দর্শক সংখ্যা

Thursday, February 14, 2013

শয়তানের প্রবেশপথ (পর্ব:৩ ও ৪)

শয়তানের প্রবেশপথ (পর্ব:৩ & ৪)

কতিপয় হাদিসে উল্লেখিত তাহরীশের কিছু উদাহরণ - সোলাইমান বিন সারদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলের সা. সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম, ইতিমধ্যে দু’জন লোক পরস্পরকে গালমন্দ করছে। তাদের একজনের চেহারার রক্তিম হয়ে গেল এবং তার শিরা সমূহ ফুলে গেল। অত:পর নবী সা. বললেন, إني لأعلم كلمة لو قالها ذهب عنه ما يجد، لو قال: أعوذ بالله من الشيطان ذهب عنه ما يجد، فقالوا له إن النبي صلى الله عليه وسلم قال : تعوذ بالله من الشيطان، فقال : وهل بي جنون؟ ذكر النبووي أن (الحديث فيه أن الغضب في غير الله تعالى من نزع الشيطان. شرح النووي على مسلم (১৬/২৪৬) আমি এমন একটি শব্দ জানি যদি সে তা উচ্চারণ করে তার
উপলব্ধি দূর হয়ে যাবে। যদি সে বলে আমি আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে পানাহ চাই তবে তার ক্ষোভ পড়ে যাবে। অত:পর সবাই তাকে বলল নবী সা. বলেছেন, তুমি আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাও, সে বলল আমার মধ্যে কি উন্মাদনার লক্ষণ আছে? নববী উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুতে ক্রোধ শয়তানের প্রভাব থেকে। এবং নবী সা. ঐ রাত্রিতে ভয় পেয়েছিলেন, যেদিন শয়তান দু’জনের সাহাবির অন্তরে কিছু কুমন্ত্রণা দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিল। আলী ইবনে হুনাইন হতে বর্ণিত, নবী সা.-এর স্ত্রী সাফিয়্যা বনিতে হুয়াই তাকে সংবাদ দিয়েছে, أنها جاءت رسول الله صلى الله عليه وسلم تزوره وهو معتكف في المسجد في العشرالغوابر من رمضان فتحدثت عنده ساعة من العشاء، ثم قامت تنقلب فقام معها النبي صلى الله يقلبها، حتى إذا بلغت باب المسجد الذي عند مسكن أم سلمة زوج النبي صلى الله عليه وسلم مر بهما رجلان من الأنصار فسلما على رسول الله ثم نفذا، فقال لهما رسول الله صلى الله عليه وسلم: على رسلكما إنما هي الصفية بنت حيي، قالا: سبحان الله يا رسول الله، وكبر عليهما ما قال، قال: إن الشيطان يجري من ابن آدم مبلغ الدم، وإني خشيت أن يقذف في قلوبكما. رواه البخاري(৬২১৯)، ومسلم(২১৭৫) তিনি রাসূলের সা. সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। ঐ মুহূর্তে তিনি মসজিদে রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ অবস্থায় ছিলেন। অত:পর তিনি তার সঙ্গে রাতে কিছুক্ষণ কথা বললেন, তার পর তিনি ফিরে আসার জন্য দাঁড়ালেন। তার পর নবী সা. তাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য তার সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন। তার পর যখন সাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই যখন নবী সা.-এর স্ত্রী উম্মে সালমার আবাস্থলে এর নিকট মসজিদের দরজায় পৌঁছোলেন, উভয়ের পাশ দিয়ে আনসারদের দু’জন ব্যক্তি অতিক্রম করল। উভয়ে রাসূল কে সালাম দিল। অত:পর রাসূল সা. তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, সে হল সাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই। উভয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল সা. সুবহানাল্লাহ! রাসূল এর কথা উভয়ের কাছে বড় মনে হল। তিনি বললেন, নি:সন্দেহ শয়তান আদম সন্তানের রক্তের শিরায় উপশিরায় প্রবাহিত হয়। আমি ভয় করছি যে তোমাদের অন্তরে মন্দ ধরনা সৃষ্টি করে। ইবনে হাজর রহ. বলেন, নবী সা. তাদের উভয়ের মন্দ ধারণার কথা বলেন নি। কারণ তিনি উভয়ের ঈমানের দৃঢ়তার ব্যাপারে নিশ্চিত। তবে উভয়ের ক্ষেত্রে এ আশঙ্কা পোষণ করেছেন, শয়তান তাদেরকে এ ব্যাপারে প্ররোচিত করতে পারে। কেননা, তারা নিষ্পাপ নন। এ মন্দ ধারণা তাদের ধ্বংসের দিকে ধাবিত করতে পারে। তাই বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য এবং এরকম ঘটনায় তাদের পরবর্তীদের জন্য শিক্ষা স্বরূপ তিনি উভয়কে সঙ্গে সঙ্গে অবগত করালেন। হাদিসে এসেছে, التحرز من التعرض لسوء الظن. فتح الباري لابن حجر(৪/৩২৯) মন্দ ধারণার শিকার হওয়া থেকে বেঁচে থাকতে হবে। জাবের রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন— إن إبليس يضع عرشه على الماء ثم يبعث سراياه فأدناهم منه منزلته أعظمهم فتنة، يجيئ أحدهم فيقول: فعلت كذا وكذا، فيقول: ما صنعت شيئا، قال: ثم يجيئ أحدهم فيقول: ما تركته حتى فرقت بينه وبين امرأته، قال: فيدنيه منه ويقول: نعم أنت. قال الأعمش: أراه قال: فيلتزمه. رواه مسلم(২৮১৩). শয়তান তার সিংহাসন পানির উপর স্থাপন করে, অত:পর তার বাহিনী প্রেরণ করে। তাদের মধ্যে মর্যাদায় সর্বনিম্ম যে সে সবচে’ বড় ফেতনা সৃষ্টিকারী। তাদের একজন আসে এবং বলে, আমি এই কাজ করেছি ওটা করেছি। শয়তান তাকে বলে, তুমি কিছুই করোনি। অত:পর তাদের আরেকজন এসে বলে আমি কোন কিছুই ছাড়িনি। এমনকি অমুক ও তার স্ত্রীর মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছি। অত:পর শয়তান তার নিকটে যাবে এবং বলবে হ্যাঁ, তুমিই আসল কাজ করেছ। অত:পর সে তাকে জড়িয়ে ধরবে। عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: لايشير أحدكم على أخيه بالسلاح فإنه لا يدري لعل الشيطان ينزع في يده فيقع في حفرة من النار. رواه البخاري (৭০৭২) রাসূল সা. বলেছেন, তোমাদের কেউ স্বীয় ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দিয়ে ইঙ্গিত করবে না। হতে পারে, অজান্তেই শয়তান হাত থেকে অস্ত্র নিয়ে নিবে। যার ফলশ্র“তিতে সে জাহান্নামের অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হবে। নবী সা.