দর্শক সংখ্যা

Sunday, February 10, 2013

কেয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর-৫

কেয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর-৫

আব্দুল মালেক আলী আল-কুলাইব
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
কেয়ামতের দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাউজে কাউসার-- কেয়ামতের দিন মুসলিমগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাউজে কাউসারে পানি পানের জন্য সমবেত হবে। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, মেশকের চেয়ে এর সুঘ্রাণ তীব্র আর তার পাত্রগুলো আকাশের নক্ষত্রের মত। যে এ থেকে একবার পানি পান করবে সে আর কখনো পিপাসিত হবে না। হাদীসে এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ترد علي أمتي الحوض ، وأنا أذود الناس عنه ؛ كما يذود الرجل إبل الرجل عن إبله ، قالوا : يا نبي الله ! أتعرفنا ؟ قال : نعم ، لكم سيما ليست لأحد غيركم ، تردون علي غرا محجلين من آثار الوضوء . وليصدن عني طائفة منكم ، فلا يصلون ، فأقول : يا رب ! هؤلاء من أصحابي ؟ ! فيجيبني ملك فيقول : وهل تدري ما أحدثوا بعدك ؟ !
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: হাউজে কাউসারে আমার উম্মত সমবেত হবে। আমি অনেক মানুষকে এমনভাবে তাড়িয়ে দেব যেমন একজনের উট অন্য জনের উটের পাল থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি আমাদের তখন চিনবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যা, তোমাদের এমন কিছু আলামত আছে যা অন্যদের নেই। তোমরা আমার কাছে উপস্থিত হবে আর তোমাদের অজুর স্থানগুলো চকমক করতে থাকবে। তোমাদের একটি দলকে আমার থেকে দুরে সরিয়ে দেয়া হবে, তারা হাউজের কাছে পৌছতে পারবে না। সে সময় আমি বলব, হে আমার প্রভূ এরা আমার অনুসারী। তখন এক ফেরেশতা উত্তর দেবে, আপনি কি জানেন আপনার পরে তারা কি প্রচলন করেছে? (বর্ণনায়: মুসলিম)  

এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. উম্মতের সকল মানুষ হাউজে কাউসারে পানি পানের জন্য ভীর করবে।
 দুই. অজুর আলামত দেখে মুসলমানদের চেনা যাবে।
তিন. অজুর ফজিলত।
চার. মুসলমানদের একটি অংশকে হাউজে কাউসার থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। কারণ তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গত হওয়ার পর ইসলামে নতুন বিষয়ের প্রচলন করেছে বা তাতে লিপ্ত হয়েছে। পাঁচ. ইসলামে বিদআত প্রচলন ও তার অনুসরণ একটি মহা-পাপ। হাদীসে এসেছে
عن أسماء بنت أبي بكر رضي الله عنهما قالت : قال النبي صلى الله عليه وسلم: إني على الحوض حتى أنظر من يرد علي منكم ، وسيؤخذ ناس دوني ، فأقول : يا رب مني ومن أمتي ، فيقال : هل شعرت ما عملوا بعدك ، والله ما برحوا يرجعون على أعقابهم .
আবু বকর রা. এর মেয়ে আসমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমি হাউজে কাউসারে থাকব আর দেখব তোমাদের কে কে আসছে। কিন্তু কিছু মানুষকে আমার অনুমতি ব্যতীত নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে প্রভূ! এরা আমার অনুসারী, আমার উম্মতের অংশ। আমাকে বলা হবে, আপনি কি জানেন, আপনার পরে এরা কি কাজ করেছে? আল্লাহর শপথ! তারা পিছনে ফিরে যাবে। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম) হাউজে কাউসারে মুসলিম উম্মাহ কখন সমবেত হবে? এ বিষয়ে উলামাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অনেকে বলেছেন, এটা পুলসিরাতের পূর্বে হবে। আবার কেহ কেহ বলেছেন এটা হিসাব-কিতাব, মিযান ও পুলসিরাতের পরে হবে। আমি মনে করি প্রথম মতটি অধিকতর সঠিক। কারণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবীদের সাক্ষাতের ওয়াদা করেছেন হাউজে কাউসারে কাছে। যেমন হাদীসে এসেছে
عن عبد الله بن زيد بن عاصم رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال للأنصار: إنكم ستلقون بعدي أثرة ، فاصبروا حتى تلقوني على الحوض .
আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ ইবনে আসেম রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসারদের উদ্দেশ্যে বলেছেন: আমার পরে তোমরা অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে শাসকদের অগ্রাধিকার দেখতে পাবে। তোমরা তখন ধৈর্য ধারণ করবে হাউজে কাউসারে আমার কাছে সাক্ষাত লাভ পর্যন্ত। হাদীসে এসেছে
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: حوضي مسيرة شهر ، ماؤه أبيض من اللبن ، وريحه أطيب من المسك ، وكيزانه كنجوم السماء ، من شرب منها فلا يظمأ أبدا
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. বলেন: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমার হাউজের প্রশস্ততা হবে এক মাসের সমান দূরত্ব। তার পানি দুধের চেয়েও সাদা, সুঘ্রান মেশকের চেয়ে উত্তম। আর তার পাত্রগুলো আকাশের নক্ষত্রের মত। যে তা থেকে পান করবে কখনো পিপাসিত হবে না। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম) এ হাদীসটি দিয়ে বুঝা যায় কেয়ামত সংঘটনের পর পরই জান্নাত জাহান্নাম নির্ধারণ হওয়ার আগে হাউজে কাউসারে সমবেত হওয়ার বিষয়টি চলে আসবে।
 নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত--- কেয়ামতের পর জান্নাত-কে ঈমানদারদের নিকটে নিয়ে আসা হবে। তারা তাতে প্রবেশ করার জন্য অস্থির হয়ে যাবে। অপরদিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিচার, হিসাব নিকাশে দেরী করবেন। তখন মানুষেরা নবী ও রাসূলদের কাছে যাবে আল্লাহর কাছে শুপারিশ করার জন্য। তখন প্রত্যেক নবীই বলবে, আমি আমার জন্য চিন্তিত তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে যাও। জান্নাত ঈমানদারদের নিকটবর্তী করা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ غَيْرَ بَعِيدٍ
আর জান্নাতকে মুত্তাকীদের অদূরে কাছেই আনা হবে। (সূরা কাফ, আয়াত ৩১) তিনি আরো বলেন:
وَإِذَا الْجَنَّةُ أُزْلِفَتْ
আর যখন জান্নাতকে নিকটকর্তী করা হবে। (সূরা আত তাকবীর, আয়াত ১৩) একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে :
عن أبي هريرة و حذيفة رضي الله عنهما قالا: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يجمع الله تبارك وتعالى الناس . فيقوم المؤمنون حتى تزلف لهم الجنة . فيأتون آدم فيقولون : يا أبانا استفتح لنا الجنة . فيقول : وهل أخرجكم من الجنة إلا خطيئة أبيكم آدم ! لست بصاحب ذلك . اذهبوا إلى ابني إبراهيم خليل الله
আবু হুরাইরা ও হুজাইফা রা. থেকে বর্ণিত তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তাআলা যখন সকল মানুষকে একত্র করবেন তখন ঈমানদারগণ দাঁড়িয়ে যাবে জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য। তারা আদম আলাইহিস সালাম এর কাছে এসে বলবে, হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য জান্নাত খুলে দেয়ার জন্য আবেদন করুন। আদম আলাইহিস সালাম উত্তরে বলবেন, তোমরা কি জান না, তোমাদের পিতা আদমের ভুলের কারণে তোমাদের জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হয়েছে? আমার আবেদন করার অধিকার নেই। বরং তোমরা ইবারহীম খলীলুল্লাহর কাছে যাও. . . .। (বর্ণনায়: মুসলিম) হাদীসে এ বিষয়ে বিস্তারিত এভাবে এসেছে:
