এক: আযান ও ইকামতের অর্থ এবং
উভয়ের হুকুম:
১. আযানের
আভিধানিক অর্থ: কোন জিনিস সম্পর্কে ঘোষণা দেয়া, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَأَذَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦٓ ٣﴾
“আর
আল্লাহ ও তার রাসূলের পক্ষ থেকে আযান”। সূরা তাওবা: (৩) অর্থাৎ ঘোষণা।
অন্যত্র তিনি বলেন:
﴿ءَاذَنتُكُمۡ عَلَىٰ سَوَآءٖۖ ١٠٩﴾
“আর আমি
যথাযথভাবে তোমাদেরকে আযান দিয়ে দিয়েছি”। সূরা
আম্বিয়া: (১০৯) অর্থাৎ জানিয়ে দিয়েছি ফলে জ্ঞানের দিক দিয়ে আমরা সকলে সমান।[1]
শরিয়তের
পরিভাষায় আযান: “শরিয়ত কর্তৃক অনুমোদিত নির্দিষ্ট শব্দের মাধ্যমে সালাতের সময়
সম্পর্কে ঘোষণা প্রদান করা”।[2] আযানের নাম এ জন্য আযান হয়েছে, যেহেতু মুয়াজ্জিন সাহেব মানুষদেরকে সালাতের সময় জানিয়ে দেন ও তার
ঘোষণা প্রদান করেন। আযানের আরেক নাম হচ্ছে ‘নিদা’ অর্থাৎ আহ্বান, কারণ মুয়াজ্জিন সাহেব লোকদেরকে ডাকেন ও তাদেরকে সালাতের দিকে
আহ্বান করেন।[3] আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَإِذَا نَادَيۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ ٱتَّخَذُوهَا هُزُوٗا وَلَعِبٗاۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ قَوۡمٞ لَّا يَعۡقِلُونَ ٥٨﴾
“আর যখন তোমরা সালাতের দিকে ডাক, তখন তারা একে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করে।
তা এই কারণে যে, তারা এমন কওম, যারা বুঝে
না”। [সুরা মায়েদা: (৫৮)]
﴿إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَوٰةِ مِن يَوۡمِ ٱلۡجُمُعَةِ فَٱسۡعَوۡاْ إِلَىٰ ذِكۡرِ ٱللَّهِ﴾
“যখন
জুমুআর দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও”। [সূরা
জুমা: (৯)]
২.
ইকামতের আভিধানিক অর্থ: الإقامة শব্দটি أقام ক্রিয়া
এর মূল ধাতু বা মাসদার। আরবিতে إقامة
الشيء তখনই বলা হয়, যখন কোন কিছু স্থির
ও সোজা করা হয়।
শরিয়তের
পরিভাষায় ইকামত: “নির্দিষ্ট যিকরের মাধ্যমে সালাত আরম্ভ হওয়ার ঘোষণা দেয়া”।[4] অতএব আযান হচ্ছে সময়ের ঘোষণা দেয়া, আর ইকামত
হচ্ছে সালাত আরম্ভের ঘোষণা দেয়া। ইকামতকে দ্বিতীয় আযান বা দ্বিতীয় আহ্বানও বলা হয়।[5]
৩. পাঁচ
ওয়াক্ত ও জুমার সালাত আদায়ের জন্য আযান ও ইকামত দেয়া পুরুষদের উপর ফরযে কিফায়া, নারীদের
উপর নয়। আযান ও ইকামত উভয় ইসলামী শরিয়তের বিধান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَإِذَا نَادَيۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ ٱتَّخَذُوهَا هُزُوٗا وَلَعِبٗاۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ قَوۡمٞ لَّا يَعۡقِلُونَ ٥٨﴾
“আর যখন তোমরা সালাতের দিকে ডাক, তখন তারা একে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করে।
তা এই কারণে যে, তারা এমন কওম, যারা বুঝে
না”।
সুরা মায়েদা: (৫৮) অন্যত্র তিনি বলেন:
﴿إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَوٰةِ مِن يَوۡمِ ٱلۡجُمُعَةِ فَٱسۡعَوۡاْ إِلَىٰ ذِكۡرِ ٱللَّهِ ٩﴾
“হে
মুমিনগণ, যখন জুমুআর দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের
দিকে ধাবিত হও”। সূরা জুমা: (৯)
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«فإذا حضرت الصلاة فليؤذِّن لكم أحدكم وليؤمَّكم أكبركم».
“যখন
সালাতের সময় হয়, তখন তোমাদের একজন যেন আযান দেয় এবং তোমাদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তি
যেন তোমাদের ইমামতি করে”। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আযান ফরযে কিফায়া।
ইব্ন
তাইমিয়াহ রহ. বলেন: “মুতাওতির হাদিসে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের যুগে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জন্য আযান দেয়া হতো, এটা উম্মতের ইজমা এবং
তাদের আমলের পরম্পরা দ্বারা প্রমাণিত”।[6]
বিশুদ্ধ
অভিমত অনুযায়ী আযান দেয়া পুরুষদের জন্য ওয়াজিব: বাড়িতে বা সফরে, একাকী বা জমাতের
সাথে সালাত আদায়কারী, আদায় সালাত বা কাযা সালাত আদায়কারী, স্বাধীন বা গোলাম সবার
উপর আযান ওয়াজিব।[7]
দুই: আযানের ফযিলত:
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন:
﴿وَمَنۡ أَحۡسَنُ قَوۡلٗا مِّمَّن دَعَآ إِلَى ٱللَّهِ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ٣٣﴾
“আর
তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, অবশ্যই
আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত”। সূরা ফুসসিলাত: (৩৩)
আযান ও মুয়াজ্জিনের
ফযিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে, যেমন:
১. মুয়াবিয়া ইব্ন
আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«المؤذنون أطول الناس أعناقًا يوم القيامة».
“মুয়াজ্জিনগণ কিয়ামতের দিন সবচেয়ে উঁচু গর্দানের
অধিকারী হবে”।[8]
২. আযান শয়তানকে তাড়িয়ে
দেয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا نُودي للصلاة أدبر الشيطان له ضُراط حتى لا يسمع التأذينَ،فإذا قُضِيَ النداءُ أقبل حتى إذا ثُوِّب للصلاة أدبَرَ،حتى إذا قُضِيَ التَّثْويبُ أقبلَ حتى يَخطُرُ بين المرء ونفسه،يقول له: اذكر كذا واذكر كذا لما لم يكن يذكر من قبل،حتى يظلَّ الرجلُ لا يدري كم صلى».
“যখন সালাতের আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান বাতকর্ম করতে করতে পিছু হটতে থাকে, যেন সে আযান শুনতে না পায়। যখন আযান শেষ হয় নিকটবর্তী হয়, যখন ইকামত আরম্ভ হয় সে পিছু হটে, ইকামত শেষ হলে সে আগমন করে এবং ব্যক্তি ও তার অন্তরের
মাঝে বিভিন্ন কথা ও ভাবনার উদ্রেক করে, সে বলে: এটা
স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর, ইতিপূর্বে যা
কখনো তার মনে হয়নি। এক সময় এমন হয় যে, সে সালাতের
রাকাত সংখ্যা ভুলে যায়”।[9]
৩. মানুষ যদি
আযানের ফযিলত জানত, তাহলে তারা এর জন্য লটারি করত। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لو يعلمُ الناسُ ما في النداء والصف الأول ثم لم يجدوا إلا أن يستهموا عليه لاستهموا، ولو يعلمون ما في التهجير لاستبقوا إليه، ولو يعلمون ما في العتمة والصبح لأتوهما ولو حبوًا».
