দর্শক সংখ্যা

Monday, February 25, 2013

বিদআত (পর্ব ২)

বিদআত (পর্ব ২)

বিদআতের ক্ষতিকর দিক:— বেদআতের অভ্যুদয় ও ব্যাপ্তিতে নানাবিধ ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যার উপর ভিত্তি করে অনেক মারাত্মক অপরাধ সংঘটিত হয়ে যায়। নিম্নে কিছু নমুনা পেশ করা হল। (১) মহান আল্লাহ তাআলা এ দ্বীনকে পূর্ণতা দিয়েছেন মর্মে ঘোষণা করে বলছেন الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا (المائدة:৩) ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম, এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে ইসলামকে মনোনীত করলাম।’
বেদআত সংঘটিত করার মাধ্যমে আল্লাহর উপরোক্ত বাণীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়। কারণ একজন বেদআতি যখন একটি নতুন বেদআত প্রচলন ঘটায় তখন সে সেটিকে দ্বীন বলেই বিশ্বাস করে। আর এর অর্থই হচ্ছে, দ্বীন পূর্ব হতে পূর্ণাঙ্গ নয়। তাতে সংযোজনের সুযোগ আছে।
(২) বেদআতের প্রচলন দ্বারা শরিয়তে ইসলামিয়া অসম্পূর্ণ ও ত্র“টি যুক্ত ছিল—প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। বেদআত প্রচলনকারী এর ত্র“টি দূর করে পূর্ণতা দান করেছেন মর্মে বিশ্বাস করাকে বাধ্য করে।
(৩) বেদআত—যে সকল মুসলমান তাকে গ্রহণ করেনি—তাদের ব্যাপারে অপবাদ দেয়াকে আবশ্যক করে যে, তাদের দ্বীন অসম্পূর্ণ, সাথে সাথে যারা এ বেদআত আত্মপ্রকাশ করার পূর্বেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন তাদের ধর্মও অপূর্ণ ছিল মর্মে বিশ্বাস করাকে জরুরি করে তুলে। অথচ এ ব্যাপারটি কত মারাত্মক।
(৪) বেদআত সুন্নত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, কেননা সাধারণত: দেখা যায় যারা বেদআত লিপ্ত হয়ে পড়ে তারা সুন্নত থেকে দূরে সরে যান। এ প্রসঙ্গে কতিপয় সালাফ থেকে বর্ণিত তারা বলেছেন : ما أحدث قوم بدعة إلا هدموا مثلها من السنة. ‘যখনই কোন সম্প্রদায় বেদআতের প্রচলন ঘটায় তখন উক্ত বেদআতের কারণে সে স্থানের সুন্নতের বিলুপ্তি ঘটে।’

Sunday, February 24, 2013

বিদআত (পর্ব ১)

বিদআত (পর্ব ১)

বিদআতের সংজ্ঞা শাব্দিক অর্থে বেদআত البدع থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ হচ্ছে, الاختراع على غير مثال سابق. অর্থাৎ অতীত দৃষ্টান্ত ব্যতীত নতুন আবিষ্কার। এ থেকেই আল্লাহ তাআলার বাণী : بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ. البقرة:(১১৭) অর্থাৎ ‘অতীত দৃষ্টান্ত ব্যতীত আকাশ জমিনের সৃষ্টিকর্তা। এবং قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِنَ الرُّسُلِ (الأحقاف:৯) অর্থাৎ ‘আমিই প্রথম ব্যক্তি নই যে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের নিকট রিসালতের দায়িত্ব নিয়ে এসেছি।’ বরং আমার পূর্বে বহু রাসূল অতীত হয়েছেন। প্রচলন আছে : ابتدع فلان بدعة অর্থাৎ এমন পদ্ধতি শুরু করেছে যা ইতিপূর্বে কেউ করেনি। শরয়ি পরিভাষায় বেদআত বলা হয়— ما أحدث فى الدين على خلاف ماكان عليه النبي صلى الله عليه وسلم وأصحابه من عقيدة وعمل. ‘দ্বীনের মধ্যে রাসূল সা. ও সাহাবা কর্তৃক প্রবর্তিত আক্বিদা ও আমল পরিপন্থী নতুন আক্বিদা ও আমলের প্রচলন ঘটানো।’
আবিস্কার দুই প্রকার : (১) অভ্যাস (ও জাগতিক প্রয়োজনের) ক্ষেত্রে আবিষ্কার—যথা বর্তমানে প্রচলিত ও নিত্য নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসমূহ। এগুলো মুবাহ (অনুআেদিত)। কারণ আদত ও অভ্যাসের ক্ষেত্রে আসল হচ্ছে ইবাহাহ الإباحة বা বৈধ হওয়া। (২) দ্বীনের (ইসলাম ধর্মের) ক্ষেত্রে আবিষ্কার। এটি হারাম। কারণ দ্বীনের ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে توقيف বা শরিয়তের সিদ্ধান্তের উপর অবস্থান করা। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:— من أحدث فى أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد. ‘যে আমাদের দ্বীনে নতুন কিছু সংযোজন ও সৃষ্টি করবে যা মূলত তাতে নেই সেটি পরিত্যাজ্য।’ এ হাদিস প্রমাণ করছে যে, দ্বীনের মধ্যে প্রত্যেক নতুন সৃষ্ট বিষয়ই বেদআত আর প্রত্যেক বেদআতই গোমরাহি ও পরিত্যাজ্য।

