দর্শক সংখ্যা

Thursday, March 7, 2013

নিহত সাতক্ষীরার আব্দুস সালাম মোড়ল বীর মুসলমান

নিহত সাতক্ষীরার আব্দুস সালাম মোড়ল বীর মুসলমান, 
ধরো আল কুরআন। হৃদয়ে আনো সেই হারানো সম্মান। যে আওয়াজ শুনে ভয়ে প্রকম্পিত হতো কাফির-মুশরিক। গানটি গাইতে গাইতে চিরবিদায় নিলেন আলহাজ আব্দুস সালাম মোড়ল (৬৩)। নিহত হওয়ার আগে তার মোবাইলে রের্কডকৃত গান এটি। গত ২৮ ফেব্র“য়ারি পুলিশের গুলি ও সরকারদলীয় ক্যাডারদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন জেলার আশাশুনি উপজেলার খাজুরা ইউনিয়নের তুয়ারডাঙ্গা গ্রামের মৃত মাহবুদ্দিন মোল্লার ছেলে আব্দুস সালাম। ১৩ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। নিহত হওয়ার আগে তিনি পরিবারের কাছ থেকে চিরবিদায় নেন। ঘটনার দিন সকালে তিনি গোসল করেন। হজের পোশাক পরে নেমে পড়েন মাওলানা সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের ডাকা হরতালের পিকেটিংয়ে। পিকেটিংয়ের একপর্যায়ে ঘোষণা আসে যেকোনো মুহূর্তে সাঈদীর রায় ঘোষণা হবে। ছুটে আসেন বাড়িতে। একপর্যায়ে আল্লামা সাঈদীর ফাঁসির রায় শুনে জোরে জোরে কাঁদতে থাকেন। এ যেন আপনজন হারানোর কান্না। আর বলতে থাকেন আল্লাহ মাওলানা সাঈদীর ফাঁসির রায় কার্যকরের আগে আল্লাহ যেন আমাকে তুলে নেন। নিজ চোখে সাঈদীর ফাঁসি দেখার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। এ কথা বলতে থাকেন পরিবারের সবার সাথে। এ সময় তিনি আরো বলেন, আমি যদি আজ শহীদ হতে পারি তা হলে তোমরা আমার গোসল দেবে না। সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার কথা শুনে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরে ছেলের বাড়িতে আসেন। রায় ঘোষণার প্রতিবাদে সাতীরা জামায়াতের নিধারিত কর্মসূচি ছিল বিকেল ৪টায় শহরের কদমতলা বাজারে। কর্মসূচি শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা আগেই তিনি ঘটনাস্থলে চলে যান। যথাসময়ে প্রোগ্রাম শুরু। লাখো
সাঈদীপ্রেমিকের জনস্রোত। সমাবেশস্থল ছাপিয়ে সার্কিট হাউজ মোড়ে পর্যন্ত চলে যায় জনতার উপস্থিতি। বেলা ৫টায় শুরু হয় সাঈদীপ্রেমিক জনতার ওপর পুলিশ বিজিবি ও সরকার দলীয় ক্যাডারদের মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ। লুটিয়ে পড়েন কয়েকজন। সালাম তাদের সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তার বুকে গুলিবিদ্ধ হয়। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় পাশের ডা: আজিজুর রহমানের কিনিকের সামনে গেলে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করে। এ সময় সরকারদলীয় ক্যাডারেরা তাকে ভ্যান থেকে নামিয়ে লাঠি ও রড দিয়ে পিটাতে থাকে। তার হাত, পা ভেঙে দেয় তারা। প্রত্যদর্শীরা জানান এ সময় তিনি পানি চাইলে তার মুখে সন্ত্রাসীরা থু-থু ও প্রসাব করে দেয়। তিনি বারবার আল্লাহ আল্লাহ শব্দ করতে থাকেন। মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পাশের অনেকে এ ঘটনা মোবাইলে ধারণ করে। রাত ৮টায় তাকে সদর হাসপাতালের মর্গে আনা হয়।   নিহত আব্দুস সালাম দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের গুদাম রকের দায়িত্বে ছিলেন। তাকে ঘুষ লেনদেন করতে বাধ্য করায় ১৯৯২ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি তার গ্রামের বাড়িতে একটি পাঞ্জেঘানা মসজিদ গড়ে তুলেছেন। সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান দেয়ার দায়িত্ব ছিল তার। প্রতিদিন ফজরের নামাজের আগে তিনি মুসুল্লিদের ডেকে দিতেন। ১৯৫২ সালের ১০ নভেম্বর জন্মের পর তার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ ছিল না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জামায়াতের সক্রীয় কর্মী ছিলেন।   তার সহধর্মিণী মমতাজ বেগম দীর্ঘ সময় মহিলা জামায়াতের রোকনের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি জানান, আল্লামা সাঈদীর রায় প্রত্যাহার করা হলে আমার স্বামীর বিচার পাব। এ দিকে নিহতের স্বজনেরা অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

No comments:

Post a Comment