“মানুষেরা যদি আযান ও প্রথম কাতারের ফযিলত জানত, অতঃপর তারা লটারি ব্যতীত তার
সুযোগ না পেত, তাহলে অবশ্যই তারা লটারিতে অংশ গ্রহণ করত। যদি তারা সালাতে দ্রুত
যাওয়ার ফযিলত জানত, তাহলে তারা সে জন্যও প্রতিযোগিতা করত, যদি তারা এশা ও ফজর
সালাতের ফযিলত জানত, তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে অংশ গ্রহণ করত”।[10]
৪. যে কোন বস্তু মুয়াজ্জিনের
আওয়াজ শুনবে, সে তার সাক্ষ্য দিবে। আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু
আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্দুর রহমান ইব্ন আবু সাসা আনসারিকে বলেছেন:
«إني أراك تحب الغنم والبادية، فإذا كنت في غنمك أو باديتك فأذنت بالصلاة فارفع صوتك بالنداء؛ فإنه لا يسمعُ مدى صوت المؤذّن جنٌّ ولا إنسٌ، ولا شيء إلا شهد له يوم القيامة، قال أبو سعيد: سمعته من رسول الله r ».
“আমি লক্ষ্য করছি, তুমি বকরি ও মরুভূমি ভালবাস, যখন তুমি তোমার বকরির পালে অথবা
মরুভূমিতে থাক, তখন আযানের সময় উচ্চ স্বরে আযান দেবে, কারণ মুয়াজ্জিনের শব্দ জিন, মানুষ বা যে কোন বস্তুই শ্রবণ করুক, তারা কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আবু সায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি”।[11]
মরুভূমিতে থাক, তখন আযানের সময় উচ্চ স্বরে আযান দেবে, কারণ মুয়াজ্জিনের শব্দ জিন, মানুষ বা যে কোন বস্তুই শ্রবণ করুক, তারা কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আবু সায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি”।[11]
৫. মুয়াজ্জিনকে তার
আওয়াজ পরিমাণ ক্ষমা করা হয়, আর যারা তার সাথে সালাত আদায় করে, সে তাদের সাওয়াবও লাভ করে। বারা ইব্ন আযেব রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
«إن الله وملائكته يصلون على الصف المقدَّم، والمؤذنُ يغفرُ له بمدِّ صوته، ويصدقه من سمعه من رطبٍ ويابسٍ وله مثلُ أجر من صلى معه».
“নিশ্চয় আল্লাহ সামনের কাতারের উপর রহমত
প্রেরণ করেন ও ফেরেশতাগণ তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করেন। আর মুয়াজ্জিনকে
তার আওয়াজ পরিমাণ ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়, শুষ্ক ও তাজা
যে কোন বস্তু তার আওয়াজ শোনে, তারা তাকে সত্যারোপ করে। যারা তার সাথে
সালাত আদায় করে, তাদের সাওয়াবও তাকে প্রদান করা হয়”।[12]
[মুয়াজ্জিনকে
তার আওয়াজ পরিমাণ ক্ষমা প্রদর্শন করার অর্থ: “তার আওয়াজ যদি
সুদূর মরুভূমি পর্যন্ত পৌঁছে, তাহলে তার মাগফেরাতও মরুভূমি পর্যন্ত পৌঁছবে, এর কম হলে মাগফেরাতও অনুরূপ হবে। অথবা অর্থ: তার পাপ যদি
এ পরিমাণ হয় যে, তার স্থান থেকে আওয়াজের সর্ব শেষ সীমানা পর্যন্ত ভরে যায়, তবুও তার এসব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর কেউ বলেছেন: এ
সীমার মধ্যে-কৃত তার সকল পাপ ক্ষমা করা হবে”। আল্লামা
সিন্ধির ইব্ন মাজা গ্রন্থের ব্যাখ্যা থেকে নেয়া। —অনুবাদক]
৬. নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়াজ্জিনের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করেছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
«الإمام ضامنٌ والمؤذن مؤتمن، اللهم أرشد الأئمة واغفر للمؤذنين ».
“ইমাম জিম্মাদার[13]
আর মুয়াজ্জিন হচ্ছে আমানতদার[14]।
হে আল্লাহ তুমি ইমামদের সঠিক পথ দেখাও এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা কর”।[15]
৭. আযানের মাধ্যমে
পাপ মোচন হয় ও জান্নাতে প্রবেশ সহজ হয়। উকবা ইব্ন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«يعجب ربكم من راعي غنمٍ في رأس شظيَّة بجبل يؤذن بالصلاة ويصلي، فيقول الله U: انظروا إلى عبدي هذا يؤذنُ ويقيمُ يخاف مني، فقد غفرتُ لعبدي وأدخلته الجنة».
“তোমাদের রব বকরির সে রাখালকে দেখে আশ্চর্য
হন, যে পাহাড়ের পাদদেশে আযান দেয় ও সালাত আদায় করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমার এ বান্দার দিকে দেখ, সে আযান দেয় ও ইকামত দেয় এবং আমাকে ভয় করে। আমি আমার
বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম”।[16]
৮. ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: “বারো বছর যে ব্যক্তি আযান দিবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। প্রতি দিন তার আযানের
মোকাবেলায় ষাটটি নেকি এবং প্রত্যেক ইকামতের জন্য ত্রিশটি নেকি লিপিবদ্ধ করা হবে”।[17]
আযান ও ইকামতের পদ্ধতি:
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বেলাল সর্বদা যে আযান দিয়েছেন, তা হচ্ছে আব্দুল্লাহ ইব্ন জায়েদ থেকে বর্ণিত আযান[18]।
যার পদ্ধতি নিম্নরূপ:
«الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن محمدًا رسولُ الله، أشهد أن محمدًا رسولُ الله، حيَّ على الصلاة، حيَّ على الصلاة، حيَّ على الفلاح، حيَّ على الفلاح، الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله»،
এ হাদিসে বর্ণিত ইকামতের
নিয়ম হচ্ছে:
«الله أكبر، الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن محمدًا رسولُ الله، حيَّ على الصلاة، حيَّ على الفلاح، قد قامت الصلاةُ، قد قامت الصلاة، الله أكبر الله أكبر، لا إله إلا الله».
