হয়ে
প্রকাশ পায়। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো নিরূপ :
-
রাসূলুল্লাহর সাথে হজ্বের নিয়ত করে যারা বাড়ি থেকে আসতে দেরি করল তাদের প্রতি
এহসান করে রাসূলুল্লাহ যুলহুলাফায় পুরা একটি দিবস অপেক্ষা করলেন ।
-
হজ্ব মৌসুমে অধিক পরিমাণে দান খয়রাত করা এহসানের এক উদাহরণ। তিনি তার একশত উটের
গোশত সমস্তটাই দান করে দেন এমনকি এর চামড়া ও গদিসহ সমস্ত কিছু আর তিনি একাধিক জায়গায় সদকার সম্পদও
বণ্টন করেন।
-
মানুষের ইচ্ছা আকাক্সক্ষা পূরণ ও তাদের সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা।
-
উসামা ইবনে যায়েদ ও ফযল ইবনে আব্বাস (রা) কে আরাফা মুযদালিফা ও মিনার চলাচলের সময়
সহ-আরোহী করে নেওয়াও এহসানের একটি আলামত।
-
খোতবায় দুর্বলদের প্রতি সদাচারের নির্দেশ দেয়া ,
ও তাদেরকে প্রয়োজনীয় বিষয়াদি শেখানো, তাদের হজ্ব পালন সহজ করে দেওয়াও এহসানের একটি নিদর্শন।
-
উম্মতের নাজাতের ব্যাপারে প্রবল আগ্রহ প্রকাশ এবং আল্লাহ যেন তাদেরকে কবুল করেন সে
কামনা ব্যক্ত করাতেও রাসূলুল্লাহর এহসানের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কেননা আল্লাহর কাছে
প্রার্থনায় এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ৎ খুবই জোর দিয়েছেন। আরাফা ও মুযদালিফার দিন তাদের
জন্য মাগফিরাত কামনা করেছেন । আর জনৈক
ব্যক্তি তাঁর কাছে দোয়া চাইল তিনি তাঁর দোয়া সবার জন্য ব্যাপক করে দিয়ে বললেন:“
আল্লাহ তোমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন।” এটিও
ব্যাপক এহসানের উদাহরণ।
-
এহসানের আরেকটি উদাহরণ বালাগের তথা তিনি যে সত্য পোঁছিয়ে দিয়েছেন এ বিষিয়টির
পুনরাবৃত্তি ও পরিপূর্ণ স্পষ্টতার ব্যাপারে তাগিদ; যাতে সবাই তাঁর বক্তব্য বুঝে ও
অনুধাবন করতে পারে।
-
ফেতনা ও সন্দেহের জায়গা থেকে তাঁর সাহাবাদেরকে বাঁচানোর আগ্রহ থেকেও এহসান
প্রতিভাত হয়। এর প্রমাণ, ফযল ইবনে আব্বাসের (রা) গ্রীবা ঘুরিয়ে দেয়া যখন তিনি
খাসআমিয়া মহিলার প্রতি নজর দিচ্ছিলেন। এবং যখন তাঁর চাচা আব্বাস (রা) এর কারণ
জিজ্ঞাসা করলেন তিনি তখন বললেন : “ একটি
যুবক যুবতী দেখলাম, তাই তাদেরকে শয়তানের আক্রমণ থেকে নিরাপদ মনে করলাম না ।” মসজিদে খাইফে দু’ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে তাঁর
কথাও এ পর্যায়ে পড়ে। এ-দুই ব্যক্তি তাদের অবস্থান-স্থলে নামাজ পড়ে মসজিদে খাইফে
এসে দেখেন রাসূলুল্লাহৎ নামাজ পড়ছেন , তারা নামাজে শরিক না হয়ে মসজিদের পিছনে বসে
গেলেন, রাসূলুল্লাহ ৎ তাদেরকে বললেন : এরূপ করো না, তোমরা যদি নিজ নিজ অবস্থানস্থলে নামাজ পড়ে থাক আর জামাতের মসজিদে
আস তাহলে তাদের সাথে নামাজ পড়ো, আর এটা তোমাদের জন্য নফল হবে।”
আপনি যদি আল্লাহর মহব্বত পেতে চান, তার
করুণা ও নেয়ামত প্রাপ্তিতে নিজেকে ধন্য করতে চান তাহলে রাসূলৎএর চরিত্রে চরিত্রবান
হন। অতঃপর আপনার আমলকে উত্তম করুন, দুর্বল ও প্রয়োজনগ্রস্তদের প্রতি বদান্য ও সদয়
হন, চাই তা জ্ঞান বিতরণ করে হোক অথবা ধনসম্পদ শক্তি ও যাতায়াতের বাহন ইত্যাদি দিয়ে
সাহায্য করে হোক। এরশাদ হয়েছে :
وَأَحْسِنُوا
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
“তোমরা এহসান করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ এহসানকারীদের
পছন্দ করেন।” আরো এরশাদ হয়েছে :“ এহসানের
প্রতিদান কি এহসান ব্যতীত অন্যকিছু হতে পারে।”
আপনার হজ্ব মাবরুর হজ্ব হোক, আপনার পাপ মোচন হোক, আপনি পেয়ে যান বেহেশতে
প্রবেশের অধিকার, এ বিষয়ে লালায়িত হলে দরিদ্রদেরকে খাবার খাওয়ান। সুন্দর চরিত্র
শক্তভাবে ধরে রাখুন, কারণ যিনি বলেছেন মাবরুর হজ্বের প্রতিদান বেহেশত ব্যতীত
অন্যকিছু নয়, হজ্বের উত্তম কাজ কোনটি এবিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তর
করে বলেছেন:
“
খাবার খাওয়ানো ও সদকা করা”।
চ. হজ্বে
মানুষের জন্য রাসূলুল্লাহ ৎ এর ধৈর্য
ধৈর্য
, যারা আল্লাহকে ভয় করেন তাদের পাথেয়, প্রতিষ্ঠা প্রাপ্তির সিংহদার, কল্যাণের এক
অমূল্য গুপ্তধন। বিজয় আসে না কিন্তু ধৈর্যের পর। নেতৃত্ব জুটে না কিন্তু ধৈর্যের
শর্তে। কখনো কাউকে পরিচালনা ধৈর্য ব্যতীত সম্ভব নয়। কেননা উত্তেজিত হলে ধৈর্যই
ব্যক্তিকে দমন করে, উচ্ছৃঙ্খল হলে লাগাম লাগায়, ভালোবাসাকে ফলপ্রসূ করে,
ইচ্ছাশক্তিকে শানিত করে, চিন্তাকে দেয় স্বচ্ছতা। এজন্য একজন মানুষকে সর্বোত্তম যা
দেয়া হয় তা হলো এই ‘ধৈর্য’। মারফু হাদীসে এসেছে: যে ধৈর্য ধরে আল্লাহ তাকে ধৈর্যের
সুযোগ করে দেন। আর কোনো ব্যক্তিকে ধৈর্যের চেয়ে মহৎ ও উত্তমতম আর কিছু দেয়া হয় নি”। জ্ঞানীরা এবিষয়টির ব্যাপারে সজাগ, আর
নেতৃত্বদানকারীরাও এ বিষটি রপ্ত করেছেন। ফারুকে আযম বলছেন : “ ধৈর্য দিয়েই আমরা
উত্তম জীবনযাপনে সমর্থ হয়েছি।” আর আলী
(রা) বলছেন :“ ধৈর্য এমন এক বাহন যা কখনো হোঁচট খায় না।”
রাসূল্লাহ ৎ এর ধৈর্য ছিল একমাত্র আল্লাহর
জন্য ও আল্লাহর ওপর ভরসা করে। আনুগত্যের বিষয়ে
নিজেকে বাধ্য করে, এবং আল্লাহর ফয়সালার আওতায় নিজেকে ধরে রেখে তিনি
এ-ধৈর্যের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেছেন। আর হজ্বে - যা একপ্রকার জিহাদ -
তিনপ্রকার ধৈর্যকেই একত্রিত করে দেয়া হয়েছে। কেননা তিনি তার সাথিদের মধ্যে
সর্বাধিক আল্লাহর প্রতিশ্র“তি রক্ষাকারী, সমধিক আনুগত্যকারী ও আল্লাহর নির্দেশ
বাস্তবায়নকারী ছিলেন। ইবাদত চর্চাতেও তিনি সবার থেকে বেশি ধৈর্যধারণের পরিচয় দিয়েছেন। আর এভাবে তিনি সকল পুণ্যকর্মই প্রতিপালকের সামনে বিনয় নম্রতা ইখ্বাত প্রশান্ত
হৃদয় ও মিনতির সাথে পালন করতেন।
রাসূলুল্লাহ ৎ এর ছিলেন আল্লাহভীরুতায় সর্বোধ্বে, আল্লাহ সম্পর্কে
গভীরতম জ্ঞানের অধিকারী, আল্লাহর ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি রাগকারী, আল্লাহর সীমানার অতন্দ্র রক্ষী ও আল্লাহর
নিষিদ্ধ সীমানা থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে অবস্থানকারী।
উত্তেজিত না হয়ে অথবা বিন্দুমাত্র বিরক্তি
প্রকাশ না করে অক্লান্তভাবে তিটি এঁটে থেকেছেন নিজ দায়িত্বে । জনতাকে
পরিচালনার কষ্ট-ক্লেশ তিনি সহ্য করেছেন
অসম্ভব ধৈর্য নিয়ে। হজ্বে রাসূলুল্লাহর অচ্ছেদ্য কর্মতৎপরতা-উদ্যম- ধৈর্য তাঁর
অবস্থা ও যারা তাঁর সাথে ছিলেন তাদের অবস্থা থেকে সম্যক আঁচ করা যায়।
হজ্বে রাসূলুল্লহ ৎ এর অবস্থা ও দায়দায়িত্ব পালনের আকার-প্রকৃতির প্রতি নজর
দিলে বলা যায় যে তিনি ছিলেন সর্বার্থে
আল্লাহর দাস। বিনয় ও নম্রতার পূর্ণতা অর্জনে সর্বোচ্চ শিখরের অশ্বারোহী। হজ্ব
পালনে যখন যেভাবে যা করা উচিত ঠিক সেভাবেই
অনুপূঙ্খভাবে তা পালনকারী। তিনি
মানুষদের পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন, হাজ্বীদের সুবিধা-অসুবিধা
দেখেছেন। তাদের অবস্থা বিষয়ে দায়িত্বশীল ও
তাদের ঐক্য ধরে রাখার প্রতি যত্নবান ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ ৎ বিশাল এক জনগোষ্ঠীর
মুয়াল্লিম ও মুরশিদ ছিলেন। যা কিছু ভালো ও কল্যাণকর সে বিষয়ে তিনি ছিলেন
দীক্ষাদাতা। তিনি সারাক্ষণ যে বিষয়টি নিয়ে ভাবতেন
তা হলো রিসালাত পোঁছিয়ে দেয়া ও
ধর্মীয় অনুশাসনসমূহ খুলেখুলে মানুষদেরকে বলে দেয়া।
রাসূলুল্লাহ
ৎ মানুষের জন্য ছিলেন আদর্শ, তাদের দৃষ্টির ছিলেন মধ্যমণি। তাঁরই কথা ও কর্মের
প্রতি ছিল সবার আগ্রহ; যাতে তারাও সে-মতে
কর্ম সম্পাদন করতে পারে। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলতে পারে।
উপরন্তু খোদ হজ্বকর্ম পালনে যে শ্রম দিতে
হয় তা বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে সেকালে,
যখন বর্তমান যুগের মতো যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার আয়েশি ব্যবস্থার কিঞ্চিৎ পরিমাণও কল্পনা করা যেতো না।
বিশেষ করে তিনি যখন হজ্ব করেন তাঁর বয়স হয়েছিল
ষাটোর্ধ্ব আর সাথে ছিল নয় উম্মহাতুল মুমিনিন বা রাসূলুল্লাহর পবিত্র
স্ত্রীগণ, আত্মীয়স্বজনদের দুর্বল লোকেরা। আর
এঁদের সবার দেখাশোনার দায়দায়িত্বও
ছিল রাসূলুল্লাহ ৎ এর ওপর আরোপিত।
যাদেরকে নিয়ে তিনি হজ্ব করেছেন তাদের
অবস্থার প্রতি দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে সংখ্যায় তারা ছিলেন অনেক। এঁদের কেউ পুরাতন
মুসলমান আবার কেও নতুন, ধর্ম বিষয়ে কারো জ্ঞান গভীর, কারো ভাসাভাসা। এজাতীয়
বৈচিত্র্যের পাশাপাশি অঞ্চল গোত্র বয়স আর্থসামাজিক অবস্থান এবং এর ফলশ্র“তিতে
বুদ্ধি অনুভূতি মেজাজ ভাষা ইত্যাদির পার্থক্যের বিষয়টি তো আছেই। আর শিশু ও দুর্বল
মহিলারা যে সেবাযতের দাবি করে তার উল্লেখ
না হয় বাদই দিলাম।
এসব বিষয় মাথায় রেখে যদি ভেবে দেখি রাসূলুল্লাহ ৎ কী পরিমাণ ধৈর্যের পরিচয়
দিয়েছেন, কী পরিমাণ কষ্ট সহ্য করেছেন তাহলে আশ্চর্য না হয়ে পারি না।
তাই আপনিও ধৈর্য ধরুন যেভাবে ধরেছেন রাসূল ৎ
; কেননা“ধৈর্য ও ক্ষমার নামই ঈমান, ” আর
আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে এ বিষয়টি পবিত্র কোরআনে স্পষ্টরূপে উল্লেখ হয়েছে।
ধৈর্যশীলের ছোঁয়াব কি পরিমাণে দেয়া হবে তার একমাত্র হিসাব আল্লাহ ব্যতীত আর কারও
জানা নেই। তাই রাসূলের ধৈর্য আপনার মাইলফলকে পরিণত করুন যার দিকনির্দেশনায় আপনার
হজ্বকর্মসমূহ সম্পাদন করবেন ধারাবাহিকভাবে। রাসূলুল্লাহর আনুগত্যে কখনো যেন ছন্দপতন না ঘটে কঠিনভাবে সে বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি রাখুন।
গোনাহের কাজ থেকে সতর্ক থাকুন, কখনো যেন পা ফসকে গোনাহের নর্দমায় পড়ে না যান সে
ব্যাপারে হুঁশিয়ার থাকুন। কষ্ট সহ্য করুন, অস্থিরতা কৈফিয়ত ও ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে উত্তেজনা
প্রদর্শন থেকে বেচে থাকুন। মানুষের স্পর্শে নিজেকে নিয়ে যান। মিশুন। তাদের দেয়া
যাতনা সহ্য করুন। কেননা “যে মুমিনব্যক্তি মানুষের সাথে মিশে ও তাদের দেয়া কষ্ট
সহ্য করে সে ওই ব্যক্তির থেকে উত্তম যে এরূপ করে না, ও ধৈর্য ধারণ করে না।” বিষন্ন চেহারা , কুঞ্চিত ললাট মানুষকে দেখাবেন
না; কেননা তা ধৈর্যের বিপরীত অবস্থারই পরিচায়ক।
ছ.