Saturday, February 23, 2013

অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ : ইসলামি দৃষ্টিকোণ

بسم الله الرحمن الرحيم
অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ : ইসলামি দৃষ্টিকোণ
শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহর জন্য। সালাত ও সালাম নিবেদন করছি আমাদের সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সকল সাহাবীগণের প্রতি। বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইসলাম সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকার কারণে বা ইসলাম সম্পর্কে উদাসীনতার কারণে ইসলাম ধর্মের নামে অনেক অনাচার, কুসংস্কৃতি, শিরক ও বিদআত প্রচলিত আছে ও প্রচলন ঘটছে। এর মধ্যে একটি হল, অলী আওলিয়াদের অসীলা দিয়ে দুআ-প্রার্থনা করা, তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া, তারা ভাল-মন্দ কিছু করতে পারে বলে বিশ্বাস রাখা, তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যাবে বলে বিশ্বাস করা। এ উদ্দেশ্যে তাদের কবর যিয়ারত করা, তাদের কবর তওয়াফ করা, কবরে উরস উৎসব আয়োজন করা ইত্যাদি। অনেক মুসলিম এ সকল কাজ এ ধারনার ভিত্তিতেই করে যে, এই কবরে শায়িত অলী আওলিয়ারা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলে আল্লাহর রহমত লাভ করা যাবে। অথবা তাদেরকে অসীলা বা মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করলে আল্লাহ আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন। তাদেরকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করতে যেয়ে তারা তার মাধ্যমে বা তার নামে বিপদ থেকে মুক্তি কামনা করে আল্লাহর কাছে। অনেকে সরাসরি তাদের কাছেই নিজেদের প্রয়োজন ও অভাব পুরণের জন্য প্রার্থনা করে। বিপদ থেকে উদ্ধার কামনা করে। তারা মনে করে এ ধরণের অসীলা গ্রহণ করতে ইসলামে নিষেধ নয়। বরং এদের অনেকে মনে করে এ ধরনের অসীলা গ্রহণ ইসলামে একটি ভাল কাজ।
 কিন্তু আসলে অসীলা গ্রহণ কী? এর বৈধতা কতটুকু? বইটিতে এ বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ। সত্যিকার অসীলা হল, আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণের মাধ্যমে সৎকর্ম করা আর নিষিদ্ধ ও হারাম কথা-কর্ম থেকে বেঁচে থাকা। আর নেক আমল সম্পাদন করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা হল সত্যিকার অসীলা। তা ছাড়া আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও গুণাবলির মাধ্যমে অসীলা গ্রহণের কথা আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন। কিন্তু মৃত অলী আওলিয়াদের কবরের কাছে যাওয়া, কবর তওয়াফ করা, কবরে-মাজারে মানত করা, কবরে শায়িত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা, তার কাছে নিজের অভাব অভিযোগের কথা বলা ইত্যাদি কাজ-কর্মের মাধ্যমে অসীলা গ্রহণ শুধু নিষিদ্ধই নয় বরং এগুলো শিরক ও কুফরী। এগুলোতে কেহ লিপ্ত হলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। নাউজুবিল্লাহ! এ গেল মৃত অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ সম্পর্কে। আবার অনেকে জীবিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে নাজায়েয অসীলা গ্রহণ করে থাকে। তাদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে থাকে। যেমন গরু, ছাগল, মুরগী জবেহ করার সময় বলে থাকে: আমাদের পীর সাবের নামে বা আমার বাবার নামে জবেহ করলাম। অথবা নিজের পীর বা পীরের পরিবারের লোকদের সম্মানের জন্য সেজদা করে থাকে। এগুলো সবই শিরক এবং শিরকে আকবর বা বড় শিরক। অনেকে নিজের জীবিত পীর ফকীরদের সম্পর্কে ধারনা করে থাকে যে, আল্লাহ তাআলার সাথে তার বিশেষ যোগাযোগ বা সম্পর্ক আছে, তাই তার মাধ্যমে আল্লাহকে পাওয়া যাবে, এটাও শিরক। যারা একদিন লাত উজ্জা প্রভৃতি দেব-দেবীর পূজা করতো, তারা কিন্তু এ বিশ্বাস করতো না যে এগুলো হল তাদের প্রভূ বা সৃষ্টিকর্তা। বরং তারা বিশ্বাস করতো এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে বা তাদেরকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে তারা আল্লাহ নৈকট্য অর্জন করবে। তারা এটাও বিশ্বাস করতো না যে, এ সকল দেব-দেবী বৃষ্টি দান করে বা রিযক দান করে। তারা বলতো :
مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى. (الزمر : 3)
আমরা তো তাদের ইবাদত করি এ জন্য যে তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। (সূরা যুমার, আয়াত ৩) তারা এ সম্পর্কে আরো বলতো :
هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ . (يونس : 18)
এরা (দেব-দেবী) আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শুপারিশ করবে। (সূরা ইউনূস, আয়াত ১৮)
 দেখা গেল তারা এ অসীলা গ্রহণের কারণেই শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়লো। আর এ শিরকের বিরুদ্ধে তাওহীদের দাওয়াতের জন্যই আল্লাহ তাআলা রাসূলগণকে পাঠালেন যুগে যুগে, প্রতিটি জনপদে। এ সকল দেব-দেবীর কাছে যেমন প্রার্থনামূলক দুআ করা শিরক তেমনি সাহায্য প্রার্থনা করে দুআ করাও শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেন:
قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِهِ فَلَا يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنْكُمْ وَلَا تَحْوِيلًا. (الإسراء : 56)
বল, তাদেরকে ডাক, আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে (উপাস্য) মনে কর। তারা তো তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার ও পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না। (সূরা ইসরা, আয়াত ৫৬)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ ﴿22﴾ وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ. (سبأ : 22-23)
বল, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে করতে তাদেরকে আহবান কর। তারা আসমানসমূহ ও যমীনের মধ্যে অণু পরিমাণ কোন কিছুর মালিক নয়। আর এ দুয়ের মধ্যে তাদের কোন অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নয়। আর আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া তাঁর কাছে কোন সুপারিশ কোন কাজে আসবে না। (সূরা সাবা, আয়াত ২২-২৩)
এ সকল আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বললেন: আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয়, যাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করা হয় তারা অনু পরিমাণ বস্তু সৃষ্টি করতে পারে না। তারা কোন সৃষ্টি জীবের সামান্য কল্যাণ করার ক্ষমতা রাখে না। তারা আশ্রয় প্রার্থনাকারীকে কোন আশ্রয় দেয়ার সামর্থ রাখে না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরকে মসজিদ বানাতে নিষেধ করেছেন। কবরের কাছে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। কবরকে সেজদা দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি ওফাতের সময়ও বলেছেন: আল্লাহ তাআলা ইহুদী ও খৃষ্টানদের অভিসম্পাত করুন। তারা নবীদের কবরকে ইবাদতের স্থান হিসাবে গ্রহণ করেছে। আর ইবাদত-বন্দেগীর দ্বারা কবরকে সম্মান করা হল শিরকে লিপ্ত হওয়ার একটি রাস্তা। এভাবে কবরকে পূজা করার মাধ্যমেই মানুষ মূর্তি পূজার দিকে ধাবিত হয়। ওমর রা. দুআর সময় আব্বাস রা. কে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন, এ বিষয়টি দিয়ে অনেকে মৃত ব্যক্তির অসীলা গ্রহণ করার বৈধতা দেয়ার প্রয়াস পান। কিন্তু ওমর রা. আব্বাস রা. এর দুআকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছেন তার ব্যক্তিত্বকে নয়। আর আব্বাস রা. তখন জীবিত ছিলেন। যে কোন জীবিত ব্যক্তির দুআকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করা যায়। ওমর রা. তা-ই করেছেন। তিনি বলেছেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত থাকাকালে আমরা তার অসীলা দিয়ে দুআ করতাম। এখন তিনি নেই তাই আমরা তার চাচা আব্বাসকে দুআ করার ক্ষেত্রে অসীলা হিসাবে নিলাম। ওমর রা. এর এ বক্তব্যে স্পষ্ট হল যে, তিনি কোন মৃত ব্যক্তিকে দুআর সময় অসীলা হিসাবে গ্রহণ বৈধ মনে করতেন না। তিনি নবী হলেও না। বিষয়টা এমন, যেমন আমরা কোন সৎ-নেককার ব্যক্তিকে বলে থাকি, আমার জন্য দুআ করবেন। কোন আলেম বা বুযুর্গ ব্যক্তির মাধ্যমে আমরা নিজেদের জন্য দুআ করিয়ে থাকি। এটাও এক ধরণের অসীলা গ্রহণ। এটা বৈধ। কিন্তু কোন বুযুর্গ ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তাকে অসীলা করে দুআ করা, দুআর সময় তার রূহের প্রতি মনোনিবেশ করা (যেমন অনেকে বলে থাকে আমি আমার দাদাপীর অমুকের দিকে মুতাওয়াজ্জুহ হলাম), তার থেকে ফয়েজ-বরকত লাভের ধারনা করা, এগুলো নিষিদ্ধ ও শিরক। মৃত ব্যক্তি যত মর্যাদাবান বুযুর্গ হোক সে কারো ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা রাখে না। যখন সে মৃত্যুর পর নিজের জন্য ভাল মন্দ কিছু করতে পারে না, তখন অন্যের জন্য কিছু করতে পারার প্রশ্নই আসে না। সে কারো দুআ কবুলের ব্যাপারে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। কাউকে উপকার করার বা বিপদ থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা তার থাকে না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে বলেছেন : মৃত ব্যক্তি নিজের কোন উপকার করতে পারে না। তিনি বলেছেন :
إذا مات الإنسان انقطع عنه عمله إلا من ثلاث : إلا من صدقة جارية أو علم ينتفع به أو ولد صالح يدعو له . رواه مسلم
মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু তিনটি কাজের ফল সে পেতে থাকে।
১. ছদকায়ে জারিয়াহ (এমন দান যা থেকে মানুষ অব্যাহতভাবে উপকৃত হয়ে থাকে)
২. মানুষের উপকারে আসে এমন ইলম (বিদ্যা) ৩. সৎ সন্তান যে তাঁর জন্য দুআ করে। বর্ণনায়: মুসলিম হাদীসটির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানা গেল মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তিদের দুআ, ক্ষমা প্রার্থনার ফলে উপকার পেতে পারে। কিন্তু জীবিত ব্যক্তিরা মৃতদের থেকে এরূপ কিছু আশা করতে পারেনা। যখন হাদীস থেকে প্রমাণিত হল যে, কোন আদম সন্তান যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। তার আমল দিয়ে সে কোন উপকার লাভ করতে পারে না, তখন আমরা কিভাবে বিশ্বাস করি যে, অমুক ব্যক্তি কবরে জীবিত আছেন? তার সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়? তিনি আমাদের উপকার করতে পারেন? আমাদের প্রার্থনা শুনেন ও আল্লাহর কাছে শুপারিশ করেন? এগুলো সব অসার বিশ্বাস। এগুলো যে শিরক তাতে কোন সন্দেহ নেই। মৃত ব্যক্তিরা যে কবরে শুনতে পায় না, কেহ তাদেরকে কিছু শুনাতে পারে না এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন। তিনি নবীকে সম্বোধন করে বলেছেন:
إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ. (النمل : 80)
নিশ্চয় তুমি মৃতকে শোনাতে পারবে না, আর তুমি বধিরকে আহবান শোনাতে পারবে না। (সূরা নামল, আয়াত ৮০)
 যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মৃতকে কিছু শোনাতে পারেন না, তখন সাধারণ মানুষ কিভাবে এ অসাধ্য সাধন করতে পারে? কাজেই আমরা মৃতদের কবরে যেয়ে যা কিছু বলি, যা কিছু প্রার্থনা করি তা তারা কিছুই শুনতে পায় না। যখন তারা শুনতেই পায় না, তখন তারা প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কিভাবে কবুল করবে? কিভাবে তাদের হাজত-আকাংখা পূরণ করবে? আল্লাহ তাআলা ব্যতীত যা কিছুর উপাসনা করা হয়, তা সবই বাতিল। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ ﴿106﴾ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ﴿107﴾ (يونس)
আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না, যা তোমার উপকার করতে পারে না এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে না। অতএব তুমি যদি কর, তাহলে নিশ্চয় তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন ক্ষতি পৌঁছান, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহের কোন প্রতিরোধকারী নেই। তিনি তার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে তা দেন। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু (সূরা ইউনূস, আয়াত ১০৬-১০৭) এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয়, যাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করা হয় তা সবই বাতিল। আরো স্পষ্ট হল যে, এগুলো কাউকে উপকার করতে পারে না বা ক্ষতি করতে পারে না। যখন তারা সবই বাতিল, তাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করলে যখন কোন উপকার হয় না তখন কেন তাদের স্মরণাপন্ন হবে? কেন তাদেরকে অসীলা গ্রহণ করা হবে? কেন তাদের কবরে যেয়ে দুআ করা হবে? অনেক বিভ্রান্ত লোককে বলতে শুনা যায়, অমুক অলীর মাজার যিয়ারত করতে গিয়েছিলাম। সেখানে যেয়ে এই দুআ করেছিলাম। দুআ কবুল হয়েছে, যা চেয়েছিলাম তা পেয়ে গেছি ইত্যাদি। এ ধরনের কথা-বার্তা আল্লাহ তাআলার প্রতি মিথ্যারোপের শামিল। হ্যা, হতে পারে অলী আওলিয়াদের মাজারে গিয়ে কিছু চাইলে তা যেন অর্জন হবে না এ কথা বলা যায় না। তবে অর্জন হলে সেটা দু কারণে হতে পারে:
 এক. অলীর মাজারে যেয়ে যা চাওয়া হয়েছে তা পুরণ করা কোন সৃষ্টিজীবের পক্ষে সম্ভব হবে অথবা হবে না। যদি সম্ভব হয়, তাহলে হতে পারে শয়তান প্রার্থীত বিষয়গুলোকে অর্জন করিয়ে দিয়েছে। যাতে শিরকের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়। যা চেয়েছে শয়তান সেগুলো তাকে দিয়েছে। কেননা যে সকল স্থানে আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা হয় সে সকল স্থানে শয়তান বিচরণ করে। যখন শয়তান দেখল কোন ব্যক্তি কবর পূজা করছে, তখন সে তাকে সাহায্য করে থাকে। যেমন সে সাহায্য করে মূর্তিপূজারীদের। সে তাদের এ সকল শিরকি কাজগুলোকে তাদের কাছে সুশোভিত করে উপস্থাপন করে থাকে বলে আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে বহু স্থানে উল্লেখ করেছেন। এমনিভাবে শয়তান গণক ও জোতিষিদের সাহায্য করে থাকে তাদের কাজ-কর্মে। তাই অনেক সময় এ সকল গণকদের কথা ও ভবিষ্যতবাণী সত্যে পরিণত হতে দেখা যায়। এমনিভাবে শয়তান মানুষের আকৃতি ধারণ করে বিপদগ্রস্ত মানুষকে বলে থাকে অমুক মাজারে যাও, তাহলে কাজ হবে। পরে সে যখন মাজারে যায় তখন শয়তান মানুষের রূপ ধারণ করে তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। ফলে বিপদে পড়া মানুষটি মনে করে মাজারে শায়িত অলী তাকে সাহায্য করেছে। এমনিভাবে শয়তান মানব সমাজে শিরকের প্রচলন ঘটিয়েছে ও শিরকের প্রসার করে যাচ্ছে।  
দুই. আর যদি প্রার্থীত বিষয়টি এমন হয় যা পুরণ করা শুধু আল্লাহ তাআলার পক্ষেই সম্ভব, তাহলে বুঝতে হবে এ বিষয়টি অর্জনের কথা তাকদীরে আগেই লেখা ছিল। কবরে শায়িত ব্যক্তির বরকতে এটির অর্জন হয়নি। তাই সকল বিবেকসম্পন্ন মানুষকে বুঝতে হবে যে মাজারে যেয়ে দুআ করলে কবুল হয় বলে বিশ্বাস করা সর্বাবস্থায়ই কুসংস্কার। কেহ যদি মাজারে যেয়ে দুআ প্রার্থনা করে, মাজার পূজা করে মানুষ থেকে ফেরেশতাতে পরিণত হয় তাহলেও বিশ্বাস করা যাবে না যে, এটা মাজারে শায়িত অলীর কারণে হয়েছে। এর নামই হল ঈমান। এর নামই হল নির্ভেজাল তাওহীদ। তাওহীদের বিশ্বাস যদি শিরকমিশ্রিত হয়, কু সংস্কারাচ্ছন্ন হয় তা হলে ব্যক্তির মুক্তি নেই।  
কাল্পনিক কারামত অনেক মানুষই মুজিযা আর কারামতের পার্থক্য জানে না। মুজিযা আর কারামত কি তা বুঝে না। মুজিযা হল এমন অলৌকিক বিষয় যা নবীদের থেকে প্রকাশ পায়। আর কারামত হল এমন অলৌকিক বিষয় যা আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাদের থেকে প্রকাশ পায়। মুজিযা প্রকাশের শর্ত হল নবী বা রাসূল হওয়া। আর কারামত প্রকাশের শর্ত হল নেককার ও মুত্তাকী হওয়া। অতএব যদি কোন বিদআতী পীর-ফকির বা শিরকে লিপ্ত ব্যক্তিদের থেকে অলৌকিক কিছু প্রকাশ পায় সেটা মুজিযাও নয়, কারামতও নয়। সেটা হল দাজ্জালী ধোকা-বাজি বা প্রতারণা। অনেক অজ্ঞ লোক ধারনা করে থাকে মুজিযা বা কারামত, সাধনা বা চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে অর্জন করা যায়। বা মানুষ ইচ্ছা করলেই তা করতে পারে। তাই এ সকল অজ্ঞ লোকেরা ধারনা করে অলী আউলিয়াগণ ইচ্ছা করলে কারামতের মাধ্যমে অনেক কিছু ঘটাতে পারেন, বিপদ থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন। কিন্তু আসল ব্যাপার হল, কারামত কোন ব্যক্তির ইচ্ছাধীন নয়। এটি একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাধীন। মানুষ ইচ্ছা করলে কখনো কারামত সংঘটিত করতে পারে না, সে যত বড় অলী বা পীর হোক না কেন। কোন বিবেকমান মানুষ বিশ্বাস করে না যে, একজন মানুষের প্রাণ চলে যাওয়ার পর তার কিছু করার ক্ষমতা থাকে। আবার যদি সে কবরে চলে যায় তাহলে কিভাবে সে কিছু করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে? এ ধরনের কথা তারাই বিশ্বাস করতে পারে অজ্ঞতার ক্ষেত্রে যাদের কোন নজীর নেই। অলী তো দূরের কথা কোন নবীর কবরও পূজা করা জায়েয নেই। নবীর কবরতো পরের কথা, জীবিত থাকা কালে কোন নবীর ইবাদত করা, বা তাকে দেবতা জ্ঞান করে পূজা করা যায় না। এটা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন :
مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُؤْتِيَهُ اللَّهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُوا عِبَادًا لِي مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَكِنْ كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُونَ ﴿79﴾ وَلَا يَأْمُرَكُمْ أَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلَائِكَةَ وَالنَّبِيِّينَ أَرْبَابًا أَيَأْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ﴿80﴾. (آل عمران)
কোন মানুষের জন্য সংগত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার ইবাদতকারী হয়ে যাও। বরং সে বলবে, তোমরা রব্বানী(আল্লাহ ভক্ত) হও। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে। আর তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ করেন না যে, তোমরা ফেরেশতা ও নবীদেরকে প্রভূ রূপে গ্রহণ কর। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ দেবেন? (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৭৯-৮০)  
মুশরিকদের অবস্থা : অতীত ও বর্তমান যারা কবর মাযার পূজা করে তারা বলে থাকে যে, মুশরিকরা মূর্তি পূজা করত। আমরাতো মূর্তি পূজা করি না। আমরা আমাদের পীর দরবেশদের মাজার জিয়ারত করি। এগুলোর ইবাদত বা পূজা করি না। তাদের অসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ-প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ তাদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে আমাদের দুআ-প্রার্থনা কবুল করেন। এটাতো কোন ইবাদত নয়। এদের উদ্দেশ্যে আমরা বলব, মৃত ব্যক্তির কাছে সাহায্য ও বরকত কামনা করা সত্যিকারার্থে তার কাছে দুআ করার শামিল। যেমন ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগে পৌত্তলিকরা মূর্তির কাছে দুআ-প্রার্থনা করত। তাই জাহেলী যুগের মূর্তি পূজা আর বর্তমান যুগের কবর পূজার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এ দুটো কাজই লক্ষ্য উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে এক ও অভিন্ন। যখন জাহেলী যুগের মুশরিকদের বলা হল তোমরা কেন মূর্তিগুলোর ইবাদত করো? তারাতো কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। তখন তারা ইবাদতের বিষয়টি অস্বীকার করত এবং বলত:
مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى. (الزمر : 3)
আমরা তো তাদের ইবাদত করি না, তবে এ জন্য যে তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। (সূরা যুমার, আয়াত ৩) এমনিভাবে আমাদের সমাজের কবরপূজারীরাও বলে থাকে যে, আমরা তো কবরে শায়িত অলীর ইবাদত করি না। তার কাছে দুআ করি না। আমাদের উদ্দেশ্য শুধু এই যে, তারা আল্লাহর কাছে প্রিয়। তাদের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জন করা যাবে। এ সকল অলীগণকে আমরা আমাদের ও আল্লাহ তাআলার মধ্যে মাধ্যম মনে করে থাকি। কাজেই পরিণতির দিক দিয়ে জাহেলী যুগের মুশরিকদের মূর্তি পূজা আর বর্তমান যুগের মুসলমানদের কবর পূজা এক ও অভিন্ন। দুটো একই ধরনের শিরক।
 মুহাব্বাত ভালোবাসার ক্ষেত্রে শিরক অন্তরের একাগ্র ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আল্লাহ ব্যতীত আর কোন সৃষ্টি পেতে পারে না। এই নির্ভেজাল শ্রদ্ধাপূর্ণ ভালোবাসা হল একটি ইবাদত। যারা মনে করে আমরা এই কবরের অলী ও বুযুর্গদের অত্যাধিক ভালোবাসি, তাদের শ্রদ্ধা করি, তাদের সম্মান করি তাহলে এটিও একটি শিরক। আর এই মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার কারণেই তারা অলী-বুযুর্গদের কবরে মানত করে, কবর প্রদক্ষিণ করে, কবর সজ্জিত করে, কবরে ওরস অনুষ্ঠান করে। কবরবাসীর কাছে তারা সাহায্য চায়, উদ্ধার কামনা করে। যদি কবরওয়ালার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত সম্মান ও ভালোবাসা না থাকতো, তাহলে তারা এগুলোর কিছুই করত না। আর এ ধরনের ভালোবাসা শুধু আল্লাহর তাআলার জন্যই নিবেদন করতে হয়। আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ. (البقرة : 165)
আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, আল্লাহকে ভালবাসার মত তাদেরকে ভালবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালবাসায় দৃঢ়তর। (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৬৫)
 দৃঢ়তর, সত্যিকার ও সার্বক্ষণিক ভালোবাসা একমাত্র তাআলার প্রাপ্য। এটা অন্যকে নিবেদন করলে শিরক হয়ে যাবে। মুশরিক পৌত্তলিকরা তাদের দেব-দেবীর জন্য এ রকম ভালোবাসা পোষণ করে থাকে। আল্লাহ মানুষের খুবই কাছে। মানুষ আল্লাহর কাছে তার প্রার্থনা পৌছে দিতে মাধ্যম বা অসীলা খোঁজে। কিন্তু কেন? আল্লাহ তাআলা কি মানুষ থেকে অনেক দূরে? আর মাজারে শায়িত সে সকল পীর অলীগণ মানুষের কাছে কি আল্লাহর চেয়েও নিকটে? কখনো নয়। একজন মানুষ যখন প্রার্থনা করে তখন সকলের আগেই তারা সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা নিজে বলেছেন:
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ. (البقرة : 186)
আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)
মানুষ সরাসরি আল্লাহ তাআলার কাছে তার সকল প্রার্থনা নিবেদন করবে কোন মাধ্যম ব্যতীত। এটাই ইসলামের একটি বৈশিষ্ট ও মহান শিক্ষা। আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ-প্রার্থনায় কোন মাধ্যম গ্রহণ করার দরকার নেই মোটেই। দুআ-প্রার্থনায় মাধ্যম বা অসীলা গ্রহণ একটি বিজাতীয় বিষয়। হিন্দু, বৌদ্ধ খৃষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মের লোকেরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে মূর্তি, পাদ্রী ও ধর্মযাজকদের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। এ দিকের বিবেচনায় এটি একটি কুফরী সংস্কৃতি, যা কোন মুসলমান অনুসরণ করতে পারে না। দুআ-প্রার্থনায় আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য সৎকর্মসমূহকে অসীলা হিসাবে নেয়া যায়। তেমনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নামসমূহ অসীলা হিসাবে নেয়ার জন্য আল-কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ. (الأعراف : 180)
আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আল আরাফ, আয়াত ১৮০)
সর্বশেষে বলতে চাই, যারা এ ধরনের অন্যায় অসীলা গ্রহণের মাধ্যমে শিরকে লিপ্ত হচ্ছেন তারা এর থেকে ফিরে আসুন। আমাদের দায়িত্ব কেবল সত্য বিষয়টি আপনাদের কাছে পৌঁছে দেয়া। এ সকল অসীলা নি:সন্দেহে শিরক। আর শিরক এমন এক মহা-পাপ যা আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। যে এ শিরকে লিপ্ত হবে জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা। আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ. (المائدة : 72)
নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা, আয়াত ৭২)
তাই আমাদের জন্য একান্ত কর্তব্য হল, আমাদের সকল ইবাদত-বন্দেগী, দুআ-প্রার্থনা নির্ভেজালভাবে একমাত্র এক আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদন করা। তিনি যা করতে বলেছেন আমরা তাই করবো। নিজেরা কিছু উদ্ভাবন করবো না। তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের যেভাবে প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন আমরা সেভাবেই প্রার্থনা করবো। তিনি যেভাবে অসীলা গ্রহণ অনুমোদন করেছেন, আমরা সেভাবে অসীলা গ্রহণ করবো। এর ব্যতিক্রম হলে আমরা ইসলাম থেকে দূরে চলে যাবো। কাজেই সর্বক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য হবে কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরণ করা। যদি আমরা এভাবে চলতে পারি তবে দুনিয়াতে কল্যাণ আর আখেরাতে চিরন্তন সুখ ও সফলতা লাভ করতে পারবো। অন্যথা, উভয় জগতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে শিরক থেকে হেফাজত করুন। আ-মীন!
সমাপ্ত