«الصلاةُ خيرٌ مِنَ النوم، الصلاةُ خيرٌ من النوم»؛
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “মুয়াজ্জিনের حيّ
على الفلاح বলার পর
সুন্নত হচ্ছে الصلاة خير
من النوم বলা।[20]
অতএব নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বেলালের আযানের বাক্য হল
পনেরটি, আর ইকামতের বাক্য হল এগারটি। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর অপর হাদিস দ্বারা এ অভিমতটি আরো শক্তিশালী হয়, যেমন তিনি বলেন:
«أُمِرَ بلال أن يشفع الأذان ويوتر الإقامة، إلا الإقامة»
“বেলালকে
নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আযানে জোড় বাক্য বলে, আর ইকামতে বলে বেজোড় বাক্য, তবে قد
قامت الصلاة،قد
قامت الصلاة،
ব্যতীত”।[21] অর্থাৎ আযানের বাক্যগুলো দুইবার দুইবার, অথবা চারবার
চারবার বলা, আর দুই বা চার উভয়ের ক্ষেত্রে জোড় বলা প্রযোজ্য। এর ব্যাখ্যা রয়েছে আব্দুল্লাহ
ইব্ন যায়েদ ও আবু মাহযুরার হাদিসে। আযানের শুরুতে তাকবীর জোড় বলার
অর্থ চারবার চারবার বলা, আর অন্যান্য শব্দ জোড় বলার অর্থ সেগুলো দুইবার দুইবার
বলা। এখানে আধিক্যের দিকে লক্ষ্য করে জোড় বলা হয়েছে, অন্যথায় সবার নিকট আযান ও ইকামতের শেষে কালিমায়ে তাওহীদ একবার, অর্থাৎ বেজোড়। আযানের মধ্যে চারবার তাকবীর বলার মোকাবেলায় ইকামতে
দুইবার বলা বেজোড়। অনুরূপ ইকামতের শেষে তাকবীর দুইবার বলা হয়, قد
قامت الصلاة،
قد قامت
الصلاة، দুইবার বলা হয়, অন্যান্য শব্দ
একবার বলা হয়।[22] যদি আবু মাহযুরার হাদিস মোতাবেক
আযান ও ইকামত বলে, তবুও কোন সমস্যা নেই।[23]
চার: মুয়াজ্জিনের আদাব:
মুয়াজ্জিন
পবিত্র অবস্থায় আযান দেবে, আযানের শব্দ ধীরে ধীরে বলবে, ইকামত দ্রুত বলবে, সব
বাক্যের শেষে যযম বলবে, উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে কিবলা মুখী হয়ে আযান দেবে, কারণ বেলাল
এভাবে আযান দিতেন।[24]
মুয়াজ্জিন তার দুই কানে হাতের আঙুল রাখবে, যেহেতু আবু যুহাইফার হাদিসে আছে: “আমি
বেলালকে আযান দিতে দেখেছি... তার আঙুলসমূহ ছিল কানের মধ্যে”।[25] حيَّ
على الصلاة، বলার সময় ডানে এবং حيَّ على
الفلاح বলার সময় বামে চেহারা ঘুরাবে। কারণ আবু জুহাইফার
হাদিসে আছে, তিনি বলেন: “আমি বেলালকে দেখেছি আবতাহ নামক স্থানে গিয়ে আযান দেন, যখন
حيَّ على
الصلاة ও حيَّ على
الفلاح তে পৌঁছেন, ডানে ও বামে গর্দান ঘুরান, কিন্তু নিজে
ঘুরেননি”।[26]
উত্তম
হচ্ছে সালাতের প্রথম ওয়াক্তে আযান দেয়া। কারণ জাবের ইব্ন সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
«كان بلال لا يؤخر الأذان عن الوقت، وربما أخَّر الإقامة شيئًا» ،
“বেলাল
আযান কখনো দেরিতে দিতেন না, তবে কখনো ইকামতে দেরি করতেন”।[27]
মুয়াজ্জিনের
উঁচু আওয়াজ সম্পন্ন হওয়া সুন্নত। কারণ আব্দুল্লাহ ইব্ন জায়েদ থেকে মারফু সনদে
বর্ণিত আছে:
«فقمْ مع بلالٍ فألقِ عليه ما رأيتَ فليؤذِّن به؛ فإنه أندى صوتًا منك».
“তুমি
বেলালের সাথে দাঁড়াও, অতঃপর যা দেখেছ তা বেলালের নিকট বল, সে যেন তার মাধ্যমে আযান
দেয়, কারণ সে তোমার চেয়ে উঁচু আওয়াজের অধিকারী”।[28]
মুয়াজ্জিনের
আওয়াজ সুন্দর হওয়া মুস্তাহাব।[29]
কারণ আবু মাহযুরার হাদিসে আছে, তার আওয়াজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পছন্দ হয়, ফলে তিনি তাকে আযান শিক্ষা দেন।[30]
মুয়াজ্জিনের আযানের সময় সম্পর্কে অবগত থাকা উত্তম, যেন ওয়াক্তের শুরুতে আযান দিতে
সক্ষম হয়। কারণ কখনো সময় সম্পর্কে অবগত ব্যক্তির সাহায্য নেয়া তার পক্ষে সম্ভব নাও
হতে পারে। হ্যাঁ অন্ধ ব্যক্তির আযানে কোন সমস্যা নেই, যদি সঠিক ওয়াক্ত সম্পর্কে
সংবাদ দাতা কেউ থাকে। যেমন ইব্ন উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহু অন্ধ ছিলেন, কিন্তু
তিনি আযান দিতেন না যতক্ষণ না তাকে বলা হত, “সকাল হয়েছে, সকাল হয়েছে”।[31] মুয়াজ্জিনের আমানতদার হওয়া ওয়াজিব। আল্লাহ তা‘আলা
বলেন:
﴿إِنَّ خَيۡرَ مَنِ ٱسۡتَٔۡجَرۡتَ ٱلۡقَوِيُّ ٱلۡأَمِينُ ٢٦﴾
ইব্ন
আবু মাহযুরার হাদিসে এসেছে:
«أُمناءُ المسلمين على صلاتهم وسحورهم: المؤذنون»
“মুসলমানদের
সালাত ও সেহরির আমানতদার হচ্ছে মুয়াজ্জিনগণ”।[33] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত মারফূ
হাদিসে এসেছে والمؤذن مؤتمن “মুয়াজ্জিনগণ
আমানতদার”।[34]
মুয়াজ্জিনের
উচিত আযান দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা। উসমান ইব্ন আবুল আস রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে আমার কওমের ইমাম নির্ধারণ
করুন। তিনি বললেন:
«أنت إمامُهُم واقتدِ بأضعفهم، واتَّخِذ مؤذنًا لا يأخذ على أذانه أجرًا»
“তুমি
তাদের ইমাম এবং তাদের দুর্বলদের অনুসরণ কর, এবং এমন একজন মুয়াজ্জিন নির্ধারণ কর, যে
আযানের বিনিময় গ্রহণ করবে না”।[35] তবে বায়তুল মাল থেকে মুয়াজ্জিনদের ভাতা দেয়া
দোষণীয় নয়, কারণ বায়তুল মাল মুসলমানদের সুবিধার জন্যই গঠন করা হয়েছে। আর আযান ও ইকামত
মুসলমানদের সুবিধার একটি।[36]
পাঁচ: ফজরের পূর্বে আযান ও তার
বিধান:
ফজরের
পূর্বে প্রথম আযান দেয়া বৈধ, যেন দাঁড়ানোরা ফিরে যায়, আর ঘুমন্তরা জেগে উঠে। আব্দুল্লাহ
ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
«لا يمنعن أحَدَكُم أو أحدًا منكم أذانُ بلال من سحورِهِ؛ فإنه يؤذن أو ينادي بليلٍ، ليَرْجِعَ قائمَكُم وليُنبِّه نائمَكم»
“তোমাদের
কাউকে যেন বেলালের আযান সেহরি থেকে বিরত না রাখে, কারণ সে আযান দেয় অথবা আহ্বান
করে রাতে, যেন তোমাদের দাঁড়ানোরা ফিরে যায় এবং তোমাদের ঘুমন্তরা জেগে উঠে”।[37]
ইমাম
নববী রহিমাহুল্লাহু বলেন: “এর অর্থ হচ্ছে বেলাল রাতে আযান দেয়, যেন তোমরা অবগত হও
যে রাত বেশী বাকি নেই, সে মূলত রাতে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ আদায়কারীকে তার আরামের জন্য
যেতে বলে, যেন সামান্য ঘুমিয়ে উদ্যমতাসহ ভোর বেলা জাগতে পারে, অথবা বেতের পড়ে নেয়
যদি বেতের পড়ে না থাকে, অথবা অন্য কোন পবিত্রতার প্রয়োজন হলে তা সেরে ফজরের জন্য
প্রস্তুতি নেয়, অথবা অন্য কোন প্রয়োজন সেরে নিতে পারে ফজর নিকটবর্তী জেনে। আর “তোমাদের
ঘুমন্তদের জাগ্রত করে অর্থ”: যেন ভোর হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে, যেমন সামান্য
তাহাজ্জুদ আদায় করে নেয়, অথবা বেতের পড়ে নেয় যদি বেতের পড়ে না থাকে, অথবা সিয়ামের
ইচ্ছা করলে সেহরি খেয়ে নেয়, অথবা গোসল অথবা ওযু সেরে নেয়, অথবা ফজরের পূর্বে
অন্যান্য জরুরী কর্ম সেরে নেয়”।[38]
তবে
ফজর হলে দ্বিতীয় আযানের জন্য মুয়াজ্জিন থাকা জরুরী। উত্তম হচ্ছে দ্বিতীয় মুয়াজ্জিন
প্রথম মুয়াজ্জিন ব্যতীত অন্য কারো হওয়া। দুই আযানের মাঝখানে ব্যবধান কম থাকাও
উত্তম। আব্দুল্লাহ ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুইজন মুয়াজ্জিন ছিল: বেলাল ও অন্ধ উম্মে মাকতুম। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إن بلالاً يؤذِّن بليل فكلوا واشربوا حتى يؤذِّن ابنُ أمِّ مكتوم».