মানুষের সাথে কোমল আচরণ
কোমল
আচরণের গুরুত্ব বর্ণনায় ও মানুষকে এ-ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে
রাসূলুল্লাহর বহু বিভিন্ন বাণী রয়েছে, যেমন :
রাসূলুল্লাহ
ৎ বলেছেন :“ আল্লাহ সকল বিষয়ে কোমলতা-নরমপন্থা পছন্দ করেন” “কোনো বিষয়ে কোমলতার উপস্থিতি তার ওজনকে বাড়িয়ে
দেয়, আর কোনো জিনিসে কোমলতার অনুপস্থিতি তার ত্র“টিপূর্ণ হয়ারই আলামত। আর যে
ব্যক্তি নরমপন্থা থেকে বঞ্চিত হলো সে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। কেননা কোমলতাই
প্রজ্ঞার উৎস, জ্ঞানের সৌন্দর্য, বোধগম্যতার শিরোনাম। সচ্চরিত্র ও প্রবৃত্তিকে
লালসা রাগ-রোষ থেকে নিয়ন্ত্রণ, কুড়িয়ে আনে মানুষের ভালোবাসা, হিংসা দ্বেষ দূর করে
পরস্পরের সম্পর্ককে করে মজবুত। রাসূলুল্লাহ ৎ কোমল আচরণের অধিকারী ছিলেন
বর্ণনাতীতভাবে। তিনি ছিলেন সর্বাধিক ক্ষমাশীল, দয়ালু। পবিত্র কোরআনে রাসূলুল্লাহর
রহমত, করুণা ও বিনম্র স্বভাবের উল্লেখ করে বলা হয়েছে,- আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের
প্রতি কোমলচিত্ত হয়েছ। রূঢ় ও কঠিনচিত্ত হলে সরে পড়তো তারা তোমার আশপাশ থেকে। অতঃপর
তুমি তাদেরকে ক্ষমা করো, তাদের পাপ মোচনের প্রার্থনা করো, কাজে-কর্মে তাদের সাথে
পরামর্শ করো।’
-
রাসূলুল্লাহ ৎ তালবিয়ায় যে শব্দমালা ব্যবহার করেছেন সেগুলোতে বাড়ানো-কমানোর অনুমতি
দেয়া নরমপন্থা অবলম্বনেরই একটি নিদর্শন।
-
রাসূলুল্লাহ ৎ এর রোদ থেকে ছায়া গ্রহণ।
হজ্বে আসার পথে, ও পবিত্রস্থানসমূহে গমনাগমনের
সময় আরোহণের জন্তু ব্যবহার। কিছু
হজ্বকর্ম আরোহিত অবস্থায় পালনও কোমলতা প্রদর্শনের একটি আলামত, কেননা এর অন্যথা হলে
মানুষ কষ্ট পেতো; রাসূলুল্লাহকে ভির-মুক্ত করার জন্য হয়তো মানুষদেরকে তাড়ানো হতো
অথবা মারধর করা হতো ।
-
মানুষের সাথে কোমল আচরণের আরেকটি উদাহরণ
গোটা হজ্বমৌসুমে রাসূলুল্লাহৎ এর দৃশ্যমান
আকারে থাকা। কেননা স্বভাবতই মানুষেরা তাদের সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে আসবে এবং সমাধান
তলব করবে।
-
সহজকরণ এবং এমন কোনো কিছুর নির্দেশ না দেয়া যা মানুষের সাধ্যাতীত হবে। চাই তা
হজ্বের কর্মাদী সম্পর্কে হোক অথবা মানুষদের নেতৃত্ব প্রদান করার ক্ষেত্রে হোক।
রাসূলুল্লাহ ৎ এর সীরাতে চিন্তা করে দেখলে এ-বিষয়গুলো অত্যন্ত উজ্জ্বলভাবে
প্রতীয়মান হয়।
-
সকল হজ্বকৃত্য পালনের ক্ষেত্রে এবং হজ্বের পবিত্রস্থানসমূহের মধ্যে যাতায়াতের সময়
ভাব-গাম্ভির্য ও শান্ত-ভাব ধরে রাখা এর একটি উদাহরণ। রাসূলুল্লাহ ৎ মানুষদেরকেও
কোমলতা অবলম্বনের নির্দেশ দিলেন; কেননা এর অন্যথা হলে মানুষের কষ্ট হবে ।
-
আরাফার খোতবা সংক্ষিপ্ত করে দেয়াও মানুষের প্রতি কোমল আচরণের আলামত ।
-
তোওয়াফে কুদুমের পর আরাফা থেকে ফিরে আসার আগে বায়তুল্লাহর আর কোনো তোওয়াফ না করা ।
তাশরিকের দিবসসমূহে স্থির হয়ে অবস্থান, ও সেখান থেকে হারাম শরিফে না যাওয়া বিদায়ি তোওয়াফের
পূর্বে। যদিও তোওয়াফের ফযিলত অনেক, নিঃসন্দেহে এটা ছিল মানুষের প্রতি কোমলতা
প্রদর্শনের এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
-
সর্বদা সহজটাকে অবলম্বনও কোমল আচরণের আলামত , যেমন হাজ্বীদের যারা সাথে করে
কোরবানির পশু নিয়ে আসেননি তাদেরকে পুরোপুরি হালাল হয়ে যেতে বলা। আর আরাফা ও
মুযদালিফায় দুই নামাজ একত্রিত করা ও কসর
করে পড়া।
-সাহাবাদেরকে
যার যার অবস্থানস্থলে কোরবানি করার অনুমতি দেয়াও এ পর্যায়ের একটি উদাহরণ, হযরত
জাবের (রা) থেকে মারফু হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ ৎ বলেছেন, “ আমি এখানে কোরবানি
করলাম, আর মিনা পুরোটাই কোরবানির জায়গা। অতঃপর তোমাদের যার যার অবস্থানস্থলেই কোরবানি করে।” আর মহিলাদেরকে সূর্যোদয়ের পূর্বেই কঙ্কর
নিক্ষেপের অনুমতি দেয়া একই সূত্রে গাঁথা ; কেননা মানুষের প্রচণ্ড ভিরে তাদের
নানাবিধ ক্ষতি হওয়ার আশংকা থেকে যায়।
মানুষদেরকে হজ্বকর্ম পালনের পর দ্রুত দেশে
ফেরার তাগিদও এই পর্যায়ে পড়ে। কেননা সফর হলো একটুকরো আযাব, তাই সাহাবাদের প্রতি দয়া পরবশ হয়ে তিনি বলেছেন
: “ যখন তোমাদের কেউ হজ্ব সম্পন্ন করে ফেলে সে যেন তার পরিবার পরিজনের কাছে দ্রুত ফিরে যায়। আর এতেই বেশি ছোঁয়াব রাসূলুল্লাহ ৎ সাহাবাদেরকে তাদের নিজেদের
ব্যাপারে কোমল হতে বলেছেন। তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন তার কোরবানির পশু টেনে নিয়ে
যাচ্ছে আর নিজে চলছে হেঁটে। রাসূলুল্লাহ ৎ বললেন : আরোহণ করো, লোকটি বললেন,
এ-তো কোরবানির পশু ! তিনি বললেন : আরোহণ করো, লোকটি বললেন : এ-তো কোরবানির পশু!
তিনি বললেন : আরোহণ করো, কি হলো ? -
দ্বিতীয়বার অথবা তৃতীয়বার বললেন-” তিনি
আরো বলেছেন :“ তোমরা সৌজন্যের সাথে
কোরবানির পশুতে আরোহণ করো, যতক্ষণ না অন্য বাহন পেয়ে যাও। কঙ্কর নিক্ষেপের সময় বলেছেন : হে লোকসকল,
তোমরা একে অপরকে হত্যা করো না, একে অপরকে আঘাত করো না, আর যখন কঙ্কর নিক্ষেপ করবে
আঙুল দিয়ে নিক্ষেপ করার মতো কঙ্কর নিক্ষেপ করবে।
তিনি হযরত ওমর (রা) কে বলেছেন হে ওমর! তুমি শক্তিমান মানুষ। হাজরে আসওয়াদ
স্পর্শের জন্য ভির ঠেলে যেতে যেও না যা
দুর্বলকে কষ্ট দিবে। যদি খালি পাও তবে স্পর্শ করো। অন্যথায় এর দিকে মুখ করো ,
তাকবির দাও ও তাহলিল পড়ো।
-সাহাবাদের
ইচ্ছার বিপরীতে কিছু ঘটলে তাদেরকে বুঝানো ও সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা এ পর্যায়েরই
ঘটনা। এই সূত্রেই তিনি বলেছেন : যদি আমি পেছনের দিনগুলো সামনে পেতাম কোরবানীর পশু
সঙ্গে আনতাম না, যদি কোরবানির পশু আমার সঙ্গে না থাকতো তাহলে আমি হালাল হয়ে
যেতাম।” অর্থাৎ যদি আমি জানতাম একাজটি
তোমাদের জন্য কঠিন হবে তাহলে কোরবানির পশু সঙ্গে আনা ছেড়ে দিতাম এবং তোমরা যেভাবে ইহরাম ছেড়ে দিচ্ছ আমিও সেভাবে ছেড়ে দিতাম। সা’ব ইবনে জুছামা (রা) রাসূলুল্লাহ ৎ কে গাধার
পশ্চাদ্ভাগের গোশত হাদিয়া হিসেবে খেতে দিলে ফেরত দিলেন এবং বললেন :“ আমরা ইহরাম
অবস্থায় আছি, অন্যথায় ফিরিয়ে দিতাম না”
হযরত আবু কাতাদাহর (রা) সাথিদেরকে বললেন যখন তিনি শিকার করলেন, আর তার
সাথিরা ছিলেন ইহরাম অবস্থায় , কিন্তু তিনি ছিলেন হালাল। তিনি শিকার করেছিলেন তাদের
কোন ইঙ্গিত বা সাহায্য ব্যতীতই, অতঃপর তারা বিষয়টি নিয়ে সন্দেহে পড়ে গেলেন,
রাসূলুল্লাহ তাদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যে কি কেউ নির্দেশ দিয়েছে? অথবা ইশারা করেছে? তারা বললেন, না । তিনি বললেন : তাহলে অবশিষ্ট গোশত খেয়ে
ফেলো” অন্য এক বর্ণনায় : তিনি বললেন,
তোমাদের সাথে এর কিছু অংশ অবশিষ্ট আছে ? তারা বললেন : পায়ের অংশ। তিনি তা নিলেন ও খেলেন।”
বর্তমান যুগের হাজীদের মাঝে হজ্বসংক্রান্ত
অজ্ঞানতা খুবই প্রকট। দুর্বল ও বয়োবৃদ্ধদের সংখ্যাও প্রচুর যারা কোমল আচরণের
মুখাপেক্ষী সকল বিষয়ে। পরিচালনা, তালীম তারবিয়ত, নসীহত ও দিকনির্দেশনা, এমনকী সেবা
ও এহসান সকল বিষয়েই তারা সদাচারের দাবি রাখে।
তাদের সাথে সুন্দর কথা বলুন। বিনয় ও
নম্রতার আদর্শ স্থাপন করুন। আপনার সকল আচরণে
কোমল হন। তাদের পক্ষে যা সহজ তা পছন্দ করুন। রাগ-রোষের স্পর্শ অনুভব করলে
নিজেকে কন্ট্রোল করুন। সহিংস আচরণ বর্জন
করুন। অশালীন ভাব ও ভাষা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন, কেননা তা সদয় ও আলোকিত
আদর্শের পরিপন্থী। হাদীসে এসেছে : “ যাকে কোমল আচরণের একটি অংশ দেয়া হলো, তাকে
কল্যাণের একটি অংশ দেয়া হলো। আর যার কোমল আচরণে অংশ নেই সে কল্যাণের অংশ থেকেও
বঞ্চিত।
জ.