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: أتي رسول الله صلى الله عليه وسلم بلحم ، فرفع إليه الذراع ، وكانت تعجبه ، فنهس منها نهسة ثم قال : ( أنا سيد الناس يوم القيامة ، وهل تدرون مم ذلك ؟ يجمع الله الناس الأولين والآخرين في صعيد واحد ، يسمعهم الداعي وينفذهم البصر ، وتدنو الشمس ، فيبلغ الناس من الغم والكرب ما لا يطيقون ولا يحتملون ، فيقول الناس : ألا ترون ما قد بلغكم ، ألا تنظرون من يشفع لكم إلى ربكم ؟ فيقول بعض الناس لبعض : عليكم بآدم ، فيأتون آدم عليه السلام فيقولون له : أنت أبو البشر ، خلقك الله بيده ، ونفخ فيك من روحه ، وأمر الملائكة فسجدوا لك ، اشفع لنا إلى ربك ، ألا ترى إلى ما نحن فيه ، ألا ترى إلى ما قد بلغنا ؟ فيقول آدم : إن ربي قد غضب اليوم غضبا لم يغضب قبله مثله ، ولن يغضب بعده مثله ، وإنه نهاني عن الشجرة فعصيته ، نفسي نفسي نفسي ، اذهبوا إلى غيري ، اذهبوا إلى نوح . فيأتون نوحا فيقولون : يا نوح ، إنك أنت أول الرسل إلى أهل الأرض ، وقد سماك الله عبدا شكورا ، اشفع لنا إلى ربك ، ألا ترى إلى ما نحن فيه ؟ فيقول : إن ربي عز وجل قد غضب اليوم غضبا لم يغضب قبله مثله ، ولن يغضب بعده مثله ، وإنه قد كانت لي دعوة دعوتها على قومي ، نفسي نفسي نفسي ، اذهبوا إلى غيري ، اذهبوا إلى إبراهيم . فيأتون إبراهيم فيقولون : يا إبراهيم ، أنت نبي الله وخليله من أهل الأرض ، اشفع لنا إلى ربك ، ألا ترى إلى ما نحن فيه ؟ فيقول لهم : إن ربي قد غضب اليوم غضبا لم يغضب قبله مثله ، ولن يغضب بعده مثله ، وإني قد كنت كذبت ثلاث كذبات - فذكرهن أبو حيان في الحديث - نفسي نفسي نفسي ، اذهبوا إلى غيري ، اذهبوا إلى موسى . فيأتون موسى فيقولون : يا موسى ، أنت رسول الله ، فضلك الله برسالته وبكلامه على الناس ، اشفع لنا إلى ربك ، ألا ترى إلى ما نحن فيه ؟ فيقول : إن ربي قد غضب اليوم غضبا لم يغضب قبله مثله ، ولن يغضب بعده مثله ، وإني قد قتلت نفسا لم أومر بقتلها ، نفسي نفسي نفسي ، اذهبوا إلى غيري ، اذهبوا إلى عيسى . فيأتون عيسى فيقولون : يا عيسى ، أنت رسول الله ، وكلمته ألقاها إلى مريم وروح منه ، وكلمت الناس في المهد صبيا ، اشفع لنا ، ألا ترى إلى ما نحن فيه ؟ فيقول عيسى : إن ربي قد غضب اليوم غضبا لم يغضب قبله مثله قط ، ولن يغضب بعده مثله - ولم يذكر ذنبا - نفسي نفسي نفسي ، اذهبوا إلى غيري ، اذهبوا إلى محمد صلى الله عليه وسلم . فيأتون محمدا صلى الله عليه وسلم فيقولون : يا محمد أنت رسول الله ، وخاتم الأنبياء ، وقد غفر الله لك ما تقدم من ذنبك وما تأخر ، اشفع لنا إلى ربك ، ألا ترى إلى ما نحن فيه ؟ فأنطلق فآتي تحت العرش ، فأقع ساجدا لربي عز وجل ، ثم يفتح الله علي من محامده وحسن الثناء عليه شيئا لم يفتحه على أحد قبلي ، ثم يقال : يا محمد ارفع رأسك ، سل تعطه ، واشفع تشفع ، فأرفع رأسي فأقول : أمتي يا رب ، أمتي يا رب ، فيقال : يا محمد أدخل من أمتك من لا حساب عليهم من الباب الأيمن من أبواب الجنة ، وهم شركاء الناس فيما سوى ذلك من الأبواب ، ثم قال : والذي نفسي بيده ، إن ما بين المصراعين من مصاريع الجنة كما بين مكة وحمير ، أو : كما بين مكة وبصرى )
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে একদিন বকরীর ডানার গোশত পরিবেশন করা হল। তিনি এটা পছন্দ করতেন। তিনি এটি দাতের কিনারা দিয়ে চিবাতে লাগলেন। তখন তিনি বললেন, কেয়ামতের দিন আমি হব সকল মানুষের নেতা। তোমরা কি জান এটা কিভাবে হবে? কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা আমার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে একত্র করবেন একটি প্রান্তরে। তারা সকলকে শুনবে ও দেখবে। সূর্য মানুষের নিকটবর্তী হবে। মানুষেরা এমন দু:চিন্তা অস্থিরতায় বন্দি হবে, যা তারা সহ্য করতে পারবে না আবার এর থেকে বাঁচতেও পারবে না। তখন মানুষেরা একে অপরকে বলবে, দেখছো আমরা কি দুরবস্থায় পতিত হয়েছি? আমাদের জন্য আমাদের প্রতিপালকের কাছে কে শুপারিশ করবে আমরা কি সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করবো না? চলো আমরা আদম আলাইহিস সালাম এর কাছে যাই। তারা আদম আলাইহিস সালাম এর কাছে এসে বলবে, হে আদম! আপনি মানুষের পিতা। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজে আপনার মধ্যে আত্মা ফুকে দিয়েছেন। তিনি আপনাকে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আমাদের প্রতিপালকের কাছে শুপরিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি দুরাবস্থায় আছি? আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পতিত হয়েছি? আদম আলাইহিস সালাম বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেননি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। তিনি তো আমাকে সেই গাছের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু আমি তা অমান্য করেছি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। নূহের কাছে যাও। তারা নূহ আলাইহিস সালাম এর কাছে এসে বলবে হে নূহ! আপনি পৃথিবীতে প্রথম রাসূল। আল্লাহ আপনাকে কৃতজ্ঞ বান্দা বলে অভিহিত করেছেন। আপনি আমাদের জন্য শুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেননি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। আমি আমার জাতির বিরুদ্ধে দুআ করেছিলাম। আমি আমার চিন্তা করছি। তোমরা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর কাছে যাও। তারা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর কাছে আসবে। তারা বলবে, আপনি আল্লাহর নবী ও পৃথিবী বাসীর মধ্যে তার খলীল (বন্ধু)। আপনি আমাদের জন্য শুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেননি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। আমি কিছু মিথ্যা বলেছিলাম। তাই আমি আমার চিন্তা করছি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। তোমরা মূছা আলাইহিস সালাম এর কাছে যাও। তারা মূছা আলাইহিস সালাম এর কাছে এসে বলবে, হে মূছা আপনি আল্লাহ তাআলার রাসূল। আল্লাহ আপনার সাথে কথা বলে আপনাকে ধন্য করেছেন। আপনি আমাদের জন্য শুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেননি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। আমি একজন মানুষকে হত্যা করেছিলাম। অথচ আমি এ ব্যাপারে আদিষ্ট ছিলাম না। এখন আমার চিন্তা আমি করছি। তোমরা ঈছা আলাইহিস সালাম এর কাছে যাও। তারা ঈছা আলাইহিস সালাম এর কাছে এসে বলবে হে ঈছা! আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনি দোলনাতে থাকাকালেই মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আপনাকে আল্লাহর বাক্য ও তার পক্ষ থেকে রূহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যা মারইয়ামের কাছে পাঠানো হয়েছে। আপনি আমাদের জন্য শুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেননি। আমার চিন্তা আমি করছি। তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে যাও। তারা আমার কাছে এসে বলবে, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি আল্লাহ রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আল্লাহ তাআলা আপনার পূর্বের ও পরের সকল পাপ ক্ষমা করেছেন। আপনি আমাদের জন্য শুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? আমি চলে আসবো তখন আরশের নীচে। আর আমার প্রতিপালকের জন্য সেজদা করবো। তখন আল্লাহ আমার জন্য তার রহমত উম্মুক্ত করবেন। আমাকের এমন প্রশংসা ও গুণাগুণ বর্ণনার বাণী অন্তরে গেথে দিবেন যা আমার পূর্বে কাউকে দেয়া হয়নি। অত:পর আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মদ! তোমার