দর্শক সংখ্যা

Monday, March 4, 2013

রাসুল (সাঃ) এর অবমাননার প্রতিবাদে- আওয়ামী সরকারের নির্যাতন চিত্র-২

রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে সারাদেশের মানুষ এখন জিম্মি। দেশব্যাপী গণহত্যা, গণমামলা ও গণগ্রেফতার চলছেই। গতকালও গণহত্যার মিছিলে যুক্ত হয়েছে চারটি লাশ। এ নিয়ে পাঁচদিনে ৯৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ, বিজিবি ও শাসক দলের হাতে এভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে মানুষ যখন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে, তখনই বিক্ষোভ দমনে নির্যাতনের নানা হাতিয়ার প্রয়োগ করা হচ্ছে তাদের ওপর।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের নামে জেলা-উপজেলায় প্রতিনিয়ত জারি হচ্ছে ১৪৪ ধারা। বাড়ছে গণহারে আসামি ও অজ্ঞাত আসামির নামে মামলার সংখ্যা। চলছে গণহারে গ্রেফতার ও গ্রেফতার বাণিজ্য। একেকটি মামলায় আসামি করা হচ্ছে হাজার হাজার জনকে। এসব মামলায় আসামি গ্রেফতারের নামে পুলিশ ব্লকরেইড ও চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে। রাস্তাঘাট, হাটবাজার, বাসাবাড়ি থেকে নিরীহ লোকজনকে ধরে নিয়ে জামিন অযোগ্য ধারার এসব মামলায় চালান দিচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চলছে গ্রেফতার বাণিজ্য। এমনকি গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত মুমূর্ষু রোগীদেরও হাসপাতাল থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। গত কয়েক দিনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সচেতন নাগরিকরা বলছেন, সরকার দেশজুড়ে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে।


এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিয়ন্ত্রণের নামে অংশ নিচ্ছে সরকারি দল আশ্রিত মাস্তান ও ক্যাডাররা। ফলে দেশজুড়ে ভয়ানক গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই আগুনে পুড়ছে বাড়িঘর, অফিস আদালত, ব্যাংক বীমা, সরকারি বেসরকারি সম্পদ। চলছে প্রাণ ও সম্পদের হানি।
গতকাল সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বিজিবির গুলিতে দুই সহোদরসহ তিনজন ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এক স্কুলছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঢাকায় কমলাপুরে পুলিশের গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গেছে এক স্কুলছাত্র।
এর প্রতিবাদে একটি ট্রেনে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এছাড়া রোববার নিহত ২৫ জনের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এসব জানাজায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। কোনো কোনো এলাকায় জানাজা নামাজ বিক্ষোভে রূপ নেয়।
গত বৃহস্পতিবার আল্লামা সাঈদীর ফাঁসির আদেশের পরপরই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে রাস্তায় নেমে আসে লাখ লাখ মানুষ। তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুলিশের পাশাপাশি সারাদেশে মোতায়েন করা হয় র্যাব, দাঙ্গা পুলিশ ও বিজিবিসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের। জনতার বিক্ষোভ দমনে সরকার চলে যায় হার্ডলাইনে। জনতার মিছিলে চলতে থাকে গুলি, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ। এতে প্রাণহানির সংখ্যাও দিনে দিনে বাড়তে থাকে। প্রতিবাদী মানুষ হয়ে ওঠে আরও ক্ষুব্ধ বিক্ষুব্ধ। দেশের বিভিন্ন স্থনে আক্রান্ত হয় থানা, পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দফতর। অবরোধ করা হয় সড়ক-মহাসড়ক। ভাংচুর অগ্নিসংযোগ চলতে থাকে বাস ট্রাক কভার্ডভ্যান, পিকআপ রেলগাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহন, এমনকি বাসাবাড়িতেও। উপড়ে ফেলা হয় রেললাইন ও সেতু। খোয়া যায় পুলিশের অস্ত্র। জনতার রোষানলে প্রাণহানি হয়েছে কয়েকজন পুলিশ সদস্যেরও। এসব ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় পুলিশ কিংবা সরকারি দলের নেতাকর্মী বাদী হয়ে মামলা করেন। একেকটি মামলায় আসামি তালিকা বিশাল। গত পাঁচ দিনের বিক্ষোভে কত মামলা হয়েছে, এসব মামলায় কত লাখ জনতাকে আসামি করা হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। আমার দেশ প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে দেখা গেছে, এসব মামলায় কমপক্ষে ১০ লাখেরও বেশি জ্ঞাত-অজ্ঞাত জনতাকে আসামি করা হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ঢাকায় বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলি ও লাঠিচার্জের ঘটনায় উল্টো বিএনপির শীর্ষস্থানীয় ৩০ থেকে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে পল্টন, শাহজাহানপুর ও রমনা থানায় দায়ের করা পাঁচ মামলায় আসামি করা হয়েছে পাঁচ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে।
সাঈদীর রায়-পরবর্তী ঘটনায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানায় পিটিয়ে হত্যা, লুটতরাজ, সরকারি কর্তব্যে বাধা দেয়া, রেললাইন উপড়ানো, পুলিশ ফাঁসি ভাংচুরসহ জামিন-অযোগ্য বিভিন্ন অভিযোগ এনে তিনটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় দুই শতাধিক এজহারনামীও অজ্ঞাত ৩০ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি থানায় পৃথক দুই মামলায় ২১ ও ১৩৬ এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১১ হাজার ব্যক্তিকে। বগুড়ায় রোববারের হরতাল চলাকালে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, ভাংচুর ও হত্যার ঘটনায় পৃথক আটটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বেশ ক’জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ মোট পাঁচ হাজার অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে

No comments:

Post a Comment