রাসূলুল্লাহ ৎ এর নেতৃত্বদান বিষয়ে আরো কিছু কথা
রাসূলুল্লাহ
ৎ হজ্বে অনেক কিছ্ইু করেছেন যা তার নেতৃত্ব প্রদান প্রক্রিয়াকে সফল করতে, মানুষের
সাথে সদাচার করতে ও তাদেরকে প্রভাবিত করতে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। এ পর্যায়ের দৃশ্যমান কয়টি হলো:
মানুষদের
সুশৃঙ্খল করণ
রাসূলুল্লাহ
ৎ মানুষদেরকে মিনায় সুশৃঙ্খল করেছেন। আর প্রতি ব্যক্তিকেই তার প্রাপ্য মর্যাদার
আসনে সমাসীন করেছেন। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে মুয়াজ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “
রাসূলুল্লাহ ৎ মিনায় জনতার উদ্দেশে
বক্তৃতা করেন, তিনি সবাইকে যার যার প্রাপ্য মর্যাদার আসনে বসান। ‘মুহাজিরগণ এখানে অবস্থান
করবে’ কেবলার ডানে অবস্থিত এলাকার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বললেন। ‘আনসারগণ এখানে’ -
কেবলার বামে অবস্থিতি এলাকার দিকে ইঙ্গিত
কেরে বললেন। আর অন্যান্যরা তাদের পিছনে অবস্থান করবে। অন্য এক বর্ণনানুসারে :“ তিনি মুহাজিরদেরকে
নির্দেশ দিলেন মসজিদের সম্মুখভাগে অবস্থান করতে। আনসারদেরকে মসজিদের পিছনে এবং
অন্যান্য মানুষদেরকে তাদের পিছনে অবস্থান
করতে বললেন।
বর্তমান যুগে হাজ্বীদের মাঝে সৃষ্ট অধিকাংশ
সমস্যার কারণ এক দল মানুষের তাদের নিজস্ব স্বার্থকে অন্য দলের ওপর প্রাধান্য দেয়া। আর আইন শৃঙ্খলা
যা মানা উচিত তা অমান্য করা। তাই কতই না প্রয়োজন আপনি মানুষকে সুন্দর নমুনা উপহার
দিবেন। নিজের ইচ্ছাসমূহ পিছিয়ে দিবেন, এবং আপনার ভাইয়ের কল্যাণে নিজের স্বার্থকে
জলাঞ্জলি দিবেন।
মানুষের
সেবায় এগিয়ে আসতে উৎসাহ দেয়া
মানুষের
সেবায় নিয়োজিত লোকদেরকে রাসূলুল্লাহ ৎ উৎসাহ দিয়েছেন। তাদের বিভিন্ন কার্যক্রম
পরিচালনার প্রক্রিয়াকেও সহজ করে দিয়েছেন।
তিনি তাঁর চাচা আব্বাস (রা) কে মিনার রাতগুলো মক্কায় যাপনের অনুমতি দিলেন। কেননা
তিনি মানুষদেরকে পানি পান করানোর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। শুধু তাই নয় বরং তিনি এ কাজে নিয়োজিতদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন:“তোমরা
কাজ করে যাও, নিশ্চয়ই তোমরা উত্তম কাজে নিয়োজিত
রয়েছ ...।”
এটা নিশ্চয়ই আল্লাহর বিশেষ করুণা যে
বর্তমান যুগে অনেক স্বেচ্ছাসেবীই মানুষের কল্যাণার্থে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ব্যয় করে যাচ্ছে
তাদের মূল্যবান সময়। তবে অধিকাংশ, ক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতার সামান্য হাসি থেকেও বঞ্চিত
হয় তারা, বরং অনেক সময় ভর্ৎসনা ও নির্যাতনকে নীরবে সহ্য করে যেতে হয় তাদের। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা
পাওয়া তো বহুদূরে। তাই কতইনা উত্তম হবে মানুষকে এ-ব্যাপারে উৎসাহিত করা, কেননা
রাসূলুল্লাহ ৎ বলেছেন :“ যারা মানুষের ব্যাপারে
কৃতজ্ঞ নয়, তারা আল্লাহর ব্যাপারেও অকৃতজ্ঞ”। এই মহৎ ও কল্যাণকামী লোকদের পাশে দাঁড়িয়ে
তাঁদের উৎসাহ দেয়ার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ৎ এর অনুসরণ করো। যাতে তাঁরা ভালো কাজ
চালিয়ে যেতে প্রেরণা পায়, পূর্বের চেয়ে বেশি উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করে যেতে প্রদীপ্ত
হয়।
রাসূলুল্লাহ
ৎ মানুষের অধিকার বিষয়ে খুবই যত্নবান ছিলেন। এর কয়েকটি উদাহরণ নিরূপ:
আয়েশা (রা) যখন মিনায় রাসূলুল্লাহর জন্য ঘর উঠাতে চাইলেন
যার ছায়তলে রাসূলুল্লাহ ৎ আশ্রয় নিবেন, তিনি বললেন: মিনা তো হলো পূর্বে আসা লোকদের
অবস্থানের জায়গা।” যমযমের পানি পান
করানোর দায়িত্বে নিয়োজিতদের সাহায্য থেকে বিরত থেকেছেন কেননা মানুষ তাদেরকে পরাভূত করে রাসূলুল্লাহর
কাছে ভির করবে, তিনি বলেন:“ মানুষ তোমাদেরকে পরাভূত করবে এই ভয় না হলে আমি নেমে
যেতাম এবং এখানে রশি রাখতাম, অর্থাৎ গ্রীবায়।”
আজ দেখা যাচ্ছে অনেক হাজ্বীদের
অধিকারই খর্ব হচ্ছে দুনিয়া পূজারীদের হাতে
যারা পবিত্র ভূমিতে থাকা সত্ত্বেও আল্লাহকে বিন্দুমাত্র ভয় পায় না। মানুষের
অর্থ-কড়ি অবৈধভাবে হাতিয়ে নিতে কুণ্ঠাবোধ
করে না। এ-জাতীয় লোকদের সংস্পর্শ এবং তারা যা করছে তাতে জড়িয়ে যাওয়া থেকে সতর্ক
থাকুন। আর যদি ক্ষমতা রাখেন তাহলে নসীহত উপদেশ দিয়ে তাদের সংশোধন করুন অথবা তাদের
কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
সত্য
প্রকাশে অকুতোভয়
রাসূলুল্লাহ ৎ সমধিক দয়াবান, ও সবচেয়ে বেশি লজ্জাশীল ছিলেন।
তা সত্ত্বেও সত্য প্রকাশে কখনো তিনি ইতস্ততা বা কুণ্ঠাবোধ করেন নি। যদিও এতে
অসুবিধার সৃষ্টি হয় অথবা মানুষের ইচ্ছার
বিরুদ্ধে যায়। সত্য প্রকাশে রাসূলুল্লাহর
ব্যাপারে অনমনীয় অবস্থান হজ্ব পালনের সময় বহু জায়গায় প্রকাশ পেয়েছে
তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
-
অন্যদের চোখের সামনেই খাসয়ামিয়াহ মহিলার প্রতি দৃষ্টি দেয়া থেকে ফযলের (র) গর্দান
ঘুরিয়ে দেয়া, এমনকি আব্বাস (রা) প্রশ্ন করলেন : হে আল্লাহর রাসূল ৎ আপনার চাচাতো
ভাইয়ের গর্দান এভাবে ঘুরিয়ে দিলেন কেন? উত্তরে তিনি বললেন : একজন যুবক ও যুবতীকে
দেখলাম, শয়তানের আক্রমণ থেকে আমি তাদেরকে নিরাপদ মনে করলাম না।
-
নবীর স্ত্রী সাফিইয়া (রা) যখন ঋতুগ্রস্ত
হলেন রাসূলুল্লাহ ৎ মনে করলেন, তিনি হয়ত
১০ যিলহজ্ব তোওয়াফে যিয়ারত সম্পন্ন করেন নি। তাই তিনি বললেন : “ মনে হয় এ তোমাদেরকে বিলম্ব
করাবে।”
-
কর্মঠ ও শক্তিমান জনৈক ব্যক্তি সাদকার সম্পদ চাইলে তাকে না দেওয়াও এ পর্যায়ে পড়ে।
-
কোরবানির পশু সঙ্গে না আনা সত্ত্বেও ইহরাম ধরে রাখার ব্যাপারে অধিকাংশ সাহাবাদের
ইচ্ছার বিপক্ষে রাসূলুল্লাহর অবস্থান এবং বলা যে কোরবানির পশু সঙ্গে না এনে থাকলে
আমি হালাল হয়ে যেতাম,” সত্য প্রকাশে
ঐকান্তিকতারই একটি আলামত।
তাই আপনি সমর্থবান হলে হাজ্বীদের শেখানো,
ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দেয়া, উপদেশ ও দিকনির্দেশনা দেয়া, আমর-বিলমারুফ ও নাহি-আনিল
মুনকারের দায়িত্ব পালন, সত্যকথা বলা ইত্যাদি বিষয়ে কখনো পিছপা হবেন না। আর লজ্জা করার তো কোনো মানেই হয় না। কারণ
আল্লাহ কখনো সত্য প্রকাশে লজ্জা করেন না। বরং রাসূলুল্লাহ ৎ এর অনুসরণ করুন যিনি “
লজ্জাবতী কিশোরীর থেকেও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন”
তা সত্ত্বেও তিনি আল্লাহর জন্য রাগ করতেন ও প্রতিশোধ নিতেন। আয়েশা (রা)
রাসূলুল্লাহৎ এর গুণ বর্ণনায় বলেন :“আল্লহর রাসূল কোনো জিনিসকেই তাঁর হাত দিয়ে
প্রহার করেন নি, না তাঁর কোনো স্ত্রীকে না খাদেমকে, তবে যদি জিহাদরত অবস্থায়
থাকতেন, তাঁর কাছ থেকে কেউ কোনো কিছু নিয়ে নিলেও তিনি প্রতিশোধ নিতেন না। তবে
আল্লাহর কোনো সীমানা লঙ্ঘিত হলে আল্লাহর জন্য প্রতিশোধ নিতেন।
ভুলকারীকে
ভর্ৎসনা না করা
সাহাবাদের
মধ্যে যারা ভুল করতেন তাদের প্রতি রাসূলুল্লাহ ৎ কঠিন হতেন না। ভুলকারী জাহেল হলে
তাকে শেখানোর চেষ্টা করতেন। ভুল সংশোধনের
ব্যাপারে যতœ নিতেন; কে ভুল করল সে বিষয়ে তিনি গুরুত্ব দিতেন না।” এর প্রমাণ :
জনৈক
ব্যক্তি - হালাল হতে তার অনিচ্ছাকে ব্যক্ত করতে গিয়ে কিঞ্চিৎ অমার্জিত ভাষায় বলল :“ অতঃপর আরাফায় এ অবস্থায় যাব যে আমাদের
শিশ্ন বেয়ে রেত টপকাচ্ছে ”! কথাটা কে বলল, কী তার পরিচয়? এ সব জানতে তিনি মোটেও
আগ্রহ প্রকাশ করেন নি। এর পরিবর্তে তিনি,
বরং, সাহাবাদের বুঝাতে সচেষ্ট হলেন এবং তাদের পক্ষে যা উত্তম
তা করতে নির্দেশ দিলেন। তিনি বললেন :“ তোমরা জান যে আমি তোমাদের থেকে বেশি
আল্লাহকে ভয় করি, তোমাদের থেকে বেশি
সত্যবাদী ও সৎকর্মকারী, কোরবানির পশু
সঙ্গে না এনে থাকলে আমি হালাল হয়ে যেতাম
যেভাবে তোমরা হালাল হচ্ছ; অতঃপর তোমরা
হালাল হয়ে যাও, আমি যদি পেছনের দিনগুলোকে সামনে পেতাম, তাহলে কোরবানির পশু সঙ্গে
নিয়ে আসতাম না।”
-
খাসআমের যুবতী মহিলার প্রতি তাকানোর অপরাধে ফযল ইবনে আব্বাসকে ভর্ৎসনা না করে
ওই দিক থেকে তার চেহারা ঘুরিয়ে দিয়ে ক্ষান্ত হওয়া এ পর্যায়েরই একটি উদাহরণ।
-যে
দু’ব্যক্তি তাদের অবতরণস্থলে নামাজ পড়ে এলো এবং জামাতের সাথে নামাজে শরিক হলো না
তাদেরকেও ভর্ৎসনা করলেন না, বরং তাদের সন্দেহ বিমোচনার্থে তাদের অজ্ঞানতা দূর করেই কেবল ক্ষান্ত হলেন,
এবং তাদের পক্ষে যা উত্তম তা করতে নির্দেশ করলেন।
- যে
দু’ব্যক্তি কর্মক্ষম ও শক্তিমান হওয়া সত্ত্বেও সদকার সম্পদের ভাগ চাইল তাদের ধমক
না দিয়ে এমনভাবে বুঝিয়ে দেন যে তারা
স্বেচ্ছায় নিজ উদ্যোগেই তা বর্জন করে,
নিঃসন্দেহে এ ঘটনা আচরণের ক্ষেত্রে মহানুভবতারই পরিচায়ক।
রাসূলুল্লাহর
সারল্য
হজ্বে
মানুষদের পরিচালনার ক্ষেত্রে রাসূল্লাহৎ এর সফলতার সবচেয়ে বড়ো কারণ তাঁর
স্বাভাবিকতা, সারল্য, ও অনাড়ম্বরতা এবং সকল বিষয়ে স্পষ্টতা। মানুষদের পরিচালনা
বিষয়ে রাসূলুল্লাহৎ এর কর্মধারা নিয়ে ভেবে দেখলে প্রতীয়মান হয় যে তিনি তাদেরকে যা
কিছুর নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিল অত্যন্ত পরিষ্কার। আর রাসূলুল্লাহ ৎ এর নেতৃত্বও ছিল
দৃশ্যমান। হজ্বকর্ম ছিল জ্ঞাত। চলার পথও জানা। স্থান ও কাল সুনির্দিষ্ট। এ-কারণেই
যাদের তিনি পরিচালনা করেছেন তাদের সামনে সবকিছুই ছিল মূর্ত, তাদের প্রত্যেকেই
জানতো কোথায়-কখন কী করণীয়। তাই যদি আপনি হাজ্বীদের কোনো বিষয়ে দায়িত্বশীল হন তাহলে
সবকিছু তাদেরকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলুন। স্পষ্টতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিন।
অস্পষ্টতা, অতিরঞ্জন ছেড়ে দিন।
মানুষের
প্রতি মমত্ববোধ
রাসূলুল্লাহ
ৎ ছিলেন নম্র বিনয়ী ও কোমল মেজাজের। তিনি সহাস্য ও উজ্জ্বল চেহারার অধিকারী ছিলেন।
তাঁর থেকে বেশি হাস্যজ্জ্বোল মানুষ আর দেখা যায়নি। যখন তিনি কথা বলতেন মৃদু
হাসতেন। সাহাবাদের হৃদয়ে আনন্দ সঞ্চারেও
তিনি কারপণ্য করতেন না। হজ্বে এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হযরত ইবনে আব্বাসের (রা)
হাদীস যেখানে এসেছে :“ আমরা বনু আব্দুল মুত্তালিবের শিশুরা উটের ওপর আরোহণ করে
রাসূলুল্লাহ ৎ এর কাছে এলাম তিনি আমাদের
রানে মৃদু আঘাত করে বলতে লাগলেন, আমার সন্তানরা! সূর্য ওঠার আগে কঙ্কর নিক্ষেপ
করো না।”
তাই হজ্বে আপনি মানুষজনের সাথে সাক্ষাতের
সময় সুন্দরভাবে ছালাম-কালাম করুন, উৎফুল্ল ও হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় তাদের সংস্পর্শে
আসুন। গুছিয়ে মার্জিতভাবে কথা বলুন। কর্মে শালীন হন, তাহলেই গ্রহণযোগ্যতা পাবেন
সকলের কাছেই । কুড়িয়ে নিতে সমর্থ হবেন তাদের ভালোবাসা । আর এসবই বয়ে আনবে আপনার
জন্য অফুরান ছোঁয়াব ও আল্লাহর সন্তুষ্টি।
গম্ভীর
ভাব ও বেশবিন্যাস
তিনি
হজ্বে - যেমন হজ্বের বাইরে- দেহ-সৌষ্ঠব, ও বেশভূষার প্রতি যত্নবান ছিলেন ; এমনকী তার চেয়ে সুন্দর আর কাউকে দেখা
যায় নি। তিনি তাঁর পবিত্র কেশের যতœ
নিয়েছেন। চুল যাতে উড়ন্ত অবস্থায় না থাকে তার ব্যবস্থা করেছেন। ইহরাম বাঁধা ও হালাল হওয়ার জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করেছেন। ইহরামের পূর্বে গোসল
করেছেন । মক্কায় প্রবেশের পূর্বেও গোসল করেছেন।
তিনি
গুরুগম্ভীর ও ভারিক্কি ছিলেন। চালচলনে যা অনুচিত তা তিনি কখনো করেন
নি। তাইতো তিনি ছিলেন সবার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র । হারেস ইবনে আমর আস্সুহামী (রা) এর
কথায় এর প্রমাণ মিলে, তিনি বলেন :“ মিনা অথবা আরাফায় আমি রাসূলুল্লাহর ৎ কাছে
এলাম, মানুষ তাকে ঘিরে আছে : ‘বেদুইনরা আসে’
ÑÑ তিনি বলেনÑÑ এবং তাঁর চেহারার
প্রতি দৃষ্টি পড়তেই বলে ওঠে : ‘এটি বরকতময় চেহারা।’
অতঃপর আপনি আপনার বহিরদৃশ্য ও কান্তির
ব্যাপারে যত্নবান হোক। লজ্জার আবরণে নিজেকে মুড়িয়ে নিন। গুরুগম্ভীর ভাব বাজায়
রাখুন। বেশি হাসি-ঠাট্টা থেকে বিরত থাকুন। এরূপ করাতে মানুষের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে আপনার