মাথা উঠাও। তুমি প্রার্থনা করো, তোমার প্রার্থনা কবুল করা হবে। তুমি শুপারিশ করো তোমার শুপারিশ কবুল করা হবে। তখন আমি বলবো, হে প্রতিপালক! আমার উম্মত নিয়ে আমি চিন্তিত! আমার উম্মত নিয়ে আমি চিন্তিত! আমার উম্মত নিয়ে আমি চিন্তিত!! তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ! তোমার উম্মতদের জান্নাতে প্রবেশ করাও। তবে তাদেরকে যাদের কোন হিসাব-নিকাশ হবে না। তাদের জান্নাতের ডান পাশের দরজা দিয়ে প্রবেশ করাও। অবশ্য অন্যসব দরজা দিয়েও তারা প্রবেশ করতে পারবে। যার হাতে মুহাম্মাদের জীব তার শপথ, জান্নাতের গেটের দু পাটের মধ্যে প্রশস্ততা হবে মক্কা ও বসরার মধ্যে দূরত্বের সমান। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
  এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:  
এক. হাদীসে দেখা যায় নবীগণ সেদিন প্রত্যেকে নিজেদের অন্যায়গুলোর কথা মনে করবেন। আসলে নবীগণ সকল অন্যায় ও পাপাচার থেকে মুক্ত ছিলেন। তবে তারা যে পাপের কথা বলবেন তা হল আল্লাহ তাআলার প্রতি তাদের বিনয় ও পরিপূর্ণ আত্ন-সমর্পনের প্রকাশ।
দুই. ইবারহীম আলাইহিস সালাম যে মিথ্যা বলেছিলেন এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে যে, ইবারহীম আলাইহিস সালাম তিনটি মিথ্যা কথা বলেছিলেন। প্রথমটি হল, তাকে যখন মূর্তি পুজার উৎসবে যেতে বলা হল, তখন তিনি বলেছিলেন আমি অসুস্থ। দ্বিতয়টি হল, যখন তিনি মূর্তিগুলো ভেঙ্গে বড় মূর্তিটি রেখে দিয়েছিলেন আর লোকরা জিজ্ঞস করল এটা কে করেছে? তখন তিনি বলেছিলেন, বড় মূর্তিটি এ কাজ করেছে। তৃতীয়টি হল, যখন তিনি নিজ স্ত্রী সারাকে নিয়ে সফর করছিলেন তখন এক অত্যাচারী লোকের থেকে নিজেকে বাচানোর জন্য স্ত্রী সম্পর্কে বলেছিলেন, এ আমার বোন। আসলে এগুলো ইবরাহীমের দৃষ্টিভংগিতে মিথ্যা ছিল না। কিন্তু কোন কোন শ্রোতার কাছে এগুলো মিথ্যার মত মনে হয়েছে। আর এগুলো মিথ্যা হলেও নিন্দনীয় মিথ্যা নয়। এগুলো নন্দিত মিথ্যা। নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কেয়ামতের সময় যে বলবেন আমি মিথ্যা বলেছি সেটা আল্লাহর কাছে চরম বিনয় ও পূর্ণ আত্নসমর্পনের বহি:প্রকাশ হিসাবেই বলবেন। সেদিন ভয়াবহতা এমন হবে যে, আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাগনও তাদের অনেক ভাল কাজকে খারাপ বলে ধারনা করতে থাকবে।  
তিন. সকল নবী ও রাসূলদের উপর আমাদের রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল।  
চার. আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ-প্রার্থনার সুন্নত তরিকা হল, দুআর শুরুতে তার গুণগান, প্রশংসা ও হামদ-সানা করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই ভয়াবহ সময়েও আল্লাহ তাআলার হামদ-প্রশংসার সুন্দর এ আদর্শটি ভুলে যাবেন না।
 উম্মতে মুহাম্মাদীর হিসাব হবে সর্বপ্রথম--- কেয়ামতের এ দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসারী মুসলিমদের বিশেষভাবে সম্মানিত করবেন। সকল পূর্ববর্তী জাতিগুলোকে দাঁড় করিয়ে রেখে মুসলিম জাতির হিসাব-নিকাশ বিচার ফয়সালা করে দিবেন। যদিও মুসলিম জাতি দুনিয়াতে আভির্ভাবের দিক দিয়ে অন্যান্য জাতিগুলোর পরে এসেছে কিন্তু কিয়ামতের দিন তাদের নিষ্পত্তি আগে করা হবে। এটি উম্মতে এক বিশাল সম্মান ও পুরস্কার। হাদীসে এসেছে :
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: نحن الآخرون ونحن السابقون يوم القيامة . بيد أن كل أمة أوتيت الكتاب من قبلنا . وأوتيناه من بعدهم . ثم هذا اليوم الذي كتبه الله علينا . هدانا الله له . فالناس لنا فيه تبع . اليهود غدا . والنصارى بعد غد .