“বেলাল
রাতে আযান দেয়, অতএব তোমরা খাও-পান কর, যতক্ষণ না ইব্ন উম্মে মাকতুম আযান দেয়”। তিনি বলেন: তাদের দুইজনের আযানের মধ্যে কোন ব্যবধান ছিল
না, শুধু এতটুকু ছিল যে, একজন নামতেন আর অপরজন উঠতেন।[39] প্রথম আযান ফজরের নিকটবর্তী হওয়া সুন্নত।[40]
ফজরের
দ্বিতীয় আযানে উত্তম হচ্ছে حيَّ
على الفلاح এরপর মুয়াজ্জিনের الصلاة
خير من
النوم বলা। আর আবু মাহযুরার হাদিসে যেরূপ
রয়েছে, “সকাল বেলার প্রথম আযানে الصلاة
خير من
النوم ও الصلاة
خير من
النوم বলবে”। এখানে প্রথম আযান দ্বারা
উদ্দেশ্য ওয়াজিব আযান, আর দ্বিতীয় আযান দ্বারা উদ্দেশ্য ইকামত। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«بين كل أذانين صلاة، بين كل أذانين صلاة»، قال في الثالثة: «لمن شاء».
“প্রত্যেক
দুই আযানের মাঝখানে সালাত আছে, প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে সালাত আছে”। তৃতীয়বার বলেন: “যে ইচ্ছা করে”।[41]
শায়খ
আব্দুল আজিজ ইব্ন বায রাহিমাহুল্লাকে বলতে শুনেছি: “ইব্ন রুসলান ও একদল আলেম
উল্লেখ করেছেন যে, الصلاة خير
من النوم، প্রথম
আযানে বলবে, তারা আবু মাহযুরার হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সঠিক হচ্ছে الصلاة
خير من
النوم، ফজরের দ্বিতীয় আযানে বলতে হবে, যে আযান ওয়াজিব। কারণ এ আযান সালাতের আযান, যে সালাত ঘুম থেকে উত্তম। এ আযানকে ইকামতের তুলনায় প্রথম আযান বলা হয়, আর ইকামত হচ্ছে
দ্বিতীয় আযান”।[42]
ছয়: মুয়াজ্জিন ও আযানের শর্ত:
কিছু
শর্ত রয়েছে যার সম্পর্ক আযানের সাথে, আর কিছু শর্ত রয়েছে যার সম্পর্ক মুয়াজ্জিনের
সাথে, নিচে তার বর্ণনা দেয়া হল:
১. ধারাবাহিকভাবে
আযান দেয়া, অর্থাৎ প্রথমে তাকবীর বলা, অতঃপর শাহাদাত, অতঃপর হাইআলাহ, অতঃপর তাকবীর,
অতঃপর কালিমা তাওহীদ বলা, যদি আযান বা ইকামত উলট-পালট বলে, তাহলে শুদ্ধ হবে না।
কারণ আযান একটি ইবাদাত, যেভাবে তা প্রমাণিত, সেভাবে তা আদায় করা ওয়াজিব। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من عمل عملاً ليس عليه أمرنا فهو ردٌّ».
২. আযানের
শব্দগুলো পরপর বলা, দুই বাক্যের মাঝখানে দীর্ঘ বিরতি না নেয়া, যদি হাঁচি চলে আসে, তাহলে
পূর্বের বাক্যের উপর নির্ভর করে পরবর্তী বাক্য বলা, কারণ এ বিরতি অনিচ্ছাকৃত।
৩. সালাতের
সময় হলে আযান দেয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا حضرت الصلاة فليؤذن لكم أحدكم»
“যখন
সালাতের সময় হয়, তখন যেন তোমাদের কেউ আযান দেয়”।[44] আর ফজরের পূর্বের আযান ফজর সালাতের জন্য নয়, বরং
সেটা ঘুমন্ত ব্যক্তিদের জাগ্রত করা ও দণ্ডায়মান ব্যক্তিদের বাড়িতে ফিরানোর জন্য।
৪. আযানে
এমন সূর গ্রহণ করা যাবে না, যা শব্দ ও অর্থ বিকৃতি করে দেয়, যা আরবি ব্যাকরণের
বিপরীত। যেমন কেউ বললالله أكبار، তাহলে বৈধ হবে না, কারণ এটা অর্থ বিকৃতি করে দেয়।[45]
৫.
উচ্চ স্বরে আযান দেয়া। কারণ মুয়াজ্জিন যদি এমন আস্তে আযান দেয় যে, সে
নিজে ব্যতীত কেউ না শোনে, তাহলে আযান বৈধ করণের কোন মানে থাকে না। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যেন তোমাদের জন্য আযান দেয়”।[46] এ থেকে বুঝা যায় যে, আযান উচ্চ স্বরে দিতে হবে
যেন অন্যরা শুনতে পায়, তাহলে মানুষকে শোনানোর উদ্দেশ্য হাসিল হবে, তবে উপস্থিত
লোকদের জন্য আযান দিলে ভিন্ন কথা, কিন্তু সেখানেও উচ্চ স্বরে আযান দেয়া উত্তম। আবু
সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফূ হাদিসে বর্ণিত আছে:
«..فإذا كنت في غنمك أو باديتك فأذَّنْتَ فارفع صوتك بالنداء؛فإنه لا يسمع مدى صوتِ المؤذن جنٌّ ولا إنسٌّ،ولا شيء إلا شهد له يوم القيامة».
“যখন
তুমি তোমার বকরির পাল অথবা মরুভূমিতে থাক, তখন আযান দিলে উচ্চ স্বরে দিবে, কারণ মুয়াজ্জিনের
আওয়াজ যে কেউ শুনবে, জিন-মানুষ বা অন্য কোন বস্তু, তারা মুয়াজ্জিনের জন্য কিয়ামতের
দিন সাক্ষ্য দিবে”।[47]
৬. সুন্নত
অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যা মোতাবেক আযান দিবে, তাতে কম বা বেশী করবে না। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من عمل عملاً ليس عليه أمرنا فهو رد».
৭. এক
ব্যক্তির আযান দিতে হবে, দুই জনের আযান শুদ্ধ নয়। যদি এক ব্যক্তি আযান আরম্ভ করে, অতঃপর
অপর ব্যক্তি তা পুরো করে, তাহলে আযান শুদ্ধ হবে না।
৮. মুয়াজ্জিন
আযানের নিয়ত করে আযান দিবে, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নিয়তের উপর আমল নির্ভর করে”।[49]
৯. মুয়াজ্জিনের
মুসলিম হওয়া জরুরী, যদি কোন কাফের আযান দেয় তাহলে শুদ্ধ হবে না, কারণ সে ইবাদতের
উপযুক্ত নয়।
১০. মুয়াজ্জিনের
বুঝমান হওয়া জরুরী, যার বয়স সাত থেকে সাবালক পর্যন্ত, যে কথা বুঝে ও উত্তর দিতে
পারে, তার নিকট কোন বস্তু চাওয়া হলে সে উপস্থিত করতে পারে।
১১. মুয়াজ্জিনের
বিবেকবান হওয়া জরুরী, পাগলের আযান শুদ্ধ নয়।
১২. মুয়াজ্জিনের
পুরুষ হওয়া জরুরী, নারীদের আযানের কোন গ্রহণ যোগ্যতা নেই। ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু বলেন: “নারীদের উপর আযান ও ইকামত কিছু নেই”।[50] নারীরা আযানের উপযুক্ত নয়, দ্বিতীয়ত আযান উচ্চ
স্বরে দিতে হয়, আর নারীদের আওয়াজ উঁচু করা নিষেধ।[51]
১৩.