কথা ও বক্তব্যে মনোযোগ দেয়ার মাত্রাও
তাদের বেড়ে যাবে।
হজ্বে মানুষের সাথে আচরণে রাসূলুল্লাহ ৎএর
আদর্শগত পরিপূর্ণতার কিছু উদাহরণ ওপরে উল্লেখিত হলো যা মানুষকে তার কাছে টেনে
এনেছে। তাদের হৃদয়রাজ্যে শ্রদ্ধার আসন পাততে সহায়তা করেছে। তাদের শ্রদ্ধা-ভক্তি
কুড়িয়ে এনেছে। অতঃপর আপনার উচিত তাঁর আনুগত্যে ঐকান্তিক হওয়া। তাঁর নির্দেশ
বাস্তবায়নে সদা প্রস্তুত থাকা।
যারা ধর্মীয় ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে চান
তাদের এই চরিত্র-মাধুরীতে সুসজ্জিত হওয়া ব্যতীত অন্য কোনো গত্যন্তর নেই। নবীদের
চরিত্রে নিজেদেরকে চরিত্রবান না করলে প্রতিষ্ঠা, গ্রহণযোগ্যতা কোনটাই পাওয়া সম্ভব
নয়।
হজ্বে পরিবার
পরিজনদের মাঝে রাসূলুল্লাহ
আত্মীয়দের
বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ৎএর যতœ-দয়া-এহসান ছিল অশেষ। যারা তাঁর স্পর্শে এসেছেন সবাই এ
সাক্ষী তাদের সবার। রাসূলুল্লা ৎ এর গুণ বর্ণনাকরীদের কথা অনুযায়ী তিনি “ মানুষের মধ্যে সমধিক সদাচারী , সব থেকে
বেশি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী ছিলেন”।
আত্মীয়- স্বজনকে কল্যাণের পথে আহ্বান, তাদের সত্যপথ প্রাপ্তি ও দোযখ থেকে
মুক্তি লাভের প্রত্যাশা আত্মীয়দের প্রতি রাসূলুল্লাহর সীমাহীন দরদকেই
নির্দেশ করে। এর একটি উদাহরণ সাফায় রাসূলুল্লাহ ৎ এর দাঁড়ানো এবং শিরকের পরিণাম
থেকে তাঁদেরকে হুঁশিয়ার করা। সাফায়
দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন :“ হে ফাতেমা বিনতে মোহাম্মদ, হে সাফিয়্যা বিনতে আব্দুল
মুত্তালেব, হে আব্দুল মুত্তালেবের সন্তানরা! আমি তোমাদের জন্য কোনো কিছুরই মালিক
না। আমার সম্পদে যা ইচ্ছা দাবি
করো।” এই সূত্রে তিনি তাঁর চাচা আবু তালিবকে বললেন :“ হে চাচা “ বলুন! আল্লাহ ব্যতীত
কোনো ইলাহ নেই’ , আমি আল্লাহর কাছে এ
কালেমাটি প্রমাণ হিসেবে পেশ করব।”
হজ্বে স্বজনদের সাথে রাসূলুল্লাহ ৎ এর
সদাচার ও এহসান, বিভিন্ন ধারায় প্রকাশ পেয়েছে , তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :
১.হজ্বের
আহকাম শেখানোর ব্যাপারে যত
রাসূলুল্লাহ
ৎ স্বজনদেরকে হজ্বের আহকাম শেখানোর ব্যাপারে যতœ নিয়েছেন যাতে আল্লাহর নৈকট্য
অর্জনে তাঁরা সঠিক পথে চলতে পারেন, তাদের ইবাদত আরাধনা বিশুদ্ধতা পায়। এর উদাহরণ :
হযরত উম্মে সালামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :“ রাসূলুল্লাহ ৎ কে বলতে শুনেছি : ”হে
মুহাম্মদের পরিবার! হজ্বে তোমরা ওমরার
নিয়ত করো।” তোওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে হযরত
আয়েশা ঋতুবতী হলে তাকে তিনি বললেন :“
অন্যান্য হাজ্বীদের সাথেই তুমি হজ্বকর্ম চালিয়ে যাও , তবে বায়তুল্লাহর তোওয়াফ করো না।”
“সূর্যোদয়ের পূর্বে কঙ্কর নিক্ষেপ করো না, আব্দুল মুত্তালেব পরিবারের শিশুদেরকে রাসূলুল্লাহর একথাও সে পর্যায়ে পড়ে।
স্বজনদেরকে সরাসরি দিকনির্দেশনা দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হতেন না, তিনি তাদের সাথে
আলোচনায় বসতেন, তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতেন। হযরত হাফছা (রা) বর্ণনা করেন :
“রাসূলুল্লাহ ৎ তাঁর পতœীদেরকে (রা) বিদায় হজ্বের সময় হালাল হয়ে যেতে বললেন :
উত্তরে তাঁরা বললেন : তা হলে আপনি হালাল হচ্ছেন না কেন ? তিনি বললেন :“ আমি মাথা
তালবিদ করেছি, হাদীর জন্তুকে মালা
ঝুলিয়েছি। তাই হাদী জবেহ না করা পর্যন্ত
হালাল হব না।” অন্য এক
বর্ণনায় এসেছে : তিনি বললেন : মানুষের কি
হলো ? তারা হালাল হয়ে গেলো আর আপনি ওমরা থেকে হালাল হলেন না। হযরত আলী (রা) থেকে
বর্ণিত হাদীসও এই মর্মে প্রণিধানযোগ্য, তিনি বলেন :“ হযরত আব্বাস (রা) বললেন :
য়্যা রাসূলুল্লাহ ৎ আপনার চাচাতো ভাইয়ের গর্দান কেন ঘুরিয়ে দিলেন ? তিনি বললেন :
আমি একটি যুবক ও একটি যুবতীকে দেখলাম , অতঃপর শয়তানের আক্রমণ থেকে তাদেরকে নিরাপদ মনে করলাম না।
হজ্বের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বর্তমান যুগের অনেক
হাজ্বীদের কাছেই অজ্ঞাত। হজ্বের আহকাম বিষয়ে মূর্খতা আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে
অনেককেই। কেননা পরিবার পরিজনদেরকে যারা এ-জাতীয় আহকাম শিখায়, লক্ষ্য উদ্দেশ্যের
ব্যাপারে সঠিক ধারণা দেয়, তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়, তাদের সংখ্যা খুবই কম।
তবে যারা এই মুবারক দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট
তাদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক। তারাই
বরং সর্বোত্তম। রাসূলুল্লাহ বলেছেন : তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম যে তার
পরিজনদের কাছে উত্তম। আর আমি এক্ষেত্রে তোমাদের থেকে উত্তম।” পরিজনদের ব্যাপারে যেভাবে দায়িত্ব পালন করা
উচিত সেভাবেই দায়িত্ব পালন করুন। কেননা
আপনি তাদের সেবা-যতেœর ক্ষেত্রে অভিভাবক।
আর রাসূলুল্লাহ ৎ বলেছেন : “ তোমাদের প্রত্যেকেই অভিভাবক আর প্রত্যেককে তার
অভিভাবকত্ব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। ... ব্যক্তি তার পরিবারের অভিভাবক , সে
তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।” রাসূলুল্লাহর
জীবনে আপনার জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে, তিনি অন্যদেরকে দোযখের ভয় দেখানোর আগে নিজের
স্বজনদের হুঁশিয়ার করেছেন, তাদের শিখিয়েছেন, ও এক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ
বাস্তবায়ন করেছেন যেখানে বলা হয়েছে :“ তুমি তোমার স্বগোত্রীয় নিকটজনদেরকে হুঁশিয়ার
করো।”
২.
হজ্বকর্মে পরিবারের সদস্যদেরকে ব্যস্ত রাখা
হজ্বের
পূর্বেই পরিবারের সদস্যদেরকে এতৎসংক্রান্ত বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ৎ ব্যস্ত রেখেছেন।
হযরত আয়েশার হাদীস এদিকেই ইঙ্গিত করে। তিনি বলেন :“ রাসূলুল্লাহর (স) ইহরামের
পূর্বে আমি তাঁর হাদীর জন্য মালা বুনেছি।”
এসব ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহৎএর অনুসরণ করা
কতই না জরুরি। তাই চলুন হজ্বের পূর্বেই নিজেকে
ও যারা সঙ্গে যাবে এমন আত্মীয়স্বজনকে
হজ্ব বিষয়ে ব্যস্ত রাখি। নিজের ও
পরিজনদের হৃদয় হজ্বের সাথে জুড়ে দিই। এতে হজ্ব পালনের ইচ্ছায় আসবে দৃঢ়তা, বৃদ্ধি
পাবে এর হুকুম-আহকাম- ফযিলত- ছোয়াব সম্পর্কে জ্ঞান, শেখা হবে এর নিয়মকানুন। প্রস্তুতিতে সংযোজন হবে নতুন মাত্রা। আর এসব বিষয় একজন ব্যক্তিকে
হজ্বে যা কিছু করা উত্তম সে বিষয়ে, ও
যেভাবে করা উত্তম সেভাবে আদায় করতে সাহায্য কর।
৩-
হজ্ব বিষয়ে পরিবার পরিজনদের দায়িত্ব যাতে যথাযথ পালিত হয় সে বিষয়ে যতœ
যাদের
সামর্থ্য রয়েছে আল্লাহ পাক তাদের ওপর হজ্ব ফরজ করেছেন। তিনি বলেছেন :“ যারা
সমর্থবান তাদের ওপর আল্লাহর এই অধিকার যে
তারা পবিত্র ঘরের হজ্ব করবে,” তাই
সমর্থবান ব্যক্তি এ-দায়িত্বটি আদায় না করা পর্যন্ত তা ঝুলে থাকে।
যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ৎএর সীরাত ঘেঁটে দেখবে পরিজনদের দায়দায়িত্ব পালনে
রাসূলুল্লাহ ৎ কতটুকু যত্নবান ছিলেন সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাবে। এর কয়েকটি উদাহরণ নিম্নে দেয়া গেলো :
*
সকল স্ত্রীদেরকে (রা) সঙ্গে করে হজ্বে আসা।
*
পরিবারবর্গের যারা দুর্বল তাদেরকেও সঙ্গে নিয়ে
হজ্বে আসা।
*
এমনকী তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ তাদেরকেও যথাসম্ভব দ্রুত হজ্ব পালনের ব্যাপারে
উৎসাহ দেয়া। এরই একটি উদাহরণ যে তিনি
যাবায়া বিনতে যুবায়েরের কাছে গেলেন, এবং
বললেন : - আপনি হজ্বে যাচ্ছেন না কেন? তিনি বললেন :“ আমি অসুস্থ আর আমি
আশঙ্কা করছি যে বাধার সম্মুখীন হব । তিনি বললেন: ইহরাম বাঁধুন ও শর্ত করে নিন যে, যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হবেন সেখানেই আপনার
হালাল হওয়ার জায়গা। অন্য এক
বর্ণনায় : তুমি এ-বছর হজ্ব করবে না ?....
।”
আজ
আমরা দেখছি অনেক বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা
অর্থ-কড়ি থাকা সত্ত্বেও হজ্ব পালন করে নি। তাই, যদি আল্লাহ আপনাকে শক্তি দিয়ে
থাকেন তাদের প্রতি এহসান করুন। তাদের হাত ধরে হজ্বে নিয়ে যান। আপদবিপদ বাধা হয়ে
দাঁড়াতে পাড়ে। নানা প্রকার সমস্যা প্রাপ্ত সুযোগ ছিনিয়ে নিতে পারে। আর দুনিয়া এক
অবস্থায় কারো জন্য স্থির থাকে না। তাই রাসূলুল্লাহ ৎ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হজ্ব সেরে
নিতে বলেছেন। হাদীসে এসেছে : “ যে ব্যক্তি হজ্ব সম্পাদনের ইচ্ছা করল সে যেন বিলম্ব
না করে। কারণ ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে যেতে পারে, বাহন হারিয়ে যেতে পারে, প্রয়োজন দেখা
দিতে পারে।” অন্য এক বর্ণনায় এসেছে : “
হজ্ব বিষয়ে তাড়াতাড়ি করো, - অর্থাৎ ফরজ হজ্ব - কেননা তোমাদের কেউ জানে না যে সে
কোন অবস্থার সম্মুখীন হবে।”
এভাবে হাত ধরে পরিবারের সদস্যদেরকে হজ্বে
নিয়ে গেলে, তাদেরকে সহায়তা করলে তার ছোওয়াব আপনি অবশ্যই পাবেন। জনৈক মহিলা তার
ছোট্ট শিশুকে উঁচু করে ধরে বললেন, এর হজ্ব হবে? রাসূলুল্লাহ ৎ বললেন : হবে আর আপনি তার ছোওয়াব পাবেন। মনে করিয়ে দেয়া ভালো যে স্ত্রীকে নিয়ে হজ্ব
করতে যাওয়া আপনার কর্তব্য, পক্ষান্তরে উল্লেখিত মহিলার তার শিশুকে নিয়ে হজ্ব করা
জরুরি ছিল না।
৪-
ইবাদত ও আনুগত্য চর্চায় উৎসাহ দান
রাসূলুল্লাহ
ৎ তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে ইবাদত ও আনুগত্য যথাযথভাবে পালন করার প্রতি উৎসাহ
দিতেন। ভালো ও পুণ্যকীর্তি আহরণের জন্য
তিনি তাদের প্রেরণা জোগাতেন। এর একটি উদাহরণ: তিনি যখন তাঁর চাচাতো ভাইদের কাছ
দিয়ে অতিক্রম করছিলেন -যারা যমযম কূপ থেকে পানি ওঠাচ্ছিলেন এবং মানুষদেরকে পান
করাচ্ছিলেন- তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন :“ আব্দুল মুত্তালেবের সন্তানরা তোমরা পানি
উঠাও! মানুষ তোমাদের ওপর প্রচণ্ড ভির করবে এ-ভয় না হলে আমিও তোমাদের সাথে পানি
ওঠাতাম। অন্য এক বর্ণনায় তোমরা কাজ করে যাও, নিশ্চয় তোমরা ভালো কাজ করছ। মানুষেরা
প্রচণ্ড ভির করবে এ-ভয় না হলে আমি তোমাদের সাথে পানি ওঠাতাম এবং এখানে - তিনি তাঁর
পবিত্র গ্রীবার দিকে ইশারা করলেন- রশি
রাখতাম। পানি পান করানোর কাজ যাতে সহজভাবে করা যায় সেজন্য তিনি তাদের সুযোগও করে
দিতেন : হযরত আব্বাসকে (রা) তিনি মিনার রাতগুলো মক্কায় যাপনের অনুমতি দিলেন
হাজ্বীদেরকে পানি পান করানোর প্রয়োজনে।
হজ্ব ,এহসানের এক বড়ো দরজা। পুণ্যকর্মের মৌসুম।
দুর্বল অসহায়দের সংখ্যাও সেখানে প্রচুর। তাই যদি আপনি পুণ্যকর্ম বাড়াতে চান,
সৎকর্ম দিয়ে আপনার পাল্লা ভারী করতে চান তা হলে হাজ্বীদের প্রতি এহসান করুন। আপনার
পরিবারের সদস্যদেরকে সৎকর্ম বিষয়ে দীক্ষিত করে তুলুন। পুণ্যকীর্তিসমূহ তাদের
দেখিয়ে দিন। ভালো কাজ যেন তারা করতে পারে সে জন্য সুযোগ করে দিন। প্রয়োজনগ্রস্তদের
প্রয়োজনে এগিয়ে আসতে তাদেরকে উৎসাহিত করুন। রাসূলুল্লাহ ৎ বলেন : যে ব্যক্তি
কাউকে কোনো হিদায়েত তথা ভাল কাজের প্রতি ডাকবে, সে অনুসারে আমল করবে তাদের
ছোয়াবের মতোই সে ছোয়াব পাবে, অথচ মূল আমলকারীদের ছোয়াবের কোনো অংশই কমবে না । অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ ৎ বলেছেন : “যে
ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের পথ দেখায় সে পুণ্যকর্মার তুল্যই ছোয়াব পায়।” গোমরাহী বা পথ-বিচ্যুত হতে কখনো তাদের উৎসাহ
জোগাবেন না, অথবা কোনো পাপ কর্মের উপদেশ তাদেরকে দিবেন না। অথবা কোনো মুনকারের
সাথে জড়িত হতে তাদেরকে সহায়তা দিবেন না। রাসূলুল্লাহ ৎ এমর্মে সতর্ক করে বলেছেন:
যে ব্যক্তি কোনো গোমরাহীর দিকে ডাকে সে পাপকারীদের গোনাহের তুল্য গোনাহের ভাগী হয়।
আর এতে তাদের গোনাহের কোনো অংশ কমে না।”
৫-
আত্মীয় পরিজনের সহায়তা গ্রহণ
রাসূলুল্লাহ
ৎ তাঁর আলে বাইতের তথা পরিবারের সদস্যদেরকে কোনো কোনো কাজে প্রতিনিধি করেছেন, আবার