-এর স্ত্রী আয়েশা রা. বর্ণনা করেন— أن رسول الله صلى الله عليه وسلم خرج من عندها ليلا، قالت: فغرت عليه فجاء فرأى ما أصنع، فقال: ما لك يا عائشة؟ أغرت؟ فقلت: وما لي لا يغار مثلي على مثلك؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم:أقد جاءك شيطانك؟ قالت: يا رسول الله أو معي شيطان؟ قال: نعم، قلت: ومع كل إنسان؟ قال: نعم، قلت: ومعك يا رسول الله؟ قال:نعم، ولكن ربي أعانني عليه حتى أسلم. رواه مسلم(২৮১৫) রাসূলুল্লাহ সা. একরাতে তার কাছে থেকে বের হয়েছেন। তিনি বলেন, অত:পর তার উপর অভিমান করি। অত:পর তিনি আসলেন, ও আমাকে দেখলেন আমি কি করছি। অত:পর বললেন, হে আয়েশা ! তোমার কি হয়েছে? তুমি কি অভিমান করেছ? তার পর আমি বললাম, আমার মত নারী আপনার ওপর অভিমান করবে না তো কি হবে? অত:পর রাসূল সা. বলেছেন তোমাকে কি শয়তান আক্রান্ত করেছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসূল আমার সঙ্গে ও কি শয়তান আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আছে। আমি বললাম, প্রত্যেক মানুষের সঙ্গেই কি শয়তান আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সা. আপনার প্রভু আমাকে তার বিরুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন, ফলে সে মুসলমান হয়ে গেছে।    
(৯) এবাদত সমূহকে বিনষ্ট বা ক্ষতি সাধনের প্রয়াস: যেমন এদিক সেদিক তাকানোর মাধ্যমে নামাজের মনোযোগ নষ্ট করাও নামাজে কুমন্ত্রণা দেওয়া। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, هو اختلا س يختلسه الشيطان من صلاة العبد. رواه البخاري(৭৫১) এটা ও এক প্রকার চুরি। শয়তান মানুষের নামাজ থেকে তা চুরি করে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল বলেছেন, إذا نودي للصلاة أدبر الشيطان وله ضراط حتى لا يسمع التأذين، فإذا قضى النداء أقبل، حتى إذا ثوب بالصلاة أدبر، حتى إذا قضى التثويب أقبل حتى يخطر بين المرء ونفسه، يقول:اذكر كذا، اذكر كذا، لما لم يكن يذكر، حتى يظل الرجل لا يدري كم صلى؟ رواه البخاري (৬০৮) ومسلم (৩৮৯) যখন নামাজের জন্যে আহ্বান করা হয়, শয়তান পিঠ-পিছে দৌড়ে যতক্ষণ না সে আজান শুনতে পায়। যখন আজান শেষ হয় সে সামনে অগ্রসর হয়। যখন নামাজের কাতার সোজা করা হয় সে পিঠ ফিরে চলে যায়। অত:পর যখন একামাত শেষ হয় সে মানুষকে ও তার প্রবৃত্তিকে ধোঁকা দেয়, সে বলে, তুমি অমুক জিনিস, স্মরণ কর, ওটা মনে কর, যা সে ইতি পূর্বে মনে করতে পার ছিল না। এভাবে মানুষ কত রাকাত নামাজ পড়েছিল তা বলতে পারে না।
  (১০) কাফের ও ফাসেক বন্ধুদের প্রতি মন্দ চিন্তা ভাবনা, অশ্লীল কথাবার্তা ও ত্রটি পূর্ণ কাজের মাধ্যমে ম্যাসেজ প্রদান: তারা এ পদ্ধতিতে মুমিনকে তার এবাদতের প্রতি দৃঢ় আস্থা থেকে বিচ্যুতি, আল্লাহর শরিয়ত, বিধি-বিধান ও ওয়াদায় সন্দেহ সৃষ্টির অপচেষ্টা লিপ্ত হয়। শয়তান মন্দ কাজের প্রতি ভালোবাসা ও কল্যাণময় কাজের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টির চেষ্টা করে। وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ وَإِنَّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ. ﴿الأنعام : ১২১﴾ ‘(জবেহের সময়) যার ওপর আল্লাহ তাআলার নাম নেয়া হয়নি, সে (জন্তুর গোশত) তোমরা কখনো খাবে না, (কেননা) তা হচ্ছে জঘন্য গুনাহের কাজ। শয়তানের (কাজই হচ্ছে) তার সঙ্গী সাথিদের মনে প্ররোচনা দেয়া, যেন তারা তোমাদের সাথে (এ নিয়ে) ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়, যদি তোমরা তাদের কথা মেনে চলো, তাহলে অবশ্যই তোমরা মুশরিক হয়ে পড়বে। মহান আল্লাহ তাআলা আরো বলেন— أَلَمْ تَرَ أَنَّا أَرْسَلْنَا الشَّيَاطِينَ عَلَى الْكَافِرِينَ تَؤُزُّهُمْ أَزًّا ﴿مريم : ৮৩﴾ হে নবী তুমি কি (এবিষয়টির প্রতি লক্ষ্য করোনি, আমি (ঠিকভাবে) কাফেরদের ওপর শয়তানদের ছেড়ে দিয়ে রেখেছি, তারা (আল্লাহ তাআলার বিরুদ্ধে) তাদের ক্রমাগত উৎসাহ দান করছে। শয়তান যখন মানুষের অন্তরের ওপর ক্ষমতাবান হয়, সে তাকে গুনাহ, পাপাচারের প্রতি আসক্ত করে এবং তাকে মন্দের দিকে টেনে নিয়ে যায়। আর যখনই গুনাহ মেষ হয় সে তার কাছে ফিরে আসে। এভাবে তার প্রবৃত্ত কখনোই পাপাচার ও অন্যায় থেকে পরিতৃপ্ত হয় না। দুনিয়াতে এটাই হচ্ছে তার জন্য ছোট শাস্তি। আর পরকালের শাস্তি তো কঠিন, ও চিরস্থায়ী।  