Friday, February 22, 2013

সন্তানের লালন-পালন ও তালীম-তরবিয়ত ইসলামিক দৃষ্টিকোণ-৪

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : বয়োঃসন্ধি স্তর এ বয়সটা হল ইসলামী শরিয়ত কর্তৃক আদিষ্ট হওয়ার স্তর, যার পরিচয় পাওয়া যাবে কয়েকটি নিদর্শন ও পনেরতম বছরে পৌঁছার মাধ্যমে। সাধারণতঃ এটার সূচনা হয়ে থাকে মধ্যম স্তরের শেষ ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সন্ধিক্ষণে। ইবনুল কাইয়্যূম রহ. বলেন, ‘যখন একটি শিশুর বয়স পনের বছর পূর্ণ হয়ে যায়, তখন ভিন্ন আরেকটি অবস্থার সৃষ্টি হয় : স্বপ্ন দোষ হয়, লজ্জাস্থানের চতুর্পাশে লোম গজায়, কণ্ঠস্বর মোটা হয়ে যায় ও তার নাসিকা রন্ধ্র পৃথক হয়ে যায়। এসবের মধ্য হতে শরিয়ত যে বিষয়টির বিবেচনা করেন তা হলো মাত্র দু’টো ঃ ক্স স্বপ্ন দোষ ক্স লোম গজানো। যখন শিশুর বয়োঃপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে আদিষ্টের কলম তার জন্য সক্রিয় ও পুরুষের সামগ্রিক বিধানাবলি তার জন্য প্রযোজ্য হবে। অতঃপর সে বয়োঃপ্রাপ্তির পরিপক্কতা অর্জন করবে। ইমাম যুহুরী রহ. শব্দটির ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন- ‘পরিপক্কতা অর্জন হলো কোন মানুষের পৌরুষ স্তরে পৌঁছার পর থেকে চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত। তিনি বলেন, ‘অতএব পরিপক্কতা অর্জন হলো সীমানার প্রথম ও শেষ। তবে এটি কোন সীমা নয়। চল্লিশ বছর বয়সকে আল-কুরআনে الأشد বলে অভিহিত করা হয়েছে। শব্দটির অর্থ হলো শক্তি ও বীরত্ব। এ শব্দ থেকে الشديد এর অর্থ হল শক্তিশালী ব্যক্তি। অতএব الأشد এর অর্থ হল, অসম শক্তির অধিকারী। আর তা হলো বুদ্ধির পরিপক্কতা অর্জনের বয়স, যে কারণে শরিয়তের বিধানাবলি বাধ্যতামূলক হয়, বুদ্ধি ও বিবেকই হলো তার অবলম্বন। কিন্তু যখন বুদ্ধি একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত পৌঁছার পরÑযেখানে শরিয়তের বিধানাবলি বাধ্যতামূলক হয় তা অনুমান করে অবগত হওয়া অসম্ভব। এর সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে মানুষও তো বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। সে কারণে ইসলাম এমন একটি সুস্পষ্ট নিদর্শনের মাধ্যমে তাকে সংজ্ঞায়িত করেছে যেখানে কেউ ভিন্নমত পোষণ করেননি। আর তা-ই হলো বয়োঃপ্রাপ্তি। এই বয়োঃপ্রাপ্তিই হলো পূর্ণতা প্রাপ্তির পরিচায়ক, যেখানে শরিয়তের বিধানাবলি বাধ্যতা মূলক হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক হলো এমন ব্যক্তি যার দৈহিক শক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সে কোন