নীতিবান হওয়া জরুরী, যদিও বাহ্যিকভাবে হয়। কারণ আযান ইবাদত, বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী
আযান ইকামত থেকে উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়াজ্জিনদের
আমানতদার বলেছেন, আর ফাসেক আমানতদার নয়। যেমন হাদিসে এসেছে:
«أمناء الناس على صلاتهم وسحورهم المؤذنون».
“মানুষের
সালাত ও সেহরির আমানতদার হচ্ছে মুয়াজ্জিনগণ”।[52] শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন:
“ফাসেকের আযান শুদ্ধ হবে কি না, এ ব্যাপারে দু’টি অভিমত রয়েছে, বিশুদ্ধ অভিমত
অনুযায়ী আযান শুদ্ধ হবে না। কারণ এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের বিপরীত, তবে ফাসেককে মুয়াজ্জিন হিসেবে
নিয়োগ দেয়া কোন মত অনুসারেই বৈধ নয়”।[53] যার অবস্থা গোপন তার আযান বৈধ। আল্লামা আব্দুল আযীয
ইবন বায রাহিমাহুল্লাকে বলতে শুনেছি: “ফাসেকের আযানের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই, দাঁড়ি
কর্তনকারী স্পষ্ট ফাসেক, তার অবস্থা গোপন নয়, আল্লাহর নিকট আমরা পানাহ চাই, দাঁড়ি
কর্তনকারী ব্যতীত অন্য কাউকে মুয়াজ্জিন নিযুক্ত করা জরুরী”।[54]
এখানে
আদেল শব্দের অর্থ হচ্ছে: মুসলমান হওয়া, বিবেকী হওয়া, পুরুষ হওয়া, একজন হওয়া, নীতিবান
ও বুঝমান হওয়া।[55]
সাত: জুমা ও কাযা সালাতের জন্য
আযান ও ইকামতের বিধান:
১. যে
ব্যক্তি জোহর-আসর অথবা মাগরিব-এশা সফরে অথবা বাড়িতে বৃষ্টি কিংবা অসুস্থতার কারণে
এক সাথে পড়ে, সে শুধু প্রথম সালাতের জন্য আযান দিবে, কিন্তু প্রত্যেক ফরজেরর জন্য
ইকামত বলবে। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আরাফার ময়দানে জুমার সালাতের জন্য আযান দেন, অতঃপর জোহর সালাত আদায়
করেন, অতঃপর ইকামত বলে আসর সালাত আদায় করেন। অনুরূপ মুজদালিফায় এসে এক আযান ও দুই
ইকামতের মাধ্যমে মাগরিব ও এশার সালাত আদায় করেন।[56]
তিনি দুই সালাতের জন্য এক আযান দেন, কারণ দুই সালাতের ওয়াক্ত এক ওয়াক্তে পরিণত
হয়েছে, কিন্তু এক ইকামতে যথেষ্ট করেননি, কারণ প্রত্যেক সালাতের জন্য ইকামত জরুরী।
অতএব দুই সালাত এক সাথে আদায়কারী ব্যক্তি একবার আযান দিবে ও প্রত্যেক সালাতের জন্য
ইকামত বলবে।
২. অনেকগুলো
কাযা যে ব্যক্তি আদায় করে, সে শুধু একবার আযান দিবে, আর প্রত্যেক সালাতের জন্য
ইকামত বলবে। আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে এসেছে: “নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাথীবৃন্দ ফজরের সালাতে ঘুমিয়ে ছিলেন, সূর্য
উদিত হওয়ার আগে কেউ উঠতে পারেননি, তারা সে স্থান প্রস্থান করেন, অতঃপর বেলাল
সালাতের আযান দেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেন। অতঃপর প্রতি দিনের ন্যায় চাশতের
সালাত আদায় করেন।[57]
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস দ্বারাও এ সালাতের জন্য ইকামত
প্রমাণিত হয়:
وأمر بلالاً فأقام الصلاة، فصلى بهم الصبح، فلما قضى الصلاة قال: «من نسي الصلاة فليصلِّها إذا ذكرها، فإن الله قال: ﴿وَأَقِمِ الصَّلاةَ لِذِكْرِي﴾»
“নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলালকে নির্দেশ দেন, সে সালাতের ইকামত বলে, তিনি তাদের নিয়ে
ফজরের সালাত আদায় করেন, সালাত শেষ করে বলেন: যে সালাত ভুলে যায়, সে যেন স্মরণ
হওয়ার সাথে সাথে তা পড়ে নেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “এবং আমার স্মরণার্থে সালাত
কায়েম কর”। সূরা ত্ব-হা।[58]
আহযাবের যুদ্ধেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুরূপ করেন, যখন কাফেরদের কারণে তার কয়েক ওয়াক্ত
সালাত কাযা হয়।[59]
আমি
শায়খ আব্দুল আযীয ইব্ন বায রাহিমাহুল্লাহকে কাতাদার হাদিস সম্পর্কে বলতে শুনেছি, যেখানে
রয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সময় জাগ্রত হতে না পেরে পরে তা
কাযা করেন: “এ হাদিস প্রমাণ করে যে, যে ব্যক্তি সালাতের সময় ঘুমিয়ে থাকে অথবা তা
ভুলে যায়, সে তা আদায় সালাতের ন্যায় আযান-ইকামতসহ সিরিয়াল অনুযায়ী পড়ে নিবে। আর যে
স্থানে ঘুমিয়ে ছিল তা প্রস্থান করাও সুন্নত, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম প্রস্থান করেছেন। অনুরূপ জেহরি সালাতকে জেহরি আর সিররি সালাতকে
সিররিভাবে আদায় করবে”।[60]
আট. মুয়াজ্জিনের আযানের জাওয়াব
ও তার ফযিলত:
আযান ও ইকামত শ্রবণকারীর জন্য সুন্নত হচ্ছে মুয়াজ্জিনের সাথে সাথে আস্তে
আস্তে তার অনুরূপ বাক্য উচ্চারণ করা, শুধু হাইআলাহ ব্যতীত, তখন বলবে: «لا
حول ولا
قوة إلا
بالله» অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর
দরূদ ও আযানের পরবর্তী দোয়া পড়বে। এতে সন্দেহ নেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার উম্মতের জন্য আযান ও তার পরবর্তী সময় পাঁচ প্রকার জিকির বৈধ করেছেন,
যেমন:
১. শ্রবণকারী মুয়াজ্জিনের ন্যায় বাক্যগুলো বলবে, শুধু«حي
على الصلاة،
وحي على
الفلاح»،
ব্যতীত, তখন বলবে,«لا حول
ولا قوة
إلا بالله»؛ আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا سمعتم النداء فقولوا مثل ما يقول المؤذِّن».