(১১) এক স্তর থেকে অন্য স্তরে মানুষের স্থানান্তরের ক্রমধারা. শয়তান মানুষের মধ্যে সবচে’ ভাল ব্যক্তিকে একবার কুফরের প্রতি স্থানান্তরের জন্য খুবই লালায়িত। কিন্তু একাজটি সহজসাধ্য নয়। তাই সে পদে পদে তাকে নিয়ে অগ্রসর হয়। এক্ষেত্রে সে নানা পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে। এবাদত ও কল্যাণ মূলক কাজের ক্ষেত্রে সে যে পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে, তা হচ্ছে,এবাদতকে কষ্ট সাধ্য করে তোলা ও তা থেকে অনীহা সৃষ্টি করা যাতে মানুষ এবাদতের ক্ষেত্রে অলসতা করে। এ কারণেই আমাদেরকে প্রতি প্রত্যুষে অলসতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা সকাল কাটিয়েছি এবং গোটা রাজত্ব আল্লাহর, হে প্রভু আমি তোমার কাছে অলসতা থেকে পানাহ চাই। যখন এবাদতের ক্ষেত্রে অলসতা করবে সে তা ছেড়ে দেবে। অথবা তাকে দেরিতে আদায় করবে, আমরা বিলম্বে ক্ষতি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। মন্দ পাপের বিষয়ে সে এগুলোকে মানুষের কাছে সুন্দর, সুশোভন ও পছন্দনীয় করে উপস্থাপন করে। এবং তার কাছে বিষয়টি হালকা করে পেশ করে ফলে সে গুনাহের ক্ষতি সম্পর্কে আন্দাজ করতে পারে না। আর যদি মানুষ গুনাহ থেকে নিবৃত্ত থাকে তবে সে গুনাহকে সত্যের সাথে গুলিয়ে ফেলে এবং বিষয়টিকে তার কাছে অস্বচ্ছ রাখে। এবং তার জন্য দোষমুক্ত হওয়ার নানা উপায় তৈরি করে, যাতে সে প্রথমবার পাপাচারে লিপ্ত হয়। এভাবে পরবর্তী মুহূর্তে তার পক্ষে তা অনেক সহজ মনে হয়। তার পর সে যখন গুনাহ থেকে ফেরার বা তাওবা ইচ্ছা পোষণ করে, শয়তান তাকে বলে, তুমি তো কিছু করোনি, তুমি এখনও যুবক রয়েছ, যাতে সে আল্লাহর কৌশল থেকে নিশ্চিন্ত থাকে। আর যদি সে তাওবার জন্য খুব বিচলিত বোধ করে শয়তান তাকে বলে, তুমি এটা করেছে, ওটা করেছ, তাকে সমস্ত গুনাহ ও অপরাধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ফলে সে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়ে শয়তানের প্রথম পদক্ষেপ থেকে বেঁচে থাকা ছাড়া মানুষের পক্ষে কোন কল্যাণ আসবে না, মানুষের থেকে কখনো এমন কথাও শোনা যায় যা গুনাহকে সহজ করে দেয় ও এবাদতের ক্ষেত্রে নিরাসক্তি বিরাগ করে রাখে। يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَنْ يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ. ﴿النور : ২১﴾ ‘হে মানুষ তোমরা যারা ঈমান এনেছ, তার কখনো শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না, তোমাদের মধ্যে যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সে যেন জেনে রাখে যে (অভিশপ্ত শয়তান) তো তাকে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ দেবে, যদি তোমাদের ওপর আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহ না থাকে, তাহলে তোমাদের মধ্যে কেউই কখনো পাক পবিত্র হতে পারতো না। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যাকে চান তাকে পবিত্র করেন এবং আল্লাহ তাআলা (সবকিছু) শোনেন, তিনি (সবকিছু) জানেন। তাই শয়তানের পদক্ষেপ সমূহ, চেষ্টা, উপায় ও পথ সম্পর্কে জানা একান্ত আবশ্যক। তাহলেই তার ফাঁদে পড়ে গেলে সেখান থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। আর পথের শুরু থেকেই বিচ্যুতি থেকে বেচে থাকা পরবর্তী সময়ের তুলনায় অনেক সহজ।    
শয়তানের প্রবেশ পথ থেকে বাচার উপায় : শয়তানের প্রতিটি পথ সমূহ থেকে মুক্তি লাভের উপযুক্ত চিকিৎসা, ঔষধ রয়েছে, আল্লাহর রহমতে যা প্রয়োগ করে মুক্তি লাভ করা যায়। ইতিপূর্বে এই বিষয়ে কিছু আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে। এখানে শয়তানের সকল চক্রান্ত থেকে পরিত্রাণ লাভের সাধারণ উপকারী কিছু পথ নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
প্রথমত: আল্লাহ ভীতি তার আনুগত্য করা এবং তার নাফরমানি থেকে বেঁচে থাকা: এটা এমন একটি প্রতিরক্ষা কবচ যা শয়তানের সমূহ ষড়যন্ত্রকে সমূলৎপাটন করে। অত:পর মানুষ যখন কোন দুর্বল অবস্থায় পতিত হয়, তখন তাওবা, আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ ও গুনাহ থেকে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়া শয়তানের ষড়যন্ত্র ও কূট চালের সমস্ত প্রভাব দূর করে দেয়। আর শয়তান আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাদের এবাদত বিঘœ সৃষ্টির ক্ষেত্রে অক্ষমতা, ও দুর্বলতা সম্পর্কে নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইবলিসের ঘটনায় বলেন, قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ. إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ. ﴿الحجر :৪০﴾ ‘সে বলল, আমার মালিক, তুমি যেভাবে (আজ) আমাকে পথভ্রষ্ট করে দিলে (আমি ও তোমার শপথ করে বলছি) আমি মানুষদের জন্য পৃথিবীতে তাদের (গুনাহের কাজ সমূহ) শোভন করে তুলব এবং তাদের সবাইকে আমি পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার খাটি বান্দা তাদের কথা আলাদা। আল্লাহ তাআলা শয়তান সম্পর্কে আলোচনা করে বলেন, قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ. إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ. ﴿ص : ৮৩﴾ ‘সে বলল, (হ্যাঁ), তোমার ক্ষমতার কসম (করে আমি বলছি) আমি তাদের সবাইকে বিপথ গামী করে ছাড়ব, তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার একনিষ্ঠ বান্দা তাদের ছাড়া। অতএব যে ব্যক্তি শয়তানের ভ্রষ্টচারিতায় আক্রান্ত হবে, আল্লাহর ভয় ভীতি, পর্যবেক্ষণ এসব কিছু তাকে অলসতা থেকে জাগ্রত করবে এবং খোদাভীরুদের স্মরণ করিয়ে দেবে। অত:পর যখন তারা স্মরণ করবে তাদের দৃষ্টি খুলে যাবে এবং দৃষ্টি থেকে আবরণ সরে যাবে, অত:পর তারা হয়ে যাবে দৃষ্টিমান। আল্লাহ তাআলা বলেন إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُمْ مُبْصِرُونَ ﴿الأعراف : ২০১﴾ ‘আল্লাহ তাআলাকে যারা ভয় করে তাদের যদি কখনো শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে, তবে তারা (সাথে সাথেই) আত্মসচেতন হয়ে পড়ে, তৎক্ষণাৎ তাদের চোখ খুলে যায়।
 