সন্তানের লালন-পালন ও তালীম-তরবিয়ত ইসলামিক দৃষ্টিকোণ- ৩

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : ভালোমন্দ নির্ণায়ক শৈশব এটা হলো শিশুর ষষ্ঠ বা সপ্তম বছর থেকে শুরু করে বয়োঃপ্রাপ্তি অথবা তার বয়স পনের বছর হওয়া পর্যন্ত বয়োঃস্তর। শিক্ষা জীবনের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক এ দুই- দুইটি স্তরই এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ যা সর্বসাকুল্যে অনধিক নয়টি বছর। এটা একটা দীর্ঘ সময়, যার শুরুটা সংযুক্ত থাকে অবুঝ শৈশব স্তরের সঙ্গে, আর শেষটা পৌরুষ স্তরের সঙ্গে। সুতরাং এ স্তরটা এখান থেকে কিছু এবং ওখান থেকেও কিছু গ্রহণ করে। অতএব সে প্রথমিক শৈশব জীবন ত্যাগ করেছে বটে কিন্তু এখনো পূর্ণাঙ্গ পৌরুষে পৌঁছতে পারেনি। ইবনুল কাইয়িম রহ. শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের স্তরবিন্যাস প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘শিশুর বেড়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে পর্যায়ক্রমে তার বুদ্ধি ও বিবেচনারও বিকাশ সাধিত হয়ে তা ভালোমন্দ নির্ণায়ক বয়স পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবে এর জন্য কোন নির্ধারিত বয়স নেই, বরং কোন মানুষতো পাঁচ বছর বয়সেও ভালোমন্দ নির্ণয় করতে শিখে ফেলে। মাহমুদ বিন রাবি’ র. বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পানির ছিটা দেয়ার মর্মার্থ বুঝতে সক্ষম হয়ে ছিলাম- যা তাদের কূপের কাছে রাখা বালতি থেকে তিনি আমার মুখে নিক্ষেপ করে ছিলেন। অথচ আমার বয়স তখন মাত্র পাঁচ বছর। আর সে কারণেই শিশুর পাঁচ বছর বয়সকে শ্রবণের তীক্ষèতার সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ বা আবার এর চেয়ে কম বয়সেও ভালোমন্দ নির্ণয় করতে শিখে ফেলে। নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অসংখ্য ঘটনা বহুদিন পর্যন্ত স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারে

Thursday, February 21, 2013

শিশুদের লালন-পালন [মাতা-পিতার দায়িত্ব ও সন্তানের করণীয়]- ৩

সালাতের হাদিসসমূহ:
১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
صلوا كما رأيتموني أصلي
অর্থ, তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ, সেভাবে সালাত আদায় কর। ২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إذا دخل أحدكم المسجد فليركع ركعتين قبل أن يجلس « وتسمى تحية المسجد» .
তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সে যেন বসার পূর্বে দুই রাকাত সালাত আদায় করে নেয়। [এ দু রাকাত সালাতকে তাহিয়্যাতুল মসজিদ বলা হয়] ৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
لا تجلسوا على القبور ، ولا تصلوا إليها.
তোমরা কবরকে আসন বানাবে না এবং কবরের দিকে মুখ করে সেজদা করবে না। ৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
إذا أقيمت الصلاة ، فلا صلاة إلا المكتوبة
যখন সালাতের ইকামত দেয়া হয়, তখন তোমরা ফরয সালাত ছাড়া আর কোন সালাত আদায় করবে না। ৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
أقيموا صفوفكم وتراصوا ، قال أنس وكان أحدنا يلزق منكبه بمنكب صاحبه ، وقدمه بقدمه .
অর্থাৎ তোমরা সালাতের কাতার ঠিক কর এবং একে অপরের সাথে মিলে দাড়াও। আনাস রা. বলেন, আমরা সালাতে একে অপরের কাঁধের সাথে ও পায়ের সাথে মিলিয়ে সালাতে দাঁড়াতাম। ৬. রাসূল বলেন,  
إذا أقيمت الصلاة فلا تأتوها وأنتم تسعون ، وأتوها وأنتم تمشون ، وعليكم السكينة ، فما أدركتم فصلوا ، وما فاتكم فأتموا .
অর্থ, যখন সালাতের ইকামত দেয়া হয়, তখন তোমরা দৌড়ে দৌড়ে সালাতে উপস্থিত হবে না। তোমরা স্বাভাবিকভাবে হেঁটে সালাতে উপস্থিত হবে। তোমরা নমনীয়তা প্রদর্শন কর। ইমামের সাথে যতটুকু পাবে আদায় করবে, আর যতটুকু ছুটে যাবে, তা পরে তোমরা একা একা সম্পন্ন করবে। ৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

পিতা-মাতা ও সন্তানের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপদেশ:-২

পিতা-মাতা ও সন্তানের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপদেশ:-২

১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« كلكم راع وكلكم مسؤول عن رعيته ، فالإمام راع ومسؤول عن رعيته ، والرجل راع في أهله وهو مسؤول عن رعيته ، والمرأة في بيت زوجها راعية ، وهي مسؤولة عن رعيتها ، والخادم في مال سيده راع وهو مسؤول عن رعيته »
অর্থ, “তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল! তোমাদের সকলকে তোমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন ইমাম সে অবশ্যই একজন দায়িত্বশীল, তাকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন পরিবারের কর্তা সে তার পরিবারের দায়িত্বশীল। তাকে অবশ্যই তার পরিবারের যারা তার অধীনস্থ তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন মহিলা সে তার স্বামীর ঘরে দায়িত্বশীল, তাকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। আর একজন চাকর সে তার মালিকের ধন-সম্পদের দায়িত্বশীল! তাকে তার দায়িত্বের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।” [বুখারী, মুসলিম]   ২. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ কি? তিনি উত্তরে বললেন,
« أن تجعل لله نداً وهو خلقك ، قلت : ثم أي ؟ قال : أن تقتل ولدك خشية أن يطعم معك ، قلت : ثم أي ، قال : أن تزني بحليلة جارك» .
“আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, যে আল্লাহ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” আমি বললাম, তারপর মারাত্মক অপরাধ কোনটি? তিনি বললেন, “তোমার সন্তান তোমার সাথে খাবে এ ভয়ে তুমি তাকে হত্যা করলে।” আমি বললাম, তারপর মারাত্মক অপরাধ কোনটি? তিনি বললেন, “তুমি তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করলে।” [বুখারী, মুসলিম] ৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, اتقوا الله وأعدلوا في أولادكم “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের বিষয়ে ইনসাফ কর।” [বুখারী, মুসলিম] অর্থাৎ, তোমাদের সন্তানদের বিষয়ে তাদের ধন-সম্পত্তিতে, অনুদানের ক্ষেত্রে ও যাবতীয় সব বিষয়ে তুমি ইনসাফ কর। ৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

Wednesday, February 20, 2013

শিশুদের লালন-পালন [মাতা-পিতার দায়িত্ব ও সন্তানের করণীয়]- ১

শিশুদের লালন-পালন
[মাতা-পিতার দায়িত্ব ও সন্তানের করণীয়]- ১
মূল: শাইখ মুহাম্মাদ ইবন জামীল যাইনূ রহ. অনুবাদ: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
প্রথমে লোকমান আ. তার ছেলেকে যেভাবে উপদেশ দিয়েছেন, তা আলোচনা করা হল। কারণ, লোকমান আ. তার ছেলেকে যে উপদেশ দিয়েছেন, তা এতই সুন্দর ও গ্রহণ যোগ্য যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা তা কুরআনে করীমে উল্লেখ করে কিয়ামত পর্যন্ত অনাগত উম্মতের জন্য তিলাওয়াতে উপযোগী করে দিয়েছেন এবং কিয়ামত পর্যন্তের জন্য তা আদর্শ করে রেখেছেন। লোকমান আ. তার ছেলেকে যে উপদেশ দেন তা নিম্নরূপ: মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ
অর্থ, “আর স্মরণ কর, যখন লোকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল...।” এ উপদেশগুলো ছিল অত্যন্ত উপকারী, যে কারণে মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে লোকমান হাকিমের পক্ষ থেকে উল্লেখ করেন।  