“যখন তোমরা আযান শ্রবণ কর, তখন মুয়াজ্জিনের ন্যায় অনুরূপ শব্দ বল”।[61] ওমর ইব্ন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখন মুয়াজ্জিন বলে: الله
أكبر الله
أكبرُ، অতঃপর তোমাদের কেউ বলে: الله أكبر
الله أكبرُ،
যখন মুয়াজ্জিন বলে: أشهد
أن لا
إله إلا
الله অতঃপর তোমাদের কেউ বলে: أشهد
أن لا
إله إلا
الله যখন মুয়াজ্জিন বলে: أشهد
أن محمدًا
رسول الله، অতঃপর তোমাদের কেউ বলে: أشهد
أن محمدًا
رسول الله، যখন মুয়াজ্জিন বলে: حيَّ
على الصلاة، অতঃপর
তোমাদের কেউ বলে: لا حول
ولا قوة
إلا بالله، যখন মুয়াজ্জিন বলে: حي
على الفلاح،
অতঃপর তোমাদের কেউ বলে: لا
حول ولا
قوة إلا
بالله، যখন মুয়াজ্জিন বলে: الله
أكبر الله
أكبر، অতঃপর তোমাদের কেউ বলে: الله أكبر
الله أكبر، যখন মুয়াজ্জিন বলে: لا
إله إلا
الله، অতঃপর তোমাদের কেউ অন্তর থেকে বলে: لا
إله إلا
الله، সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।[62]
২. মুয়াজ্জিনের তাশাহুদ বা কালিমায়ে শাহাদাত বলার পর বলা:
وأنا أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأن محمدًا عبده ورسوله، رضيت بالله ربًّا، وبمحمدٍ رسولاً، وبالإسلام دينًا،
কারণ সাদ ইব্ন আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন: “যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনকে বলতে শোনে বলে:
«أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأن محمدًا عبده ورسوله، رضيت بالله ربًّا، وبمحمد رسولاً، وبالإسلام دينًا،».
তার পাপ মোচ করা হয়”। অন্য বর্ণনায় আছে: “মুয়াজ্জিনকে বলতে শোনে বলে: وأنا
أشهد...
(তার পাপ মোচন করা হবে)।[63]
৩. মুয়াজ্জিনের উত্তর শেষ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়বে। আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্নুল আস
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন:
«إذا سمعتم المؤذن فقولوا مثل ما يقول، ثم صلُّوا علي؛ فإنه من صلَّى عليّ صلاة صلى الله عليه بها عشرًا، ثم سلوا الله لي الوسيلة؛ فإنها منزلةٌ في الجنة لا تنبغي إلا لعبدٍ من عباد الله، وأرجو أن أكون أنا هو، فمن سأل لي الوسيلة حلت عليه الشفاعة».
“যখন মুয়াজ্জিনের আওয়াজ শ্রবণ কর, তখন তার ন্যায় তোমরাও বল, অতঃপর আমার উপর
দরূদ পাঠ কর, কারণ আমার উপর যে একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তার উপর দশবার দরূদ প্রেরণ
করবেন। অতঃপর আমার জন্য ওসিলা প্রার্থনা কর, ওসিলা জান্নাতের একটি বিশেষ মর্যাদা
যার ভাগীদার শুধু একজন বান্দাই হবে, আমি আশা করছি সে ব্যক্তিটি হবো আমিই। আমার
জন্য যে ওসিলা প্রার্থনা করবে, তার জন্য আমার শাফায়াৎ ওয়াজিব হয়ে যাবে”।[64]
৪. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর
দরূদ পাঠ করে জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত দোয়া পাঠ করবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলেছেন: “যে ব্যক্তি আযান শ্রবণ করে বলে:
«اللهم ربَّ هذه الدعوة التامة، والصلاة القائمة، آتِ محمدًا الوسيلة والفضيلة، وابعثه مقامًا محمودًا الذي وعدته»
কিয়ামতের দিন তার জন্য আমার শাফায়াৎ বৈধ হয়ে যাবে”।[65]
বায়হাকির বর্ণনায় আরো একটু অতিরিক্ত বর্ণিত আছে[66]:
«... إنك لا تخلف الميعاد».
৫. অতঃপর নিজের জন্য দোয়া করবে, আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থনা করবে, কারণ এ
দোয়া কবুল করা হয়। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الدعوة لا ترد بين الأذان والإقامة فادعوا».
“আযান ও ইকামতের মাঝখানের দোয়া প্রত্যাখ্যান করা হয় না, অতএব এ সময় তোমরা
দোয়া কর”।[67]
শায়খ আব্দুল আজিজ ইব্ন বায রাহিমাহুল্লাহকে বলতে শুনেছি: “এসব দোয়া
প্রত্যেক আযানের পর একবার করে পড়তে হবে”।[68]
নয়: আযানের পর
মসজিদ থেকে বের হওয়ার বিধান:
যার উপর সালাত ওয়াজিব, আযানের পর মসজিদ থেকে তার বের হওয়া কোন কারণ ব্যতীত
অথবা ফিরে আসার নিয়ত ব্যতীত হারাম। কারণ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু জনৈক
ব্যক্তিকে বলেন, যে আযানের পর মসজিদ থেকে বের হয়েছিল:
«أما هذا فقد عصى أبا القاسم r».
“এ ব্যক্তি আবুল কাসেম তথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাফরমানি করল”।[69] ইমাম তিরমিযি রাহিমাহুল্লাহু বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবি ও তার পরবর্তী লোকদের আমল অনুরূপ ছিল, অর্থাৎ
আযানের পর কোন কারণ ব্যতীত মসজিদ থেকে কেউ বের হবে না, অথবা ওযুর জন্য অথবা অন্য
কোন জরুরী কাজ ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হবে না”।[70]
দশ: আযান ও
ইকামতের মাঝখানের বিরতি:
আযানের বিধান মূলত সালাতের সময় সম্পর্কে ঘোষণা দেয়ার জন্য, অতএব আযানের পর
এতটুকু সময় দেরি করা জরুরী, যে সময়ের মধ্যে লোকেরা প্রস্তুত হয়ে সালাতে উপস্থিত
হতে পারে, অন্যথায় আযান দেয়ার কোন মানে হয় না, অনেকের থেকে জামাত ছুটে যাবে, যারা
জামাতে উপস্থিত হতে ইচ্ছুক, কারণ যারা খেতে বসেছে, অথবা পানাহারে মগ্ন অথবা
বাথরুমে আছে তারা যখন এসব কাজ থেকে ফারেগ হবে, অথবা ওযুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ
করবে তাদের থেকে জামাত ছুটে যাবে অথবা কয়েক রাকাত ছুটে যাবে, যার একমাত্র কারণ দ্রুত
করা ও আযান-ইকামতের মাঝখানে কোন বিরতি না দেয়া, বিশেষ করে যখন মুসল্লির বাড়ি মসজিদ
থেকে দূরে হয়। ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহ একটি অধ্যায় রচনা করেছেন, যার শিরোনাম: “আযান
ও ইকামতের মাঝখানে বিরতি কতটুকু”? কিন্তু তার নিকট এর কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ
নির্ধারিত হয়নি। তিনি শুধু আব্দুল্লাহ ইব্ন মুগাফ্ফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত হাদিস বর্ণনা করেছেন, যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: “প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে সালাত রয়েছে, প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে
সালাত রয়েছে”। তৃতীয়বার তিনি বলেন: “যে ইচ্ছা করে”।[71] এখানে দুই আযান দ্বারা উদ্দেশ্য আযান ও ইকামত।
এতে সন্দেহ নেই আযান ও ইকামতের মাঝখানে সময় দেয়া মূলত কল্যাণের সুযোগ দেয়া ও তার
জন্য সাহায্য করা, যার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।[72]
আব্দুল্লাহ ইব্ন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস আযান ও ইকামতের
মাঝখানে অপেক্ষা করা প্রমাণ করে, সেখানে রয়েছে: “আমি এক ব্যক্তিকে দেখলাম, যার
গায়ে দুইটি সবুজ জামা ছিল, সে মসজিদে দাঁড়িয়ে আযান দিল, অতঃপর কিছুক্ষণ বসল, অতঃপর
দাঁড়িয়ে আযানের ন্যায় শব্দ বলল, তবে এবার সে قد
قامت الصلاة বলল।
অন্য বর্ণনায় আছে: “ফেরেশতাগণ তাকে আযান শিক্ষা দিল, অতঃপর তার থেকে সামান্য দূরে
সরে দাঁড়াল, অতঃপর তাকে ইকামত শিক্ষা দিল”।[73]
শায়খ আব্দুল আজিজ ইব্ন বায রাহিমাহুল্লাহকে বলতে শুনেছি: “ইকামত দেয়ার
জন্য তাড়াহুড়ো করবে না যতক্ষণ না ইমাম অনুমতি প্রদান করেন। যার পরিমাণ এক ঘণ্টার
চতুর্থাংশ অথবা এক তৃতীয়াংশ অথবা অনুরূপ, যদি ইমাম অনেক দেরি করে, তাহলে উপস্থিত
কেউ সামনে গিয়ে সবার সাথে সালাত আদায় করবে।[74]
ইমাম ইকামতের বেশী হকদার, অতএব তার অনুমতি ও ইশারা ব্যতীত ইকামত বলবে না, মুয়াজ্জিন
আযানের বেশী হকদার, কারণ আযানের সময়টি তার উপর ন্যস্ত, সেই আমানতদার।[75]
শায়খ আব্দুল আজিজ ইব্ন বায রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “ইমাম ইকামতের জিম্মাদার, মুয়াজ্জিন
আযানের জিম্মাদার, হাদিসটি যদিও দুর্বল, কিন্তু আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাণীর
কারণে তা শক্তিশালী হয়, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্মও তা সমর্থন করে, কারণ তিনিই ইকামতের নির্দেশ
দিতেন। এখানে দলিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ম, দুর্বল
হাদিস নয়।[76]
وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وأصحابه أجمعين.