কিছু কিছু কাজ তাদেরকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছেন।
এর প্রমাণ :
*
ইহরাম বাধার পূর্বে রাসূলুল্লাহ ৎ হযরত আয়েশাকে (রা) হাদীর জন্তুসমূহের কিলাদা (মালা) পশম দিয়ে বুনোনোর
নির্দেশ দিলেন ।
*
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ ৎ আকাবার দিন সকালে
বললেন : আমার জন্য কঙ্কর কুড়াও , অতঃপর আমি তার জন্য সাতটি কঙ্কর কুড়ালাম।
*
রাসূলুল্লাহ ৎ হাদীর উটসমূহ জবাই করার সময় অবশিষ্ট কিছু উট জবাই করার দায়িত্ব হযরত
আলী (রা) কে দিলেন , কোরবানিকৃত পশুর গোশত
চামড়া ও আনুষঙ্গিক জিনিসসমূহ সদকা করে দিতেও
তাকে দায়িত্ব দিলেন।
*
রাসূলুল্লাহ ৎ তাঁর চাচাতো ভাইদের কাছে পানি পান করতে চাওয়াও এ-পর্যায়ে পড়ে। তিনি
তাঁর চাচা আব্বাস (রা) কে বললেন : আমাকে পানি পান করান অতঃপর তিনি তা থেকে পান
করলেন।” হযরত ইবনে আব্বাস (রা) এক
বর্ণনায় বলেন : রাসূলুল্লাহ ৎ কে যমযমের পানি পান করালাম, অতঃপর তিনি পান
করলেন দাঁড়ানো অবস্থায়।
এর আর একটি উদাহরণ, রাসূলুল্লাহ ৎ এর
পবিত্র শরীর ও মাথায় হযরত আয়েশা (রা) কর্তৃক উত্তম আতর মাখিয়ে দেয়া। এই মর্মে হযরত
আয়েশা বলেছেন : আমি আমার এই দুই হাত দিয়ে রাসূলুল্লাহ ৎ কে সুগন্ধি মাখাতাম ইহরামের
পূর্বে ও হালাল হওয়ার পর তোওয়াফ করার
পূর্বে, তিনি তাঁর দু’হাত সম্প্রসারিত করে দেখালেন।”
যারা স্বজনদেরকে ছেড়ে দূরবর্তী লোকদের
সাহায্য প্রার্থনা করেন, তাদের আচরণ যে ভুল
রাসূলুল্লাহ ৎ এ আদর্শ সে ইঙ্গিতই বহন করছে। হযরত মূসা (আ) কে আল্লাহর কাছে এই বলে প্রার্থনা করতে দেখা গেছে : “ আমার পরিবারবর্গের মধ্যে একজনকে
আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও, আমার ভাই হারুনকে; এবং তাকে আমার কর্মে অংশী কর ,
যাতে তোমার পবিত্রতা কীর্তন করতে পারি প্রচুর, এবং তোমাকে স্মরণ করতে পারি
অধিক।” লুত যখন তার সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আসা নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন তিনি তখন তাঁর স্বজনদের সহায়তা
পাওয়ার প্রত্যাশায় বললেন :“ আমার যদি তোমাদের বিষয়ে কোনো শক্তি থাকতো , অথবা আমি আশ্রয় নিতে পারতাম
একটি সুদৃঢ় স্তম্ভের।” অভিজ্ঞতা থেকে
বলা যায় যে আত্মীয়স্বজনের সহায়তা নেয়াই হলো
মানব প্রকৃতির আকুতি। দ্রুত কর্ম সম্পাদন ও উদ্দেশ্য অর্জনে সাহায্যকারী। আর যে
ব্যক্তি স্বজনদের বিষয়ে উদাসীন, ভালো ও কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে তাদেরকে
উৎসাহ দেয় না। সে তাদের উপকার থেকেও
নিজেকে করে বঞ্চিত, ফলে বঞ্চিত হয় প্রভূত
কল্যাণ থেকে।
৬-
ফেৎনা থেকে স্বজনদেরকে হিফাযত করা
ফেৎনা
হচ্ছে হৃদয়ের স্বচ্ছতা বিধ্বংসী , মেধা ও ভাবকে বিকৃতকারী। আর যখন বহুল সংখ্যক
পুরুষ ও মহিলা একত্রে জমায়েত হয় ফেৎনা সংঘটিত হওয়ার সুযোগও বেড়ে যায়। বিশেষ করে
নারী সংক্রান্ত ফেৎনা। এ-জন্য রাসূলুল্লাহ ৎ তাঁর পরিবারের সদস্যদের ফেৎনা থেকে
দূরে রাখার ব্যাপারে খুবই যত্নবান ছিলেন। এর প্রমাণ :
হযরত ফযল ইবনে আব্বাসের গ্রীবা ঘুরিয়ে দেয়া
যখন তিনি খাসআমিয়া গোত্রের মহিলার প্রতি দৃষ্টি দিচ্ছিলেন, আর তা এ আশংকায় যে
শয়তান তাদের হৃদয়ে ফেতনার প্রবেশ ঘটাতে পারে। হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে
এসেছে, তিনি বলেছেন : “ হযরত আব্বাস বলেছেন : হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আপনার চাচাতো
ভাইয়ের গ্রীবা কেন ঘুরিয়ে দিলেন? তিনি বললেন : আমি একটি যুবক ও যুবতীকে দেখলাম
অতঃপর শয়তানের আক্রমণ থেকে তাদেরকে নিরাপদ মনে করলাম না। অন্য এক বর্ণনা অনুসারে :
“ আমি একটি যুবক ছেলে ও যুবতী মেয়েকে দেখলাম, অতঃপর তাদের ওপর শয়তানের আক্রমণের আশংকা করলাম।”
পুরুষদের সম্মুখীন হলে ইহরাম অবস্থায় নবী
পতœীদের চাদর দিয়ে চেহারা ঢেকে ফেলা এবং তারা অতিক্রম করে চলে গেলে পুনরায় চেহারা
খুলে ফেলা এ অবস্থায় যে রাসূল তাদের সঙ্গে রয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ ৎ তাঁর স্ত্রীদেরকে (রা)
পুরুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তোওয়াফ করতে বলেছেন। যদিও তাঁরা পুরুষের সাথেই তোওয়াফ
করতেন। হযরত উম্মে সালামার কথা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যখন তিনি রাসূলুল্লাহ ৎ কে
তার সমস্যার ব্যাপারে কৈফিয়ত করলেন , এবং রাসূলুল্লাহ ৎ তাঁকে বললেন :“পুরুষদের
পাশ দিয়ে আরোহিত অবস্থায় তোওয়াফ করো।”
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে :“ যখন ফযরের একামত দেয়া হয়, তখন তুমি উটের উপর
সোওয়ার হয়ে তোওয়াফ করো এ অবস্থায় যে মানুষেরা নামাজ পড়ছে। অতঃপর আমি এরূপই করলাম।” ইবনে জুরাইজের হাদীসের ভাষ্যও এটাই। তিনি বলেন
:“ আতা’ জানিয়েছেন , যখন ইবনে হিশাম মহিলাদেরকে পুরুষের সাথে তোয়াফ থেকে নিষেধ
করেছেন, তিনি বললেন : কীভাবে সে নিষেধ করে!
নবী পতœীগণ তো পুরুষের সাথেই তোওয়াফ করেছেন। আমি বললাম : হিজাবের , পরে না
আগে ? তিনি বললেন : বিশ্বাস করুন, আমি এ বিষয়টি হিজাবের পর পেয়েছি। আমি বললাম :
তাহলে কীভাবে পুরুষের সাথে মিশে তোওয়াফ করতেন? তিনি বললেন : পুরুষের সাথে মিশে
তোওয়াফ করতেন না বরং পুরুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তোওয়াফ করতেন।” হযরত আয়েশার এ কথা থেকেও বিষয়টি বুঝতে পারা
যায় যে তিনি তার এক আজাদকৃত মহিলাকে বললেন যিনি সাতবার বায়তুল্লাহর তোওয়াফ
করেছেন,দু’বার অথবা তিনবার হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করেছেন , তাঁকে তিনি বললেন : “
আল্লাহ তোমাকে প্রতিদান না দিন, আল্লাহ
তোমাকে প্রতিদান না দিন , তুমি পুরুষদের
সাথে ভির ঠেলতে গিয়েছ, তুমি যদি তাকবির দিতে এবং অতিক্রম করে যেতে।” কারণ হযরত আয়েশা (রা) এমন জিনিস কখনোই ছাড়তে না
যা রাসূলুল্লাহ ৎ করতে বলেছেন, অথবা কোনো জিনিস করা থেকে বারণ করবেন না যা
রাসূলুল্লাহর সামনে করা হয়েছে।
নবী-পতœীদেরকে বায়তুল্লাহর রমল করার অনুমতি
না দেয়া ও সাফা মারওয়ার মাঝখানে বতনুল ওয়াদিতে দৌড়ে চলা থেকে বারণ করা এ পর্যায়ে
পড়ে। হযরত আয়েশা (রা) বলেছেন, হে মহিলাগণ ! আপনাদের বায়তুল্লাহর রমল করতে হবে না।
এই ক্ষেত্রে আপনারা আমাদের কাছ থেকে আদর্শ গ্রহণ করুন,” অন্য এক বর্ণনায় এসেছে : আপনাদের জন্য কি
আমরা আদর্শ নই? আপনাদের বায়তুল্লাহর রমল করতে হবে না,না আছে সাফা মারওয়ার মাঝখানে
বেগে চলা।”
এ-পর্যায়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো
নবী-পতœীদেরকে হজ্বের পর যার যার ঘরে
অবস্থান করতে বলা।
হজ্বে মূর্খতা ও ভিড়ের প্রবলতার কারণে
দুর্বল-ইমানসম্পন্ন লোকদের বিপথগামী হওয়ার
সুযোগ সৃষ্টি হয় কিছু শরীয়তবহির্ভূত কাজের সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করার। যার
ফলে আল্লাহর ভয় বুকে ধারণ করে, দু®কৃতিকারীদের হাত থেকে
পরিবারের সদস্যদেরকে হিফাযত করা, পবিত্র
ভূমিতে গিয়েও আল্লাহর ভয়ে যাদের বুক কাঁপে না তাদের বলয় থেকে স্বজনদেরকে রক্ষা করা
প্রতিটি ব্যক্তিরই দায়িত্ব হয়ে যায়। স্থান ও কাল সংক্রান্ত কিছু মুস্তাহাব যদি, এর
ফলে, ছুটে যায় তবু। কারণ ক্ষতিকর বিষয় দমন সৎকর্ম সিদ্ধির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। এ
ক্ষেত্রে মনে রাখা ভালো যে অর্পিত দায়িত্ব
পালন নিজের আওতাধীনদের সুরক্ষা নিশ্চিত
করে। পক্ষান্তরে, এ ক্ষেত্রে অবহেলা, ডেকে আনে কঠিন শাস্তি। রাসূলূল্লাহ ৎ বলেছেন
: “ যখন আল্লাহ পাক কিছু মানুষকে কারো দায়িত্বে দিয়ে দেন আর ওই ব্যক্তি তার
আওতাধীনদের বিষয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয়
আল্লাহ তার জন্য বেহেশত হারাম করে দেন।”
৭-
পরিবারের সদস্যদেরকে অনাচার থেকে বারণ
রাসূলুল্লাহ
ৎ সব সময়ই এ-বিষয়ে যত্নবান ছিলেন যে তাঁর পরিবারের সদস্যরা কিছুতেই যেন কোনো
অনাচারে জড়িত না হয়, সে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ৎ সবসময়ই যত্নবান ছিলেন। তাই তাদের কেউ যখন কোনো মুনকারে জড়িয়ে যাওয়ার
উপক্রম করতেন তিনি ৎ সাথে সাথে তাকে বারণ করতেন। যেমন ফযল ইবনে আব্বাসকে (রা) নারীর
প্রতি দৃষ্টি দেয়া থেকে বারণ করেছেন।
স্বীয় আলে বায়তকে রাসূল্লাহ ৎ মানুষের জন্য
আদর্শরূপে দাঁড় করিয়েছেন। তিনি আরাফায় বক্তৃতার সময় অন্যদের কাছে স্বীয়
পরিবারভুক্তদের প্রাপ্য সুদ ও অন্যায়ভাবে
নিহত হয়ে যাওয়া ব্যক্তির প্রতিশোধ বাতিল
করে দিয়ে এ ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল উদাহরণ
স্থাপন করেছেন।
বর্তমান যুগে পাপাচার বেড়ে গেছে দারুণভাবে যা
হয়তো ব্যক্তির হজ্বকে ধ্বংস করে দেয় অথবা এর পূর্ণতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ
করে মহিলাদের কিছু কিছু কদাচার; যেমন পর্দাহীনতা, ও পুরুষদের ভিরে মিশে যাওয়া
ইত্যাদি। তাই আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে রহম করুন যে তার পরিবার সংক্রান্ত দায়িত্ব
যথাযথভাবে পালন করে, এবং স্বীয় আহলে বায়তকে পাপ কর্মে জড়িয়ে যাওয়া থেকে হিফাযত করে। তাদেরকে সৎকাজ করতে নির্দেশ দেয় ও অসৎ কাজ থেকে
বারণ করে।
৮-
হজ্বে পরিবারের সদস্যদের প্রতি করুণা
প্রদর্শন
হজ্বে
রাসূলুল্লাহ ৎ তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাথে কোমল আচরণ করেছেন, তাদের প্রতি করুণা ও
মমত্ববোধ দেখিয়েছেন, তাদের মধ্যে যে দুর্বল তার প্রতি তিনি অধিক নজর দিয়েছেন।
হজ্বকর্ম যেভাবে সম্পাদন করলে সহজ হবে তার দিকনির্দেশনাও তিনি দিয়েছেন। এর উদাহরণ
অনেক, তন্মধ্যেÑনবী-পতœীদের জন্য যা সহজ তাদের জন্য তা পছন্দ করা ও সে অনুযায়ী আমল
করতে বলা। যেমন হযরত হাফছার হাদীস অনুযায়ী
‘রাসূলুল্লাহ ৎ তাঁর স্ত্রীদের (রা) কে বিদায়
হজ্বের সময় (ওমরার পর) হালাল হয়ে যেতে
বলেছেন।”
হযরত যাবাআহ বিনতে যুবাইরকে (রা) অসুস্থতার কারণে শর্ত সংযুক্ত করে নিয়ত করার অনুমতি দেয়াও এ পর্যায়ে পড়ে।
স্বজনদের মধ্যে যারা দুর্বল তাদেরকে
মানুষজনের পূর্বেই মুযদালিফা থেকে প্রস্থান করে কঙ্কর নিক্ষেপের জন্য রওনা হওয়ার
অনুমতি দেয়াও এ পর্যায়ের একটি উদাহরণ । হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন : রাসূলুল্লাহ
ৎ বনি হাশেম গোত্রের দুর্বলদেরকে মুযদালিফা থেকে রাতের বেলায় প্রস্থান করার অনুমতি
দিয়ে দিয়েছেন,” হযরত উম্মে সালামার কৈফিয়ত
এবং তাঁকে পুরুষদের পাশে হয়ে আরোহিণী
অবস্থায় তোওয়াফ করার অনুমতি, আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রা) কে, হাজ্বীদের
পানি পান করানোর প্রয়োজনে, মিনার রাতগুলো মক্কায় যাপনের অনুমতি দেয়া ইত্যাদি
আলোচ্য বিষয়টিরই কয়েকটি উদাহরণ।
রাসূলুল্লাহ ৎ এর যুগে হাজ্বীদের সংখ্যা
বর্তমান যুগের তুলনায় অত্যন্তই কম ছিল। সাথে সাথে সে সময় যারা হজ্ব করেছেন তাঁরা
ছিলেন এ-উম্মতের স্বর্ণযুগের মানুষ, সব থেকে বেশি
পরহেজগার , আল্লাহ-ভীরু, নম্র-ভদ্র ও অধিক গুরুগম্ভীর, তা সত্ত্বেও নবী ৎ
তাঁর আহলে বায়তের প্রতি এতোই নজর রেখেছেন,
তাদের সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন, তাদের পাশে থেকেছেন, যা ভাষায় ব্যক্ত করা
যাবে না। অবস্থা যদি এই হয় তাহলে আমাদের
বর্তমান যুগে বয়োবৃদ্ধ হাজ্বী, মহিলা ও শিশুদের সাথে কোমল আচরণ ও তাদের পাশে
দাঁড়ানোর কোনো বিকল্প আছে বলে মনে হয় না।
কেননা হাজ্বীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে হজ্বসংক্রান্ত বিষয়ে অজ্ঞানতাও বেড়ে
গেছে। আর এত মানুষের একসাথে হজ্ব করায় দয়া
ও মমত্ববোধও কমে গেছে প্রকট আকারে। তাই আপনার স্বজনদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয়
করুন। তাদের জন্য শরীয়তের আওতায় থেকে যা
সহজ তা অবলম্বন করুন। এটাই আপনার জন্য
উত্তম এবং আশা করা যায়, আপনার ছওয়াবও ,এর
ফলে, বহুগুণে বেড়ে যাবে।
৯.
পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে ধৈর্য
রাসূলুল্লাহ
ৎ পরিবাপরিজনদের জন্য শিক্ষক ও একই সাথে
তাদের সেবাযতœকারীও ছিলেন। আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ ছিলেন বৃদ্ধ ও
মোটা স্বাস্থ্যের অধিকারী , যেমন সাওদা (রা); কেউ অসুস্থ যেমন যাবাআহ ও উম্মে
সালামাহ; আর সাথে ছিলেন অনেক মহিলা যেমন নবী তনয়া ফাতিমা (রা) ও সকল উম্মহাতুল
মুমিনিন; বনি আব্দুল মুত্তালিব ও বনু হাশেমের
শিশুরা তো আছেই। অতঃপর রাসূলুল্লাহ
ৎ এর ধৈর্যের মতো এমন ধৈর্য আর কারও মধ্যে দেখা যায়নি। পরিবার-পরিজনদের বিষয়ে তাঁর
চেয়ে অধিক সহনশীল খুঁজে পাওয়াও অসম্ভব। কারণ তিনি পথ দেখিয়েছেন, দিকনির্দেশনা
দিয়েছেন , করুণা ও কোমলতা প্রকাশ করেছেন, তাদের জন্য সম্পদ ব্যয় করেছেন , তাদের
প্রতি এহসান করেছেন। তাদের যতœ নিয়েছেন, সমস্যা ও অভাবে এগিয়ে এসেছেন, তাদের সাথে
কখনো-সখনো মৃদু কৌতুকও করেছেন। তিনি তাদের
অধিকার রক্ষা করেছেন, ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন, তাদের বিষয়-আশয় পরিচালনা
করেছেন সুন্দরভাবে। আর এসবই করেছেন আনন্দচিত্তে। বিরক্তিবোধ প্রকাশ করতে দেখা
যায়নি তাঁকে কখনো ।
এটাই হলো মুহাম্মদী চরিত্র ও কোরআনী আখলাক
যা মানবিক মহানুভবতাকে প্রকাশ করছে উজ্জ্বলভাবে।
পরিবার-পরিজনদের প্রতি ধৈর্য খুবই ঠিক কাজ। আর এ কাজটি মহান ব্যক্তিরা ব্যতীত অন্য কেউ
সহজে করতে পারে না। কেননা প্রাত্যহিক মেলামেশা ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভয়-ভীতি কমিয়ে দেয়।
যার ফলে, সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে,
ব্যক্তিকে অধিক পরিমাণে সহনশীল ও ধৈর্যধারণকারী হতে হয়। বিশেষ করে হজ্বমৌসুমে যেখানে বেড়ে যায় মানুষের
উপস্থিতি, সীমা ছাড়িয়ে যায় কষ্ট-ক্লেশের
মাত্রা।
অতঃপর কেউ কি আছেন ছোয়াব প্রত্যাশী? পরকালে
আগ্রহী ? যিনি তার পরিবার পরিজনদের বিষয়ে, ছেলে সন্তানদের বিষয়ে, নিজেকে ধৈর্যের বলয়ে আবদ্ধ করবেন? যিনি হবেন
নেতৃত্ব ও উচ্চাসনের দরজায় কড়া নাড়তে আগ্রহী। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে: “আমি
তাদেরকে নেতৃত্বদানকারী বানালাম, যারা আমার নির্দেশে মানুষদেরকে পথ দেখাবে; যখন
তারা ধৈর্যধারণ করল,আর আমার আয়াতসমূহের প্রতি তারা ছিল বিশ্বাসী।” আর এ ধৈর্যই হলো আল্লাহর মহব্বত ও সাহায্য
লাভের পথ। যেমন এরশাদ হয়েছে :“ আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন।”
১০-
পরিবারের লোকদের প্রতি লক্ষ্য রাখা ও সান্ত্বনা দেয়া
রাসূলুল্লাহ
ৎ তাঁর পরিবারের সদস্যদের মানসিক অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির উল্টো পথবর্তী না হলে তাদের
ইচ্ছা পূরণে তিনি এগিয়ে আসতেন। কোন বিষয়ে তাদের ইচ্ছা পূরণ সম্ভব না হলে তাদেরকে
সান্ত্বনা দিতেন। হজ্ব্ েএর একটি বিমূর্ত
উদাহরণ হলো রাসূলুল্লাহ ৎ হযরত আয়েশাকে একদা কাঁদতে দেখলেন; কারণ তিনি ঋতুবতী হয়ে
যাওয়ার কারণে ওমরা আদায় থেকে বঞ্চিত
হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ ৎ তাঁকে
সান্ত্বনা দিলেন, বললেন এতে তোমার কোন ক্ষতি নেই , কেননা তুমি তো আদমের মেয়েদেরই একজন। আল্লাহ তোমার জন্য ঠিক একই নিয়ম নির্ধারণ
করেছেন যা করেছেন তাদের জন্য। হজ্ব চালিয়ে
যাও আল্লাহ হয়তো ওটারও সুযোগ করে দিবেন।
হযরত আয়েশা যখন বললেন, য়্যা রাসূলুল্লাহ ! আমার সঙ্গিনীরা একটি হজ্ব ও একটি
ওমরা নিয়ে ফিরে যাবে আর আমি শুধুই হজ্ব
নিয়ে ! রাসূলুল্লাহ ৎ আব্দুর রহমান ইবনে
আবুবকর (রা) কে নির্দেশ দিলেন তানঈমে নিয়ে যেতে, অতঃপর তিনি সেখান থেকে ওমরার
উদ্দেশে তালবিয়া পড়লেন। অন্য এক বর্ণনা
মতে রাসূলুল্লাহ ৎ হযরত আয়েশাকে বললেন :
“তোমার তোয়াফ, হজ্ব ও ওমরা, উভয়টার জন্যই যথেষ্ট। হযরত আয়েশা নিজেকে রাজি
করাতে পারলেন না। রাসূলুল্লাহ ৎ হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবুবকর (রা) কে বললেন হযরত
আয়েশাকে নিয়ে তানঈমে যেতে। আর তিনি সেখান থেকে হজ্বের পর ওমরা করলেন।”
আজকের দিনে, স্ত্রীদের-স্বজনদের বিষয়ে,
রাসূলৎ এর এ-আদর্শের অনুসরণ করছে এমন
মানুষ খুঁজে পাওয়াই কঠিন; সাম্প্রতিককালের অধিকাংশ মানুষ বরং দুই
প্রান্তিকতার একটিতে স্থির হয়ে বসে গেছে
এক.
যারা স্ত্রী সন্তানের কামনা-বাসনা পাইয়ে দেয়াই নিজেদের জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে সাব্যস্ত করে
নিয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি, পছন্দ অপছন্দ,
যাদের প্রেরণার জগৎ থেকে বিদায় নিয়েছে অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে।
দুই.
এর বিপরীতে অন্য আরেক দল রয়েছে যারা স্ত্রী সন্তানের সাথে রূঢ় ও কঠিন আচরণে অভ্যস্ত। বিষন্ন
চেহারা, কুঞ্চিত-ভ্রƒ, রক্তচক্ষু প্রদর্শন যাদের অভ্যাস। দেওয়া-নেয়া, স্ত্রী সন্তানের অভিযোগ শোনা,
তাদের সমস্যার সমাধান খোঁজে বের করা, সান্ত্বনা দেয়া, ইচ্ছার মূল্যায়ন ইত্যাদি যাদের
কাছে একাবারেই অপরিচিত। পরিজনদের সাথে যাদের সম্পর্কের ধরন হলো কেবলই রূঢ় ও নিষ্ঠুর আদেশ-নিষেধ, দ্রুত কর্ম
সম্পাদনের দাবি, অপেক্ষা অথবা ওজর আপত্তির প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনেই যাদের রয়েছে পরম তৃপ্তি।
১১-
স্বজনদের সাথে কোমল আচরণ
হজ্বে
রাসূলুল্লাহ ৎ তাঁর পরিবারের সাথে ছিলেন কোমল, বিনম্র , সহাস্য ও মিষ্টভাষী। আদর-স্নেহে তাদের ভরে রাখতেন সদাসর্বদা। তাদের
সাথে নরমভাবে আচরণ করতেন। স্বজনদের, ছেলে সন্তানদের, সাথে সহাস্য আচরণ ও রসিকতাও
করতেন। রাসূলূল্লাহ ৎ হজ্বের নিয়ত করলেন এবং হযরত আয়েশা ওমরার, এ অবস্থার বর্ণনা
দিতে গিয়ে হযরত জাবের (রা) বলেন : ‘ রাসূলুল্লাহ ৎ বিনম্র মানুষ ছিলেন, হযরত আয়েশা
কোন কিছুর আগ্রহ ব্যক্ত করলে তিনি তার ইচ্ছা পূরণে সচেষ্ট হতেন।”
স্বজনদের সাথে কোমল আচরণের উদাহরণ অনেক,
তন্মধ্যে :
তিনি তাঁর আত্মীয়া যাবাআ’কে বললেন,‘ - তোমার
হজ্ব করতে বাধা কীসের?
হযরত
আয়েশা ঋতুবতী হয়ে কান্না শুরু করে দিলে তিনি তার পাশে গিয়ে বললেন, ‘ এই! তোমার কি
হলো ?’