Tuesday, February 19, 2013

কিভাবে আমরা সন্তানদের লালন-পালন করব

কিভাবে আমরা সন্তানদের লালন-পালন করব

আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান
কিভাবে আমরা আমাদের সন্তানদের লালন- পালন করব? সন্তানের প্রতি সকলের মায়া মমতা স্বভাবতই বেশি থাকে তাই বলে, তারা যেন মাতা-পিতাকে বিপদগামী না করতে পারে সেদিকে সকলের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا(التحريم6)
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাতের পরিজনদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর। (সূরা তাহরীম ৬৬: ৬আয়াত) মাতা-পিতা শিক্ষক তথা সমাজের সকলেরই আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে সন্তানদের গঠন করার ব্যাপারে।যদি তারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে তবে সন্তানরা সুখী হবে এবং অন্যরাও দুনিয়া ও আখিরাতে সুখী হবে । যদি তাকে উত্তমভাবে গড়ে না তোলা হয় তবে সে দুর্ভাগা হবে। ফলে, তার পাপের ভার অন্যদের উপরও বর্তাবে। এ জন্যই হাদীস শরীফে এসেছে:
كلُّكُم رَاعٍ وَ كُلُّكُمْ مَسْؤُلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ (متفق عليه)
তোমরা প্রত্যেকেই (রাখালের মত)দেখাশুনাকারী, আর এ দেখাশুনার ব্যাপারে প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হবে। (বুখারী মুসলিমের মিলিত হাদীস)। হে শিক্ষক! আপনার জন্য রাসূলের সা. দেয়া সুসংবাদ শ্রবণ করুন:

একজন সফল গার্ডিয়ানের গুণাবলি

একজন সফল গার্ডিয়ানের গুণাবলি

মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক
পরিবারের নেতৃত্ব দেন একজন পুরুষ। আল কুরআন পুরুষের ঘাড়েই গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের দায়িত্বভার অর্পণ করেছে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে পুরুষের নেতৃত্ব আদিকাল থেকে চলে-আসা একটি কালচার, যা প্রাকৃতিক কারণেই ঘটে থাকে। পুরুষের মনোগঠন, সপ্রতিভ আচরণ, দৃঢ়চিত্ততা, সাহসিকতা, প্রতিকূল পরিবেশে - আবেগ নয়- বরং বুদ্ধিচালিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা, অধিকন্তু শীত-বর্ষা-হেমন্ত-বসন্ত রোদ-বৃষ্টি, আলো-অন্ধকার সকল পরিস্থিতিতে দেহ সঞ্চালিত করে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করার শারীরিক ক্ষমতা পুরুষকে সমাসীন করেছে নেতৃত্বের আসনে। তাই পুরুষকেই পালন করতে হবে একটি পরিবারের মূল গার্ডিয়ানের ভূমিকা। বর্তমান বিশ্বে হাতে-গোণা কয়েকটি দেশ ব্যতীত, সকল দেশেই নারীসমাজ ভোগ করছে, অধিকার ও দায়িত্বের ক্ষেত্রে, পুরুষের মতোই সমান সুযোগ-সুবিধা। তবু সাধারণ ব্যাকরণ ও তিক্ত-সত্য হল,

Monday, February 18, 2013

সাদাসিধে জীবনের প্রতি ইসলামের প্রেরণা



সাদাসিধে জীবনের প্রতি ইসলামের প্রেরণা
জহির উদ্দিন বাবর

ইসলাম মানুষের সহজাত প্রকৃতির পরিচায়ক একটি জীবনবোধের নাম। সাদাসিধে, অনাড়ম্বর ও সাবলীল জীবনই ইসলামের অন্বেষা। সহজ-সরলভাবে জীবনাতিপাত করাই ইসলামের নির্দেশনা। মানুষের লৌকিকতা উপসর্গ হিসেবে যুক্ত না হয় সে তাগিদ ইসলামে করা হয়েছে বারবার। জাকজমক, লৌকিকতার ঝলক কিংবা বাড়তি সৌখিনতাকে ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। ইসলামি জীবনবোধ হচ্ছে, পার্থিব এই জীবন ক্ষণস্থায়ী-পরকালের শষ্যক্ষেত্র স্বরূপ। এখানকার মর্মফলই সে ভোগ করবে আখেরাতে। এজন্য এখানের তার অবস্থাটা সীমিত সময়ের জন্য স্বল্প পরিসরে। এখানকার পার্থিব হিসাবটা মূখ্য নয়। পরজগতের ভাবনায় ইহজাগতিক যাবতীয় কর্মকাণ্ড সূচিবদ্ধ একটি নিয়মের অধীনে পরিচালিত হবে। জাগতিক প্রতিষ্ঠা ও বৈষয়িক চিন্তা থাকবে গৌণ হিসেবে। একজন পথিক যেমন তার আরামস্থলকে স্থায়ী কোন ঠিকানা মনে করে না, এখানে তার ভোগ প্রাচুর্যের তেমন কোন অন্বেষা থাকে না, তেমনি দুনিয়ার জীবনটাও মানেষের জন্য মুহূর্তের অবস্থানস্থল, পথিকের বিশ্রামস্থলের মতো। ক্ষণিকের আবাসে আড়ম্বর ও লৌকিকতা প্রদর্শন কোন যুক্তিবানের কাজ নয়।

Sunday, February 17, 2013

মানুষের উপর জিনের আছর কারণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়- ২



ছয়. খাবার সময় বিমিল্লাহ বলা ও ঘরে প্রবেশের সময় দুআ পাঠ করা :
হাদীসে এসেছে

إذا دخل الرجل بيته ، فذكر الله عند دخوله وعند طعامه ، قال الشيطان : لا مبيت لكم ولا عشاء . وإذا دخل فلم يذكر الله عند دخوله ، قال الشيطان : أدركتم المبيت . وإذا لم يذكر الله عند طعامه ، قال : أدركتم المبيت والعشاء. رواه مسلم، رقم الحديث
যখন কোন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করার সময় ও খাবার গ্রহণের সময় আল্লাহর জিকির করে তখন শয়তান বলে, তোমাদের সাথে আমার খাবার নেই ও রাত্রি যাপনও নেইআর যখন ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর জিকির করে না, তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার রাত যাপন হবেআর যখন খাবার সময় আল্লাহর জিকির করে না, তখন শয়তান বলে, তোমাদের সাথে আমার রাত যাপন ও খাবার দুটোরই ব্যবস্থা হল (বর্ণনায় : মুসলিম হাদীস নং ২০১৮)
ঘরে প্রবেশের সময় নির্দিষ্ট দুআ আছে সেটি পাঠ করবেদুআ মুখস্থ না থাকলে কমপক্ষে বিছমিল্লাহ . . বলে ঘরে প্রবেশ করবেএমনিভাবে খাবার সময় বিছমিল্লাহ  . . বলে খাওয়া শুরু করবে

Friday, February 15, 2013

মানুষের উপর জিনের আছর : কারণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়-১



মানুষের উপর জিনের আছর : কারণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়
লেখক : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সম্পাদনা : আবু শুআইব মুহাম্মদ সিদ্দিক




প্রথম কথা
একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে বসা ছিলামতার স্ত্রীও একজন ভাল ডাক্তারউভয়ে ধর্মপ্রাণহজ করেছেন এক সাথেইদুটো মেয়েকেই তানজীমুল উম্মাহ মাদরাসাতে ভর্তি করিয়েছেনআমাকে বললেন, তানজীমুল উম্মাহ মাদরাসা আরবী মিডিয়ামের স্কলাস্টিকা তাই না? আমি বললাম, হ্যাউদ্দেশ্য তার উৎসাহকে স্বাগত জানানো
মানে তারা দুটো সন্তানকেই মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে গর্ববোধ করেনকতখানি ধর্মপ্রাণ হলে এমন হতে পারে তা আপনার ভেবে দেখার বিষয় বটে
রোগী দেখার ফাঁকে ফাঁকে আমার সাথে গল্প করছেনশুধু আমার সাথেই নয়আলেম-উলামাদের কাউকে কাছে পেলে আন্তরিকতার সাথেই আলাপ করেনজানতে চানজানাতে চান
একজন মহিলা আসল, সাথে তার মেয়ে  সে  রোগের বিবরণ দিয়ে বলল, কয়েকদিন আগে ওকে জিনে আছর করেছিলওঝা-ফকিরেরা জিন তাড়িয়েছে
এ কথা শুনে ডাক্তার সাহেব রেগে গেলেনবললেন, কিসের জিন? জিন বলতে কিছু আছে নাকি? জিন আবার মানুষকে ধরে নাকি? যত সব অন্ধ বিশ্বাস! জিন-ভূত বলতে কোন কিছু নেইজিনে মানুষ ধরে নামানুষকে আছর করে নাএটা মানসিক রোগ দ্বারা সৃষ্ট একটি কল্পনাএ কল্পনার কারণে সৃষ্টি হয়েছে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা
তার আবেগ কমে গেলে আমি তাকে এ বিষয়টি বুঝাতে চেষ্টা করলামকিন্তু এতে তার কোন আগ্রহ দেখলাম নাআমি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাইলেই সে অন্য প্রসঙ্গের অবতারণা করেআমি বুঝলাম, এ বিষয়ে আলোচনা তার পছন্দ নয়সে যা বুঝেছে, সেটাকেই সে চুরান্ত বলে বিশ্বাস করে নিয়েছেবিশ্বাসটা যে সংশোধন করার প্রয়োজন এটা তিনি বুঝতে চাচ্ছেন না
আসলে কি জিন আছে? জিন কী? ইসলাম কী বলে? জিনদের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করা ইসলামে কতখানি গ্রহণযোগ্য? জিন কি মানুষকে আছর করে? এ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী? এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব এ বইটিতে