দ্বিতীয়ত: জামাতের প্রতি লোভ: ইসলাম জামাতের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে। কেননা তা শয়তানকে বিতাড়িত করে। ইসলামের অধিকাংশ এবাদত ও মুআমালাত এই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। শয়তানের ষড়যন্ত্রে থেকে সুরক্ষায় এর প্রভাব সুস্পষ্ট। (১)জামাতের সঙ্গে নামাজ : রাসূল সা. বলেছেন— ما من ثلاثة في قرية، ولابدو، لاتقام فيهم الصلاة، إلا قد استحوذ عليهم الشيطان، فعليك بالجماعة، فإنما يأكل الذئب القاصية. رواه أبوداود(৫৪৭)، والناسائي (৮৪৭)، وحسنه الألباني في صحيح سنن أبي داود(৫১১). যে গ্রামে বা পল্লিতে তিনজন একত্রে আছে, অথচ তাদের মধ্যে জামাত কায়েম হয় না, শয়তান তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে। হে প্রিয় বন্ধু! তুমি কিন্তু জামাতের প্রতি গুরুত্ব দেবে। কারণ, ছাড়া বকরি বাঘে খায়। তাই জামাতের গুরুত্ব দিতে হবে। (২) সফরে জামাত : রাসূল সা. বলেছেন— الراكب شيطان، ولاركبان شيطانان، والثلاثة ركب. رواه أبوداود(২৬০৭)، والترمذي (১৬৭৪)،و حسنه الألباني في صحيح سنن أبي داود(২২৭১). একজন মুসাফির শয়তান, দু’জন মুসাফির দু’ই শয়তান, তিনজন মিলে একটি মুসাফির দল। (৩) বাড়িতে একত্র সমাবেশ : আবু ছালাবা আল খাশানী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. যখন কোন বাড়িতে অবস্থান নিতেন লোকেরা বিভিন্ন উপত্যকা ও ঘাটিতে পৃথক হয়ে যেত। অত:পর রাসূল সা. বলেছেন, إن تفرقكم في هذه الشعاب والأودية إنما ذلكم من الشيطان، فلم ينزل بعد ذلك منزلا إلا انضم بعضهم إلى بعض، حتى يقال: لو بسط عليهم ثوب لعمهم. رواه أبوداود(২৬২৮)، وصححه الألباني في صحيح سنن أبي داود (২২৮৮). বিভিন্ন ঘাটি ও উপত্যকায় তোমাদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। অত:পর যখনই তিনি কোন বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন একে অপরের সাথে মিলে মিশে থাকত। বলা হয় যদি তাদের ওপর কাপড় বিছিয়ে দেয়া হত সবাইকে তা ঢেকে ফেলত।

