জিলহজের প্রথম দশ দিনঃ তৎপর্য ও ফজিলত-3
সংকলনে : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، لَاإِلَهَ
إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ وَلِلهِ الحَمْدُ
আজকে আমাদের সমাজে এ সুন্নতটি পরিত্যাজ্য হয়েছে
বলে মনে করা হয়। এর আমল দেখা যায় না। তাই আমাদের উচিত হবে এ সুন্নতটির প্রচলন করা।
এতে তাকবীর বলার সওয়াব অর্জন হবে ও সাথে সাথে একটি মিটে যাওয়া সুন্নত জীবিত করার
সওয়াব পাওয়া যাবে। হাদিসে এসেছে :—
قال رسول الله- صلى الله عليه وسلم- : من أحياء
سنة من سنتي قد أميتت بعدي، فإن له من الأجر مثل من عمل بها، من غير أن ينقص من
أجورهم شيئا .رواه الترمذي ৬৭৭ وابن ماجه ২০৯ صححه الألباني في سنن ابن ماجة ১৭৩
রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : ‘আমার ইন্তেকালের পরে যে
সুন্নতটির মৃত্যু হয়েছে তা যে জীবিত করবে সে ব্যক্তি এ সুন্নত আমলকারীদের সওয়াবের
পরিমাণ সওয়াব পাবে এবং তাতে আমলকারীদের সওয়াবে কোন অংশ কম হবে না।’[i]
বোখারিতে এসেছে :—
وكان ابن عمر وأبو هريرة- رضى الله عنهما- يخرجان
إلى السوق في أيام العشر ، يكبران ويكبر الناس بتكبيرهما. صحيح
البخاري ،كتاب العيدين : باب فضل العمل في أيام التشريق.
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. ও আবু হুরাইরা
রা. যিলহজ মাসের প্রথম দশকে বাজারে যেতেন ও তাকবীর পাঠ করতেন, লোকজনও তাদের অনুসরণ
করে তাকবীর পাঠ করতেন।[ii]
অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল স.-এর এই দুই প্রিয় সাহাবি লোকজনকে তাকবীর পাঠের
কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন।
মনে রাখতে হবে উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ সুন্নত।
কিন্তু সকলে একই আওয়াজে জামাতের সাথে তাকবীর পাঠ করবে না। কারণ এটা বেদআত। যেমন
একজন বলল : ‘আল্লাহু আকবার’। সকলে বলল : ‘আল্লাহু আকবার’। কেননা, রাসূলুল্লাহ স.
বা সাহাবায়ে কেরাম কখনো এরূপ করেননি। তবে সকলে একই সাথে ভিন্ন ভিন্ন আওয়াজে তাকবীর
পাঠ করতে পারবেন। তবে কাউকে তাকবীর শেখানোর জন্য এ রূপ করা হলে তার কথা আলাদা।
সতর্ক থাকতে হবে যে, আমরা কোন সুন্নত আদায় করতে
যেয়ে যেন বেদআতে লিপ্ত হয়ে না পড়ি। আল্লাহর রাসূল স. ও তার সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে
সুন্নত সমূহ আদায় করেছেন আমাদের তেমনই করতে হবে। এটাই হল আল্লাহর রাসূলের যথার্থ
অনুসরণ। আমরা যদি সে সুন্নত আদায় করতে গিয়ে সামান্যতম ভিন্ন পদ্ধতি চালু করি তাহলে
তা বেদআত বলে গণ্য হবে। হাদিসে এসেছে—
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من عمل عملا
ليس عليه أمرنا فهو رد
রাসূলে কারীম স. বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি এমন কাজ
করল যার প্রতি আমাদের (ইসলামের) নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত।’[iii]
সিয়াম পালন করা ------
হাদিসে এসেছে—
عن حفصة- رضى الله عنها- قالة : أربع لم يكن
يدعهن النبي- صلى الله عليه وسلم- : صيام عاشوراء، والعشر، وثلاثة أيام من كل شهر والركعةين قبل
الغداة . رواه
أحمد ৬/২৮৭ والنسائي صحيح سنن أبي داود ২১০৬ صحيح سنن النسائي ২২৩৬
হাফসা রা. থেকে বর্ণিত যে নবী কারীম স. কখনো
চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হল : আশুরার সওম, যিলহজের দশ দিনের সওম,
প্রত্যেক মাসের তিন দিনের সওম, ও জোহরের পূর্বের দু রাকাত সালাত।[iv]
এ হাদিসে যিলহজের দশ দিনের সওম বলতে নবম তারিখ ও
তার পূর্বের সওম বুঝানো হয়েছে। কেননা দশম দিন অর্থাৎ ঈদের দিনে তো রোজা রাখা জায়েজ
নেই। ইমাম নবভী রহ. বলেন : নবম তারিখে সওম পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