[1] আন-নিহায়া ফি
গারিবিল হাদিস: (১/৩৪), মুগনি লি ইব্ন কুদামা: (২/৫৩)
[2] মুগনি লি ইব্ন কুদামা: (২/৫৩), তারিফাত লি জুরজানি: (পৃ.৩৭), সুবুলুস সালাম:
(২/৫৫)
[3] শারহুল উমদাহ লি ইব্ন
তাইমিয়াহ: (২/৯২)
[4] রওজুল মুরবি: (১/৪২৮)
[5] শারহুল উমদাহ: (২/৯৫)
[6] শারহুল উমদাহ: (২/৯৬), ফতোয়া
ইবন তাইমিয়াহ: (২২/৬৪)
[7] এটাই শায়খ আব্দুল্লাহ ইব্ন বায
রহ. এর অভিমত। রওজুল মুরবি গ্রন্থের ব্যাখ্যার সময় আমি তার নিকট এ কথা শ্রবণ করি।
আরো দেখন: মুখতারাতুল জালিয়্যাহ লি সাদি: (পৃ.৩৭), ফতোয়া শায়খ মুহাম্মদ ইব্ন
ইবরাহীম: (২/২২৪), শারহুল মুমতি: (২/৪১)
[8] মুসলিম: (৩৮৭)
[9] বুখারি: (৬০৮), মুসলিম: (৩৮৯)
[10] বুখারি: (৬১৫), মুসলিম: (৪৩৭)
[11] বুখারি: (৬০৯)
[12] নাসায়ি: (২/১৩), হাদিস নং: (৬৪৬),
আহমদ: (৪/২৮৪), মুনযিরি “তারগিব ও তারহিব”: (১/২৪৩) গ্রন্থে বলেন: ইমাম আহমদ ও
নাসায়ি হাদিসটি জাইয়্যেদ সনদে বর্ণনা করেছেন। আল-বানি “সহিহ তারগিব ও তারহিব”: (১/৯৯)
গ্রন্থে হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
[13] কারণ সে তাদের সালাতের
হিফাজতকারী, তার উপর তার মুসল্লিদের সালাত নির্ভরশীল।
[14] কারণ সে মানুষের সালাত ও সিয়ামের যিম্মাদার।
[15] আবু দাউদ: (১/১৪৩), হাদিস নং: (৫১৭), তিরমিযি: (১/৪০২), ইব্ন খুজাইমাহ, হাদিস নং: (৫২৮), “সহিহ তারগিব ও তারহিব”: (১/১০০)
[16] আবু দাউদ: (২/৪), হাদিস নং: (১২০৩), নাসায়ি: (২/২০), হাদিস নং: (৬৬৬), “সহিহ তারগিব ও তারহিব”: (১/১০২), এ আল-বানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
[17] ইব্ন মাজাহ: (৭২৩), হাকেম ফিল
মুসতাদরাক: (১/২০৫), তিনি বলেছেন: বুখারির শর্ত মোতাবিক হাদিসটি সহিহ, ইমাম যাহাবি
তার সমর্থন করেছেন। ইমাম মুনযিরি বলেছেন: হাদিসটির ব্যাপারে হাকেম ঠিকই বলেছেন।
তারগিব ও তারহিব: (১/১১১)
[18] আহমদ: (৪/৪২-৪৩), আবু দাউদ: (১/১৩৫), হাদিস নং: (৪৯৯), তিরমিযি: (১/৩৫৮), হাদিস নং: (১৮৯), সহিহ ইব্ন খুজাইমাহ: (১/১৯৩), হাদিস নং: (৩৭১), ইব্ন মাজাহ: (১/২৩২), হাদিস নং: (৭০৬)
[19] ইমাম নাসায় আবু মাহযুরা থেকে বর্ণনা করেছেন: (২/৭), হাদিস নং: (৬৩৩), সহিহ ইব্ন
খুজাইমাহ: (১/২০০), হাদিস নং: (৩৮৫)
[20] ইব্ন খুজাইমাহ: (১/২০২), হাদিস
নং: (৩৮৬)
[21] বুখারি: (৬০৫), মুসলিম: (৩৭৮)
[22] ফাতহুল বারি লি ইব্ন হাজার
রহ.: (২/৮২), সুবুলুস সালাম লি সানআনি: (২/৫৮-৬৫)
[23] “তারজি” সম্বলিত আবু মাহযুরার হাদিস অনুযায়ী আযান হচ্ছে:
«الله أكبر،
الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن لا إله إلا
الله، أشهد أن محمدًا رسولُ الله، أشهد أن محمدًا رسولُ الله
আস্তে
বলবে, অতঃপর উঁচু আওয়াজে
বলবে:
أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن لا إله إلا
الله، أشهد أن محمدًا رسول الله، أشهد أن محمدًا رسول الله»،
এভাবে
আযান পূর্ণ করবে, যেমন আবু মাহযুরার হাদিসে রয়েছে। মুসনাদ: (৩/৪০৯), (৬/৪০১), আবু দাউদ, হাদিস নং: (৫০২), নাসায়ী, হাদিস নং: (৬৩১), তিরমিযি, হাদিস নং: (১৯২), ইব্ন মাজাহ, হাদিস নং: (৭০৯), মুসলিম, হাদিস নং: (৩৭৯), কিন্তু তার বর্ণনায় শুরুতে তাকবির দুইবার, দুইবার।
আবু
মাহযুরার হাদিস অনুযায়ী তাকবির চারবার চারবার, অবশিষ্ট বাক্য দুইবার দুইবার:
«الله
أكبر، الله أكبر، الله أكبر الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن لا إله
إلا الله، أشهد أن محمدًا رسول الله، أشهد أن محمدًا رسول الله، حي على الصلاة حي
على الصلاة، حي على الفلاح، حي على الفلاح،قد قامت الصلاة،قد قامت الصلاة،الله
أكبر الله أكبر، لا إله إلا الله».