তৃতীয়ত: বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া :
আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন বিষয়ে শয়তান থেকে আশ্রয় লাভের নির্দেশ দিয়েছেন। তার কাছে থেকে আশ্রয় লাভের অধিক গুরুত্বের তাগিদ থেকেই এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
(১) কোরআন তেলাওয়াতের সময় :
فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآَنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ. ﴿النحل : ৯৮﴾

‘অত:পর যখন তুমি কোরআন পাঠ করবে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।
(২) জাদু ও জাদুর প্রভাব থেকে সুরক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে। 


আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ. مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ. وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ. وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ. وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ. ﴿الفلق : ১-৫﴾

(১) হে নবী তুমি বলো, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে আশ্রয় চাই। (২) আশ্রয় চাই তার সৃষ্টি করা (প্রতিটি জিনিসের) অনিষ্ট থেকে। (৩) আমি আশ্রয় চাই রাতের (রাতের অন্ধকারে সংঘটিত) অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। (৪) (আমি আশ্রয় চাই) গিরায় ফুঁক দিয়ে জাদু টোনা কারিণীদের, অনিষ্ট থেকে। (৫) হিংসুক ব্যক্তির (সব ধরনের হিংসার) অনিষ্ট থেকেও (আমি তোমার আশ্রয় চাই) যখন সে হিংসার করে।

 
(৩) মসজিদ প্রবেশের মুহূর্তে : 

আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আছ, নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন বলতেন—
أعوذ بالله العظيم، وبوجهه الكريم، وسلاطانه القديم، من الشيطان الرجيم، وفيه : فإذا قلت ذلك، قال الشيطان: حفظ مني سائر اليوم. رواه أبوداود(৪৬৬)، وصححه الألباني في صحيح سنن أبي داود(৪৪১).
মহান আল্লাহ তার মহিমান্বিত সত্তা ও তার প্রাচীন ক্ষমতার অসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাচ্ছি। এ হাদিসে অতিরিক্ত বর্ণনা এও এসেছে, যখন তুমি এ দোয়া পড়বে, শয়তান বলে, সে সারা দিনের জন্য আমার থেকে নিরাপদ হয়ে গেল। 