Thursday, February 14, 2013

শয়তানের প্রবেশপথ (পর্ব:৩ ও ৪)

শয়তানের প্রবেশপথ (পর্ব:৩ & ৪)

কতিপয় হাদিসে উল্লেখিত তাহরীশের কিছু উদাহরণ - সোলাইমান বিন সারদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলের সা. সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম, ইতিমধ্যে দু’জন লোক পরস্পরকে গালমন্দ করছে। তাদের একজনের চেহারার রক্তিম হয়ে গেল এবং তার শিরা সমূহ ফুলে গেল। অত:পর নবী সা. বললেন, إني لأعلم كلمة لو قالها ذهب عنه ما يجد، لو قال: أعوذ بالله من الشيطان ذهب عنه ما يجد، فقالوا له إن النبي صلى الله عليه وسلم قال : تعوذ بالله من الشيطان، فقال : وهل بي جنون؟ ذكر النبووي أن (الحديث فيه أن الغضب في غير الله تعالى من نزع الشيطان. شرح النووي على مسلم (১৬/২৪৬) আমি এমন একটি শব্দ জানি যদি সে তা উচ্চারণ করে তার

Wednesday, February 13, 2013

শয়তানের প্রবেশপথ (পর্ব:২)

শয়তানের প্রবেশপথ (পর্ব:)

লেখক : নুমান বিন আবুল বাশার সময় ক্ষেপণ ও মিথ্যা আশ্বাস প্রদান- শয়তান মানুষকে এমনভাবে আশ্বস্ত করে যে, তার জীবন অনেক দীর্ঘ এবং তার কাছে সৎকর্ম ও তওবা করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাই সে যখন নামাজ পড়ার ইচ্ছা পোষণ করে শয়তান তাকে বলে, তুমি তো এখনও সেই ছোট রয়ে গেছ, যখন বড় হবে নামাজ পড়বে। এবং যখন আত্মশুদ্ধিকারী ব্যক্তি আত্মশুদ্ধি করতে চায় শয়তান তাকে বলে এটাতো তোমার প্রথম মওসুম : আগামী বৎসরের জন্যে তুমি অপেক্ষা কর। আর যখন কোন মানুষ কোরআন পড়তে চায় শয়তান তাকে বলে তুমি সন্ধ্যায় পড়বে। এবং সন্ধ্যা হলে বলে তুমি আগামীকাল পড়বে। এবং আগামীকাল বলে তুমি পরশু পড়বে, এভাবে মৃত্যু পর্যন্ত অপরাধকারী তার পাপের ওপর অবশিষ্ট থাকবে। আর এই প্রক্রিয়ায় শয়তান কিছু কাফেরকে ইসলাম থেকে নিবৃত্ত করে রাখে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন— إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِهِمْ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَى لَهُمْ. ﴿محمد : ২৫﴾ ‘যাদের কাছে হেদায়াতের পথ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পরও তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, শয়তান এদের মন্দ কাজগুলো (ভালো লেবাস দিয়ে) শোভনীয় করে পেশ করে এবং তাদের জন্যে নানা মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে রাখে। তাই বলা হয়, এর অর্থ হচ্ছে শয়তান তাদের উদ্দেশ্যে আশাকে সম্প্রসারিত করেছে এবং তাদেরকে দীর্ঘায়ুর প্রতিশ্র“তি দিয়েছে।   এছাড়া ভিন্ন অর্থের মতও রয়েছে। কতক ঊলামায়ে কেরাম বলেছেন— أنذركم سوف فإنها أكبر جنود إبليس. تلبيس إبليس لابن الجوزي ص (৩৯০). আমি তোমাদেরকে ‘সাওফা’ তথা ‘এই করছি’, ‘এখনও সময় আছে’, ‘ভবিষ্যতে করব’, ‘কিছুটা ঝামেলা মুক্ত হয়েই করা শুরু করব।’ এমন সব ভবিষ্যৎ অর্থবোধক শব্দ হতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এবং এই অভিন্ন আচরণ করে থাকে যখন তারা আনুগত্য প্রদর্শন করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল বলেন— يعقد الشيطان على قافية رأس أحدكم إذا هو نام ثلاث عقد، يضرب كل عقدة عليك ليل طويل فارقد، فإن استيقظ فذكر الله انحلت عقدة، فإن توضأ انحلت عقدة، فإن صلى انحلت عقدة فأصبح نشيطا طيب النفس، وإلا أصبح خبيث النفس كسلان. যখন তোমাদের কেউ ঘুমায়, শয়তান তার মাথায় তিনটি গিঁট দেয়। সারারাত ব্যাপী প্রতিটি গিঁট দিয়ে রাখে। অত:পর সে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। অত:পর যখন মানুষ ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর স্মরণ করে একটি গিঁট খুলে যায়। তারপর যখন সে নামাজ পড়ে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। অত:পর সে উদ্যম ও প্রাণবন্ত মন নিয়ে সকাল কাটায়। আর

শয়তানের প্রবেশপথ (পর্ব:১)

শয়তানের প্রবেশপথ (পর্ব:১)

লেখক : নুমান বিন আবুল বাশার শয়তানের প্রবেশপথ আল্লাহ তাআলা যখন তার নবী আদম আ.-কে সৃষ্টি করেছেন, তিনি আদমকে সেজদা করতে ফেরেশতাদের হুকুম করেন। অত:পর সব ফেরেশতা সেজদায় অবনমিত হল একমাত্র ইবলিস ছাড়া, সে ছিল জিনদের অন্তর্ভুক্ত। সে তার প্রভুর নির্দেশ অমান্য করল, এবং অস্বীকার ও অহংকার প্রদর্শন করল। এবং সে ছিল কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন—
قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنْتَ مِنَ الْعَالِينَ. قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ. قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ. وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَى يَوْمِ الدِّينِ. قَالَ رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ. قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ. إِلَى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ. قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ. إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ. قَالَ فَالْحَقُّ وَالْحَقَّ أَقُولُ. لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكَ وَمِمَّنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ أَجْمَعِينَ. ﴿ص : 75-85﴾
‘আল্লাহ তাআলা বললেন, হে ইবলিস, তোমাকে কোন্ জিনিস তাকে সেজদা করা থেকে বিরত রাখল যাকে আমি স্বয়ং নিজের হাত দিয়ে বানিয়েছি, তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, না তুমি কোনো উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন কেউ? ‘সে বলল (হ্যাঁ), আমি তো তার চাইতে শ্রেষ্ঠ, তুমি আমাকে আগুন থেকে বানিয়েছ আর তাকে বানিয়েছ মাটি থেকে। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, তুমি এখান থেকে এখনই বের হয়ে যাও, কেননা তুমি হচ্ছ অভিশপ্ত। ‘তোমার ওপর আমার অভিশাপ থাকবে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত।’ সে বলল, (হ্যাঁ) আমি বেরিয়ে যাচ্ছি, তবে হে আমার মালিক ! তুমি আমাকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দাও যে দিন সব মানুষকে (দ্বিতীয়বার) জীবিত করে তোলা হবে। ‘আল্লাহ তাআলা বললেন, (হ্যাঁ, যাও) যাদের অবকাশ দেয়া হয়েছে তুমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত। ‘অবধারিত সময়টি আসার সে নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত (তুমি থাকবে) সে বলল (হ্যাঁ) তোমার ক্ষমতার কসম (করে আমি বলছি) আমি তাদের সবাইকে বিপদগামী করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার একনিষ্ঠ বান্দা তাদের ছাড়া। আল্লাহ তাআলা বললেন, (এ হচ্ছে) চূড়ান্ত সত্য, আর আমি এ সত্য কথাটাই বলছি—‘তোমার ও তোমার অনুসারীদের সবাইকে দিয়ে আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই।[i] প্রকৃতপক্ষে শয়তান শত্রুতা