হযরত ইবনে আব্বাসের বর্ণনাও এ-পর্যায়ে পড়ে।
তিনি বলেন : আমরা বনি আব্দুল মুত্তালেবের বাচ্চারা উটের পিঠে চড়ে মুজদালিফা থেকে
এলাম। তিনি আমাদের উরুতে মৃদু আঘাত করতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, প্রিয় বাচ্চারা
তোমরা সূর্যোদয়ের পূর্বে কঙ্কর মেরো না’ অন্য এক বর্ণনায় এসেছে ‘আমার
ভ্রাতুষ্পুত্ররা, হে হাশিমের সন্তানরা : মানুষের ভিড়ের আগেই দ্রুত যাও, আর তোমাদের
কেউ যেন সূর্যোদয়ের আগে আকাবায় কঙ্কর না মারে।”
স্বজনদের সাথে রাসূলের এই কোমল ও দয়ার্দ্র
আচরণের উদাহরণ বর্তমান যুগের হজ্ব পালনকারীদের মধ্যে কি আদৌ দেখা যায়?Ñযায় না। এর
উল্টো, বরং, অনেককেই দেখা যায় হজ্বে তাদের স্বজনদেরকে অবজ্ঞা-অবহেলা করতে। কঠোরতা,
দুর্ব্যবহার ও রূঢ় আচরণের মাধ্যমে স্বজনদের অন্তরাত্মা বিষিয়ে তুলতে।
এরূপ যারা করে, ভুলেও তাদের অনুসরণ করতে যাবেন না। কেননা এ ধরনের
আচরণ হিংসার জন্ম দেয়, উদ্রেক করে ঘৃণার, বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে হৃদয়ে হৃদয়ে, বরং
হজ্বের সিদ্ধতার বিপক্ষেও যেতে পারে। পাপ মুছে যাওয়া ও আল্লাহর মাগফিরাতের পথে
বাধাও হয়ে দাঁড়াতে পারে এ ধরনের আচরণ।
১২-
স্বজনদের প্রতি এহসান
পরিবারের
সদস্যদের প্রতি রাসূলুল্লাহ ৎ এর এহসান বিচিত্র ধারায় প্রকাশ পেয়েছে। ভেবে দেখলে
মনে হবে তাদের সাথে রাসূলুল্লাহর সকল আচরণ ছিল ইহসান ও মহানুভবতাশ্রিত। স্বজনদের
মাঝে রাসূলুল্লা ৎ কে যেদিক থেকেই দেখা যাবে সেদিকেই উজ্জ্বল হয়ে ধরা পড়বে তাঁর
দান, অনুগ্রহ , উদারতা। এর প্রমাণ বহু, তন্মধ্যে কয়েকটি হলো নিুরূপ:
পরিবারের সকল সদস্যই তাঁর ৎ সাথে হজ্ব করুক
এ-আগ্রহও এ পর্যায়েরই একটি প্রমাণ। এমনকী
তাদের মধ্যে কেউ যেতে মনস্থির না করলেও রাসূলুল্লাহ ৎ বুঝিয়ে প্রস্তুত করেছেন।
যাবাআর (রা) কাহিনি এরই দলিল বহন করছে, রাসূলূল্লাহ ৎ তার ওখানে গেলেন এবং বললেন:
“হজ্ব করতে কি ইচ্ছা করেছ ? তিনি বললেন : আমিতো নিজেকে ব্যথাগ্রস্ত পাচ্ছি।
রাসূলুল্লাহ ৎ তাকে বললেন : হজ্ব করো এবং
শর্ত করে বলো :“ হে আল্লাহ ! যেখানে তুমি
আমাকে ঠেকিয়ে দিবে সেখানেই হবে আমার হালাল হওয়ার জায়গা”।
হজে রাসূলুল্লাহ ৎ তাঁর সকল স্ত্রীদের (রা)
সঙ্গে নিয়ে আসেন। এ-বিষয়টি স্ব-পরিবারের প্রতি এহসানের অতি উজ্জ্বল উদাহরণ। কেননা তাঁদের কাউকে না নিয়ে আসলেও পারতেন অথবা
লটারি দিয়ে যার নাম ওঠে কেবল তাকেই নিয়ে
আসতে পারতেন, কিন্তু এরূপ না করে সবাইকে সঙ্গে নিয়েই তিনি বের হলেন।
চাচাতো ভাই ফযল ইবনে আব্বাসকে (রা)
সহ-আরোহী করে নিয়ে মুযদালিফা থেকে মিনায় যাওয়া একই পর্যায়ে পড়ে।
বলার আগেই স্ত্রী গণের পক্ষ থেকে কোরবানি
করা, একই ধারাবাহিকতার ঘটনা। তিনি ৎ তাঁদের পক্ষ থেকে গরু কোরবানি করেছিলেন।
মানবিক মহানুভবতা ও পূর্ণতার এ এক মহান দিক। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ৎ
বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার পরিবারের কাছে উত্তম, আর আমি আমার
পরিবারের কাছে উত্তম।” এহসানের
আকার-প্রকারের কোন শেষ নেই , তবে এর সর্বোত্তমটি হলো এমন বিষয়ে এহসান করা যা
তাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির স্পর্শে নিয়ে যায়। এজন্যই মানুষদেরকে ব্যাপক ও
সাধারণভাবে আহ্বানের নির্দেশের পাশাপাশি স্বজনদেরকে ইসলামের দিকে
আহ্বান করতে বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তা’লা। তিনি
বলেছেন :“ সতর্ক করো তোমার নিকট আত্মীয়দেরকে,” তাই, ধর্মীয় ও পার্থিব উভয় প্রকার এহসানের
দাবিদার হলো আপনার আত্মীয় ও স্বজনেরা। এ
ক্ষেত্রে রাসূলের সুন্নত বাস্তবায়ন করুন উত্তম প্রতিদান পাবেন, এর বরকত, আজ হোক কাল
হোক , নিশ্চয়ই ধরা পড়বে আপনার নিজের
চোখেই।
১৩ -
স্বজনদের অধিকার রক্ষা
রাসূলুল্লাহ
ৎ তাঁর পরিবারের সদস্যদের অধিকার রক্ষা করেছেন নিখুঁতভাবে। হযরত ইবনে আব্বাসের (রা) এক বর্ণনায় এ-বিষয়টি
মূর্ত হয়ে ধরা পড়ে। তিনি বলেন :“ রাসূলুল্লাহ ৎ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেন। তিনি
হাজরে আসওয়াদ বক্রাগ্র লাঠি দিয়ে স্পর্শ করতে থাকেন। শেষে তিনি পানি পানের জায়গায়
আসেন। তার চাচাতো ভায়েরা পানি ওঠাচ্ছিলেন। তিনি বললেন আমাকে দাও ! বালতি উঠানো
হলো। রাসূলুল্লাহর পান করলেন, ও বললেন :
মানুষ এ-পানি উঠানোকে হজ্বের অংশ হিসেবে মনে করবে ও তোমাদের কাছ থেকে এ বিষয়টি
কেড়ে নিবে এ-ধরনের আশংকা না হলে আমি তোমাদের সাথে পানি ওঠাতাম।” তাই হজ্বে আপনার স্বজনদের কোন অধিকার বিষয়ে
আশঙ্কা অনুভব করলে আপনি প্রথমে তাদেরকে
তাদের দাবি উঠিয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ করুন ও বিবাদে লিপ্ত হওয়া থেকে বারণ করুন শুধুই
প্রতিদানের আশায়, আর এটাই উত্তম। রাজি না
হলে তাদের অধিকার যাতে রক্ষিত হয় এবং অন্যরা যাতে তা আত্মসাৎ করতে না পারে সে
ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
হজ্বে পরিবার পরিজনের মাঝে রাসূলুল্লাহর
অবস্থা ও তাদের সাথে আচরণধারার এ ছিল কিছু খণ্ড চিত্র। আপনার পরিবার আপনার বড়ো
মূলধন, এ-কথায় আপনি বিশ্বাস করলে হজ্বে তাদের সাথে আপনার অবস্থা ও আচরণবিধিকে
রাসূলুল্লাহ ৎ এর অবস্থা ও আচরণের সাথে তুলনা করে দেখুন তবেই আঁচ করতে পারবেন পার্থক্যটা কোথায়। রাসূলুল্লাহ
ৎ এর আদর্শ অনুসরণের ইচ্ছা আপনাকে উদ্বুদ্ধ করুক আপনার দায়দায়িত্বের গুরুত্ব
অনুধাবন করতে। অতঃপর আপনি, তাদের পরকাল ও
প্রতিপালকের দণ্ড থেকে রক্ষা করবে, এমন বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিন। তাদের পার্থিব
স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য যতটুকু করছেন তার
চেয়েও শতগুণে বেশি করুন তাদের পরকালীন সুখের জন্য। তাদের হজ্ব , ইবাদত-বন্দেগি, চারিত্রিক উৎকর্ষ
যাতে চূড়ান্ত পর্যায়ের সুষমা পায়,
সুন্দরতমরূপে আদায় হয় তার জন্য যা কিছু
শেখাতে হয় সবকিছুই তাদের ইখলাসের সাথে শেখান।
এসবই করবেন উত্তম আচরণের আদলে, যেভাবে আচরণ করেন আপনার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর
সাথে তার থেকেও বহুগুনে উত্তমভাবে; কারণ তাদের অধিকার আপনার ওপর প্রচুর। আপনার দায়িত্বও তাদের প্রতি বিশাল। তাই সিরিয়াস
হন। আল্লাহর সামনে লুটিয়ে পড়–ন, অবনত হন; যাতে তিনি আপনাকে সাহায্য করেন ও সোজা
পথে পরিচালিত হতে তাওফিক দেন।
---------------------------
- সূরা আল-বাকারা : ৭
- সূরা আল-আহযাব :২১
- সূরা আল ইমরান: ৩১
- সূরাতুন্নিসা : ৮০
- সূরাতুন্নিসা:৬৯
- আল -বাকারা : ১৯৬
- এ-বিষয়ে একটি হাসান হাদীস রয়েছে , দ্রঃ ইবনে
খুযাইমাহ , হাদীস নং ২৬২৮
- সহীহ মুসলীম , হাদীস নং ১২১৮
- সহীহ বুখারী, ৫৯১৫, সহীহ মুসলিম, ১১৮৪
- ইবনে মাজাহ :২৮৯০
- আবু দাউদ, হাদীস নং ১৯০৯ , মুহাদ্দীস আলবানী
এহাদীসটি শুদ্ধ বলে গণ্য করেছেন।
-আবুদাউদ :১৯১৯
- তিরমিযি :৮৬৯
- তিরমিযি, হাদীস নং ৩৫৮৫, মুহাদ্দীস আলবানী এ
হাদীসটিকে হাসান বলেছেন, দ্রঃ সহীহ
সুনানুত তিরমিযি, হাদীস নং ২৮৩৭
- বুখারী , হাদীস নং ১৩৯৫
- সূরা হাজ্ব ঃ ৩২
- সূরা হাজ্ব ঃ ৩০
- সূরা আল-বাকারাহ :২২৯
- সূরা নিসা : ১৪
- তিরমিযি , হাদীস নং ৮৩০ , মুহাদ্দীস আলবানী
এহাদীসটি বিশুদ্ধ বলেছেন, দ্রঃ সহীহু সুনানুততিরমিযি , হাদীস নং ৬৬৪
-বুখারী , হাদীস নং ১৫৪
- সহীহ মুসলীম : হাদীস নং ১১৮৯
- বুখারী, হাদীস নং ৫৯২৩
-সূরা হাজ্ব : ৩৬
- সহীহ মুসলীম, হাদীস নং ১২৪৩
- ইবনে কাছির: আসসিরাহ আন্নাবুবিয়াহ : ২২৮/৪
- ইবনে খুজাইমাহ : হাদীস নং ২৬০৯
- সহীহ মুসলীম : হাদীস নং ১৩২৪
- সহীহ ইবনে খুযাইমাহ , হাদীস নং ২৮০৬
-বুখারী : হাদীস নং ৫৯১৫
- মুসনাদে আহমদ : হাদীস নং ২৯৫০
-সহীহ মুসলীম : ১২৪৭
- সহীহ মুসলীম : ১২৫৯
-বুখারী, হাদীস নং ১৬১৫
- সহীহ মুসলীম : ১২৭১
- মুসনাদে আহমদ , হাদীস নং ১৩১
- বায়হাক্কি : আস্সুনানুল কুবরা : ৫/৭৪ এর সনদটি বিশুদ্ধ
- বায়হাক্কি : আস্সুনানুলকুবরা ৫/৭৪
- আবু দাউদ, হাদীস নং ১৮৭৬ মুহাদ্দীস আলবানী
এহাদীসটি হাসান বলেছেন, দ্রঃ সহীহু সুনানিআবি দাউদ , হাদীস নং ১৬৫২
- সূরা আল-বাকারা : ১২৫
-সূরা আল-বাকারাহ : ১৫৮
-সহীহ মুসলীম , হাদীস নং ১২১৮
-সূরা আল-বাকারাহ :১২৫
- তিরমিযি, হাদীস নং ৮৫৬
- সূরা আল-বাকারাহ :১৯৮
- সহীহ মুসলীম , হাদীস নং ১২১৮
-ইবনে খুযাইমাহ, হদীস নং ২৯৩৪
- আবুদাউদ, হাদীস নং ১৭৬৫
- তিরমিযি, হাদীস নং ৭৭৩
- বুখারী, হাদীস নং ১৭৭৩ , মুসলীম: হাদীস নং
১৩৪৯
- বুখারী, হাদীস নং ১৮১৯
- সূরা আল-বাকারাহ : ১৯৭
- ইবনুল কাইয়েম : আলজাওয়াব আল কাফী :৯৮
- সূরাতুল ইসরা :৮১
-সূরা সাবা: ৪৯
- বুখারী, হাদীস নং ১৬০১
- সূরা তাওবাহ :২৮
- বুখারী, হাদীস নং ৩৬৯
- বায়হাক্কী : আস্সুনানুল কোবরা, হাদীস নং
৫/১২৫
- সহীহ মুসলীম : হাদীস নং ১২১৮
- ইবনু মাযাহ : হাদীস নং ৩০১১
- সহীহ মুসলীম :১৬৬
- সহীহ মুসলীম : ১২৫২
- সহীহ মুসলীম :১১৮৫
- বুখারী :১৬৬৫
- বায়হাক্কী : আস্সুনানুলকবরা : ৫/১২৫
- বুখারী :১৬৮৪
- আবুদাউদ :১৯৮৭
- বুখারী : ১৫৯০
- যাদুল মায়াদ : ২/১৯৪-১৯৫
- ইবনে হাজার : ফাতহুলবারী, ৩/৫৬৫
- বুখারী :১৬২২
- বুখারী :৭২৩
- ইবনু খুযাইমাহ :২৭৬৪
- আল-বাকারাহ :১৫৮
- বুখারী : ১৬৪৩
-
আবুদাউদে ইবনুল কাইয়েমের হাশিয়া : ৫/১৪৬
-আবুদাউদ :৪০৩১
- হাকেম এহাদীসটি মুস্তাদরাকে উল্লেখ করেছেন :
৩/ ১৯ বুখারীতে হযরত ইবনে মাসউদ থেকে অনুরৃপ একটি হাদীস রয়েছে : হাদীস নং ৬১৬৯
- ইবনে হাজার : ফাতহুলবারী , ১১/৯৮
- তিরমিযি :২৯৬৯
- দ্রঃ মুবারকপুরী , তুহফাতুল আহওয়াযী : ৯/২২০
- ইবনু হিব্বান: ৮৭০
- আবু দাউদ :১৮৯২
- দ্রঃ সহীহ মুসলীম : ১২১৮