 
(৪) নামাজে ওয়াসওয়াসা বা প্ররোচনা দেওয়ার মুহূর্তে : 


 একবার উসমান ইবনে আছ, নবী সা.এর কাছে আসলেন, অত:পর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সা. শয়তান আমার তেলাওয়াত, নামাজ এবং আমার মাঝে বসে রয়েছে, সে আমার কাছে এগুলোকে সন্দিহান করে তোলে। রাসূল সা. বললেন—
ذاك شيطان يقال له خترب، فإذا أحسسته فتعوذ بالله منه، واتفل على يسارك ثلاثا، قال: ففعلت ذلك، فأذهبه الله عني. رواه مسلم(২২০৩).
ঐটা শয়তান। তাকে খাতরাব বলা হয়। যখন তুমি তাকে উপলব্ধি কর আল্লাহর নামে তার কাছ থেকে আশ্রয় চাইবে। এবং বাম দিকে তিন বার থুক ফেলবে। তিনি বলেন, আমি এমনটি করেছি, তারপর আল্লাহ তাআলা তাকে আমার থেকে দূর করে দিয়েছেন।
(৫) রাগ, ক্রোধের সময় : সোলাইমান ইবনে সারদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সা.-এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম, এমতাবস্থায় দু’জন লোক পরস্পর গালাগাল করছিল, তাদের একজনের চেহারা রক্ত বর্ণ ধারণ করল। এবং শিরা উপশিরা ফুল উঠল। অত:পর নবী সা. বললেন—
إني لأعلم كلمة لو قالها ذهب عنه ما يجد، لو قال: أعوذ بالله من الشيطان، ذهب عنه ما يجد، فقالوا له: إن النبي قال: تعوذ بالله من الشيطان. فقال: وهل بي جنون؟! رواه البخاري(৩২৮২)،ومسلم(২৬১০).
আমি এমন একটি কথা জানি যদি সে তা বলে তার ক্ষোভ প্রশমিত হয়ে যাবে। যদি সে বলে আমি শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই তাহলে তার ক্রোধ মিটে যাবে। অত:পর তারা তাকে বলল, রাসূল সা., বলেছেন তুমি শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। অত:পর সে বলল, আমার কি কোন পাগলামি আছে?  শয়তানের প্ররোচনা, প্রবঞ্চনা থেকে সুরক্ষিত দুর্গ হচ্ছে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
وَقُلْ رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ. ﴿المؤمنون : ৯৭﴾

‘(সে ব্যাপারে উদ্বিগ্ন না হয়ে) তুমি (বরং) বলো, হে আমার মালিক শয়তানদের যাবতীয় ওয়াসওয়াসা থেকে আমি তোমার পানাহ চাই।
وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ. ﴿فصلت : ৩৬﴾
‘আল্লাহ তাআলা বলেন, শয়তানের পক্ষ থেকে তোমাকে কোন অনিষ্ট পৌঁছোলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে, নিশ্চয় তিনি সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞাত।

এই অন্তরের সৃষ্টি কর্তা তার সব অলিগলি, পথ ও গন্তব্য সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল। এবং তিনি তার শক্তি ও ক্ষমতাকে নির্দিষ্ট করেন। তিনি মুসলমানের অন্তরকে ক্রোধের ক্ষতি ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে সংরক্ষণ করেন। তাই মুসলমানের জন্য শোভনীয় হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ মান্য করা। হে আল্লাহ অনুগত বান্দা তোমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সর্বদ্রষ্টা, সর্ব-শ্রোতা, মূর্খদের মূর্খতা ও বোকামি শুনেন এবং তাদের প্রবৃত্তির কষ্টের বিষয়ে তিনি জানেন, আর এতেই রয়েছে। অন্তরের তুষ্টি ও প্রবৃত্তির প্রশান্তি। উভয়ের জন্য তৃপ্তির বিষয় হচ্ছে, সর্ব-শ্রোতা ও সর্বজ্ঞ শুনছেন ও জানছেন। আল্লাহর শোনা ও সব মূর্খতা, বোকামি জানার পরে হে মুসলিম তোমার জন্য আর কি চাওয়ার থাকতে পারে ? অতএব তুমি জাহেলদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।
(৬) স্বপ্নে মানুষেরে অপ্রীতিকর কিছু দেখার মুহূর্তে :
রাসূল সা. বলেছেন—

الرؤيا الحسنة من الله، فإذا رأى أحدكم ما يحب فلا يحدث به إلا من يحب، وإذا رأى ما يكره، فليتعو১ بالله من شرها، ومن شر الشيطان، وليتفل ثلاثا، ولا يحدث بها أحدا، فإنها لن تضره. رواه البخاري(৭০৪৪)، ومسلم(২২৬১).

সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে, তোমাদের কেউ যদি স্বপ্নে আনন্দদায়ক কিছু দেখে তবে তার জন্য আনন্দের বিষয় ঘটবে। আর যদি অপছন্দনীয় কিছু দেখে, তাহলে তার অমঙ্গল থেকে এবং শয়তানের অনিষ্ঠ থেকে আশ্রয় চাইবে। এবং তিনবার থুতু ফেলবে। এবং কারো কাছে তা আলোচনা করবে না। তবে তার কোন ক্ষতি সাধন করবে না।

(৭) চক্ষু ওঠার সময় : 
নবী সা. হাসান এবং হুসাইন কে তাআউয পড়াতেন, তিনি বলতেন—

إن أباكما كان يعوذ بها إسماعيل وإسحاق، أعوذ بكلمات الله التامة من كل شيطان وهامة، ومن كل عين لامة. رواه البخاري(৩৩৭১).
তোমাদের পিতা ইব্রাহীম আ., ইসমাইল এবং ইসহাককে তাআউয পড়াতেন।
চতুর্থত: বিসমিল্লাহ পড়া : প্রজ্ঞাময়, শরিয়তের বিধায়ক অনেক বিষয়ে বিসমিল্লাহ পাঠের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন, শয়তানকে পরাভূত করার জন্য।
(১)    যখন বাহন পিছলে যায় :
জনৈক সাহাবি বলেছেন—

كنت رديف النبي صلى الله عليه وسلم، فعثرت دابته،فقلت تعس الشيطان، فقال: لا تقل تعس الشيطان، فإنك إذا قلت ذلك تعاظم حتى يكون مثل البيت، ويقول: بقوتي، ولكن قل: بسم الله، فإنك إذا قلت ذلك تصاغر حتى يكون مثل الذباب. رواه أبوداود(৪৯৮২)، وصححه الألباني في صحيح سنن أبي داود(৪১৬৮)
আমি নবী সা.-এর সহযাত্রী ছিলাম। তার বাহনটি পিছলে যায়। তাই আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হোক। তিনি বললেন শয়তান ধ্বংস হোক, একথা বলো না। কেননা তুমি যখন তা বলবে, সে নিজেকে বড় মনে করবে যেন সে ঘরের মত। এবং বলবে আমার শক্তিতে তা হয়েছে। বরং তুমি বল, বিসমিল্লাহ। কেননা তুমি যদি তা পড় তবে শয়তান মাছির মত নিজেকে ছোট মনে করবে।

 
(২)    বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় :
রাসূল সা. বলেছেন, যখন কোন লোক তার বাড়ি থেকে বের হয় এবং বলে—

إذا خرج الرجل من بيته فقال: بسم الله، توكلت على الله، لاحول ولا قوة إلا بالله، قال: يقال له حينئذ: هديت، وكفيت، ووقيت، فتنحى له الشياطين، فيقول شيطان آخر: كيف لك برجل قد هدي، وكفي، ووقي.
আল্লাহর নামে আল্লাহর ওপরই আমি ভরসা করছি, আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কেউ ক্ষমতার মালিক নন। তিনি বললেন, তখন তাকে বলা হবে তুমি হেদায়াত প্রাপ্ত হয়েছ, এবং যথেষ্ট করেছ ও পরিত্রাণ লাভ করেছ। অত:পর শয়তান তার জন্য সরে দাঁড়ায়। অপর শয়তান বলে, তোমার অমুক ব্যক্তির ব্যাপারে কি সংবাদ ? সে হেদায়াত পেল ও পরিত্রাণ লাভ করল।
(৩)    সহবাসের মুহূর্তে :
নবী সা. বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার পরিবারের নিকট গমন করে এবং বলে—

بسم الله اللهم جنبنا الشيطان وجنب الشيطان مارزقتنا، فرزقا ولدا، لم يضره الشيطان. رواه البخاري(৩২৭১).

উভয়কে এমন সন্তান দান করা হয় যাকে শয়তান কোন প্রকার ক্ষতি করতে পারে না।
পঞ্চম : কোরআন পাঠ : দিবা-রাত্রি সর্ব মুহূর্তে আল্লাহর কিতাব পাঠ শয়তানকে তাড়িয়ে দেয়। উমর রা. উচ্চ স্বরে কোরআন তেলাওয়াত করে নামাজ পড়লেন, অত:পর (সকাল হলে) নবী সা.-এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সা. আমি এর মাধ্যমে শয়তানকে বিতাড়িত করছিলাম। নবী সা. তাকে (পরবর্তীতে নামাজের সময়) আওয়াজ সামান্য নিচু করার নির্দেশ দিলেন।
মহান প্রজ্ঞাময় শরিয়ত প্রবর্তক এই বিষয়ের কিছু সুরা ও আয়াত নির্দিষ্ট করেছেন, তন্মধ্যে:
(১) সুরা আল বাকারা রাসূল সা. বলেছেন—