মোস্তাহাব আমল। অপরদিকে আয়েশা রা.-এর একটি উক্তি রয়েছে যে, তিনি বলেছেন : ‘আমি
রাসূলুল্লাহ স.-কে যিলহজের দশ দিনে সওম পালন করতে দেখিনি।’
এ উক্তি সম্পর্কে ইমাম নবভী রহ. বলেন যে আয়েশা
রা. এর এ উক্তিটির ব্যাখ্যা রয়েছে। ব্যাখ্যা এই যে, রাসূলুল্লাহ স. কোন অসুবিধার
কারণে সওম পালন করেননি অথবা তিনি সওম পালন করেছিলেন কিন্তু আয়েশা রা. তা দেখেননি।
আয়েশা রা.-এর বক্তব্য দ্বারা যিলহজের প্রথম নয়
দিনে সওম পালন না-জায়েজ হওয়ার কোন অবকাশ নেই। কারণ পূর্বে আলোচিত হাফসা রা.-এর
হাদিসটি মুসবিত তথা একটি আমলকে প্রতিষ্ঠিত করে। আর আয়েশা রা.-এর বক্তব্যটি একটি
আমলকে নাফি (নিষেধ) করে। হাদিসশাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী যা মুসবিত (আমল প্রমাণ
করে) তা নাফির উপর প্রাধান্য লাভ করে।[v] এ নিয়মানুযায়ী আমলের জন্য হাফসা রা.-এর হাদিস গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে রাসূলে কারীম স. এ দশ দিনে সকল প্রকার
নেক আমল পালন করতে উৎসাহিত করেছেন আর সওম অবশ্যই নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত। বরং নেক
আমলসমূহের মাঝে সওম একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আল্লাহ রাববুল আলামিনের নিকট মর্যাদাসম্পন্ন
আমল। হাদিসে এসেছে—
عن أبي أمامة- رضى الله عنه- قال: قلت يا رسول
الله ! مرني بأمر آخذه عنك، قال : عليك بالصوم، فإنه لا مثل له .روا النسائي والحاكم وفي رواية للنسائي أن أبا
أمامة قال : مرني بعمل، فقال : عليك بالصوم، فإنه لا عدل له، صححه
الألباني في صحيح النسائي برقم (২১০০)
সাহাবি আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি বললাম : হে রাসূলুল্লাহ স. আমাকে এমন একটি আমলের নির্দেশ দিন যা শুধু আমি
আপনার থেকে পাওয়ার অধিকারী হব। আল্লাহর রাসূল স. বললেন : তুমি সওম (রোজা) পালন
করবে। কারণ এর কোন নজির নেই।[vi]
তবে নাসায়ির আরেকটি বর্ণনায় এসেছে যে আবু উমামা
রা. বললেন : আমাকে একটি আমল সম্পর্কে নির্দেশ দিন। তিনি বললেন : সওম পালন কর। এর
সমকক্ষ কোন আমল নেই। তিনি আবারও বললেন : আমাকে একটি আমল সম্পর্কে নির্দেশ দিন আর
রাসূল স. একই উত্তর দিলেন।
এ হাদিস দ্বারা সওম যে এক বড় মর্যাদাসম্পন্ন ও
আল্লাহর কাছে প্রিয় আমল তা আমরা অনুধাবন করতে পারি।
কোন কোন দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে মহিলাদের
মাঝে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, যিলহজ মাসের সাত, আট ও নয় তারিখে সওম পালন করা
সুন্নত। কিন্তু সওমের জন্য এ তিন দিনকে নির্দিষ্ট করার কোন প্রমাণ বা ভিত্তি নেই।
যিলহজের ১ থেকে ৯ তারিখে যে কোন দিন বা পূর্ণ নয় দিন সওম পালন করা যেতে পারে। তবে
আরাফার দিন অর্থাৎ যিলহজ মাসের নবম তারিখ সওম পালনের ব্যাপারে স্বতন্ত্র নির্দেশনা
রয়েছে। হাদিসে এসেছে—
عن
أبي قتادة رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال :... صيام يوم عرفة احتسب على الله أن يكفر السنة
التي قبله والسنة التي بعده ...رواه مسلم 1163
সাহাবি আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ
স. বলেন : ‘আরাফার দিনের সওম আল্লাহ রাববুল আলামিন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের
কাফ্ফারা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।’[vii]
তবে যিলহজ মাসের নবম তারিখে সওম পালন করবেন তারা
যারা হজ পালনে রত নন। যারা এ দিনে হজ পালনে ব্যস্ত তাদের সওম পালন করা জায়েজ নয়।
কেননা হাদিসে এসেছে :—
روى الإمام أحمد بسنده عن عكرمت، قال: دخلت على
أبي هريرت في بيته، فسألته عن صوم يوم عرفت بعرفات، فقال : نهى رسول الله صلى الله
عليه وسلم عن صوم يوم عرفت بعرفات.