- দ্রঃ বুখারী : ১৭৫১
- যাদুল মায়াদ : ২/২৮৫
- আন্নাসায়ী : ২৯৬১
- সূরা আল-বাকারা :১৯৯-২০৩
- সূরা আলহাজ্ব :২৮
- তিরমিযি : ৯০২
- আবুদাউদ : ১৮৯২
- বুখারী :১৫৩৪
- সহীহ মুসলীম :১২১১
- বুখারী :১৭৭২
- বুখারী :৭২৮৮
- উদাহরণস্বরূপ দেখুন বুখারী : ১৭৫১, মুসলীম :১২১৮
- বায়হাক্কী : আস্সুনুলকুবরা : ৫/৭৪
- বুখারী : ১৭৫১, ১৭৫৩
-নাসায়ী :৩০২৪ , আলবানী এহাদীসটিকে বিশুদ্ধ
বলেছেন, দ্রঃ সহীহু সুনানিননাসায়ী : ২৮২৭
- মুসনাদে আহমদ : ১৮১৬
- বুখারী :১৬৭১
- সূরা আল-বাকারাহ : ১৯৭
- সূরা আল-ইমরান : ১৩৩
-তিরমিযি : ৮৩০
- বুখারী :১৫৩৯
- বুখারী : ১৫৪৫,১৬৯৭
- বুখারী :১৫৪৪
- বুখারী : ১৬১৫
- দ্রঃ বুখারী :৬১৬
- দ্রঃ বুখারী : ১৬০৯
- দ্রঃ সহীহ মুসলীম : ১২১৮,১২৬১
- দ্রঃ বুখারী :১৭৫১
- দ্রঃ বুখারী : ১৬৮০
- দ্রঃ বুখারী : ১৭১৮
- দ্রঃ বুখারী : ১৬৮৮
- দ্রঃ ইবনে মাজাহ :৩০৭৪
- দ্রঃ সহীহ ইবনে খুযায়মাহ :২৬০৯ এহাদীসের সনদ
বিশুদ্ধ
- দ্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ :৩০২৯
- দ্রঃ মুসনাদে আহমদ : ২৭২৯০
- দ্রঃ বুখারী :১৬০৮
- দ্রঃ বুখারী :১৭১৫
- সহীহ মুসলীম :২৬৯৯
- মুসনাদে আহমদ: ১৯৭৮৬
- বুখারী :৬৪৬৩
- দ্রঃ সহীহ মুসলীম :১২১৮
- দ্রঃ বুখারী :১৬৫৮
- দ্রঃ বুখারী :১৬৭৩
- দ্রঃ বুখারী :১৬৬৬
- দ্রঃ বুখারী :১৬০৭
- দ্রঃ সহীহ মুসলীম :১৩১৩
- সহীহ মুসলীম :১২৯৮
- বুখারী : ৫০৬৩
- বায়হাক্কী , শুয়াবুল ইমান: ৩৮৮৫
- মুসনাদে আহমদ:১৭৭৭৩
- বুখারী :৬৪৬০
- সহীহ মুসলীম:১০৫৫
- সহীহ মুসলীম :২৯৭৮
- সহীহ মুসলীম :২৯৭০
-বুখারী :৫৪৩৮
- সহীহ ইবনে খুযাইমাহ :২৮৩১
- মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ :৩/৪৪২
- দ্রঃ ইবনে মাযাহ : ২৮৯০
- যাদুল মাআদ:২/১৬০
- আবু দাউদ: ৪১৪৪
- দ্রঃ বুখারী : ১৫৪৪
- বুখারী : ১৬৩৬
-মুসনাদে আহমদ :১৮১৪
- দ্রঃ বুখারী : ১৭১৮
- সহীহ মুসলীম :১৩১৭
- দ্রঃ সহীহ মুসলীম : ৩১৮০
- আবুদাউদ :১৬৩৩
- সহীহ মুসলীম : ১৯৭৫
- সহীহ মুসলীম : ১৪৭৮
- সহীহ মুসলীম :৫৩৭(এ হাদীসটির বর্ণনাকারী হলেন
মাওয়াবিয়া ইবনে হাকাম আস্সুলামী )
- বুখারী :১৫৫১
- আবুদাউদ: ১৯০৫
- দ্রঃ সহীহ মুসলীম :১১৮৭,১২১৮,১২৭৩
- দ্রঃ সহীহ মুসলীম :১২৭৪
- ইবনে মাজাহ :৩০৩৫
- দ্রঃ সহীহ মুসলীম :১২৯৭
- দ্রঃ ইবনে মাজাহ :৩০২৪
- বুখারী :১২১
- ইবনে মাজাহ :৩০২৪ আলবানী এহাদীসটিকে বিশুদ্ধ
বলেছেন
- দ্রঃ বুখারী :১৭৪১
- দ্রঃ সহীহ মুসলীম :১২১৮
- দ্রঃ ইবনে কাছির, সিরা নাবুবিয়াহ :৪/৩৪২
- দ্রঃ আবুদাউদ : ১৯৫৬
- দ্রঃ তিরমিযি :৮৮৩ আলবানী এ হাদীসটি বিশুদ্ধ
বলেছেন।
- ইবনে মাজাহ :৩০২৫
- সহীহ মুসলীম :১২০৭
- বুখারী :৪৬৪
- বুখারী : ১৬৭৯
- নাসায়ী : ৩০৫৯
- আবু দাউদ:১৯৪০
- আবুদাউদ:১৮৮৮
-তিরমিযি : ৩৫৮৫
- সহীহ ইবনে খুযাইমাহ :২৭২৯
- ইবনে মাজাহ :২৭৫৬
- তিরমিযি: ৮২৭
- মুসান্নাফে আব্দুররাজ্জাক : ৮৮৩০
-ইবনে মাজাহ :৩০২৪
-আলমুসতাদরাক লিল হাকেম :১/৬৩২
- দ্রঃ সহীহ মুসলীম :১২১৮ , তিরমিযি :৮৮৫
-তিরমিযি :৬১৬
- মুসনাদে আহমদ:১৮৯৮৯
-বুখারী : ১২৬৭
- সহীহ মুসলীম : ১৩৩৫
- বুখারী :৮৩
- সহীহ মুসলীম :১২৭৩
- বুখারী : ১৭৩৬
- বুখারী :৬২২৮
- সহীহ মুসলীম :১২০৭
- সহীহ মুসলীম:১২১৮
- বুখারী :১৭৩৬
- বুখারী :১৬৩৪
- তিরমিযি :৯৫৫
- মুসনাদে আহমদ :১৮১২
- রাসুলুল্লাহর (স) উষ্ট্রীর নাম ছিলো কাসওয়া
(অনুবাদক)
-সহীহ মুসলীম :১২১৮
- সহীহ মুসলীম ;১২৬৪
- মুসনাদে আহমদ:২৮৪২
-ইবনে মাজাহ: ৩০৩৫
- সহীহ মুসলীম :১২১৮
-বুখারী :৩৮৩২
- তিরমিযি:৮৯১
- মুসনাদে আহমদ:১৪১১১৬
- সহীহ মুসলীম :১১৯৬
- বুখারী :১৫১৩
- তিরমিযি :৮৮৯
-সহীহ মুসলীম :১৩৩৬
- দ্রঃ বুখারী :১৭৩৬
- দ্রঃ সহীহ মুসলীম :১২১৮
- দ্রঃ সহীহ মুসলীম :১২১৮
-দ্রঃ তিরমিযি: ৮৮৯
- দ্রঃ তিরমিযি :৮৯১
- দ্রঃ বুখারী :৮৩
-দ্রঃ সহীহ মুসলীম :১২৭৩
- দ্রঃ সহীহ মুসলীম :১৩৩৬
- সূরা আরাফ: ৩৩
- বুখারী :১২৯১
- সূরা ইব্রাহীম :৫
- সূরা আলগাশিয়াহ :২১
- সুরাতুল আলা : ৯-১০
- সূরা আযযারিয়াত :৫৫
- দ্রঃ
বুখারী :৭০
- দ্রঃ তিরমিযি :২৬৭৬
- বুখারী :৭২৮৩
- সহীহ মুসলীম : ১২১৮
- বুখারী :১৬৭১
- বুখারী :১৭৪১,৪৪০৩, ৪৪০৬
- মুসনাদে আহমদ :২০৬৯৫
- বুখারী : ১৭৪১
- আবু দাউদ :২০১৫
- সহীহ মুসলীম :১২১৮
- বুখারী : ৬৭
- মুসনাদে আহমদ :২০৬৯৫
- সহীহ ইবনে খুযাইমাহ :২৯৬০
- বুখারী : ১৫২১
-ইবনে মাযাহ :৩০২৪
- তিরমিযি :৮৮৫
- ইবনুল কাইয়েম : যাদুল মায়াদ: ২/২৫৫-২৫৬
- মুসনাদে আহমদ: ৬১৭৩
- তিরমিযি :৬১৬
- ইবনে মাজাহ :২৬৬৯
-বুখারী :১৮১৯
- বুখারী : ১৬৭১
- আলমুসতাদরাক লিল হাকেম:১/৬৫৮
- ইবনে মাজাহ :৩০২৯
-তিবরানী : আলম’ুজামুল কাবীর :৪৮৪
- সহীহ মুসলীম :১২১৮
- তিরমিযি :৩০৮৭
- ইবনে মাজাহ :৩৯৩৬
- মুসনাদে আহমদ :২৩৫৪৪
- সহীহ মুসলীম :১৩৪৮
- সূরা নিসা:৬৫
- ইবনে হাজার : ফাতহুল বারী :১৩/২৮৯
- ইবনুল কাইয়েম : মাদারিযুস্সালিন ২/ ৩৩২
- সহীহ মুসলীম :১২১৮
-বুখারী :১৫৯৫
- আবু দাউদ: ১৮৮৭
- ইবনে মাজাহ : ২৯৫২
- ইবনে মাজাহ :২৯৫২
- তিবরানী : আলমু’জামুল আওসাত :৫৮৪৩
- দ্রঃ বুখারী :১৬০৬
- তিরমিযি :৮২৪
- সহীহ মুসলীম : ১২৩৩
- সূরা আলআহযাব :২১
- মুসনাদে আহমদ :২২৭৭
- সহীহ মুসলীম :১২৯৭
- সহীহ মুসলীম :১২১৮
- ইবনে মাজাহ :৩০৫৭
- ইবনে মাজাহ :৩০২৯
- মুসনাদে আহমদ :২১৮৬১
- সহীহ মুসলীম : ১২১৬
- সহীহ মুসলীম: ১২৪০
- বুখারী :১৭৮৫
- বুখারী : ৭৩৬৭
- বুখারী :১৫৬৪
- দ্রঃ বুখারী : ৭৩৬৭
- সহীহ মুসলীম :১৭১৮
- বুখারী :৭২৮০
- সূরা আল ইমরান :১০৩
- সূরা মুমিনুন :৫২
- সূরা রূম: ৩১ -৩২
- বুখারী : ২৪৪৬
- তিরমিযি :২১৬৬
- মুসনাদে আহমদ :২৩৫৩৬
- ইবনে মাজাহ :৩০৫৬
-সহীহ মুসলীম :২৮১২
- ইবনে মাজাহ : ৩০৫৭
- বুখারী :১২১
- বুখারী : ৬৭
- মুসনাদে আহমদ :২০৬৯৫
- আবু দাউদ :২০১৫
- ইবনে আব্দুল ওযাহহাব : মুখতাসারুসসিরাহ : ৫৭২
- সূরা আল-বাকারাহ :৪৪
- সূরা রাফফ :২-৩
- সহীহ মুসলীম :১২১৮
- দ্রঃ বুখারী : ১৭৫১
- ইবনে মাজাহ :২৮৯০
- তিরমিযি : ৮৮৬
- দ্রঃ বুখারী : ১৭২৯
-সহীহ মুসলীম :১২৯৯
- সহীহ মুসলীম :১২১৮
- গাযালী , এহয়ায়ু উলুমিদ্দিন : ২/৩০৬
- সূরা আলমায়িদাহ : ৯৯
- সূরা আলকাসাস :৫৬
- সূরা আল-আরাফ :১৯৯
- সূরা আল-আরাফ :১৫৭
- আবু দাউদ :১৮১১
- বুখারী :৭৩৬৭
- বুখারী : ১৬২০
- সহীহ মুসলীম : ১২১৮
- বুখারী : ১৮৫৫
- বুখারী :২১৭২
-সহীহ মুসলীম :১০১৭
- সহীহ মুসলীম :২৫৮৮
- সূরা আশশুয়ারা :২১৫
- শারহুস্সুন্নাহ লিলবাগবি : ৩৬৮৩
-বুখারী: ৩৪৪৫
- ইবনে মাজাহ :২৮৯০
- মুসনাদে আহমাদ:১৮১৪
-বুখারী :১৫৪৪
- সহীহ মুসলীম : ১২৭৪
- গাযালী , এহয়াউ উলুমদ্দিন : ৩/৩৪২
- সূরা আলআম্বিয়া: ১০৭
- সহীহ মুসলীম : ২৫৯৯
- সহীহ মুসলীম : ২৩৫৫
- সূরা তওবা: ১২৮
- তিরমিজি :১৫৯৭
- বুখারী :৬২৮
- সহীহ মুসলীম : ২৩১৬
- শারহুননববী লি-মুসলীম :১৫/৭৬
- দ্রঃ বুখারী :৮৩
- বুখারী :১৭৪৫
- দ্রঃ তিরমিযি : ৯৬৮
- সহীহ মুসলীম :১৩৩৫
- সহীহ মুসলীম :২২১৭
- বুখারী :৪৬৯৯
- বুখারী :৫৯৯৭
- বুখারী :৭৩৭৬
-বুখারী :১৫৮৪
সূরা ফুসসিলাত :৩৪
- বুখারী :২৫৬৭
- বুখারী :৬
- সহীহ মুসলীম :২৩১২
- সহীহ মুসলিম : ১৬৭৯
- দ্রঃ বুখারী :১৫১৮ ,১৬৮০
- বুখারী :১৫৪৪
- সহীহ মুসলীম :১২১৮
- মুসনাদে আহমদ :১৬২০৭
- মুসনাদে আহমদ :১৫৯৭২
- দ্রঃ তিরমিি :৬১৬
- তিরমিযি : ৮৮৫
- তিরমিযি :২১৯
- সূরা আল বাকারাহ :১৯৫
- সূরা আররহমান :৬০
- সহীহ মুসলীম : ১০৫৩
- বুখারী :১১২২
- ইবনু কাইয়েম : মাদারিজুস্সালিকিন : ২/১৫৮
- বুখারী :১৮৬১
- দ্রঃ বুখারী : ১৫৪৪, ১৭৫১
- মুসনাদে আহমদ :১৯৪৩৫
- ইবনে মাজাহ :৪০৩২
- বুখারী : ৬০২৪
- আল-ইমরান: ১৫৯
- সহীহ মুসলীম :১২৭৪
- দ্রঃ আবুদাউদ:১৯০৫
- দ্রঃ সহীহ মুসলীম :১২১৮
- বুখারী :১৬৬০
- হাজ্জাতুল বিদা লি ইবনে হাযম: ১২৪
- বুখারী :১৬৫৬
- সহীহ মুসলীম : ১২১৮
- দ্রঃ বুখারী : ১৬৭৯
- মুসতাদরাক লিল হাকেম :১/৬৫০
- বুখারী : ১৬৭৯
- ইবনে হিব্বান :৪০১৫
- মুসনাদে আহমদ :১২০৮৭
- মুসনাদে আহমদ :১৯০
- দ্রঃ সহীহ বুখারী :৭২৩০
- সীরাতুননাবী : ইবনে কাসির :৪/৩৩৩
- বুখারী :১৮২৫
- সহীহ মুসলীম :১১৯৬
- আবু দাউদ :১৯৫১
- আবুদাউদ:১৯৫৭
- বুখারী : ১৭৩৪
- বুখারী :১৬৩৬
- তিরমিযি : ১৯৫৪
- তিরমিযি: ৮৮১
- বুখারী :১৬৩৬
- তিরমিযি : ৮৮৫
- বুখারী :১৭৭২
- দ্রঃ বুখারী : ১৭৭২
- বুখারী : ৩৫৬২
- বুখারী :৩৫৬০
- বুখারী :৭৩৬৭
- বুখারী :১৫১৩
- তিরমিযি :২১৯
- দ্রঃ সহীহ মুসলীম :১২৫৯
- দ্রঃ নাসায়ী :৩০২৪
- আবু দাউদ : ১৭৪২
- মুসলীম : ১০৭২
- সহীহ মুসলীম :২০৫
- বুখারী :৩৮৮৪
-মুসনাদে আহমদ : ২৬৫৯০
- সহীহ মুসলীম : ১২১১
- তিরমিযি :৮৯৩
- বুখারী :৪৩৯৮
- তিরমিযি : ৩৮৯৫
- বুখারী :২৫৫৩
- শুআরা : ২১৪
- বুখারী :১৭০৪
- আল ইমরান: ৯৭
- আবু দাউদ:১৭২২
- বুখারী : ১৬৭৮
- বুখারী : ৫০৮৯
- ইবনে মাজাহ :২৯৩৭
- ইবনে মাজাহ :২৮৮৩
- মুসনাদে আহমদ :২৮৬৮
- সহীহ মুসলীম :১৩৩৬
- সহীহ মুসলীম : ২৬৭৪
- সহীহ মুসলীম :১৮৯৩
- সহীহ মুসলীম :১৮৯৩
- ইবনে মাজাহ :৩০৭৪
- বুখারী :১৬৩৫
- বুখারী : ১৬৩৫
- বুখারী :১৬৩৭
-বুখারী :১৭৫৪
- তাহা :২৯-৩৪
- সূরা হুদ :৮০
- মুসনাদে আহমদ : ৫৬৪
- আবু দাউদ :১৮৩৩
- বুখারী :১৬১৯
- বুখারী :১৬২৬
-বুখারী : ১৬১৮
- আস্সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্কি : ৫/৮৪
- মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ : ১২৯৫১
- সহীহ মুসলীম : ১৪২
- বুখারী :৪৩৯৮
- নাসায়ী :৩০৩৪
- সূরা আসসিজদা :২৪
-সূরা আল ইমরান :১৪৬
- বুখারী :১৭৮৮
- সহীহ মুসলীম :১২১১
- সহীহ মুসলীম :১২১৩
- ইবনে মাজাহ : ২৯৩৬
- বুখারী : ১৫৬০
- মুসনাদে আহমদ :৩৫১৩
-বুখারী :৫০৮৯
- তিরিমিযি :৩৮৯৫
- সূরা আশ-শুয়ারা :২১৪
- বুখারী :১৬৩৬
No comments:
Post a Comment