নাসায়ি, হাদিস নং: (৬৩৩), অতএব আবু মাহযুরার হাদিস অনুযায়ী আযান উনিষ
বাক্য, আর ইকামাত সতের
বাক্য, যেমন ইমাম নাসায়ী
(৬৩০) নং হাদিসে বর্ণনা করেছেন। ইব্ন তাইমিয়াহ রহ. বলেছেন: “হাদিসে যেহেতু আযান ও ইকামাত বিভিন্নভাবে
প্রমাণিত, তাই
এ ক্ষেত্রে আহলে হাদিসদের নীতিই সঠিক, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
থেকে প্রমাণিত প্রতেক্য পদ্ধতিকে বৈধ বলেন, কোন পদ্ধতিকে তারা অপছন্দ করেন না। কিরাত ও
তাশাহুদ যেমন নানা রকম বর্ণিত আছে, অনুরূপ আযানও বিভিন্ন পদ্ধতিতে বর্ণিত রয়েছে”। ফতোয়া: (২২/৬৬), আমি শায়খ আব্দুল আযিয ইব্ন বায রহ.-কে বলতে
শোনেছি: “উত্তম
হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর সামনে প্রদত্ত বেলালের আযান ও ইকামাত, তবে এসব ইখতিলাফ সালাতের শুরুতে বিভিন্ন দোয়া
দরুদের বিভিন্নতার মতই”। বুলুগুল মারামের (৯৩) নং হাদিসের ব্যাখ্যায় এ
বক্তব্য শ্রবণ করেছি।
[24] “কারণ, বেলাল বুন নাজ্জারের
জনৈক মহিলার বাড়ির ছাদে উঠে আযান দিত, তার বাড়িই মসজিদে নববীর আশ-পাশে অবস্থিত
বাড়িসমূহের মধ্যে উঁচু ছিল”। আবু দাউদ: (৫১৯)
[25] আহমদ: (৪/৩০৮), তিরমিযি: (১৯৭),
ইব্ন মাজাহ: (৭১১)
[26] আবু দাউদ: (৫২০), আবু জুহাইফার
মূল হাদিস বাখারি: (৬৩৪) ও মুসলিমে: (৫০৩) রয়েছে।
[27] ইব্ন মাজাহ: (৭১৩), আহমদ:
(৫/৯১)
[28] আবু দাউদ: (৪৯৯), ইব্ন মাজাহ: (৭০৬)
[29] দেখুন: সুবুলুস সালাম লি
সানআনি: (২/৭০)
[30] সহিহ ইব্ন খুজাইমাহ: (১/১৯৫), হাদিস
নং: (৩৭৭)
[31] বুখারি: (৬১৭), মুসলিম: (১০৯২)
[32] সূরা কাসাস: (২৬)
[33] বায়হাকি: (১/৪২৬), আল-বানি
হাদিসটি হাসান বলেছেন: ইরওয়াউল গালিল: (১/২৩৯)
[34] আবু দাউদ: (৫১৭), তিরমিযি:
(২০৭),
[35] আবু দাউদ: (৫৩১), তিরমিযি:
(২০৯), নাসায়ি: (৬৭২), ইব্ন মাজাহ: (৭১৪), আহমদ: (৪/২১), আল-বানি ইরওয়াউল গালিল:
(৫/৩১৫) এ হাদিসটি সহিহ বলেছেন, হাদিস নং: (১৪৯২)
[36] মুগনি লি ইব্ন কুদামা: (২/৭০),
নাইলুল আওতার লি শাওকানি: (২/১৩২), শারহুল মুমতি লি ইব্ন উসাইমিন: (২/৪৪)
[37] বুখারি: (৬২১), মুসলিম: (১০৯৩)
[38] ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ মুসলিম:
(৭/২১১)
[39] বুখারি: (১৯১৮), (১৯১৯), মুসলিম:
(১০৯২)
[40] শায়খ মুহাম্মদ ইব্ন ইবরাহিম
আলে শায়খ তার ফতোয়ায় বলেন: “এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, ফজরের সামান্য আগ মুহূর্ত
ব্যতীত আযান দেয়া মুনাসিব নয়... যদি আধা ঘণ্টা বা একঘণ্টার এক তৃতীয়াংশ হয়, তাহলে
আমার ধারণা মতে মানুষের জন্য উপকারী”।
[41] বুখারি: (৬২৭), মুসলিম: (৮৩৮)
[42] বুলুগুল মারামের (১৯১) নং
হাদিসের ব্যাখ্যার সময় আমি এ বক্তব্য শ্রবণ করি। আরো দেখন: শারহুল মুমতি লি ইব্ন
উসাইমিন: (২/৫৭)
[43] বুখারি: (২৬৯৭), মুসলিম: (৭১৮)
[44] বুখারি: (৬২৮), মুসলিম: (৬৭৪)
[45] ইবন উসাইমিন রহ. বলেন: ভুল দুই
প্রকার: এক প্রকার রয়েছে, যে কারণে আযান শুদ্ধ হয় না, যেখানে অর্থের বিকৃতি ঘটে, যেমন
কেউ বলল: ((الله أكبار)) কারণ (( أكبار)) শব্দ ((كَبَر)) এর বহু বচন, যার
অর্থ তবলা বা ঢোল, যেমন سبب এর বহু
বচন أسباب আরেক প্রকার ভুল রয়েছে, যে
কারণে অর্থ পরিবর্তণ হয় না, যেমন: ((اللهَ أكبر)) জবর দ্বারা পড়া, আরো যেমন: ((حيًّا على الصلاة))
বলা। দেখুন: শারহুল মুমতি: (২/৬৯,৬০-৬২)
[46] বুখারি ও মুসলিম।
[47] বুখারি: (৬০৯)
[48] বুখারি: (২৬৯৭), মুসলিম: (১৭১৮)
[49] বুখারি: (১), মুসলিম: (১৯০৭)
[50] বায়হাকি: (১/৪০৮)
[51] মানারুস সাবিল: (১/৬৩), শারহুল
মুমতি: (২/৬১)
[52] বায়হাকি: (১/৪২৬)
[53] ইখতিয়ারাতুল ফিকহিয়্যাহ, লি
শায়খুল ইসলাম: (পৃ.৫৭)
[54] রওজুল মুরবি গ্রন্থের ব্যাখ্যার
সময় আমি তার মুখে এ বাণী শ্রবণ করি। ফজর সালাতের পর, শনিবার: (১০/১১/১৪১৮হি.)
[55] শারহুল মুমতি: (২/৬২)
[56] সহিহ মুসলিম: (১২১৮)
[57] মুসলিম: (৮৬১)
[58] সহিহ মুসলিম: (৬৮০), সূরা
ত্ব-হা: (১৪)
[59] দেখুন: “ইরওয়াউল গালিল”: (১/২৫৭)
[60] বুলুগুল মারামের: (২০২) নং হাদিসের ব্যাখ্যার সময় এ বক্তব্য শ্রবণ করি।
[61] বুখারি: (৬১১), মুসলিম: (৩৮৩)
[62] মুসলিম: (৩৮৫)
[63] মুসলিম: (৩৮৬)
[64] মুসলিম: (৩৮৪)
[65] বুখারি: (৬১৪)
[66] বায়হাকি: (১/৪১০), তুহফাতুল
আখইয়ার গ্রন্থে: (পৃ.৩৮) হাদিসের সনদটি ইমাম বায রহ. হাসান বলেছেন।
[67] আহমদ: (৩/২২৫), আবু দাউদ: (৫২১),
তিরমিযি: (২১২), আল-বানি ইরওয়াউল গালিল: (১/২৬২) এ হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
[68] যাদুল মায়াদ গ্রন্থের আযকার
অধ্যায়ের: (২/৩৯১) ব্যাখ্যার সময় আমি তার মুখে এ বাণী শ্রবণ করি।
[69] মুসলিম: (৬৫৫)
[70] তিরমিযি: (২০৪)
[71] বুখারি: (৬২৪)
[72] নাইলুল আওতার লি শাওকানি:
(২/৬২)
[73] আবু দাউদ: (৫০৬), সহিহ সুনানে
আবু দাউদ: (১/৯৮), হাদিস নং: (৪৯৯) ও (৫০৬)
[74] আমি তার এ বক্তব্য শোনেছি জামে
তুরকি ইব্ন আব্দুল্লাহ মসজিদে, বুধবার, ৬/১১/১৪১৮হি.
[75] সুবুলুস সালাম লি সানআনি:
(২/৯৫)
[76] বুলুগুল মারামের: (২১৭)নং
হাদিসের ব্যাখ্যার সময় এ বক্তব্য শ্রবণ করেছি।
No comments:
Post a Comment