ইমাম আহমদ ইকরামা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন
: আমি আবু হুরাইরা রা.-এর সাথে তার বাড়িতে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞেস করলাম আরাফার দিনে
(যিলহজের নবম তারিখে) আরাফাতের ময়দানে অবস্থানরত (হজ পালনে রত) ব্যক্তির সওম
পালনের বিধান কি ? তিনি বললেন : রাসূলুল্লাহ স. আরাফার দিনে আরাফাতে অবস্থানকারীকে
সওম পালনে নিষেধ করেছেন।[viii]
মুসলিম শরীফের হাদিসে এসেছে : রাসূলে কারীম স.
আরাফার দিনে আরাফাতে অবস্থানকালে পানাহার করেছেন। তার সাথে অবস্থানরত লোকজন তা
দেখেছেন। [ix]
কোরবানি করা-----
এ দিনগুলোর দশম দিন সামর্থ্যবান ব্যক্তির কোরবানি
করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। আল্লাহ রাববুল আলামিন তার নবীকে কোরবানি করতে নির্দেশ
দিয়েছেন। বলেছেন:
فَصَلِّ
لِرَبِّكَ وَانْحَرْ (الكوثر: 2)
‘আপনি আপনার প্রতিপালকের
উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন ও কোরবানি করুন।’ [x]
এ আয়াতে ঈদের সালাত আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে
ও কোরবানির পশু জবেহ করতে আদেশ করা হয়েছে। তাই রাসূলুল্লাহ স. সারা জীবন কোরবানির
ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। হাদিসে এসেছে :—
قال
ابن عمر رضى الله عنه : أقام النبي صلى الله عليه وسلم بالمدينة عشر سنين يضحي.
أخرجه أحمد والترمذي، وقال أحمد شاكر إسناده صحيح وضعفه الألباني في ضعيف سنن
الترمذي (261)
সাহাবি ইবনে উমর রা. বলেছেন : নবী কারীম স. দশ
বছর মদিনাতে ছিলেন, প্রতি বছর কোরবানি করেছেন।[xi]
ঈদের সালাত আদায় করা-----
এটাও সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। একটি মত হল ঈদের
সালাত ওয়াজিব। এ মতটাই অধিকতর শক্তিশালী। এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ সামনে আসবে।
মুসলিম হিসেবে কর্তব্য হবে ঈদের সালাতে আগ্রহ
সহকারে অংশ গ্রহণ করা, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা, এবং ঈদের প্রচলনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য
সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা। মনে রাখতে হবে ঈদের দিনটা আল্লাহ তাআলার প্রতি
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও সৎ-কাজ করার দিন। এ দিনটা যেন গান-বাজনা, মদ্য-পান, অশালীন
বিনোদন—প্রভৃতি পাপাচারের দিনে পরিণত না করা হয়। কেননা অনেক সময় এ সকল কাজ-কর্ম
নেক আমল বরবাদ হওয়ার কারণে পরিণত হয়।
আরাফাহ দিবস
আরাফাহ দিবস হল এক মর্যাদাসম্পন্ন দিন। যিলহজ
মাসের নবম তারিখকে আরাফাহ দিবস বলা হয়। এর ফজিলত ও বিশেষত্বের আলোচনা ইতিপূর্বে
‘যিলহজ মাসের প্রথম দশকের ফজিলত’ অধ্যায়-এ করা হয়েছে।
এ দিনটি অন্যান্য অনেক ফজিলত সম্পন্ন দিনের চেয়ে
বেশি মর্যাদার অধিকারী। যে সকল কারণে এ দিবসটির এত মর্যাদা তার কয়েকটি নীচে আলোচিত
হল :—
ইসলাম ধর্মের পূর্ণতা লাভ, বিশ্ব মুসলিমের প্রতি
আল্লাহর নিয়ামতের পরিপূর্ণতা প্রাপ্তির দিন। হাদিসে এসেছে—
روى الإمام البخاري- رحمه الله- بسنده عن طارق بن
شهاب : قالت اليهود لعمر : إنكم تقرءون آية لو نزلت فينا لاتخذناها عيدا، فقال عمر
: إني لأعلم حيث أنزلت ، وأين أنزلت، وأين كان رسول الله صلى الله عليه وسلم حين