لاتجعلوا بيوتكم مقابر، إن الشيطان ينفر من البيت الذي تقرأ فيه سورة البقرة. رواه مسلم(৭৮০)
 তোমরা তোমাদের কবরকে বাড়ি বানিয়ো না, নি:সন্দেহে শয়তান ঐ বাড়ির থেকে পালিয়ে বেড়ায় যেখানে সুরা আল বাকারা পাঠ করা হয়।

(২) আয়াতুল কুরসি : শয়তানের চক্রান্ত থেকে মুক্ত থাকার জন্য আয়াতুল কুরসি পাঠ অনেক উপকারী। শয়তান আবু হুরায়রা রা. কে এই আয়াত শিখিয়েছে, সে তার কাছে ব্যাখ্যা করেছে যে এই আয়াত পাঠ করবে,আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য সর্বদা হেফাজতকারী থাকবে, সকল হওয়ার আগ
মুহূর্তে পর্যন্ত শয়তান তার কাছেও ঘেঁষবে না। অত:পর রাসূল আবু হুরায়রাকে বললেন,
صدقك وهو كذوب. علقه البخاري في صحيحه بصيغة الجزم.

সে তোমাকে সত্য বলেছে, অথচ সে মিথ্যুক। 

 
ষষ্ঠ : মন্দের উৎসকে উপড়ে ফেলা এবং তর পথ বন্ধ করে দেওয়া:
ঐ দু’জন সাহাবিকে রাসূলের বক্তব্য প্রমাণ করে যারা তাকে তার বিবি সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই এর সঙ্গে দেখেছিল, তিনি তো সাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই। নবী সা. আরো বলেন—

لايشير أحدكم على أخيه بالسلاح فإنه لا يدري لعل الشيطان ينزع في يده فيقع في حفرة من النار.

 তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র উঁচিয়ে ইঙ্গিত করবে না। কেননা সে জানে না হয়ত শয়তান নিজের হাতে নিয়ে যাবে অত:পর সে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে।

সপ্তম : শয়তানের কুমন্ত্রণা ও পদক্ষেপে সাড়া দেওয়া এবং তার সঙ্গে ছাড় দেওয়া থেকে বেঁচে থাকা।
এ বিষয়ে দু’টি হাদিসের বক্তব্য প্রমাণ করে : 

প্রথমত: রাসূল সা. বলেছেন—
يعقد الشيطان على قافية رأس أحدكم إذا هو نام ثلاث عقد، يضرب كل عقدة عليك ليل طويل فارقد، فإن استيقظ فذكر الله انحلت عقدة، فإن توضأ انحلت عقدة، فإن صلى انحلت عقدة فأصبح نشيطا طيب النفس، وإلا أصبح خبيث النفس كسلان.
শয়তান তোমাদের মাথার অগ্রভাগে। তিনটি গিঁট দেয়, যখন সে ঘুমায়। সে সারারাত ব্যাপী তোমার ওপর গিঁট দিয়ে রাখবে এবং ঘুমিয়ে দেবে, যখন সে জাগ্রত হবে ও আল্লাহকে স্মরণ করবে, তার একটি গেড়ো খুলে যাবে, অত:পর যদি সে ওজু করে আরেকটি গেড়ো খুলে যাবে। তারপর যদি সে নামাজ পরে আরেকটি গেড়ো খুলে যাবে। অত:পর সে সুস্থ মন ও কর্মোদ্যমী উৎসাহী হয়ে যাবে। অন্যথায় সে অলস ও বিষাদগ্রস্ত মনের অধিকারী হয়ে যাবে।
  

দ্বিতীয়টি হচ্ছে : রাসূল বলেছেন—
يأتي الشيطان أحدكم فيقول: من خلق كذا؟ من خلق كذا؟ حتى يقول: من خلق ربك؟، فإذا بلغه فليستعذ بالله ولينته. رواه البخاري(৩২৭৬)، ومسلم(১৩৪)
শয়তান তোমাদের কারো কাছে এসে বলে এটা কে সৃষ্টি করেছে, আর ওটা কে? এক পর্যায়ে সে বলে তোমার রবকে সৃষ্টি করেছে কে? অত:পর সে যখন এই স্তরে পৌঁছায় আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবে এবং লাগাম টেনে ধরবে।

 


[1] Avj-bvnj : 98|
[1] Avj-dvjvK|
[1] Avey `vD` : 466| mybv‡b Avey `vD` : 441|
[1] gymwjg : 2203|
[1] †evLvix : 3282| gymwjg : 2610|
[1] Avj-†gv‡gbyb : 97|
[1] dzmwmjvZ : 36|
[1] †evLix : 7044| gymwjg : 2261|
[1] †evLvix : 3371|
[1] Avey `vD` : 4982| mwnn mybv‡b Avey `vD` : 4168|
[1] Avey `vD` : 5095| mwnn mybv‡b Avey `vD` : 4249|
[1] gymwjg : 780|
[1] mwnn †evLvix : 2311,2375,5010|
[1]  †evLvix : 7072|
[1]  †evLvix : 1142| gymwjg : 776|
[1] †evLvix : 3276| gymwjg : 134|

No comments:

Post a Comment