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমরা শেষে এসেছি কিন্তু কেয়ামতের দিন সকলের আগে থাকবো। যদিও অন্য সকল জাতিগুলো (ইহুদী ও খৃষ্টান) কে গ্রন্থ দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে, আমাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদের পরে। অত:পর জেনে রাখো এই (জুমার) দিনটি আল্লাহ আমাদের দান করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সঠিক পথে দিশা দিয়েছেন। আর অন্য লোকেরা এ ব্যাপারে আমাদের পিছনে আছে। ইহুদীরা জুমার পরের দিন (শনিবার) উদযাপন করে আর খৃষ্টানেরা তার পরের দিন (রবিবার) উদযাপন করে। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)  
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:  
এক. মুসলিম জাতির মর্যাদা। ইহুদী ও খৃষ্টানদের চেয়ে মুসলমানদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশী। ইসলামের বর্তমানে ইহুদী খৃষ্টানেরা তো কাফের বা অবিশ্বাসী। তাদের চেয়ে মুসলিম উম্মাহ শ্রেষ্ঠ এতে কোন সন্দেহ নেই। আর ইসলামপূর্ব যুগের ইহুদী খৃষ্টানেরা যারা কাফের ছিল না, তাদের চেয়েও মুসলিম উম্মাহ শ্রেষ্ঠ। এটি এ হাদীস দিয়েও প্রমাণিত হল।  
দুই. জুমার দিনের ফজিলত জানা গেল। মুলত হাদীসটি জুমার দিনে ফজিলত সম্পর্কিত। উদ্দেশ্য হল সাপ্তাহিক প্রার্থনার দিন নির্বাচনে ইহুদী ও খৃষ্টানেরা যেমন আমাদের পিছনে পড়ে গেছে তেমনি কেয়ামত দিবসেও তারা আমাদের পিছনে থাকবে। ইহুদীরা শুক্রবারের পরের দিন সাপ্তাহিক প্রার্থনা করে থাকে। আর খৃষ্টানের শুক্রবারের দুদিন পর সাপ্তাহিক প্রার্থনা পালন করে থাকে। আবু হুরাইরা ও হুযাইফা রা. থেকে আরেকটি বর্ণনায় এসেছে :
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: نحن الآخرون من أهل الدنيا والأولون يوم القيامة المقضي لهم قبل الخلائق .
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: পৃথিবীতে বসবাসকারী জাতিগুলোর মধ্যে আমাদের আগমন সর্বশেষে আর কেয়ামতের দিনে আমাদের ফয়সালা করা হবে সকল সৃষ্টি জীবের পূর্বে। (বর্ণনায়: মুসলিম) হাদীসে আরো এসেছে :
عن ابن عباس رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: نحن آخر الأمم وأول من يحاسب يقال أين الأمة الأمية ونبيها فنحن الآخرون الأولون.
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমরা হলাম জাতিসমূহের সর্বশেষ। কিন্তু কেয়ামতে আমাদের হিসাব সর্ব প্রথম করা হবে। তখন বলা হবে: উম্মী (আসল) জাতি ও তাদের নবী কোথায়? তাই আমরা সর্বশেষ অথচ (মর্যাদায়) প্রথম। (বর্ণনায় : ইবনে মাজা, আল-বানী রহ. সহীহ আল জামে গ্রন্থে হাদীসটি-কে সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন)

No comments:

Post a Comment