أنزلت: يوم عرفة وإنا والله بعرفة، (الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ
نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا) المائدة : 3
رواه البخاري ৪৬০৬
ইমাম বোখারি রহ. তার নিজ সূত্রে তারেক বিন শিহাব
রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে ইহুদীরা উমর রা.-কে বলল : আপনারা এমন একটি আয়াত তেলাওয়াত
করে থাকেন যদি সে আয়াতটি আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হতো তাহলে আমরা সে দিনটিকে ঈদ
হিসেবে উদযাপন করতাম। উমর রা. এ কথা শুনে বললেন : আমি অবশ্যই জানি কখন তা অবতীর্ণ
হয়েছে, কোথায় তা অবতীর্ণ হয়েছে, আর অবতীর্ণ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ স. কোথায় ছিলেন।
হা, সে দিনটি হল আরাফাহ দিবস, আল্লাহর শপথ ! আমরা সে দিন আরাফাতের ময়দানে ছিলাম।
আয়াতটি হল : আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার
অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম[xii]।[xiii]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে রজব রহ. সহ অনেক উলামায়ে
কেরাম বলেছেন যে এ আয়াত নাজিলের পূর্বে মুসলিমগণ ফরজ হিসেবে হজ আদায় করেননি। তাই
হজ ফরজ হিসেবে আদায় করার মাধ্যমে দ্বীনে ইসলামের পাঁচটি ভিত্তি মজবুত ভাবে
প্রতিষ্ঠিত হল।[xiv]
এ দিন হল ঈদের দিন সমূহের একটি দিন। হাদিসে এসেছে
:—
روى أبو داود عن أبي أمامة أن النبي صلى الله
عليه وسلم قال: يوم عرفة، ويوم النحر، وأيام التشريق عيدنا أهل الإسلام، وهي أيام
أكل وشرب) .صححه الألباني
في صحيح أبي داود برقم ২১১৪(
আবু দাউদ সাহাবি আবু উমামাহ রা. থেকে বর্ণনা করেন
যে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : আরাফাহ দিবস, কোরবানির দিন, ও আইয়ামে তাশরীক (কোরবানি
পরবর্তী তিন দিন) আমাদের ইসলামের অনুসারীদের ঈদের দিন। আর এ দিনগুলো খাওয়া-দাওয়ার
দিন।[xv]
في معنى حديث عمر السابق عن ابن عباس- رضى الله
عنهما- أنه قال : فإنها نزلة في عيدين اثنين : في يوم الجمعة ويوم عرفة.) صححه الألباني في سنن الترمذي برقم ২৪৩৮(
ইতিপূর্বে আলোচিত উমর রা. বর্ণিত হাদিসের
ব্যাখ্যায় ইবনে আববাস রা. বলেন : সূরা মায়েদার এ আয়াতটি নাজিল হয়েছে দুটো ঈদের
দিনে। তাহল জুমআর দিন ও আরাফাহ দিবস।[xvi]
এ হাদিস দুটো দ্বারা বুঝে আসে যে আরাফাহ দিবসকে
ঈদের দিনের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়েছে।
আরাফাহ দিবসের রোজা দু বছরের কাফ্ফারা----
যেমন হাদিসে এসেছে—
عن
أبي قةادة رضى الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم سئل عن صوم يوم عرفة فقال :
(يكفر السنة الماضية والباقية) .) رواه مسلم ১১৬৩(
সাহাবি আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত যে
রাসূলুল্লাহ স.-কে আরাফাহ দিবসের সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন : ‘বিগত
ও আগত বছরের গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে।’[xvii]
আরাফার দিন গুনাহ মাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি
লাভের দিন
যেমন হাদিসে এসেছে—
عن عائشة رضى الله عنها قالت: إن رسول الله صلى
الله عليه وسلم قال : ما من يوم أكثر من أن يعتق الله فيه عبداً من النار من يوم
عرفة، وإنه ليدنو ثم يباهي بهم الملائكة، فيقول : ما أراد هؤلاء؟