Tuesday, February 12, 2013

পরকাল ভাবনা

পরকাল ভাবনা

মুল : মুহাম্মদ শামছুল হক ছিদ্দিক

আধুনিক বিশ্বে মানুষের সবচেয়ে বড় গুরুত্বের বিষয় কোনটি ? কোন বৈঠকে এ-প্রশ্ন করা হলে একেক জন একেক উত্তর দিবেন; কেউ বলবেন, ব্যাপকবিধ্বংসী অস্ত্রের উৎপাদন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মজুদ কীভাবে ঠেকানো যায় এটাই আধুনিক বিশ্বের সমধিক গুরুত্বের বিষয়। কেউ বলবেন, জনসংখ্যার বিস্ফোরণ প্রতিহত করাই বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আবার কেউ বলবেন, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠ বন্টন নিশ্চিত করণই আজকের বড় সমস্যা। এর অর্থ, মানুষ এখনো অন্ধকারে রয়েছে তার পরিচয় বিষয়ে; আবিষ্কার করতে পারেনি নিজের অস্তিত্বের ধরন-ধারণ; পারলে ভিন্নরকম হত সবারই উত্তর। সবাই বলতো, সবচেয়ে বড় সমস্যা আধুনিক মানুষের পরিচয় বিস্মৃতি। মানুষ তার মূল পরিচয় ভুলে গেছে বেমালুম; নশ্বর ইহজগৎ ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে অবিনশ্বর পরজগতে, যেখানে তাকে দাঁড়াতে হবে প্রতিপালকের সামনে যাপিত জীবনের হিসেব দিতে, এ-বিষয়টি বিদায় নিয়েছে তার মস্তিষ্কের সচেতন অংশ থেকে; অন্যথায় এ-খন্ডকালিক অস্তিত্বের জগতকে নয়, অনন্ত পরকালকে, স্রষ্টার মুখোমুখী হওয়াকে, স্বর্গ-নরকের সম্মুখীনতাকে সবচেয়ে বড় বিষয় বলে মনে করতো সে। আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেন :
بل تؤثرون الحياة الدنيا والآخرة خير وأبقى. سورة الأعلى : 16-17
কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে পছন্দ করে থাকো। অথচ আখেরাতের জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী। (সূরা আ’লা ১৬-১৭) আল্লাহ ও পরকালে মানুষের বিশ্বাস সম্পূর্ণ উঠে গেছে, একথা বলছি না। এখনো পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাসীদের দলভুক্ত। কিন্তু এ-বিশ্বাসের শিহরণ ঝিমিয়ে পড়েছে বর্ণনাতীতভাবে মানুষের অন্তর ও বহির্জগতে। মানুষের সচেতন মেধার অংশ হিসেবে মোটেই মন্থিত নয় এ-অতি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাসটি। এ-পৃথিবীর জীবনে, অর্থবিত্ত যশ-জৌলুসের পাহাড় গড়ে কীভাবে উন্নতির চরমে পৌঁছানো সম্ভব সে স্বপ্নেই বিভোর থাকে মানুষ দিবস-রজনী। ইরশাদ হচ্ছে :

Monday, February 11, 2013

গুনাহের দরজা সমূহ

গুনাহের দরজা সমূহ

গুনাহের কিছু কারণ ও ভূমিকা রয়েছে যা গুনাহের প্রতি টেনে নিয়ে যায়।এবং তার কিছু প্রবেশ পথ রয়েছে যা সেখানে প্রবিষ্ট করে দেয়। গুনাহ থেকে বিরত ও বেঁচে থাকার জন্য এই সব বিষয়ের জানা নিতান্ত অপরিহার্য। আল্লাহর অবাধ্য আচরণের অনেক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে সর্ববৃহৎ হল, অপ্রয়োজনীয় ও নিরর্থক কাজে মানুষের জড়িয়ে পড়া। তাকে দ্বীন বা দুনিয়ার কোন উপকার করবে না। উপরন্তু নিরর্থক কাজ বর্জন করা মানুষের ইসলামের পরিপূর্নতা ও তার ঈমান বৃদ্ধির পরিচায়ক। রাসূল বলেছেন, من حسن إسلام المرء تركه ما لايعنيه. أخرجه الترمذي(২৩১৭)، وابن ماجه (৩৯৭৬)، وحسنه النووي في الأربعين النووية، والالباني في صحيح سنن الترمذي(১৮৮৭). ‘মানুষের সর্বোত্তম ইসলাম হল নিরর্থক কাজ বর্জন করা। অতএব যে ব্যক্তি অনর্থক কাজে ব্যস্ত রইল এবং দুনিয়ার কাজে তার পূর্ণ সময় ব্যয় করল এবং অধিক হারে মুবাহ কাজ করল- এই মুবাহ কাজ দ্বারা আল্লাহর আনুগত্য করার সাহায্য চাওয়া ছাড়া - সে তার জন্য গুনাহের উপকরণ সমূহ উন্মুক্ত করে দিল।

তবে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমূহ-ই হল গুনাহের দরজা : আর সবচে’ ক্ষতি কারক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। ইবনুল কাইয়ুম বলেন, যে ব্যক্তি চতুষ্টয়কে সংরক্ষণ করল সে তার দ্বীনকে নিরাপদ করল সে গুলো হল, মুহ‚র্ত ও সময়, ক্ষতিকারক বস্তু সমূহ, বাকশক্তি এবং পদক্ষেপ সমূহ। অতএব, এই চারটি দরজায় নিজের পাহারাদার নিযুক্ত করা উচিত। এই গুলোর প্রাচীর সমূহে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা সৃষ্টি করবে। কেননা, এগুলোর মাধ্যমেই শত্র“ পরবশ করে তাকে। অত:পর সে গোটা ভূমিকে গ্রাস করে নেয় এবং প্রবল পরাক্রম হয়ে বিস্তার লাভ করে। মানুষের কাছে অধিকাংশ গুনাহ এই চারটি পথেই প্রবেশ করে তাকে। সুতরাং গুনাহের উপকরণ ও যে সব প্রবেশপথে গুনাহ বিস্তার লাভ করে থাকে সে গুলো সম্পর্কে সম্যক অবগতি লাভ করা মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যেন সে সে সব থেকে বেঁচে থাকতে পারে। এখন সে সব বিষয়ের বিশদ আলোচনা উপস্থাপিত হচ্ছে। প্রথমত: দৃষ্টিশক্তি- মানুষ দৃষ্টিশক্তি থেকে কোন ভাবেই অমুখাপেক্ষী নয়। যা দ্বারা সে তার পথ দেখতে পারে এবং তার গন্তব্য চিনতে পারে। এবং যা দ্বারা সে তার স্রষ্টার সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে। কিন্তু আমাদের বাস্তব সম্পর্কে চিন্তাশীল ব্যক্তি মাত্রই পর্যবেক্ষণ করছেন সে, এ মহান নেয়ামত দ্বারা মানুষ কীভাবে অনর্থক কাজের উদ্দেশে সীমা-লঙ্ঘন করছে, যা কোন প্রগতিবাদী সার্থক উন্নতির জন্য প্রচেষ্টাকারীর কর্ম হতে পারে না। এরশাদ হচ্ছে-

Sunday, February 10, 2013

কেয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর-৮

কেয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর-৮

প্রথম যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে-- হাদীসে এসেছে-
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: عرضت علي الأمم . فرأيت النبي ومعه الرهيط . والنبي ومعه الرجل والرجلان . والنبي ليس معه أحد . إذ رفع لي سواد عظيم . فظننت أنهم أمتي . فقيل لي : هذا موسى صلى الله عليه وسلم وقومه . ولكن انظر إلى الأفق . فنظرت . فإذا سواد عظيم . فقيل لي : انظر إلى الأفق الآخر . فإذا سواد عظيم . فقيل لي : هذه أمتك . ومعهم سبعون ألفا يدخلون الجنة بغير حساب ولا عذاب " . ثم نهض فدخل منزله . فخاض الناس في أولئك الذين يدخلون الجنة بغير حساب ولا عذاب . فقال بعضهم : فلعلهم الذين صحبوا رسول الله صلى الله عليه وسلم . وقال بعضهم : فلعلهم الذين ولدوا في الإسلام ولم يشركوا بالله . وذكروا أشياء . فخرج عليهم رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : " ما الذي تخوضون فيه ؟ " فأخبروه . فقال " هم الذين لا يرقون . ولا يسترقوون . ولا يتطيرون . وعلى ربهم يتوكلون " فقام عكاشة بن محصن . فقال : ادع الله أن يجعلني منهم . فقال " أنت منهم " ثم قام رجل آخر فقال : ادع الله أن يجعلني منهم . فقال " سبقك بها عكاشة. رواه البخاري ومسلم.
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম সা বলেছেন: কেয়ামতের দিন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মানুষদের কিভাবে হাজির করা হবে তার একটি চিত্র আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি দেখলাম একজন নবী আসলেন তার সাথে দশ জনের কম সংখ্যক অনুসারী। আরেকজন নবী আসেলন, তার সাথে একজন বা দুজন অনুসারী। আবার আরেকজন নবী আসলেন তার সাথে কোন অনুসারী নেই। এরপর দেখলাম বড় একদল মানুষকে আনা হল। আমি ধারনা করলাম এরা আমার অনুসারী হবে। কিন্তু আমাকে বলা হল, এরা মূছা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারী। আমাকে বলা হল, আপনি অন্য প্রান্তে তাকান। আমি তাকালাম। দেখলাম বিশাল একদল মানুষ। আমাকে বলা হল, এবার অন্য প্রান্তে তাকান। আমি তাকালাম। দেখলাম, সেখানেও বিশাল একদল মানুষ। আমাকে বলা হল, এরা সকলে আপনার অনুসারী। এবং তাদের মধ্যে সত্তর হাজার মানুষ এমন আছে, যারা কোন হিসাব-নিকাশ ও শাস্তি ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ কথাগুলো বলার পর