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. বলেন :
‘আরাফার দিন আল্লাহ রাববুল আলামিন তার বান্দাদের এত অধিক সংখ্যক জাহান্নাম থেকে
মুক্তি দেন যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এ দিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে
ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন : ‘তোমরা কি বলতে পার আমার এ বান্দাগণ আমার কাছে কি
চায় ?’[xviii]
ইমাম নবভী রহ. বলেন : এ হাদিসটি আরাফাহর দিবসের
ফজিলতের একটি স্পষ্ট প্রমাণ।
ইবনে আব্দুল বির বলেন : এ দিনে মোমিন বান্দারা
ক্ষমাপ্রাপ্ত হন। কেননা, আল্লাহ রাববুল আলামিন গুনাহগারদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে
গর্ব করেন না। তবে তওবা করার মাধ্যমে ক্ষমা-প্রাপ্তির পরই তা সম্ভব। হাদিসে আরো
এসেছে:—
عن أبي هريرة رضى الله عنه قال: قال رسول الله
صلى الله عليه وسلم : إن الله يباهي بأهل عرفات أهل السماء ، فيقول لهم انظروا إلى
عبادي جاؤوني شعساً غبراً. أخرجه الإمام أحمد والحاكم واللفظ له، وقال شاكر إسناده
صحيح. )المستدرك ১/৪৬৫(
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলে কারীম স.
বলেছেন : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ রাববুল আলামিন আরাফাতে অবস্থানকারীদের নিয়ে আসমানের
অধিবাসীদের কাছে গর্ব করেন। বলেন : আমার এ সকল বান্দাদের দিকে চেয়ে দেখ ! তারা
এলোমেলো কেশ ও ধুলোয় ধূসরিত হয়ে আমার কাছে এসেছে।’[xix]
আরাফাহ দিবসে যে সকল আমল শরিয়ত দ্বারা প্রমাণিত
এ দিনে রোজা পালন করা। যেমন হাদিসে এসেছে—
عن
أبي قتادة- رضى الله عنه- أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : ... صيام يوم عرفة احتسب على الله أن يكفر السنة
التي قبله والسنة التي بعده .)...رواه مسلم
১১৬৩(
সাহাবি আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ
স. বলেন : ‘আরাফার দিনের সওম আল্লাহ রাববুল আলামিন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের
কাফ্ফারা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।’[xx]
মনে রাখতে হবে আরাফার দিনে সওম তারাই রাখবেন যারা
হজ পালনরত নন। যারা হজ পালনে রত তারা আরাফার দিবসে সওম পালন করবেন না। যেমন
ইতিপূর্বে আলোচনা হয়েছে।
আরাফার দিনে হজ পালনরত ব্যক্তি রাসূলে কারীম
স.-এর আদর্শ অনুসরণ করেই ঐ দিনের সওম পরিত্যাগ করবেন। যেন তিনি আরাফাতে
অবস্থানকালীন সময়ে বেশি বেশি করে জিকির, দোয়াসহ অন্যান্য আমলে তৎপর থাকতে পারেন।
আর এদিনে শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোকে সকল
হারাম ও অপছন্দনীয় কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। হাদিসে এসেছে—
في مسند الإمام أحمد من حديث ابن عباس- رضى الله
عنهما- وفيه (إن هذا اليوم من ملك فيه سمعه وبصره غفر له) )ورواه
المستدرك وقال شاكر إسناده صحيح(
মুসনাদে আহমদে ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে
এসেছে যে, এ দিনে যে ব্যক্তি নিজ কান ও চোখের নিয়ন্ত্রণ করবে তাকে ক্ষমা করা হবে।[xxi]
http://www.facebook.com/pages/Al-Quran-Modern-Science/140069416050931
http://muslim.zohosites.com/ http://www.quranic-science.blogspot.com/
No comments:
Post a Comment